Skip to main content

Full text of "Prachya O Pashchattya Darshaner Itihas Vol.1-4, Part.2,ed.1st"

See other formats




প্রাচ্য ও পাস্গাত্য 
দর্শনের ইতিহাস 


প্রথম খণ্ড 2 দ্বিতীয় ভাগ 


ভারত সরকারের শিক্ষাধিকারিক বিভাগের উদ্ভোশে 
লিখিত ও প্রকাশিত 





সম্পাদকমগ্ডলী 
সর্বেপলী রাধাকৃষ্ণন্‌ 
সভাপতি 
আর্দেশির রাতন্জি ওয়াডিয়া, 
ধীরেক্দ্রমোহুন দত 
হুমায়ুন কবির 


গরম, দি, সরকার জ্যাও দে গাহিতেটি দিনটি 
কলিব্মতা ৯২ 


বাংল। সংস্করণের সম্পাদকমণ্লী 
হুমায়ুন কবির 
সভাপতি 
ব্লাসবিহারী দাস 


অমিয়কুমার মজুমদার 
কর্মসচিব 


প্রথম সংস্করণ 
কাতিক, ১৩৬৮ 


মুল্য ঃ আট টাকা 


এম. সি. সরকার আযাণ্ড সন্দ প্রাইভেট লিঃ, ১৪ বঙ্কিম চাঁটুজ্যে স্ত্রী, কলিকাতা ১২ 
হুইতে শ্রীস্থপ্রিয় সরকাঁর কর্তৃক প্রকাঁশিত এবং ক্যাশ প্রেস, ৩৩।বি, মদন মি লেন, 
কলিকাতা ৬ হইতে প্রীপ্রভাতকুমার চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ৪০ হইতে ৬৭ ফর্ম এবং 
অবশিষ্ট অংশ বনশ্রী প্রেস, ৮০।৬, গ্রে স্ত্রী, কলিকাতা ৬ হইতে শ্রীগোরীশক্কর 

রায়চৌধুরী কর্তৃক মুত্রিত। 


১৬। 


১৭ | 


১৮। 


১৯। 


২৯ । 


| 


২৩। 


২৪ | 


৫ | 


সূচীপত্র 
ছিতীয় খণ্ড 
ভারতীয় দর্শনের পরম্পরাগত হি্বাে 


পূর্ব- মীমাংসা ভর ও ৩১৪ | 
লেখক £ ভি এরামন্বামী আঁকার, এম) এ. বেদ-মীমাংসা শিরোমণি, মীমাংসা-বিশারদ 
সংস্কৃতসাহিত্যের অধ্যাপক, ত্রিবাঙ্থুর বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিবান্্রাম 


বেদাস্ত-অছৈতবাদ (ক) শংকর হিরন ৪ ছিল ৩৩২ 
লেখক £₹ অধ্যাপক এস্‌, রাধাকুষ্ণ 

ভারতীয় রাজদুত, মস্কো 

ঞঁ (খ) শংকরোত্র যুগ 522 হত টা টি ৩৫২ 


লেখক £ পি, টি, রাজু, এম, এ, পি. এচও ভি, 

দর্শনের অধ্যাপক, রাঙ্সস্থান বিশ্ববিদ্যালয়, যোধপুর 

বেদাস্ত-বৈষণব (ঈশ্বর-বাদী ) সম্প্রদায়সমূহ (অ) রামাচুজ (বিশিষ্টাছৈতবাদ ) ৩৭৫ 
লেখক £ পি, এন, শ্রীনিবাসাচারী, এম, এ, 

দর্শনের অধ্যাপক € অবসরপ্রাপ্ত ) পাচায়িপ পা কলেজ, মাদ্রাজ 

এ (আ1) মধ্ব € দ্বৈত) নি নব উর ৩৯৭ 
লেখক £ এইচ, এন্‌ রাঘবেন্ত্রচার, এম, এ 

দর্শনের সহকারী অধ্যাপক £ মহারাজার কলেজ মহীশূর 

এ (ই) নিষ্বার্ক (দ্বৈতাদ্বৈতবাদ ) *** ** - ৪১৭ 
লেখিকা! ঃ রম! চৌধুরী, এম.এ, ডি-ফিল € অক্দ্ফোর্ড ) 

দর্শনের অধ্যাপিকা, লেডী ব্রাবোর্ণ কলেজ, কলিকাতা 

এ (ঈ) বল্পভ ( শুদ্ধাদ্বৈত ) ডি ডঃ হি ৪৩১ 
লেখক £ গোবিন্দলাল হরখৌবিন্দ ভাট, এম, এ 1 
রীডার, সংস্কৃত সাহিত্য, এম এস্‌ বিশ্ববিদ্যালয়, বরোদ। 

এ (উ) চৈতন্য ( অচিস্ত্য-ভেদাভেদ ) *** ০ *** ৪৪৫ 
লেখক £ স্ুশীলকুমার মৈত্র, এম-এ, পি, এচও ডি (কলিকাতা) 

দর্শনের অধ্যাপক, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 


শৈব এবং শাক্ত সম্প্রদায় কে) শৈব-সিদ্ধাস্ত ৮০" ৮০, ৪৫৭ 
লেখক £ টি. এম্‌. পি. মহাদেবন্‌ 
এঁ (খ) কাশ্মীর শৈব-দর্শন “০. *** “০. ৪৭২ 


লেখক ₹ কে, সি, পাণ্ডে, এম, এ, পি, এচ. ডি, ডি লিট, এম. ও; এল্‌ শাস্ত্ৰী 
রীডার, সংস্কৃত সাহিতা, লক্ষ বিশ্ববিদ্ভালয় 


০] 


হ৬। 


পু | 


৮ | 


২৯ | 


৩১। 


৩২। 


৩৪ । 


উর খে)বীর শৈব-দর্শন. ...... ১২ ০৮ 2. এপ 
লেখক ২ শ্রীকুমারম্বামীজি, বি, এ | | 

অধাক্ষ, নব-কল্যাণ মঠ, ধারওয়ার € বোম্বাই ) | 
এঁ ঘে) শাক্ত দর্শন -*, *** ** রি মগ 


লেখক £ গোগীনাথ কবিরাজ, এম, এ, ডি, জিট, মহামহোপাধ্যায 
অবসরপ্রাপ্ত অধাক্ষ, গবন্মে্ট সংস্কৃত কলেজ, বারাণসী 


তৃতীয় খণ্ড 
ভারতীয় চিন্তাধারার অন্তান্ত কয়েকটি উদ্ভাবন? 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিস্তাধার। ৮** ৩ 
কে) গণিত 

লেখক $ এ, এন. সিংহ, ডি, এস-সি 

অধ্যাপক এবং গণিত পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যক্ষ, লক্ষে বিশ্ববিদ্ভালয়, লক্ষে 

পরিশিষ্ট £ ভারতীয় গণিতের কয়েকটি অসাধারণ সম্পাদন ***' ৩৩ 
লেখক £ আর. গুরু, এম এ. পি এচ. ডি (লগুন) 

সহকারী অধ্যাপক, গণিত, পাটনা কলেজ, পাটন। 

এঁ (খ) অন্যান্য বিজ্ঞান এ এত টা টিন ৪১ 
লেখক £ বি. বি. দে, ডি, এস-মি (লগুন ), এফ, আর আই, সি (লগুন ), এফ, এন, আই 
শিক্ষাবিভাগের অবসর প্রাপ্ত অধিকতী, মান্রাজ 


ভারতীয় সৌন্দর্ধতত্ব নি রি ৪ ৮০ ৬১ 
লেখক £ কে,সি, পাণ্ডে 
এঙ্সামিক চিস্তাধারার বিকাশ *** *** ০** ৮২ 


লেখক £ ডাঃ তারাচাদ, এম, এ, ডি-ফিল, (অক্সফোর্ড) ভারত সরকারের শিক্ষাসম্পর্কে পরামর্শ দাতা 
সহায়ক £ এস, কমিল হুসেন, এম এ, উকিল, ঘোসিপুর, গোরক্ষপুর, উত্তর প্রদেশ 

শিখ-দর্শন ৪ হর 2 রী ১২৩ 

লেখক £ ভাই ষোধ সিং, এম, এ 

অধাক্ষ, খালসা কলেজ, অমুতসর 

সমসাময়িক ভারতীয় চিস্তাধার ৮০, ৮** *** ১৩৬ 
লেখক ঃ (অ)ডাঃ পি টিরাজু 

লেখক £ ( অ1) ডাঃ কে, এ, হাকিম 

হায়দ্রাবাদের ওসমানিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তন অধ্যাপক 


জা 


৩৭ | 


৩৮। 


৩৯। 


চতুর্থ খণ্ড 
চীন এবং জাপানের চিন্তাধারা 


চীন দেশীয় চিস্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য “০, 
লেখক £ ডাঃ লো চিন্না-লুয়েন 

ভারতে চীনা রাষ্ট্রদূত 

কনফিউসিয়ান-বাদ ও. তাও-বাদ 

লেখক £ ফুঙ. উ-লান, বি, এ, পি এচ. ডি, এল এল ভি, 

দর্শনের অধ্যাপক, সিং হয়! বিশ্ববিষ্ভালয়, পিকিং (চীন). 
চীনদেশের চিস্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 

লেখক £ প্রবোধচন্ত্র বাগচী, এম, এ € কলিকাতা ) ভি. লিট. € প্যারিস) 
অধ্যক্ষ, গবেষণ! কেন, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন 

চীনের দশটি বৌদ্ধসম্প্রদায় 

লেখক : সুকুমার দত্ত এম-এ, পি এচ. ডি (কলিকাতা) 

প্রাস্তন অধাক্ষ, রামজাস কলেজ, দিল্লী 

জাপানের চিস্তাধার। 

লেখক £ অধ্যাপক ডি, টি, হুজুকী, 

কামাকুরা, জাপান 


১৮৮ 


৩২ 


৫৪ 


প্রথম খণ্ড $$ ছিতীয় ভাগ 
ধাহার। অঙ্থবাদ করিয়াছেন 
অমিয়কুমার মভুমদার, দক্ষিণারগন ভট্টাচার্য, নীরদবরণ চত্রুবর্তা, 
ন্বকুমার দত্ত, হরপ্রসাদ মিত্র, প্রবোধেন্দুনাথ ঠাকুর, গ্রবোধচন্দ্র বাগচী, 
মনোরপ্তন বনু, রম! চৌধুরী, কালিদাস মুখোপাধ্যায়, জ্যোতির্মন় ভট্টাচার্য, 
যোগেশচন্দ্ চক্রবর্তী, সুবে।ধচন্দ্র রায় চৌধুরী, কল্যাগচজ্জর গুপ্ত 


পাচ পশা শা হব ন্িত 
টা 


ূর্বমীমাংসা 


১। ভূমিকা 

তারতের পূর্ব-মীমাংসা "দর্শন বেদের পূর্ববতী অংশ, অর্থাৎ কর্মকাণ্ডে বণিত ধর্মের 
হ্বরূপসম্পর্কে অনুসন্ধান করিয়া থাকে? অন্যদিকে উত্তর-মীমাংসা পরবর্তী অধ্যায়, অর্থাৎ 
জ্ঞানকাণ্ডে বণিত ব্রঙ্গের ম্বরূপ অনুসন্ধান করে। ধর্মসম্পর্কে বেদকে একমাত্র প্রমাণ 
স্বীকার করে বলিয়া পূর্ব-মীমাংসাকে আস্তিক দর্শননূপে গণ্য করা হয়। “আস্তিক্য' 
এই শব্দটি পরলোক ও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস বলিয়া ব্যাখ্যাত হইয়া থাকিলেও-- 
সাধারণ অর্থে উহা! বেদপ্রামাণ্যের শ্বীকৃতি বুঝায় । পরমতত্বের চরম জ্ঞান এবং উপল্ধি 
দ্বারা মানুষের পরমমুক্তি-সাধনই এই আস্তিক দর্শনগুলির লক্ষ্য-_দর্শন' শবর্টির দ্বারা 
ইছারই ওরুত্ব স্চিত হয়|? 

জৈমিনির 'পূর্ব-মীমাংস! ক্ুত্র' (আঃ ৪০০ খৃঃ পৃঃ) ।বাদরায়ণ সহ বহু আচার্ষের 
উল্লেখ রহিয়াছে; বাদরায়ণ আবার জৈমিনির উল্লেখ করিয়াছেন-__তাই তাহারা 
সমসাময়িক বলিয়াই মনে হয়। হ্মত্র সমূহের উপয় সর্বাপেক্ষা বিস্তারিত তায্য হইতেছে 
দ্বাদশ অধ্যায় সমন্বিত শবরস্বামীর ভাষ্য (আঃ ২০০ খ্বঃ), যদিও পূর্বোল্লেখ প্রসঙ্গ হইতে 
বোধায়ন, উপবর্ষ ও তবদাসের বৃত্তিসমূহের কথা জানা যায়। ভর্তৃমিত্র এবং ভর্ভৃহরিও 
বৃত্তিকাররূপে কথিত হইয়া থাকেন । 

সপ্তম শতাব্দীতে কুমারিল ভট্ট তাহার শ্লোকবাতিকে শবর-ভাষ্কের প্রথম খণ্ডের 
প্রথম পরিচ্ছেদের তন্ত্রবাতিকে প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের দ্বিতীয় অধ্যায় হইতে 
তৃতীয় খণ্ড ও টুপটীকায় পঞ্চম হইতে দ্বাদশ খণ্ডের উপর ব্যাখ্যা রচনা করেন। 
তাহার বৃহটাকা এবং মধ্যমটাকায়ও ইহার উপর ভাষ্য ছিল, তবে তাহা বিনষ্ট হইয়া 
গিয়াছে । কুমারিলের শিষ্য গুরু নামে পরিচিত প্রভাকর শবরভাম্তের উপর বুহতী 
( নিবন্ধন ), লঘনী (বিবরণ ) ছুইখানি স্বতন্ত্র টাক! রচনা করেন। এই ছুইখানির উপর 
শালিকনাথ যথাক্রমে খভুবিমলা ও দীপশিখা! নামে টীকা রচনা করিয়া গিয়াছেন। 
মওনমিশ্র এবং তট্টোংবেকও কুমারিলের শিষ্য । বিধিবিবেক, ভাবনাবিবেক, 
বিভ্রমবিবেক এবং মীমাংসানুক্রমণী মওনমিশ্রের গ্রন্থ । তট্রোংবেক গ্লোকবাতিক 


৩১৪ 


পূর্ব-মীমাংসা ১ প্রযাণসমূহ--ানতত্ব 


ও ভাবনাবিবেকের উপর টীকা রচনা করিয়াছিলেন । তাহাকে কেহ কেহ ভবভূতি 
বলিয়। মনে করেন। শালিকনাথ প্রভাকরের মত ব্যাখ্যা! করিয়া প্রকরণপঞ্চিকা- 
নামক গ্রন্থ রচনা করেন । বাচম্পতিমিশ্র (আঃ ৮৫০ থুঃ) বিধিবিবেকের উপর স্থায়- 
কণিকা-নামক একখানি তাষ্য এবং তত্ববিন্দু-নামক একখানি পুস্তিকা রচন। করেন । 

১০০০ খুষ্টাব্দের মধ্যেই দেবস্বামী সংকর্ষকাণ্ডের উপর একখানি ভাষ্য এবং 
স্থচরিতমিশ্র ও পার্থসারথিমিশ্র শ্লোকবার্তিকের উপর ক্রমান্বয়ে কাশিক! ও 
হ্যায়রত্বীকর নামক ভাষ্য রচনা করেন। পার্থসারথিমিশ্র কুমারিলসম্মত অধিকরণ- 
গুলির ব্যাখ্যা করিয়া সত্রগুলির উপর শাস্ত্রদীপিকা-নামক একখানি তাব্যঃ টুপটাকার 
উপর তন্ত্ররত্ব এবং প্রকরণপঞ্চিকার অন্নকরণে গ্চায়রত্বমালাও রচনা করিয়াছিলেন । 
তবনাথমিশ্রের স্তায়বিবেক (প্রাভাকর-মতবাদতভুক্ত ), তট্টসোমেশ্বরের স্তায়সধা এবং 
পরিতোবমিশ্রের অজিতা-_-উভয়ই তস্ত্রবাতিকের উপর লিখিত ভাষ্য--এই যুগের 
গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ । নন্দীশ্বরের প্রভাকরবিজয়, চিদ্বানন্দের নীতিতত্বাবির্ভাব ( ভাষ্ট- 
সম্প্রদায়ভূক্ত ) এবং তষ্টবিষ্ণুর নয়তত্তবসংগ্রহ (প্রাতাকর-সম্প্রদায়ের) প্রভৃতি পুস্তিকা; 
স্ত্রাবলীর প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয়” তৃতীয় ও চতুর্থ পাদের উপর মুরারিমিশ্রের 
ত্রিপদীনীতিনয়ন-নামক ভাধ্য, মাধবাচার্ধের ম্যায়মালাবিস্তরঃ অগ্গ্যয় দ্ীক্ষিতের 
শান্্দীপিকার উপর বিধিরসায়ন ও ময়ুখাবলি-নামক ভাষ্য, বেহ্ছটেশ্বর দীক্ষিতের 
টুপটাকার উপর বার্তিকাতরণ-নামক ভাষ্য, খগুদেবের ভাট্ট্রকৌস্তভ, ভাট্টদীপিকা ও 
ভাট্ররহন্ত, নারায়ণভ্র ও নারায়ণপণ্ডিতের মানমেয়োদয়, শঙ্করভট্রের বালপ্রকাশ; 
আপদেবের মীমাংসান্তায় প্রকাশ, লৌগাক্ষিভাস্করের অর্থসংগ্রহ, সোমনাথের ময়ুখ- 
মালিকা-নামক শাস্ত্রদীপিকার উপর লিখিত একখানি ভাষ্য, ভাষ্টদীপিকার উপর 
শদ্ভুতট্রের প্রভাবলী-নামক ভাষ্য এবং প্রাতাকর-সম্প্রদায়তুক্ত রামাহ্ুজাচার্যের 
তন্তরহস্ত--এইগুলি হইতেছে কুমারিলপরবর্তা যুগের বিশিষ্ট গ্রন্থ; এইগুলিতে 
প্রমাণসমূহের এবং পূর্ব-মীমাংসায় গৃহীত শাস্তরার্থনির্ণয়ের গুরুত্বপুর্ণ নিয়মগ্লির ব্যাখ্য। 
করা হইয়াছে ।২ 


২। প্রমাণসম্মহ--জ্ঞানতত্তব 


উপবর্ষ, শবর ও কুমারিল ছয়টি প্রমাণের উল্লেখ করেন, যথা-__ প্রত্যক্ষ, অহ্মান, 
শব্দঃ উপমান, অর্থাপত্তি ও অন্ুপলন্ধি। প্রভাকর শুধু প্রথম পাঁচটি প্রমাণই স্বীকার 
করেন ১ কারণ তিনি অভাবকে পৃথক পদার্থ বলিয়া স্বীকার করেন নাঁ। সাধারণতঃ 


"৬০৬ 


'প্রাঙয ও খ্বাশ্চাত্য ঘর্শনের ইতিহাস 


প্রমাকরণন্ধপে প্রমাণের লক্ষণ দেওয়া হয় । প্রভাকর প্রমাকে অবিসংবাদী জ্ঞানন্ধপে 
ব্যাখ্যা করিয়াছেন । তাহার নিকট স্মরণ ভিন্ন সকল জ্ঞানই অবিসংবাদী । 
কুষমারিলের মতে অনধিগত এবং অবাধিত-বিষয়ক জ্ঞানই প্রমা । অহৃবাদ ( পুনরুক্তি ) 
ও ভ্রম প্রমা নহে। 

জ্ঞানের শ্বতঃপ্রামাণ্যবাদ, অর্থাৎ সকল জ্ঞান প্রমান্ধূপে উৎপন্ন এবং প্রমারূপে 
জ্ঞাত হয়--এই মত মীমাংস! দর্শনের ভিত্তিস্থানীয় | প্রমাসম্বদ্ধে প্রাভাকরদের ধারণা 
বিশেষভাবে স্বতঃপ্রামাণ্যবাদের পরিপোষক। তাহার] প্রথমতঃ স্বপ্রমাণ শ্রুতি 
হইতে লব্ধ জ্ঞানের ক্ষেত্রে এইমত প্রতিষ্ঠা করিয়৷ পরে অন্যান্য জ্ঞানের ক্ষেত্রেও 
তাহা প্রয়োগ করে। কারণসামগ্রীর দ্বারা উৎপন্ন হইলে জ্ঞান বিষয়কে ক্বতন্ত্রভাবে 
প্রকাশ করে। ম্বতরাং শ্বভাবতঃই উহার প্রামাণ্য থাকে ; জ্ঞাতৃদোব প্রভৃতি এবং 
বাধক জ্ঞান না থাকিলে জ্ঞান নিরস্তরই অবিসংবাদী থাকে । বেদবাক্য হইতে যে 
সকল জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তাহা অন্য জ্ঞান দ্বার| বাধিত নহে; ক্গতরাং তাহার! 
নিরস্তরই অবিসংবাদী। জ্ঞানের অপ্রামাণ্য ম্বপ্রকাশ নহে, কারণ ইহ! জ্ঞাতার দোষ 
প্রভৃতি এবং বাধক জ্ঞান দ্বারাই নির্ণীত হয় ।৩ 

জ্ঞান যেমন ্বপ্রমাণ, তেমনি স্বপ্রকাশও বটে। প্রাভাকরগণ জ্ঞানের তরিপুটা 
দ্বীকার করেন, অর্থাৎ প্রত্যেক জ্ঞানের তিনটি দিক আছে, যথা- _জ্ঞাতা, জ্ঞেয় ও 
জ্ঞান। “আমি ইহা জানি” ( অহম্‌ ইদং জানামি ) এইক্ধপ জ্ঞানের তিনটি বিষয়, যথা 
-(১) অহম্‌ অথব] জ্ঞাতা, (২) ইদম্‌ অথবা! জ্ঞেয় বিষয় এবং (৩) জ্ঞান। 
সর্বপ্রকার জ্ঞানে আত্ম। বা উহার আশ্রয় সাক্ষাৎ্ভাবে জ্ঞাত হয়, কিন্ত জ্ঞানের প্রকার- 
অনুসারে তাহার বিষয় পরোক্ষ অথব! অপরোক্ষ হইয়! থাকে । জ্ঞান কেবলমাত্র 

ংবিদূরূপেই জ্ঞাত হয় ইহার সংবেছ্ন্ধপে নহে। জ্ঞান স্বীয় ম্বপ্রকাশত্ব দ্বারা 

আপনাকেই (জ্ঞানরূপে ) এবং আত্মাকে (জ্ঞাতৃরূপে ) ও বিষয়কে ( জ্ঞেয়ন্ধপে ) 
প্রকাশ করে |৪ 

কিন্ত তাট্্রগণ বলেন যে, জ্ঞান কখনও সাক্ষাৎ ভাবে জ্ঞাত হয় না, ইহ] জ্ঞান স্বারা 
উৎপার্দিত বিষয়ের জ্ঞাততা হইতে অন্ুমিত হয় । জ্ঞানক্রিয়া জ্ঞাত! ও জ্ঞেয় বস্তুর 
সম্বন্ধ বুঝায় এবং এই সন্বন্ধজ্ঞান হইতে জ্ঞাতার ক্রিয়! যে জ্ঞান তাহা অঙ্থমান করিতে 
পারি। “ঘটটি আমা কর্তৃক জ্ঞাত হয়,» এইরীপ অহভব তখনই সম্পূর্ণভাবে বুঝান 
যায়; যখন জ্ঞাতৃজ্ঞেয়-সন্বন্ধ জ্ঞাত হয়। ভাট্টগণ জ্ঞানের শ্বপ্রকাশত্ব অস্বীকার করেন, 
ফেন না তাহারা বৌদ্ধগণের বিজ্ঞানবাদ অথব! শূন্তবাদের বিরুদ্ধে বাহজগতের 
জ্ঞাতৃনিরপেক্ষ সত্ব! প্রমাণ করিতে চাহিয়াছিলেন। . 


৩২৬ 


পূর্ধ-মীনাংস। ১ প্রাণলমূহ-দানতন্ব 


মুরারিমিশ্র মীমাংস! দর্শনের তৃতীয় একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি । তিনি জ্ঞানের 
স্বতঃপ্রামাশ্য শ্বীকার করেন এবং বলেন যে, জ্ঞান ইহার প্রামাণ্যের সহিত 
অহ্ব্যবসায় দ্বারা জ্ঞাত হয় ।৫ | 

পুর্বমীমাংসার চতুর্থ স্কত্রে বলা হইয়াছে যে, প্রত্যক্ষঙ্ঞান বিষয়ের সহিত 
ইন্দ্রিয়ের, ইন্দ্রিয়ের সহিত মনের, মনের সহিত আত্মার সন্িকর্ষ দ্বারা উৎপন্ন হয় ।৬ 
ইহ! ন্তায়মতের অস্থরূপ | ন্যায়ের সঙ্গে মীমাংসার পার্থক্য শুধু সন্নিকর্ষের শ্বর্ূপ ও 

খ্য।-বিষয়ে। নৈষ্ায়িক ছয় প্রকারের সন্নিকর্ষ হ্বীকার করেন এবং ভাষ্ট ও 

প্রাভাকরদের মতে সন্িকর্ষ তিন প্রকার । সন্নিকর্ষের ব্যাখ্যায় প্রাভাকরর! যেখানে 
সমবায়ের কথা বলেন, ভাট্টরা! সেখানে তাদাত্ব্য অথবা! ভেদাতেদের কথ! বলেন। 

প্রত্যক্ষজ্ঞান দুই প্রকার, নিবিকল্পক এবং সবিকল্পক | যে জ্ঞান প্রথমে বিষয়ের 
আলোচন বা অন্বভব মাত্র বলিয়! প্রতিভাত হয় এবং যাহা নবজাত শিশুর চতুষ্পার্খস্থ 
দ্রব্যের জ্ঞানের অঙ্থরূপ তাহাকে কুমারিল নিবিকল্পক প্রত্যক্ষ বলিয়া ব্যাখ্যা 
করিয়াছেন । এই জাতীয় প্রত্যক্ষে জাতি এবং বিশিষ্ট ধর্ম ইহাদের কোনটিই জ্ঞানের 
বিষয় হয় না । এখানে জ্ঞানে যাহা উপস্থিত হয় তাহা হইল এই উভয় ধর্মের 
আশ্রয্ীভূত ব্যক্তিমাত্র ।৭ প্রভাকরের মতে নিধিকল্পক প্রত্যক্ষে জাতি এবং বিশিষ্ধর্ম 
উভয়ই বিদ্ধমান থাকে, কিন্ত এই প্রত্যক্ষে বিষয় যথার্থই কোন বিশেষ জাতির 
অন্তর্গত এবং ব্যক্তিগত গুণসম্পন্ন বলিয়া অঙ্ভূত হয় না; কারণ, একই জাতির 
অন্তর্গত অন্যান্ত ব্যক্তির সহিত তুলন| না করিলে ইহা জান! যায় না।৮ কুমারিলের 
মতে সবিকল্পক প্রত্যক্ষে ব্যক্তির জাতি এবং বিশিষ্ট ধর্ম উতয়ই উপস্থিত থাকে । 
নিধিকল্পক প্রত্যক্ষ ইহার তিস্তি। নিবিকল্পক প্রত্যক্ষে বস্তর জাতি নাম এবং 
ধর্ম গুলি অস্ফুটভাবে জ্ঞাত হয়। প্রভাকরের মতে সবিকল্পক প্রত্যক্ষে ছুই প্রকার 
জ্ঞানের মিশ্রণ আছে। কারণ, উহাতে অন্যান্য যেসকল বস্তর সহিত প্রত্যক্ষ 
বস্তটির তুলন1 কর! হয় তাহাদের ্মরণও থাকে । 

ভ্রম যর্দি সকল জ্ঞানই স্বতঃপ্রমাণ হয় তবে তথাকথিত ভ্রান্তজ্ঞান কি' করিয়। 
সম্ভব হয়? “ইহা! রজত” (ইদম্‌ রজতম্‌) এই তথাকথিত ভ্রাস্তজ্ঞান প্রভাকরের 
মতে একটি অখণ্ড জ্ঞান নহে বরং "্মরণ ও প্রত্যক্ষের সংমিশ্রণ । শুক্তি ও রজতে 
বিদ্ধমান কতকগুলি সমান. ধর্মধহ” “ইহা”--এই অংশটুকু প্রত্যক্ষ হয়; এবং এই 
সমানধর্সের জ্ঞানই পুর্ব অগ্নুভবের ধারণার উদ্রেক করে এবং তাহাতে রজতের স্মরণ 
হয়। অতএব, ইহা! রজত” এই শ্রাস্তজ্ঞানের ক্ষেত্রে “ইহা” এই প্রত্যক্ষ-জ্ঞানের 
অব্যবহিত পরেই রজতের স্মরণ হয়। এই ছুইটির মধ্যে প্রথমটি যথার্থ যেহেতু ইহা 


৩১৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


কদাচ বাধিত হয় ন1। দ্বিতীয়টি পূর্বে পরত্র দৃষ্ট রজতের স্মরণ। কিন্তু এই 
শ্বত রজত যে অতীত কাল ও বিশিষ্ট দেশে দৃষ্ট হইয়াছিল তাহার সম্বন্ধ হইতে বজিত 
হইয়াই স্মরণের বিষয় হয় (প্রমুষ্টতস্তাক স্মরণ )। এই ছুইটি জ্ঞানের ভেদ জানা 
ন! থাকায় € তেদাগ্রহ ) জ্ঞাতাতে রজত গ্রহণের ইচ্ছাজনিত ক্রিয়া উৎপন্ন হয়। ভ্রম 
সম্বন্ধে এই মত অখ্যাতিবাদ অর্থাৎ স্মৃতি ও প্রত্যক্ষের ভেদের খ্যাতির বা জ্ঞানের 
অভাব বলিয়! প্রসিদ্ধ। ভ্রমে কেবলমাত্র ছুইটি পৃথথকৃ জ্ঞানকে অবিবিক্তভাবে 
মিশাইয়া ফেল হয় । 

ভ্রমকে ভাট্ট জন্প্রদায় বিপরীতখ্যাতি বলিয়া ব্যাখ্য। করিয়াছেন । এই মত 
নৈয়ায়িকের অন্তথাখ্যাতিমত ভিন্ন অন্ত কিছু নহে । যখন শুক্তিকে রজত বলিয়া 
অনুভব কর! হয়, তখন “ইহা রজত” এই ভ্রান্তজ্ঞানের উদ্ভব হয়। এক্ষেত্রে “ইহ!” 
বলিতে জ্ঞাতার সন্মুখস্থ শ্বেতবস্তকে বুঝায় । জ্ঞাতার নেত্রদোষের জন্য শুক্তির 
বিশিষ্ট ধর্মগুলি চোখে পড়ে না । বাস্তব রজতে বিদ্যমান রজতত্ব এখানে শুক্তিতে 
বিছ্ধমান এই তাবে উপস্থাপিত হয়। ভাট্টমতে শুক্তি এবং রজতত্বের সম্বন্ধ অসৎ । 
কিন্ত, স্ায়মতে এই রজতত্বকে অন্তত্র বিদ্যমান বলিয়! এবং অলৌকিক প্রত্যক্ষের 
বিষয় বলিয়! ব্যাখ্যা কর। হয় |৯ 

অন্মানে এমন এক বিষয়ের জ্ঞান হয় যাহার সহিত ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শ নাই । এই 
বিষয়টি হইতেছে সাধ্য। হেতু ও সাধ্যের সন্বন্ধ জান! থাকিলে উহাদের একটির 
( হেতুর ) প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে অপরটির (সাধ্যের ) জ্ঞান উৎপন্ন হয়।১* ভাষ্টমতে 
ব্যাপ্তির লক্ষণ হইতেছে “ম্বাভাবিকঃ সম্বন্ধ এবং 'ম্বাভাবিক'এর অর্থ অপ্রাসঙ্গিক 
পদার্থের সশ্বন্ধ রহিত (উপাধিরহিতম্‌ )) বিভিন্ন কাল ও দেশের এবং বহুদৃষ্টাস্তে 
€ ভূয়োদর্শন ) হেতু ও সাধ্যের সহচার দর্শনের দ্বারা এই উপাধিরাহিত্যের জ্ঞান হয়। 
চিদানন্দ ভূয়োদর্শন ব্যতিরিক্ত তর্ককেও উপাধিরাহিত্য নির্ণয়ের অন্যতম উপায় 
বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । “যেখানে যেখানে ধূম সেখানেই অগ্রি”__এই বাক্যটি 
সাধারণতঃ বিভিন্ন বিশিষ্ট স্থলে পরিদৃষ্ট ছুই পদার্থের নিয়ত-সশ্বন্ধের জ্ঞাপক। 
যেখানে হেতু ও সাধ্যের ব্যাণ্চি সম্বন্ধে ব্যভিচার সংশয় উৎপন্ন হয় ন!, সেস্বলে 
এইন্প ব্যাপ্তিজ্ঞানই অহ্বমানের পক্ষে পর্যাপ্ত কারণ হইতে পারে । সামান্ত লক্ষণ 
প্রত্যাসত্তির সাহায্যে ল্ধ সার্বত্িক নিয়মনূপে ব্যাণ্ডিরজ্ঞান যে অন্ছমানের পক্ষে 
অপরিহার্য এই স্তায়মত ভাট্টসম্প্রদায় স্বীকার করেন না; কিন্ত তাহাদের মতে এইকব্প 
সার্তত্রিক নিয়মের জ্ঞান অন্নমান হইতেই উৎপন্ন হয়। 

কারণের সহিত কার্ষের, অঙ্গীর সহিত অঙ্গের এবং দ্রব্যের সহিত তদাশ্িত 


৩১৮ 


পূর্ব-দীমাংস! £ শ্রমাপসমূহ---জ্ঞানতন্ব 

গুণের যে সন্বস্ধ, ব্যাপ্তিও সেইন্ধপ একটি অব্যভিডারী, সত্য ও স্থায়ী সম্বন্ধবিশেষ-" 
ইহাই প্রাভাকর-সন্প্রদায়ের মত। স্বান ও কালজনিত যে পরিচ্ছন্নতা কার্ধাদির 
সহিত জড়িত, ইহাকে তাহা হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত করিলে ইহ! একপ্রকার সাধিক 
সামান্তীকরণের পর্যায়ে উপস্থিত হয়। ব্যাপ্তিজ্ঞানে সাধ্য ও হেতু এই ছুইটির বোধ 
মুখ্য, এবং তাহাদের ও তাহাদের সহিত জড়িত স্থান ও কালের পারস্পরিক সম্পর্ক 
গৌণ। এইগুলিকে কিন্ত পরস্পরের সহিত অস্বিত করা যায় না। পর্বতে ধূম 
দেখিলে অগ্নির অবস্থান অন্ৃমান কর! যায় বটে, কিন্ত এই অনুমান হইতে অজ্ঞাতপুর্ব 
কোন কিছুর জ্ঞান হয় ন। ইহাই প্রাভাকর-সন্প্রদায়ের মত। তাহাদের যুক্তি হইল 
এই যে, এখানে অনুমানের বিষয় নূতন কিছু নয়; ইতঃপূর্বেই প্রত্যন্ষীকরণের দ্বার! যে 
সামান্তজ্ঞানে আমর! উপস্থিত হ্ইয়াছি, এই বিষয়টিও তাহারই অঙ্গীভূতমাত্র | 
তথাপি বলিতে হইবে, অনুমান সিদ্ধ ; কারণ ইহা! স্মৃতি নহে । প্রাতাকর-সম্প্রদায় 
বলেন যে, প্রমাকে যে অজ্ঞাতপুর্ব বিষয় উপস্থাপিত করিতেই হইবে, এরূপ কোনও 
ধরাবাধ। নিয়ম নাই । অন্মমানলব্ধ যে অভিজ্ঞতা তাহাকে তাহার গৃহীত-গ্রাহী বা 
€পুনরভিজ্ঞতা* শব্দের দ্বারা অতিহিত করেন। ইহ! হইতে জ্ঞানের অগ্রগতি স্ুচিত না 
হইলেও এটুকু বুঝা যায় যে, একটির জ্ঞান হইতে তাহারই সহিত অব্যভিচারী তাবে 
সংসক্ত আর একটির জ্ঞানে উপনীত হওয়া চলে। ব্যাপ্ডিজ্ঞানের পক্ষে সাধ্য ও 
হেতুর একবার দর্শনই যথেষ্ট । ভূয়োদর্শনের প্রয়োজনীয়তা এইটুকু যে, উহা! হইতে 
আমর! দেখাইতে পারি যে, প্রত্যক্ষীকরণের দ্বার! যে সম্বন্ধ আমরা জানিতে পারিয়াছি 
তাহা কোনও বাহ্‌ ঘটনার দ্বারা সাধিত হয় নাই ।১১ 

এইবার শব্দ বা মৌখিক প্রামাণ্যের কথায় আস! যাক। শব্দজ্ঞানের উপর 
নির্ভর করিয়। জ্ঞানেন্দ্িয়ের সহিত সংযোগ নাই এমন কোনও বিষয়ের জ্ঞান যাহা 
উৎপন্ন করে, তাহাই শাস্ত্র বা বৈদিক শব । উপবর্ষ শাস্ত্র বা বৈদিক-শব্দের 
এইন্ধপ লক্ষণই দিয়াছেন ।১২ টৈদিক ও অবৈদিক দ্বিবিধ শব্দকেই কুমারিল প্রমাণ 
বলিয়া! গ্রহণ করিয়াছেন, সুতরাং তিনি উক্ত লক্ষণ এই দ্বিবিধ শবের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ 
করিয়াছেন। প্রভাকর অবৈদিক শব্দের সিদ্ধত। স্বীকার করেন না ; তিনি মনে করেন, 
বৈদিক শব্দই প্রকৃত শব্দ-প্রমাণ। কুমারিল এবং প্রতাকর উভয়েই শাস্ত্কে- বেদ, 
স্বৃতি, আচারকে--অতিপ্রার্কত ধর্মের প্রমাণ বলিয়! গ্রহণ করেন 1১৩ 

নৈয়ায়িক ও বৈদাস্তিকগণের মতে বেদসমূহ ঈশ্বরের স্থষ্টি। মীমাংসকগণ কিন্ত 
মনে করেন যে, বেদসমূহ শ্বয়ংপ্রকাশ এবং কোনও প্রাকৃত বা অতিপ্রাকৃত পুরুমের 
রচনা নহে। যদি বেদসমূহ পৌরুতেয়, অর্থাৎ কোনও পুরুষকর্তুক রচিত হইত, তাহা 


৩১৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


হইলে রচয়িভূুগণের নাম অবরকাল্টীন সমাজের জানা থাকিত 1১৪ আজও যেমন 
দেখ! যায় তেমন ভাবেই অনাদিকাল হইতে বেদসমূহ গুরুশিব্য-পরম্পরায় বিধৃত 
হইয়। আসিয়াছে ।১৫ কাধ, কাঠক প্রভৃতি শাখাসমুহের নামগুলির তত্তৎশাখা-প্রবর্তক 
প্র নামের আচার্ধগণের উপদেশের উপর ভিত্তি করিয়াই দেওয়া হইয়াছে ।১৬ 

বৈদিক গ্রন্থসমূহে এবং লৌকিক ভাবায় শব একই | কুমারিলের মতাহসারে 
শব্দসমূহ অভিধা-শক্তির দ্বারাই নিজেদের অর্থ প্রকাশ করে এবং আকাক্ক1, যোগ্যতা, 
সন্গিধি, শান্বোধ-_-যেগুলি বাক্যে পদার্থের পারস্পরিক সম্বন্ধকে উপস্থাপিত করে-- 
সেইগুলিই পদার্থ-স্বতির উৎস । ইহাই ভান্ট-সম্প্রদায়ের অভিহিতাম্বয়বাদ ।১৭ . 

বাক্যার্থের বোধের পক্ষে শব্দের প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ 
করে অস্বিতাভিধানবাদ। প্রাভাকর-সম্প্রদায় এই মতবাদের পোবক। আকাজ্জা, 
যোগ্যত! ও সন্নিধির বলে শুধুমাত্র শব্দসাহচর্যের দ্বার1 প্রথমে অঙ্গিতার্থসমুহের এবং 
তাহার পর অস্বিতপদার্থসমুহের স্মৃতি উদ্বদ্ধ হইয়। থাকে । পদার্থ-স্বৃতি হইতে উৎপন্ন 
শাব্বোধ অ-শাব (অর্থাৎ শব্দের উপর প্রতিষ্ঠিত নহে )__এইবপ পূর্বপক্ষ কর] হয়, 
কিন্ত পদার্থ স্থৃতির উপর নির্ভর করিয়া “বাক্যলক্ষণা”র অর্থ “বাক্যার্থ* গ্রহণ করিয়া 
অভি হিতান্বয়বাদিগণ এক্প পূর্বপক্ষের খণ্ডন করিয়৷ থাকেন ।১৮ 

যে সাদৃশ্যবলে কোনও ভ্রব্য দ্রব্যাস্তরে তাহার প্রতীতির স্থপ্টি করে, অথচ 
সেই দ্রব্যান্তর ইন্দ্রিয়সংযোগরহিত হয় সেই সাদৃশ্টকেই “উপমান” বলা হয়।১৯ 
গবয় (গো-সদৃশ ) নামক প্রাণিবিশেষে যে সাদৃশ্য আমরা দেখি, তাহা হইতে 
“আমার গে! এইটির সদৃশ” এইরূপ জ্ঞানের স্ষ্টি হয়, অথচ ইহ] জ্ঞানেন্ত্িয়নিরপেক্ষ | 
উপমানের এই লক্ষণ কিন্ত নৈয়ায়িকগণের উপমান-লক্ষণের সহিত মেলে ন1। 
নৈয়ায়িকগণ বলেন, একটি জ্ঞাত এবং একটি অজ্ঞাত বস্তর মধ্যে যে সাদৃশ্য তাহাই 
উপমান এবং এ সাদৃশ্তই অজ্ঞাত বস্তটির বোধক “গবয়” শব্দের (অসৌ গবয়-পদ- 
বাচ্যঃ) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মৌল শক্তির জ্ঞানের (শক্তি-গ্রহের ) জনক। নৈয়ায়িক- 
গণের এই ব্যাখ্য। গ্রহণ করিলে উপমানকে অহ্থমান হইতে পৃথক কর! সম্ভব হয় 
না। অনুমানের ভিত্তির, অর্থাৎ ব্যাপ্ডিজ্ঞানের এখানে কোনও প্রয়োজন নাই--- 
এই কথা বলিয়! মীমাংসকগণ নিজেদের সমর্থন করিয়া থাকেন ।২* 

যখন কোনও বস্তুর সাহায্য ব্যতীত দৃষ্ট বা শ্রুত অন্য বস্তর অস্তিত্ব শ্বীকার কর! 
সম্ভব হয় না, অথচ যে বস্তটির সাহায্য লওয়া হইতেছে তাহার অস্তিত্ব মানিয়া 
লইতে হয়, তখনই হয় “অর্থাপত্তি*।২১ বাড়ীর বাহিরে দেবদত্ত আছে, এইকব্নপ 
আমর! যখন মনে করি, তখন ইহার ভিত্তি হইল ছুইটি। প্রথমতঃ, বাসীর মধ্যে 


৩২৪ 


পূর্ব-মীমাংসা 2 তত্ববিদ্া। 


দেবদত্ত নাই- আমাদের এই অভিজ্ঞত1, এবং দ্বিতীয়তঃ, দেবদত্ত বাঁচিয়! আছে 
-_এই স্বীকৃতি । বাড়ীতে দেবুদর্তের অনুপস্থিতি এবং তাহার থাকা-_এই ছুইটি 
বিশ্বাসের মধ্যে বিরোধ বা অহ্থপপত্তি আছে । এই বিরোধের অবসান করিবার 
জন্যই ধরিয়া লওয়] হয় যে, বাড়ীর বাহিরে কোনও স্কানে দেবদত্ত বর্তমান আছে। 
আপাতবিরোধের এই 'সামঞ্জস্তসাধনই অর্থাপত্তভিকে অনুমান হইতে পুথক করিয়াছে । 
ইহাই কুমারিলতষ্টের মত । 

প্রতাকর কিন্ত মনে করেন যে, সংশয়ই অর্থাপত্তির জনক এবং ইহাই জুম্পষ্টক্নপে 
অন্থমান হইতে অর্থাপত্তিকে পৃথক করিযাছে। অশন্রমান শুধু হেতৃ-নিশ্চয়ের অন্রাস্ত 
অভিজ্ঞতার উপরই কার্যকর হইয়া থাকে । দেবদস্ত যে বাড়ীর বাহিরে আছে এই 
অর্থাপভির মুল হইল কিন্ত দেবদত্ত আদে বাঁচিয়া আছে কি নাই এইরূপ সংশয়বোধ 
এবং বাড়ীতে তাহার অক্ষপস্থিতিরঅভিজ্ঞত! হইতেই এই সংশয়ের জন্ম ।২২ 

অন্ত পাঁচটি প্রমাণের অহ্থপস্ডিতিই “অভাব” বা “অঙ্কপলব্ধি” এবং ইহা ইন্দ্রিয় 
ংযোগ-ব্যত্িরেকেই অভাবের বোধের স্থগ্ি করে ।২৩ প্রভাকর অভাবকে একটি 
স্বতশ্্র পদার্থরূপে গ্রহণ করেন নাই! তিনি মনে করেন যে, অভাব অধিষ্ঠান- 
স্ব্ূপ ছাড়া আর কিছুই নহে, এবং সেইজন্য তিনি অভাব বা অস্থপলদ্ধিকে 
জ্ঞানের কারণ রূপে স্বীকার করেন না। কুমারিল অভাবকে অস্কপলবি-প্রস্থত 
স্বতগ্র পদার্থরূপে খ্রহণ করিযাছেন। অভাবকে প্রত্যক্ষ করা যায়-_নৈয়ায়িকদের 
এই যে মতবাদ, তাহার তিনি পোৰকতা করেন না। স্তরাং, প্রথম পাঁচটি 
প্রমাণ হুইল “ভাব-প্রমাণ” যেহেতু তাহার! ভাব-এর জ্ঞান স্যপ্টি করে; আর 
“অভাব-প্রমাণ* অভাবের জ্ঞান স্যষ্টি করে 1২৪ 

কেহ কেহ সম্ভব ও এঁতিহাকে পৃথক্‌ প্রমাণ বলিষ। মনে করেন। মীমাংসকগণ 
কিন্ত এ ছুইটিকে যথাক্রমে অন্থমান ও শব্দের পর্যায়ভূক্ত করিয়াছেন । 


৩। তত্তববিদ্য? 
পদার্থের শ্রেণীভেদ £ ম্যায-বৈশেষিকের গায় পুর্ব-মীমাংসাও বৌদ্ধগণের বিজ্ঞানবাদ 
ও শৃন্যবাদ খণ্ডন করিয়! জগতের বস্ত-সত্তা প্রতিপন্ন করিয়া থাকেন। কুমারিল 
পাঁচটি পদার্থ শ্বীকার করিয়াছেন । প্রথম চারটি ভাবাত্মক-দ্রব্যঃ গণ» কর্ম, 
সামান্য ; পঞ্চমটি অভাবাস্বক--অভাব। যাহার পরিমাণ আছে, তাহা! ভ্রব্য। 
ক্ষিতি, অপ তেজ, মরুৎঃ অন্ধকার ব্যোম, ফাল, দিকৃ১ আত্মা, মন ও শব্দ হইল 
৩২১ 
৪১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


দ্রব্য । অন্ধকারকে দ্রব্য বলিয়া মনে করা হয়, কারণ আলোকের অভাবস্কলে 
চক্ষুর সাহায্যে ইহার জ্ঞান জন্মে। ইহা ভাবাত্বক দ্রব্য, কারণ ইহা নীলবর্ণ এবং 
ইহার ক্রিশ্না আছে। | 

নৈয়ায়িকগণ মনে করেন, অণুসমৃহ প্রত্যক্ষের বিষয় হইতে পারে না। এই মত 
ঠিক নহে। ইহারা প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত দ্রব্য (উদ্মক্ত বাতাঁয়ন-পথে চলমান রৌদ্র- 
করোজ্ল ধুলিকণাসমূহের উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে )। অগুসমূহ বিভিন্ন 
আয়তনের দ্রব্য স্থষ্টি করে। নৈয়ায়িকগণ মনে করেন, কার্য ও উপাদানকারণের 
সম্বন্ধটি সমবাধ-সম্বন্ধ। তাহা নহে। ইহা হুইল সংযোগ-সম্বন্ধ। ইহা হইতেই 
মীমাংসকগণের অৎকার্যবাদ বুঝ! যাইবে । সৎকার্ষবাদ বলে যে» মূল দ্রব্য এক, 
যদিও বিভিন্ন রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তাহার পরিণতির প্রভূত পার্থক্য জন্মে। 
মৃত্তিকা সেই একই, কখনও কলস, কখনও বা বাটির রূপ গ্রহণ করে মাত্র। 
পরিণামের পরিবর্তন ভ্ইলেও দ্রব্যটি একই থাকিয়া যায়। সাংখ্যগণ এই সৎকার্- 
বাদ ও পরিণামবাদ শ্বীকার করেন । এই দিক দিয়! মীমাংসকগণের সহিত সাংখ্য- 
সম্প্রদায়ের মিল আছে । 

ব্যোম, কাল, দিক্‌, আত্মা, মন ও শব্দ শাশ্বত ও সর্বব্যাপী--এবং মন ছাড়া 
প্রত্যেকটিকেই প্রত্যক্ষ করা চলে। জীবাত্মা অসংখ্য হইয়াও শাশ্বত ও সর্বগত। 
ইহারাই জ্ঞান, সুখ, ছুঃখ প্রভৃতির ধারক ।' কাজেই নশ্বর দেহ, জ্ঞানেন্দ্রিয় ও 
জ্ঞান হইতে তাভারা পুথক। কুমারিলের মতে আত্মা টেতন্তাক্ষক এবং মানস- 
প্রত্যক্ষের বিষয় । মন সর্বগত এবং ছুইটি সর্বগত দ্রব্যের যেমন আত্মা ও মন-- 
সংযোগে পাথিব দেহের সীমিত আধারে জ্ঞান প্রভৃতির উৎপত্তি হয । শব্ও নিত্য 
ও সর্বব্যাপী এবং ধবনি বা! নাদের দ্বারাই ইহার প্রকাশ হইয়া থাকে |২ 

নৈযায়িকগণের মতই কুমারিল চব্বিশটি ও৭ স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু তিনি 
শব্দ, ধর্ম ও অধর্মকে গুণ বলিয়া! শ্বীকার না করিলেও, ধ্বনি, প্রাকট্য ও শক্তিকে 
গণ বলিয়! ব্বীকার করিয়াছেন। ধ্বনি হইল বায়ুর গণ এবং নিত্য শব্জের প্রকাশক । 
বস্তুর জ্ঞান হওয়ার পর সেই জ্ঞাত বস্তুর গুণ হইল প্রাকট্য। দ্রব্য, গুণ, সামান্য ও 
ক্রিয়াকে আশ্রয় করিয়া যে শক্তি বর্তমান--তাহা! সহজই হউক বা উৎপন্ন ( আধেয়ই ) 
হউক তাভারই নাম “শক্তি” । সাধারণ দৃষ্টাত্ত হইতেই আমর! ইহা বুঝিতে পারি__ 
যেমন অগ্নির দাহিকা-শক্তি । বেদবিধিসমূহও বৈদ্িকযজ্ঞগুলির ব্বর্গ বা অন্য কোনও 
ফল-প্রদানের শক্তির কথা বলিয়। থাকে । 

ক্রিয়াসমূহের প্রত্যক্ষ ভয। গতি বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের কারণ এবং যে 


৩২২ 


পূর্ব-মীমাংস। £ তত্ব বিদ্য। 


সব দ্রব্য সর্বগত নহে তাহাদের আশ্রয় করিয়াই অবস্থান করে । ব্যক্তিতে ইন্ছ। ভেদ- 
সহ অভেদ সম্বন্ধে অবস্থিত থাকে । সত্তা হইল সামান্য পদার্থ; দ্রব্য, গুণ, ক্রিয়া 
ছাড়াও ইহ] অন্থত্র অবস্থান করে । 

কুমারিলের মতের সহিত প্রভাকরের মতের কয়েকটি ক্ষেত্রে অমিল আছে। 
প্রভাকর অভাবকে স্বতন্ত্র পদার্থরূপে গ্রহণ করেন না, কারণ অভাব অধিকরণ- 
স্ব্ধপাতিরিক্ত কিছু নহে । উদাহরণস্বরূপ বল! যাইতে পারে ষে, ভূমিতে ঘটাভাবের 
অর্থই হইল শুধু ভূমি। এক্ষেত্রে অভাবের প্রতিষোগী হইল ঘট এবং তাহা 
ভূমিতে থাকিলে দেখা যাইত । দ্রব্য, গুণ, কর্ম ও সামান্তছাড়াও--প্রভাকর 
পরতন্ত্রতা, শক্তি, সাদৃশ্ট ও সংখ্যাকে পুথক পদার্থরূপে স্বীকার করিয়াছেন। 
কুমারিল শক্তি ও সংখ্যাকে গুণ বলিয়া! শ্বীকার করিয়াছেন, সমবায়ের স্থলে 
তাঁদাত্ব্যকে গ্রহণ করিযাছেন এবং সাদৃশ্তুকে ছুই বা ততোধিক সদৃশ বস্তুর কতিপয় 
সাধারণ বৈশিষ্ট্যমাত্র বলি! ব্যাখ্যা করিয়াছেন | সংশ্লেষণ ও খিশ্লেষণ হইতে 
কর্মের অস্কমান করিতে হয়, ইহা প্রভাকরের মত। কুমারিল কিন্ত কর্মকে 
প্রত্যক্ষের বিষয় বলিয়া মনে করেন। দ্রব্যসমূহের মধ্যে কেবল সামান্তকেই প্রভাকর 
স্বীকার করিরাছেন। কুমারিল ও প্রভাকর উভয়েই শক্তিকে স্বীকার করিয়াছেন । 
এই শক্তির বলেই সকল বস্তু কারণধ্মী হইয়া! কার্য উৎপাদন করিতে সমর্থ 
হয়। অন্ধকার আলোকের অতাব এবং ব্যোম কাল ও দিকৃ অপ্রত্যক্ষ__ইহাই 
প্রভাকরের মত। ব্যোমকে শবগুণের আধার বলিয়। অন্নমান করিতে হয়। 
নৈয়ায়িকগণ বলেন, মন হইল শুধু একটি শাশ্বত অণুপদার্থ। জীবাস্বাসমূহ শাশ্বত 
হইলেও অসংখ্য এবং বিভিম্্র দেহে বিভিন্ন। প্রতিটি জ্ঞানের ক্ষেত্রে তাহাদিগকে 
তত্তদ্‌্জ্ঞানের আধার বলিয়! মনে কর। হইষ! থাকে । জীবাত্মাসমূহই কর্তা, ভোক্তা 
ও বিভু ।২৬ 

আত্মাঃ আত্মা একটি শাশ্বতী সত্তা এই ষে ধারণা, পুর্ব-ীমাংসায় এ ধারণার 
মূল্য অনেকখানি । এই বিষয়ে জৈমিনি নীরব । উত্তর-মীমাংসায় ৩।৩1৬৩ স্থত্রে 
উপবর্ষ এই বিষয়ে আলোচনা করিয়াছেন এবং শবরম্বামী তাহার ভাষ্যে 01১1৫) 
উপবর্ষের এই আত্মবাদকে গ্রহণ করিয়াছেন। দেহ, ইন্দ্রিয় বুদ্ধি--সবই ধ্বংস 
হইয়া থাকে এবং উপবর্ষ ও শবরস্বামী আত্মাকে এইগুলির অতিরিক্ত একটি শাশ্বতী 
সত্তা বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন। যজমান জীবিতকালে বা! মৃত্যুর পরে পুত্র, স্বর্গ 
প্রভৃতি ফল শ্োত যাগাদির অনুষ্ঠানের দ্বারা ভোগ করিতে পারিবেন বলিয়! 
শ্োত বিধিসমূহ শ্রোত যাগাদি বিহিত করিয়াছে । অন্ত কোন বিধি না থাকিলে 


৩২৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


কর্তাই কর্ষের ফল তোগ করিয়া থাকেন--ইহাই হইল সাধারণ নিয়ম । সুতরাং 
ইহা! শ্বীকার করিতে হইবে যে» যজমানের আত্ম! মৃত্যুর পরেও অবস্থান করে এবং 
দেহেন্দ্রিয় প্রভৃতি নশ্বর বস্তুনিচয় হইতে তাহা পৃথকৃ। এই আত্মাই হইল জ্ঞাতা, 
জ্ঞানের আশ্রয় । জ্ঞান ৰা জ্ঞানের সাধনগুলি হইতে ইহা পৃথক ইহা নিত্য ও 
সর্বব্যাপী ছুই-ই। ইহা অণুধম্মী নহে। ইহাই কর্তা এবং কর্মফলের ভোক্তা । 
শবরত্বামী বলেন যে, ইহা হ্বয়ংপ্রকাশ । নৈয়ায়িকগণের মত মীমাংসকগণও আত্মার 
বহুত্ব স্বীকার করেন, কারণ ইহা স্বীকার না করিলে কর্মের, বিশেষ করিয়! ধর্ম 
ও অধর্মের পার্থক্যের ব্যাখ্য। দেওয়। যায় ন। “জড়ো বৌধাত্মকশ্চ” (অর্থাৎ আত্মা 
জড় ও চেতন )-__এইটুকুর মধ্য দিয়াই মধুস্দন সরস্বতী আত্ম! সম্বন্ধে ভাট্টগণের 
ধারণা সংক্ষেপে ব্যক্ত করিয়াছেন। যেহেতু ইহা! চৈতন্তের আধার এবং ঘেহেতু 
ইহা৷ আত্মজ্ঞানের বিষয়ঃ সেইহেতু ইহা অচেতন ২৮ 

প্রভাকর বলেন যে, আত্মা জড় বা অচেতন এবং জ্ঞান, স্থুখ, ছুঃখ প্রভৃতির 
আধার । কোনও বস্তকে পুর্বে দেখিয়া! আমরা যে পরে তাহাকে মনে করিতে পারি 
ইহ হইতেই প্রমাণিত হয় যে, একটা কিছু নিত্য পদার্থ আছে। পূর্বের প্রত্যক্ষ ও 
বর্তমানের স্থৃতি-ছুইয়েরই আধারভূমি হইল এই নিত্য-আত্ম । ইহা! স্বয়ংক্রিয় নহে, 
তাহা হইলে ুুণ্তিতেও আমাদের জ্ঞান হইত। জ্ঞান তাহার বিবয়ীভূত দ্রব্যের 
সহিত নিজের আধারভূত আত্মাকে জাগ্রত করে। এই আত্মা কর্তা, ভোক্তা, 
বিভু কিন্তু জড়, কারণ, ইহা৷ জ্ঞান হইতে পৃথকৃ।২৯ 

অপুবঃ বজ্ঞ এবং তজ্জন্ত ফলের মধ্যে যোগস্ত্র হিসাবে “অপুর্বকে স্বীকার 
করিতে মীমাংসকগণ বাধ্য হইয়াছেন। বজ্ঞসমৃহ কতকগুলি অহুষ্ঠানমাত্র। ফল 
উৎপন্ন হওয়। পর্যস্ত তাহার) স্থায়ী হয় না। “অপূর্ব'কে স্বীকার না করিলে এই 
অঙ্ুষ্ঠানসমূহ ও তাহাদের ফলের মধ্যে কার্ধ-কারণ-সম্পর্কের প্রতিষ্ঠ! করা যায় না। 
কুমারিল বলেন যে জমান যে, কর্মসমূহের অহ্বষ্ঠান করেন তাহার বলে তাহার নিত্য 
আত্মায় “অপূর্ব” উৎ্পন্্ হয়ঃ এবং যতদিন না তিনি সেই অনুষ্ঠিত কর্মসমূহের ফল 
ভোগ করিতে আরম্ভ করেন, ততদিন পর্যস্ত ইহা স্থায়ী হইয়া থাকে । যজ্ঞ একটি 
কর্ন বা কতকগুলি কর্ম-পরম্পরামাত্র । যজ্ঞের ফল বদি স্বর্গ হয়, তবে সেই ম্বর্গফলের 
উৎপাদনকাল পর্যন্ত ইহা স্থায়ী হয় না। যতক্ষণ না আমর! যজ্ঞ এবং তাহার ফল-_ 
স্বর্গ এই উভয়ের মধ্যে কোনও যোগস্ছত্র মানিয়৷ ন৷ লই, ততক্ষণ "ম্বর্গকামো যজেত, 
(অর্থাৎ হ্বর্গের কামনায় যাগ করিবে ) এই যে বিধিবাক্য আছে, তাহার সম্তোষজনক 
ব্যাথ্য৷ দিতে পারি না। এই শাস্্রনির্ভর স্বীক্ৃতিই (শোতার্থাপত্ভি) অপূর্বের প্রমাণ। 


৩২৪ 


পূর্ব-সীমাংস। ১ তত্ববিদ্ভ। 


কর্মের হুক্্স শক্তি এই “অপুব+ কর্মের দ্বারা উৎপন্ন হইয়া! কর্মফলের উৎপতিকাল 
পর্যস্ত যজমানের নিত্য আত্মায় বিধ্বৃত থাকে, এইরূপ ধরিয়া লইতে হইবে । আত্মায় 
অপূর্ব অবস্থান করে এই মত প্রভাকর মানেন না। তাহার মতে কর্মে বা ষে 
চেষ্টার ফলে কর্ম অনুষ্ঠিত হয়, সেই চেষ্টায় ইহার অবস্থান কর। উচিত। প্রথমটির সঙ্গে 
সঙ্গেই নাশ হইয়া! থাকে এবং পরেরটি (বিধিবাক্যে যাহা লিঙ. প্রত্যয়ের দ্বারা 
জ্ঞাপিত এবং যাহার পারিভাষিক নাম “কার্য” ) ফলোৎ্পত্তির কাল পর্যস্ত স্থায়ী হয় 
এইব্ূপ মনে কর! হয় । এই €কার্ধ কর্মের চোদক এবং বিধ্যাত্ষিক। শক্তিঃ এবং 
এই বিধিবাক্যটি ছাড়া! জ্ঞানের যত প্রকার উপায় আছে তাহা হইতে নৃতন কিছু । 
এই 'কার্ষে”র নামান্তর “নিয়োগ” বা! “অপূর্ব” ।৩* 

ঈশ্বর: জীবাত্ম! সন্বন্ধেও যেমন, ঠিক সেইরূপ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধেও জৈমিনি 
নীরব। ঈশ্বরই পরাশক্তি এই যে ধারণা, তাহার পুব£মীমাংস! যে ইহার কতখানি 
বিরোধী তাহা! নির্দিষ্টতাবে জান। যায় না। তবে ইহা নিঃসন্দেহে বল! চলে যে, 
নৈয়ায়িকগণ অস্থমানের উপর নির্ভর করিয়া ঈশ্বরের অস্তিত্বসন্বন্ধে যে সমস্ত যুক্তি- 
জালের অবতারণ! করেন, তাহার এবং বেদসমূহ ঈশ্বরের স্যষ্টি এই মতের পূর্ব-মীমাংসা 
বিরোধী । ঈশ্বর শত যাগসমুহের ফল প্রদান করেন- বৈদাস্তিকগণের এই যুক্তিও 
পুর্ব-মীমাংস! সমর্থন করে না; কারণ ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ ছাড়াও যাগসমূহ অতীন্দ্রিয 
অপূর্বের সাহায্যে নিজেরাই কার্য করিতে পারে। একব্সপক্ষেত্রে ঈশ্বরকে স্বীকার 
করায় লাত কি? লোকে কর্মাহুষ্ঠান যদি না করে, তবে ঈশ্বরের তো! কাহাকেও কর্ম- 
ফল ভোগ করিতে দিবার শক্তি নাই। তাহা যদ্দিঃ থাকে তবে বৈষম্য ও নৈঘ্বণ্য 
এই দুইটি দোষে ঈশ্বর দুষ্ট হইয! পড়েন। জৈমিনির মতে ঈশ্বর নহে-_অপুর্বই 
কর্মফলপ্রদাতা । উত্তর-মীমাংসায় জৈমিনির এই মতের সমালোচন কর] হইয়াছে। 
যুক্তি দেখানে। হয় ঘে, ট8জধিনি যদি “ঈশ্বর ব্রহ্মাণ্ডের স্য্টিকর্তা, এইব্প ধারণার 
বিরোধী হইতেন, তাহা হইলে স্ষ্টিসবন্ধী অন্ঠান্ত মতের সহিত বাদরায়ণ এই মতেরও 
সমালোচনা করিতেন । পূর্ব-মীমাংস! বিশ্বাস করে বে, ব্রহ্মাণ্ডের আদিও নাই, অস্তও 
নাই ১ বর্তমানে ইহা যেমন আছে সেইরূপেই ইহা চিরকাল ছিল এবং চিরকাল 
থাকিবে (ন কদাচিদনীদৃশং জগৎ)। বিশ্বের স্থট্টিও নাই, সাবিক প্রলয়ও নাই। 
কাজেই ঈশ্বরকে এই বিশ্বের কারণ বলিয়! ভাবা যায় না । সংক্ষেপে বলিতে হয় যে, 
বেদসমৃহের পরম প্রামাণ্য যাহাতে ক্ষু্ন হইতে পারে, তেমন কোন মতবাদ পূর্ব- 
মীমাংসা গ্রহণ করিতে পারে না। 

কুমারিল বা প্রভাকর কেহই ঈশ্বরকে স্বীকার করার বিবোধী নহেন। 


৩২৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


অতিপ্রাক্কত ধর্ম” ও “মোক্ষে'র প্রামাণ্যন্রপে বেদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়াই তাহাদের 
প্রধান কার্য ছিল। নিত্য আত্মার অস্তিত্ব সম্বন্ধে জৈমিনি নীরব। এই বিষয়ে 
কুমারিল বলেন যে, নাস্তিকতাবাদের খণ্ডন করিবার জন্তই শবরম্থামী যুক্তিতর্কের 
সাহায্যে শাশ্বতী সম্তারূপে আত্মার অস্তিত্ব প্রতিপন্ন করিয়াছেন € এই যুক্তিসমূহ 
বেদাস্তক্থত্রের (৩৩৫৩ ) উপবর্ষের বৃত্তি হইতে গ্রহণ কর! হইয়াছে ); তিনি 
আরও বলিয়াছেন যে, এ আত্মার সম্বন্ধে পুর্ণজ্ঞান নিয়ত উপনিবদৃপাঠের দ্বারাই 
লাত কর! যায় ।৩১ ঈশ্বরসন্বন্ধে তাহার মন্তব্য হইল--বাধ্ায় ব্রক্স্ব্ূপ বেদশাস্ত্ 
এক পরমাত্বা দ্বারা অধিষ্ঠিত।+৩২ ব্রহ্মাণ্ডের উপাদান-কারণসমূহের আদি অস্ত 
থাকিলেও ব্রহ্মাণ্ড যে অনাদি ও অনন্ত, এই মত প্রভাকরও গ্রহণ করিয়াছেন । 
জড় ও চেতন পদার্থসমূহের স্থ্টিকল্পে ঈশ্বরের আভিমুখ্য তিনি অনুমোদন 
করেন না। 

অবরকালীন ম্ীমাংসকগণের মধ্যে এমন একটি গুরু প্রতিক্রিয়ার স্থষ্টি হইয়াছিল, 
যাহার ফলে অনেকেই জশ্বরকে ব্ন্গাণ্ডের অষ্টাবূপে গ্রহণ করার এবং ব্রহ্মাণ্ডের 
স্থষ্টি ও প্রলয়কে স্বীকার করার ইচ্ছাও প্রকাশ করিয়াছেন। প্রতি প্রলয়ে ঈশ্বর 
বেদ সংরক্ষিত করিয়া] থাকেন এবং প্রলয়ান্তে নবস্থষ্ঠ বিশ্বকে সেই অক্ষত বেদ পুনরায় 
প্রদান করেন। এই কথা! বলায় বেদের প্রামাণ্যও পুর্ববৎ অক্ষু্ণ ছিল ।৩৩ 

'দেবতা” সদ্দন্ধে মীমাংসকগণের ধারণা অদ্ভুত বলিয়! মনে হইতে পারে। স্বর্গাদি 
ফলপ্রাপ্তির জন্য বিহিত যাগসমুন্কে দেবতার উদ্দেশে আহুতিত্যাগ বলিয়াই ব্যাখ্য' 
করা হইয়াছে এবং এখানে ভাবনা! হইল এইরূপ--ইহা অগ্নির জন্য, আমার 
নহে” (অগ্রয়ে ইদং» ন মম)। এখানে ত্যাগক্রিয়াই প্রধান ১ হবিঃ ও দেবতা! শুধু 
আহুবঙ্গিক সহায়। যেহেতু অগ্নি প্রভৃতি দ্রেবতাগণের যেখানে যেখানে আহ্বান 
করা হয়, তাহাদিগকে যুগপৎ সেই বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত থাকিতে হয় এবং 
বিভিন্ন যজমান তাহাদের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করেন, সেকারণ ধরিয! লওয়। 
হয় যে, এ দেবতাগণ অশরীরী এবং 'অগ্নি” ইন্দ্র প্রভৃতি কতকগুলি নিত্য শব্দছাড়! 
আর কিছুই নহে। ইহা হইতে একটি গুরুত্বপুর্ণ তথ্যে আসিয়! পৌঁছিতে হয় ; 
তাহা হইল এই যে, মস্্গুলিতে দৃষ্ট শব্দসমূহের এবং তাহাদের আহ্মপুর্বার কোনও 
পরিবর্তন করা চলে না। এই তথ্য পাওয়া গেলেও ইহ! লক্ষণীয় যে, বেদের চূড়াস্ত 
প্রামাণ্যের ও মাহুষের উপর কর্মের তর্কাতীত শক্তির প্রতিষ্ঠাকল্পে মীমাংসকগণের 
যে অতি-উৎসাহ, তাহাই তাহাদিগকে দেবতাদের অশরীরী বলিয়া স্বীকার করিতে 
বাধ্য করিয়াছিল এবং দেবতাগণ অবহেলিত অবস্থায় একপার্খে কর্মাপেক্ষা গৌণস্থানে 


৩২৬ 


পূর্ব-মীমাংস1 ১ তত্ববিদ্তা 


প্রতিষ্ঠাপিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। মীমাংসকগণ বিশ্বাস করেন যে, দেবতাগণ 
বিচিত্র ও অতিপ্রাকৃতিক শক্তির অধিকারী এবং সংখ্যায় অনেক। কর্মকে ঘে 
গুরুত্ব দেওয়! হইয়াছে, তাহা কোনও প্রকারেই দ্রেবতাগণের গুরুত্ব খর্ব করে ন|। 
যথাবিধি উপাসিত হইলে তাহার! উপাসককে আশীর্বাদ করেন এবং কর্মফল ভোগ 
করিবার অধিকার দান করেন । 

মোক্ষ ঃ পুর্ব-শীমাংস| “ধর্ম সব্বন্ধে আলোচনা! করিয়াছে । এই ধর্মই হ্বর্গ 
প্রভৃতি অভ্যুদয়ের জনক | জৈমিনি, শবরম্বামী, এবং প্রভাকর মোক্ষের কথ! 
বলেন নাই। কুমারিল, শালিকনাথ এবং তাহাদের অহ্থবর্তিগণ ইহাকে অগ্রাহ 
করিতে পারেন নাই, কারণ ইহাকে বাদ দিলে শাস্্ সম্পূর্ণত লাভ করিতে পারে না। 
কুমারিল মনে করেন ধে, পুনজন্ম হইল ছুঃখ-কষ্টের কারণ এবং পুনজন্ম হইতে মুক্তিই 
মোক্ষ। জ্ঞানের দ্বারা পূর্বের কর্ম যখন সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং সেই কর্মের 
কিছুমাত্র অবশিষ্ট থাকে ন। যাহার ফলে দেহের স্ষ্টি হইতে পারে, তখনই. মোক্ষ 
আসে । কোনও নিষিদ্ধ কর্ম কর! বা ফল-কামনায় কোনও কর্ম করা মুমুক্ষুগণের 
উচিত নয়, কারণ এ দ্বিবিধ কর্মই নূতন বন্ধনের জনক হয়। মুমুক্ষু ব্যক্তি শুধু 
নিত্য ও নৈমিত্তিক এই দ্বিবিধ বাধ্যতামূলক কর্মেরই অনুষ্ঠান করিবেন» এবং উহার 
অকরণে তাহার পাপ ও ছঃখ লাভ হইবে । ইহাই গীতার নিক্ষাম-কর্ম। 

জ্ঞান মোক্ষের প্রত্যক্ষ কারণ নহে। যাহাতে পুনক্ষন্ম না হয় সেইতাবে 
কর্মকে পরিচালিত করিতে জ্ঞান মানুৰকে সাহায্য করে মাত্র । জ্ঞান, উপাসনা 
ও মননের রূপ পরিগ্রহ করিয়া! জীবকে মোক্ষের পথে পরিচালিত করে। মুক্ত 
আত্মা সর্ববিধ স্থুখ-ছুঃখের অতীত হইয়া জ্ঞানশক্তিরূপ নিত্য অবস্থায় উপনীত 
হয়, কারণ ইহার কোনও দেহ বা! ইন্দ্রি থাকে না এবং প্রগুলির ক্রিযা হইতেও 
ইহা মুক্ত থাকে । এইরূপে কুমারিল ও ভাহার অস্থবতিগণ জ্ঞান-কর্ম-সমুচ্চয়বাদ 
ঘোষণ1 করিয়াছেন । ইহার মতে জ্ঞান ও কর্ম ছুই-ই মোক্ষের জনক | মোক্ষ 
বা পুনর্জন্ম হইতে নিষ্কৃতিসখন্ধে কুমারিলের যে ধারণ! তাহা অদ্বৈতবাদিগণের 
ধারণার সহিত মিলিয়া যায়। “ন পুনরাবর্ততে” (ধাহার তত্ৃজ্ঞান হইয়াছে 
ভাহ'র পুনর্জন্ম হয় না) এই শ্রুতিবাক্য এবং “অনাবৃত্তিঃ শব্দাণ্ এই ব্রহ্ম-স্থত্রের 
(৪81২২) উপর ভিত্তি করিয! অদ্বৈতবাদিগণও মোক্ষের এরন্দপ ব্যাখ্যাই 
দিয়াছেন ।৩৪ 

শালিকনাথের মতাহ্বসারে “ধর্ম” ও “অধর্ম” হইল জীবের পুনঙ্জন্মের এবং 
সুখ-ছুঃখের কারণ, এবং ধর্ম ও এঅধর্সেশ্র অবলুণ্তিই “মোক্ষ”। অদ্বৈতবাদিগণ 


৩২৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মনে করেনঃ মোক্ষ একপ্রকার আনন্দময় অবস্থা । শালিকনাথের মতে তাহা নহে, 
পরস্ত ইহা আত্মার স্বাভাবিক রূপ। আত্ম ঘখন কোনও দেহে বা ইন্দ্রিয়ে 
আবদ্ধ হইয়া থাকে না, তখন তাহার সকলপ্রকার তহিক এবং মানসিক কণ্ঠ 
চলিয়! যায় এবং তাহা শুদ্ধ ও মুক্ত হইয়া পড়ে। কুমারিলের মত শালিকনাথও 
মোক্ষের উপায়রূপে নিত্য ও নৈমিত্তিক কর্তব্যসমূহের অস্থষ্ঠান, নিষিদ্ধ ও কাম্য- 
কর্মের ত্যাগ, পুর্বসঞ্চিত কর্মের ক্ষয়ের জন্য প্রায়শ্চিত্তানুষ্ঠান এবং আত্মজ্ঞানলাভের 
উপর জোর দিযাছেন। সম্তোষ, আয্মসংঘম ও অন্ঠান্ত আত্মিক গুণাবলীর সহিত 
সঙ্গত হইয়! এই উপায়সমূহ আর কর্ম সঞ্চিত হইতে দেয় না1৩« 


৪। নীতি 
পূর্বমীমাংসাকে বর্ম-মীমাংস! বল! হয। ইহা! সার্থক । নৈতিক শ্রেয়ঃপ্রাপ্তির 
কারণরূপে শাস্ত্রসমূহ যে বিধান দিযাছে তাহাই ধর্ম” | পুর্ব-মীমাংসায় “ধর্মের এইন্ধপ 


লক্ষণ দেওয়া হইয়াছে । নিজের প্রতি, পরিবার ও আন্মীয়-স্বজনের প্রতি, সম্প্রদীয় 
ও জাতির প্রতি মাহ্বমের যে নৈতিক কর্তব্য রহিয়াছে, পূর্ব-মীমাংসা সেইগুলির উপর 
অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করিয়াছে । কর্ম বে সর্বশক্তিমান এবং ঈশ্বরও যে--যদি 
অবশ্ট তিনি থাকেন--কর্মের শক্তিতে হস্তক্ষেপ করিতে পারেন না, একথা পুর্ব- 
মীমাংস। সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করে। বেদসমুহ হইল 'এই ধর্মের একমাত্র প্রমাণ । 
যে হিংসা মৃত্যুর জনক তাহা নিবিদ্ধ হইযাছে, সুতরাং তাহা “অধর্স”। কিন্ত 
বেদবিহিত (অগ্লীষোমীয় ) যজ্ঞে পশুবধ হিংসা! হইলেও অধর্ম বলিয়। বিবেচিত হয় 
না, কারণ যজ্ঞ হইল পুরুষার্থ এবং পশুটিকে ঈশ্বরের উপাসনা বা যজ্ঞেই উৎসর্গ কর! 
হয় (ক্রত্বর্থ)। সাধারণ লোকে দ্বিবিধ হিংসা একই দৃষ্টিতে বিচার করিলেও 
নীতির ক্ষেত্রে কর্মাহুষ্ঠানের পশ্চাতে যে উদ্দেশ্ত নিহিত থাকে» তাহাই কর্মের স্বব্ধণ 
নির্ধারণ করে-_সে কর্ম হিংসাত্বক বা অহিংসাত্বক যাহাই হউক না কেন। এই সব 
অতি-প্রারুত বিষয়ে বেদসমূহই একমাত্র প্রমাণ । 

কর্মকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হইয়াছে) নিত্য (২) নৈমিত্তিক এবং 
(৩) কাম্য। প্রথম ছুইটি বাধ্যতামূলক । তাহাদের অনহষ্ঠানে প্রত্যবায় হয। 
প্রতিদিন প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যায় যে প্রার্থনা করিতে হয় (অহরহঃ সন্ধ্যামুপাসীত ) 
তাহা নিত্য-কর্ম। গ্রহণকালে যে স্নান করিতে হয় তাহা নৈমিত্তিক কর্ম, কারণ 
এ ম্নান-কর্ম ্রহণনূপ নিমিত্তের উপস্থিতিতেই করণীয়। যখন কেহ কোনও নিদিই 


৩২৮ 


পৃষ-সীষাংসা 3 অঙ্টব্য 


ফলের কামনায় কোনও কর্মের অনুষ্ঠান করে, তাহাই কাম্য কর্ম। ইহা নিত্য 
নহে। প্রধান ও আহ্ুবঙ্গিক যাগাদির অহ্ুষ্ঠানে ধাহাদের সামর্থ্য ও অধিকার 
আছে (যথ1-বিনিয়োগম্‌ অধিকারঃ ১, তাহারাই কেবল ইহার অহষ্ঠান করিতে 
পারেন। কিন্ত ধাহাদের আহ্ষঙ্গিক অহুষ্ঠান ছাড়! শুধু প্রধান কর্ষেরই অহুষ্ঠান 
করার শক্তি আছে, তাহাদ্দিগকেও সার] জীবন ধরিয়া নিত্য ও নৈমিক্তিক কর্মের 
অনুষ্ঠান করিয়া যাইতে হয় (যথাধিকারং বিনিয়োগ: )।৩৬ 

যেসকল বৈদাস্তিক আত্মজ্ঞান ও আত্মোপলব্ধির অন্যতম উপায় হিসাবে কর্ষ 
যোগকে স্বীকার করিয়াছেন, তাহারাও মোক্ষের কারণরূপ এই *ধর্ম*গুলির উপর 
এক আধ্যাত্মিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন। উপনিবদে বলা হইয়াছে__ণতমেতং 
বেদাহুবচনেন ব্রাহ্মণ! বিবিদিষস্তি যজ্ঞেন দ্ানেন তপসা অনাশকেন? | ইহার মুল 
কথা হইল যে, অনাসক্তচিত্তে নিত্য, নৈমিত্তিক ও কায্যকর্মসমূহের অনুষ্ঠান করিয়া 
সেগুলিকে ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসরগীক্কত বলিয়! ভাবিতে পারিলে আত্মজ্ঞানলিপ্স, ও 
তত্বজিজ্ঞান্র মন পাবত্র হইয়! থাকে । 

ঘ্ব্যর্থবোধক ও সংশয়াত্বক বৈদিক মন্্রসমূহের ব্যাখ্যাকল্পে কতকগুলি বিধি 
উপস্থাপিত করিয়া এবং ধর্ষের স্বরূপাহ্ুসন্ধান করিয়! পুর্ব-মীমাংসা এক বিশিষ্ট 
দর্শনরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে । ব্যাকরণ ও ন্তায় যেষন যথাক্রমে পদ-শাস্ত্র ও 
প্রমাণ-শান্ত্র নামে অভিহিত, ঠিক সেইব্প পূর্ব-মীমাংসাও বাক্য-শাস্ত্র নামে পরিচিত। 


দ্রষ্টব্য 


১).£ 00562 0£ [নিতে 05105 20905001025 পৃ ৮৯ 

২। বর্মন লেখকের সম্পাদিত তত্ব-বিন্দু ১ম খণ্ডের ভূমিক। ভষ্টব্য। 

৩) “যন চ ঢুষ্টম্‌ করণম্‌ ঘত্র চ মিথ্যেতি প্রতায়ঃ, স এবাসমীচীন$, প্রত্যক্ষ2” ( শবর-ভাষ্য ১1১1৫ )। 

৪)। একটি জ্ঞান বর্দি অপর জ্ঞানের বিষয় হিসাবে স্বীকৃত হয়, তাহা হইলে দ্বিতীয় জন আবার 
অপর জ্ঞানের বিষয় হইবে এবং এইরূপ অনবস্থার হৃষ্টি হইবে । 

৫ ॥ তত্ববিন্দু, ভূমিকা পৃঃ ৭২-৪ দ্রষ্টব্য এবং গঙ্গানাথ ঝা+র সম্পাদিত পূর্ব-মীমাংসা, পৃঃ ১৫, ২৩-৪ 
ভুরই্টবা। 

৬) “নৎ-সম্প্রয়েগে পুরুষস্তেশ্রিয়ানাম্‌ বুদ্ধি-জন্ম তৎ প্রত্যক্ষম্” (৯.4.5. ) 

৭। গ্লোক-বাতিক, চতুর্থ সত্র, প্লেক ১১২-১৩। 

৮। প্রকরণ পঞ্চিক, পৃঃ ৫৪-৫ আষ্টব্য। 


৩২৯ 
৪২. 


৯। 
১০1 
১১। 


১২। 

১৩। 
১৫। 
১৬। 
১৭। 


১৮। 


১৯ । 


২১। 
২২। 


২৩। 
২৪। 
২৫। 


২৬ । 


ত্প। 
৮ | 


২৯। 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


£৯ হডাতেতত ০6 [002 1০5105 পৃ ১৫৮ জ্ব্য । 

“জ্ঞাত-স্ঘন্ধনৈকদেশ-দর্শনাদেক দেশাস্তরে সন্তিকুষ্টেইর্থে বুদ্ধি” (9-8. 7-8.5) 
প্রত্যক্ষতো-দৃষ্ট-স্বদ্ধ এবং সামান্ততো-দৃষ্ট-সন্বন্ধ এই দ্বিবিধ অনুমানের জন্য দ্রষ্টব্য ্লোক-বাতিক, 
১1১1৫, অনুমান-খণ্ড (গ্লোক ১৪১--৪৪) 

শান্্ং শদ-বিজ্ঞ(ন[ৎ অসন্িকুষ্টেহর্থে বিজ্ঞানম্-_-(শবর-ভাষা ১1১৫) 

মীমাংসকগণের মতে শব্দ, 'নাদ” বা “ধ্বনি'র দ্বার! পরকাশিত বর্ণরাশি ভিন্ন অন্থ কিছুই নহে। 
(দ্রষ্টবা-পু. মী. সু. ১১1৫) 

বেদ! অপৌরুষেয়! অন্মধমাণ-কর্তৃকত্বাদ্‌ যন্নৈবং তন্নৈবম্‌। 

তুলঃ__বেদন্তাধ্য।য়নং সর্বং গুর্বধ্যয়নপূর্বকম্_ গ্লেংকের ছুই পাদ বেদীধ্যয়নসামান্যৎ অধুনা- 
ধ্যয়নং যথ]। 

আধ্যাপ্রবচনাৎ্_( পৃ মী, হা, ১1১1৮) 

পদৈরভিহিতীঃ পদার্থ। ব।ক্য।র্থং বোধয়েুং__€ শবর-ভ।ষ্য, ১১1৭) 

তত্ববিন্দু (দ্বিতীয় থণ্ড ), লেখকে র ভূমিক] ডরষ্টব্য, তত্ববিন্দুর বিশ্লেষণ, পৃঃ, ১৭১৯৭ 

উপম।নমপি সাদৃপ্তম্‌ অনন্রিকৃষ্টেহর্থে বুদ্ধিনুৎপ।দরয়তি, যথা গবয়দর্শনং গে! ল্সরণশ্ত__-(শবর- 
ভাষ্য ১১1৫) 

লেখকের মীমাংসা শ্লোক-বাতিক (তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৩৮-৪৭)-এর সংক্করণের লেখকেরই ভূমিক। 
ডরষ্টব্য। 

অর্থাপত্তিরপি দৃষ্টঃ শ্রুতো। বার্থোহস্থা থা নোপপছাতে ইত্যর্থকল্পনা__€ শব র-ভাঁষ্য, ১১1৫) 
কুমারিলের মতের জন্য দ্র: তন্্ররহস্ত, পৃঃ ১৪ ; দ্রঃ-_মানমেয়ে।দয় অর্থাপর্তি-খণ্ড এবং মীম ংসা- 
শ্লোক-বাতিক (তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৪*-৪৪) 

অভ।বোহপি প্রমাণাভাবঃ নাস্তীত্যগ্য। খধ্ু।হস ন্রিকৃষ্টন্ত-_€শবর-ভাষা, ১1১৫) 
মীমাংস।-শ্লেরক-ব।ঠিক-এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য ; পৃঃ *৪-৪৫ 

মীমাংসকগণ বৈয়।করণদের স্ফেটবদ সমর্থন করেন না, কারণ ইহ1 বর্ণ ব্যতীত সমুদ্রয় শব্দ গ্রহণ 
করিয়।ছে ।--তন্ববিন্দু লেখকের ভূমিক। ; পৃঃ ১-২-৬৭ 

দ্রঃ--মানমেয়োদয়, মেযখণ্ড, রাধাকৃঞ্ণন্‌, ইগ্ডিয়ন ফিলসফি, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪১৪-১৭; ঝা, 
প্রাতাকর স্কুল অফ. মীমাংসা, পৃঃ ৮৮-১০১ এবং পুর্ব-মীমাংসাঁ, পৃত ৬১-৭৬ । 

স্ব-নংবেছ্যন্ত ভবতি, ন।লাবন্যেন শক্যতে দরষ্ট.ম্‌__শবর-ভাষ্য, ১1১1৫ 

জ্রঃন্যায়-রত্রাবলী “আম্মনোহস্ত্যংশ-ছয়ম্‌ চিদংশে।হচিদংশশ্চ, চিদংশেন ভরষ্টত্বম, অচিদংশেন জ্ঞান- 
স্ুখাদি-পরিণ।মিত্বম্‌. মামহং জানামীতি জ্ঞেয়ত্ং চ* | 

“কর্ত। ভোক্ত। জড়া। বিভুরিতি প্রাভাকরঃ_-দ. বিন্দু। ন্যায়-রত্াবলীতে 'জড়'কে এইরপে 
ব্যাখ্যা কর! হইয়াছে--স চ জ্ঞান-ন্বরূপ-ভিন্থাদ্‌ জড়: ; জনামীতি জ্ঞনাশ্রয়ত্বেন স ভীতি, ন 
জ্ঞান-রূপত্বেন। 

দ্রঃ প্রকরণ-পঞ্চিকা, পৃঃ ১৮৫ এবং ডাঃ ঝা"র পূর্ব-মীমাংসা, পৃঃ ২৫খ-৬০ 

দ্রঃ প্লোক-বাতিক, আত্ম-ব।দ, শ্লোক ১৪৮। 


৩৩০ 


পূর্ব-নীমাংস! ঃ গ্রথবিবরণী 


৩২। শব-ব্রক্ষেতি যচ্চেদং শাস্তরং বেদাখ্যমুচযতে | 
তদপ্যাধিষ্তিতং সর্বম একেন পরমাক্মন] । ( তন্ত্র-বাতিক, পু ৭১৯) 

৩৩) ভড্র১আপদেবের মন্তব্য £ ঈত্বরে! গত-কলীয়ং বেদমন্মিন্‌ কলে স্মতেপদ্দিশতি ( পৃঃ ২)। 

৩৪ । শাপ্্রদীপিকাঁ, পৃঃ ১৩০ এবং দ্রঃ ডাঃ গঙ্গানাথ ঝর পূর্ব-মীমাংস।, পৃঃ ২৩২৫ ॥ 

৩৫। ভর: রাধাকৃষ্ণন্‌, ইণ্ডিয়ান ফিলসফি, খণ্ড ২, পৃ ৪২২-২৩, ডাঃ গঙ্গানাণ ঝা”র পূর্ব-মীমাংসা॥ 
পৃঃ ৩৬-৩৭ 

৩৬। ভ্রঃ-যখা-শক্তি-ন্া।য়, পৃমী-, হু ৩২ 


গ্রন্থবিবরণী 


জৈমিনি £ পুর্ব-মীমাংসা-হ্ত্র_শবরস্বমীর ভাষ্যের সহিত (শ. ভ1), বারাণসী, ১৯১০ 

ভট্টকুম।রিল ঃ শ্লোক-বাত্তিক, বারাণসী ৪ 

ভষ্টকুমারিল ঃ গ্লোক-বাঠিক (হুচরিতমিশ্রের ক।শিকার রম ৩য় খণ্ড, ত্রিবান্দ্রম্‌ সংস্কৃত 
গ্রস্থমীলা, নং ১৫০, ত্রিবান্্রাম্‌, ১৯৪৩ 

ডষ্টকুমারিল £ তন্্-বাতিক, বারাণসী 

প্রভাকর £ বৃহতী ( খজু-বিমল। সহ ), মাদ্র।জ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত গ্রন্থম।লা, নং ৩, মাদ্র।জ, ১৯৩৪ 

মিশ্র, শালিকনাথ ১ প্রকরণ-পঞ্চিকা, বারাঁণনী, ১৯০৩ 

মিশ্র, পার্থস।রণি £ শান্ত্রদীপিকা, নির্যয়সাগর প্রেস, বোম্বে, ১৯১৫ 

আপদেব £ মীমাংস।-ন্যায়-প্রক।শ, নির্ণয়স।গর প্রেস, বোন্বে, ১৮৩৩ 

ভট্ট, নারায়ণ ও পণ্ডিত, নারায়ণ £ মান-মেয়ে দয়, আডিয়ার, ১৯৩৩ 

'র।মানুজ।চার্ধ £ তন্ত্র-রহস্, গইকে।য়াড় ওরিয়েন্টাল সিরীজ, নং ২৪, বরে(দা, ১৯২৩ 

সুরেশ্বর 8 নৈক্ষর্মা-সিদ্ধি, বোষ্বে সংস্কৃত ও প্রাকৃত সিরীজ, নং ৩৮, বোন্ছে 

রাধাকৃ্ণন্‌, সবপলী £ ইগ্ডিয়।ন ফিলসফি, খণ্ড ২, লগ্ন, ১৯২৭ 

দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ 3 এ হিস্ট্রি অফ ইওিয়ান ফিলসফি, খণ্ড ১, কলিকাতা, ১৯২২ 

শাস্ত্রী ম. ম. এস্‌ কুপপুন্বামী ২ এ প্রাইমার এফ, ইতডিয়ান লজিক, মাদ্ররজ, ১৯৩২ 

দত, ডি. এম সিকৃপ্‌ ওয়েজ অফ. নোইং, লগুন ১৯৩২ 

শাস্ত্রী, পশুপতিনাথ £ ইনট্রোডাক্শন্‌ টু পূর্ব-মীমাংসাঁ, কলিকাতা, ১৯২৩ 

কীথ, এ.বিঃ কর্ম-মীমাংসা, হেরিটেজ অফ ইগ্ডিয়। সিরীজ 

ঝা, গঙ্গানাথ ১ প্রাভাকর স্কুল অফ মীমাংসা, ইত্ডিয়ান থট্‌, এলাহা বাদ, ১৯১১ 

ঝা, গঙ্গান।প £ পূর্ব-মীমাংসা, বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্য।লয়, বারাণসী, ১৯৪৩ 

শান্্রী, ভি. এ. রামশ্ামী ঃ এ সর্ট হিগ্বী অফ পূর্ব-মীমাংস। (তত্ববিন্দুর সংস্করণে লেখকের ভূমিকা, 
আম্নামালাই সংস্কৃত সিরীজ, নং ৩), আন।মালাইনগর, ১৯৩৬ 

কানে, ম£ মঃ পি ভি £ পুর্ব-মীমাংসা সিস্টেম, 


৩৩৯ 


চূর্ণ গরিচ্ছ্দ 
বেদান্ত-_অছৈতবাদ 


ক। শংকর 


বেদাস্তঃ বেদের অন্ত বা শেষ এই অর্থে উপনিষদ্‌ সমুহকেই বেদাস্ত বল! হয়। 
প্রাচীনকালে উপনিষদের তত্বগুলির একটি সঙ্গত ও সুসংবদ্ধ ব্যাখ্যা দিবার চেষ্টা 
কর! হইয়াছিল। এই গ্রন্থের “উপনিষদৃ* শীর্ষক অধ্যায়ে আমরা লক্ষ্য করিয়াছি যে, 
উপনিষদে দুইটি পৃথক্‌ চিন্তাধারা! আছে । এক ধার! অহ্ুসারে ব্রহ্ম, জীব ও জগৎকে 
অভিন্ন বল! হইয়াছে; অন্ত মতে এই তিন তত্বৃকে পৃথকৃ বলিয়া ধর! হইয়াছে । এই 
আপাতবিরোধী দুইটি উক্তির মধ্যে সমম্বয়সাধন করা আবশ্তক। জীব ও জগৎ 
একই সময়ে কি করিয়! ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন ও অভিন্ন হইতে পারে? বাদরায়ণের 
্হ্ষস্থত্র অথবা বেদাস্তহ্ত্রে এই জাতীয় সমন্বয়ের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। বর্গস্থত্রে 
দেখিতে পাওয়া যায় যে, উপনিষদের চিত্ত।ধারার যধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা! আরও 
অনেকে করিয়াছেন, যথ। ওডুলোমি, কাশকৎস্স, বাদরি, জৈমিনি, কা্চ1জিনি ও 
আশ্মরথ্য। ইহাদের মধ্যে কাহারও গ্রন্থ আমাদের হাতে আসে নাই বলিয়! 
বাদরায়ণের গ্রন্থই প্রাধান্তলাভ করিয়াছে। 

উপনিধদৃ, তগবদ্গীত! ও ব্রক্গন্যত্র বেদান্ত দর্শনের তিনটি ভিত্তি। ইহাদিগকেই 
বেদাস্তের প্রস্থানত্রয় বল! হইয়া থাকে । 

রহ্ষস্তত্রের আর এক নাম উত্তর-মীমাংস! ; ইহা পূর্ব-মীমাংস1 (যাহা যাগযজ্ঞাদি 
লইয়! আলোচনা করে ) হইতে পৃথকৃ। মীমাংসার ( অর্থাৎ প্রণালীবদ্ধ আলোচনার ) 
মতে বেদে যাহ দেওয়া আছে, তাহার তাৎপর্য নির্ণয়ের জন্য আলোচনা প্রয়োজন। 

হ্ধনত্রের শংকর-ভাষ্য ২ ত্রন্গস্থত্র চারি অধ্যায়ে বিভক্ত; প্রত্যেক অধ্যায়ে চারিটি 
পাদ অথবা পরিচ্ছেদ। ব্রক্মস্তত্রের সংক্ষেপে বণিত বিষয়বস্ত নানাবিধ ব্যাখ্যার সুযোগ 
দ্রিয়াছে। ব্রন্গন্থত্রের বিভিন্ন তাষ্যের মধ্যে প্রধানগুলি হইতেছে শংকরের অদ্বৈত, 
রামাহুজের বিশিষ্টাদ্বৈত, মধ্বাচার্ষের দ্বৈত, নিম্বার্কের ভেদাভেদ এবং বল্লভের 
শুদ্ধাদ্বিত। ইহার! বাদরায়ণের ব্রন্দস্থত্রে উল্লিখিত প্রাচীন পরম্পরাগত মতগুলির 
মধ্যে কোন না কোন একটি অন্থসরণ করিয়াছেন । ইহাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন 


৩৩২ 


বেদা--অইৈতহাহ $ শংকর 


প্রকারের উপদেশের প্রবর্তন করিয়! পিয়াছেন। বেদাস্ত-দর্শনের শংকর-কত ব্যাখ্যা 
এই পরিচ্ছেদের আলোচ্য বিষয় । 

শংকর খুৃষ্টায় অষ্টম শতকে জন্মগ্রহণ করেন ।১ তিনি নিজেকে গোবিন্দের শিষ্য 
বলিয! অভিহিত করিয়াছেন ; গোবিন্দ গৌড়পাদের শিষ্য । শংকর বত্বিশ বৎসর 
কাল বাঁচিয়াছিলেন এবং তিনি বহু গ্রস্থ প্রণয়ন করিয়াছেন ; ইহাদের মধ্যে প্রধান 
উপনিষদ্গুলি ভগবদ্গীতা এবং ত্রহ্ষন্ত্রের তাষ্য বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। ইছা 
ব্যতীত আরও অনেক গ্রন্থের প্রণেত। হিসাবে শংকরকে গণ্য করা হইয়! থাকে, কিন্ত 
সে সম্বন্ধে নিশ্চয় করিয়। কিছু বলা যায় না। 

উপনিষদের মুল বক্তব্য আতক্মৈকতত্ববাদ অথব| অদ্বৈতবাদ--শংকর এই মত 
প্রতিপন্ন করিয়াছেন। মুলমধ্যমককারিকার লেখক নাগাঙ্জুনি বলিতে চান যে বৃদ্ধের 
প্রধান মত হইল চরম অদ্বয্-বাদ। গৌড়পাদ তাহার মাণুক্য উপনিবদের কারিকাতে 
উপনিষদাবলীর অন্তর্গত বিরোধী বাক্যের বিবরণ দিয়াছেন । অদ্বৈত দর্শনের মূল 
তত্বগুলির প্রথম ব্যাখ্যা পাওয়। যায় গৌড়পাদের কারিকাতে। এই মূল তত্বগুলি 
হইল সত্তার স্তরভেদ, জীব ও ব্রদ্দের অভেদত্ব, মায়াবাদ, কার্যকারণ সম্পর্ক প্রভৃতি 
বৌদ্ধিক ব্ূপের পরমতত্বে প্রয়োগের অযৌক্তিকতা, মোক্ষপ্রাপ্তির সাক্ষাৎ উপায় 
ব্ূপে জ্ঞানের আবশ্যকতা । মাধ্যমিকের নেতিবাচক তর্কশাস্ত্রের সহিত উপনিষদের 
ভাবাত্বক চৈতন্যবাদের এক সমস্বয়সাধনের চেষ্টা কারিকাতে কর! হইয়াছে । এই 
বিবয়ে গৌড়পাদ অবশ্য একটি সুপ্রাচীন অদ্বৈত ভাবধারার কথাই বলিয়াছেন। 
তাহার কারিক! চারিটি অধ্যায়ে বিভক্ত ) প্রথম অধ্যায়ে (আগম ) মাগুক্য 
উপনিষদের বাক্যগুলির ব্যাখ্যা কর! হইয়াছে । গৌড়পাদ ইহা! প্রতিপন্ন করিবার 
চেষ্টা করিয়াছেন যে তাহার মত শ্রুত্যহুসার এবং যুক্তিসিদ্ধ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে 
€( বৈতথ্য ) যুক্তির সাহ্যয্যে বহুত্ব ও তেদযুক্ত জগতের মিথ্যাত্ব ব্যাখ্যা! করিয়াছেন। 
তৃতীয় অধ্যায়ে অদ্বৈতবাদ প্রতিষ্ঠা কর! হইয়াছে । শেষ অধ্যায়ে ( অলাতশাস্তি ) 
অদ্বৈতবাদের আরও বিস্তৃত ব্যাখ্য। করিয়! আত্মাই বে একমাত্র সত্য এবং আমাদের 
সাধারণ বস্তবিষয়ক জ্ঞান যে ব্যবহারিক এই কথ! বল! হইয়াছে । একটি দণ্ডের 
একদিকে আগুন জ্বালইয়৷ যদি খুব জোরে উহ ঘুরান হয় তাহা হইলে আগুন যেন 
বৃস্তাকারে ঘুরিতেছে এই রকম ভ্রম উৎপন্ন হয়। ইহাকে অলাত-চক্র বল! হয়। 
জগতের বহুত্ব ও এইরকম ভ্রম-প্রস্থত। গৌড়পাদ তাহার করিকায় যোগাচার মতের 
উল্লেখ করিয়াছেন এবং বুদ্ধের নাম প্রায় ছয়বার উল্লেখ করিয়াছেন । 

যে যুগে বৌদ্ধধর্মের বহুল প্রচলন ছিল গৌড়পাদ সেই যুগের লোফ। ম্বভাবতই 


৩৩৬ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


তিনি বৌদ্ধ মতের সহিত সুপরিচিত ছিলেন এবং বৌদ্ধমতের যে অংশ তাহার অদ্বৈত 
মতের সহিত অবিরোধী তাহা তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে 
তাহার আবেদনের যুক্তি ছিল এই যে, তাহার মত কোন ধর্মশাস্ত্র বা শ্রতির উপর 
নির্ভরশীল নহে। গৌড়! হিন্দুদের নিকট তিনি বলিতেন ষে তাহার মত প্রাচীন 
স্বীকৃত মতাহুসারী । তাহার মত মোটামুটি উদার ছিল বলিয়! গৌড়পাদ বৌদ্ধমতের 
সহিত সংশ্লিষ্ট অন্যান মত গ্রহণ করিয়া তাহাদিগকে অদ্বৈতবাদের পরিকল্পনার সহিত 
সমন্বিত করিয়! লইয়াছিলেন। 

মনে হয় গৌড়পাদ তাহার নিজের মতের সহিত বৌদ্ধমতের কোন কোন বিষয়ের 
সাদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। সেইজন্তই তিনি একটু বেশী প্রতিবাদ করিয়া 
বলিতেন তাহার মত বৌদ্ধ মত নহে। তাহার কারিকার উপসংহারে তিনি 
বলিয়াছেন £ “ইহা বুদ্ধের উক্তি নহে।” শংকর ইহার উপর ব্যাখ্য! প্রসঙ্গে 
বলিয়াছেন £ “বৌদ্ধ মত ও অদ্বৈতবাদের মধ্যে কিছু পরিমাণে সাদৃশ্য দেখা 
যায় বটে, কিন্ত যে অদ্বৈতবাদ বেদান্ত দর্শনের কেন্দ্র ইহ! সেই জাতীয় অদ্বৈতবাদ 
নহে।” 

গৌড়পাদের গ্রন্থে বৌদ্ধ প্রভাব, বিশেষত বিজ্ঞানবাদ ও মাধ্যমিক সম্প্রদায়ের 
প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত বাস বস্তুর মিথ্যাত্ব প্রমাণ করিবার 
জন্য বিজ্ঞানবাদীর1 যে সকল যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন গৌড়পাদও ঠিক সেই জাতীয় 
যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন। বাদরায়ণ এবং শংকর উভয়েই দৃঢ়তার সহিত বলিয়াছেন 
যে জাগ্রৎ জীবনের অভিজ্ঞত1 ও স্বপ্নজগতের অভিজ্ঞতার মধ্যে সত্যিকার পার্থক্য 
রহিয়াছে এবং জাগ্রৎ জীবনের প্রতীতি বাহ্‌ বস্ত্র নিরপেক্ষ নয়। গৌড়পাদ অবশ্য 
জাগ্রৎ ও স্বপ্ন উভয় জগতের জ্ঞানকে একত্র করিয়া দেখিয়াছেন। একদিকে 
বিজ্ঞানবাদের সহিত সংশ্লিষ্ট আভাসবাদ হইতে শংকর তাহার দর্শনকে মুক্ত করিবার 
চেষ্টা করিয়াছেন। অপরদিকে গৌড়পাদ আভাপবাদকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করিয়াছেন। 
বিজ্ঞানবাদকে চরম মত বলিয়া গৌড়পাদ গ্রহণ করিতে পারেন নাই। তিনি 
বলেন বিষয়ের স্তায় বিষষীও অসৎ্। ইহার ফলে, তাহার মত বিপজ্জনক ভাবে 
শৃশ্তবাদের কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াছে। নাগাজুনের মত গৌড়পাদও কার্যকারণ 
সম্পর্কের বৈধতা এবং পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা অস্বীকার করিয়াছেন। প্ধবংস ও 
নাই? স্প্টিও হুয় নাই, কেহ বদ্ধ নহে, কেহ মোক্ষের জন্য সচেষ্ট নহে, কেহ মুক্ত 
নহে ইহাই চরম সত্য ।” ব্যবহারিক জগতের উৎস অবিদ্া অথব। নাগার্জনের 
ভাষায় সম্বতি। “মায়িক বীজ হইতে মায়িক অংকুরের উদ্ভব হয়; এই অংকুর 


৩৩৪ 


বেদান্- -অনৈতবাদ $ শংকর 


নিত্য নয় অনিত্যও নয়। পদার্থের শ্ভাবও এইরূপ এবং তাহার কারণও 
ইহাই |” জ্ঞাতা, জ্ঞেম্স ও জ্ঞান এই ত্রিপুটিকে অতিক্রম করিয়া যে চরম অবস্থা 
বিদ্বামান তাহাকে অস্তি, নান্তি, ইহারা উভয়, ইহাদের ফোনটি নহে-_-এইক্ধপ 
কোন বিশেষণই দেওয়া! চলে না। গৌড়পাদ এবং নাগাুন মনে করেন যে, এই 
চরম অবস্থা ব্যবহারিক সত্তাকে অতিক্রম করিয়া আছে। মতের দিক দিয়! এই 
সকল মিল ছাড়াও উভয়ের ব্যবহৃত বাক্য ও বাক্যাংশ বিশ্লেষণ করিলেও দেখা যায় 
যে, বৌদ্ধমত বেদাস্তকে নিঃসন্দেহে প্রতাবান্বিত করিফ্লাছে। ধর্ম” কথাটি বস্তু ও 
পদার্থ অর্থে ব্যবহার করা, “সন্ব'তি অর্থে আপেক্ষিক বা ব্যবহারিক জ্ঞান বুঝা, 
“সংঘত।” বলিতে বস্তুনিষ্ঠ সত্তা বুঝ1--এই সকলই বৌদ্ধমতাহ্ৃসারী | বোদ্ধ গ্রন্থে 
অলাতচক্রের তুলন। মিথ্যাত্বই স্থচিত করে। 

শ্রুতিঃ অনুভূতি, প্রজ্ঞা ঃ শ্রতিবাক্য ব্যাখ্যা! করিতে গিয়া শংকর উপনিষদের 
বাক্যগুলির আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ না করিয়া উহাদের আস্তশিহিত ভাবের প্রতি লক্ষ্য 
রাখিয়াছেন।২ নিজ মতের সমর্থনে শংকর শুধু শ্রতিবাক্যের প্রাধান্তই শ্বীকার 
করেন নাই, নিজ বক্তব্যের যৌক্তিকতা ও অপরোক্ষান্ভৃতির উপরও জোর 
দিয়াছেন। এই বিভিন্ন প্রকারের জ্ঞান পরম্পর-বিরোধী নয়। কার্য-কারণ যুক্তির 
সাহায্যে আমর! এক চরম তত্বের অস্তিত্বে উপনীত হইতে পারি। জগৎকে কার্ষ- 
রূপে গ্রহণ করিয়া ইহার চরম কারণের আবশ্যকতা আমরা অবশ্ঠই শ্রহণ করিতে 
পারি। এই ধরণের অন্মমান অবশ্ট কারণের স্বভাব প্রকাশ করিতে পারে ন|। 
কেবল অপরোক্ষান্থভূতির সাহায্যেই সত্তার স্বন্ধপ প্রকাশিত হইয়া থাকে । চরম 
সত্ব! কোন তাত্বিক পদার্থ নহে, ইহা চিৎসত্ত।। ইহা অনুমানের বিষয় নহে, ইহা 
কেবল অপরোক্ষান্থৃভৃতি-লভ্য । শংকর শ্রতিকে এই অর্থে প্রত্যক্ষ বলিয়াছেন যে, 
ইহাতে সত্যদ্রপ্টী খবিদের অনুভূতির কথা লিপিবদ্ধ আছে।৩ যেহেতু শ্রুতিতে 
লিপিবদ্ধ অস্থভূতি স্বতঃপ্রমাণ, সেইজন্য শ্রুতির ম্বতঃপ্রামাণ্যও স্বীকৃত হইয়াছে। 
সুর্যালোক যেমন দৃশ্ঠমান বস্তুকে উদ্ভাসিত করে তেমনি শ্রতি ইহার বিষয়বস্তরকে 
প্রকাশ করিয়! থাকে |৪ শ্রুতিকে স্মারক বা জ্ঞাপক হিসাবে দেখিতে হইবে, ইহা! 
কারক নহে ।« শুদ্ধ প্রজ্ঞা মাহ্ৃবকে অপরোক্ষা্ছভূতির দিকে লইয়। যায় ৬ এবং 
অপরোক্ষান্থভূতির লিপিবদ্ধরূপই শাস্ত্র বা শ্রতি। 

ংকর শ্রতিবাক্যের ব্যাখ্যা করিয়া, যুক্তির সাহায্যে এই সত্যে উপনীত 
হইয়াছেন যে, ব্রহ্ম অপরোক্ষান্থভূতি-লভ্য | প্রত্যক্ষ অন্গমান, উপমান, অর্থাপত্তি, 
শব্দ প্রভৃতি কোন প্রমাণের বিষয়রূপেই ব্রহ্মাকে পাওয়া! যায় না।* ব্রহ্মাকে 


৩৩৫ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


ষাক্ষাৎ প্রতীতির ঘারা পাইতে হইবে, যুক্তিতর্কের সাহায্যে ব্রহ্গ সাক্ষাৎকার ঘটে না। 
এই অস্থভূতিতে সর্বভূতে আত্মাকেই উপলব্ধি করা হয়। ব্রহ্ষান্গভূতি হইলে জ্ঞাতাঃ 
জ্ঞেয় ও জ্ঞান এই ত্রিপুটার বিলয় ঘটে। ব্যবহারিক জ্ঞানে যে সকল সর্ত থাকা 
প্রয্লোজন, এই অনুভূতিতে সে-জতীয় কোন সর্ত থাকে না। কেবল ফ্ুবত্বের বোধ 
বিস্তমান থাকে । শংকর প্রশ্ন করিয়াছেন, “একজন ব্রহ্গজ্ঞের অনুভূতি, যাহা! তাহার 
অস্তরের স্ব প্রত্যয়ের মধ্যে নিহিত, তাহা কেমন করিয়া! অপরে অস্বীকার করতে 
পারে 1” ক্রহ্মাহ্ছভৃতি অস্তের অন্থভূতি এবং ইহ] অনির্বচনীয়। আত্মাই কেবল 
এই অনুভবের সাক্ষী, আত্মসাক্ষিকমন্থত্মম্‌।» ছুঃখ বিরহিত শ্ুদ্ধচৈতন্তই জীবের 
স্বরূপ ব্রন্ান্ৃভৃতিতে ইহাই প্রতিভাত হয়। চরম সম্ভা হইতে বিচ্যুতি ঘটিলেই 
ছুঃখের উদ্ভব হয় ১১* এই বিচ্যুতি দূরীভূত হইলেই ছুঃখও দূরীভূত হয়। 

ব্রহ্ম £ উপনিষদের অনেক স্থানে বলা হইয়াছে যে, পরব্রঙ্গের ইতিবাচক লক্ষণ 
নির্দিষ্ট করা অসম্ভব । “নেতি নেতি+ ইত্যাদি প্রসিদ্ধ অংশটির অর্থ হইল যে ব্রহ্ম কোন 
প্রত্যক্ষের বিষয় নহেন। তিনি সমস্ত প্রত্যক্ষমূলক চিস্তার অতীত । তর্কান্থগামী 
জ্ঞানের দ্বারা তাহাকে উপলব্ধি করা যায় না। তিনি নিছক অস্তমু্খীনতা, যাহার 
বোধগম্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তিনি অবিতাজ্য; অবিচ্ছেগ্য । তিনি বাহা নন, 
বাহ কারণের অধীনও নন। ব্রন্মেরলক্ষণ নির্ধারণ করিতে গেলে তাহাকে বস্তর্ূপে 
গ্রহণ করিতে হয়। তিনি যে “এক” সে কথাও আমর! বলিতে পারি না। তিনি 
অদ্বৈত মাত্র। 

প্রত্যক্ষগম্য পদার্থরূপে ব্রন্দের স্বব্ধপ নির্ধারণ করা চলে না। তাই বলিয়া! ব্রহ্ম 
যে কেবল তাবময় বা শৃন্ততাবিশেষ তাহাও নহে ।১১ ছান্দোগ্য উপনিষদের ভাব্যে 
শঙ্কর বলিয়াছেন দিগংদেশাদিভেদশৃন্য অয় ব্রহ্ম মন্দবুদ্ধিগণের নিকটেই অসৎ 
রূপে প্রতিভাত হন।১২ 50102৪-র দ্রব্য (অর্থাৎ ঈশ্বর ) সম্বন্ধে সমালোচনা 
প্রসঙ্গে 8521 বলিয়াছেন যে, দিগ২দেশাদিভেদশুন্য পরমতন্ব অসৎ-এরই মত। 
শংকর এই যুক্তির সারবত্তা স্বীকার করেন না। শংকরের মতে যিনি পরম 
সত্য, তিনিই পরিপূর্ণ “সৎ । সমস্ত জগৎকে উড়াইয়! দিলেও আমর! এক পরম 
'সৎকে স্বীকার না করিয়া পারি না। এই অস্তিত্ব-নিষ্ঠাকে (70961011 ০0£ 1705805) 
পুর্ব হইতে মানিয়া না লইলে জীবন অর্থহীন হইয়৷ পড়ে। অভাব হইতে তাবের 
উৎপত্তি হয় না।১৩ যে কোনও জিনিসের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে, “সৎ বলিয়! 
কিছু আছে। এই ব্রহ্মাণ্ড সন্মুল, সদাশ্রয় ও সৎ-প্রতিষ্ঠ। এই “সৎ” হইল শাশ্বত 
 স্বয়ং-সৎ। তাহা নিজের জন্যই নিজে বর্তমান | ইহা অদ্বৈত ও অমিশ্র। বিবিধ 


৩৩% 


বেদাস্ত-অদ্বৈতবাদ £ শংকর 


উপাধিকে আশ্রয় করার ফলেই তাহা বিভিন্ন ব্ূপ পরিগ্রহ করে। “জীবদেহকে 
আশ্রয় করিয়া যখন তাহা কার্য করে» তখন তাহাকে বলি “প্রাণ” ; ষখন কথা বলে, 
তখন বলি “জিহ্বা; যখন দেখে, তখন বাতি ১ যখন শ্রবণ করে, তখন “কর্ণ” 
যখন মনন করে তখন বলি “মন 1৮১৪ 

এই “সৎ হইলেন “চিৎ, । পরমতত্ব “ৎ ও *টিৎ,_ছুই-ই। যে ঠচতন্যের 
আলোক ব্রহ্মাগুকে উদ্ভাসিত করে, তাহাই ব্রহ্ম । “অবিষিশ্র চৈতন্যর্ূপে সেই 
পরমাত্মা ব্বয়ংবিধ্ত এবং সব কিছু নিরপেক্ষ । কখনও তাহার অতাব হয় ন1 1৮১৭ 
আত্মচৈতন্য সম্বন্ধেই কেবল আমাদের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা আছে । আমরা কোনও বস্ত 
সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করিতে পারি অথবা তাহার অস্তিত্ব শ্বীকার করিতে ন! পারি; 
কিন্ত আমরা নিজের সত্তাকে অস্বীকার করিতে পারি ন1, কারণ এই সংশয় ও 
অস্বীকৃতিই যে তাহার অস্তিত্ব প্রমাণ করে ।১৬ আত্ম-সত্ত! স্বয়ং-সিদ্ধ।১৭ সেই 
পরম তত্ব সকল বিষয়ী ও বিষয়ের পার্থক্যের অতীত হইলেও-_-আমাদের আত্মা । 
সেই তত্ব বাহিরের কিছু নয়, একেবারে ভিতরের জিনিস । “ভিতরের” বলিতে 
ইহা বুঝিতে হইবে না যে, জীবের তাহ! একান্ত নিজস্ব বিশেষ গুণ বা ধর্ম । “ভিতরের” 
বলিতে ইহাই বুঝিব যে, উহ! জীবের অন্তরতম পরমাত্মা। আত্ম প্রমাত1 (81১1০) 
নয়, কিন্ত প্রমাতা-প্রমেয়ের সকল পার্থক্যের মুল। যখন আমর! প্রমাতা ও প্রমেয়ের 
ভেদ করি এবং একটিকে আর একটির প্রতিদ্বন্দিরূপে খাড়া করি, তখন বুঝিতে হইবে 
যে আমর! প্রত্যক্ষ জগৎ সম্বন্ধে কথ! বলিতেছি। আত্মা নিজের জন্যই বর্তমান থাকে । 
আর সব কিছু যে বর্তমান রহিরাছে তাহা এ আত্বারই মধ্যে এবং আত্মারই মাধ্যমে । 
অনাত্ব-বস্তরও প্রতিষ্ঠা এর আত্বাতেই। আত্মা হইল “ভূত-বস্ত্রঁ যাহাকে আমাদের 
স্বীকার করিয়া লইতে হয়। ব্রহ্ম হইলেন সঞ্, চিৎ ও আনন্দ । সেই পরম আনন্দের 
এক তগ্নাংশকে আশ্রয় করিয়া জগৎ অবস্থান করিতেছে ।১৮ ব্রহ্ম পরিপূর্ণ সৎ, অসীম 
ঠতন্য, পরম আনন্দ । ব্রহ্ম দ্রব্য এবং এগুলি তাহার গুণ-__তাহ1! নহে। ত্রগুলি 
হইল বর্ষের স্বভাব। ব্রহ্গ জ্ঞান-গণাশ্রয় নন, জ্ঞান-স্বর্ূপ তিনি। ব্রহ্ষের সার ভূত 
হইল জ্ঞান । উহ] তাহার কোনও উপাধি নহে । 

ব্রদ্দ সম্বন্ধে কোনও বোধগম্য আলোচন! করিতে গেলে প্রত্যক্ষজ্ঞান হইতে উদ্ভূত 
ধারণ সমূহ ব্যবহার করিতে হয় ১৯ এ সমস্ত ধারণ। যে সম্বন্ধাশ্রয়ী চিন্ত।-পরম্পরার 
স্ববিধার জঙ্যই প্রয়োজন তাহ! ধাহার! প্রাজ্ঞ তাহারা অনায়াসে বুঝিতে পারেন? কিন্ত 
বাহার! অজ্ঞ তাহার! এগুলিকে অতভ্রান্ত সত্য বলিয়াই গ্রহণ করে ।২* কুটস্থ ব্রহ্ম 
সম্বন্ধে কিছু বলিতে হইল ব্যবহারিক আলোচনাপদ্ধতিই অবলঘ্ন করিতে হয়।২১ 


৩৩৭ 
৪৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


ব্রহ্গকে ব্যবহারিক অবস্থাসমূহের অধীন করিয়াই কেবল আমরা তাহার সম্বন্ধে 
মন্তব্য করিতে পারি। পরব্রহ্গকে যখন আমর! ব্রহ্গাণ্ডের অ্রষ্টা ও শাসনকর্তা রূপে 
দেখি, তখনই তাহাকে বল! হয় সগণ ব্রহ্ম দ্বিনূপং হি ব্রন্মাবগম্যতে, নাম-নপ- 
বিকার-তভেদোপাধি-বিশিষ্টং তদ্বিপরীতং সর্বোপাধিজিতম্‌ )। ছুই-ই ব্রহ্গের সিদ্ধরূপ | 
সগুণ ব্রহ্ম বা ঈশ্বর হইলেন চেতন-__যাহ] বর্তমান সব কিছুর সমষ্টি | প্রমাতা-প্রমেয় 
রূপ ভেদবঞ্জিত নিগুণপ ও নিরুপাধি ব্রক্গকে প্রমেয়-প্রতিদ্বদ্ী প্রমাতারূপে কল্পন! করা 
হয়। পরস্পরের উপর এই ছইয়ের ক্রিয়াই হইল স্যজনপ্রক্রিয়! | দিব্য প্রেরণা ও 
প্রভাবের বশবর্তী হুইয় তুচ্ছতার পীঠভূমি হইতে ঈশ্বরের রাজ্যে উদ্‌্গতির পথে এই 
স্থজনপ্রক্রিয়া ক্রমশঃ আধ্যাত্মিক সম্পদ সঞ্চিত করিতে থাকিয়! শেষ পর্যস্ত মহিমময় 
হইয়া উঠে। 

বিশ্বের স্থানঃ শঙ্কর ব্রহ্ম ও জগতের তাদাত্ব্য প্রতিষ্ঠিত করেন না। তিনি শুধু 
উভয়ের তেদ অস্বীকার করিয়াছেন 1২২ “আমর! ব্রহ্গ-নিরপেক্ষ ব৷ ব্রহ্ম-ব্যতিরিক্ত 
জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করি না।” অদ্বৈত বেদান্তে প্রকৃতির নামান্তর “মায়া” । 
প্রকৃতির স্থষ্টিই জগতের বিকাশ | কিন্ত এই প্রকৃতি ব1 মায় ব্রঙ্গনিরপেক্ষ নয়। ইহ! 
ব্রহ্মনির্ভর। প্রকৃতি বা মায়ার সাহচর্ষে ব্রন্ম হন সগ্ডণ ব্রন্দ বা ঈশ্বর । জীবাত্বা ও 
পদার্থসমূহের বৈবেধ্য ও ধৈচিত্র্কে তখন তিনি আত্মসাৎ করেন। সকল স্্টির 
অধিপতি সেই ঈশ্বর স্যষ্টির সর্বত্র অন্ুস্থ্যত। ব্রক্গ জীব ও ঈশ্বর ছুই-ই। অথচ 
জীবরূপে ও ঈশ্বররূপে তিনি পৃথক্‌ পৃথকৃ ভাবে যে সব আনুষঙ্গিক গুণাবলীর সহিত 
যুক্ত সেগুলির মধ্যে প্রভেদ আছে । এই দিক দিয়া জীব ও ঈশ্বরেও প্রভেদ বর্তমান । 
ঈশ্বর প্রাকৃত মায়ার সহিত যুক্ত, আর জীব অবিদ্যার সহিত জড়িত। পরব্রক্ম 
কোনওরূপ অবিদ্যার অধীন নহেন। জন্য পদার্থসমূহের বূপাস্তর তাহাকে স্পর্শ 
করিতে পারে না। আসক্তি বলিলেই পছন্দ বা! অপছনের প্রশ্ন আসিয়া পড়ে। 
ঈশ্বর কিন্ত অনাসভ্ত, কারণ তিনি সব কিছুতেই আসক্ত । ঈশ্বরকে কখনও কখনও 
ব্ন্মাণ্ডের স্রষ্টা বল! হয়। তখন মায়াকেই বলা হয় তাহার শক্তি। এই শক্তির 
সাহায্যেই তিনি স্ষ্টি করেন। এই দিক দিয়া দেখিতে গেলে তিনি ব্রঙ্গাণ্ডের 
উপাদান-কারণও বটে, নিমিত্ত-কারণও বটে ২৩ আত্মা আছে বলিয়াই অনাস্ববস্তরময় 
এই জগৎ সার্থক হইয়াছে এবং, এই জগৎ সেই আত্মারই বিষয়ীভৃত। আত্মা ব! 
চৈতন্যকে বাদ দিলে এই জগৎ অ-সৎ হইয়া পড়ে। আত্মাই শুধু "্বার্থ” অর্থাৎ 
নিজের জন্যই ইহার সত্তা । বহিজগৎ পরার্থ» অর্থাৎ ইহার সত্ব) অন্টের জন্য | 
জগতের নিজের জন্য সত্তা নহে । এই অর্থে জগৎ ব্রঙ্গ অপেক্ষা কম সত্য । 


৩৩৮ 


রেদাত--অধৈতদ্বাদ ; শংকর 


রঙ্গ ৎ। জগৎ পুর্ণ সৎ নহে, কিস্ত ইহা অ-সৎও নহে | জগতের একটা 
ব্যবহারিক সত্তা আছে। এই ব্যবহারিক সত্ত। ব্রন্দের পারমাথিক সস্তা হইতে 
সম্পূর্ন ভিন্ন। অ-সৎ কিছুই থাকিতে পারে না। শশশৃঙ্গ বা বন্ধ্যাপুত্র বলিয়! কিছু 
থাকিতে পারে ন|। বিশ্বকে যখন আমর! উপলব্ধি করি, তখন ইহাকে অ-সৎ বল 
যায় না।২ঃ | ্‌ 

আর একটি সত্যকে শ্বীকার না করিলে ব্যবহারিক জগৎকে মিথ্যা বলিয়! 
উড়াইয়া দেওয়া যায় না শংকর এই বলিয়াই শুন্তবাদের সমালোচন! করিয়াছেন । 
একটি ভ্রমকে বাতিল করিতে হইলে একটি প্রমাকে হ্বীকার করিতে হয় 1২৫ 

শংকর মনে করেন যে, শুন্তবাদ সমস্ত কিছুকে অস্বীকার করিয়াছে অথচ একটি 
মূলীভৃত্ত সত্যকে শ্বীকার করিয়! লয় নাই। দ্বৈত-মিথ্যাত্তের উপর প্রতিষ্ঠিত 
ব্যবহারিক জগতের অসত্যতা শংকরও স্বীকার করেন, নাগাজুনও স্বীকার করেন । 
তবে বেদাস্তাহ্বগামী শংকর ব্যবহারিক জগতের মূল হিসাবে ব্রন্ধকে সত্য বলিয়া 
স্বীকার করিয়াছেন, কিন্ত এ বিষয়ে নাগাজুন একেবারে নীরব। 

প্রায়ই বল! হয় যেশংকর জগৎকে মায়া বলিয়া মনে করেন। জগৎ ও ব্রন্গের 
সম্বন্ধ বর্ণনা করিতে যাইয়া শংকর 'যে দৃষ্টান্ত দিয়াছেন তাহ! হইতে এ মত সমধিত হয়। 
যে রজ্জুতে সর্ভ্রম হয় তাহা সৎ ও নহে, অ-সৎও নহে । ইহার অন্তব হইয়া 
থাকে কিন্ত ইহ! সন্বস্ত নহে। ভাল করিয়! বস্তুটি দেখিলে আমরা বুঝিতে পারি যে 
উহ সর্প নহে, রজ্জু মাত্র । প্রমাজ্ঞান না হওয়া! পর্যস্ত আমাদের ভ্রম থাকে । ইহা! 
হইতেই বুঝ! যাইবে যে, জগৎ ব্রহ্মমূল এই প্রমাজ্ঞান না হওয়া! পর্যন্তই জগৎকে সত্য 
বলিয়! মনে হয়। বোধ উদয় হইলে আমর। উপলব্ধ করি যে ইহ! ব্রহ্গের প্রকাশমাত্র | 
এ দৃষ্টান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শংকর ইহাই বুঝাইতে চাহেন যে জগৎ সদসদ্বিলক্ষণ কিছু । 
জাগতিক সমস্ত দ্রব্য পরম তত্ব? ব্রহ্ম ও মিথ্যার মাঝামাঝি স্তরে অবস্থিত । সর্প 
দেখ। যায় বটে, কিন্ত ইহা সত্য নহে আবার একেবারে মিথ্যাও নহে । যতক্ষণ শ্রম 
থাকে ততক্ষণ সর্প থাকে। জ্ঞান হয়, সর্প যেন আছে। একেবারে যাহা মিথ্যা 
তাহার কখনও জ্ঞান হইতে পারে না। জগৎকে হয় সত্য নয় মিথ্যা এভাবে দেখ! 
চলে ন। ইহা অনির্বচনীয়। অদ্বৈত বেদান্ত অনির্বচনীয় খ্যাতিবাদ গ্রহণ করিয়াছে । 
যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তাপদ্ধতির সুনিদিষ্ট বৈশিষ্ট্য হইতেছে বিরোধাতাব, সত্য ও মিথ্যার 
মাঝামাঝি শব্দের বর্জন ইত্যার্দি। কিন্তু যুক্তিনিষ্ঠ চিস্তাপদ্ধতিই সব নহে। যে 
জগৎকে একমাত্র “অনির্বচনীয়” বলিয়া বর্ণনা করিতে হয়, তাহাকেই আবার কখনও 
কখনও “মায়া” বল! হয়। ইহা সৎও নহে, অ-সৎও নহে, আবার ছুইয়ের মিশ্রণও 


৩৩৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


নহে সৎ বা 'অ-সৎ বলিয়! ইহাকে অভিহিত করা যায় না। ইহা মিথ্যাভৃত ও 
সনাতন ।২৬ 

ত্রন্মের উপর জগৎ নির্ভর করে, জগতের উপর ব্রন্ম নির্ভর করে না। এই 
একদেশী নির্ভরতা বুঝাইবার জন্যই শংকর রজ্জু ও সর্পের দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করিয়াছেন । 
রজ্জুর অবস্থিতির উপর সপভ্রম নির্ভরণীল, কিন্তু রজ্ুর অবস্থিতি সর্পভ্রমের উপর 
নির্ভর করে না। ব্রঙ্গকে বাদ দিলে জগৎ থাকিবে না শুধু এই অর্থেই বলা! চলে যে, 
জগৎ বর্গের উপর নির্ভরশীল । জগৎ ন। থাকিলে ব্রহ্গের কোনও তারতম্য হয় না। 
সর্প যেমন রজ্জুর উপর নির্ভর করে, জগৎ সেইন্প ব্রন্দের উপর নির্ভর করে। 

অবরকালীন অদ্বৈত বেদাস্তে 'পরিণাম* শব্দের স্থলে “বিবর্ভ, শব্দের ব্যবহারের 
মধ্য দিয়! এই একদেশী সম্পর্কই স্থচিত হইয়াছে । ব্রন্দম জগতের অধিষ্ঠান হইয়াও 
জগদতিগ। জাগতিক বস্তুর পরিবর্তন হয়, কিন্ত ব্রহ্ম সর্ববিধ পরিবর্তনের অতীত 
হইয়াই থাকেন। 

ংকরের মতে কারণবাদের ধারণা বস্তু জগতের মধ্যেই প্রযোজ্য । জগৎ কতক- 

গুলি কার্ধ-কারণের স্থান এবং ঠিক ঠিক বলিতে হইলে ব্রহ্ম জগতের কারণ একথা 
আমর] বলিতে পারি না ॥ কার্য-কারণের ব্যাপারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। যাহ! 
নিজেই সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অতী'তঃ তাহার সম্বন্ধে কার্২-কারণবাদ প্রযোজ্য হইতে 
পারে না। শংকর জোর দিয়াই বলিয়াছেন যে জগৎ শ্বপ্রাদিবৎ হইতে পারে না ।২৭ 
নিয়মতান্ত্রিক জগৎ কতকগুলি ঘটন| সমবায়ের সুশৃঙ্খল রূপ । এ ঘটনাগুলির পশ্চাতে 
রহিয়াছে স্থান, কাল ও কারণের সমবেত প্রভাব । স্বপ্পের রাজ্যে এই শৃঙ্খলা ও 
নিয়ম নাই। 

যে কোনও জ্ঞান একটি বস্ত সাপেক্ষ (বস্ততন্তরং হি জ্ঞানম্‌)। জাগ্রত অবস্থায় 
আমাদের যে অভিজ্ঞত! হয়, তাহার বস্ত্র স্বপ্নলন্ধ অভিজ্ঞতার বস্ত হইতে ভিন্ন 
পর্যায়ের । স্বপ্পোপলব্ধ বস্ত বাধিত হয় কিন্ত টেবিল; চেয়ার প্রভৃতি জাগৃতোপলন্ধ 
বস্তনিচয় কোনও অবস্থাতেই বাধিত হয় না।২৮ মানসিক অবস্থাসমূৃহের দ্বারা 
অপ্রভাবিত ও অবিকৃত কোনও কোনও বস্তকে তাহার স্বরূপে জানাই হইল আদর্শ 
জ্ঞান। পরীক্ষা-নিরীক্ষ! দ্বার। আমরা যে জ্ঞান লাভ করি তাহাতে জ্ঞানের এই 
আদর্শ বজায় থাকে না। প্রকৃত বিষয়-বিষয়ী নিরপেক্ষ হইয়া নিজেতেই নিজে 
অবস্থান করে। পরীক্ষালন্ধ তথ্যসমূহ অন্তসাপেক্ষ। স্বপ্নোপলব্ধ বস্তুসমূহের স্বপ্লেই 
অবস্থিতিঃ স্বপ্নের বাইরে তাহাদের অস্তিত্ব নাই। ত্বপ্রের সহিত তাহাদের যে সম্বন্ধ 
তাহার দ্বারাই তাহারা কবলিত হইয়া নিঃশেব হইয়! পড়ে । যাহ! সদৃবস্ত তাহ! স্বয়ং 


২৩৪৩ 


 বেঘাস্--অনৈতধাদ £ শংকর 


প্রকাশ । যে সব বিষয় লইয়। পরীক্ষা কর! চলে তাহার! স্বপ্পের বিষয় হইতে ২ স্তর? 
তাহাদের জ্ঞান না হইলেও তাহার! অবস্থান করিয়! থাকে । 

শংকর বিজ্ঞানবাদের সমালোচনা করিয়াছেন। বিজ্ঞানবাদ বান্ধ বস্তু সমুহকে 
বিজ্ঞানময় অবস্থায় লইয়া যায় ।২৯* যাহা মূলতঃ বিজ্ঞানাবস্থ1! তাহাকে বাহ বস্তর 
সহিত এক বলিয়া মনে কর! হয়। ইহা ঠিক নহে এবং এইখানেই বিজ্ঞানবাদের ক্রটি। 
যে বস্তুটি আছে তাহা 'পরিকল্িত” আর বিজ্ঞান: হইল একমাত্র তত্ব। শংকর বলেন 
যে, জ্ঞাত বস্তু জ্ঞানক্রিয়-নিরপেক্ষ | ইহ “বস্ত-তগ্ঁ। যাহ! উপস্থিত আছে তাহারই 
জ্ঞান হয়। বস্তুতান্ত্রিক পরাবিজ্ঞানবাদই শংকরের আদর্শ, জ্ঞান-বিজ্ঞানবাদ নহে । যে 
মতবাদ বস্তৃত্বকে তাহার প্রত্যক্ষত্বের সহিত এক বলিয়! মনে করে, শংকর তাহা৷ শ্রহণ 
করেন নাই। বর্তমান থাকিবার জন্য জগৎকে প্রত্যক্ষকারীর উপর নির্ভর করিতে 
হয় একথা শংকর বলেন না। আত্ম! মূল তত্ব একথা! বলা, আর কোনও জিনিসকে 
আমরা জানিলে তবে তাহ সত্য হইল একথ! বল এক নহে। 

স্বপ্নের জগৎ এবং জাগরণের জগৎ দুই-ই অনির্বচনীয়, কারণ তাহার! হয় সত্য 
নয় মিথ্যা এভাবে তাহাদের দেখ। চলে না। আর অ-বাধিতত্ব যদি সত্য বিচারের 
মাপকাঠি হয়, তবে তাহা কোনওটিতেই নাই। সেই পরম তত্ব ব্র্গই কেবল 
অবাধিত। পরাবিজ্ঞানের দিক হইতে দেখিতে গেলে এ ছুই জগৎই তত্বের অনেক 
নীচে পড়িয়! থাকে । তথাপি এ ছই-এর পার্থক্য আছে। ভ্রাস্তির ফলে যাহা 
সত্যব্ূপে প্রতিভাত হয় তাহা! প্রত্যক্ষকারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, কিস্ত পরীক্ষার 
দ্বার যে তত্তে উপস্থিত হওয় যায় তাহা হয় সর্ব-লোক-প্রত্যক্ষ । পরীক্ষার দ্বার! 
আমর যে তন্বে উপনীত হুই তাহাকে স্বপ্নলব্ধ জ্ঞান ও সেই পর জ্ঞান হইতে পুথক 
করিতে হইবে ।৩* 

শংকর-দর্শনে "মায় শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হুইয়। থাকে--(১) জগৎ নিজে 
নিজের কারণ দর্শাইতে পারে না; ইহ! হইতেই প্রতিপন্ন হয় যে ইহা একটি দৃশ্ট 
প্রপঞ্চ | 'মায়” শব্দ দ্বারা ইহাই স্চিত হইয়া থাকে । (২) যাহারা বর্গের শুদ্ধ 
সত্ত। স্বীকার করে এবং বোধের ভূমিতে দাড়াইয়! জগতের সহিতে ব্র্গের যে সম্পর্ক 
যুক্তিনিষ্ঠ মনের দ্বারা দেখিয়াই তাহার ব্যাখ্য। দাবী করে। তাহাদের কাছে ব্রহ্ম ও 
জগতের সম্বন্ধের প্রশ্নটর একটি অর্থ আছে। ব্রহ্ম ও জগৎ--এই দুইয়ের কোনও 
দিক দিয়াই মিল নাই এবং ইহাদের স্ব্মপালোচনায় সকল চেষ্টা বৃথা হইতে বাধ্য। 
সেই ব্রহ্ম কী করিয়া এই বহু বিচিত্র জগতের সহিত সম্পর্কযুক্ত হইতে পারেন তাহা 
আমর! কিছুতেই ভাবিতে পারি না । “মায়াঃ শব্ধ ব্রন্দের এই বোধাতীতত্বই জ্ঞাপন 


৩৪৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


করে (৩) ব্রক্ষকে আমর! যখন জগতের কারণক্ষপে দেখি, তখন এই বুঝি যে জঞ্চৎ 
ব্রদ্দে অবস্থান করে, অথচ ব্রহ্ধকে জগৎ কোনও দিক দিয়াই স্পর্শ করিতে পারে না. 
যে জগৎ ব্র্দে অবস্থিত তাহাই “মায়।” (৪) জগৎ বূপে ব্রহ্গের প্রকাশের কারণ 
দর্শাইতে আমরা যে যুক্তিপদ্ধতি অন্থসরণ করি, তাহাকেও বল হয় “মায়।। (৫) 
সমস্ত অভিনিবেশকে দৃশ্যমান জগতের মধ্যে সীমিত করিয়! আমর! যদি তর্কশাস্্াহ্‌- 
মোদিত যুক্তিপদ্ধতির অহ্থসরণ করিতে পারি তাহা হইলে স্বয়ংপ্রকাশ পুর্ণ ঈশ্বর 
সম্বন্ধে আমাদের ধারণ! জন্মে । সেই ঈশ্বর যে শক্তির বলে নিজেই নিজেকে প্রকট 
করিয়া থাকেন, সেই শক্তিকে বলা হয় “মায়!” | ৬) ঈশ্বরের এই শক্তিই উপাধি 
ন্ূপে পরিণত হয়৷ থাকে । ইহাই 'অব্যক্তা প্রকৃতি? ; ইহ! হইতেই সব কিছু 
আসিয়াছে। অব্যক্ত! প্রকৃতি হইল বিষয়, ঈশ্বর বিষয়ী। অব্যক্তা প্রকৃতি হইতে 
ঈশ্বর বঙ্গাগ্ডকে গড়িয়া! তোলেন । “এই সমগ্রবিশ্ব কতকগুলি পরম্পরাবদ্ধ চিন্তা ও 
কর্মের» উপায় ও লক্ষ্যের, ক্রিয়া ও তৎফলের সমষ্টি । স্বিন্তস্ত কর্ম ও অসংখ্য 
পদার্থের ধারণার দ্বার1 ইহা একত্র বিধৃত থাকিলেও ইহ! অস্থায়ী, অবিশুদ্ধ, সারহীন । 
ইহ! প্রবহমান নদী বা দীপ্যমান দীপশিখার শ্টায়, কদলীর গ্সায় আশহীন, বুদ্ব,দঃ 
মরীচিক ও স্বপ্রের স্তায়। যাহার] ইহার সহিত নিজেদের একীভূত করিয়া! দেখে 
তাহাদের নিকট ইহ! অবিনশ্বর, শাশ্বত ও সারবান রূপে প্রতিভাত হয়|” 

জীবাস্বাঃ আত্ম! ও অনাত্নার সংমিশ্রণ হইল 'জীব”। এই ছুইয়ের ম্বব্দপ 
নির্ধারণে আমাদের ভ্রান্তি হয়, তাহার উপরেই আমাদের সকল অভিজ্ঞতা নির্ভর 
করে। আত্ম ও অনাত্বাকে এক বলিয়া তাবাই “অধ্যাস। এই অধ্যাসই সমস্ত 
অভিজ্ঞতার মূল। অন্তঃকরণ প্রভৃতি কতকগুলি উপাধির সংস্পর্শে আসিয়া আত্ম 
ভোক্তাব্ূপে কাজ করে এবং পুনর্জন্ম বা! বন্ধনের অধীন হইয়া পড়ে । জীব জন্মিয়াছে 
বা বৃদ্ধি পাইতেছে একথা যখন আমর! বলি তখন এই বুঝি যে, ইহার উপাধিগুলিই 
জন্মিয়াছে বা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তাহার অর্থ ইহা নহে যে, আত্ম! জন্মায় বা বাড়ে। 
ব্রন্দের দর্শন-ম্পর্শনযোগ্য ব্ূপ প্রকাশ হইল জীব। ইহার পরিচ্ছিন্নতা বা পৃথকৃত্ব 
উপাধিজন্য | চিরাগত সংসারের অসংখ্য পদার্থের মধ্যে মাহষও একটি । 

জীবকে উপাধিবজিত করিয়া! যখন আমর! তাহার ত্বরূপের অহ্ধাবন করি, তখন 
উপাধিবজিত জীবকেই বলা! হয় “সাক্ষী” । ইহা হইল শুদ্ধ বিজ্ঞান। ইহ! “বৃত্তি-জ্ঞান? 
নহে। বৃত্তি-জ্ঞান হইল আত্তর ইন্ছ্রিয়েরই রূপান্তর | শুদ্ধ বিজ্ঞান হইল স্বব্ধপ-জ্ঞান। 
যত কিছু রূপান্তর সব এই স্বব্ধপ-জ্ঞানে হইর1 থাকে, কিন্ত স্ববূপ-জ্ঞানের কোনও 
্ূ্পাস্তর হয় না। “সাক্ষী”? সকল সময়েই থাকে, কিন্ত যে পরিবর্তনগুলি ইহ1 দেখে 


৩৪২ 


বেদাস্ত--অহৈতবাদ £ শংকর 


তাহ! আসে আবার চলিয়া যায়। পরীক্ষামূলক সকল জ্ঞান ইহার মধ্যে হইয়া থাকে, 
অথচ ইহা নিজে কোনও জ্ঞানের বিষয় হয় না। কোনও জিনিসই একসঙ্গে বিষয় ও 
বিষয়ী ছুই-ই হইতে পারে না। চক্ষু অন্য জিনিস দেখিতে পায়, নিজেকে দেখিতে 
পায় না। আমর! যখন বলি যে আমর! নিজেকে জানিয়াছি তখন যে আত্মাকে 
অভিজ্ঞতার দ্বারা জানা যায় সেই আত্মার কথাই বলি। পরমাত্বাকে বিষয়রূপে 
জানা যায় না; যদ্দিও তাহ] বিষয়ীরূপে স্বয়ংপ্রকাশ। 

আত্ম! জীবের সহিত কিবপে যুক্ত হয়? পরিচ্ছিন্ন গুণ বা উপাধিগুলি প্রকৃতি 
হইতে জাত। তাহাদের সহিত শুদ্ধ আত্মার সম্পর্ক কী? শংকর বলেন, আত্বা 
অনাত্মার এত বিরোধী যে, একটিকে আর একটির বিধেয় কর! যায় না ।৬১ 

এ ছুইয়ের সম্বন্ধ যুক্তিদ্বার! বুঝানে। যায় না। এ সম্বন্ধ অনির্বচনীয়। জগতের 
সহিত ব্রদ্গের সন্বন্ধের সাহায্যেও তাহা বুঝানো চলে না। আত্মাকে সত্য বলিয়! 
তাবার একট| ঝোঁক আমাদের আছে । যুক্তিদ্বারা তাহা প্রতিপন্ন কর! না! গেলেও 
তাহা আমাদের চরিত্রগত হইয়1 পড়িয়াছে। 

জগতের বহুত্ব ও জীবের অন্যনিরপেক্ষত্ব ষে সত্য বলিয়। প্রতিভাত হয়, তাহার 
কারণ আমাদের মনের নৈসগিকী প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তির মূল হইল £অবিদ্ধা” বা 
অজ্ঞান। এই অবিদ্যা অনারদ্দি। ইহ] নেতিমূলক ব! ইতিমূলক ছুই-ই হইতে পারে । 
পদার্থ সমূহের বহুত্বের পিছনেও যে একত্ব আছে তাহার জ্ঞানের অভাবের ফলে 
যে অবিদ্যা জন্মলাভ করে তাহা নেতিমূলক। আবার এই অবিদ্য! হইতেই ভ্রমের 
জন্ম ; সুতরাং ইহ! ইতিমূলকও বটে। ব্রহ্গারধিষ্ঠিত এই বিচিত্র জগৎকে আমরা 
দেখিয়া থাকি । অবিদ্যা নেতিমূলক হইলে আমাদের খণগুজ্ঞান হইয়া! থাকে; 
ইতিমূলক হইলে ত্রমের স্থষ্টি হয়। জ্ঞানের দ্বারাই এই অবিদ্যাকে আমাদের দূর 
করিতে হইবে । 

“মায়!” সমস্ত প্রপঞ্চকে আবৃত করিয়া! আছে; আর “অবিদ্যা ব্য্টিগত অজ্ঞান। 
জীবের যে পরিচ্ছিত্্রতা তাহা সেই সেই জীবাত্বার অবিদ্যাপ্রস্ছত। উপাধি 
সমূহের গণগত তারতম্যই জীব ও ঈশ্বরের পার্থক্যের কারণ। এই সকল উপাধি 
হইতে মুক্ত হইলে “জীবাত্বাগুলির মধ্যে আর কোনও পার্থক্য থাকে না। 
তত্বমসি--এই বিখ্যাত শ্রতিবাক্য এই এক্যের কথাই বলিয়াছে । জীব ও ঈশ্বরের 
এই প্রক্য বাস্তব না হইলেও ইহা! সাধিত হইবার সম্ভাবনা আছে। আত্মম্বরূপের 
বোধ হইলে কর্তৃত্বাভিমান ও ভোস্কৃত্বাভিমান হইতে আমরা মুক্ত হই। উপাধিসমূহ 
হইতে মুক্ত হইলে জীব মুক্ত” হয়। বাস্তব জীবনে আমর! জীবের উপর এমন 


৩৪৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের আরোপ করি যাহ! জীবের স্বরূপগত নহে অথচ আরোপের 
সময়ে সেগুলি বর্তমান থাকে । এই সব উপাধি হইতে আমর! যদি নিজেদের 
মুক্ত করিতে পারি তাহ! হইলে জীব ও ব্রন্মের অতেদত্ব উপলদ্ধি করিতে পারি । 

মোক্ষঃ আত্মলাত ও আত্মজ্ঞান এক কথা ৩২ জ্ঞানের যাহা লক্ষ্য তাহা মানুষের 
সকল চেষ্টারও লক্ষ্য । ব্রহ্ষকে দ্রষ্টব্য, শ্রোতব্য, মন্তব্য, নিদিধ্যাসিতব্য বলার মর্ম 
এই যে আমর! সীমাকে অতিক্রম করিয়! স্বরূপে অবস্থান করিতে পারি । আমাদের 
যাহ! প্ররুত শ্বর্ূপ তাহাতে পৌঁছানোই আমাদের চরম লক্ষ্য । আত্মা ও উপাধিকে 
যে ভুল করিয়! আমর1 এক বলিয়া ভাবি, ব্রহ্গজ্ঞানের দ্বারাই সেই ভুল আমাদের 
তাঙ্গিতে হইবে। এই পরিবর্তনসাধন করিতে হইবে চিস্তার জগতে, বস্তজগতে 
নহে । বিছ্যাদ্ধারা অবিগ্ভাকে দূর করিতে হইবে । মাধ্যমিকদের মত অহসারে 
সংসার ও নির্বাণ একই । এই ছুইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিতঙগী শুধু পৃথক ।৩৩ 
“জগৎকে যখন আমর কতকগুলি কারণ বা খগ্ডকারণব্ূপে বিবেচনা করি, তখনই 
তাহাকে বলি বস্তুজগৎ ; আর সেই কারণ ব1 খণ্ডকারণগুলিকে অগ্রান্থ করিলে সেই 
জগৎকেই বলি নির্বাণ 1৮৩৪ জীব ও ব্রহ্গের অভিন্নতাই হইল তত্ব । যখন অজ্ঞানের 
আবরণ দূর হয়, তখন এই তন্বোপলন্ধি হইয়! থাকে । মোক্ষে বহুত্বের নাশ হয় এবং 
কেবলমাত্র এক আত্ম। অবশিষ্ট থাকে, অর্থাৎ আমাদের অন্তরস্থ জ্ঞাতা এ ধারণ! 
ভুল ।৩৫ অহং-বোধ হইতে মুক্ত হইলে জীবন ও অস্তিত্ব হইতে মুক্তি পাওয়া যায় না। 
গ্রন্থ পড়িয়া জীব ও ব্রদ্দ এক এই জ্ঞান হইলেই চলিবে না, নিজের মধ্যে উহার 
প্রত্যক্ষোপলন্ধি হওয়! চাই । ব্রক্গজ্ঞান ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ব্যাপার । সেই 
চৈতন্তময় ব্রহ্ধকে আমর! “হয় সর্বোপাধিবজিতরূপে নয় সর্বোপাধিময়নূপে” দেখিয়! 
থাকি। তিনি সকল মোক্ষের আত্মা, সর্বাত্ব-ভাব। “এই ব্রহ্গাণ্ড আমি, আমিই 
এই সব কিছু । সব কিছুর সহিত তাদাত্ব্য আত্মার পরাবস্থা» তাহার সহজ ও শ্রেষ্ঠ 
অবস্থা ।৮৩৬ জীবিত অবস্থায়, অর্থাৎ বিবিধ উপাধির সহিত যুক্ত থাক! কালেই 
যে মানুষ মুক্ত হন, তিনিই জীবন্মুক্ত । মহ্ধ্জাতির সেবায় তাহার জীবন 
উৎস্গীকৃত। সকল মান্থবই এক-_তাহার এই উপলদ্ধির স্বত:স্কৃর্ত প্রকাশ মাহ্ুষের 
সেবায়। মৃত্যুতে জড় দেহ তিনি পরিত্যাগ করেন এবং তাহার দেহমুক্ত আত্মা 
বিদেহমুক্তি লাত করে। 

বিবুন্ধ আত্ম! বোধিলাছের পরও ব্বাতন্ত্য বজায় রাখে কিনা, এ প্রশ্ব উঠিয়াছে। 
শংকর বলেন যে, কতকগুলি আত্মা! ঈশ্বর কর্তৃক তাহাদের উপর অপিত কর্তব্যসমূহ 
সম্পাদন করিবার জন্য ম্বাতন্ত্র বজায় রাখেন। ব্যাস-বশিষ্ট-ভৃপ্ত-নারদ-_ প্রভৃতয়ঃ 


৩৪৪ 


বেদাস্ত--অদ্বৈতবাদ £ শংকর 

পরমেশ্বরেণ তেষু হতধিকারের নিযুক্তাঃ সন্তঃ কর্ম-সমান্তি পর্যস্তং সংসারে 
অবতিষ্ঠন্তে ।৩* প্রকারাস্তরে বল! যাইতে পারে যে বোধিলাতের সহিত শ্বাতন্ত্য রক্ষা 
করার কোনও বিরোধ নাই। তাহাদের আত্ম! এহিক জীবনে অনাসক্ত হইলেও 
তাহাদের জীবন বর্ণহীন বা নিক্কিয় নহে । তাহারা নিজের শক্তিকে একটি প্রাণবান 
সত্তায় রূপান্তরিত করিয়া! থাকেন। প্রেম ও শক্তির মধ্য দিয়া সেই সমতা! নিজেকে 
প্রকাশ করে । স্যজনক্রিয়ার মতই তাহাদের জীবন উদ্দেশ্টময় আবার উদ্দেশ্টবিহীন | 

বস্ত্বধূপের জ্ঞান হইলে আর কর্মের অবসর থাকে ন। (ন কর্মাবসরোহস্তি ) 1৩৮ 
তাহার আর কর্মের প্রয়োজন থাকে না। 

কর্ম শংকর কর্মবাদকে স্বীকার করিয়! লইয়াছেন। অবিগ্যা হইতে কর্ম, কর্ম 
হইতে ব্যষ্টি জীবের স্প্টি। আমর যে জগতে জন্মিয়াছি তাহা ঠিক আমাদের কৃত- 
কর্মের ফলের অন্থরূপ (ক্রিয়া-কারক-ফলম্‌)। জীবদেহ একট! যন্ত্ববিশেষ (কার্য- 
কারণ-সংঘাত )। কর্মাহষ্ঠান করিয়া! এবং তাহার ফলস্বরূপ সুখ-ছঃখ ভোগ করিয়া 
খণমুক্ত হইবার জন্ঠই তাহার স্থষ্টি। কখনও কখনও পর পর কয়েক জন্ম ধরিয়া! এক 
জন্মের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয়। অতীত কর্মের প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ হইলে 
আবার নূতন কর্ম সঞ্চিত হইতে থাকে । এমনি করিয়! চক্রাকারে প্রায়শ্িত্তাহষ্ঠান 
চলিতে থাকে । €নতিক জীবন চিরপ্রবহমান, চিরকর্মময়। তাহার বিরাম নাই। 
মহ্বষ্যজীবনের বিভিন্ন অবস্থার চাপে পড়িয়! তাহার বূপও হয় অনস্ত। যতদিন না 
পুর্ণজ্ঞান হয়, ততদিন ধরিয়৷ এই প্রক্রিয়াই চলিতে থাকে । পুর্ণজ্ঞান লাভ হইলে 
কর্মের বীজ ধ্বংস হয় এবং পুনর্জন্ম অসম্ভব হইয়া! পড়ে । মহুষ্জীবনের লক্ষ্য হইল 
কর্মের অধীনতা৷ হইতে মুক্তিলাত করা । অবিদ্যা হইতে মুক্তি পাইলেই কর্ম হইতে 
মুক্তিলাভ কর! যায়। জীব যতদিন দেহবদ্ধ হইয়া গণ্ডীর মধ্যে থাকে, ততদিন 
তাহাকে কর্মাধীন থাকিতে হয় ; অর্থাৎ একটা আদর্শে পৌঁছিবার জন্য সে সতত চেষ্টা 
করে, অথচ সেই আদর্শে পৌছিতে পারে না। সদসদ্বিবেকবোধ গন্তব্যে পৌছিবার 
একটি ধাপ মাত্র ; উহাই গন্তব্য নহে । ফল কামনায় যে সকল কর্মের অনুষ্ঠান করা 
হয় তাহার] কর্মফলবাদের নীতি অঙ্সারেই ফল দান করে; কিস্ত অনাসক্তির সহিত, 
ঈশ্বরে উৎসর্গীকৃত হইল মনে করিয়া! যে সকল কর্ম অঙ্থষ্িত হয় তাহ! মনকে পবিত্র 
করে। . | 

উপযুক্ত আলোচন] হইতে ইহা বুঝায় না! যেঃ আমরা গত কর্মের হ্ত্রে বাধা 
থাকিয়। পুত্তলিকার মত নড়াচড়া! করি। পুর্বেই বল! হইয়াছে যে, জীব তাহার 
কর্মের জন্য দায়ী। ঈশ্বর শুধু সহায়ক মাধ্যম--জীবের কৃতকর্মসমূুহের ফলসংরক্ষণ- 


৩৪% 
€্ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


কর্তা । ঈশ্বর কাহাকেও কোন কিছু করিতে বাধ্য করেন না। যে সকল প্রবণতা 
আমাদিগকে বাধিয়! রাখিয়াছে, সেগুলিকে ইচ্ছাশক্তির দ্বারা আমরা অতিক্রম করিতে 
পারি। যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণে বশিষ্ঠ রামচন্দ্রকে অবাধিত চেষ্ঠার দ্বার৷ বন্ধনমুক্ত 
হইতে উপদেশ দিয়াছেন । জীবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আছে। এ প্রবৃত্তির ফলে 
তাহার তৃষ্ণা ও বিতৃষ্ণ1 উৎপন্ন হয়। মানুষ যদি সহজাত প্রকৃতি দ্বারা পরিচালিত 
হয়, তবে তাহাকে সম্পূর্ণরূপে এ প্রবৃত্তির দাস হইয়! থাকিতে হইবে। তাহার 
কর্মসমূহ যতদিন এ প্রবৃত্তিসমূহ দ্বার নিয়মিত হইবে, ততদিন পর্যস্ত তাহার! স্বাধীন 
হইতে পারিবে না। কিন্ত মানব তো শুধু কতকগুলি প্রবৃত্তির সমষ্টিমাত্র নয়। 
তাহার মধ্যে এক অসীম সত্তাও আছে। কারণশক্তিনূপে আত্মা দৃশ্য বস্তনিচয়ের 
বাহিরে থাকিয়। তাহাদিগকে ব্ূপ দান করে। মানুষের ইতিহাস পুতুল খেলার 
রঙমঞ্চ নয়। ইহা একটি স্থজনধর্মী বিবর্তন । 

নীতি ওধর্মঃ বৈরাগ্য ও অনাসক্তির সাধন! ন! করিলে বোৌধিলাভ হয় না। 
অহমিকাকে দমন করিয়! অনাসক্তি ও শৃঙ্খলার সহিত আমাদের কর্তব্য করা উচিত। 
বেদাস্তপাঠের জন্ত প্রয়োজন সাধন চতুষ্টয়ের কথা! শংকর বলিয়াছেন। তাহার! 
হইল (১) নিত্য ও অনিত্যের মধ্যে পার্থক্যাবধারণের শক্তি ; (২) ইহলোক ব! 
পরলোকে ইঠ্টপ্রাপ্তি ও অনিষ্ট পরিহারের ইচ্ছ! হইতে নিমুক্তি ) (৩) শ্ম, দম: 
তিতিক্ষা, ধের্য, মনঃসংযোগ ও বিশ্বাস; (৪) মোক্ষলাভের ইচ্ছা ।৩ নৈতিক 
জীবন আমাদের আসক্তিকে বিশোধিত করিয়া এবং অহমিক! দূর করিয়! আমাদিগকে 
সত্যোপলব্ধির যোগ্য করিয়া তোলে । 

শংকর বলেন যে, কর্ম অথব! নীতিনিষ্ঠ ক্রিয়! প্রত্যক্ষভাবে আমাদিগকে আত্মিক 
মুক্তির পথে লইয়! যায় না। ইহ! শুধু আমাদের মধ্যে জিজ্ঞাসার স্য্টি করে। ইহাই 
মোক্ষের জন্য পরোক্ষ প্রস্ততি । মোক্ষ কর্মের প্রত্যক্ষ ফল নয়।৪* কর্মফল অনিত্য, 
মোক্ষ নিত্য। আমাদের কর্ম আমাদিগকে জ্ঞানলাভের জন্য প্রস্তুত করে। জ্ঞান- 
লাভ লইলে তত্ব প্রকাশিত হয়। যাহা তত্ব তাহ! প্রাপ্তির বস্ত নহে। তাহ! 
“অসাধ্য” কারণ তাহা অনাদি তত্ব। ইহ] নিত্যসিদ্ধ। পূর্ণতা সব সময়েই আছে। 
ইহা! অর্জনের জিনিস নয়। আত্ম মালিন্তমুক্ত হইলেই তাহা প্রতিফলিত হয়। 
উপলব্ধির পথে যে বাধাগুলি আছে তাহ! আমাদের লঙ্ঘন করিতে হইবে। 
জ্ঞানলাতের পথে যে বাধা তাহা! উত্তীর্ণ হইতে কর্ম আমাদিগকে সাহায্য করে। 

ংকর কর্মযোগ ্বীকার করেন না, কর্মদ্বারা! মোক্ষ হয় এ মতও স্বীকার করেন 
না। আত্মায় ব্রহ্মোপলব্ধি মানুষের সকল চেষ্টার লক্ষ্য। ব্রহ্মকে আত্মা হইতে ভিন্ন 


৩৪৬ 


ব্দোস্ত-্অন্বৈতযাদ £ শংকর ও বৌদ্ধধধ 


বলিয়া চিন্তা করাই মহষ্য মনের শ্বভাবসিদ্ধ প্রবণতা । ব্রহ্মকে দিব্য সত্তা বলিয়! 
কল্পনা কর! হয়--মনে কর! হয় তিনি এই বিশ্বের অষ্টা, শাসক ও ধারক । তিনিই 
নিয়মকর্তী ও নিয়ামক-__-এই মনে করিয়। তাহার উপাসনা কর]! হয়। জ্ঞান ও উপাসনা 
এক জিনিস নয়। উপাসনার ক্ষেত্রে উপাস্ত ও উপাসকের ভেদজ্ঞান থাকে | জ্ঞানের 
ক্ষেত্রে আমরা স্বর্ূপাবস্থিত তত্বকে উপলব্ধি করি ; আর উপাসনায় সেই তত্বকে 
আমরা নাম ও দূপের গম্ভীর মধ্যে জানি ।৪১ 

এই দ্বই উপায়েই সেই এক ব্রহ্কে জানা যায়। উপাসনার দ্বারা আমরা 
উপাস্ত-উপাসকের ভেদজ্ঞান হইতে মুক্ত হইয়া! তত্বকে স্বরূপে জানিতে পারি। 
উপাসক যখন উপলদ্ধি করেন যে তিনি যে ঈশ্বরের উপাসনা করিতেছেন, সেই ঈশ্বর 
তাহারই অস্তরাত্বা, তিনি বাহিরের বস্ত এই জ্ঞান যখন সুপ্ত হইয়! যায়, তখনই 
উপাসক উপাস্তকে প্রাপ্ত হন। 

উপাসনার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। এক এক পদ্ধতিতে উপাসনা! করিলে এক 
এক প্রকার ফল হয়। পরিচ্ছেদক ধর্মসমূৃহের বিভিন্নতা অন্থসারেই পদ্ধতিগুলি 
বিভিন্ন হইয়া থাকে । এই বিভিন্ন পদ্ধতিগুলিই আমাদের পক্ষে রিং পরম তত্ব 
জানিবার মাধ্যম | 


শংকর ও বৌদ্ধধর্ম ৬ 


হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জ্ীবনকল্পে শংকর তাক্িকের মন লইয়া! বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে 
লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন_-ইহা ভারতীয় মত। বৌদ্ধ মতবাদও ইহার সমর্থন 
করে। বৌদ্ধ মতবাদ বলে যে» শংকর ও পূর্ব-মীমাংসায় প্রসিদ্ধ টীকাকার কুমারিল 
ভট্ট বৌদ্ধ মতবাদের প্রধান সমালোচক ছিলেন। শংকরের রচনাবলী দ্বারা কিন্ত 
এই মত সমধিত হয় না। অদ্বৈতমতের সমর্থনের জন্যই তিনি লেখনী গ্রহণ 
করিয়াছিলেন এবং নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠাপিত করার জন্ঠই অন্ান্ত মতবাদকে 
আক্রমণ করিয়াছিলেন। ব্রন্ধস্থত্রের ভাষ্যের মত গ্রন্থে যে ঘে অংশে তিনি বৌদ্ধ মত 
খণ্ডন করিয়াছেন তাহা! অতি সামান্ত। তাহার সাংখ্য দর্শনের সমালোচন৷ বরং 
আরও তীব্র ও বিস্তৃত। অন্ঠান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে বলা অপেক্ষা ০০০ 
প্রতিষ্ঠাপনই তাহার রচনাবলীর মুখ্য উদ্দেশ্য । 

প্রাচীন ও অবরকালীন অনেক সমালোচক মনে করেন যে, শংকর নিজেই রঃ 
চিন্তাধারা দ্বারা অত্যন্ত প্রতাবিত হইয়াছিলেন। এই প্রসঙ্গে “মায়াবাদ অসৎশাস্ত্র” 
এবং প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ মত।৮৪২ পদ্মপুরাণের এই অংশটির উল্লেখ কর! হয়। যমুনাচার্যও 


৩৪৭ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


'অহ্থরূপ অভিযোগ আনিয়াছেন। শংকরের অদ্বৈত-বেদাস্ত ও মহাযানধর্মাবলক্্ী 
বৌদ্ধগণের বিজ্ঞানবাদ ও শুন্তবাদের মধ্যে যে সাদৃশ্য রহিয়াছে, এই প্রসঙ্গে বৌদ্ধগণও 
তাহার প্রতি ইঙ্গিত করিয়া থাকেন । 

বৌদ্ধ মতবাদ ও শাংকর মতবাদের মধ্যে প্রচুর সাদৃশ্য আছে ।৪৩ বৌদ্ধগণের 
যে সকল যুক্তি লোকপরি চিত হইয়া পড়িয়াছিল, তাহাদের কতকগুলি শংকর তাহার 
অধৈতবাদের স্বপক্ষে প্রয়োগ করিয়াছেন। শংকর নিজে এক সর্বাতিশয়ী অদ্বয় 
ব্র্ষমে বিশ্বাস করিতেন এবং সেই বিশ্বাসের পক্ষে কোনও যুক্তি প্রদর্শন করিতে 
বাকী রাখেন নাই। গৌড়পাদ ছিলেন শংকরের আচার্ষেরও আচার্য । বৌদ্ধ- 
সাহিত্যের প্রসিদ্ধ বাচনভঙ্গী ও উপমাগুলিকে তিনি তাহার মাওুক্য উপনিষদের 
কারিকায় ব্যবহার করিয়া! গিয়াছেন। সতর্কতার সহিত এইগুলির পুঙ্খাুপুঙ্খ 
আলোচন! করিয়। পরলোকগত 102 745 91155 701৫551 মন্তব্য করিয়াছিলেন 
»-”গোৌড়পাদ-কারিকার ভাষা ও অত্রত্য প্রধান প্রধান ধারণাগুলি এমনভাবে 
বৌদ্ধ-চিন্তাধারার ছাপ বহন করিতেছে যে, পাঠক তাহাতে বিস্মিত না হইয়! পারেন 
ন1। মনে হয়, ইহার লেখক বৌদ্ধ-সাহিত্য ও বৌদ্ধ-উক্তিগুলির ব্যবহার করিয়াছেন 
এবং সেগুলিকে বেদাস্তের কাঠামোয় সন্নিবেশিত করিয়াছেন। শুধু তাহাই নয় 
শ্লেষ-প্রয়োগ তাহার বিলাস । গৌড়পাদ যখন শংকরের আচার্ষের আচার্য তখন এই 
তথ্য তুচ্ছ নয়” 

শংকরের মতগুলি যে উপনিষদ ও ব্রন্গন্থত্রের একটি সরল ও বলিষ্ঠ পরিণতি, 
এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। এই মতগুলির মধ্যে শংকর এমন নূতন কিছুই 
আনেন নাই যাহার উৎস অহ্বসন্ধানের জন্য বৌদ্ধপ্রভাব ত্বীকার করিতে হইবে । 

ছুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা! আজ ভুলিয়! গিয়াছি ষে, উপনিষদে যে ভিত্তির 
প্রতিষ্ঠা, বৌদ্ধধর্ম তাহার উপরেই গড়িয়া উঠিয়াছে। একই পীঠভূমি হইতে 
সমাস্তরালভাবে বৌদ্ধ ও বেদাস্তমত উৎসারিত হইয়াছিল। পার্থক্য এই বে; এ 
ছুইটি মত যে সব বিষয়ের উপর জোর দিয়াছে, সেগুলি তিন্ন । শংকরের অদ্বৈতবাদের 
সহিত বৌদ্ধ দর্শনের কয়েকটি শাখার মতবাদের সাদৃশ্ট অস্বাভাবিক কিছু নহে। 

দার্শনিকতার যে স্তরে শংকর পৌছিয়াছিলেন, তাহা! অতি উচ্চ। প্রগাঢ় ও 
চিত্তাকর্ষক চিন্তা প্রয়োগ করিয়! তিনি তত্বাহুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন ; এক উচ্চ 
আত্মিক আদর্শবাদের দ্বার বিচার করিয়াছিলেন এবং মন্ষ্যজীবনকে যাহা দিব্য 
মহিমায় মহিমান্বিত করিয়! তোলে, সেই ভূমার প্রতি নিবদ্ধলক্ষ্য হইয়া দর্শনের 
আলোচনা করিয়াছিলেন । এইখানে শাংকর-দর্শনের মহত্ব ও বিরাটত্ব। 


৩৪৮ 


১। 
২ 
৩। 
৪ । 
৫ | 
৬॥ 
শ। 
৮৮ 
৯ 
১০1 
১১। 
১২। 
১৩। 
১5 1 
১৫ । 
১৬1 
১৭ 
১৮ । 
১৯। 
| 
২১ 
২ 
৩ । 
৪। 
৫ 
৬ । 


২৭ । 
ত্চ্। 
২৯ 


বযেদান্--অছৈতঘাদ ২ প্রষ্টবয 


দ্রষ্টব্য 


সাধারণতঃ খ্বঃ ৮৮-৮২* শংকরের জল্স ও মৃত্যুর বৎসর ধর! হইয়1 থাকে । 
অর্থ-জ্ঞান-প্রধানত্বাদ্‌ উপনিষদ।ঃ-_-শং-তৈত্তিরীয় উপনিষদ্‌ ভাষ্য ১1২1১ 
শং ভা_-১1।৩।২৮ 7) ৩২২৪ 
বেদস্ত হি নিরপেক্ষ__শ্বার্থে প্রামাণ্যং রবেরিব রূপ-বিষয়ে--শং ভা ২1১1১ 
শং ভ| বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২৪1১০ $ ১1৪1২* ও ডষ্টব্য। 
অন্কভবাবসানত্বাৎ ব্র্গা জ্ঞ।নহ্য---শং ভ। ১১২ 
শং ডা ১1১1৪ 
শং ভা 81১১৫ 
শং ভা বৃহ-উপনিষদ্দ 8181৮ 
সর্বভুঃখ- বিনিমু'ক্তৈক-_চৈতন্আ্কোহহম্‌ ইত্যেষ আত্মানুভবং__-শং ভা ৩১1১ 
৮1১1১ 
দিগ২দেশ-গুণ-গতি-ফল-ভেদ শৃণ্যং হি পরমা সদ অন্থয়ং ব্রহ্ম মন্দবুদ্ধীনামসদিব প্রতিভাতি 1 
নাভাবাদ্‌.ভাব উৎপগ্যতে-_শংক র, বু-উ, ২২২৬ 7 দ্রঃ শবরভাব্য, ২1৩1৯ 
শংকর, বৃ-উ, ১181৭ 
উপদ্দেশ-সাহশ্রী, ১২।৯১ 
য এব হি নিরাকর্ত। ত দেব তন্য স্বরূপম্--শবর ভাষা, ২৩1৭ 
হ্বয়ংসিদ্ধতাৎএ । 
শংকর, বৃ-উ, ৪1৩।৩৩ 
অধ্যারোপিত-_নাম-রূপকম-ছ্বারেণ ব্রহ্ম নির্দিগ্ততে-শংকর, বু-উ, ২1৩৬ 
শংকর, বু-৬, ২1১২০ 
অব্যবহার্ধমপি ব্যবহাী রগোচরমাপছ্য-_শংকর, মাণ.ক্য-কারিকা ৪১০০ 
তুলঃ বাচম্পতিঃ ন খলু অনন্যত্বমিতি অভেদং ভ্রম: কিন্ত ভেদং ব্যাসেধা মং, ভাঁমতী, ২১1১৪ 
শ্বেতাথতর উপ, ৪1১৯ 
নাভাব-উপলবেঃ, ব্রহ্মহৃত্র, ২২২৮ 

ংকর- ভাষ্য, ২২৩১ 
তুলঃ বিজ্ঞানভিঙ্ষু াহার যোগ-বাতিক-ভায্যে আদিত্য পুরাণ হইতে উদ্ধতি দিয়াছেন__ 
নাহসন্রপ। ন সন্্রপা। মায় নৈবোভয়াম্সিক]। 
সদসদ্ভ্যামনির্বাচ্যা মিথ্যাভূত। সনাতনী । 
বৈধম্যাচ্চ ন শ্বপ্রাদিবধ ত্র্ষসুত্র ২২1২৯ 
নৈবং জাগরিতোপলন্ধং বন্ত কন্ঠাঞ্চিদপ্যবস্থীয়াং বাঁধ্যতে--শবরভ্যাব্য ২২২৮ 
শংক র-ভাষা, ২।২।২৮-২৯ 


৩৪৯ 


খঘট১ | 
৩২ ॥ 


৩৩। 


৩৪ । 


৩৫ | 
৩৬। 
৩৭ | 
৩৮] 
৩৪ | 
৪০ | 
৪১। 
৪২ । 
৪৩ । 


প্রাঙ্গ ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


গংকর, হৃ-উ, ১৫২ 
নাগাঞ্জুনের মতে সৃতি, স্থিতি ও গরলয় মায়া, শ্বপ্ন ও গন্ধর্বনগরের মত--. 
হথ। মায়। হথ। হপ্লে| গন্ধর্লগরং যথ|। 
তখোপাদস্তথ। স্থানং তথা তঙ্গা উদ্দাহত।2 | 
' --মাধ্যযক--কারিকা, ৭৩৭ 
মৃগতৃষণাস্তসি ন্ন(তঃ খপুষ্পধৃতশেখরঃ | 
এব বন্ধ্যাহতো! যতি শশশুঙধনুধ রঃ | 
€স্বগতভৃধ্শাবারিতে অবগাহন করিয়া, মন্তকে আকা শকুন্ুমাভরণ ধারণ করিয়] এবং হস্তে শশশুঙগ- 
নিনিত ধনু গ্রহণ করিয়া এই বন্থ্যাহৃত চলিয়াছে। 
ভূমিকা, শংক র-ভাব্য। 
জ্ঞানলভয়ে।রেকার্থতম-_-শংকর, বৃ-উ, ১১1৪ 
ন সংসারত্ত নির্বণাৎ কিঞ্চিদন্তি বিশেষণম্‌। 
ন নির্বাপন্ত সংসারাৎ কিঞ্চিদস্তি বিশেষণম্‌। 
-মাধ্যমক-_-ক।রিকা, ২৫।২৯ 
ঘ আজবং জাবীভাব উপায় প্রতীত্য বা। 
সোহপ্রতীত্য।মুপাদায় নির্বাণমুপদিগ্ঠতে | 
_-মাধ্যমক-_কারিকা, ২৫।৯ 

ডয়সন, সিস্টেম্‌ অফ. দি বেদান্ত ইং অনুবাদ, পৃ-২১৪ 

₹কর-ভাষ্য, ৩।৩।৩২ 

ংকর, বৃউ, ১৩ 

ংকর- ভাষ্য, ১।১।১ 
অনুষ্ঠেরকম”-ফল-বিলক্ষণম্‌--শংকর ভাষ্য, ১।১।৪ 

ংকর-ভাষ্য, ১।১।১২ 
শংকর-ভাব্য, ১।১।২ 


মায়ীবীদমসচ্ছান্্রং প্রচ্ছন্নং বৌদ্ধমেব চ। 
706 1.9 51165 [১0851 বলেন-_“অন্ততঃ তত্ববিষয়ক কয়েকটি মতের দিক হইতে বিজ্ঞানবাদ 


প্রচ্ছন্ন বেদ্বান্তমত ছাড় কিছু নয়। আরও স্পষ্ট করিয়া, বলিতে হইলে বলিতে হয় যে, বেদান্তের 
অর্থেই সেগুলিকে বুঝিতে হয়”_জার্ণাল অফ দি রয়েল এশিয়াটিক সৌসাইটি (১৯৯৯), 
পৃঃ১৩২। কীথ বলেন-_-বেদান্ত ও বিজ্ঞানবাদের সাদৃগ্তগুলি অতি স্পষ্ট এবং সেগুলিকে 


অন্বীকার কর! যায় না” (১৯১৬), পৃঃ ৩৭৯ 


বেক্গান্ত--অন্বৈতবাদ £ গ্রন্থ বিবরস 


এ্রশ্ছবিবরণী 


মাধবানন্দ শ্বামী- _বুহদারণ্যক উপনিষদ (শংকর ভাব্য সহ) ॥ 
শাস্ত্রী, মহাদেৰ___ভাগবদ্‌গ,ত। (শংকর ভাষ্য সহ) 

খিবো- বেদাত্শ্যত্র (শংকর ভাব্য সহ) 

ডয়সেন--দি সিস্টেম অফ. বেদাস্ত | 

সিৈৎ, আর, পি-দ্ি বেদাত্ত অফ্.শংকর । 


৩৫৬ 


ব্দোস্ত-_-অদৈত সম্প্রদায় 
খ। শংকরোভর যুগ 
উপক্রমণিক! 


ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন মতবাদগুলিকে উপনিষদ হইতে প্রবাহিত আধ্যাত্বিক 
পরম্পরার অঙ্গরূপে গণ্য না করিলে তাহাদের মর্ম ও বৈশিষ্ট্য অহৃধাবন করা অসভব। 
এমন কি বৌদ্ধ ও জৈনসম্প্রদায়ের নাস্তিক দর্শনও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নহে। কারণ 
বেদের প্রতি কোনরূপ আম্বগত্য প্রদর্শন না করিলেও তাহাদের মধ্যে উপনিষদ ও 
আস্তিক সম্প্রদায়ের আত্মিক অস্তমখীনতার এঁতিহটি অক্ষুণ্ণ আছে। তাহারা একই 
আধ্যাত্মিক সত্তার ম্বরূপ উদঘাটন করিয়া! তাহার সহিত জগতের সম্বন্ধ ব্যাখ্য। 
করিয়া থাকে। আধ্যাত্মিক সত| আত্মা, শূন্য অথব৷ ব্রহ্ম--যাহাই হউক না কেন, 
আমাদিগেরই অস্তরে ইহার প্রকাশ বিদ্মান এবং মনের মণিকোঠায় উহাকে উপলদ্ধি 
করিতে হইবে। অন্তর ও বাহির, অস্তরতম সত্তা এবং বহিস্থ জড় জগৎ_- ইহাদের 
সন্বন্ধাটর প্রকটনই যে দর্শনের কর্তব্য, ইহা কল সম্প্রদায়ই স্বীকার করেন। একমাত্র 
চার্বাক সম্প্রদায়ই ইহার ব্যতিক্রম, কিন্ত প্রকাশ্ুভাবে কেহই এই সম্প্রদায়ের 
অন্থগামী নহে। অন্যান্য সম্প্রদায়, তাহা বস্তগামী বা বিজ্ঞানবাদী, অদ্বৈতবাদী বা 
বছুতত্বাদী, বিষয়ীকেন্ত্রিক অথবা বিষয়কেন্ত্রিক-_যেরূপই হউক না কেন, তাহাদের 
সম্পর্কে উপযুক্ত মন্তব্যটি সমভাবে প্রযোজ্য । একমাত্র আবহমানকাল হইতে 
বহতত্ববাদী এবং বস্তৃবাদী জৈন সম্প্রদায় ব্যতিরেকে আস্তিক এবং নাস্তিক সকল 
সম্প্রদায়ের মধ্যেই বস্তববাদ বিজ্ঞানবাদ প্রভৃতি ভেদ দৃষ্ট হয়। তথাপি প্রত্যেকেই 
আধ্যাত্মিক পরম্পরার অন্ততূক্ি। 

 উপনিষদে উক্ত হইয়াছে যে, সকলই ব্রহ্ম (সর্বং খন্বিদং ব্রহ্ম), তিনি সত্যের 
অন্তনিহিত সত্য ( সত্যত্ত সত্যম ), এবং আত্বা ও ব্রন্ম একই । (অয়ম্‌ আত্মা ব্রহ্ম )। 
এই উঞ্তিগুলির আক্ষরিক অথব| লক্ষণার্থ গ্রহণ করিয়া! তদহমারে তাহাদের ব্যাখ্যা 
করা যাইতে পারে। যে সকল চিস্তানায়ক তাহাদের আক্ষর্রিক অর্থ গ্রহণ করেন, 
শংকরাচার্য তাহাদের শ্রেণীভূক্ত । শংকর জীব ও বর্ষের অতিন্নতা ( অদ্বৈত ) সমর্থন 


2৫5. 


বেদাস্ত---অনৈত সম্পর্ায় ₹ উপক্রষণিক? 


করিতেন এবং উপনিষদে ব্রঙ্মই একমাত্র তত্বব্ধপে স্বীকৃত হওয়ায়, জড় জগতের 
অস্তিত্ব স্বীকার করিতেন না । জগঘ্ স্বরূপতঃ মিথ্যা এবং জ্ান্তিবশতঃ ব্র্ষে তাহার 
ভান হয় ( অধ্যস্ত )। বস্ততঃ জগৎসত্তা ব্রন্মেরই সম্ভ!। কিন্তু ব্রহ্মই যদি একমাত্র 
সৎপদার্থ তাহ! হইলে কেন এবং কিন্ধপে ব্রহ্ম হইতে এই বৈচিত্র্যময় জগতের উত্তব 
হয়? ইহার উত্তরে শংকর বলেন যে, মায়াপ্রহ্থত মিথ্য। উপাধিগুলি হইতেই জগতের 
উত্তব হয়। ব্রহ্ম যে সাস্ত জীবরূপে প্রতিভাত হইয়! থাকেন তাহাও মায়াপ্রস্থত 
উপাধির ফল। “উপনিষদ্‌” প্বরহ্ম-স্ত্র” ও “ভগবদ্গীতা”্র উপরে শংকর যে সকল 
ভাষ্য রচনা! করেন, তাহাতে তিনি সাংখ্য, শ্ায়ঃ বৈশেষিক, মীমাংসা, পঞ্চরাত্র, 
পাশুপত, বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দুভাবধারার অন্ুবর্তী আরও কতকগুলি অপ্রধান 
সম্প্রদায়ের মতবাদগুলি খণ্ডন করিয়! উহাদিগকে বর্জন করেন। বিরোধীপক্ষ খগ্ডনে 
এবং স্বপক্ষসমর্থনে তিনি যুক্তি ও শ্রুতি (উপনিষদূ ) উভয়েরই ব্যবহার করেন। 
শংকরের মতবাদ তাহার অন্নবর্তী ও বিরোধিগণের নিকট অভিনব বোধ হইলেও 
বর্তমানকালের দূরত্ব হইতে আমরা দেখিতে পাই যে, তিনি তাহার গুরু “মাগুক্য- 
কারিক1”-কার গৌড়পাদের মতবাদগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা! করিয়াছেন । গৌড়পাদ 
উপনিষদের ব্রহ্মবাদ, বৌদ্ধ-বিজ্ঞানবাদ ও শৈব-্পন্মবাদের সংমিশ্রণ ও সামন্ত 
সাধন করেন। শংকরের বিরোধিগণ তাহার বৈদগ্ধ্য, প্রতিভ। এবং সর্বোপরি বৌদ্ধ 
ও শৈববাদের মৌলিক সিদ্ধান্ত স্বীকার করিয়াও তিনি তাহাদের যে রীতিতে 
সমালোচনা করেন, তাহার দ্বার! চমণ্কৃত ও বিহ্বল হইয়! পড়েন। ফলে, শংকরের 
জীবদ্দশাতে তাহার মতবাদের অন্তনিহিত গুরুতর সমস্তাগুলি ও তাহার যুক্তিওলির 
ক্রুটির প্রতি তাহাদের সবিশেষ মনোযোগ আকৃষ্ট হয় নাই। কিন্ত শংকরের অস্থবর্তিগণ 
যখন তাহার মতবাদের স্থসশ্বদ্ধ রূপ প্রদান করিতে চেষ্টা করিলেন, তখন তাহার! 
শংকরের যুক্তিগলিকে নৃতন সংযোগস্ত্র দ্বার! গ্রথিত করিতে এবং যুক্তির ক্রটিগলি 
সংশোধন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। কিন্ত ইহ! করিতে গিয়! তাহাদের মধ্যে 
মতভেদ স্থষ্টি হইল এবং বহু উপ-সম্প্রদায়ের উদ্তব হইল । 

শংকরের মৃত্যুর পরে বিরোধী দার্শনিকগণ তাহার আক্রমণের আঘাত ও তাহার 
ব্যক্তিত্বের প্রভাব হইতে মুক্ত হইয়া! অছ্বৈতবাদের বিরুদ্ধে প্রত্যাক্রমণ আরম করেন। 
“উপনিষদ্‌” পৰ্হ্গন্ত্র” এবং “তগবদৃগীত1”, এই তিনটি প্রস্থানেরই উপর ধাহাদের 
গ্রন্থাদি পাওয়| যায়, সেই সকল ভাব্যকারদের মধ্যে শংকরই প্রাচীনতম | অন্তান্ত যে 
সকল সম্প্রদায় উপন্িঘদের ভাবধারার অহুবর্তা বলিয়া! আপনাদ্দিগকে দাবী করিত এবং 
সেইজন্য অঙ্কর্ূপ ভাষ্যরচনা করিতে বাধ্য হইয়াছিল; তাহার! শংকরের সিদ্ধান্তকে 


৩০৪১৪ 
৪৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


খণ্ডন করিয়! স্বমত সমর্থন করিত। যে সকল গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা অধৈতবাদের 
অগ্রগতির সহায়ক হইয়াছিল, সেগুলি রামাহজ ও মধব এই ছুই টবঞ্চব সম্প্রদায় হইতে 
উদ্ভৃত। রামানুজ ও মধ্বের সময়কাল যথাক্রমে একাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দী । 
রামাহজের মতবাদটি “বিশিষ্টাদ্বৈত” অথব! বিশিষ্ট ব্রন্দের অদ্বৈততাবাদ রূপে প্রসিদ্ধ । 
তাহার মূল প্রতিপাগ্ হইল এই যে, ঈশ্বরঃ জগৎ ও আত্মা প্রত্যেকে ভিন্ন, কিন্ত 
বিচ্ছিন্ন নহে এবং “সবই ত্রহ্ষ” উপনিষদের এই উক্তিকে আত্ম! ও জগৎ ঈশ্বরেরই 
বিশেষণ, এইরূপে ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে । আত্মা ও জগৎবিশিষ্ট বহ্ষই ঈশ্বর | 
ফলে, বঙ্গের প্রক্য ত্বীকৃত হইল অথচ জীবও সৎ বলিয়া বিবেচিত হইল | ব্রহ্ম ও 
অপর ছুইটির মধ্যের সম্বন্ধটি আত্মা ও দেহের সন্বন্ধের অন্থরূপ | 

মধ্বের দার্শনিক মতবাদ দ্বৈতবার নামে খ্যাত । ইহাতে জীৰ ও ব্রঙ্গের দ্বৈততা 
স্বীকার করা হইয়াছে । জড় জগৎও সৎ এবং বস্তুতঃ তাহা তৃতীয পদার্থ বিশেষ। 
অতএব, এই মতবাদ বহুত্ববাদ এবং কেবল দ্বৈতবাদ নহে। তথাপি যেহেতু ব্রহ্ম 
ও জীবের সম্বন্ধটির যথার্থ স্বরূপ নিরূপণই ইহার মূল লক্ষ্য, সেইহেতু মধ্বের মতবাদ 
পরম্পরায় দ্বৈতবাদ বলিয়া খ্যাত। যদিও জীব এবং জগৎ ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন, তথাপি 
তাহার ব্রন্দেরই শক্তির রূপান্তর বলিক্কা তিনি তাহাদিগকে নিয়ন্ত্রণ করিতে সক্ষম । 
জীব ও জগৎ নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যের (বিশেষ ) জন্য ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন । অদ্বৈতবাদিগণ 
মায়াকে সৎ পদার্থ বলিয়| স্বীকার করেন না, ব্রহ্মাতিরিক্ত তাহার কোন নিজস্ব সত্ব! 
নাই। কিস্ত মধে্বরন্ায় দ্বেতবাদদীগণ তাহার নিজস্ব সর্ত। স্বীকার করেন । বস্তরতঃ- 
পক্ষে মায়াও একটি “শক্তি” | 

রামাস্জ ও মধব উভয়েই “শক্তিকে সৎরূপে স্বীকীর করার ফলে তাহার! 
অদ্বৈতবাদ-সম্মত মায়াবাদের বিরুদ্ধেই প্রধানত: তাহাদের আক্রমণ পরিচালিত 
করেন। তাহার! যে “মায়!” পদটির ব্যবহারে আপত্তি করেন তাহা নহে, কিন্ত 
মায়াবাদী “মায়।” শব্দের যে লক্ষণ দিয়াছেন তাহার সমালোচনা করেন । রামাহুজ 
ও মধেবের অন্থবর্তাগণ “মাযার” সমালোচনায় অসাধারণ তারিক নিপুণতার পরিচয় 
দিয়াছেন ; অপরপক্ষে শংকরের অন্থবর্তীগণ স্বপক্ষ সমর্থন ও প্রত্যাক্রমণে তাহাদের 
তাফিক নিপুণতায় সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়াছেন। ভীহার! “ভেদ” ও “অভাব” 
এই ছুইটি প্রত্যয়ের অযৌক্তিকতা প্রতিপাদন করিবার উদ্দেশ্টে পুঙ্খাঙ্থপুঙ্খ বিশ্লেষণ 
করিয়াছিলেন । এই সকল বাদাহ্ুবাদের ফলে অদ্বৈতবাদসম্মত ধারণাগুলি ক্রমশঃ 
আরও অধিক যথাঘথ রূপ ধারণ করে এবং অদ্বৈত দর্শন অধিক হইতে অধিকতর 
সুবিন্যস্ত আকার ধারণ করে । 


৩৫৪ 


বেদম্ত--অন্বৈত সম্প্রদায় ই উপক্রম পিক] 


ইতিমধ্যে নৈয়ায়িকগণ তাহাদের বিচারশৈলীর উন্নতিসাধন করিয়া অদ্বৈত- 
সিদ্ধান্তকে আক্রমণ করিতে আরম করেন। ন্ভায়দর্শনের শ্ছচনায় আস্তর সত্যের 
উপলব্ধির উদ্দেশ্টে উপযোগী পদার্থতত্ব নির্ণয় ও তদহুযায়ী জীবনগঠনই ছিল মূল 
লক্ষ্য | কিস্ত বিতিম্ন বিরোধী সম্প্রদায়ের বাদাহ্ুবাদের ফলে আলোচনায় ব্যবহৃত 
প্রত্যয়গুলির বিশদ ব্যাখ্যা ও লক্ষণ নির্ণয়ের প্রয়োজন হইয়াছিল এবং কালক্রমে 
জীবন ও বাস্তবত। হইতে বিচ্ছিন্ন স্তায়শাস্ত্রের শুফ আকারসর্বন্ষ বিচারের উদ্ভব 
হইয়াছিল। ছুরূহবাকৃজাল সমাচ্ছন্্ন জটিল লক্ষণবাক্য প্রণয়ন এবং যে কোন বিষয় 
প্রমাণ বা অপ্রমাণ করিবার জন্য অহ্নমানগঠন ব! উদ্ভাবন ইহাই তৎকালে প্রচলিত 
প্রথা হইয়া দাড়াইল। কোন কোন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও তাকিকদের মনোযোগ মুখ্যত 
এই দুইটি ক্রিয়াতে ব্যাপূত রহিল। উদয়নাচার্ষের “লক্ষণাবলী” €১০ম শতক ) 
ও কুলার্ক পণ্ডিতের “দশঙ্লোকী মহাবিদ্যা সুত্র” €১১শ শতক ) ইহার প্রকট দৃষ্টাস্ত। 
প্রথমোক্তটিতে হ্যায়দর্শন-্সম্মত পদার্থগুলির যথাযথ লক্ষণ দেওয়া হইয়াছে এবং 
দ্বিতীয়টিতে অবচ্ছেদকের সাহায্যে পদগুলিকে বহুল পরিমাণে বিশেষিত করিয়! 
কি ভাবে অভিমত সিদ্ধান্তলাভ কর যাইতে পারে তাহ ষোড়শ অহ্থমানের সাহায্যে 
প্রদশিত হইয়াছে । যাহাতে ব্যাপ্তিবাক্যের ব্যতিক্রম দেখান যাইতে না পারে"সেই 
উদ্দেন্টে পুর্বপক্ষীয় আপত্তির ব্ূপটি কল্পনা করিয়! নিজ ব্যাণ্তিবাক্যকে যথায্থন্ধপে 
পরিসীমিত বা অবচ্ছিন্ন করার কৌশলের উপরেই এইক্নপ অহ্মানের কার্যকারিতা 
নির্ভর করে £. কুলার্কপণ্তিত মীমাংসকসম্মত শব্দনিত্যতাবাদখগ্ুন-প্রসঙ্গে কেবলায়ী 
অনুমানের সাহায্য গ্রহণ করিয়াছেন । এই প্রকার অন্থমানে অভিধেয়তু ও প্রমেয়ত্বের 
ন্তায় সর্বত্র ব্যাপ্ত ধর্ম হেতু ও সাধ্য হইয়া থাকে। এইরূপ অঙ্মান প্রয়োগের 
উদ্দেশ্তটি অনায়াসে বোধগম্য । ইহার ফলে পূর্বপক্ষীকে কোনন্ধপেই ব্যাপ্তিবাক্যে 
দোষ উত্তাবন করিবার স্থযোগ দেওয়! হয় না। ত্রয়োদশ শতকের বাদীন্ত্র কিন্ত 
তাহার “মহাবিগ্যাবিড়ঘ্বন1”-গ্রন্থে এই সকল অহ্কমান খণ্ডন করিয়াছেন । এই সকল 
সর্বব্যাপী ধর্ম কেবুল ব্যান্তিবাক্যব্ূপেই ব্যর্থ নহে, পরস্ত ইহাদের মধ্যে কোন কোন 
প্রকারের হেত্বাভাসও লক্ষিত হয়। এইব্প লক্ষণ প্রণয়ন ও ্যায়প্রয়োগের পদ্ধতি, 
তাহা কেবলাম্বয়ী বা অন্য যে কোন প্রকারের হউক ন1 কেন, অদ্বৈত মতের সহিত 
বিবাদকালে ব্যবহৃত হইতে থাকিল। তাহার ফলে অদ্বৈত দার্শনিকগণকে ন্বপক্ষ 
সমর্থন ও পরপক্ষনিরাকরণকালে স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হইয়া অন্ুব্ধপ বিচারশৈলী অবলম্বন 
করিতে হয়। এইবূপে অদ্বৈতবাদের সমর্থনে বিতর্কমূলক গ্রন্থা্দি লিখিত হইতে 
থাকিল। 


৩৫৫ 


্চী ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


শংকরোজ্তরকালীন অদ্বৈতবাদের বিকাশকে সুবিধার্থে প্রধানতঃ ছুইভাগে 
আলোচনা! করা যাইতে পায়ে । প্রথমতঃ অদ্বৈত সম্প্রদায়ের উত্তব এবং দ্বিতীয়তঃ 
বিরোধীদর্শনগুলির সহিত বাদাহৃবাদে ব্যাপৃত বিতর্কসূলক অদ্বৈতবাদের বিকাশ । 
শংকরোত্তর অধ্বৈতবাদী ভাবধারা অন্থসরণের এই ছুইটি বিভাগের সহিত দুইটি 
অনুচ্ছেদ যোগ করা যাইতে পারে ;? একটি ভারতের প্রাচীন দার্শনিক সম্প্রদায়গুলির 
উপর অদ্বৈতবাঁদের প্রভাব সম্পর্কে এবং অপরটি সমসাময়িক ভারতীয় চিন্তানায়কগণের 
উপর অদ্বৈতবাদের প্রভাব সম্পর্কে। উপযুক্ত চারটি অনুচ্ছেদের পূর্বে একটি 
ক্ষিপ্ত এতিহাসিক বিবরণ দেওয়। যাইতে পারে । 


সংক্ষিপ্ত এতিহালিক বিবরণ 


শংকরোত্তর অদ্বৈতবাদিগণের মধ্যে তাহার সমসাময়িক শুধু বধঃকনিষ্ঠদিগকে 
গণনা করিলে চলিবে না, পরন্ত যে সকল বয়োজ্যেষ্টদিগকে তিনি স্বমতে আনয়ন 
করিয়াছিলেন তাহাদিগকেও গণনা করিতে হইবে । শেষোজ্গণের মধ্যে “বরহ্গ- 
সিদ্ধি”কার মগ্ডনমিশ্রই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও প্রসিদ্ধ । পরম্পরাগত মতাহ্ছসারে তিনি 
“নৈফর্ম্যসিদ্ধি”, প্বৃহদারণ্যকবার্তিক” এবং “টতত্তিরীয়বাত্তিকের” রচয়িতা সুরেশ্বরের 
সহিত অভিন্্। কিন্ত কোন কোন পণ্ডিত ছ্বুরেশ্বর ও মগ্ডনের মতবাদে পর্যাপ্ত 
ভিম্নতা লক্ষ্য করিয়! তাহাদিগকে ভিন্ন ব্যক্তি বলিয়। প্রতিপন্ন করিতে চাহেন। 
“পঞ্চপাদিক1”কার পদ্মপাদ শংকরের একজন সাক্ষাৎ শিষ্য এবং অদ্বৈতবাদের 
এক প্রস্থানের প্রবর্তক ছিলেন। প্পঞ্চপার্দিকাবিবরণ্কার প্রকাশাত্বা (ত্রয়োদশ 
শতাব্দী) ও “বিবরণপ্রমেয়,” “পঞ্চদশী” ইত্যাদি গ্রন্থের রচয়িতা বি্ভারণ্য প্রভৃতি 
সর্বজনমান্ত অদ্বৈতিগণ যে শ্রেষ্ঠ অদ্বৈত-পরম্পরার সমর্থক তাহা পদ্মপাদ প্রবর্তন 
করেন। মগ্ন, স্থুরেশ্বর এবং পদ্মপাদ্দ অষ্টম শতাব্দীর লোক। 

নবম শতাব্দীর যে মহাপশ্তিত বাচস্পতি মিশ্র অদ্বৈত অপর প্রস্থানের প্রবর্তক, 
তিনি শংকরের সাক্ষাৎ শিষ্য ছিলেন না! এবং অদ্বৈতবাদ ভিন্ন অগ্ঠান্ত সম্প্রদায়ের গ্রন্থের 
উপরেও টীকা রচন! করিয়াছিলেন। তাহার অদ্বৈতবাদের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হইতেছে 
শংকরকত ব্র্গস্থত্র-ভাক্কের “ভামতী” নামক টীকা । মণ্ডন, স্থুরেশ্বর, পদ্মপাদ ও 
বাচম্পতি--অদ্বৈতবাদের চারিটি ভিন্ন তিন্ন ধারার প্রবর্তক। প্রত্যেকেরই বহু 
অন্থগামী আছে। কিস্ত এই সকল ভাবধারার ক্রমবিকাশ যে পরস্পরের কোনরূপ 
অপেক্ষা না রাখিয়াই হইয়াছিল, এইবূপ বলা সঙ্গত হইবে না । বস্তুতঃ এই ধারাগুলি 


২৬৩৫৬ 


বেদাস্ত--অছৈত সম্প্রদায় £ সংক্ষিপ্ত তিহ।সিক বিবরণ 


অনেকস্থলে পরম্পরের সহিত মিলিত হইয়াছে এবং পরম্পরের সহিত বাদ-বিবাদে 
যখনই কোন নুতন সমন্তার উত্তব হইয়াছে, তখনই এই সকল ধারার অহুগামীরা 
উহাদের নিজ নিজ স্বতন্ত্র সমাধান দ্রিয়াছেন। 

অদ্বৈতবাদে শংকরই যুক্তিবিচারের ব্যবহার আরম্ভ করেন? অবশ্য বিচারের গ্যায়- 
সম্মত বিশুদ্ধ প্রণালী বহু পরবর্তাকালে প্রবর্তিত হুইয়াছিল। মগ্ন তাহার *ক্রঙ্গ- 
সিদ্ধি”তে বিচার দ্বারা ভেদের খণ্ডন করেন। উত্তরকালে আনন্দবোধ (একাদশ 
কিবা দ্বাদশ শতাব্দী ) হার "ন্যায় মকরন্দ” গ্রন্থে এবং নৃমিংহাশ্রম (পঞ্চদশ শতাব্দী ) 
তাহার “ভেদ-ধিক্কারপ গ্রন্থে এই ভেদ-খণ্ডন আরও বিস্তারিততাবে করিয়াছেন। এই- 
স্থলে ইহা বল! প্রয়োজন যে, প্রত্যেক অদ্বৈতবাদী তার্ষিকই “ভেদ” খণ্ডনকে আবশ্ক 
বলিয়া মনে করেন। কারণঃ অ-ভেদই (অদ্বৈত) হইতেছে তাহাদের প্রতিপান্ত 
প্রধান সিদ্ধাস্ত। অদ্বৈত সম্প্রদায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ তার্কিক হইতেছেন “খগুন-খণ্ু-খাছ্ের” 
রচয়িত। শ্রীহর্ষ (দ্বাদশ শতাব্দী )। অদ্বৈতবাদী তর্ক-প্রণালীর প্রধান দৃষ্টিভঙ্গী তিনিই 
চিরকালের জন্ত নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। “্খণুন-খণ্ডে”্র টীকা ও তাহারই আদর্শে 
রচিত “তত্বপ্রদীপিক1” গ্রন্থের রচয়িতা চিৎ্স্ুখাচার্য ত্রয়োদশ শতাব্দী) এবং 
“অদ্বৈতসিদ্ধি” ও অন্যান্ বহু গ্রন্থের রচয়িতা মধুস্ছদন সরন্বতীও € পঞ্চদশ শতাব্দী ) 
মহাতাকিক ছিলেন। বিখ্যাত পণ্ডিত অগ্পয়দীক্ষিত (ষোড়শ শতাব্দী) তাহার 
“জিদ্ধাত্ত-লেশ-সংগ্রহ” নামক জুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে অদ্বৈতবাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মত 
সকল সংগ্রহ করিয়াছেন। উপরস্ত নীলকণ্ঠের শৈব-বিশিষ্টাদ্ৈতবাদের উপর তাহার 
টাক। “শৈবাদ্বৈত-নির্ণয়ে” তিনি উক্ত দর্শনের যে অদ্বৈতপর ব্যাখ্য। দিয়াছেন, তাহার 
জন্যও তিনি প্রসিদ্ধ । 

*প্রকটার্থ-বিবরণ” (দ্বাদশ শতাব্দী ) এবং তদহুরূপ আরও কতকগুলি গুরুত্বপুর্ণ 
রচনা এখনও বিদ্যমান, যদ্দিও তাহাদের রচয়িতাদের নাম আজও অজ্ঞাত । অপর 
পক্ষে প্রথিতযশ। কতিপয় লেখকের রচনা অপ্রাপ্য । সাধারণতঃ, ভাষ্য ও টীকা! 
রচনার সাহায্যে এই ভাবপরম্পর! অক্ষুপ্ন রাখা হইতেছিল, যদিও “ভেদ-ধিক্কারের” 
স্ায় প্রকরণ-গ্রস্থ বা! “বেদাস্ত-পরিতাষা”্র ভ্ঠায় বেদাস্তসিদ্ধাস্ত সম্বন্ধীয় গ্রস্থও রচিত 
হইয়াছিল । অবশ্ঠ '্তাহাদেরও ভাষ্য ও টীকা আছে। 

ংকরাচার্ষের চিস্তাধার! অন্যান্য সম্প্রদায়ের, বিশেষতঃ টশৈব ও বৈষ্ণব 
সন্প্রদায়ের, ভাবধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করিয়াছিল । অপ্রয়দীক্ষিত যে 
শৈবদর্শনকে অতৈতবাদী দৃষ্টি হইতে ব্যাখ্যা করিতে প্রয়াস পাইয়াছিলেন তাহা 
পূর্বেই উল্লেখ কর! হইয়াছে । তাহার এই প্রচেষ্টা যে সার্থক হয় নাই তাহার কারণ 


৬৫৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য-দর্শনের ইতিহাস 


তিনি অধবৈতবাদ ধ্বাহার স্কন্ধে চাপাইতে চাহিয়াছিলেন তিনি একনিষ্ভাবে বিশিষ্- 
দ্বেতবাদী ছিলেন বঙ্গস্থত্রের উপর একটি শ্বতস্ত্র ভাখ্য রচন। করিলেই তিনি 
অধিকতর সাফল্যলাভ করিতেন | কাশ্দীরীয্স শৈববাদ একাস্তরূপে শংকরের কাশ্মীর 
ভ্রমণের ফল। তৎকালীন কাশ্মীরে বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনই আধিপত্যলাভ করিয়াছিল 
এবং তাহার প্রভাবে স্থানীয় শৈববাদ চাপ! পড়িয়! যায়। কিন্ত শংকর বৌদ্ধধর্মের 
সমালোচন! করিলে সেই মৃতকল্প শৈববাদ পুনরায় মাথা তুলিয়! শক্তিসঞ্চয় করিতে 
আরভ করে। “শিবস্ত্র” ও *স্পন্দকারিকা”্র প্রণয়নকর্ত! বসুগুপ্ত (নবম শতাব্দী ) 
এই সম্প্রদায়ের প্রথম উল্লেখযোগ্য ব্যাখ্যাকর্তা । তাহার “স্পন্দকারিকা” সুস্পষ্ট- 
ভাবেই গৌড়পাদের প্মাণুক্যকারিকা”্র স্মারক ।১ কাশ্মীরের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও 
দার্শনিক অভিনবগপ্ত এই সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার ছিলেন। 

শাক্তধর্ম যে প্রাচীনতায় বেদের সমতুল্য এইরূপ প্রদিদ্ধি আছে । এই সম্প্রদায়ের 
কতকগুলি প্তন্ত্র” বা “আগমে”্র রচনাকাল প্রাকৃ-শংকরীয়। শংকর স্বয়ং এই 
সাম্প্রদায়িক মতবাদের বিরুদ্ধসমালোচনা! করিলেওঃ অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে 
তাহাকেই এই সাম্প্রদায়িক মতবাদের অন্যতম প্রামাণ্য-গ্রস্থ *প্রপঞ্চ-সার-তস্ত্রের” 
রচয়িত। বলিয়! গণ্য কর! হইয়! থাকে । শুধু এই সম্প্রদায়ের পরম্পরাই নহে, পরস্ত 
সাম্প্রতিককালে উড্রফের ন্ায় বিশেষজ্ঞদ্ধারাও শংকরের গ্রন্থকারত্ব সমথিত 
হইয়াছে | ইহা! ছাড়া “সৌন্দর্যলহরী” নামক শিবভার্া শক্তির উদ্দেশ্টে রচিত যে 
অনবদ্য কবিতাটিতে শাক্তদর্শনের ভাবধারা দেখা যায়, হা প্রাচীনপন্থী অদ্বৈতবাদী 
তাহা শংকরেরই রচন| বলিয়! শ্বীকার করেন। শংকরের মৃত্যুর পরে তাস্কর রায়ের 
স্তায় শাক্তসান্প্রদায়িকগণও নিজেদের দর্শনে শংকরকে মহত্বপুর্ণ স্থান দিয়াছেন। 
কাশ্ীরীয় সম্প্রদায়ের গ্ায় তাহাদিগের চিন্তাধারাও অদ্বৈতবাদেরই কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত 
রূপ মাত্র । 

টবঞ্চবগণের মধ্যে বল্লভাচার্যই (পঞ্চদশ শতাব্দী ) শ্রেষ্ঠ অদ্বৈতবাদী। তিনি 
স্বকীয় মতবাদকে পশুদ্ধাদ্বৈতবাদ” নামে শাংকরিক অদ্বৈতবাদ হইতে বিশিষ্ট করেন। 
শংকরের অদ্বৈতবাদকে তিনি অশুদ্ধ বলিয়া গণ্য করেন ; কারণ, শংকর অশুদ্ধ মায়! 
কল্পনা! আশ্রয় করিয়! বর্গের বিশুদ্ধি স্থাপন করেন। ইহা! ব্যতীত শুক ভাগবত 
সাম্প্রদায়িকগণের মধ্যে ষে অডভ্ভুত রকমের অদ্বৈতবাদ প্রচার করেন তাহারও উল্লেখ 
করা বাইতে পারে । 

অদ্বৈতবাঁদিগণের মধ্যে মতভেদ £ শংকর জগৎকে “মায়” আখ্যা দান করেন এবং 
জগৎকারণবূপেও মাঁয়ারই উল্লেখ করিয়াছিলেন। ভীহার কয়েকজন অন্বর্তা 


৩৬৮ 


বেধাস্ত__অক্ষৈত সম্প্রদায় £ সংক্ষিপ্ত ধতিহীসিক বিবরণ 


ইহাতেই মোটামুটি সন্তষ্ট হইয়া! নিজদিগের দৃত্টি জগৎ হইতে ফিরাইয়! অত্তঃনিগু় 
নিবৃণঢ তত্বে নিবদ্ধ করেন। কিন্ত অধিকাংশের নিকটেই অস্ততঃ মায়ার তিত্তিতেও 
জগতের একটি নিি্ বৃদ্ধিগ্রাহরূপ কল্পনা! করিবার বাসন! প্রবল হইয়৷ উঠে। 
তাহার! “মায়ার” ধারণাকে মূল্যগ্যোতক প্রত্যয়রূপে না দেখিয়া তাহাকে স্থি ও 
ব্যাখ্যাকার্ষের বীজমস্ত্রপে গণ্য করিতে আরম্ভ করেন। “মায়া” যতই রহম্যময় 
পদার্থ হউক না কেন, তাহার অবশ্ঠাই একট! নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকিবে এবং তাহারা 
ইহাকে বৃদ্ধিদ্বার! বুঝিতে চেষ্ট। করিয়াছিলেন । 

“মায়!” শবটির প্ররূত অর্থ অনির্বচনীয়তা হইলেও উহ! একটি দ্রব্যবাচক পদ 
হওয়ায় এবং উহার সহিত সাংখ্যদর্শনোক্ত জগতের মুল কারণ প্ররুৃতির সহিত সংসর্গ 
থাকায়, শংকরের অহ্ৃবত্তিগণ ব্রন্দের সহিত “মায়1” যে কোন না কোন প্রকারে 
জগবস্যপ্টির কারণ ইহ! স্বীকার করার প্রয়োজনীয়তা অস্থভব করেন। 

অদ্বৈতবাদিগণের নিকট স্বভাবতঃই যে প্রশ্নটি প্রথম প্রকট হইয়। উঠিল, তাহা! 
এই £ জগৎ যদ্দি “মায়” হয় এবং সুতরাং সঘ্বস্ত না হয়, তবে জগতের উদ্তবই 
কিরূপে সম্ভবপর হয়? শুদ্ধচৈতন্থস্বরূপ ব্রদ্ম হইতে জড়জগতের উৎপত্তি কিরূপে 
হয়? এই জগৎ উৎপত্তিতে মায়ার কি কোনও ভূমিকা আছে? যদি থাকে, তবে 
তাহা কি? শংকর ব্রঙ্গকেই একমাত্র তত্বরূপে স্বীকার করিয়া! জগৎকে “মিথ্য।” ও 
“মায়া” আখ্যায় অভিহিত করেন । এখন প্রশ্ন উঠিল জগৎকে “মায়” বলিয়া স্বীকার 
করিলেও অস্বীকার্ধরূপে প্রতিভাসমান এই জগতের আদৌ উত্তব হইল কির্ূপে ? 
অরেশ্বরাচার্য ও তাহার শিষ্য সংক্ষেপশারীরককার সর্বজ্ঞ (নিত্যবোধ, নবম 
শতাব্দী ) স্বয়ং ব্রহ্ষকেই জগতের কারণরূপে গণ্য করেন।২ পদন্মপাদ ও তাহার 
অহ্থবর্তিগণ ব্রহ্ম ও মায়! উভয়কেই সম্মিলিতভাবে জগতের কারণ বলিয়াছেন। অপর- 
পক্ষে “বেদান্ত-সিদ্ধান্ত-মুক্তাবলী”কার প্রকাশানন্দ (ষোড়শ শতাব্দী) সম্ভবতঃ 
মগণ্ডনমিশ্রের পব্রহ্মসিদ্ধি”র অনুসরণ করিয়া একমাত্র মায়াকেই জগতের কারণ বলিয়! 
স্বীকার করিয়াছেন। মণ্ডনমিশ্রের মতে জীবগণ মায়ার কার্য এবং জগৎ জীবের 
কার্য । এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠে যে, পত্রহ্গ” ও “মায়।” ইহাদের নিজ নিজ ভূমিকা কি? 
পদার্থতত্বনির্ণয়কার বলেন যে, ব্রহ্ম জগতের বিবর্ত-কারণ এবং “মায়” ভাহার পরিণাম- 
কারণ। এইস্থলে বিবর্ত-কারণ ও পরিণাম-কারণ এই ছুই জাতীয় কারণের পার্থক্য 
সম্বন্ধে কিছু বলা আবশ্তক। কতকগুলি কারণ এক্ধপ আছে ষে, কার্ধাবস্থায় তাহাদের 
নৃতন ধর্মের উদ্তব হয়। যথা; ছুগ্ধ যখন দধিতে ব্বপাস্তরিত হয়, তখন আর তাহা 
দুগ্ধরূপে বর্তমান থাকে না । কিন্তু কতকগুলি কারণ কার্ধে পরিণত হইলে আপন 


৩৫৯ 


প্রা্গা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


আপন পূর্বতন ব্ব্ূপ হারায় না; যেমন, বর্ণের বলয়াকারে পরিবর্তন তাহাকে 
অন্যধাতুতে পরিণত করে না এবং তাহার হ্বর্ণরূপ অক্ষু্ই থাকে। প্রথমোক্ত 
কারণগুলিকে পরিণাম-কারণ এবং শেষোক্ত কারণগুলিকে বিবর্ত-কারণ বলে । 

এইতাবে ছুইপ্রকার কারণের মধ্যে পার্থক্য করির! প্রকৃতপক্ষে জগত্প্রবাহ চলিতে 
থাকার কালেও বর্ষের নিত্যত্ব শ চিরশুদ্ধত। অক্ষুপ্র রাখার চেষ্টা! কর] হইয়াছে । কিন্ত 
স্বরেশ্বর ও সর্বজ্ঞঃ ধাহারা একমাত্র ব্রন্মেরই কারণতা স্বীকার করেন, তাহার! মায়ার 
নিমিত্তকারণতামাত্র শ্বীকার করেন। মায়াকে নিমিত্ব করিয়াই ব্রহ্ম বহরধপে প্রতিতাত 
হইয়। থাকেন। এই বিবয়ে বাচম্পতির একটি গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধাস্ত আছে। তাহার 
মতে ব্রহ্গই জগতের উপাদান কারণ, মায়! তাহার সহকারিমাত্র । অবশ্য ব্রহ্ম পরিণাম 
কারণ হইতে পারেন ন।, তিনি বিবর্ত-কারণমাত্র, কিন্ত মায় এই ছুইটির মধ্যে 
কোনটিই নহে। “বেদান্ত-সিদ্ধান্ত-যুক্তাবলী”কার প্রকাশানন্দ ইহার একাস্ত 
বিরোধিতা করিয়৷ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, কালাতীত ব্রহ্ম কখনই উপাদান কারণ 
হইতে পারেন না, মায়াই জগতের উপাদান করেন। 

এই প্রসঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উথ্াপিত হয়। বহত্ব কি শুদ্ধব্রহ্মজন্ত 
অথব1 মায়োপহিত বে ব্রহ্মকে ঈশ্বর বল! হয়, তজ্জন্য ? অথব! জীবজন্য ? ম্পিনোজীয় 
দর্শনের একটি অস্করূপ সমন্তার কথ! স্মরণ রাখিলে প্রশ্নটির গুরুত্ব অহ্নধাবন করা 
যায়। স্পিনোজ! বলিয়াছিলেন যে, সসীম বস্তগুলিকে চরম সত্বস্ত হইতে উদ্ভূত 
বলিয়া মনে করিতে হইবে, অথচ ইহাদের সসীমন্ধপে প্রতিভাত হওয়ার কারণ 
হইতেছে সসীমবস্তর্দের অপরিণত বুদ্ধি। সমালোচকগণের প্রশ্ন কর অত্যাস 
দাড়াইয়াছে যে, সসীমবস্ত্রদের প্রতিভাত হওয়! যদি সসীমবস্তরদেরই অপূর্ণ তার ফল হয়, 
তাহা হইলে এই সঙ্সীম বস্তগুলিরই উদ্ভব কিরূপে সম্ভবপর হইল ? সসীমবস্তগুলি 
যদি পূর্বেই না উপস্থিত থাকে তাহ! হইলে সসীমবস্তদের প্রতিভাস হয় না, অপরপক্ষে 
সমীমবস্তৃগুলির খণ্ডদৃষ্টি ব্যতিরেকে উহাদের অস্তিত্বই সম্ভবপর হয় না। কিন্ত কেহ 
এইবপ বলিতে পারেন যেঃ বহুত্ব সসীম বস্তগুলি হইতে উদ্ভূত হইয়াছে অথবা চরম 
স্বস্ত হইতে উদ্ভুত হইয়াছে । অন্করূপ বিবেচন। হইতেই প্রশ্ন জাগিল জগৎ কি 
হইতে উদ্ভূত হয়? ব্রহ্ম ঈশ্বর অথবা! জীব হইতে ? 

“সংক্ষেপশারীরক* অহ্থসরণ করিয়া কেহ কেহ শুদ্ধব্রক্ষকেই জগতের কারণ 
বলিয়াছেন 1৩ যাহার] বিবরণের অন্বতা তাহাদের মতে মায়াসংশ্লিষ্ট ব্রহ্ম বা ঈশ্বরই 
নিশ্চয় জগৎ কারণ । কেহ কেহ বলেন যে, ঈশ্বর দেশস্ব বহির্জগতের কারণ, আর 
ভ্বীবের মন ( অস্তঃকরণ ) ঈশ্বরের মায়াস্ভৃত উপাদান সহিত জীবের অবিদ্ধা! (মায়ার 


৩৬০ 


বেধান্ত- -মহৈত সপ্রধার ₹ সংক্ষিপ্ত উরতিহাসিক বিবরণ 


যে অংশ জীবে আছে ) হইতে উত্তৃত। যাহারা মায়া ও অবিদ্যার ভেদ স্বীকার 
ইহা তাহাদেরই মত (নিয়ে দেখুন)। কিন্তু যাহার! এই ছুইয়ের অভিন্নতায় বিশ্বাসী, 
তাহাদের কাহারও কাহারও মতে জীব স্ন্্' শরীরের (লিঙ্গ-শরীর ) কারণ। 
মতাস্তরে ঈশ্বর জাগতিক সকল পদার্থেরই কারণ, কিন্তু জীব স্বপ্ন ও প্রতিভা- 
সমূহের কারণ। পূর্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে যে, মণ্ডনের মতে জীবই জগতের 
কারণ। কিন্ত এই বিষয়ে একটি চরমপন্থী মত হইল এই যে, ঈশ্বর ও অন্ঠান্ত সকল 
কিছুই ত্বপ্রের স্তায় জীব হইতে নিঃস্যত হয়। 

এইস্বলে “মায়।” ও “অবিদ্ভার” সম্বন্ধ আলোচন! করা যাইতে পারে। উভয়েই 
স্বর্ূপতঃ অজ্ঞানরূপে স্বীকৃত। কিন্ত কেহ কেহ তাহাদের মধ্যে ভেদ স্বীকারের 
অপরিহার্য আবশ্বকত৷ অন্ুতব করেন । কারণ, তাহাদের মতে যে অজ্ঞানের কবল 
হইতে স্বয়ং ঈশ্বরও মুক্ত নহেন তাহা জৈবিক অজ্ঞানের তুপনায় অবশ্তই কোন 
ব্যাপকতর অজ্ঞান হইবে । যদি উতয়েরই ক্ষেত্রে অভিন্ন অজ্ঞান স্বীকার কর! হয়, 
তাহা হইলে জীবের ক্ষমতাদি ঈশ্বরের সমতুল্য হওয়। উচিত। সর্বজ্ঞের মতে মায়! 
অবিগ্ভারই নামান্তর মাত্র । কিস্তু “প্রকটার্থ-বিবরণে” অবি্ভাকে মায়ার অংশ বিশেষ- 
রূপেই কল্পন| করা হইয়াছে । “তত্ববিবেক”কার মায়া ও অবিগ্যাকে সত্ব-রজঃ-তমঃ 
গুণাদিসম্পন্ন! “মূলা-প্রকৃতি”র ছইটি ভিন্ন ব্ূপ বলিয়! বর্ণনা করিয়াছেন। সত্বৃণ্ুণ- 
প্রধান মুলী-প্রক্কতিই মায়া, এবং রজঃতমাদিগুণপ্রধান মূলা-প্রক্তিরূপে তাহাই 
অবিগ্যা। কেহ কেহ মূল1-প্রক্কতিকে দ্বিবিধ শক্তিযুক্ত! বলিয়। কল্পনা করিয়াছেন-_ 
এক “আবরণ শক্তি * যাহার সাহায্যে তাহ! সত্যকে আবৃত করে; এবং দ্বিতীর 
£বিক্ষেপ-শক্তি” যাহার দ্বার! তাহ! প্রপঞ্চ ও ভ্রান্তির স্য্টি করে। অর্থাৎ, আবরণ- 
শক্তিবিশিষ্টা মূলা-প্রক্কতিই অবিদ্ভা এবং বিক্ষেপশক্তিসম্পন্না মুল-প্রক্কৃতিই মায়! । 
প্রেসঙ্গতঃ, মায়া এক অথব! বহু» এই প্রশ্রটি উত্থাপন করা যাইতে পারে । মায়! 
যেহেতু অনির্বাচ্য এবং স্বভাবতঃই অনধিগম্য, সেইজন্য কেহ কেহ তাহার যুগপৎ এক 
ও বহু হইতে কোন বাধ! দেখেন না। উদাহরণতঃ, “সর্বদর্শন-সংগ্রহ”কার 
মাধবাচার্ষের উল্লেখ করা যাইতে পারে । তিনি সাংখ্যদর্শনের প্রকৃতি-এক্যতাবাদ 
পরীক্ষাকালে এক অনিষ্টপ্রসঙ্গের উল্লেখ করিয়াছেন। প্রকৃতি এক বলিয়! স্বীকার 
করিলে জীববিশেষের মুক্তিকালে প্রন্কতির.নিবৃতি হয় বলিয়া জীবমাত্রেরই তৎকালে 
যুক্তিলাভ হইতে পারে । মাধবাচার্য মন্তব্য করিয়াছেন যে, অদ্বৈতবাদে এই সমস্যার 
উত্তব হয় না, কারণ মায়! যুগপৎ এক ও বহু হইতে পারে 1৪ কেহ কেহ বলেন, মায়! 
ইশ্বরের উপাধি এবং এক ১ অপরপক্ষে অবিদ্ধা জীবগণের উপাধিন্ধপে বহু । মতাস্তরে 


নি 


৩৬১ 
৪৬ 


' প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনে ইতিছার . 


মায়! এক এবং অবিস্যা হইতে অভিন্ন | কিন্তু মায়ার এক্য স্বীকার করিলেই জীষ- 
বিশেষের মুক্তিকালে সকল জীবের মুক্তিপ্রসঙ্গ উপস্থিত হয় না । কোনও জাতি 
তজ্জাতীয় সকল ব্যক্তিতে আশ্রিত হইলেও কোনও বিশেষ ব্যক্তির নাশে তজ্জাতীয় 
সকল ব্যক্তির নাশ প্রসঙ্গ হয় না। এইস্থলে প্রকাশানন্দ মন্তব্য করিয়াছেন যে, তাহার 
মতে একাধিক জীবই স্বীকৃত না থাকায় আপত্তিটি ইষ্ট নহে। কিন্তমায়া যদি জগৎ- 
স্যপ্টিতে ব্রদ্দের সহিত কার্যকরী হয়, তাহা হইলে উভয়ের মধ্যে সম্বন্ধটর স্বরূপ কি? 
সাংখ্যকারগণ পুরুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধপ্রসঙ্গে যে প্রশ্ন উত্থাপন করেন, এই প্রশ্নটি 
তদহৃরূপ | যদি পুরুষ ও প্রকৃতি কোন সম্বন্ধকে অপেক্ষা রাখিয়াই ব্যতিষক্ত হয়; তবে * 
তাহাদের সেই এ্রক্যরূপট্টির স্ব্ূপ কি? অতএব, পুনরায় সমাধান প্রচেষ্টায় 
অবিসম্বাদদিতরূপে অনির্বাচ্য প্রত্যয়গুলিকে কেন্দ্র করিয়৷ মতভেদ দেখা দিল। 

বক্ষ ও মায়ার সম্পর্ক সম্বন্ধে এক আকর্ষণীয় বাদাহ্ুবাদের উত্তব হইল । মায়া 
সৎপদার্থ নহে, তথাপি তাহা যে ব্রঙ্গের উপাধিরূপে তাহাকে পরিচ্ছিন্ত্র বা সীমায়িত 
করে, এইক্প উক্ত হইয়াছে । কিন্ত মায়! কিরূপ বর্গের উপাধি হইয়া পড়ে? এই 
বিষয়ে আতাষবাদ, প্রতিবিষ্ববাদ ও অবচ্ছেদবাদ নামে তিনটি মতবাদ প্রচলিত 
আছে। স্ুুরেশ্বর মতে অবিস্যাসম্পন্ন ব্রহ্ম “সাক্ষী” (নিয়ে ব্যাখ্য। দ্রষ্টব্য ) এবং বুদ্ধি- 
সমাচ্ছন্ন ব্রহ্ম “জীব” ব্ধূপে প্রতিভাত হয়। এই সম্প্রদায়ে “সাক্ষী” ঈশ্বররূপেই 
কল্পিত হইয়াছে । *প্রকটার্থ-বিবরণে” মায়াতে প্রতিফলিত ব্রহ্গকে ঈশ্বর এবং মায়ার 
অংশ অবিদ্ভায় তাহার প্রতিফলনকেই জীবরূপে বর্ণনা করা হইয়াছে । “তত্ব 
বিবেকপ্কার মতে মুলাপ্রকৃতির সত্ব অংশে ব্রন্মের প্রতিফলনই ঈশ্বর এবং অন্যান্ত 
অংশে প্রতিফলন “জীব” | “সংক্ষেপ-শারীরককার অবিগ্ায় প্রতিফলনকে ঈশ্বর- 
ন্ধপে গণ্য করিয়া অস্তঃকরণে প্রতিফলনকেই জীবরূপে গণ্য করিয়াছেন | “বিবরণ 
সম্প্রদায়িগণের মধ্যে কেহ তেহ ঈশ্বর ও জীব উভয়েই যে প্রতিবিষ্ব_এইবূপ মতবাদ 
ত্বীকার করেন না| তাহাদের মতে জীবই প্রতিবিষ্ব এবং ঈশ্বর তাহার বিন্ব। 
প্রতিবিষ্বঃ বিশ্ব এবং মুলব্রক্ম, এইবপ ত্রেবিধ্য স্বীকারের যুক্তি এই যে, কোন অনস্ত 
পদার্থের প্রতিফলন সম্ভব নহে বলিয়া শুদ্ধ ব্রন্মের প্রতিফলন হইতে পারে না। জাস্ত 
বস্তরই প্রতিফলন হইতে পারে। অপরপক্ষে জীব প্রতিবিঘ্বস্বব্ূপ হওয়ায়, ঈশ্বর 
তাহার অবশ্যস্বীকার্য বিষ্ব। অতএব, জীবের অপেক্ষা রাখিয়াই ঈশ্বরকে কল্পন! কর! 
হইক্সাছে এবং ব্রন্মের ধারণায় জীবকল্পনার অপেক্ষা নাই। 

বাচম্পতি মিশ্র এই অস্থবিধ! দূর করিবার নিমিত্ত অবচ্ছেদবাদ নামক এক 
স্ৃতীয় মতবাদের গ্ছচনা করেন। মায়! সৎপদার্থ না হইলেও তাহা ব্রন্ষকে সীমায়িত 


৩৬২ 


বেযাস্ত--অহৈত পন্ধ্রদাঁয় £ সংক্ষিপ্ত উতিহাসিক বিবরণ . 

বা অবচ্ছিন্ন করিতে সক্ষম হওয়ায় জীবের উত্তব হয় । যাহা অঙ্থদ্বপ ভাবে অর্থাৎ মায়ার 
ধারা অবচ্ছিন্ন নহে তাহাই ঈশ্বর। একক ব্রহ্ম অবিষ্ভার বিষয়ক্ধপে ঈশ্বর এবং 
অবিদ্ভার আশ্রয়ই জীব। অবিগ্া জীবের উপাধিক্ষপে তাহাকে বিড করে। কিন্ত 
তাহা ঈশ্বরের উপাধিও নহে এবং ঈশ্বর তাহার দ্বার] বিভ্রান্ত হন না । “চিত্রদীপ”- 
কারের মতে মায়ার দ্বারা অহ্ুপহিত বিশুব্ধ চৈতন্তই ব্রদ্গ, এবং জীবগণের বুদ্ধি মায়াতে 
যে সংস্কার রাখিয়া! যায়, তাহাতে সেই বিশুদ্ধ চৈতন্টের প্রতিফলনই ঈশ্বর । 
জীবগণের স্থুল ও সুক্ষ্স শরীরের দ্বার পরিচ্ছিন্ন শুদ্ধ চৈতন্যকে “কুটস্থ সাক্ষী” আখ্যা 
দান করা হইয়াছে । এবং “কুটস্থ সাক্ষীগ্তে অস্তঃকরণের প্রতিফলনই জীব। 
এই মতবাদটি প্রতিবিষ্ববাদ ও অবচ্ছেদবাদের মিশ্রণ । 

ক্রমশঃ এইবপ ধারণার উত্তব হইতে থাকে যে, মায়া ও অবিদ্যা। ব্রক্গ ও জীবের - 
সহিত একই প্রকারে সম্বন্ধ হইতে পারে লা! এইব্প বিবেচনা হইতে একাধিক 
নুতন ধারণার উত্তব হইল । 

ব্রহ্ম, ঈশ্বর ও জীব, ইহাদিগের মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে আমরা ইতিপূর্বে 
আলোচন! করিতেছিলাম। «“সংক্ষেপ-শারীরক”” অহ্থসারে ঈশ্বরের উপাধিটি “কারণ- 
ঘটিত-অবিদ্যা” (কারণোপাধি) এবং জীবের উপাধিটি “কার্যঘটিত-অবিদ্যা” 
€ কার্যোপাধি )। পত্রন্মানন্দ*” “চিত্রদীপ” ইত্যাদির লেখক মাখুক্য উপনিষদ অনুসরণ 
করিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, মূল শ্তদ্ধ ব্রন্ম দ্বিবিধ রূপ পরিগ্রহ করেন। একটি 
তাহার বিশ্বূপ এবং অপরটি তাহার অহ্কর্ূপ। উভয়রূপেরই পুনশ্চ ত্রিবিধ প্রকার 
ভেদ আছে। প্রথমটির বিশ্ব, তৈজস ও প্রাজ্ঞ এবং দ্বিতীয়টির বিরাট, হিরণ্যগর্ভ 
( অপর নাম, স্ত্রাত্বা ) এবং ঈশ্বর। ব্রহ্মের দ্বিবিধদ্ূপের এই ত্রিবিধ প্রকার ভেদ 
জাগৃতি, স্বপ্ন ও নুধুণ্তি এই অবস্থাত্রয়ের অন্বব্ূপ ৷ ইহ “বিবরণ” সম্প্রদায়সম্মত 
সিদ্ধাস্তেরই উন্নত সংস্করণ । ““দৃগ২দৃষ্ঠ-বিবেকে” ত্রিবিধ জীব স্বীকার করা হইয়াছে, 
-_কুটস্থ জীব; ব্যবহারিক জীব ও প্রাতিতাসিক জীব । কুটস্থকে অনেকেই জীব 
হইতে স্বতন্ত্র সাক্ষীরূপে গণ্য করেন। কিন্ত এইস্থলে তাহাদের অভিন্নতা কল্পনা কর! 
হইয়াছে। গ্রন্থকার সমুদ্র তরঙ্গ ও তরঙ্গশীর্ষস্থিত বুদ্ধদের উপমার সাহায্যে ত্রিবিধ 
জীবের ব্যাখ্যা করিয়াছেন । কুটস্থ হইলেন পরমার্থ বা বস্ততঃ সৎ জীব এবং তাহা 
অরচ্ছেদ্জন্ত । অপর ছুইটি প্রতিবিশ্বদ্বর্ূপ। বুদ্ধি কুটস্থেই উৎপন্ন হয়, এবং সেই 
বৃদ্ধিতে শুদ্ধচৈতন্যের প্রতিফলনই হইল ব্যবহারিক জীব। প্রাতিভাসিক জীব দেহে 
এই প্রতিফলনের, অর্থাৎ স্বপ্নের প্রতিফলন । 

কুটস্থের আক্ষরিক অর্থ হইল যাহ! কুট অর্থাৎ শীর্ষস্থিত। এইস্থলে শীর্ষস্থিত 


৬৬৩ 


' প্রা ও পাশ্চাতা ছর্ণনের ইতিহাস 


বলিতে জাগতিক স্বখ-ছুঃখের তোক্তা জীবের উধ্বস্থিত “চিৎ” বা! “শুদ্ধটৈতন্ত* বুঝিতে 
হইবে। সুতরাং ইহ] শুদ্ধ দ্রষ্ট। বা “সাক্ষী” | “ কুটস্থ-দীপ” অনুসারে ইহা জীবের 
স্থল ও সুক্ষ শরীরের বিশুদ্ধ দ্রষ্টী | “নাটক-দীপা”হসারে রঙ্গমঞ্জের দীপের স্তাঁয় 
ইহ ঈশ্বর ও জীব উভয়কেই উদ্ভাসিত করে, অর্থাৎ ইহা জীব ও ঈশ্বর উভয় হইতে 
ভিন্ন । “তর্ত্ব-প্রদীপিকা*তেও এই মতাশ্রত্ন করিয়া! উল্লিখিত হইয়াছে যে, জীব বা 
ঈশ্বর নহেন এমন যে বিশুদ্ধ ব্রহ্ম, তিনিই জীবের ক্ষেত্রে সাক্ষী (জীবাভেদেন )। 
ঈশ্বর স্যষ্টিক্ষমতার অধিকায়ী এবং জীব আপন অন্ুভবাদি দ্বারা আবিল। “*সাক্ষী” 
এইবূপ কোনও গুণের অধিকারী নহেন, কিন্ত তিনি সকল তোগের “দদ্রষ্ট1”; ৷ ঈশ্বরের 
কৃতিসমূহ কিন্ত তদ্বার| উদ্ভাসিত হয় না । কিস্ত “কৌমুদ্রী”কার মতে সাক্ষী জীবের 
“অস্তঃস্থিত ( জীবাস্তরঙ্গ ) হইলেও; তাহা স্বয়ং ঈশ্বরেরই “প্রাজ্ঞ” নামক অক্ষমন্ধপ | 
সাক্ষী জীবের অবিদ্যার ভাসক, অতএব তাহ জীবান্তরস্থ বলিয়। স্বীকৃত। “তত্তব- 
শুদ্ধি”তে এই মতবাদটি প্রকারান্তরে সমধিত হইয়াছে । «ইহা! রজত” এইক্প- 
ভ্রমস্থলে যেবপ “ইহ1,বূপ বিশেষ্যতাটি প্রকৃতপক্ষে শুক্তিনিষ্ঠ হইলেও রজতনিষ্ট হইয়া 
প্রতিভাত হয়, তদহ্ুরূপ সাক্ষিত্ব প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের হইলেও তাহা জীবের, এইবূপ 
প্রতিতাস হয়। কিন্ত অপর অনেকে সাক্ষীকে ঈশ্বরের বূপাস্তর বলিয়। শ্বীকার না 
করিয়! তাহাকে ম্বয়ং জীব বলিয়! গণ্য করেন। কেননা জীবই নিজ অস্তরাহছভবের 
দ্র! হইতে পারে । কিন্ত অপর কেহ কেহ জীব ও সাক্ষীকে অভিন্ন বলিয়! স্বীকার 
করিলেও বলেন যে ইহ। অবিদ্ভা নহে, পরস্ত অস্তঃকরণের দ্বারা সীমায়িত জীবই সাক্ষী । 
তাহার] অ্রতি জীবের ক্ষেত্রে ভিন্নত। নিবন্ধন অবিগ্যার বহুত্ব শ্বীকার করেন না। 
তাহারদ্দের মতে অন্তঃকরণেরই বহুত্ব সম্ভব। অনস্তের সহিত উপাধির সঙ্গ যদি 
তাহাকে সাস্তে রূপান্তরিত করে এবং এই উপাধিটি যদি একক হয়, তাহ হইলে বহু 
সাস্তের উদ্ভব কিরূপে সম্ভব হয়? জীব কি এক অথবা! বহু ?-_-এই প্রশ্রট অদ্বৈত- 
ঘাদিদের নিজেদের মধ্যে জিজ্ঞাসিত গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নগুলির অন্যতম । কাহারও মতে 
জীব একক এবং তাহার শরীরও একক। অন্যান্ত জীবের সত্ত। স্বপ্নদৃষ্ট বহত্বের 
সমতুল্য এবং স্থ্টি বা মোক্ষও ন্বপ্নবৎ। অপরে বলিয়াছেন যে, ব্রন্গের প্রতিবিষ্বস্বর্ূপ 
*হিরণ্যগর্ভ*ই মুল জীব এবং অন্তান্ত জীব তাহারই প্রতিবিম্ব । অনেকে ইহ! 
মমর্থন করেন না এবং একই জীব যোগীর ন্তায় বু শরীর স্ষ্টি করে এবং বহুরূপে 
প্রতিতাত হয়, এইক্ধপ কল্পনা করেন। কিন্ত অধিকাংশ অদ্বৈতবাদী জীবের বহুত্ব 
ত্বীকার করেন, অন্যথা! জীব-বিশেষের মুক্তিতে সকল জীবের মুক্তির আপত্তি হয়। 
জীবের বছুত্ব অবিদ্বার বহুত্ব অথব! অস্তঃকরণের বহ্ুত্ব শ্বীকৃতির দ্বারা ব্যাখ্য। কর! হয়। 


৬৬৪ 


যেদান্ত-_অন্বৈত লগ্তরদায় £ সংক্ষি্ড ঈতিহাসিক বিবরণ 


"পর আর একটি গুরত্বপূর্ণ বিশ্যয় হইল অধ্যাসের ম্বরূপ। 'শংকর স্থৃতিন্প 
পুর্বনৃষ্ট পদার্থের পরত্র অবভানকেই অধ্যাস বলিয়াছেন | কিন্তু উত্তরকালীন অহ্বৈত- 
বাদিগণ আপন সম্প্রদায়ের যৌক্তিকতার প্রয়োজনে এই লক্ষণটির সংশোধন করিয় 
তাহা হুইতে “পূর্বদূষ্ঠ* -ও “স্মৃতিন্ধপ” পঞ্ধ 'দুইটি পরিহার করেন। তাহাদের মতে 
“এক বস্তুতে ভিন্নবস্তর অবতাস”ই অধ্যাসের লক্ষণ ।* অন্যথা “পুর্বদৃষ্ট* এবং *স্মৃত” 
পদার্থ সৎ হয় ঝলিয়! তাহাদের সাম্প্রদায়িক অনির্বচনীয়খ্যাতিবাদ (ভ্রমের বিষয়টি 
সদমৎবিলক্ষণর্ূপে অনির্বাচ্য ) ত্যাগ করিয়া অন্থাখ্যাতিবাদ (অর্থাৎ ভ্রমে এক 
ঘৎ পদার্থের অপর সৎ পদার্থরূপে ভান ) আশ্রয় করিতে হয়। শংকর বলিয়াছিলেন 
যে, ব্যক্তিগত অথব। জাগতিক ভ্রান্তিতে সত্য ও মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটে ( লত্যা- 
নৃতে মিথুনীরুত্য )। রজ্জুতে সপ্ভ্রমকালে এই সংমিশ্রণ কিরূপে ঘটে? এই- 
স্বলের প্রত্যক্ষটি “ইহা সর্প” এইরূপেই হয়। কেহ কেহ ইহার এইরপ ব্যাখ্যা 
করেন যে, এই জ্ঞানটিতে বিশেষণাংশেই ভ্রম সংঘটন হয়, কিন্তু "ইহাশ্কূপ বিশেষ্যটি 
সম্বন্ধে কোনও ভ্রান্তি হয় না। বিশেষ্যপ্ূপ “ইহাটি” সত্য ও বিশেষণরূপ 
“সর্পটি মিথ্যা! | বিশেধ্যটি “ইহা সর্প” ব্ধপ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ ও তাহার উত্তরকালীন 
“ইহ রজ্ছু” এইরূপ অক্রান্ত প্রত্যক্ষ, উভয়ের ক্ষেত্রেই বি্বমান থাকে । এইক্সপ- 
উভয়প্রত্যক্ষসাধারণ কোন বিশেষ্য স্বীকার না করিলে উত্তরকালীন জ্ঞানটি 
পূর্বতন জ্ঞানটির নিষেধ করিতে পারে না। তদহৃযায়ী এই সাম্প্রদায়িকগণ 
বলিয়া থাকেন যে, *“ইহ1 সর্প” এইরূপ জ্ঞানে কেবল “ইহ” সম্বন্ধীয় অবিগ্ভারই- 
নাশ হয়, কিন্ত রজ্জুত্ব প্রকারিক অবিষ্ভার নাশ হয় না এবং তাহা সর্পাকারে 
পরিণত হয় । মতান্তরে, বিশেব্য ও বিশেষণকে কোন জ্ঞানেই বিচ্ছিন্ন কর1 সম্ভব 
নহে। রজ্জুতে সর্পভ্রমকালেও “ইহা” এবং “সপ” পৃথকরূপে জ্ঞানের বিষয় হয় 
না। অতএব, বিশেষ্য যে “ইহ1” তৎসন্বন্ধীয় অবিদ্ভাই-__সর্পাকারে পরিণত হয়। 
এই ভ্রান্তিতে অবিদ্যার যে আবরণ-শক্তি “ইহা”কে আবৃত করে, তাহার নিবৃত্তি- 
ঘটিলেও তাহার অক্ষুঞ্ন “বিক্ষেপ-শক্তি” দ্বার। তাহ! সর্পব্ূপের স্যহি করে । নৃসিংহভষ্ট 
এই বাদবিবাদকে অনর্থকন্ধপে গণ্য করেন, কেনন! তাহার মতে ভ্রান্তিতে “ইহা” ও 
“সর্প” বিষয়ক একটি অখণ্ড বিশিষ্ট বুদ্ধি হয়। রোগাদি দ্বারা ছুট ইন্জরিয়ের সহিত 
বিবয়ের সন্ত্রিকর্ধ অবিদ্যায় সক্ক্রোত স্যষ্টি করিলে তাহাই সর্পাকারে পরিণত হয়, কিন্তু 
ইহার বিরুদ্ধে বক্তব্য এই যে, ভ্রান্ত ও অন্তরান্ত প্রত্যক্ষপাধারণ কোন কিছু শ্বীরুত ন 
হইলেঃ উত্তরকালীন অভ্রান্ত প্রত্যক্ষটি কিনধূপে পুর্বতন প্রত্যক্ষটির নিষেধ করিতে 
পারে? সর্প ও রজ্জু এই ছুইটি বিশেষণই যদি একই বিশেষ সথ্বন্ধে প্রযুক্ত না হয় 


৬৫ 


'».. - প্রাচ্য ও পাপটাত্য ধর্ণমের ইতিহাস ' - 
ভাঁহা! হইলে তাহাদিগের মধ্যে কোন প্রকারেই বিরোধ উপস্থিত হয় না। আঁবার 
কেহ ফেহ ঘলেন যে, যদিও ভ্রমে “ইহা” বিষয়ক একটি বিশিষ্ট বুদ্ধি হয়, তথাপি তাহা 
প্রথমে সর্পকেই প্রকাশিত করে এবং উত্তরকালে যখন রজ্ছুকে প্রকাশ করে, তখন 
“সর্প একট সুণ্ধ সংস্কাররূপে রহিয়া যায়! কেহ বা “ইহা” বিষয়ক একটি জ্ঞান ও 
“ইহ1 সর্প” এইন্দপ অপর আর একটি জ্ঞান স্বীকার করেন। স্বভাবতঃই “ইহ! 
রজ্জু” এই জ্ঞানটি তৃতীয় জ্ঞান হইবে । এবং *ইহা”টি এই জ্ঞানত্রয় সাধারণ । 

. এই স্বল্পপরিসর অধ্যায়ে অদ্বৈতবাদিগণ কর্তৃক যে সকল প্রশ্ন বিচারের জন্য 
উত্বাপিত করা হইয়াছিল তাহার সবগুলির উপস্থাপন সম্ভব নহে; তাহাদের আ্ছ- 
বঙ্গিক সমন্কাগুলি তো দূরের কথা । কিন্ত স্বপ্ন ও মোক্ষ সম্বন্ধীয় সমস্যার একটি ক্ষুত্র 
বিবরণ যোগ কর! যাইতে পারে । ইউরোপীয় দর্শনের তুলনায় ভারতীয় দার্শনিক 
বিচারে স্বপ্নের মহত্তর ভূমিক! আছে। মাওুক্য উপনিষদে স্বপ্নকে জাগ্রত ও স্ুযুপ্তির 
হ্যায় আত্মার অবস্থাভেদ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। ্বপ্নদৃষ্ট পদার্থের মিথ্যাজ্ঞানের 
বিষয়ের গ্ায় প্রাতিভাসিক সত্তা স্বীরুত। কিন্তু স্বাশ্সিক জগৎ প্রাতিভাসিক সৎ হইলেও 
প্রশ্ন জাগে যে, তাহ! কাহাতে অধ্যস্ত হয়? কেহ কেহ বলেন স্বপ্নের জগৎকে বরক্গ- 
চৈতন্যেই অধ্যস্ত বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে । কারণ স্বযুণ্তির “তমস্,* ব্ূপ যে 
অজ্ঞান, তাহাই স্বপ্ন ও ভ্রাস্তির মূল কারণ । এবং অজ্ঞান ব্রন্গে অধ্যন্ত হওয়ায়, স্বপ্ন 
ও জাগ্রতচৈতন্তকেও অন্রূপভাবে কল্পন! করা যাইতে পারে । অপর কাহারও মতে 
স্বপ্প জাগ্রত ঠৈতন্যে অধ্যস্ত, কেননা জাগৃতির অনস্তর জাগতিক পদার্থের জ্ঞানের 
দ্বার! স্বাপ্রিক প্রতিভাস বাধিত হয়। মতাস্তরে স্বাশ্িক প্রতিভাসের সমবায়িকারণ 
মূল অজ্ঞান নহে, পরস্ত তাহার ““অবস্থাতেদ” হুযুপ্তিই স্বাশ্িক প্রতিভাসের কারণ । 
কিন্ত ব্বপ্নকালে ইন্ড্রিয়গুলি নিক্ষিয় থাকিলেও ম্বপ্নকালীন বিবয়গুলির প্রত্যক্ষ কিনধপে 
গভভবপর হয়? ইহার উত্তরে কেহ কেহ বলিয়াছেন যে, বস্ততঃ ইন্ট্রিয়গুলি বস্তর 
ভাসক নহে, পরস্ত জ্ঞাত| ত্বয়ংই (ন্বয়ং জ্যোতি) তাহাদের উত্তাসক। অতএব 
"আমি শ্রবণ করিতেছি” এইরূপ যে অন্ভব, তাহা ভ্রমাত্বক বলিতে হইবে । 

মোক্ষ সম্পর্কে মুখ্যতঃ ছুইটি বিভিন্ন মত দৃষ্ট হয়-_সর্বমুক্তিবাদ ও প্রত্যেকমুক্তিবাদ। 
প্রথমোক্তটি অন্যায়ী সকল জীবের একই কালে মুক্তি হয় এবং দ্বিতীয় মতাহুসারে 
ভিন্ন ভিন্্র দ্ূপেই জীবসকল মুক্তিলাত করে। বাচম্পতি ও তাহার কিছুসংখ্যক 
অন্থৰর্তী ও অগ্পয় দীক্ষিত প্রথম মতাশ্রয়ী, কিন্ত অধিকাংশ অদ্বৈতবাদীই দ্বিতীয় 
মতবাদ সমর্থন করেন। প্রথমেই জিড্ঞান্ত ছিল £ জীব মোক্ষানস্তর কাহার সহিত 
তাদাত্্য লাভ করে; ব্রন্দের অথব1 ঈশ্বরের ? মায়া ও জীব প্রত্যেকেরই এককতা 


৩৬৬ 


:25125305583815-345475 


বেষাত--অধৈত় সম্প্রদায় $ সংঙ্গিষ্ঠ প্রত্থিহাদিক বিবরণ 


সমর্থনকারী মুক্তাবলীকারের মতে মায়ার বিনাশের অব্যবহিত উত্তরক্ষণে জীব ব্রন্মের 
সহিত তাদাস্ব্য লাভ করে । এমন কি যাহারা জীবের বহুত্ব শ্বীকার করেন, এবং 
জীব ও ঈশ্বরকে প্রতিবিষ্ব্ূপে গণ্য করেন, ভাহাদের মধ্যেও অবিগ্থার বিনাশোত্তর- 
কালে জীব আপন বিশ্ব ব্রঙ্মের সহিত অভিন্নত! প্রাপ্ত হয়, এরূপ মতবাদ প্রচলিত 
আছে। অপরপক্ষে ধাহারা ঈশ্বরের প্রতিবিষ্বতা স্বীকার ন1 করিয়! তাহাকে জীবরূপ 
প্রতিবিষ্বের বিশ্বরূপে কল্পনা করেন, তাহাদের মনে মোক্ষে জীব ও ঈশ্বরের অভিন্নতা 
স্থাপিত হয় | এবং ঈশ্বর স্বয়ং সকল জীব যুক্ত হইলেই ব্রহ্মতুলাভ করেন। কারণ, 
যতক্ষণ পর্যস্ত কোন বিশেষ অবিগ্ভা ও তাহার জীব বর্তমান থাকে, ততক্ষণ ঈশ্বর 
তাহার বিশ্ব না হইয়া পারেন না! । বাচষ্পতি প্রতিবিষ্ববাদ গ্রহণ না করিলেও, 
তিনি নিজন্ব “অবচ্ছেদবাদ” অবলম্বনে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন। তিনি 
জীবের বহুত্ব শ্বীকার করিয়! বলিয়াছেন যে, যাবৎকাল একা অবিদ্তা বর্ভমান 
থাকে, তাবৎকাল ঈশ্বর অবিদ্া-বিষয় বলিয়! তিনিও থাকেন, এবং যুক্তজীব ঈশ্বরেই 
বিলীন হইয়। যায়। 

ইহার সহিত সংশ্লিষ্ট সমস্া হইল অবিগ্যার বিলয়সন্বন্ধীয় । ব্র্গসিদ্ধিকার 
অবিদ্যার ধ্বংসকেই ব্রন্ধ বলিয়া! বর্ণনা! করিয়াছেন। বিমুক্তাত্বার মতে অবিদ্যা 
সৎ, অসৎ, সদসৎ ও মিথ্যা এই চতুক্ষোটিবিনিমুক্ত হওয়ায় তাহা পঞ্চমকোটিস্বরূপ | 
এই মতবাদের ব্বপক্ষে যুক্তি এই যে, অবিদ্যার নিষেধ যদি ব্রহ্ম হইতে অভিন্ন হয় তাহা 
হইলে নিত্য-ব্রন্ষের স্তায় অবিগ্যাধবংস নিত্য হইবে ;) ফলে, অবিদ্য! বিনাশের নিমিত্ত 
কোনরূপ আয়াসের প্রয়োজন হইবে না| এই অবিদ্যাধংসকে অনির্বাচ্য বা 
“মায়াস্রূপে গণ্য করা যায় না। কারণ মায়! জ্ঞানের দ্বার] দূরীভূত হয়, কিন্ত কোন 
জ্ঞান দ্বারাই অবিদ্যার ধ্বংসকে অপসারিত করা যায় না। কিন্তু অদ্বৈতবিদ্যাচার্য 
মন্তব্য করিয়াছেন যে, অবিদ্যার বিনাশ অবিদ্যার হ্টায়ই অনির্বাচ্য, কারণ উৎপাদ ও 
বিনাশ সমস্তরের সত্তাঘম্পন্ন হয়। 

যুক্তি-বিচারের ভিত্তিতে আক্রমণ ও সমর্থন £ঃ উপযুক্ত অসংখ্য মততেদ হইতে ইহাই দেখ! 
যায় যে, অদ্বৈতবাদিগণ “মায়া” ও “মিথ্যা*্র কল্পনাকে বর্ণনাত্বক তাকিক প্রত্যয়ন্ধপেই 
উপযোগ করিয়াছিলেন, মুল্যগ্যোতক প্রত্যয়ন্বপে নহে । তথাপি শংকর যে জগৎকে 
পুনঃ পুনঃ সৎ হইতে ভিন্ন বলিয়াছিলেন, তাহাতে বিচলিত হইয়া! তাহার 
সমালোচকগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হইতে ভাহাকে আক্রমণ করেন। কেহ তাহার 
মতে বিজ্ঞানই একমাত্র সৎ, কেহ তাহার মতে জগৎ কক্সনান্থষ্ট১ এবং কেহ 
ব| তিনি শূন্কবাদী-_এইকপে তাহার দর্শনকে দেখিতে থাকেন। অপরপক্ষেঃ 


৩৬৭ 


'শ্রাচয ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


অধৈত-সম্প্রদায়ের যুক্তিসৌধটি সম্পূর্ণরূপে তাহার মিথ্যাজ্ঞানসম্পকীয় মতবাদতিস্তিক 
হুণয়ায় প্রত্যেক বিরোধী সম্প্রদায় তাহার খণ্ডন করিয়া নিজ নিজ সিদ্ধাস্তসম্মরত 
- '্্যাখ্যা উপস্থিত করিতে থাকেন। অবৈতরাদিগণের দৃষ্টিতে চরমতত্ব ব্রহ্ম জ্ঞানশ্বরূপ 
ও স্বতঃপ্রকাশ হওয়ায় তাহার! নিজেদের জ্ঞানসম্পকীঁয় বিচারে সর্বদা সত্য 
মাত্রেরই--তাহ! নিরপেক্ষ চরম সত্য বা সাপেক্ষ সত্য যাহাই হউক না কেন-_ 
গ্বপ্রকোশকত্বের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন। কিন্ত এই মতবাদ হইতে 
ইহাই সিদ্ধাত্ত হয় যে, সত্তা ও জ্ঞান অভিন্ন এবং তাহ! শ্বপ্রকাশ। ফলে, জ্ঞান বা 
বোধকে আর প্ধর্ম* বলিয়] গণ্য কর! যায় না, পরন্ত তাহার ধরশ্সি-স্বব্ূপতা স্বীকার 
করিতে হইবে। কিন্তৃন্তায় ও বৈশেষিক দর্শনের কতকগুলি সম্প্রদায়ের দার্শনিকগণ 
এই সকল মতবাদ স্বীকার করিতে প্রস্তত ছিলেন ন1। তাহারা স্বপ্রকাশবাদ 
নিরাকরণে প্রবৃত্ত হইলেন। এইরূপ আক্রমণ, প্রত্যাক্রমণ ও প্রত্যুত্তর দ্বারা এক 
বিশাল তার্ষিক-সাহিত্যের স্থষ্টি হইল। অপরাপর সম্প্রদায়সম্মত তাব-ধারণ| হইতে 
আপন সম্প্রদায়ের ধারণা-কল্পনাগুলির বিশেষত্ব প্রকট করিবার জন্য অদ্বৈতবাদ্দিগণকে 
বাধ্য হইয়! সেইগুলির বিশদীকরণ এবং বিরোধী সম্প্রদায়সম্মত ধারণাগুলির পরীক্ষায় 
প্রবৃত্ত হইতে হয়। 

অদ্বৈতবাদের যে কেন্দ্রীয় ধারণাটির বিরুদ্ধে বিরোধী সম্প্রদায়গুলির এক্যবন্ধ 
আক্রমণ পরিচালিত হ্ইয়াছিল, তাহা “মায়।”। রামাহজ জ্ঞানতত্বের দৃষ্টিতঙ্গী 
আশ্রয় করিয়! “অজ্ঞান”-এর (অবিদ্যার ) ধারণার কঠোর সমালোচনা করিয়াছিলেন। 
“অজ্ঞান” হইতেছে জ্ঞানের অভাব। জ্ঞানাতাবরূপ একটি অভাবাত্মক পদার্থ কিরূপে 
জগতের কারণ হইতে পারে ? কিন্ত অদ্বৈতবাদিগণ বলেন যে, অজ্ঞান কেবল একটি 
অভাবাত্বক পদার্থ নহে, পরস্ত তাহা ভাব পদার্থ। তুযুপ্তিতে যখন আমাদের কোন 
বিষয়ের জ্ঞান হয় না, তখন আমরা অজ্ঞানকে উপলব্ধি করি । “আমি স্ুযুপ্তীবস্থায় 
কোন বিষয়কে জানি নাই” এইরূপেই ইহার উপলব্ধি হয়। ইহা যে অভাব পদার্থ 
নহে তাহার কারণ অভাব মাত্রই কোন বিশিষ্ট বস্তর অভাব। যে বস্ত্র বাস্তবিক 
কোন সভা নাই, তাহার অভাবের কোন অর্থ আছে বলিয়! অদ্বৈতবাদিগণ শ্বীকার 
করেন নাঁ। যে বস্ত নাই তাহার অতাব সাধারণভাবে তাহার প্রতিযোগী । এইরূপ 
যে অভাবের বিষয়ে বিশেষ কিছু বলা যায় না; তাহাও তাহাদের দ্বার স্বীকৃত 
নহে । আবার, “আমি কিছু জানি নাই” এইরূপ বলিতে হইলে কোন ব্যক্তির যে 
জ্ঞান ছিল না, এইরূপ জ্ঞান থাকা আবশ্তক। সুতরাং, স্যুপ্তিতে যে আমাদের 
একোনি জ্ঞান :ছিল. না ইহা সত্য নহে। তৎকালে যাহা বিবয়রূপে প্রতিভাত 


৩৬৮ 


বেদাস্ত-_-অঙ্থৈত সম্প্রদায় £ সংক্ষিপ্ত এ্রতিহীসিক বিবরণ 


হইয়াছিল সেই “অজ্ঞান”টিও জ্ঞানের কোন বিশেষ বিষয় হইবে । অতএব, অজ্ঞান 
একটি ভাব-পদার্থ। 

কিম্ত জগৎ যদি ভাবপদার্থ হয়, তাহা হইলে শঙ্কর তাহাকে “মিথ্যা” (মায়1) 
বলিলেন কেন? মধ্বের শিশ্ত ব্যাসতীর্থ তাহার ন্্যায়ামৃত' গ্রন্থে “মায়ার” ধারণার 
অযৌক্তিকত প্রতিপাদন করিবার জন্ত উহাকে পুঙ্থা্থপুঙ্ঘরূপে বিশ্লেষণ করিয়াছেন । 
মধুস্ছদন সর্তী এই সকল আপত্তি খণ্ডন করিবার জন্য তাহার “অদ্বৈতপিদ্ধি নামক গ্রন্থ 
রচনা করেন এবং তাহাতে “মায়ার ধারণাটির অধিকতর বিশদ ব্যাখ্যা করেন। এই 
বাদাচ্বাদদের কয়েকটি আলোচ্য বিষয় এই স্থলে দেওয়া যাইতে পারে। ব্যাসতীর্থ 
অদ্বৈতবাদিগণের সম্মুথে এইরূপ একটি কুটন্তায় উপস্থিত করেন ; জগতের মিথ্যাত্ব যদ্দি 
মিথ্যা হয়, তাহা হইলে জগৎ সৎ হুইয়! পড়ে । অপরপক্ষে জগতের যিথ্যাত্ব যদি মিথ্যা 
না হয়, তাহা হইলে ক্রদ্ধ ভিন্ন অন্ত সৎ পদার্থ থাকিবে । উভয় বিকল্পই ব্রন্দের 
অদৈতত্বের প্রতিকূল । অছ্বৈতবাদিগণ ইহার উত্তরে বলিয়াছেন যে, প্রথম বিকল্পটি 
ত্বীকার করিলেও জগতের সত্যতা প্রমাণিত হয় না। জগতের যিথ্যাত্ব এবং 
সেই মিথ্যাত্বের মিথ্যাত্ব, উভয়ই চরমতত্ব ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন হওয়ায় একই 
পর্যায়ভুক্ত | 

মায়াকে যে অনির্চচনীয় বলিয়! বর্ণনা কর হইয়াছে, অর্থাৎ ইহা যে সৎ নহে, অসৎ 
নহে, উভয় নহে এবং উভয় ভিন্নও নহে এইরূপ বল হইয়াছে-__ইহার বিরুদ্ধে ব্যাসতীর্থ 
যে আপত্তি করিয়াছেন তাহারও অনুরূপ উত্তর দেওয়া হইয়াছে । আপতিটি হইতেছে 
এই যে, যি কোনও পদার্থ সৎ ন! হয় তাহা? অবশ্তঠই অসৎ হইবে, এবং যদি তাহ 
অসৎ ন। হুয়, তাহ হইলে তাহ অবশ্তই সৎ হইবে । সদ্দসৎ ব1 সদসতভিন্ন কোনও পদার্থ 
অপ্রপিদ্ধ। অদ্বৈতবাদ্দিগণ ইহার উত্তরে বলিয়া! থাকেন যে, সংভিন্ন হইলেই তাহা 
নিশ্চয়ই অসৎ হইবে এইব্প নহে। মিথ্যাবস্ত সৎ ও অসৎবিলক্ষণ তৃতীয় জাতীয় 
পদার্থ । যাহা ব্রন্গের ন্যায় অবাধিত তাহাই সং এবং ষাহা শশশৃঙ্গবৎ অলীক এবং যাহা 
কখনও উপলব্ধির বিষয় হয় না তাহাই অসৎ। যিথ্যাবস্ত বাধিত হয় বলিয়া তাহা সৎ 
নহে, অপরপক্ষে ভাবপদার্থরূপে প্রতিভাত হয় বলিয়! তাহাকে অসংও বলা যায় ন1। 
অতএব তাহা সৎ ও নহে অসৎও নহে । ইহার তাৎপর্য এই যে, “রম সত্তা” ও “চরম 
অসত্া”, ইহার অত্যস্ত বিসদৃশ বা বিপরীত হইলেও তাহার1পরম্পরবিরোধী নহে; ফলে 
তৃতীয় বিকল্পের সম্ভাবন। থাকায় “মিথ্য1”র উপপত্তি হয়। 

মধুস্দন তদন্যায়ী “মিথ্যাস্ত্থের পাঁচটি বিকল্পলক্ষণ প্রণয়ন করিয়াছেন। যুক্তির 
দিক হইতে এই সকল লক্ষণের মূল ভাবটি হইল এই-যে আশ্রয়ে যাহা অনুভূত হয় 


৩৬৯ 
৪৭ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দ্শনের ইতিহাস 


নৈখানেই তাহা বাধিত হইলে তাহা মিথ্যা। অনুভূত হয় বলিয়া “মিথ্যা বস্তুকে বন্ধ্যা 
পুত্রের সাপ অসৎ এবং বাধিত হয় বলিয়া! ব্রদ্মের হ্যায় সৎ বলা যায় না। 

কিন্তু ভ্রমের স্বরূপ কি? তাহা কি এক বস্ততে অপর বস্তর অনুভবই নহে? কিন্ত 
তাহা হইলে সম্মুখবর্তী পদার্থ এবং তাহাতে যে পদার্থের ভ্রাস্তি হয়, এই উভয় পদার্থ ই 
সৎ হওয়ায় মিথ্যাবস্তকে সদসত্তবিলক্ষণ না বলিয়া সৎ বল! উচিৎ। “অখ্যাতি' ও 
“অন্যথাখ্যাতি” বাদ ভ্রাস্তজ্ঞানের বিষয়টির বস্ত-সত্বা ত্বীকার করে। প্রথমোক্তটি 
প্রভাকপান্থবর্তী মীমাংসক ও দ্বিতীয়টি নৈয়ায়িকগণ দ্বারা সম্থত। অদ্বৈতবাদী মতটি 
“অনির্চচনীয়খ্যাতিবাদ” নামে প্রসিদ্ধ। অন্ঠান্ত প্রচলিত মতবাদ্গুলি এই তিনটি 
মতবাদেরই ব্ূপাস্তর। অখ্যাতিবাদ ( অগ্রহণ ) অনুসারে পুরোবর্তী পদার্থ ও ভ্রাস্তজ্ঞানের 
বিষয় যে পদার্থ, এই দুইটির মধ্যের ভিন্নতার অগ্রহণই ভরম। ভ্রান্তজ্ঞানের বিষয়রূপে যে 
পদ্দার্থটির প্রকাশ ঘটে তাহা স্থৃত সৎ পদার্থ। অন্তথাখ্যাতিবাদ (এক বস্তকে অপর 
বস্তরূপে জ্ঞাত হওয়া ) অনুসারে সন্মুখবর্তী পদদার্থটিকে অন্যত্র প্রত্যক্ষ এবং বর্তমানে স্থৃত 
অন্য কোন পদার্থরূপে জ্ঞাত হওয়াই ভ্রম । অদ্বৈতবাদিগণ ইহার বিপক্ষে এইরপ যুক্তি প্রদর্শন 
করেন ষে অখ্যাতি' রূপ ষে অগ্রহণ তাহা অভাবাত্মক হওয়ায় তাহার দ্বার! মিথ্যাসর্পজন্য 
ভীতি প্রভৃতির ব্যাখ্যা হয় না! এবং ভমে আমাদের কোনরূপ স্মরণের অনুভব হয় না। 
তাহার! দ্বিতীয় মতবাদটিকেও অনুরূপ যুক্তিতেই অগ্রাহ্য করেন। চাকচিক্যযুক্ত যে 
গীতবস্তটি ঘর্ণরূপে প্রতিভাত হয়, তাহা! যদি স্বর্ণের স্থৃতি হইত, তাহা হইলে তাহা 
আমাদিগকে তাহার প্রাপ্তির জন্য প্রবৃত্ত করিত না। অর্থাৎ, ভ্রাস্তির বিষয়টি স্মৃত নহে, 
তাহা! প্রত্যক্ষবস্ত; এবং ভ্রানস্তিকে একপ্রকারের ম্থতিরপে গণ্য না করিয়া তাহাকে 
প্রত্যক্ষরূপেই গণ্য করিতে হইবে। স্থতরাং ভ্রাস্তির বিষয়টি সৎ নহে । তাহাকে কল্পিত 
পদ্দার্থও বল] যায় না, কারণ কল্লিত বস্ত প্রত্যক্ষ হয় না । অতএব, ভ্রান্ত বিষয়টি সদসৎ- 
বিলক্ষণ অনির্বাচ্য ( অর্থাৎ, সং বা অসৎ রূপে যাহার নির্চন হয় না )। 

জ্ঞান বা সত্যতার স্বপ্রকাশতাবিষয়ক জ্ঞানীয় সমন্যাটি উপরোক্ত সমন্যার সহিত 
জড়িত। কোনও প্রত্যক্ষের অভ্রান্ততা বা প্রামাণ্য কিরূপে জ্ঞাত হয়? “ইহা সর্প 
এইরূপ ভমস্থলে দৃষ্ট হয় যে, ভ্রান্তজ্ঞান তাহার উত্তরকালীন “ইহা! রজ্জু এইরূপ জ্ঞান দ্বার! 
নিষিদ্ধ হয়। ছিতীয় জ্ঞানটির দ্বারাই প্রথম জ্ঞানটির ভ্রান্ত! জানিতে পারা যায়| 
অতএব, অদ্বৈতবাদিগণ সিদ্ধাত্ত করেন ষে, অগ্রামাণ্য বা ভ্রান্ততা স্বতঃপ্রকাশ নহে, পরস্ত 
তাহা অন্ত কোন অস্তরাহুভব দ্বারাই জ্ঞাত হয়। ( পরতঃ অপ্রামাণ্য ) কিন্তু “ইহা রজ্জু” 
এই জ্ঞানটির সত্যত! কিরূপে প্রকাশিত হয়? তাহার প্রামাণ্য কি তাহার দ্বারাই 
প্রকাশিত হয়, অথবা জ্ঞানাস্তরের অপেক্ষা রাখিয়াই তাহার প্রামাণ্য স্থচিত হয়? 


৩৭০ 


বেদাস্ত--অদ্বৈত সম্প্রদায় £ সংক্ষিপ্ত এঁভিহালিক বিবরণ 


অদ্বৈতবাদ্দিগণ প্রথম কোট আশ্রয় করিয়! স্বতঃপ্রামাপ্যবাদ সমর্থন করেন। ইহা 
দ্বারা ইহাই সিদ্ধান্ত করা হয় যে জ্ঞানমাত্রই শ্বতঃপ্রম! বা স্বরূপতঃ অভ্রাস্ত, কিন্তু তাহা 
জ্ঞানাস্তর হারাই বাধিত বা! অপ্রমা হয় । কিন্তু নৈয়ার্িকগণ মতে প্রমাত্ব বা অপ্রমাত্ব 
কেহই'জ্ঞানের ম্বভাব নহে এবং তাহাদের জ্ঞাপনও অপরকে অপেক্ষা রাখিয়াই হুইয়? 
থাকে। ইন্দ্রিয়গ্ুপির কার্ষের দোষ ব1 গুণই গ্রত্যক্ষকে প্রমাত্ব বা অপ্রমাত্ব দান করে। 
এইস্থলে তাহারা জ্ঞান ও যুক্তিযুক্ততা সম্বন্বীয় প্রশ্নের সহিত শারীরিক ও মনস্তাত্বিক 
প্রশ্নের মিশ্রণ করিয়া ফেলিয়াছেন বলিয়া! বোধ হয়। যাহাই হউক নৈয়ায্িক সিদ্ধান্তের 
মূল বক্তব্যটি এই যে, জ্ঞান কখনই স্বভাবতঃ ভ্রান্ত অথবা অন্রাস্ত হইতে পারে না । 
তাহার ভ্রান্তি ও অভ্রাস্তি অপরসাপেক্ষ। সাংখ্য-দ্ার্শনিকগণ মতে প্রমাত্ব ও অপ্রমাত্ব 
উভয়েই জ্ঞানের ন্বভাবাস্ততূক্তি। এবং বিজ্ঞানবাদী বৌদ্ধগণের ষতে জ্ঞান স্বভাবতঃ ভ্রান্ত 
কিন্তু প্রবৃত্তিসফলতা ( অর্থ-ত্রিয়া-কারিত্ব ) ইত্যাদি অন্য কিছুর সাহায্যেই তাহা প্রম। 
হইয়া! উঠে। অছৈতবার্দিগণ এইসকল মতবাদগুলির কোনটিকেই গ্রাহা বলিয়া হ্বীকার 
করেন না। “অর্থ-ক্রিয়া-কারিত্বকে” তীহারা জ্ঞানের প্রমাত্ব ব1 বস্তসত্তার জ্ঞাপক 
বলিয়া স্বীকার করেন না । প্রবৃত্তিসফলতা! কেবল ব্যবহারিক সত্ত। বা সত্যের প্রতিপার্ধক 
হইতে পারে, চরম তত্ব বা সত্যের প্রতিপাদন তাহার দ্বারা হইতে পাঁরে না। কদাচিৎ 
ভ্রাস্তজ্ঞানও প্রবৃত্তি সফল করিয়া থাকে । 

দৃশ্ঠটমান জগত যদ্দি অনির্বাচ্য হয়, তাহা হইলে স্বভাবতঃই জাগতিক পদার্থের তত্ব 
প্রতিপাদনের জন্য নৈয়ায়িকগণ যে সকল লক্ষণ প্রণয়ন করিস্সা থাকেন তাহাদের নিবচন 
অসম্ভব হইয়া! পড়ে । নৈয়ায়িকমতে বিষয্মাত্রেরই নিজস্ব সতা৷ ও নির্দিষ্ট স্বরূপ আছে। 
অছৈতবার্দিগণ নিবিশেষ ব্রদ্ষমাত্রের সত্তা স্বীকার করেন এবং বিশেষ বিশেষ পদার্থ- 
গুলির কোন নিিষ্ট ত্বব্ূপ আছে বলিয়া স্বীকার করেন না। সংক্ষেপতঃ তাহাদের 
মতে যাহা কিছু বিশেষ করে, তাহাই মিথ্যা, অনির্বাচ্য। অপরপক্ষে নৈয়ায়িকগণ 
ইহার প্রত্যুত্তররূপে অকাট্য লক্ষণরাশি উপস্থিত করেন । উদয়নাচার্ধের “লক্ষণাবলী” 
এই জাতীয় রচনাগুলির মধ্যে সমধিক প্রসিদ্ধ । শ্রীহর্ষ এই সকল লক্ষণের স্বগতঃ- 
বিরোধ প্রদর্শনঘ্বার] তাহাদের খণ্ডন করেন । তিনি কারণ, দ্রব্য, গুণ, সম্বন্ধ ইত্যাদির 
থগ্ডনে ষে যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন,-তাহা ব্র্যাডলের “48005915755 8:00. 2:521165% 
নামক গ্রন্থের প্রত্যয়পন্ীক্ষার পূর্বান্ভব বল! যাইতে পারে। অবশ্ত শ্রীহর্ষের পূর্বে 
বিখ্যাত বৌদ্ব-তাকিক নাগাজুন তাহার “মূল-মধ্যমক-কারিকা” গ্রন্থে অনুরূপভাবে 
প্রত্যয় পরীক্ষায় ব্যাপৃত হইয়াছিলেন । এবং বস্ততঃ শ্রীহর্য ও নাগার্জ্নের যুক্তিরাজিও 
অভিন্ন। উভয়েরই পরপক্ষের খণ্ডনই লক্ষ্য এবং তাহাদের এইন্প কোন ব্বপক্ষ নাই, 


৩৭১ 


: শ্রীচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


যাহা পূর্ববপক্ষীর দ্বারা আক্রান্ত হইতে পারে। উভয়েই সকলপ্রকার বিশিষ্টতার 
্বরূপশূন্যতা প্রদর্শন করিয়াছেন এবং সৎ, অসৎ ও সদসৎবিলক্ষণ-_ইহার কোনটির 
ছবারাই যে তাহার নির্বচন হয় না ইহা প্রতিপাদ্দন করিয়াছেন । কিন্তু শ্রীহ্র্ষ যেস্থলে 
সকলপ্রকার বিশেষণার্দির অন্তরালস্থিত নিধিশেষ টচৈতন্তকেই একমাত্র সৎপদার্থ 
বলিয়া শ্বীকার করিয়াছেন, নাগাজু'ন সেইস্থলে ম্বরূপশূন্ততাই তত্ব বলিরা স্বীকার 
করিয়াছেন । 

প্রাচীন দার্শনিক সম্প্রদায়ের উপয় অদ্বৈতবাদের প্রভাব £ শঙ্করাচার্ধ উপনিষদদের অদ্বৈত 
প্রতিপাদক অংশগুলিকেই প্রাধান্ত দান করিয়। তাহাদিগকে যুক্তি ও শৃঙ্খলাসম্মতভাবে 
উপস্থাপিত করেন। বৌদ্ধগণকে পরাস্ত করিয়া তিনি যে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠালাভ 
করেন, তাহার ফলে তাহার চিস্তাধার! শৈব, শাক্ত ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভাবধারাকে 
বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। “আগম” ও বিচার-বিবেচনা যে কোন প্রকারের 
অদ্বৈততত্বেরই প্রতিপাদক, এই বিষয়ে তাহারা একমত। কাশ্মীরে বন্ধ 
অছৈতবাদের আবাহন করিয়া শৈববাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন । ফলে শৈবাদৈতের 
সৃষ্টি হয়। তিনি উপনিষদের ব্রন্ধকে শৈব আগমের শিব হইতে অভিন্ন কল্পনা 
করিয়া! শিব ও জীবের তাদাত্ম্য প্রচার করেন। কিন্তু মায়া যে সৎ নহে, ইহা 
হ্বীকার করিতে তিনি প্রস্তত ছিলেন না। মায়া ব্রদ্েরই শক্তিভেদ বলিয়' তাহা হইতে 
অতিরিক্ত নহে। জগৎস্থ্টি এই শক্তিরই পরিণাম । কোন কোন অদ্বৈতবাদদীর মতে 
জগৎ মায়ার পরিথ'ম এবং ব্রহ্মের বিবর্ত, ইহা পুবেই উক্ত হইয়াছে। কাশ্মীরীয় 
শৈববাদ এই মতবাে একমাত্র মায়া অসৎ ইহা! ব্যতিরেকে অপর কিছুই আপত্তিকর 
দেখে না । উপরস্ত শংকর স্বয়ং মায়াকে “মাম়াশক্তি” আখ্যা দান করিয়াছেন । মনস্তাত্বিক 
ব্যাপারে বন্থগুপ্ত নিজ দর্শনকে গৌড়পাদের ন্যায়-_-জাগৃতি, স্বপ্ন ও স্বযুপ্তি__আত্মার এই 
অবস্থাত্রয়ের উপরই ভিত্তি করিয়া রচনা করিয়াছেন। কিন্তু গৌড়পাদ ও শংকর 
“চতুর্থাবস্থা”কেই শুদ্ধ আত্ম! বলিয়া স্বীকার করিলেও, বন্থগ্পত তাহাতে অশুদ্ধতা লক্ষ্য 
করিয়া তাহাকে “আকাশ্ব-ম্বরূপ” বলিয়াছেন। আত্মা হইতে অভিন্ন “শিব” হইলেন 
পঞ্চমাবস্থা | 

শান্ত আগমের দার্শনিক চিস্ত! কাশ্মীরীয় শৈববাদ হইতে ভিন্ন নহে। উভয়ের মধ্যে 
কেবল ধর্মীয় আচার-মনুষ্ঠানগত পার্থক্য দৃষ্ট হয়। 

বৈফবগণের মধ্যে বল্পভাঁচার্য অদবৈতবার্দীরূপে সমধিক প্রদিদ্ধ। “অছৈত” তত্র প্রতি 
নিষ্ঠায় তিনি শংকরকেও অতিক্রম করিতে চাহিয়াছিলেন এবং মায়ার আশ্রয় না করিয়াই 
তাহা গ্রতিপাদনের চেষ্টা করেন। তদনুধায়ী তিনি ন্বপ্রবতিত ভাবধারার *শুদ্ধাদ্বৈত” রূপে 


৩৭২ 


বেদাস্ত--অদ্বৈত সম্প্রদায় ঃ সমদাময়িক অন্বৈতবাদী 


পরিচয় দান করেন । তিনি জীবকে অসৎ না বলিয়া অগ্নিশিখার স্যায় ০ অংশরূপে 
গণ্য করেন। 

শুক অছৈত দৃট্টিভংগী হইতে ত্রদ্বস্ত্রের ভাঙ্রচনা করিলেও দি “ভাগবত” 
বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন । 

অগ্ল্যয় দীক্ষিত নীলকণ্ের ব্রন্মস্ত্রভাত্তের উপর যে টীকা রচনা! করেন, ইতিপূর্বেই 
তাহার উল্লেখ কর] হইয়াছে । অগ্ল্যয় যে কৃতকার্য হন নাই তাহাত্র কারণ 
রামানুজ যেরূপ বৈষ্ণব সম্প্রদ্দায়তৃক্ত একনিষ্ঠ বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী ছিলেন, নীলকঞ্* সেইরূপ 
শৈবসম্প্রদায়ের একনিষ্ঠ বিশিষ্টাদৈতবাদী ছিলেন । 

ইহা উল্লেখ কর! প্রয়োজন যে, অদৈতবাদ শিখধর্মকেও প্রভাবিত করিয়াছিল । 
শিখ সন্ন্যাসীদিগের “উদাসীন” শাখা শংকর মতের সর্বথা অনুসরণ করেন। ক্রন্গস্থক্, 
উপনিষদ ও গীতার উপর রচিত শাংকরভাধ্যগুলির অনুশীলন তাহাদের অবশ্য 
করণীয়গুলির অন্ততম | 


অসসাসমিক অতৈৈতব্াদী 


ভারতীয় ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে শংকর প্রবতিত “্ন্মার্ত” নামক সম্প্রদায় সর্বাধিক 
সম্মনিত। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী তাহার দর্শনের পরম্পরাগত বূপটির পঠন-পাঠন 
অগ্যাবধি সংরক্ষিত হইয়াছে । এই সম্প্রদ্দায়তৃক্ত বিশিষ্ট বিছজ্জনগণ পাশ্চাত্য জগতে 
বিশেষ পরিচিত নহেন। ধাহার।. পাশ্চাত্য জগতে সুপরিচিত, তাহাদের ভাবধারায় 
প্রতীচ্যদর্শনের৪ গভীর প্রভাব দৃষ্ট হয়। ডঃ বাধাকুষ্ণন্‌, শ্রীঅরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ, 
ডঃ ভগবান দাস ও জে. কৃষ্ণমূতি ইহার মকলেই কোন না কোন প্রকারের 
অদ্বৈতবাদী। রাধাকুষ্চন্‌ ও ভগবানদাস জগৎকে সৎ ও অসৎ ব্যতিষক্ত বলিয়া গণ্য 
করেন, এবং শংকরের রচনায় অবশ্ই তাহার কিঞ্চিৎ সমর্থন আছে ( সত্যানতে 
মিথুনীরুত্য )। অপরপক্ষে শ্রীঅরবিন্দ ও রবীন্দ্রনাথ উভয়েই জগৎকে বাস্তবিক সৎ 
বলিয়া গণ্য করেন। অরবিন্দের নিজন্ব চিস্তাধারায় শাক্তবাদ ও কাশ্মীরীয় শৈববাদের 
আমুকুপ্য দৃষ্ট হয় এবং ব্ুবীন্দ্রনাথ আপন ভাবধারার ক্ষেত্রে বৈষ্ণবীয় অহৈতবাদের 
নিকটবর্তী। রবীন্দ্রনাথ চরমত্ত্ব বা! ব্রন্দের ব্যক্তিম্বরূপতা স্বীকার করেন। বাহারা 
মায়াকে সৎ ভিন্ন অন্রূপে স্বীকার করিতে চাহেন না,তাহারা স্বভাবত:ই অনুরূপ সিদ্ধান্তেই 
উপনীত হইয়। থাকেন । অবশ্য রবীন্দ্রনাথ যে শংকরের পরত্রহ্গকে অন্বীকার করিয়াছেন 
তাহা নহে, তথাপি তিনি জীবের পক্ষে এই জাগতিক প্রতিভাসেরই অধিকতর মৃল্যবত্তা 


৩৭৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাঅ দর্শনের ইতিহাস 


ব্যক্ত করিতে চাহিয়াছেন। কৃষ্মৃতি বের “এল 1 ভিতাল' সদৃশ “প্রাণ”কেই ্রদ্ধা্ডের 
কেন্্রন্থিত শক্তি বলিয়াছেন । গান্ধীজির ভাবধারার দার্শনিক পটভূমিকাটিও অদ্বৈত- 
তত্বেরই অন্গপন্থী। এই সকল চিস্তানায়কগণের মধ্যে ব্বাধাকুষ্ণন্ই শঙ্করের একনিষ্ঠ 
অন্থবর্তী। রবীন্দ্রনাথ নিজ চিস্তায় বছলাংশে বৈষ্ণবধর্ম ও প্রেমধর্ম বার! প্রভাবা ন্বিত 
হইম্াছেন। ভগবান দাসের মতে ব্রহ্ম “অহং” মাত্রন্বর্ূপ নহেন, পরস্ত বিষয়ী, বিষয় ও 
তাহাদের মধ্যের নেতিবাচক সন্বন্ধকে অন্তরক্ত করিয়। তিনি “আমি-তাহা-নহি” 
€ অহ্ম্এএতন্‌ ন ) স্বরূপ । 

দার্শনিকগণের মধ্যে প্রতীচ্য' ব্রন্মবাদের দৃষ্টিকোণ হইতে অদ্বৈত-তত্বের প্রতিপাদন 
করিবার প্রবণতা বিশেষ প্রসারলাভ করিয়াছে । শংকরের উপদেেশসমূহের বিবৃতি ও 
ব্যাখ্যার পরিবর্তে তাহারা প্রতীচ্য ধারানুষায়ী চিন্তার সাহায্যেই অছৈততত্ব প্রতিপাদন 
করেন। এই জাতীয় চিস্তানায়কগণের মধ্যে শ্রীকষ্ণচন্্র ভট্রাচার্যই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ । 
তিনি কাণ্টের জ্ঞানের চরমাদর্শ সম্পকাঁয় অজ্ঞেয়বাদদ হইতে আরম্ভ করিয়া ব্রন্মের উপলব্ধি 
কিরূপে সম্ভবপর তাহার প্রতিপাদ্ন করিয়াছেন । উপলব্ধি অবশ্যই কোনপ্রকারের 
প্রকৃত বুদ্ধি হইতে পারে না, পরস্ত রাধাকুষ্ণন্‌ যাহাকে “অথণ্ড বোধি” আখ্যা দান 
করিয়াছেন তদচ্ুরূপ বলিয়াই স্বীকার করিতে হইবে । 


দ্রষ্টব্য 

১) 4৯000815801 0059 73179,009715%7 02191068] 1759888,:015 108656865 যড়বিংশ খণ্ডের প্রথম 
ভাগে প্রকাশিত প্রবন্ধকারের প্রবন্ধ “0 ঢ10081990 87090 01 09009199,0918 1180090058- 
15৪31189” দেখুন | | 

২। দিদ্ধস্ত-লেশ-সংগ্রহ, পৃঃ ৫৭ ইঃ (হরিদাপ গুপ্ত আও সন্স্‌, বারাণসী ) 

৩। এ 

৪ | সর্বদর্শনসংগ্রহ, পৃঃ ১৪৪ € আনন্দাশ্রম সং ) 

& | সিদ্ধাস্তুলেশসংগ্রহ, পৃঃ ১৮৯ 

৬। সিদ্ধাত্ত-বিন্দু, পৃঃ ২৬ € গাইকোয়াড় ওরিয়েন্টাল সিরিজ ) 


গ্রন্থবিবরণী 
রাধাকুঙ্জন্‌, এস্‌__17002%0 16108108090, ২য় খণ্ড 
দাসগুণ্ত, এস্‌, এন্‌--7186০৪5 ০৫ 10190 12111080179 ১ম ও ২য় থণ্ড 
শাস্ত্রী, এস্‌, সুর্ধন রায়ণ--9890108069-1599-8807878005, (50081191) 69208158100 ) 
শাস্ত্রী, অশোৌ কনাথ-_-০৪%-98101:88, 70191806108 
রানু, পি, টি-70০58108 200 78999185 7 1798119019100 8107. 8.0 58188. 


৩৭৪ 


গধদশ গরিচ্ছেদ 
বেদান্ত- বৈষ্ণব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায় সমূহ 
অ। রাঁমান্ুজ ( বিশিষ্টাদবৈত ) 
ভুমিকা 


আধুনিক যুগে বেদাস্তই ভারতবর্ষের প্রাণবন্ত দর্শন | বেদান্ত জনপ্রিয়; কারণ, ইহ 
একই সঙ্গে একটি মতবাদ ও জীবনযাপনের প্রণালী । একদিকে উহা পরমসতা ব্রত্মের 
স্বরূপ সন্ধে দার্শনিক জিজ্ঞালা, আবার অপর দিকে জীবনের সবোত্ম লক্ষ্যরপে বর্ষের 
আধ্যাত্মিক উপলব্ধির সাধন। বেদাস্তের মুখ্য সম্প্রদায় তিনটি--অছৈত, ছৈত ও 
বিশিষ্টাদৈত। এগুলির মধ্যে অদ্বৈত এত প্রসিদ্ধ যে, কখনও কখনও বেদাস্তকে অদ্বৈত- 
মৃত হইতে অভিন্ন বলিয়! গণ্য কর! হয়, এবং দ্বৈত মতের মধ্যে যুক্তি-নিরপেক্ষ ও বস্ত- 
তান্ত্রিক প্রবণতা থাক] সত্বেও, ইহাকে একেশ্বরবাদের শ্রেষ্ট দার্শনিক ব্যাখ্যা বলিয়া মনে 
করা হয়। সমন্বয়মূলক প্রেমের দর্শনরূপে রামাছজের বিশিষ্টাদ্ৈতবাদের গুণ এই ষে, 
উহাতে চরম অদ্বয় ও ঈশ্বরবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হুইয়াছে। অন্যান্য 
সমন্বয়লাধক দর্শনের ন্যায় ইহার স্বদ্ধেও উহার অনুগামী এবং সমালোচক উভয়েই 
ভ্রান্ত মত পোষণ করেন । ধর্মমতরূপে ইহাকে শ্রীবৈষণববাদ বলা হয়। ইহার আধুনিক 
নেতৃস্থানীয় ব্যাখ্যাতাগণের মধ্যে অনেকে উহাকে সগুণ অদ্বৈত অথবা বিশেষণযুক্ত 
অদ্বৈতবাদ নামে অভিহিত করেন, কিন্ত তখন তাহার] ভুলিয়া যান যে, ইহার একটি মূল 
মত এই যে, জীব দ্রব্যও বটে আবার গ্রণও বটে! ্‌ 

দ্বৈতবাদী নির্বন্ধসহকারে বলেন-_জীব এবং ব্রন্ের মধ্যে চিরস্তন বৈলক্ষণ্য ও ভেদ 
রহিয়াছে, ভেদাভেদবাদীর জীব এবং ব্রন্মের সম্বন্ধ ছৈত ও অদ্বৈত উভয়ই, এইভাবে 
ব্যাখ্য1 করিয়াছেন । সর্বেশ্বরবাদী বলেন, “সমত্তই ঈশ্বর অথবা ঈশ্বরই সমস্ত | কিন্তু 
উক্ত বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ এই লকল মত হুইতে পৃথক, কারণ এই মতে ঈশ্বর সর্বভূতে 
অন্তর্ধামীরূপে অনুস্থযত হইয়া আছেন, আবার একই সঙ্গে তিনি বিশ্বাতীতও । সভা ও 
মূল্য এক, এবং ব্রক্মকে ব্রহ্ম বলিবার কারণ এই যে, উহা স্বরূপতঃ অসীম এবং একই 
সে উহা সসীম আত্মার মধ্যস্থ বস্তরটিকে ধ্বংস না করিয়া'উহাকে অসীম করিতে অর্থাৎ 
ব্রদ্মে পরিণত করিতে পারে । তথাপি, বিশিষ্টাদ্বৈত নামের সহিত পরম্পরাগত যে সকল 


৩৭৫ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


ধারণ! জড়িত আছে তাহার .জগ্তা এবং এঁতিহাসিক বিকাশে উহ যে অর্থসমৃদ্ধি লাভ 
করিয়াছে তাহার জন্য এই মতের বিশিষ্টাঘৈতবাদ নাম বজায় রাখ! যাইতে পারে । 

বিশিষ্টাদ্বৈত মূলতঃ ধর্ম-মুলগক দর্শন । এই দর্শনে ঘ্ুক্কি এবং “বিশ্বাস এক হইয়! 
যুক্তিসম্মত বিশ্বাসে পরিণত হয় । ইহার আলোচ্য প্রশ্ন এই, “যাহা জানিলে সব কিছুই 
জানা যায় তাহা কি?” এবং উত্তর এই, “ইহা হইতেছে ব্রহ্ম” ।১ সব্বস্তকে জান। অথব! 
উপলব্ধি করা সম্ভবপর, উহা! অজ্ঞেয় নহে। তৈত্তিরীয় উপনিষদের* বরুণ ও তৎপুত্র ভূগুর 
সংবাদ এই যুক্তিসম্মত বিশ্বাসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ । শিষ্যের মুখ হইতে গুরু এই উত্তর 
বাহির করিলেন যে, ব্রহ্ম অন্নময়, প্রাণময়, মনোময়, বিজ্ঞানময় এবং আনন্দময় 
এবং শিষ্য একপ্রকার আধ্যাত্মিক যুক্তি-প্রক্রিয়াদ্ারা এই কথাগুলির সত্যতা ক্রমান্বয়ে 
পরীক্ষা! করার চেষ্টা করিলেন। 

বেদাস্তের অন্য সম্প্রদায়গুলির ন্যায় বিশিষ্টাছৈতেরও ইতিহাস স্মরণাতীত এঁতিহ্যের 
প্রামাণ্য দাবী করে । ইহা তিনটি প্রামাণ্যের উপর প্রতিষিত, যথা--€১) উপনিষদের 
খষিগণ, (২) বাদরায়ণের বেদাস্তস্থত্র_-ইহাতে খধিদের লাক্ষাৎ অনুভূতিগুলিকে 
স্বশ্ঙ্ঘলভাবে বিন্প্ত করা হইয়াছে (৩) উপনিষদের সার গীতা । বিশিষ্টাদ্বৈতের প্রথম 
এতিহাসিক ব্যাখ্যাতা রামানুজ তদীয় বেদার্থ-সংগ্রহে ও বেদাজ্জ-সুত্রভাস্তয শ্রীভাস্তে 
বলিয়াছেন যে, তাহার মতবাদ প্রাচীন আচার্২-রচিত বোধায়ন-বৃত্তির উপর এবং তৎ- 
পূর্ববর্তী দ্রমিড়, টহ্ক এবং গুহদেবের প্রাচীন উপদেশের উপর স্থাপিত। শ্রীবৈষ্ণব 
সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ মরমী নম্মান্বারের উপদেশের মধ্যেও রামণহুজীয় সিদ্ধান্তের মুল পাওয়া 
যায়। উত্তর-ভারতীয় ভাগবত সম্প্রদায়ের অনুগামী নাথমুণি (জন্ম খুঃ ৮২৪-দক্ষিণ 
আর্কট ) তামিল ভাষায় রচিত আহ্বারদের দিব্য সঙ্গীতগুলিকে তাহার প্রসিদ্ধ উভয়- 
বেদান্ত নামক মতবাদে বেদাস্তের সমস্তরে উন্নীত করিয়াছিলেন । উভয়-বেদাস্তে বলা 
হইয়াছে ষে, শুধু মুখের শব্দ নহে কিন্ত হৃদয়ের ভাষাই যথার্থ আধ্যাত্মিক ভাষা পরবর্তী 
উল্লেখযোগ্য বিশিষ্টাদবৈতমতের উপদেষ্টার নাম আলবন্দার। তিনি নাথমুনির পৌত্র। 
তিনি পঞ্চরাত্রের বৈদাস্তিক ব্যাখ্য? দিয়াছিলেন। তাহার পরেই আসেন রামান্ুজ 
(জন্ম খুঃ ১০১৭ ) তিনি আলবন্দারের বৈদাস্তিক উত্তরাধিকারী ও বিশিষ্টাদৈতের সবশেষ্ঠ 
ব্যাখ্যাতা। শঙ্কর বৌদ্ধ নির্বাণের পুনব্যাখ্যা করিয়াছিলেন এবং এইভাবে তিনি 
অছবৈতের সত্যতা প্রমাণ করিয়াছিলেন । শংকরের পরে আসেন ভাস্কর । “উপাধি ও 
ভেঙাভেষ স্বীকার করিয়া তিনি শংকযের মায়াবাদ খণ্ডন করেন। ভাম্করের পরবর্তাঁ 
যাদব ভেঞ্কাভেদ তত্বটির অধিক বস্তনিষ্ঠ ব্যাখ্য। দিয়াছিলেন। তাহার পর রামান্থুজ 
তাহান্স প্রেমের সমন্বয়মূলক মতবাদঘ্বার! দ্রার্শনিক বিচারকে নৃতন পথে চালিত করেন। 


৩৭৬ 


বেদাস্ত-_বৈধ্ব ( ঈশখবরবাদী ) সম্প্রদীয়সমুহ £ রামানুজ ২ জ্ঞানতত্ব 


তাহার অল্পপরেই উভয়-বেদাস্তে প্রভুও শ্রীরূপে ঈশ্বরের স্বরূপ এবং ভক্তিও প্রপত্তির 
অর্থ-সম্বন্ধে মতদ্বৈধ উৎপন্ন হইয়াছিল । বেদাস্তদেশিক এই উভয় মতের মোটা 
মুটিভাবে সামঞ্তশ্তসাধনের চেষ্ট1! করিয়াছিলেন, কিন্ত পিল্লৈলোকাচাধ তামিল বেদাস্ত, 
একেশ্বরের ধারণা ভগবৎকপার ফলবত্ব৷ এবং ঈশ্বর সেবার (কৈক্বর্য) সামাজিক দিকের 
উপর গুরুত্ব দিয়াছিলেন । 

“ধিনি ব্রন্দকে জানেন, তিনি পরমপুরুযার্থ লাভ করেন” এই উপনিষদ্‌-বাণীতে 
প্রকাশিত তত্ব, হিত এবং পুকুষার্থ এই তিনটি শীকে বিশিষ্টাছৈতবাদ প্রতিপাদন করাই 
ইহার প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি; এবং বর্তমান ক্ষুদ্র প্রবন্ধে বিশিষ্টাছৈতের ব্যাখ্যার 
এই পদ্ধতিই অনুসরণ কর! হইয়াছে । এখানে ব্রহ্ম, অচিৎ ও চিৎ এই তিন সঘস্ততর 
(অথবা তত্বের ) জ্ঞান, ব্রহ্গ-প্রান্তির উপায় (অথবা হিত ) এবং ব্রহ্গপ্রাপ্তির শ্বব্দপ 
( অথবা পুক্ুষার্থ) এই সকল বিষয় আলোচিত হইয়াছে । কাণ্ট দর্শনের মূল প্রশ্নটিকে 
এইভাবে উপস্থাপিত করিয়াছিলেন, “আমি কী জনিতে পারি?” “আমার কী করা! 
উচিত ?” এবং “আমি কী আশা করিতে পারি ?” কিন্তু বিশিষ্টাছৈতের এই পদ্ধতি 
ইহাপেক্ষা অধিক সমীচীন | কারণ, ইহাতে সন্দেহবাদ পরিহার করা হয় এবং অধিবিদ্যা, 
নীতিবিজ্ঞান এবং ধর্মতত্বের সমন্বয় সাধিত হয়। বিশিষ্টাদৈতের ' অধিবিদ্যার মধ্যে 
প্রমাতত্ব ও প্রমাণ সমূহের আলোচনা এবং সত্তাশান্ত অথবা তত্ব-ত্রয়ের আলোচন। 
অস্তভূক্ত। বিশিষ্টাদৈতীয় নীতিবিজ্ঞনে সাধনসমূহ অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞানের উপায় সকল 
আলোচিত হইয়াছে এবং উহার ধর্মতত্বে মুক্তির স্বরূপ ব্যাখ্যাত হইয়াছে। 


শতানতত্ক 


সদ্স্তকে জানা সম্ভবপর, ইহাই বিশিষ্টাদৈতী প্রমাতত্বের প্রধান ধারণা । ইন্দ্রিয় 
প্রত্যক্ষ, অন্ুমিতি এবং ব্রহ্ষজ্ঞানরূপ আধ্যাত্মিক অস্থভূতি এই সবগুলিই “দর্শন” এই 
ব্যাপক অর্থে জ্ঞানের অন্তভূক্ত । সত্তা ও জ্ঞানের মধ্যে সেতুহীন ব্যবধান আছে এইকপ 
বলিলে প্রমাতত্ব অপ্রমাতত্ব হইয়া! পড়ে, এবং সন্দেহবাদ ইহার অনিবার্ধ ফল। কাণ্ট 
পারমাথিক সত্ব! ও প্রতিভাত সত্তার যে বিরোধ স্বীকার করিয়াছেন, ব্র্যাভ্‌লি সঘস্ত ও 
আভাসের মধ্যে যে পার্থক্য দেখাইয়াছেন, এবং শংকর পারমাধিক সত্য ও ব্যবহারিক 
সত্যের মধ্যে যে ভেদ মানিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে একই বিচাব-প্রবণতা স্পষ্টভাবে 
ষ্ট হয়। রামান্থজ ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ, বিজ্ঞান ও দর্শন হইতে আরম্ভ করিয়া' ব্রন্মের অধণ্ 
ও সাক্ষাৎ অনুভূতি পর্যস্ত সর্বস্তরেই জ্ঞানের প্রামাণ্য স্বীকার করিয়া এই সন্বট পরিহার 
করিয়াছেন । ত্রহ্ষই পরম সত্য এইভাবে যুক্তিদ্বারা ক্রদ্মের জ্ঞান. (ব্রন্ম-জিজ্ঞাসা ) 


৩৭৭ 
৪৮ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


হইলে উহা! হইতে পরে ব্রদ্ের অপরোক্ষ অনুভূতি (ব্রন্ধান্ভব ) হয়। জ্ঞান হইতেছে 
সত্তাবিষয়ক নিশ্চয়, এবং নিষেধও তৎপূরববর্তী নিশ্চয় ব্যতীত সম্ভবপর নহে। ক্রন্ষ 
সত্য হইলে, ব্রদ্ধে প্রতিষ্ঠিত জগৎও সত্য এবং আমরা অংশের জ্ঞান হইতে পূর্ণের জ্ঞানে 
উপনীত হইতে পারি । জ্ঞানের সত্যতার নির্ধারক (0102700 ) জ্ঞানের মধ্যেই 
নিহিত। তত্বজ্ঞান সত্য ; উহা! ক্রমশঃ অধিকাধিক সত্যতা লাভ করে এবং পরিশেষে 
উহা পরম তত্বজ্ঞান অর্থাৎ সঘস্তর শাশ্বত মৃল্যরূপে পূর্ণ চরিতার্থতা প্রাপ্ত হয়। এই উদ্দেশ 
সাধনের জন্ রামানুজ ব্রহ্কে জানিবার সর্ব উপায় অবলম্বন করিয়াছেন এবং ধির্ম-ভূত- 
জ্ঞান নামক তত্ব (0:1001915 ), 'অ-পুথক্‌-সিদ্ধ বিশেষণ নামক যুক্তিশান্ত্রীয় নিয়ম, 
'ামানাধিকরণ্য নামক ব্যাকরণের নিয়ম এবং বস্ততান্ত্রিক সংকার্ধ-বাদ ব্যবহার 
করিয়াছেন । 

ধর্ম-ভূত-জ্ঞান'বাদ অর্থাৎ 'জ্ঞান হইতেছে আত্মার গুণ” এই মত বিশিষ্টাদ্বৈতী 
প্রমাশাস্ত্রের ভিভিস্থানীয় তত্ব ; কারণ, ইহ! ছ্বার1 বাহজগৎ, আত্মা ও ব্রঙ্গের স্বরূপ 
স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের পূর্বে আত্মার অন্তিত্ব স্বীকার করিতে হয়; কারণ 
জ্ঞান আত্মার অত্যাবশ্যক গুণ । জ্ঞান কখনও নিজেকে জানিতে পারে না। আত্মাও 
উহার জ্ঞান ভিন্ন হইলেও উহার! পরম্পর হইতে অবিচ্ছেদ্য । আত্মজ্ঞান বলিলে, 
চেতন আত্ম ও আত্মার চেতন এবং চিদ্বন্ত ও ধর্মভূত চৈতন্য এই ছুইয়ের আলোক ও 
তাহার প্রকাশের সায় পার্থক্য স্বীকার করিতে হয়। 

কুর্ধের কিরণ যেরূপ একই সঙ্গে গুণ এবং বর্ণসমূহের আশ্রয়, জ্ঞানও তেমনই 
একই সঙ্গে গুণ ও দ্রব্য। সংসারাবস্থায় জ্ঞান অবিদ্যা দ্বার আচ্ছাদিত এবং কর্মদ্ব!রা 
সঙ্কুচিত হয়; ইহ! বাহাবস্তর প্রকাশক; এবং ইহা সহজাত প্রবৃত্বি হইতে আরম 
করিয়া লোকোত্তর জ্ঞানের স্তর পর্যন্ত, স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক ও বুদ্ধ্যতীত 
মনোবিজ্ঞানে আলে।চিত সর্বমানসিক অবস্থার উৎ্স। জাগ্রত, শ্বপ্ন ও স্বযুণ্তি_ জ্ঞানের 
এই তিনটি অবস্থা মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একই জ্ঞানের প্রকারভেদ; স্থতরাং উহার! 
ধারাবাহিক এবং উহাদের মধ্যে কোন শ্ববিরোধ নাই । যখন জ্ঞান অবিদ্যা। ও কর্ণ 
হইতে মৃক্ত হয় তখন উহা প্রসারিত হইয়া অনন্ত হইয়া যায় এবং ভগবানের অখণ্ড 
চেতনায় (ব্রহ্মাহ্ছভবে ) পরিণত হয়। 

এখন জ্ঞানের ম্বভাবানুসারে (রামান্জের ) প্রমাতত্ব (1156075 ০% 0007006)6 ) 
বিবৃত করা যইতে পারে । আত্মা সদ। স্বপ্রকাশ, এবং কর্মদ্বারা অবচ্ছিন্ন আত্মার এই 
জ্ঞান বাহজগৎকে বিবিধ বিষয়রূপে অথবা সমগ্ররূপে প্রকাশ করে। সুতরাং অবধারণ 
সবপ্রকাশ আত্মার জ্ঞান-ক্রিয়া দ্বার জনিত, উহা দৃশ্ঠ ও স্পৃশ্ত জগৎ হইতে নিক্ষিয়ভাবে 


৩৭৮ 


বেদাস্ত--বৈষব ( ঈীশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ রামানুজ' £ জ্ঞানতন্ব 


প্রাপ্ত মানদিক সম্মুদ্রণ (115757:5951025 ) নহে। সর্বপ্রকার জ্ঞানই সবিকল্প অথবা 
বিশেষণযুক্ত। উহা! কখনও নিধিকল্প অথবা! ভেপহীন, নিধিশেষ প্রত্যক্ষ নহে। 
রামান্জের মত এই যে, বাহ্‌ বস্ত জ্ঞানের বিষয় কিন্তু জ্ঞানীয় ধর্ম নহে এবং উহা বস্ত 
সকলকে প্রকাশ করে । এই মতের বিশেষ গুণ এই ষে, উহা সরল এবং চরম বস্তবাদ 
এবং চরম জ্ঞানবাদে যে অচলাবস্থা উৎপন্ন হয় তাহা পরিহার করিতে পারে । বস্তবাদ 
বলে যে, বিষয় জ্ঞানের নিকট প্রদত্ত, কিন্তু চিন্তাধারা নিমিত নহে-_-এই দিক হইতে 
বস্তবাদ সমর্থনের যোগ্য ; জ্ঞানবাদ শ্বীকার করে যে জ্ঞান ইন্দরিয়াুভূতির পূর্ব হইতেই 
অস্তিত্ববান্‌ এবং বিষয় যে জ্ঞানের সম্পূর্ণ বাহিরে এই কথা অস্বীকার করে-_জ্ঞানবাদের 
এই মত যথার্থ। চিৎ ও অচিৎ-এর বিষয়ী-বিষয় সম্বন্ধ হইতে জ্ঞানের উদ্ভব ; এবং 
প্রত্যেক অবধারণ-জ্ঞ।নের অস্তিম উদ্দেশ্ট অথবা বিশেষ্য হইতেছে সমগ্রসত্তা । পরযাত্মাই 
সর্ব চিস্তক এবং চিন্ত্য বিষয়ের মধ্যে প্রকাশমান, অথচ তিনি তাহাদের উর্ধে । 

বিচার ও বস্তর দিক হইতে অবধারণাত্মক জ্ঞানের কি অর্থ তাহ! অ-পুথকৃ-সিদ্ব- 
বিশেষণবাদ অর্থাৎ ব্রহ্মবিশেষণতাবাদ দ্বার! স্পষ্টভাবে প্রদশিত হয় । “মানুষ বিচার- 
বুদ্ধিশীল” এই বাক্যে বিধেয় পদার্থটি উদ্দেশ্ত পদার্থের অবিচ্ছেদ্য অথবা স্বরূপ-গত ধর্ম, 
কিন্তু উদ্দেশ্ট পদার্থটি শুধু ধর্মঘটিত নহে, কিন্তু উহা হইতেও অধিক কিছু । গুণ দ্রব্য 
হইতে পৃথক্‌ হইলেও দ্রব্যে থাকে এবং ভ্রব্যত্বের অধিকারী । জ্ঞাতারূপে জীবাত্মা একটি 
নিত্য চিন্তাশীল বিষয়ী এবং চৈতন্য উহার অবিচ্ছেগ্চ গুণ (প্রকার )। বিচার সত্তার 
উপর প্রতিষ্ঠিত এবং প্রত্যেক বাক্যের অস্তিম উদ্দেশ্ট হইতেছে সমগ্র সত্বা। বিচারের 
দিক হইতে যাহা বিষয়ী, তাহা হইতেছে চৈতন্তগুণযুক্ত চিদাত্মা ; এবং সততার দিক হইতে 
যাহা বিষয়ী, তাহা হইতেছে আত্মার আত্ম! অথব1। অন্তিম দ্রব্য (প্রকারী ) রূপে ব্রহ্ম । 
যেমন জ্ঞান হইতেছে ভ্রব্য-গুণাত্মক, তেমনই চিদাত্মাও নিজে ভ্রব্য আবার ব্রন্মের গুণ 
বা বিশেষণ । বিচার-কারী অহংবরূপে জীবাত্মা! হইতেছে ব্রদ্ষের প্রকার, কিন্তু নৈতিক 
কর্তারপে এই অহ্‌ম্‌ হইতেছে একটি বিশিষ্ট স্বরূপ চিদণু (20290 )। জীবাত্মা একই 
সঙ্গে একটি চেতন অবয়বী এবং ব্রন্মের একটি অবয়ব । 

ব্যাকরণের সাম।নাধিকরণ্য* নিয়ম এবং মীমাংসার শব্দার্থ বিষয়ক শক্তিবাদ দ্বারাও 
এই একই সত্য পরিষ্ফুট করা হইয়! থাকে । প্রথম নিয়মান্থুসারে কোন বাক্যে ভিন্ন 
ভিন্ন অর্থবোধক শবগুলি একই পদার্থের নির্দেশক, ষথা__“ইনি দেবদত্ত' | এই বাক্যের 
শব্দগুলির অর্থ বিভিন্ন হইলেও উহার! একই পদ্দার্থে আছে এবং উহাতে যে অভেদ ব্যক্ত 
হয় তাহা ভেদবজিত নয়, ভেদযুক্ত । মীমাংসা-মতাছ্গসারে জাতি ও গুণবোধক 
শবসকল ক্রমান্বয়ে ব্যক্তি ও গুণীবোধকও বটে 3 উদ্দাহরণম্বরূপ “ইহা! একাটি গরু” এবং 


৩৭৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


“তুমিই তিনি” এই উপনিষৎ বাক্য । এক দ্রব্য অপর দ্রব্যের শরীর অথবা ধর্ম হইতে 
পারে; এবং শরীরবোধক শব শরীরী অথবা আত্মাকেও বুঝাইতে পারে। শেষের 
উদ্বাইরপটিতে “তুমি” এই শবটির অর্থ (শরীররূপে ) জীব বুঝাইলেও ( শরীরীরূপে ) 
ব্রধ্ধকেও বুধাইতে পারে । এইভাবে বেদাস্তের চরম তত্বের দৃষ্টিতে, বস্ত অথবা ব্যক্তি 
অথবা দেবতাবোধক সর্ব শবই সকলের উতৎপতিস্থল, আশ্রয় এবং চরম আত্মারূপে 
ব্রহ্ধকেও বুঝায় । রি 


প্রামাশ্যন্থাছে 


বিশিষ্টাদৈত মতান্থসারে শুধু সঘস্তরই জ্ঞান হইতে পারে, এবং কেবল-নিষেধ* বলিয়া 
কিছু নাই । পরমতত্ব মায়ার বিরোধী ব্রহ্ম নহে, কিন্তু উহ1 হইতেছে ব্রহ্মময় ; এবং 
যেহেতু ব্রহ্ম সত্য; অতএব উহাতে প্রতিষ্ঠিত জগৎও সত্য । সত্তা ও মূল্য ( কল্যাণ) 
পরস্পর হইতে অভিন্ন এবং ষে বস্ত যত বেশী সৎ ততই উহা বেশী সত্য । অচিৎ-বস্ত 
চির পরিবর্তনশীল এবং উহ।কে অস্থির অথব1 অসৎ বলা হয় । চিৎ বা আত্মা হইতেছে 
নিতা। অবশ্ত ইহার জ্ঞান ইহার কর্মাসারে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয় । এবং উহাকে 
স্থির অথবা সত্য বলা হয় । কিন্ত ব্রদ্ধ হইতেছেন নিত্য, শুদ্ধ এবং পূর্ণ। উহাই চরম সত 
(সত্যশ্ত সত্যম্‌)। প্রত্যেক সত্যই সত্য ; এবং উহা নিজের স্বরূপ অধিকাধিক প্রাপ্ত 
হইয়া সম্প্রসারিত হইয়া পরম সত্যে পরিণত হয়। ব্রহ্মই এই পরম সত্য, কারণ উহাই 
একমাত্র সঘস্ত যাহা সর্ববস্তরর সত্তারও সত্তারূপে উহ্াদ্দিগকে ধারণ করিয়া আছে। 
বিশিষ্টাছৈতবাদে শ্থীয় মুখ্য সিদ্ধান্ত সমর্থনের জন্য যতদূর সম্ভবপর কার্ধকরত্ববাদ, 
বস্তবারদ এবং জ্ঞানবাদ প্রভৃতি প্রামাণ্য সম্বন্ধীয় সর্বপ্রকার মতেরই সাহাধ্য গ্রহণ কর] 
হুয়। সাধারণতঃ প্রমার (সত্যের ) এইরূপ লক্ষণ ধর] হয় ষে, বস্ত যেইরূপ সেইরূপে 
উহার জ্ঞান এবং সে জ্ঞান জীবনের ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধন করে | বিষয়ের স্বরূপ 
যদি ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষের অনুরূপ ন! হয়, তাহা হইলে এই প্রত্যক্ষজ্ঞানকে ভ্রান্ত বলিয়া! 
পরিত্যাগ কর! হয়। শক্তিকে রজত বলিয়! মনে কর এইরূপ ভ্রাস্তির একটি উদাহরণ । 
মরীচিক' প্রভৃতি স্থলে কার্ধকরত্তের পরীক্ষা উপযোগী । মরীচিকা মিথ্যা; কারণ, ইহা 
তৃষ্ণানিবারণরূপ ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধন করিতে অপমর্থ। স্বপ্ন হইতেছে “কর্ম” বূপ 
নৈতিক নিয়ম দ্বারা জনিত মনের বাস্তবিক অবস্থা । জ্ঞান বিশুদ্ধ হইলে উহা! ব্রহ্মকে 
সাক্ষাৎ ভাবে উপলব্ধি করিতে পারে এবং এইভাবে পূর্ণত! লাভ করিতে পারে। কিন্ত 
ংসারাবস্থায় জ্ঞান অপূর্ণ থাকে । জ্ঞানের এই অপূর্ণতা প্রত্যক্ষ অঙ্গমান এবং শান্ত 
এই তিনপ্রকার জ্ঞানের প্রত্যেকটিতেই স্থুম্পষ্ট। এই তিনটির কোনওটিতেই জ্ঞানের 


৩৮৩ 


বেদাস্ত-_বৈফব ( ঈশ্বরবাদী ) য্প্রদায়সমূহ £ রামানুজ £ তত্ববিদ্ত। রি 


পরিসমাপ্তি হয় না, কিজ্ঞ উহারা হইতেছে জ্ঞানের উচ্চ হইতে উচ্চতর ভব । 
ইন্ডরিয়দ্বারা যে জ্ঞান লব্ধ হয় উহা আংশিক, তথাপি ইহাতে আমরা যেটুকু জানিতে 
পারি তাহাই বিশ্বাসযোগ্য । অন্ুমানে কার্ধকারণসম্বন্ধের ষথার্থত৷ প্রতিপাদ্দন কর? হয় 
এবং দার্শনিক দৃষ্টিতে কারণ যে হেতুর সহিত একং সর্বশেষে জ্ঞানের অধিষ্ঠানের সহিত 
অভিন্ন তাহাও প্রমাণ করা হয়। প্রত্যেক স্থলেই প্রমা হইতেছে সত্যের দিকে 
অধিকাধিক প্রগতি এবং উহা শুধু অবিরোধ এবং.বাধেত্র উপর প্রতিষ্টিত নহে । অবিদ্ধা। 
ব্রন্মের স্বরূপস্থ আবরণ নহে, কিন্তু উহা হইতেছে কর্ম। এই অবিদ্যা জীবের একটি 
দোষ বা অপুর্ণত1 এবং যখন জীব এই অপূর্ণ ভাকে দূর করিতে চেষ্টা করে, তখন সে ব্রহ্মকে 
পাইতে চাহে অথব! মমুক্ষু হয়। 


তত্বন্বিচ্তা 


বিশিষ্টাদ্বৈতীয় তত্ববিদ্ধার মুখ্য সিদ্ধান্ত এই যে, অধিবিগ্যার চরমতত্ব এবং ধর্মের 
ঈশ্বর পরস্পর হইতে অভিন্ন। সাধারণতঃ নিগুণব্রদ্ষের অর্থ এইরূপ করা হয় 
যে উহ] সন্বন্ধাশ্রয়ী বিচারের ছ্ৈতভাবের উধের্ব; এবং সগ্ণ অথব1 ইঈশ্বরবিজ্ঞানের 
পুরুষরূপী ঈশ্বর হইতেছেন পরমতত্ব সম্বন্ধে সাধারণ লোকের চিন্তায় সর্বোচ্চ 
ধারণ; কিন্তু বিশিষ্টাদ্বৈত মতে এই নিগুণ ও সগুণ ব্রন্মের ভেদ অস্বীকার করণ হয়। 
ভাস্কর ও যাদবের ভেদাভেদ সম্প্রদ্ায়গুলিতে শ্রুতি, যুক্তি ও প্রত্যক্ষের সাহায্যে 
এই ছুইটি দৃষ্টির মধ্যে বিরোধ প্রদর্শন কর! হয় এবং যে নিগুণ ব্রন্মের ধারণায় সভা! ও 
অসত্তাকে এক করিয়া ফেলা হয়, তাহাকে শুধু বিমূর্ত চিন্তার ফল বলিয়। প্রত্যাখ্যান 
কর হয়। যদি শ্রুতি প্রথমে সগুণ ব্রন্ষের বিধান করিয়া পরে তাহার নিষেধ করে, 
তাহা হইলে উহ নিজে মূর্থ বলিয়া প্রতিপন্ন হইবে। নিগুণ-্র্ম স্বীকার করিলে 
নীতি ও ধর্মবিষয়ক চেতনার অস্তিত্বই অস্বীকার কর হয়। (“অস্থুল, অহ্ত্ব ইত্যাদি) 
শ্রুতির নিষেধ বাক্যগুলি দ্বার] সমগ্রসত্তার সাস্ততা! নিষিদ্ধ হইয়াছে, সাস্ত বস্তুর নিষেধ 
করা হয় নাই। ব্রহ্ম পরিচ্ছিন্ন বস্তৃতে আছেন, কিন্তু নিজে পরিচ্ছিন্ন নহেন ; এবং ইন্দ্রিয় 
প্রত্যক্ষে উপলন্ধ দেশ ও কালের জগৎ যদি মিথ্যা ও অসৎ হইত তাহা হইলে বিশ্বমিথ্যাত্ব- 
বাদ ও শৃশ্বাদই অনিবার্ধ হইত। রামান্ুজ ভাস্করকৃত ছ্বেতবাদের নিরাকরণ গ্রহণ 
করিয়াছেন, কিন্তু ব্রদ্দের উপাধি আছে ভাক্করের এই মত ঈশ্বরে অপূর্ণতা আরোপ করায় 
উহাকে সর্দোষ৬ বলিয়া! খণ্ডন করিয়াছেন । প্লোটিনাস্‌, ম্পিনোজ! ও হেগেল প্রভৃতি 
দ্ার্শনিকের পাশ্চাত্য ব্রহ্মবাদগুলির বিশিষ্টাদ্বৈত অপেক্ষা ভেদাভেদবাদের সহিত অধিক 
সাদৃশ্ত আছে । এক হইতে বন্ুর নিঃসরণ হয় প্রেটিনাসের এই মত, দ্রব্য ও তাহার বু 


৩৮১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


প্রকার সন্বন্ধীয় স্পিনোজার দর্শন, পরস্পরবিরুদ্ধ তত্বসমূহের মিশ্রণরপ হেগেলীয় যত-_ 
এই সবগুলিই ভাস্করসম্মত উপাধিবাদের পাশ্চাত্য বূুপভেদ; এমন কি বোসাছেটের 
বিশেষণবাদও ব্রন্ধে অপূর্ণতা আরোপ করে এই দোষে ছুষ্ট। সর্বেশ্বরবাদ বলিতে যদি 
এমন বুঝায় যে এই মতে ব্রন্মের বিশ্বাতীতত্ব অক্ষু্ না রাখিয়া উহাকে বিশ্বের 
সহিত অভিন্ন বলিয়া! মনে কর! হয় তাহা হইলে কোন বৈদাস্তিক সম্প্রদায়কেই সব্বেশ্বর- 
বাদী বলাবষায় না। বেদাস্তদর্শনের ইতিহাসে শংকরের যুগ হইতে রামান্থজের যুগ পর্যন্ত 
ক্রমিকধারায় বেদাস্ত মতে এই সকল পরিবর্তন ঘটিয়াছে । শংকরের মিথ্যা-উপাধি মতের 
পর ভাস্করের সত্য-উপাধি মত এবং যাদবের পরিণামবাদ ও নিম্বার্কের ছৈতাছৈতবাদের 
পর রামানুজের বিশিষ্টাদ্ৈত আবিভ্ত হইয়াছে ; এবং এই বিশিষ্টাদৈতবাদে জীবনের 
ভ্রান্তি ও দোষগুলির জন্ত সাস্ত জীবকে দায়ী করা হইয়াছে ।" কিন্তু বাস্তবজীবনে 
অদ্বৈতৈর অনুশীলন করিতে গিয়া যে শংকর বাস্থদেব অথব! সর্বাত্মার উপাসনা 
করিয়াছেন, তাহার সহিত রামান্ুজ অথবা প্রোটিনাসের অধিক পার্থক্য নাই । সমাধি- 
সুখের সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ পাশ্চাত্য দার্শনিকদের মধ্যে প্লোটিনাস রামানুজের নিকটতম । 

রামানুজ ব্রহ্মকে পরমতত্ব বলিয়া মনে করেন। ব্রহ্ম হইতেছেন সমগ্র সত্তা এবং 
সত্য, মল, সৌন্দর্য ও আনন্দরূপ নিত্য গুণ অথবা পরম মৃল্যসমূহের আশ্রয় । অদ্বিতীয় 
এবং অনবদ্য সঘ্স্তরূপে ব্রহ্ম পূর্ণ; এবং তাহাতে সর্বকল্যাণতম গুণ বিদ্যমান ( সত্যম্‌, 
জ্ঞানম্‌, অপহতপাপ্রত্বম্‌,* হ্বন্দরম্‌ ও আনন্দম্‌)। এইভাবে ব্রহ্ম অধিবিদ্যা, নীতিশাস্তর 
সৌন্দ্ধতত্ব এবং রহম্তবাদের সর্ধোচ্চ আধ্যাত্মিক প্রয়োজন চরিতার্থ করেন । 

সত্যম্” শব্ধ ছারা এইরপ ব্যক্ত হয় যে ব্রহ্ম হইতেছেন প্রকৃত সব্বস্ত, অর্থাৎ তিনি 
সত্যেরও সত্য, অর্থাৎ তিনি সংসারী জীব ও নশ্বর প্রকৃতি হইতে ভিন্ন | তিনি পরিবর্তন 
ও পরিণামের অধিষ্টানীভূত সত্তা, তিনি হইতেছেন সেই এক যাহা দ্বার] বনুর ব্যাখ্যা হয়। 
তিনি কালপ্রবাহস্থ নিত্য তত্ব । তিনি শুদ্ধ সত্তা, এক, অথব1 কালাতীত নহেন। ব্রহ্ম 
জ্ঞানরূপ এবং জ্ঞানবান্‌, তিনি প্রকাশসমূহের প্রকাশ (জ্যোতিষাং জ্যোতিঃ)। তিনি 
স্ব-সন্বদ্ধ, কিন্তু নিষেধ-প্রক্রিয়াদার! প্রাপ্ত নিবিষয়, শুদ্ধ জ্ঞান নহেন, তিনি আনস্ত্যগুণ- 
সম্পন্ন অনস্ততত্ব €( অনস্তম্‌ )। ব্রঙ্গকে শরীরী* বল! হইয়া থাকে | এই শব্দটি একটি প্রতীক- 
রূপে ব্যবহৃত নাম; ইহার অর্থ এই যে, ব্রঙ্গ হইতেছেন সর্ববস্তর আধার, নিয়স্তা এবং 
গম্তব্যস্থল ( শেষী )। তিনি এই ভ্রিতয়ের এক্য।১* ব্রন্ধ হইতেছেন চিৎ ও অচিৎ 
সর্ববস্ত্র উৎপত্তিস্থল এবং তাহাদের অস্তর্যামী, উহাদের অস্তিত্ব ব্রদ্মেরই তুষ্টিসাধনের 
জন্য । বৃহদারণ্যক উপনিষদের অন্তর্যামিবিষ্তাতে এই তত্প্রতিপাদক প্রধান বাকি 
আছে £ “যিনি জীবের মধ্যে, জীবের সহিত বাস করেন, যাঁহাকে জীব জানে না, জীব 


৩০২ 


বেদাত্ত-_বৈষ্ৰ € ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রর্দায়সমূহ £ রামান্ুজ £ তত্ববিছা। 


যাহার শরীর এবং তাহাকে যিনি ভিতর হইতে নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনিই আত্মা, অন্তর্ধামী 
এবং অমৃত ।১১ তাহাকে কেহ জানে না। তথাপি তিনি মন এবং ইন্জ্রিয়ের সাহাষ্য 
ছাড়াই জানেন। তিনি ছাড়া অন্য কোন জ্ঞাতা নাই । অন্য সব কিছুই মন্দ” । ব্রহ্ম 
আমাদের জীবনের জীবন, তিনি অন্তর্ধামী, তিনিই উপায় এবং উপেয় । তিনি আধার 
অর্থাৎ আমাদের সত্তারও সত্তা, তাহাতেই আমরা বাস করি এবং কর্ম করি; তাহাতেই 
আমাদের অস্তিত্ব। তিনিই সর্ধবস্ততে অনুন্যত, তাহাদের অধিষ্ঠান এবং তিনিই 
তাহাদের অন্তঃস্থ তাৎপর্য । আধ্যাত্মিক সংযোগের জন্ত ঈশ্বর ও জীবের যে ঘনিষ্ঠ সপ্বন্ধ 
অত্যাবশ্ক তাহ এই ধারণা দ্বারা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয় এবং ইহাতে সর্বেশ্বরবাদের দিকে 
যাওয়ার প্রবণতা পরিহার করা হয়। এই মতে জীব ও ঈশ্বরের (আত্মা ও পরমাত্মার ) 
ভেদ স্বীকৃত হইলেও এরূপ বল! হয় না ষে উহার পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন । ব্রহ্ম জীবের 
নিয়ন্তা এই ধারণ! দ্বারা তাহার বিশ্বাতীতত্বের উপর জোর দেওয়া হয় এবং উহা! নৈতিক 
ধর্মানুষ্ঠানে অনুপ্রেরণা দেয় । ইহাতে আমরা পূর্বমীমাংসায় ব্যাখ্যাত কর্তব্যপালনের 
বৈদিক আদেশ হইতে বিশ্বের চরম নিয়ন্তারূপে ঈশ্বরের বৈদাস্তিক ধারণায় উপনীত হই। 
আধারবূপে ব্রহ্ম আমাদের অভ্তরাত্মা, কিন্তু নিয়স্তারপে তিনি বিশ্বাতীত শাসনকতী, 
পবিভ্র এবং পূর্ণ এবং সেইজন্য তিনি ইন্দ্রিয়পরায়ণ এবং পাপমগ্ন মানুষ হইতে ভিন্ন। 
বিশ্বের নৈতিক শাসনকর্তারূপে ঈশ্বর জীবকে তাহার কর্ম অনুসারে সুখ ছুঃখ প্রদ্দান 
করেন এবং ধর্মের এশ্বরিক নিয়মের মধ্যে কোনপ্রকার যথেচ্ছাচার এবং নিষ্টরতা নাই। 
যথা কর্ম তথা ফল-_-এই নিয়মটি গণিত এবং আইনশাস্ত্রের নিয়মের মত, এই নিয়মের 
অধীনে থাকিলে উদ্ধারের কোন অবকাশ অথবা আশা থাকে না। নৈতিক ধর্মরূপে 
বিশিষ্টাদবৈতবাদে ঈশ্বরকে শুধু জগতের শাসনকর্তা বলিয়া না ভাবিয়া জগতের রক্ষক 
বলিয়াও ভাবা হয়। কর্মের নৈতিক নিয়ম কপার ধর্মে চরিতার্থতা লাভ করে, শুধু মমতা 
লাভ করে ন1। ঈশ্বরের স্ষ্টিপ্রেরণ। কৃপাদ্বার সঞ্চালিত হইয়! বিধি ও প্রেম (নারায়ণ ও 
শ্রী) এই দ্বিবিধ আকারে পরিণত হয়।১২ কৃপাপরবশ হইয়! ঈশ্বর পতিত জীবকে উদ্ধার 
করিবার জন্য বিশ্বের সঙ্কটকালে মানুষের মধ্যে অবতীর্ণ হন।১৩ অবতার গ্রহণের 
প্রক্রিয়াতে পরব্রহ্ম কপার অপর তিনটি পূর্ণাল রূপ ধারণ করেন১৪-__ইহারাও সমপরিমাণে 
বাস্তব এবং মৃল্যবান। এই রূপগুলি হইতেছে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের বিশ্বলীল৷ অথবা 
ক্রীড়ার উপভোক্ত1 অনস্ত অথব! বিশ্বাত্মারূপ ঈশ্বর ; সর্বজীবের হৃদয়ে বিদ্ধমান অভ্তর্ধামী 
--সকলেই তাহাকে সাক্ষাৎভাবে অনুভব করুক ইহাই এই রূপ ধারণের উদ্দেশ্ত ; এবং 
উপাসনার জন্য মন্দিরস্থ দেবত1। পূর্বনিরিষ্ট নারায়ণ ও শ্রী এবং এই তিন রূপ মিলিয়া 
ত্রন্মের পঞ্চ গ্রকট রূপ । 


৩৮৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


' ব্রদ্ষকে শেষী বলার তাৎপর্য এই যে, ঈশ্বর হইতেছেন জগতের প্রাপ্তব্য আদর্শ । জীব 
(চিৎ) ও প্রকৃতি (অ-চিৎ)র অস্তিত্ব ঈশ্বরের তৃথ্থির জন্য ; এবং ঈশ্বর একই সঙ্গে 
উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্ঠপ্রান্তির উপায়। এই আত্মজ্ঞান এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক 
্বাধীনতার দরুণ জীব উপলদ্ধি করে যে, পরমাত্মাই জগতের সর্বকর্মের প্রকৃত কর্তা এবং 
অহঙ্কার পরিত্যাগপুরবক ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়। তাহার জীবোদ্ধারের ইচ্ছার 
সহিত নিজের ইচ্ছাকে মিলাইয়1 দেয়। আগ্মজ্ঞ জীব বলে, “আমি আছি তথাপি আমি 
নয়, কিন্ত আমাতে বিদ্যমান ঈশ্বরই আছেন।” এই দৃষ্টিতে মানুষের স্বাধীনতা এবং 
ঈশ্বরের স্বাধীনতার বিরোধ দূরীভূত হয় । 

ব্রহ্মকে ভুবননুন্দর অথবা চরম সৌন্দর্যবান্‌ বলিয়া! বর্ণন! কর! হইয়াছে । তিনি 
সত্য ও কল্যাণন্বর্ূপও বটে, তথাপি তাহার সাক্ষাৎ অনুভূতির জন্য প্রথম বর্ণনাটি অধিক 
আবশ্তক | বিশিষ্টাদৈতের সৌন্দ্ধতত্ব ভাগবত গ্রন্থে এবং আলন্বারগণের স্বর্গীয় সঙ্গীত 
সমূহে পরম শ্রদ্ধার সহিত বাঁণত হইয়াছে । এই সৌন্দধতত্বে যে শ্রীরুষ্ণ জীব সকলকে 
মুগ্ধ করিয়া স্বীয় সঙ্গদ্বার1 তাহাদের দেহজ কামন! দূর করেন, সেই শ্রীকষ্ণরূপে ব্রন্দের 
ত্বরূপ প্রদশিত হইয়াছে । 

ইহা! হইতে বুঝ যায় যে, বিশিষ্টাদ্বৈতের ব্রন্দসন্বন্ধীয় ধারণা অদ্বৈতবাদ, সর্বেশ্বরবাদ 
এবং পরমেশ্বরবাদ হইতে পৃথকৃ। এই মতকে উপাধিযুক্ত অদৈতবাদ, সবিশেষ ব্রক্গবাদ 
অথবা সমগ্র বিশ্ব একটি চেতন অঙ্গী এইরূপ একতত্ববাদ বলিয়া ব্যাখ্যা করিলে ভূল করা 
হয়। ইহা বেদান্তের একটি সমন্বয়মূলক দর্শন | অন্তান্য দর্শন ও সাম্প্রদায়িক মতে যাহা 
কিছু ভাল এবং সত্য তাহা! গ্রহণ করিবার মত ইহার ব্যাপক উদার দৃষ্টি আছে, তথাপি 
ইহাকে বিভিন্ন প্রকার মতের সংগ্রহ-মান্র মনে করিলে সঙ্গত হইবে না। ইহাতে চরম 
একতত্ববাদ ও বহুতত্ববাদের এবং ঈশ্বর হইতেছেন শাস্তা এবং ঈশ্বর হইতেছেন ভ্রাতা 
এই ছুই বিভিন্ন মতের সামপ্রস্ত সম্পাদন কর] হইয়াছে । বিশিষ্টাদৈত দর্শনে উপনিষদের 
ব্রহ্ম অথবা! নারায়ণকে পাঞ্চরাত্রের বান্থদেব, পুরাণসকলের ঈশ্বর, ইতিহাসসমুহের 
অবভারগণ এবং অতীন্দ্রিয় অনুভূতিবাদের সুন্দরের সহিত এক বলিয়া মনে করা 


হইয়াছে। 
ব্রিশ্র-তন্জ 


নিযমান্ুবত্তিতার যাস্ত্রিকতা এবং নৈতিক উন্নতির উদ্দেশ্তমূলকত্ব ও আধ্যাত্মিকতা 
এই ' সবগুলিই কার্কারণ সম্বন্ধের বিভিন্ন রূপ এবং উহার এই সমগ্ররূপের উপর 
বিশিষ্টাছৈতের বিশ্ব-তত্ব প্রতিষ্িত। জগত্ব্যবস্থার শরষ্টা, পালক এবং ধ্বংসকর্তারপে 


৩৮৪ 


বেদাত্ত-_-বৈষণব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদ্দায়সমূহ ২ রামানুজ £ বিশ্বতত্ব 


ব্রহ্ম উহান বিশ্বান্ন্থ্যত এবং বিশ্বাতীত মূল কারণ। শুন্ঠ হইতে জগতের স্ুটি হয় নাই, 
স্টিক অর্থ হইতেছে বীজাবস্থা হইতে বাস্তব অবস্থায় পরিণতি ( সত-কার্ধবাদ )। 
কালিক দৃষ্টিতে এবং যৌক্তিক দৃষ্টিতে কার্ধ-পদার্থ কারণ-পদার্থের সহিত অবিচ্ছিন্নভাবে 
বিদ্যমান । একের সহিত অন্টের কোন বিরোধ নাই। ধর্মের ক্ষেত্রে এই নিয়ম 
প্রয়োগ করিয়া বেদাস্তী ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হুন ষে, ব্রদ্ধষকে জানিলে সব কিছুই জান! 
হয়। অদ্বিতীয় সন্বস্ত বু হইতে ইচ্ছা করেন এবং নিজের অস্তঃস্থ হ্িপ্রেরণা দ্বার! 
নামরূপাত্বক জগতে পরিণত হন। হ্যট্টির পূর্বে ঈশ্বর নাম ও রূপের ভেদশূন্যা অবস্থায় 
থাকেন এবং স্থ্টির পরে ইনিই দেশকালের অনস্ভগৎ এবং জীবসমূহের বিভিন্ন আকারে 
নিজেকে বিভক্ত করিয়া! উহাদের অন্তরাত্মাক্ণপে বর্তমান থাকেন ।১৬ এই সুশৃঙ্খল বিশ্ব 
জড় ও নৈতিক নিয়মের অধীন এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাদ্বারা বিধৃত। ধর্মের উপর অধর্সের 
আধিপত্য ঘটিলে ঈশ্বর জগৎ সংহার করেন এবং এইভাবে অমঙ্গল নিবারণ করেন । 
জীবকে উদ্ধার করিবার জন্য ঈশ্বর জীবের অকল্যাণ করিবার ক্ষমতা কিয়ৎকালের জন্য 
স্থগিত রাখেন ; শেষবিচারে শাস্তি (দণ্ড) ও ঈশ্বরের দয়ারই ফল বলিয়! প্রতিভাত 
হইবে |১৭ স্থষ্টি ও সংহার অনস্তকাল একের পর এক চক্রাকারে ঘটিয়। থাকে। 
জীবসমূহের মুক্তিই সমগ্র সংসার-প্রবাহের উদ্দেশ্ঠ | 

কার্যকারণ সন্বন্ধের অর্থ এই যে, পরিবর্তন সত্বেও অবিচ্চিন্নতা অক্ষুণ্ন থাকিবে । 
প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে, অর্থাৎ এমন পরিবর্তন ঘটে যাহাতে বীজাবস্থা অভিব্যক্তাকার 
ধারণ করে এবং কারণ কার্ষের সহিত অবিচ্ছিম্নভাবে সংযুক্ত থাকে । পূর্ণতা। লাভের জন্য 
প্রফত্ব করার ব্যাপারে জীবের নৈতিক স্বাধীনতা আছে। কেবল জীব নিজেই এই 
ঘাধীনতার একমাত্র প্রতিবন্ধক) জীবের আধ্যাত্মিক উন্নতির সহিত প্রকৃতির ক্রিয়া 
গুলির সামগ্রস্ত ঘটাইয়! জীবকে স্বীয় স্বভাবের অন্থব্ূপ করিয়া! গঠন (তন্ময়) করাই 
ঈশ্বরের .অস্তংস্থ উদ্দেশ্য । প্রকৃতির অভিব্যক্তির প্রক্রির! সম্বন্ধে বিশিষ্টাদৈতবাদের মত 
সাংখ্য মতের ন্যায় । কিন্তু এই মতে ঈশ্বর অথব' পুরুষোত্বম নামক যড়বিংশতিতত্ব স্বীকার 
করিয়া সাংখ্য মতের অপূর্ণতা দূর কর] হইয়াছে । এই পুরুষোত্তম হুষ্ট জগতের অস্তরে 
শরীরী অথবা পরমাত্মারূপে প্রবিষ্ট । ঈশ্বরের সৃষ্টিপ্রেরণা প্রকৃতিকে সক্রিয় করে এবং 
প্রকৃতি তখন মহৎ, অহঙ্কার, মন সহ একাদশ ইন্দ্রিয়, পঞ্চতন্মান্্ এবং পঞ্চভূতের আকারে 
অভিব্যক্ত হয়। ব্যষ্টিকরণ প্রক্রিয়ায় ঈশ্বর জীবসমূহের অস্তরাত্মাব্ূপে তাহাদের মধ্যে 
প্রবেশ করেন এবং তাহাদের পূর্বকর্মীস্থসারে তাহাদিগকে ন্যায়সঙ্গতভাবে যথাযোগ্য 
শরীর প্রদান করেন। এইভাবে এককোববিশিষ্ট জীব হইতে আরম্ভ করিয়া দেবযোনি 
পর্যস্ত জীবসমূহের সংখ্যা অনস্ত। অভিব্যক্তির পরে বীজাবস্থা; এবং এই প্রক্রিয়া 


৩৮৫ 
৪৯ 


প্রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


নিয়মিত তালে চলিতে থাকে । শেষ পর্যস্ত সষ্টির অর্থ হইতেছে ঈশ্বরের ক্রীড়ারূপ 
স্বত:স্ফৃতি অথব1 লীল1। এই লীলার ধারণায় প্রকৃতি, পুরুষ ও পুক্রযোতমের অস্তিত্ব 
স্বীকার করিয়া এবং চরম শ্বভাববাদ, ব্যক্তিস্বাতত্ত্যবাধ এবং জ্ঞানবাদ পরিহ্যার করিয়া 
পরিণামের ধারণ! ও কর্মের নৈতিক ধারণার নৃতন ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে। প্ররুতির 
অভিব্যক্তিতে জীব ( পুরুষ ) নৈতিক উন্নতি ও দেবত্বলাভের স্থযোগ পায়। বেদাস্তের 
সাক্ষাৎ প্রয়োজন হইতেছে জীব কর্তৃক ব্রন্দের আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভ; সুতরাং 
প্রকৃতি-দর্শনরূপে বিশ্ব-তত্ব এইরূপ আধ্য।ত্মিক অন্নুভূতি লাভের কেবল গৌণ উপায়মান্র । 


মনস্ডজ্ত 


বিশিষ্টাদৈতবার্দে কতকগুলি দোষযুক্ত লক্ষণ এবং মত পরীক্ষা করিয়৷ আত্মা কি 
নয় তাহা দেখাইয়া আত্মার মনস্তত্ব বর্ণনা করা হইয়াছে । আত্মা ষে কতকগুলি 
পরমাণু এবং জড় প্রক্রিয়ার লমষ্টি মাত্র এই জড়বাদী (চাবাক ) মত ভ্রান্ত; কাঁরণ 
জড়বস্র পক্ষে চিন্তা করা এবং মুক্তির আকাজ্ষা করা অসম্ভব । এ একই যুক্তিবলে 
প্রাণবাদীদের মত যে, যে প্রাণ আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া ব1 প্রাণাবেগ এবং নিজেকে পুষ্ট 
করে এবং নিজের সংখ্য। বৃদ্ধি করে তাহাই আত্মা, তাহ! সমর্থনষোগ্য নয়। বৌদ্ধদের 
প্রত্যক্ষবাদী কিংব। ক্ষণিকবিজ্ঞানবাঁদী মত যে আত্ম কতকগুলি সংবেদনের অথবা 
দেহ এবং মন ছারা গঠিত পঞ্চস্বন্ধের একটি সমাবেশ তাহা স্থায়ী আত্মার এঁক্য এবং 
ধারাবাহিকত! অস্বীকার করে বলিয়। উহাকেও প্রত্যাখ্যান কর! হইয়াছে । মন বা 
অস্তঃকরণ নিজেই প্রকৃতির একটি বিকার এবং চিন্ময় দ্রব্য নহে। যেবুদ্ধিবাদী ব৷ 
জ্ঞানবাদী বলেন, “যে হেতু আমি চিন্তা করি সেই হেতু আমি আছি” তিনি জ্ঞানের 
বিভিন্ন স্তর এবং বিরতির দিকে লক্ষ্য রাখেন না এবং “যে হেতু আমি আছি সেই 
হেতু আমি চিস্তা করি” ইহা! বলাই অধিক সত্য হইবে। সমাজতত্ববিৎ যখন 
আত্মাকে সমাজদেহের অঙজমাত্র বলিয়। মনে করেন, তখন তিনিও ভূল করেন। যে 
বিশেষণ-বাদ আত্মাকে পরমতত্বের একটি গুণ বলিয়] বর্ণনা করে, তাহা উহার 
অসাধারণত্বকে উপেক্ষা করে । সর্বশেষে জীব যে অবিগ্যায় প্রতিফলিত ব্রন্ষের 
প্রাতিভামিক প্রতিবিত্ব মাত্র এই অদ্বৈতবাদী মত জীবকে নৈতিক ও ধর্মীয় 
মূল্যবিহীন কল্পিত বা অলীক বস্তমাত্র বলিয়া মনে করে। রামান্জ এই সকল 
মতকেই প্রত্যাখ্যান করেন । 49001, 43108750 4891£_ পাশ্চাত্যে ব্যবহৃত এই 
শবগুলি জড়-জীবন ও প্রেতের ধারণাঁর অনুষঙ্গ হইতে মুক্ত নয় বলিয়! “আত্মা” শব্বই 


৩৮৬ 


বেদাপ্ত-_বৈষ্ব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদ্দায়সমূহ £ রামানুজ £ মনত্তত্ব 


জীবের নিত্য আত্ম-সংবিৎ এবং যুক্ত স্বভাঁবকে অধিক বিশদভাবে ব্যক্ত করে। ইহা 
পরমাত্মার ন্যায়ই একটি তত্ব এবং প্রত্যক্ষজ্ঞানছ্বার৷ নয়, কিন্ত অতি-মানস এবং 
যৌক্তিক অন্তদৃ্টি দিয়! ইহার অর্থ এবং মুল্য নির্ধারণ কর! উচিত। 
আলবন্দার, রামান্জ এবং বেদাস্ত-দেশিক যেভাবে গীতার ব্যাখ্যা করিয়াছেন, 
বিশিষ্টাদ্বৈত মতে তাহা ইহাকে প্রকৃতি এবং পরমাত্মা হইতে পৃথক করিয়া ইহার 
স্বভাবকে প্রকটিত করে। আত্ম! প্রতি প্রভৃতি চতুবিংশতি তত্ব হইতে পৃথক) 
ইহ! নিত্য, ম্বয়ংপ্রকাশ এবং নৈতিক ম্বাধীনতাবিশিষ্ট ।১৮ পূর্বতন অবিদ্যার ভ্রাস্ত 
সংস্কবারবশতঃ ইহা। নিজেকে প্রতি বলিয়! ভ্রম করে, দেহে বন্ধ হয় এবং দেহ হইতে 
দেহাস্তরে গমন করে। কিন্তু ত্যাগের দ্বার। ইহ নিজের স্বরূপকে উপলব্ধি করিতে 
পারে। তখন আত্মা অহঙ্কার হইতে মুক্ত হয় এবং তাহার নিজন্ব মূল্য আছে ইহ 
বুঝিতে পারে । জীব নিরবয়ব চৈতন্ময় পদার্থ ১৯ এবং নিরতিশয় সুক্ষ, কিন্তু ইহার 
জ্ঞান আলোক এবং তাহার দীঞ্চির ন্যায় অনস্ত এবং সর্বব্যাপী, যর্দিও বর্তমানকালে 
ইহা কর্মদ্বারা সীমাবদ্ধ। ইহাঁর ঠনতিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অনুযায়ী ইহ! 
নিজেকে সঙ্কুচিত এবং বিস্তৃত করিতে পারে এবং অভিব্যক্তি এবং বিলয়ের বিভিন্ন 
স্তরে থাকিতে পারে। স্থযুপ্তির নিজ্ঞন-অবস্থায় ইহা প্রায় নিক্ছিয়, স্বপ্রের অর্ধচচেতন 
অবস্থায় ইহা! স্তিমিত, জাগ্রদবস্থায় পরিস্ফট এবং ভ্রমপ্রত্যক্ষ, মাঁয়াবলোকন 
মৃছণরোগ প্রভৃতি অস্বাভাবিক অবস্থায় অভিস্ভৃত হইয়া থাকে । এই অবস্থাগুলি 
ক্রমশঃ পরস্পরের সহিত মিশিয়। যায় এবং পরস্পর হইতে অবিচ্ছিন্ন । তাহার! 
আলোক এবং অন্ধকারের ন্যায় পরস্পরবিরোধী নয়। মন-সমীক্ষণবাদীরা এবং 
বিজ্ঞানবাদীর। শ্বপ্র সম্বন্ধীয় মনস্তত্বের নৈতিক এবং ধর্মীয় তাঁৎপর্য উপেক্ষ। করে। 
স্থঙ্ম শরীরে যে সকল মানসিক ও টৈহিক অবস্থাদ্ার! জ্ঞান নিয়ন্ত্রিত হয় তাহার। 
এবং তাহাদের গ্রীতিকরত। ব৷ অগ্রীতিকরতা৷ কর্ষের নৈতিক নিয়মের উপর নির্ভর 
করে । জ্ঞান অবিদ্যাদ্ধার! আচ্ছন্ন হইতে পারে এরূপ মনে করিলে, সর্বজ্ঞতাঁও বিশ্বব্যাপী 
অজ্ঞানে পরিণত হয় এবং অন্দেহবাঁদই এইরূপ বিশ্ব-মাঁয়াবদ্দের একমাত্র ফল হয়। 
স্কতরাঁ আত্ম-সংবিৎরূপে জ্ঞান আত্মার একটি অবিচ্ছেদ্য গুণ। ইহ] ত্বয়ং- 
তভরশীল কিন্তু গুণরূপে জ্ঞান ( ধর্মভূতজ্ঞান ) আত্মার প্রকাশক ধর্ম হিসাবে আত্মার 
উপর নির্ভরশীল । এই ছুইয়ের মধ্যে প্রতেদ কর! যায়, কিন্তু ইহাদিগকে বিচ্ছিন্ন কর] 
যায় না। 
আধার, নিয়স্তা, শেষী এবং হ্থন্দররূপে পরমাত্বার যে তিনটি গুণের কথা৷ বল। 
হইয়াছে, তাহাতে ইহার পূর্বেই জ্ঞাতা, কর্তা এবং তোক্তীরূপে আত্মার লহিত 


৩৮৭ 


' প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


পরমাত্মার কি সম্বন্ধ তাহা বল! হইয়াছে । জ্ঞাতা-আত্মা কারণন্ধপ (€ উপাদান ), 
ত্রদ্ষে কার্য (উপাদেয়) ইহা! ব্রন্ষের অ-পৃথক্সিদষ বিশেষণ ও অংশ। বর্গ 
মূলকারণ, জ্ঞাতা এবং বিভূ । শুদ্ধ এবং পবিত্র ব্রন্মের সহিত কর্তীরূপে ইহার সম্বন্ধ 
হইতেছে এই যে, ইহা! ব্রদ্মের শেষ অথবা দাস অথব পুত্র এবং তাহার পরিতৃত্থির 
জন্যই উহ্থার অস্তিত্ব, উহা! আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতীব্পপ এশ প্রয়োজন সিদ্ধ করে। 
ভোক্তা আত্মা ত্রক্ষের সৌন্দর্য এবং আনন্দ উপভোগ করে বলিয়া! ইহাতে (ব্রন্ষমের ) 
অন্তরঙ্গত। এবং পবিত্রতার মিলন হয় এবং ইহ দিব্য আকার ধারণ করে। 
এইভাবে ত্রহ্ম জীবের শরীরী আদি কারণ, আধার এবং নিয়স্তা। জীব যদিও উহার 
নিজের জ্ঞানের জ্ঞাতা উচ্চতর দৃষ্টিভঙ্গী হইতে জীব নিজেই ঈশ্বরের প্রকাশ, ঈশ্বর 
প্রকারী এবং জীব তাহা হইতে অবিচ্ছেগ্ধ। 

জীব ব্রহ্ম হইতে নি:স্যত--ভেদাভেদবাদীর এই ব্যাখ্যা জীবকে তাহার নৈতিক 
ও আধ্যাত্মিক মূল্য হইতে বঞ্চিত করে। অদ্বৈতবাদী ব্যক্তিত্বকে অবিষ্াপ্রস্থত 
কল্পনামাত্র বলিয়! উড়াইয়া দেয়। রামাহ্জের মত জীব যে ম্বাধীনতাঁবিশিষ্ট একটি 
নৈতিক এবং আধাঘ্মিক দ্রব্য ইহার উপর জোর দিয়া বছ-বাদ এবং এক-বাদ, 
নৈতিকতা-বাদ এবং রহস্তবাঁদের সমন্বয় ঘটাইয়াছে, কিন্তু জীব পরমাত্মার স্ষুলিঙ্গ * 
এবং সেইজন্য ইহ] পরমাত্মার সহিত রসঘন অবস্থায় একীভূত হইতে পারে 
বলিয়া ইহা যে পরমাত্মা হুইতে পৃথক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ তাহা অস্বীকার করে। 
ইহা! নিজেই একটি অবয়বী আবার ব্রন্মের অবয়ব । অবিদ্ভাকে কর্মের সহিত 
একীভূত করিয়। এবং অবিদ্যা, কর্ম, কাম প্রভৃতি দোষগুলি জীবেই বর্তমান থাকে 
ইহা! বলিয়। রামানজের মত অবিগ্ভঠার একটি নুতন ব্যাখ্য। দিয়াছে! প্রত্যেক জীবই 
ঈশ্বর হইভে আসে এবং সর্বৈশ্বর্ধের আলয় তাহাঁতেই ফিরিয়! যায় এবং দৈবভাব 
প্রাপ্ত হয়। 


আধন-মুক্তিন্ন উপাম্ম 


যে অনুধ্যানশীল দার্শনিক পরমসত্তা বা তত্বরূপে ব্রন্দের স্ববূপ সম্বন্ধে অনুসন্ধান 
করেন, তিনি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রযত্বত্বার মুক্তিকামী বা মুমুক্ষু হইয়া 
উঠেন। কর্মষোগ বা আত্মশ্ছি, জ্ঞানযোগ বা আত্মোপলন্ধি এবং ভক্তিধোগ 
বা গীতা-নিক্পিত প্রেমরূপে ঈশ্বরের উপলব্ধির অভ্যাস এই ত্রিবিধ প্রণালীতে 


মুক্তিলাভ হয়। 


৩৮৮ 


বেদাস্ত--বৈষ্ব ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ রামানুজ ঃ সাঁধন-মুক্তির উপায় 


“কর্মযোগ” হইতেছে নিফামকর্মের অভ্যাস, অর্থাৎ ফল কি হইবে বা ন। হইবে 
তাহ চিত্ত। ন! করিয়। কর্তব্য বলিয়াই কর্তব্যপালনের অভ্যাস ।২১ দেবতা অথবা 
ঈশ্বর কেহই কর্ম না করিয়। থাকিতে পারেন না। সংবিৎ সকল স্তরেই কর্মপ্রবণ, 
এমন কি যে অন্তমুখীনতার লক্ষ্য হইতেছে কর্ম হইতে বিরতি ( নিবৃত্তি ), তাহাও 
কর্মপ্রবণ এবং মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অ-কর্ম জীবন অসম্ভব ।২২ যে নীতিতত্ব এই 
মনোবৈজ্ঞানিক নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাহাই অধ্যাতবশান্ত্র হইয়। দাড়ায় । যদিও 
প্রাণীমাত্রেই উদ্দেশ্টাসিদ্ধির জন্য চেষ্টা করে কেবলমাত্র মাহ্ছষেরই বুদ্ধি অর্থাৎ বিচাঁর- 
শক্তি এবং প্রধত্ব আছে বলিয়। তাহার মনে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে একটি ধারণ1 থাকে । 
কিন্তু প্রকৃতি এবং তাহার গুণসমূহ দার! গঠিত দেহের সহিত ভাঁস্ত তাদাত্ম্যবোধের 
ফলে তাহার দৈহিক সখ উপভোগ করিবার বাসন জন্মায় এবং এই বাসন! ব্যাহত 
হইলে ক্রোধ, সম্মোহ ও নৈতিক প্রণাশ উপস্থিত হয়।২৩ প্রত্যেক সাংসারিক 
কর্মই এই সকল বাসন। ( কাম ) দ্বারা পরিচালিত এবং বাহাবস্ত সংক্রান্ত সুবিধাজনক 
লাভের উদ্দেশ্যঘারা প্ররোচিত। ইহা সত্ব, রজ এবং তম এই তিনটি গুণঘ্বার! 
নিয়ন্ত্রিত।২* কিন্তু প্রত্যেক মানুষেরই তাহার গুণ সমূহ এবং তাহাদের দ্বার! 
প্রভাবিত কর্ষকে নিয়ন্ত্রণ করিবার নৈতিক স্বাধীনতা আছে। তাহার নিয়ন্ত্রিত 
ইচ্ছাঁশক্তি অথবা ব্যবহারিক বিচারশক্তি প্রয়োগ করিয়া সে দৈহিক অনুভূতির 
উপর নির্ভরশীল ইন্দ্রিয়পরায়ণতাকে দমন করিতে পারে এবং পাথিব জীবনের 
ছুইটি বিপদ অহঙ্কার এবং মমকাঁর হইতে নিজেকে মুক্ত করিতে পারে। তখন 
তাহাঁর কর্ণ কামের স্বার্থপর প্ররোচনা! হইতে মুক্ত হয় এবং নিষ্ষাম কর্ম অথবা 
কর্তব্যের জন্তই কর্তব্যে পরিণত হয় এবং নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ শ্বারাজ্য প্রাপ্ত 
হয়।২* তখন সে আর গুণ সমূহ দ্বারা পরিচালিত এবং বাহিরের শক্তি কর্তৃক 
নিয়ন্ত্রিত প্রাকৃত বস্ত থাকে না, কিন্তু আত্মশক্তি দ্বার লব্ধ নৈতিক ব্বাধীনতী- 
বিশিষ্ট ব্যক্তিতে পরিণত হয়। সে তখন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি, লে তখন কর্ম হইতে 
মুক্ত হয় না, কিন্ত কর্মের মধ্যেই যুক্তিলাভ করে। 

কর্মযোগ অথব। নিঃস্বার্থ কর্ম জ্ঞানযোগ দ্বারা লভ্য আত্মোপলব্ধির সোপানমাজ। 
যখন নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ তাহার আত্মাকে অ-চিৎ হইতে পৃথক করিয়া! জানিবার 
চেষ্টা করে, তখন সে নৈতিক স্তর হইতে আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত হয়। নিফাঁম 
কর্ম, অর্থাৎ মানুষের ধাহা করা উচিত, তাহা হইতে মানুষের যাহা হওয়। উচিত 
তাহাতে মান্ছষের গতি হয়। এইরূপ জ্ঞান-নিষ্ঠার জন্ত বৈরাগ্য এবং নিরস্তর 
অভাসের প্রয়োজন হয়। তত্চিস্তায় রত ব্যক্তি যোগাভ্যাস ছার যে অবিদ্যার 


৩৮৯ 


প্রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


প্রভাবে তিনি আত্মাকে দৈহিক অনুভূতির সহিত অভিন্ন বলিয়া! মনে করেন, সেই 
অবিদ্যাজনিত ভ্রমসযূহ হইতে এবং ঘে কাম তাহাকে ইন্দিয়গ্রাহ পদার্থের দিকে 
আকর্ষণ করে তাহার প্ররোচন। হইতে নিজেকে মুক্ত রাঁখিবেন। তিনি টকবল্যাবস্থা 
প্রাপ্ত হইতে সচেষ্ট হইবেন । 0. 
জ্ঞানযোগ দ্বারা লব্ধ টেকবল্যে কিন্তু বিষয়ীসর্বন্ববারদ এবং নৈষ্বর্ম্যবাদরূপ 
দোষ আসিয়া পড়িতে পাবে এবং এই সকল দোষ ভক্তিযোগ দ্বার! দূরীভূত হয়। 
কর্মষোগ এবং জ্ঞানযোগে যে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টা কর হয়, ভক্তিযোগেই 
তাহার চরম পরিণতি । বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ধেন নীতি হইতে ধর্ম এবং ধর্ম হইতে 
ঈশ্বরের সহিত রহস্যময় এক্যানুভূতির একটি সোঁপান নির্মাণ করে । রাঁমাহুজ ভক্তির 
সহায়করূপে বিবেক, বিমোক, অভ্যাস, ক্রিয়া], কল্যাণ, অনবসাদ এবং অন্ন্র্য এই 
সাতটি প্রাচীন সাধনার উল্লেখ করিয়াছেন ।২৬ প্রথমটি হইতেছে ঈশ্বরের জীবস্ত 
মন্দির্ষপ দেহের শুচীকরণ এবং এইক্মপ শুচিতা দেবভাবের সমতুল্য । কাম এবং 
ক্রোধরূপ চাঞ্চল্যকর অবস্থা হইতে মনের আস্তরিক মুক্তিই বিমোক। ঈশ্বরকে 
সকলের অন্তরাত্মারূপে নিরন্তর উপলব্ধি করিবার চেষ্টাই অভ্যাঁস। চিস্তায় নিবিষ্টচিত 
ব্যক্তির জীবনের সামাজিক দিক হইতেছে ক্রিয়া; ইহা! হইতেছে মন্ুস্তেতর প্রাণী, 
মনুষ্য ও দেবগণের সেবারূপ কতব্য। কর্তব্যের অন্তরের দিক যে ধর্ম তাহার 
অন্ুশীলনই হইতেছে কল্যাণ এবং দান ও অহিংস! শ্রেষ্ঠ ধর্মগুলির অন্ততু-ক্ত। 
অনবসরের অর্থ হতাশা-পরিহাঁর এবং অন্ুদ্ধর্ষের অর্থ হর্ষোচ্ছাীসের অভাব, স্থতরাং এই 
ছুইটি ধর্ম পরম্পরের সহচর । এই সকল সাধনের লক্ষ্য হইতেছে মানুষের দেহিক, 
মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় উন্নতিসাঁধন এবং ইহার! ভগবদ্ভক্তির 
অপরিহার্য অলন্বন্ধপ। গ্রীকরা মানুষের পশু-প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিক প্রকৃতির 
সমন্বয়-সাধন সম্বন্ধে ঘষে ধারণ। পোষণ করিত, তাহ! হইতে এইগুলি ভিন্ন এবং 
করেব সাধনসমূহ হইতেও ভিন্ন। এই শেষোক্তগুলিকে সাধন বল! চলে না, কারণ 
্রন্ম হ্বয়ং-সিদ্ধ এবং কোন নৃতন বস্তরূপে প্রাপ্তব্য নহেন। দর্শনের দৃষ্টিতে যাহা 
চরমতত্ব, ধর্মের দৃষ্টিতে তাহাই ভগবান অথবা ঈশ্বর, এবং বামাহ্ছজের মতে বেদাস্ত 
অথবা ব্রন্মের জ্ঞান, লীশ্বরের ধ্যান অথবা উপাসনা অথব! ভগবচ্চিস্তা এবং ভক্তি 
ইহারা সকলেই সমার্থক এবং ইহারা জ্ঞান এবং ভক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ এবং 
এঁক্য স্থচিত করে। মৃত্যু পধস্ত বাসুদেব ব নারায়ণকে অস্তরাত্মা বা নিজের আত্ম। 
মনে করিয়া, “হে পরমদেবতা, আমিই তুমি এবং তুমিই আমি” এইভাবে চিত্ত। করাকে 
ধ্যান বলা হয়।২* ইহার অর্থ হইতেছে এই যে, জীব যেমন দেহের আত্মা, ব্রহ্মও 


৩৯৩ 


বেদান্ত--বৈষ্ৰ ( ঈশ্বরবার্দী ) সম্প্রদয়সমূহ ২ রামানুজ £ সাধন-মুক্তির উপায় 


তেমনই জীবের আত্ম! (শরীরী )। আত্ম। এবং দেছের নায় তাহার অবিচ্ছেদ্য 
কিন্ত অভিন্ন নহে। ভক্তি যখন গাঁ হুইয়া৷ পর1-ভক্তি এবং প্রেমে পরিণত হয়, 
তখন ভগবানকে পাইবার ইচ্ছ। তাঁহার জন্য অদম্য আকাজ্ষার রূপ ধারণ করে। 
কিন্তু ভগবানের প্রতি জীবের যে আকর্ষণ, তাঁহ। জীবের প্রতি ভগবানের আকর্ষণের 
ন্যায় অত তীব্র নয়। যে ভক্তকে তিনি তাহার নিজের আত্মা বলিয়া মনে করেন, 
তাহার সহিত মিলিত হইবার ইচ্ছাকে পরিতৃপ্ত করিবার জন্য বিশ্ববাতীত শাশ্বত 
পুরুষ মন্ুস্তের আকারে প্রেমের অবতারের রূপ ধারণ করেন। ইহার ফলে যে মিলন 
সংঘটিত হয়, তাহাতে প্রেমের জন্যই প্রেম আকাজ্কিত এবং মুক্তির অপেক্ষা ভক্তিই 
অধিক কাম্য । 

ভক্তি পরম-পদদে পৌছাইবার জন্য পৃথিবীতে স্থাপিত সোপানস্বরূপ।২” ইহা 
নির্মাপ কর! অতীব কষ্টসাধ্য । ইহার পথে বহু অদৃশ্ত বিপদ থাকার জন্য ইহা আরোহণ 
কর! প্রায় অসভ্ভব। উপনিষদীয় জ্ঞানের সারম্বর্ূপ গীতা ভ্রান্ত মানবের প্রতি 
অসীম করুণাপরবশ হইয়] প্রপত্তি ব আত্ম-নিবেদনকেই মুক্তির সর্বাপেক্ষা সহজ এবং 
স্বাভাবিক উপায় বলিয়! নির্ধারণ করিয়াছেন। সর্বমুক্তির ধর্ম হিসাবে গীতার ধর্ম 
প্রত্যেক মন্থষ্যকে ঈশ্বর হইতে বিচ্ছেদরূপ পাপে ভারাক্রান্ত অথচ ঈশ্বরের সম্ভানরূপে 
তাহার চরণে আশ্রয় লইতে আহ্বান করে এবং তাহার মুক্তি অবশ্ঠম্ভাবী এইবপ 
আশ্বাস দেয়। 

আন্বারের! ওপনিষদিক খধিদের ন্তাঁয় ঈশ্বরকে অনুসন্ধান করেন এবং তাহাকে 
দেখিয়। থাকেন এবং যে ভাঁষিল স্তোত্রগুলিকে তাহাদের ঈশ্বরীয় জ্ঞানের জন্ত বেদাস্তের 
সমপর্যীয়তুক্ত বলিয়া! মনে করা হয় তাহার! প্রপত্তির উচ্চতর মূল্যের উপর জোর 
দিয়াছে কারণ ভ্রাণকারী প্রেমরূগী ঈশ্বরের নিকট ইহাই প্রিয় এবং জন্ম, যোগ্যতা 
এবং সাংসারিক প্রতিষ্ঠা নিবিশেষে সকল জীবই ইহ! পাইতে পারে। বিধি- 
নিষেধমূলক ধর্মে করুণ। দ্বার! ন্যায়পরায়ণতাঁকে কোমল কর হয়, কিন্ত ত্রাণবাদী ধর্মে 
হ্ায়পরায়ণতা ও কর্মফল অপেক্ষা ঈশ্বরের আঁণশক্তিই প্রবলতর এবং এমনকি তথা- 
কথিত দণ্ডনের মূলও দয়ায় বর্তমান । 

বিশিষ্টাদ্বৈতসম্মত ধর্ম হইতেছে শ্রীবৈষ্ব ধর্ম। এই ধর্মে ঈশ্বর হইতেছেন 
নারায়ণ এবং শ্রী উভয়েই, এবং তাহাতে নিয়ম এবং প্রেমের নিব্যক্তিক গুণগুলি এই 
ছুই ব্যক্তির মধ্যে চিরকণলের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হইয়া আছে। নিয়ম যদ্দি 
প্রেমের উপন্ধ আধিপত্য করে, তাহা হইলে কর্ম হইতে মুক্তি অসম্ভব এবং প্রেম 
নিয়মের উপর আধিপত্য করিলে শ্বেচ্ছাচার অবশ্যভাাবী হইয়! উঠে, কিন্ত ঈশ্বরের 


৩৯১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহান 


প্রকৃতিতে এই দুইয়ের মধ্যে সামগ্র্য রহিয়াছে এবং ইহারা মিলিত হইয়া একীভূত 
হইয়। গিয়াছে। 

শ্রীবৈষণব ধর্মের ইতিহাসে ছুইটি বিরুদ্ধমতাঁবলম্বী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হইয়াছে-- 
পিল্পেলোকাচার্ধ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তেঙ্কলৈ সম্প্রদায় এবং বেদাস্ত-দেশিক কর্তৃক 
পরিচালিত বড়কলই সম্প্রধায়। ঈশ্বরের দয়া যে স্বতঃস্ফুর্ত এবং কোন সর্তাধীন 
নয় । নির্হেতুক কটাক্ষ ) প্রথম সম্প্রদায় এই মত পোষণ করিয়া থাকেন, কিন্তু দ্বিতীয় 
সম্প্রদায় স-হেতুক-কটাক্ষবাদী, অর্থাৎ তাহাদের মতে ঈশ্বরের দয়! এবং জীবের প্রপতি- 
যোগ উভয়েরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ই স্বীকার করেন যে, ঈশ্বর 
নিজে উপায় এবং উপেয় দুই-ই এবং কুপাদার! কর্ম খণ্ডিত হয়। সমস্যাটির সমাধান 
হেতু বা কারণ এইবূপ কোন তর্কশান্ত্রসম্মত ধাঁরণাঁর সাহায্যে কর! যাঁয় না, কিন্তু 
ঈশ্বরের সহিত মিলনের রহস্যময় অনুভূতির মধো ইহা বিলীন হইয়া যাঁয়। 

ত্রাণ সম্বন্ধে শ্রীবৈষব এবং খুষ্টীয় মতবাদ ছুই-ই নীতিমূলক ধর্ম। তাহারা 
ঈশ্বরীয় বিধান ভঙ্গ করাই যে পাপ এই কথ! বলে, তাহার! বিশ্বাস করে ষে, পাঁপ 
ক্ষমার যোগ্য এবং বস্ততঃ ঈশ্বর কূপ! করিয়া উহ! ক্ষম। করেন এবং বিশ্বাস ছার 
এবং কর্মঘারা যে পাপ মোচন হয় এই মতবাদ গ্রহণ করে, এইজন্য তাহাদের 
মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। কিন্তু বৈষ্ণব মতবাদে এমন একটি সার্বজনীন আবেদন 
আছে যাহা আমরা খুষ্টধর্মসম্মত ঈশ্বরের একজাত পুত্র, আদিম পাপ এবং 
বিচারের দিবস সম্বন্ধে মতবাদগুলির মধ্যে পাই না । প্রথম মতে কর্মফল ভোগের 
পর পরিত্রাণ আসে এবং প্রথমটি িতীয়টিতে রূপান্তরিত হইয়। যায়, কিন্তু দ্বিতীয় 
মতে কর্মষলভোগের পর বিচার দিবন আসে এবং তখন সারবিশিষ্ট ভ্রব্যগুলিকে 
অসার দ্রব্য হইতে পৃথক করা হয়। শ্রীবৈষ্ব মতে ঈশ্বর হইতে বিচ্ছেদই পাপ, 
এবং প্রেমের দেবতার সহিত এক হইয়। যাওয়া এবং তাহার পর সকল জীবের 
অন্তরে যে ঈশ্বরী্ন প্রেম বিরাজ করিতেছে তাহার ছাঁর৷ অনুপ্রাণিত হইয়া সকল 
জীবের সেবা করাই ষথার্থ প্রায়শ্চিত্ত । ভক্তির সর্বোচ্চ অবস্থা হইতেছে প্রেমলীল!। 
ইহাতে ভগবান্‌ প্রেমিকরূপে তাহার ভক্তের সহিত লুকোচুরি খেলিয়৷ থাকেন 
এবং পরিশেষে তাহার! উভয়ে চিরকালের জন্ত মিলিত হইয়। থাকেন। এই 
প্রেমলীলাঁর ছুইটি স্তর আছে? মিলনের আনন্দ (সংশ্লেষ) এবং বিচ্ছেদের 
বেদনা ( বিশ্লেষ) একের পর আরেকটি উপস্থিত হয় এবং তাহার পর আত্মার 
অযানিশার বৈচিত্র্যহীনতার ক্লান্তি দেখা দেয়। এই লীলার শেষে জীব মুক্তির শাশ্বত 
আনন্দ প্রাঞ্থ হয়। 


৩৯৭ 


বেদীস্ত-_বৈফব (ঈশ্বরবাধী ) সম্প্রদায়সমূহঠ £ রীমানুজ : যুক্তি 


মুক্তি 


ধর্ম অর্থাৎ স্যায়সঙ্গত আচরণের অভ্যাস, অর্থ, অর্থাৎ ধন-সম্পত্তিলাভ, কাম, 
অর্থাৎ এছিক জীবনে ও স্বর্গে স্থখ-ভোগ এবং মোক্ষ অর্থাৎ যাবতীয় সাংসারিক 
ক্লেশ হইতে মুক্তিলাভ--এই চারিটি পুরুষার্থের মধ্যে শেষেরটিকেই বেদান্ত মানব" 
জীবনের চরমগতি ও লক্ষ্য বলিয়! প্রশংসা করিয়াছেন। অজ্ঞান ও কাম হইতে 
মুক্ত হইয়া! ভক্ত ক্ষণস্থায়ী ঈশ্বরাহুভূতির মধ্যে ইহুজীবনেই ব্রক্ষানন্দের পূর্বাশ্ধা্দ এবং 
অমরতাঁর আভাস পাইয়। থাঁকেন। কিন্তু ইহুজীবনের ব্রহ্মাঙগভূতি শাশ্বত এবং 
অখণ্ড নয়, কেবলমাত্র ব্রহ্লৌকে গমন করিলেই মুক্তপুরুষ নিশ্চিত এবং স্থাক্সী 
অম্ৃতত্ব লাভ করেন। অদ্বৈতবাদী মনে করেন যে, মুক্তি হইতেছে শ্বয়ং-সিন্ধ নিগুপগ 
ব্রদ্ধের জ্ঞান । এই জীবনে এই স্থলে এবং এখনই মুক্তি ( জীবন্ুক্তি ) সম্ভবপর এবং 
পরেও সম্ভবপর (বিদেহ-মুক্তি)। অন্য বেদাস্তীরা এই মত প্রত্যাখ্যান কৰবেন। 
তাঁহাদের মতে মুক্তি একই; ইহা সাংসারিক জীবনে স্বাধীনতালাভ নয়, পরস্ত বন্ততঃ 
দেশ ও কালের জগৎকে অতিক্রম করিয়? সাংসারিক জীবন হইতে মুক্তিলাভ। 

ব্রক্ষকে কোনও সাধন দ্বার] নৃতন করিয়! লাভ করা৷ যায় না__অদ্বৈতবাদীদের এই 
কথা যদি সত্য হয়, তাহা হুইলে নৈতিক প্রচেষ্টা ও ধর্মার্জন নিরর্থক ও মূল্যহীন 
হইবে। বিশিষ্টাছৈত মতবাদ দেশ-কাল ও স্ুখছুঃখের ব্যবহারিক জগৎ এবং সত্য, 
শিব, সৌন্দর্যও আনন্দের অক্ষয় মূল্য-ধাঁম 'পরম পদ্দের মধ্যে পার্থক্য করিয়া এই 
সকল দোষ পরিহার করিয়াছেন । ইহাতে মুক্তপুরুষ দেহের বিলয়ের পর দেব-যানের 
সরল ও দীপ্ত পথ দিয়! কিভাবে আনন্দময় বৈকুঠধামে আরোহণ করেন তাহার বর্ণন। 
দেওয়! হইয়াছে ।২৯ সেই ধামে জড় এক অগপ্রশরুত উপায়ে দীপ্তিশীল এবং তাহাতে 
কোন পরিবর্তন নাই । কাল সেখানে নিত্যতার ব্ধপ ধারণ করে এবং মুক্তপুরুষ 
কর্মবন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া পুমরায় অন্ত জ্ঞান লাঁভ করেন। তিনি ঈশ্বর-সদৃশ 
হইয়। যান, কিন্তু তাহাতে জগতের নিয়স্ত-ত্বরূপ গুণ থাঁকে না। 

মুক্তপুরুষ ব্রন্ধকে সাক্ষাৎ দর্শন করেন এবং তাহার সাযুজ্য প্রাণ্ত হইয়া অনস্ত 
আনন্দে মগ্ন হুইয়। যাঁন। তাহার কাছে বহুত্বপূর্ণ জগৎ থাকে, কিন্তু যে দৃষ্টি বহুত্বকে চরম 
বলিয়। ব্বীকার করে তাহা লুপ্ত হইয়া যায়। আত্মা এবং ব্রদ্মের পার্থক্য চিরকালের, 
কিন্ত অ-বিভাঁগ অবস্থায় সেই পার্থক্য-বোঁধ অন্তহিত হয়। ব্যক্তিত্বের লোপ হয় 
ন1। মুক্তপুরুষ ঈশ্বরের সহযোগিতা করিয়। সাহার সেবা করেন না, “আমি আচ্ছি অথচ 
নাই, আমাঁতে তুমি আছ” এইর্প উপলব্ধি করিয়া! নিজের অহঙ্কার বিসর্জন দেন। 


৩৪৩ 


প্রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


উপম্নংহণনল 


বিশিষ্টাছৈত এমন একটি ধর্ম-দর্শন যাহ! যাবতীয় বস্তকে একত্রভাবে অথবা 
ব্র্ম-জানের সহিত একীভূত করিয়। চিন্তা করিয়াছে এবং সঙ্গে সঙ্গে আত্মা এবং 
ত্রদ্মের মিলন উপলব্ধি করিতে চেষ্টা করিয়াছে । ব্রক্মই সর্বজীবের আশ্রয় এবং 
তাহাদের আধ্যাত্মিক প্রত্বের লক্ষ্য । শান্সর কতকগুলি আধ্যাত্মিক সত্যের সমস্থি 
এবং এইগুলিকে আধ্যাত্তিক সাধন! দ্বার! পরীক্ষা! করা যাইতে পারে-__ এইভাবে 
শাস্ত্রের লক্ষণ নির্ণয় করিয়া ইহ! শ্রুতি, যুক্তি ও অনুভূতির মধ্যে যে ব্যবধান আছে 
তাহ। দুর করিয়াছে এবং অন্ধ বিশ্বাস, অজ্ঞেয়তাঁবাদ এবং সংকলনবাদরূপ দোষনমূহ 
হইতে নিজেকে মুক্ত রাখিয়াছে। ইহার তত্ববিষয়ক্‌ মত যে ব্রহ্ম সর্বজীবের আত্মা, 
মূল কারণ, আশ্রয় এবং গতি, স্যষ্টির দিব্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছে। প্রক্কতি 
নিত্য পরিবর্তনশীল, পুরুষ প্রগতিশীল এবং পরমাত্ম! জীবাত্মার পূর্ণতা সাধনের 
যস্ত্রের ন্তাঁয় ব্যবহার করিয়া থাকেন। যতদিন জড়দ্রব্যের অস্তিত্ব আছে, ততদিন 
জীবাত্ম। বস্তর ন্যায় নহে পরস্ত নিত্য পুরুষরূপে অবস্থান করে এবং ব্রদ্ধ হইতেছেন 
সেই অসীম পুরুষ ধাহাঁর লক্ষ্য সসীম জীবকে অসীমে ব্ূপায়িত করা । এই মত 
জড়বাদ, পুরুষবাদ এবং কেবলাদৈতবাঁদের ভ্রম এবং দৌঁষ সমূহ পরিহার করে। 
কর্ম, জ্ঞান এবং ভক্তি এই তিনটি অধ্যাত্মমার্গ অবলম্বন করিলে ইচ্ছাশক্তি, চিস্ত। 
এবং বেদনা এই তিনটি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এইগুলি নৈতিকতাবাদ, বুদ্ধিসর্বন্ববাদ 
এবং ভাঁবসর্বন্ববাদের বিপদগুলিও পরিহার করে। নিবিশেষে সকল জীবই যে 
ঈশ্বরকে লাভ করিবে প্রপত্তিবাদদ এইরূপ নিশ্চিস্ত আশ্বীম দিয় থাকে এবং 
সকলকেই আধ্যাত্মিকত ও সেবার প্রেরণ। দেয়। প্রত্যেক জীবই ঈশ্বরকে সাক্ষাঁৎ- 
ভাঁবে উপলব্ধি করিতে পারে এবং সকল জীবই ব্রদ্দে আছে এবং ব্রহ্ম সকল জীবে 
আছেন এই সত্য উপলব্ধি করিয়া অন্যের সেব। করিতে পারে । এই মতবাদে অন্ধ্যানী 
অন্তঘূষ্টি এবং কর্মনিষ্ঠ বহিদৃ্টির মিলন ঘটিয়াছে। এইভাবে বিশিষ্টাদ্বৈত সমন্বয়ের 
পথে চলিগ্মাছে এবং মানুষের মধ্যে এশ প্রেম কিভাবে কাজ করে তাহ! দেখাইয়াছে। 

রামাছজের পরের যুগে দাক্ষিণাত্যের 'বড়কলৈ' ও “তেংকলৈ' শ্রীবৈষ্ণব-বাদের 
এই দুইটি শাখা প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল এবং পিল্লৈকলোকাচার্য এবং বেদাস্ত- 
দেশিকের সময়ে এই সকল মতবিরোধ চরমে উঠিয়াছিল। অনাঁবশ্তক সংঘর্ষ 
এবং ঈর্ধার স্ট্টি হুইয়াছিল এবং পূর্বে অধ্যাত্ম চেষ্টা যে উচ্চত্তবে উ্নীত হইয়াছিল 
তাহ। হইতে উহাকে বিচ্যুত করিবার চেষ্টা হুইয়াছিল। কিন্ত প্রগতি সর্বদা সরল 


৩৯৪ 


বেদাত্ব--বৈষব ( ঈশবরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ রামান্ুজ £ উপসংহার 


পথে হয় না এবং ভারত-ইতিহাঁসের তথাকধিত মধ্যযুগে, বিশেষতঃ উত্তর-ভারতে 
ইস্লামের বিধর্মশদিগকে স্বধর্মে দীক্ষিত করিবার উৎসাহ্‌কে বাধা দিবার জন্য এবং হিন্দু- 
ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করিবার জন্য বহু মহান্‌ বৈষ্ণব সংস্কারকের উদ্ভব হ্ইয়াছিল। 
রামানন্দ নামে রামাজের এক শিষ্য উত্তর-ভারতে গমন করিয়াছিলেন এবং সেখানে 
বৈষ্ণব আন্দোলনের অগ্রণী হন। এই আন্দোলনের প্রভাব পঞ্জাব এবং বঙ্গদেশেও 
ছড়াইয় পড়িয়াছিল। রামানন্দ মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মজীবনে ঘথাক্রমে 
রামরাজ্যের তিনটি সত্য ঘথা-_রাজতন্ত্রএকদারপরায়ণতা এবং একেশ্বরবাদ গ্রচার করিয়া 
ধরাতলে রাম-রাজত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং এইভাবে মহাত্মা! 
গান্ধীর অগ্রদূতম্বরূপ হুইয়াছিলেন | রামানন্দের শিষ্যদের মধ্যে কবীর, দাছু এবং তুলসীদাস 
সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ছিলেন এবং ইহাদের মধ্যে কবীর (জন্ম থুঃ ১৩৯৮) উপদেশ ও 
আচরণদ্বার| এবং বেদাস্ত এবং স্থফী মতবাদের মধ্যে যে সকল বিষয়ে প্রক্য আছে তাহাদের 
উপর জোর দিয়! হিন্দু-মুসলিম এঁক্য সাধনের পক্ষে সর্বাপেক্ষা অধিক কার্য করিয়াছিলেন । 
তামিল কবিতায় রামায়ণের অনুবাদক কম্বরের মত তুলসীদ্দাসও রামায়ণের হিন্দী 
অনুবাদ করিয়া! অমরত্বলীভ করিয়াছেন। দাছু (১৫৪৪-১৬০৩ খুঃ) ইস্লাম এবং 
হিন্দুধর্মের মধ্যে 'এক্যস্থাপনের জন্ত প্রায়ই আকবরের সহিত সাক্ষাৎ করিতেন। বল্পভের 
শুদ্ধাদ্বৈতবাদের সহিত শ্রীবৈষ্ণব দর্শনের রহস্যবাদের, বিশেষ করিয়! পু্টি-ভক্তির অথব! 
নান্মান্বার এবং আড়ালের নায়ক-নায়িকা প্রেমের সহিত তুলনীয় রাধা-কৃষ্ণের গভীর 
প্রেম সম্বন্ধে ইহার উপদেশাবলীর নিকট-সন্বদ্ধ আছে। নদীকায় শ্রীচৈতন্ত (জন্ম খুঃ 
১৪৮৫ ) অঠিস্ত্যভেদাভেদ নামে পরিচিত বঙ্গীয় বৈষ্ণব দর্শনের শ্ত্রপাত করিয়াছিলেন 
এবং ইহা! মধ্বের বৈষ্ণব দর্শন দ্বার! গভীরভাবে প্রভাবিত হইয়াছিল । ব্রাহ্মলমাজের 
নেতার] ভক্তিবাদ দ্বার! গভীরভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন এবং তাহারা যীশুকে একজন 
প্রধান ভক্ত হিসাবে গ্রহণ করিয়া, অথচ বাহা অনুষ্ঠানমূলক সাম্প্রদায়িকত৷ প্রত্যাখ্যান 
করিয়া, খুষ্টধর্মের আক্রমণকে প্রতিহত করিয়াছিলেন । বাছলার বৈষ্ঞবধর্ষ প্রধানত: 
আবেগময়, কিন্তু জ্ঞানদেব ও নামদেবের ন্যায় মহাবাদ্ত্রীয় ভক্তদের বৈষ্বধর্ম রামানন্দের 
দ্বার! প্রভাবিত হইয়াছিল এবং ইহ] জান এবং ভক্তি উভয়েরই উপর গুরুত্ব আরোপ 
করিয়াছিল । ঈশ্বর যে প্রেমন্বরূপ এই বিষয়ে সকল বৈষ্ণব সম্প্রদায়ই একমত এবং 
তাহাদের মতের সহিত শৈবদের প্রেম-হ্বরূপ শিবসন্বন্ধে মত, সুফী সাধকদের উপদেশ এবং 
খুষ্টীয় রহস্যবাদের সাদৃশ্ত আমর! লক্ষ্য করিতে বাধ্য হই। ঈশ্বরকে “হুন্দর রূপে কল্পনা 
কর] মোটের উপর বৈষ্ণবধর্মের বিশেষত্ব । অতএব বল! যাইতে পারে যে, বিশিষ্টাৈতবাদ 
যুগ যুগ ধরিয়1 ভারতীয় জীবনে অন্ুপ্রবিষ্ট হইয়া! রহিয়াছে । চরমতত্ব ষে বিশ্বের আত্মা 


৩৯৫ 


- প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


এই সামগ্রিক অন্তদৃষ্টি দর্শনের ক্ষেত্রে ইহার বিশেষ দান এবং জীবনের এবং সত্য শিব ও 
স্ন্দর এই তিন শাশ্বত শ্রেয় যাহাতে অধিষ্টিত, তাহার লাক্ষাৎ উপলব্ধিই হইতেছে ধর্মের 
ক্ষেত্রে ইহার বিশেষ দান। ইহা প্রত্যেক মানুষকেই অধ্যাত্ব-জীবনলাভ এবং সেবার জন্ঠ 
শ্রেষ্ট প্রেরণা দিয়া থাকে এবং তাহাকে ব্রদ্ধ-সাজুয্যের অমর আনন্দলাভে সক্ষম করে। 


দষ্টব্য 

১। ছান্দোগ্য-উপনিষদ্‌ ৬।১1৩ ১৬। বেদাস্ত-সুত্র, ২।১।১৫ 
২। তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ভৃগুবল্লী ১৭। দয়া-শতক, ১৬ 

৩। তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২।১ ১৮| শ্রীভান্ত, ২৩১৯, ৩৩ 
৪ । বেদার্থ-সংগ্রহ-পৃঃ ৮০ ১৯ | শ্রীভাম্ব, ২৩1২৬ 

৫ | যতীন্দ্র-মত-দীপিকা ১1৯ ২০। ভগবদগীতা, ১৫) 
৬। বেদার্থ-সংগ্রহ, পৃঃ ১৭৭ ২১। ভগবদুর্গীতা, ২৪৭ 
৭] শ্রীভাম্ব ২৩1১৮ ২২। ভগবদগীতা, ৩৫ 
৮। তৈত্তিরীয় উপনিষদ, আনন্বল্লা, ১ ২৩। ভগবদ্গীতা, ২।৬২-৬৩ 
৯। শ্রীভাব্য ২১৯ ২য় খণ্ড পৃঃ ১৫ ২৪। ভগবদ্গীত ১৪।৩ 
১*। রহন্ত-ত্রয়-সার, তৃতীয় অধ্যায় ২৫। কঠোপনিষদ ১1৩৬ 
১১। বৃহদারণ্যক-উপনিষদ, অন্তর্যামি-বিছ্যা ২৬। শ্রীভাষ্য ১১।১ 

১২। পুরুষ-সুক্ত ২৭। শ্রীভান্ত ৪1১1৩ 

১৩। ভগবদ্গীত| ৪1৭ ২৮ | পরম-পদ-সোপান 
১৪। যতীন্ত্র-মত-দীপিকা ৯১২৯ ২৯। কৌধীতকি-উপনিষদ 
১৫। ছান্দোগ্য-উপনিষদ ৬।১।৪ 

গ্রস্থবিবরণী 


স্বামী, কপিষ্টলম্‌ দেশিকাচার্য £ অধিকরণ-রত্ব-মালা ভগবদ্‌ বিষয়, চেৎলুর নরসিংহাচারিয়ার কর্তৃক 
সম্পাদিত ভাস্কর, ব্রহ্গনুত্র-ভায়--চৌান্ব! গ্রস্থমাল| । 

রাণাড়ে আর ডি-_মহারাষ্রে রহ্ম্তবাদ (ভারতীয় দর্শনের ইতিহাস-৭ম খণ্ড) 

প্রীনিবাপাচারি, পি, এন্‌ £ বিশিষ্টাদ্বৈতদর্শন € আড়িয়ার লাইভ্রেরী গ্রন্থমালা ) 

জীভায় (ত্রঙ্গ-হুত্রের রামানুজভান্ত ) থিবোর অনুবাদ ( এস্‌, বি, ঈগ্রস্থমাল! ) 

পিলৈলোকাচার্য-_ শ্রীবচনতূষণ 

স্বামী, কপিষ্টলম্‌ দেশিকাচার্য $ শারীরক-রত্র-মালা উপনিষদ গ্রন্থাবলী, রঙ-রামানুজ -ভান্ত সমেত, নবনীতং 
কৃষ্ঃমাচারিয়ার কর্তৃক সম্পাদিত। 

উপনিষদ সমুহ ( সেক্রেড বুকস অফ দি ঈষ্ট) £ ম্যাক্সমূলারের অনুবাদ । 

বেদার্থ-সংগ্রহ, এস্‌ বনুদেবাচারিয়ার্‌ কর্তৃক সম্প।দিত যতীন্ত্র-মত-দীপিকা, ভি, কে, রামানুজাচার্য কর্তৃক 
অম্পাদিত। 


৩৪৯৩৬ 


বেদাত্ত__বৈষ্ব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায় সমুহ 
আ। মধব ( দ্বৈত) 


_মধব এবং তাহার রূনাবলী £ মধব কর্তৃক ব্যাখ্যা ব্রঙ্মমীমাংসা সাধারণতঃ ছ্বত নামে 
অভিহিত । মধব ১১৯৯ খুষ্টান্ষে উদ্দিপির নিকটে জন্সগ্রহণ করেন। তাহার সামাজিক 
পরিবেশ ছ্ৈতদর্শনের "সাধারণ মতসমূহের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তত্রত্য পণ্তিতেরা 
বিশেষ আগ্রহের সহিত এই দর্শন অধ্যয়ন করিতেন। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এই 
দর্শনের অর্থ সম্বন্ধে প্রচলিত মতে সন্তষ্ট হইতে পারেন নাই। 

তাহার রচনাবলীতে একই উদ্দেশ্য লক্ষিত হয়। ইহাদের অধ্যয়নের জন্য ইহার্দিগকে 
তিনভাগে বিভক্ত কর! যাইতে পারে £ (১) ব্রহ্মবিষয়ক দর্শনে উপনীত হওয়ার জন্য জ্ঞান 
ও সত্তার মূল ধারণাগুলির পরীক্ষা ; (২) ব্রহ্মবিষয়ক দর্শনের ব্যাখ্যা; এবং (৩) ব্রহ্ম 
বিষয়ক দর্শনের প্রয়োগ । 


১।কব্রন্মন্বিঅসক দর্শতিনর জন্য প্রাথমিক পর্ধালোচিন! 


৯ 


মধ্বের মতে যাহা নিজ বিষয়কে ষথার্থভাবে জানে তাহাই প্রমা এবং প্রমাণ । প্রমা 
এবং প্রমাণ উভয়েই নিজ বিষয় যেরূপ সেইভাবেই উহাকে গ্রহণ করে, স্থুতন্নাং উভয়েই 
যথার্থ । ইহা অস্বীকার করিলে প্রমার সম্ভাবনাই অস্বীকার করিতে হয়। কোন প্রমাই 
বিষয়হীন নহে । কোন বিষয়ই অপ্রমেয় নহে। প্রম! ও উহার বিষয় প্রত্যেকে একই 
স্থশৃঙ্খল জগতের এমন একটি অংশ যাহা অপরের সহিত জড়িত। প্রমাকে বিষয়হীন 
বলিলে উহাকে ভিত্তিহীন বলা হয়। বিষয়কে জ্ঞানের উপর অধ্যস্ত বলিয়া মানিলে 
প্রচ্ছন্নভাবে উহার প্রকৃত অস্তিত্বই স্বীকার করা হয়; কারণ এঁকপ স্বীকার না করিলে 
অধ্যাসই অসম্ভব হইয়! পড়ে । প্ররুত রজত ন্বীকার দা! করিয়া ভ্রান্ত জ্ঞানে শক্তিতে 
রজতের অধ্যাস অপভ্ভব। জ্ঞান ও বিষয়কে পরম্পর হইতে পৃথক করায় একদেশদশী 
জ্ঞানবাদ অথব] বিষয়বাদের ন্যায় ভ্রাস্ত মতের উত্ভব হয়। 

যেজ্ঞান নিজ বিষয়কে উহা যেরূপ নয় সেইভাবে জানে উহা ভ্রাস্তজ্ঞান। এইক্ূপ 
জ্ঞান জ্ঞানই নহে। নিজ কারণের কোন দোষের জন্যই এইরপ ভ্রাস্তির উৎপত্তি হয়। 
গ্রম। অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞান ভ্রাস্তির উপর নির্ভর করে না, কিন্ত ভ্রান্তি প্রমার উপর নির্ভর 
করে। শুক্তিতে রজতভ্রমের জন্ত একট! কিছু উজ্জল পদার্থের যথার্থ-জ্ঞান অত্যাবশ্থক | 


৩৯৭ 


গ্রাচা ও পান্চাতা দশের ইতিহাস 


যথার্থজ্ঞানের টৈশিষ্য এই যে, উহাতে বুদ্ধি ও প্রবৃত্তির লামঞীস্ত অথবা সংবাদ থাকে। 

তথাপি যাথার্থযের এইরূপ কোন পরিমাপক ব্যতীতই প্রম! নিজেই সাক্ষাৎ্ভাবে যথার্থ 

বলিয়! প্রতিভাত হয় । হুতরাং জ্ঞানের সত্যতা স্বতঃসিদ্ধ। শুধু সন্দেহের স্থলে উক্ত 
ংবাদ রূপ পরিমাপক সত্যনির্ণয়ের সাহায্য করে। মিথ্যাজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য হইতেছে উক্ত 
ংবাদের অভাব । এই সংবাদের অভাব হইতে যিথ্যাত্বের অগমান কর! হয় । 

এরূপ বলা সমীচীন হইবে না যে, কোন জ্ঞানের যাথার্থ্য উহার কারণ সামগ্রার 
(যথা--ইন্জরিয়, বিষয় প্রভৃতির ) গুণ হইতে অন্যান কর! হয়, কারণ এরূপ বলিলে 
জ্ঞানের স্বরূপগত ধর্ম-প্রামাণ্যকে জ্ঞানবহিভূতি কারণের উপর নির্ভরশীল বলিয়া মাঁনিতে 
হয়। জ্ঞান যদি স্বরূপেই যথার্থ না হইত (অর্থাৎ যদ্দি উহা বিষয় যেরূপ সেইরূপেই 
বিষয়কে না জানিত ) তাহা হইলে ইহাই সিদ্ধান্ত করিতে হয় ষে, (১) জ্ঞান বিষয়হীন 
এবং তাহার মধ্যে এমন কিছু নাই যাহাদ্বার] উহার ব্যাখ্যা হইতে পারে (২) এবং জ্ঞান 
কতকগুপি বাহ্‌ কারণের উপর নির্ভর করে। 

বিষয় যেইরূপ জ্ঞান উহাকে সেইভাবেই গ্রহণ করে। উহা “সাক্ষী'রূপ আত্মার 
নিকট প্রতীত হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে একটি “দাক্ষী* আছে। প্রত্যেক চেতন 
জীবের জীবনে যাহা কিছু ঘটে, তাহার সবই এই “সাক্ষী' জানে। 

আত্মা, জ্ঞাতা, জ্ঞান, “সাক্ষী” এবং উহাদের স্বপ্রকাশ স্বভাব এইগুলি কেবল একই 
তত্বের ভেদ । ইহারা যদি পরস্পর হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন হইত তাহা! হইলে উহাদের মিলনই 
সম্ভবপর হইত না। জ্ঞানের সম্বন্ধে বিশুদ্ধ অ-ভেদ অথবা অদ্বয়ের কথা বল! একাস্তই 
অযৌক্তিক প্রত্যেক অ-ভেদ সম্বন্ধের স্থলেই ইহাও অনিবার্ধভাবে জড়িত থাকে যে, যে 
ছুইটি পদ্দার্থকে অ-ভিন্ন বলিয়া! প্রতিপাদন করা হয়, তাহাদের মধ্যে কিছু নাকিছু ভেদ 
অবশ্ঠই থাকে । সুতরাং অ-ভেদ মাত্রই স-বিশেষ | পদার্থ সকলকে দ্রব্য ও গুণ এই 
ছুই ভাগে বিভক্ত করাও সমর্থনের অযোগ্য । 

“সাক্ষী? বলিতে স্বয়ং আত্মাই বুঝায় । ইহা সর্ব অবস্থাতেই অপরিবতিতরূপে বিছ্বমান 
থাকে । জাগ্রৎ অবস্থায় ইহা প্রত্যক্ষ, অন্গমিতি এবং শব্ধ প্রমাণদ্বার! জনিত জ্ঞানসকল 
সাক্ষাৎ্ভাবে দর্শন করে। 

প্রত্যক্ষ প্রধিতি হইতেছে “সাক্ষী”, মন, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা! এবং ত্বক এইসকল 
জ্ঞানেক্দ্িয়ের কোনও না কোনও একটির ব্যাপারের ফল। কিন্তু কোন ইঙ্জরিয়ই ব্বতক্রিয় 
নহে, ইহা আত্মাঘারা সঞ্চালিত হয়। সুতরাং আত্ম! একটি ক্রিয়াশীল তত্ব । প্রত্যক্ষ- 
জানের বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে, আত্মা ইহার বহিস্থ পদার্থন্বার' নিয়ন্ত্রিত 


হয় না। 


৩৯৮ 


বেদাস্ত-_বৈষ্য (ঈীশরবাদী ) সম্প্রদারসমূহ £ মধব ( দ্বৈত) রী 


হেতু ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ত সহচার (ব্যাপ্তি) আছে এবং কোন যোগ্য পক্ষে 
এইরূপ হেতু বি্যমান, এইয়প জ্ঞানের উপর নির্ভর করিয়। যদি হেতুর জ্ঞান হইতে সাধ্যের 
জ্ঞান হয়, তাহা হইলে এক্ূপ জ্ঞানকে অন্মিতি বলা হয়। ভুঁয়োদর্শন ছার! সহচার 
নির্ধারিত হয়। “বদি হেতু, তাহা হইলে সাধ্য” এইভাবে এই সহচার ব্যক্ত কর হয়। 

শব্দ্বার1 যাহা অভিপ্রেত হয় তাহার যথার্থ জ্ঞানের করণকে আগম বলে । আগম- 
দ্বার জনিত জ্ঞানের প্রামাণ্য হইতেছে উক্ত জ্ঞানের অবাধিতত্ব। 

জাগ্রৎ অবস্থায় আমাদের মন অতীত ইন্দ্িয়ান্ভৃতির ভিত্তিতে ম্ৃতি উৎপন্ন করে। 
স্বপ্রাবস্থাতেও মন অতীত ইন্দ্রিয়ান্ভৃতির ভিত্তিতেই ক্রিয়া করে। ম্বাপ্রিক বিষয়সকল 
তদ্রপে সত্য, কিন্তু উহাদের সত্তা জাগ্রত অবস্থায় প্রত্যক্ষোপলন্ধ বিষয় সমূহের সদৃশ 
নহে। মন ও বহিরিজ্র্রিয় সকল সুযুপ্তিতে ক্রিয়া করে না। ইহাতে প্রমাণিত হয় ষে, 
উহার! আত্মা হইতে ভিন্ন ; কারণ, আত্মা তখনও অপরিবতিত অবস্থায় থাকে । ইন্দ্রিয় 
সকল এবং মন বার! যে জ্ঞান উৎপন্ন হয় তাহা সর্বধাই কোন না কোন বিষয়ের জ্ঞান 
এবং এই বিষয় “সাক্ষী” বার] “ইদম্‌” রূপে গৃহীত হয়, কারণ উহা আত্মার বহিভূত। 
সর্ব বিষয়-জ্ঞানেই, মনের একটি “ইদম্‌*আকার বৃত্তি ( অবস্থ৷ ) থাকে । 

সুযুষ্তিতে একমাত্র সাক্ষীই ক্রিয়া করে । তখন উহা' বুষুন্তি-মগ্ন রূপে আত্মাকে এবং 
স্যুপ্তিজনিত আনন্দকে এবং আনন্দের স্থিতিকালকে জানে । “এখন পর্যস্ত আমি সুখে 
নিদ্রা বাইতেছিলাম”, পরবর্তাকালের এইরপ ম্থৃতি দ্বার এই কথার সত্যতা স্পষ্ট হয়। 
“সাক্ষী” জ্ঞান এবং মনের বৃত্তি-জ্বান এই ছুইয়ের মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ে 
পার্থক্য আছে। 

প্রথমটি বিষয় যেরূপ সেইরূপ ভাবেই উহাকে গ্রহণ করে, কিন্তু দ্বিতীয়টি কোন 
কোন সময়ে তাহা করে না। “অহম্‌*-এর “অহম্ রূপে জ্ঞান এবং অহং দ্বারা উপভূক্ত 
স্থখের জ্ঞান কখনও মিথ্যা বলিয়! প্রতিপন্ন হয় না, কিন্তু ইহ] রক্তত+ এই প্রকার জ্ঞান্স 
কোন কোন সময়ে সত্য নাও হইতে পারে । তাহা ছাড়া, “সাক্ষী,-জ্ঞান “বৃত্তি”জ্ঞানের 
উপর নির্ভর করে না। কিন্তু “বৃত্তি-জ্ঞান সর্বদাই “সাক্ষীজ্ঞানের উপর নির্ভর করে। 
“অহম্*এর জ্ঞান আমাদের মন-সাপেক্ষ নহে, কিন্তু “ইহা রজত" এই প্রকার বিষয়- 
জ্ঞানের সহিত “সাক্ষী” গৃহীত সময়ের জ্ঞান অপরিহার্ষভাবে জড়িত থাকে । সময়ের 
জ্বান মনের ব্যাপারদ্ব বলা জনিত হইতে পারে না, কারণ স্বপ্রহীন নিদ্রায় মন ক্রিয়া করে 
না, তথ|পি তখন সময়ের জ্ঞান থাকে । তাহা ছাড়া “সাম্ষী; হইতেছে ্ব-সংবেদ্ধ । উহ! 
বিষয়কে প্রকাশ করিবার সময় নিজেকে ও প্রকাশ করে, কিন্তু মনের বিকার বা অবস্থা 
্ব-সংবেদ্য নহে। তাহা ছাড়! বৃত্বি-জ্ঞানের বিষয় একটি বিশিষ্ট পদার্থ রূপে নিরপিত 


৩৯৪ 


প্রাচ ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


থাকে। কিন্তু বিশিষ্টরূপে নিন্ধপণ কর! মনের কার্য নহে। কারণ বিশিই পদ্ার্থট যে 
বিশ্বের অবশিষ্ট অংশ হইতে পৃথক্‌ তাহাই এই বিশেষ নিরূপণ ছার] ব্যক্ত হয়। অতএব 
উহার জন্য বিশ্বের অবশিষ্ট অংশের সাধারণ জ্ঞান পূর্ব হইতেই ধরিয়া লইতে হয়। কিন্ত 
এইন্প সাধারণ জ্ঞান মনের বৃত্তিজ্ঞানের গণ্তীর বাহিরে, কারণ মন যে বিশিষ্ট বিষয়ের 
সহিত ইন্দরিয়-ছ্বার! সন্বদ্ধ হয়, মনের বৃত্তি সেই বিশিষ্ট বিষয়ের মধ্যেই লীমাবদ্ধ থাকে । 
স্থতরাং এইরূপ সাধারণ জ্ঞান “সাক্ষী'র কার্ধ। 

পদার্থ সকলের ভেদ উহাদের বাহির হইতে উহাদের উপর আরোপিত নহে । ভেদ 
পদার্থের স্বরূপকেই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে । ভেদ অস্বীকার করিলে ন্ববিবোধ উৎপন্ন 
হয়। কারণ ভেদের নিষেধ উহার অ-নিষেধ হইতে নিশ্চয়ই ভিন্ন । 

জ্ঞান কখনও নিবিকল্প নহে । উহার প্রথম স্তরে উহা! সর্ব নিবূপক ধর্ম-শূহ্য বলিয়া 
উহা! নিধিকল্প এরূপ মনে কর! ভুল। প্রত্যক্ষজ্ঞানের সহিত মনের বৃত্তি জড়িত, মনের 
বৃত্তি 'পাক্ষী'-নিরপেক্ষ নহে, আবার সাক্ষী ম্ভাবতঃই উহার বিষয় যেইরূপ সেইভাবে 
( অর্থাৎ উহার প্রকৃত ধর্ম গুলির সহিত যুক্তভাবে ) গ্রহণ করে, স্থতরাং নিধিকল্প জ্ঞানের 
কল্পনা ভ্রান্ত বলিয়! প্রতিপন্ন হয়। তাহ! ছাড়া এইরূপ মত পোষণ করাও সঙ্গত নহে যে 
চিন্তা ও ধ্যানদ্ার] নিবিকল্পজ্ঞান লাভ কর] সম্ভবপর; কারণ এরূপ জ্ঞানের জন্তও যে মন 
এবং সাক্ষী'র ক্রিয়া আবশ্টক তাহা কখনও অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং নিধিকল্ল 
জ্ঞান সন্বন্বীক্স মত জ্ঞানের ত্বরূপের সহিতই বিসঙগত। 

নিধিকল্প জ্ঞান বিষয়ের স্বূপের সহিতও বিসঙ্গত। প্রত্যেক বিষয়ই তন্সধ্যস্থ বিভিন্ন 
উপাদ্দানে গঠিত একটি সুসংবদ্ধ পুঞ্জ । তাহা ছাড়া উহা বছ বিষয় দ্বার] সংগঠিত একটি 
স্ুসংবদ্ধ পুগ্রেরও অস্তর্গত। উহা নিজেও ভেদযুক্ত একটি এক্য। আবার, উহা! যে 
সুশৃঙ্খল পুণ্ধের অন্তর্গত তাহার অন্তান্ত অংশের অপেক্ষায় উহাকে একটি এক্যান্তর্গত 
বিশেষ বলিতে হইবে । উহা! যে হুশৃঙ্খলপুঞ্জের অন্তর্গত উহা! হইতে উহাকে কিংব' 
উহার কোন বূপকে নিক্ষর্ষণ করা সমর্থনীয় নহে । কিন্তু এইন্ধপ নিষ্র্ষণ ব্যতীত নিবিকল্প 
জ্ঞান অসম্ভব । 


মধব আগম সম্বন্ধে বিশেষভাবে আলোচনা করিয়াছেন। তিনি আগমকে 
প্রভৃত্বব্যঞক আদেশ বলিয়া মনে করেন নাঁ। প্রভৃত্ব ও আদেশ জ্ঞানোৎপত্তির পরিপন্থী । 
উহার শুধু কোন কার্ধের প্রণালী সম্বন্ধে উপদেশ দেয়। কিন্তু শান্ত্বাক্য স্বরূপতঃ 
জ্ঞানেরই একটি করণ। 


বেদাস্ত-_বৈধ্ব ( ঈশ্বরবার্দী ) সম্প্রদায়সমূহ ঃ মধব (দ্বৈত ) 


মধব শব্দপ্রমাঁণের প্রকরণে প্রধানতঃ বেদসমৃহ এবং উপনিষদ সকলকেই 
আলোচনা করিয়াছেন । তিনি দেখাইয়াছেন যে, প্রতাক্ষ, অন্গমিতি এবং শাবজ্ঞান 
এই তিনটি একই বোধ-প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ত্ভর। তাহার মতে সত্বস্তর সর্ধান্তর্ভাবী 
এবং স্বতোবোঁধগম্ জ্ঞান বেদ হইতে লাভ করা যায় । 

মধব বলেন যে, বেদকে এইভাবে বুঝার অর্থ হইতেছে উহাকে সর্ব বথার্থ- 
জ্ঞানের জন্তই অপরিহার্য বলিয়া বুঝা । প্রত্যক্ষ, অনুমান এমন কি শব্দপ্রমাণও 
আংশিক সত্যের জ্ঞান প্রদান করে । কিন্তু বেদের সাহায্যে উহারা সমগ্র সত্যের 
জ্ঞান দিতে সমর্থ হয়। স্থতরাঁং বেদ হইতেছে প্রজ্ঞার ভাঁষা, সমগ্র সত্ত। উহার 
দৃষ্টির বিষয় । 

বেদের বিভিন্ন বাক্যসমূহ যে পরস্পরবিরোধী উক্তি বলিয়! মনে হয় তাহার 
কারণ আমাদের মনের বিক্ষেপ। আংশিক মত্যের প্রতি আকর্ষণ হইতে বিক্ষেপ 
উৎপন্ন হয়। সর্ব বেদের একই উদ্দেশ্ত এই কথ হৃদয়জম করিলে বুঝিতে পারা 
যাইবে যে, সর্ব প্রমাণের এবং তজ্জন্যই সর্ব জীবনেরও একই উদ্দেশ্ত । এই কথার 
সত্যতা উপলদ্ধি করিলে বেদের বিশেষ বিশেষ অংশ হইতে অন্তান্ত অংশ হইতে 
পৃথকৃভাবে বিবেচনা কর অথব। অন্ত অংশের তুলনায় অধিক মূল্যবান বলিয়া মনে 
করা যায় না। 

মুণ্ডক-উপনিষদের অন্গসরণ করিয়। মধব বৈদিক বাক্যের ব্যাখ্যার জন্ত উচ্চ ও 
নিম্ন এই ছুই প্রকার দৃষ্টির পার্থক্য স্বীকার করিয়াছেন । প্রথমটি লৌকিক দৃষ্টিতে 
বেদবাক্যের ব্যাখ্যা করে, দ্বিতীয় দৃষ্টিতে বেদকে অক্ষর সত্যের প্রকাশক বলিয়া 
গ্রহণ করা হয়। উচ্চ দৃষ্টি ও নিম্ন দৃষ্টির মধ্যে কোন অপরিহার্য বিরোধ নাই। 
নিম দৃষ্টির ঘাহ। কিছু তাত্পর্য তাহার সব কিছুই উচ্চ দৃষ্টির মধ্যে অস্ততু্ত হয়। 
কারণ, প্রকৃতপক্ষে এই উচ্চ দৃষ্টির অর্থ হইতেছে ক্ষর বস্তর মধ্যে অ-ক্ষর বস্তকে 
দেখা । এই জন্যই মুণ্ডক-উপনিষদে এই সিদ্ধাস্ত কর হইয়াছে যে “বেদের প্রত্যেক 
বাকাই অ-ক্ষর বস্তর জ্ঞান প্রদান করে ।৮ 

অ-ক্ষরের জ্ঞান প্রদান করাই সমগ্র বেদের তাৎপর্য এই কথা বুঝিতে হইলে 
সমধিক অস্তদৃ-্টি এবং গভীর অধ্যয়ন আবশ্তক। এই অস্তদূ্টি অথবা অধ্যয়ন 
যে বহু অস্তদূষ্টি অথব! অধ্যয়নের অন্যতম তাহা নহে। সর্ব অস্তদূষ্টি অথব। অধ্যয়নের 
উৎস ও উদ্দেশ্ঠই হইতেছে এই একমাত্র অন্তরূ্টি বা অধ্যয়ন। এই অর্থেই মুণ্ডকে 
এই সিদ্ধাস্ত কর। হইয়াছে, *ত্রক্মবিচ্যা হইতেছে সর্বজ্ঞানের উৎস এবং উদ্দেশ্য 1” 

অ-ক্ষর বস্তর জ্ঞান কিভাবে হইতে পারে সমগ্র বেদ যে কেবল এই সত্যেরই 


৪০১৬ 
৫১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চতা দর্শনের ইতিহাস 


উপদেশ দেয়, তাহ! চিন্তার একটি নিয়মিত প্রণাঁলীর ফলে উপলব্ধ হয়-_ ক্রমান্বয়ে 
শ্রবণ ( বেদবাক্যে যথার্থ অর্থবোধ ), মনন (বিচার) এবং নিদিধ্যাসন (সত্যের 
উপলব্ধি) এই চিস্তাপ্রণালীর অস্ততৃক্ত। সমগ্র বৈদিক চিন্তার সর্ববূপে যে একটি 
অস্তনিহিত সামগ্ুস্ত রহিয়াছে তাহ। হৃদয়জম করিবার ইহাই প্রণালী । 

হ্ৃতরাং মধবের মতাঁনুসারে বেদ প্রত্ৃত্বব্ঙগক আদেশ অথবা উপদেশ অথব। 
প্রত্যাদেশ নহে । ইহ! বিভিন্ন বাক্তিকর্তৃক নিজ নিজ বুদ্ধি অন্থসাঁরে সত্যের বিভিন্ন 
স্তর এবং আকারের ব্যাখ্যা নহে । ইহ বিভিন্ন কবি বা! দাশনিক কর্তৃক নিজ নিজ 
বিশ্বাসান্ঘায়ী রচিত শব্দপ্রমীণ নহে। ইহা কর্ম, ভক্তি এবং জ্ঞানরূপ সাধনার 
বিভিন্ন ভূমি সম্বন্ধে শিক্ষা দেয় না। ইহা জগতের শাঁসকরূপে দেবতাদের অস্তিত্বে 
বিশ্বাস সমর্থন করে না এবং তাহাদিগকে উপামন1 করিতে উপদেশ দেয় না। জগৎ 
এবং তাহার উপার্দীনসমূহ সন্বদ্ধে বিভিন্ন মতও পোষণ করে ন1। 

কঠোপনিষদকে অনুসরণ করিয়। মধব বলেন যে, বেদের প্রকৃত উপদেশের মর্ 
বুঝিতে ন! পাঁরিলে আধ্যাত্মিক শান্তি লাভ করিতে পারা যায় নাঁ। আধ্যাত্মিক 
পূর্ণতার চরম পরিণতি হইতেছে মোক্ষ। ইহা সম্ভবপর হইলে বেদ অপরিহার্ধ। 
সাধারণ-বুদ্ধি বেদ সম্বন্ধে যে সকল ধারণ! প্রয়োগ করে, কেবল যে সেগুলিকে বর্জন 
করিতে হইবে এইরূপ নয়, পরস্তু উচ্চতর-প্রজ্ঞ। অর্থাৎ বেদকে অপরিহার্য বলিয়। সঙ্ঞানে 
ত্বীকাঁর করিলে তবেই বেদ ত্বীকার কর! হয়। আরও, বেদকে গ্রহণ করার অর্থ 
হইতেছে বেদের সর্বত্র যে একটি অস্তনিহিত সামগুস্ত রহিয়াছে তাহা হৃদয়ঙ্গম করা 
এবং তঘ্বার! সর্বব্যাপী সত্যই যে. বেদের লক্ষ্য তাহা উপলব্ধি করা। 


৩ 


মধবের মতে প্রকৃত বেদার্৫থ উপলব্ধি করিতে হইলে যাঁহ। আবশ্যক তাহ] ত্রন্গস্ত্র 
অর্থাৎ ব্রহ্ম-মীমাংস। অর্থাৎ ব্র্ষ-সন্বদ্ধীয় দর্শনে আছে। ব্রহ্ম-স্ত্র হইতেছে বুদ্ধির 
ভাষা, ইহা সমগ্র বেদের এক্যকে প্রকট করে। বেদের প্রকৃত ব্যাখ্য। কি হইবে 
তাহ। একমান্র ইহাই নির্ণয় করে। ইহা! ব্যতীত বেদ অবোধ্য। 

স্থতবাং ব্রন্মস্থত্র এবং বেদ একই বিছা । ইহাদের প্রত্যেকেই অপরটি ব্যতীত 
অবোধ্য। প্রথমটি ছ্িতীয়টির অন্তনিহিত সামওস্যকে প্রকাশ করে বঙিয়। দ্বিতীয়টিতেই 
লীন হইয়। যায় এবং তাহার পর যাহ! থাকে তাহ হ্বরূপতঃ বেদ ভিন্ন অন্য কিছু নছে। 

ইহা প্রদর্শন করাই মধবের রচনাবলীর উদ্দেশ্ত। যে এক্যবিধায়ক নীতির প্রয়োগ 


৪০২ 


বেদাস্ত--বৈষ্ব € ঈশ্বরবাদী ) সন্প্রদায়সমূহ ই মধব (দ্বৈত) 


ব্যতীত বেদের মন্ত্রগুলির অর্থ ভ্রাস্তিজনক এবং ম্ব-বিরোধী হইয়া পড়ে সেইরূপ কোন 
নীতির সাহাঁধ্যে কোন স্থন্তর বিশেষ বিশেষ অংশগুলির অর্থ নির্ণয় করিয়াছে তাঁহ। 
তিনি প্রত্যেক সুত্র প্রসঙ্গে দেখাইয়াছেন। উদ্ণাহরণন্বরূপ, পুরুষ-সুক্তটির একটি 
ংশের দাধারণ অর্থ লওয়। যাক । ইহাতে বল! হুইয়াছে_-“ধিনি পুরুষকে এইভাবে 

জানেন তিনি অমর হুন।” জ্ঞানই অম্বতত্তের কারণ এই স্ুতক্তটি যেন ইহাই বলিতেছে 
আপাততঃ এইবপ মনে হয়। কিন্তু তাহ। হইলে সর্ব-কারণ ব্রহ্মকেই অস্বীকার 
করিতে হয়। পতৈত্তিীয় উপনিষদে বল! হইয়াছে, “যাহ! হইতে সকল জীব জন্মগ্রহণ 
করে তাহাই ব্রহ্ম ।” ব্রহ্ম যদি সকলের কাঁরণ হন, তাহ! হইলে জ্ঞান কি করিয়। 
অমৃতত্বের কারণ হইতে পারে? অথধ।, জ্ঞান যদি অমৃতত্বের কারণ হয়, তাহা হইলে 
ব্রক্ম কি করিয়া সকলের কারণ হইতে পারেন ? সুতরাং জ্ঞান অনৃতত্বের কারণ এই 
ধারণ! ব্রদ্দ আছেন এই সত্যের বিরোধী । 

এই বাক্যটিতে যে এই আপাত প্রতীয়মান অর্থ আরোপ কর! হয়, তাহার কারণ 
লৌকিক ভাষার প্রভাঁব। কিন্তু ব্রন্মস্ত্রের প্রথম স্ত্রটি লৌকিক রীতির অপপ্রভাব 
ব্যর্থ করিবার জন্য সমস্ত বস্ত সম্বন্ধে একটি অখণ্ড দৃষ্টি লইয়া! দেখাইয়াছে যে, তত্ব- 
জিজ্ঞাসাদ্বারা লব্ধ ষথার্থ-জ্ঞান ত্রন্মের প্রসাদ অথব৷ স্বাধীন ইচ্ছ! হইতেই উদ্ভূত হইয়া 
থাকে, স্থতরাং অম্ৃতত্ব এই ইচ্ছার ফল। ব্রন্দস্থত্রে প্রদত্ত এই নিয়ামক বিধি প্রয়োগ 
করিলে বুঝা যায় যে, আলোচামাঁন বাক্যটির স্বাভাবিক অর্থ হইতেছে, জ্ঞানছবার। 
অমৃতত্বলাভও শেষ পরধস্ত ব্রদ্ধের প্রাদেই ঘটিয়া থাকে । 

এই প্রসঙ্গে মধব তাহার মতের বিরোধী যে সকল মত সম্ভবপর তাহাদিগের 
সকলকেই সযত্বে এবং পুঙ্থান্ুপুঙ্খভ1বে পরীক্ষা করিয়াছেন। তিনি দেখাইয়াছেন যে, 
তাহাদের প্রধান দোষ হইতেছে ব্ব-বিরোধিতা । উদাঁহরণন্বরূপ, যে মতে কর্ম বা 
ভক্তিকে মুক্তির উপায় বল৷ হইয়াছে, তিনি তাহার দোষগুলি দেখাইয়াছেন। জ্ঞান্ম 
কর্মের অপেক্ষিত | স্থতরাঁং কর্ম জ্ঞানের সক্্রিতার অভিব্যক্তি । ভক্তি হইতেছে 
জ্ঞানের মধ্যে অন্থরক্তিবূপ উপাদান । স্ৃতবাং ইহ। জ্ঞানের প্রগাঢ়তার অভিব্যক্তি। 
কর্মকে জ্ঞান হইতে পৃথক্‌ করিলে জীবই কর্তা ইহা শ্বীকার করিতে হয়, কিন্তু তাহা 
হইলে ব্রহ্মই যে সর্ব-কর্তা ইহ। অস্বীকার করিতে হয়। ভক্তিকে জ্ঞান হইতে পৃথক্‌ 
করিলে জীব যে অনাত্বা ইহা সমর্থন করা হয়। 

ঈশাবাস্তোঁপনিষদের ভাষায় অবৈধ পৃথক্‌-করণ অথব। আংশিক জ্ঞান হইতেছে 
অবিদ্া এবং সামগ্রিক জ্ঞানই হইতেছে বিচ্যা। অবিগ্যাঁকে অবিচ্য। বলিয়! না বুঝিলে 
জ্ঞানের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি কর! যায় না। কিন্তু ইহাদের মধ্যে কেবল একটিতে 


৪৬৩ 


প্রাচ্চ ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মাত্র মনঃদংযোগ করিলে কোঁনটিরই প্ররুত তাৎপর্যবোধ হইবে না। ক্রন্ম (ইশ) 
এই ছুইয়েরই অঙ্টা। জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদনের জন্য তিনিই অবিদ্যা স্থষ্টি 
করিয়াছেন। অবি্যা স্থট্টি করাঁর অর্থই হইতেছে এমন কতকগুলি অবস্থ। স্হ্টি 
কর যাহার মধ্য দিয়! অবি্য। স্ষ্ঠুভাবে জ্ঞানের বিরোধিতা করিতে পারে। ইহার 
ফলে জ্ঞান শেষপর্ধস্ত আপন মহিমাঁয় দীপ্ত হইয়া উঠিতে পারে। 

এই নকল বিবেচন। করিয়া মধব জ্ঞানকে নিক্ষিয় চৈতন্যবূপে নম, পরস্ত যথা ক্রমে 
শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনমূলক একটি সক্রিয় ব্যাপার বলিয়। ব্যাখ্যা করিয়াছেন । 
(১) অবিদ্ভাকে বর্জন (২) জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব উপপাদন এবং উহার মৃল্যোঁপলব্ধি 
(৩) এবং ঘষে উপারদ্ানটির উপর জ্ঞান-প্রক্রিয়ার অবিচ্ছিন্নতা৷ নির্ভর করিতেছে তাহার 
রক্ষণ-_-এইগুলি হইতেছে এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ । অবিগ্যাকে বর্জন কর! হইয়াছে, কারণ 
যে হেতুর উপর ইহা প্রতিষ্ঠিত তাহা অযৌক্তিক | জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত কর! হইয়াছে, 
কাঁরণ যে নিয়ম ইহার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন করে তাহ! নির্দোষ । অজ্ঞেয়বাদীর বিরুদ্ধে 
জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করিতে গিয়া মধব ছুইটি মান ব্যবহার করিয়াছেন । যে অজ্জানকে 
সমর্থন করে জ্ঞানের সহিত তাহার আঁদেৌ পরিচয় নাই। সুতরাং সে অজ্ঞানকে 
তাহার নিজ দৃষ্টিভঙ্গী হইতেই আলোচনা করে। কিন্তু জ্ঞানের নিজেরই মৃল্য- 
নির্ধারক মান আছে। মধব সম্পূর্ণভাবে এই মানাহ্যায়ী জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন 
করিয়াছেন । জ্ঞানের বিশেষত্ব এই যে, একবার ইহার মৃল্যোঁপলন্ধি হইলে ইহাকে 
আর পরিহার করা যায় না। এই তথ্যকে উপলব্ধি করিয়া তিনি দেখাইয়াছেন যে, 
অজ্ঞান তাহার নিজের দ্বারাই অর্থাৎ তাহার অন্ততূক্ত স্ব-বিরোধ দ্বারাই খণ্ডিত 
হয়। 

জ্ঞানের প্রকৃতিই এই যে, ইহা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। পূর্ণ হইতে পূর্ণতর 
হইবার দ্দিকেই ইহার গতি। মধব মনে করেন যে, এই তথ্য উপলব্ধি করাই শ্রেষ্ঠ 
তপন্যা। তিনি বলেন, “এক মুহূর্তের জন্যও কাহারও জ্ঞান অর্থাৎ ব্রহ্ম-জিজ্ঞাস। 
ব্যতীত থাঁক। উচিত নয়। যদি নিদ্রা! ইত্যাদির জন্য কোনও সময়ে কোন ব্যক্তির 
এই জ্ঞানের বিরতি হইয়া থাকে, তাহ। হইলে চৈতন্তলাভ করিবার পরক্ষণেই পূর্বের 
ম্যায় উহার অন্শীলন করিতে থাকা উচিত ।” তত্ববিদ্ার সমগ্র প্রক্রিয়া হইতে 
বুঝা যাঁয় যে, কিন্ধপে কর্ম এবং ভক্তি ব্বর্ূপতঃ জ্ঞান হইতে পারে । শ্রবণ হইতে 
মনন এবং মনন হইতে নিপিধ্যাসন পর্যস্ত যে গতি উহাঁরা তাহারই অভিব্যক্তি । 
এই সত্য উপলদ্ধি করিলে সমস্ত বেদ যে একটিমাত্র উদ্দেশ্ঠদার। অনুপ্রাণিত তাহা 
আমরা বুবিতে পারি। 


বেদাস্ত-_বৈষ্ব ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদারসমূহ £ মধব (দ্বৈত) 


৪ 


মধব দেখাইয়াছেন যে, ব্রহ্মবিদ্যা অপেক্ষা বেদকে অধিক গুরুত্ব প্রদান কর নিচ্ষল। 
ব্রহ্ম নিবিশেষ এই মতবাদ (শংকরের) এবং ব্রহ্ম শরীরী এই মতবাদ (রামাছুজের) এই 
সত্যের উদাহরণ । এই দুইটি মতবাদ বেদের বিশেষ বিশেষ বাক্যের আপাতপ্রতীয়- 
মান অর্থের উপর প্রতিষ্ঠিত। ক্তরাং এগুলিও ছৈতবাদের উদাহরণ এবং তাহার] 
যে সকল সমন্ত। সমাধান করিতে পারে তাহাদের অপেক্ষা অধিকসংখ্যক সমস্যা 
নষ্টি করে। নিগুণ বস্ত সগুণ বস্তর বিরোধী । নিগুণ বস্তকে ম্বীকার করার 
অর্থই হুইতেছে উহাকে অস্বীকার করা । আবার, অবিদ্যাঁও দ্বৈতকে ব্যাখ্য। করিতে 
পারে না। ত্রক্ম নিগুণ হইলে অজ্ঞানের আধার হইতে পারেন না। সুতরাং 
অবিচ্যা নিরাধাঁর। অবিগ্যা এবং নিগুণ ব্রন্ষের একত্রাবস্থান সম্ভবপর নহে। 
অবিদ্যার উপর অধিক গুরুত্ব অর্পণ করিলে ব্রন্গের বিপরীত দিকে স্ব-তন্ এবং চরম 
তত্বরূপে অবিদ্ভাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। 

ব্রহ্ম শরীরী এই দ্বিতীয় মতবাদটিও দ্বৈতের অভিব্যক্তি । ইহ! হইতেছে দ্রব্য 
এবং গুণের ত্বেত। তাহাদিগকে সম্বদ্ধ করার চেষ্টা করিলে ছেতবাঁদই সমধিত হয়। 

বেদ-ব্যাখ্যায় ব্রন্মবিদ্ার প্রয়েগ করিলে ব্রন্ম সম্ঘন্ধে এক সম্পূর্ণ বিভিন্ন ধারণা 
পাওয়া যাঁয় ইহা মধব বুঝেন। এই মতকে ব্যক্ত করিতে গিয়৷ তিনি বৈদাস্তিক 
চিন্তাকে তাহার চরম পরিণতিতে উপনীত করিয়াছেন । তাহার মতে কেবলমান্র বেদে 
ত্রহ্মবিদ্ভার প্রয়োগ করিয়। ব্রহ্মসন্থদ্ধে ধারণালাভ কর] যাঁয়। স্থতরাঁং ইহা বৈদিক। 
যাহা নিগুণ তাহার পক্ষে বৈদিক হওয়! স্ববিরোধী । শরীরীরূপে ব্রন্মের ধারণ। 
দ্রব্য, গুণ এবং তাহাদের সম্বন্ধের ব্যবহারিক ভেদ্দের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বেছে 
যে ব্রহ্ম সম্বন্ধে উপদেশ দেওয়া হইয়াছে তিনি সকল ব্যবহারিক ভেদের অতীত । 

জ্ঞানের করণ হিসাবে বেদের স্থান অন্তান্ত করণগুলির উর্ধ্বে। ইহা উহাদ্দিগকে 
অসার প্রতিপন্ন করে না, কিন্তু উহাদ্দিগকে নৃতন তাৎপর্য দান করে। উদ্দাহরণ- 
ত্বব্ূপ বলা যাইতে পারে যে সাধারণতঃ মনে কর! হয় যে প্রত্যক্ষ একটি বাহাবস্কে 
উপস্থাপিত করে । শুদ্ধ তত্ববিগ্ঠার্ূপে যদি বেদ দেখায় যে এই বস্ত ইহার অস্তনিহিত 
তত্ব ত্রন্দের প্রকাশ, ভাহ। হইলে প্রত্যক্ষ আর বেদ নিরপেক্ষ থাকিতে পারে না। 
এই অবস্থায় ইহা সাধারণ বস্তর পরিবর্তে সেই বস্তর অস্তনিহিত তত্বকে প্রকাশ 
করে। এই অনুভূতিতে বস্তর আধার জ্ঞানে নিমজ্জিত হইয়! যায়, এবং বস্ত ইহার 
আধার ব্রদ্মের সহিত এক হইয়। ষায়। 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


এইভাবে বেদ জ্ঞানের অন্যান্ত করণগুলিকে অস্বীকার ন। করিয়া তাহাদিগকে 
অতিক্রম করিয়৷ যায়। ঠিক সেইক্প ব্রহ্মও অন্যান্য বস্তকে অস্বীকার ন। করিয়া 
তাহাদিগকে অতিক্রম করিয়। যান। হ্তরাং জ্ঞানের কোন করণই বেদের আলোকে 
উদ্ভাসিত ন! হইয়! থাকে না। ঠিক সেইক্প ব্রন্মের বাহিরে কোন বস্তও থাকে ন]। 
বেদই সকল জ্ঞানের করণের উৎপতিস্থল। আবার ব্রহ্ম ই সকল বস্তর উদ্দিষ্ট বস্ত। 
বেদ জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ করণ। সেইবপ ব্রহ্দ চরম সত্বস্ত। সুতরাং বেদ জ্ঞানের চরম 
উৎপতিস্থল, সেইরূপ, ব্রহ্ম ই একমাত্র সঘ্বস্ত। 

মধব দেখাইয়াছেন যে, কেবল তত্ববিদ্ভার সাহায্যে এইরূপ সিদ্ধান্তে পৌছাঁইতে 
পার! যাঁয়। তত্ববিদ্যারূপে ছান্দোগ্য এই সিদ্ধান্তে পৌছিয়শছেন ষে, ব্রহ্ম অদ্বিতীয় 
( একমেবাদিতীয়ং ব্রহ্ম )। ধাহারা মনে করেন যে, ব্রহ্ম অদ্বিতীয় বলিয়া জগৎ 
অসৎ, অথব৷ ব্রহ্ম এক স্থতরাং জগৎ তাহার শরীর, তাহার কেবলমাত্র শব্দ প্রমাণ 
বলিয়। মনে করেন এবং ইহাতে লৌকিক অর্থ আরোপ করেন। 

জগতকে অসং বলিয়া! মনে করিলে এইরূপ কল্পনাকেই অসম্ভব বলিয়। প্রতিপাদন 
কর] হয়। এই জগৎ ব্রন্মের শরীর এইরূপ মনে করিলে ব্রহ্ষকে কোন বহিস্থ বস্ত 
দ্বার সীমিত করা হয় । ক্ৃতরাং ব্রক্ধবিদ্ভার নিকট এই সকল সিদ্ধান্ত ঈাঁড়াইতে 
পারে না। স্কতরাঁং ইহাদের মধ্যে কোনটি বেদের অভিমত নয়। 

ব্রদ্ধ অদ্বিতীয় বেদের এই মত ব্রহ্মবিদ্যার ফল। ইহার নিহিতার৫থ এই যে, জগৎ 
সত্য এবং এইজন্য ইহার প্ররুত আশ্রয় কি তাহ। আবিষ্ণার করার সমস্যা উদয় হয়। 
বেদ জগতের যে সত্যতার নির্দেশ দেয় তাহ! এইব্সপ যে, উহা' ব্রন্মবিদ্ভাকে অপরিহার্য 
করিয়। তুলে । 


৫ 


“তাহার সম্বন্ধে অন্গসন্ধীন কর,” “শ্রদ্ধার সহিত্ত ব্রহ্ম-জিজ্ঞাসা কর” বেদের 
এই বাক্যগুলি দ্বার বেদের যে মত ব্যক্ত হয় তাঁহ। এই যে, ত্রহ্মবিছ্য। ছার? ব্রহ্ম 
লাভ করিবার চেষ্টা করা উচিত। বৃহদারণ্যক উপনিষদে ত্রদ্ষবিদ্ভার বর্ণনা 
এইরূপ কর] হইয়াছে, “আত্মাকে পাইতে হইলে আত্মাকে শ্রবণ মনন এবং নিদিধ্যাঁসন 
করিতে হইবে 1” ব্রদ্মস্তত্রে জ্ঞানকে যথাক্রমে শ্রবণ, মনন এবং নিদ্দিধ্যাপন এই 
তিনটি দ্বার] গঠিত ব্রহ্মবিদ্য। বলিয় বর্ণন৷ করিয়া! এই বাক্যগুলির অর্থ পরিস্ফুট 
কর! হইয়াছে । ব্রহ্ধকে যে ভাবে বেদে ব্যাখ্য। কর! হইয়াছে তাহার অর্থ গ্রহণ 


৪০৬ 


বেদাস্ত-_বৈষ্ব € ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদীয়সমূহ ২ মধব (দ্বৈত) 


করাই শ্রবণ। সমস্য ব্যবহারিক ব্যাখ্যাই ঘষে অসম্পূর্ণ ইহা! আবিষ্কার করিলেই 
এই অর্থ গ্রহণ হয়। যাহার অর্থগ্রহণ হইয়াছে তাহাই মননের বিষয়। বেদের 
সমন্ত অংশগুলি সম্পর্কে আমাদের অর্থবোধকে পরীক্ষা কর। এবং সমগ্র বেদের 
অর্থবোধ হইয়াছে কিন। দেখা ইহাই হইতেছে মনন । যাহার অর্থ বোধ হইয়াছে 
তাহার প্রয়োগপ্রক্রিয়াই নিদিধ্যাসন। এই প্রক্রিয়াকেই ধ্যান বা উপাসনা 
বল! হয়। ধ্যান বা উপাসনাকে প্রচলিত অর্থে লইলে, অর্থাৎ ইহ! জ্ঞাত বস্তর 
প্রতি মনোযোগ একপ মনে করিলে, উহ1 আধ্যাত্মিক উন্নতি রোধ করিবার প্রক্রিয়। 
হইবে। ব্রহ্মবিছ্যা। বাঁসনাসমূহ হইতে মু।ক্তর অভিব্যপ্রক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিই 
ইহার বৈশিষ্ট্য । সুতরাং তত্ববিদ্া মানসিক শাস্তির জনক । ইহ! শিক্ষার্থীকে বেদ 
যেভাবে ব্রহ্মকে ব্যাখ্য। করিতেছে মেইভাবে ব্রহ্ধকে উপলব্ধি করিতে শিক্ষ৷ দেয়। 
মধব তত্ববিদ্যাকে শ্রেষ্ঠ সাধন! কেন বলিয়াছেন ইহাই তাহার অপর একটি কারণ । 

স্থতরাং তত্ববিচ্য। হইতেছে ব্রদ্ধের ভাষাম্ব্পপ বেদের অর্থ গ্রহণের প্রক্রিয়। ৷ 
কোন একটি উক্তিকে বেদ বলিয়া ধরিয়। লইয়া উহাকে বিচার দ্বার সমর্থন কর 
তত্ববিদ্া নহে । ইহা হইতেছে ব্রন্মের ভাষাকে বেদ বলিয়া স্বীকার কর|। 
স্থতরং তত্ববিদ্। এবং বেদ পরমাত্মার প্রকাশ । বুদ্ধির দিক হইতে তত্ববিদ্ধা 
প্রথমে আসে, বেদের আকার ধারণ করে এবং ইহার ভিত্তিতে অবশ্যভাবীব্ধপে 
অন্য তত্ববিদ্যা গড়িয়া উঠে। এই সত্য উপলব্ধি করিয়। মধব নিজেকে ত্যক্ত- 
বেদ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন, অর্থাৎ তিনি কেবলমাত্র একজন শান্্ব্যাখ্যাত। 
নহেন। ইহার সহিত সামপ্রন্ত বাঁখিয়। জয়তীর্থ বলিয়াছেন যে, ব্রদ্ম-স্যত্র বেদকে 
অনুসরণ করিয়া রচিত হয় নাই, কিন্তু ইহ! বেদের অর্থকে প্রকট করিয়াছে অথবা 
বেদকে আবিষ্কার করিয়াছে । 

ইহ কিন্ত বলা যাইতে পারে যে, এ পর্যস্ত ঘে সকল কথা বল হইল তদন্ুষায়ী 
মধবের চিন্তা অর্থাৎ ব্রন্ষ-মীমাংপার মর্ষয অহ্ধাবন করা কঠিন। কিন্ত মধব 
বলেন যে ইহা অপরিহার্য। তিনি বলেন যে, ত্রহ্ধকে উপলব্ধি করার অথই 
হইতেছে ত্রন্মই যে ত্রহ্ষকে উপলব্ধি করেন তাহ) উপলদ্ধি করা। বৈদিক ভাষ৷ 
ব্যবহার করিয়া বলিতে হয় যে, পরব্রক্ম নারায়ণ যেভাবে নিজেকে বাসুদেব অর্থাৎ 
সর্বাস্তরাবী বলিয়! জানেন তাহাই ব্রহ্ধবিদ্যা । ব্রহ্ম একাস্তভাবে সবাস্তর্ভাবী বলিয়৷ 
বেদে বাদরাঁয়ণ, নারায়ণ বা বান্ুদেবকে বিষণণ বলা হইয়াছে । সুতরাং ব্র্গ কর্তৃক 
নিজেকে বিষ্ণু বলিয়। জানিবার ঘষে প্রক্রিয়া তাহাই ব্রক্ষবিষ্যা। এই পরিকল্পন। 
অন্ুসারেই স্গ্রি হইয়া থাকে । স্থতরাঁং তত্ববিদ্ধা। হইতে ভিন্ন কিছুই নাই। এই 


৪০৭ 


' প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সত্য উপলব্ধি করিয়া মধব তত্ববিদ্যাকে বিষু-শাস্্র বলিয়াছেন । এই জন্তই এই 
শাস্্ এত ব্যাপক যে ইহা বিদ্যার সকল শাখা অর্থাৎ শাস্মেরই উৎপত্তিস্থল ও 
গম্তবাস্থল। ইহার অধ্যয়ন শ্রেষ্ঠ সাধনা এবং সকল সাধনার গুণই ইহাতে বর্তমান । 
এই সকল সিদ্ধান্ত প্রতিপন্ন করিবার জন্য মধব ব্রহ্ম-বিছ্যার ব্যাখ্য। করিয়াছেন । 


২.1 ব্রন্দ-সহ্ঘজ্দীম দশ্তিনল ব্যাখা? 


বৈদিক উপদেশসমূহের অন্তনিহিত এশ্বর্ধ আবিষ্ার করা এবং তাহার দ্বার! 
ব্রদ্মের অনন্ত এবং চরম পূর্ণতা অনুধাবন করাই ব্রদ্ষ-সন্বন্ধীয় দর্শন । জ্ঞানের সহিত 
অজ্ঞানের বিভিন্ন স্তরের সংঘর্ষ এবং তৎ-বিরুদ্ধে জ্ঞানের প্রতিষ্ঠ। এই এই্বর্বের কারণ। 
এই এশ্বর্ধকে প্রকাশ করিবার জন্য যে 'যুক্তি' প্রয়োগ কর! হয় তাহ বিশুদ্ধ বৈদিক 
যুক্তি। ইহা ব্যবহারিক যুক্তিকে অতিক্রম করে। এমন কিছু নাই যাহ! দ্বারা 
ইহাকে খগ্ডন কর! যাইতে পারে । এক অথণ্ড আধ্যাত্মিক দৃষ্টিই ইহার বিশেষত্ব। 
স্থৃতরাঁং ইহ] স্ব-প্রতিষ্ঠ। কিন্তু ব্যবহারিক জগতে এইরূপ যুক্তি প্রয়োগ করিতে 
গেলে উহাতে শ্ব-বিরোঁধ উপস্থিত হয়। ইহা নিজেকেই মিথ্য। প্রতিপন্ন করে) 
কারণ, ব্যবহারিক স্তরে কিছুই চরম নয়, কিছুই সম্পূর্ণ নয়। 

সাধারণভাবে এই সকল ধারপাকে ভিত্তি করিয়। মাধ্ব-দর্শনের মূল বক্তব্যগুলিকে 
বিবৃত করা যাইতে পারে । 


৯ 


অপূর্ণতাঁর বোধ হইতে পূর্ণতার ধারণা আসে । কোন কোন ক্ষেত্রে ইহা হইতে 
পূর্ণতার অর্থাৎ ব্রন্মের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহের উদ্রেক হয়। সন্দেহ হইতে দর্শনের 
উৎপত্তি। ব্রদ্ধ আছেন কিনা, ব্রহ্ষজ্ঞান লাভের কোন উপায় আছে কিনা, এইরূপ 
সন্দেহের উতৎ্পত্তি হইলে শান্তর অপরিহার্য হুইয়া উঠে । কিন্তু ত্রক্ষজ্ঞানের বিষয় 
নছেন এই অর্থে তাহার অস্তিত্ব স্বতঃসিদ্ধ এই কথা বলিলে দর্শনশাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা 
অন্ধীকাঁর কর হয়। কিন্ত কোঁন দার্শনিক মতকে পূর্বে শ্বীকার করিয়া লইলে 
তবেই দরশশনের প্রয়োজনীয়তা অন্বীকাঁর কর! যায়। সুতরাং ইহাতে ম্ব-বিরোধ ঘটে। 

ত্রদ্মের দৃষ্টিভঙ্গী হইতে জগৎকে দেখিলে তবেই তত্ববিদ্যা সম্ভবপর । সেই 
দৃষ্টিভঙ্গীর কোনিরূপ ব্যতিক্রম ঘটিলে তত্ববিদ্ধ। ভ্রান্ত হইয়। পড়ে । 


৪০৮ 


বেদীত্ত- _বৈষ্ব (ঈত্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ ২ মধব ( ছৈত ) 


মুক্তির ইচ্ছা হইতে দর্শনশান্ত্রের উত্ভব হয় না। ইচ্ছাই ছুঃখ | মায়া ইহার 
কারণ। মাঁয়া এবং তত্ববিষ্া পরস্পরবিরোধী । পূর্ব-সংস্কার হইতে মাঁয়ার উদ্ভব 
হয়, কিন্তু তত্ববিদ্যা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে ন1। ইহা! আনন্দ হইতে উদ্ভূত এবং 
আনন্দ-স্বরূপ | 

এই আনন্দ সর্বাতীত। ইহ! ব্যবহারিক জগতের উপর নির্ভর করে না। ইহা 
অনাসক্তির অভিব্যক্তি । ব্রহ্ম ব্যতীত আর কিছুই আমাদের প্রিয় হইতে পারে না 
এই বিশ্বাপ হইতেই এই অনাসক্তির উদয় হয়। ব্রন্ম ব্যতীত আর সব কিছুই 
সীমাবদ্ধ এবং দোষযুক্ত । 

তত্ববিদ্া মানুস্তের উদ্ভাবিত নয়। ইহ। মনুষ্তের মধ্যে দৈব উপাদানের প্রকাশ । 
ইহা ব্রন্মের করুণার ফল। 

জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ এবং জ্ঞানের বিষয় যে চরমতত্ব তাহা আবিষ্ষারের 
প্রক্রিয়াই তত্ববিদ্যা। ব্রহ্ম শব্টি এই ছুইটিকেই নির্দেশ করিয়৷ থাঁকে। জ্ঞানের 
আদিকাঁরণ-রূপে ব্রন্ধ নিত্য, নির্দোষ, স্বতঃপ্রমাণ এবং অ-পৌরুষেয়। এই অর্থে 
ইহাকে বেদ বল! হয়। সত্ভারূপে ব্রহ্ম পূর্ণ। যিনি পূর্ণ তিনি সর্বশক্তিমান, সব 
কিছুর সত্ব। তাহ! হইতেই আসিয়। থাঁকে । যাহ সৎ তাহার (১) স্বরূপ (২) প্রমিতি 
এবং (৩) প্রবৃত্তি আছে । সর্ব-কর্তা এবং সর্ব-দাঁতারপে ব্রন্ধকে বিঞু বলা হয়। 

হুতরাং ব্রহ্ম-সন্বন্ধীয় দর্শন এবং বিষু্-সম্বন্ধীয় দর্শন একই | ইহা স্বীকার না করাই 
বন্ধন। ইহা বুঝিলেই মুক্তি। ছুই-ই বিষ্ণুর কার্য। বিষুণ সাধন এবং সাধ্য 
উভয়ই । বেদকে শুদ্ধ তত্ববিগ্ভারূপে গণ্য করিলে একমাত্র বেদ হইতেই এই জ্ঞানের 
উদ্ভব হইয়! থাকে । এই জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক ধারণা এবং প্রত্যেক শব্দ 
এশ্বরিক সত্যের অভিব্যক্তি হইয়া দীড়ায় এবং সমগ্র জগৎ বিষ্ণপিত হইয়! যায় । 


চ 


পূর্-রূপে ব্রন্ধ (বিষণ) বুদ্ধির অতীত। কিন্তু তিনি নিত্য এবং অপরিহার্য। 
ব্রন্ধই সব কিছুর কারণ এইভাবে দেখিলে তিনি বুদ্ধিগম্য হন। 

চেতন-আত্ম৷ অথবা বিষয়ীনমৃহ এবং বস্তসমূহ লইয়। এই জগৎ গঠিত। জীবাত্মা 
বছ। ইহার আটটি অবস্থার মধ্য দিয়া গমন করে-_ অস্তিত্ব, ধ্বংস, সাপেক্ষ 
অবস্থিতি, জ্ঞান, অজ্ঞান, বন্ধন ও মুক্তি । বিভিন্ন জীবের পক্ষে এই সকল অবস্থার 
তারতম্য ঘটে। সকল আত্মাই পরস্পরকে প্রভাবিত করে। সেইজন্য কেহই 


৪০৪ 


৫২ 


প্রাচ্য ও পাঁন্াত্য দর্শনের ইতিহাস 


ঈম্পৃ স্বাধীন নম্ন। যদিও প্রত্যেক জীবের স্বকীয় সতা আছে, তাহা হইলেও 
অন্যদের উপর একের প্রভাব অত্যধিক হইতে পাঁরে। যাহাতে পরিবর্তন ঘটিতে 
পাঁরে তাহাই অন্তের অধীন । স্থতরাঁং জগতের প্রত্যেক চেতন ও অচেতন ভ্রব্যকেই 
স্বভাবত:ঃ পরতন্ত্র হইতে দেখ! যাঁয়। পরতন্ত্র দ্রব্য যেমন নিজেকে ব্যাখ্যা করিতে 
পারে না, তেমনই অপরকেও ব্যাখ্যা করিতে পারে না। স্থতরাঁং পরতন্ত্র দ্রব্য 
থাকিলেই তাহার পূর্বে ত্বতন্তর ব্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করিতে হইবে। 

পরতন্ত্র দ্রব্য নাই ইহা বলিলে অথব৷ ইহাকে মায়া বলিলে ইহার স্থলে অভাব 
কিংব। মাক্সাকে স্থাপন কর! হয়। কিন্তু অভাব কিংবা মায়! পরতন্ত্, অন্ততঃ ইহার 
কারণরূপে স্বতন্ত্রকে থাকিতে হুইবে। স্কৃতরাং পরতন্্র্কে কোন না কোন অর্থে 
সৎ বলিতে হইবে। অতএব স্ব-তন্ত্র সত্য জগতের সত্য কারণ। ইহ। সর্বপ্রকারেই 
স্বপ্রতিষ্ঠ। ইহা ইহার কাঁধলমূহের মধ্য দিয়া আত্মপ্রকাশ করে এবং এইগুলি 
হইতেই ইহাকে জানা যাঁয়। ইহা নিত্য এবং সর্বশক্তিসম্পন্ন । ইহা সকল ক্রিয়ার 
কর্তা, সকল কর্তার কর্তা । সব-কিছুর কর্তীরূপে ইহাই সব। ইহার বিভিন্ন বূপ 
আছে। প্রত্যেক রূপই স্বত্ব । ইহা সমস্ত স্বগত ভেদ হইতে মুক্ত। কিন্তু 
ইহাঁকে পরতন্ত্ব হইতে পৃথক কর যায়। ইহার বিরুদ্ধে পরতন্ত্রকে স্থাপন করিলে 
ইহাকে অস্বীকার কর! হয়। কিন্ত ইহাকে অত্বীকার করিলে ইহাকে স্বীকাঁরই 
করা হয়। এই সকল সত্যকে স্বীকার করিয়। বেদে বল৷ হইয়াছে যে, ইহ! পরতন্ত্ 
হইতে অ-ভিন্ন এবং ভিন্ন । ইহার তাঁৎপর্ণ এই যে, অভেদ এবং ভেদকে পরস্পরের 
বিরোধী মনে করিলে উহার। স্ব-তন্ত্ব এবং পরতন্ত্রের পার্থক্যের প্রতি প্রষোজ্য নহে। 

ব্রব্যসমূহের বহুত্ব, বৈচিত্র্য, উচ্চ-নীচ ভাব, স্তর-ভেদ, শ্রেণী-ভেদ, ক্রিয়া ইত্যাদি 
সকলেরই মূলে আছেন স্বতন্ত্র। ধিনি স্বতন্ত্র তিনি সকল প্রকারেই পূর্ণ। স্থতরাং 
পর্ব-কর্তৃত্ব হইতে সর্ব-পূর্ণত৷ প্রমাণিত হয়। 


৩ 


যাহা-কিছু আছে তাহ ন্বয়ং-ক্রিয় এই বিশ্বাস ভ্রান্ত। ব্রহ্ম ই সকল ক্রিয়ার 
কর্তা এই লত্য এই ভ্রাস্তবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যবহারিক ধারণাসমূহের 
বিরোধী । স্থতরাং তত্ববিগ্ভাই এই ভাবের একমাত্র জনক । 

চেতন বা অচেতন পরতন্ত্র দ্রব্য সর্ব-ভাবেই পরতন্ত্র। স্থতরাঁং ইহা কোন কিছু 
ঘটাইতে পারে ন1। যাহার কিছু করিবার, যাহ! কর। হইয়াছে তাহা নষ্ট করিবার 


৪৯৩ 


বেদাস্ত--বৈষ্ব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়লমূহ  মধব ( ছৈত ) 


এবং অন্ত-কিছু করিবার শক্তি আছে, তাহাকেই প্রকৃতপক্ষে স্বপ্ংক্রিয় বলা ঘায়। 
এই শক্তি (১) অমঙ্গল পরিহার করিতে এবং উপকার করিতে সক্ষম হইবে, 
(২) ক্লাস্তি, উদ্বেগ, স্বতিভ্রংশ, ছুঃখ ইত্যাদি হইতে মুক্ত হুইবে, (৩) পরাধীনত৷ 
হইতে মুক্ত হইবে, (৪) ইঠ্ট সম্পানে সক্ষম হইবে, (৫) বুদ্ধিগম্য হইবে, (৬) ক্ষমতার 
অপচয় করিবে না৷ এবং (৭) ত্বয়ংসম্পূর্ণ হইবে । জগতের কোন বদ্বরই এইবূপ 
শক্তি আছে ইহ বল যায় না, স্থৃতরাং ইহাদের কাহাকেও প্রত কর্তা বলা 
যায় না। 

কেবলমাত্র ব্রন্মেরই এইরূপ শক্তি আছে এবং তিনিই সর্ব-কর্তা। কেবল তিনিই 
ত্ব-তত্ত্। তিনিই জগৎকে করেন, করিতেছেন এবং করিয়াছেন । তাহার স্থজনী- 
শক্তি এই সকল ক্রিয়ার মধ্য দিয়াই অভিব্যক্ত হয়। সুতরাং ক্রিয়ার জগৎ সর্ব-কর্তা 
অর্থাৎ বিষুণর বিরোধী নহে। 

সর্ব-কর্তা বস্ত সমূহকে স্ষ্টি করেন এবং তাহাদের দ্বার! ক্রিয়া করান। এই 
জগৎ্ সব-কর্তার ক্রিয়ার ফল, অর্থাৎ তিনি ক্রিয়া করেন এবং অপরকে করান ইহ! 
হইতেই জগতের উৎপত্তি । ইহার অর্থ এই যে, যেহেতু যাহা কর! হয় তাহা কর্তা 
হইতে পারে না, ঠিক সেইহেতু ষে কর্তা সে কর্তা নয়। কারণ, কর্তা এবং কৃতকর্ম 
শেষ পর্ধস্ত একই । স্থতরাঁং কোন বস্ত কেবলমাত্র কোন ক্রিয়ার কর্মব্ূপে অথব। 
কর্তারূপে আমাদ্দের সম্মুখে উপস্থিত হউক ন কেন, ইহা বিষুর স্জনী ক্রিয়ার 
প্রকাশ । ইহ। তাহার সর্ব-কর্তৃত্বের অভিব্যক্তি । বেদ এই সত্যকে প্রকাশ করে। 

কোন টর্দিক উপদেশের প্রকৃত অর্থ ব্রহ্মবিগ্ভাধারাই নির্ণীত হয়। উদাহরণ- 
স্বরূপ ছান্দোগ্য-উপনিষদে বণিত সদ্‌-বিষ্ভার মধব-প্রদত ব্যাখ্যা লইয়। এই বিষয়টি 
পরিস্ফুট করা যাইতে পারে । 

এই অনুচ্ছেদে স্বতন্ত্র বা সৎ্ক সকলের আদি কাঁরণ বলিয়া আর্ত কর। হইয়াছে । 
যাঁহ। কলকে সত! দান করে ভাহার ধাঁরণ। এবং যাহা সর্ব-সম্পূর্ণ (আত্ম! ) তাহার 
ধারণ! ইহার শেষে স্থান পাইয়াছে। ইহ! ব্রন্ষের সর্বব্যাঁপিত্বের উপর গুরুত্ব দিয়াছে । 
এই সত্য উপলব্ধি করিলে ন্যগ্নোধ বুক্ষের বীজের ন্যায় একটি ক্ষুদ্রতম বস্তও ত্রহ্ষের 
প্রকাশ বলিয়। স্বীকৃত হয়। “তাহাই তুমি” ( তত্বমসি ) এই বাক্য এই উপলব্ধির 
ফলকে প্রকাশ করে। এই বাক্যের তাৎপর্য এই যে, এই মত্যের উপলব্ধি হইবার 
পূর্বে জীবকে ব্রহ্ম হইতে স্বতন্ত্র বলিয়। মনে হয়। কিন্তু এই উপলব্ধি হইবার পর 
জীব যে সম্পূর্ণভাবে ব্রহ্ম হইতে জাত এইরূপ জ্ঞান হয়। এই জ্ঞানই মুক্তি। গুরু 
উদ্দালক এই জ্ঞানকে সকল জ্ঞানের আশ্রয়, সুতরাং অপরিহার্য বলিয়! প্রশংসা 


৪৯৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


করিয়াছেন। এই জ্ঞানের উপরেই সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব অর্পণ করা হুইয়াছে। 
সর্বশেষে, ব্রহ্ষকে সকল বস্তর আদি কারণ বলিয়া মনে করিলে এমন একটি যুক্তি 
পাওয়া যায়, যাহার দ্বারা সমগ্র অন্থচ্ছেদটিকে ব্যাখ্য। কর। যাইতে পারে। এতদ্ব্যতীত 
নয়টি উদ্ধাহরণের সাহাধ্যেও ব্রহ্ম যে কোন কিছু দ্বার। প্রভাবিত হন ন। এই সত্যকে 
পরিস্ফুট করা হইয়াছে । লবণের উদাহরণ লইলে ইহা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ইহ! 
দৃষ্টই হউক আর অদৃষ্টই হউক, লবণ লবণই থাকে । ঠিক সেইরূপ, ব্রহ্ম সৃষ্টি করুন 
বানাই করুন, তিনি ব্রহ্মই। স্ৃতরাং তিনি সমস্ত কিছু হইতে ভিন্ন । ক্তবাং 
এই অনুচ্ছেদটির আরম্ভ, সমাপ্তি, ইহাতে যে বিষয়টি বিশেষ জোরের সহিত বল! 
হইয়াছে, যাহ। সিদ্ধাস্ত কর! হইয়াছে, যে বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়। হইয়াছে এবং যে 
যুক্তি দেওয়! হইয়াছে, সেই সমস্ত আলোচনা করিয়া ইহাকে ব্যাখ্যা করিবার যে 
পদ্ধতি, তাহ] দ্বারাই ইহার প্রকৃত অর্থ নির্ণয় করা যায়। 

এ অনুচ্ছেদ সম্পর্কেই মধব ব্রহ্ম -সত্তার উচ্চতর তাৎ্পর্ষের কথ! বলিয়াছেন । এই 
অন্থচ্ছেদে ব্রহ্ম নিজেকে কি ভাবে স্যষ্টি করিয়াছেন তাহ। এইভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, 
ত্রদ্ম ইচ্ছা! করিলেন আমি অনস্ত আকার ধারণ করিব, আমি ত্যষ্টি করিব ।” 
ইহার সহিত সামঞ্ুশ্ত রাখিয়া যখনই মধব স্থষ্টির কথা বলিয়াছেন, তখনই ভিনি ছুই 
প্রকার স্ষ্টির কথ! ভাবিয়াছেন £ বিষ্ণুর অনস্ত আঁকার সমূহের বিষ্ণু হইতে নির্গত 
হওয়! এক প্রকার কৃষ্টি, এবং জগতের তদন্বূপ বস্তসমূহের বিষণ হইতে নির্গত 
হওয়া আর এক প্রকার স্যষ্টি। প্রথমটির মধ্যে দ্বিতীয়টির ব্যাখ্যা পাওয়। যায়। 
উপনিষদের ঘে কোন ত্ষ্টি বিষয়ক অনুচ্ছেদের প্রতি এই ধাঁরণ। প্রয়োগ করা 
ষাইতে পারে । “আত্মা হইতে আকাশ সম্ভৃত হইয়াছে” এই বাক্যটি ওয়া! যাক। 
প্রথম অর্থাহপারে আত্মাই বিষণ আকাশও বিষুণ। দ্বিতীয় অর্থান্ছলারে আত্। 
বিষুর এবং আকাশ, যে আকাশ আমর! প্রত্যক্ষ করি তাহ! । ইহার সম্পূর্ণ তাৎপর্য 
হইতেছে এই ষে, বিষণ হইতে আকাশের উৎপত্তি হইয়াছিল, যে বিধু ব্রহ্ম তাহা 
হইতে যে আকাশ পূর্ণ সেই আকাশের উৎপত্তি হইয়াছিল । 

বর্তমান সঘিগ্াা-বিষয়ক অনুচ্ছেদকেও এইভাঁবে ব্যাখ্যা করিলে বুঝা যায় যে, 
ষে সকল শব্কে জগতের বস্ত সমূহের প্রতি প্রয়োগ কর! হইয়াছে, তাহারা প্রকৃত 
পক্ষে এ সকল বস্তর যে সকল গুণ আছে তদন্ুযায়ী বিষ্ণুর বিভিন্ন রূপকে লক্ষ্য 
করে। বিষ্ণুর এই সকল রূপ সেই সেই বস্তগুলির অন্ুস্যত কারণ। এই সকল রূপ 
আছে বলিয়াই বস্তগুলি আছে। | 

এই অনুচ্ছেদের শেষে “তত্বমসি* এই যে বাক্যটি আঁছে, তাঁহাকেও এই ভাবেই 


৪১ 


বেদাস্ত-_-বৈধব ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ মধব € দ্বৈত) 


ব্যাখ্যা করিতে হইবে । 'তৎ*-এর অর্থ বিষুর। “ত্বম-এর অর্থ জীব, অর্থাৎ শ্বেতুকেতৃর 
আদি কাঁরণ। 'অসি”-র অর্থ এই দুইয়ের তাদাত্ম্য। ত্বপ্টির সর্বজ্রই বিষ্ণুর তাদাত্মা 
লক্ষ্য করার ইহাই অর্থ। ভার্দাত্ব্য হইতেছে বিষু ব্বয়ং। ইহা! বুঝিলেই বিষু যে 
সর্ব-কর্তা এবং সর্ব-পূর্ণ তাহা বুঝ যাঁয়। 

বিষু বা! ব্রহ্ই প্রত্যেক শব্দের মৌলিক অর্থ। কোন শব্দকে অন্য পদার্থের প্রতি 
প্রয়োগ করিলে ঈশ্বর ব! বিষুণকে অস্বীকার করা হয়। এই সত্যকে ব্যাখ্য। করিতে গিয়। 
কোন শব্দকে কোন বিশেষ বস্তর প্রতি প্রয়োগ করা হয় কেন প্রথমে তাহাই 
আলোচন। করিয়াছেন । সাধারণ ভাষা-বিজ্ঞান প্রচলিত প্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত। 
ইহ! কোন যুক্তি দেয় না। সুতরাং মধব ভাষাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করিতে হইবে 
তাহ। দেখাইয়াছেন। 

কোন শব শুনিবামাত্র আমাদের মনে যাহ? উদয় হয় তাহাই ইহার স্বাভাবিক 
অর্থ। সুতরাঁং এ বস্তর ন্বভাবের মধ্যেই এমন কিছু আছে ষাহাঁর জন্য এ শব্দটিকে 
এ বস্ততে প্রয়োগ করিতে হয়। কোন বস্তর স্বকীয় ও অন্তনিহিত শ্বভাব ও সত্তার 
জন্যই উহ1 যাহা, তাহ! হইয়াছে । ইহ হইতে বুঝা যায় যে, চরম বিশ্লেষণে কোন 
বস্তর প্রতি কোন শব্ধ প্রয়োগ করিলে উহাকে যে সত্বা সেই বস্তকে নিয়ন্ত্রিত 
করিতেছে তাহার প্রতিই প্রয়োগ কর। হয়। কিন্তু এই সত্ত৷ ঈশ্বর সি আর 
কিছুই নয়। স্ৃতরাং প্রত্যেক শব্দের লক্ষ্য তিনিই । 

একই নিয়ম অনুচ্চারিত ধ্বনি সম্বন্ধেও প্রযৌজ্য। নদীর প্রবাহের ধ্বনি বিল্মপ্ 
উদ্রেক করে এবং ইহার আস্তর সত্তাও ভগবান্‌। স্তরাং ধ্বনি ঈশ্বরকেই লক্ষ্য করে। 
এই প্রণঙ্গে মধব ভাষার বিবর্তনের প্রক্রিয়া অধ্যয়ন করিয়াছেন এবং এই সিদ্ধান্তে 
উপনীত হইয়াছেন যে, বেদ বিষণ সম্বন্ধে উপদেশ দেয় বলিয়। ইহার ভাষাই সর্বশ্রেষ্ঠ । 
সেইজন্য তিনি বেদকে সংস্কৃত ভাঁষা বলিয়াছেন । 


ব্রহ্ম চিস্তার অতীত এইন্ধপ মমে কর! ইহাঁও চিস্তা করা । স্থতরাং ব্রহ্ম স্বরূপতঃ 
জ্ঞানের বিষয় । ত্রহ্ষকে নিয়ন্ত্রিত করিতে পারে এমন কিছুই নাই। কর্ম আনন্দ। 
তীহার স্ষ্টিও আনন্দ। আনন্মলাভ করাই মুক্তি। 

মধবের দিঙ্ধাস্ত এই যে, "ব্রহ্মা অর্থাৎ বিষু পূর্ণ, নির্দোষ, জ্ঞানের বিষয় এবং 
সকলের গম্য ৷” 


৪১৩ 


গরাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 
৬। ব্রন্গন্বিষমক দর্শতৈনল তৎপর্ধ 


মধব ঈশ্বরের ছুই প্রকার প্রকাশের কথা বপিয়্াছেন_্বতন্ত্র এবং পরতন্তর। 
প্রথমটি হইতেছে চরম সভা এবং দ্বিতীয়টি ইহার ক্রিয়ার ফল। সুতরাং যাহ। পরতন্ত 
তাহা স্বতন্তের মহিমাকে ব্যক্ত করে। 

পরতন্ত্রের দুইটি অংশ -_চিৎ ও অচিৎ। শেষোক্তটি তিন প্রকারের 0১) যাহা 
অবিরাম উত্পন্ন হইতেছে, যথা_বেদদ। (২) অবিরাষ উৎপাদন এবং সবিরাম 
উৎপাদনের মিশ্রণের ফলে যাহা! উৎপন্ন হয়, যথা জড়ত্রব্য, কাল এবং দেশ এবং (৩) 
যাহা কখনও কখনও উৎপন্ন হয়, যথা --ঘট ইত্যাঁদি। 

জ্ঞাত বা চেতন-জীব প্রত্যেক মানসিক ক্রিয়াতে নিরস্তর উৎপন্ন হইয়া থাকে। 
সকল জ্ঞাতাঁর পক্ষে তত্ববিদ্যার প্রয়োগ জীবনের লক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু জীব 
নান! শ্রেণীর হইয়া থাকে ঃ কেহ কেহ তত্ববিদ্যালাভ করিতে ইচ্ছুক, কেহ কেহ 
ইহার প্রতি উদাপীন, কেহ কেহ বিরোধী । ভ্রান্ত জ্ঞান যেমন জ্ঞানই নয়, তেমনই 
শেষোক্ত ছুই শ্রেণীর জীব প্রকৃত জ্ঞাত। নয়। 

ব্রদ্ষবিদ্া রুঠিন। বিষ্ণুর কপ! হইলে তবেই কোন ব্যক্তি উহ! আয়ত্ব করিতে 
পারে। ইহার জন্যই তত্বজ্ঞানের তারতম্য হইয়। থাকে । তদন্ুসাঁরে তত্বজ্ঞানের 
পরিমাণানুষায়ী পাচ শ্রেণীর জ্ঞাতার মধ্যে পার্থক্য হইয়! থাকে । ষথা-জগতের নিয়স্তা 
(দেব), শিক্ষক ( খষি ), পিতা (পিতৃ), রক্ষক ( প) এবং মন্তষ্য (নর )। এই স্তর- 
ভেদের অর্থ হইতেছে এই যে, দ্রেব প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণীর জ্ঞাতাগণ বিভিন্ন শ্রেণীর 
তত্ববিৎ। অন্যদের দেব ইত্যার্দি বল ভূল হইবে । 

তত্বজ্ঞানের স্তরভেদ থাকিলে ভ্রমকে অন্ততভৃক্ত করিয়া অজ্ঞানেরও স্তরভেদ 
থাকিবে । মন্ুষ্তে কর্তৃত্ব আরোঁপ করিলে ভ্রান্তজ্ঞান উৎপর হয়, ভ্রাস্তজ্ঞান হইতে 
আসক্তি, স্বণ! ইত্যাদি, জন্ম মৃত্যু ইত্যাদি অশুভ উৎপন্ন হয়। বিষুর এই সকলের 
ষ্টা এবং ইহারা তাঁহার উপরেই নির্ভরশীল । সর্ব-কর্ত। হিসাবে বিষুই সকল জীবের 
আস্তর সত্তা । ইহার অর্থ এই যে, কোঁন জীব নিজের উপর কর্তৃত্ব আরোপ না করিলে 
নিষ্িয়্ ব! দায়িত্বহীন হইতে পারে না। বিষ্ণুকে সর্ব-কর্তা রূপে বুঝিলে আমাদের 
দেহ যে জীবাত্মার বাঁহক নয় পরস্ত বিষ্ণুর বাহক তাহা বুঝিতে পার। যাঁয়। ইহার 
ফলে জীব বিষুওর স্থষ্ট সংস্কার, জন্ম পরিবেশ ইত্যাদির সহিত সামপ্রন্য রাখিয়া কাজ 
করিতে পারে। কর্মই জীবন । ইহা! জ্ঞানের অভিব্যক্তি । ইহা! যে পরতন্ত্র তাহ 
উপলদ্ধি করাই ইহার স্বভাব। ইহার মধ্য দিয়াই স্ষ্টিকার্ষে রত ব্রহ্মকে জানা ঘাঁয়। 
ইহাই বিষ্ণুর ব্যবহারিক উপাসন]। 


৪১৪ 


বেদান্ত- বৈষ্ণব ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ মধব (দৈত ) 


্রহ্মবিদ্ধ। অধ্যক্ন করিলে এবং শিক্ষা দিলে আহ] বন্ধন হইতে মুক্ত হয়। মনে 
ইহার বিরোধী কোন পক্ষপাতিত্বের সম্পূর্ণ অভাব থাকিলে তবেই ইহু। সম্ভবপর হয়। 
সত্যা হসন্ধিৎসা, তত্ববিদ্যার অধ্যয়ন, সত্যাহুরাগ, ভ্রমের অভাব, সত্যের মূল্য বোধ, বাঁধ। 
অতিক্রম, জ্ঞানে সম্ভতোঁষলাত, সত্যের স্বয়ং-সম্পূর্ণতাঁর উপলব্ধি, ব্যক্তিত্বের পরতন্বতা- 
বোঁধ, জগতের মূল উপাদানগুলিতে সার স্থায়িত্বের অভাব-বোঁধ এবং ব্রদ্মোপলব্ধি 
বিষয়ে একা স্ত অনুরাগ-_এইগুলি ক্রমান্বয়ে এই পক্ষপাতিত্বের অভাবের প্রকাশ । 

যাহার পূর্ব হইতেই কোন জ্ঞান নাই, তাহার সত্যের জ্ঞানের করণ সম্বন্ধে বৈধ 
সন্দেহ থাকিতে পারে। সন্দেহের অভাব থাকিলে পূর্বেই জ্ঞান আছে এইব্প 
বুঝিতে হইবে। যাহার মনে সত্যই সন্দেহ আছে, সে যে-জ্ঞান সর্বোচ্চ সত্যের 
সন্ধান দেয় তাহা! লাভ করিবার শ্রেষ্ঠ উপায় সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে । এই অনুসন্ধানই 
তত্ববিদ্ভা। ঘে তত্ববিদ্তার অনুশীলন করে, তাঁহার পূর্বেকার সদ্গুণাবলী প্রকট 
হইয়া উঠে এবং এইগুলি আবার তত্ববিচ্যালাভে সহায়তা করে। 

হ্ুতরাং মধবের মতে নৈতিক বা আধ্যাত্মিক সাধন এবং ব্রহ্মবিদ্ভাকে অপরিহার্য, 
প্রগাট এবং ব্যাপক করিবার প্রক্রিয়া একই । ইহার ফলে বেদের এবং ইহার লক্ষ্য 
ব্রন্মের অর্থ অধিক পরিম্ফুট হইয়া উঠে। অধ্যাঁপন। দ্বার। এই অবস্থা লাভ করা যায়। 
অধ্যাপন] দ্বারা বিষণ তুষ্ট হন। 

সমাজের উপর অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনার প্রভাব আছে। কোন ব্যক্তিই ধাঁহাঁতে 
তত্ববিদ্যাহীন হইয়া ন! খাঁকিতে পারে এমনভাবে সমাজের পুনর্গঠন আবশ্তক, ইহাই 
মধবের মত। এই সম্বন্ধে তাহার প্রধান ধারণাগুলি এইরূপ £ উন্চ জাতি বা 
বংশে জন্ম অপেক্ষ। তিনি মন্ষ্তের সদ্গুণকেই ব্রদ্ধবিদ্যালাভের অধিক অন্গকুল 
বলিয়া মনে করেন । তাহার মতে শুব্রেরাও ব্রহ্মবিদ্া অধ্যয়ন করিবার অধিকারী । 
এমন কি অন্তযজেরাও বিষুণভক্ত হইতে পারে । বিষুর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করাই মানব- 
সমাজের সাধারণ লক্ষ্য । 

রাষ্্ৰীয় সংহতি হইতেই সমাজের হ্ঙি। মধবের মতে শাসনতত্ত্রের কর্তব্য 
হইতেছে এমন একটি পরিবেশ স্ষ্টি করা, একমাত্র ধাঁহাতেই ব্রহ্ববিষ্ভার অনুশীলন 
সম্ভবপর হইতে পারে। ঘে সকল ধারণ! এই বিগ্যাশিক্ষার অঙ্কৃল সেগুলিকে 
উত্নাহিত করা এবং যেগুলি প্রতিকূল সেগুলিকে নিরম্ত কর। উচিত। স্থতরাঁং 
রাষ্ট মূলতঃ জাঁনলাভের সহায়ক । 

জ্ঞান প্রথমে-পরোক্ষ থাকে । ব্যবহারের ফলে ইহা অনাবিল অর্থাৎ অ-পরোক্ষ 
হইয্সা উঠে। ইহা! হুইলে মনুষ্য তাহার জ্ঞানের প্রগাঢ়তা অনুযায়ী ব্রহ্ষজ্ঞানের 


৪১৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


রসান্বাদন করিয়া! থাকে। ইহাই জীবন্ুক্তি। বিষ্ণুর প্রনাদেই আমর! বিষ্ণকে 
লাভ করিয়া থাকি । ইহাই মুক্তি। ইহাতে বিষ্ণুর রা উপভোগ অর্থাৎ 
বিষ্ুকে সর্বাপেক্ষ! প্রিয়রূপে উপভোগ হয়। 


উপ্পনংহাল 

ক্থতরাং মধবের ব্রন্ম-বিষয়ক দর্শনকে অদৈতবাদের শ্রেষ্ঠ আকার বলিয়। মনে 
কর! যাইতে পারে । তিনি পরতম্ত্র বস্ত হইতে স্বতন্ত্র সৎকে পৃথক করিবার ফলে 
তাহার অধৈতবাদ নির্দোষ। স্বতন্ত্র সংকে কেবলমাত্র দর্শনের সাহায্যই জান? যায়, 
তাহার এই মত তীহার অদ্বৈতবাঁদকে অন্তপ্রকার অদ্বৈতবাঁদ হইতে পৃথক্‌ করিয়াছে। 

প্রত্যেক বিষয়েই মধব-দর্শনের বৈশিষ্ট্য আছে। যুক্তির তেজ, চিস্তাঁর স্বচ্ছতা, 
সত্য সম্বন্ধে অন্তদূ্টি, চিস্তার ব্যাপকতা, দৃষ্টিভজীর প্রসার_-এইগুলি হইতেছে 
তাহার চিস্তার প্রধান গুণ। 

যে জ্ঞান সাক্ষী দ্বারা উৎপন্ন তাহাই যে জীবাত্মার ন্ববূপকে নির্দেশ করে এবং 
বেদ যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞার অভিব্যক্তি এই ছুইটি আবিষ্ষার মনোবিজ্ঞান এবং ন্ায়শাস্তে 
তাহার প্রধান দান। ক্রচ্গবিগ্যার সঙ্গে সংযুক্ত করিয়া! তিনি সমাজ এবং রাস্্রীয 
সংহতির পুনর্গঠনের ষে কল্পনা করিয়াছিলেন, তাহা সমাজতত্ব এবং রাষ্্রতত্বকে এক 
নৃতন অর্থ দিয়াছে । স্বতন্ত্র (ত্রহ্ধ) যে জগৎ ও জীবের শরষ্ট। ; মানুষ ঘখন সর্ব-কর্তা 
বিষু্র মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে, কেবল তখনই সে জগতের এবং নিজের উপকার করিতে 
পারে) ষে সকল গুণদ্বার। ত্রহ্মবি্যাকে অপরিহার্য বলিয়! বুঝা যায়, সেইগুলিই প্রককত 
নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক গুণ; দার্শনিকের দৃষ্টিতে বেদ এবং ব্রহ্ম নিত্যই নবব্ধপ 
ধারণ করিতেছেন ১ বিষ্ণকে পরম প্রিয় জ্ঞানে তত্ববিদবের উপভোগ ইহাই মুক্তি__ 
তাহার এই মতবাদ দর্শনশাস্ত্রে তাহার যথার্থ মূল্যবান দান। ইহা! উপলব্ধি করিলে 
বিশ্বদর্শনের ইতিহাসে এক নৃতন অধ্যায় উন্মুক্ত হয়। 


গ্রন্থবিবরণী 
মধব £ অন্ুব্যাথ্যান মধব  তন্ত্রসার 
জয়তীর্ঘ ঃ তত্বপ্রকাশিকা মধব ৫ তত্বসংখ্যান 
মধব 2 বিঞুতত্ববিনিরণয় মধব? তত্ববিবেক 
জয়তীর্ঘ £ স্তায়হ্ধ। মধব £ সদীচার স্মৃতি 
মধব £ ব্রঙ্গসত্রভাহয মধব ঃ মহাভারত তাৎপর্যনিণয় 
ব্যাসরাজ £ চন্দ্রিকা মধব : ভাগবত তাৎপর্য 
রাঘবেন্দ্রতীর্থ £ তব্মপ্ররী মধব £ উপনিষদ্‌-ভান্ত 


৪১৬ 


বেদান্ত--বৈঝ্ব ( ঈশ্বয়বাদী ) সম্প্রদায় সমূহ 
| ই। নিম্বার্ক ( দ্িতাছৈতবাদ ) 
১। স্উপক্রমণিকা! 


নিশ্বার্ক তৈলঙ্গ ব্রাঙ্ষণবংশীয় ছিলেন। প্রচলিত মতা চসারে, তিনি রামাহুজের 
পরে. গ্রীষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে ভারতে বিদ্যমান ছিলেন। 

অন্তান্ক বৈষ্ণব বৈদাস্তিকদের ন্যায়, নিষ্বার্কও ভ্রিতত্ববাদী। তাঁহার মতে, এই' 
তিনটি সমান ভাবে নিত্য ও সত্য তত্ব হইল ব্রহ্ম, চিৎ ও অচিৎ। সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ 
তত্ব হইলেন ব্রচ্ম এবং ব্রদ্মই হইলেন কৃষ্ণ ব৷ হরি। পক্রহ্ম” শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ 
পবৃহত্বশালী” (বৃহ +মন্)। অর্থাৎ তিনিই ব্রদ্ম যিনি বৃহত্বম ) বাহার সমকক্ষ 
অথবা ধাহার অপেক্ষ1! উচ্চতর কেহই নাই, ধিনি দেশকাঁলাদিরূপ সীমাবিরহিত, 
অনাদি অনস্ত অসীম; ধাহার স্বরূপ, গুণ ও শক্তি অনতিক্রমণীয় ও অতুলনীয় 
( "মস্বাভাবিক-ম্বরূপ-গুণ-শক্ত্যা্দিভিঃ বৃহত্তমঃ৮ )। ক্রহ্ধই এই চিদচিদ বিশিষ্ট বিশাল 
্রহ্মাণ্ডের একমাজ মূল কারণ। সেইজন্য ব্রহ্ম হইতেই বিশ্বসংসারের সৃষ্টি, ব্রন্মেই 
তাহার স্থিতি, ব্রদ্ধেই তাহার লয় হয়। একমাত্র ব্রহ্ষই জগতের অভিন্ন উপাদান ও 
নিমিত্ত কারণ। সাধারণতঃ, উপাদান ও নিমিত্ত কারণ পরস্পর ভিন্ন হয়। উদাহরণ 
হিসাবে বল। যায় যে, মৃন্ময় ঘটের উপাদান কারণ মৃৎ্পিণ্ড এবং নিমিত্ত কারণ 
কুস্তকাঁর এক নয়। ' কিন্ত একমাত্র ব্রহ্ম ই একাধারে জগতের অভিন্ন উপাদান ও 
নিমিত্ত কারণ। মৃৎ্পিণ্ড যেমন মৃন্ময় ঘটে পরিণত হয়, তেমনই ব্রহ্ষও জগতে 
পরিণত হইয়াছেন। সেজন্তই তিনি জগতের উপাদান কাঁরণ। পুনরায়, কুস্ভকার 
যেমন স্বীয় ইচ্ছ! ও শক্তিবলে মৃৎপিওকে মৃন্ময় ঘটে পরিণত করে, ব্রহ্গও সেইরূপ 
স্বীয় ইচ্ছা ও শক্তিবলে স্ব-সতাকে জগতে পরিণত করেন-_সেজন্যই তিনি জগতের 
নিমিত্ত কারণ। এইরপে বিশ্ববরন্ধাড ব্রন্মের সাক্ষাৎ পরিণাম বিশেষ মাত্র, অন্য কিছু 
নয়। বস্ততঃ, অন্যান্য বৈষ্ণব বৈদাস্তিকগণের ন্যায়, নিষ্বার্কও পরিণামবাদী, অর্থাৎ 
তাহার মতে, কারণ ষথার্থ ই কার্ধে পরিণত হয়, কার্ধ সত্যই কারণের একটি বিশেষ 
রূপ বা অবস্থাস্তর | 


৪১৭ 


৫৩ 


শা 


প্রা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


»। ব্রন্ষ 


্্মই জগতের উপাঁদান কারণ বলিয়া তিনিই সমগ্র জগতে ওতপ্রোতভাবে 
অস্থুস্টত হইয়া আছেন। মৃন্ময় ঘটে যেমন স্বৃত্তিকা ব্যতীত আর অন্য কিছুই নাই, 
সেইন্ধপ ব্র্ষের কার্য বা পরিণাম জগতেও ব্রহ্ম ব্যতীত আর অন্য কিছুই নাই, সকলই 
্রদ্ষত্বরূপ ও ব্রহ্ষনতাঁময়। সেই জন্য আপাতদৃষ্টিতে, বিশ্বত্রক্ষাণ্ডের বিবিধ ও 
অসংখ্য জড় ও অজড় বস্ত (জীবাত্ম!) সমূহ ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন বলিয়া বোধ হইলেও, 
প্রকৃতপক্ষে তাহার সকলেই ব্রদ্ষের পরিণামস্বরূপে ব্রহ্মম্ব্ূপ ও ব্রহ্ষনতাময় । 
সেই জন্তই উপনিষদ, অতি স্থন্দর ভাবে বলিয়াছেন, “সর্বং খঘিদং ব্রহ্ম” ।১ 
প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্ম জগদ্বহিভূ্ত ও জগদতিরিক্ত হ্ইয়াও জগলীন। সেজন্য 
কুম্তকার যেমন ঘটের বহিঃস্থিত কারণ বা ঘটটিকে বাহির হইতে শ্যষ্টি করেন, ব্রহ্ম 
জগতের সেইন্দপ কার নহেন। উপরস্ত যদিও ব্রহ্ম জগতের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে অভিন্ন 
নন, যদিও ব্রহ্ম জগতের অপেক্ষা অনস্তগুণ বৃহত্তর ও উচ্চতর, যদ্দিও ব্রহ্গের পূর্ণ 
বিকাশ একটি মাত্র ক্ষুদ্র জগতে সম্ভবপর নয়, তথাপি ব্রহ্ম জগতের অস্তরাত্মা ও 
অস্তর্ধযামীরূপে জগতেই ওতপ্রোতভাবে লীন হইয়৷ আছেন। 

এই ব্রহ্মকারণবাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি আপত্তি উ্খাপিত হইতে পারে । প্রথম 
আপত্তি এই হইতে পারে যে, ব্রক্ম জগৎ স্থষ্টি করিলেন কেন? পৃথিবীর প্রত্যেক 
দর্শনশাস্্রকে প্রীরভ্তেই এই মূল সমশ্যাঁটির সমাধান করিতে হয়। বাহার! বুদ্ধি- 
বৃত্তিনম্পন্ন ও স্বাধীন চিন্তাশীল তাহখদের প্রত্যেক স্বেচ্ছাকৃত কর্মের পশ্চাঁতেই একটি 
উদ্দেস্কা বা লক্ষ্য থাকে । তীহাঁরা এই উদ্দেশ্টসিদ্ধির আশাতে ও লক্ষ্য লাভের 
প্রেরণাঁতেই দেই কার্ধে রত হন। ব্রদ্দের জগত-ন্যপ্তিরূপ কর্মও এইরূপ একটি স্বেচ্ছা" 
কৃত কর্ম? ব্রহ্মও মহাজ্ঞানী, অশেষ বুদ্ধিপম্পন্ন ও স্বাধীন চিস্তাশীল; সেই জন্য 
তাহার কার্ধাবলী উদ্দেশ্টহীন ব! নিরর্থক হইতে পারে না। কিন্তু কি উদ্দেশ্টে ব্রহ্ম 
জগৎ কৃষিতে প্রবৃত্ত হন? আমরা দৌঁষক্রটি পূর্ণ, অসম্পূর্ণ জীব; আমাদের অভাব 
গু প্রয়োজন অসংখ্য, কিন্তু শক্তি ও কৃতিত্ব অল্প। সেই জন্য আমাদের অভাব 
পূরণের জন্য, অসম্পূর্ণত1! দুরীকরণের জন্য, অতৃপ্ত আকাঙ্ষার চরিতার্থতার জন্য, 
অপ্রাপ্ত বস্ত লাভের জন্যই আমর! সদাদর্বদ। নানাবিধ কর্মে প্রবৃভ হই। কিন্ত ব্রন্ধ 


অআপ্তকাম_নিত্য পূর্ণ নিত্য শুদ্ধ, নিত্য বুদ্ধ, নিত্য মুক্ত, নিত্য তৃথ্ধ-_-কোন 


অলম্পূর্ণতা, অভাব, প্রয়োজন, অতৃপ্ত ইচ্ছা বা! অপ্রাপ্ত বন্ত তাহার ক্ষেত্রে থাকিতেই 
পারে না। সেই জন্ত যেহেতু তীহাঁর অভাব বা প্রয়োজন বিন্দুমাত্রও নাই, দেই জন্ত 


৪১৮৮ 


 বেদাস্ত--বৈধণব ( উতরবাদী ) সম্প্রদায়সমুহ £ নিক দৈতাফৈতনাধ ) 


জগৎ সৃষ্টি করিয়া তিনি স্বয়ং কোনদিক হইতে. লাভবান: হম, .কোনক্বপ পূর্ণতা, 
গুণ, শক্তি বা আনন্দলা'ভ করেন--এই কথ! কোনক্রমেই বল। চলে" না. . সুতরাং 
জগৎ্ট্িরূপ কার্ধটি তাঁহার নিজের প্রয়োজন অহছদারে নিজের উদ্দেস্টসিদ্ধির জন্ত 
একেবারেই নয়। অপরপক্ষে, জগৎ স্ষ্টি যে জীবের মলের জন্য এবং এই উদ্দেস্ট- 
সিদ্ধির জন্যই ত্রন্ম জগৎ ত্যট্টি করিয়াছেন-_ সে কথাও কোনক্রমেই বলা যায় ন। 
কারণ, সর্বসম্মতিক্রমে সংমার অশেষ ছুখকেশ পূর্ণ এবং এই সংসার হইতে চিরকালের 

জন্য মুক্তিলাভই মোঁক্ষ বলিয়। স্বীকৃত হইয়াছে । 

এই প্রথম আপত্তির সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি সমভাবে গুরুতর আপত্তিও উত্থাপিত 
হইতে পারে। সেইটি হইল এই: পরম করুণাময় ব্রহ্ম কেন শ্বেচ্ছায় জগৎ স্যটি 
করিয়া জীবদের এই অলীম ছু:খপারাবাঁরে নিমজ্জিত করিয়াছেন? যদ্দি- তিনি 
সংসাবের' ছুঃখ-ক্লেশ দূর করিতে অসমর্থ হন, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান 
নন; পুনরায় যদ্দি তিনি সমর্থ হুইয়াও তাহা দূর না করেন, তাহা হইলে তিনি 
নিশ্চয়ই পরম করুণাময় নন। এতদ্ব্যতীত, ব্রন্মস্থ্ই এই জগতে অসংখ্য অবস্থা ও 
গুণবৈষম্য আছে । কেহ ধনী, কেহ দরি্র, কেহ বুদ্ধিমান, কেহ মূর্খ ইত্যাদি। 
কেধল তাহাই নয়, উপরন্ভ অনেক ক্ষেত্রেই ধামিকগণ ছুঃখভোগী হন, অথচ অধামিক- 
গণ সখ-সাফল্য লাভ করেন। সেই জন্য যদি ব্রহ্মই জগতের শ্রষ্টা হন, তাহা. হইলে 
তাহাঁকে নির্দয়, বৈষমাদৌষদুষ্ট এবং অন্যায়কারী বলিয়! মনে করিতে হুয়। 

দর্শনশাস্ত্রের এই মূলীভূত প্রথম সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য বৈদাস্তিকগণের 
হায় নিম্বার্কও ঈশ্বর-লীলাবাদের অবতারণ! করিয়াছেন (“লোকবত্ব, লীলা 
টকবল্যম্” )। এই মতান্ুলারে, ব্রদ্দের জগৎ স্ষ্টিকূপ কার্ধটি তাহার ত্বকীক়্ 
কোঁন অভাব পূরণের জন্য অথবা প্রয়োজনের অনুরোধে নয়- ইহ! কেবলমান্ত্র তাহার 
লীল। ব| ক্রীড়া। কোন সম্রাট খন নানাবিধ ক্রীড়া-কৌতুকে রত হন, তখন সেই, 
সকল ক্রীড়। বা কাঁধ তাঁহার কোঁন অভাব দূর করে না। উপরস্ত নৃপতি ব্ূপে কৌন 
অভাব তাঁহার নাই বলিয়! এবং তাহার সকল প্রয়োজন সিদ্ধ হইয়া! গিক়াছে বলিয়াই 
তিনি নিশ্চিন্তে ক্রীড়া ও উত্সবাদিতে রত হইতে পারেন । একই ভাবে ব্রহ্ম কোন 
অভাব পুরণ ব৷ প্রয়োজন সিদ্ধির জন্য জগৎ স্থষ্টি করেন না। উপরস্ত সচ্চিদানন্দ- 
স্বরূপ ব্রন্ম নিত্য তৃপ্ত ও আগ্তকাম বলিয়াই তিনি তীছার নিত্য পূর্ণ ও নিত্য উদ্ছেলিত 
আনন্দ হইতে এই জগৎ হৃট্টি রূপ ক্রীড়ায় লিপ্ত হন। সেই জন্তই উপনিষষ 
বলিয়াছেন যে, আনন্দ হইতেই জগতের স্ষ্টি, আনন্দেই তাহার স্থিতি, আনন্দেই 
তাহার লয়।৩ 


৪৯৭ 


' প্রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 

'* আই লীলাবাদ সত্যই স্থির উদ্দেশ্য অভিনধভাবে ব্যাখ্য। করিতে সমর্থ হইয়াছে। 
দশনশাতে পরমেশ্বরের সন্ধে ছুইটি প্রধান মতবাদ আছে £ স্থিতিবাদ ও গতিবাধ। 
প্রথমটি অহৃদারে, ঈশ্বর এক নিত্য ও পূর্ণ তত! (8918) এবং নিত্য অপরিবর্তনীয্ষ ও 
নিত্য স্থিতিমান্‌ (968০ )। দ্বিতীয়টি অনুসারে, ঈশ্বর বা পরমসত্তা নিত্যপূর্ণ নিত্য 
অপরিবর্তনীয় ও নিত্য স্থিতিশীল নন; উপরন্ত পরিবর্তনীয়, গতিশীল ও পরিণামশীল 
ঘটনশীলতাই তাহার ম্বরূপ। - এইক্ধপে নিজেকে অবিচ্ছিন্নভাঁবে জগতে পরিণত ব1 
প্রকাশ কর। পরমসতার শ্বব্ূপ ব। স্বভাব। সেইজন্য অনার্দিকাল হইতেই ঈশ্বর ও 
জগৎ পরস্পর মুখাপেক্ষী । জগতে পরিণত ন। হইলে পরমেশ্বরের পরমেশ্বরত্বই বৃথা 
ও অসভ্ভব হইবে । কারণ, তাহ! তীহার স্বভাবের বিরুদ্ধাচরণ করাঁরই সমতুল্য 
হইবে । সুতরাং ঘটনশীলতাই পরমসত্তার স্বরূপ । “ঘটনশীলতাঁর” সংজ্ঞ। ও অর্থ 
কি? ইহা প্রকুত অর্থ হইল এই যে, পরমেশ্বর অপরিবর্তনীয় সৎও নন, শৃম্যগর্ 
অসংও'নন ; কিন্তু সৎ ও অসতের সমনবয়ন্বক্ূপ, অর্থাৎ ঘটনশীল। বস্ততঃ, এই 
ঘটনশীলতায় সত্তা ও অসত্তার আপাতদৃষ্ট পরম্পরবিরোধের অবসান ও সমন্বয় সাধিত 
হয়, যেহেতু ঘটনশীল বস্ত কেবল সংও নয়, কেবল অনৎও নয়, কিন্তু উভয়ের 
সমাহার । যথা, বীজ ঘটনশীল, অর্থাৎ বীজ কেবল বর্তমান বীজই নয়; কেবল 
বীজরূপে স্থিতিতে তাহার সমাপ্তি নয়; কিন্তু তাহার স্বভাব বা স্বরূপের মধ্যেই 
এইরূপ একটি অদম্য শক্তি ব। গতি নিহিত হইয়। আছে যে, তাহার বলে সে অমোঘ 
ও অবশ্যস্ভাবীবূপেই ক্রমে ক্রমে অঙ্কুরে পরিণত হয়। এন্দপে, বর্তমানে সেই বীজটি 
বীজরূপে সৎ, কিন্তু অস্কুররূপে অসৎ হইলেও, বীজ কেবল বীজই নয়, তাহা নিশ্চয়ই 
অচিরে অস্কুরেও পরিণত হইবে । লেইজন্য, বীজ কেবল বর্তমান বীজ নয়, ভবিষ্তৎ 
অঙ্কুরও ১ কেবল সৎ নয়, অপৎও | স্থতরাঁং, বর্তমানের শেষ বর্তমানেই না হইয়া 
তাহার ভবিষ্যতে অবশ্ঠস্ভাবী পরিণতিই ঘটনশীলতাঁর মূল কথ।। সেইজন্তই ঘটনশীলতা! 
বর্তমান সত্ব। এবং অবশ্যস্ভাঁবী অপত্তার এক অথণ্ড সমাহার । একইভাবে পরমসত্বাও 
নিত্য ঘটনশীল, নিত্য গতিমান্‌, নিত্য পরিণাঁমী। হুক পরমাতা। ক্বভাববশেই স্থুল- 
জগতে ক্রমান্য়ে পরিণত অভিব্যক্ত ও প্রপঞ্চিত হইতেছেন। এইবূপ পরিণাম ব| 
অভিব্যক্তিই তাহার স্বরূপ বলিয়া! ইহার পশ্চাতে তাহার কোনরূপ উদ্দেশ ব 
লাভেচ্ছ' নাই এবং ইহু। তাহার অসম্পূর্ণতাও প্রমাণিত করে না। সেইজন্য, জগৎ 
স্থপ্টির ব্যাখ্যারূপে স্থিতিবারদ অপেক্ষা গতিবাঁদই শ্রেয়ঃ। পাশ্চাত্য-দর্শনে হেগেল 
এই গতিবাদ্ গ্রচার করিয়া বিশ্ববিশ্রুত হইয়াছেন । 

অপরপক্ষে, স্থিতিবাদ অনুসারে জগৎস্যটি কার্ধটি ব্যাখ্যা করা কঠিন এবং এই 


৪৯৩ 


"ক বেদাপ্ত-বৈধয ( ঈশ্বরধাদী ) সম্প্রনা়লমূহ £ সিদ্ার্ক ( দ্বৈতাক্ষৈতবাদ )' রর 


কথাই পূর্ধের আপত্তিতে বলা হইদ্লাছে।' কিন্তু বৈদাস্তিকগগণ স্থিতিবাদী হইয়া 
তাঁহাদের অপূর্ব লীলাবাদের সাহায্যে এই দুরূহ সমস্তারও যুক্তিসঙ্গত সমাধানে সমর্থ 
হইয়াছেন । এই স্থলে প্রশ্ন এই যে, ঈশ্বর জগৎ সি করেন কি উদ্দেশ্ঠসিদ্ধির জন্ত ?. 
তিনি যদি শাশ্বতকাল নিবিকাঁর, নিরঞ্জন, স্বয়ংসিদ্ধ, পরিপূর্ণতম সত্তাই হুন, তাহা 
হইলে তিনি পুনরায় জগৎ স্থষ্টিই বা করিবেন কেন? এই নিগৃঢ় প্রশ্নের উত্তরগ্বরূপেই 
বেদাস্তের লীলাঁবাদ্ধের অবতারণা । এই মতাজসারে, প্রত্যেকটি কর্মই যে কোন 
একটি বিশেষ উদ্দেশ্টযসিন্ধির জন্য, অভাব পূরণের জঙ্য, অথবা! দেষ-ক্রটী, অসম্পূর্ণত। 
দুরীকরণের জন্যই কর! হয়__তাহা বলা যায়না। কারণ, কোন কোন কর্ম, রথ! 
ক্রীড়া প্রভৃতি, এইরূপ সাধারণ অভাবজনিত কর্ম নয়। ক্রীড়ার পশ্চাতে কোনব্ধপ 
লাভের আঁশ থাকে না-এমন কি সুখলাভের জন্ঠও আমর! ক্রীড়ায় রত হই. না। 
কারণ, স্থুখ ব৷ স্ফৃর্তির কোনরূপ অভাব থাকিলে আমর] ক্রীড়ায় লিগ হই না; ঘখন 
আমাদের হৃদয় হর্ষোৎফুল্ল এবং সেই হর্ষ অভিব্যক্তিতে প্রকাশিত হইতে চাহে, তখনই 
কেবল আমরা ক্রীড়ায় লিপ্ত হই। এইক্ধপ বাহিক প্রকাশই হইল হর্ষের বিশেষ স্বভাব, 
কারণ, স্থখছুঃখপ্রমুখ গভীর মানসিক ভাঁবসমূহকে আমর] অস্তরের অস্তঃস্তলে প্রচ্ছন্ন 
করিয়া রাখিতে পারি না, বাহিরের আচাঁর-ব্যবহারে তাহারা ম্বতঃই স্ষুরিত হ্ইয় 
উঠে। সেইজন্য আঁমর! খন পুলকোঁদেলিত হয়ে, পরম নিশ্চিন্তে নানারূপ ক্রীড়া- 
কৌতুকে মত্ত হই, তখন সেই সকল কার্যাদি, আচরণ ও ব্যবহারাদি অভাবজনিত 
নয়, অপূর্ণতাগ্যোতকও নয়, কিন্ত প্রাচুর্য ও পূর্ণ তারই স্বতঃ-উচ্ছৃসিত প্রকাশ মাত্র । 
একইভাবে জগৎ সৃষ্টিও অপূর্ব লীলাঁময়ের শুধু লীলা মাত্রই । সেইজন্য তাহার এই 
লীল! ব৷ ক্রীড়া তাহার শাশ্বত, অনস্ত, অসীম অপরিমেয় আনন্দের সশমান্যতম বাহক 
প্রকাশ মাত্র-তীহার কোনরূপ অভাব ও অপূর্ণতার সূচক নয়। এইরূপ, স্থিতিবাদ 
অন্থলারে, ত্রন্ধকে নিত্যপূর্ণ ও নিত্য অপরিবর্তনীয় রূপে গ্রহণ করিলে, হয় শংকরের 
বিবর্তবাঁদ, নয় লীলাবাদ স্বীকার ভিন্ন গত্যস্তর নাই। 
কিন্ত, আর একটি সমন্তার সমাধান এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন । আপতি হইতে 
পাঁরে ঘে, ঈশ্বরের দিক হইতে জগৎ ত্ষ্টি ব্বতন্ফুর্ত আমোদ ব৷ ক্রীড়ামাত্র, অবশ্য 
প্রয়োজনীয় কিছু নয় 3 কিন্তু দীনহীন ব্রিতাঁপক্রিষ্ট সংসারী জীবগণের দিক হইতে 
তাহ এইকরপ নয়। সেইজন্য, এমন কি, ব্ব-প্রয়োজনান্ছরোধেও নয়, কেবলমাত্র 
সামান্ত আনন্দের জন্যই যদি ঈশ্বর অসংখ্য জীবকে এইভাবে ছুঃখ-সাগরে নিমগ্ন করেন, 
তাহ। হইলে তাহাকে পরম কক্ষণাময় বলা যায় কিরপে? এই আপতির উত্তরে 
বেদাত্ত বলিয়াছেন যে, স্যট্টি ঈশ্বরের দিক হুইতে সেইবপ প্রয়োজনশুন্ত হইলেও, 


৪২৯ 


লা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস: 


জীবের দিক হুইতে সেইক্পণয়, কারণ স্থ্টি জীবের কর্ণাহুলারী। ভারতীয় বনের 
 পঁশস্বরপ কর্মবাদাহুসারে, প্রত্যেক লকাম ব! ভোগেচ্ছামূলক কর্মেরই-একটি বিশেষ 
ফল থাকে এবং কর্মকর্ত] হদ্ি ্বেচ্ছায় ও বুদ্ধি বিচারপূর্বক সেই কর্মে রত হন, তাহ! 
. হইলে তাঁহার ফল তাহাকে ভোগ করিতেই হইবে-__ইহাই স্তায়ের অমোঘ বিধান 
কিন্ত এক জন্মের অসংখ্য কর্মের ফল সেই জন্মেই ভোগ কর! সম্ভব নয় বলিয়া তাহাকে 
পুনরায় জন্মপরিগ্রহ করিতে হয়। সেই নৃতন জন্মে তিনি পুনরায় নৃতন কর্মে প্রবৃত্ব 
হুন এবং এই কর্মের জন্য তীঁহাঁকে পুনরায় জন্মপরিগ্রহ করিতে হয়, এইভাবে জন্ম ও 
কর্মের আবর্তে জীব বিঘ্ধিত হইতে থাকে । জন্ম ও কর্ষের এই চক্রের নাম “সংসার- 
চক্র”। মিষ্কাম কর্মসাঁধন এই সংসারচক্র হইতে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায়। 
এইন্ধপ নিষ্ষাম বা ভোগেচ্ছাশুন্য কর্ষের কোন ফল ভোগ কর্মকর্তাকে করিতে হয় না। 
সেইজন্য এক নৃতন জন্মে, প্রাক্তন সকাঁম কর্মের ফলভোঁগ করিবার সময়ে, নূতন কর্ম 
সম্পূর্ণ নিফামভাবে করিলে, সেই সকল নৃতন কর্মের ফলম্বরূপ, কর্মকর্তাকে পুনরায় 
জন্মপরিগ্রহ করিতে হয় না । এইরূপে পরিশেষে ছঃখশোকপুর্ণ সংসার হইতে মুক্তি- 
জাভই চরম লক্ষ্য হইলেও, প্রারভ্ে সংসারের বশেষ প্রয়োজন । কারণ, এই 
সংসারক্ষেত্রেই বন্ধজীব পূর্বসঞ্চিত সকামকর্মের ফলভোগ সমাপ্ত করিয়া নিকাম কর্ম ও 
'সাধনমার্গের মাধ্যমে পরিশেষে মুক্তির অধিকারী হয়। স্বতরাঁং, জীবের দিক হইতে 
সার অত্যাবশ্তক। অতএব ঈশ্বর জীবের পূর্ব-কর্মান্ুসারেই সৃষ্টি করেন বলিয়া 

তাহাকে নিষ্ঠুরতা বা বৈষম্য ও পক্ষপাতিত্ব দোঁষে অভিযুক্ত কর যায় না। প্রত্যেকের 
স্থখ-ছুঃখ, অবস্থা প্রভৃতির জন্ প্রত্যেকে নিজেই দায়ী, ঈশ্বর নন। কারণ, এইগুলি 
প্রত্যেকের স্বর্ৃত কর্মেরই অমোঘ ফল। 

অদ্বৈত বেদাস্তমতে ব্রহ্ম নিগুপ, কিন্তু নিষ্বার্কের মতে ব্রহ্ম সগ্ডণ, অথবা অনন্ত 
কল্যাণগুণবিমপ্ডিত এবং সকল হেয় গুণ বিবজিত | ঈশ্বরের গুণাবলী ছুই শ্রেণীর ঃ 
ভীষণ ও মধুর । প্রথম দিক হইতে তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপী প্রভৃতি 
দ্বিতীয় দিক হুহতে তিনি অশেষ লৌন্দর্যশাঁলী, অনস্তানন্দরসঘন, পরমকরুণী ময় 
প্রভৃতি। এইক্পে, ব্রহ্ম জগদতিরিক্ত হইয়াও জগতে অনস্যত, সর্বশক্তিমান হইয়াও 
পরমকরুণাময়, সর্বব্যাপী হইয়াও অস্তর্যামী, শাসক হইয়াও সখা। সেইজন্য, তীহাঁর' 
নিরতিশয় মহত্ব, শীশ্বর্য ও শক্তির অপেক্ষা! তাহার তুল্যভাবে অপরিমেয় রো | 
সৌন্দর্য ও মাধূর্ধ কোন অংশেই বিন্দুমাত্রও ন্যুন নয়। 

ব্রদ্মের দ্বরূপ ও গুণ সম্বন্ধে আলোচনার পরে, স্বভাবতঃই প্রশ্ন হইতে পারে যে, 
এইন্ধপ বৃহুতম, গ্রকষ্ইতম, পরিপূর্ণতম পরমসতাকে জানবার উপায় কি? উপায় 


৪২৭ 


খে্গাস্ত-_বৈষব ( ঈশবরবাদী ) সপ্রদারিসমূহ £ নিষ্বার্ক ( খৈতাদ্বৈতবাদ ) . 


একমাত্র শাস্্। সেই জন্যই বেদাস্ত-বর্শনে ব্রদ্ধকে বল! হইয়াছে *শীম্রঘোনি”-। 
আপাতদৃহিতে শাস্ধ বিবিধ বিষয়ের আলোচন! করিলেও, প্ররুতকল্পে সমগ্র 
শাস্ত্রের. একমাত্র গ্রতিপান্ত বন্ত হইলেন ব্রক্ষ। ব্রক্ষ সাধারণ প্রত্যক্ষগম্য নন, 
অনুমান গম্যও নন। আমাদের কোন ইন্দ্রিয় ঘবারাই আমর! ত্রহ্ম বিষয়ে জানলাভ 
করিতে পাবি না। সেইজন্য ব্রন্ধ প্রত্যক্ষযোগ্য নন। একই ভাবে, তাহার ক্ষেত্রে 
অহ্মানও অসম্ভব । কারণ, অনুমানের ভিত্তি সাদৃশ্ট। আমরা নিয্ললিখিত 
প্রণালীতে অন্গমীন করি £-- 
সকল মানবই মরণধর্মী । 
রাম একজন মানব 
সুতরাং, যামও মরণধর্মী। 
এইক্ষেত্রে রাম অন্যান্য মানবগণের মমধর্মী, এবং সেইজন্যই সে অন্তাঁন্য মানবগণের 
যায় নিশ্চয়ই মরণধর্মী। অর্থাৎ রাম ও অন্তান্য মানবগণের মধ্যে সীঘৃশ্ত আছে 
বলিয়াই আমর! সিদ্ধান্ত করিতে পারি যে, রামও তাহাদের ম্যায় মরণশীল। কিন্তু 
্রদ্মের সঙ্গে জাগতিক কোন বস্তরই সাদৃশ্ত নাই_-তিনি অসাধারণ ও অতুলনীয় 
সেইজন্য তাহার সম্বন্ধে কোন প্রকার অন্থমান সম্ভব নয়। 
অতএব বল! হইয়াছে যে, ব্রদ্ধ প্রত্যক্ষগম্যও নন, অন্ুমানগম্যও নন, শাস্ত্রগম্য | 
কিন্তু, শাস্ত্র ব1 শ্রুতির প্রকৃত অর্থ কি? শাস্ত্র সত্যত্রষ্ট। খষিগণের অবিরত চিন্তা 
ও পরিপক প্রজ্ঞা, মহতী প্রেরণ! ও প্রগাঢ় উপলদ্দির মূর্ত ফল ও প্রকাশ মাত্র। এই 
সকল পরমজ্ঞানী সুধীবৃন্দ সর্বদিক হইতেই সাধারণজনের অপেক্ষা! শ্রেয়?) উচ্চতর, 
বিজ্ঞতর ও পবিত্রতর বলিয়৷ যে সকল তত্ব সাধারণের নিকট দুর্বোধ্য, সেই সকল 
নিগৃঢ় তত্বও তাহাদের মিকট স্ববোধ্য এবং কোন তত্বই তাহাদের নিকট অবোধ্য 
নয়। সেইজন্ত জগতের ললাঁমভূত এই সকল খধি অলৌকিক, নিগুঢ় তত্বসমূহ 
নিজেদের উপলন্ধি-শক্তি ব! পূর্ণ-বিকশিত, উচ্চতম বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে দর্শন ব| 
সাক্ষাৎকার করিয়। জগতের ছিতার্থে শ্রতিরূপে প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। স্ৃতরাং 
নিষ্বার্কের মত এই নয় যে, ব্রদ্ধকে কোন প্রকারেই সাক্ষাৎ ভাবে জানা যায় না। 
এইক্ষেত্রে তিনি কেবল সাধারণ ও অনাধারণ ব্যক্তিগণেষ মধ্যে ভেদের কথাই 
বলিয়াছেন। সাধারণ জনের ক্ষেত্রে, স্ব ভাবতঃই, বিচারশক্তির পূর্ণতা ও পরিপকতার 
অভাব থাকে । এইরূপ, সাধারণ বিচারশক্রিকেই বলা হয় "বুদ্ধিগ। এই ' অপূর্ন ও 
অপরিপক বুদ্ধির নাহাষ্যে ব্র্ষকে জানা যাঁয় না বলিয়া, এই সকল সাধারণ জনের পক্ষে 
অসাধাবণ ব্যক্তিদের বিরাট প্রতিভ1 ও প্রত্যক্ষ, উপলব্ধির ফলম্ববূপ শাস্ত্রকেই 


৪২৩ 


'প্রীচ্য ও পাশ্চাত দর্শনের ইতিহাস 


'্াশ্রয় করা প্রয়োজন । কিন্তু এই শেষোক্ত অসাধারণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিচারশক্তির 
পূর্ণতষ্ বিকাশ সাধন হয় এইরূপ অপাধাঁরখ বিচারশক্তিকেই বল! হয় «প্রয্কঞ।”। 
“প্রজ্ঞা” বুদ্ধির চরমোতকর্ষ, পূর্ণতম বিকাশ, প্রকৃষ্ট রূপ, উচ্চতম অবস্থা ও শ্রেষ্ঠ 
ফল।. সেইজন্ত এইরূপ প্রজ্ঞার সাহায্যে সাক্ষাৎ ভাবে ব্রচ্ষকে জানা যাক্ম; অর্থাৎ, 
্রক্ম অপরিণত ও অপূর্ণ বুদ্ধিগম্য না হইলেও, পরিণত ও পূর্নবুদ্ধি গমা। সুতরাং 
নিষ্বার্ক ও অন্তান্ত বৈদাস্তিকেরা৷ যে শাস্ে অন্ধবিশ্বাসের প্রশ্রয় দিয়াছিলেন--এই 
অভিযোগ সম্পূর্ণূপেই ভিত্তিহীন। প্রথমতঃ, ভারতীয় দার্শনিকগণ মানববুদ্ধির 
অবস্থাভেদ__অপুর্ণ ও পরিপূর্ণ অবস্থার ভেদ সহজতভাবেই স্বীকার করিয়া লইয়াঁছেন। 
বস্ততঃ সাধারণ জীবনেও এইরূপ অবস্থাভেদ শ্বীকার ন। করিয়! আমাদের উপায় 
নাই। কারণ, পিতার নিকট যাহ! সৃবোধ্য পুত্রের নিকট তাহা ছুর্বোধ হইতে 
পারে এবং সেইজন্য পুত্রকে পিতার নিকট হইতেই সেই বিষয়ে জ্ঞানলাভ করিতে 
হয়। বৈজ্ঞানিকের নিকট যে বৈজ্ঞানিক তত্ব সহজ ও সরল, সাধারণ জনের নিকট 
ভাহা অতি কঠিন, এবং সেইজন্য বৈজ্ঞানিকের সাহায্যেই সাধারণ মানুষ বিজ্ঞান 
বিষয়ে জ্ানলাভ করে। একই ভাবে তত্বদর্শী খষিগণের সহায়তা ব্যতীত অজ্ঞ ও 
অল্পশক্তিবিশিষ্ট সাধারণ মান্ষেরা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিতে পারেন না । 

দ্বিতীয়তঃ, সাধারণ মানবদের ক্ষেত্রেও, ব্রন্মজ্ঞান লাভের জন্য, ভারতীয় 
দ্া্শনিকগণ বিচারবুদ্ধির অবশ্য প্রয়োজনীয্পতা শ্বীকার করিয়াছেন। শান্ত 
প্রপঞ্চিত তত্বের নিবিচার, প্রারস্ভিক গ্রহণের মাম “শ্রবণ” । কিন্তু “শ্রবণ” ব্রহ্মজ্ঞানের 
প্রথম সোপান বা অবস্থাই মাত্র। দ্বিতীয় সোপান “মনন”, অথবা গৃহীত তত্বের 
বুদ্ধিবারা বিচার ও অন্ুমোদন। তৃতীয় ও চরম সোপান “নিদিধ্যাসন” অথব। বৃদ্ধি, 
অন্ধমোদিত তত্বের ধ্যানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ, দর্শন ও সাক্ষাৎ উপলন্ধি। ইহার অন্য 
নাম প্রজ্ঞা” | এইবপে, লাধারণ মনব, প্রথমে শাস্ত্রের সাহায্যে ত্রহ্মতত্ব অবগত 
হইয়া পরে স্বীয় বুদ্ধির উৎকর্ষ ছার! তাহার মর্মার্থ গ্রহণ করিয়া অবশেষে ধ্যানের 
মাধ্যমে তাহাকে সাক্ষাৎ উপলব্ধিতে পরিণত করিতে পারে । ইহাই ভারতীয় দর্শনে 
ব্রন্ধজ্ঞানের প্রণালী । 


৩। জ্বীন ও জগৎ 


নিথার্কের মতে, ঘিতীয় তত্ব চিৎ ব৷ জীবাত্মা, জ্ঞানন্বরূপ ও জ্ঞাত, কর্তা ও 
তৌক্কা। অধৈতবেদাস্তমতে, আত্মা এক ও বিভূ? কিন্তু নিশ্বার্কের মতে, আতা বহু 


শা 


৪২৪ 


ধেদাস্ত- বৈষব ( ঈশ্বরযানী ) সম্প্রধায়সমূহ £ সিল্বার্ক ( স্বৈতাদ্বৈতবাধ ) 


ও অপু। তাহার মতাসাঁরে, জীব পরিমাণে অণু বা! ক্ষুত্রাতিক্ষুত্র, এবং সংখ্যায় 
বছ ব অসংখ্য । এই সকল জীব পরস্পরভিন্ন ও ব্রচ্মভিন্ন । মুক্ত জীবও ব্রদ্মের সঙ্গে 
সম্পূর্ণ অভিজ্গতা প্রাণ্ড হইয়া ব্রন্মেই নিঃশেষে বিলীন হইঙ্! ঘান ন1, উপরস্ত স্বীয় পৃর্ণ- 
বিকশিত, প্রকৃত স্বরূপ বিশিষ্ট হইয়া ব্রন্ধ হইতে ভিন্নর্ূপেই বিরাঁজ করেন । সেইজন্য, 
নিশ্বার্কের মতে, মুক্তি জীবের জীবত্বের বিনাশ নয়, পরিপূর্ণ বিকাঁশ ; তাহার প্ররুত 
্বর্ূপ ও গুণাবলীর নির্বাধ অভিব্যক্তি । 

মোক্ষকালে মৃক্ত জীব ধখন এই ভাবে আত্মম্বর্ূপ উপলদ্ধি করেন, তখন তিনি 
একই সঙ্গে ব্রন্ষন্বরূপও উপলব্ধি করেন, অর্থাৎ, ব্রন্মের স্বরূপ এবং ছুইটি গুণ 
ব্যতীত ( জগৎকর্তৃত্ব ও বিতৃত্ব ) ব্রঙ্গের অন্যান্য সকল গুপবিশিষ্ট হইয়া ব্রন্ম-সদৃশ 
হুন। নিম্বার্কের মতে, এই মুক্তি দেহপাতের পরেই সম্ভবপর, পূর্বে নয়। এইরূপে 
নিষ্বার্ক বিদেহ-মুক্তিবাদী, অদ্বৈতবাদিগণের ন্যায় জীবন্যুক্তিবাদী নন । 

নিষ্বার্কের মতে, ধর্মের পথ, নীতির পথ? গ্যায়ের পথই মেক্ষের পথ | নিম্বার্ক 
এই প্রপঙ্গে পঞ্চসাধনের উল্লেখ করিয়াছেন £ কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি ও উপাসনা, প্রপত্তি 
বা ঈশ্বরে আত্মলমর্পণ ও গুরূপসত্তি-_গুরুতে আত্মলমর্পণ । অবশ্তা, কর্ম মোক্ষের 
সাক্ষাৎ সাধন নয়) কিন্ত তৎসত্বেও, নিক্ষাম কর্মের যথাযথ সাধনঘ্ারা চিত্তশুদ্ধি ন 
হইলে জ্ঞান ও ভক্তির উদয় অসম্ভব, এবং সেই দিক হইতে নিক্ষাম-কর্মসাঁধন সাঁধন- 
মার্গের অত্যাবশ্তক প্রথম দোপান। | 

এই পঞ্চসাঁধনের মধ্যে প্রথম তিনটি (কর্মমার্গ, জ্ঞানমার্গ ও ভক্তিমার্গ ) 
বিশেষভাবে ধাহার। শ্বপ্রচেষ্টা ছার], _নিরস্তর কর্ম-সম্পাদন, কঠোর জ্ঞানাহশীলন 
ও নিগৃঢ় ধ্যানাভ্যাঁস দ্বার, মুক্তিলাভে সাহস করিয়৷ অগ্রণী হইয়াছেন তাহাদেরই 
উপযোগী । কিন্তু শেষের ছুইটি : প্রপত্তি ও গুরূপসত্তি, বিশেষভাবে তাহাদের 
জন্ই প্রপঞ্চিত হইয়াছে, ধাহার। স্বচেষ্টায় বিশ্বাসী নন ; সেইজন্য তাহার! ঈশ্বরের 
পাদপদ্মে এবং তাহা পভ্ভব ন। হইলে, ঈশ্বরের মূর্ত প্রতিচ্ছবি গুরুর শ্রীপাদপন্মেই 
নিজেদের সম্পূর্ণক্ূপে নিবেদন কনিয়াছেন, যাহাতে তাহারাই শ্বয়ং মুমৃক্ষদের মোক্ষে 
উপনীত করিতে পারেন । 

তৃতীয় তত্ব অচিৎ। নিথ্বার্কের মতে, অচিৎ তিনশ্রেণীর £ (১) প্রাকৃত অথব। 
জড়--সত্বরজত্তমোরূপ জগতের আদি ও মূল কারণ ভ্রিগুণাত্মিক। প্রকৃতি হইতে উৎপন্ন 
সমত্ত পাথিব জড়বস্ত ; (২) অপ্রাকৃত,--অথবা সত্বরূপা একগুণাত্সিক অপ্ররতি 
হইতে উৎপন ব্রহ্ধলোক প্রমুখ অপাধিব জড়বস্ত ; (৩) কাল। 


৪২৫ 
৫৪ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


$ 1 নিক্ষার্চ-০েদাকে্ঞের পিষ্ট ও উৎকর্ষ 


উপরে নিশ্বার্ক-বেদাস্তের মূল তত্ব সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রদত্ত হইল। বেদাত্তের 
পাঁচটি প্রধান সম্প্রদায়। ইহারা! “পঞ্চ-বেদাস্ত-সম্প্রদীয়” নামে খ্যাত। যথা, 
শংকরের “কেবলাদৈতবান্দ,” বামাচুজের “বিশিষ্টান্বৈতবাধ,” নিদ্বার্কের "স্বাভীবিক- 
দ্বৈতাতৈতবাদ,* মধ্বের “দ্বৈতবাদ” এবং বল্পভের *শুদ্ধাদ্বৈতবাঁদ*। এইস্থলে প্রধান 
প্রশ্ন হইল এই যে, ব্রহ্ম এবং জীবজগৎ, এক ও বহর মধ্যে প্রকৃত সম্ন্ধ কি? ব্রহ্ধ 
ও জীবজগৎ কি সম্পূর্ণ অভিন্ন, অথব| সম্পূর্ণ ভিন্ন, অথবা ভিন্নাভির ? অভি সংক্ষেপে 
বলিতে গেলে, শংকরের মতে একমাত্র ব্রন্ধই সত্য, জীবজগৎ মিথ্য। মায় মাত্র, সেইজন্ত 
জীবজগৎ ব্রহ্ম হইতে সম্পূর্ণ অভির । রামাহজের মতে, জীবজগত্ ব্রদ্ষেরই ন্যায় 
সত্য, এবং ব্রহ্ম হইতে অভিন্ন ও ভিন্ন উভয়ই, এতৎসত্বেও রামাছজের মতে ক্রন্ম ও 
জীবজগতের অভেদেন উপরই অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে । নিম্বার্কের 
মতেও, জীবজগৎ ব্রন্মেরই ম্যায় সত্য, এবং ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন ও অভিন্ন উভয়ই; কিন্ত 
এইস্থলে ব্রহ্ম ও জীবজগতের অভেদ ও ভেদ উভয়ের উপরই সমান গুরুত্ব আরোপ 
করা হইয়াছে। মধ্বের মতে, জীবজগৎ ব্রন্দের ন্যায় সত্য হইলেও ব্রহ্ম হইতে সম্পূর্ণ 
ভিন্ন। বল্পতের মতে, জীবজগৎ ব্রন্দের ন্যাক়ই সত্য, এবং ব্রহ্ম হইতে সম্পূর্ণ অভিন্ন । 

নিশ্বার্কের মতবাদ বহুলাংশে রামাহছজের মতবাদের তুল্য । তৎসত্বেও, নিম্বার্ক- 
বেদাস্তকে ষে একটি ম্বতন্ত্র সম্প্রদায়দূপে পঞ্চবেদাস্ত-সম্প্রদায়ের অস্ততৃক্ত কর! 
হইয়াছে, তাহার কারণ এই যে, এই মতবাদে ব্রহ্ম ও জীবজগৎ, এক ও বহুর মধ্যে 
সন্বন্ধ বিষয়ে একটি নৃতন দৃষ্টিভঙীর আভাপ পাওয়া যায়। নিম্বার্ক বারংবার, 
আগ্ঠোপাস্ত বিশেষ জোরের সঙ্গেই বলিয়াছেন ঘে, ব্রহ্ম ও জীবজগতের মধ্যে অভেদ 
ও ভেদ উভয়ই সমকালে, সমভাবে সত্য । এই মতবাদ আপাতদৃষ্টিতে বিরোধ- 
দৌষতুষ্ট বলিয়! মনে হইতে পারে । কিন্তু এই প্রসঙলে, নিম্বার্ক যে সংক্ষিপ্ধ অথচ 
স্তায়ানছগত আলোচনা করিয়াছেন, তাহা হইতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, তীহাঁর 
মতবাদ ত্ববিরোধর্দোষহ্ষ্ট নয়। তিনি কারণ ও কার্য, অংশী ও অংশের সম্বন্ধ 
অসুসানেই বর্ম ও জীবজগতের সম্বন্ধকে গ্রহণ করিয়াছেন। কারণ ও কার্ধ সম্পূর্ণ 
অভিন্নও নয়, সম্পূর্ণ ভিন্নও নয়, কিন্তু ভিন্নাভিন্ন। কার্ধের দিক হইতে প্রথমতঃ 
কার্মখ কারণ হইতে ম্বরূপতঃ ভিন্নাভিন্ন। কার্য কারণ হুইতে উৎপন্ন, কাঁরণেক্সই 
পরিপাম বা অবস্থাস্তর মাত্র বলিয়া কাধ কারণাত্মক, কারণম্বরূপ ; এবং সেজন্য 
কর্ধি কারণ হইতে স্বরূপতঃ অভিম্ন। কিন্তু কার্ধ কার্যই, কারণ নয়। এতৎসত্বেও 


৪২৬ 


বেদাস্ত-_বৈধব ( ঈশ্বরধাদী ) সম্প্রদায়সমূহ ; নিম্ার্ক ( ধৈতা্ৈতধাদ ) 


কার্ধের নিজস্ব, ত্বতন্ত্র ও বিশেষ একটি ব্যক্তিসতাীও আছে; এবং সেইজন্ত কার্ধ 
কারণ হুইতে ম্বরূপতঃ ভিন্ন । উদাহরণ হিসাবে বলা ধায় যে, কার্য স্বন্ময় ঘট এবং 
কারণ ম্বখপিণ্ড উভয়েই মৃত্তিকান্বরূপ বলিয়া অভিন্ন; কিন্ত তৎসত্বেও ঘট এবং 
পিওরপে ঘটন্বব্ূণ ও পিওস্বরূপ নিশ্চয়ই ভিন্নও বটে। 

ঘিতীয়তঃ কার্য কারণ হইতে ধর্মতঃও ভিন্নাভিন্ন। ্ৃন্ময় ঘটের ধর্ম ( ডিস্বারুতি 
কাঠিন্ত গ্রভৃতি ) এবং কার্য ( জলাহরণাদি ) মৃত্পিণ্ডের ধর্ম (গোলারুতি, কোমলতা 
প্রভৃতি ) ও কাধ (গৃহলেপনাদি ) হইতে ভিন্ন। তৎসত্বেও, ঘট ও পিগু ধর্মতঃ 
অভিন্ন, যেহেতু মৃত্তিকার সাধারণ ধর্ম (যে লকল ধর্ম লৌহ-্বর্ণাদি অন্যান্য ব্য 
থাকে না) উভগ্েই বর্তমান । অতএব কার্ধের দিক্‌ হইতে কার্য ও কারণ স্ববূপতঃ 
ও ধর্মতঃ, উভয়তঃই ভিন্নাভিন্ন | : 

একই ভাবে, কারণের দিক হুইতেও প্রথমতঃ, কারণ কার্য হইতে দ্বব্বপতঃ 
ভিন্নাভিন্ন। কারণ কার্ষে লীন হুইয়৷ আছে বলিয়া! কার্য হইতে অভিন্ন, কিন্ত 
কার্ধাতিরিক্ত বলিয়। কার্য হইতে ভিন্ন। উদ্দাহরণ হিসাবে বল! ধায় যে, মৃৎপিগু 
মুন্ময় ঘটে নিহিত হইয়া আছে বলিয়া ম্বন্ময় ঘট হইতে অভিন্ন । . কিন্ত একটি মাত্র 
ঘটেই তো পিণ্ডের শেষ নয়--পিও পাত্র প্রমুখ অন্যান্য বন্ততেও পরিণত হয়, এবং 
সেইদিক হইতে তাহা ঘটাতিরিক্ত ও ঘট হইতে ভিন্ন । 

ঘিতীয়তঃ, কারণ কার্য হইতে ধর্মত:ও ভিন্নাভিন্ন, সেইকথ পূর্বেই প্রন্নশিত 
হুইয়াছে। 

এইরূপে, কারণ ও কার্ধ স্বরূপতঃ ও ধর্মতঃ, উভয়তঃই ভিক্নাঁভিন্ন। অংলী ও অংশের 
স্বন্ধও এই একই সম্বন্ধ । 

একই ভাবে, ব্রহ্ম এবং জীবজগৎ ও স্বরূপতঃ ও ধর্মতঃ ভিন্নাতিন্ন। জীবজগৎ 
ব্রদ্মের কার্য ও পরিণামবূপে ব্রন্মাত্মক ও ব্রন্মন্থরূপ, অর্থাৎ ব্রজ্ঞ হইতে অভিন্ন । কিন্তু 
তৎ্সত্বেও, ব্রদ্ধের ব্রহ্মত্ব, জীবের জীবত্ব, জগতের জগত্ব পরস্পর ভিন্ন। প্রহ্ম ব্রহ্মই, 
জীব জীবই, জগৎ জগৎই-_অন্য কিছু নয়। এরপে ব্রহ্ম ও জীবজগৎ স্বরূপতঃ 
অভিন্ন হইয়াও ভিন্ন বা ভিন্নাভিন্ন । 

পুনরায়, জীবজগৎ্ ব্রদ্মেরই ম্যায় নিত্য ও সত্য; জীব ব্রদ্ষেরই ন্যায় সচ্চিদানন্দময় 
অক্রিয় প্রভৃতি । কিন্ত তৎসত্বেও, ব্রহ্ম জীবজগদ্দতিরিক্ত ; ব্র্মের সকল গুণ ও 
কার্ধ জীবজগতে নাই, জীবজগতের সকল গুণ ও কার্ধও ক্রন্ধে নাই। ব্রহ্ম বিভু, 
জীব অণু ব্রন্ম সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-কর্তা, জীব তাহ! নয়) ব্রহ্ম অজড়, জগৎ জড়, 
ট্ত্যার্দি। অতএব, ধর্মতঃও, ব্রহ্ম এবং জীবজগৎ অভিন্ন হইয্মাও ভিন্ন । 


৪২৭ 


; প্রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


, সেইজপ্ত, নিষ্বার্কের তে ব্রদ্ম ও জীবজগতের মধ্যে অভেদ ও ভেদ উভয়ই 
লমভাবে সত্য, মিত্য, শ্বাভাবিক ও অবিরুদ্ধ। | 

এইক্ধপে, নি্বার্কের মত্ত, “অভেদের” অর্থঃ (১) কার্ধের দিক হইতে হববূপতঃ 
ও গুণতঃ অভেদ, কারণাত্বকতা ও কারণাশ্রযিত্বঃ (২) কারণের দিক্‌ হইতে 
স্বরূপতঃ ও গুণতঃ অভেদ 'ও কার্ষে বিদ্যমানিতা। (1700108767098 )। “ভেদের” অর্থ £ 
(১) কার্ষের দিক হইতে স্বরূপতঃ: ও গুণতঃ ভেদ $ কারণের দিক্‌ হইতে স্বর্বপতঃ 
ও গুণতঃ ভেদ ও কার্ধাতিরিক্তত (6751089970.91009 )। 

যদি “অতেদ” ও “তেদ্দের” উপযুক্ত অর্থ গ্রহণ কর হয়, অর্থাৎ “অতেদকে” 
অস্তবিদ্যমানতা। (10708799108 ) এবং “ভেদকে” বহিভূতিত্ব ( 6:81080810051008) 
অর্থে গ্রহণ করা হয়, তাহ। হইলে তাহাদের সহাবস্থিতি কোন দিক্‌ দিয়াই অসমঞ্জস 
হয় না। এইক্ষেত্রে, "অভেদের” অর্থ এই নয় যে, ব্রহ্ম ও জীবজগৎ স্ব স্ব স্বতন্ত্র সত্তা 
বিসর্জন দিয়া, পরস্পর পরম্পরের মধ্যে নিঃশেষে বিলীন হইয়া, সম্পূর্ণরূপে একীভূত 
হুন,_-েমন সমুত্রে পতিত জলবিন্দু স্বীয় স্বতন্ত্র সত্তা পরিত্যাগ করিয়া সমুদ্রেই 
নিঃশেষে বিলীন হুইয়! যাঁয়। ইছার অর্থ কেবল এই যে, ব্রহ্ম ও জীবজগৎ অভিন্স্বরূপ 
ও ব্রহ্ম জীবজগতে অন্তলান। “ভেদের” অর্থও এই নয় যে, ব্রহ্ম ও জীবজগৎ 
ঘটপটের ন্যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন বন্ত। ইহার অর্থ কেবল এই ষে, ব্রহ্ম ও জীবজগৎ একই 
সঙ্গে গুণ, শক্তি ও কার্ধের দিক হইতে ভিন্ন, এবং ব্রহ্ম জীব ও জগতের বহিভূত। 

সেইজন্য নিম্বার্কের মতবাদের নাম *ম্বাভাবিক ভে্দাভেদবাঁদ”। এইরূপে 
ব্রহ্ম ও জীবজগতের নহ্বন্ধরূপ ছুরহতম সমস্যার একটি নৃতন সমাধান করিয়! নিশ্বার্ক 
দর্শনের দিক হইতে নি:সন্দেহে এক নৃতন অবদান রাখিয়! গিয়াছেন। অন্যান্য বহু 
ক্ষেত্রেও নিম্বার্কের দার্শনিক দাঁন অল্প নয়। তাহার অতুলনীয় “শক্তিবাদের” লাহাষ্যে 
তিনি বহ কঠিন দার্শনিক প্রশ্নের যথাষথ উত্তর দান করিয়। জগতের প্রভূত উপকার 
সাধন করিয়াছেন। 

ধর্মের দিক হুইতেও নিথ্বার্কের দান সামান্য নয়। ঈশ্বর ও মানবের মধ্যে 
নিকটতম, নিবিড়তম, মধুরতম, ব্যক্তিগত প্রাণের সম্পর্কের উপরই তিনি বারংবার 
বিশেষ জোর দিয়াছেন। পরক্রহ্মের নিরতিশয় বৃহত্ব, এই্বর্য, শক্তি, তেজ প্রভৃতির 
জন্য ত্বভাবতঃই সাধকের মনে যে ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা ও সম্ত্রমের উদয় হয়, তাহ তে? 
কেবল ধর্মের প্রথম সোপান মাত্র। কিন্তু প্রকৃত ধর্ম ভয় হইতে আনন্দে, শ্র্থা 
হইতে প্রেমে, সম্ম হইতে সৌন্দর্যে উন্নীত হুইয়! পূর্ণ পরিণতি লাভ করে। এই 
ক্ষেত্রে সাধকের পক্ষে বাছিরের বাধ্যতামূলক শাস্ত্রীয় নিয়মকানুন বা! অন্থশাসন 


৪২৮ 


রি 


বেদাস্ত-_-বৈধব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ নিত্বার্ক ( ছৈতীদ্বৈতবাদ ) 


নিশ্য়োজন, অন্তরের উদ্বেলিত মিলন-কাধনাঁতেই তিনি সেই পরম প্রেমময়ের 
শ্রপার্দপন্মে আত্মনিবেঘন করেন এবং তখন ভীতিমূলক, অন্ধ অনুসরণের স্থলে গ্রীতি- 
মুলক বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতার উদয় হয়। এইদ্ধপে যদিও সাধনমার্গের প্রারন্ডে 
মুমুক্ষ সাধক পরমেশ্বরের অনন্ত, অচিস্ত্য শক্তি অপার মহিম। নিঃসীম, ধারণাতীত 
বিরাটত্ব ও গভীরত্বে অভিভূত হইয়া! যান, তথাপি, তিনি দীর্ঘদিন সেই পরম- 
প্রেমের নিকট হইতে দূরে সরিয়! থাকিতে পাবেন না তাহার তুল্যভাবে অপরিসীম 
সৌন্দর্য, মাধূর্খ, প্রেম ও সথ্যের দুর্লজ্ব্য আকর্ষণে সেই পরমনুন্দর, পরমসখার ঘনিষ্ঠতম 
এবং মধুরতম সন্গিধিতে আসিয়! উপনীত হন। এইরূপে রামাসহথজ ও মধ্বের “এশ্বর্ষ- 
প্রধানা ভক্তি” বা ভয় ও সম্তরমমিশ্রিত ভক্তির স্থলে, নিশ্বার্কই প্রথম “মাধূর্ধগ্রধান। 
ভক্তি” ব1 গ্রীতি ও সখ্যজনিত ভক্তির উপরে জোর দিয়াছেন। নীতি বা সাধনাবলীর 
দিক হইতেও নিষ্বার্কের দান অপরিসীম । অস্তঃসারশূন্ত, বাহিক আচারাহুষ্ঠানের 
স্থলে তিনি চিত্তশুদ্ধি, আত্মসংযম, সরলতা, পবিত্রতা, দান, বৈরাগ্য প্রমুখ আস্তর- 
সাধন ও গুণের অনুশীলনের বিধান দিয়াছেন । তাহার মতে, অন্তরের আকৃতিই 
মূল কথা? কর্মের যে মূল প্রবৃত্তি, তাহার বিশুদ্ধতাই মুখ্য বস্ত। সেইজন্য যিনি 
মুক্তির জন্য ব্যাকুল হইয়। সম্পূর্ণ নিক্ষামভাবে স্বীয় কর্তব্যপালন করেন, তিনি 
সন্ন্যানীই হউন ব! গৃহীই হউন মুক্তিলাভে পূর্ণ অধিকারী । এইবপে, নিহ্দির মতে, 
মোক্ষের জন্য গৃহত্যাগ অত্যাবশ্তাক নয়। 

বস্ততঃ, দর্শন, ধর্ম ও নীতি-_সকল দিক হইতেই নিশ্বার্ক বেদাস্তের দান জগতের 
ইতিহাসে অমূল্য । নিম্বার্ক-বেদান্তের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ইহার সমন্ব়- 
মূলক, সার্বজনীন ও উদার দৃষ্টিভঙ্গী । নিথ্বার্ক ত্বয়ং স্থির উপলব্ধি করিতে পারিয়- 
ছিলেন যে, পরম-সত্য এক হইলেও তাহাকে নান! দ্রিক হইতে দৃষ্টিভলীর দ্বারা, নানা 
মার্গের মাধ্যমে জান। যায়, কাঁরণ সকল মানবের প্রবৃত্তি ও শক্তি সমান নয়। সেইজন্য 
তিনি সর্বদাই আপাতদৃষ্টিতে বিপরীতমুখী, চরম মতবাদ বর্জন করিয়া তাহাদের মধ্যে 
একটি সুন্দর সামঞ্জস্য বিধান করিয়।, মধ্যপস্থী মতবাদ গ্রহণে সমুতস্থক ছিলেন। এই 
কারণেই দর্শনের ক্ষেত্রে তিনি অভেদ ও ভের্দ, এক ও বছর মধ্যে সামগ্রস্ত বিধানের 
চেষ্টা করিয়াছিলেন। এই প্রচেষ্টায় তিনি ভেদ ও অভেদ বহু ও এক উভয়কেই 
সমপত্ায ও অবিরুদ্ধ বলিয়! গ্রহণ করিয়াছিলেন। পুঅরায়, ধর্মের ক্ষেত্রেও, যুক্তি 
ও অনুভূতি উভয়কেই যথাযথ সমান স্থান ও মর্ধাদ| দান করিয়া তিনি অদৈতবেদাস্তের 
অতুগ্র জ্ঞানবাদ-_যাহাতে ঈশ্বর ও মানবের ব্যক্তিগত দম্বদ্ধের কোনরূপ স্থান 
নাই এবং পরবর্তা বৈষব-বেদাস্তের অতুযুচ্ছসিত ভক্তিবাদ--যাহাতে ঈশ্বর ও 


৪২৯ 


প্রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মানবের ব্যক্তিগত সম্থদ্ধের উপরই কেবল অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হুইক্সাছে__ 
এই ছুইটি চরমপন্থী মতবাদের মধ্যে সার্থকতম সমন্বয় স্থাপন করিয়াছেন। সেইজন্য, 
তিনি যুক্তি ও অনুভূতি, জ্ঞান ও ভক্তি উভয়কেই সাঁধনমার্গে সমভাবে প্রয়োজনীয় 
বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন। উভয়ের মধ্যে কোনবপ উচ্চীবচ ভেদ স্বীকার 
করেন নাই। একই ভাবে, নীতিব ক্ষেত্রেও, নিম্বর্ক তীহার স্বভাবসিদ্ স্থির বুদ্ধি 
ও উদ্দার দৃটিভঙ্গীর পরিচয় দিয়াছেন। সেইজন্য, তিনি বিভিন্ন সাধকগণের বিভিন্ন 
প্রবৃত্তি ও শক্তি অনুসারে কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি, প্রপত্তি, গুরূপসত্তি প্রমুখ বিভিন্ন সাধন- 
মার্গের নির্দেশ দান করিয়াছেন । এই সমস্ত সাঁধনমার্গে জ্ঞানী ও কর্মী, সন্স্যাপী ও 
গৃহস্থ, আত্মবিশ্বাপশীল ও আত্মবিশ্বানহীন সকলেই সমভাবে মুক্তির অধিকারী । 
এইন্ধপ মধ্যম পশ্থ! প্রবর্তনের জন্যই, এইরূপ উদার, সমন্বয়মূলক দৃষ্টিতঙ্গীর জন্যই, 
এইকপ বিবোধ-বিরোধী সামগ্ুশ্তসীধনের জন্যই, নিম্বার্ক-বেদাস্ত যুগে যুগে ভারতের 
অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন ও ধর্মসন্বন্ধীয় মতবাদ রূপে আদৃত হুইয়াছে। 


ডরষ্টব্য 
১। ছান্দোগ্য ৩।১৪।১ ৩। তৈত্তিরীয়-উপনিষদ ৩।৬ 
২। ব্রঙ্গহুত্র ২।১।৩২ ৪। শান্্রযোনিত্বাৎ, ত্র সু, ১।১।৩ 


গ্রন্থবিবরণী 

বেদাস্তপারিজাতসৌরভ | নিশ্বার্ক প্রণীত ব্রঙ্গনুত্রের ভাত্য। ধুণ্ডিরাজ শাস্ত্রী কতৃঁক সম্পাদিত, কাশী 
সংস্কৃত গ্রস্থমালা, নং ৯৯, বারাণসী, ১৯৩২ 

নিশ্বার্ক ঃ দশক্লোকী, পুরুষোত্তমকৃত বেদান্ত-রত্র-মঞ্জুষা ভাস্য সমেত, রত্রগোপাল ভট্ট কর্তৃক সম্পাদিত, 
চৌখান্ব৷ সংস্কৃত গ্রন্থমালা, নং ১১৩, বারাণসী, ১৯০৭ 

নিশ্বার্ক£ সবিশেষ-নিবিশেষ- শ্রীকৃষ্ণ-ত্তব-রজ, পুরুযো তুমপ্রসাদ বৈষ্ণব কৃত শ্রত্যন্তকল্পবল্লী ভাষ্য সমেত, 
গোপাল শাস্ত্রী নেনে কর্তৃক সম্পাদিত, চৌখাম্বা সংস্কৃত গ্রন্থমালা নং ৩৫৬,৩৫৭, বারাণসী, ১৯২৭ 

নিম্বার্ক ঃ মন্ত্ররহস্ত ষোড়শী, সুন্দরভষ্ট কৃত মন্ত্রার্থরহস্ত ভাষ্য সমেত, কলিকাতী, ১৯৩১-৩২ 

নিম্বার্ক £ প্রপন্নকল্পবলী, কলায়ণদাস কতৃক সম্পাদিত. মথুরা, ১৯২৫ 

নিশ্বার্ক £ প্রাতঃম্মরণস্তে ত্র, কলায়ণদাস কতৃক সম্পাদিত, মধুরা, ১৯২৫ 

নিম্বার্কঃ কৃষ্ণাষ্টক, কিশোরলাল গোম্বমী কতৃক সম্পাদিত; বৃন্দাবন, ১৯১৩ 

নিগ্বার্ক £₹ রাধাক্টক, ছুলারপ্রসাদ শ্রাস্ত্রী কতৃক সম্পাদিত, মথুরা, ১৯২৫ 

বেদাস্ত-কৌন্তভ, নিশ্বার্কের সাক্ষাৎ শিল্প শ্রীনিবাস কর্তৃক ব্র্সত্রের ভাষ্য, ধুত্ডিরাজ শাস্ত্রী কর্তৃক 
সম্পার্দিত। কাণী সংস্কৃত গ্রস্থমাল, নং ৯৯, বারাণসী, ১৯৩২ 

চৌধুরী রম! £ নিশ্থার্ক এবং তাহার অনুগামীদের মতবাদ । রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি অব. বেল্পল 
কর্তৃক তিন খণ্ডে প্রকাশিত । 


৪৩ 


বেদাত্ত__-( ঈশ্বরবাদী ) বৈষ্ণব সম্প্রদায় সমূহ 
ঈ। বল্পভ ( শুদ্ধাদ্বৈত) 


জীবনী ও রচনাবলী £ দক্ষিণ ভারতে মাদ্রীজের প্রায় পঞ্চাশ মাইল উত্তর- 
পশ্চিমে অবস্থিত কঙ্করবদ নাঁমক গ্রামের এক বিদগ্ধ তৈলঙ্গ ব্রাহ্মণ পরিবারে বেদান্তের 
শুদ্ধাদ্বৈত মতের প্রবক্তা বল্লভ ( ১৪৭৩-১৫৩১ খ্রীঃ) জন্মগ্রহণ করেন। বল্লতের 
পিতাঁমাত! ত্বগৃহ হইতে বারাঁণসী যাত্রা! করেন এবং পথিমধ্যে মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত 
রায়পুরের সন্নিকটে চম্পারণ্য নামক স্থানে বল্পভের জন্ম হয়। বল্পভ-পরিবার কৃষ্ণ 
তুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার অন্তর্তত ছিল। এই পরিবার ভারঘাজ গোত্রীয় বলিয়া 
দাবী করিত এবং বহু সোম যজ্ঞ করিয়! অত্যন্ত নিষ্ঠার সহিত কর্মকাণ্ডের অনুষ্ঠান 
করিত। এইজন্যই এই পরিবার 'দীক্ষিত' আখ্যায় ভূষিত হুইয়াছিল। বল্লভ- 
পরিবার একপ্রকাঁরের বৈষ্ণব ধর্ম অনুসরণ করিত এবং গোপাল মৃত্তির অর্চন! করিত। 
বল্লভ এইরূপ আধ্যাত্মিক পরম্পরার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং বারাণসীতে 
তাহার শিক্ষালাভ ঘটে। তিনি তিন-তিনবার সমন্ত ভারতবর্ষ পর্যটন করেন, 
বিজয়নগর রাঁজসভাঁয় সম্মানিত হন এবং উপদেশের ছারা! বুলোককে শিষ্য করেন। 
তিনি এলাহাবাদ হইতে প্রীয় ছুই মাইল দূরে আঁদেল নামক গ্রামে জীবন অতিবাহিত 
করেন এবং ছুই পুত্র রাখিয়া বারাণসীতে দেহরক্ষা করেন। বিষুন্বামীর লহিত 
তাহার সম্পর্ক বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে ।৯ তিনি সংস্কৃতভাষায় অনেক 
গ্রন্থ প্রণয়ন করেন, কিন্তু তাহাদের কয়েকটি এখন আর সম্পূর্ণাকারে পাওয়া যায় না। 
্রন্বস্থত্র, জেমিনি স্থত্র এবং ভাগবতের ভাম্য এবং তত্বার্থদীপ নিবন্ধ ও অন্যান্ত' 
যোলটি পুস্তক তাহার মুখ্য রচনা । বল্পভের আরন্ধকার্ধের ধারা তাহার বংশধরের! 
অক্ষুপ্ন রাখিয়াছিলেন। তাহার পরিবারের শাখা অগ্ভাপি লুণ্ত হয় নাই। বল্লভ- 
পরিবারে আজও প্রায় আশিজন পুরুষ বর্তমান আছেন। সাধারণতঃ যুক্তপ্রদেশ, 
রাঁজপুতাঁনা, সৌরা্টর, গুজরাট এবং বোদ্বাই প্রদেশে বল্পভপন্থীদের দেখিতে পাওয়া 
যাঁয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে_ রাজন্ত হইতে আরম্ভ করিয়। অত্যন্ত অনুন্নত শ্রেণীর 
মধ্যেও বল্পভপস্থার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। 

যথার্থ জ্ঞানের বিভিন্ন উৎসঃ দার্শনিক-সমন্তাঁর সমাধানের জন্য বল্পভ (১)উপনিষদ্সহ 
বেদ (২) গীতা (৩) ত্রদ্ষন্ত্র এবং (৪) ভাগ বতত_এই চাঁরিটি মৌলিক 


৪৩১ 





শ্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


গ্রস্থকেই সর্বাপেক্ষা বেশী প্রামাণ্য-যুক্ত বলিয়! গ্রহণ করিয়াছেন । জ্ঞানের 
এই সব বিভিন্ন উৎসগুলি পরস্পর পরিপূরক । এই বিষয়ে সংশয় উপস্থিত হইলে 
উপরি লিখিত 'গ্রস্থগুলির ক্রমানুসারে উত্তর-গ্রন্থের সাহায্যে পূর্ব-গ্রন্থের প্রামাণ্য 
নির্ণয় করিতে হইবে । ইহার ফলে, বল্পভ সম্প্রদ্দাকজে ভাগবত একটি অনন্তসাধারণ 
স্থান অধিকার করিয়া! আছে। অন্য দৃষ্টিকোণ হইতে বেদ ও ত্রহ্স্ত্র এক বর্গে 
এবং গীতা। ও ভাগবত অন্ত বর্গে পড়ে । বস্ততঃ ভাঁগবতকে গীতার এক পরিপূর্ণ ভাস্ত 
হিসাবেই গণ্য করা হইয়। থাকে* ; এই মত সম্পূর্ণরূপে সমর্থন কর! যাঁয়। বলভের 
আবির্ভাবের পূর্বে বেদান্ত দর্শনের কয়েকটি বিভিন্ন সম্প্রদায় ছিল। এই সমস্ত 
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা! আচার্ষের নিজ নিজ মতানুসাবে শান্্ববাক্যের ব্যাখ্য। 
করিয়াছিলেন। উদাহরণ ত্বরূপ, শংকরের ব্যাখ্যা তৎকাঁলে বিশেষ সমালোচনার 
কারণ হইয়াছিল ; এবং এইরূপ বল। হইয়। থাকে যে, শাংকরভাস্যের ফলে দেশে যে 
অরাজকতার স্থ্টি হইয়াছিল, তাহা দূর করিবার জন্যই ঈশ্বরািষ্ট হইয়া বল্পভ এই 
জগতে আবিভূ্ত হইয়াছিলেন।ৎ সেইজন্যই বল্লভ নিজেকে অগ্নির এক বিশেষ বরূপ৬ 
এবং ঈশ্বরের প্রেরিত পুক্রষ বলিয়া পরিচয় দ্িতেন। তিনি শাম্ত্বাক্যের নৃতন 
ব্যাখ্যা করিয়া, শাকর মতের সমালোচনা করিয়া এবং জাতিধর্মনিবিশেষে 
সকলের জন্য বৈকুষ্ঠের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া তাহার ঈশ্বরদত্ত কর্ম সমাধান 
করিয়াছেন । 

ঈশ্বর সম্বন্ধে সমস্ত সমস্তাবলীর আলোচনাতে শ্রুতিনিরপেক্ষ তর্কের যে স্থান নাই 
এবং এই আলোচনা ঘে শ্রুতির আলোকেই করিতে হইবে, এই কথ! শাস্ত্র হইতেই 
জানা যায়।৭ বল্লপভ এই নীতি সর্বাংশে গ্রহণ করিয়াছিলেন । সেইজন্য তিনি শুধু 
যুক্তি কি বলে, এ্দিকে লক্ষ্য ন! দিয়া, এবং প্রত্যেক শ্রুতিবাক্যের মূল্য সমান, এই্প 
ধরিয়া লইয়া, শ্রুতির শব্দানুঘায়ী সরল ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন ।৮ বৈদিক সাহিত্যের 
প্রতি শংকর ও বল্পভের দৃষ্টিভঙ্গীর এই মৌলিক পার্থক্যের জন্যই তাহাদের দর্শনেও 
পার্থকা দেখা দিয়াছিল | বল্লভ শংকরকে এই বলিয়! সমালোচন। করিয়াছেন যে, শংকর 
তাত্বিক সমস্যালোচনায় সম্পূর্ণরূপে শুফতর্কের উপর নির্ভর করিয়াছেন এবং শ্রুতিবাক্য 
তাহার নিজন্ব মতবাদের সহিত মিলাইয়! ব্যাখ্যা করিয়াছেন । বল্লভাচার্ধ এমন পর্বস্ত 
বলিয়াছেন যে, শংকর শাস্ত্রবাক্যের বিশ্বস্ত ভাম্তকার নহেন। বল্পভ সেইজগ্যই 
শংকরের তীব্র সমালোচক হুহয়। উঠিয়াছিলেন এবং ভান্কর, রামাহছজ ও অন্ত 
অনেকের মত শংকরকে মাধ্যমিক বৌদ্ধের অবতার ও প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ* বলিয়া আখ্যাত 
করিয়াছিলেন । 


৪৩২ 


1৯ 
৯ 


বোৰাস্ত--বৈষ্ব ( ঈশ্বরবারী ) সপ্র্গায়লযূহ £ খলভ ( শুদ্ধাদ্বৈত ) 


ব্ন্মঃ বল্পভের মতে কৃষ্ই চরমলত্তা। তিনিই উপনিষদে ব্রহ্ম এবং ভাগবতে 
পর্মাত্সা নামে পরিকীতিত 1১ পুরুষোত্তম বা ভগবান কষ বস্ততঃ পরমেশ্বর এবং 
তিনি ব্রন্দের আধিদৈবিক রূপের প্রতিমূত্ি। তিনি এক ও অধিতীক্ম এবং সমস্ত 
দৈবগুণের আধাঁর। পরম্পরবিরুদ্ধ গুণও তাহাতে বর্তমান এবং তিনি সম্পূর্ণরূপে 
জড়গুণ রহিত । তিনি সচ্চিদানন্দ। তিনি রসঘন ও আনন্দঘন । বস ও আনদ্দ 
তাহার আঁকার এবং এই দৃট্টিভন্গী হইতেই বল্পত চরম সতাকে সাকার ব্রদ্ধ বলিয়! 
পরিচয় দিয়াছেন। তিনি নিত্য, অপরিণামী, বিভূ, সর্বজ ও সর্বশক্তিমান্‌। তাহার 
যে কোন সময় যে কোন কিছু হইবার ক্ষমতা আছে । এই ক্ষমতাই সাধারণতঃ 
তাহার মায়া-শক্তি নামে পরিচিত । জ্ঞান, কর্ম, অভিব্যক্তি, অস্তর্লম প্রভৃতি বিভিন্ন 
শক্তির তিনি অধিকারী । তিনি সমস্ত রকমের ভেদ হইতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত । তিনি 
সমস্ত কিছুর আষ্টা এবং এই জগতের উপাদান ও নিমিত্ত কারণ। সমস্ত জীবাতা 
তাহার মধ্য হইতেই বহির্গত হইয়াছে ; তাই তিনি তাহাদের হইতে ভিন্ন নহেন। 
তিনি ভোক্তা । ঈশ্বরের সমস্ত গুণই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং তাহা হইতে অভিন্ন।১৯ 
সংক্ষেপে বলিতে গেলে, ব্রহ্ম সমস্তগুণের অধিকারী এবং প্রকৃতি ও বুদ্ধি উভয়েরই 
মূল কারণ। ব্রহ্ষে প্রকৃতি ও বুদ্ধির ভেদ লুপ্ত হয় । এই দিক হুইতে বল্পভকে 
জার্মীন দার্শনিক শেলিং-এর সঙ্গে তুলন। কর। যাইতে পারে । জগত ও আত্ম! ব্রদ্ধের 
সঙ্গে স্বরূপতঃ অভিন্ন। সেইজন্ই বল্লভের মতবাদ শংকরের মায়াঁবাদের তুলনাক্স 
শুন্ধাদবৈত নামে পরিচিত ।১২ ব্রচ্ম সম্পূর্ণ শুদ্ধ এবং মায়ার মত কোন কিছুর ছবারাই 
€(ধযৈমন শাংকর মতে আছে ) তিনি আবিষ্ট হন না। অধিকন্ত, কারণ (ব্রহ্ম ) এবং 
কার্য ( জগৎ) উভয়ই শুদ্ধ এবং পরস্পর অভিন্ন । সেইজন্যই শুদ্ধাদ্বৈত হ্বীকার 
করিতে হয়। সমস্ত বৈদিক সাহিত্য একমাত্র ব্রন্মের বিভিন্ন দিক লইয়়াই আলোচন। 
করে । পূর্বকাঁণ্ড ঘজ্ঞাকারে ব্রন্দের কর্ম-গুণ লইয়া আলোচনা করে এবং উত্তরকাণ্ডের 
আলোচনার বিষয়_ ব্রন্ষের জ্ঞান-গুণ। অন্যদিকে, গীতা ও ভাগবতে ক্রন্ষের একটি 
সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়! যায় ।১৩ 

অক্ষর ব্রন্ধঃ বল্লভ (১) পরব্রক্ম বা পুরুষোত্তম (২) অন্তর্ধযামী ও (৩) অক্ষরত্রক্ম 
নামে বর্ষের ভ্রিরূপ স্বীকার করেন ।১* কৃষ্ণ বা পুরুষোত্তমই পরমেশ্বরের সর্বোদ্ধম 
রূপ । তিনি রসঘন ও আনন্দঘন এবং প্রেম ও পুজার পাত্র । পুরুষোতমের আনন্দের 
কোন অস্ত নাই। বস্ততঃ তিনি সম্পূর্ণ অবিভক্ত একটি আনন্দপিণ্ড বিশেষ । তিনি 
অন্তর্ধামী ব্ূপে পরিচ্ছিন্ন আনন্দ লইয়া! জীবাত্মায় অধিষ্ঠিত আছেন। অক্ষর ত্রদ্দের 
ক্ষেত্রেও আনন্দ অন্তহীন নয়, সাস্তভ। পরক্রদ্দের আধ্যাস্বিক ক্বপ অক্ষর ত্রহ্ধ 


৪৩৩ 


৫৫ 


আঁচ ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


জ্ঞামীদের ধ্যান-বস্ব এবং জ্ঞানীর! সাধনার শেষ অবস্থায় তীহার সহিত একাত্ম হইয়া 
_যান। ভক্তরা এই অক্ষর ত্রন্ষকে কৃষ্ণের চরণ, পরধধাঁষ গ্রভৃতি নামে অভিহিত 
করিয়া থাকেন? অগ্নি হইতে যেমন ক্ফুলিঙ্গ বহির্গত হয়, তেমনই অক্ষর ব্রদ্ম হইতেই 
বিচ্চিন্ন জীবাত্মার আবির্ভাধ হইয়! থাকে । যখন ঈশ্বর জ্ঞানযোগে মুক্তি দিতে চাহেম, 
তখন তিনি অক্ষর ব্রদ্ষকে (১) অক্ষর (২) কাল (৩) কর্ম ও (৪) স্বভাব__ এই 
চতুর্ম,(তিতে আবির্ত,ত করান। অক্ষর পুরুষ ও প্রকৃতি রূপে আবির্ভ.ত হইয়া 
সমস্ত বস্তর কারণ হইয়া থাকেন। উল্লিখিত মৃতি চতুষ্টয় নিত্য ও ঈশ্বরের লহিত 
একাত্ম | ্ষ্টিকালে ঈশ্বরের ইচ্ছায় যখন অক্ষর ব্রন্মের আনন্দ প্রচ্ছন্ন হইয়। যায়, তখন 
তাঁহাকে মুখ্যজীব বল! হইয়। থাকে । এই মতবাদ ওডুলোমির মতঘাদের সঙ্গে তুলনা 
করা ধাইতে পারে। ওডুলোমির মতে চেতন আত্মা চেতন ত্রন্মে লীন হুইয়। যায়| 
মুখ্য জীবরূপে অক্ষর জীবাত্মাগণ হইতে উদ্নত। বস্ততঃ, অক্ষর-ত্রন্ম পরিচ্ছিন্ন আনন্দের 
অধিকারী এবং তিনিই পুরুষের আকারে ভগবানের অবতার ব্ূপগুলি ধারণ করেন । 
ঈশ্বরের প্রথম ইচ্ছা যখন পূর্ণ হয়, তখন তাহার নাম দেওয়! হয় প্রকৃতি । অক্ষর 
পুরুষ ও প্রকৃতি উভয় হইতেই উচ্চতর এবং তিনি অসংখ্য জগৎ নিজের মধ্যে ধারণ 
করেন। উপনিষদ এবং গীতায় তাহাকেই অব্যক্ত প্রভৃতি নামে অভিহিত করা 
হইয়াছে ।** ব্রদ্ধের নেতিবাচক বর্ণনায় সাধারণতঃ অক্ষর ব্রহ্মকেই ইঙ্িত কর! 
হইয়। থাকে । এই অক্ষর ব্রচ্ম শংকরের পরব্রন্মের সমতুলা হইলেও পুরুষোত্তম হইতে 
নিমনস্তরের। অক্ষর ব্রন্মের ধারণ! বল্লভের পূর্বে ভারতীয় দর্শনের একটি বিস্মৃত 
অধ্যায় হইয়া গিয়াছিল। বল্লভ এই ধারণার পুনরুজ্জীবনের জন্য সঙ্গতভাবেই 
প্রশংসা দাবী করিতে পারেন। 

জগৎ ঈশ্বর সম্পূর্ণ একাকী এবং তিনি বু হইতে চাহেন। তিনি শুধু 
আনন্দের জন্যই এই জগৎ সৃষ্টি করিতে চাহেন এবং বস্ততঃ তিনি উর্ণনাঁভের জাল 
টির মত নিজের মধ্য হইতে হ্হেচ্ছায় এই জগৎ স্থঙ্টি করেন। জগৎ ব্রদ্ষের ব্বব্ূপ 
হইতেই বহির্গত হয়। শঙ্কর, রামানজ, নিষ্বার্ক এবং অন্যের! ঘেমন মনে করেন যে, 
ব্রহ্মের মায়া অথবা দেহ অথবা শক্তি হইতে জগত্ন্থষ্টি হয়, তাহা ঠিক নয় । বল্পভ 
স্বূপ-পরিণামবাদ স্বীকার করিয়া! শাম্ত্-প্রামাণ্যের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধ। প্রদর্শন 
করিয়াছেন । স্থভরাং ঈশ্বর জগতের উপাদান ও নিমিত কারণ উভয়ই বটেন। 
'যন্ধিও ঈশ্বর জগতে পরিণত হইয়াছেন, তথাপি তিনি অবিরুত-পরিণামী। ব্অবশ্থয 
এই ধারণা ভারশাস্ত্া্মমোদিত নয়, তথাপি শ্রুতির বলে এই ধারণা গ্রহণ না করিয়া 
উপায় নাই আর বল্পতের মতে শ্রুতিই চরম প্রমাণ । শবয়ংসপ্পূর্ণ ঈশ্বরের পক্ষে 


৪8৩৪ 


বেদাস্ত-_বৈষ্ব ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়নমূছ 3 বলত €শুদ্ধাছৈত ) 


জগৎস্থটি লীলামাজ। জগৎ ব্রন্বের সৎ-বূপ। ব্রদ্ষের আন্ত ছুইটি গুণ চিৎ ও আনন 
ঈশ্বরেচ্ছায় অভিভূত হইয়! থাকে ।১* স্থতরাং জগৎ ব্রদ্বেরই সত্য অভিব্যক্তি, 
পরক্রদ্দের আধিভৌতিক ব্ূপ। উহু ভ্রান্তি নয়। জগত ব্রন্ম হইতে অ্িন্ন। ব্রহ্ধ 
ও জগতের সম্পর্ক কারণ ও কার্ধের সম্পর্ক। শংকরের মায়ার মত এমন কিছুই নাই, 
যাহা ব্রহ্ম ও জগতের এই অভেদ সন্বন্ধের বিশুদ্ধাত। নষ্ট করিতে পারে। তাই ব্রন্ম ও 
জগতের সম্বন্ধ শুদ্ধ অদ্বৈত। জগৎ দেখিয়া! আমর] ঈশ্বরের মহত্বের ধারণা করিতে 
পারি, এবং যাহারা এই মহুত্ব উপলব্ধি করে, তাহারা তাহাকে অর্চন। না করিয়া: 
পারে না 1১" 

সর্বং খবিপং ব্রহ্ম । ঈশ্বরের ইচ্ছাঁতেই বিভিম্ন বস্ততে বিভিন্ন গুণের বিকাশ হুয় 
এবং তাহারই ফলে বিভিন্ন বস্ত বিভিন্ন নামে অভিহিত হইয়! থাকে । কিন্ত মায়া 
জীবকুলের দৃষ্টি আচ্ছন্ন করিয়! দেয় এবং তাহাদের মনে জগতের সত্য বস্তর মত 
অন্য এক মায়িক বস্ত ত্প্তি কৰে এবং এই মায়িক বস্ত সত্য বস্তর উপর অধ্যস্ত হয়। 
এই প্রক্রিয়ার ফলে বস্ত স্বরূপতঃ কখনই প্রত্যক্ষ কর! খায় না; ব্যামোহিক। 
মায়া কর্তৃক অধ্যন্ত মায়িক-গুণ সম্বলিত হইয়াই বস্ত জ্ঞাত হইয়া থাকে । এইরূপ 
সুষ্ট মায়িক বস্তকে পারিভাষিক শবে বিষয়তা বলা হয়। কিন্তু ব্রদ্ষের অভিব্যক্তি 
যে সত্য বস্ত তাহ বিষয় নামে পরিচিত হয়। বিষয়ত! ছুই প্রকারের হইতে 
পারে--(১) যাহা বস্তর সত্যন্দপ আবরণ করে এবং (২) যাহা ভ্রান্তি. উৎপর 
করে। যাহারা ব্রন্ধকে জানিয়াছে তাহারাই জাগতিক বস্তনিচয়কে ক্রহ্মরূপে দেখিতে 
পারে এবং সেইজন্তই তাহাদের কাছে ভ্রম ব। অখ্যাতি বলিয় কিছু নাই। কিন্তু 
অন্যেরা কেবলমাত্র কাল্পনিক পদার্থ বা বিষয়তাঁই দেখিতে পায় এবং তাহার 
ফলে তাহাদের অন্য খ্যাতির উপলব্ধি হয়। যে সমন্ত শাস্ত্র বাকা জগৎকে মায়! 
বলিয়! বর্ণন! করে তাহার! বস্বতঃ বিষয়তার প্রতিই ইঙ্গিত করে, ব্রন্মের অভিব্যদ্ষি 
ঘষে সভ্যজগৎ্ € বিষক্স ) উহ। তাহাদের উদ্দিষ্ট নয়।+৮ 

বল্লভ জীব-মায়। স্থষ্ট সংসার ও সত্য জগতের মধ্যে ষে পার্থক্য আছে, তাহ! 
স্পষ্টভাবে স্বীকার করেন। সংসার 'অহংতা" ও 'মমতা"র ধারণায় গঠিত । জীব 
যখন ব্রন্মজান লাভ করে, তখন এই সংপার বিনষ্ট হয়। ঈশ্বরের মায়াশক্তি 
বিগ্ভা ও অবিষ্তা নামে ছুইটি শক্তির স্যস্টি করে এবং তাহাদের প্রভাব একমাত্র 
জীবাত্মাতেই বর্তমান দেখা ষাক্স। বিদ্যার পঞ্চরূপ-_-(১) বৈরাগ্য (২) সংখ্যা ব। 
জ্ঞান (৩) ঘোঁগ (৪) তপঃ এবং (৫) কেশবাচ্ছরক্তি। অবিস্তারও পঞ্চ প্রকার-- 
(১) আত্মজ্ঞানের অভাব এবং (২) অস্তরিক্দ্রিয়, (৩) প্রাণ (৪) 'বহিরিক্রিয় ও (৫) 


৪৩৫ 


প্লাক ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মেহেকস অধ্াাষ। যখন বিদ্যা জীবের অবি্া ধ্বংস করে তখন অবিষ্তাঁ-স্& সংলার 
গ্ষতংই ধ্বংন হইয়া! যাদ্প এবং জীব পূর্ণমুক্তি লাঁত করে। জগৎ বিদ্যা হার। ধ্বংস 
হয়না, কিন্তু আত্মরতি উপভোগের জন্ত যখন ঈশ্বর সমম্ত স্টি নিজের মধ্যে 
প্রত্যাহরণ করিতে চান, তখন এই জগৎ ঈশ্বরে লীন হয়।১৯ জগৎ ও সংসাঁবের 
পার্থক্য প্রদর্শন বল্পভের এক বিশিষ্ট অবদান। এই পার্থক্যের ভিতিতে তিনি 
শুদ্ধাত্বৈত মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করিতে সক্ষম হইয়াছেন। ঈশ্বরেচ্ছায়, জগৎ-স্থ্টির 
' বহুবিধ প্রক্রিয়া আছে 1২, 

জীবাত্বাঃ অগ্নি হইতে যেমন ক্ফুলিঙ্গ বহির্গত হয় তেমনই জগৎ-স্থট্টির সময় 
অক্ষর ব্রহ্ম হইতে জীবাত্াসমূহের আবির্ভাব হুইয়। খাঁকে। জীবাত্বা অসংখ্য, নিত্য, 
'অথুপরিমাণ এবং ব্রদ্মের অংশ বিশেষ। জীবাত্মার। জ্ঞাতা, কর্তা ও ভোক্তা । 
ঈশ্বরের হইচ্ছানুসারে ব্রন্দের আনন্দ-গুণ জীবাত্মায় অভিভূত থাকে, কিন্ত ব্রন্ধের 
সদ্গুণ ও চিদ্‌্গুণ জীবাত্ায় প্রকটিত। জীবাত্মা ব্রদ্মের অংশ বলিয়। ব্রহ্ম হইতে 
অভিন্ন এবং তাহার ফলে বল্পভের অভিপ্রেত শুদ্ধাদ্বৈতবাদ অক্ষুপ্নই থাকে । ফুলের 
গন্ধ যেমন ফুল ছাড়াও অন্যত্র ব্যাপ্ত হয়, ঠিক তেমনি জীবাত্মা অণুপরিমাঁণ হওয়। 
সত্বেও চিদ্গুণবলে সর্বদেহেই পরিব্যাপ্ত হইয়া থাকে । জীবাত্মা পারমাধিক 
চেতনসত্বাবিশিষ্ট ও শংকর মতাহ্যায়ী শুধু ব্যবহারিক সত্বাবিশিষ্ট নয়।২৯ 
ঈশ্বর যখন কেবলমাত্র আনন্দের জন্য তথাকথিত বিশ্বলীলা করিতে ইচ্ছুক হন 
(আর বৈচিত্রা ছাড়া তে। আনন্দ সম্ভবও নয় ), তখন আনন্দগুণ জীবাত্মায় অব্যক্ত 
অবস্থ। প্রার্ধ হয় এবং তাহার ফলে এশ্বর্য প্রভৃতি ষ্‌ ভগ-ও অভিভূত হয় এবং 
ইহাতে বিচিত্র প্রকারের জীবাত্মার উদ্ভব হয়। জীব হইতে (১) এশ্বর্ধ (২) বীর্য 
(৩) যশ (9) শ্র (৫) জ্ঞান ও (৬) বৈরাগ্য--এই ষট্‌ ভগ চলিয়৷ যাওয়ায় তাহাতে 
পরনির্ভরতা, নানতা, জন্মাদি বিপর্যয়, অহং ও ভ্রাস্তজ্ঞান এবং লাংসারিক বিষয়ে 
আনক্তির উৎপত্তি হইয়। থাকে ।২২ অন্যভাবে বলিতে পার! যায় যে, প্রথম চাঁরিটি 
দৈষযগুণের নিগ্রহ জীবাত্মার বন্ধন এবং অন্ত ছইগুণের নিগ্রহ ভ্রান্ত জ্ঞান হ্যষ্টি করে। 
জীবাত্ব। অণুপরিমাঁণ; কিন্তু যখন তাহাতে তাহার স্থগ্ধ আনন্দগুণ প্রকট হয়, 
তখন জীবাত্মা বিভূত্ব লাভ করে। যে সমস্ত শান্ত্বাক্যে জীবাত্মার বিভূত্বের কথ। 
অশছে, তাহার! জীবাত্মা ষে অবস্থায় আনন্দের পরিপূর্ণ প্রকাশের ফলে ব্র্ষপ্রকাতি 
লাভ করে, ভাহাপ প্রতিই ইঙ্গিত করে। জীবাত্বীর আনন্দ ঘখন পরিপূর্ণরূপে 
প্রকট হয়, তখন দেই আত্মায় অসংখ্য জগতের আবির্ভাব ঘটে এবং তাহাতে দেশিক 
পরিচ্ছিন্নত1 থাকে না। জীবাত্ম! স্বরূপতঃ ব্রদ্ধ হইভে অভিন্ন । 


9৩৩ 


. বেদান্ত বৈষ্ব (ঈশ্বরবাদী-) স্প্রদায়সমূহ ২ বল্লভ (শুদ্ধাখ্বৈত ) 


জগৎ বৈচিত্রামর় এবং জীবাত্ার মধোও স্তরতেদ আছে। যদিও ঈশ্বর এই 
জগৎ হি করিয়া কাহাঁকেও সুধী এবং কাহাকেও ছৃঃথী করিয়াছেন, তথাশি 
াছাকে নির্দয় ব। পক্ষপাতদোযদুষ্ট বলা যায় না। কারণ, জগৎ ও জীবাত্মার বর্তমান 
অবস্থা পূর্ব পূর্ব স্ৃপ্রিচক্রের জগৎ ও জীবকর্মঘ্বার৷ নিয়ন্ত্রিত হইয়া থাকে। বস্ততঃ 
জগৎ ও জীবাত্ম! ঈশ্বরের ম্বূপ হইতেই বহির্গত হইয়াছে, নিখিল বিশ্ব ঈশ্বরেরই 
আত্মন্থপ্রি, হুতরাং এই ক্ষেত্রে সালোচনাঁর কোন অবকাশ নাই ।২৩ 

মুক্তির উপায় £ ঈশ্বরপ্রাপ্তির ঘে বিভিন্ন প্রণালী আছে, তাহার জন্য জীবের 
প্রকৃতি ও রুচির বৈচিত্র্য দায়ী । শাস্ত্রে মুক্তির উপায় ছিসাবে কর্ম, জ্ঞান ও 
তক্তি_-এই তিন পথেরই উল্লেখ আছে। এই তিন পথের কোন একটির উপর 
বিশেষ জোর দেওয়ার জন্যই বেদান্তের বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্যের স্টি 
হইয়াছে । 

বল্লভ জীবাত্মাগুলিকে গুণানুক্রমে (১) পুষ্টি (২) মর্যাদ1! ও (৩) প্রবাহ২৪-_ 
এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন। যে সমস্ত জীবাত্মা উদ্দেশ্য হীনভাবে জগতে 
ঘুরিয়া বেড়ায়, জগতে সম্পূর্ণ আসক্ত থাকে এবং ঈশ্বরের কথা একবারও চিন্তা 
করে না, তাহার! প্রবাহ শ্রেণীর অস্তর্ত। অন্যদিকে যে সমস্ত জীবাত্ম! শাস্ত্রাধ্যয়ন 
করে, ঈশ্বরের স্বরূপ জানিয়া তদনুযায়ী তাঁহার পূজা করে, তাহারা মর্ধাদ। শ্রেণীর 
অন্তভূতি। পুষ্িশ্রেণীর জীবাত্মাগণ ঈশ্বরের বাছাইকর। আপনাঁর জন। তাহারা 
ঈশ্বরের কূপালাভের মত ভাগ্যবান এবং এই কৃপার ফলে তাহার পর্মপুরুষার্থ 
লাভে সমর্থ; এই জন্য তাহারা পুষ্টি ( ঈশ্বর কৃপা ) নামে অভিহিত হয়। 

যে সমস্ত ব্যক্তি গহিত জীবনযাপন করে, তাহাদের ছুঃখভোগ করিতে ও 
জগৎ-চক্রে আব্িত হইতে হয় । যাহারা আকাঁজ্ষার তৃপ্তির জন্ত যজ্ঞানুষ্ঠান করে 
তাহারা তদন্যাঁয়ী ফল পায়, এবং ইচ্ছা হইলে তাহার পিতৃযাঁন পথে স্বর্গে যায়। 
কিন্তু পুণ্যক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তাহার! আবার মরজগতে ফিরিয়া আমে । বাসনা 
বিরহিত হইয়া যখন কেহ বেদনিদিষ্ট যজ্ঞানুষ্ঠান করে, তখন সে আত্মস্থখ লাভ করে 
এবং জীবনাবনানের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাগ্সিতত্ব-নির্দি্ট প্রক্রিয়া অনুসারে নবদেহ লাভ 
করে।২* এই নবজন্মে সে ক্রহ্মজ্ঞান লাভ করে এবং দেবযান পথের বিভিন্ন স্তর 
অতিক্রম করিয়! ব্রহ্ম পাধুজ্যলাভের অধিকারী হয়। বৈদিক যজ্ঞসমূহে ঈশ্বর 
অগ্নিহোত্র, দর্শপূর্ণমাস, পশু, চতুর্মা্তয এবং সোম ঘজ্ধের আকারে আবিভূ'ত হ'ন। 
যাহারা এই সমস্ত বজ্ঞানষ্ঠান করিয়! ঈশ্বরের ক্রিয়াশক্তির ভজন। করে এবং সঙ্গে সঙ্গে 
ব্দ্ব-জ্ঞান লাভ করে, তাহার] ঈশ্বরানন্দাকারে মুক্তির ম্বাদ লাভ করে.।২৬ যেহেতু 


৪৩৭ 


ট্লাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


মর্ধাদামারগের মৃযৃক্ষুকে দেবধাম-পখ অতিক্রম করিতে হয়, সেইজগ্ভ মর্ধাদ| মার্গে যুক্তি 
(ক্রমে ক্রমে লাভ কর? ধাক্স। : একমাত্র ঈপ্নরের কৃপাতেই সগ্যোমুক্তি সম্ভবপর 

এমন ব্যক্তিও আছে যাহার! ক্রহ্মজ্ঞান লাঁত করে, বিশ্বের সর্বত্র ব্রন্মের অস্তিত্ব 
অনুভব করে এবং লর্বক্ষণ ব্রহ্গ-ধ্যানে কালাতিপাত করে। এই সকল ব্যক্তি 
দেবযান পথ অতিক্রম করিয়া! অক্ষর ব্রদ্ধে লীন হয়। এই অক্ষর ব্রহ্মই তাহাদের 
ব্রহ্মজ্ঞানের বিষয়। তাহারা অক্ষর ত্রক্ষকেই চরমতত্ব বলিয়া মনে করে এবং 
পুরুযোত্বম প্রভৃতি উচ্চতর তত্ব স্ঘদ্ধে একেবারে অজ্ঞ । কিন্ত এই ব্রহ্গজ্ঞের৷ যদি 
কষ্ঠোপানকও হয়, তবে কেহই তাহাদের চেয়ে বেশি উন্নত নয়। এই সকল 
জ্ঞানী ভক্তের! জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে ত্রন্মের সহিত অভিন্নত। প্রাপ্ত হয় ।২* 

ঈশ্বরাহ্রক্তি বিভিন্ন আকার ধারণ করে। শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদ্সেবন, 
অর্চনা, বন্দনা, দাস, সখ্য এবং আত্মনিবেদন২৮ ঈশ্বরাচুরক্তির এই নয়টি প্রকার। 
এই্গুলি উৎকর্ষাধিক্যের ক্রমানুসারে বিন্যস্ত; এবং ঘষে ভক্ত সর্বশেষে ঈশ্বরপ্রেম 
লাভ করে তাহার আধ্যাত্মিক উন্নতির মাত্রা স্থচন! করে। যে শান্ব অধ্যয়ন 
করে সে ঈশ্বরের মহত্ব অনুভব করে, ঈশ্বরকে নিজেরই আত্মা বলিয়! ভাঁবে এবং 
তাহার ফলে অসীম নিবিড় প্রেমে তাহাকে বন্দনা! করে।২* শাস্নিদিই এই 
জাতীয় ভক্তি মর্যাদীভক্তি নামে পরিচিত এবং ইহা! অন্য বৈষ্ণব মতাবলম্বীদের বৈধী 
ভক্তির অন্থরূপ। মর্যাদাশ্রেণীর ভক্তেরা সাধারণতঃ পুরুষোত্তমের সাযুজ্য লাঁভ 
করে। কখনও কখনও তাহারা ঈশ্বরের সহিত সারপ্য, কখনও ব। তাহার সহিত 
সালোকা এবং কখনও ব! সাযুজ্য উপভোগ করে। 

শাস্ত্রে পুরুষার্থপ্রাপ্তির এই সকল পথের উল্লেখ আছে এবং সঙ্গে সঙ্গে এই 
কথাও বল। আছে যে, ঈশ্বরের কপা ব্যতীত চরমতত্ব কখনই অধিগত হয় না ।* 
বল্পভ অমর্ধাদ! ও পুঠিবাদের দ্বারা শাক্বাক্যের এই বিরোধ দূর করিবার চেষ্টা 
করিয়াছেন । মাচষ স্বীয় প্রষত্থ দ্বারা শাস্্নিদ্িষ্ট যে জ্ঞান ও ভক্তি লাভ করিতে 
পারে, উহার মর্ধাদামুক্তির স্থচনা করে; আর যাহারা ঈশ্বরের লান্সিধ্য লাভে 
একেবারে অক্ষম, তাছাদ্দিগকে তিনি যে মুক্তি প্রদান করেন, তাহার নাম পু্টি। 
মর্ধাদামার্পে জীবাতআ্র যোগ্যতাঁহসারে মুক্তিবিধান কর! হইয়৷ থাকে, কিন্তু পুষ্ি- 
মার্গে জীবাত্মা শান্নির্দিষ্ট মুক্তির কোঁন পথ অন্থবর্তন না করিলেও ঈশ্বর তাহাকে 
মুক্তি দিতে চাছেন ।*১ ্‌ 

অগঠিনের দর্শনের মত বল্পভের দর্শনেও নির্বাচনবাদ একটি বিশিষ্ট স্থান 
অধিকার করিয়াছে । বল্পভের ঘর্শনে নির্বাচনবাপ্দের আর এক নাম পু্রিমার্গ। 


৪৩৮ 


খোাস্ত__বৈষয ( ঈখরবারী ). মপরায়সমূহ ১ বলত (শুদ্ধাদ্বৈত ) 


ভগবান কৃষ্ণের প্রতি পু্টিশ্রেণীর ভক্ষষের দ্বাভাষিক ভক্তি থাকে ।. গৌড়ীয় 
বৈষ্ণব সপ্প্রঘাঁয়ের রাগাছছগাতক্তিতে যেমন, ঠিক তেমনই তাঁহারাও সব কিছুই 
ঈশ্বরের প্রতি অপরিসীম ভক্তি হেতুই করিয়া! থাকে । .তাহার! অত্যন্ত বিনীতভাবে 
ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একমাত্র ঈশ্বর কর্তৃক নির্বাচিত হইক্লেই 
তাহার! হ্ব্গায় আনন্দের অধিকারী হয়। মর্ধাদামার্গে ঈশ্বর-প্রেম নবধা ভক্তির 
ফল। কিন্ত পু্টিমার্গে প্রেমই গ্রথমাবস্থা, আর নবধ। ভক্তি ও অন্যান্ত আধ্যাত্মিক 
ক্রিয়া এই প্রেমেরই স্বাভাবিক পরিণতি । ন্থতরাং পুষ্টিকে মর্যাদার বিপরীত বল! 
ঘাইতে পারে। 
পুষ্টিশ্রেণীর ভক্তের! স্বীয় বৈশিষ্ট্যানসারে (১) প্রবাহ (২) মর্ধাদ! (৩) 
পুড্টি ( ৪) শুদ্ধ _-এই চারি শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর ভক্তের সর্বদাই ঈশ্বর 
হশ্সিষ্ট কার্ধকলাপে ব্যাপৃত থাকে এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর তক্তগণ ঈশ্বরের গুণাবলী 
ভাল করিয়া জানে ও তাহার ভজন! করে। তৃতীয় শ্রেণীর ভক্তের! সর্বজ্ঞ এবং 
চতুর্থ শ্রেণীর ভক্তবুন্দ ঈশ্বরের প্রতি অপরিলীম প্রেম পোষণ করে এবং সংখ্যায় 
অত্যন্ত অল্প হয়। গোঁপীর। এই চতুর্থ শ্রেণীর অস্তর্গত। পুটিশ্রেণীর ভক্তের| সকলেই 
দেবযান পথের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম না করিয়াই পুরুষোত্বমের সঙ্গে মিলিত হয় 
এবং ঈশ্বর কেবল করুণাঁপরবশ হইয়া তাহাদিগকে নৃতন দৈবদেহ প্রদ্দান করেন এবং 
তাহার বাঁসলীলায় অংশগ্রহণ করিতে অন্গমতি দেন ।৩২ গোপীদের মত উচ্টশ্রেণীর 
ভক্তেরা অবিলম্বে ঈশ্বরের লীলায় অংশ গ্রহণ করে এবং ঈশ্বরের আনন্দ নিত্যকাল 
ধরিয়া উপভোগ করে । নিত্যলীলায় ভক্ত ভগবানের সহযোগে নান। রকমের সুখ 
সম্ভোগ করে এবং ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে নিজেকে ভক্তের হাতে ছাড়িয়! ঘেন। বল্পভের 
মতে ইহাই মুক্তির চরমাবস্থা ও পরমপুরুতার্থ। 
বল্পভ বলেন, কর্ম, জ্ঞান ও মর্যাদাভ্ক্তি অতীতে প্রয়োজনীয় ছিল, কিন্ত তাহাধ 
সময়ে প্রতিকূল অবস্থার জন্য তাহার নিপ্রয়োজন হইয়া! উঠিয়াছে।*৩ তাই এখন 
মুক্তির জন্য ঈশ্বরের রুপার উপর নির্ভর কর! একাস্ত অপরিহার্য হুইয়া পড়িয়াছে। 
দেউলিয়া যেমন খণদাতাঁদের হাত হইতে আত্মরক্ষার জন্য আইন আদালতের 
শরণাপন্ন হয়, ঠিক তেমনই ঘে তাহার আধ্যাত্মিক নিংস্বতা ও অসীম অসহায়ত৷ 
উপলদ্ধি করিতে পারে, লে সাধারণতঃ ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করে। এইরূপ খুষ্টিতক্ত 
সর্বস্ব উৎসর্গ করিয়া! নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করে। সে ভাছার 
নমগ্র জীবন ঈশ্বরের সেবায় নিযুক্ত করে, ভাগবত গ্রন্থে তাঁহার মাহাত্ম্য পাঠ করে 
এবং সাংসারিক কাজকর্ষ সংক্ষিপ্ত করিয়া থাকে । আত্মসমর্পণে স্বার্থপরত। ব৷ 


৪৩৯ 


; প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দরশনের ইতিহাল 


জাগতিক বস্তর প্রতি কোন আসক্তির স্থান নাই এবং ভক্তের নিকট সংসার স্বতঃই 
লুপ্ত হুইস্! যায় । এইক্দপ ভক্তের গৃহ দেবালয়ে পরিণত হুয় এবং এই জগতেই তাহার 
সমগ্র পরিবারবর্গ দ্ব্গীয় আনন্দ উপভোগ করিতে পারে ।৩* 'পুষ্টিভক্ত ঈশ্বরকে 
এমনভাবে ভালবাসে ষে, সে তাহার সমস্ত পাখিব ভালবাস! পরিত্যাগ করে ও 
বর্ণাশ্রমধর্ম অগ্রাহ্য করে। ভগবান রুষ্ণ রস, আনন্দ ও সৌন্দর্যের পবিপূর্ণ রূপ এবং 
রল্পভ এক নৃতন সৌন্দর্য-দর্শন রচন। করিয়াছেন ।** কৃষ্ণ সমস্ত বলের, বিশেষ করিয়। 
শৃ্ণার-রসের আধার । মিলন ও বিরহ শৃঙ্জার-রসের ছুই দিক এবং কৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে 
তাঁহার আচরণে এই ছুইটিই প্রকাশ করেন। ভাগবত বণিত শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত বালা- 
লীলার বর্ণন৷ অত্যন্ত মনোসুধকর এবং যে-ই এই বর্ণন। পাঠ করে, সে-ই ভগবৎ-প্রেমে 
মত্ত হয়। দার্শনিক গ্যোতনায় পরিপূর্ণ শ্রীকৃষ্ণের গোকুল-লীল। তাহার রুপার অদ্ভুত 
ক্ষমতা প্রকাশ করে এবং এইজন্ভই বালকুষ্ণের পুজার বিধান আছে। গোপীরা 
শ্রীকৃষ্ণের অপূর্ব সৌন্দর্যে অভিভূত হইয়াছিল, তাহার জন্য উন্মত্ত হইয়াছিল এবং 
প্রেমের বেদীতে সর্বন্ব উৎসর্গ করিয়াছিল । শ্রীকৃষ্ণের নীতি-উপদেশ প্রত্যাখ্যান 
করিক়। তাহাদের একাগ্রতার পরিচয় দিয়াছিল। তাহারা নিজেদের গর্বের জন্য 
কষফ্-সঙ্গ হারাইয়াছিল, অত্যন্ত কাঁতরভাবে অন্থশোচন! করিয়াছিল এবং প্রতুর 
আছ্কৃল্য লাভ করিয়! তাহার সজে দৈবন্থখ উপভোগ করিয়াছিল। 

গৌপীর। ঈশ্বরের কৃপাতেই ঈশ্বর-প্রেম এবং পরমপুরুষার্থ লাভ করিয়াছিল । 
ঘে কেহ প্রেম, ক্রোধ, ভীতি, বাৎসল্য, এক্য ও সধ্যের মধ্য দিয়া ঈশ্বরের সঙ্গে 
সংযোগ স্থাপন করিতে পারে, সে-ই নিঃসন্দেহে স্বর্গীয় আনন্দ ভোগ করে ।৩৬ 

এইগুলি জীবাত্মার ঈশ্বর-প্রাপ্তির বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন উপায়। 
প্রেমিক-প্রেমিকার এীকাস্তিক প্রেমের মধ্য দিয়াই জীবাত্মা ও পরমাত্মার নিবিড়তম 
সংযোগ সম্ভব এবং বাধা এই প্রকার প্রেমেরই প্রতিমূত্তি। বল্পভ বলেন, একমাত্র 
মাবীবাই ত্বর্গায় আনন্দলাভের উপযুক্ত এবং এই কথ! তে। সকলেই স্বীকার করেন 
যে, নান্বীস্থলভ কমনীয়তা না থাকিলে ভক্তি অসম্ভব।*৭ কোন কোন ভক্ত 
রুষ্ণরে পুত্র হিপাবে ভজনা করে, আবার কেহ কেহ তাহাকে প্রেমিকরূপে পুজা! 
করে। বস্ততঃ সমস্ত জীবাত্মাই নারী এবং কৃষ্ণই তাহাদের স্বাভাবিক স্বামী ।৬৮ 
স্থতরাঁং স্ত্রী, যেমন স্বামীকে ভালবানে, তেমনই প্রত্যেক জীবাত্মাই কৃষ্ণকে 
তাঁলবাসিবে, এইকূপ আশা করা যাঁয়। এই মতবাদ স্থৃফীবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত । 
এইপে পুিষর্গর ছার সকলের জন্যই উন্মুক্ত । 

শোঁপীদের জীবনে বূপাত্সিত পু্টিভক্কি সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হইলেও বর্তমান অবস্থায় 


বেদাত্ত- বৈধ ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ বল্পত (শুভ্কান্বৈত ) 


অন্থবিধাজনক। সেইজন্য বল্পভ প্রপত্তিবপ অন্ত আর একটি স্থসমাঁধান প্রদ্দান 
করিয়াছেন ।*৯ সমস্ত জীবন প্রপত্তির অনুশীলন ও ঈশ্বরের ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পণ 
করিয়! জাতিবর্ণনিবিশেষে সকলেই পুরুষার্থ লাভ করিতে পারে। এইক্ধপ মানসিক 
প্রবণত। লইয়া ভাগবতশাস্ত্র শ্রবণ ও আবৃত্তি করিয়া তাহার তাহাদের সমস্ত জীবন 
ঈশ্ববারাধনায় নিযুক্ত করিতে পারে । 

গোকুলে কৃষ্ণের রাসলীলা নিত্যকলের ব্যাপার এবং এই রাসলীলাঁর ধারণ! 
খক্বেদেও পাঁওয়। যায়।** শুকের সময় হইতে আধুনিক কাল পর্যস্ত রাঁসলীলার 
ধারণা বিভিন্ন রূপে ব্যাখ্যাত হইয়াছে ।*১ বল্পভ আক্ষরিক ও আঁলঙ্কারিক উভয় 
অর্থেই রাঁদলীলার ব্যাখ্যা করিয়াছেন । বল্লভ ইহ! দেখাইতে উৎস্থক যে, ঈশ্বর ও 
তাহার সমস্ত কার্ধাবলী লালসামুক্ত এবং রাঁদলীলাঁর অন্চিস্তন মানুষকে শুধু পবিত্র 
করে না, তাহার মধ্যে ঈশ্বরাহ্রক্তিও সথশারিত করে,*২ সেইজন্ত রাঁসলীলা যখন 
আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা হয়, তখন তিনি ইহার ইন্দ্িয়াসক্তিশূন্তত] প্রমাণ করিতে 
ব্যগ্র হইয়া পড়েন । রাসলীলার ঘখন আলঙ্কারিক ব্যাখ্যা ছেওয়। হয়, তখন রাঁসলীলার 
তাৎপর্য ভূল বুঝিবাঁর কোন আশঙ্কাই থাকে ন।। বল্লভের মতে গোপীরাই বেদ ব। 
শ্রুতি এবং ঈশ্বরই বেদের একমাত্র আলোচা বিষয় বলিয়া! তাহারা নিত্যই ঈশ্বরের 
সঙ্গে যুক্ত । রাসলীলাঁর মধ্যে শ্রুতির সহিত ঈশ্বরের নিত্য-সংযোগই প্রকাশ কর! 


সিদ্ধান্ত 8 বল্লভ শুদ্ধাদ্বৈত মতবাদ এবং সংশয়াতীত শাস্ত্র প্রামাণ্যের উপর 
নির্ভর করিয়! পুষ্টিধর্ম প্রচাঁর করিয়াছেন । তাঁহার কতগুলি ধারণা- যেমন, ব্রহ্ম 
সগ্ণ, জগৎ ব্রন্মের পরিণতি, জগৎ সত্য, জ্ঞান কর্ম সমন্বয় শংকরের পূর্বেও প্রচলিত 
ছিল। ভক্তি, প্রপত্তি, দেবকৃপ। প্রভৃতির ধারণাও বললভের আগেই জান৷ ছিল। 
তাহ! হইলে ভারতীয় দর্শনে বল্লভের নিজন্ব অবদান কি? 

অদৈতবাদ ঈশ্বর রসঘন ও আনন্দঘন - এই ধারণ, ব্র্ষে বিপরীত গুণের 
অবস্থিতি, অক্ষর ব্রদ্ষের ধারণা, ব্রহ্ম-্বরূপ হইতে জগত্-স্ষ্টির কল্পনা, পরিবর্তন 
রহিত অবস্থায় ব্রদ্ধের জগতে পরিণতি, ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ, ঈশ্বরের কপার উপর 
প্রাধান্যদান এবং সৌন্দ্যমপ্ডিত ভাবাঁবেগপ্রধাঁন ভক্তি প্রভৃতি বল্পভ-দর্শনের বৈশিষ্ট্য । 

বল্পভ শঙ্করকে মাক়াবাদের জন্য, ভাক্করকে উপাঁধিবাদের জন্য, বামান্থজকে 
তিনটি বস্তর পারমাধিক সত্তার স্বীকৃতির জন্য, নিদ্বার্ককে ছ্েতের উপর প্রাধান্য 
দেওয়ার জন্য, মধ্বকে শুদ্ধদৈতবাদের জন্য এবং শাক্তকে শক্তি-নিমিত-কারণ- 
বাদের জন্য সমালোচনা করিয়াছেন। বললভ বলেন, বাস্তবিক অছৈতই শাস্ত্রের 


৪8৪১ 


৫৬ 


' প্রান ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


শিক্ষা এবং ইহার সঙ্গে ভক্তির কোন বিরোধ নাই (আঁধুমিককালে শ্রীঅরবিন্দও 
এই কথাই বলিয়াছেন ), শংকরের অতৈতবাদ অধ্যাত্ম শাস্ত্রাভিপ্রেত নয় । বাধাকষ্ণন 
বলেন, শংকর তাত্বিক গভীরতা ও নৈয়াগ্নিক-ক্ষমতায় তুলনাহীন এবং দার্শনিক ও 
দ্বান্দিক হিসাবে সর্বশেষ্ট | বল্লত কিন্তু শাস্চরমপ্রামাণ্যবাদ ত্বীকৃতিতে অতুলনীয় 
এবং সেইজন্যই তাহার দর্শন ধর্মমূলক এবং ইহ খ্রীষ্টধর্মদর্শনকে স্মরণ করাইয়। দেয়। 
ক্তরাং শংকর ও বল্লভ কখনই একমত হুইতে পারেন না। 

জনশ্রতি এই যে, ভগবান কৃষ্ণের দ্বার! সরাসরি আদিষ্ট হইয়া বল্পভ জাতিবর্ণ- 
নিবিশেষে সকলকে ঈশ্বর-নেবায় দীক্ষিত করিয়া ঈশ্বরের দিকে আকৃষ্ট করিবার 
ব্রত উদ্যাপন করিয়াছিলেন ।৪৪ বল্পত প্লোটাইনাসের মতই বলেন, জন্মের পরই 
পিতামাতা হইতে বিচ্যুত ও বহুদূরে দীর্ঘকাল লালিত পালিত সন্তানের যেমন 
পিতামাতা ও নিজেদের সম্বন্ধে অজ্ঞ হুইয়া উঠে, তেমনই পরমাত্সা হইতে বিচ্যুত 
জীবাত্মা ছুঃখ কষ্ট ভোগ করে, এবং যতশীপ্র সম্ভব তাহারা পরমাত্মার তত্বাবধানে 
আসে ততই তাহাদের মঙ্গল। বললভের শিক্ষা সমাজের সমন্ত স্তরের লোকের 
জীবনই উন্নীত করিয়াছিল এবং তাহা পুর্ণ গণতান্ত্রিক বলিয়৷ শ্বীকৃতিলাভ 
করিয়াছিল। বল্লভের চিন্তাধারা হইতে অস্প্রেরণা লাভ করিয়। সংস্কৃত, হিন্দী ও 
গুজরাটিতে চিত্র, সঙলীত ও সাহিত্য বিশেষ উন্নতি লাভ করিকাছে ; এবং ঈশ্বব- 
সাযূজ্যের গভীর অনুভূতিতে ধাহাদের ব্যক্তি-জীবন লুপ্ত হইয়াছে এমন বহু রহস্ত- 
বাদীর অব্যাহত ধার! বল্পভ-পন্থীদের মধ্যে লক্ষিত হয়। 


দ্েষ্টব্য 


১। জি, এইচ, ভট্ট £ বিঞুম্ব'মী এবং বপ্লভাচার্য (নিখিল ভারত প্রাচ্য সন্মেলনের সপ্তম অধিবেশনের 
বিবরণ, ৪৪৯-৬৫ পৃঃ) বিষুম্বামী ও বল্লভাচার্য সম্বন্ধে আর একটি টাক ( নিখিল ভারত প্রাচ্য 
সম্মেলনের অষ্টম অধিবেশনের বিবরণ, ৩২২-৮ পৃঃ ) 

২। ততন্বার্থদীপ (ত ), ১, ৫, (বারাণসী সংস্করণ ) 

৩ | তি, ১1৭-৮ 

৪1 ত, 1৬৪, ২১৮, ২১৯ 

৫ | অণুভাঙ্য ( অ ), ২২, ২৬ 

৬1 ভাগবতেয উপর জুবোধিনী চীক (স) ১1১, ১ 

৭] ক্রঙ্গনথত্র (ব) ১1১২; ২১1২৭ প্রভৃতি 

৮1 হস, ২১1১৪, ২৭ প্রভৃতি ; ত ১1২৪-৭, ৫৭, ৬৪ 


৪৪8২ 


২৬। 
হ৭। 
২৮। 
২৯। 


৩১ | 


৩২ | 


৩৩। 


৩৫ । 


৩৬। 


৩৮ | 


৩৯ । 


বেদাস্ত-_বৈষ্ব ( ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ £ বলত (শুদ্ধাদ্বৈত ) 


অঃ ১1১1৩, ১২ % ২1১1১৪, ২৭ 7 ২1৩১৮ ত, ১১1১৯, ১৮, ৮০-২, 
ত, ১1৬, ১৪; ২১১৮ 

ত, ১।২৯-৩১, ৪৬, ৪৭, ৬৭-৭৯; ২।৮৪-৬ ; অ ১1১-৩, ৩২ 

শুদ্ধাদ্বৈত মাতগ্য, ২৬-৯ | 

ত, ১১২, ২০; ২1৯০ 

ত, ২১১৯ 

ত, ২।৯৮-১০৩ 

অ, ১1৪২৬ $ ২1১৩৩; ত ১২৭, ৩১-৪ 

ত, ১৪৩, ৪৪ 

স, ২৯৩৩; ৩1২৬৩, 

তি, ১1২৭, ৩৫-৭, ৪৮১ ৪৯ 

ত, ১1৪০-২ 

অঃ ২।৩1১৭-৫৩ ; ত, ১।৩২-৫) ৫৬-৮ 

অ, ৩।২।৫ 

অ, ২১1৩৪; ত, ১1৭৮ 

পু্টি-প্রবাহ-মর্যাদা (পু) 

অ, ৩।১ , ত, ২।৪-৯, ২৫৪-৬৮ 

ত, ২।১-৪ 

ত, ২১০৩; অ ৪1৩।১-৭ 

ভাগবত (ভ ১, ৮1৫২৩, ২৪ 

ত, ১৪৩-৫ 

মুণ্ডক উপনিষদ, ৩।২।৩; কঠ উপনিষদ ১1২২২ ; শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ৩1২০ প্রভৃতি | 

অ+ ৩৩1২৯, ৪২, 518৬ , ৪1১1১৩ , ২৭ 2 ৪81৯ ভ, ২১০1৪; সিদ্ধান্তমুক্তাবলী, ১৭১৮ % পু ঃ 
স, ১০।৩৬।৫৫ 

অ, ৪1৪১-১২ 

কৃষ্ণা শ্রয় ; ত, ১1৫০-২ 2 ১1২*৯-১৯১ ২১৫-১৭, ২১৯-২৪ 

ত, ১৫৪ ২।২৪৯-৪০ 

ত, ২২৬-৮ 

ভ, ১২৬১৫; ৭১1৩০ ; স. ১০1৮৪।২৩ 

স, ১০২৬ (২৯ অধিকতর প্রচলিত) ১ , ৩১।৩১, রাধাকৃষ্ণন, ভগবদ্মীতা, ১৯৪৮, ভূমিকা, ৬১-৬২ পৃঃ 
স, ভ সম্বন্ধে, ১*।২৬।২৪ , ৪81৬০ 

বিবেক ধৈর্যা রয়, ১৬, ১৭, কৃষ্ণ রয় 

খকৃবেদ, ১।১৫৪।৫, ৬ ১৫৬1৩ % ২২।১৮-২১ $ ৭1১০০1৪7 ১০1১১৩-১৪ প্রভৃতি ; যজুর্বেদ, ৬৩ ॥ 
তৈঃ সং, ১৩।৬।১ , অ, ৪1২১৫।১৬ ; বিদ্বন মণ্ডন ২৭৯-৩৪৯ পৃঃ 


৪8৪৩ 


প্রাচম ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


৪১। জি, এইচ্, ভট £ তামস ফল প্রকরণ হুবোধিনীর ভূমিকা । 
৪২ | ভাগবতের উপর স, ১*।২৬1৪২ 

৪৩। ভারতীয় দর্শন, দ্বিতীয় খণ্ড, ৬৫৭-৮ পৃঃ 

৪৪ | সিদ্ধান্ত রহস্ত | 


গ্রস্থবিবরণী 


বলত : ব্র্মস্থত্রের অণুভান্ব, ভাগবতের হবোধিনী টীকা; তত্বার্থদীপনিবদ্ধ (প্রকাশ সহ ) : ড়নিবন্ধ । 
বিট্‌ঠল £ বিদ্বন মণ্ডন, বোম্বাই, ১৯২৬ 

পুরুষোভ্তম £ প্রস্থান-রত্তাকর, বোম্বাই, ১৯০৮ 

গোপেশ্বর £ ভক্তিমার্তও, বারাণসী । 

গিরিধর 2 শুদ্ধাদৈত মার্তগু € চৌখাম্বা সং সিঃ, ৯৭ নং) 

বালকৃষ £ প্রমেয়-রত্বার্ণৰ ( চৌখাম্ব৷ সং সিঃ, ৯৭ নং) 

গট.লাল £ বেদাস্ত-চিস্তীমণি, বোম্বাই, ১৯১৮ 

গউ.লাল £ সংসিদ্ধান্ত মার্তও, বোম্বাই, ১৯৪২ 

এম, জি, শাস্ত্রী £ শুদ্ধাদ্বৈতদিদ্ধাস্তপ্রদীপ, বোম্বাই, ১৯৩৭ 


৪98৪8 


বেদান্ত-_বৈষ্ণব (ঈশ্বরবাদী ) সম্প্রদায়সমূহ 
উ। চৈতন্য ( অচিস্ত্য ভেদাভেদ ) 
১। ভূমিকা1-অন্যান্য অম্প্রদাম্ের সন্থিত অন্গন্ধ 


চৈতন্যের দর্শনের নিয়লিখিত বিবৃতি প্রধানতঃ “শমূল ক্লোক'-এর উপর প্রতিষ্ঠিত। 
গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ এইটিকে স্বয়ং চৈতন্যের রচনা বলিয়া! মনে করেন। 

প্রথমেই বল! আবশ্যক যে, চৈতন্যের আধ্যাত্মিক গুরুগণ (তাহার দীক্ষাগ্র এবং 
সন্ন্যাসগুরু ) মাধব সম্প্রদায়ের অন্থগামী ছিলেন এবং চৈতন্য নিজেকে মাধ্ব সম্প্রদায়ের 
অস্তভূক্তি বলিয়া গণ্য করিতেন এবং লোকের নিকট মাধব ঘৈতবাদই ব্যাখ্যা করিতেন 
বলিয়া মনে করিতেন, তথাপি প্রকৃতপক্ষে তিনি যে দার্শনিক মত প্রচার করিয়াছিলেন 
তাহা হইতেছে এমন একপ্রকার ভেদাভেদ্ববাদ যাহা নিম্বার্কমত্ের অতিশয় নিকটবর্তী । 
এই কথার সত্যতা দশমূল শ্লোক হইতে এবং তাহার শিয্ভের] তাহার উপদেশাবলীর যে 
সকল বিবরণ রাখিয়া গিয়াছেন তাহা হইতে প্রতীয়মান হইবে । চৈতন্যের দর্শন আমাদের 
নিকট যে আকারে আসিয়াছে, তাহ! অবিমিশ্র ঘ্বেতবাদ নহে) কারণ উহাতে শুধু যে 
্রহ্ষস্থজ্রের মাধব ব্যাখ্যানুযায়ী ঈশ্বর, জীব এবং জড়জগতের নিত্য ভে্দের উপর' গুরুত্ব 
অর্পণ কর! হইয়াছে তাহা নহে, অধিকন্তু উহাদের মধ্যে এই নিত্য ও স্থুনির্দি্ই ভেদ 
সত্বেও এমন একটি স্বরূপগত অভেদের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে যাহা বিচারবুদ্ধির 
নিকট বোধগম্য নহে। হ্বতরাং এই দর্শনকে মাধব মতের ম্যায় দ্বৈতাত্মক পৌরুষেয় 
অধ্যাত্মবাদ নাম দেওয়1 সঙ্গত হইবে না । কিন্ত যে অঠিস্তাভেদদাভেদ নামে এই দর্শন 
পরিচিত উহাই উহার যথোপধুক্ত নাম-_অর্থাৎ উহা! হইতেছে এমন একপ্রকার 
আধ্যাত্মিক অয়বাদ যাহাতে সর্বপ্রকার ভেদের এক যুক্ত্যতীত এঁক্য অথবা সমগ্রের 
মধ্যে সমাধান কর] হইয়াছে-__এই এক্য শুদ্ধ যৌক্তিক বুদ্ধির অগম্য। 

সর্ব বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সাধারণ মত এই যে, জগতের: সত্যতা শ্বীকার করিতে হইবে 
এবং শংকরানুমোদিত মায়াবাদ এবং তৎসংশ্লিষ্ট জগন্িথ্যাত্বের ধারণ! প্রত্যাখ্যান করিতে 
হইবে । এই ব্যাপারে শুধু যে সর্ব বৈষ্ণব সম্প্রদ্ধায়ই একমত ইহা নহে, উপরস্ত সর্ব শৈব 
ও শাক্ত সম্প্রদায়ও ? অর্থাৎ ধাহার1 আগমসমূহের প্রামাণ্য শ্বীকার করেন এবং ইহা- 
দিগকে ঈশ্বরোপণিষ্ট শাস্ত্রের স্থান দেন, তাহারা সকলেই এই ব্যাপারে একমত। বৈষ্ণব 
চৈতন্তও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নহেন। তাই যদিও শংকর নিগুণ ব্রদ্ধকে পরম 


889৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


নিরপেক্ষ তত্ব বলিয়া যনে করেন এবং তাহার তুলনায় জগতের সৃষ্টি, স্থিতি, পালনকর্তা 
ঈশ্বরকে নিয়স্থান প্রদান করেন, তথাপি চৈতদ্ভের অহ্গামীগণ জগতের অস্তিত্বে বিশ্বাস 
করেন বলিয়া এই নিগুণ বর্ম ও ঈশ্বরের সম্বজ্ধাটকে বিপরীতভাবে ধারণা করেন-__ 
তাহাদের মতে পরম তত্ব হইতেছেন হুষ্টজীবের সহিত প্রেম ও স্সেহের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধে 
সন্বদ্ধ স্্টজগতের প্রভুরূপে ব্রহ্ম এবং এই সত্যের উপলন্ধির পথে নিুণ ব্রহ্ম হইতেছে 
এমন একটি ভূমি যাহা অতিক্রম করিয়া যাইতে হয়। 

ঠতন্ক মতের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হইতেছে এই যে, উহাতে ঈশ্বর ও তাহার শক্তিকে 
কৃষ্ণ ও রাধা বলিয়া ধারণা কর] হইয়াছে । এই ধারণা দ্বারা চৈতন্য নিম্বার্ক ও বল্পভের 
অন্ুগামীদিগকে রামানজ ও মধ্ের অন্থগামীগণ হইতে পৃথক করা যায়। বামাহজ ও 
মধ্বের মতে ঈশ্বর ও তাহার শক্তিকে বৈকুঞ্ঠনিবাসী বিষণ অথব। নারায়ণ এবং লক্মীরপে 
ধারণ। করা হুয়। এই বৈকুণ গ্রীষটীয়দের স্বর্গের সমতুল্য | ঈশ্বরের এই ছুই ধারণার মধ্যে 
মূলগত এবং গভীর প্রভেদ আছে । ঈশ্বর ও তাহার শক্তিকে বৈকু্ঠ ও তাহার অধিবাসীদের 
অধিপতি লক্ষ্মী নারায়ণরূপে ধারণা করার মধ্যে ভগবানের এশ্বর্ষের উপর বিশেষ গুরুত্ব অর্পণ 
কর! হইয়াছে-_জীব শুধু দুরে থাকিয়াই তাহার সম্মুখে দণ্ডবৎ হইয়! এবং অন্ত প্রকারে 
তাহার অতুলনীয় গরিম! এবং মহিমার জন্য তাহার প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতে 
পারে মাত্র, কিন্ত সাক্ষাতভাবে তাহার নিকট-সঙ্গলাভের সাহস করিতে পারে না। কিন্তু 
ঈশ্বর ও তাহার শক্তির বাধারুষ্করূপে ষে ধারণা তাহ ভিন্নপ্রকার ; এধানে জীব বুন্দাবন- 
লীলার মধ্যে সথা, সম্তান অথব1 প্রেমিকের মানবীয় ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্বন্ধের ভিতর 
দিয়! ভগবৎ সাহচর্ষের আম্বাদ লাভ করে । ইহা ভগবানের মাধুর্য রূপ, অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ 
সাহচর্ষের মধুরতার উপলঘ্ধি বলিয়া বণিত হইয়াছে; এবং চৈতন্ত বল্পভ প্রভৃতির 
অন্থগামীগণ ঈশ্বরের লক্ষ্মীনারায়ণ রূপ অপেক্ষা এই মধুর রূপের উপলন্ধিকে উচ্চতর ও 
অধিক আনন্দদায়ক বলিয়। মনে করেন। কারণ, লক্্মীনারায়ণের ধারণায় ভগবানের 
শুধু গরিমা ও মহিমার উপর গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। “সিদ্ধাস্ত-রত্বে বল! হইয়াছে যে, 
মাধুর্বরূপে ঈশ্বর অন্ান্ত মানবের মধ্যে মানবধর্মের গণ্ডী অতিক্রম না করিয়া ( নরকধপ- 
মনতিক্রম্য ) ষানবক্ধপে অবতীর্ণ হন | ইহা ভগবানের এশর্যরূপ হইতে পৃথক । এশর্ধরূপে 
ঈশ্বর তাহার বিশ্বাতীত মহিমা ও ক্ষমতায় আবিভূর্তি হন ( উদ্দাহরণম্বরূপ দ্বারকায় 
ভগবান্‌ চতুরানন দ্ূপে আবিভ্ভভত )। সুতরাং উভয়রূপেই ভক্তির অবকাশ আছে বটে, 
তথাপি দ্বিতীয় ব্ূপে ভক্তি শুধু ভীতি, আঙ্গগত্য ও শ্রদ্ধার আকারেই সম্ভবপর, কিন্ত 
ভগবানের প্রথম রূপে ভক্তি ঘনিষ্ঠ, বাৎসল্য, সখ্য ও প্রেমের আফার ধারণ করে। 


৪8৪৩৬ 


বেদাস্ত---বৈফব ( ঈশ্বরধা্দী ) সন্প্রদার়সমূহ ৪ চৈতন্ত ( অচিস্ভা ভেদাভেদ ) 
হ। পমাপমুহ 

“দ্শমূল গ্লোকে” যে দশটি লোক আছে তাহাদের প্রথমটিতে প্রমাণ অথবা সম্যক্‌ 
জ্ঞানের করণের কথা বল! হইয়াছে এবং অবশিষ্ট নয়টি লোকে চৈতন্তের অনুগামীগণ 
কর্তৃক স্বীকৃত জ্ঞানের প্রধান বিষয়গুলির অর্থাৎ প্রমেয়সমূহের ব্যাখ্যা দেওয়া] হইয়াছে । 

প্রথম গ্লোক অনুসারে বেদ সকলই প্রকৃতপক্ষে প্রমাণ ; এবং প্রত্যক্ষ, অনুমান ও 
অন্তান্য প্রমাণ সকল যদি বেদের মূল উপদেশের অনুযায়ী হুয় এবং বেদবাক্য অনুসারে 
বস্তর ম্ববূপ ব্যাখ্যা! করে, তাহা হইলেই উহার! সম্যক্‌ জ্ঞানের করণ । চরম তত্বের স্বরূপ 
নির্ধারণে এক। তর্কশান্ত্রের সামর্থ্য নাই। যুক্তি যখন ৫বদ্দিক উপদেশের উপর প্রতিঠিত 
হয় এবং বেদবাক্যের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, শুধু তখনই আধ্যাত্মিক তত্বের 
স্বরূপ নির্ধারণে তাহাদের কিছু অধিকার জন্মায় । আধ্যাত্মিক তত্ব সাধারণ পরোক্ষ 
বিচারের বহিভূর্তি। সাধারণ যুক্তিবিচার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের অনুগামী । স্থতরাং উহ! 
শুধু ইন্দিয়গ্রাহহ ও দেশকালে সীমাবদ্ধ বিষয় সকলেই প্রযোজ্য । অর্থাৎ, ইন্জিয় প্রত্যক্ষ 
ও সাধারণ যৌক্তিক বিচার শুধু ইন্দ্রিয়গ্রাহ জড়জগতের মধ্যেই দ্বচ্ছন্দভাবে বিচরণ 
করিতে পারে । কিন্তযে তত্ব আধ্যাত্মিক এবং সাধারণ ইন্দ্িয়লন্ধ. বিষয়সমূহের সায় 
দেশ ও কালে অবচ্ছিন্ন নহে, তাহার স্বরূপ জানিতে হইলে ইন্দরিয়প্রত্যক্ষ ও সাধারণ 
বিচার কোন কাজে লাগিবে না। এবং উহাদের পরিবর্তে মুনি খবিদের উচ্চতর অঙ্ভতির 
সাহায্য লইতে হইবে । অতএব পরম আধ্যাত্মিকতত্বের ম্বরূপ নির্ধারণে বেদই আমাদের 
প্রকৃত পথপ্রদর্শক__কারণ, বেদ হইতেছে মুনি খধিদের উচ্চতর অতীন্দ্রিয় উপলন্ধিসমূহের 
বিবরণ । 


৩ পব্বমতক্ 


প্রমেয় অর্থাৎ ষথার্থজ্ঞানের চরম বিষয় সম্বন্ধে বেদ সমূহের বক্তব্য কী? চৈতন্য এবং 
তাহার অন্ছগামীদের মতে চরমতত্ব সম্বদ্ধে বেদের শিক্ষা এইরূপ । পরমতত্ব হইতেছেন 
হরি অর্থাৎ ভগবান, অর্থাৎ পরমেশ্বর । হরির আধ্যাত্মিক দেহের জ্যোতি ( অঙ্গকাস্তি ) 
হইতেছে শংকরাচার্ধসম্মত নিবিশেষ ব্রহ্ম, এবং হরির স্বরূপের শুধু একটি অংশমাত্র 
হইতেছে স্মট্টিজগতের অভ্যন্তরস্থ পরমাত্মা। হরি হইতেছেন অংশী এবং পরমাত্মা 
তাহার একটি অংশ, এবং হরি হইতেছেন সেই প্রধান তত্ব ধাহা হইতে বিচ্ছুরিত জ্যোতি 
হইতেছেন নির্বিশেষ ব্রন্দ। হরি হইতেছেন পূর্ণ সৌন্দর্য (শ্রী ), পূর্ণ পরশব্য, পুর্ণ বীর্য, 
পুর্ণ যশ, পূর্ণ জ্ঞানের এবং পূর্ণ বৈরাগ্যের এঁক্য। তিনি হইতেছেন অচিস্ত্য প্রাচুর্য- 
সম্পন্ন এই ছয়টি গুণের মৃত্ঠ্য রূপ। এই গুণগুলি সমশ্রেণীর নহে--ইহাদের মধ্যে অঙ্গ 


৪8৪8৭ 


প্রাচ্যও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


এবং অন্দীর ভাব রহিয়াছে । শ্রী অথবা পুর্ণ সৌন্দর্য ইহাদের মধ্যে সর্বপ্রধান। এব, 
বীর্য এবং যশ এইগুলি শ্ীর তুলনায় গৌণ। শ্রী হইতেছে অঙ্গী এবং এইগুলি উহার 
অঙ্গ । ঈশ্বরের জ্ঞান ও বৈরাগ্য তাহার যশের বিকীরণমান্র। ক্তরাং জ্ঞান ও 
বৈরাগ্য নামক যে ছুইটি গুণের উপর শংকর বিশেষ গুরুত্ব অর্পণ করিয়াছেন, উহার! 
হইতেছে ঈশ্বরের একটি গৌণ-ধর্ষের ধর্মমাত্র । এই ধর্ম ছুইটিকে কেন ঈশ্বরের অঙগকান্তি 
বলিয়া ধর] হইয়াছে, তাহা ইহাদ্বার! ব্যাখ্যাত হয়। যেহেতু এই ছুইটি গুণ হইতেছে 
শংকরসম্মত নিবিশেষ ক্রন্ধের স্বরূপগত ধর্ম, অতএব এইরূপ নিবিশেষ ব্রন্ধ স্ব-তন্ত্র তত্ব নহে 
কিন্ত সচ্চিদানন্দঘন হরির বিশেষণ মাত্র। প্রজ্জলিত অগ্নির আলোক দেখিয়া! যেমন 
উহার উৎপত্তিস্থল ও অধিষ্ঠানরপে অগ্রিকে ধরিয়া লইতে হয়, তেমনই পরমেশ্বরের 
জ্যোতির্বলয়র্ূপে নিধিশেষ ব্রন্মের ক্ষেত্রে উহার উৎপত্তিস্থল ও অধিষ্ঠানরূপে পরমেশ্বরের 
আধ্যাত্মিক কলেবরকে ধরিয়া লইতে হয়, এবং ভগবান হরি তাহার পূর্ণন্থরূপ কৃষ্ণ ও 
রাধার (ঈশ্বর ও তাহার শক্তির ) দ্বৈতাদৈতরূপ- প্রত্যেকেই অপরের সহিত ভক্তি, 
প্রেম ও েহের অবিচ্ছেছ্য বন্ধনে আবদ্ধ । 

যাহা পরমাত্মা অথবা জগতের অভ্তরাত্মা বলিয়া খ্যাত, তাহা সর্বগুণসম্পন্ন ও পূর্ণ 
ভগবান হরির আংশিক রূপ মাত্র। এরশ্বর্য ও বীর্ধ এই দুই গুণের সাহায্যে হরি মায়া 
অথব। অজ্ঞানের জগ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং বিষ্ণুর আকারে তাহার স্বরূপের একাংশ- 
দ্বার! উহাতে অনুপ্রবেশ করিয়াছেন। যদিও জগদাআসা বিষ্ণু হরির অংশ মাত্র তথাপি 
ভিনি পূর্ণতা ও গুণপ্রাচুর্ষে তাহ।র মূল কারণ ভগবান হরি হইতে ন্যুন নহেন। কারণ 
অনস্ত আধ্যাত্মিক তত্ব সম্বন্ধে এই কথা সত্য ষে, উহার আনন্ত্য সর্ধগ্রাহী। যে সমগ্ররূপে 
উহার বাহিরে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, শুধু যে সেই রূপেই উহা পূর্ণ ও অনস্ত তাহা 
নহে, অধিকন্ভ এই অনস্তের একটি অংশও অংশীর আনস্ত্যের অধিকারী হইতে পাবে। 
এই জন্তই বলা হইয়াছে, পুর্ণ হইতে পূর্ণকে বিয়োগ করিলে পূর্ণতার হ্রাস ন1 হইয়া 
পৃর্ণতাই অবশিষ্ট থকে । 

প্রশ্নে উঠে যে ভগবান হরি হইতেছেন অনস্ত সচ্চিদানন্দঘনরূপ, তাহার আবার 
কি করিয়া দেশাবচ্ছিন্ন কৃষ্ণের রূপ থাকিতে পারে? নিদিষ্ট মৃততি অথবা পরিচ্ছিন্ 
আকার থাকিলে শুধু যে স্যবাপিতা অথবা! আনস্ত্য হইতে বিচ্যুত হইতে হয় তাহা নহে, 
উপব্ুস্ক ইচ্ছ।শক্তি ও কর্মক্ষমতার ব্যাপারে সীমিত হইতে হয়। এই প্রশ্নের উত্তরে 
বল! হয় যে, জড়দেহের ধর্মগুলিকে স্ব্ূপতঃ আধ্যাত্মিক বস্তুতে ভ্রাস্তিবশতঃ আরোপ 
করিলেই এইরূপ আপত্তির উত্তব হয়। জড়বন্ত লন্বন্ধে এই কথ সত্য যে, যেহেতু উহা! 
হইতেছে অসমপরিমাণে সত্ব, রজ ও তমের সমষ্টি সেইজন্য উহার ধর্মসমূহ দেশ ও 


৪8৪৮ 


বেদান্ত-সবৈফৰ ( লেখর ) সন্পরদায়সধূহ ২ চৈতন্ভ € অচিস্া ভেদাভোক ) 


কালে পৰ্বিচ্ছিক্ন এবং কোন জড়বন্ত যখন কোন এক দেশে থাকে তথন অন্তান্ত স্বদেশে 
উহার অভাব থাকে । কিন্ত ভগবানের দেহ আধ্যাত্মিক ও শুদ্ধ সত্বস্বর্ূপ ; সাধারণ 
জড়বস্তসমৃহ যেক্ধপ মিশ্রসত্ব অর্থাৎ তম ও রজের সহিত মিশ্রিত সত্বঘ্ধার! নিমিত, 
ভগবানের দেহ সেইরূপ নহে । অতএব, যদিও জড়দেহের পক্ষে একই সময়ে কোন 
একস্থলে থাকিয়! আবার অন্য সর্বস্থলে থাকা সম্ভবপর নহে তথাপি ভগবানের শুক্ষসত্বব্দপ 
আধ্যান্সিক দেহের পক্ষে ইহা আদৌ অসম্ভব নহে। বস্ততঃ ভগবানের ইহা একটি অচিস্ত্য 
অথবা বুদ্ধির অগম্য ধর্ম যে তিনি সীমিত এবং স্পষ্টভাবে নির্বাচনযোগ্য আকার এবং মুত্তি 
ধাক্সণ করিলেও তিনি তাহার এই হুম্পষ্ট পৃথকরূপেই একই সময়ে লর্বন্র থাকিতে পারেন । 

যে সকল অচিন্ত্য ধর্ম ভগবানের মূর্ত আকারের বৈশিষ্ট্য সেইগ্তলি তাহার স্বরূপ এবং 
তদীয় বিবিধ শক্তিরও ধর্ম। ভগবানের ম্বক্ষপ এবং তরদীয় বিভিন্ন শক্তির মধ্যে যে 
সম্বন্ধ আছে তাহা হইতেছে অচিস্ত্য ভেদাভেদ । তাই একদিকে যেমন তিনি তাহার 
ব্যবহৃত বিভিন্ন শক্তিগুলি হইতে অভিন্ন তেমনই অপরদিকে এমন একটি বিশ্বাতীগ 
স্বভাবও আছে যাহা তাহার ব্বরূপের বিভিন্ন প্রকাশগুলির মধ্যে নিঃশেধিত হইয়া যায় 
না। তাহা ছাড়া তিনি তাহার বিভিন্ন প্রকাশের মধ্যে যে সকল শক্তি ব্যবহার করেন 
সেইগুলিও ঠিক ঠিক যুক্তিশান্ত্রীয় ভাষায় বোধগম্য নহে। উদাহরণস্বরূপ, ভগবান্‌ যে 
সকল শক্তি ব্যবহার করেন সেইগুলি বস্ততঃ তাহার সেই শ্বরূপ-শক্তির বিভিন্ন রূপ যাহা 
হইতেছে পরম আধ্যাত্মিক তত্ব; অথচ তিনি তাহার এই স্বব্বপ-শক্তি নিম্নলিখিত তিনটি 
বিভিন্নরূপে ব্যবহার করেন ; (১) চিৎ-শক্তি, অর্থাৎ প্রকাশ ও জ্ঞানের শক্তি; (২) 
জীব-শক্তি, অর্থাৎ নিজেকে বিভক্ত ও বহু করিয়া জীব বা সাস্ত আত্মা সকলে পরিণত 
করার ক্ষমতা; এবং €৩) মায়াশক্তি অর্থাৎ, জড় ও অচেতনবপ ধারণ কবিয়া নিষ্প্রাণ 
জগতের আকারে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা। যে স্বরূপ ম্বভাবতঃই আধ্যাত্মিক তাহা 
আবার কি করিয়া জড়জগতের অচেতন কূপ ধারণ কৰিতে পারে, অথবা অনস্ত আধ্যাত্মিক 
তত্ব কি করিয়! স্বীয় অথণ্ড সতা৷ অক্ষুণ্ন রাখিয়া নিজেকে অসংখ্য সাস্ত আত্মায় বিভক্ত 
করিতে পারে তাহ! পরম তত্বের একটি তর্কাতীত রহস্য । 

চিৎশক্তি, জীবশক্তি ও মায়াশক্তি এই তিন আকারে এই যে স্বক্সপশক্তি ক্রিয়া! করে 
বলিয়া ধরা হইয়াছে, ইহ! প্ররুতপক্ষে কি? যেহেতু সৎ, চিৎ ও আনন্দ হইতেছে 
ভগবানের স্বরূপ অতএব তাহার হ্বরূপশক্তিও সত্তায় আনন্দ ( হলািনী ) হইতে বাধ্য 
আবার এই আনন্দ হইতেছে সততায় আনন্দের অন্ভব বাজ্জান (চিৎ )। এইভাবে 
স্বব্ূপশক্তির এই তিনটি রূপ £ (১) হলাদিনী-__ইহান্র সহিত আনন্দের সম্বন্ধ (২) সন্ষিনী__ 
ইহার সহিত সৎ-এর সন্বন্ধ এবং (৩) সংবিৎ__ ইহার সহিত উহাদের জ্ঞানের সম্বন্ধ । 


৪৪৯ 
৫৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইত্হাস 


7 শংকরের অুগাসীগণ ক্রদ্বের রপ লক্ষণ ও তটস্থু লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য স্বীকার 
. করেন- দচ্চিদানন্দ হইতেছে ব্রন্বের হ্বরূপলক্ষণ; এবং সই জগৎ ও গ্রাণীদের সহিত 
সম্বন্ধ হইতেছে তাহার তটম্থ লক্ষণ; অজ্ঞানের আবরণ বশতঃ ব্রন্ধ জগতের হৃষ্টি-স্থিতি- 
লয়-কর্তারূপে ভ্রাস্তভাবে প্রতীত হুন বলিয়াই এই তটম্থ লক্ষণ সম্ভবপর হুয়। অতএব 
গংকরের অনুগামীগণের মতে সত্তা) চৈতন্য ও আনন্দ এই কয়টি ধর্ম ব্রন্ধের ত্বরূপকে যথার্থ 
ভাবে ব্যক্ত করে কিন্তু তাহার জগৎ-সাপেক্ষ ধর্মগুলি মিথ্যা অবভাসমান্ত্র এবং ব্রহ্ষের 
শ্বরূপের অন্তগ্ত নহে। চৈতন্তের অনুগামীগণের ( এবং সর্ব বৈষ্ণবসম্্রদায়সমূহের ) 
মতে আমাদের অনুভূত জগৎ মিথ্যা অবভাস নহে। তাই ব্রদ্ধের স্বরূপধর্ম এবং তটস্থ 
অথবা সাপেক্ষ-ধর্মের আত্যস্তিক ভেদের প্রশ্ন উঠে না। তটস্থ অথবা] সাপেক্ষ ধর্মসকল 
্বরনূপ-ধর্মেরই প্রকাশের বিভিন্ন রূপ মাজ্। অতএব চৈতন্ত এবং তৎসম্প্রদায়ের মতে 
যাহা চিৎশক্তি, জীবশক্তি ও মায়াশক্তি বলিয়া কথিত হয় তাহা ব্রদ্দের স্বরূপধর্মের সহিত 

২স্ষ্, মিথ্যা অবভাস নহে ( অবশ্ঠ শংকরের অন্থগামীগণ তাহাই বলিবেন ); কিন্ত 
প্রকৃতপক্ষে উহার হইতেছে ভগবানের স্বরূপশক্তিরই বিবিধ প্রকাশ ; যথা হলাদিনী অর্থাৎ 
আত্ম-উপভোগের শক্তি, সন্ধিনী অর্থাৎ আত্মাকে বাস্তব অথবা স্থাপনা করিবার শক্তি 
এবং সংবিৎ অর্থাৎ স্ব-জ্জান অথবা স্ব-চেতনার শক্তি । 

এক্ষণে জিজ্ঞান্য চিৎশক্তি পদার্থট কি? এবং ভগবানের সচ্চিদানন্দ স্বরূপের শক্তি- 
রূপে উহার শ্বরূপ কি? চিৎ বা চৈতন্ত হইতেছে ভগবানের সেই শক্তি যাহার সাহায্যে 
তিনি নিজের স্বব্ূপকে ভগবান্‌ কৃষ্ণ এবং তাহার শক্তি রাধার আধ্যাত্মিক ভেদাভেদ 
উপলব্ধি করেন প্রত্যেকেই অপর হইতে ভিন্ন আবার অপরের লহিত অভিন্নও। হলাদিনী- 
রূপে এই উপলদ্ধি হইতেছে কৃষ্ণ ও রাধার পরস্পরের প্রতি প্রেম; সন্ধিনীরূপে ইহা! 
নিজেকে ভগবানের আধ্যাত্মিক জগৎ (বৃন্দাবন ) এবং তাহার আহ্ষজিক পদার্থসমূহে 
প্রকট করে; এবং সংবিত্রূপে উহা! নিজেকে এই ভেদাভেদে আনন্দের অস্থভব ব্ধূপে 
উপলব্ধি করে। চিংশক্তিকে অস্তরঙ্প-শক্তি এই ভিন্ন নামেও অভিহিত কর] হয়__ ইহা 
হইতেছে এমন একটি কেন্দ্রান্ছগ সমাহিত অস্তূ্টির শক্তি, যাহ দ্বারা শুধু যে উহার 
সমগ্র সত্তা অথণ্ডভাবে উহার অবিভাজ্য এঁক্যসহ উপলন্ধ হয় তাহা নহে অধিকন্ত সমগ্রেকর 
স্তায় সমগ্রের প্রত্যেকটি অংশও উহার একটি স্বরূপগত অন্গরূপে অন্থভূত হয়। অতএব 
বল! যাইতে পারে যে, উহা হইতেছে বহুকে এক বলিয়া এবং এককে বহু বলিয়া অস্ুভব 
করার ক্ষমতা অর্থাৎ সর্ব অপরিবর্তনীয় ভে এবং বাহ্‌ বিরোধকে বিলুগ্ঠ করিয়া 
উহ্বার্দিগকে আম্তর আধ্যাত্মিক সম্বন্ধে উন্নীত করিয়া! আত্মাকে একটি প্রকৃত আধ্যাত্মিক 
এঁক্যয়াপে উপলদ্ধি করিবার শক্তি। 


৪4 


| 


বেদাস্ত--বৈধব ( লেখর ) সন্ত্রদাকসমূহ নি টিজার? ১৮. পট 


পু 


যায়া-শক্তি চিৎশক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত । তথাপি ইহাও ভগবানের ্পকতিরই 
একটি 'আকার। চিৎশক্বিরূপে স্বরূপ-শক্তি ভগ্গবাঁনকে সর্বব্যাপী আধ্যাত্মিক একত্বরূপে, 
চরম আধ্যাত্মিক তত্বরূপে ব্যক্ত করে; আর মায়া-শক্তিবূপে উহ! তাহাকে অচেতন 
জড়জগত্রূপে এবং উহার বিবিধ পরম্পর-বিভিন্ন ইন্জিয়গ্রাহ্ বস্তুর কাষন! ও আকর্ষণের 
আকারে ব্যক্ত করে। এইজন্য যায়াশক্তির অপর নাম হইতেছে ভঙ্গবানের বহিরঙ্গ 
শক্তি__ইহা! হইতেছে ভগবানের এমন একটি আত্মসম্প্রসারণ ও আত্ম-বিচ্যুতির কেন্দ্র 
বিমৃথ শক্তি যাহার ফলে আধ্যাত্মিকত্ত্ব শুধু নিশ্রাণ জড়তত্বরূপে প্রতিভাত হয়, এবং 
বছ ও বিশেষের খণ্ডদৃষ্টি সমগ্র ও অথণ্ড দৃষ্টির স্থান অধিকার করে । স্থুতক্নাং চিৎশক্তিতে 
ভগবানের ম্বরূপ তাহার হ্বরূপগত আকারেই অভিব্যক্ত হয়-_ইহা এমন একটি আধ্যাত্মিক 
একতা যাহ! সর্ব ভেদকে এঁক্যবদ্ধও করে এবং অতিক্রমও করে; কিন্ত মায়াশাতৃতে 
ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা লক্ষিত হয়_-এইজন্ত অংশ ও বিশেষের দৃষ্টি সমশ্রের অখণ্ড 
দৃষ্টির স্থান অধিকার করে । অতএব চিৎশক্তি আমাদের নিকট সত্যকে বিকৃত ন1 করিয়া 
উহার পূর্ণর্ূপে প্রকাশ করে ; কিন্ত মায়াশক্তি সত্যের শুধু একটি বিপরীত ছায়৷ প্রদর্শন 
করে। এইভাবে মায়াশক্তির বশে বিশিষ্ট খণ্ড পদার্থসমূহ উহাদের প্রকতরূপে অর্থাৎ 
সমগ্রের অধীনস্থ অংশরূপে ন৷ দেখাইয়া! নিজেরাই অন্ত-নিরপেক্ষ মূল্য ও অর্থের অধিকারী 
সমগ্র বস্ত বলিয় প্রতিভাত হয়। তাহা ছাড়া, চিৎশক্তি আত্মতত্বকে চৈতন্তময় 
আধ্যাত্মিক সত্তারূপে উপলদ্ধি করে; কিন্তু মায়াঁশক্তি উহাকেই এমন এক নিশ্রাণ, 
অচেতন জড়জগত্রূপে প্রদর্শন করে যেখানে চৈতন্য অনন্ত নিদ্রায় মগ্র। 


$। জীব 


ভগবানের চিৎ-শক্তি আমাদের নিকট ষে পূর্ণ সত্য উপস্থাপিত করে এবং ভগবানের 
মায়াঁশক্তি তাহার যে বিকৃত অনুকরণ আমাদিগকে দেয়, জীব-শক্তি হইতেছে তাহান্দের 
মধ্যবর্তী । ইহাই সীমাবদ্ধ সীম জীব বা আত্মাসমূহের রূপধারী ভগবানের হ্বরূপশক্তি। 
সত্য এবং তাহার বিকৃত অন্ুকরণের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বলিয়! ইহা নিজেকে 
আধ্যাত্মিক এবং অনাধ্যাত্মিক এই দুইপ্রকার মনোভাব উৎপন্ন করিবার শক্তিরূপে 
আত্মপ্রকাশ করে। ইহাকে তটস্থ শক্তি বল' হয় এবং সসীম জীব একই সময়ে পৃথিবী 
এবং ম্বর্গের অধিবাসী বলিয়া তাহার প্রকৃতিতে যে ঘ্বৈতভাব আছে ইহা তাহাই নির্দেশ 
করে। নদীতীর সম্বন্ধে যেমন বলা যায় যে ইহা! নদীর অংশও বটে আবার চতুষ্পার্থবর্তা 
ভূমির অংশও বটে ঠিক সেইরূপ সর্বব্যাপী আধ্যাত্মিক তত্বরূপে ভগবানের ম্বরপগত 
প্রস্তুতি এবং অসম্বদ্ধ বিশেষ বস্তসমুহ বিশিষ্ট অচেতন জড়জগতে তাহার যে বহিষ্থ বিচ্ছিন্ন 


৪৫৬ 


টা ও পাশ্চাত্য বর্শনের ইতিহাস 


প্রকাশ, এই হুইয়ের মধ্যে জীব যোগক্জ। অন্যভাবে বলিতে পারা যায় যে, ভগবান যখন 
নিজেকে এমন বহুসংখ্যক হ্ষুদ্রাতিক্ষু্র চিদ্বাত্যক পরমাণুতে বিভক্ত কষেন বাহার 
একধিকে ভগবানের 'আধ্যাষ্মিক প্রকৃতি অর্থাৎ স্ব-রূপের সহিত সন্বদ্ধ এবং অপরদিকে 
অড়জগৎরূপী প্রকাশ ছার] সীমিত তখন তিনি জীব-শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন । 
স্কুতরাং ভগবান শ্ববূপতঃ তিনি যে অসীম, সর্বব্যাপী পরমাত্মা তাহাই থাকেন, জীবরূণে 
তিনি সসীম সীমাবদ্ধ এবং ক্ষুদ্র হুইয়। পড়েন এবং তখন মায়া-শক্তির প্রলোভনে তিনি 
যেমন বিপথগামী হইতে পারেন, আবার ভগবানের আধ্যাত্মিক সততার অধিকারী বলিয়া 
নিজেকে মায়াজাল হইতে মুক্তও করিতে পান্পেন। 

জীব-শক্তি ভগবানের স্বরূপশক্তির প্রকাশের একটি বূপ ভিন্ন অন্য কিছু নয় বলিয় 
ইহাও অবশ্থই ভগবানের ন্বরূপের উপাদান সৎ, চিৎ ও আনন্দকে, সীমাবদ্ধ আকারে 
হইলেও, প্রকাশ করিবে । 


গে। ম্বন্ধন ৩ মুক্তি 


প্রজ্বলিত অগ্নির সহিত তাহা হইতে বিচ্ছুরিত অগ্নিক্ষুলিঙ্গ সমুহের যে সন্বন্ধ, 
ভগবানের সহিত জীবগণের সম্বন্ধ সেইরূপ বলিয়া ধারণা করিতে হইবে। প্রজ্ৰলিত 
অগ্নি যেমন আপনার মধ্য হইতে ক্ফুলিজসমূহ বিচ্ছুরণ করিতে থাকে এবং এই স্ফুলিগুলি 
তাহার! ষে আকর হইতে নির্গত হয় ক্ষুদ্রাকারে তাহার শ্বভাবের অধিকারী হয় ঠিক 
লেইরূপ অথগ্ড আধ্যাত্মিক স্বস্তরূপ ভগবান্‌ তাহার অথণ্ড সত্তার স্ফুলিঙ্গব্ূপে জীবসমূহকে 
বিচ্ছুরণ করেন। এইজন্য জীব ভগবান্‌ হইতে ভিন্ন এবং অভিন্ন উভয়ই । ভগবানের 
সৎ চিৎ ও আনন্দময় আস্তর সত্তা দ্বারা গঠিত বলিয়া! জীব ভগবান হইতে অ-ভিন্ন এবং 
জীব অণু-পরিমাণ হওয়াতে সেই সত্তার সীমাবদ্ধ বূপ বলিয়া! ভগবান হুইতে ভিন্ন। 
জুতরাং সর্বাস্তর্ভাবী সঘস্তরূপে ভগবান এই অর্থে মায়াধীশ যে তিনি তাহার মায়াশক্তির 
প্রভু এবং নিয়ন্ত! এবং এই মায়া-শক্তি দ্বারা তিনি তাহার "অখণ্ড আধ্যাত্মিক সতায় 
অচৈতস্ত এবং বহুত্ব উদ্ভাবন করেন এবং জীব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চিদণুকূপে ভগবানের সত্তার 
অধিকারী হইয়া মায়াধীন হইয়]। থাকে | ভগবানের মায়া-শক্তি বস্ততঃ দুইটি বিভিন্নক্ধূপে 
কাজ করিয়া থাকে (১) প্রধান-কূপে ইহা অচেতন জড়জগৎকে উদ্ভাবন করে (২) জীবের 
অনিদ্ভা ব1 অঞ্ঞান-শক্তির প ধারণ করিয়া জীব যে ত্বরূপে ভগবানের নিত্য অনুগত তাহা 
তাহাকে ভুলাইয়! দেয় এবং নিজেকে দ্বতন্ত্র, শ্বয়ংসৎ চরম সঘস্ত বলিয়া কল্পনা করিতে 
প্ররোচিত করে । সসীম জীব ঘে ঈশ্বর হইতে পৃথক করিয়া নিজের অস্তিত্ব ঘোবণা করে 
তাহার জন্য এই অবিষ্া. এবং তাহা হইতে উৎপন্ন আত্মবিস্বতিই দ্বায়ী এবং অলীম বস্তকে 


৪৫ 


ফোনত_বৈফব ( দেখ ) সাদারসকুহ 2 চৈত (চিনতা তেদাতেদ ) 9 


কেন অভির মূল্য দেওয়া হয এবং তাহার জন কেন খে এবং নাস উদ্ধৃত হ্য় ছা, 
হইতেই তাহাক় ব্যাখ্যা পাওয়া ধাইবে। 

জড়জগৎ মায়াঁশক্তি এবং তাহার বিকৃত করিবার ক্ষমতা হইতে উদ্ভূত হইলেও মিথ্যা 
অবভালমাত্র নহে। অপরপক্ষে, ভগবানের মায়াশক্তিরপ প্বর়প-শক্তির কার্ধ বলিয়া! ইহ! 
ইহার আকরের সত্তার অধিকারী এবং ইহা সসীম অতি ক্ষুত্র জীবকে বন্ততঃই বিভ্রান্ত 
করিয়া দেয় যথার্থ জড়জগৎ বূপে ইহ! জীবের মনে যথার্থ বিভ্রাস্তি হুষ্টি করে ইহ সত্য 
হইলেও, ইহাও সমানভাবেই সত্য ষে ইহ! নিজে নিত্য বা চিরস্থায়ী নহে অথবা জীবের 
উপর ইহার প্রভাবও নিত্য বা চিরস্থায়ী নহে । বস্তুতঃ, জড়জগতের সার্থকতা ইহাই যে 
ইহা জীবদের শিক্ষার স্থান। যে জীব ভ্রান্ত অহচ্কারে মত্ত এবং ভগবানকে বিস্বৃত 
হইয়াছে সে ক্রমাগত নৈরাশ্ত এবং অকৃতকাধধতার ভিতর দিয়া তাহার পাধিব জীবনযাত্রার 
পদ্ধতি যে ভ্রান্ত ইহাই শিক্ষা করে এবং সর্বশেষে ষে এ্রশ্বরিক জীবন তাহার যথার্থ 
আত্তরিক সত্তা তাহ] অবলম্বন করে । 

অনৈশ্বরিক এবং পাধিব জীবন হইতে ভিন্ন এই প্রশ্বরিক জীবন কি ? চৈতন্যের 
অন্ুগামীদের মতে ইহ! হইতেছে জীবের ব্বরূপান্ুযায়ী জীবন। ইহা! ভক্তি, আত্মোৎসর্গ 
ও প্রেমের জীবন । ইহাতে জীবের যে ষথার্থ-্বর্ূপ অর্থাৎ জীব যে পরমাত্মার স্ষুলিঙগ 
এবং নিত্যই তাহার ইচ্ছার অধীন ইহা সে উপলব্ধি করিয়া থাকে । পাধিব জীবন হইতেছে 
স্বেচ্ছাচার ও আত্মাভিমানের জীবন | ইহাতে জীব তাহার নিত্য অধীনত বিস্বত হইয়া 
নিজেকে স্ব-তন্ত্র নিরপেক্ষ বন্তব বলিয়। মনে কঝে এবং সকল ব্যাপারেই তাহার নিজের 
ইচ্ছা পূর্ণ হইবে এই অধথার্থ-দাবী করে। বারবার নৈবাশ্ট ও অকুৃতকার্ধতা ভোগ করিয়। 
যখন সে তাহার যথার্থ অক্ষমত। সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করে তখন সে তাহার স্বরূপ সম্বন্ধে চিন্তা 
করিতে থাকে এবং সে যে একটি আধ্যাত্মিক সমগ্রসত্তার অন্তনির্ভরশীল অংশ তাহ! 
উপলদ্ধি করে । ইহার ফলে আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোৌকের উদয় হয় এবং ইহাতে ছুঃখ এবং 
নৈরাশ্টের শিক্ষার ভিতর দিয় জীব সর্বশেষে তাহার জীবনযাপনপদ্ধতির ভ্রম বুঝিতে 
পারে এবং সে নিজেকে যেরপ স্বয়ংসৎ স্বতন্ত্র নিরপেক্ষ বস্তু বলিয়া ভুল করিয়াছিল সে 
তাহা নহে কিন্ত ভগবানের নিত্য অধীন এইভাবে তাহার যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি কনে। 
জীবের লীমিত দ্বভাব ষে সমগ্র-সত্তার পরনির্ভরশীল অংশমাত্র এই বোধ প্রথমে নৈরাশ্ত 
এবং অকুতকাধতার আঘাতরূপে আসে এবং পরে ইহার কারণ সন্বক্ধে চিস্তা করিবার 
ফলে বৌদ্ধিক উপলব্ধিতে পরিণত হয়। এই উপলব্ধি ক্রমশঃ সসীম জীবের সমগ্র সতায় 
ছড়াইয়া পড়ে এবং ইহার সমস্ত চিন্ত। ভাবাবেগ এবং ইচ্ছাশক্তিকে অন্থপ্রাণিত করে। 
এইভাবে যাহা প্রথমে বাস্তবতা-বঞ্জিত, প্রাণহীন বৌদ্ধিক শ্বীক্কতিরূপে প্রতিভাত হয়. 


8৫৩ 


' প্রীচা ও পাশ্চাত দর্শনের ইতিহাস 


তাহাই অবপেষে জীবের বৃদ্িৃতি, ভাবাবেগ ও ইচ্ছাশক্তি সন্ব্িত লমগ্র সভার সম্পূর্ণ 
'গমাত্মঘান, ও সর্ভ-নিরপেক্ষ আত্মোৎসর্গে পরিণত হয়। ঠচতন্ভের অহুগাষীদের মতে .এই 
রে 'ভক্তির সর্বোচ্চ অবস্থা দেখা যায়) ইহাতে কেবলমাত্র যে সর্ববিষয়ে ভগবানের ইচ্ছা 
লীবের নিজ ইচ্ছার স্থান অধিকার করে তাহা নহে আমাদের সীম যৌথ জীবনে যে 
সকল সামাজিক এবং নৈতিক ইষ্ট আছে সেইগুলি সমেত যাবতীয় সসীম ইষ্ট পদার্থ এক 
অখণ্ড পারমার্থিক জীঘনে একাকার হুইয়। উহার অংশীভূত হুইয়! যায়। জীব এই স্তরে 
_পৌঁছাইলে তাহার সমগ্র ব্যক্তিত্বে এক অথণ্, সমগ্র জীবনের প্রতি আকর্ষণ দেখ] দেয়। 
আত্মার এই আকর্ষণ কেবগমান্র চিস্তার সাহায্যে আত্মসমর্পণ নহে__-এইরূপ আত্মসমর্পণ 
সম্পূর্ণাঙ্গ হইলে ইহাকে আত্মাকে শুন্ত করিয়! দেওয়া এই নেতিবাচক অর্থে লওয়া যাইতে 
পারে-_কিন্ত ইহ1 হইতেছে আত্মার ক্ষধ! এবং আত্মার তৃষ্কারূপ এমন এক তীব্র বাসনা 
যাহ! অখণ্ড সমগ্র জীবন অপেক্ষা অল্প কিছু লইয়। সন্তষ্ট হইবার নহে । ইহাই রাগাস্তিকা 
ভক্তি | এই ভক্তি কেবলমাজ্জর বুদ্ধির সাহায্যে কোনও কিছু অনুসন্ধান করিবার অথবা 
আবিষ্কার করিবার ইচ্ছা নয় কিন্তু সমগ্রসতার অধীন নিত্য অংশরূপে এক অথণ্ড পরম 
জীবনের 'জন্ জীবের অস্তরের প্রতিটি তন্ত্রীর ব্যগ্রতা।৯ রাগাত্সিক! ভক্তির পরিণতি 
মহাভাবে । ভগবান শ্রীরুষ্ণও তাহার শক্তি রাধার পরস্পরের প্রতি যে প্রেমের জন্ত 
তাহাদের মধ্যে একে অন্তের ভিতর নিজের পূর্ণত1 পাইয়া থাকেন এবং অপরের অভাবে 
নিজেকে অপূর্ণ এবং শুন্য বলিয়! বোধ করেন মহাভাব সেই এখরিক প্রেষেরই প্রতিবিশ্ব 
এবং জীবে সসীমাকারে উহারই প্রকাশ । 

জীব ভগবানের প্রশ্বর্ধ এবং পরিপূর্ণ সত্তার একটি ক্ষুত্র অংশমান্র এবং সেইজন্য নিত্যই 
ইহার অধীন। যে ভক্তি জীবের আধ্যাত্মিক পরিণতি নির্দেশ করিয়া দেয় তাহা জীবের 
এই স্বর্ূপগত প্রকৃতি অনুযায়ী জীবনযাপন মাত্র। ভক্তি এইরূপ বলিয়। জীব স্বভাবতঃই 
ভক্তিমান এবং নবজীবনপ্রাপ্ত জীবের পক্ষে কোনও বাহিরের বস্তপ্রাপ্তি নহে । অন্যভাবে 
বলিতে গেলে, সকল জীবই সচ্চিদানন্দরূপী ভগবানের স্বরূপের অংশ বলিয়! স্বভাবতঃই 
তাহার ভক্ত অথবা অনুরক্ত ঘাস। নিত্য মুক্তদের মধ্যে এই অন্তনিহিত ভক্তি 
অনস্তকালই প্রকাশিত হইয়া থাকে । এই নিত্যুক্তের! বৈকুৃণ্ঠে এবং বৃন্াবনে ভগবানের 
নিত্যপহচর, এবং ভগবদ্ধামসমূহের অধিবাসী বলিয়া! চিরকালই মায়াশক্তির গ্রভাবের 
বাহিরে এবং ইহার প্রলোভনে মোহিত হন না। বদ্ধজীব অর্থাৎ পার্থিব জীবনের 
শহিত জড়িত জীবদের সম্বন্ধে ইহা সত্য নয়। তাহারা মায়ার প্রভাবের পর্িসীমার 
মধ্যে বাস করে এবং সেইজন্ তাহাদের ইছান প্রলোভনশক্তিদার প্রতারিত এবং 
বিপথচানিত হুইবার সম্ভাবনা আছে। তাহাদের ক্ষেে, যতদিন পর্যন্ত না জীব 


588 


বেবাস্ত-_ বৈ € লেখ ) সঙদাযসমূহ £ চেতন (অভিস্থা তেদাভো) 


অভিজ্ঞতার কঠোর শিক্ষা পাইয়! পার্থিব জীবনের ভ্রান্তি উপলক্ি. করিতে পারে এবং 
অবশেষে তাহার আধ্যাত্মিক পুক্ুযার্থলাভের উপায়স্বরপ এশ্বরিক জীবনের সন্ধান পায় 
ততদিন পর্যস্ত অস্তনিহিত ভক্কি প্রচ্ছন্ন থাকে । জীব যখন এশ্বরিক জীবের সন্ধান পাক্স 
তখন তাহার অস্তনিহিত ভক্তি নিত্রা হইতে উখিত হয় এবং জীব ষে অনস্তকাল ধরিয়া 
ভগবানের দাস এবং দাস্, ভক্তি এবং প্রেমের বদ্ধনদ্বারা অনস্তকাল তাহার সহিত বদ্ধ 
তাহার এই যথার্থ শ্বর্ূপকে প্রকাশিত করে | বদ্ধজীবের অস্তরে ভক্তি ও প্রেমের উদয় 
পূর্বাবস্থা স্মরণ অথবা! আত্ম-আবিষ্কার, ইহা জীবের পক্ষে কোনও নৃতন গুণ আহরণ 
করা! নয়। 

বদ্ধজীব এবং নিত্য-মুক্তজীব-_জীবের এই দুইটি প্রধান শ্রেণী ব্যতীত বহছ্বজীবদের” 
মধ্যেই তাহাদের আধ্যাত্মিক পূর্ণ ত1 ও প্রগতি অনুসারে কয়েকটি উপ-শ্রেণী আছে। 
বন্ধজীবদের মধ্যেই যে কেবল উদ্ভিদ, পশু এবং মনুষ্য এই তিনটি শ্রেণী আছে 
তাহা নয় কিন্তু মহুস্যদের মধ্যেই আধ্যাত্মিক পূর্ণতা এবং প্রগতির বিভিন্ন স্তর আছে। 
উদ্বাহরণম্বরূপ, কতকগুলি মস্ত তাহার! যে ভগবানের নিত্য দাস তাহাদের এই 
স্বরূপ সম্পূর্ণ বিশ্বত হইয়া অমিশ্র পাধিব জীবনযাপন করে, আবার, কতকগুলি মনুষ্য 
পরমাত্মার ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে তাহাদের যে গতি তাহার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া ভক্তি ও 
প্রেমের আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করাই শ্রের মনে করেন। সসীমজীবকে সসীম, 
সীমাবদ্ধ এবং সেইজন্থ সর্বব্যাপী সত্তা পরমাত্মার উপর অনস্তকাল নির্ভরশীল বলিয়। 
জানাই ভক্তির সুত্রপাত। জ্ঞান উচ্চস্তরে পৌছাইলে যখন ভগবানের অমূর্ত ধারণা 
ঘনীভূত হইয়া! সাক্ষাৎ উপলব্ধিতে পরিণত হয় তখন শুষ্ক চিস্ত। সজীব এবং ঘনিষ্ঠ 
ভক্তি এবং প্রেমে রূপাস্তরিত হয়। মনম্তত্বের দিক হইতে বল! যায় যে জ্ঞান ঘনীভূত 
হইলে এবং সাক্ষাৎ প্রতীতিতে রূপান্তরিত হইলে তাহাই ভক্তি, যে বুদ্ধি, জ্ঞান বা 
চিন্তা ঘনীভূত এবং কেন্দ্রীভূত হইয়া সজীব বিষয়ান্ুভবে পরিণত হইয়াছে তাহাই 
ভক্তি । বিষয়াংশে, ভগবানের নিত্য আনুগত্যের বোধই ভক্তি, আর মনস্তত্বের দিক্‌ 
হইতে ইহা! এমন একপ্রকার বৌদ্ধিক উপলব্ধি যাহা মানুষের বুদ্ধি, ভাবাবেগ এবং 
ইচ্ছাশক্তিবিশিষ্ট সমগ্র ব্যক্তিত্বকে রূপাস্তরিত করিয়! দেয়। 

পূর্বেই বল৷ হইয়াছে যে ভগবান্‌, জীবসমূহ এবং জড় জগতের মধ্যে সম্বন্ধ হইতেছে 
অচিস্ত্য-ভেদাভেদ-সম্বন্ধ | যুক্তি-শান্্রসম্মত যথাযথ ভাষায় ইহার বর্ণনা দেওয়া যায় না। 
জীব-শক্তি এবং মায়া-শক্তি ভগবানের ম্বরূপ-শক্তির বিভিন্ন বূপ হইলেও ভগবানের 
একটি বিশ্বাতীত স্বব্ূপ আছে এবং তিনি বিভিন্ন শক্তি ব্যবহার করিলেও ইহা! পুর্ণ 
এবং অপরিবত্তিত থাকে । ভগবান্‌ তাহার বিভিন্ন শক্তির ব্যবহারের মধ্য দিয়া 


8৫৫ 


 প্রাট ও পাশ্চাত দর্শনের ইতিহাস 

এবং ত্বাহাদিগকে অতিক্রম করিয়া এই সকল শক্তির সহিত অচিস্ত্যভে্াভেন সন্বন্ধে 
আপনাকে প্রকাশিত করিয়া থাকেন, কিন্তু তাহার এই জ্রিবিধ শকিও__বথা! চিৎশ্ভি। 
জীব-শক্তি এবং মায়াশক্তি-_পৃথক্ভাবে অবোধ্য এবং তাহাদের সন্বন্বও অবোধ্য। 

এইজন্তই চৈতন্যের 'অস্ধুগামীরা| তাহাদের মতবাদকে অচি্ত্--ভেদাভেদবাদ বলিয়া 
থাকেন। এই মতবাদ ব্রদ্ষ-বিবর্তবাদ এবং ব্রহ্ষ-পরিপামবাদ উভয় হইতেই পৃথক্‌ 
বলিয়া বুঝিতে হইবে । বিবর্ভবাদমতে পরিদৃষ্ঠমান জগৎ নিত্যসিদ্ধ চরমতত্বে অর্থাৎ 
্ন্ধে অধ্ন্ত, সুতরাং জগৎ মিথ্যা অবভাসমাত্্র এবং ব্রহ্ধসত্তার উপর ইহার কোন 
ক্রিয়া! নাই, কিন্তু চৈতন্তের অন্থগামীরা জগৎকে জীবের শিক্ষালাভের স্থান হিসাবে 
পত্য বলিয়া মনে করেন কিন্তু ইহ ব্রন্মের সহিত অঠিস্ত্য-ভেদাভেদ সম্বন্ধে সম্বন্ধ । 
ব্র্-পরিথাম-বাদে আবার জগৎকে সত্য বলিয়! মনে করা হইলেও ইহাকে চরম তত্ব 
অর্থাৎ ব্রন্মের পরিণাম অথবা বিকার বলিয়! মনে করা হয়। এই মতের বিরোধিতা 
করিয়া! ভেদাভেদবাদীরা শক্তিপরিণামবাদ উপস্থাপন করেন এবং জগৎ এবং সীম 
জীবগুলিকে ব্রন্ধের বিকার বলিয়া ব্যাখ্যা না করিয়া ব্রন্মের অচিস্ত্-শক্তির অর্থাৎ 
ইহার ম্বরূপের অচিস্ত্য শক্তিগুলির অর্থাৎ চিৎ-শক্তি, জীব-শক্তি এবং মায়া-শক্তির 
বিকার বলিয় ব্যাখ্যা করেন। এইভাবে ব্যাখ্য! করিলে জগদতীত তত্বরূপে ব্রন্ধের 
এঁক্য অক্ষুপ্ থাকে এবং তাহা সত্বেও ব্রদ্ম তাহার বৃদ্ধ্যতীত শক্তিসমূহ দ্বারা জগতের 
সহিত অচিস্ত্য-ভেদাভেদ সম্বন্ধে সম্বদ্ধ বলিয়া ইহার সহিত এক ইহাও প্রতিপন্ন 
কর। বায়। 


দ্রব্য 


১। ভগবানের অপ্রানৃত-জগতে (ব্রজধামে ) যে সকল অনুচর অর্থাৎ নিত্যমুক্ত আত্মা সর্ধদাই তাহা 
সঙ্গে থাকেন তাহাদের পক্ষেই এরূপ ভক্তি সম্ভব। বদ্ধজীবের পক্ষে কেবলমাত্র রাগানুগাভক্তিরূপ 
উহার অনুকৃতিই সম্ভব । ভগবানের অপ্রাকৃত জগতে যে মূল বন্ত আছে ইহা তাহারই অন্ুকারী মাত্র । 


্রন্থ-বিবরণী 
চৈতন্ত £ দশ-মুল-গ্লোক বলদেব বিদ্ভাভূষণ £ সিদ্ধাত্ত-র 
কৃষ্দাস কথিরাজ £ চৈতন্ত-চগ্রিতান্থত জীব গোস্বামী £ ঘট অনদর্ভ 
:. হৃদ্দাবনদাস ঠাকুর £ চৈতগ্ত-ভাগবত রাপ গোম্বামী ই লঘুভাগবতামৃত 
লোচনদ।স ঠাকুর : চৈতন্ত-মঙ্গল কেদারনাথ ভক্তিবিনোদ £ জৈব-ধর্মশা 


খলদেখ বিতাড়ষণ £ ক্রদ্গ-সত্রের গৌবিন্দ-ভান্ব কেদারনাথ ভক্তিবিনোদ £ চৈভগ্ত-শিক্ষা্ৃত 


৪৫৬ 


যোড়শ গরিচ্ছ্ 


শৈব সিদ্ধান্ত মতবাদ 
শৈব ও শান্ত সম্প্রদায় 
ক। শৈব সিদ্ধান্ত 
১। অপর্াপব্র সগ্্দামেনর সহিত হঙ্াল জন্বন্ধ 


শৈব-সিদ্ধাস্ত বলিতে তামিল সম্প্রদায়ের শৈব-বাদ বুঝায়। এই উক্তির শব্বগত 
অর্থ “শৈব মতবাদের প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্ত সকল বা চরম বক্তব্য”; এই সিদ্ধান্ত সকলই 
উক্ত মতবাদ্দকে অপরাপর অ-শৈব সম্প্রদায় ও অন্যান্য শ্রেণীর শৈব সম্প্রদায় হইতে পৃথক 
করিতে সহায়ত করিয়াছে । সিদ্ধান্তের সহিত অপরাপর সম্প্রদায় সকলের সম্বন্ধ চারি 
ভাগে বিভক্ত করা যায় £ (১) পুরপ-পুরচ, চময়ম্‌ ( সম্পূর্ণ বহিরিঞ্জ বা বিরোধী ) (২) 
পুরচ চময়ম্‌( বহিরঙ্ ), (৩) অহপ পুরচ চময়ম্‌ ( অন্তরঙ্গ ), (9) অহচ চময়ম্‌ ( একাস্ত 
অস্তরঙ্গ )। লোকায়ত, $জন ও বৌদ্ধ প্রভৃতি নাস্তিক সম্প্রদায় সকলকে সম্পূর্ণ বহিরজ 
বলা হয় এই অর্থে ষে ইহাদের সহিত সিদ্ধান্তের বিভিন্নতা সর্বাপেক্ষা অধিক | এই সম্প্রধায় 
সকল বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে না এবং ঈশ্বরের অন্তিত্বেও অবিশ্বাসী । ইহাঁর পরে 
ম্যায়, মীমাংসা, একাত্ম-বাদ, সাংখ্যযোগ ও পঞ্চরাত্র প্রভাতি বহিরঙ্গ বলিয়া অভিহিত 
হয়। পরবর্তী এই সম্প্রদায়সকল বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করিলেও শৈবাগমকে প্রামাণ্য 
বলিয়া স্বীকার করে না । শৈব মতবাদেরই কয়েকটী বিশেষ শ্রেণী যেমন পাশুপত, মহাব্রত, 
কাল, বাম, ভৈরব ও এক্যবাঘ প্রভৃতির সহিত ইহার সম্বন্ধ অস্তরজ-_এই সম্প্রদায় 
সকল শিবকে চরম দেবতা বলিয়া স্বীকার করে কিন্তু সিদ্ধান্তে গৃহীত তত্বের তালিকা 
সম্পর্কে একমত নহে । একাম্ত অন্তরঙ্গ বলিয়া! অভিহিত শেষোক্ত সম্প্রদায় সকল 
যেমন “পাষাণ-বা্থ শৈব,, “ভেদ-বাদ শৈব)* “শিব-সমবাদ,, *শিব-সংক্রান্তবাদ, তীশ্বর- 
অধিকারবা্* ও “শিবাদ্বৈত'-_শৈব মতবাদ্দেরই কতকগুলি বিভিন্ন ধারা, ইহারা 
সকলেই সিদ্ধান্তে আলোচিত তত্বাবলীকে স্বীকার করে; কিন্ত কতকগুলি তত্বের 
সংজ্ঞা নিরপথ ক্ষেত্রে তাহার! একমত নহে। শৈব সিদ্ধান্তবাদিরা একাত্ত বহিরজ 
হইতে আরম্ভ করিয়া একাস্ত অন্তরঙ্গ বিরোধী মতবাদ সকলের লমালোচন! করিয়া 
প্রচলিত দার্শনিক পদ্ধতি অন্থসারে হ্বীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করিতে  চেষ্টিত হুন। 


৪৫৭ 
৫৮ 


খরা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


বর্তমান ক্ষেত্রে আমরা কেবলমাত্র সিদ্ধান্তের প্রধান তত্ব সকলের ব্যাখ্যা করিব। 
তৎপূর্বে শৈব-সম্প্রধায়ের সিদ্ধান্ত মতবাদের প্রামাণ্য শাস্াদি ও শান্্রাচার্ধিগের আমরা 
সংক্ষেপে উল্লেখ করিব । 


২। প্রামাপি শাম সমুহ 


শৈর মতবাদের মূল উৎল অষ্টাবিংশতি শৈবাগম, ইহাদের মধ্যে কামিকা সর্বাপেক্ষা 
প্রধান । বেদের প্রামান্যও উক্ত মতবাদে স্বীকৃত হইয়াছে । “তিকুমন্দিরম' গ্রন্থের প্রণেতা 
খধি তিরুমুলার বলিয়াছেন “আগমশাসন্ত্র বেদের মতই যথার্থতঃ ভগবৎস্থষ্, প্রথমটি 
(বেদ ) সাধারণ, ও অপরটী (আগম) বিশেষ-_কাহারও কাহারও বিবেচনায় ভগবৎ-মুখ 
নির্গত এই ছুইটী বাক্যসমষ্টি অর্থাৎ “অন্ত” পার্থক্যঘুক্ত কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট 
ইহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।” 

স্-প্রাচীন যুগ হইতে প্রচলিত তামিল সাহিত্যে, থা সঙ্গম যুগের প্রাচীন পুঁথিতে, 
শিব সম্পর্কে ও দক্ষিণ ভারতে শিবের নিকট পুজা! নিবেদনের বিষয়ের উল্লেখ পাওয়! যায় । 
'নায়ন্মার? বা “অভিয়ার” বলিয়। "অভিহিত তেষট্ট জন “শৈবাচাধ১ যখন দাক্ষিণাত্যে 
বাস করিতেন ও জনসাধারণকে শিবভক্তির পথ প্রদর্শন করিয়াছিলেন, সেই লময়ই শৈব 
মতবাদের প্রধান ধুগ বলা যায়। তীহাদের মধ্যে অপপর, তিরুজ্ঞান সম্বন্ধর, স্থন্দরমূতি 
ও মানিক বাচকর+ শৈব ধর্মের প্রধান আচার্য ( সময়াচার্য ) বলিয়! সম্মানিত হুইয়! 
থাকেন। প্রথম তিনজন ষে সকল স্তোত্র রচন করিয়াছেন তাহ। হইতেই 'তেভারম' 
এর স্থ্ি হইয়াছে। মানিক বাচকরের “তিরুবাচকম্‌, সম্বন্ধে এইরূপ কিংবদস্তী প্রচলিত 
আছে যে এই স্তোত্স শ্রবণ করিয়া কোন হৃদয় যধি বিগলিত না হয়, তবে সে হৃদয় 
পাধাণবৎ*। 

পূর্বোশ্লিখিত চান্িজন প্রধান সময়াঁচার্য &শব মতবাদের কোন স্থসংবদ্ধ বিবরণ 
লিপিবদ্ধ করিতে চেষ্টিত হন নাই। পরবর্তী আচার্ধদিগের উপর এই দায়িত্ব স্থাস্ত 
হইয়াছিল। এই পরবর্তী আচার্ধগণ সনাতনাচার্ধয বলিয়া কথিত হইতেন। এই 
সনাতনাচার্ধদিগের মধ্যে সর্বপ্রধান ছিলেন ম্যেকগুদেব, অরুণন্দি-শিবাচার্ধ, মরয়- 
জ্ঞান-সন্বন্ধা ও উমাপতি-_শিবাচার্য। ম্যেকগুদেবের “শিবজ্ঞান বোধম্‌, (খুষ্টায 
ছ্য়োষশ শতাব্দী ) শৈব সিহ্বাস্ত দর্শনের মৃলগ্রস্থ। এই গ্রন্থথানি সম্পর্কে এইক্ধপ 
ঘতবাষ্ প্রচরিত আছে যে ম্যেকগুদেব বৌরব আগষের পাপ বিমোচন অধ্যায় 
তাষিল ভাষায় অন্থবাদ করিয়াছেন । কিন্তু অধুনা! কয়েকজন পত্তিত ব্যক্তি এই বিষয়ে 
আপত্তি কক্গিয়াছেন , তাহাদের মতে “শিবজ্ঞান-বোধম্‌, ম্যেকগুদেবের মৌলিক গ্রন্থ । 


৪ ৫৮৮ 


টব সিদ্ধ মতবাদ শৈব ও শা সায় 2( প্রধান তথয). 


পশিবআান-বোধম্‌, এ শ্বরং খ্রস্থকার রচিত বাতিকসই দ্বাদশটা সুত্র আছে। অরুণ 
“শিবজ্ঞান সিদ্ধিয়ার' শৈবসিদ্ধান্তের প্রাচীন যৃল্যবান গ্রন্থ হিপাবে যথার্থ খ্যাতি 
অর্জন করিয়াছে। ইহাতে পরপক্ষ বলিয়া অভিহিত প্রথম খণ্ডে বিশ্োধী মতবাদ সকলের 
খণ্ডন কর! হইয়াছে। স্ুপক্ষ (সংস্কতে শ্বপক্ষ) বলিয়া কধিত ঘ্বিতীয় অধ্যায়ে 
'শিবজ্ঞান-বোধম্‌এর ধারা একাস্ত অনুসরণ করিয়া শৈব সিদ্ধান্তের মূল সুত্রাবলী 
বিশদভাবে আলোচিত হইয়াছে । মরয়-জ্ঞান-সম্বদ্ধ কোন গ্রন্থ প্রণয়ন করিরাছেন 
বলিয়া জান! যায় না, তবে তাহার শিষ্া উযাপতি শিবাচার্ধ সিদ্ধান্ত মতবাদের বিশদ 
আলোচন! করিয়া অনেকগুলি গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছেন। এইগুলির মধ্যে শত নুত্রাবলী 
বিশিষ্ট “শিব প্রকাশম্‌” অন্ততম। 


৬৩। প্রধান তত্তসমুহ 


শৈব-সিদ্ধান্তিদের মতে প্রধান তত্ব তিনটি--পতি (ঈশ্বর ), পশু ( জীবাত্ম! ) ও পাশ 
( সংসারবন্ধন)। এই মতবাদ অনুসারে ঈশ্বর, আত্মা ও জড়প্রকৃতি সবই সৎ, সেই 
কারণেই ইহাকে বনু-বাদী বস্ততান্ত্রিক দর্শন (21018115010 7621150 ) বলা যায়। 
সিদ্ধাত্ত মতবাদে ঈশ্বর চরম সৎ। তিনি সর্বজীবের আশ্রয়স্থল সুতরাং 'পতি+ বলিয়! 
অভিহিত হইয়া থাকেন। “শিবজ্ঞান-বোধমূ'এর প্রথম শুত্রেই ঈশ্বরের অস্ভিত্বপন্ষে 
এইরূপ যুক্তি প্রদশিত হইয়াছে । “তিনি (পুং) তিনি (শ্রী) ও ইহাক্ধপ বিচিত্র 
জগৎ, এই জগত ত্রিবিধ পরিবর্তনের (স্থষ্টি, স্থিতি, ধ্বংস ) নিয়মাধীন, সুতরাং ইহা 
অবশ্ই স্ষ্ট অর্থাৎ ইহার পশ্চাতে নিশ্চয়ই কোন নিমিত্ত কারণ আছে।” আণব- 
মূল বা অজ্ঞানরূপ মলযুক্ত থাকায়, ইহা “হয়” হইতে উদ্ভূত হয় এবং হুরের মধ্যেই 
বিলুপ্ত হয়। স্থতরাং পণ্ডিত ব্যক্তির! বলিয়া থাকেন যে *হর'ই উক্ত ঝিবিধ পরিণামের 
প্রথম কারণ। শিল্পী ব্যতীত যেমন শিল্প সৃষ্টি সম্ভব নহে, তদ্রূপ কিয়ৎকালের জন্টা 
যাহার অস্তিত্ব, স্থাক্রিত্ব ও বিলুপ্তি আছে ও পর মুহূর্তেই নব স্যটির জন্য যাহার 
প্রস্তুতি চলিতেছে এমন যে বিচিত্র জগৎ ইহার পশ্চাতে নিশ্চয়ই কোন নিমিত্ত 
কারণের প্রয়োজন আছে--তিনিই ঈশ্বর | ঈশ্বর ম্বয়ং পরিণামাধীন নহেন। ফ্যেকগুদেব 
বলিয়াছেন কাল যেমন স্বয়ং অপরিণামী থাকিয়াও সকল প্রকার পরিণামের কর্তা) 
ঈশ্বরও তদ্রূপ, বাহক করণ ব্যতীত ও স্বেচ্ছায় এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার 
করিয়া থাকেন। তিনি সমস্ত পরিণামের মধ্যে থাকিয়াও শ্বয়ং অপরিপামী । এই জগৎ 
ঈশ্বর হ্যা । ্‌ 

সিদ্ধান্ত দর্শনে ঈশ্বর “হর” ও “শিব বলিয়া অভিহিত হইয়! থাকেন। আত্মার 


6৫৪ 


প্রাচা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


সমস্ত পাঁশকে তিনি বিদুরিত বা হরণ করেন বলিয়! এবং প্রলয়ের পরে সকল 
কিছুই তাহার মধ্যে সংহত হয় বলিয়া তিনি “হর' বলিয়া কথিত হন । তিনি শির বলিয়া 
খ্যাত কারণ শিবই পরম ও,.চরম আনন্দ । বিশ্বের ভ্রবাজাতের আকৃতির অনুক্বপ-_ 
শিব, শিবা, বা শিবং, স্ত্রী, পুরুষ ও র্লীব এই ভ্রিবিধ লিঙ্গের যে কোন লিঙ্গেই 
তিনি অভিহিত হইতে পারেন | | 

শিবের সমস্ত নাষগুলিই ত্রিবিধ লিঙ্গে ব্যবন্ৃত হুইতে পারে । মাণিক্ক বাঁচকর 
বলিয়াছেন “দেখ, দেখ, তিনি স্ত্রী, তিনি পুরুষ, তিনি ক্লীব।” 

শৈব-সিদ্ধান্তিদের মতে ব্রদ্ধা, বিষু ও রুদ্র অপেক্ষা শিব শ্রেষ্ঠ । এই ক্ষেঞ্্রে ইহা 
লক্ষণীয় যে প্রচলিত হিন্দুধর্মে ঈশ্বর বা মহেশ্বর বলিতে শিবকেই বুঝায় । সিদ্ধাস্তিদের 
মতে শিবকে ত্রিমৃতির মধ্যে তৃতীয় দেবতা রুদ্রের সহিত অভিন্ন বলিয়া! মনে করিলেও 
ব্রহ্মা, বিঞু হইতে তিনি শ্রেষ্ঠ কারণ প্রলয়কালে শিবই একমাত্র অবিচলিত থাকেন 
পক্ষান্তরে ব্রদ্ধা, বিষু বিক্ষুন্ধ হইয়া পড়েন। হৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার সব সময়েই রুদ্র 
সক্রিয় থাকেন কিন্তু প্রলয়কালে ব্রন্ধা, বিষ্ুর কিছু করণীয় থাকে না। শ্বেতাশ্বতর 
উপনিষদের ভাষায় “রুদ্রই এক মাত্র দেব, তাহার দ্বিতীয় নাই। তিনি তাহার শাসন 
ক্ষমতা দ্বার! সমস্ত জগৎকে পরিচালনা করেন । সমস্ত জগৎ ও জীব তিনি তৃষ্টি করেন, 
পালন করেন ও প্রলয়কালে তিনি সকলকে একত্র সংহার করেন ।॥ 

সিদ্ধান্তিদের মতে ঈশ্বর নিণ্ডণ। নিগুণণ শব্দের অর্থ তাহাদের মতে বৈদাস্তিকদের 
সভায় গুণের অভাব বা গুণের উধ্ব নহে। ইহা বলিতে প্রকৃতিগত সত্ব, রজঃ ও 
ও তমঃ এই গ্রণত্রয় দ্বার! শিব অবচ্ছিন্ন নহেন,_ইহাই বুঝায়। এইভাবেই তিরুমুলর 
“মুকুণা-নিগুণম্ শব্ধ ব্যবহার করিয়াছেন। নিগুণ বলিতে প্রকৃতিগত জ্িগুণাতীত 
বুঝায়। শিবাবস্থা তুরীয় অবস্থা_-জাগ্রৎ, স্বপ্ন ও স্থুযুগ্তির অতীত অবস্থা । জাগ্রৎ, 
স্বপ্ন ও সুযুন্তি, সত্ব, রজঃ ও তমোতীত।”« ম্যেকণ্ড বলেন ঈশ্বর নিগুণ, নির্মল, 
অর্থাৎ মলবিহীন, সদানন্ব, তৎপর ( সমস্ত বস্ত অপেক্ষণ শ্রেষ্ঠ) অতুলনীয়, তিনি ব্যোম 
তত্বেরও উধ্বে” অবস্থিত, পাশমুক্ত জীবাত্মার নিকটে পরমাশ্চর্য বন্ত হিসাবে জ্ঞান-জ্যোতির 
স্তায় আবিভূত হইয়া থাকেন নয় কি?» 

সচরাচর শিবের আটটি গুণ আছে বলা হয় যেমন স্বাতস্ত্র, পবিত্রতা, আত্মজ্ঞান, 
ঘল-নিমু-ক্ততা, পর্বজতা, অসীম রুপাপরতা, সর্বশক্তিমত্তা ও আনন্দ। কিক্ষকুড়ালে 
ঈশ্বরকে অংগুণত্তান ( অষ্ট গুণাদ্বিত )+ বলিয়া! বর্ণনা কর। হইয়াছে । শিবের মধ্যে সমস্ত 
প্রকার পুর্ণত৷ অবশ্তাই আছে। “শিবজ্ঞান বোধ' এর ষষ্ঠ সত্রে এইরূপ উক্ত, আছে 
যে জানীব্যক্তিরা শিবকে শিব-সৎ বা চিৎ-সৎ বলেন। যেহেতু তিনি শুদ্বচৈতন্ত বা 


8৬৫ 


শৈব সিদ্ধ মতবাদ শৈব ও শাক্ত সন্ত্রদায় £ (প্রধান তত্বসমূহ ) 


শিব সেইহেতু তিনি খণ্ড মানব-বুদ্ধি গ্রাহ নেন! তিনি পরম শৎ ও দিব্যজানগম্য । 
তিনি খণ্ড জ্ঞানের উধ্বে হইলেও দিব্যজ্ঞানের অতীত নহেন । 

“শিব বিশ্বান্ম্যত ও বিশ্বোভীর্। তিনি বিশ্বরূপ, অর্থাৎ এই বিশ্ব তাহার .ক্মাকার 
তিনি বিশ্বাধিক অর্থাৎ এই বিশ্ব ছাড়াও তাহার অস্তিত্ব আছে। প্রায় প্রত্যেক শৈব 
সন্ন্যাসীই শিবের এই উত্ভয়বিধ অস্ভিত্থের স্তুতি গান করিম্বাছেন। শিব এই জগৎ্বধপে 
প্রতিভাত হইয়া থাকেন সত্য-_কিন্তু জগতের মধ্যেই তাহার সত্তার পরিসমাপ্তি নহে। 
তিনি সাকার এবং নিরাকার ছুইই | স্বরূপতঃ তিনি বিশ্বানুন্যত, এই বিশ্বাচুস্যত রূপের 
জন্তই তিনি অষ্ট মুভিতে কল্পিত হইয়া থাকেন। মাণিকবাচকর বলিয়াছেন--ক্ষিতি, 
অপ, তেজ, মকুৎ, ব্যোম, তুর্য, চন্দ্র ও সচেতন মানুষের মধ্যে শিবাংশ অবস্থিত | অপ.পর 
এই অষ্ট যুতিকেই যজমান, শুভ, অস্তুভ, স্ত্রী, পুরুষ, সমস্ত রূপের ব্বপ, বর্তমান, অতীত 
ও ভবিষ্যৎ বলিয়াছেন । এই সকল বর্ণনার মধ্যে নিহিত মতবাদকে সবেশ্বরবাদ বলিয়! 
মনে করিলে ভূল করা হুইবে, কারণ শিব বা ঈশ্বর বিশ্বোতীর্ণ বা এই জগতের উর্ধে 
তিনি এই বিশ্বের মূল আধার | ম্যেকণ্ড বলেন যে শিব স্থুল দৃষ্টি ও ব্যবহারিক চিন্তার 
বাহিরে । মাণিক-বাচকর বলিয়াছেন পরম শিব যদিও স্ত্রী, পুরুষ, নপুংসক, ব্যোম্‌ 
অগ্নি, উদ্দেশ্ত-কারণ প্রভৃতি বিভিন্নরূপে প্রতিভাত হইয়া থাকেন-_কিস্তু ন্বরূপত: তিনি 
সমস্ত নাম-বূপের উর্ধে । 

শৈবসিদ্ধাস্ত মতে শিব এই জগতের কর্তা বা নিমিত্ত কারণ । কোন কোন বৈদাস্তিক 
তাহাকে এই জগতের উপাদান কারণ বলিয়াও স্বীকার করবেন, সিদ্ধাস্তিরা তাহা 
করেন ন1। সিদ্ধাস্তির। ব্রন্ম-পরিণামবার্দী নহেন তাহার! গ্রকৃতি-পরিণামবাদী। জগৎ 
স্থষ্টি ও জগতের বিবর্তনাংশে সিদ্ধাস্তিদের সাংখ্য দর্শনের সহিত মিল আছে। ম্ুৃতিক! 
যেরূপ ঘটের উপাদান, যায়াও তদরূপ এই জগতের উপাদান । কিন্তু নিমিত্ত কারণ 
ব্যতীত কেবল মাজ উপাদান-কারণ-রূপ ম্বৃত্তিকার ঘটে রূপান্তরিত হওয়া সম্ভব নহে- 
এই বূপাস্তর ঘটিতে গেলে কুম্তকার রূপ কর্তার ক্রিয়ার প্রয়োজন আছে । তদ্রূপ মায় 
হইতে এই জগৎ স্থষ্টি ক্ষেত্রেও কর্তার ক্রিয়ার প্রয়োজন আছে। এই কর্তাই ঈশ্বর এই 
ক্ষেত্রে অবশ্ত সাংখ্য ও সিন্ধান্তিদের মধ্যে পার্থক্য আছে। কুস্তকার যেরূপ চক্রের 
সাহায্যে ঘটাদ্দি প্রস্তুত করে, তদরূপ ঈশ্বর এই জগৎ স্ষ্টির নিঘিত্ত কারণ” | তিনি 
তাহার নিজন্ব শক্তির মধ্য দ্দিয়া এই জগৎ সৃষ্টি করেন, এবং উক্ত শক্তি এই কষ্ট 
ব্যাপারে সহকারী কারণ হিসাবে সক্রিয় থাকে। কুস্তকারের সহিত ঈশ্বরের উপমা 
অনস্ত অধিকদূর অগ্রনর হইতে পারেনা, কারণ কুস্ভকারের বুদ্ধি ও কৌশল সীমাবদ্ধ, 
শক্তি স্বল্প, অধিকস্ কুস্তকারের চক্র ঘোরানোর পশ্চাতে তাহার ব্যক্তিগত গ্রাসাচ্ছদনের 


৪৩৬১ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


গ্রন্থ আছে। কিন্তু শব সর্বজ ও সর্বব্যাপী, তাহার সৃষ্টি করিবার ক্ষমতাও 'অলীষ । 
তিনি সত্যাসহয় ও আপ্তকাম । তাহার সমস্ত সঙ্গল্পই সত্য, তাহার সকল ইচ্ছাই নিত্য 
চরিতার্থ। জগৎ তাহার ইচ্ছায় দেই ভাবেই বিবপ্তিত হয় যাহাতে জীবাত্মা সকল 
মলার্দি অপসারণের মধ্য দ্বিয়! মুক্ত হইতে পারে | শিবের ক্রিয়া পাচটা-তিরোধান, সৃষ্টি, 
স্থিতি, সংহার ও অনুগ্রহ | ইহাদের মধ্যে প্রথম চারিটির লক্ষ্য শেষেরটীকে লাভ কর1। 
আত্মার যুক্তির জন্যই এই জগৎ ক্রিয়া চলিতেছে এই বিবর্তন কোন অবস্থায়ই ঈশ্বরের 
স্বরূপকে স্পর্শ করিতে পারেনা । জগৎ বিবতিত হউক বা! নাই হউক শিব সবই অবস্থায় 
একই থাকেন। যেমন সকল ক্ষেত্রেই সুর্য নিরপেক্ষ ও এক ; কিন্তু এই তৃর্ধের জগ্তাই 
পদ্মের বিকাশ, উত্তপ্ত কাচের মধ্য দিয়া তাপ নির্গমন ও জলের বাম্পে পরিণত 
হওয়া প্রভৃতি বিভিন্ন ঘটন ঘটিয়া থাকে১। আবার অপরদিকে এই একই ভুর্ষের জগ্ত 
কতকগুলি পদ্ম কুঁড়িতে পরিণত হয়, কতকগুলি পদ্ম বিকশিত হয়, এমন কি কতকগুলি 
ঝরিয়া পড়ে। তদ্রূপ ঈশ্বরের শক্তি ভিন্ন কোন কিছুই সক্রিয় হইতে পারে না, এবং 
এই জগৎ স্থষ্টি অসভ্ভব হইয়! পড়ে। তথাপি এই জগতক্ষেত্রে ও জগৎ অভাস্তরে 
যাহাই ঘটুক না] কেন ঈশ্বরের ন্বরূপ সর্ব অবস্থায়ই অপরিবতিতই থাকেন । 

সিদ্ধান্তিরা অবতারবাদের পক্ষপাতী নহেন। “শিবজ্ঞান সিদ্ধিয়ার১০ এর প্রণেতা 
বলিয়াছেন যে অগ্ঠান্ত দেবতার! যেমন জন্ম, মৃত্যুও ভোগ-যস্ত্রণার অধীন, উমাপতি শিব 
এই সকল হইতে মুক্ত | শিবের কোন অবতার নাই, কারণ কর্মছাঁড়া কোন অবতার 
হয় না, এবং শিবের কোন কর্ম নাই। যে সকল দেহের জন্ম হয় এবং যাহাদের 
মৃত্যু হইতে দেখা যায় তাহারা কর্মের ফল হইতে মৃত্যুতে এবং মৃত্যু হইতে 
জন্মে পরিভ্রমণশীল জীবাত্আা সকল যেই রূপ দেহ ধারণ করে, ঈশ্বর সেইরূপ দেহ 
ধারণ করেন না। ইহাতে অবস্ত এইবপ বুঝায় না যে ঈশ্বর দেহ ধারণ করিয়া 
আবিভূতি হইতে পারেন না। তিনি তাহার ভক্ত কর্তৃক যেভাবে পুজিত হয়েন, সেইরূপেই 
তিনি আবিভূত হইয়া থাকেন, এবং জীবাত্মার মুক্তির উপযোগী বিভিন্রূপেও তিনি 
আবিভূতি হইয়া! থাকেন১৯। এই সকল বিভিন্নরূপ জড় সৃষ্টি নহে, এইগুলি তাহার 
করুণার প্রকাশ। তাহার বিভিন্ন আবির্ভাবের একটা মূল্যবান বৈশিষ্ট্য হইতেছে যে তিনি 
সংগ্রামরত বহছা-_জীবের সংসার হইতে মুক্তির জন্ত গুরুরপে আবিভূর্তি হইয়া থাকেন । 
প্রেম ও করুণার অবতার হিসাবে প্রায়ই তিনি ₹শব সাধুদের স্োত্রের বিষয়বস্ত 
হইয়াছেন । তিরুমুলার তাহার প্ররণীয় স্ভোত্র সকলের মধ্যে একটা স্তোত্রে বলিয়াছেন যে 
একমাত্র অজ ব্যক্তিরা শিব ও তাহার প্রেমের € অন্বু ) মধ্যে পার্থক্য দেখিয়! থাকেন, 
ইহাঁষের একাত্ম অন্থভূতিই যথার্থ জ্ঞান ।১২ 


6৬৭ 


* 


শৈধ নিদ্ধান্ত মতমাধ শৈষ ও পাঞ্জ সন্গ্রদায় $ (প্রধান তদ্বমসূহ ). 


শৈব সিদ্ধান্ত মতবাদে স্বীকূত পতি, পণ্ড ও পাশ এই ভিনটী প্রধান তত্বের মধ্যে. 
আমর! প্রথম তত্বটীর হ্বরূপ ব্যাখ্য! করিয়াছি । অন্য-নিরপেক্ষ বন্ধ হিলাবে, ইহাই 
সর্বাপেক্ষা মৌলিক তত্ব । পশু ও পাশ রগ অন্তান্ত ছুইটী তত্বের ন্বর্ূপ নির্ণয় করিবার 
পূর্বে, আমরা এই জগতের প্রকৃতি ও ইহার বিবর্তন আলোচনা করিব। কারণ, এই 
জগৎ জীবের আবাস, এবং ইহাই করণার্দি ও পরিচ্ছন্ন অভিজ্ঞতার বিষয়সফল দিয় 
থাকে । 

মায় এই জগতের উপার্ধান কারণ । সিদ্ধান্তির1 “সৎকার্ধ-বাদ' এর ভিত্তিতে যুক্তি১ 
প্রদর্শন করিয়া থাকেন যে, জগৎরূপ এই কার্ধের নিশ্চয়ই কোন উপাদান কারণ আছে, 
এবং সেই উপাদান কারণ প্রকৃতির দিক দিয়া ইহা হইতে ভিন্ন নহে। জগৎ জড় বা 
অ-চিৎ, ঈশ্বর চিৎ, স্থতরাং ঈশ্বর এই জগতের উপাদান কারণ হইতে পারেন না। 
ক্থতরাঁং অচিদ্রূপী উপাদান কারণের ধারণ! ক্বীকার করিয়। লইতে হুইবে। তাহাই 
মায়া। ইহা মায়া বলিয়া অভিহিত হয় কারণ এই জগৎ ইহাতেই বিলুপ্ত (ম1), হয় 
এবং ইহা হুইতেই উদ্ভূত হয় (য়া)। ইহা সেই প্রাথমিক উৎস যাহা হইতে এই 
জগতের স্থষ্টি হইয়াছে । এই মায়ার জন্যই জীব সকল দেহ ( তহ্ছ ), ইন্দ্রিয়ার্দি ( করণ ) 
ভূবন ও ভোগ্য বিষয় সকল লাভ করিয়া থাকে । কিন্তু মায়। ম্বয়ং-সক্রিয় হইতে পারে 
না, কারণ ইহা জড় বা অ-চিৎ। স্থতরাং ইহার জন্য চেতন পরিচালনার প্রয়োজন আছে, 
এবং তাহা শিব হইতে আসিয়া থাকে । শিব সাক্ষাৎভাবে মায়ার উপর ক্রিন্বা করেন না, 
তিনি তাহার চিৎ শক্তির মধ্য দিয়া ক্রিয়া করেন । এইভাবে শিব কর্তৃক চালিত হইয়া 
মায়া নিজ হইতেই তত্ব সকল স্থাষ্টি করেন, এবং এই তত্বগুলিই জগৎ স্যঙি করে। 

সিদ্ধাস্তির1 একটি শুদ্ধ ও অপরটি অশুদ্ধ বিবর্তনের দ্বিবিধ ধারার মধ্যে পার্থক্য স্বীকার 
করেন। সেই কারণে মায়াও তাহাদের মতে দ্বিবিধ একটি শুদ্ধমায়া ও অপরটি 
অশুদ্ধমায়। আণব ও কর্মের১৪ সহিত সংমিশ্রিত না হইলে ইহা শুদ্ধ মায়া এবং মিশ্রিত 
হইলে ইহা অশুদ্ধ মায়া বলিয়া অভিহিত হয় । 

শদ্ধমায়। মহামায়া ও “কুটিলাই" বলিয়াও অভিহিত হুইয়া থাকে, শিব স্বয়ং তাহার 
ইচ্ছা, জ্ঞান ও ক্রিয়ার মধ্য দিয়া ইহার উপর ক্রিয়া করেন । শুদ্ধমায়া হইতে পাচটি তত্ব 
উদ্ভূত হয়__নাদ, বিন্দু, সদাখ্য, মাহেশ্বরী ও শুদ্ধবিদ্যা। নাদ হইল শিবতত্ব, বিস্মু শক্তিতত্ব। 
প্রথমটি শুদ্ধ মায়ার উপরে জ্ঞানশক্কির প্রভাবের ফল। ক্রিয়াশক্তি নাদের উপর সক্রিয় 
হইলে পরবরতীটি উদ্ভূত হয় । জ্ঞান ও ক্রিয়াশক্তি বিন্দুর উপরে সমপরিমাণে সক্রিয় হইলে 
সাদাখ্য তত্বের হৃষ্টিহয়। যখন জ্ঞানের সহিত অধিক পরিমাণে ক্রিয়াশক্তি সক্রিয় 
থাকে ইহ হইতেই মাহেশবরী তত্ব উদ্ভূত হয়। এবং এই মাহেশ্বরী হইতেই শুদ্ধ বিভাতত্ব 


৪৬৬ 


প্রাচ্য ও গাঁশচাতা দর্শনের ইতিহাস 
 ইতূত হুন্স খন জানশক্তির প্রাধান্ত অধিক সক্রিয় থাকে । শুদ্ধমায়! উতভৃত উক্ত পীচটি 
তত্ব একত্রিত বা ঘুক্তভাবে *শিবতত্ব' ব! “প্ররককাও্ বলিয়া অভিহিত হইয়া থাক্ষে। 

এই শুদ্ধ মায় হইতে শব তত্বেরও স্থটি হ্য়। শব্ধ চারি প্রকার, প্রথমটি পরা, ইহা 
চরম ও সর্বাপেক্ষা সুক্ম। “ছিতীয়টি পশ্থস্তী, ইহা অপেক্ষাকৃত স্ুল এবং ময়ূরীর ভিম্বাংশে 
অপৃথক ভাবে অবস্থান করে যেমন ময়ূরের বিভিন্ন রং ইহা! তদ্রূপ। তৃতীয়টি 
মধ্যমা, ইহ! অধিকতর স্থুল ও ভেদধুক্ত কিন্তু শ্রুত নহে। চতুর্থট শ্রুত শব্ধ বৈধরী । 
বর্ণ ও শব্দের মধ্য দিয়! ইহা প্রকাশিত হয় ও শক্তির মধ্য দিয়! ইহার অর্থ পরিজ্ঞাত হয়। 
বৈয়াকরণর1 এই শক্তিকে স্ফোট বলিয়া! থাকেন। ইহা শুদ্ধ মায়! উদ্ভূত নাদ তত্বের মধ্যে 
নিহিত থাকে । 

সিদ্ধাস্তিদের বিবর্তনের পরিকল্পনায় অবশিষ্ট তত্বপকল অশুদ্ধ মায়া হইতে উদ্ভূত 
হয়-_এই অশুদ্ধ মায়া অধোমায়া (নিষ্পগামী মায়া) বা মোহিনী (যাহা মুগ্ধ করে) 
বলিয়াও অভিহিত হইয়া থাকে । শিব অশুদ্ধ মায়ার উপরে ক্রিয়া করেন না, কারণ 
ইহা! মলযুক্ত। শুদ্ধ মায় উদ্ভুত সদাশিব ও রুদ্রের ন্যায় দেবতারাই বিবর্তনের অবশিষ্ট 
তদ্বের উপর কর্তৃত্ব করেন। সদাশিব তাহার শক্কির সাহায্যে অশুদ্ধ মায়া হইতে তিনটী 
তত্বের স্থষ্টি করেন-_যেমন কাল, নিয়তি ও কলা (অংশ )। এবং কলা হইতে আরও 
ছুইটী তত্ব বিদ্যা (জ্ঞান ), ও রাগ € আসক্ত ) উদ্ভূত হয়। এই পাঁচটা তত্ব আত্মার 
আবরক ব পঞ্চ কঞ্চুকের স্যান্টি করে । এই সকল কঞ্চুকের দ্বারা বন্ধ আত্মাই পুরুষ-তত্ব 
বলিয়া অভিহিত হুইয় থাকে । পুরুষের বিপরীতাংশ প্রকৃতি, রুদ্রের সক্রিয়তায় কলার 
মধ্য দিয়! ইহা উড্ভ়ৃত হয়। পুরুষ ও প্ররুতিসহ পঞ্চকঞ্চুক বিদ্যাতত্ব বলিয়া পরিচিত, 
ইহা “ভোজদ্রিতৃ” কাণ্ড বলিয়াও অভিহিত হইয়া থাকে । বিবর্তনের এই অংশ পূর্বোক্ত 
প্রেরক কাণ্ড হইতে ভিন্ন। প্রেরক কাণ শুদ্ধ মায়া হইতে উদ্ভূত তত্ব সংবলিত সেই অংশ 
যাহা! চালনা করে আর ভোজরিতৃ কাণ্ড ভোগাদি স্যি করে । 

অব্যক্ত প্রকৃতি লইতে চিত্ত ও বুদ্ধি উদ্ভৃত হয়। বুদ্ধি হইতে অহংকার বা জীবত্বের 
হপ্্রি হয়। সত্ব, রজঃ ও তমগ্ুণের প্রাধান্তের তারতম্য অনুসারে অহংকার তিন 
প্রকার । এই তিন অবস্থায় অহংকারের নাম এইরূপ হইয়া থাকে, যেমন তৈজস, 
বৈরুত১ ও ভূতাদি। তৈঞ্জস অহংকার হইতে জ্ঞানেন্দ্রিয়সকল ও মন উদ্ভূত হয়, বৈরুত 
অহংকার হইতে কর্মেন্দিয়সকল এবং ভূতাদি হইতে তন্মাজ বলিয়! হুক্্ ভূত সকলের 
হুষ্টি হয়। তক্মাত্রসকল হইতে স্থুল ভূত সকলের হি হয়। সর্বসাকুল্যে এইসকল 
নট জিংশৎ তত্বসহ বিবতনের পরিকল্পন! সিদ্ধাস্তমতে সম্পূর্ণ হয়। 


৪৬৪ 


শৈব সিদ্ধান্ত মতবাদ শৈব ও শা সম্প্রদায় ১ (শধান তততনমূহ ) 





মানা 
] 
| | 
্ী মায়া অ-শুদ্ধ মায়! 
রঃ 
বি [ |]... | 
কল নিয়তি কলা 
স৷ধাখ্য 2 
| | 
মাহেশ্বরী রি 115 
শুন্ধ বিদ্যা রাগ | 
| | 
চিত 
৪ 
ডিভি ০ ০ 7 হু 
রঃ নি হা 
জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল কর্মেন্দ্রির সকল তন্মাত্র সকল 
অর্থাৎ মন, দর্শন, শ্রবণ, বাক্‌, হস্ত, পদ, পাস 
ভ্রাণ, বস, স্পর্শ প্রভৃতি ইন্দ্রিয় সকল ও উপস্থ 
মি রা 01111 
টি ক শর শর এ 
ব্যোম বায়ু তেজঃ অপ. ক্ষিতি 


আত্মার বিভিন্ন পাশের মধ্যে মায়া একটি পাশ। 
অভিহিত জীবের আবাসম্ছল, করণাদি ও ভোগ্যবস্ত সকল দিয়া থাকে । 


ইহা জীবকে ভোগ্যকাণ্ড বলিয়! 
সাধারণ ভাবে 


মায়িক জগৎ অসৎ বলিয়। অভিহিত হয় । এই উক্তির অর্থ অবশ্ঠ এইরূপ নহে যে এই 
জগতের কোন ব্যবহারিক অস্তিত্ব নাই, ইহা বলিতে কেবলমাত্র এই বুঝায় যে, এই জগৎ 


ঈশ্বর হইতে ভিন্ন এবং ঈশ্বর সৎ। 


অ-চিৎ বলিয়াই মায় অ-সৎ। 


জীবাত্মা সকল স্ব্ূপতঃ অলীম, ব্যাপক ও সর্বজ্ঞ। কিন্ত মল ও পাশ সংস্পর্শ হেতু 
তাহার] নিজেদের সসীম, বদ্ধ ও অল্পজ্ঞ বলিয়া মনে করে । পাঁশযুক্ত বলিয়াই তাহার পশু 


বলিয়! অভিহিত হয় । 


৪৬৫ 
€৪ 


আণব, কর্ম ও মায়া১* এই ভ্রিবিধ মল জীবাস্াকে জন্মাস্তরাদির 


; পাচা ও পাশ্চাত ববর্শনেয় ইতিহাস 


ভরে সেবা কর্াধি বহিরাঙ্জিক, ব্ধিও সাধ্য ও সাধকের যধ্যে এই পরিবতিত সম্বন্ধ 
সাধককে অধ্যাত্মমার্গে অধিকদুর অগ্রসর হইতে সহায়ত! করে ও ভগবানের অধিকতর 
সাল্লিখ্যে আনয়ন করে৷ পরবর্তা মার্গ যোগ-মার্গ, এই স্তরে সাধক ঈশ্বরকে তাহার সখা 
বলিয়া মনে করেন। এই ধ্যানমার্গে সাধকের ইন্ড্রিয়াদি শ্থ স্ব বিষস্ব হইতে প্রত্যাহ্ৃত 
হয় ও তাহান্ব যন একাগ্রভাবে দেবতার ধ্যানে নিবিষ্ট হয়়। চর্যা, ক্রিয়া ও যোগ 
বর্তমানে বণিত এই আ্রিবিধ মার্গ শৈব সিদ্ধান্তে অধ্যাত্ম স্তরের ত্রিবিধ মার্গ, এইগুলি 
ভগবৎ স্বরূপ লাভ করিবার পক্ষে সাধককে যোগ্য করিয়া তোলে । পূর্ণতার দিকে অগ্রসর 
হইবার পক্ষে এইগুলি সাধনার বিভিন্ন ভর | প্রথমটি সালোক্য বলিয়! অভিহিত হয়, 
অর্থাৎ ভগবৎ আবাসে অবস্থান । এই স্তর চর্ধা মার্গের মধ্য দিয়া লাভ করিতে হয়। 
দ্বিতীয় স্তর সামীপ্য, অর্থাৎ ঈশ্বর সানিধ্যলাভ, ইহ] ক্রিয়া! মার্গের ফল। তৃতীয় স্তর 
সারপ্য অর্থাৎ ভগবৎ রূপ লাভ, ইহা যোগ মার্গের ফল। অবশ্ত এই স্তবেও সাধক চরম 
অবস্থায় যাইয়া পৌছায় নাই । চরম সাযুজ্য অর্থাৎ ভগবানের সহিত মিলন, ইহা! জ্ঞান 
বা প্রজ্ঞার মধ্য দিয়া লাভ করিতে হয়। বদ্ধতার মূল আণব বা অবিদ্া এই ক্ষেত্রে 
জ্ঞান দ্বার দুর্বীভূত করিতে হয়। জ্ঞান-মার্গ বা অগ্তভাবে বলিতে গেলে 'সন্ধার্গ ঈশ্বরের 
সান্নিধ্য লাভ করিবার পক্ষে অধ্যাত্ম সাধনার সর্বশেষ স্তর । এই স্তর অতিক্রম করিলে 
সাধক সম্পূর্ণ যলমুক্ত হইয়! পরিপূর্ণতা বা মুক্তি লাভ করে। 

ষে পদ্ধতি অন্থসরণ করিলে জীবাত্মা ঈশ্বরের করুণ লাভ করিবার যোগ্য 
হয় তোলে তাহাত্র বিষয়ে শৈব-দিদ্ধান্ত সাহিত্যে বিস্তারিত আলোচনা হইয়াছে। 
জীব প্রথমাবস্থায় ব্যবহারিক ভালমন্দকে সমভাবে দেখিতে শিক্ষা করিবে । ভাল ও মন্দ 
এই ছুই প্রকার কর্মকে সমান মনে করা “ইরুবিনৈয়োপ্ন,* বলিয়া অভিহিত হইয়। থাকে । 
অর্থাৎ পাপের ন্যায় পুণ্যও যে বন্ধন, এইরূপ উপলব্ধি করিয়া! সাধক পাপ ও পুণ্য 
এই উভয়বিধ কর্ম সম্পর্কে উদ্দাসীন হইয়া যায়। এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রতিষ্ঠিত 
হইলে যে মন তখনও জীবের দৃষ্টি ভঙ্গীকে আবুত করিয়! রাখে তাহা দিব্য অস্ত্রোপচারের 
যোগ্যত। অর্জন রুপে । মলের পরিণত অবস্থা "মল পরিপাক" বলিয়া কথিত হইয়া 
থাকে। এই অবস্থায় সাধকের অশুদ্ধ মায়া-উদ্ভূত তত্বা্দি বিষয়ে ও তাহার নিজের 
দুল ও চঞ্চল বুদ্ধি সম্বন্ধে কোন জ্ঞানই থাকে না। এই অবস্থান পণ্ড ও পাশ 
সম্পকিত জ্ঞানের কোন প্রয়োজনই থাকে না। সাধকের মন তখন ঈশ্বরের মহিযার 
অন্ুধ্যানে পরিপূর্ণ থাকে এবং ঈশ্বরের করুণ সাধকের উপর বর্ষিত হয়। ইহা! 
শক্তিনিপাত ব! ভাগবতী শক্তির করুণ! বলিয়া! অভিহিত হইয়া থাকে । দিব্য করুণ। 
বর্ষণের লংগেই জীবের নিকট শিব আত্মপ্রকাশ করেন এবং তাহাকে মুক্তির জ্ঞান 


৪ ৮ 


শৈৰ সিষ্কান্ত মতধাদ শৈব ও শা্ত সম্প্রদায়ঃ ( মুক্তি) 


প্রদান করেন। জ্ঞান-মার্গে প্রতিষ্ঠিত জীবের ব্সবস্থা, শুদ্ধ অবস্থা, ইহা অনুগ্রহ প্রাপ্তির 
অবস্থা বা "অরুল', ইহা কেবল অবস্থা! হইতে ভিন্ন; “কেবল+ অবস্থা তমলার অবস্থা 
ব। “ইরুল” এবং সকল-_অবস্থা হইতেও পৃথক কারণ সকল-অবস্থা মুঢ়াবস্থা বা “রুল” । 
শুদ্ধ অবস্থায় জীব বিজ্ঞান আমর! পূর্বেই লক্ষ্য করিয়াছি । এই স্তরের জীবের নিকট 
শিব ইহারই নিজের জ্যোতিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন । কিন্তু গ্রলয়াকলের নিকটে তিনি 
অতি-প্রারুত দিব্যরপে আবিভূ্ত হইয়া থাক্ষেন,। এবং সকল অবস্থার জীবের 
নিকট তিনি মনুষ্য দেহধারী গুরুরূপে প্রকাশ পাইয়! থাকেন। দর্শন, স্পর্শন ও 
উপদেশাবলীর মধ্য দিয়া ভগবান সাধককে শুদ্ধ করেন এবং মলাদির সংস্পর্শ হইতে 
দূরে রাখেন ও নিজেই শিবত্ব উপলব্ধি করিতে সহায়তা করেন। এই শিবত্ব উপলন্ধিই 
মোক্ষ বা মুক্তি। এমন কি মুক্তির পরেও সাধক তাহার প্রারন্ধ কর্মের অবশিষ্টাংশের 
জন্ত দেহধারণ করিয়। অবস্থান করিতে পারেন । কিন্ত ইহা! কোন প্রকারেই সাধকের 
পরিপূর্ণ তার পক্ষে বাধার স্ট্টি করিতে পারে না। 

জীবের শিবত্ব উপলব্ধির অর্থ শিবের মধ্যে জীবের আত্মসত্তার বিলুপ্তি নহে। 
এমন কি মোক্ষাবস্থায়ও শিব ও জীবের সত্তাগত পার্থক্য থাকে । জীব ঈশ্বরের ্বভাব 
এবং স্বভাব নিজের স্বভাব এক বলিয়া! দাবী করিতে পারে সত্য, কিন্তু জীব স্বয়ং ঈশ্বর 
নহে। বদ্ধতা ও মুক্তাবস্থার মধ্যে পার্থক্য এইরূপ-_বদ্ধাবস্থায় জীবের অভিজ্ঞতা 
পাশের মধ্য দিয়! ঘটিয়া থাকে, এবং মুক্তাবস্থায় পতির মধ্য দিয়া ঘটিয়! থাকে । 
মুক্তাবস্থায় জীবের জ্ঞান পতি-জ্ঞান; ইহার অর্থ পতির মাধ্যমে জ্ঞান, কিন্তু পতির 
জ্ঞান নহে। ঈশ্বর ও মুক্ত আত্মার মধ্যে এই ধরণের পার্থক্য আছে। মুক্তাবস্থায় 
মল-মুক্ত হন ও শিব-আনন্দ উপভোগ করে সত্য, কিন্তু শিবের ্তায় স্ষ্িস্থিতি, 
সংহার, তিরোধান ও অনুগ্রহ এই পাচচী শক্তির অধিকারী হয় না। সুতরাং মোক্ষ 
কেবলমাত্র ভেদরহিত একত্ব নহে; ইহা! দৈতের মধ্যে একের অভিজ্ঞতা । ভগবান 
শাশ্বত আনন্দ দান করিবার কর্তা, এবং জীবাত্বা সেই আনন্দলাভের প্রার্থী । 
ভগবানের মধ্যে নিজ সতার বিলোপ সাধন না করিয়াও জীব ভগবানের শ্বরূপ উপভোগ 
করিতে পারে । এই মতবাদই সিদ্ধান্ত কর্তৃক প্রকৃত অছৈত বলিয়া বণিত হুইয়াছে। 
এই উক্তির নক্রার্থক অংশ ( অ--) দ্বার যাহ! অন্বীকত হইয়াছে তাহা ছয় বা 
দুইয়ের অস্তিত্ব নহে, ছ্ৈত জ্ঞান । সিদ্ধান্তবাদির! বলেন “তাহার! দুই নহে,” এই বলিতে 
“সেখানে ছুইয়ের অস্তিত্ব নাই, এইরূপ বুঝায় না। উমাপতি তাহার “শিব প্রকাশম্‌, 
গ্রন্থে বলিয়াছেন 'আমর1 এই স্থানে বেদাস্তের সার শৈব সিদ্ধান্তের মহিমা বর্ণনা 
করিতেছি । যে অদ্বৈতৈ দেহ ও দেহীচন্কু ও সুর্য রশ্মি, আত্ম! ' ও চক্ষু মধ্যে যে 


৪৬৯ 


' প্রাচ্য ও পাশ্চাতা ধর্শদের ইতিহাস 


অনন্ত্ব লন্বদ্ধ বিচ্বমান জী ও ঈশ্বরের মধ্যে সেইক্পপ সম্বন্ধ শ্বীকার কর! হইয়াছে 
তাহার ব্যাখ্যা! করাই ইহাক্স প্রধান গুণ সর্ব্বোচ্য প্রামাণ্য গ্রন্থে শ্বীকুত ধর্ম কর্তৃক ইহ! 
অনুমোদিত ;) আলো ও অন্ধকার, শব ও অর্থ, স্বর্ণ ও অলঙ্কার এইগুলি যথাক্রমে অন্তান্ত 
সম্প্রদায় কর্তৃক গৃহীত ষে সকল সম্বদ্ধের উদাহরণ স্থল--যথা ভেদ, ভেদাভেদ এবং 
অভেদ সেই সকল সম্বন্ধ হইতে এই অদ্বৈত পৃথক অধিকম্ত ইহা যথাযথ যুক্তিপন্ধতি দ্বার! 
 অন্থমোদিত , ইহা সত্য সন্ধানীর পক্ষে জ্যোতিঃস্বরূপ ও অপরের পক্ষে অন্ধকারতুল্য ।১৮ 


১। 
ন্‌ । 


৩ | 


৪ | 
€। 
৬। 
প্‌ | 
৮ 
৯। 
১৬ । 
১১। 


১২। 
১৩। 
১৪ | 
১৪ | 
১৬। 


১৭। 
১৮1 


টীক। 


সেঞ্ষিলারের পেরিয়-পুরাণম্ঞএ এই সাধুদের জীবনী আছে। 

ভক্তির প্রধান চতুমার্গের জন্ঠ এই চারিটি আদর্শ__যথা দাঁস-মার্গ, সংপুত্র-মার্গ, সখা-মার্গ ও সন্মার্গ । 
দ্বাদশ ভিরু-যুড়াই নামে নম্ঘি-আগুার-নম্থি কর্তৃক সন্কলিত চারিজন সাধু ও অন্ঠান্ত শৈব কবি ও 
দ্রষ্টার সঙ্গীতাবলী ৷ 

৩য়, ২ 

তিরু-মন্দিরম্‌ ৫ম, ২২৯৬ 

শিব-জ্ঞান-বোধম্‌ ৯ম, ২ 

১ম৯ 

শিব-জ্ঞান-সিদ্ধিয়ার ১, ১ম, ১৮ 

শিব-জ্ঞান-সিদ্ধিয়ার ১, ২য়, ৩৩ 

ই ২য় হ৫ 

তিন প্রকার রূপের বিভাগ আছে (৫১) ভোগ-রূপ, আত্মার আনন্দার্থে (২) ঘোর-রূপ, আত্মার 

কর্ম ক্ষরার্থে। ও (৩) যোগ-রূপ, আত্মার মোক্ষার্থে, সিদ্ধিয়ার জরষ্টব্য ১, ৯ম, ৫ * 

তিরু-মন্দিরস্‌ ৫ম ২৭, 

ইহ। সাংখ্যের মতের অনুরূপ যেমন কার্য কারণের মধো নিহিত এবং উভয়েরই বস্তু এক। 

আপব, কর্মন্‌ ও মায়! জীবাত্মার বন্ধনকারী মল । 

সাংখ্যর মতে সান্বিক অহঙ্কারকে বৈকৃত ও রাজকে তৈজস বলা হয়। 

কখনে৷ কখনো পঞ্চমলের উল্লেখও পাওয়] যায় ঃ তিনটি তিরোধায়িন্‌ (শিবের অদৃষ্ঠ হইবার শক্তি) 
ও মায়েয় ( অর্থাৎ মায়! হইতে উৎপন্ন ) বা জগৎ। 

২ সংখ্যা জরষ্টব্য 

জে, এম, নলম্বামী পিল্লাই এর ; ম্টাডিস্‌ ইন্‌ শৈবসিদ্ধান্ত ২৭৫ পৃঃ দ্রষ্টব্য 


৪9৭৩ 


শৈব সিদ্ধান্তবাদ শৈব ও শাক্ত সম্প্রদায় £ ( মুক্তি): পুস্তক তালিক! 
পুস্তক-তালিকা | 
১। পিল্লাই, জে, এম, নরম্বামী--শিব-জ্ঞান-বোধম্‌ টাকা! ও ভুমিকা-সহ অন্থুদিত, ধর্মপুরম অধিনাম্‌, 
১৪৯৪৪ 


২। পিল্লাই, জে, এম, নস্বামী £ অরশন্দী শিবম্-এর শিব-ভঞান-সিদ্ধিয়ার € হুপ্পকম্‌ ) সটাক অনুবাদ ধর্মপুরম 
অধিনাম ১৯৪৮ 


৩। পিলাই, জে, এম, নলম্বামী £ স্টাডিজ. ইন্‌ শৈবসিদ্ধাস্ত, মেকান্ত ন্‌ প্রেস, মাত্রীজ ১৯১১ 
৪ । শাস্ত্রী, কে, এ, নীলকান্ত ঃ আযান্‌ হিস্টরিক্যাল স্কেচ অব শৈভিস্ম, দি কালচারাল্‌ হেরিটেজ অব 
ইত্িয়! ২য় থণ্ড ১৮-৩৪ পৃঃ 


৫ | শীস্তী, এস্‌ এস্‌ শুর্যনারায়ণ £ দি ফিলসফি অব শৈভিজম্‌, দি কাল্চায়াল্‌ হেরিটেজ অব ইত্িয়া 
হর থণ্ড ৩৫-৪৭ পৃঃ 


৪৭১ 


শৈব ও শাক্ত-সম্প্রদায় 
খ। কাশ্মীর শৈব দর্শন 
১। ভুমিকা 


খুষ্টায় নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধে কাশ্মীরে একাত্মবাধী চিস্তাধার] হিসাবে শৈববাদ 
গড়িয়া! উঠিয়াছিল। ইহার গ্রকৃতি আনুষ্ঠানিক ধর্ম হইতে ভিন্ন ছিল। ইহার মতবাদ 
অ-বৈদিক কারণ বেদকে ইহ! চরম প্রমাণ বলিয়! শ্বীকার করেন!। ইহার আবেদন 
কেবলমাত্র সমাজের তিনটী উচ্চশ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নহে, শুত্রেরও এই মতবাদ 
অনুসারে মুক্তির পথ অনুসরণ করিবার পক্ষে কোন বাধা নাই। জাতিবর্ণ নিধিশেষে ইহা 
সকল মানুষের মধ্যে বিশ্ব-ত্রাতৃত্ব শ্বীকার করে। ইহা একটী আগম-সম্মত পদ্ধতি । 
ইহার উৎপত্তির সন্ধান চৌষটিটি অছৈত১ শৈবাগমের মধ্যে পাওয়া যায়। 

এই মতবাদ "ন্বাতন্ত্য-বাদ+ বলিয়া অভিহিত হইয়! থাকে, কারণ ইহ! স্বাধীন ইচ্ছাকে 
চরম ঘার্শনিক তত্ব হিসাবে স্বীকার করে। ইহা “আভাস-বাদ” বলিয়াও কথিত হইয়া 
থাকে, কারণ এই মতবাদে সকল প্রকার আভাসই চরম সত্এর স্থুল প্রকাশ । ত্রিত্ববাদের 
অভিমুখে ইহার প্রবণতা আছে বলিয়া ইহা! “ভ্রিক”ং বলিয়াও পরিচিত। ইহাকে 
কাশ্মীর” শৈববাদ*ৎ ও বলা হইয়া থাকে কারণ একাত্ম-াদী শৈব-বার্দের উপর প্রচলিত 
সাহিত্যের সকল লেখকই কাশ্মীরবাসী। ইহা কোনপ্রকার যুক্তি-তর্ক বা ধর্মশান্ত্রে 
প্রামাণ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নহে, ইহা যোগ-ক্রিয়া সাপেক্ষ অধ্যাত্ম সাধনাঘবার1 লব্ধ পরম 
সত্তার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত । 

একাত্ম-বার্ী শৈববাদের অভ্যুদয়কালে কাশ্মীর বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারার 
মিলনক্ষেত্র ছিল। অশোকের সময় হইতেই (খুষ্টপূর্ব ২৭৩-২৩২ ) কাশ্মীরে বৌদ্ধ 
মতবাদের বিশেষ প্রভাব ছিল। সম্রাট কণিষ্ক বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীর বিরোধী 
মতবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করিবার জন্য কাম্মীরেই বৌদ্ধ ধর্মযাজকদের এক সভার 
আহ্বান করেন। কণিষ্ধ যখন (খুষ্টীর় ৭৮-১০৯) কাশ্মীর (কণিষ্ক পুরম?) বৌদ্ধ 
সঙ্ঘকে দান করিয়াছিলেন এবং নাগাজুণন যখন ক্ষমতায় অধিঠিত হইয়া বৌদ্ধ মতবাদ 
প্রচার করিতে আরভ্ভ করেন, শৈবরা তখন বৌদ্ধ মতবাদের প্রভাব বিশেষ ভাবে 
উপলদ্ধি করিয়াছিলেন । কহুদণের* রাজতরঙ্গিণী' ও বরদরাজের “শিব-ৃত্রবাত্তিকে'* : 
নাগান্ূর্নের আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীর উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায় । 


৪৭২ 


শৈব ও শাজ-্সন্প্রদায় £ ( ইতিহাস ও সাহিত্য ) 


_ পাণিনির ব্যাকরণ তৎকালে বিশেষভাবে অধীত হইত । কৈয়ট পতঞ্জলির হাভান্ো 
উপর একখানি চীকা রচনা করিয়াছিলেন, অভিনবগগ্তপাদ পতঞ্জলিক্র অবতার দ্ধূপে 
সম্মানিত হইতেন, তাহার আচার্ধের এই নামে তাহাকে অলন্কত করিয়াছিলেন । 
অদ্বৈত বৈদান্ত হু-গ্রচলিত ছিল। শক্করাচার্ষের কাশ্শীর আগমনে (৮২৭ খৃষ্টাব্দে) 
পণ্ডিত ব্যক্তিদের আকর্ষণ ইহার প্রতি অধিকতর বৃদ্ধি পাইয়াছিল। অনৈতবাদী 
শৈবদেরই একটী বিশেষ সম্প্রদ্ধায় শাক্তাদ্বৈতবাদের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন । বেদান্তের 
অবিচ্ছেগ্য অংশ হিসাবে সাংখ্যদর্শনও বিশেষ প্রচলিত ছিল। 


২। উতিত্ঞাস ও আহক্ছিত্য 


“শিব স্থত্র' প্রণেতা বন্থগুপ্ত ( খুষ্টীয় ৮২৫) সর্বপ্রথম আগমসম্মত শিক্ষাবলীকে 
দার্শনিক আকারে উপস্থাপিত করেন । তিনি অন্তান্ত দার্শনিক মতবাদের প্রতি কোন- 
প্রকার দৃষ্টি দেন নাই। কোন যুক্তিসম্মত মতবাদ স্থষ্টি করিবার উদ্দেশ্য তাহার ছিল 
না, “চরম তত্বের উপলব্ধির পক্ষে তিনটী উপায় তিনি প্রদর্শন করিয়াছিলেন । তাহার জন্য 
তিনি কোন যুক্তিসম্মত প্রমাণ দেন নাই বা কোন প্রামাণ্য ধর্মশাস্ত্রের উল্লেখও করেন 
নাই। পরম্পরা প্রচলিত একটি মতানুসারে তিনি একটি পৰতগাত্রে ক্ষোদ্দিত স্ত্র 
সকলকে আবিষ্কার করিয়াছিলেন এবং উপস্থাপিত করিয়াছিলেন । 

বস্বগুপ্তের শিষ্য ভট্ট কললট “ম্পন্দকারিকণ নামক গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছিলেন বা 
তাহার আচার্ধ প্রণীত গ্রন্থ সাধারণের সমক্ষ্যে প্রচার করিয়াছিলেন । এই ক্ষেত্রেই 
সর্বপ্রথম চরম সং বিষয়ে অস্পষ্ট যুক্তিসম্মত আলোচনা লক্ষিত হয় এবং অন্যান্ত দার্শনিক 
সম্প্রদায়ের উল্লেখ দেখিতে পাওয়। যায় । 

সোমানন্দ নামে বস্থগুপ্তের একজন বয়ঃকনিষ্ঠ সমসাময়িক ছিলেন। চরম সৎ 
সম্পর্কে তাহার মতবাদ স্পষ্টতঃ যুক্তিবাদী ছিল। তিনি স্পষ্টভাবে অন্তান্ দার্শনিক 
সম্প্রদায়ের উল্লেখ করিয়াছেন এবং যুক্তিসম্মতভাবে তাহাদের মতবাদের অযৌক্তিকতা 
প্রমাণ করিয়াছেন। তাহার আক্রমণ প্রধানতঃ বৈয়্াকরণদের “শব্দ ব্রহ্ম-বাদ” ও 
কাশ্মীর 'শৈবদের কোন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের শক্তদ্ব়বাদের বিরুদ্ধে চালিত 
হইয়াছিল, পশ্তস্তীই চরম ও পরা, “বাক্য পদীয়ম্‌্” এ প্রতিষ্ঠিত ভর্তৃহন্সির (৬৫০ খুঃ) এই 
মতবাদকে তিনি খণ্ডন করিয়াছেন | পর] যে পশ্ঠন্তী হইতে ভিন্ন ইহাই তিনি প্রতিষ্ঠা 
করিয়াছেন । 

প্রাচীন বৈয়াকরণগণ পশ্যস্তী ও বৈধরীর মধ্যে মধ্যমা নামে কেবলমাত্র একটি 
অবস্থাস্তর স্বীকার করিয়াছেন কৈয়টের 'প্রর্দীপে" আমর] এসকল বৈদিক. অণুচ্ছেদের 


9৭৩ 


প্রা ও পাণ্টাতা দর্শনের ইতিছাস 


€চত্বারি শৃঙ্গ প্রভৃতি ) ভিন্ন ব্যাখ্যা দেখিতে পাই; নাগেশ ভট্ট তাহার “উদ্যোতে' 
এইগুজিকে পরার অস্তিত্ব সমর্থন করে বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন । শৈবাগযষের* 
প্রভাবের জন্তই নাগেশ ভট্ট ও তাহার আহ্মগাষির1 পরাকে পতশ্ঠস্তী হইতে ভিন্ন 
বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন । সুতরাং ব্যাকরণ দর্শনে সোমানন্দের অবদান পরার 
প্রতিষ্ঠা । ইহা পন্ঠস্তী হইতে ভিন্ন ও শ্রেষ্ঠ । শৈবরা ষাহাকে স্বাতত্ত্য' বা বিমর্শ 
বলিয়া থাকেন এই “পরা” তাহার সহিত এক । 

সোমানন্দ তাহার গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে “শক্তযত্বয়'বাদের সমালোচন। করিয়াছেন । 
কিন্ত তিনি বষ্ঠ অধ্যায়ে বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন সম্প্রধায় ও অদ্বৈত বেদাস্তের সহিত টন, 
সাংখ্য, ন্যায় ও বৈশেষিক প্রভৃতি অন্যান্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংক্ষেপে সমালোচন। 
করিয়াছেন। , 

চরম সত্ব সম্পর্কে অন্তান্য মতবাদের একই ধরণের ধারণা হইতে অছৈত টৈব 
সম্প্রদায় শ্বীকৃত চর্ম সত্তার ধারণার পার্থক্য তিনি স্পষ্ট দেখাইয়াছেন। 

তিনি শৈবাগমের মধ্যে পর! মুক্তির একটি পথ আবিষ্কার করিয়াছিলেন, বস্থগুণ্ের 
নিকট এই পথ অজ্ঞাত ছিল। এই পথ হইল 'প্রত্যভিজ্ঞা', যে নামে এই সম্প্রদায় 
পরিচিত এবং মাধব তাহার “সর্ব দর্শন সংগ্রহ" গ্রন্থে এই সম্প্রদায়কে উক্ত নামে লিপিবদ্ধ 
করিয়াছেন। বন্ধগ্রপ্ত মুক্তির কেবলমাত্র তিনটা পথের নির্দেশ দিয়! গিয়াছেন। শাস্তব, 
শাক্ত ও আপব। এই তিনটী মার্গই যোগ-নিষ্ঠ। সোমানন্দ বস্থগুপ্ত হইতে আর 
এক ধাপ অগ্রদর হইয়াছিলেন, তিনি মুক্তির এক নৃতন পথ দেখাইলেন। তিনি 
দ্বেখাইলেন শ্বাতন্যুক্ত জীব শ্বয়ং তাহার ব্যবহারিক জীবনে প্রত্যভিজ্ঞার মধ্যে পরম 
সৎকে উপলব্ধি করিতে পারে । তাহার মতে স্বাতন্ত্রই জীবের আত্তর সত্তা, ইহ। অজ্ঞানের 
আবরণে আবৃত থাকে, স্বাতন্ত্য ও জীবের আস্তর সত! এক, এইরূপ প্রত্যভিজ্ঞা হইলেই 
উক্ত অজ্ঞান দূর হয়। 

উত্পলাচার্য সোমানন্দের একজন শিষ্য ছিলেন । সোমানন্দ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত- 
বাঁদের সহিত বৌদ্ধ মতবাদেরও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংক্ষেপে সমালোচন] করিয়!ছিলেন। 
এই সময়ে কাশ্ীরে বৌদ্ধ মতবাদ পূর্ণভাবে জাগ্রত ছিল। স্বতরাং অছবৈত 
শৈববাদের প্রতি সমালোচনাও খুব সম্ভবত হইয়াছিল । উৎপলাচার্ধ ইহার উত্তরে 'ঈশ্বর 
প্রত্যভিজ্ঞা কারিকা', ও আরও ছুইথানি ভাস্তয রচনা করিয়াছিলেন। এইগুলি 
প্রধানভাবে অদ্বৈত শৈববাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ প্রতিবাদ সকলের 
উত্তর । 

উৎপলাচার্ধের প্রশিশ্ত অভিনব গ্রপ্ত (৯৬ থুষ্টা ) ছিলেন একজন অগাধ চিন্তাশীল 


৪৭৪ 


শৈব ও শান্ত সনপ্রদায় £ ( কাশ্শীর শৈববাদের প্রবশত! সমুহ ) 


ব্যক্তি ও অতি উচ্চত্তরের একজন অধ্যাত্ম সাধক । তিনি তাহার নিজের বিষয়ে প্রার়ই 
বলিয়াছেন, এবং তাহার কতকগুলি গ্রস্থের রচনার স্থান ও তারিখের বিষয়ও 
তিনি উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। আমর! যদি অদ্বৈত টৈববাদের সঠিক কোন 
ইতিহাস রচনা করিতে সমর্থ হই, তাহা প্রধানতঃ অভিনবগুগ্ডের গ্রন্থগুলির এই 
বৈশিষ্ট্যের জন্য | 

অভিনব গুপ্তের” একচল্লিশ খান! গ্রচ্থের বিষয় আমর জানি । তিনি যে আরও বহু 
গ্রন্থ রচন! করিয়া গিয়াছেন তাহারও যথেষ্ট যুক্তিসম্মত প্রমাণ দেখান যায়। তিনি 
চৌযটিখানা অদ্বৈত শৈবাগমের ভাষ্য রচন। করিয়1 তাহার কার্ধ আর্স্ত করিয়াছিলেন, 
এবং ম্ত্রালোক' নামক একখানি শ্বতশ্র মৌলিক গ্রন্থ রচনা করিয়! গিয়াছেন, এই গ্রন্থে 
তিনি অদ্বৈত শৈবাগমের রহস্য, ধর্ম, আচার ব্যবহার, জ্ঞান, মনস্তত্ব ও দর্শন প্রভৃতি 
বিভিন্ন দিক আলোচন। করিয়াছেন । পরে তিনি সমালোচন। সাহিত্য ও নাট্যশাস্ত্রের 
উপর ভাষ্য রচনা করেন । তিনি আনন্ববর্ধনের ধ্বন্তালোকের” উপর “লোচন” নামক 
একখানি গ্রস্থ রচনা করিয়াছেন এবং মনম্তত্বের দিক দিয়া অধ্যাত্মের গ্যোতক হিসাবে 
ধ্বনির প্রতিষ্ঠা করেন, এই ধ্বনি অভিধেয়, তাৎপর্য ও লাক্ষণিক এই তিন প্রকার শবার্থ 
হইতে ভিন্ন । তিনি ভরতের নাট্যশাস্ত্রের উপর “অভিনব ভারতী" নামক গ্রস্থ প্রণয়ন 
করেন এবং এই গ্রন্থে নাট্যশাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সৌন্দর্য তত্ব সন্বন্বীয় একটা মতবাদ্ব 
প্রতিষ্ঠা করেন, তাহার এই মতবাদ এই বিষয়ের পরবর্তী সকল লেখকই স্বীকার 
করিয়াছেন । সর্বশেষে ০) প্প্রত্যভিজ্ঞা কারিকা” (২) ও তাহার টীকা অদ্বৈত 
শৈববাদের সম্বন্ধে উৎপলাচার্ষের এই ছুইখানি গ্রন্থের উপর তিনি ভাষ্য রচন! 
করেন । মৃলগ্রস্থ ও ইহার উপর ভাম্তদকল প্রত্যভিজ্ঞা সম্প্রদায়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ বলিয়া 
স্বীকৃত হয়। 

অভিনব গুপ্তের অবদান বিশেষভাবে ছুইটি-_ প্রথমতঃ তিনি আগম শাস্ত্রের বিভিন্ন 
অংশের উল্লেখ করিয়া চৌষট্টিখানা প্রামাণ্য শৈবাগমের সহিত অদ্বৈত শৈববাদের সকল 
দিকের যোগস্ত্র সংস্থাপিত করিয়াছেন । দ্বিতীয়তঃ তিনি অছৈত শৈববাদের 
ভিত্তির উপর ভারতীয় সৌন্দ্ষতত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তীহার পূর্বে কাশ্মীরে প্রাচীন 
্যায়ের দৃষ্টি হইতে শ্রীসংকুক ও অদ্বৈত বেদাস্তের দিক দিয়া ভট্টনায়ক রসবোধের 
ব্যাখ্য। করিয়াছিলেন । অভিনবগুপ্ত উভয়ের ব্যাখ্যার অযৌক্তিকতা পরিক্ষার প্রমাণ 
করিয়াছেন । 

অভিনবগুপ্তের পরে আমরা এই মতবাদের কতকগুলি সংক্ষিগুসার দেখিতে পাই 
যেমন ক্ষেমরাজ প্রণীত (১০৪০ থৃষ্টাব্) 'প্রত্যভিজ্ঞা-হৃদয়' ও প্রাচীন আচার্ধদিগেক 


৪ ৭৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


গ্রচ্ছের উপর যোগরাজরুত ( ৯.৬, থুষ্টা্ব ) অভিনব গুপ্তের পরমার্থসারের চীকা, জয়রথ 
প্রণীত তন্্ালোকের টীকা ও ভাক্ষর-কঠ ( ১৭০০) প্রণীত ঈশ্বর প্রত্যভিজ্ঞ! বিমর্শিনীর 
উপর চীকা |” 


৩। ক্ষণশ্মীনন শৈবআাদেন প্রন্ণতণ আস আহ 


কাশ্মীর শৈববাদে একটি রহস্তাভিমুখী প্রবণতা আছে। ইহার মতে “সৎ' পুর্ণ 
অদৈত ;ইহ। অনির্বচনীয়, স্থতক্লাং কোন বিধেয়ই ইহাতে প্রযোজ্য নহে ; “সৎ জীবাত্মার 
অন্ুন্ধপ অনির্বচনীয় স্বব্ূপের সহিত একাত্ম । জীবের পক্ষে পরমাত্মার সহিত পূর্ণ মিলন 
স্তরে পৌছান সম্ভব; এবং বিভিন্ন সাধনস্তরের মধ্য দিয় উক্ত মিলন উপলব্ধির বিভিন্ন 
উপায়ের বিষয়ও কাশ্মীর শৈববাদে উলিখিত আছে । তত্বের দ্রিক দিয়া এই মতবাদ 
যুক্তিবাদী । সুল্ধ বিশ্লেষণের জন্য ইহ] ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাকে স্বীকার করে এবং এই 
অভিজ্ঞতা যে একমাত্র শ্বীকুত অধ্যাত্মতত্বের ভিত্তিতেই হওয়া সম্ভব তাহা এই বিশ্লেষণের 
মধ্যে প্রকাশ পায়। একদিক দিয়া ইহা শব্দ-প্রামাণ্য-বাদী__কারণ ইহার তত্বগুলিকে 
যুক্তিনিদ্ধ করিবার পরে উক্ত তত্বগুলি যে ধর্মশান্ত্র অনুমোদিত তাহাও এই মতবাদে 
প্রদশিত হইয়াছে । ইহ] শ্বাতপ্্যবাদী কারণ এই মতবাদের চরম অধ্যাত্মতত্ব হইল 
স্বাতস্ত্য ব! স্বাধীন ইচ্ছা । | 

কাশ্মীর শৈববাদে বিভিন্ন দার্শনিক ভাবধারার সমন্বয় সাধিত হইয়াছে । ইহা 
বিরোধী মতবাদ পকলকে গ্রহণ করিয়! একটি স্থুসংবদ্ধ মতবাদে সমন্বয় করিবার জন্য এ 
মতবাদ সকলকে শুদ্ধ ও রূপান্তরিত করে | প্রয়োজনীয় রূপাস্তর সাধন করিয়া! ইহাতে 
সাংখ্যের পুরুষ ও চতুবিংশতিতত্ব ও বেদাস্তের মায়া স্বীকৃত হইয়াছে ও সেই সংগে আরও 
দশটি তত্ব যুক্ত করা হইয়াছে। এই দশটি তত্বের মধ্যে পাচটি অলৌকিক তত্ব ও 
অবশিষ্ট পাচটি জীবের কঞ্চুক বা আবরক বলিয়! অভিহিত হয়। সকলের উর্ধে ইহা 
চরম দংকে সংস্থাপিত করে ও উক্ত তত্বগুলি যে কেবলমাত্র ইহার প্রকাশ তাহাই 
প্রদর্শন করে । 

ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্বীকৃত প্রতি ভারতীয় মতবাদের আত্মার ধারণা অনুসারে কাশ্মীর 
শৈববাদে প্রতিটি মুল্যবান ভারতীয় চিন্তাধারার যথাযোগ্য স্থান নির্দিষ্ট হইয়াছে । 
স্তরাং কাশ্মীর শৈবদের মতে নৈয়াদ্িক ও অন্ঠান্ঠ সম্প্রদায় স্বীকৃত জ্ঞান ও সথখ-হুঃখাদির 
কেবলমাজ্্র আশ্রয়রূপ আত্মা, এই জগতের স্থিতিকালে বুদ্ধির সহিত এক এবং প্রলয়কালে 
ইহা শৃন্ত বলিয়া গণ্য হইবে | বিজ্ঞানবাদী* বৌদ্ধদের শ্বীকৃত ভাবপ্রবাহরূপ আত্ম! ধারণা 
বুদ্ধির রূপাস্তর ভিন্ন আর কিছুই নহে। উক্ত আত্মা! প্রতি পূর্ববর্তী ধারণা! হইতে অতীতের 


৪৭৬ 


শৈব ও শাক লগ্গরদায় £ ( কাশীর শৈষবাদের প্রবণত। সমূহ) 


ংস্কার গ্রহণ করে। চিদ্রূপী আত্মা বা বিম্্যবিহীন শাস্ত শুদ্ধ চিৎ বা গ্রকাশরপ বেদাস্তের, 
্রন্ম কাশ্মীর শৈবদের তৃতীয় তত্ব সদাশিবের৯* সহিত এক। হেগেল৯১ যেইরূপ 
আলোচনা করিয়াছিলেন তাহার সহিত ইহাকে অনেকটা এক । হেগেল তাহার 
প্রথম প্রধান দার্শনিক মতবার্দের যৌক্তিক তত্ব অন্তান্য সতা; পারমেনাইডিস্‌ কল্পিত 
চরম সএর় সহিত এক হিসাবে দেখিয়াছেন। হেগেলের দ্বিতীয় যৌক্তিক তত্ব 'অ-সৎ? 
ইহা শৃল্তবাদী বৌদ্ধসন্্রদায়ের 'শুহ'এর ধারণার সহিত এক হিসাবে বিবেচনা করা 
যাইতে পারে। 

ইহা সর্বপ্রকার দ্বৈতবাদ ও বন্ছবাদকে বর্জন করে, কারণ তাহাদের দৃষ্টিভঙ্গী 
হইতেছে সাধারণ লোকের দৃিভঙ্গীর ন্যায় এবং তাহারা আত্মা এবং অনাআ্সার মধ্যে 
এক অনতি-ক্রমণীয় ব্যবধানের স্থষ্টি করে। বিষয়ী এবং বিষয় ষদি পরজ্পর হইতে 
সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয় এবং তাহারা স্বরূপতঃ ভিন্ন পরস্পর বিরোধী এবং দ্বতন্ত্র সতার 
অধিকাম়ী হয় তাহা হইলে তাহাদের মধ্যে কোন পারদ্পরিক সম্বন্ধ থাকিতে 
পারে না। 

বিজ্ঞানবাদ সঘন্ধে বল যায় যে বার্কলে তাহার মতবাদে ঈশ্বরের যে স্থান স্বীকার 
করিয়াছিলেন তাহা বাদ দিলে বার্কলের দর্শন হইতে কাশ্শীর শৈববাদ কিঞ্চিৎ ভিন্ন। 
কাশ্মীর শৈববাদ্দে ভাবের ক্ষণিকত্ব স্বীকুত হইয়াছে, কিন্তু স্বরূপতঃ বিষয়ীর ক্ষণিকত্ব 
অন্বীকৃত হইয়াছে । কারণ বিষয়ীর স্বরূপতঃ যদি কোন স্থায়ী সত্ব! না! থাকিত, ও ইহা 
যদি বিষয়ি-নিরপেক্ষ ভাবধারা! সকলকে ধরিয়া রাখিতে সক্ষম না হইত এবং প্রতিটি 
ভাবের উদয় ও বিলয়ের সংগে সংগে যদি বিষীয়র উদয় ও বিলয় ঘটিত, তাহা হইলে 
একটি সংযুক্ত সমগ্রসত্তার চেতনার পক্ষে অপরিহার্য ধারণ! সমূহের একত্রীকরণ অসম্ভব 
হইয়া পড়িত। বাসনার দিক দিয়া বিজ্ঞানবাদিদের বিভিন্ন প্রকার অভিজ্ঞতার ব্যাখা। এই 
মতবাদে অস্বীকৃত হইয়াছে। ইহাতে বাহ্ার্থান্থমেয়বাদিদের আভামবাদও অস্বীকৃত 
হইয়াছে, বাহ্থার্থান্মেয়বাদির! কাণ্টের স্তায় বাহ্থার্থ স্বীকার করে সত্য কিন্তু এই বাহার্থ 
সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষের অস্তভূতি নহে, ইহ প্রত্যক্ষ-কার্ধ হইতে কেবলমাত্র অনুমেয়। 
জ্ঞান ক্ষেত্রে বৈচিত্র ব্যাধ্যা করিবার পক্ষে ইহা একটি সুষ্ঠ পরিকল্পনা হইতে পারে 
কিন্ত ইহা বাস্তব জীবন ব্যাখ্যা করিতে পারে না, কারণ বাস্তব জীবন সাক্ষাৎ 
প্রত্যক্ষ ভিন্ন কেবলমাত্র অনুমেয় লইয়া! চলিতে পারেন! ( ন হি নিত্যান্থমেয়েন কশ্চিদ 
ব্যবহারঃ )১৭ 

কাশ্মীর শৈববাদে বেদাস্তের অদ্বৈত ভাববাদ অস্বীকৃত হুই্য়াছে, বেদাস্তমতে মায়া 
“লও নহে, 'অসৎও নহে, স্থতরাং ইহা অনির্ধচনীয়। বেদাস্তী ধখন বলেন যে এই 


৪৭৭ । 


' পরী ও পাশ্াত! দর্শনের ইতিহাস 


অনির্ধচনীয় মায়াই ব্যবহারিক জগতের কারণ, তখন তাহার উক্তি সবিরোধ মায়1১৩ 
সম্পর্কে এই স্পষ্ট উক্তিই কি যায়ার সংজ্ঞা নছে? 

রহস্ত-বাদ 2 রহস্তবাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুত্রই “সৎ" হইতে ইহা সকলের উর্ধে । সুতরাং 
এই এবং অহুত্তর সকল প্রকার সীমাবধারণমুক্ত | ইহা! অনির্বচনীয় ! কোন প্রকার প্রশ্থ ব] 
উত্তর ইহার সম্পর্কে সম্ভব নহে ।১ ইহাকে “ইদ্দং+ বা “তৎ», ণনেদ্ং বা“ন তৎ, কিছুই 
বল! যায় না। বদ্ধ জীব ইহাকে ধারণাই করিতে পারে না, স্থতরাং কোন বচন 
ইহার বিষয়ে সম্ভব নহে। ইহা এমন কোন পদার্থ নহে যাহ! ইজ্জিয়গ্রাহ হয় বা 
যাহার বিষে কোন ধারণ! করা যায়, ইহ বেলমাত্র উপলব্ধিগম্য । যে কোন বাক্য 
বা বাক্যাবলী-আমর1 ইহার সম্পর্কে ব্যবহার করিনা! কেন, আমর] ইহার প্রকৃত স্বরূপের 
ধারণ! দ্বিতে অসমর্থ হই। 

কেবলমাত্র অধ্যাত্ম-সাধনাদার1 উক্ত “সৎ'কে উপলব্ধি কর] যাইতে পারে। এই 
সাধনা সকল জীবাত্মাকে নান! প্রকার মলমুক্ত করিবার বিভিন্ন উপায় । এই মলগুলিই 
জীবাত্মার কঞ্চুক বা আবরকএর নিশ্মায়ক এবং এই গুলিই জীবাত্মা সকলকে বিশ্বাত্মা 
হইতে পৃথক করিয়া রাখে । 

কাশ্মীর শৈববাদে সত! ও তাত্বিক£* সত্ত। পৃথক নহে, অন্ুত্তর উভয়ত “বিশ্বাতীর্ণ: 
ও “বিশ্বময় । এই ক্ষেত্রে কাশ্মীর শৈববাদে তাত্বিক ও রহম্যের ধারণার মধ্যে 
সমন্বয় সাধিত হইয়াছে । পাশ্চাত্য রহম্তবাদিরাও এইরপ প্রচেষ্টা করিয়াছেন । 
উদ্দাহরণ শ্বরূপ প্লোটাইনাসের বিষয় উল্লেখ করা যাইতে পারে, তিনি বলিয়াছেন 
যে “একম্ এতদুর বিশ্বোতীর্ণ যে ইহা বাক্য ও মনের অতীত; এমন কি ইহাকে 
সর্ধবোচ্চ তত্বের ভাষায়ও উল্লেখ করা যাক না, ইহা কেবল মাত্র রহস্তের আনন্দের 
মধ্যে উপলব্ধিগম্য | তন্ঠদিকে তিনি উক্ত “একম'কে সকল বস্তর আধার ও চরম 
অধিষ্ঠান বলিয়াছেন এই দিক হইতেই সকল প্রকার জাগতিক বৈপরীত্য ও বৈচিত্র্য 
প্রতিভাত হয়। 

বন্ততান্ত্রি-ভাব-বাদ £ দার্শনিক চিন্তাধারার বিষয়-তন্ত্র ও ভাব-তম্ত্র দুইটা বিরোধী 
চিন্তাধারা । বিষয়-তন্ত্র মনোনিরপেক্ষ দ্বয়ং অন্তিত্বশীল সতার বিশ্বাসী, কিন্তু ভাব- 
তন্বে সকল বস্তই মনো-নিষ্ঠ এবং কোন কিছুর ম্বরূপতঃ মনোনিরপেক্ষ অস্তিত্ব নাই। 
কাশ্মীর টৈববাদে উক্ত দ্বিবিধ বিরোধী ভাবধারার সমন্বয় সাধন কর] হইয়াছে । সেই 
কারণেই ইহাকে *বিষয়-তান্ত্রিক ভাববাদ১৬ বলিয়া অভিহিত করা যায়। 

বিষয়িনিষ্ঠ ভাব-তত্ত্রের মতে অভিজ্ঞতার বিষয়ি ব্যক্তি মনঃস্থষ্ট, এবং বাহার্থ 
অন্জুমেয় বাদিদের মতে বাহসত্তা কেবলমাত্র অন্মেয়, এই উভয় মতবাদের বিরুদ্ধে 


৪ 4৮ 


শৈব ও শাক্ত-সম্াদার $ (কাশ্মীর শৈষবাদের শ্রবণতণ সমূহ ) 


কাশ্মীর শৈববাদে এইরূপ শ্বীকৃত হইয়াছে যে বিষন্ব-নিষ্ঠ জগতের বিষয়ি নিরপেক্ষ 
'্বতম্ত্র অন্তিত্ব আছে, এবং ইহা অ-ব্যবহারিক জ্ঞানে প্রকাহ্ট হইতে পারে। 
কাশ্মীর শৈবদের মতে বৈষয়িক জগৎ অবশ্তই মনোনিষ্ঠ কিন্তু এই মন ব্যক্তির মন 
নহে। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় ব্যক্তি-মনের উপর যাহাই সক্রিন্ব থাকে তাহা কোন জড় 
বিষয় নহে, ইহা মনেরই প্রকাশ, এই মন কোন ব্যক্তির মন নহে। অস্তিত্ব-শীল জগৎ 
মহেশ্বরের ইহার অস্তিত্ব ব্যক্তিক বিষয়ের পূর্বে ও পরে অবস্থান করে । 

বিষস্ষি-নিষ্ঠ-ভাবতস্ত্রে ও বিষয়-স্বতন্ত্র-তস্ত্রে যৌক্তিক বলিয়া যাহা স্বীরুত হয় বিষয় 
তান্ত্রিক ভাববাদেও তাহা স্বীকৃত। বিষয়ি-নিষ্ঠ ভাববাদে জড়বাদ অসম্ভব ও সৎ 
মনোনিষ্ঠ, বিষয় ম্বতশ্ত্র তন্ত্রে বৈষয়িক জগতের ব্যক্তি-মনো-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে। 
বিষয়-তান্ত্রিক ভাববাদে উক্ত উভয় মতবাদই স্বীকৃত হইয়াছে, এই মতবাদ অনুসারে 
যে জগতে আমর] বাস করি তাহা মহেশ্বরের আভাসমাত্র, স্তরাং ইহা! মনোনিষ্ঠ। 
এই জগতের বস্তি মনোনিরপেক্ষ অস্তিত্ব অ|ছে, সুতরাং ইহা “সৎ? | 

বিশবীস্থা বা মেহ্শবর) £ কাশ্মীর শৈববাদে জীবাত্মা ও মহেশ্বর একাত্ম বলিয়া স্বীকৃত 
হইয়াছে । সুতরাং এই মতবাদে মহেশ্বরের ধারণ। ব্যক্তিক মনের বিশ্লেষণের উপর 
প্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তিক মন বিশ্লেষণে দুইটী অনস্বীকার্য বৈশিষ্ট্য লক্ষিতহয় £__- 

১। ব্যক্তিক মন বাহৃ-বিষয়ের প্রতিবিষ্ব গ্রহণ করে বা বাহ-বিষয় কর্তৃক প্রভাবিত 
হয় সত্য, কিন্তু অতীত সংস্কারের চিহৃরূপে যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহার গ্রভাবও কম নহে। 
এই অংশে মন কতকগুলি প্রতিচ্ছবির আধার বা অধিষ্ঠান, এই প্রতিচ্ছবি সকল 
মানসিক বৃতি, প্রত্যক্ষ কালে এই বৃত্তিসকল বাহা বিষয় কর্তৃক স্থষ্ট হয়, স্মরণ, কল্পনা ও 
স্বপ্নের সময়ে অতীত সংস্ক[রক্পে যাহ] অবশিষ্ট থাকে তাহা দ্বারা প্রভাবিত হয় । মনের 
উপর বাহ প্রভাব মোমের উপর ছাপএর ন্যায় নহে, ইহা শ্বচ্ছ দর্পণের উপর বাহ্‌ 
বিষয়ের প্রতিবিদ্বের স্যায় বলা যাইতে পারে। এই ক্ষেত্রে দর্পণের উপমান প্রয়োগ 
করিবার উদ্দেশ্ঠ হইতেছে যে মনের ক্রিয়া মনের মধ্যেই ঘটিয়া থাকে, ইহাতে মনের 
স্বতন্ত্র সত্তা বা শুদ্ধত৷ ন্ট হয় না। মনও দর্পণ উভয়ের মধ্যে এই অংশে পার্থক্য 
শ্বীকার করিতে হইবে ষে দর্পণের পক্ষে প্রতিবিদ্বনের জন্য বাহিরের আলোর প্রয়োজন 
আছে । অন্ধকারের দর্পণের কোন প্রতিবিষ্বন হয় ন1!। কিন্তু মন দ্বয়ং-প্রকাশ। বাহা 
প্রকাশক১ ভিন্নও ইহা স্বাধীনভাবে প্রতিবিষ্ব গ্রহণ করিতে পারে। সুতরাং মনের 
প্রথম বৈশিষ্ট্য হইতেছে ইহা ব্বয়ং প্রকাশসত্তা, ইহা প্রতিবিশ্ব গ্রহণ করে এবং উক্ত 
প্রাতিবিঘ্ঘ সকলকে নিজের সহিত একাত্ম হিসাবে প্রকাশ করে। এই বেশিষ্ট্য বিশেষ 
ভাবে (প্রকাশ? বলিয়৷ অবিহিত হইয়া থাকে । 


৪৭৯ | 


: প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহা 


২। মনের অপর পৈশিষ্ট্য হইতেছে ইহা শুদ্ধভাবে নিজে নিজেকেই জানে, 
উদাহরণ শ্বরূপ বল। যায় যেমন রহস্য ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা; ইহ! বিভিন্ন ভাব সকলকে 
দ্বাবীন ভাবে বিশ্লেষণ ও সমন্বয় করিতে পারে; এই সকল বাসনা সংস্কার আকারে মনে 
সঞ্চিত থাকে, এবং স্থতির ভাণ্ডার হইতে স্বেচ্ছাক্রমে পূর্বাবস্থার পু্ন্বাবৃত্তি করিতে 
পারে যেমন স্মরণ ক্ষেত্রে, ইহা কল্পনায় সম্পূর্ণ নৃতন কিছুও স্থষ্টি করিতে পারে। 
এই বৈশিষ্ট বিশেষভাবে “বিমর্শ' বলিয়া কথিত হইয়া থাকে, এই বিমর্শ মনের বিশেষ 
বৈশিষ্ট্য । 

মানব মন স্বয়ং-প্রকাশ ও ব্বয়ংজ্ঞ | ইহা স্বয়ংপ্রকাশ এবং জানে যে ইহা ত্বয়ং 
প্রকাশ । যে হেতু জীব ও মহেশ্বর একাত্ম, সেই হেতু অন্ুত্তরও হ্বয়ং-প্রকাশ ও স্বয়ং-জ্ঞ | 

অন্ুতরেও ষে “বিমর্শ” বা আত্মচেতন আছে স্বীকৃতি "চরম সৎ এর ধারণ! শৈবদের 
এই সম্পর্কে শৈব মতবাদকে অ-দ্ৈত বেদাস্ত হইতে পৃথক করিয়াছে । বেদান্ত মতে ব্রহ্ম 
বা "রম সৎ" শান্ত ও নিক্কি্ন। ইহা স্থিতিশীল, গতিশীল নহে । ইহা স্বয়ং-প্রকাশ কিন্ত 
স্ব-চেতন নহে, কারণ সকল প্রকার চেতনাই ক্রিয়াত্মক এবং চেতন-ক্রিয়! পুর্ণ স্থৃতি বা 
পরম শাস্তির ব্যাঘাত ঘটায় । ব্রঙ্গ নিবিকল্পক, স্থতরাং দ্ব-চেতনার স্বীকৃতি বিকল্পের 
স্বীকৃতি এইরূপ ভাবন! করিয়াই অছ্বৈত বেদাস্তে ব্রহ্ম কেবলমাত্র “চিন্মাত্র”১৮ বলিয়া 
অভিহিত হুইয়া থাকে । 

অপর দিকে শৈবরা বলিয়] থাকেন যে “অন্ুত্তর” কেবল চিন্মাত্র নহে, ইহা! স্বয়ং-জ্ঞও 
বটে, এবং সেই সঙ্গে শৈবরা! ইহাও ন্বীকার করেন যে ইহা নিবিকল্পক ৷ শৈবর! 
নিয়োক্তভাবে নিজেদের মতবাদ ব্যাখ্য করিয়াছেন £__ 

বিকল্প বলিতে বুঝায় (১) বহুকে একত্বে পরিণত করা। কোন ব্যক্তি যখন কতক- 
গুলি বিচ্ছিন্ন প্রত্যক্ষকে জটিল বস্ততে পরিণত করে তখন এই একত্রীকরণ দেখা যায়। 
€২) অনিদ্ং হইতে ইদৎ রূপ জ্ঞেয় বিষয়কে পৃথক করা১৯, (৩) উদ্দীপকের ভিন্ন 
ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা কর] এবং একাটী ব্যাখ্য/কে যথার্থ বলিয়া শ্বীকার কর! ও অপর 
সকলকে ত্রাস্ত বলিয়া পরিত্যাগ কর]1। স্থতরাং সর্বক্ষেত্রেই বুকে সংযুক্ত করিবার জন্য 
অথব! পরম্পর হইতে পুথক করিবার জন্য বিকল্প বনহুর চেতনার উপর নির্ভরশীল । 
স্থতরাং যে সকল ক্ষেত্রে একাধিক চেতনার অভাব সেই সকল ক্ষেত্রে বিকল্প সম্ভব নহে। 
বিশ্ব তীত স্ব-চেতন! তত্বকে স-বিকল্পক বলা যায় না, কারণ এই ক্ষেত্রে আত্মার 
অতিরিক্ত কিছুই নাই, সত্ব! হইতে পৃথক করিবার মত কোন অ-সত্তা এই ক্ষেত্রে দেখ! 
বায় না। 

মধ্য হইতে বিশ্ব মন সব কিছুই নিজের স্যঙি করে । ইহ! সর্বদাই সক্রিয় এবং কোন 


৪৮৩ 


তর 


শৈব ও লাক-লক্প্রদদয় 3 ( কান্মীর গৈববাদের শ্রধণতা সমূহ ) 


অবস্থাতেই নিক্ত্িয্ নহে। ইহার ইচ্ছা-রূপ** বৈশিষ্ট্যের স্থুল অভিব্যক্তি এই বিশ্বে 
প্রকাশ, এই বিশ্ব কেবলমান্্র সীমিত বিষয় নহে, বদ্ধ বিষয়ী সমূহ ইহার অস্তরভূতি। 
তাত্বিক পরিপ্রেক্ষিতে ইহা হইল স্বরং-চেতন ইচ্ছা, উক্ত ইচ্ছ। জ্ঞান ও ক্রিয়ার স্বাতন্ত্র্য 
ভিন্ন আর কিছুই নহে। ইহান্র পারিভাষিক নাষ ফহেশ্বর | 

কাশ্মীর শৈব-বাদ বুঝিতে হইলে প্রকৃতির মধ্যে শৃঙ্খলা, সৌন্দর্খ ও পরিকল্পনা 
হইতে অনুমেয় প্রথম কারণ ব্ধপ ঈশ্বরের সাধারণতঃ যে ধারণ] পাওয়া যায় সেই 
ঈশ্বর ও মহেশখ্খরের ধারণা যে এক নছে এই সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকিতে হইবে । 
কারণ ইহার মতে বিশ্বমন ইচ্ছা-বূপে মহেশ্বর প্রকৃতির ধারার অস্তভূতি। জগৎ কোন 
পত্রনিষ্পন্ন ফল নহে, বাহিরের শিল্পীরূপ ঈশ্বরের উপর যাহা আরোপিত হইতে পারে, 
প্রকৃতির অগ্রগতি মহেশ্বরেরই২১ ক্রিয়! | 

ইচ্ছান্বতন্ত্রা-বাদ :_-তাত্বিক পরিপ্রেক্ষিতে কাশ্মীর টশৈববাদে বিশ্ব-মন হইল সাবিক দ্বতন্ত 
ইচ্ছা২২ । স্বতন্ত্র ইচ্ছ বিমর্শের সহিত এক, পার্থক্য কেবল মান্র এই অংশে যে বিমর্শের 
ক্ষেত্রে বিষয় বিষয়ীর মধ্যে কোন বৈপরীত্য নাই, কিন্তু স্বতন্ত্র ইচ্ছা ক্ষেত্রে এই 
বৈপরীত্য আছে। উক্ত ইচ্ছার বিষয় হুইল সার্ধিক “ইদ্ং', ইহা সকল প্রকার 
বিকল্পমুক্ত, ইহাকে কোন বড় শিল্পীর উৎকৃষ্ট শিল্প স্প্টির পূর্বে তাহার মানস পটে 
উদ্দিত বাসনার সহিত তুলনা করা যাইতে পারে। শাস্ত সমুদ্রে তরঙ্গ হুষ্টির পূর্বে 
ইহা যেন অব্যক্ত আবেগ২৬। ইহা দৈহিক যন্ত্রের ব্যক্ত আলোড়নের পুর্বে অব্যক্ত 
গুঞ্ঠন ধ্বনির ন্যায় । ইহা বিশ্ব-মনের সেই অংশ বাহার ক্রিয়ার ফলে যাহা বিশ্বমনের 
সহিত একাত্ম তাহ বিষয়রূপে প্রকাশিত হয় । ইহা কোন অন্ধ আবেগ নহে, ইহা? 
এক সচেতন শক্তি যাহা প্রকৃতির অন্ধ শক্তির মধ্য দিয়! প্রকটিত হয়। ইহা মুক্ত, 
কারণ অস্তিত্বের জন্য ইহা! অপর কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নহে । বস্ততঃ এমন কোন 
অস্তিত্বশীল বস্ত নাই যাহা অস্তিত্বের জন্ত ইহার উপর নির্ভরশীলনহে । ইহা! অপরিণামী, 
যদিও মনে হয় ইহার যেন পরিবর্তন হয়। ইহা এক মহাসত্তা, কারণ ইহা! যাহ! 
হইতে ইচ্ছা করে, ইচ্ছা! করিলে তাহাই হইতে পারে € ভবনে ন্বতন্ত্রতা )। ইহ! দেশিক 
ও কালিক সীমার উধের্ধে, কারণ দেশ ও কাল ইহারই প্রকাশ । ইহ! কার্ধ-কারণ সম্বন্ধের 
অতীত, কারণ কার্ধ-কারণ তত্ব ব্যবহারিক, ইহা পারমাথিক নহে। যদ্দি বিশ্বমনের 
উপর কোন ব্যক্তিত্ব আরোপ করি, তাহা হইলে দেখা ষাইবে ষে উক্ত ন্বতস্ত্র ইচ্ছাই 
তাহার হৃদয় (হৃদয়ং পরমেতিনঃ )।৭5 

স্থতরাং ন্বাতত্ত্র-বাদ মতে বিশ্ব স্বতন্ত্র ইচ্ছা-ন্ূপ অন্ত্তর হুইতে, অন্ুত্তরের মধ্যে, 
অন্ুত্তর কর্তৃক সব কিছুই প্রকাশিত হয় বা প্রকাশ পায় । এক ব1 বহু বা একের মধ্যে 


৪৮১ 


৬৯ 


- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দশনের ইতিহাদ 


ধহ, বিষয়ী এবং বিষয়ের. . মধ্যে সঘন্ধ  বাহাই হউক না কেন; ) লযই চরম নৎক্ধপ উক্ত 
ইচ্ছার প্রকাশ । 

. শিব ইচ্ছা-স্বাতন্ত্য-বাদের সহিত শোপেন হাওয়ারের টানা, বাদের মিল 
দেখিতে পাওয়া যায়। তাহা এইবপ (১) ব্যবহারিক স্তরে যাহ! জানা যায় তাহা 
'আভাল যাত্র** ৷ কারণ কাণ্টের স্যায় ইহা স্বীকার করে যে ব্যবহারিক স্তরে বিষয়ী ষে 
'বিষয় জানে, তাহ] শ্বরূশে- বিষয় নহে, কালাদি অবচ্ছেদের মধ্য-দিয়! প্রকাশিত আভাস 
মাত্র। (২) হ্বম্বং-সৎ বন্তই ইচ্ছা স্বেচ্ছাকৃত কর্ম ও ভাবাবেগের মধ্যে আমর! 
ইাহ্‌কে অন্থভব করি। কারণ উক্ত মতে ইহা স্বীরূত হইয়াছে ষে গভীর ভাবাবেগের২৭ 
মধ্যে মনের সকল প্রকার বাহিরের আকর্ষণ তিরোহিত হয় তাহাতেই ইচ্ছ! স্বাতন্ত্র্য 
সাক্ষাৎ পরে অনুভূত হয়। (৩) দৈহিক কর্ম ও স্থুলদেহ ইচ্ছার সাক্ষাৎ স্থুল প্রকাশ** | 
কারণ এই মতে কর্ম বহিঃ প্রকাশিত ইচ্ছা» ভিন্ন আর কিছুই নহে, এবং এই 
মতে ইহাও শ্বীকৃত যে যোগী ইচ্ছা করিলে জড় পদার্থ ভিন্নও জড় বস্ত প্রকাশ 
করিতে পারেন। (৪) স্থতরাং ইচ্ছাই সব কিছুর অস্তঃপ্রকৃতিৎ* প্রতি আভাসের 
সার বস্ত। (৫) তাত্বিক, জ্ঞান সত্যের প্রকাশ ভিন্ন আর কিছুই নহে। চিন্তামূলক 
বিমূর্ত জ্ঞানের স্তরে “জগৎ আমারই কল্পনা বা ধারণা এই সত্যের আবিষ্ষারই 
তাত্বিক জ্ঞান। কারণ শৈব মতবাদ অস্থসারে এই জীবনেই জীবের মুক্তি (জীবন 
মুক্তি) “র্ব বিশ্ব আমারই প্রকাশ**২ “সর্বো মায়ং বিভবঃ, এই উক্তির উপলন্ধি 
ভিন্ন আর কিছু নহে। 

কিন্ত ইহা শোপেন হাওয়ারের ইচ্ছা-স্বাতস্থ্-বাদ হইতে এই অংশে পৃথক যে তাহার 
মতে ইচ্ছা অচেতন ।৩৩ তিনি বুদ্ধি হইতে ইচ্ছাকে পৃথক করিয়াছেন, তাহার মতে বুদ্ধি 
কেবল মাত্র মস্তিষ্কের ক্রিয়া এবং ষে প্রকৃতি বুদ্ধি নিরপেক্ষ ভাবে সব্রিয় হইতে পারে 
তাহার সহিত অভিন্ন । শোপেন হাওয়ার এইরূপ অবাস্তবতার দিকে অগ্রসর হইয়াছিলেন 
তাহার কারণ তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞানের প্রাকৃলন্ধ প্রতিজ্ঞা সকলকে এমন কোন কিছুর 
সহিত এক করিয়া দেখিয়াছিলেন যে ব্যবহারিক স্তরে যাহার বিষয়ে তাহার সাক্ষাৎ 
প্রতীতি হয়, ইহার আরও কারণ এই যে সম্পূর্ণ বিষ়তা বিবজিত স্তব্ধ বিষয়ীর চেতন 
অনভ্ভব, কাণ্টের এই মতবাদ তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন ; অধিকন্ত তাহার মতবাদ 
. হেগেলের বিরুদ্ধে গড়িয়৷ উঠিয়াছিল।৩* 

কাশ্মীর শৈববাদ ফোগীদের হাতে গড়িয়া উঠিয়াছিল । তাহাদের মতে বিষয়-বিবঞ্জিত 
আত্মোপলব্ধি সর্বাপেক্ষা সন্দেহাতীত অভিজ্ঞতা, স্থৃতরাং ইচ্ছাকে বুদ্ধি হইতে পৃথক 
করিবার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলিয়! তাহারা মনে করেন নাই। কাশ্মীর শৈববাদে 


পক এ 


৪৮৭ 


শৈব ও শাঁ-পপ্রদার £ (কাশ্মীর পৈব্বানের গরধণতা সমুহ ) | 


ইচ্ছা মনেরই একটি ক্রিয়া বলিয়া শ্বীকৃত-হইয়াছে। িরিহরাগগিযরান 
ব্যবহারিক শ্যরের ইচ্ছার মিল আহে 

আভাস-বাদ £__-তাত্তবিক দৃষ্িভঙ্গীর দিক হইতে কাশ্মীর শৈব মতবাদ যেমন স্বাতস্্য- 
বাদ বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকে, তদরূপ অভিব্যক্ত- বছর দ্বিক দিয়া ইহাকে 
আভাস-বাদ বলা যায়। অন্ুত্বর তত্বে সকল বৈচিত্র্যই সম্পূর্ণ এক্যবদ্ধ,ঠিক যেমন 
পরিণত বয়স্ক ময়ূরের দেহে যে সকল বিচিত্র বর্ণ দেখা যায়, ময়ূরের অণ্ডের মধ্যে মেই 
সকল্প বর্ণ ই অভিন্ন অবস্থায় বিদ্যমান থাকে । এই উপমা জিন বলিয়া 
অভিহিত হইয়া থাকে। 

অন্ুত্বর কর্তৃক বা অহ্ত্বর হইতে যাহা৷ কিছু অভিব্যক্ত বা নির্গত হয়, তাহাই আভাস 
বা অভিব্যক্তি বলিয়া! কথিত হয়; ইহার সহজ কারণ এই যে, ধাহাই অভিব্যক্ত 
হয় তাহাই শীমাবদ্ধ স্কতরাং যাহাই প্রকাশ পায় তাহাই আভাস; যাহা বহিরিক্্রিয় 
বা আস্তর মনের নাগালের মধ্যে পাওয়া যায়; স্ুযুপ্তি ও গভীর নিদ্রায় ইন্দ্রিয় ও মন 
যখন নিক্ক্িপ্ন থাকে সেই সময়ে যে সকল বিষয়ে আমরা সচেতন থাকি তাহাই আভাস 
অর্থাৎ এক কথায় বলিতে গেলে যে কোন অস্তিত্বশীল বস্ত, বিষয়ীই হুউক ব1 বিষয়ই 
হউক, জ্ঞানের প্রকরণ বা স্বক্ং জ্ঞান যাহাই হউক না কেন যাহার সম্পর্কে কোন 
প্রকার ভাষা প্রয়োগ করা সম্ভব তাহাই আভাস । 

আভাস-বাদীর মতে যাহাই প্রকাশ পায় তাহাই আভাস বা সীমিত প্রকাশের 
ভিন্ন ভিন্ন রূপ । বিষয় যেমন আকার বিশিষ্ট বন্ত্-সমষ্টি, বিষয়ীও ঠিক সেইক্প উভয়ই 
বনহুর মধ্যে এঁক্য । যাহা কিছু পৃথক পৃথক ভাবে জ্ঞাত হয় তাহাদের তদচুসারেই 
কোন আকারের নাম হইয়া থাকে। এক্যের অনুভবের পশ্চাতে অবস্থিত থাকে 
বহর প্রত্যক্ষ এবং একটি সাধারণ ভিত্তি থাকার জন্ত এই অনুভব হইয়া খাকে। 
ষে বিশেষ নির্মায়ক অংশ প্রত্যক্ষকারীর দৃষ্টিতে সর্বাপেক্ষা অধিক টিন বলিয়া 
প্রতিভাত হয়। 

স্ৃতরাৎ আভাস-বাদীর মতে সাধারণ জ্ঞেয়-বিষয় একটি সমগ্র বস্ত টা 
জীবের সংস্কার, দৃষ্টিভঙ্গী ও জানিবার ক্ষমতা অন্ুসান্সে ইহার নির্মায়কগুলি ভিন্ন 
বলিয়! প্রতিভাত হয় । উদাহরণন্বরূপ বলা যায় যে আমরা যদি ফোন ঘটের অভিজ্ঞতা 
বিশ্লেষণ করি তাহা হইলে দেখা যাইবে ষে সাধারণভাবে যদিও ইহা! একটি লমগ্র বস্ত 
বলিয়া মনে হয়, কিস্তু ফতগুলি শব্দবিভিন্ন বিশ্লেষণ-কারী প্রত্যক্ষ-দ্রষ্টা কর্তৃক বিভিন্ন 
দৃষ্টিকোণ হইতে উক্ত বস্ত সম্পর্কে ব্যবহৃত হইতে পারে ততগুলি আভাসই ইহাতে 
বর্তমান । একজন সাধারণ প্রত্যক্ষকারীর নিকটে উক্ত বস্তু গোলকত্ব, জড়ত, বনুত্ব, 


৪৮৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


কৃষ্ধত্ব ও স্থাযিত্বরণ কতকপ্তলি আভাসের সমস্টি। কিন্তু একজন বৈজ্ঞানিকের নিকটে 
সেই একই ঘট কতকগুলি পরমাণু ও ভড়িৎ কণার সমষ্টি । 

আভাস-বাদীর মতে সাথাক্নণ গ্রত্যক্ষের বিষয় কতকগুলি আভাসের সমষ্টি 
বারূপ। ইহাক্স প্রত্যেকটি আভাস জানিবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মানসিক ক্রিয়ার প্রয়োজন 
হয়। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জ্ঞাত শ্বব্ধপতঃ প্রতিটি নির্মায়কই এক একটি আভাস, এই 
প্রতিটি আভাসই এক এফটি সামান্য এবং জ্ঞানের দূরবর্তী সীমার নির্দেশ দিয়া 
থাকে । 

বিষয়ীও একই ধরণের একটি । ইহা কতকগুলি অবচ্ছেদ বা আকার বিশিষ্ট বন্ত জ্ঞান 
ও ক্রিয়ার আকার, যেমন কালাদ্দি, উদ্দেশ্পরায়ণত। সংস্কার, যৌক্তিক পটভূমি, দেহ, 
প্রাণবায়ু, ইন্দ্রিয়াদি ও বুদ্ধি প্রভৃতি ঘ্বার| গঠিত। কিন্তু ইহাদের মধ্যে কোনটিই 
বিষয়ীর স্থায়ী বৈশিষ্ট্য নহে। প্রতি ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা-ক্ষেত্রে ইহার নির্মায়ক 

ংশগুলি ভিন্ন । আশণবমল অভিহিত মলযুক্ত আস্তর সত্তা, স্বচেতনত এই পরিবর্তনশীল 

বৈশিষ্ট্যের মধ্যে স্থায়ী বৈশিষ্ট্য | 

আভাসবারদীর মতে জ্ঞানক্রিয়। ছিবিধ-_€১) প্রাথমিক, (২) মাধ্যমিক। প্রাথমিক 
জ্ঞানক্রিয়া বিভিন্ন আভাসের প্রতিবিষ্ব গ্রহণ ও মানসিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে লক্ষিত হয়, 
ইহাতে আত্তর শব্দের উদয় হ্য়। স্থতরাং প্রাথমিক জ্ঞানের সাধারণ জ্ঞেয় বিষয় একটি 
সামান্য, বৈয়াকরণেরা যাহাকে কোন শব্ধ সমষ্টির প্রকাশের অর্থ বলিয়া অভিহিত 
করিয়াছেন তাহার সহিত বহুলাংশে এক | হ্বরূপতঃ ইহা দেশ-কালিক বদ্ধতা মুক্ত | 
পরবতী জ্ঞানক্রিয়! ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জ্ঞাত বিচ্ছিন্ন আভাস সকলকে সংবদ্ধ করেঃ কোন 
একটি বূপ বা অবয়ব স্ুষ্টির জন্য ইহা দায়ী । 

আভাসবাদের দৃষ্টিতে সুন্দরের অভিজ্ঞতা £_আভাস-বাদীর মতে আভাস একটি সামান্তের 
ধারণা । প্রমাতার কোন বিশেষ উদ্দেশ্টমূলক দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য যখন এই সামান্ত 
দেশ ও কালের সংস্পর্শে আইসে, ইহা তখন বিশেষ হিসাবে প্রকাশ পায়। স্থতরাং 
প্রমাতার পশ্চাতে যর্দি কোন উদ্দেশ্য না থাকে, তাহা হইলে তাহার প্রমাণ ক্রিয়া 
প্রাথমিক স্তরেই শেষ হইয়া যায় এবং দেশ ও কালের অবচ্ছেদ্দের সহিত তাহার 
প্রমেয় বিষয়কে যুক্ত করিতে হয় না। স্থৃতরাঁং সৌন্দ্য-রসিকের চেতনায় যে 
বিষয় উপস্থিত থাকে তাহা একটি সামান্য কারণ সে নিষ্ষামভাবে ইহাকে গ্রহণ 
করে। 

আভাস-বাদী ইহাও মনে করেন যে বিষয়ীর কোন নির্দিষ্ট নির্মায়ক বলিয়া কিছু নাই 
প্রতি ভিন্ন ভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ইহার নির্মায়ক সকল. বিভিন্ন। স্থতবাং 


৪৮৪ 


শৈব ও শা সন্্রদায় £ (কাশ্ীর-শৈববাদের প্রবর্পত। মমূহ ) 


সৌনার্ঘ-রসিক ব্যক্তিসত| রপিকস্ব, সহ্বদয়্ব, প্রতিভা, ভাবনা ও তন্ময়ী-তষন-যোগ্যতা 
প্রভৃতি নির্মায়ক বারা গঠিত । 

রস ও শিল্পাঙগরাগ নিয়ন্ত্রিত সৌনর্ধাহভূতির মনোভাব বিষয়ীর একটি সৃল্যবান 
উপাদান। ইহা ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গী হইতে এই অংশে পৃথক যে এই ক্ষেত্রে কার্য করিবার 
বাসনা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে । হুম্দর দৃশ্ত ও শব্দের কল্পলোকে কিছুকাল বাস করিবার 
আকাম্ম! এই ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকে | রসিক ব্যক্তি যখন সুন্দর বিষয়ের ভাবনা করেন 
তখন তাহার ফলে বিষয়ীর আত্মবিস্থতি উপস্থিত হয়ু। ইহা দৃশ্যমান ঘটনার সহিত মূল 
অংশের তন্ময়তার হষ্টি করে। 

যেমন কোন নাটকীয় দৃশ্ত যখন কোন সৌন্দর্যের বিষয় হয়, তখন প্রষ্টার মনে 
ব্যক্তিত্বের স্থান পরিস্থিতির কেন্দ্রস্থল কর্তৃক অধিরুত হয় এবং এই ভাবেই তিনি উহার 
সহিত একাত্ম হইয়! পড়েন ।্থৃতরাং ঠিক নাটকের নায়কের গ্যায়ই রপিক-ব্যক্তি নাটকীয় 
পরিস্থিতিতে অভিভূত হইয়! থাকেন । রস, যৌক্তিক পটভূমি ও প্রতিভার সাহায্যে 
পরে তিনি দত্ত দৃষ্ঠাবপীকে সংবদ্ধ ও রূপায়িত করেন ও পরিশেষে অবচেতন স্তর হইতে 
প্রাপ্ত যঘোপযোগী সংস্কার সকলকে সমদ্থিত করিয়া কল্পলোকের হ্ি করিয়া থাকেন। 
এই স্তরে সহৃদয়তার খেলা আরম্ত হয়, চিত্তে যথাযোগ্য সাড়া জাগে এবং আবেগময় 
অবস্থার স্থষি হয়। 

এই আবেগময় ভাবস্তর হইতে সৌন্দ্যরসিক ধীরে ধীরে সাধারণী ভাব স্তরে যাইয়] 
পৌছান। রাজা ছুত্তন্ত অনুসৃত পলাম্মমান মুগের যে বর্ণন] কালিদাস ছবির ন্যায় অঙ্কন 
করিয়াছেন (গ্রীবা-ভঙ্গাভিরামম ), অভিনব ৭২* সেই দৃশ্ঠকেই সাধারণী ভাবস্তরের 
সৌন্দ্ঘ তত্বের সঠিক স্বরূপ ও পদ্ধতি দেখাইবার জন্য বাছিয়! লইয়াছেন। তাহ! এইন্প £__ 

সৌনার্ষের দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রতিভাত পলায়মান ভীত হরিণ দেশ ও কাল্সিক অবচ্ছেদ মুক্ত, 
সুতরাং এই দৃশ্য নৈব্যক্তিক | সেই কারণেই এই ক্ষেত্রে “ভীত' এইরূপ প্রতিজ্ঞা বরা 
হইতেছে বলা যাইতে পারে । এই “ভীত, এর পশ্চাতে ভীতির হেতুর নির্দেশ আছে। 
কিন্ত পূর্বোক্ত দৃশ্যে ইহার সহিত কোন প্রকার বিষয়তার সংম্পর্শ না থাকায় 'ভীতং 
ভয়ম এ রূপান্তরিত হইয়াছে । এই নিবিশেষক “ভয়ং" সাধারণী ভাবম্তরের বিষয়ের 
দিক। এই নৈব্যক্তিক চেতনার ক্ষেত্রে দর্শকের হৃদয় বিদীর্ঘ-প্রায় বলিয়া! অনুভূত হয় এবং 
তাহার দৃষ্টির সম্মুখে উক্ত দৃষ্ঠ যেন নৃত্যপরা বলিয়া প্রতিভাত হয়। 

স্থতরাং আভাস-বাদী অভিনব গুধু সামান্ীকরণের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করিবার জন্ত 
ভট্টনায়ক পরিকল্পিত ঘবৈতশক্তি অস্বীকার করিয়াছেন। তিনি আভাসবাদের ভাষায় 
সাধারণী ভাবস্তর ব্যাখ্য। করিয়াছেন । 


৪৮৫ 


শ্রাচা খ পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


হেগেলের মতবাদের সুহিত উক্ত সাধাব্নণী ভাবস্তরের তুলন1 করিলে দেখা ধায় ষে 
হেগেলের মতে 'ভয়ং'এর সাধারণী ভাবত দর্শকের মানপিক ভীতি সম্পষিত বিষয়ের 
ঘহিত বিয়লোগাস্ত ঘটনার ভাবাংশ সম্পকিত। “ভীত, দ্ধপ বিশেষ প্রতিজ্ঞা যতখানি 
ইহার নিজন্ব বৈশিষ্ট্য বিনিমূ্ত হয় “ভয়ং'এর সাধারণী ভাব ততখানি স্তব্ধত! লাভ করে। 
স্থতরাং অন্যায়ের শাস্তিপ্রদান কূপ বিশেষ ক্ষেন্ত্র প্রকাশিত কোন বিয়োগাস্ত ঘটনা স্বয়ং 
পরিশুদ্ধ হয় ফলে ন্যায়ের 'অপ্রতিহত ক্ষমতা, দৈব-বিচারের নিরপেক্ষতা ও নেতির 
নেতিকে৬” প্রকাশ করে। কিন্তু অভিনব গুপ্ডঠের মতে কোন বিশেষ ভীতির শোধন 
ং ভয়েরই নির্দেশ দিয়া থাকে | কলা-কৌশলের মধ্য দিয়] ইহা যতটা বিষয়ত1 সম্পর্ক 
বিনিমুক্ত হয় ততট! ইহা পরিশ্তদ্ধত। লাভ করে । 
অভিনব গুপ্ত আরও দেখাইয়াছেন যে, সৌন্দর্য অভিজ্ঞতার চরম স্তর আনন্দ নহে, 
ভষ্টনায়ক বেদাস্তের ধার। অন্থসরণ করিয়া যে কথা বলিয়াছেন, কারণ আনন্দ স্তরে 
সত্বগুণের প্রাধান্য ভিন্ন আর কিছুই থাকে না। তিনি উক্ত চরম স্তরকে “বিমর্শ”, “স্পন্দন”, 
স্ফুরতাঃ বা চমৎকার প্রভৃতির সহিত এক বলিয়াছেন । 


গ্রস্থবিবরণী 


অভিনবগুপ্ত £ অভিনব ভারতী 

পাণ্ডে কে. সি. £ অভিনবগুপ্ত £ আযান হিষ্টরিক্যাল আযাণ্ড ফিলজফিক্যাল স্টাডি 
ভাহ্করকণ 2 ভান্করী 

অভিনবগুপ্ত £ ঈশ্বর প্রত্যভিজ্ঞ। বিমশিনী 

চযাটাজী, জে. দি.ঃ কাশ্মীর শৈবইজম্‌ 

ক্ষেমরাজ £ প্রত্যভিজ্ঞ হৃদয় 

হেগেল £ ফিলজফি অব ফাইন আর্ট 

হেগেলঃ ফিলজফি অব রাইট 

অগ্িনবগ্ডপ্ত : পরিত্রিংশিক। বিবরণ 

কহলণ £ রাজতরজি ণী 

সৌমানদ্দ £ শিবদৃষ্টি 

কল্পট ২ স্পন্দকারিক। 

বরদরাজ 2 শিব হুত্রবাতিক 

ভর্তুহরি  বাক্যপদীয়ম্‌ 

শোপেন হাওয়ার £ ওয়ার্ড, আজ উইল্‌ আও আইভিয়|। 


৪৮৩৬ 


৯ | 
হু) 
৩ । 
৪ 1 
 ॥ 
৬ 
প্‌ 
৮ । 
৯ 
১০ । 
১১। 
১২ ॥ 
১৩। 
১৪ | 
১৫ | 
১৬। 
১৭। 
১৮ ॥ 
৯৬ 0 
২ 
১ । 
৩ 
২৩। 
২৪ । 
২৫ । 
২৬। 
| 
হক | 
চি] 
৩০ ॥ 
খ১১ [| 


খু 


*শব দিদ্ধান্ত মতবাদ শৈব ও শাঞ্ লন্প্রদার ১ € জষ্টব্য) 


দ্রষ্টব্য 


অআক্িনবন্ডপ্ত ২ আযান হিউরিক্যাল আয ফিলজফিক্যাল স্টাভি পৃ ৭ ৭-৮০ 
শী পৃ ১৭০ 
কাশ্মীর শৈবইজমূ পৃই ৪১ 
বাজতরঙ্গিণী ১, ১৭ 
শিবনুতব্রেবতিক, ১ 
বাক্য পদীমম্, 9০07200003১ »৭ 
ভান্করী ২৫-৬ 
অভ্িনবগুপ্ত হ পৃঃ ২২-২৩ 
প্রত্যন্ভিতত হূদয় ১৬-১৮ 
ভাগ্করী ১৪ 
লক্সিক পৃঃ ১৫৯-৬১ 
ভাঙ্ষরী ২২২ 
ঈশ্বর প্রত্যভিজ্ঞ। বিমশ্িনী 
পরজ্িংশিক। বিবরণ 
প্রুত্যভিজ্ঞা-হদল 
অভ্িনবগুপ্ত পৃঃ ১৯৪-৬ 
ভাক্ষরী ২৪ ১-৪ 
ভাম্করী ১০ 
ভাশ্করী ৩০২-৪ 
ভান্করী ২২৩৬-৯ 
ভাশ্কপী ৩৩২ 
শিবদৃষ্টি ১৯ 
শিবদৃষ্টি ১৫-১৬ 
ভারী ২৫৫ 
ওয়ার্ড আজ উইল আশ আইডিয়া ১ম এণ্ড পৃঃ -৯ 
এ হয় থণ্ড পৃঃ ১২৯ 
শিবদৃষ্টি ২য় ও 9]রু ৩৯ 
ওক [হ্৮ আরজ উইল আ্যাগ্ড আইভিযা ১ম খণ্ড পৃহ ১৩০ 
ঈশ্বর প্রত্যতভিজ্ঞ বিমশিনী ২য় খণ্ড ১৬৮৩ 
ওয়াল্ড আজ উইল আ্যাণ্ড আইডিয়া! ২য় এও পৃঃ ৪*৭ 
এ ১মখ্গ্ত পু 
ঈশ্বর প্রত্যতিজ্ঞ বিমশিনী হর খণ্ড ২৬৩ 


৪৮৭ 


, স্পাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইন্তিহাস 
ক 8 ওক্সল্ডর আজ উইল আব আইডিয়া ওন্স খণ্ড পুত ৪১১ 


৪ 1 এ ১ম খণ্ড পুত ৬ 
তপ্ত ॥ নী লস খণ্ড পুত ৩১ 
ও | বআভিনবভ্ারতী ১ম খণ্ড পৃঃ ২৮০ 
৩৭ ॥ ফিলিজফি অব ফাইন আট ৪র্ এও পৃ ২৯ হ 
খ৮৮ রী গৃহ »০-৬ 


5৪৮৮৮ 


শৈৰ ও শাক্ত-স্প্রদায়সমূহ 
গ। ন্বীল্প-শৈন্দর্শন 


মহেঞ্জোদাড়ে! ও হরগ্পায় সম্প্রতি যে সকল বস্ত আবিষ্কৃত হইয়াছে তাহাতে প্রমার্ণিত 
হইয়াছে যে, সিন্ধুনদের উপত্যকায় যে জাতি বাস করিত তাহাদের সভ্যতা অতি উচ্চ- 
স্তরের ছিল। সেইগুলি হইতে বুঝা যায় যে, সিন্ধু উপত্যকার এই লোকেরা খুঃ পৃঃ 
৩০০* বৎসর পর্যন্ত বিস্তৃত ০/১91০0116০ যুগে বাস করিত এবং তাহারা ষে অতত্যুন্নত 
সংস্কৃতির অধিকারী ছিল তাহাতে ইন্দো-আর্য সভ্যতার প্রভাবের লেশমাত্র দেখা যায় 
না। স্তার জন মার্শাল তাহার “মহেঞ্জোদাড়ো ও সিদ্ধুসভাযতা” নামক গ্রন্থে সিন্ধু- 
উপত্যকার প্রাচীন অধিবাসীদের ধর্মের বিবরণ দিতে গিয়া একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় ব্যবহার 
করিয়াছেন। তাহাতে তিনি এই সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে উহার] মাতৃ-দেবতা! শক্তি এবং 
একটি পুরুষ দেবতা শিবের পুজা করিত। এই পুরুষ দেবতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হইতেছে 
এই যে, তাহার তিনটি চক্ষু আছে এবং বিভিন্ন মোহরে, মৃতিতে, ক্ষোদিত লিপিতে এবং 
বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত অন্ান্ প্রতীকে তাহাকে মহাযোগী বলিয়া চিত্রিত করা 
হইয়াছে । এইজন্ত মার্শাল তাহাকে শিবের সহিত অভিন্ন বলিয়া মনে করেন। 
তিনি বলেন যে ইহা ব্যতীত তাহার! লিঙ্গ, হুর্ধ, বিভিন্ন প্রাণী, বৃদ্ধ ইত্যাদি 
পৃজা করিত। স্যার জন মার্শাল বলেন__“সিন্কু উপত্যকার অধিবাসীদের ধর্মে 
এমন অনেক কিছু আছে যাহার সমতুল্য ব্যাপার অন্ত দেশেও দেখা যায়। 
প্রত্যেক প্রাগৈতিহাসিক ধর্ম এবং বহু এঁতিহাপিক ধর্ম সম্দ্ধেও ইহাই সত্য ।. 
কিন্তু সমগ্রভাবে লইলে তাহার্দের ধর্মের প্রকৃতি এত বিশিষ্টভাবে ভারতীয় যে 
আধুনিক জীবন্ত হিন্দুধর্ষের, অস্তত, হিন্দুধর্মের সেই অংশের যাহা সর্বপ্রাণবাদ 
এবং শিব এবং মাতৃদেবতার উপাসনা__সাধারণ পুজা পদ্ধতির এই ছুইটি 
প্রভাবশালী শক্তির সহিত সংশ্লিষ্ট, তাহার সহিত উহার পার্থক্য নির্ণয় করা 
কঠিন” 

সিন্ধু উপত্যকার অধিবাসীদের ধর্ম সধ্বন্ধে স্যার জন মার্শালের এই সকল দিদ্ধান্তকে 
খুব প্রামাণিক বণিয়া মনে কর] হয় না। মার্লাজের নীলকঠ শাস্ত্রী বলেনং “মাতৃদেবতা, 
লিঙ্গপৃজা, বৃক্ষ ও প্রাণী পূজা সঙ্বন্ধে মার্শালের ব্যাখ্যাসমূহ যুক্তিযুক্ত বলিয়া মনে 
হইলেও যে পুরুষ দেবতাকে তিনি এঁতিহাসিক শিবের আদিম রূপ বলিয়া! মনে করেন 


৪৯৮৯ 


ঙ২ 


১ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


তাহার সন্বদ্ধে যতবাদসমূহ ঈনেকটা কষ্টকল্পিত এবং এই অধ্যায়ের অন্যান্থ অংশে যাহ! 
বল! হইয়াছে নিশ্চয়ই সেগুলির নায় আমাদের বিশ্বাস উৎপাদন করে না। একটিমান্জ 
অম্পষ্টভাবে ক্ষোদিত মোহরের উপর নির্ভর করিয়া যে সুদূর পুরাতন যুগে এ মোহ্রটি 
নিমিত হইয়াছিল সেই যুখে শিবের সমস্ত বিশিষ্ট বিশেষণ যথা মহেশ, মহাযোগী, পশুপতি 
এবং দক্ষিণা মুততি কল্পিত হইয়াছিল ইহা বিশ্বাস কর? কঠিন”, স্থতরাং তাহার 
শিদ্ধান্তগুলি ক্ষোদ্দিত লিপিগুলির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ছারা সমধিত হওয়া 
আবশ্বক। ফাদার হেরাস ঠিক তাহাই করিয়াছেন। তিনি ক্ষোর্দিত লিপিগুলির 
যে ভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছেন তাহাতে নিঃসন্দেহে ইহাই প্রমাণিত হয় যে 
সিন্ধু উপত্যকার অধিবাসীদের শিব এবং শক্তি এই ছুইটি প্রধান উপাস্য দেবতা 
ছিল) 

ফাদার হেরাস তাহার দীর্ঘ ও পাণ্তিত্যপূর্ণ প্রবন্ধেৎ অতীব সাফল্যের সহিত সিন্ধু- 
উপত্যকার চিত্রাকার ধ্বনিব্যগক জটিল ক্ষোদিত লিপি-জালের মর্সোদঘাটন করিয়াছেন । 
তিনি সিশ্ধু-উপত্যকার সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা কাহার এ বিষয়ে সমীচীন প্রশ্ন উথাপন 
করিয়াছেন। যদিও মার্শাল এবং তাহার সহকষিগণ কতকগুলি যুক্তি ছার] চূড়াস্তভাবে 
প্রমাণ করিয়াছেন যে মহেঞ্জোদাড়োর অধিবাসিগণ নিশ্চয়ই আর্জাতির পূর্ববর্তী তাহা 
হইলেও তাহার! তাহাদের জাতি সম্বন্ধে নির্দিই্উভাবে কিছু বলেন নাই। ফাদার হেরাস 
এঁ সকল চিত্রাকার ধ্বনিব্যঞ্রক ক্ষোদিত লিপিগুলির পাঠোছর করিয় প্রমাণ করিয়াছেন 
যে মহেঞোদাড়োর অধিবালিগণ নিশ্চয়ই জাতিতে ভ্রাবিড়ীয়। ইহা আম্চর্ষের বিষয় 
নহে যেকোন কোন পণ্ডিত বলিয়াছেন যে দ্রাবিড়রা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসী 
ছিল এবং আদিম মানব-জীবনের পর্বযুগে এবং ক্রম বিকাশের সকল স্তরে ধীরে ধীত্ে 
তাহাদের নিজ সভ্যতার বিকাশসাধন করিয়াছিল । গোবিন্দাচার্ স্বামী বলেন, “এইরূপ 
লিদ্ধান্ত করিলে ভুল করা হইবে নাযে বন্তায় যাহারা রক্ষা পাইয়াছিল দক্ষিণ ভারত 
তাহাদিগকে আশ্রয় দিয়াছিল। লেমুরিয়ায় যে সংস্কৃতির উদ্ভব হইয়াছিল তাহা 
লেমুরিয়া জলমগ্ন হইবার পর দক্ষিণ ভারতে স্থানাস্তরিত হইয়াছিল এবং সম্ভবতঃ 
দক্ষিণ ভারতই বন্যার পরবর্তা মন্ুয্যজাতির প্রথম আশ্রয় হইয়াছিল। লোকসংখ্যা 
ঘনত্ব অনুযায়ী ভ্রাবিড়দের ভারকেন্দ্র মহীশূরের নিকটে কোন স্থানে আছে, স্থতরাং 
ইহাই সিদ্ধান্ক করিতে হইবে যে দক্ষিণ ভারতই এই সকল লোকের আদি নিবাস ছিল 
এবং প্র স্থান হইতেই তাহার] উত্তর ভারতে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল ।”* ডাঃ চট্টোপাধ্যায় 
বলেন “মানব-সভ্যত। সুমের ঘেশ হইতে চারিদিকে ছড়াইয়। পড়িয়াছিল হল” এর এই 
মতবাদ যদি সত্য হয় তাহ হইলে ইহা! প্রমাণিত হইবে যে সভ্যত1 ভারতবর্ষেই প্রথমে 


৪৬০ 


৭০৪ 


শৈব ও শাক্ত-নক্গ্রদার সমুহ £ ( বীর-শৈবদর্শন ) 


উদ্ভূত হইয়াছিল এবং সম্ভবতঃ আদিম দ্রাবিড় জাতির মধ্যেই ইহা! প্রথম দেখা 
দিয়াছিল। তাহার পর ইহা মেসোপটেিয়ার় গিয়াছিল, এবং ব্যাবিলন ও প্রাটীন 
সংস্কৃতি যাহ! বর্তমান সভ্যতার ভিত্তি তাহার জন্ম দিয়াছিল 1”* 

মহেঞ্জোধাড়োর ক্ষোদ্দিত লিপিগুলির পাঠোন্ধার করিলে আমরা আদিম ভারতী 
অথবা ভ্রাবিড়ীয় ধর্ম ও দর্শন সম্বন্ধে কিছু জ্ঞানলাভ করিতে পারি । ঈশ্বরের নাম 
“ইকুবন” অর্থাৎ “এক সথস্ত*” হইতেই বুঝা যায় ষে ঈশ্বরকে ্বয়ংসিদ্ধ বলিয়াই মনে কর] 
হইত। পুরুষ-দেবতা আন অর্থাৎ যোগাসনে উপবিষ্ট শিব মৃতির প্রতিকতিসমূহ হইতে 
বুঝা যায় ষে যোগসাধনা সম্বন্ধে প্রাচীন ধারণা কিরূপ ছিল । স্ত্রী দেবতাকে আম্মা অথব। 
শক্তি বল! হইত। সমস্ত দ্রাবিড় ভাষাতেই আম্মা! শব্দ মাতাকেই বুঝাইয়া থাকে এবং 
মহেঞ্জোদাড়ে। ও হ্রপ্লায় এই মাতৃদেবতার বহুসংখ্যক মৃ্নয়ীমূতি পাওয়া খিয়াছে । 
সিদ্ধু-উপত্যকার অধিবাসীরা লিঙ্গকে মিথুনের অর্থাৎ শিবনধপী পুরুষশক্তি এবং শক্তিরূপী 
স্্রীশক্তির মিলনের প্রতীকরূপেই গণ্য করিত। ফাদার হেরাস বলেন «শেষ করিবার 
পুর্বে যহেজোদাড়ো। এবং কর্ণাটকের মধ্যে যে যোগস্থত্র প্রাচীনকাল হইতে এখনও পর্যস্ত 
বর্তমান তাহার উল্লেখ অবশ্য করিতে হইবে। কান্নাড় দেশের আধুনিক লিঙ্গান্রৎ্গণ 
তাহাদের গৃহের প্রাচীরে একটি চিহ্ন অস্কিত করে কিন্তু তাহার] উহার অর্থ জানে ন। 
বলিয়া মনে হয়। এই প্রতীকটি হইতেছে, 5 মহেঞ্জোদাড়ো এবং হুরগ্লার ক্ষোদিত 
লিপিসমূহে এই প্রতীকটি প্রায়ই পাওয়! যায়। ইহাকে কুছ বলিয়৷ পাঠ করিতে হয় 
এবং ইহার অর্থ মিলন” । বীরশৈব সম্প্রদায়ের ধর্মবিষয়ক মতবাদসমূহে" পুরুষ ও স্ত্রী- 
সত্তার মিথুনের যে ধারণার স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতীক সম্ভবতঃ তাহাকেই 
নির্দেশ করিতেছে ।” 

শৈব-আগমসমুহে ভাবাত্মক এবং অভাবাত্মক সত্তার মিলনের চিহু হিসাবে লিঙ্গের 
ধারণা লক্ষণীয় এবং ইহ এত প্রাচীন যে আরণ্যক যুগেও ইহাকে পাওয়। যায় । শক্তিকে 
স্ত্রী এবং শিবকে পুরুষের সহিত অভিন্ন প্রতিপার্দন করিবার চেষ্টা অপবি্র ভ্রাস্তিমান্র। 
বস্তুতঃ ইহার! পুরুষ কিংবা স্ত্রী এমন কি ক্লীবও নয়। টব আগমসমূহ স্পষ্ট ভাষায় 
ঘোষণা করে যে শিব পরমতত্বের সদরূপ আর শক্তি ইহার চিদ্রূপ। শিব এবং শক্তি 
যেন পরমতত্বের বিশ্বাতীগ ও বিশ্বান্তস্যত) স্থির এবং চলমান, নির্যক্তিক এবং ব্যক্তিক 
রূপ। কিন্তু আগমের খধিগণ এই ছুইটি রূপের চিরন্তন বিরোধিতা! দর করিবার চেষ্টা 
করিয়াছেন। আপাতদৃষ্টিতে বিরোধী এই ছুইটি ূপকে একের পর আর একটি লইয়া 
নয়, কিন্তু যেখানে তাহার ভ্রবীভূত হইয়া একত্বে পরিণত হয় এবং একটি সম্পূর্ণা্গ 
সমগ্র“ সত্তার ছুইটি পরস্পর সম্পূরক বিরোধিরূপের আকারে দেখা দেয়, সেই অধ্যাত্ম 


৪৪৯৯ ৰ । 


প্রীচা ও পাশ্টাত্য ধর্শনের ইতিহাস 


অন্ুম্ভুতির শীর্ষে উঠিয়াই তাহার! ইহা! করিয়াছিলেন। ্থতরাং লিঙ্গ শিব এবং শক্তির 
পরম সত্তার, সদরূপ অর্থাৎ শিব এবং চিদনপ অর্থাৎ শক্তির এক্যবিধায়ক সত” | 

কামিক হইতে বাতুল পর্যস্ত শৈব আগমগুলির সংখ্যা আটাশ। এই আগমসমূহের 
শেষাংশগুলিতে বীরশৈব মতবাদ এবং ক্রিয়াকাণ্ড লইয়া আলেচিনা কর] হইম্বাছে। 
তাহাদের মধ্যে অধিকাংশগুলিতেই বিশেষ কিংব! মিশ্রিত বর্ণনা আছে এবং এইগুলিতে 
বীরশৈব আধ্যাত্মিক সাধনার বৈশিষ্ট্যগুলির বিশদ বিবরণ পাওয়! যায়। শব 
আগমসমূহের শেবাংশগুলিতেই বীরশৈব মতবাদ্ধের বিবরণ অধিক পরিমাণে পাওয়া 
যায় বলিয়া এরূপ মনে হইতে পারে যে আগমগুলির যে মূলকাণ্ড হুইতে অন্তাস্ঠ 
শৈব মতবাদের জন্ম হইয়াছে, বীরশৈব দর্শন উহারই একটি স্বাভাবিক শাখামান্ত্র। 
কিন্তু বহু প্রাচীন আগমধুগে বীরশৈব দর্শন পূর্ণ বিকশিত মতবাদ বূপে বর্তমান ছিল 
ইহার সম্ভাবনা কম। খৃষ্টীয় বাশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বর্তমান কর্ণাটকের প্রখ্যাত 
পণ্ডিত বাসধের প্রতিভার ফলেই বীরশৈব দর্শন একটি পূর্ণ বিকশিত মতবাদে পরিণত 
হইয়াছে, একটি স্বতন্ত্র সামাজিক মর্ধাদা লাভ করিয়াছে এবং শৈব দর্শন হইতে নির্দিষ্- 
ভাবে পার্থক্য লাভ করিয়াছে । 

এঁতিহ্াান্থসারে প্রাগৈতিহাসিক যুগে বর্তমান ছিলেন এমন পাঁচজন বিখ্যাত আচার্য 
বীরশৈব ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই আচার্গণ সম্পূর্ণভাবে পৌরাণিক ব্যক্তি 
ছিলেন না, কিন্তু তাহাদের শিশ্তগণের তাহাদিগকে এবং তাহাদের ধর্মকে ক্ুপ্রাচীন 
বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার উৎসাহে তাহাদের ব্যক্তিত্ব রহস্যাবৃত হইয়া পড়িয়াছে। 
তাহাদের সম্বন্ধে কতকগুলি তথ্য হইতেছে এই যে, কান্নাড় সাহিত্যে তাহাদের সম্বন্ধে 
অতি স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কান্নাড় এবং তেলেগু ভাষায় রচিত কতকগুলি গ্রন্থ তাহাদের 
দ্বারা রচিত বলিয়! যনে কর] হয়, তাহার] বীরশৈব ধর্ম প্রচার করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন 
এবং যে সকল মঠ তাহারা প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন বলিয়া মনে কর] হয় সেগুলির এখনও 
অস্তিত্ব আছে, কিন্তু ইহা সত্বেও তাহাদিগকে বীরশৈব ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বলিলে অতিরঞ্ন 
করা হয়। এঁতিহাসিক গবেষণায় কান্নাড় পণ্ডিতগণের অধ্যাবসায় পূর্ণ এবং পক্ষপাত- 
হীন চেষ্টা নিঃসন্দেহে ইহাই প্রমাণ করিয়াছে যে, এই তথাকথিত আচার্ষগণ বীরশৈব 
ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা নহেন, কারণ তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ বাসবের সমসাময়িক ছিলেন, 
এবং কেহ কেহ এমন কি ত্তীহাক পরেও বর্তমান ছিলেন । অধ্যাপক সখড়ে ঠিকই 
বলিয়াছেন “বাসবের পরবর্তণ আচার্ধগণ বাস্তব জগতের লোক ছিলেন। তাহার পূর্ববর্তী 
আচার্ধগণের তাহার জীবন হইতে স্বতন্ত্র কোন সত্তা ছিলনা । কোন জন রাজার নাঁজ্যে 
বাপব এ রাজার প্রধান মন্ত্রী হইগ়াও বীরশৈব ধর্ম প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন এবং শ্রী" দশ 


৪৯২ 


শৈব ও শাজ-সম্াদায় সমূহ £ ( বীক়্-শৈবদর্শন ) 


বারে! বৎসরের মধ্যেই ইহার খ্যাতি বৃদ্ধি করিয়াছিলেন । যে কেছ ধর্মীয় সাহিত্যের 
সমৃদ্ধ এবং বিশাল কোষাগার বচনশাস্ত্ের (বাসব এবং তাহার লহকিগণের বচন 
সমূহের সঙ্কলন ) পৃষ্ঠাগুলি উল্টাইর়া দেখিবেন তিনি নিশ্চয়ই বুঝিবেন যে ইহা! মৌলিক 
রচনা । ইহার মধ্যে এমন একটি নৃতনত্ব এবং তেজদ্িতা আছে যাহা! অন্তের নিফট 
হইতে প্রাপ্ত সাহিত্যে থাকিতে পানে না। বাসবের নেতৃত্বে শরণদদের জীবন এবং 
আধ্যাত্মিকতার শক্তিতে ইহা পুর্ণ। ইহা কেবল মাত্র বাসবের দ্বারাই অন্ধপ্রাণিত 
হইয়া ছিল।”৯ 

ধর্মরূপে বীরশৈববাদের উৎপত্তি হইয়াছে বাসব হইতে । আধ্যাত্মিক ও সামাজিক 
প্রতিষ্ঠান “শিবান্ুভব মস্তপ” অর্থাৎ ধর্মাহভূতির আবাস হইতেই এই ধর্ম গতিবেগ লাভ 
করিয়াছে । মানুষ যাহাতে বিশ্বে তাহার স্থান কোথায় তাহ বুঝিতে পারে, ত্ধানীস্তন 
ক্ষয়িষু ধর্মে যাহাতে নৃতন প্রাণ সঞ্চারিত হয়, স্ত্রীলোকের] যাহাতে পুরুষের সমান 
মর্ধাদা লাভ করে এবং স্বাধীন দৃট্টিভঙী লাভ করে, জাতিভেদ বিলুণু হয়, যাহাতে 
লোকের বিভিন্ন প্রকার ব্যবসা এবং কায়িকশ্রম করিতে উৎসাহিত হয় এবং জীবন- 
যাত্রার সরলতা এবং এঁকাস্তিকত! বৃদ্ধি পায় প্রধানতঃ লেইজন্যই বাসব আশহ্ুমামিক 
১১৬০ থুষ্টাব্ধে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন । বাসবের কর্মক্ষেত্র যেমনই বৈচিত্রপূর্ণ তেমনই 
বিশাল ছিল এবং এই প্রতিষ্ঠান তাহার প্রতিভার একটি প্রকুষ্ট প্রমাণ। ইহা যে কেবল 
মান্্র তাহার ব্যবহারিক বিজ্ঞতার পরিচয় দেয় তাহ! নয়, তাহাতে যে বুদ্ধিঃ হুদয়াবেগ 
ও কর্মক্ষমতার সমন্বয় ঘটিয়াছিল তাহারও পরিচয় দেয় । কারণ তিনিই শৈব ধর্মকে 
বর্ণাশ্রমের শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করিয়াছিলেন, এবং উহাকে নৃতন দৃষ্টিভঙ্গী দিয়াছিলেন। 

এই বীরশৈব ধর্ম সম্প্রদায়কে লিঙ্গায়ৎ সম্প্রদায়ও বল। হয়, কারণ ইহার অন্থগামীরা 
তাহাদের শরীরে চরম তত্বের প্রতীক লিঙ্গ চিহ্ন ধারণ করিয়া থাকে । শরীরে লিঙ্গ 
চিহ্ন ধারণ কর] বীরশৈব ধর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য । ইহা যে কেবল লিঙ্গায়ৎ ধর্মের 
একটি বৈশিষ্ট্য সুচিত করে তাহা নহে, ইহা! লিঙ্গায়ৎ সম্প্রদায়কে একটি পৃথক ধর্ম- 
সম্প্রদায় বলিয়াও চিহ্নিত করে। বিশুদ্ধ ধর্মকে কোন কিছু পাইবার চেষ্টা অপেক্ষা 
একট বিশেষ মনোভাব বলিয়া মনে করাই ঠিক, অথবা ইহা! এমন এক প্রকার মনোভাব 
যাহার ফলে আমর ধাহা। কিছু মহৎ এবং পবিজ্র তাহাকে আয়ত্ত করিবার চেষ্টায় প্রবৃতত 
হই। যাহা কিছু মহৎ এবং পবিত্র লিঙ্গ হইতেছে তাহাব মূর্ত প্রতীক, এবং লিজায়ৎ 
ধর্ম এমন একটি সাধনা যাহার একটি বিশেষ বিশ্বাস, মার্গ এবং দর্শন আছে, জীবনকে 
দৈবভাবে মণ্ডিত করিতে হইবে, ইহাতেই ইহার বিশ্বাস নিহিত, যট স্থল অর্থাৎ ছয়টি 
মানসিক স্তরের বিন্যাস ইহার মার্গের বৈশিষ্ট্য, ইহার দর্শনকে শক্তিবি শিষ্টটদৈত বলা হয়। 


৪৯৩ 


হাস্য একটি বৈচিত্র্যময় জগতে জন্মগ্রহণ করে এবং সে উহার অংশ। এই জগতের 
অনির্দিষ্ট সম্ভাবনা রি আছে তাহ! জানিবার চেষ্টা করিবার জন্য কোন প্রেরণা অচ্গভব 
করিবার পূর্বে সে ইহাকে একটি নির্দিষ্ট বাস্তব তথ্য বলিয়া জানে । কিন্ত মানুষের 
বিকাশের একটা স্বরে এই গ্রেকণ! আসে এবং তাহার ফল হইতেছে দর্শন । আমাদের 
প্রত্যক্ষান্থুভবের জগংকে, অর্থাৎ যে জগৎকে আমর! বস্তুতঃ: গঠিত হইতে দ্বেখিয়াছি 
তাহাকে, ইহার সম্ভাবন! অন্থষায়ী পুনগঠিত করিবার যে সঙ্ঞান প্রচেষ্টা দর্শন তাহ 
হইতেই উদ্ভূত এইরূপ বল! যাইতে পারে । এই সমস্যার নিশ্চয়ই বিভিন্ন রূপ থাকিবে। 
এই সকল বিভিন্ন রূপ যেভাবে ক্রমান্বয়ে মানবসমক্ষে উদ্ঘাটিত হইয়াছে তাহান্র 
ইতিহাসই দর্শনশাস্ত্রের ইতিহাস। 

প্রাচীন কালে এই সমস্তার যে বূপটি মানুষের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছিল তাহা 
হইতেছে সত বা অস্তিত্বের সমস্তা । প্রাচীন কালের ব্যক্তিদের লক্ষ্য এবং আকাঙ্ষা 
ছিল প্রতিভাত অগতের পশ্চাতে ষে চরম তত্ব আছে তাহ! আবিষ্কার করা, পরবর্তী স্তরে 
, এই সমস্যা আরও সক্ষম আকারে দেখা দিয়াছিল, তখন জগতের চরম উপাদান কি 
তাহ। আর জিজ্ঞাসার বিষয় রহিল না, কিন্তু দার্শনিকদের নিকট জ্ঞানরূপ মানস ব্যাপারই 
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইয়া উঠিল। এই সময়েই তাহার! প্রথমে বুঝিতে পারিলেন যে 
প্রত্যক্ষ জগতের সত্তার সমস্যা কি তাহ সমাধান করিতে হইলে এমন কি তাহা স্থির 
করিতে হইলে জ্ঞানের সম্ভাব্যতা হ্বীকার করিয়া! লইতে হইবে । স্থতরাং তাহার্দের 
এই ধারণ। হইল যে দর্শন শাস্ত্রের প্রথম করণীয় হইল এই ষে জ্ঞান হইতে গেলে কিকি 
প্রয়োজন তাহা অনুসন্ধান কর] । 

অর্থাৎ, তাহারা মনে করিলেন যে জ্ঞানের ক্ষমতা পরীক্ষাতেই দার্শনিকদের 
মনোষোগ নিবদ্ধ করা উচিত। ভারতবর্ষে উপনিষদ্দিক খধষিগণের এবং গ্রীসে প্রেটো 
এবং আরিষ্টটূলের দার্শনিক প্রচে্া এই সমন্তা সমাধানেই ব্যাপৃত ছিল। 

মানুষ সচেতন জীব । মানুষের চেতন্ত মূলতঃ স্বয়ং সচেতনতা । মানুষের ক্ষেত্রে 
ইন্জিয়াভুভবের সরলতম প্রক্রিয়াও কেবলমাত্র পরিবর্তন নয় কিন্তু পরিবর্তনের জ্ঞান । 
সংক্ষেপত, মানুষের অনুভব কেবলমাত্র মানস জড় ঘটনাবলী দ্বার! গঠিত নয়, কিন্তু এই 
সকল ঘটনার পরিচিতি দ্বারা গঠিত । স্থতরাং আমর] যাহা অন্থভব করি তাহা কখনই 
তথ্যমাজ নম্ম উহা পরিচিতি দ্বার] গৃহীত তথ্য। কাশ্মীর শৈবমততানুসারে বস্তর 
পরিচিতি ব প্রত্যভিজ্ঞা ঘটার অর্থ হইতেছে ষে জ্ঞানে জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় উভয়ই আছে 
তাহাতে কতকগুলি সঙ্থন্ধের সমন্বয় ঘটিতে হইবে । যে জ্ঞেয়ের সহিত আমাদের সম্বস্ধ 
তাহ সম্পূর্ণভাবে আমাদের মনের বাহিরের বস্ত নয়, কারণ আমর! উত্তরোত্তর ইহার 


৪৯৪ 


গা 


শৈৰ্‌ ও শাঞ্চ-সন্প্রদার়দমুহ £ ( শৈব-দর্শন ) 


দধস্ধে অধিক জ্ঞান লাভ করিতে সক্ষম হই, এবং যতদুর আমরা বুবিতে পারি এই 
জ্ঞানের কোন শেষ নাই। সুতরাং জ্ঞান হইতে গেলে যে আত্মা বা বিষ বুদ্ধি গ্রাহথ 
তত্ব অথবা সম্পূর্ণ সুসংহত জগত অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জগৎকে সাক্ষাৎভাবে অনুভব করে 
তাহার ক্রিয়া আবশ্তক। যে আধ্যাত্মিক সঘস্তর অস্তিত্বের জন্ত সম্বন্ধের অস্তিত্ব সম্ভবপর 
হয়, অথচ যাহা নিজে কোন সম্বন্ধে উপর নির্ভর করে ন1! তাহার সাহাষ্যেই এন্সপ 
জগতের ব্যাখ্যা হইতে পারে। ইহা এক দর্বনিরপেক্ষ কালাতীত স্বয়ং-সংবিত রূপ 
সঘস্তই ঈশ্বর । বীরশৈব দর্শনে ইহাকেই স্থল অর্থাৎ ম্বয়ংসিদ্ধ চেতন পুঞ্চষ বলা 
হয়। | 

বীর শৈব দার্শনিকের।১০ স্থলকে সমগ্র প্রতিভাত জগতের আদিকারণ এবং আধার 
এবং সমস্ত জাগতিক ক্রমবিকাশের মূল এবং চরমগতি বলিয়! বর্ণনা করিয়াছেন । 
প্রত্যক্ষ জগৎ অথবা প্রতিভাত জগৎ শাশ্বত পুর্ণ এবং স্বয়ং-সিদ্ধ দংবিৎ অথবা স্থলের 
অপুর্ণ কালিক প্রকাশ। স্থল হইতেছে সেই অসীম এবং শাশ্বত স্থিতি যাহাতে 
সমস্ত গতি এবং বিচার বিলীন হইয়া বায়। এই শাশ্বত সত্তার চরম প্রকাশ 
হইতেছে স্ব-সংবিৎ যাহা কাণ্ট বর্ণিত জ্ঞানের এঁক্যের সহিত অভিন্ন। এখন প্রশ্ন 
উঠে_যে জ্ঞানের এঁক্য হইতে কান্ট তাহার দর্শন আরম্ভ করিয়াছেন তাহাই কি 
বাস্তবিক চরম তত্ব? বৌদ্ধিক প্রকারের এই যে চরম আকার তাহার কি শ্বয়ং সি 
সত্তা আছে? শুদ্ধ চিত্তাই কি বিষয়ী? জ্ঞান কি যে জানে তাহাকে অপেক্ষা করে না? 
আমাদের বিশ্বাস তাহা করে। জ্ঞানের সমন্বয় সাধক এঁক্য একটি যৌক্তিক তত্ব, ইহা 
অযৌক্তিক তত্ব, অহং অর্থাৎ যাহা এক হইয়াছে তাহার অপেক্ষা করে । এই অহ্‌ং তাকে 
নিজ ব্বরূপে বিবেচনা করিলে ইহ।কে এমন একটি দ্রব্য বলিয়। মনে করিতে হয় চিন্তা বা 
জ্ঞান যাহার আকার । বহু দার্শনিক এই ভ্ত্রব্য রূপ অহুং কে অবজ্ঞা করিয়াছেন এবং 
আকার কে দ্রব্যজ্ঞান করিয়। দ্রব্য এবং আকারের প্রভেদ অতিক্রম করিয়াছেন এপ্লূপ 
মনে করিয়াছেন । কিন্তু বীর শৈব দার্শনিক এঁক্যবিধায়ক চিস্তারূপ আকার ব! প্রজ্ঞাকে 
চিন্তা হইতে ভিন্ন কোন উপাদ্ধান হইতে পৃথক করেন না। তিনি বলেন যে চরম, 
সর্বান্থস্থাত উপাদানাংশই আমাদের নিকট সতরূপে প্রতিভাত হয়। ইহাই শিব বা 
অহং তত্ব, জ্ঞান উহাকে বাস্তব আকার দান করে, জ্ঞানই শক্তি । ইহা অহং নয় কিন্তু 
নিজ সম্বদ্ধে অহংএর জ্ঞান। দর্শন যদি জগতের যৌক্তিক ব্যাখ্য। হয়, এবং স্ব-সংবিৎ 
ষদ্দি ইহার আধার এবং গতি হয় তাহ! হইলে স্থল অথব] স্বয়ং সিদ্ধ সংবিৎ সত্তা এবং 
জ্ঞান, শিব এবং শক্তি, অহ্‌ং এবং অহ্ং এর নিজের জ্ঞান এই ছুইচেই প্রকাশ করে। 

দর্শনের সর্বস্বীরুত মূলমন্ত্র হইতেছে “নিজেকে প্রথমে জান । - আত্মা নিজেকে কি 


৪৯৫ 


রা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস, 


বলিয়া জানে? ইহা দিজেকে জ্ঞাতা বলিয়া জানে । আত্মা যে কোন বিষয়কেই 
জানুক না কেন ইহা! তাহায় সহিত নিজেকে জ্ঞাত বলিয়া! জানে । যে কোন বিষয় 
জ্ঞানের সহিত এই আত্মজ্ঞাম প্রকাশিত হউক নাকেন এই আত্মজ্ঞানের আকার 
হইতেছে, “আমি জ্ঞাতা, বিষয় জ্ঞানের পরিবর্তন সমূহের মধ্যে আত্ম-জ্ঞানই একমাত্র 
সাধিক তত্ব যাহা 'পরিবতিত থাকে। ইহাদ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হুইয়। কোন কিছুই 
জানের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারে না। আত্মজ্ঞানরূপস্ত্র দ্বারাই যেন সকল জ্ঞান 
গ্রথিত হইয়া থাকে। আত্মজ্ঞানের ভিত্তির উপরেই জগৎ-জ্ঞানের সমগ্র অট্টালিক। 
ধাড়াইয়া আছে। সম্ভার লমগ্র উপাদানের জ্ঞানরূপ আকারের উদ্ঘাটন ভিন্ন জগৎ 
প্রক্রিয়া আর কি? স্তরাং আমরা বলিব যে আমাদের যে সমগ্র প্রকৃতি সমগ্র 
জাগতিক প্রক্রিয়ার সহিত একত্রাবস্থান করে তাহার বিকাশের পক্ষে হওয়ার স্তায় 
জানারও প্রয়োজন আছে। সেই জন্যই আত্ম-জ্ঞানের মধ্যে উপাদ্দানাংশ এবং 
আকারাংশের মধ্যে প্রভেদ রহিয়াছে । 
 আত্মংজ্ঞানে উপাদান এবং আকারের পার্থক্য বিলুপ্ত হয় এ কথা বীর শৈব 
দার্শনিক স্বীকার করিতে চান না, কারণ তিনি আত্ম-জ্ঞানের একটি উপাদানগত দিক 
এবং একটি আকারগত দিক, একটি সম্ভাব্য একটি বাস্তব অংশের মধ্যে পার্থক্য করিয়া 
থাকেন। চরমতত্বের সম্ভাব্য এবং উপাদান অংশকে তিনি শিব বলিয়া থাকেন, বাস্তব 
এবং আকারগত অংশকে শক্তি বলিয়া থাকেন । শিব এবং শক্তির, সত্য এবং জ্ঞানের 
মধ্যে কোন অথগ্ডনীয় বিরোধিতা তীহার দৃষ্টিপথে পড়ে না, পরস্ত তিনি শক্তি শিবের্‌ই 
আত্মাস্বরূপ, জ্ঞান সত্তার মধ্যেই নিহিত আছে এই কথা বলিয়া উভয়ের মধ্যে সমন্বয় 
সাধন করেন । তিনি শিব এবং শক্তির মধ্যে এক এক্যাত্মকপাহচর্ধয দেখিতে পান এবং 
ইহাকেই শক্তি-বিশিষ্টাদৈত বলিয়া থাকেন। 
বীর €শব দ্শনিকের মতে, সমস্ত সদ্বস্তর এক্যের মধ্যে উপাদান অপেক্ষা আকারের 
ংশের গুরুত্ব অধিক। এই দিক হইতে দেখিলে স্থষ্টি অথবা] প্রকাশরূপ প্রক্রিয়! যথার্থ 
ভ্রমাত্মক নয়। তিনি বিশেষ কোন যুক্তি ন! দেখাইয়া মায়াবাদ অথবা ভ্রযবাদ 
অস্বীকার করেন এবং শিরের যে বিমর্শশক্তির কোন কিছু করিবার, কোন কিছু নষ্ট 
করিবার অথবা অন্ত কিছু করিবার ক্ষমতা আছে জগৎ হ্ট্টি তাহারই ফল এইরূপ 
প্রমাণ করেন। জগৎ যে মিথ্যা এই মত তিনি স্বীকার করেন না। তিনি বলেন যে, 
জগৎ যদি চেতন্যসতার ভ্রষাত্মক্ প্রতিভাস হয় তাহা হইলে এই জগদ্ শুন্তগর্ত মিথ্যাবস্ত 
হইবে । যে জগতের সুত্যতা সকল প্রকার প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হইয়াছে তাহাকি 
করিয়া ঠেতভন্তের মিথ্যা বিবর্ত হইতে পারে? এইভাবে তিনি সাংখ্যসম্মত পরিণাম 


৪9৯৬ 


শৈষ ও শাক-সম্প্রদায়সমূহ ( বীর-শৈবদর্শন ) 


বাদও খণ্ডন করিয়াছেন । সাংখ্যদর্শনে তিনটি বিভিন্ন গুণত্বার1 গঠিত প্রকৃতির আস্তিত্থ 
্বীকার কর] হইয়াছে এবং বল! হইয়াছে যে সমগ্র জগতের বিকাশ এই আদি কারণ 
হইতেই হইয়া থাকে । কিন্তু খু্ীয় চতুর্দশ শতকের ভাঙ্যকার মরিতস্তাদার্য এই তিন 
গুণের এক মৌলিক ব্যাধ! দিয়াছেন । তিনি বলেন ষে এই তিনটি, গুণ “সঞ্জাত বস্তু” 
এবং চরমতত্বের জ্ঞানরূপ আকার এবং ইচ্ছাশক্তিক্ূপ আকার এই ছুইয়ের প্রতীয়মান 
বিচ্ছেদ হইতেই ইহাদের স্যষ্টি। স্থতরাং এই মতাহুসারে এই তিনটি গুণকে চৈতস্ত 
হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন জড়ের মূল আকার ব্ললিয়! মনে কর! যায় না, কিন্তু ইহারা প্ররুতপক্ষে 
সর্বব্যাপী অহস্তার প্রতিফলনের বিভিন্ন মাত্ায় প্রকাশ মাজ্র। সুতরাং আমর! দেখ্বিতে 
পাই যে মরিতস্তাঘার্য এই তিনগুণের বীর শৈব দর্শনাহমোদিত ব্যাখ্য। দিয়া সাংখ্য- 
দর্শনসম্মত প্রকৃতিবাদ এবং অদ্বৈত-বেদাস্তসম্মত মায়াধাদ এই হুইটিকেই পরিহান্র 
করিয়াছেন এবং সম্পূর্ণ নূতন পথ বাছিয়! লইয়াছেন। 

বীর শেব দার্শনিকের' স্থলের ধারণ! হইতে তাহাদের দর্শন আরম্ভ করিয়াছেন । হ্বয়ং- 
সিদ্ধ শাশ্বত আত্ম-সংবিৎই স্থল | আস্তরিক আতস্তনিরীক্ষণের কঠোর পরীক্ষ প্রয়োগ করিয়া 
তাহারা স্ব-টৈতন্যেই একটি উপারদ্দানগত অংশ ও একটি আকারগত অংশের পার্থক্য করিয়। 
থাকেন এবং ইহার প্রথমটিকে শিব এবং দ্বিতীয়টিকে শক্তি বলিয়! থাকেন । একটি সমগ্র 
সত্তার বিভিন্ন অংশের মধ্যেই এই পার্থক্য কর! হয়, এবং তাহাদের বিরোধিতার অর্থ 
হইতেছে কেবলমাত্র এই যে, এই সমগ্র সত্তার স্বরূপের অংশ হিসাবে ভাহাদের মধ্যে 
কেহু আগে এবং কেহ পরে প্রকাশিত হইয়াছে | অন্তভাবে বলিতে পার! যায় যে, তাহারা 
শিব এবং শক্তির মধ্যে এঁক্যমূলক মিলন আছে বলিয়া মনে করেন এবং লিজেই এই 
ধারণার পরিসমান্তি। লিঙ্গ শব্দটির ধাতুগত অর্থ লীধাতু (দ্রবীভূত হওয়।) এবং 
গমধাতু (যাওয়!) এই ছুইটি হইতে আলিয়াছে, স্থৃতরাং ইহা! সেই চরম তত্বকেই 
নির্দেশ করে যাহাতে জগতের সকল জীবই লগ়প্রাপ্ত হয় এবং ষাহা হইতে সকলেই 
আবার উদ্ভুত হয়। স্থতরাং দেখা যাইতেছে যে, লিঙ্গের ধারণা স্থলের ধারণার সহিত 
সর্বাংশেই মিলিয়া যায়, উহার্দের মধ্যে প্রভেদ এইমাক্স যে দার্শনিক বিচারে স্থলের স্থান 
প্রথমে এবং লিঙ্গের স্থান সর্বশেষে । এই বিচারের আদি এবং অস্তের মধ্যে কতকগুলি 
বিষয়ে সাদৃশ্ত আছে। উভয় স্থলেই সত্যের সম্পূর্ণ রূপ প্রকটিত কর! হইয়াছে । তবে 
আদিতে ইহা অবিকশিত বলিয়া সরল এবং অস্তে ইহা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত বলিয়াই 
সরল । সত্য কিংবা স্থল মধ্যপথে শিব এবং শক্তি এই ছুইক্ধপে দ্বিধা বিভক্ত হুইয়া! থাকে 
এবং লিঙ্গরূপে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হইয়া! আপনাকেই পুনরায় খু'ঁজিয়! পায় । স্থভর্াং 
বীর শৈবদর্শনে লিজের ধারণা আধ্যাত্মিক গতিশীল পরিপূর্ণতাকেই নির্দেশ করে। 


৪৯৭ 
৬৩ 


্্ীচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


জগৎ স্থসংহত সমগ্র দত! হিসাবে কিভাবে ক্রমান্বয়ে বিকশিত হইয়াছে তাহা 
জানিবান্স পর দ্বার্শনিকের অনিবার্ধভাবে এই জগতের পরিণাম, উদ্দেশ্য অথবা উন্নতির 
আবদশের সমস্তা উ্থাপনে প্রবৃত্ত হন | বীর শৈব দর্শনে বলা হয় যে, ষথার্থ বলিতে গেলে 
গতিশীল পরিপূর্ণতার মধ্যে চরম উদ্দেশ্থের ধারণার কোন স্থান নাই। বিশ্বের চরম লক্ষ্য 
বা উদ্দেশ্ঠ সম্বন্ধে যদি কিছু বলিতেই হয় তাহা হইলে একটিযাত্র বাক্যে উহ! এইভাবে 
প্রকাশ কর! যাইতে পারে যে, জগতের সমগ্র তাৎ্পর্ধকে জ্ঞাত হওয়া বা উপলদ্ধি করাই 
সেই লক্ষ্য বা উদ্দেম্ত। জগত সম্বন্ধে এক সম্পূর্ণ দৃষ্টিলাভ করাই দর্শনশাস্ত্রের উদ্দেশ্ত। 
দার্শনিক বোধ এবং অস্ভূতি জগৎকে তাহার পূর্ণ সমগ্রতায় এবং বিশিষ্টতায় আমাদের 
সম্মুখে উপস্থাপিত করে। ইহা পরিবর্তনকে স্বীকার করে, কিন্তু যেহেতু কালের মাধ্যমে 
পরিবর্তনকে বুঝিতে হয় সেই হেতু ইহা যাবতীয় পরিবর্তনকে চরমতত্বের সহিত একীভূত 
করিয়া! দেখে। 

বীর শৈব দার্শনিকেরা চরমতত্ব সম্বন্ধে তাহাদের মতবাদ হইতে কালকে সম্পূর্ণভাবে 
. পরিহার করেন নাই। তাহারা বলেন কালের ছুই অর্থ_একটি তাত্বিক এবং অপরটি 
গাণিতিক। কালকে গাণিতিক কাল হিসাবে দেখিলে উহাতে পরিবর্তন অবশ্থই থাকিবে 
আর তাত্বিক কাল হিসাবে দেখিলে উহাতে অবিচ্ছিন্নতা থাকিবে। এক্ষেত্রে অবিচ্ছিন্নতার 
ধারণা এতই 'প্রকট যে, জড়জগতে কাল কিভাবে কাজ করে এবং চেতনপুরুষে কাল 
কিভাবে কাজ করে এই ছুইয়ের মধ্যে প্রভেদ করা প্রয়োজন ৷ জড়জগতে কাল পরিবর্তন- 
সারিকা এবং শক্তিরপে কাজ করে স্থ্টি পরিবর্তন ব্যতীত কিছু নয়। অন্যথায় ইহার 
কোন অর্থ নাই সুতরাং দার্শনিক অর্থে চরমসত্তার ধারণা পরিবর্তনের সহিত নয় পরস্ত 
সামগ্রিক অবিচ্ছিন্নতার সহিত জড়িত। বীর শৈব দর্শনে চরম সত্তার প্রধান পরিমাপ 
হইতেছে অবিচ্ছিন্নতা এবং এঁক্যবদ্ধ সমগ্রতা। 


্েষ্টব্য 


১ 81০8092010-195:0 8100 [0008 015111886200, ভূমিকা| পৃঃ দ--ছ 

হ। 08101:5] 1706726555 0£ 10019, বয় খণ্ড, পৃঃ ২১ 

৩ 1185 ০001081 04 699 02035828885 ০ 73০20, জুলাই ১৯৩৬ 

৪1 1005920 £0610365, ১৯১১, পৃঃ ১১৮ 

&) 21006 13659, ডিসেম্বর, ১৯২৪ 

৬) 17628825425 511820)0 01 0402961210-1)97:0 72900019 8,0902:0706 6০ ৩ 
12080298801087, 0০072291 ০£ 6155 01015625265 ০1 7307271)97% ৫ম খণ্ড, প্রথম ভাগ, পৃঃ ও 


৪৯৮ 


শৈব ও শাক্ত-সন্প্রদায় সযুহ £ (গ্রস্থবিবরণী ) 


৭ [75 78708651. 788802081 15529 1, জুলাই ১৯৩৭, 0০0:228] ০£ 829 0ে:153:8168 
০ 739201১85. পঞ্চম খণ্ড, প্রদথ্ম ভাগ, পৃঃ ৩ 
৮। “লিঙ্গং শৈবমিদং সাক্ষাৎ শিব শক্ত [ভয়াতুকম্”__হুজ্্াগম, ৬1৮ 
*। 1219060:5 800 72121095০25 0£ 171089596 156118100, পৃঃ ৩২৬-৭ 
১*। “পর্ষেষাং স্থান ভূতত্বল লয় ভূতত্বতন্তথ। 
তত্বানাং মহদা'দিনাং স্থলমিত্যতিধীর়তে” অনুভব-সুত্র ২৩ 


গ্রস্থ-বিবরণী 
ইংরাজী 


শ্রীকুমার স্বামীজি 2 [0.9 ড1:5.9272158, 1১01109010105 210. 7৫58610180, নবকল্যাণমঠ, ধার ওয়ার 
1/17068-078,:8109-00910077159, 01 টি 510020058৮8:৮--অধ্যাপক এম, আর, সথড়ে, এম্‌, এ, 
€(বেলরগাও ) কতৃক ভূমিকাসহ সম্পাদিত ডাঃ এস্‌, সি, নন্দীমঠ এম্‌. এ, পি. এচ , ডি £ [3810019০০01 
০? ড179258851909 এল, ঈ, এশোনিয়েশন, লিটারারী কমিটি, ধারওয়!র কর্তৃক সম্পাদিত ।- 


কমাড় 


প্ীকুমারন্খামীজি 5 বীরশৈবদর্শন, নবকল্য।ণমঠ, ধারওয়ার । ধাঁরওয়ার নবকল্যাণমঠের কর্মসচিব ডি, 
আর, কপপাল এম্‌. এ, বি. টি কর্তৃক সম্পাদ্দিত। 


সংস্কৃত 
ময়িদেব, মগেগয়ঃ শিবানুভব সুত্র, 


মরিতস্তাদার্য £ বীরশৈবাগু-চন্দ্রিক 
সিদ্ধান্ত-শিখ-মণি-__মরিতস্তাদার্যের ীক1 সমেত 


৪০৯৯ 


শৈব ও শান্ত সম্প্রদায় সমূহ 
'স্য। শাতদ্শনিন 


শীক্ত-দর্শন? এই শবটি কতকগুলি দার্শনিক মতের সম্প্রদায় এইরূপ স্থুল অর্থে ব্যবহৃত 
হয়; এবং তথন উহা! ভারতের সমগ্র শাক্ত সংস্কৃতির ক্ষেত্রটিকেই নির্দেশ করে। প্রত্যেক 
সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়েরই তত্ববিষয়ক বিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী থাকে । প্রাচীন সংস্কতিগুলিকে 
পর্যালোচন] করিলে পরিলক্ষিত হইবে যে, ভারতবর্ষে তথা পৃথিবীর অন্যান্য অংশে শক্তি- 
উপাসন। অতি প্রাচীন এবং খুব সম্ভবতঃ উহ সিন্ধু-উপত্যকা-সভ্যতার প্রাগৈতিহাসিক 
যুগে শৈব ও পাশুপত উপাসনার সহিত একই সঙ্গে বিদ্যমান ছিল। 

শান্ত উপাসনা ও তাহার দার্শনিক এঁতিহোর স্থপ্রাচীনতা সত্বেও অতীতযুগে 
উহা্দিগকে স্থসংবদ্ধ ও নির্দিষ্ট আকার দেওয়ার জন্ত যথাযোগ্যভাবে চেষ্টা কর! হইয়াছে 
বলিয়া মনে হয় না।১ ইহার ফলে, এই সংস্কৃতির মধ্যে কতিপয় যোগ্য ব্যক্তির গুহ 
জ্ঞান নিবন্ধ আছে বলিয়া উহার প্রতি লোকের খুব শ্রদ্ধা থাকিলেও মাধবাচার্ষের সর্ধদর্শন- 
সংগ্রহ সদৃশ ভারতীয় দর্শনের কোন সন্কলনগ্রস্থেই উহাকে যথাযোগ্য স্থান দেওয়া হয় 
নাই।২ 

এই মতগুলিকে নুসংবদ্ধ আকার দেওয়ার জন্ত কেন যথাযোগ্য চেষ্টা কর! হয় নাই 
তাহার কারণরূপে বলা হয় ষে, যে লকল সত্য সাধারণ মানুষের অনুভূতির বাহিরে 
তাহাদিগকে যুক্তিদ্বারা পরীক্ষা করিয়৷ তাহাদের গুরুত্বকে খর্ব করা অসঙ্গত বলিয়া মনে 
কর] হইত অথব1 শৈব দার্শনিকদের তৎসদৃশ মতপ্রতিপাদ্ক গ্রম্থসমূহে যেটুকু সুসংবদ্ধতা 
পাওয়। যায়, জ্ঞানীদের নিকট প্রকাশিত এই সকল সত্যকে অধিক স্থসংবদ্ধ আকার 
দেওয়া সাধারণ পাঠকের জন্য অনাবস্তক ছিল। কিন্তু এই কারণ যথেষ্ট ধুক্তিসঙ্গত নহে-_ 
যদি উপনিষদসমূহের ভিত্তিতে একটি দার্শনিক মতবাদ রচনা করা সম্ভবপর হইয়াছিল 
তাহা হইলে অন্রূপভাবে শাক্ত আগমগুলির ভিত্তিতেও কেন একটি মতবাদ গঠন কর 
সম্ভবপর হইল না1? 7০2 ঠিকই বলিয়াছেন, দর্শনের কাজ হইতেছে বিশেষজ্ঞগণ নিজ 
নিজ ক্ষেত্রে যে সকল তথ্য সংগ্রহ করেন তাহা গ্রহণ কর! এবং তদনস্তর “তাহাদের অর্থ 
এবং তাৎপর্য নির্ণয় করা ।” 

পরম চৈতন্য কিভাবে পাধিব-চৈতন্তের স্তরে অবতীর্ণ হয় তৎসম্বন্ধে আগমগুলির 
নিজন্ব বিশিষ্ট মত আছে। এই পরমচৈতন্তই আগমসমূহের আদি উৎপতিস্থল ।* 


৫০৩ 


এর 


শৈব ও শাক্ত সন্ত্র্দীয় 'দমূহ £ ( শাভর্শন ) 


চৈতন্কের উচ্চতর স্তরের অন্ুভূতিসমূহ কি করিস্বা চিন্তা ও ভাষার আকারে বপাস্তরিত 
হয়, এবং কি করিয়া লিপিবদ্ধ ও পরের নিকট বোধগম্য কর! হয় ব্যাস তাহার যোগন্ুত্র 
ভাস্কে (১1৪৩ ) এই প্রশ্নের উত্তর দিয়াছেন। তিনি বলেন যে নিধিতর্ক সমাধিতে 
যোগিগণ যে ইন্ডরিয়াতীত সাক্ষাৎ অনুভূতি লাভ করেন তাহা প্ররুতপক্ষে বিষয়ের অনন্য- 
সাধারণ ধর্মের ( বিশেষের )ই সাক্ষাৎ উপলব্ধি, কিন্তু শব্দের সহিত সম্বন্ধ হইঙ্সে উহার 
অপরোক্ষতা চলিয়া যায় এবং তখন উহা? এমন একটি ধারণায় পরিবতিত হয় যাহা 
অন্তের নিকট সংক্রামিত হইতে পারে। তাহার মতে এইভাবেই শাস্ত্রের উৎপত্তি 
হয়।॥ পরমচৈতন্য অথবা! প্রতিভার স্বরূপ অখণ্ড এবং উহা! গুরুর উপদ্দেশ হইতে লাভ 
কর! সম্ভবপর নহে। ইহা স্বয়স্তু এবং উহা কোন বাহ্‌ কারণের উপর নির্ভর করে না।« 

শক্তি-উপাসন] সাধারণ ভারতীয় চিস্তার উপরে প্রগাঢ় প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল । 
ভারতের বিভিন্স্থানের বিবরণী পর্যালোচন। করিলে দেখ! যাইবে যে শক্তি সাধনার বহু 
কেন্দ্র ভারতের নানাস্থানে ছড়াইয়া আছে। অতীতকালে ইহা বনু বিস্তৃত ছিল এবং 
আজ পর্যন্ত ইহার অবিরাম ধার! চলিয়। আসিয়াছে ।* 

শাক্ত তান্ত্রিক সাধনার ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা যাইতে পাবে £__ 

(ক) প্রাচীন ব৷ প্রাক বৌদ্ধ যুগ) ইহা প্রাগৈতিহাসিক যুগ পর্যস্ত বিস্তৃত ছিল। 

(খ) মধ্যযুগ, বৌদ্ধোত্তর অথবা থুষ্টোত্তর যুগ; ইহ। দ্বাদশ খুষ্টীয় শতক পর্যস্ত 
চলিয়াছিল। 

(গ) আধুনিক যুগ, ১৩০০ থুষ্টাব্ব হইতে আধুনিককাল পর্যস্ত গ্রচলিত। 

প্রাচীন যুগের কোন গ্রন্থ এন আর পাওয়া যায় না। অধুনা যেসকল প্রামাণিক 
গ্রন্থাদি পাওয়া যায় তাহার] মধ্যযুগের, কিন্তু সম্ভবতঃ ইহাদের মধ্যেই এমন কতকগুলি 
এঁতিহমূলক বিবরণ রহিয়াছে অথবা এমন কতকগুলি মূল উপাদানও রহিয়া গিয়াছে 
যেগুলির উৎপত্তি প্রাচীনযুগেই হইয়াছে বলিয়া নির্দেশ করিতে হয়। বস্ততঃ, সংস্কৃত 
সাহিত্যের অন্তান্ত বহু শাখার ন্তায় তন্ত্র সাহিত্যের ইতিহাসেও মধ্যযুগেই সর্বাপেক্ষা 
অধিক রচনাকার্য হইয়াছিল। ষে প্রামাণিক গ্রস্থগুলির মধ্যে মৌলিক আগমগুলি 
তাহাদের ভিত্তিতে লিখিত গ্রন্থসমূহ, এবং তাহাদের উপর পরবর্তা লেখকদের টীকা 
সমূহ অন্ততু-ক্ত তাহারা এই যুগেই রচিত হইয়াছিল । আধুনিক যুগেও বহু গ্রস্থাদি 
লিখিত হইয়াছে, কিন্তু কয়েকটি অততযুতকষ্ট ব্যতিক্রম ব্যতীত এই যুগে যে সকল গ্রস্থ 
লিখিত হুইয়াছিল তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই দ্বিতীয় শ্রেণীর, নানাপ্রকার সংগ্রহপুস্তক, 
ক্রিয়া-পদ্ধতি সম্পর্কে কুত্র ক্ষুত্র পুস্তক এবং বিবিধ বিষয় সংক্রান্ত কতকগুলি লঘুপুস্তক 
ইহাদের অস্তভূক্ত। 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


শাক্ত সাহিত্য বহু বিস্তৃত, কিন্তু ইহাদের অধিকাংশের মধ্যে নানা মতবাদের মিশ্রণ 
দেখিতে পাওয়! যায় । শিব এবং শক্তির, মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বদ্ধ থাকার ফলে, কেবলমান্জ 
ক্রিয়াকলাপের ব্যাপারে নয় পরস্ দার্শনিক ধারণাসমূহ সম্বদ্ধেও তাহাদের প্রায়ই একটি 
সাধারণ সাংস্কৃতিক পটভূমিক্ষা আছে। আগমগুলির মতবাদ প্রায়ই অদ্বৈতাভিমুখী, 
কিন্তু অন্তান্ত দৃ্টিভঙ্গীরও অভাব নাই । এইরূপ মনে করা হয় যে শিবের যোগিণী মুখ 
হইতে ষে চৌযটিটি ভৈরব-আগম নির্গত হইয়াছিল সেগুলি অছৈতপস্থী ছিল, দশটি শৈব- 
আগম ছ্বৈত-পন্থী ছিল এবং আঠারটি বৌদ্র-আগমে বিভিন্ন মতবাদের মিশ্রণ ছিল ।? 
এইগুলি ছাড়া আরও বন্থ অন্তান্ত আগম ছিল। তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই বিলুপ্ত 
হইয়াছে, কতকগুলি সম্পূর্ণভাবে অথবা বিকৃত আকারে টিকিয়া আছে এবং এমন 
কতকগুলি আছে ষে অন্তান্ত পুস্তকে তাহাদের সম্বন্ধে উল্লেখ থাকার জন্য ব৷ সেগুলি 
হইতে উদ্ধৃতি থাকার জন্য তাহাদের সম্বন্ধে আমর। জ্ঞানলাভ করিয়া থাকি। যেসকল 
গ্রন্থের দার্শনিক তাত্পর্য আছে তাহাদের মধ্যে স্বচ্ছন্দ, মালিনী-বিজয়, বিজ্ঞান-ভৈরব, 
ত্রিশিরে-ভৈরব, কৃলগহ্বর, পরমানন্দ-তন্ত্র ইত্যাদি এবং আগম-রহস্ত, অভেদ-কারিক! 
আজ্ঞাবতার ইত্যাদি উল্লেখ কর! যায় । 

প্রত্যেক আগমের চারিটি পাদ আছে, ইহাদের মধ্যে জ্ঞান-পাদে দার্শনিক সমন্যা- 
সমূহের আলোচন]1 থাকে । প্রত্যেক আগমেই যে এই সকল সমস্যাকে একই দৃষ্টিভঙ্গী 
হইতে আলোচন1 কর] হইয়াছে অথবা তাহাদের একইভাবে সমাধান করা হইয়াছে এক্প 
মনে করা সঙ্গত হইবে না। ইহাদের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভূত মত-ভেদ দেখিতে 
পাওয়া যায়, কিন্তু সাধারণভাবে ইহা বলা যাইতে পারে যে, এই আগমগুলির 
অধিকাংশেরই একটি সাধারণ সাংস্কৃতিক এঁতিহের ভিত্তি আছে। এই দিক্‌ হইতে 
দেখিলে বল! ষায় যে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট মতবাদগুলিকে ভিত্তি করিয়! একটি 
যথার্থ শ্রেণী বিভাগ কর] সম্ভবপর | ভবিষ্যতে যখন শাক্ত চিস্তাধারার একটি নিয়মিত 
ইতিহাস লেখা হইবে তখন এইসকল মত-ভেদ্দ ও বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য রাখিতে 
হইবে । 

শাক্ত উপাসনা-পদ্ধতির বিভিন্ন সম্প্রদ্দায় আছে, ইহাদের মধ্যে শ্রীবিদ্যা সম্প্রদায়ের 
সাহিত্য অতি বিস্তীর্ণ । কালী-সম্প্রদায়েরও নিজন্ব সাহিত্য আছে, যদিও উহা তত 
বিস্তীর্ণ নহে। শ্রীকুলে কতকগুলি শক্তির উল্লেখ আছে এবং কালী কুলে অন্ত কতকগুলি 
শক্তির উল্লেখ আছে । এই ছুইটি সম্প্রদায় এবং অন্ত সমস্ত উপালন! পদ্ধতি এক অর্থে 
পরম্পরের সহিত সম্বদ্ধ। অগন্তয, দুর্বাসা, দতাঙ্রেয় এবং অপর কয়েকজন” শ্রীবিদ্ধার 
অনুরাগী ছিলেন এবং কয়েকটি চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ রচনা! করিয়াছিলেন । 'অগন্ত্য একটি শক্তি 


৫৩ 


শৈব ও শক্ত সম্প্রদায় সমূহ £ (শাক্ত দর্শন ) 


সুত্র এবং একটি শক্তি-মহিয় স্ঞো রচন| করিয়াছিলেন এইক্সপ বল। হয়।» এই শ্ত্রের 
ব্রহ্ম-স্থত্র বা শিব-স্ত্রের ন্যান্ব অধিক দার্শনিক মুলা নাই, কিন্ত ইহার একটি নিজস্ব গুরুত্ব 
আছে। এইরূপ বলা হয় যে, শরীক € শিব) ছুর্বাসাকে আগমলমুহ প্রচার করিতে 
আদেশ করিলে তিনি তাহার মানস-শক্তির সাহায্যে তিনজন খাধি সৃষ্টি কিয়াছিলেন এবং 
নানারপ দার্শনিক চিন্তা প্রচার করিবার জন্য তাহাদিগকে সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করিতে বলিয়া- 
ছিলেন ।** শিব এবং শক্তির উদ্দেস্তটে উৎসঙ্গীকৃত পর-শভু-স্তোত্র এবং ললিত শিব রত্ব 
এই যে ছুইটি স্তোত্র ছুর্বাসার নামে প্রচলিত সে দুইটির রচয়িতা তিনি নিজেই এইরূপ 
জান! যায়।১৯ পরম্পরান্ুযায়ী দবত্বাত্রেয় আঠারে] হাজার শ্লোক বিশিষ্ট দত্তাত্রেয়-সংহিতা ১২ 
নামক সংহিতা গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন । এইরূপ বল! হয় যে, পরশুরাম এই বিপুল গ্রন্থটি 
অধ্যয়ন করিয়াছিলেন এবং ইহাকে সংক্ষিপ্তাকারে পঞ্চাশটি খণ্ডে বিভক্ত ছয় হাজার সুত্র 
বিশিষ্ট একটি গ্রন্থে পরিণত করিয়। ইহার বিষয়গুলিকে ছাত্রদের পক্ষে হুগম করিরা দেন । 
পরশুরামের এক শিষ্া হথমেধা এ সংহিতা এবং হ্যত্রগুলিকে দত্াত্রেয় এবং পরশুরাষের 
মধ্যে এক কথোপকথনের আকারে সংক্ষেপে প্রকাশ করিয়াছিলেন । এই গ্রস্থটিকে 
ত্রিপুরা-রহস্তের সহিত অভিন্ন বলিয়! মনে কর যাইতে পারে । এই গ্রন্থের মাহাত্ম্য- 
খণ্ডে এই পরম্পর] লিপিবদ্ধ আছে । এই গ্রস্থের জ্ঞান-থণ্ড শাক্ত দর্শনের একটি উৎকৃষ্ট 
ভূমিকা ।৯৩ 

ষে গৌড়পাদকে শঙ্বরাচার্ষের পরম-গুরুর সহিত অন্িন্ন বলিয়া! মনে করা হয় ভিনি 
শ্রীবিচ্যা রত্ব-ন্ত্র নামে একটি ত্ুত্রগ্রস্থ লিখিয়াছিলেন । শঙ্করাচাধ এই গ্রন্থের একটি ভাষ 
রচনা! করেন। শাক্ত সাহিত্যের ইতিহাসে ইহা একটি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ কিন্ত ইহার 
দার্শনিক মূল্য অধিক নয় ।৯৪ তাহার স্ুভগোদয়-স্তরতি এবং শঙ্করের সৌন্দর্য লহরীর 
নামমাত্র উল্লেখই যথেষ্ট হইবে। পদ্ম-পাদের ভান্ত সমেত শঙ্বরের প্রপঞ্চসার এবং 
প্রয়োগ-ক্রম দীপিক। ছুইখানি প্রামাণিক গ্রন্থ । রাঘব ভট্ট যাহার ভাম্তা রচন1 করিয়া 
ছিলেন লক্ষ্মণ দেশিকার সেই শারদাতিলকও এই শ্রেণীর গ্রন্থ । সোমানন্দ তাহার শিব- 
দৃষ্টি নামক গ্রন্থে শাক্ত-সম্প্রদায়কে তাহার আগম ( শৈব ) সম্প্রদায়ের সহিত এক জাতীয় 
বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে তাহার্দের মতে শক্তিই একমাত্র সন্বস্ত এবং 
শিব ইহার নিক্কিয় অবস্থার নামমাজ্র ।১* যদিও তিনি শৈব-মতে বিশ্বাসী ছিলেন তাহা 
হইলেও তিনি বাক্‌-এর বিশ্লেষণ যেভাবে করিয়াছিলেন তাহা শাক্ত চিস্তাধারায় তাহার 
গুরুত্বপূর্ণ দান। মহাপুরুষ অভিনব গুপ্ু সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে যে তিনি যথার্থই 
শাক্ত সংস্কৃতির আত্মা-স্বরূপ ছিলেন । তিনি কৌলশাস্ত্রে দৃবিশ্বাসী ছিলেন । তিনি 
শৈব-শাক্ত আগমের ক্ষেত্রে এবং কাব্য-বিচার শান্ত্রে ও নাট্য-শাস্তর সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন 


£8৯৮৩ 


' প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


তাহ! ইহাকে এমন এক অনগ্ভসাধারণ দার্শনিক গুরুত্বমগ্ডিত করিয়াছিল যাহা তাহার 
মমসাময়িক এবং পরবত্তিদের মধ্যে কেহই অতিক্রম করিতে পারেন নাই। বহু প্রাচীন 
্রস্থকে ভিতি করিয়! রচিত তাহার তত্ত্রালোক গ্রস্থ শৈব-শাক্ত দর্শন সন্বদ্ধীয় একটি 
বিশ্বকোষন্বর্ূপ। তাহার মালিনী-বিজয়-বাতিক, পবা-ত্রিংশিকাঁবিবরণ, প্রত্য ভিজ্ঞা- 
বিমশিনী এবং প্রত্য ভিজ্ঞা-বিবৃতি-বিমধিনী অসাধারণ পাণ্ডিত্য এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানে 
পরিপূর্ণ গ্রন্থ । 

অভিনবের পরে গোরক্ষ, পুণ্যানন্দ, নথনানন্দ, অম্ৃতানন্দ, শ্বতন্দ্রানন্দ এবং ভাস্বর 
রায় ইহাদের নামই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। গোরক্ষ অথব1 মহেশ্বরানন্দ মহার্থমঞ্জরী নামক 
গ্রন্থ এবং পরিমল, সংবিদ্‌ উল্লাস প্রভৃতি ইহার ভাসঙ্তের রচয়িতা । তিনি অভিনব গুপ্তের 
ঘনিষ্ঠ অন্বর্তা ছিলেন। অভিনবের আত্মীয় ক্ষেমরাজ ভাস্কর যাহাকে শক্তি-ন্ুত্র বলিয়া 
উল্লেখ করিয়াছেন১* সেই প্রত্যভিজ্ঞা হৃদয়ের উপর টীকা রচনা করিয়াছিলেন । 
পুণ্যানন্দের কাম-কলাবিলাস কাম-কলা সম্বন্ধে একটি প্রামাণিক গ্রন্থ । ইহাতে শক্তির 
স্থটিকারী রূপসন্বদ্বে আলোচন। আছে । নথনানন্দ চিদ্-বল্লী নামে ইহার এক টীকা রচন! 
করিয়াছিলেন । অমুতানন্দ পুণ্যানন্দের শিষ্া ছিলেন। বামকেশ্বর তন্ত্রের নিত্যা- 
ষোড়শিকার্ণবের যোগিনী স্বদদয় খণ্ডের উপর তিনি ঘোগিণী হৃদয় দীপিক1 নামে যে ভাস 
লিখিয়াছিলেন তাহা তান্ত্রিক সংস্কৃতি বিবম্নক বু মূল্যবান্‌ গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি । 
সৌভাগ্য-স্থভগোদয় প্রভৃতি অন্তান্ত কতকগুলি গ্রস্থও তাঁহার লেখনী হইতে নির্গত 
হইয়াছিল বলিয়৷ জানা ষায়। স্বতম্ত্রানন্দ মাতৃকা-চক্রবিবেক রচন] করিয়াছিলেন । ইহা 
পাঁচখণ্ডে বিভক্ত এক অসাধারণ গ্রন্থ, ইহাতে রহস্ত আগমের অর্থাৎ শাক্ত তন্ত্রসমুহের 
ওপ্ বিদ্যার বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে। ইহার শিবানন্দ মুনিকৃত একটি উৎকৃষ্ট ভান্ত আছে। 
শাক্ত আগম সম্বন্ধে বহু মূল্যবান গ্রন্থের প্রণেত! ভাক্কর রায় সম্ভবতঃ আধুনিক যুগের 
(থুঃং ১৭২৩-১৭৪০ ) সর্বাপেক্ষা! বিদ্বান শাক্ত পণ্তিত। নিত্যাষোড়শিকার্ণবের ভাস্থয 
সেতুবন্ধ সম্ভবতঃ তাহার সবশ্রেষ্ঠ গ্রস্থ। কৌল ত্রিপুরা এবং ভাবনা উপনিষদ সমূহ, 
ললিতা-সহশ্র নাম ( সৌভাগ্য-ভাস্কর ) এবং হুর্গা-সপ্ত-শতী ( গুপ্তবততী ) বর উপর লিখিত 
তাহার ভাস্ত সমূহ, যথা শাসভবানন্ব-কল্পলতা বরিবস্তা-রহস্য, বরিবন্তা-প্রকাশ ষথার্থ ই 
বিখ্যাত হইবার উপযুক্ত এবং এইগ্রলিতে তাহার কৃতিত্ব বিশেষভাবে প্রকাশিত হইয়াছে 
পূর্ণানন্দের শ্রীতত্ব-চিস্তামণি একটি উৎ্রষ্গরস্থ, কিন্তু ইহাতে দার্শনিক তথ্য অল্পই আছে। 

কালী সম্প্রদায় সম্বন্ধে নিয়লিখিত গ্রস্থগুলি উল্লেখ করা যাইতে পারে, যথা-_ 
কালজ্ঞান, কালোত্তর, মহাকাল-সংহিতা, য্যোমকেশ-সংহিতা, জয়ন্্রথ-যামল, উত্তর-তস্ত্, 
শক্তি-সঙগম-তন্ত্র (কালী-খও ) প্রভৃতি । 


শৈব ও শাজ সন্গরদায় সমূহ (শান্ত দর্শন) 


চরম সত্বাকে সংবিৎ বলা হয় । ইহা শ্বয়ং প্রকাশ শুদ্ধটৈতন্য এবং দেশ কাল ও 
কারণতার অপুর্ণত! স্বারা দূষিত নহে। ইহা অসীম আলোক । ইহাকে প্রকাশ 
বল! হয় এবং কর্ম স্বন্ধে ইহার অবাধ স্বাধীনতাকে বিমর্শ বা ম্বাতন্ত্য বলা হয়। এই 
্বাধীনতাই ইহার শক্তি। এই শক্তি প্ররুতপক্ষে ইহার ব্বরূপের সহিত অভিন্ন, ইহার 
মধ্যেই নিহিত থাকে এবং ইহার অবিচ্ছেগ্য গুণরূপে প্রকাশিত হয়। সংবিৎ চৈতন্ত- 
স্বরূপ, বিকল্পসমূহ হইতে মুক্ত এবং জড় হইতে মূলতঃ ভিন্ন। ইহা এক, অথ্গ্ড 
নিরবচ্ছিন্ন, নিরবকাশ এবং ইহার গঠন সর্যজ্রই একরূপ, ইহার অবিচ্ছিন্নতার কোন 
বিরামের সম্ভাবন] নাই এবং ইহার স্বরূপে কোন বিজাতীয় পদার্থ থাকিবার সম্ভাবনাও 
নাই। স্বাধীন বলিয়া! ইহা নিজের প্রকাশ এবং ক্রিয়ার জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভর 
করে না। | 

শক্তির ছুইটি অবস্থা আছে বলা যাইতে পারে, স্য্টি, প্রলয় ইত্যাদি বস্তুতঃ এই 
শক্তির ক্রীড়ার ফল। ইহ1 সর্বদাই ক্রিয়াশীল, এই ক্রিয়া একদিকে তিবোধানরূপে 
প্রকাশিত হয় এবং ইহার ফলে ষে জগৎ এযাবৎ পরমতত্তের স্বরূপের মধ্যে বিলীন 
হইয়া উহার সহিত একীভূত হইয়াছিল তাহার আবির্ভাব অর্থাৎ স্যষ্টি হয় অপরদিকে 
এই ক্রিয়া! আত্মপ্রকাশ বা অনুগ্রহের আকার ধারণ করে এবং ইহার ফলে জগতের 

ংহার হয় এবং ইহা চরমতত্বে বিলীন হইয়। যায় । জগতের স্থিতি সংহার এবং হৃষ্রির 
মধ্যবর্তী একটি অবস্থা । 

সংবিৎ একটি পরিষ্কার দর্পণের ন্যায় । কোন শ্বচ্ছ আকারে প্রতিফলিত প্রতিচ্ছবির 
ম্যায় ইহার ভিতরে জগৎ উদ্ভাসিত হয়। দর্পণ হইতে প্রতিচ্ছবি যেমন পৃথক নয় 
সেইরূপ জগৎকেও সংবিৎ হইতে পৃথক কর যায় না। কিন্তু এই ছুইএর মধ্যে ইহা 
অপেক্ষা অধিক সাদৃশ্য পরিষ্কার করিবার প্রয়োজন নাই । দর্পণে একটি বস্ত প্রতিফলিত 
হয়, কিন্তু পূর্ণাবস্থায় সংবিতের স্থজনী শক্তি থাকায়, ইহার পক্ষে বাহিরের কোন বস্ত্র 
প্রয়োজন নাই। বাস্তবরূপ গ্রহণ করিবার এই স্বাধীনতা বা শক্তিই ম্বাতন্ত্য বা 
মায়া1 চরম তত্বের মধ্যে এইভাবে যে জগৎ প্রকাশিত হয় তাহাতে বন্ছু বৈচিত্র্য 
আছে কিন্তু সংবিৎ চিরকালই সত্তা এবং জ্ঞানের এক অখণ্ড এঁক্য। দর্শন যেষন 
এক কিন্ত ইহাতে প্রতিফলিত প্রতিচ্ছবিগুলি অনেক, সেইরূপ সাধারণ সত হিসাবে 
চরমতত্ব এক কিন্ত ইহার বিশেষ বিশেষ রূপ অনেক । কোন বাহিরের শক্তির প্রভাবে 
নয় কিন্তু ইহ।র নিজস্ব গতিশীলতার ফলে এক বনুতে পরিণত হয়। ইহার প্রভাবেই 
আদিম একোর ভিতর গতির সঞ্চার হয় এবং বনহুর উদ্ভব হয়। এই কারণে এক 


৫৩৫ 


৬৪ 


: প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


সর্বদাই তাহার এক্য বজায় রাখে অথচ অসংখ্য বৈচিত্র্যপূর্ণ জগতের স্ষ্টি হয়। একের 
গায় বছরও চরম সতা আছে কারণ তাহারা অভিন্ন । 

স্থতরাং আমাদিগকে তিনটি বিভিন্ন সম্ভাব্য অবস্থার কথা চিন্তা করিতে হইযে। 

(কে) কেবলমাত্র সম্িৎ আছে কিন্তু তাহার মধ্যে জগৎ উপস্থিত নাই ( চিৎ)। 

(খ) সংবিৎ আছে এবং ইহার মধ্যে জগত দীপ্তি পাইতেছে কিন্তু এই জগৎ বাহিরে 
নিক্ষিপ্ত হয় নাই €( আনন্দ )। 

(গ) সংবিৎ আছে ইহার মধ্যে জগৎ আছে এবং বাহিরেও জগৎ আছে ( ইচ্ছা )। 

গ্রত্যেক ক্ষেত্রেই সংবিৎ স্বরূপতঃ এক এবং অভিন্ন এবং ইহাতে কিছুমাজ্জ পরিবর্ডন 
নাই। সেইজগ্ত ইহাকে নিবিকল্প বলা হয়। ইহার কোন বিকল্প নাই, কোন বিশেষ 
রূপও নাই। এই তিনটি অবস্থ৷ তুলনা করিলে বুঝা ষায় যে প্রথমটি এমন একটি অবস্থা 
যাহাতে চরমতত্বের ভিতরে কিংবা বাহিরে কোন প্রকাশ নাই, দ্বিতীয় অবস্থায় 
আভ্যন্তরীণ প্রকাশ আছে কিন্ত বাহিরে প্রকাশ নাই। তৃতীয় অবস্থা ইচ্ছার অবস্থ1 
বলিয়| ইহাতে বহিঃপ্রকাশ 'আছে, যদিও প্ররুতপক্ষে সংবিৎ স্বরূপতঃ পূর্ণ হওয়ায় 
ইহার বাহিরে কিছু থাকিতে পারে না। তথাকথিত বহিঃসতা! প্রকৃতপক্ষে ইহার 
বাহিরে নাই। 

সংবিৎ যে বিকল্পসমূহ হইতে মুক্ত এবং স্থষ্টি বিকল্প অথব! কল্পন। ইহা শাক্ত আগম 
এবং বেঘাত্ত উভয়েরই স্বীকৃত । কিন্তু প্রশ্ন হইতেছে এই যে শুদ্ধ এবং বিকল্প মুক্ত সংবিৎ 
হুইতে বিকল্পরূপ স্যট্রির উদ্ভব কি করিয়! হইতে পারে? বেদাস্তে বলা হয় যে ইহা 
সংবিৎ হইতে উদ্ভুত হয় না কিন্তু জড় বা মায়া জগতে পৌনঃপুনিক আবির্ভাব সত্বেও 
ষে অনাদি প্রক্রিয়া চলিতেছে ইহা! তাহারই অংশ | যে সংবিৎ বাক্রদ্ম ইহাকে প্রকাশ 
করে ইহা তাহাতে অধ্যস্ত এবং ব্রহ্ম কর্তৃক কোন রূপেই এই প্রক্রিয়া উৎপন্ন হয় না। 

কিন্ত আগমের মত অন্যবূপ। ইহাতে সংবিতের গতি হ্ষ্টি করিবার বা স্বাতস্থ্য 
স্বীকার কর] হইয়াছে, যদিও ইহা আভাষমাত্র এবং জগ প্ররুতপক্ষে সংবিতের বাহিরের 
বন্ত নয়। জগৎ এই শক্তির ভিতরে আছে এবং এই শক্তি পরমতত্বের ভিতরে 
আছে । শক্তি যখন নিক্রিয়্ অবস্থায় থকে তখন বল! হয় যে বিমর্শ প্রকাশে লীন 
€ অন্তর্লান বিমর্শ) হইয়া গিয়াছে । শক্তি যেন কুগুলিনীরূপে নিত্রিতা এবং তখন 
শিব আর শিব থাকেন না, শব হইয়া যান। এই অবস্থা চেতন পুরুষের নয় জড়ের 
অবস্থা । কিন্তু শক্কি যখন জাগ্রত, এবং ইহা সব সময়েই জাগ্রত, তখন পরম টতন্ত 
স্বয়ংচেতন হইয়!' থাকেন । পরম তত্বের আত্মজ্ঞান «'অহং রূপে আত্মপ্রকাশ কতে। 
ইহাকে পূর্ণ বল! হইয়াছে, কারণ এই অহ্ম্এর বাহিরে অহম্এর প্রতিযোগীরূপে 


৫৩০৬ 


শৈব ও শা সন্প্রধায় সমূহ ( শাননদর্শন ) 


ইহা" আকারে কোন কিছু ক্রিয়া করিতে পারে না। আগমের পরিভাষায় এই 
দৃট্টিভলী হইতে পরমতত্বের অবস্থাকে 'পূর্ণাহিংতা' বলা হয়। অহ্ম্‌ পূর্ণ বলিলে ইহাই 
বুঝিতে হইবে যে সমগ্র বিশ্ব দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিচ্ছবির ন্যায় ইহাতে গ্রতিফপিত 
হইয়া থাকে । ৃতবরাং জগৎ অহম্‌ হইতে অভিন্ন। 

সংবিৎ প্রকাশ এবং বিষর্শ উভয়ই | ইহা বিশ্বোভীর্ণ হইয়াও বিশ্বান্থস্যাত। এই 
দুইটি আকার মিলিয়া একটি অখণ্ড সতা৷ গঠিত হয়। ইহা হইতেছে অহম্‌ ইহান্গ 
প্রথম অক্ষর “অ+ প্রকাশকে স্চিত করে, শেষ অক্ষর “হ” বিমর্কে শ্কচিত করে 
এবং দুইএর এঁক্য যাহা! অ হইতে হ পর্যস্ত বর্ণমালার সকল অক্ষয়ের এঁক্যকে 
বুঝায় তাহাই বিন্দু (.)র অর্থ। হ্থতরাং বিন্দু হইতেছে অহ্ম্এর প্রতীক । চরষ 
শক্তির স্থষ্টি কার্য যেন এই বিন্দুকে বিভক্ত করিয়া দেয় এবং সমস্ত জাগতিক প্রক্রিয়ার 
হুত্রপাত করে। 

উপরে যে বহিষ্করণ প্রক্রিয়ার কথা বল! হইয়াছে তাহা হইতেছে শুদ্ধ আত্মার 
প্রকাশমান অহংভাবের অবচ্ছিম্ন অহং-এর নিকট বাহ্‌, বস্তরূপে উপস্থিতি । ইহাই 
বেদাস্তের মূলাবিদ্তা। এই অনহং হইতেছে তথাকথিত অব্যক্ত অথব1 জড়শক্তি, কিন্ত 
সংবিতের স্বাতন্ত্য অথবা চিৎশক্তি নামে খ্যাত আধ্যাত্মিক শক্তি এই অবিদ্ভাকে 
অতিক্রম করে, কিন্তু অছৈত বেদাস্তকে সাধারণতঃ যে ভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তাহাতে 
মনে হয় ষে ইহার মধ্যে এই শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা কর] হুইয়াছে। 

যেহেতু অবিষ্যা অর্থাৎ জড়শক্তি সকল পরতন্ত্র বস্তর চরম উৎস আধ্যাত্মিক শক্তি 
হইতে উৎপন্ন হয় সেইহেতু শাক্তগ্রস্থগুলিতে (ব্রিপুরা-রহস্-জ্ঞানথণ্ড ) যে প্রায়ই বলা 
হইয়1 থাকে যে শক্তির তিনটি বিভিন্ন অবস্থা আছে তাহার মধ্যে কোন অসঙ্গতি নাই। 

(ক) মহাপ্রলয়কালে যখন আত্মা সকল বিকল্প হইতে মুক্ত থাকে তখন শক্ি 
শুদ্ধ চিৎশক্তি অর্থাৎ (গীতার) পরা প্ররুতিরূপে থাকে । দর্পণ যেমন তাহাতে 
প্রতিফলিত প্রতিচ্ছবির প্রাণম্বরূপ ঠিক সেইরূপ এই শক্তি ও জীব ও জগতের প্রাণ- 
স্বরূপ এবং ইহাদ্দিগকে ধারণ করিয়া থাকে । 

(খ) কিন্তু যখন বিকল্পগুলি সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং জড়ভাব প্রবল হইয়া 
উঠে তখন শক্তি অবিদ্যা জড়শক্তি বা প্রকৃতিরূপে প্রকটিত হুয়। খন মায়া এবং 
অবিদ্ভাকে একই নামে নির্দেশ করা হয় তখন ইহাকে জড় প্ররূতি ( অর্থাৎ গীতার 
অপরা গ্রকৃতি ) বলা হয়। | 

পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, স্থটিতে বিশ্বের আবির্ভাব দিব্য-শক্তির আত্ম-সক্ষোচের 
ফল এবং গ্রলয়কালে বিশ্বের বিলয় এ একই শক্তির আত্ম-গ্রতিষ্ঠার ফল। বিশ্বেব এক 


€০৭ | 


* প্রাচ্য ও পাশ্চাত দর্শনের ইাতছাস 


বাতি অতীত হইলে পরা শক্তি জীবগণের পরিণত অনৃষ্ট সমূহের সাহায্যে আত্মার স্বরূপকে' 
ষেন আংশিকভাবে প্রকাশ করে এবং ইহার ফলে আত্মা সীমাবদ্ধ বূপে প্রতিভাত হয়। 
আত্মার এই সীমাবদ্ধ রূপে প্রতিভাত হওয়ার অর্থ ই হইতেছে অবিষ্যা বা জড়শক্কি নামে 
জ্ঞাত অনাত্মার আবির্ভাব, ইহাকে শৃন্ত, প্রকুতি, অত্যস্তাভাব, তমস এবং আকাশ ইত্যাদি 
নামেও অভিহিত কর! হয়। স্যষ্টির ক্রমের ইহাই প্রথম অবস্থা এবং ইহা অসীমের উপর 
সীমার প্রথম আরোপ কে নির্দেশে করে। আত্মার স্বাতস্ত্রয হইতে জাত এক ভাস্ত 
বিশ্বাস জন্মে ষে অহম্‌ এঁকদেশিক, পূর্ণ নয়। এই অন্ বস্ত যাহা আত্মার অংশমান্ধ 
হইয়াও ইহার বাহিরে, ষাহার আত্ম-সংবিৎ নাই এবং যাহাকে অনাত্মা কিংবা উপরে 
প্রদত্ত অন্ত কোন নামে বর্ণনা করা হয় তাহার আবির্ভাবের জন্ত এই ভ্রান্ত বিশ্বাসই 
দায়ী। 

স্বতরাং চরম তত্ব যেন স্বতঃই নিজেকে ছুই অংশে বিভক্ত করে ; ইহাদের মধ্যে একটি 
বিষয়ী এবং অপর একটি বিষয়রূপে প্রতীয়মান হয়। পরম তত্বের স্বরূপ যে পুর্ণাহংতা 
তাহা এই বিভাগের পর তিরোহিত হয় £ যে অংশ সীমাবদ্ধ অহংরূপে প্রতীয়মান হয় 
তাহাই বিষয়ী এবং ষে অংশ অহংতা হইতে মুক্ত তাহাই বিষয় । যে বিষয় এই ভাবে 
আবিভূত হয় তাহাই অব্যক্ত জড় প্রকৃতি। ইহা হইতেই সমগ্র স্থষ্টি নিঃ্ত হয় এবং 
ইহাকেই বিষয়ী নিজ হইতে পৃথক বলিয়! অনুভব করে। 

টতন্ত স্বয়ং-প্রকাশ আলোক (স্ফুরৎ )-স্বভাব। যখন ইহা নিজেকে প্রকাশিত 
করে তখন ইহ1 অহং-তা! বলিয়। জ্ঞাত হয়। যখন ইহা অনাত্মাকে বিষয় করে তখন 
ইহ1 ইমস্তা বলিয়া জ্ঞাত হয়। ঠচতন্যের স্বরূপই হইতেছে এই যে ইহ সর্বদাই নিজের 
নিকট প্রকাশিত থাকে । সমস্ত দৈতভাবের পশ্চাতে এই সাবিক অহং বর্তমান । এই 
পরম অহং সার্বিক, কারণ ইহাকে পরিচ্ছিন্ন ব1 ব্যাবৃত্ত করিতে পারে এমন কিছুই নাই 
এবং সমগ্র দৃশ্ঠটমান জগৎ ইহার সহিত একীভূত হইয়া আছে। কিন্তু জড় স্ব-প্রকাশ 
নয় বলিয়া এই ধর্ম ইহাতে বর্তমান পাই। আলোক এবং তাপ যেমন একই সঙ্গে 
অগ্নিতে থাকে তেমনই সাবিক অহংতা এবং স্বাতন্ত্য বা শক্তি একই সঙ্গে চৈতত্তে 
থাকে । এই ম্বাতন্ত্যই মায়া। ইহা চিদ্দেকরূপ হইলেও অসংখ্য নানান্প পদার্থ স্ষি 
করিয়! থাকে, কিন্তু এই বৈচিত্র্য স্থ্টি করিলেও ইহা! ইহার স্বরূপ হইতে কিছুমাত্র বিচ্যুত 
হয় না। 

বিশুদ্ধ চৈতন্তে জগতের আবির্ভাবের তিনটি বিভিন্ন ক্রমিক অবস্থা আছে। 

(কে) প্রথমটি হইতেছে বীজাবস্থা। এই অবস্থায় জড়শক্তি তখনও তাহার 
প্রকাশের সর্বপ্রথম অবস্থায় থাকে এবং তখন ইহা! বিশুদ্ধ । এই অবস্থায় জড় তাহার 


৫৬৮৮. 


শৈব ও শা সম্প্রদায় সমূহ ( শান্বন্র্শন ) 


নিজের অস্তিত্ব ঘোষণ। করে না এবং সেই জন্য অনুভবের মধ্যে কোন বৈচিত্র্য থাকে ন|। 
অন্ত ভাবে বলিতে গেলে, ইহার অস্তিত্ব অস্তনিহিত হইলেও ইহ! টচতন্ত হইতে পৃথকৃভাবে 
আবিভূ্ত হয় না। পাঁচটি বিশুদ্ধ তত্ব যথা-_-শিব, শক্তি, সদাশিব, শুদ্ধবিদ্া এবং ঈশ্বর 
এই অবস্থার ছ্যোতক | . 

(১ যে অবিষ্যাকে বিষয়ীর বাহিরে অবস্থিত বিষয়রূপে চৈতন্তের সীমাবদ্ধ 
প্রকাশ বলিয়! পূর্বে বর্ণনা করা হইয়াছে তাহাকেই শিব বল! হয়। শ্তদ্ধ চতম্তে উহার 
নিজ ইচ্ছ! শক্তির ক্রিয়া বশতঃ অসংখ্য সীমাবদ্ধ রূপের (স্বাংশের ) উদ্ভব হয়। ইহারা 
পরম্পর হইতে ভিন্ন। এই দিক হইতে দেখিলে চিৎ এর প্রত্যেক অবচ্ছিত্ন আকারের 
অনুরূপ একটি বাহ্‌ বস্ত আছে কিন্তু পূর্ণ আত্মার ( -পরা-শিব ) পক্ষে কোন বহি:সত৷ 
নাই। চিৎ এর পূর্ববণিত সমস্ত শুদ্ধ এবং পরিচ্ছিন্ন আকারের মধ্যে যাহা সামান্ত 
তাহাকেই শিবতত্ব বলা হয়। এই তত্ব একটি সামান্ত এবং ইহার মধ্যে সমস্ত বিশেষ 
গুলিই বর্তমান কিন্তু পর-_শিব বা শুদ্ধ আত্মা বিশ্বাতীত এবং ইহাতে সামান্ত এবং 
বিশেষ সমূহ বিধৃত হইয়! আছে। স্তরাং শিব-তত্বকে সমস্ত বিকল্প হইতে মুক্ত শুদ্ধ 
ঠচতন্যের সাধারণ অথচ পরিচ্ছিন্ন আকার বলিয়া বর্ণনা! করাই অধিক সঙ্গত হইবে এবং 
পরম তত্ব হইতে ইহাকে পৃথক বলিয়! মনে করিতে হইবে । 

(1) শিবের (পরিচ্ছিন্ন নিবিকল্প চিৎ এব ) অহ্‌ং বূপকেই শক্তি বলা হয়। যদিও 
এই অহং-ভাষণ চিৎ এর স্বরূপ এবং বস্ততঃ শিব এবং শক্তির মধ্যে স্বরূপতঃ কোন 
পার্থক্য নাই, তথাপি চিৎকে সমস্ত বিশেষণ হইতে মুক্ত বলিয়া মনে করিলে উহাকে 
শিব আখ্য। দেওয়া হয় এবং ইহার বৈশিষ্ট্য যে আত্ম-জ্ঞান তাহার জন্ত ইহাকে শক্তি 
আখ্য। দেওয়া হওয়া হয়। 

(81) অহং-ভাষণ যখন আত্মাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনা পরুস্থ অনাত্মা অথবা আত্মার 
বহিঃস্থ বিষয়ের ( মহাশুণ্যের ) প্রতিও প্রযুক্ত হয় তখন ইহা সদাশিব নামে জ্ঞাত হয়। 
এই অবস্থায়, আমি ইহা, এইরূপ জ্ঞানের মাধ্যমে আত্মা! অনাত্মার সহিত একীভূত হইয়! 
যায় এবং ইহাতে জড়ের উপর আত্মার প্রাধান্ত স্থচিত হয়। 

(%) কিন্ত যখন জড়ের প্রাধান্ত হয় এবং জ্ঞান “ইহাই আমি" এইরূপ আকার ধারণ 
করে তখন সেই অবস্থার পারিভাষিক নাম ঈশ্বর | 

(ড) যে অবস্থায় জ্ঞানে বিষয়ী এবং বিষয় বধপ উপাদান সমানভাবে প্রকাশিত হয় 
তাহাকে বুঝাইতে শুদ্ধ বিদ্যা শব ব্যবহৃত হয় । 

(খ) অবিষ্ভার পরিণামের দ্বিতীয়াবস্থায় ভেদ বা! জড়ভাবের অধিক বিকাশ ঘটিয়া 
থাকে এবং তখন জড় এবং ঠচতন্ঠের স্থক্ম বিকারগুলির আবির্ভাব হয়। এই মিশ্র 


৫০৪ 


পরগাচ্য ও পাশ্চাভা দর্শনের ইতিহাস 


অবস্থায় মিশ্র তত্বগুলি যথা.মায়1, কলা, বিদ্ভা, রাগ, কাল এবং নিয়তি প্রকাশিত হৃইয়! 
থাকে । | ও 

() ছিতীয় অবস্থার বিশেষত্ব এই যে চরম তত্বের শ্বাধীন ইচ্ছা ভেদকে প্রতিঠিত 
করে এবং তাহার ফলে চৈতন্ক এবং জড়ের যে স্বাভাবিক সম্বন্ধ তাহ! অন্যবূপ হইয়1 যায়। 
উপরে বণিত প্রথম অবস্থায় চিৎশক্তি চৈতন্তে বিলীন প্রাথমিক অবস্থায় অবস্থিত জড় 
শক্তির উপর প্রাধান্য করে । দ্বিতীয় অবস্থায় চেতন্তের উপর জড়ের প্রাধান্য দেখা যার়। 
চৈতন্যের প্রধান্ত নষ্ট হইয়া যায় এবং ইহু! জড় বিষয়ীর অস্তনিহিত একটি গুণে পরিণত 
হয়। টৈতন্তে ভেদের উদ্ভব এবং বিকাশের জদ্তই ইহা সম্ভবপর হয়। এই জড় বিবয়ী 
হইতেছে চৈতন্যের উপর প্রাধান্য বিশিষ্ট জড় এবং চৈতন্ের সহিত ইহার সম্বন্ধ হইতেছে 
গুণের সহিত দ্রব্যের সম্বস্ধের হ্যায় । ইহাকে মায়! বল! হয়। 

(21--%) মায়ার পাঁচটি রূপ হইতেছে তথাকথিত পঞ্চ কঞ্চুক অথবা আবরণী। 
এইগুলি পর-শিবের পাচটি অবচ্ছিন্ন অনন্ত শক্তি। মায়ার বিক্ষেপ শক্তি পরমাত্মার 
সর্বশক্তি মত্বা, সর্বজ্ঞতা, আত্ম-সম্তোষ, অনস্ততা, এবং ম্বাতস্ত্ের উপর আবরণের হ্যায় 
কাজ করে এবং তখন ইহা ক্রমান্বয়ে কলা, বিদ্যা, রাগ, কাল এবং নিয়তি নামে জ্ঞাত 
হয়। 

(13) মায়া এবং ইহার পাঁচটি ক্রিয়াহারা অবৃত হইলে শুদ্ধচিৎ পুরুষ রূপ ধারণ 
করে। এই পুরুষের ক্রিয়া, জ্ঞান, সম্তোষ, অনস্ততা৷ এবং স্বাতন্তয সমস্তই সীবাবদ্ধ। 

(গ) অবিদ্যার পরিণামের তৃতীয় এবং সর্বাপেক্ষা অভিব্যক্ত অবস্থায় মিশ্র তত্বগুলির 
স্থল বিকারগুলি দেখ! দেয় । এই অবস্থায় জড়েরই সর্বাপেক্ষা অধিক প্রাধান্য । আদি 
প্রকৃতি হইতে পৃথিবী পর্যস্ত চতুধিংশতি তত্বের যে সমষ্টি লইয়া জড়জগৎ গঠিত তাহাই 
এই তৃতীয়াবস্থা ৷ 

যাহাকে লইয়! নিম্মস্তরের স্থষ্টি আরস্ত হয় সেই প্রকৃতি হইতেছে নানাবিধ অনাদি 
কর্মযুক্ত জীবগণের প্রকৃতি এবং বাসন] সমৃছের সমষ্টি। ইহাকে জীবগণের চিৎশক্তি 
বা আত্মার নিহিত কর্ণ প্রবৃত্তি সমূহের শরীর বলিয়া উপধুক্ত ভাবে বর্ণনা করা যাইতে 
পারে। এই কর্ম বাসন! বা প্রকৃতি হইতে উৎপন্ন ষে অনুভব তাহা স্থদায়ক হইতে 
পারে, অথবা যাহাতে স্থথ ছুঃখ কিছুই হয় না এমন মৃচ্ছার অবস্থা হইতে পারে, 
তদছ্ছসারে ইহার তিনটি রূপ হইয়া থাকে । 

প্রবৃতি সমূহ দুইটি অবস্থায় থাকে। যখন তাহার! অপ্রকাশিত থাকে, যেমন 
ত্বপ্নবিহীন স্থুমুপ্তিতে, তখন তাহাদের অব্যক্তাবস্থা, আর যখন তাহার! স্বপ্র এবং 
জাগ্রধবস্থায় প্রকাশিত হয় তখন তাহারা চিত্তরূণে ব্যক্ত হয়। নিঃম্বপ্ন ন্যুস্তিতে সখ 


€ ১৩ 


শৈব ও শা সম্প্রদার সমুহ ( শাদর্শন ) 


ছঃখের ভোগ হইতে পারে না, কারণ কেবলমাত্র পরিণত কর্ম পমৃহই ভোগের মধ্য দিয়া 
ক্ষয় প্রাঙ্ত হইতে পারে, এবং যেগুলি যথেষ্টমাত্রায় পরিণত নয় তাহাদের ফলোৎ্পাদনের 
যোগ্যতা নাই। বস্ততঃ কর্মসমূহ যখন পরিণতি প্রাপ্ত হুয় তখন তাহার চৈতন্তময় 
আত্মার জ্ঞান শক্তিকে বহির্দেশে গমন করিতে এবং প্রকৃতির বাস্তব বিকার বহিজগতেন্র 
সহিত সংস্পর্শে আসিতে প্রবৃত করে। নিদ্রাবস্থায় স্বভাবতঃই এইন্সপ গতির অভাব 
থাকে ; কিন্তু যে কালে নিত্রা হইতে থাকে সেই কাল কর্মসমূহের উপর ক্রিয়া! করে এবং 
তাহাদের মধ্যে কতকগুলিকে পরিপক করিয়া তুলে এবং তাহার ফলে উপরে বণিত 
শক্তি বাহা জগতের বস্ত সমূহ অথবা তাহাদের অবভাস সমূহের সংম্পর্শে আসিতে 
সক্ষম হয় এবং নিক্রাভঙ্গ হইয়া যায়। যে শক্তি এইভাবে কর্মপ্রবৃতির সমষ্টির হবার! 
প্রভাবিত হইয়। বাহ্বস্তর সংস্পর্শে আসে এবং তাহা ফলে ভোগের উৎপত্তি হয় তাহ! 
চিত্ত বলিয়। জ্ঞাত। 

পুরুষবিশেষে চিত্ত বিভিন্ন কিন্তু নিঃম্বপ্ন নিদ্রায় ইহা' প্রকৃতির সহিত একীভূত হয় । 
ইহাতে চৈত্্-উপাদানের প্রাছুর্ভাব ঘটিলে ইহাকে পুরুষ এবং অব্যক্ত উপাধ্ধানের 
প্রাছুর্ভাব ঘটিলে ইহাকে প্রকৃতি বলিয়া মনে কর! যাইতে পারে । স্থতরাং ইহ! একটি 
পৃথক তত্ব নয় পরস্ত পুরুষ ব' প্রকৃতির অন্তর্গত ।১৭ বস্ততঃ চিত্ত ও অস্তঃকরণ অভিন্ন। 
ইহার ভ্রিবিধ ক্রি! অনুসারে ইহা! তিনটি বিভিন্ন নামে জ্ঞাত । ইহা! যখন অহং-ভাব 
অনুভব করে তখন ইহা অহঙ্কার, খন সম্কল্প করে তখন ইহা বুদ্ধি এবং যখন ইহা অস্তরে 
অস্তরে চিস্তা করে তখন ইহা মন। 

এস্বলে মন সম্বন্ধে শাক্ত মতের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়1 অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। 
পরম সংবিতের ম্যায় মনেরও প্রকাশ ও বিষর্শ এই দুইটি দপ আছে। মন যখন বাহা বন্ত 
সমূহের সহিত সংস্পর্শে আসে এবং এগুলিকে বিষয় করে তখন তাহার যে রূপ তাহাই 
প্রকাশ এবং এইবূপ কোন বস্ত খন অন্তরে প্রতিফলিত হয় এবং পৃবসঞ্চিত মানস 
প্রতিচ্ছবিগুলির সহিত সংযুক্ত হইয়1 “ইহ! এইরূপ" ইত্যাকার চিন্তার মধ্যদিয় প্রকাশিত 
হয় তখন তাহার সম্বন্ধে মনে যে আন্দোলন উপস্থিত হয় তাহাই বিমর্শ। যাহা ঘটিয়! 
থাকে তাহাকে এইভাবে ব্যাখ্যা কর] যায় । মন যখন প্রথমে ইন্দ্রিয়াদির মাধ্যমে কোন 
বিষয়বস্তর সংস্পর্শে আসে তখন এ বস্তুটি শব্দোল্পেখ হইতে মুক্ত থাকায় ভেদ হিত 
আকারে প্রকাশিত হুইয়া থাকে । ইহাই নিবিকল্পক জ্ঞান এবং ধাহার। জ্ঞানের 
ঘ্বতঃপ্রামাণ্যে বিশ্বাস করেন না তাহাদের মতে ইহা সর্বদাই অন্রমেয়। শক্তি 
আগমাহ্ছলারে কিন্তু ইহা বিষয়বস্তর প্রকাশ ( দর্শন ) অর্থাৎ কেবল জ্ঞানমান্্র। পরমুহূর্তে 
বাহ বস্ত মনে প্রতিফলিত হুইয়! উহার আকারকে মনের উপর নিক্ষেপ করে এবং এই 


১১ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


নিক্ষেপ “ইহা এইরূপ” এই 'মবধারণরূপে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের এই অবস্থাকে বিচার 
বলে। ইহাতে একটি বিশেষ বন্তকে অন্য বস্তু সকল হইতে পৃথক্‌ করা হয় এবং ধারণামুলক 
চিন্তার সহিত মিশ্রিত করা হয়। ইহাই বিমর্শ বা সবিকল্পক জ্ঞান । সুতরাং উপরে 


প্রদত্ত বর্ণনান্গুসারে মনের ছুইটি অবস্থা আছে। বিমর্শ অনবগত বস্তু সম্বন্ধে হইতে পারে 


যেমন অনুভবের ক্ষেত্রে-_-আবার পূর্বান্থভূত বস্ত সম্বন্ধে হইতে পারে__যেমন স্মৃতি ও 
অহুসন্ধানের ক্ষেত্রে। শেষোক্ত উভয় প্রকার অবস্থাই অন্ভবমূলক মানস-সংস্কার জন্ত | 

চৈতন্তের বিভিন্ন অবস্থা কি কি এখন তাহা৷ সহজেই বুঝিতে পারা যায়। এই 
দৃষ্টিভঙ্গী হইতে স্থযুদ্তিকে প্রকাশের অন্ততূক্তি অর্থাৎ নিদ্রার প্রকাশ বলিয়া মনে করিতে 
হইবে। ইহা নিধিকল্পক জ্ঞানের একটি আকার । ইহা! কিয়ুৎকাল স্থায়ী, ক্ষণস্থায়ী নয় 
এবং বিমর্শের অভ[বজনিত মুঢ় দশার একটি অবস্থা বলিয়া! পরিগণিত হয়। ইহা! বিশ্তুদ্ 
প্রকাশ এবং ইহা! মু দশারই নামান্তর । অপর পক্ষে জাগ্রদবস্থা (জাগর ) প্রায়ই 
বিমর্শের অবস্থা এবং মুঢ়দশার অবস্থা নয়। এইভাবে নিঃমবপ্ন সুযুপ্তিকে বিকল্পবহিত 
চৈতন্যের অবস্থা! সমূহের অবিরাম প্রবাহের পর জাগ্রদবস্থায় মানস প্রতিচ্ছবির ধারা 
আরম হয়। 

কিস্তু নুযুন্রিকালে যে নিদ্রা প্রকাশিত হয় তাহার স্বরূপ কি? ইহার উত্তরে বলা 
হয় যে ইতঃপুর্বে যে মহাশুন্কে আমরা তথাকথিত আকাশের সহিত অভিন্ন বলিয়াছি 
এবং ঈশ্বরাত্মা প্রথমে নিজেকে সীমাবদ্ধ করিবার পর যাহা তাহার আর্দিমতম 
বাহ্‌ প্রকাশ ইহা! তাহাকেই নির্দেশ করিতেছে। ইহা নিরাকার এবং অব্যক্ত এবং 
নিদ্রায় যখন আর কিছুই থাকেনা তখনই ইহা প্রকাশিত হয়। ইহা হইতেছে সর্ব- 
সাধারণ পটভূমিকারূপে কল্পিত সমস্ত দৃশ্ত আকারের অভাব। ন্থযুণ্তিতে ইহারই প্রকাশ 
হয় বলিয়া মান্য জাগিয়া উঠিয়া অনুভব করে যে সেই অবস্থায় তাহার কোন বিষয়েরই 
জ্ঞান ছিল না। 

শাক্ত দার্শনিকেরা এই স্থবিদিত ব্যাপারটিকে লক্ষ্য করিয়াছেন যে জাগ্রদবস্থাতেও 
ফোন বস্ত দেখিবার সময় মন নিদ্রার সময়ে তেমনই মূঢ় দশা প্রাপ্ত হয়, কিনব এই মৃঢ় 
দশা অনুভূত হয় না। জাগ্রদবস্থায় নিধিকল্পক জ্ঞান ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় যে মানস 
গ্রতিচ্ছবিগুলি অতিদ্রুত একের পর আরেকটি আবিভূর্তি হয় তাহাদের চাপে এই মৃঢ় 
দশ! তিরোহিত হইয়া যায়| 

নিপ্রাকালে মনের প্রকাশ দূপ আকার থাকে কিন্তু বিমর্শ অস্তহিত হইয়া যায়। এই 
জন্যই সাধারণতঃ এই অবস্থায় মন বিলীন হইয়া বায় এইরূপ বলা হয়। সেইরূপ কোন 
বাহবস্ত গ্রথম দৃষ্ট হইবার সময়েও মন বিলীন অবস্থায় থাকে। ্‌ 


£১৭ 


নট 


, শৈব ও শাক্ত সম্প্রদায় সমূহ ( শা্ছদর্শন ) 


চিত্ত প্রকতপক্ষে জ্ঞেয় পন্দার্থের অভিমুখী আত্মা! নিদ্রায় 'মন মানস প্রতিচ্ছবি 
হইতে মুক্ত থাকায় শাস্ত এবং গতিহীন থাকে । ইহার ক্ষণস্থাম্মী বিকারগুলি ন। থাকায় 
ইহা বিলীন হইয়া! গিয়াছে এইরূপ বলা হয়। মনের এই ভাষ নিয়লিখিত তিনটি অবস্থার 
প্রত্যেকটিতে দেখিতে পাওয়! যায় । 

(ক) মিবিকল্প সমাধি-_এই লময়ে শুদ্ধ আত্মা নিজের স্বয়ং প্রকাশ স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত 
থাকে । 

(খ) নিব্রা-এই সময়ে অব্যক্ত অথবা মহাশৃল্ত প্রকাশিত হয় । 

(গ) যখন স্বাভাবিক ইন্দ্রিয় সংস্পর্শের ক্ষেত্রে কোন বাহ্‌ বস্তর প্রকাশ হয় তখন 
সেই বন্র প্রত্যক্ষ । 

এই বিভিন্ন অবস্থায় “ইহা এইরূপ” ইত্যাকার বিমর্শ অপ্রকাশিত থাকায় সর্বক্ষেজেই 
একই প্রকারের ঘনীভূত প্রকাশ বর্তমান বলিয়া মনে হয়। এই সকল অবস্থার আশ্রয় 
রূপে একই প্রকাশ বর্তমান বলিয়া মনে হয়। এই সকল অবস্থার আশ্রয় রূপে একই 
প্রকাশ বর্তমান থাকিলেও এই অবস্থাগুলি অভিন্ন নয়, কারণ, মানসিক এঁক্য সম্পাদন 
(অনুসন্ধান ) ক্রিয়া রূপে পরবর্তা সময়ে যে বিমর্শ দেখা দেয় তাহা প্রত্যেকক্ষেত্রেই 
বিভিন্ন । সমাধির পর বিমর্শ এইরূপ আকার ধারণ করে “এই সময়ে আমি নীরব 
ছিলাম,” নিদ্রার পর ইহা এইভাবে প্রকাশিত হয় “এই সময়ে আমি কিছুই জানি নাই,” 
কিন্ত বাহা বস্থর প্রত্যক্ষের সময় ইহা এইরূপ আকার ধারণ করে *উহা এইরূপ বজ্ত |” 
সংশ্লিষ্ট বস্তগুলির মধ্যে কোন না কোন বিভিন্নতা আছে ইহ ধরিয়া না লইলে বিমর্শের 
এই বিভিন্নতা ব্যাখ্যা কর! যায় না । কিন্তু এই তিন অবস্থাতেই ইহ! মানস-_ প্রতিচ্ছবি 
এবং শবানুষঙগ হইতে মুক্ত থাকে বলিয়! ইহার ন্বরূপের যে এক্য তাহা নষ্ট হয় না। 
বিষরবস্তর বিভিম্নতা এইপ্রকার । সমাধিতে বিষয়বস্তু হইতেছে বাহিরের নিরাকার 
বন্ত- অব্যক্ত । প্রত্যক্ষে বিষয়বস্ত হইতেছে কতকগুলি বিশেষ গুণযুক্ত এবং অন্যান্য 
ভ্রব্য হইতে যাহাকে পৃথক করা যাম্ব এমন একটি বাহিরের দ্রব্য । 

স্থৃতরাং, যদিও ভান্ত ( বিষয় বস্তু ) সমূহ বিভিন্ন, শুদ্ধজ্ঞান ( ভাঁস ) বা চেতন যাহা 
সকলের পক্ষেই সাধারণ তাহা এক এবং অবিভক্ত। অন্তভাবে বলিলে, যদিও সমাধি, নিদ্রা 
এবং বাহাবস্ত্ব পরস্পর হইতে ভিন্ন, ষে জ্ঞানে তাহারা প্রকাশিত হয় উহা! এক। ইহা 
হইতে বুঝা যায় বিষয়ের ভেদ জ্ঞান অথবা তাহার স্বরূপে অন্থরূপ ভেদ উৎপাদন করিতে 
পারে না। জ্ঞানের ভেদ কেবলমাত্র চিস্তার সাহায্যেই হইতে পারে কিন্তু এই তিনটি 
অবস্থা সমভাবেই শুদ্ধজ্ঞান ( প্রকাশ ) স্বরূপ বলিয়া উহাদের কোন্টিতেই চিন্তা বর্তমান 
নাই। 


€ ১৩ 


৬৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সমাধি এবং নিদ্রা অধিকক্ষণস্থায়ী বলিয়া! পরিবততণ সময়ে বিমর্শের বিষয় ( বিষুষ্ট ) 
হইতে পারে, কিন্তু কোন বস্তর প্রত্যক্ষ ক্ষণস্থায়ী বলিয়া ইহা অগ্তগ্রকার। ঠিক সেইরূপ 
ক্ষণস্থায়ী সযাধি অথবা নিজ! বিমর্শের উপযুক্ত বিষয় হইতে পারে না। জাগ্রৎ কালেও 
মাঝে মাঝে ক্ষণস্থায়ী সমাধি এবং স্থযুপ্তি হইয়া থাকে কিন্তু এগুলিকে সাধারণতঃ লক্ষ্য 
করা হয় না। 


৩ 


শারদ] তিলকে € ১৭-৮) ব্যক্ত জগতের উৎপত্তি প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে 
ইহার অভিব্যক্তির ক্রমকে এইভাবে দেখান হুইয়াছে-_ 

(2) পরমেশ্বর-_“সকল” এবং “সচ্চিদানন্দ-বিভব, বলিয়া! বণিত। 

(13) শক্তি 

(111) নাদ (পর) 

(1৮) বিন্দু( পর) 

| | 
(৬) বিন্দু বীজ 
(অপর ) 

(ড1) নাদ €( অপর ) 

এই প্রসঙ্গে “পরমেশ্বর” বলিতে স্পষ্টতঃই সেই পরম দেবকে বুঝায় ধাহার সহিত শক্তি 
বা কলা৯৯ চিরকাল এঁক্য বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া আছেন। এস্থলে পরমদেবকে স্বর্পতঃ 
শাশ্বত, স্বয়ং-সৎ, স্বয়ং-চেতন এবং আত্মানন্দ বলিয়] বর্ণনা করা হইয়াছে । স্যগ্টিকালে 
যে শক্তি একদিন সত্তার অতলগর্ভে নিমজ্জিত ছিল তাহার প্রকাশ হয় এবং ইহাই প্রথম 
ঘটনা । নিঃসন্দেহে এই শক্তির প্রথম বিকার ইচ্ছা! হইতেছে ইহার বৈশিষ্ট্য | 

শিবপুরাণে (বায়বীয় সংহিতায় ) বল! হইয়াছে যে ঠতল-বীজ হইতে যেমন তৈল 
নিঙ্াস্ত হয় তেমনই স্্রির প্রারভ্তে শক্তির আবির্ভাব হয়। ইহা দেব ইচ্ছা! দ্বার] 
প্রণোদিত স্বতঃস্ফুর্ত ক্রিয়া । অর্থাৎ, যে পরম শক্তি দেব ইচ্ছার সহিত অভিন্ন এবং 
যাহ! দৈবসত্তার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে থাকে তাহ! দৈব ইচ্ছার প্রভাবে স্থষ্টিকালে আত্মগ্রকাশ 
করে /৭ . 

জাগতিক মহারাত্রির পর শক্তির আবির্ভাব নিত্রার অচেতনতার পর জাগ্রত ব্যক্তির 
স্থৃতির পুনরাবিত্ভাবের স্ায়। বিলুপ্ত জগৎ পুনরর্শনের ইচ্ছা! শৃন্তের অন্ভূতির সহিত 


৫১৪ রি 


শৈব ও শক্ত সম্প্রদায় সমূহ ( শাক্তদর্শদ ) 


জড়িত থাকে, এবং ইহাই মায়া । পরবর্তী হৃষ্টি-গ্রক্রিয়ায় মায়ার স্থান প্রথমে, এবং 
যে জৈবসতা! ইহার জনক তাহাই ইহার প্রভু এবং নিয়ন্তা। শৃন্যের বোধের সহিত 
পরনাদ নামক সমগ্র দেশ-ব্যাপী একটি অস্ফুট শব থাকে। নাদ এবং আলোকের 
একই ম্বরূপ। শব্দ এবং আলোক যে একই সঙ্গে থাকে এবং একই ব্যাপারের ছুইটি 
রূপ বলিয়! পরস্পরের সহিত সম্বন্ধ তাহা তন্্রসমূহে শ্বীকৃত হইয়াছে । পরম ইচ্ছার প্রথম 
অভিব্যক্তি হইল শৃন্তের এবং যে শব এবং আলো এই শুন্তকে অধিকার করে তাহাদের 
হষ্টি। এই সমস্তই ইচ্ছা-শক্তির অন্তভূরক্ত । এই প্রক্রিয়ার পরবর্তীস্তরে এই বিকীর্ণ 
আলোক-শব ( ইচ্ছা-শক্তির পৃঢ় প্রভাবে ) একস্থানে কেন্জীভূত হয়। এ কেন্্রকে বিন্দু 
বল। হয়। এই অবস্থায় ক্রিয়া-শক্তি স্পষ্টভাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই পর-বিন্দু 
হইতে তত্ব সমূহ উদ্ভুত হয়। পরে বিন্দু আবার নিজেকে তিনভাগে বিভক্ত করে। 
এই তিনটি অংশ যথাক্রমে বিন্দু, বীজ এবং নাদ বলিয়া জ্ঞাত। বিন্দু হইতেছে সেই 
অংশ যাহাতে শিব-রূপই প্রধান আর বীজে শক্তিরই প্রাধান্। কিন্তু নাদে শিব এবং 
শক্তি উপাদানের সমান ক্ষমতা । 

বিন্দুর সাম্যভাবকে কে নষ্ট করে? শারদা তিলকে এই প্রশ্নের কোন উত্তর দেওয়া 
হয় নাই। প্রপঞ্চলারে (১1৪২-৪৩ ) বলা হইয়াছে যে, কালই বিন্দুর সাম্যভাব নষ্ট 
করিয়া দেয়। এই মতে কাল শাশ্বত পুরুষের একটি শাশ্বত র্ূপ। ইহা মাধ্যমেই 
তাহার পরা প্রকৃতির জ্ঞান হুইয়| থাকে এইরূপ বল! হয় ।২১ 

শারদ তিলকে €(১।১১-১২) এবং প্রপঞ্চসারে (১1৪৪ ) বল] হইয়াছে ষে, বিন্দু 
যখন বিভক্ত হয় তখন যে মহাশবের স্যষ্টি হয় তাহ! শব-ব্রদ্ধ বলিয়। জ্ঞাত। 

ইহা স্থবিদিত যে মন্তকের উধ্বাংশের মধ্যে অবস্থিত সহস্র দল পন্মের বীজাধার রূপে 
যাহাকে কল্পনা করা হয় তাহাই তথাকথিত ব্রহ্ম-রন্ধ। ইহাকে প্রায়ই *শৃন্ট” বল! হয়,। 
ইহা স্থযুয্না নাড়ীর মধ্য দিয়া মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরের তলদেশ পর্বস্ত বিভভৃতি। মন যদি 
এই শূন্যে অবস্থান করিতে পারে তাহা হইলে ইহার অশান্ত প্রকৃতি স্তব্ধ হইয়া! যায় এবং 
তাহার ফলে জীব নিজেকে গুণসমূহের উধ্রে বলিয়া আত্মোপলব্ধি করিতে পারে। 
ইচ্ছাঁশক্তির এবং পর নাদের ইহাই উৎপত্তি স্থান ।২২ 

ব্রহ্মের মহাকারণরূপ অবস্থা বিসর্গ-মণ্ডল বলিয়া! খ্যাত। পর-নাদ বলিতে ইহাকেই 
বুঝায় । পরা শক্তিকে যদি কুল বল! হয় এবং পরম শিবকে অকুল বল! হয় তাহা হইলে 
বিস্গের স্থান তাহাদের উভয়েরই নীচে এক্সপ বলা যায়। কিন্ত সাধারণতঃ ইহাকে 
ব্রহ্মরন্ষের উপরেরর স্তরের নীচে স্থান দেওয়া হয় এবং ইহার নীচে যথাক্রমে কুর্য, চন্দ্র 
এবং মহাবাসুর তথাকঘিত মণ্ডলসমূহ সমস্তই সহশ্রদল পদ্মের মধ্যে অবস্থিত। 


৫১৫ 


 খাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


ব্রদ্মের কারণাবস্থার প্রতীক হইতেছে শব-ব্রত্ধ অথব1 কুলকুণ্ডলিনী । পরবিস্দুর 
বিভাগ হইতে উদ্ভুত তিনটি 'তত্ব-_যথা বিন্দুঃ বীজ এবং নাদ-_এই তিনটি বাহুবিশিষ্ 
একটি ভ্রিভূজরূপে ইহাকে কল্পনা কর! হয়। স্থতরাং পর-নাদ এবং পর-বিন্দুষে আস্ভা 
শক্তিকে বুঝাইতেছে ত্রিভূজাকার কুণগ্ডলিনী তাহারই প্রকাশ বলিয়! মনে হয়। 

কুগুলিনী হইতে জগতের সুম্্ম উপাদানগুলি নির্গত হয় এবং তাহারা ললাটের 
বিভিন্ন কেন্দ্রে এবং দ্মায়ুমণ্ডলীর নিয্লাংশে অবস্থান করিতে আরস্ভ করে। ইহা পূর্বেই 
বল! হইয়াছে যে, (অ-পর) বিন্দু হইতেছে শিব, বীজ শক্তি এবং €( অ-পর ) না 
উভয়ের মিলনের ফল। প্রকৃতপক্ষে বীজ বা শক্তি হইতেছে সমুদায় বর্ণমালা । ইহার 
অক্ষর সমূহ ত্রিভৃজাকারে বিশ্যস্ত হইয়াছে। তন্ত্রে ইহাকে অ-ক-থ ত্রিভুজ বলা হইয়াছে। 
ইহা একটি সমবাহু জ্রিভুজ, ইহার তিনটি বাছুর একেকটি যথাক্রমে অ, ক ও থ হইতে 
আর করিয়! ১৬টি অক্ষর হার! নিখ্িত। এইরূপে ৪৮টি অক্ষর এই ত্রিভুজের তিনটি 
সমান বাহ হইয়াছে । এই ত্রিভুজ কাম-কলার মুল স্ুত্রগুলির সহিত ঘনিষ্টভাবে 

শ্লষ্ট। যে বিন্দুগুলি কাম-কলার অঙ্গ তাহার! সংখ্যায় তিনটি__ছুইটি কারণ এবং 
তৃতীয়টি কাধ । 

(অ-পর) বিন্দু এবং বীজের পারস্পরিক ক্রিয়া হইতে উদ্ভূত নাদ এবং যে শব্-ব্রদ্ধ 
পর বিন্দুর বিভাগ কালে আত্ম-প্রকাশ করিয়াছিল তাহারা পৃথকৃ। শেষোক্তটিকে 
মহাঁনাদঘ বলিয়! বর্ণনা কর] যাইতে পারে । হুর্যালোক যেমন আমাদের পরিচিত সমস্ত 
রলীণ আলোকঘ।রা গঠিত তেমনই নাদের অভ্যন্তরে বর্ণমালার অন্তর্গত সমস্ত 
অক্ষরেরই অব্যক্ত ধ্বনি বর্মান। বস্ততঃ কুগুলিনী রূপে প্রকাশিত মহানাদ বা শব্দ-ব্রহ্ম 
মানুষের শরীরে অবস্থিত এবং ইহা শব্দোচ্চারণের যত্্রূপে কাজ করে। 

কোন মন্ত্রকে অবিরাম আবৃত্তি করিলে স্ুযুয়ানাড়ীতে তাহা অব্যক্তভাবে ধ্বনিত 
হয়। এই ধ্বনি প্রসারিত হইতে থাকে এবং অ-পর নাদের সহিত মিশ্রিত হয়-_কিন্ 
ইহা! উপরে স্থিত মহানাদের নিকট পৌছায় না বা পৌছাইতে পারে না। সাধারণ 
বায়ু মহানাঘ পর্বস্ত পেঁছাইতে পারে না, স্থতরাং মহানাদের কেন্ত্ এই বামুর প্রভাব 
হইতে মুক্ত। ইহা উল্লেখ করিলে কিছু আগ্রহের সঞ্চার হইতে পারে যে মহানাদ 
একদিকে ইহার উপরস্থ ব্রহ্মরন্ধে অবস্থিত পর-নাদের সহিত এবং অপরদিকে অপর নাদের 
সহিত সংঙ্গি্ । অ-পর নাদের অন্তনিহিত শক্তি জ-মধ্য অতিক্রম করিয়! স্বযুয্না নাড়ী 
দিয়া নিমদেশে প্রবাহিত হয়। সর্ব-নিয় স্থলে নাদ কুগুলিনীতে পরিণত হয়। বীজের 
যে সমস্ত ক্ষমতা কুগুলিনীতে ব্যক্তর্ূপ ধারণ করে তাহার! সকলেই অ-পর নাদের 
অন্তভূক্তি। 

৫১৬ 


শৈব ও শা লশ্ত্রদার সযূহ (শান্কদর্শন ) 


পর-বিস্দু যেস্থানে বর্তমান ধ্যানের পক্ষে তাহার বিশেষ মূল্য আছে। কারণ, ইহ 

একদিকে দেবস্তর এবং অপর দিকে জাগতিক এবং পর-জাগতিক অঞ্চলের মধ্যে 
ংযোগস্থল। এই স্থানে নাদ মহানাদ অথব! শব্ধ-ব্রন্ধে প্রবেশ করিয়াছে । ইহার 

পর অনস্তসত্ার অন্তর্গত &ৈব নাদ আছে, তাহার উপরে পর-নাদ, ইহা উন্মনী দৈব 
চৈতন্য এবং আলোক, আর নিম্নের মহানাদ জগং-ন্প্টির আদি কারণ। এই ছুইয়ের 
মধ্যে পর-বিন্দু আছে । এই জন্যই ইহাকে গুরুর ধ্যান করিবার পক্ষে শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র বলিয়া 
মনে কর] হয়। 

ইহা বলা যাইতে পারে যে বীজের মধ্যে বর্ণসমূহ আছে এবং যখনই মহানাদের 
নিম্ন-গামী ক্রিয়াশক্তি জ-মধ্য দিয়! মেরুদণ্ডের ভিতর প্রবেশ করে তখনই এইগুলি 
নিমেকার ছয়টি কেন্দ্রে তাহাদের নিজ নিজ স্থানে যাইতে বাধ্য হয়। মহানাদের 
বিকর এই বর্ণগুলি নাদ এবং বীজের মিশ্রণ বলিয়! বিশেষভাবে সক্রিয় শক্তির অধিকারী 
পর-বিন্দু হইতে জাত বিভিন্ন ক্রিয়া। মহানাদ বিন্দু-বূপ অবস্থার মধ্য দিয়া গমন না 
করিলে বিভিন্ন সজনী শক্তিগুলির জন্ম দিতে পারে ন।। 

সৃষ্টির ক্রমিক অবস্থাসমৃহ বর্ণনা করিতে আর বেশীদূর অগ্রসর হইবার প্রয়োজন 
নাই। লক্ষণদেশিকা, শঙ্করাচার্য এবং অন্তান্ত আচার্ধকর্তৃক প্রবতিত এঁতিহা অনুসরণ 
করিয়। উপরে যে বিঙ্লেষণমূলক বিবরণ দেওয়। হইল তাহাতে দেখা যায় যে, তিনটি নাদ 
আছে, যথা পর-বিন্দুর পূর্বগামী পর-নাদ, শব্ত্রক্ম নামে অভিহিত মহানাদ-__ইহা 
পরবিন্দুর বিভাগের পর আবিভূ্তি হয় এবং বিন্দু এবং বীজের মিলন হইতে জাত নাদ। 
সেইরূপভাবে ছুইটি বিন্ু আছে-_পর-নাদের কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে উৎপন্ন এবং স্জনী- 
শক্তি সমূহের অব্যবহিত পূর্ববর্তী কারণ শব-ব্রদ্দের উৎপাদক পর-বিন্বু এবং যাহা পর- 
বিন্দু হইতে উৎপন্ন এবং যাহাতে শিব-উপাদানের প্রাধান্ত সেই অপর বিন্দু। কলা 
সন্ধে ইহাই প্রতীয়মান হয় ষে, যে পরা-শক্তি দৈব সত্তার শাশ্বত সঙ্গিনী এবং যাহা হয় 
ইহাতে সম্পূর্ণভাবে বিলীন হইয়া! এবং ইহা হইতে পার্থক্যরহিত হইয়া নতুবা অংশতঃ 
আবিভূত হুইয়! সর্দাই ইহাতে থাকে তাহাই শ্রেষ্ঠ কলা। নিকুষ্ট অর্থে লইলে কলা 
নামটি পুর্বোল্িথিত বীজকেই বুঝায় । অর্থাৎ, বর্ণমালার অক্ষরগুলিকে যাহাদের 
প্রতীকরূপে ব্যবহার কর! হইয়াছে এবং যাহার্দিগকে অপর-নাদের মূল উপাদান অথব। 
অনাহত ধ্বনি বলিয়া কল্পনা কর! হইন্া থাকে তাহারাই এই অর্থে কলা । এই দৃষ্টি 
হইতে অ-ক-য জ্রিভুজ যাহাকে কুগুলিনী বলিয়াও বর্ণনা কর! হইয়াছে তাহাই 
কল। | 


€১৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 
৪ 

প্রাচীন আগমগুলিও সাধারণতঃ এইরূপ মৃত সমর্থন করে। বিশ্বাতীত শিবের 
সমন ক্রিয়ার সহাগ্নিকা পরাশক্তি যাবতীয় তত্বের সংগ্রহ ।২০ ইহার মধ্যেই সমস্ত 
বিশ্ব বিলীন থাকে । ইহা হইতে ব্রহ্মরন্ধের অন্তর্গত মহাশৃন্য বা ব্যাপিনী পর্যন্ত কতকগুলি 
নির্দি্উ-সংখ্যক শক্তি আছে। এইগুলি ক্রমান্বয়ে ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর ঠতত্ত এবং 
শক্তিকে নির্দেশ করে € যথা অনাশ্রিতা, অনাথা, অনস্ত এবং ব্যোম-ব্ূপা)। এইগুলি 
সবই অতিস্ক্মম এবং যোগিগণ ইহদিগকে নেতিবাচক শব্দদ্ধার] বর্ণনা করিয়া থাকেন। 
বস্ততঃ ব্রদ্মরন্ধের পরবর্তী কোন একটি শক্তিকেই সদর্থক শব্দ্বার! বর্ণনা করা যায় 
না। যে স্ুষুয়া নাড়ীর মধ্য দিয়া নাদ উপরে প্রবাহিত হয় তাহা ত্রহ্ম-রজে শেষ 
হইয়াছে ৭৪ 

পরাশক্তিকে কখনও কখনও অমাঁকল! বলিয়া বর্ণনা কর! হইয়াছে । তখন ইহার 
উদ্দিষ্ট অর্থ হইতেছে এই যে, ইহা! শাশ্বত, নিত্য-উদ্ভুত এবং অবিমিশ্র আনন্দ-ম্বরূপ, 
অন্তান্ত ষে সকল কলা হইতে জগৎ নিমিত হইয়াছে ইহা তাহাদিগকে পুষ্ট করে এবং 
'তাহাদের সহায়তা করে । যখন ইহা বিসর্গ হইতে মুক্ত হয় তখন ইহ! বাহা ব্যাপারে 
নিবিষ্ট হয় না এবং আপনাতেই অবস্থান করে। এই অবস্থায় ইহাকে শক্তি-কুগুলিনী 
বা পরালংবিৎ বল! হয় এবং যে নিজ দেহকে আশ্রয় করিয়া বিশ্রাম করিতেছে এমন 
একটি ঘুমস্ত সর্পের সহিত ইহার তুলন। কর! হয়। কিন্তু যখন ইহা আলোড়িত হয় তখন 
ইহ1 বিসর্গে পরিণত হয়। এই বিসর্গ ছুই প্রকার । স্থষ্টির পূর্বেকার যে আলোড়নকে 
আনন্দ বলে এবং যাহার প্রতীক হইতেছে “অ+ তাহা প্রথম প্রকারের এবং স্ষ্টির যে 
শেষ প্রচেষ্টা প্রাণের জন্ম দেয় এবং যাহার প্রতীক “ই” তাহ! দ্বিতীয় প্রকারের আলোড়ন । 
প্রাণ” অথব] “হ* কে কখনও কথনও “হংস' বা শু্ত' বলিয়াও বর্ণনা করা হয়। এই ছুই 
প্রকার বিসর্গ পর এবং অপর বলিয়! জ্ঞাত। নাগরী লিপিতে ইহাদিগকে বিসর্জনীয়ের 
(:) ছুইটি বিন্দুরূপে চিত্রিত কর! হইয়! থাকে । অমাকল1 এই ছুইটি বিন্দুকে প্রকাশ 
করে এবং বস্তসমূহের রূপ প্রকটিত করিবার জন্য বাহিরে প্রবাহিত হয়। জগতে যত 
রূপ আছে, তাহা জ্ঞাতারই হউক্‌, জ্ঞেয় বস্তরই হউক্‌ বা জ্ঞানের করণেরই হউক্‌, তাহ! 
অমাকলার সহিত অ-ভিন্ন, যদিও তাহা উহা! হইতে ভিন্ন বলিয়! প্রতীয়মান হয়। 
প্রত্যেক ক্ধপে যে বিশেষ প্রকাশ দৃষ্ট হয় তাহাই এই ভেদকে স্থচিত করে। স্ৃতরাং ষে 
কুঙ্গ-কুগুলিনী বিসর্গে প্রকাশিত তাহাই আবার সংবিৎ-রূপে আত্ম-প্রতিষ্ঠিত এবং গতি 
হইতে মুক্ত। প্রাণ কৃগুলিনী হইতেছে অপর প্রান্ত যেস্থলে সংবিৎ পূর্ণ এবং আত্মাশ্রয়ী। 
ইহার চরম কজন-ক্রিয়াকে পরবর্তী হৃষ্টি-প্রক্রিয়াসমূহ হইতে পৃথক করিতে হুইবে, কারণ 


৫১৮ 


শৈব ও শান সগ্ত্রযায় সমূ ( পাঙাদশন ) 


ইহা আত্মার পক্ষে নিজেকে নিজের মধ্যেই বাহিন্ে বিক্ষেপ কর! রূপ ক্রিয়!। স্ত্টির 
আদি কারণ যেহেতু আত্মার বাহিরের কোন বস্ত নয় সেই হেতু আত্মাই জগৎরূপ 
কার্ষের নিমিত্ত কারণ এবং উপাদান কারণ উভয়ই | হ্ষ্টি-ক্রিয়! আত্মার মধ্যেই ঘটিয়! 
থাকে, উহ! হইতে ভিন্ন দেশ-কালের ভিতরে নয়। যাহা বাহিরে নিক্ষিপ্ত হয় অর্থাৎ 
স্থষ্ট হয় তাহাঁও আত্মা হইতে পৃথক্‌ অন্ত-কিছু নয় । স্থতরাং এই জগতের সব কিছু- 
ভিতরের হউক অথবা বাহিরে হউক--আত্মার প্রকারভেদ মাত্র । যাহা নিক্ষিথ হয় 
তাহা ভিতরের এবং বাহিরের বস্তরূপে প্রকাশিত বহুসংখাক আভাস । এইভাবে 
ংবিৎ জড়জগতে পরিণত হইবার সময়ে ক্রমে ক্রমে বিভিন্ন আক্ষরিক ধ্বনিরূপে আত্ম- 
প্রকাশ করে। এইগুলি হইতেছে বিসর্গ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন আকার এবং তাহাদের 
মধ্যে যেটি শেষ প্রান্তে অবস্থিত তাহা হইতেছে “হ"। যে বিসর্গ কেবলমাত্র অপ্রকাশিত 
হু" তাহাকে কোন কোন গ্রন্থে (যেথ! কুল-গহ্বরে ) কামশক্তি অর্থাৎ অবাধ ইচ্ছা-শস্কি 
বলিয়া বর্ণন] কর] হইয়াছে । বিসর্গ এবং বাস্তব জগতের মধ্যে কোন যথার্থ প্রভেদ না 
থাকায়, তাহাদের মধ্যে কার্ধ-কারণ সম্বন্ধ আছে এরূপ মনে করা সম্ভব নয়। বিসর্গ 
নিজেই বাচ্য এবং বাচক এই উভগ়ব্ূপেই প্রকাশিত হয়। অসংখ্য রূপে প্রকাশিত 
হওয়াই বিসর্গের স্বভাব কিন্তু ইহা! প্রকৃতপক্ষে বহু বস্ত উৎপন্ন করে না। যে পরা শক্তি 
আনন্দ, ইচ্ছা» জ্ঞান এবং ক্রিয়া! এই নানাবপে প্রকাশিত হয় তাহাই বিসর্গের অস্তনিহিত 
কারণ ।২« 
স্ক্্ন বিসর্গ নিজেকে অবিরামভাবে প্রকাশিত করে এবং প্রত্যেক জীবের অস্তবে 
অবস্থিত নাদ (পর-বীজ ) রূপে ইহা! প্রাণের গ্যোতক এবং সকলেই অন্তরে ইহার অবস্থিতি 
অন্থভব করিয়। থাকে, যদ্দিও কেবল-মাত্র কোন কোন সময়ে ইহার বিশেষ আবির্ভাব 
ঘটিয়! থকে। বিসর্গ পরম দেবতার সেই গুণ যাহা নিত্যমুক্ত এবং যাহার পঞ্চবিধ 
দৈবক্রিয়। আছে, ষথা- স্যষ্টি, ব্ক্ষা, সংহার অথব। বিলয়, করুণা এবং আপনাকে ভিন্নরূপে 
প্রকাশ করা । 
যাহা বিশ্বাতীত অর্থাৎ অন্রত্তর ( অ) তাহা ( “হ* বা প্রাণ পর্ধস্ত ) বিসর্গ হবার শক্তি 
(হ ) রূপে আবিভূ্তি হয় এবং তাহার পর আপনাতে প্রত্যাবর্তন করিয়া! অদৃশ্ঠ প্রকাশে 
প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহাই ইহার নিজের শাশ্বত আত্মা এবং ইহাকে শিব-বিন্দু ( ম)-_ 
অ-হ-ম্‌ বলা হয় । এইভাবে যে বিশ্বচৈতন্য কেবল ঠচতন্যমাক্র তাহাতে “অহং-বোধ 
জন্মায়। দেহ প্রভৃতি অনাত্মার সহিত ইহার সম্বন্ধ একটি কালিক ঘটন1 এবং মনভ্ত্বের 
সাহায্যে ইহাকে ব্যাখ্যা কর! যায়। শুদ্ব-চৈতন্তে অবস্থিত অহংবোধ ইহাকে জীবের 
নিজ আত্ম! (শ্বাত্মন্‌ ) রূপে প্রকাশ করে । এই অহংবোধ শিব এবং শক্তি উভয় কেই 


৫১৯ | 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দশনের ইতিহাস 


নির্দেশ করে বলিয়া ইহার অখণ্ডতা বা! এঁক্য হইতে শিব এবং শক্তির এঁক্য যৌক্তিকতা 
সহিহ নিঃস্ত হয় । ইতংঃপূর্বে উল্লিখিত পূর্ণাহং-তার ইহাই গোপন তথ্য । 

প্রকাশ এবং বিমর্শের এঁক্য হইতেছে কাম বা রবি ( ক্ুর্য ) নামে অভিহিত বিন্দু । 
এই আদি বিন্দু হইতে ছুইটি বিন্দুর উত্তব হইতেছে বিসর্গের অবস্থা । এই ছুইটি বিন্দু 
চিৎ-কল। রূপে কল্পিত অগ্নি এবং সোষ (চন্দ্র)। ইহা! ছ্ৈতাবস্থা নহে কিন্তু একটি 
অখণ্ড সমগ্র বস্তর দুইটি অবিচ্ছেদ্য অংশের এঁক্য। বিন্দু এবং বিসর্গ এই দুইটি রূপের 
সম্মিলিত আকার দিব্য এক্যের অর্থযুক্ত প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু ইহাও সত্য 
যে চরম অবস্থায় এই ছুইটি অংশের জ্যোতিও ম্লান হইয়া যায়। এই বিন্বৃগুলির 
পারস্পরিক ক্রিয়! হইতে স্থধা অর্থাৎ সজনী শক্তি বিশিষ্ট তরল পদার্থ প্রবাহিত হয়। 
ইহাই আনন্দ-ন্বরূপ তথা-কধিত হার্ধকলা। অগ্নির তাপ যেমন মাখনের উপর ক্রিয়া 
করিয়া ইহাকে গলাইয় দেয় ও প্রবাহিত করে এই পারস্পরিক ক্রিয়াও সেই প্রকার । 
এক হইতেছে সৎ ছুই হইতেছে স্বয়ং-চেতনরূপে সৎ অর্থাৎ চিৎ-কলা এবং এই ছুইয়ের 
মধ্য হইতে প্রবাহিত হার্ধকল! আনন্দরূপে অনুভূত ্বয়ং-চৈতন্তের ফল। সুতরাং কাম- 
কলা বূপ সমগ্র বিদ্যা নিত্য স্জন-ক্রিয়ার নির্দেশক সচ্চিদানন্দ বিদ্যা এবং ব্রদ্ম-বিদ্া। 
যে আনন্দ প্রবাহিত হয় তাহার উপাদান সমস্ত হজনীশক্তির মূল-বন্ত। 

প্রকাশ এবং বিমর্শ অভিন্ন হইলেও মনে রাখিতে হইবে যে, প্রকাশ সর্বদাই নিরংশ 
এবং অবিচ্ছিন্ন আর বিমর্শ নিরংশ এবং অংশ-সমূহে বিভাজ্য উভয়ই । সুতরাং যখনই 
প্রকাশকে বিচ্ছিন্ন বলা হয় তখনই বুঝিতে হইবে যে ইহা গৌণ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। 
এই তিনটি বিন্দু একটি সাধারণ উদ্দেশ্ঠ সিদ্ধির জন কাজ করে বলিয়৷ ইহারা যেন একটি 
ত্রিভুজ গঠন করে। 

বিমর্শের অভ্যন্তরে প্রকাশ একটি শ্বেত বিন্দুর আকার ধারণ করে, এবং প্রকাশের 
অভ্যন্তরে বিমর্শ নাদ বলিয়া! অভিহিত রক্ত বিন্দুর আকার ধারণ করে। এই ছুইটি 
বিন্দু মিলিত হইয়া! কাম নামে অভিহিত আদিম বিন্দু গঠন করে এবং এইগুলি তাহার 
কলা । এই তিনের এক্য হইতেছে কাম-কল নামক বস্ত এবং ইহা হইতে শব্দ-সমূহ 
এবং তাহাদের উদ্দি্ট বন্তসমূহ দ্বার গঠিত সমগ্র জগতের উৎপত্তি হয়। 
: ভাস্কর-রায় তাহার বরিবন্তা-রহম্ত নামক গ্রন্থে কাম-কলা স্থন্ধে আলোচনা! করিবার 
সময়ে তিন বিন্দু এবং হার্ধকলার উল্লেখ করিয়াছেন। এইগুলির প্রকৃতি অত্যত্ত গৃঢ় 
বলিয়া বিবেচিত হয়। তাহার মতে শ্বেত এবং রক্ত বিন্দু দুইটি পুরুষ এবং স্ত্রী শক্তিকে 
নির্দেশ কশ্পে। 7 | 

অম্বভানন্দ বলেন যে হার্ধকল। দুইটি বিন্দুর মধ্য হইতে প্রবাহিত হয় এবং ইহা! বিমর্শ 


৪২৩ 


শৈৰ ও শীত সম্তরাদায় সমূহ ( শাজদর্শন ) 


বাস্ছরঘ্তার লহবী। প্রকাশ অগ্নির সহিত এবং বিমর্শ উহার তাপে গলিত যাঁখনের 
লহিত তুলনীয় । এই প্রধাহ উপরে লিখিত তথাকথিত হাধকল। তিন মাতৃকাদ্ধার 
গঠিত বৈদ্মব-চক্র হার্ধকল1 ও মাতৃকলার মিলিত প্রবাহ, এবং ইহা হইতেই ছত্রিশটি 
হুজ্জনকারী তত্বের উদ্ভব হয় ২ 


৫ 

শক্তি যখন পর! কুগুলিনী হইতে প্রাণ কুগলিনীতে পরিণত হয় তখন এখ্রিক ইচ্ছার 
দ্বাতন্ত্য তাহার আত্ম-নিমিত আবরণের পিছনে অন্তহিত হয় এবং আত্মা তখন চিদণুরূপে 
প্রথম আত্ম-প্রকাশ করে । একটি ক্রম-যুক্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া এই পরিণাম ঘটিয়! থাকে 
এবং ইহাতে শক্তিকৃণুলিনী মাতৃকা এবং বর্ণসমূহের আবির্ভাবের মধ্য দিয়া নিজেকে 
অধিক হইতে অধিকতর দৃঢ়ভাবে কুগুলীরুত করিয়! থাকে এবং প্রাণ অথবা শুন্যের স্তরে 
পৌছাইয়৷ থাকে । ইহা! স্থুবিদিত যে সংবিৎ প্রথমে প্রাণে পরিণত হইলে তবেই 
যাহাতে তত্বসমূহের উদ্ভব হইয়! থাকে সেই পরবর্তী নিয়মিত স্থ্িকার্ধ আরম্ভ হইতে পারে । 

প্রত্যক্ষজগৎ তত্বসমূহ দ্বার নিমিত কতকগুলি ভূবন অর্থাৎ জীবন এবং চৈতন্যের 
স্তর দ্বারা নিমিত। শাক্ত-শৈব আগমগুলিতে ছত্রিশটি তত্বের অস্তিত্ব স্বীকার করা 
হইয়াছে । ইহাদের মধ্যে নিয় হইতে গণনা করিয়া চবিবিশটিকে অশুদ্ধ বলিয়া, তাহাদের 
পরের সাতটিকে মিশ্র বলিয়া এবং বাকী পাচটিকে শুদ্ধ বলিয়৷ গণ্য কর] হয়। এই 
পরিকল্পনায় প্রকৃতি অশুদ্ধ তত্বের শেষ তত্ব, মায়। মিশ্র তত্বগুলির শেষ তত্ব এবং শিব 
শুদ্ধ তত্বগুলির শেষ তত্ব। প্রত্যেক তত্বের সহিত সংযুক্ত কতকগুলি ভূবন আছে ।২' 
ভুবনগুলির মধ্যে কোন কোন বিষয়ে পার্থক্য থাকিলেও তাহাদের মধ্যে সংগ্লিষ্ট তত্ব- 
সমূহের গ্রণগুলিরই প্রাধাগ্ত, কিন্তু পাতঞ্জল দর্শনের ন্যায় এখানেও শ্বীুত হইয়াছে ষে 
সকল স্থানেই সকল বস্ আছে (সর্বং সর্বাত্মকম )।২৮ ভুবনসমূহ হইতেছে চেতন 
জীবর্দের আবাসম্থল। এই জীবগুলির যে সকল শরীর এবং ইন্দ্রিয় আছে তাহার1 এমন 
বস্ত দরিয়া গঠিত যাহার জড়ত্ব তাহাদের কার্য অথবা জ্ঞান এবং তাহাদের পূর্ণতার 
মাত্রান্ূসারে হইয়া থাকে। পৃথিবীতত্বের ভূবনগুলি ব্রহ্মাণ্ড বলিয়! পরিচিত অঞ্চলকে 
নির্দেশ করে। প্রকৃতি পর্যস্ত তত্বসমূহের ভূবনগুলি দ্বার প্ররুত্যাণ্ড গঠিত । মায়া 
পর্যস্ত তত্বসমূহের তৃবনগুলি দ্বারা মায়াণ্ড গঠিত এবং তাহার পরবর্তী শক্তি পর্যস্ত তত্ব- 
সমূহের তৃবনগুলিঘ্বারা বৃহত্তম অঞ্চল শক্ত্যাণ্ড গঠিত।২৯ শক্তি-তত্বের পরে সীমাবদ্ধ 
কোন কিছু নাই, স্থতরাং অঞ্চলও নাই, কিন্ত যে শিব-তত্ব বিন্দু এবং শাস্ত্যতীত! কলার 
সহিত অভিম্ন তাহাতেই ভূবনসমূহ আছে এইরূপ বলা হইয়াছে। : 


€২১ 
৬৬ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দশনের ইতিহাস 


তত্বগথলিকে সাধারণতঃ চরম বস্ত বলিয়া মনে কর] হইয়া থাকে, কিন্তু তাহার উহা! 
নহে; কারণ, যে কলা এবং শক্তি সমূহ সমগ্র স্গ্টির নিয়ে অবস্থিত, বিভিন্ন শক্কির 
এককগুলির সহিত অভিন্ন এবং যেগুলি সমগ্রভাবে বিশ্বাতীত শিবের আত্ম-প্রকাশের 
ভুমি তাহাদের দ্বারাই এইগুলি গঠিত । সুতরাং বিশ্বের মূল বস্ত হইতেছে শক্তি এবং 
পূর্বে ষে প্রকারের বর্ণনা কর! হইয়াছে সেই প্রকারে প্রকাশ এবং হার্ধকলা যাহা হইতে 
তত্বগুলি উদ্ভৃত হইয়াছে সেই বস্তকে গঠন করে। 

আত্মা যখন অণুভাব প্রাপ্ত হয়, চিৎ যখন চিত্তের আকার ধারণ করে তখন তাহার 
এশ্বরিক গুণসমূহও হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। তিনটি সুবিদিত অশ্ুদ্ধতা বা মলের মধ্যে ইহাই 
প্রথম এবং ইহাকে আণব বলা হয়। ইহা পশুর অবস্থা এবং এই অবস্থায় সসীমতার 
বোধ প্রথমে আবিভূ্তি হয়। এই সসীমতার জন্য বাসনাসমূহের উৎপত্তি সম্ভবপর হয় 
এবং তাহার ফলে ভোগের দ্বারা এই বালনাসমৃহ ক্ষয় করিবার জন্ত কিছুকাল জড়দেহ 
ধারণের প্রয়োজন হয়। এই সকল বাসনাই হইতেছে কর্ম-মল। (৫) কার্ধরূপ 
শরীর অর্থাৎ কলা-শরীর, (1) সুক্ষ অথবা পূর্বষ্টক শরীর অর্থাৎ তত্ব-শরীর এবং (৫11) 
স্থল জড় শরীর অর্থাৎ ভূবনজ শরীর এই ত্রিবিধ শরীরের যাহা! কারণ তাহাকে মায়ীয় 
মল বল! হয়। বস্ততঃ আমাদের জ্ঞানে যাহ কিছু জ্ঞেঘ় এবং বাহা বলিয়। প্রকাশিত 
হয় তাহাকেই মায়ীয় মল বলা যাইতে পারে। কোন বস্তকে বিষয়ী হইতে ভিন্ন 
বলিয়া দেখানই এই মলের কার্য। কলা হইতে পৃথিবী পর্যস্ত সমস্ত তত্বগুলিই মায়ার 
শৃঙ্খল অথবা পাশ । ইহার] জীবাত্মার ভোগ সাধনের জন্য শরীর, ইন্দ্রিয়সমূহ, ভুবন, 
ভাব ইত্যাদি গঠন করে ।২* ম্ুতরাং সাধারণতঃ যাহা সংসার নামে বিদ্দিত তাহা 
পৃথিবী হইতে কল! পর্যস্ত বিস্তৃত, কিন্তু উহাকে অতিক্রম করে না । সংসারী জীবের 
মধ্যে এই তিনটি মল সর্বদাই বর্তমান । 

সংসারী জীবকে দার্শনিক পরিভাষায় স-কল বল হয়। কোনজীবযেতত্ববা 
ভূবনতুক্ত সে তাহার অন্থরূপ শরীর ও ইন্দ্রিয় সমূহ লাভ করে। এই সকল জীব সর্ব 
নিম্নভূমি হইতে কলা-ভূমিতে পর্যস্ত বর্তমান এবং তাহাদের কর্মান্ছসারে একভূমি হইতে 
অন্তভূমিতে জন্গাস্তর গ্রহণ করিয়া থাকে। জীবের অপর একটি অবস্থা আছে যাহাতে 
উপরে বণিত মারীয় মল অন্পস্থিত থাকে কিন্তু অন্য ছুইটি মল পূর্বেকার মতই থাকিয়া 
যায়। ইহা হইতেছে প্রলয়ের অবস্থা । ইহাতে জীব সমস্ত ত্ষ্টিকারী তত্ব হইতে মুক্ত 
থাকে, তাহার কোন শরীর থাকে ন1 এবং মায়াতে নিমগ্ন হইয়া থাকে । এই সকল 
জীবকে প্রলয়াকল অথবা প্রলয়-কেবলী বল] হুইয়! থাকে । ইহাক্া কর্মসংস্কার এবং 
সুলাবিস্তার সহিত জড়িত অশরীরী এবং ইন্দ্রিয়বিহীন অপু । কিন্তু যখন তত্বজ্ঞান, 


৫২২ পপ, 


শৈব ও শান্ত সম্প্রদায় সমূহ ( শাক্ততদর্শন ) 


বৈরাগ্য বা প্ররূপ অন্ত কোন উপায়ে জীব কর্ম হইতে মুক্তিলাভ করে তখন ইহা! আপবিক 
অবস্থায় থাকিলেও মায়াকে অতিক্রম করিয়া যায় । ইহা তখন মায়াকে অতিক্রম করে 
বটে কিন্ত মহামায়ার গণ্ভীর মধ্যেই থাকে এবং যতক্ষণ পর্ধস্ত না ঈশ্বরের চরম করুণা 
তাহার উপর ক্রিয়া করে এবং যে মৌলিক অজ্ঞান ইহার আপবিকতা৷ উৎপন্ন করিয়াছে 
গ্রবং অনন্ত ক্ষমতাসমৃহকে সীমাবদ্ধ করিয়াছে তাহাকে দূর করে ততক্ষণ পর্বস্ত সে ইহা 
হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারে না । আত্মার এই অবস্থা পশুর সর্বোচ্চ অবস্থা এবং 
ইহ] বিজ্ঞানাকল অথব' বিজ্ঞানকেবলী বলিয়। বিদ্ধিত। ইহাই টৈবল্য। এই জীবগুলির 
মধ্যে যাহাদ্দের কলুষ প্রায় শেষ হইয়া! আসিয়াছে তাহার। পরবর্তী কল্পের প্রথমে এশ্বরিক 
জ্ঞান লাভ করিবার উপযুক্ত হয়। জীবের প্রতি ঈশ্বরাহুগ্রহের ফলে যে এশ্বরিক প্রজ্ঞার 
উদ্ভব হয় তাহাই তথাকথিত শুদ্ধ বিদ্যার উৎস ।৩১ 

ইহার পর জীবের যে সকল অবস্থার আবির্ভাব হয় তাহার! পশুর নয় ম্বয়ং শিবের, 
কিন্তু কতকগুলি ন্যুনতা থাকিয়া ষায়। ছ্বৈতবাদিদের মতে এইগুলি হইতেছে অধিকার, 
ভোগ এবং লয় ।৩২ যথাকালে শুদ্ধ অবস্থায় জীবের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সহিত এইগুলি 
দুর হইয়া যায় ।৩৩ | 

প্রজ্ঞার আবির্ভাবের পর আধ্যাত্মিক পূর্ণতার যে সকল অবস্থা ক্রমান্বয়ে আবির্ভূত 
হয় জীবসমূহ যে সকল তত্বের সহিত সংগ্লিষ্ট সেইগুলিই তাহাদিগকে নির্দেশ করে। 
সর্বাপেক্ষা নিম্ন অবস্থ। হইতেছে মন্ত্র, ইহ। শুদ্ধ বিদ্যার অনুযায়ী । মন্ত্রেশ্বরদের অবস্থা 
হইতেছে উচ্চতর অবস্থা, ইহা ঈশ্বর-তত্বের অনুযায়ী । তদ্দপেক্ষা উচ্চতর অবস্থা 
হইতেছে মন্ত্রমহেশ্বরদের অবস্থা, ইহ! সদা-শিবের অনুযায়ী এবং তদপেক্ষা উচ্চতর অবস্থা 
হইতেছে শিবাবস্থা, ইহা শিব-তত্বের অনুযায়ী । শিবাবস্থা শুদ্ধ, পুর্ণ চৈতন্য বলিয়া! 
বিশ্বাতীত, কিন্তু বস্ততঃ চরম-তত্ব হইতেছেন পরম-শিব যাহাতে সমস্ত তত্বের সহিত 
এঁক্যভাব এবং সমন্ত তত্বাতীত ভাব একই সঙ্গে বর্তমান |৩৪ 

আত্মার ক্ষমতাসমূহের ন্যনতা আছে বলিয় আত্মা বদ্ধ। শ্াক্তদের মতে 
চিদ্দাকাশে মাতৃকা (জগতের মাতৃসমূহ ) বলিয়া কতকগুলি গুপুশক্তি নিহিত আছে 
এবং উপরে বর্ণিত মলসমৃহ এবং কল সকল অর্থাৎ ভাষার অক্ষর-ধ্বনি সকল ইহাদের 
অধীন। ইহাদের মধ্যে সর্বপ্রধান মাতৃক1! হইতেছেন অদ্বিকা। তাহার তিনটি কূপ 
আছে যথা-_জ্যে্ঠা, ৌন্দ্রী এবং বামা, এবং ইহার্দের প্রত্যেকেরই একটি বিশেষ ক্রিয়া 
আছে। কলাগুলি হইতেছে মানব-বাণার দেই সকল চরম একক যাহাদের সহিত 
চিস্তা অবিচ্ছে্চভাবে জড়িত। এই মাতৃকাগুলি প্রত্যেক জীবের সবিকল্পক অথব! 
নিবিকল্পক প্রত্যেক জ্ঞানক্রিয়াকালে একটি আভ্যন্তরীণ জ্ঞান ( অস্তঃপপ্থা মর্শ ) উৎপন্ন 


৫২৩ ] 


প্রচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


করে এবং এই জ্ঞান শব্ষের সহিত মিলিত হওয়ার ফলে একপ্রকার বিশৃজ্জলার স্যরি 
হয়। এই সকল শক্তির প্রভাবে জ্ঞান এইভাবে স্থুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ, অহঙ্কার, ভয়, 
আশা ইত্যাদি রূপ ধারণ করে। এইরূপে ভাবসমূহ জন্মগ্রহণ করে এবং অজ্ঞানাচ্ছন্ 
মানবাত্মাকে নিয়ন্ত্রিত করে । এই মাতৃকাঁগুলি হইতেছে গুপ্তবন্ধন | ইহান্রা জীবকে 
আবদ্ধ করিয়! রাখে, কিন্তু যখন তাহার। যথার্থভাবে জ্ঞাত হয় এবং তাহাদের স্বরূপ 
উদ্ঘাটিত হয় তখন তাহার! উহাকে সিদ্ধি অর্থাৎ অলৌকিক মানস ক্ষমতা সমূহ লাভ 
করিতে সহায়তা করে । 

তথাকথিত ব্রহ্গ-গ্রন্থি যতক্ষণ ন] ছিন্ন হয় ততদিন পর্যস্ত চিদাকাশে এই শক্তি-গুলি 
সক্রিয় থাকে । স্পষ্টই বুঝ! যায় যে এই গ্রন্থি চতন্ত এবং জড় বস্তর মধ্যে এঁক্য-গ্রদ্থি 
এবং মন্ুষ্যের মধ্যে অহং-বোধের উত্স। ইহা হইতেই কুগুলিনীর নৈতিক ক্রিয়া! যে 
কি তাহা বুঝিতে পার) যায়। ইহা বল] হইয়াছে যে মাতৃকাকে যদি তুষ্ট কর! না হয় 
এবং গ্রন্থিকে বদি দূর না করা হয় তাহা হইলে তত্ব-জ্ঞানলাভের পরেও জীব প্রমাদ 
বশতঃ ইহার পাশে বদ্ধ হইতে পারে এবং শব্দের জালে জড়িত হইয়া! পড়িতে পারে এবং 
পুনরায় তত্বজ্ঞান হারাইয়! বিপথগামী হইতে পারে । 

এশ্বরিক ইচ্ছা এক এবং অবিভক্ত, কিন্ত যখন এই ইচ্ছার স্তায়ই নিত্য নাদ হইতে 
মাতৃকা সমূহের উদ্ভব হয় তখন এই ইচ্ছ! বিভক্ত হইয়া! পড়ে । ইচ্ছা বা স্বাততস্ত্যের এই 
বিভাগ ইহার উপাদান হ্বরূপ জ্ঞানও ক্রিয়ার মধ্যে ভেদ উৎপন্ন করে। পরমাত্মা যখন 
আণবিক অবস্থা ধারণ করেন তখন ইহার স্বাতন্ত্র এবং বোধ বা বিমর্শের মধ্যে ষে বিচ্ছেদ 
ঘটে তাহাব্র সহিত বস্ততঃ এই ভেদ অভিন্ন । এই অবস্থায় জ্ঞান তিনটি অন্তরিক্জিয় 
এবং পীচটি বহিরিক্দ্রয়ে পরিণত হয় এবং ক্রিয়া পঞ্চপ্রাণ এবং পঞ্চ কর্মেন্দ্িয়ে পরিণত 
হয়। ইহার! যথাক্রমে দেহের জৈবক্রিয়] এবং প্রতিক্রিয়াসমূহের সহিত সংযুক্ত । 


এখন দ্বেতবাদী আগমগুলির দৃষ্টিভঙ্গী সংক্ষেপে বর্ণনা! করা যাইতে পারে। এই- 
গুলিতে ঈশ্বর-সত্। বা শিবকে এমন একটি শক্তির সহিত অবিচ্ছেগ্যভাবে সম্বদ্ধ বলিয়া 
মনে কর! হইয়াছে যাহা সম্পূর্ণ এশ্বরিক এবং ঈশ্বর-সত্তার সহিত অভিন্ন । সততা এবং 
শক্তি এই ছুইটিই চিৎ বা শুদ্ধ জ্ঞান-ম্বরূপ, ইহার! একই ঈশ্বর-সতার দুইটি বিভিন্ন 
প্রকার । শিব হইতেছেন সর্বাতীত এক্য। শক্তিও বস্ততঃ একই, যদিও ইহা যে 
সকল বস্তর উপর ক্রিয়া করে তাহাদের প্রকৃতি অনুসারে ইহা জ্ঞান এবং ক্রিয়ারূপে 
প্রতিভাত হয়। ইহা! শিবের ইচ্ছা! এবং স্বরূপতঃ তাহা হইতে অভিন্ন । বিন্দু হইতেছে 


৫২৪ 


শৈব ও শান্ত সন্প্রদায় সমূহ £ ( শাক্তার্শন ) 


শক্তির বাহিরে নিত্য জড়-বন্ত কিন্তু ইহার ক্রিয়ার অধীন । ইহা] শিব এবং শক্তির 
মতই নিত্য, এবং এই তিনটি তত্বকে সাধারণতঃ শৈব ধর্মের তিনটি রত্ব এবং ইহার 
পবিত্র ত্রিমূতি বলিয়। বর্ণনা করা হয়। হ্প্টিবিষয়ে (শুদ্ধ সৃষ্টিতে সাক্ষাৎ ভাবে এবং 
অশ্তদ্ধ স্থিতে পরোক্ষভাবে ) শিব হইতেছেন কর্তা, শক্তি তাহার যন্ত্র এবং বিন্দু জড় 
উপাদ্দান। শক্তি জড়-ন্বভাব নয় বলিয়া ক্রিয়ার সময়ে ইহাতে কোন পরিবর্তন হয় ন। 
কিন্ত বিন্দুতে হইয়। থাকে । প্রলয়ের শেষে এশ্বরিক শক্তির প্রভাবে বিন্দুতে ক্ষোভ 
উৎপন্ন হইলে তাহাতে যে পরিবর্তন হয় তাহা হইতে পাচটি কলার সষ্টি হয়। ইহার! 
অধিক হইতে অধিকতর বিস্তারবিশিষ্ট পাঁচটি সমকেন্দ্িক বৃত্বরূপে দেখা দেয়। এই 
কলাগুলি তত্ব এবং ভুবন নামে অভিহিত পরবর্তী অধিকতর উন্নতশ্রেণার বিকারের উদ্ভব 
হইবার আগেই উৎপন্ন হইয়া! থাকে । ইহাদের নাম যথ।ক্রমে নিবৃত্তি, প্রতিষ্ঠা, বিদ্যা, 
শাস্তি এবং শাস্ত্যতীত।। বাস্তব জগতের ( অর্থের ) দিক্‌ হইতে দেখিলে ইহা বিন্দুর 
পরিণামের একটি দিক। শব্দের পরিণাম হইতেছে আর একটি দিকৃ। এই দিক্‌ হইতে 
নাদ, বিন্দু এবং বর্ণকে বিন্দুর জ্রিবিধ প্রকাশ বলা যাইতে পারে । ইহার] ক্রমবর্ধমান 
বহিমুখিতা অনুসারে বিশ্যন্ত। | 

এই মতবাদে বিন্দু, মহামায়া এবং কুগুলিনী একার্থক। বিন্দু বিশুদ্ধ জড়-শন্ভি 
এবং ইহ! অবিশ্ুদ্ধ মায় ও প্রকৃতি হইতে পৃথক ।৩* ইহা বিশুদ্ধ স্যষ্টির উত্স এবং ইহাদের 
বিবর্তনের ছুইটি সমান্তরাল ধারা, শব্দ ও অর্থ, ইহা হইতে নিঃহ্যত হইয়াছে । স্থৃতরাং 
ইহার ম্বভাবের দুইটি দিক্‌ আছে বলিতে হইবে । পৌক্ষর আগমে বল! হইয়াছে__ 

শব্দবস্ত,ভয়াত্মাসৌ বিন্দর্নান্ত-তরাত্মকঃ 
মহামায়ার ক্ষোভ হইতে উৎপন্ন শাব সৃষ্টির ক্রম এইভাবে দেওয়। হইয়াছে 


(1) মহামায়! (1) সার্দাখ্য 
(11) নাদ (৮) ঈশ 
(111) বিন্দু (1) বিদ্যা 


এই পরিকল্পনাতে মহামায়া অ-বিক্ষুব্ধ অবস্থায় পর-বিন্দুকে নির্দেশ করে এবং নাছ 
এঁ বিন্দুর উপরেই যখন চিৎ-শক্তি: ক্রিয়া করিয়াছে তখন তাহাকে নির্দেশ করে। 
বিন্দুর উপর শক্তি এক অর্থে অবিরাম ক্রিয়া করে বলিয়্। ইহ! ধরিয়! লওয়1 যাইভে পারে 
যে (৫) এবং (৫8) বস্তুতঃ একই তত্বের ছুইটি আকার ( ইহাদের মধ্যে একটি যৌক্তিক 
দৃষ্টিতে অপরের পরবর্তা হইলেও বস্ততঃ ইহারা সমকালীন ), না মহামায়ার বিক্ষন্ধ 
অংশকে নির্দেশ করে। মহামায়া ম্বূপতঃ কৃগ্ডলিনী হইলে সেই একই কুগুলিনীর 
জাগ্রত এবং সক্রিয় অবস্থাই নাদ। মহামায়াক্রপে মহামায়ার সহিত পুক্রষ অর্থাৎ 


৫৭৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মানবাত্মার কোন সম্বন্ধ নাই কিন্ত নাদ বা কুগুলিনীরূপে ইনি সাধারণ অথবা! অসাধারণ 
পুক্রষের অস্তরে বাস করেন।ৎ৬ বস্বতঃ মহামায়ার পর] অথবা! সুক্ষ, পশ্বাস্তী, মধ্যমা 
এবং বেখরী-_ এই চতুবিধ বাক্রূপে বিবর্তন এবং অনাদ্দিকাল হইতে আদিম মলের 
প্রভাবে প্রত্যেক ষানবাত্মার অস্তনিহিত শিবত্বের নি্রভ হুইয়! যাওয়াঁ_-এই ছুইটিই 
সমানভাবে শাশ্বত ব্যাপার । পরা-বাকৃকে অতিক্রম করিয়া! যাওয়া! এবং এই মালিন্যের 
আবরণ অপসারিত হুওয়া একই ক্রিয়াকে নির্দেশ করে । ইহ] মানবাত্মার ঈশ্বর-ভাব 
প্রাপ্ত হওয়ার সমাপ্তির একটি নাম মাত্র এবং ইহাকে এই সম্প্রদায়ের দ্ৈতবাদী দৃষ্টিভঙী 
হইতে মানবাত্ম! কর্তৃক অবলুপ্ত বিশুদ্ধতার পুনঃপ্রাঞ্থি বলিয়! ব্যাখ্যা কর! হয়। এখন 
আমর] বুঝিতে পারি, যে কখনও কখনও মহামায়াকে এবং অন্য সময়ে নাকে শিব- 
তত্বের সহিত অভিন্ন বলিম্বা কেন বর্ণনা করা হইয়াছে । এইভাবে ব্য।খ্যাত হইলে 
বিন্দু (83:) অপর-বিন্দুকে বুঝাইবে এবং শক্কি-তত্বের একটি নাম হইবে। পরবর্তী 
বিকার সাদাখ্য ৫), মানব সদাশিবসমূহ, অণু-সদাশিবসমূহ, পঞ্চ ব্রহ্মা, দশ অণু (প্রণব 
ইত্যাদি) এবং ছয় অঙ্গ সংবলিত সদাশিবতত্ব ইহার অস্তর্গত। ইহাই অক্ষর বিন্দু 
এবং ইহা স্থূল অথচ অবিভক্ত ধ্বনিবূপ নাদকে নির্দেশ করে। ইশ নামে কথিত অবস্থা 
(ঘ) উপরে বাঁণত অক্ষর-বিন্দু এবং বখরী বাক্‌-এর মধ্যবর্তা অবস্থা, ইহা বিভিন্ন 
পদ্ধতিতে বিন্ন্ড বর্ণমালার অন্তর্গত যাবতীয় অক্ষরের সমবায়রূপে প্রকাশিত হইয়া 
থাকে ।২৮ আট মন্ত্েশ্বর এবং তাহাদের শক্তি সমূহ ( সংখ্যায় আট, বামা ইত্যাদি ) 
এই শ্রেণীর অন্ততূক্ত। শব ক্রমবিকাশের শেব স্তর হইল বিদ্যা (£)। যাবতীয় মন্ত 
এবং বিছ্যা, সমস্ত আগম এবং তথাকথিত বিচ্যা-রাজ্জীগণ (বিদ্যাসমুহের রাণীরা, 
সংখ্যায় সাত)-_ বস্ততঃ আমাদের পরিচিত সমস্ত শ্রাব্য এবং অন্থভব-গম্য শবসমূহ 
ইহার অন্তর্গত। 

ইহা লক্ষণীয় যে উপরে বপিত মহামায়াকে পরাশক্তি বলিয়া বর্ণনা কর! হইয়াছে 
এবং জগতের পরম-কারণ বল! হইয়াছে । ইহা নাদেরও হ্বভাব বিশিষ্ট এবং সুক্মনাদরূপে 
অপর-নাদ হইতে ইহাকে পৃথক করা যায় ।৯ 

ঘ্বৈতবাদীর1 শানব্দজ্ঞান সম্পর্কে স্ফোটবাদ এবং সমশ্রেণীর অন্তান্ত মতবাদ প্রত্যাখ্যান 
করিয়। নাদ্-মতবাদ সমর্থন কৰেন এবং এই মতবাদের ভিত্তিতে শান্দ-বোধের উৎপত্তিনূপ 
প্রক্রিয়। ব্যাখ্যা করিতে চেষ্টা করেন । রামকণ তাহার কারিকাগুলিতে দেখাইতে চেষ্টা 
করিয়াছে যে স্ফোটবা শব্দের অর্থ-সম্বন্ধে কোন উপযুক্ত ব্যাখ্য। দিতে পাবে না৷ 
একটি শবও তাহার অর্থের মধ্যে সম্বন্ধ সাধারণতঃ বাচ্য-বাচক ভাব বলিয়া জ্ঞাত--ফাহ। 
নির্দেশ বা প্রকাশ করে (বাচক) এবং যাহা ইহার দ্বার! নির্দিষ্ট ব। প্রকাশিত হয় 


€হত 


শৈব ও শান্ত সম্প্রহার দমুহ £ ( শীকতদর্শন ) 


(বাচ্য ) তাহাদের সন্বদ্ধ। কিন্ত আলোচ্য শব্দের বাচকত। কি করিয়া থাকে? শব 
যে বস্তকে নির্দেশ করে তাহ! বাহিরের, কিন্তু যে শব্দ উহাকে নির্দেশ করে তাহ। মানস 
( বুদ্ধ্যারঢ় )-_এই ছুইটি পৃথক এবং অ-সম। কোন শব্বই আপন স্বাভাবিক শক্তিতে 
ইহার অর্থের নির্দেশ করিতে পারে না, কিন্তু ইহা যখন বাহিরে অবস্থিত কোন বাচ্যেব্র 
একটি মানস প্রতিচ্ছবি (পরামর্শ ) গঠন করে কেবলমাজ্র তখনই ইহার নির্দেশ করিবার 
শক্তি প্রকাশিত হয়। পরামর্শজ্ঞান নামে অভিহিত এই প্রতিচ্ছবি বাহাকে চিত্তার 
আকার বল! হয় তাহার ত্বভাব-বিশিষ্ট এবং ইহ! বিষয়কে প্রকাশিত করে। এই 
পরামর্শ-জ্ঞান সংশ্লিষ্ট বস্তকে প্রকাশ করে বলিয়া কোন কোন দার্শনিক ইহারই নির্দেশ 
করিবার ক্ষমতা আছে এইক্প বলিতে চাহেন, কিন্তু তান্ত্রিক দার্শনিকদের মত এই থে 
যদিও বুদ্ধির ক্রিয়ারূপে পরামর্শ-জ্ঞান বাহ্‌ বস্তর উপর নির্ভর ন1 করিয়াই বর্তমান থাকে 
তাহা হইলেও ইহা পর-নির্ভরণীল বস্ত এবং ইহার পিছনে কতকগুলি কারণের ক্রিয়ার 
ফলে ইহা! উদ্ভূত হয়। যে সকল বাহ্‌ বস্ত পূর্বে ইন্দ্রিয় দ্বার! জ্ঞাত হয় নাই তাহাদের 
ক্ষেত্রে এরূপ ক্রিয়া হয় না। রূপ, রস ইত্যাদি বক্তার মানস পরামর্শের বিষয় হুইয়] 
থাকে । যাহার মধ্য দিয়] এইবপ পরামর্শের উৎপত্তি সম্ভব হইয়া থাকে তাহাকে নাছ 
বলা হয়। জড় শব নয় পরস্ যে নাদ পরামর্শজ্ঞান ( অন্তঃ সংকল্প ) উৎপন্ন করে 
তাহারই বাচকতা আছে। বক্তার বাগযন্ত্র ষে জড় শবকে প্রকট করে তাহা নাদকে 
প্রকাশ করে। এইরূপ ভাবে প্রকাশিত হইলে নাদ শ্রোতার মনে উদ্দিষ্ট বস্তর বোধ 
উৎপন্ন করে। নাদ সকল শব্দ এবং অর্থকে প্রকাশ করে । স্থতরাং চিন্তামূলক জ্ঞানের 
প্রত্যেক ক্রিয়াই শবগর্ভ | 

নাদ বহুসংধ্যক, প্রত্যেক ব্যক্তিতে ইহা অসাধারণ এবং ইহা কারণ হইতে জাত। 
প্রত্যেক পশু-আত্মার একটি নিজন্ প্রকৃতি আছে এবং ইহা অনাহত বিন্দু হইতে উৎপন্ন 
নিজের নাদকে অনুভব করিস থাকে । 


শাক্েরা মোক্ষের উপায় হিসাবে আত্ম-জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তায় বিশ্বাস করেন। ইহা! 
একটি নির্দিষ্ট শ্বভাব-বিশিষ্ট এইরূপ বল। হয় এবং ইহা প্রত্যভিজ্ঞার আকারে নিজেকে 
প্রকাশ করে। ইহার প্রথম অবস্থার বিভিন্ন ক্রম এইভাবে বর্ণনা কষা যাইতে 
পারে 2 

($) যে ব্যক্তির বৈরাগ্য প্রভৃতি জ্ঞানলাভের উপযোগী যোগ্যতা আছে সে 
আগমসমুছের উপদেশ শ্রবণ করিয়! আত্মা সম্বন্ধে পরোক্ষ জ্ঞান লাভ করে।: 


৫২৭ 


(8) যুক্তিযুক্ত বিচারেত্ন সাহায্যে সন্দেহ দূর হয়। 
(88) আত্মা এবং দেহ প্রভৃতি এক এই ভ্রাস্ত ধারণ! যাহা দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত 
হইয়াছে তাহা দূর হইবার পর জীবাত্মার সাক্ষাৎ জ্ঞান ব1 অনুভূতি হয়। 
(৫) সর্বশেষে প্রত্যতিজ্ঞার উদয় হয়। জীবাত্মা ও পরমাত্মার যে একাস্ত এক্য 
শাস্ত্রের সাহায্যে জান! যায় তাহাই ইহার বিষয় । এইভাবে যে প্রত্যভিজ্ঞার উদয় হয় 
তাহ সংসার-দশার মূল যে অজ্ঞান তাহা নাশ করে। 
: এই প্রত্যভিজ্ঞ! ভ্রান্ত নয়, ইহা অন্যান্ সবিকল্পক জ্ঞানের ন্যায় একপ্রকার 
বিকল্প । 
সমাধি হইতে উৎপন্ন নিবিকল্প জ্ঞান এবং পৃৰোক্ত প্রত্যভিজ্ঞার বিষয় একই, কিন্ত 
কারণ-ঘটিত উপাদানের পার্থক্যের জন্তই তাহাদের প্রভেদ। প্রত্যভিজ্ঞার ক্ষেত্রে ষে 
মন আত্ম! ভিন্ন অন্যান্ত সকল বস্ত হইতে নিবৃত্ত হইয়াছে এবং “আমি এবং তিনি” এই 
অবধারণের “আমি” এবং তিনি” এই ছুই শব্দের উদ্দিষ্ট বস্ত্বয়ের জ্ঞানে উপস্থিতির 
সাহাধ্য পাইযাছে সেই মনই জ্ঞানের করণ। সমাধিজ জ্ঞানে এইরূপ বস্তর উপস্থিতির 
কোন প্রয়োজন নাই । “ইহা! সেই ঘটই+ এই ববপ প্রত্যভিজ্ঞায় একটি অখণ্ড দ্রব্য বিষয় 
হইয়া থাকে । সাধারণ সবিকল্প জ্ঞান যাহার বিষয় ঘট এবং “ইহা একই ঘট" 
এই প্রত্যভিজ্ঞার বিষয় অভিন্ন কিন্তু কারণঘটিত উপাদানের প্রভেদের জন্য ফল 
বিভিন্ন হয় । নিবিকল্প জ্ঞান শুদ্ধ, সমস্ত বিকল্পের আশ্রয় এবং কোন বিকল্ের সহিত 
ইহার বিরোধ নাই, সেইজন্য ইহ! অজ্ঞানের ন্যায় বিকল্পকে ধ্বংস করিতে অসমর্থ । 
নিবিকল্পজ্ঞান বিচার হুইতে মুক্ত বলিয়া শুদ্ধ। নির্মল দর্পণে যেমন কোন বস্তুর 
সা্গিধ্য হেতু উহা তাহাতে প্রতিফলিত হয় সেইরূপ সংকল্পের সময় নানারপ আকারের 
আবির্ভাষের জন্য এই শুদ্ধজ্ঞানের পটভূমিতে সকলপ্রকার সম্ভাব্য বিকল্পের উদয় হয়। 
বৈশেষিকেরা যেমন অজ্ঞানকে কেবলমাত্র জ্ঞানের অভাব বলিয়া! মনে করেন কিংবা 
বেদান্তী যেমন অজ্ঞানকে অনিরচনীয় বলিয়া মনে করেন শাক্তের। তাহা করেন না 
তাহার! অজ্ঞানকে একপ্রকার সবিকল্পক জ্ঞান বলিয়া মনে করেন। আগমসমূহের 
মতে পরমাত্মা শুদ্ধ ঠতন্ত বলিয়! যাহা! জড় হইতে ইহাকে পৃথক করে তাহা ইহার 
শ্কুরক্রপতা (আত্ম-জ্ঞান )। ইহাই হইতেছে স্বাতন্ত্য। পূবেই দেখান হইয়াছে যে 
ইহার মাধ্যমে অবিদ্ধা। শ্রকাশিত্ত হয় এবং অবিদ্যার মাধ্যমে জগৎ প্রকাশিত হয়। 
অজ্ঞানের দুইটি বূপ-_ইহ।কে কারণরূপে দেখা যাইতে পাবে অথবা কার্ধরূপে দেখা 
যাইতে পানে । .কারণ-রূপে ইহা কাহারও নিজের আত্মার পরিপূর্ণতার প্রকাশাভাব। 
দেশ, কাল ও আকাব্রের সীমাবদ্ধতা হইতে মুক্তত1 এই পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্য, কিন্ত ইহাও 


€২৮ 


শৈব ও শাক্ত সম্প্রদান সমূহ (শাভদর্শন ) 


সত্য ষে এই সকল পদার্থও আত্মার আলোকেই প্রকাশিত হয় এবং উহাকে সীমিত 
করিতে পারে না! । যে আত্ম! কাল কর্ডক সীমিত নয় তাহ! যদি নিজেকে এইরবূপভাবে 
সীমিত বলিয়া প্রকাশ করে তাহা হইলে ইহাকে পূর্ণত্বের অ-প্রকাশই বলিতে হইবে । 
পূর্বেই যেমন বলা হইয়াছে ইহাই মূল অজ্ঞান সম্বন্ধে শাক্ত মত। কার্য হিসাবে অজ্ঞান 
হইতেছে যাহা আত্মা নয়, যেমন দেহ ইত্যাদি, তাহার আত্মাঁরূপে প্রকাশ । অজ্ঞান- 
বৃক্ষের ইহা একটি পল্লব মাত্র। 

গুরু কর্তৃক ব্যাখ্যাত আগম শ্রবণ কনিয়! যখন কেহ অথণ্ড আত্মা সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ 
করে তখন তাহা পরোক্ষজ্ঞান, আর যখন ইহা সাক্ষাৎভাবে সমাধি হইতে উৎপন্ন হয় 
তখন ইহা অপরোক্ষ। যে অপরোক্ষ জ্ঞানকে বিজ্ঞান বল! হয় একমাজ্র তাহাই 

ংসারের মুলকে বিনষ্ট করিতে পারে। দেহের সহিত একাত্মবোধ হইতে বাসনার 

জন্ম হয়। ইহ! বনু কাল ব্যাপিয়! থাকিলে দৃঢ় হইয়া! যায় এবং অশুদ্ধ মনে অপরোক্ষ 
জ্ঞানের চমক মুহৃত্ের জন্য দেখা দিলেও সেইন্মপ জ্ঞানকে দৃঢ় সঙ্কল্প উৎপন্ন করিতে দেয় 
না। সমাধির চরমাবস্থা হইতে যখন ইহা! উদ্ভুত হয় তখন প্রয়োজনীয় দৃঢ়তা আসে 
এবং এঁ বাসনাকে ধ্বংস করে। দেহের সহিত একাত্মবোধ প্রবল থাকায় শুদ্ধ আত্মার 
অপরোক্ষ জ্ঞানও সংশয় এবং ভ্রম দ্বার! দূষিত হইলে অজ্ঞান দুর করিতে এবং মোক্ষ 
উৎপাদন করিতে অক্ষম হয় । 

অপরোক্ষ জ্ঞান ব1 বিজ্ঞানের পূর্বে পরোক্ষ জ্ঞানের উদয় হয়। সমাধির স্থান এই 
ছুইয়ের মধ্যে । ইহা বল! হয় যে পরোক্ষ জ্ঞানেরও প্রয়োজনীয়তা আছে, কারণ সমাধি 
ঈপ্লিত ফল, অর্থাৎ যে সকল অজ্ঞ ব্যক্তির অপরোক্ষ জ্ঞান হয় নাই তাহাদের মনে 
প্রত্যভিজ্ঞারূপ অপরোক্ষ জ্ঞান জন্মাইতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, যে ব্যক্তি কখনও 
মণির কথ। শুনে নাই এবং ইহাকে বর্ণনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জানে না সে ইহাকে 
মণিকারের দোকানে দেখিলেও মণি বলিয়। চিনিতে পারিবে না| যে ইহ! দেখিয়াছে 
মনোযোগ দিলে কেবলমাত্র সেই ইহা! চিনিতে পারে । সুতরাং যে ব্রহ্ম সম্বন্ধে কিছু 
শুনে নাই স্বাভাবিক সমাধিও তাহাতে ব্রহ্ম-জ্ঞান উৎপাদন করিতে পারে না। 

অহ্বৈত-জ্ঞান অতি হুর্লভ। ধ্যান বা উপাসন। দ্বার আপনার এশ্বরিক আত্মার 
তুট্িসাধন করিয়। মন যতক্ষণ পর্ধস্ত না মায়ার মোহিনী শক্তি হইতে নিজেকে মুক্ত 
করিতে পারে ততক্ষণ পর্যস্ত ইহা আবির্ভূত হয় না ব1 হইতে পারে না। জীবের উপর 
ঈশ্বরের কপা বধিত হওয়া] এবং ইহাকে পবিত্র কর। যে কত প্রয়োজন তাহ! বাড়াইয়া বলা 

ভব। | 
আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার অগ্রগতির একটা ক্রম আছে । ব্বতম্ত্রানন্দ তাহায় মাতৃকা- 


৫২৯ 


৭ 


' প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


চক্রবধিবেকে বলিয়াছেন ষে শুদ্ধ জ্ঞানের উদয় হইলে জ্রের় বিষয়গুলি ইন্জরিয়-সমূহ্র 
নহিত এক হইয়া বায় এবং ইহাক ফলে বিষয়গুলি বিষয়র্বপে লুপ্ত হইতে আরম্ভ করে। 
কিন্তু জগৎ তখনও চলিতে থাকায় জ্ঞাতার বাহিরের “কিছু” রূপে হইস্তার বোধ 
একেবারে বিলুপ্ত হয় না । তাহার পরের অবস্থা হইতেছে ঈশ্বরের অবস্থা। এই 
অবস্থায় গতিশীল বস্তগুলি অন্থরূপভাবে কর্মেজ্জিয় সমূহের সহিত একীভূত হইয়। যায় এবং 
এই কর্মেন্দ্রিয়গুলি কর্তারূপ বিষয়ী যে বিশ্ব দেহের সহিত একীভূত হইয়াছে তাহার 
সহিত মিলিত হইয়া যায়। এই অবস্থায় যোগী কেবলমাত্র ব্যক্তিগত দেহের সহিত নয় 
পরস্ত সমগ্র বিশ্বের সহিত যিলিত হইয়া থাকেন। ইহার পর ষে সদা-শিবের অবস্থার 
আবির্ভাব হয় তাহাতে যে সকল ইন্দ্রিয়ে বিষয়গুলি বিলীন হইয়া গিয়াছে তাহার! 
প্রকৃত বিষয়ী অর্থাৎ আত্মার সহিত এক হইয়1 যায়। ইহা হইতেছে সর্বজ্ঞতার অবস্থা । 
শক্তি-অবস্থায় বিশ্ব-দেহ এবং সধজ্ঞ আত্মা এক হইয়া যায়। এই অবস্থাই চিৎ এবং 
অ-চিৎ-এর অন্ুপত্রত সাম্যাবস্থা। 


জষ্টব্য 

১। পণ্ডিত পঞ্চানন তর্করত্ব ব্রন্ম-স্থত্র এবং ঈশোপনিষদের উপর শক্তি-ভাস্কে 
(বারাণসীতে ১৮৫৯-৬১ শকাবে প্রকাশিত ) ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে তিনি 
যাহাকে শাক্ত দৃষ্টি ভঙ্গী বলিয়া মনে করিতেন তাহাকে প্রকট করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। 
এই চেষ্টা প্রশংসনীয়, কিন্তু শাক্ত সম্প্রদায়ের এতিহামূলক দৃট্টিভজী সমূহের কোনটিই 
ইহাতে ষথার্থভাবে প্রতিফলিত হয় নাই। 

২। সর্ব-সিদ্ধান্ত সংগ্রহ, শঙ্করাচার্ষকে যাহার প্রণেতা বলিয়া মনে করা হয়, হরিভদ্র 
এবং রাজশেখর প্রণীত যড় দর্শন-সমুচ্চয়, জিনদভ্ত প্রণীত বিবেক-বিলাস একই শ্রেণীর 
গ্রন্থ, কিন্ত ইহাদ্দের কোনটিতেই শাক্ত মতবাদ বিবৃত হয় নাই অথবা এমন কি ইহার 
নামও উল্লেখ কর] হয় নাই। 

৩। এই অবতরণ হইয়াছে পরা-বাক্‌ হইতে পশ্তস্তী এবং মধ্যমার মধ্য দিয়া 
বৈখরীর সুরে ( জয়রথের তন্ত্রালে।ক ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৪ এবং জে, সি, চ্যাটাজ্জণীর “কাশ্মীর 
শৈব মত-বাদ” পৃঃ ৪-৬ দেখুন )। এই অবতরণের ক্রষ সম্বন্ধে বিভিন্ন বিবরণ আছে 
কিন্ত উহাদের মূল ধারণা একই । পরশুরাম-কল্পস্ত্র ১।২, ভাস্কর রায় প্রণীত রর 
বন্ধ ৭, ৪৭ চিদ্বল্লী সমেত কামকল।-বিলাস, ৫০-৩; যোগিনী-হৃদয়-দীপিক]1 পৃঃ ১- 
সৌভাগ্য স্থভগোদয় ( দীপিকায় উদ্ধৃত পৃঃ ৭৯-৮২ ) ইত্যাদি তুলনীয়। 

৪ | পরোক্ষ জ্ঞান কি উপায়ে চিন্তায় পরিণত হয় সে সম্বন্ধে পতগুলির মত এই 


৫৩৩ 


শৈষ ও শান সম্প্রদায় লমূহ ( শীশ্তদর্শন ) 


যে ইহা শবের সহিত সম্বন্ধের জগ্যই হইয়া! থাকে । নির্বিতর্ক সমাধিঘ্বারা কোন বস্ত সম্বন্ধে 
ফোগীর ষে অতীঙ্জিয় অনুভব লাভ হুয় তাহা এক অসাধারণ প্ররুতির সাক্ষাৎ জান উৎপপ্ন 
করে, কিন্ত ইহা অন্তদের জানাইত্ডে হইলে ইহাকে শব্দের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে সম্মিলিত 
হইতে হইবে এবং তখন ভাষার মাধ্যমে সেই চিন্তা অন্যের নিকট চালিত হইবে। 

৫1 425215 06 006 13158170211527 [50686) ১৯২৩-২৪) ৫ম খণ্ডে প্রকাশিত 
গোপীনাথ কবিরাজের 11716 10০0০0106০0 70151010155 15 [0919 [01011030215 
পৃঃ ১০১৮১ ২২৩-৩২ দেখুন | 

৬। 91: 19100 ৬/০০৫:০:০--91৪56 2170 91081569) পৃঃ ১৫৫-৫৭, কল্যাণ, 
শক্তি-সংখ্যা পৃঃ ৬৩৭-৯৩ 

৭। জয়রথ তন্ত্রালৌোক ১1১৮ । শঙ্করের সৌন্দর্য লহরী (৫1৩৭) তে চৌধষট্িটি 
তস্ত্ের উল্লেখ আছে । লক্ষমীধরের ভাষ্যে উহাদের নামের তালিকা দেওয়া] আছে। 
সর্বোল্লাস এবং বামহেশ্বরতন্ত্রে অন্যান্য তালিকা দেখা যায়। 

৮। নাগানন্দকে একটি শক্তিস্তত্রের প্রণেতা বলিয়! মনে করা হয়। ভবরঘ্বাজকে 
অপর একটি শক্তি-স্ত্রের প্রণেতা বলিয়া মনে কর! হয় (কল্যাণ পৃঃ ৬২৪ ) এই সকল 
গ্রন্থের প্রণেতা কাহার! সে সম্বন্ধে কোন নিশ্চয়তা নাই । 

৯ | অগন্ত্যকে শ্রীবিদ্া-দীপিক1 নামক একটি গ্রন্থের রচয়িতা বলিয়া মনে কর] হয়। 
ইহাতে হয়গ্রীবের নিকট হইতে প্রাপ্ত পঞ্দশী-মস্ত্রের একটি ব্যাখ্যা আছে। 

১০ | জে, পি চ্যাটার্জী কাশ্মীর শৈব মত-বাদ পৃঃ ২৩-২৪ কে, সি, পাণ্ডে-_ 
অভিনবগুপ্ত পৃঃ ৭২ (পৃঃ ৫৫ তুঃ। ইহাতে হুর্বাস1 কৃষ্ণকে একটি অধৈতবার্দী আগম 
শিখাইয়াছিলেন বল! হইয়াছে ) 

১১। লপিত-বিস্তর রত্বের গ্রন্থকার-পরিচয়ে ছুর্বাসাকে সকলাগমাচার্ধচক্রবর্তা বলা 
হইয়াছে । নিত্যানন্দ তাহার ভাষ্তে বলিয়াছেন ষে, ছুর্বাসা, ধাহার অপর নাম ক্রৌধ- 
ভষ্টারক, প্রকতপক্ষে অনুরূপার গর্ভে জাত আগমশিক্ষকদদের ধিনি শিক্ষক সেই শিব 
্বয়ং। শক্তি-স্তোস্্র বোম্বাই হইতে ( নিঃ সাগর ) প্রকাশিত হইয়াছে । যে পরশভভু- 
স্তোজ্রের একটি পুঁথি আমি পরীক্ষা করিয়াছিলাম তাহা নান? খণ্ডে বিভক্ত এবং এই- 
গুলিতে ক্রিয়া-শক্তি, কুগুলিনী, মাঁতৃক প্রভৃতির আলোচনা আছে। ইহাতে পরম- 
শিবকে জগতগুরু বলিয়] বর্ণনা! করা হইয়াছে । যাহ। তাহারই প্রকাশ এবং যাহা এতদিন 
তাহার হৃদয়ে গুধ ছিল সেই ব্রহ্ম তত্বকে প্রকাশ করিবার জন্ত তিনি মহাঁমাতৃক! 
শিক্ষা দরিয়াছিলেন । এই স্তোত্রেও ছুর্বাসাকে ক্রোধ ভষ্টারক বল] হইয়াছে । কাশ্মীরের 
বিখ্যাত শৈব গুরু সোঁমানন্ন দুর্বাসার বংশে জাত এইবপ বলা হয়। 


€৩১ 


' শ্রীচ্য ও পাশ্টাত্য দর্শনের ইতিহাস 


১২। সৌভাগ্য-ভাস্করে ঘতসংহিতার উল্লেখ আছে। 

১৩। ইহা নুস্পষ্ট যে (হারীত বংশের এবং হারীতায়ন নামে খ্যাত ) স্থমেধার 
গ্রন্থকে প্রকৃত পক্ষে ত্রিপুরা-রহন্তের সঙ্গেই অভিন্ন বলিয়! মনে করিতে হইবে, পরশুরামের 
কল্পক্মজের সহিত নয়, যেমন কেহ কেহ মনে করেন, কারণ কল্পস্থত্র দত্তাত্রের এবং 
পরশুরামের মধ্যে কথোপকথনের আকারে লিধিত নয় এবং হ্থমেধাকে ইহার প্রণেতা 
বলিয়। উল্লেখও কর! হয় না, কিন্তু ত্রিপুর1-রহশ্য এরূপ কথোপকথনের আকারে লিখিত 
এবং হারীতায়ন স্থমেধাকে ইহার প্রণেতা বল! হয় । 

১৪। ম. ম. পণ্ডিত নারায়ণ শাস্ত্রী খিন্তে সম্পাদিত শঙ্করারণ্যের ভাষা সমেত শ্রী- 
বিচ্া-রত্ব-স্থত্র ( সরম্বতী ভবন গ্রস্থমালা, বারাণসী ) দেখুন । 

১৫। শিব-দৃষ্টি পৃঃ ৯৪ 

১৬। সৌভাগ্য-ভাস্কর__পৃঃ ৯৬, ৯৭ ইত্যাদি 

১৭। ত্রিপুরা-রহস্ত, জ্ঞান-থণ্ড, চতুর্দশ পরিচ্ছেদ পৃঃ ৩৩-৩৭ 

১৮। এ, ষোড়শ পরিচ্ছেদ, পৃঃ ৬৪-৯৪ এবং সপ্ধদশ ও অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ 

১৯। এই প্রসঙ্গে “কলা” শব্দটির অর্থ ঈশ্বরের বিশ্বাতিক্রমী, সর্বাতীত শক্তি এবং 
বিশ্বের জড় উপাদান এবং শক্তি রূপে কল্লিত এবং বিশ্বব্যাপী তত্ব এবং ভুবনসমূহের 
সহিত সন্বন্ধযুক্ত বিন্দু হইতে শক্তি রূপে উৎপন্ন পঞ্চ কলা হইতে ইহার প্রভেদ করিতে 
হইবে । | 

২*। শিবেচ্ছক্া পরাশক্তিঃ শিব-তত্বৈকতাং গত! 

ততঃ পরিস্ফুরত্যাদে সর্গে তৈলং তিলাদ্িব 

২১। প্রপঞ্চ-সার ১।৪৬। কালের যে ক্রিয়াশক্তি আছে তাহা অন্যন্ত্র ব্যবহৃত 
কাল-প্রেরিতয়! শব্ধ হইতে বুঝা ষায়। প্রয়োগ ক্রম-দীপিকায় (পুঃ ৪১২ ) এই শব্দটির 
এইব্প ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে : প্ররুতেরের প্রলয়াবস্থাতো৷ যৎ পরিপরকদশাহনস্তরম্‌ 
হুটুম্ুখৈঃ কর্মভিরুততিন্তং রূপং ষোইসৌ বিন্দুঃ | 

২২। স্থচ্ছন্দতম্ত্রের মতে প্রণবের ব্যাপিনী-কলার সহিত মহাশুন্য অভিন্ন । কিন্ত 
কোন কোন লেখক মহাশৃন্তকে প্রাথমিক নাদের সহিত অভিন্ন বলিয়াছেন । পূর্ণানন্দের 
শ্ীতত্ব-চিত্তামণি দ্রষ্টব্য । চন্দ্রের ষোড়শীকল। এবং সপ্তদশী কল। এই ছুইটি শব্ধ বিভিন্ন 
গ্রন্থে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে । যখন পরম নাদকে (311) ষোড়শী কল অথবা 
অমাঁকল! বল। হয় তখন “সগুদশী কলা” শবটি পরাশক্তি অথবা সমন! বুঝাইতে ব্যবহৃত 
হয় (2) কিন্তু অন্য সময়ে উন্মানী শবটি সথদশী কল! বুঝাইতে ব্যবহৃত হয় এবং শক্তি 
এবং শুন্য এই দুইটি শব্ষ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। 


৫৩২ 


শৈব ও শা সম্প্রদায় সমূহ £ ( শীক্তদবর্শন ) 


২৩। এই অবস্থা যাহাতে কালকে সাম্য বল! হয় তাহা সমনার একটি কলা এবং 
নিত্য (যেহেতু ইহা! মহা-প্রলয় দ্বারা কোনরপে ক্ষুব্ধ হয় ন1) এবং উহা তথাকথিত 
পরক্রদ্মের অবস্থা মাত্র । ইহা! শিবের অবস্থা নয়। এখানে পরমাণুসমূহ মহাপ্রলয়ে 
অবস্থান করে কারণ ইহার1 এখনও শিবের স্বরূপে রূপান্তরিত হয় নাই । পশুর গতি 'এই 
স্থানে আরম্ভ হয়। তত্ত্রালোক, ষষ্ঠ অধ্যায় পৃঃ ১৩৮-১৬৭ ভ্রব্য। 

২৪। তন্বালোক ৮ম অধ্যায় ৫৪ ০০-৫ 

২৫। তন্ত্রালোক ৩য় অধ্যায় পৃঃ ১৩৬-৪৮ 

২৬। ভায্সমেত কাম-কলা-বিলাস-ঙ্গোক ৩-৮ ত্রষ্টব্য পৃঃ ৪-৯, যোগিনী হাদয়- 
দীপিকা, পৃঃ ৮-১২ বরিবস্তা রহস্য পৃঃ ৪৮-৬০ 

২৬ক। তত্বসমূহ এবং তাহাদের সহিত সম্বন্বযুক্ত ভূবনসমূহের জন্য মৃগেন্্র-আগম 
বিছ্যা-পাদ পৃঃ ৩৪৪-৪৫৬ ( কষ্কশাস্ত্রী এবং হুত্রহ্গণ্য শাস্ত্রী সম্পাদিত) দ্রষ্টব্য । 
সগ্ভজ্যোতি প্রণীত ভোগকারিক! শ্লোক ১০৯-১১৩) বত্ব-স্ত্রয় শ্লোক ৮৯-১১৮ টি, এ, 
গোপীনাথ রাও, এলিমেপ্টস্‌ অফ হিন্দু আইকনোগ্রাফি, ২য় খণ্ড (২য় ভাগ) পৃঃ 
২৯২-৭ 7 মাতৃকা চক্র-বিবেক চতুর্থ অধ্যায় পৃঃ-৮৬-৯৩। 

২৭। যোগস্ুত্র ৩।১৪ বর ব্যাস-ভাস্ক তুঃ। 

২৮। চার অগ্ডের জন্ত তত্ত্রসার (পৃঃ ৬৪-৬৫ ) ভ্রষ্টব্য। বিভিন্ন অগুগুলি বিভিন্ন 
শক্তি কর্তৃক উৎপন্ন এবং বিনষ্ট হয়। ব্রহ্মাগ্ড কালাগ্রিদ্বারা বিন এবং ব্রহ্মা! বা শ্রীকঘার' 
সষ্ট হয়| প্ররুত্যণ্ড এবং মায়াণ্ড কাল-তত্বের প্রত শ্রীক্ঠ কর্তৃক বিনষ্ট এবং স্ষ্ট হয় । 
শক্তির শ্রেষ্ঠ অণ্ড অঘোরেশ কর্তৃক বিনষ্ট এবং স্থষ্ট হয়। তন্বালোক, ষ্ঠ অধ্যায় 
পৃহ ১৭০-৮২ দ্রষ্টব্য । 

২৯। তিনটি মল সম্বন্ধে প্রত্যভিজ্ঞা-হৃদয় পৃঃ ২১-২২ দ্রঃ; সৌভাগ্যভাস্বর 
পৃঃ ৯৫) শিব-সুত্র-বাতিক € ১ম অধ্যায়, ২-৩)) শিবন্ত্র বিমশিনী € ১ম অধ্যায় 
২-৩) আণব ছুইপ্রকার-__আত্মায় শুদ্ধ অহস্তার বিলোপরূপে ইহা একপ্রকার এবং 
অনাত্মায় অশুদ্ধ অহস্তার আবির্ভাব রূপে ইহা! দ্বিতীয় প্রকার । আত্মা হইতে স্বাতন্ত্র্য 
চলিয়া] যায় এবং বোধ থাকে অথবা বোধ চলিয়। যায় এবং স্বাতস্ত্র থাকে। মায়ীয় 
মলকে কখনও কখনও ভেদ বল! হইয়াছে, এই ভেদেের অর্থ একের মধ্যে বহর আবির্ভাব । 
ইহা! মায়! এবং তৎ্গ্রস্থত একত্রিশটি তত্ব হবার! গঠিত। কার্ম-মল হইতেছে অনৃষ্ট এবং 
ইহ। পুণ্য ও পাপের কোন একটি হইতে পারে । বিভিন্ন গ্রন্থে এই মলগুলির অর্থ-সন্বন্ধে 
কিছু প্রভেদ আছে। 

৩০। পরিণত বিজ্ঞানাকলের প্রজ্ঞা ষে আদিম কলুষ আত্মায় জিপ্ত ছিল তাহা 


£৩৩ 


, প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সমাগ্চ হুইয়ছে কি না ওদমূসারে তীক্ষ অথবা মুছু হইয়া থাকে। প্রথম শ্রেণীর 
আত্মাগুলি বিদ্যে্বরের পদবীতে উন্নীত হয় এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর আত্মার! মন্ত্র হয়। যে 
সমস্ত সকল এবং প্রলয়াকল আত্মা দিগের মল সমাঞ্ত হইয়া! গিয়াছে তাহারা, ঈশ্বরের 
কপার অধিকারী হয় এবং ($) মন্ত্রেশ্বর (এবং আচার্য ) দের পদে উন্নীত হয় এবং বিভিন্ন 
ব্রক্মাণ্ডের অংশসমূহ অর্থাৎ পৃথিবী-তত্বের অধিকারে অবস্থিত বিভিন্ন তলের রক্ষণী- 
বেক্ষণের ভার প্রাপ্ত হয় এবং পৃথিবীকে অতিক্রম করিয়া ষে সকল উচ্চতর তত্ব আছে 
তাহাদের অধিকারে অবস্থিত তলসমূহের উপর ক্ষমতাবিশিষ্ট (48) ভুবনেশ্বর বা 
লোকেশ্বরে পত্রিণত হয়। যে সকল প্রলয়াকলে মল অসমাপ্ত রহিয়াছে কিন্ত কর্ম সমাপ্ত 
হইয়াছে তাহার পরবর্তী কল্পে পূর্য্টক নামে কুক্্ম শরীরের সহিত মিলিত হয়, জড়দেহ 
ধারণ করিতে এবং জন্ম হইতে জন্মাত্তরগ্রহণ করিতে বাধ্য হয়। এই ভাবে ভোগের 
মধ্য দিয়! তাহাদের মল শেষ হইয়া যায়। শাক্ত কিংবা শৈবদের আত্মার এই ত্রিবিধ 
স্বভাবে বিশ্বাসকে পাশ্চাত্যের 9:08 এবং তাহাদের পূর্ববতী 0:91০1দের বিশ্বাসের 
সহিত তুলনা করা যাইতে পারে-_ইহা এই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ষে এই বিভাগ 
ভগবৎকপার বিভিন্ন মাত্রার অন্ব্ূপ এবং কোন মৌলিক বিভেদ নয়। ইহা কিন্তু সত্য 
যে দ্বেত-বাদিদের মতানুসারে শিব এবং পরম-শিবের মধ্যে কিছু ভেদ আছে। 
মানবাত্মাদের মধ্যে মৌলিক ভেদ আছে এই ড্যালেনশিয় মতবাদের অনুরূপ 
মতবাদ ভারতবর্ষেও আছে। কোন কোন জৈন, বৌদ্ধ এবং বৈষ্ণব সম্প্রধায়ের 
লেখকদের মতবাদ হইতে ইহা বুঝা যায় কিন্তু আগমসমূহে এই মত গৃহীত হয় 
নাই। 

৩১। শ্রী কণ্ঠের রত্ব-ত্রয়, প্লোক ২৭৬-৯৫ 

৩২। শুদ্ধ শ্রেণী বা শুদ্ধ অদ্ধা হইতেছে মায়ার প্রভাবের বাহিরে শুদ্ধ জড় বস্তর 
উচ্চজ্তরের জগৎ। 

৩৩। প্রত্যভিজ্ঞাহদয় পৃঃ ৮ 

৩৪। যে সকল শৈব সপ্রদ্দায় ৩৬টি তত্ব স্বীকার করে তাহাদের সকল আগমেই 
মায়! এবং প্রকৃতির মধ্যে পার্থক্য করা হইয়াছে । শ্বেতাশ্বতক্স উপনিষদে তাহাদিগকে 
অভিন্ন বল! হইয়াছে (৪1১০) “মায়াং তু প্ররুতিং বিগ্যান্মায়িনং তু মহেশ্বরম্” | 
আগমসমূহে লাধরাণতঃ মায়! নিত্য কিন্ত প্রকৃতি নিত্য নহে; কারণ প্রকৃতি কলা হইতে 
উৎপন্ন আবার এই কলাই মায়া হইতে উৎপন্ন । কিন্তু তম্ত্রসমুহের কোন কোন স্থানে 
তাহাদিগকে অন্তভাবে চিন্তা করা হইয়াছে । প্রকৃতি সাধারণভাবে জড় তত্বকে 

চুবুঝাইয়। থাকে এবং মায়া এই তত্বের অধীনে বিকল্পসমূহের মধ্যে একটি । 


৫৩৪ 


শৈব ও শাক্ত“সম্প্রদায় নমুহ্‌ ১ ( শীভদর্শন ) 


৩৫। উমাপতি স্বতন্ত্রতত্ত্রেরে একটি কারিকার (তাহার সঙ্কলনের চতুধিংশতি 
কারিকা ) ভাস্তে যে চীক। উদ্ধৃত করিয়াছেন তাহাতে বল] হইয়াছে £ 

কুগুলিনী-শব্ধ বাচ্যন্ত ভূজঙ্গ-কৃটিলাকারেণ নাদাত্সনা ্বকার্ষেণ প্রতিপুরুষং ডেদেনাই- 
বন্থিতো ন তু স্বরূপেণ প্রতিপুরুষমবস্থিত: | মূল শ্লোকটি এইরূপ 

যথা কুগুলিনী শক্তির্মায়! কর্মানুসারিণী 
নাদ বিন্দাদিকং কার্যং তন্ত। ইতি জগৎ-স্থিতিঃ | 

৩৫ অঘোর শিবাচার্ধ শ্রীকণের রত্ব-ত্য়ের ( প্লোক ৭৪) উল্লেধিনী নামক তাহার 
ভাস্তে অক্ষর বিন্দুকে পশ্ঠস্তী বাক্‌ এর দহিত অভিন্ন বলিয়াছেন । 

৩৭। হশ অবস্থাকে মধ্যমা বাক্‌-এর অস্রূপ বলা যাইতে পারে। ইহা অন্তঃ 
সপ্যল্পরূপ এবং ইহার অংশ সমূহে একটি আদর্শ বিস্তাস আছে। 

৩৮। কখনও কখনও স্ুপ্্নাদ বিন্দুকেও বুঝাইয়া থাকে। ভোজের তত্ব 
প্রকাশের ভাস্তে বল! হইয়াছে যে নুক্ম নাদ শক্তি-তত্বের অংশ । এই মত সর্বজ্ঞ শভ 
কর্তৃক সিদ্ধান্ত-দীপিকায় সমথিত হইয়াছে । অঘোর শিবাচার্ধ তাহার রত্ব-ত্রয়ের ভাঙে 
সুক্ষ নাদকে বিন্দুর প্রথম প্রকাশ (কেবলমাত্র নাদ বলিয়া অভিহিত ) এর সহিত অভিন্ন 
বলিয়াছেন। ইহা পর নাদের সহিত একার্থ বোধক (রত্ুত্রয়, কারিক1 ২২) 


্রন্থুতিবরণী 


কাম-কলা-বিলাস, চিদ্বন্্ীমেত। সদাশিব মিশ্রসম্পাদিত। জানানন্দ, অবধুতঃ 
মন্ত্রযোগ ( বাঙ্গলা, ) কলিফাতা। 

মাতৃকা"চক্র-বিবেক--সম্পাদক ললিতাগ্রসাদ দক্রল, বারাণনী। গ্রপঞ্চলার। 
পন্সপাদের ভান্তসমেত। সম্পাদক এ খ্যাভালন। শারদা-তিলক-_রাঘব ভট্টের 
ভান্টসমেত। সম্পাদক মূকুন্দ ঝা বকৃশি, বারাণসী | 

রায় ভাস্কর : সেতুবন্ধ ( আনন্দাশ্রম সংস্কৃত গ্রস্থমালা, পুণা) উদ্ভফ, শ্যার জন : 
শক্তি ও শাক্ত। 

অভিনব £ তত্ত্রদার। সম্পাদক, মুকুন্দরাম শাস্্ী, শ্রীনগর । জ্ঞান-খ্ড : ত্রিপুরা 
রহন্ত। সম্পাদক গোপীনাথ কবিরাজ, বারাণদী। বরিবস্তা রহস্-_সম্পাদক ঈশ্বরচন্ 
শান্্রী, ক্সিকাতা যোগিনী হাদয়-দীপিকা-_সম্পাদক, গোপীনাথ কবিরাজ বারাণসী। 


স্রত্জীস্স হা ও্ড 
ভারভীয় চিন্তাধারার অন্যান্য কয়েকটি উদ্ভাবন 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিস্তাধার! 


ক। গণিত 
লেখক £ এ. এন. সিংহ ডি. এস্-সি 


অধ্যাপক এবং গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যক্ষ 
লন্ষে। বিশ্ববিভালয়ঃ লক্ষ 


পরিশিষ্ট ভারতীয় গণিতের কয়েকটি অসাধারণ সম্পাদন 
লেখক £₹ আর. শুক্র, এম, এ. পি-এইচ. ডি (লগুন ) 
সহকারী অধ্যাপক, গণিত, পাটন। কলেজ, পাটনা . 


ৰ খ। অন্যান্য বিজ্ঞান 
লেখক £ বি. বি* দে ভি* এস-সি (লগুন ), এফ, আর. আই. সি (লগুন), 
এফ. এন. আই, 
শিক্ষাবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা, মাদ্রাজ 
ভারতীয় €সৌন্দর্যতন্ত 


লেখক £ কে. সি. পাণ্ডে 


ভারতে এষঙ্লামিক চিন্তাধারার ক্রমবিকাশ 
লেখক £ ডাঃ তারা, এম্‌* এ.» ভি* ফিল্‌. ( অন্সন ) 
ভারত সরকারের শিক্ষাসম্পর্কে পরামর্শদাতা 
সহায়ক । এস, কামিল ছলেন, এম্‌ এ, উকিল, ঘোসিপুর, গোরক্ষপুর' উত্তর প্রদেশ 


শিখ দর্শন 
লেখক £ ভাই যোধ সিং, এম্‌. এ. 
অধ্যক্ষ, খালসা কলেজ, অস্বতসর 
দমসামস্সিক ভারভীয় চিন্তাধার। 
ক। লেখক £ ডাঃ পি টি. রাজু 
খ। ্ ভাঃ কে, এ, হাকিম 
হার়হাবাদের ওস্মানিয়। বিশ্ববিভালয়ের প্রাজন অধ্যাপক 


মগ গৰিচ্ছোে 
প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা 
অ। গণিত 


১। উপত্রমণিক? 


প্রাটীন ভারতের গণিতশাস্ত্রের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আধুনিক গবেষণার ফলে 
জান গিয়াছে যে, প্রাচীন ভারতীয়েরাই পাটীগণিত, বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতি-_ 
গণিতশাস্ত্রের এই বিভিন্ন শাখার ভিত্তি স্বাপন করিয়াছিলেন । দেড় হাজার বৎসর 
পূর্বে ভারতে প্রতিষ্ঠিত এই বনিয়াদের উপরই বর্তমানকালে গণিতশাস্ত্রের এই 
বিভিন্ন শাখার জ্ঞানসৌধগুলি গড়িয়! উঠিয়াছে। ভারতবর্ষ হইতেই এই গণিত 
ও জ্যোতিবিগ্ঠা আরববাপীর1 গ্রহণ করে, এবং পরে সেখান হইতেই ইতালী ও 
স্পেনের অধিবাসীদের মাধ্যমে উহা! নবজাগ্রত ইউরোপে প্রসারলাভ করে। 
দীর্ঘকাল ইউরোপীয় পণ্ডিতের আরব দেশকেই উক্ত বিভিন্ন বিজ্ঞানের উৎপত্তিস্থল 
বলিয়া মনে করিতেন। অবশেষে অষ্টাদশ শতাববীতে তাহারা “লীলাবতী* ও 
দদ্বিতীয় ভাস্কর” রচিত বীজগণিত ( ১১৫০ খ্রীঃ) প্রমুখ ভারতীয় গণিত খ্রস্থসমূহ্র 
সন্ধানলাভ করেন এবং তাহার ফলেই উক্ত বিজ্ঞানগুলি যে ভারতেই উদ্ভূত তাহা 
আবিষ্কৃত হয়। আরববাসীরা যে ভারতবর্ষ ও গ্রীস হইতেই গণিতসংক্রান্ত এই 
জ্ঞান প্রথমে অর্জন করে এবং পাঁচশত বৎসর তাহাদের নিকট রক্ষিত হওয়ার পর 
সেখান হইতেই যে পরে উহা! ইউরোপে প্রচারিত হয়, এ সম্বন্ধে আজ আর কোনও 
মততেদের অবকাশ নাই।১ 

প্রাচীনকালেই ভারতবর্ষ ও গ্রীসের অধিবালীদের দ্বার গণিত ও জ্যোতিবিষ্। 
সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সম্ভব হইয়াছিল, তবে তাহাদের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল 
মূলতঃ পৃথক । গ্রীকৃগণ গণিতের অন্তান্ত শাখা পরিহার করিয়া জ্যামিতিশাস্ত্ের 
উৎকর্ষের দিকেই মনোনিয়োগ করে। তাহাদের পাটাগণিত, বীজগণিত ও 
জ্যোতিরবিগ্ভার উপর জ্যামিতির আধিপত্যই সর্বাধিক। তাহার! পরিমাণকে 
(118£01086) সংখ্যায় প্রকাশ ন! করিয়! দৈ্্যের মাধ্যমে প্রকাশ করিয়াছিল । 
সম্াহুপাত সংক্রাত্ত জ্যামিতিক তত্বের উত্তাবন এবং বীজগণিত সংক্কান্ত বিভিন্ন 


প্রাচা ও পাশ্চাতা ঘর্শমের ইতিহাস 


তথ্যের সমাধান কল্পে জ্যামিতির প্রয়োগ--এই সকলও তাহাদেরই কীর্তি। পক্ষাত্তরে 
ভারতীয় গণিত সংখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত ; এমন কি তাহাদের জ্যামিতিও সংখ্যা" 
মূলক ও ব্যবহারিক | কঠোর যুক্তিনিষ্ঠত| ও প্রণালীবদ্ধ আলোচনা-পদ্ধতিই শ্রীক 
জ্যামিতিশাস্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য । ধারণার স্পষ্টতা, সারনিষাসন, প্রতীকি- 
করণ ও উত্তাবনার অপূর্ধতা ও অভিনবত্ত অপরপক্ষে ভারতীয় গণিতশাস্ত্বের 
বিশিষ্ট লক্ষণ । ভারতীয় গণিত তাহার দর্শন ও জীবনবাদের দ্বার] প্রভাবিত 
হইয়াছিল । আবার ভারতীয় গাণিতিক আবিফার ও ভারতীয়দের চিস্তা ও দর্শনকে 
প্রভাবিত করিয়াছে । উদ্দাহরণস্বরূপ ভারতীয়দের শুন্য-সংখ্যা (25:9০) ভারতীয় 
পাটীগণিতের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে গৃহীত হওয়ার পূর্বেও হিন্দু ও বৌদ্ধ দর্শনে 
শূন্য সংক্রান্ত ধারণা! বর্তমান ছিল বলিয়! মনে হয়। পাচীগণিতে শৃন্য-সংখ্যার 
ব্যবহার হইতেই ভারতীয় টিস্তানায়কগণ প্রতীকের শক্তি ও উপযোগিতা উপলব্ধি 
করেন । শুন্য কথাটির অর্থ অভাব বা অবিদ্যমানতা । এই ধারণাকে রূপ, আকার 
ও প্রতীক দান করার প্রয়াস মাহষের চিন্তা ও প্রগতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য 
ঘটনান্ধপে গণ্য হইতে বাধ্য । 

গণিত ও জ্যোতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয়দের অঙ্জিত সাফল্য 
সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দান করাই বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য । উক্ত সাফল্যই 
পরবর্তী চিস্তাধারাকে প্রভাবিত ও মানব প্রগতিকে প্রেরণ! দান করিয়াছে । 


। পাটাগণিত 


শুগ্ চিহ্ন এবং স্থানীয় মান নির্দেশক অঙ্ক-পাতন (019০6 ৮9105 1 ০18610)-_ 
নয়টি সংখ্যা ও একটি শুন্ত চিহ্কের বার! অঙ্ক লিখনের যে প্রণালী আমরা আজ 
অনুসরণ করি তাহ1 ভারতীয়েরাই আবিষ্কার করিয়াছিল । ইউরোপ অঙ্কপাতনের 
এই প্রণালী আরবদের নিকট হইতে গ্রহণ করে। সম্ভবতঃ সেই জন্যই দীর্ঘকাল 
পর্যন্ত পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের ধারণ! ছিল যে, উক্ত পংখ্যা-পাতন প্রণালী আরবভূমিতে 
উদ্ভৃত এবং সে কারণ তাহার সংখ্যাগুলিকে আরবীয়-সংখ্যা বলিয়াই অভিহিত 
করিতেন । হজরত মহম্মদের সময় হইতে আরব সভ্যতার ্ুত্রপাত ঘটে, অথচ 
মহশ্মদের জন্মের বহু শতাব্দী পূর্ব হইতেই ভারতবর্ষে উক্ত সংখ্যা-পাতন প্রণালীর 
প্রচলন ছিল। ইহার ফলে শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগুলির আরবীয় উৎপত্তির ধারণা 
পরিত্যক্ত হয়। ভারতবর্ষে, এমন কি দূর প্রাচ্য ইন্দো-চীনে প্রাপ্ত ্রীষ্টায় সপ্তম 
শতাব্দীর সংস্কৃত শিলালিপিগুলি হইতে প্রমাণিত হয় যে, ীঃ বষ্ঠ শতাব্দীতেও 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিস্তাধার! £ গণিত 


স্কানীয় মান নির্দেশক সংখ্যা-পাতন প্রণালী (72150 58105 55965100 ০£ 1০ 
0০: ) বৃহত্তর ভারতে বছল প্রচলিত ছিল।২ খ্রীঃ বষ্ঠ শতাব্দীতেই* ভারতীয় 
সংখ্যা-পাতন পদ্ধতির (85560 9£ টব 10519605 ) খ্যাতি লিরিয়ার মত সুদূর 
পশ্চিম দেশেও ছড়াইয়া' পড়িয়াছিল। সংস্কৃত পাহিত্যের বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ 
হইতে জান! যায় যে, পঞ্চম শতাব্দীতেই ভারতবর্ষে শূন্য চিন (22০ 5520101 ) 
ও আধুনিক সংখ্যাপাতনের বহুল প্রচলন ছিল । স্থতরাং বল! যায় যে, শ্রীন্ীয়- 
যুগের প্রারভেই কোনও সময়ে উক্ত প্রণালী আবিষ্কৃত হইয় থাকিবে । “পিঙ্গলের 
ছন্দস্ত্রে”৪ শূন্য চিহ্ন ব্যবহারের স্থনিদিই্ প্রমাণ রহিয়াছে, কিন্ত অত প্রাচীন- 
কালেই স্থানীয়মান নির্দেশক অঙ্ক-পাতন প্রণালীর প্রচলনের স্থুস্পষ্ট নিদর্শন 
পাওয়া! যায় না। তবে অবশ্য “ছন্দস্থত্র” প্রণয়নের লেই স্থুপ্রাচীন যুগেই অর্থাৎ 
শ্রীঃ পু দ্বিতীয় শতাব্দীতেই যে ভারতীয় গণিতবিদের! স্থানীয় মান নির্দেশক 
অঙ্ক-পাতনের ব্যবহার স্থরু করিয়াছিলেন_ইহ1 একেবারে অসভ্ভব বলিয়! মনে 
হয় না। হয়ত সেই প্রাচীনকালে উক্ত প্রণালী অল্প কয়েকজনের নিকটেই 
পরিচিত ছিল, বহুলভাবে প্রচলিত হয় নাই। 

সমস্ত প্রাচীন জাতিরই-_যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ তা এই মৌলিক 
নিয়মাবলী ( 8010090561069] 01679110155 ০£ £১7161310)901০ ) এবং মুল নির্ণয় 
প্রণালী (765061912০0 179915 ) ও সমাহ্গপাত সংক্রান্ত নিয়ম ( 15 19৮5 
০৫ 1:00916191 ) প্রভৃতির সহিত পরিচিত ছিল। অন্তান্ সংখ্যাগুলিকে প্রকাশ 
করিবার উপযোগী প্রতীক তাহাদের জান! ছিল, কিন্তু শুন চিহ্ের ব্যবহার তাহাদের 
মধ্যে দেখা যায় না| ১০১ ২০, ৩০১ ১০০১ ২০০, ১০০০১ ২০০০, প্রভৃতি শুন্ত-পুষ্ঠ 
সংখ্যাগলিকে প্রকাশ করিবার জন্য তাহার! পৃথক প্রতীক ব্যবহার করিত। উক্ত 
পৃথক প্রতীকে প্রকাশিত শুন্ত-পৃষ্ঠ সংখ্যাগুলির গুণ ও ভাগ সম্পাদন এক দুরূহ 
ব্যাপার ছিল। ইহাই পাটীগণিতে বড় সংখ্য! ব্যবহারের পথে বাধা স্ষ্টি করিয়াছে 
এবং কার্যতঃ সেই জন্যই উক্ত বিজ্ঞানের উন্নতি সম্ভব হয় নাই । খ্রীঃ ঘাদশ ও 
চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত পুরাতন অঙ্ক-পাতন প্রণালীর ব্যবহারস্বলিত 
পাটীগণিতের বিভিন্ন হস্তলিখিত পুঁথি ইউরোপ ও আরবদেশে পাওয়া গিয়াছে । 
কিন্ত ভারতবর্ষে পুরাতন সংখ্য।-প।তন পদ্ধতিতে রচিত কোনও পাীগণিতই পাওয়া 
যায় নাই। খ্রীঃ চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত “বক্ষালী পুঁথিই” ভারতবর্ধীয় পাীগণিত 
গ্রন্থের প্রাচীনতম নিদর্শন । ইহাতে সংখ্যা-পাতনের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহৃত 
হইয়াছে । আধুনিককালে উচ্চ-বিদ্ভালয় সমূহে পাটীগণিতের যে বিভিন্ন প্রশ্ন শিক্ষা 


& | 


স্্রীচা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


দেওয়! হয়, কার্ধতঃ তাহা সামগ্রিক ভাবেই ৪৯৯ প্বীঃ রচিত পআর্যভ্ীয়” গ্রন্থের 

অন্তভূক্ত। এই জাতীর অস্ান্ত গ্রন্থের মধ্যে ব্রহ্মগুপ্ত (৬২৮ প্রঃ), শ্রীধর (৭৫০ খ্রীঃ), 

মহাবীর (৮৫০ খীঃ), দ্বিতীয় আর্মভ্ট ৫৯৫০ খ্রীঃ) প্রভৃতি গণিতবিদগণ রচিত গ্রন্থের 

নাম উল্লেখ করা যাইতে পারে । উক্ত গ্রন্থ সমুহে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও 

ভগ্রাংশ প্রয়োগ পদ্ধতির (01796191010 161) £:2.0610115 ) উল্লেখ পাওয়! যায় । 

আধুনিক পাটীগণিতে উক্ত পদ্ধতিগুলিই পরিবর্তিত আকারে গৃহীত হইয়াছে। 
পাটীগণশিতের ক্ষেঙ্জে ভারতীয়দের প্রধান অবদান সমূহ-- 


(১) শুন্য প্রতীক। 

(২) স্থানীয়-মান নির্দেশক সংখ্যাপাতন প্রণালী 

(৩) স্থানীয়-মান নির্দেশক সংখ্য। প্রণালীর দ্বারা পাীগাণিতিক যোগ, 
বিয়োগ, গুণ, ভাগ, বর্গ ও ঘনমূল নির্ণয় প্রভৃতি প্রক্রিয়! সম্পাদন পদ্ধতি । 

(৪) ভগ্নাংশ লিখন-প্রণালী | 

(৫) সমহ্ত্র অক্রযায়ী (400010105 €০ 95509019192 ) ভগ্রাংশের 
শ্রেণীবিভাগ, ভগ্নাংশকে সাধারণ হর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে বূপাস্তরকরণ এবং ভগ্নাংশের 
দ্বারা যোগ, বিয়োগ ইত্যাদি পাচীগণিতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন পদ্ধতি । 

(৬) সমাহ্গপাত সংক্রান্ত নিয়মাবলী (1115 11559 ০? 7100০916101 ) 
ত্রেরোাশিক ও পঞ্চরাশিক প্রণালী ইত্যাদি এবং ব্যস্ত সমাহ্ুপাত ( [01:56 
[0:0009:1102) অর্থাৎ ব্যস্ত ত্রেরাশিক (17055:58 [২015 ০0৫ (17252 ). 

(৭) কুশীদ, জটিল কুশীদ, কিস্তি লাভ ক্ষতি, ক্ষেত্রফল, ঘনফল পমাস্তর ও 
গুণোত্তর প্রগতি (4,100 00561059] & 85020567109] [১:09£1555£09135 ) ইত্যাদি 
সম্পকিত প্রশ্নাবলী । 

পূর্ববর্তী উল্লেখ অস্থ্যায়ী উপযুক্ত বিষয়গুলি “আর্যভ্রীয় (৪৯৯ খ্রীঃ)” ও 
তৎপরবর্তা গণিত গ্রন্থসমূহে আলোচিত প্রসঙ্গগুলির মধ্যে কয়েকটি । দশম 
শতাব্দীর পূর্বে ভারতবর্ষের বাহিরে আরব, ইউরোপ অথবা চীন দেশে কোথাও 
আধুনিক পাটীগণিতীয় প্রয়োগ প্রণালীর চিহ্লমাত্র পাওয়া যায় না। স্থৃতরাং এই 
উত্তবের প্রাথমিকতা হইতেই বুঝা যায় যে; ভারতবর্ষই পাটীগণিতের আদি 
উৎপত্তিস্থল |« ৃ 

৩। বীজগণিত 

সকলেই জানে--অজ্ঞাত রাশিকে (8:00510%70) লইয়াই কীজগণিতের 

কাজ। প্রাচীন জাতি মাত্রেই গণিত সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্ণয় প্রশ্জের সমাধানে- 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার! £ গশিত 


অগ্রসর হইয়াছে এবং সাধারণতঃ তাহাদের ফলাফল পাটীগখিতের সাহায্যেই 
লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস পাইয়াছে। সেগুলিকে হয়ত বীজগণিতের সাহাঁয্যেও 
প্রকাশ কর! যাইত 9 কিন্ত উপযুক্ত প্রতীক চিহ্বের উত্তাবনের পুর্বে বীজগণিতের 
ক্ুনির্ি্ট অগ্রগতি সম্ভব হয় নাই। ইহার জন্য অবশ্য ভারতীয় গশিতবিদেরাই 
প্রশংসা পাইবার যোগ্য, কারণ তাহারাই সর্বপ্রথম বর্ণমালার অক্ষরের সাহায্যে 
অজ্ঞাত রাশিকে প্রকাশ করেন। বর্ণমালার অক্ষর প্রতীক গ্রহণ করিয়াও যে 
পাটীগণিতের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পাদন সভব এবং পাটীগণিতে ব্যবন্ৃত যোগ, 
বিয়োগ (+, -) ইত্যাদি প্রক্রিয়াস্থচক চিহ্ুসমূহ যে উক্ত বীজগণিতীয় প্রতীকগুলির 
সহিত ব্যবহৃত হইতে পারে--এ কথা ভারতীয় গণিতবিদের1 যেদিন বুঝিলেন, 
সেইদিন হইতেই বীজগণিতের প্রক্কত অগ্রগতি স্চিত হইল । 

সুক্ষ-চিন্তায় অভ্যস্ত পশ্ডিতগণের পক্ষেই যোগ ও বিয়োগ ইত্যাদি প্রক্রিয়াস্থচক 
প্রতীক ব্যবহার করিয়াও গুণ, ভাগ ইত্যাদি সম্পাদন প্রণালী আবিষ্ষার সম্ভব 
হইয়াছিল। উক্ত প্রক্রিয়াস্থচক প্রতীকগুলি যে সংখ্যা নয়, তাহা বলাই বাহুল্য । 
ব্র্মগুপ্ডের মতে 

ধনরাশি ও খণরাশির (795161%5 0 23659156) গুণফল খণরাশি, দুইটি 
খণরাশির গুণফল ধনরাশি। ধনরাশিকে ধনরাশি দ্বার গণ করিলে গুণফল 
ধনরাশি হইবে। ধনরাশিকে ধনরাশি দ্বারা ভাগ করিলে ভাগফল ধনরাশি হইবে, 
আবার খণরাশিকে খণরাশি দ্বারা ভাগ করিলেও ভাগফল ধনরাশিই হইবে। 
কিন্ত ধনরাশিকে খণরাশি দ্বার! ভাগ করিলে ভাগফল হিসাবে পাওয়া যায় খণরাশি 
এবং খণরাশিকে ধনরাশি দ্বারা ভাগ করিলেও ভাগফল এ খণরাশিই হইবে ।* 

ভারতীয় গণিতবিদেরাই ঘাত-প্রকাশক প্রতীক (55200911515 20: 
০7755) বর্গ” ঘন ইত্যাদি স্প্টি করেন। অধুনা প্রচলিত সাংখ্য-সহগের 
(বা02961109] 00-62801610/5) ব্যবহারও তাহাদের কীন্তি। বীজগাণিতিক 
সমাকরণ (77109010105 ) ও তৎ্সংক্রাস্ত পদপক্ষান্তর প্রণালীর (£::9190951- 
(10120 06 6652005 ) উত্তবও তাহাদের দ্বারাই সম্ভব হইয়াছিল। খ্রীঃ পঞ্চম 
শতার্দীতেই উল্লিখিত বিষয়গুলি ভারতীয়দের নিকট পরিচিত ছিল। এ ক্ষেত্রেও 
উত্তবের প্রাথমিকতার জন্য ভারতবর্ষকেই বীজগণিত, তাহার মৌলিক প্রণালী 
ও প্রতীক চিহৃগুলির উৎপত্তিস্থল বলিয়! গণ্য করিতে হয় । 

ভারতীয় গণিতবিদের! ব্যবহারিক দিক হইতে বীজগণিত অধ্যয়ন করেন নাই। 
মানাহ্যায়ী (40০09:01105 £০ 58:55) তাহার! সমীকরণের শ্রেণীবিভাগ 


' প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


করিয়াছিলেন এবং নির্শের (10665111179 ) ও অনির্ণেয় (12105 6100111966 ) 
সর্মীকরণ সমূহকে পৃথকভাবে বিবেচনা করিয়াছিলেন। ভারতীয় গণিতবিদদের 
পদাঙ্ক অহ্থসরণ করিয়াই শ্রী: অষ্টাদশ "শতাব্দী পর্যন্ত পাশ্চাত্য দেশগুলিতে 
বীজগণিত সম্পঞ্িত পরবর্তী যাবতীয় উন্নতি সাধিত হইয়াছে । পরবর্তাকালে 
ভারতীয় বীজগাণিতিক প্রতীকগুলির যে কিছু রূপাস্তর ঘটিয়াছে সে সম্বন্ধে সন্দেহ 
নাই? কিন্ত তৎসত্বেও আধুনিক কালের ব্যবহৃত বীজগণিতের প্রতীকগুলি 
মূলতঃ ভারতীয় । 

উপযুক্ত প্রতীক-চিহ্ন আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে ভারতবর্ষে বীজগণিতের ভ্রুত উন্নতি 
সম্ভব হইয়াছিল। ভারতীয়ের। দ্বিঘাত-সমীকরণের (09018610 €011901920 ) 
ব্যাপক সমাধান দান করিয়াছিলেন । আধুনিক পাঠ্যপুস্তক সমূহে সচরাচর দ্বিঘাত 
দমীকরণ সমাধানের যে প্রণালীর উল্লেখ পাওয় যায়, তাহা খ্রীঃ অষ্টম শতাব্দীর" 
গণিতবিদ শ্রীধরেরই দান। ভারতীয় গণিতবিদের]1 অনির্ণেয় (011751612710916) 
সমীকরণ সংক্রান্ত যে তত্ব প্রতিপাদন করিয়াছিলেন, বীজগণিতের ক্ষেত্রে তাহাই 
তাহাদের শ্রেষ্ঠ অবদান। দ্বিঘাত-সমীকরণের মুলদ-সমাধান ( 8:৪010091 
9০19000) দানে তাহাদের বিশেষ আগ্রহ দ্রেখ। যায় এবং তাহারই ফলে 
অনির্দিষ্ট-মান দ্বিঘাত-সমীকরণ ( 611619] 11056510109 ৪0096102 01 
56০90. 68155) সমাধানে” তাহারা সম্পূর্ণ সাফল্যলাভ করিয়াছিলেন । 
উপযুক্ত বীজগণিতীয় মীমাংসা সমূহ ইউরোপের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল; 
খ্রীঃ সপ্তদশ, অষ্টাদশ, উনবিংশ শতাব্দীতে তাহারা উহা! নৃতন করিয়! আবিষ্কার 
করে। খ্রীষ্টায় যুগের প্রথম দিকে কয়েক শতাব্দী ধরিয়া গ্রীক গণিতবিদগণ 
অনির্ণেয় (15051611011965) সমীকরণ সমুহ অধ্যয়ন করে, কিন্ত জ্যামিতির 
দৃষ্টিভঙ্গীতে উক্ত প্রশ্নের মীমাংসা করিতে যাওয়ার ফলে এবং উপযুক্ত প্রতীক- 
চিহ্বের অভাবে তাহার] সে ক্ষেত্রে বিশেষ উন্নতি করিতে পারে নাই। 


৪। জ্যামিতি 
জ্যামিতিতে সচরাচর ব্যবন্ৃত ত্রিভুজ, চতুভুজি, বিষম চতুভুজ, আয়তক্ষেত্র, 
সামাস্তরিক, বৃত্ত প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলি কোন প্রাচীন জাতিরই অবিদিত ছিল ন|। 
বৈদিক আর্েরা উপবৃত্তের ব্যবহার জানিতেন। তবে আধুনিক জ্যামিতি গ্রীক 
জাতিরই স্ষ্টি। কেবলমাত্র ক্ষেত্রমিতি (11515019610 ) সম্বন্ধেই ভারতীয়দের 
আগ্রহ দেখা যায়| বৈদিক আর্ষেরা, ত্রিভুজঃ সামাস্তরিক, আয়তক্ষেত্র এবং 
আয়তনের পরিমিতি নির্ণয় করিতে জানিতেন। বুত্তের পরিধি ও ব্যাস-এর অনুপাত 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধায়! ৫ গণিত ূ 
যে একটি গ্রুবক (০9:5538) তাহাও তাহার! জানিতেন এবং সাহারা এই 
ফ্রবকের মান নির্ণয়ের চেষ্টা করিয়াছিলেন। পরবর্তা ভারতীয় গণিতবিদের! বৃত্ত, 
শঙ্কু (০92) গোলক (€911762:5) এবং শিখরীর (চ5291010 ) ক্ষেত্রমিতি 
সম্বন্ধে গবেষণ! করিয়াছিলেন । গ্রীক গণিতবিদদের নিকট অজ্ঞাত প্রণালীর দ্বারাই 
যে ভারতীয়র| তাহাদের উক্ত গবেষণার ফলাফল নির্ণয় করিয়াছিলেন উপযুক্ত 
নিদর্শনের সাহায্যে তাহা প্রমাণ কর] যায়। ক্ষেত্রমিতি সম্পর্কে ভারতীয় গণিত- 
বিদদের ব্যবহৃত সর্বাপেক্ষা কার্ধকরী প্রণালী বিকৃত-করণ তত্বরূপে (2116015 
০€ 26091171919 ) পরিচিত। এই বিকৃত-করণ সত্বেও ক্ষেত্রফল ও ঘনফল 
অপরিবত্তিতই থাকে । উদাহরণ স্বরূপ তাহার] দেখাইযাছেন যে-- 

(১) একটি আয়তক্ষেত্রের যে কোন একটি বাহুকে সমাস্তরালভাবে ক্রমান্বয়ে 
স্বানাস্তরিত করিয়া! তাহাকে সমক্ষেত্রফল বিশিষ্ট একটি সামস্তরিকে বিকৃত (1060:2) 
কর। যাইতে পারে । 

(২) কোন ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দুকে ভূমির সমান্তরাল সরলরেখার উপর যে কোন 
স্বানে সরাইলেও ত্রিভূজটির ক্ষেত্রফল অপরিবতিত (]5%8:18770) থাকিবে । 

(৩) কোন বৃত্তকলার ( 98০০: ০9. 01701 ) চাপকে সরলরেখায় পরিণত 
করিয়া, উক্তরেখাকে ভূমি ও বৃত্তকলার ব্যাসার্ধকে উচ্চত] ধরিয়া, তাহাকে একটি 
ত্রিভূজে পরিণত করিলেও উক্ত ত্রিভূজের ক্ষেত্রফল বৃত্তকলার ক্ষেত্রফলের সমান 
হইবে । 

উপরে উল্লিখিত ফলাফলগুলি ঘন পদার্থের ক্ষেত্রেও অস্থরূপভাবে প্রযোজ্য । 
উক্ত ফলাফলগুলি জান! থাকিলে শ্রীকদের ক্ষেত্রমিতি সংক্রান্ত স্থত্রগুলি সহজেই 
পাওয়া যায়। শঙ্কুর ঘনফল নির্ণধকল্পেও ভারতে উদ্ভূত উক্ত প্রণালীই প্রযুক্ত 
হইয়াছে । “ষট্‌-খণ্ডাগন্থম” নামক জৈন গ্রন্থের খ্রীঃ নবম শতাব্দীতে রচিত টীকা 
“ধবলা”তে উক্ত প্রণালীর বিস্তৃত ব্যাখ্য। পাওয়া! যায়। গণিতবিদ ভাস্করও এই 
পদ্ধতি অনুসরণ করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে ইহাও উল্লেখ কর! যাইতে পারে যে, 
অসংখ্য খণ্ডে (10911166 20101071051 0£ 05165 ) কোন সমতল ক্ষেত্র অথবা ঘনবস্তর 
বিভাগ-কৌশল এবং উক্ত খণ্ডগুলির ক্ষেত্রফল অথব! ঘনফলের সমষ্টি দ্বার উল্লিখিত 
সমতল ক্ষেত্রফল বা ঘনফল নির্ণয়ের প্রণালীও অসম শ্রেণীর যোগফল নির্ণয় 
প্রণালীও (15611366 961155) ভারতীয় গণিতবিদেরাই ব্যবহার করেন। 
ক্ষেত্রমিতি বিষয়ে ভারতীয় গণিতবিদদের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হিসাবে, বুত্ত- 
অস্তলিখিত চতুভুজের ক্ষেত্রফল ও অন্থান্ত বিষয় সংক্রান্ত হুত্রাবলীর উল্লেখ করা 


' ধাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


যাইতে পারে । ত্রাক্গপ্ুট সিদ্ধান্ত” (শ্রীঃ ৬২৮) গ্রন্থে ইহাদের উল্লেখ পাওয়! 
যায়। যদি কোন বৃত্ত-অস্তলিখিত চতুভূজের-_যাহার বাহগুলির দৈখ্যের পরিমাণ 
যথাক্রমে ১ ৮, ০, £১- ক্ষেত্রফলের পরিমাণ 4 এবং তাহার কর্ণের 01018592981 ) 
দৈর্ধ্যের পরিমাণ ?% ও & হয়? তাহ। হইলে নিম্নলিখিত ফলগুলি পাওয়া যাইবে : 
০) &-+2ড-ঠড-56-9 
যখন 29 -*০+৮7০+2 


২) 77 (2০4 8) (৫57০9) 
( | মা 2৫ + ০০ 


যু ০০৮ 82) (29 + ৪০) 
26 4102 

হছএর মান--যদিও গ্রীকেরা জ্যামিতিবিদ হিসাবে প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল, 
তথাপি তাহার] £এর যথাযথ মান নির্ণয় করিতে পারে*নাই | তাহারা! ₹- 22/7, 
এই মান লইয়াই সন্তষ্ট ছিল। পক্ষান্তরে ভারতবর্ষে এর অধিকতর আসন্ন মান 
নির্ণাত হইয়াছিল । এমন কি ৪৯৯ খ্রীষ্টান্ধেই “আর্যভট? নিম্নলিখিতভাবে উক্ত 

মান নির্দেশ করিয়াছিলেন-__ 
62832 
7 20000 
যদ্দি উল্লিখিত ভগ্নাংশকে অবিরত ভগ্নাংশে (00101110060 £906101) ) 
পরিণত কর! হয়ঃ তাহ। হইলে (50006595156 0০018৮61851) গুলি যথাক্রমে-- 

৪, %&% এবং পু$$ হইবে । 

ভারতীয় গণিতবিদের। 22/7 এবং 355/113 ভগ্নাংশদ্বযকে গগএর মান 
হিসাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্ত উহার বহুল প্রচলন হয় নাই। ব্যবহারের 
স্ববিধার জন্ত কোন কোন গণিতবিদ 2-* */[0: এই মান ব্যবহার করিয়াছিলেন । 
“ধবল; টীকাতে % এর মান হিসাবে 855/119 এই ভগ্নাংশের উল্লেখ দেখা 
যায়। সম্ভবতঃ ভারতীয় প্রভাবের ফলেই চৈনিক গণিতবিদের। উক্ত মানটি গ্রহণ 
করিয়াছিলেন । পরবর্তী ভারতীয় গ্রন্থ্‌সমূহে, ৯ অথবা ততোধিক দশমিক পর্যস্ত 
চএর আসন্ন মানের (410070561005803070 ) উল্লেখ পাওয়] যায় । গোড়ার দিকে 
ভারতীয় গণিতবিদের! বৃত্ত-অস্তলিখিত স্্গম বহুভুজের (1155021060. £5£0197 
1915802 ) বাহু-সংখ্যা বুদ্ধি করিয়া, ছু এর অধিকতর আসন্ন মান নির্ণয় 
করিতেন । পরে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে অসীম শ্রেণীর ( [20510165 562165 ) 


০০ 9*1416 


১৫ 


প্রাীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিস্তাঁধায়। £ গত 


সাহায্যে উক্ত কার্য সম্পাদিত হয়। উপযুক্ত উভয় প্রণালীই ভারতে ব্যবহৃত 
হইবার বহু পরবর্তীকালে ইউরোপীয় গণিতবিদ্গণ কর্তৃক ব্যবন্ধত হইয়াছিল । 


স্ুলদ চিত্রাক্কণ প্রণালী (00125100100 ০0 7২86109109] 71%10165 ) 

ভারতীয়ের সমতল ক্ষেত্রের বাহু ও ক্ষেত্রফল সংক্রাস্ত বিভিন্ন প্রশ্রের প্রস্তাবন। 
ও সমাধান কল্পে অনির্ণেয় সমীকরণ সংক্রাস্ত জ্ঞানের প্রয়োগ করিয়াছিলেন । 
এইক্সপে জ্যামিতির ক্ষেত্রে তাহারা বীজগণিত সম্পর্কীয় জ্ঞানকে কাজে 
লাগাইয়াছিলেন । 

কোন একটি বাহু দেওয়া! থাকিলে, তাহার সাহায্যে সমকোণী ত্রিভুজ অক্কনের 
প্রথম প্রয়াস দেখ! যায় “সুল্ব? গ্রন্থে । উহাতে বিশেষভাবে (2, 32/4, 52/4 ) 
এবং (2, 52/1%, 182/12) বাহুবিশিষ্ট ছইটি সমকোণী ত্রিভুজের উল্লেখ পাওয়া 
যায়। এ পরিমাণ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি প্রদত্ত বা, ও যুলদ রাশি ( চ২৪619291) 
সুচিত দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট অপর ছইটি বাহুর সাহায্যে ব্রহ্মগুপ্ত (৬২৮ শ্বীঃ) বিভিন্ন সমকোণী 
ত্রিভুজ অঙ্কনের প্রতিজ্ঞ উপস্থিত করেন । তাহার প্রদত্ত সমাধান নিম্নরূপ-_ 

কউ (67৮) 8 (6৯৯) 

ঞীধর (৭৫০ শ্রী) এবং মহাকীরও € ৮৫৯ খ্রীঃ) উল্লিখিত সমাধানে উপনীত হন । 

দ্বিতীয ভাস্কর অপর একটি সমাধান বাহির করেন-- 
4782 272 ) টি 





শী 


৮ %2 708. 270 

প্রদত্ত অতিভুজের সাহায্যে যে কোন সমকোণী ত্রিভুজ অস্কিত করিলেই সদৃশ 
ফল পাওয়া যাইবে । 

মহাবীর সমাধানসহ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি উপস্থিত করিয়াছেন-_ 

(১) যদি একটি আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সাংখ্যমান উহার পরিমীমার সমান 
হয় এবং আরেকটি আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সাংখ্যমান উহার কর্ণের দৈর্থ্যের 
সমান হয়, তাহা হইলে উক্ত আয়তক্ষেত্রদ্বয়ের বাহুগুলির দৈর্্যের পরিমাণ কত ? 

(২) এমন একটি আয়তক্ষেত্র নির্ণয় কর যাহার কর্ণের দ্বিগুণ, ভূমির তিনগুণ? 
প্রস্থের (81:181,-এর ) চারগুণ এবং পরিসীমার দ্বিগুণ একত্রে উক্ত আয়তক্ষেত্রের 
ক্ষেত্রফলের সাংখ্যমানের মান । 

(৩) কোন আযতঙক্ষেত্রের পরিসীমা একক হইলে উহার ভূমি ও প্রস্থের 
(22118106) পরিমাণ কত? 


৯১ 


' প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


(৪) এমন একটি আয্নতক্ষেত্র নির্ণয় কর যাহার কর্ণের দ্বিগুণ, ভূমির তিনগুণ, 
প্রস্থের (৫79116190 চারগুণ এবং পদ্গিলীমার সমষ্টট এককের (9165) সমান হইবে । 

(৫) পুর্ণসংখ্যা-হছচিত বাহু (2:৪61০91 10658151) ও ক্ষেন্রফলবিশিষ্ট 
বিভিন্ন সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ নির্ণয় কর । 

(৬) এমন ছুইটি লমদ্বিবাহু ত্রিভুজ নির্ণয় কর যাহাদের পরিলীমাদ্বযম় ও 
ক্ষেত্রফলদ্বয় পরম্পর সমান হইবে) অথবা যাহাদের পরিসীম! ও ক্ষেত্রফল সমাহ্গপাত 
(1708. £15513 10010161012 ) অন্রযায়ী সম্পকিত হইবে । 

) বিভিন মুলদ বিষমভূজ ( ২৪৮০৪] & 5০91515 ) ভ্রিভুজ নির্ণয় কর। 

(৮) কোন প্রদত্ত ক্ষেত্রকলের সাহাঁধ্যে একটি মূলদ ( [.90191391) ত্রিভুজ 
নির্ণয় কর । 

ব্রহ্মগুপ্ত প্রমাণ করিয়াছেন সমদ্বিবাহু ট্র্যাপিজিয়ামের বাহু, কর্ণ, উচ্চতা, বাহুর 
অংশ (568051005 ) ও ক্ষেত্রফলকে মূলদ রাশির সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। 
তিনি নিয়লিখিত উল্লেখযোগ্য প্রতিজ্ঞাটও প্রতিপন্ন করিযাছেন £-- 

বৃত্তে অস্তলিখনযোগ্য এমন চতুভু 'জগুলি অগ্কিত কর যাহাদের বাহু, কর্ণ, লঙ্ব, 
খণুবাহু, ক্ষেত্রফল এবং চত্তুজগুলি বহিলিখিত বৃত্তের ব্যাদকে অখগ্ুরাশির দ্বার! 
প্রকাশ কর! যাইতে পারে । 

মহাবীর, আীপতি, দ্বিতীয় ভাস্কর প্রমুখ গণিতবিদ্‌গণ উল্লিখিত প্রতিজ্ঞার 
সমাধানও দিয়াছিলেন। পরিশেষে মহাবীর নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য প্রশ্নটির ও 
মীমাংসা! দান করিয়াছেন 

প্রদত্ত ব্যাসবিশিষ্ট কোন বৃত্তে অস্তলিখনযোগ্য বিভিন্ন মূলদ ত্রিভুজ (.৪670715] 
[382215) ও চতুভূজ নির্ণয় কর। 

€&) ব্রিকোণমিতি রে৪০০০০২০০১) 

জ্িকোণমিতি শব্দটা হইতেই বুঝ| যায়, ইহা গণিতশাস্ত্রেব (জ্যামিতি ) এমনই 
একটী শাখ1-_ক্রিভুজ অর্থাৎ ত্রিকোণের পরিমিতি নির্ণয়ই যাহার কাজ । নিয়লিখিত 
430 সমকোণী ভ্রিভূজটীকে (3 সমকোণ ) লওয়া যাক্‌ 

ভারতীয় গণিতবিদ্দের মতে ০৪ ও 4.3 যথাক্রমে ০79 চাপের জ্য। ও কোটি- 
জ্যা। আধুনিক ভ্রিকোণমিতিক প্রতীকে (011890017,5601081 0686198 ) 
উহা? এইভাবে প্রকাশ করা যায় £__ 

010৮79১7055, ০710-০3-৮1 510. 9১ 1০61-058, ০70 ০৮ 4১3 1০ 59593 
শুতরাৎ যদ্দি ”-*.1 হয় তাহ! হইলে ভারতীয় আপেক্ষক (60006105 ) এছ 9 


খু 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তা ধারা £ গশিত 


শু 981) 9 এবং ০6108, 9 -. 595 9 ভারতীয়েরা উৎক্রম জ্যা ( ৮61560 5311 ) 
আপেক্ষকের (£8259619 ) ব্যবহার ও দেখাইয়াছে। বুত্তচাপের পৃরক ও সম্পূরক 


৮ 


£ ৪ 0 


00122191920761765 8 501)19]5106105 ) বলিয়া! তাহার] উল্লিখিত আপেক্ষকদ্বয়ের 
(010061915 ) মান নির্ণয় করিয়াছে । 

আছ্রেখার (71110 1175 ) পাদস্থিত জ্যা ধনরাশি £099161%5 এবং নিষ্ন- 
পাদস্থিত জ্যা খণরাশি ৪৪1৮০ দ্বার] স্থচিত হয়। আবার কোটি-জ্যা, প্রথম; 
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পাদে 049,0720€ যথাক্রমে ধনরাশি, খ্যাশি, খণরাশি 
ও ধনরাশির দ্বার স্থচিত হইবে । 

নিয্নলিখিত স্থত্রগুলির অনুরূপ স্তত্রাবলী তাহাদের জানা ছিল £-_ 

(১) 91029 4+ ০০9529- ॥১ 

(২) 510 09/2)- ৯/ (1০০৪ 9)/2, 

(৩) 5110. (5. 3519) -৮ 5110 এ. 005 (94005 *. 5110 (9 

(৪) 51102 + 294 ড€1511)229 - 4 31120, 

(&) 512 (5/4 3-0)77 */01 3512 29)/2, 





(৬) 511 রি ত6- 1 (5110 «. _ 5110 9)5 + (0০95৭. _ 505 9)21 


উল্লিখিত সুব্রগুলির প্রথম তিনটী গ্রাকদের জান] ছিল । চতুর্থ সুত্রটি বরাহমিহির 
(«০ গ্রীঃ) প্রতিপাদন করিয়াছেন । অবশিষ্ট স্থত্র ছুইটি দ্বিতীয় ভাস্করের দান। 
ভারতীয় জ্যোতিরিজ্ঞানীগণ গোলক সম্বন্ধীয় ভ্রিকোণমিতির (€5115:8০91 
01180092056 ) নিয়লিখিত সুত্রাবলীর লহিতও পরিচিত ছিলেন £-." 
0০9৪ ০095 চে 5095 617 8810 চে 9110 8 ০০95 ৮ 3 


১৩ 


' প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শদের ইতিহাল 


€৪). এমন একটি আয়তক্ষেত্র নির্ণয় কর যাহার কর্ণের দ্বিগুণ, ভূমির তিনগুণ, 
প্রন্থের (89188100 চারগুণ এবং পরিলীমার সম এককের (৫155) সমান হইবে । 

৫৫) পূর্ণসংখ্যা-স্থছচিত বাহু (7২৪019£91 10658:91) ও ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট 
বিভিন্ন সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ নির্ণয় কর | 

(৬) এমন ছুইটি সমঘ্বিবাহু ত্রিভুজ নির্ণয় কর যাহাদের পরিসীমান্বয় ও 
ক্ষেত্রফলঘয় পরম্পর সমান হইবে; অথবা যাহাদের পরিসীম] ও ক্ষেত্রফল লমাহ্্‌পাত 
(0৪. £1%50 0:01১0:60102 ) অনুযায়ী সম্পর্কিত হইবে । 

(৭) বিভিগ মূলদ বিষমভুজ ( [২৪0101191 ৫. 9০91125 ) ত্রিভুজ নির্ণয় কর । 

৮) কোন প্রদত্ত ক্ষেত্রফলের সাহায্যে একটি মুলদ ( 2২৪6:9:91) ভ্ত্িতুজ 
নির্ণয় কর । 

ব্রহ্মগুপ্ত প্রমাণ করিয়াছেন সমদ্বিবাহু ট্র্যাপিজিয়ামের বাহু, কর্ণ উচ্চতা, বাহুর 
অংশ (58£085065) ও ক্ষেত্্রফলকে মূলদ রাশির সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। 
তিনি নিয়লিখিত উল্লেখযোগ্য প্রতিজ্ঞাটিও প্রতিপন্ন করিয়াছেন £-- 

বৃত্তে অস্তলিখনযোগ্য এমন চতুভূ গুলি অগ্ষিত কর যাহাদের বানু, কর্ণ, লক্ব, 
খগুবাহু, ক্ষেত্রফল এবং চতুভূজগুলি বহিলিখিত বৃত্তের ব্যাসকে অখগুরাশির দ্বার 
প্রকাশ কর! যাইতে পারে । 

মহাবীর, আীপতি, দ্বিতীয় ভাস্কর প্রমুখ গণিতবিদ্‌্গণ উল্লিখিত প্রতিজ্ঞার 
সমাধানও দিয়াছিলেন। পরিশেষে মহাবীর নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য প্রশ্নটির ও 
মীমাংসা] দান করিয়াছেন 

প্রদত্ত ব্যাসবিশিষ্ট কোন বৃত্তে অস্তলিখনযোগ্য বিভিন্ন মূলদ ক্রিভুজ (চ২9(1922] 
7*:1917516) ও চতুভূজ নির্ণয় কর । 

€৫) ব্রিকোণমিতি 25892025505) 

জ্রিকোণমিতি শব্দটী হইতেই বুঝ1 যায়, ইহ! গণিতশাস্ত্রে (জ্যামিতি) এমনই 
একটী শাখা-_ত্বিভুজ অর্থাৎ ক্রিকোণের পরিমিতি নির্ণয়ই যাহার কাজ | নিম্নলিখিত 
£,30 সমকোণী ভ্রিভুজটাকে (9 সমকোণ ) লওয়৷ যাক 

ভারতীয় গণিতবিদ্দের মতে ০৪ ও 4 যথাক্রমে ০12 চাপের জ্যা ও কোটি- 
জ্যা। আধুনিক ভ্রিকোণমিতিক প্রতীকে (75115012919611081 20090192 ) 
উহ। এইভাবে প্রকাশ কর] যায় £ 

070৮79১7058, ০707-০3-17 51095 8০61-158 ০1) ০৮ 832 ০9593 
ক্তরাৎ যদি +-*1 হয় তাহ! হইলে ভারতীয় আপেক্ষক (হি 2০০০০ ) 55 9 


১০ 


প্রাচীন ভারতের বৈজানিক চিন্তা ধাপ : গণিত “ 


58209 এবং 0০67)58, 9-* ০০৪9 ভারতীয়ের] উৎক্রম জ্যা ( ৮5285. ৪1116 ) 
আপেক্ষকের (201300809 ) ব্যবহার ও দেখাইয়াছে। বৃদ্তচাপের পুরক ও সম্পূরক 


১ 


£ ৪ টে 


0011191610197065 & 50102111065 ) বলিয়া তাহার উলিখিত আপেক্ষকদ্বয়ের 
(20109019115 ) মান নির্ণয় করিয়াছে । 

আছ্যরেখার (71120951105) পাদস্থিত জ্যা ধনরাশি 795161৮5 এবং নিষ্- 
পাদস্থিত জ্যা খণরাশি 2৪৮1৮ দ্বারা স্থচিত হয়। আবার কোটি-জ্যা, প্রথম, 
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পাদে 089,079 যথাক্রমে ধনরাশি, খণরাশি” খণরাশি 
ও ধনরাশির দ্বার] স্থচিত হইবে । 

নিম্নলিখিত স্ত্্রগুলির অন্রূপ স্থত্রাবলী তাহাদের জান! ছিল £-_ 

(১) 51129 +০০9529-৮ 15 

(৫) 910 (9/2)- *৯/ (1095 9)/9, 

(৩) 5810 দে. 3:10) 7৮ 5110 এ. 0095 (9 4 009 ৭. 5110 (9, 

(৪) 51122 + 294 ড€79117229 »* 4 51729, 

(&) 810 (/4 39). */(1 4 515. 29)/2, 





৪ 3 
(৬) 5112 রঃ | 1 (5110 এ. _ 5110 1/9)5 +- (০০9৭. _ 595 9)212 


উল্লিখিত স্ত্রগুলির প্রথম তিনটী গ্রাকদের জান! ছিল। চতুর্থ বত্রটি বরাহমিহির 
(«০৫ খ্রীঃ) প্রতিপাদন করিয়াছেন । অবশিষ্ট স্থত্র ছুইটি দ্বিতীয় ভাস্করের দান । 
ভারতীয় জ্যোতিবিজ্ঞানীগণ গোলক সম্বন্ধীয় ভ্রিকোণমিতির €57215:109] 
ন'718091502550:5 ) নিয়লিখিত স্ত্রাবলীর সহিতও পরিচিত ছিলেন £-- 
0০95 ০৮095 2 305 6 + 59110 2 9810 & ০০9৪ ০ 


৭৬ 


প্রাচ্য € পাশ্চাতা দর্শনের ইতিছাস 


309 4. 8115 ০৮ 305 £ 9121 & 510 2 005 & ০95 ৫ 

০ 920 251 1£ 25112 ০ 
২৪5 520 3 এত 0. 

910126109] আ্রিভূজের পরিমিতি নির্ণয়ে তাহারা উক্ত হুত্রগুলি প্রয়োগ 
করিয়াছিলেন । 

জ্যোতিবিজ্ঞান বিষয়ক প্রত্যেক ভারতীয় গ্রন্থেই 5125 ও 51:91:75 এবং 
তাহাদের বিয়োগফলের তালিক1 দেওয়। হইয়াছে এবং ৩৯” বিশিষ্ট কোণ ও 
গুণিতকগুলির 51155 ও "৮151 গত হিসাব নিন্ধপণ করা হইয়াছে । এই প্রসঙ্গে 
কুর্য-সিদ্ধাস্ত” (চতুর্থ শতাব্দী ) বণিত নিয়নলিখিত স্থত্রটীর উল্লেখ পাওয়! যায়__ 





এব 


5110 ?% 0 
225 


উক্ত স্থত্রটীর সাহায্যেই 512€এর তালিক! নির্ণাত হইয়া থাকে । স্থাত্রটী 5:€9এর 
দ্বিতীয় অস্তরফল (59০90 ৫1661217065 ) সাপেক্ষ | ]09191711 স্থন্ত্রটীকে 
অদ্ভূত বলিয়া মনে করিয়াছিলেন । তিনি বলেন-_-পগণিতবিদ্‌ :7855 ব্যতীত 
আর কেহই এপর্য্যস্ত উক্ত অস্তর পদ্ধতি (70196156181 [9:০9055 ) ব্যবহার করেন 
নাই। তাহা ছাড়া তিনিও-জ্যা অথব! অন্তরফলের বর্গ যে একটী গ্ুবকরাশি 
(002562706 9০6০])-ইহ1 জানিতেন না। অন্ত উপায়ে প্রাপ্ত দ্বিতীয় 
অন্তরফলের সহিত তুলনার সাহায্যে মাত্র তিনি উক্ত হুত্রচার সত্যতা প্রমাণ করিতে 
পারিয়াছিলেন'***** | তাহা হইলে এক্ষেত্রেও দেখা গেল যে উক্ত পদ্ধতিটি 
হিন্দুরাই অবগত ছিল ; গ্রীক অথবা! আরবদের মধ্যে উহার প্রচলন ছিল ন1। 
্রিকোণমিতিক আপেক্ষকসম্ুহের অসীম শ্রেনী 
[1906 55716581008 71015 07201761551 [01106101778 
পুথুমন সোময়াজী (১৪৩১ খ্রীঃ) বৃত্তচাপের অসীম শ্রেণী (177517)66 51169 ) 
আবিষ্কার করেন। এই শ্রেণীকে তিনি বৃত্তের কেন্দ্রে উক্ত চাপ নিগিত কোণের 
58175 ও 0951১ এবং বৃত্তের ব্যালার্ধের মাধ্যমে প্রকাশ করিয়াছিলেন । যদি 
বৃত্তের ব্যাসার্ধ, তাহার একটি চাপ, এবং ত্র চাপ দ্বারা কেন্দ্রে নিম্িত কোণটি 
যথাক্রমে £+ ০১ ও 9 দ্বার! স্থচিত হয়, তাহা! হইলে 


?০ 81109 £ 511099) £.:911050 £”. 51150 





5117 (711 09- 8110 7% 0 স্ 9110 779-911) (7-1)9- 


ডা. জিত 5 ৮৪5 
যখন ০৭৫৪ নাঃ এবং 


২ 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার| £ গণিত 


(২) পর ৮ গছ (576) 9] £ 5189 (্র-9) টা 5855 (এ -8) 
২) টি -*- ১১০৯৪. :4 


£ )্ . ০০০৪ ১০হ-6) 3. ০০5৪ (9) 5. 3০55 (9) মা 
যখন -৫+9 +৫- 


মগের, 


(৩) 7058 ০.১ 8112 টিটি ৮ 


ইহাকে আধুনিক প্রতীকে (81০৫০ 896801955 ) নিয়লিখিত ভাবে প্রকাশ 
করা যায় £-- 


95 95 
টি তিল তত 
[তি 1 বি ০.2 ০.4 
এবং ০6৫-1528, ০.-5£* 005 ০9০৮ % -- 21৮7 হাল 


ইহাকে নিয়লিখিতভাবে লেখা যায় :-_ 
92 
0০99 ৪০-17-948৫ ৬ 


উক্ত ফলগুলি নীলকণখ (১৫০০ খ্রীঃ) ও শঙ্কর বর্মণের গ্রন্থে উল্লিখিত 
দেখা যায়। 
ডে) কলম, ০০1০৬109 
ভারতীয় গণিতবিদের1 হ্ক্মতম বৃদ্ধির (110570165351779.] 11007515611) প্রয়োগ 
দেখাইয়াছেন। ইহার অর্থ, প্রদত্ত আপেক্ষকসমূহের অস্তর্কলন (11661556191 
০৫ 8551) £11019239 ). তাহার] ইহার নাম দিয়াছেন--তাৎ্কালিক গতি” । 
মন্ত্ুল* (৯৩২ খ্রীঃ) প্রদত্ত অন্তর্কলন স্থত্রটি (71957526191 £9270019 ) এইব্সপ-_ 
62 স্৮ 6 525 095 969 
অর্থাৎ উহ নিম্নলিখিত সমীকরণের অন্থরূপ 2 
£4 ৮57 32 5177 9 
গ্রহের প্রকৃত গতি (1:52 2006107 ) নিরূপণ কল্পে তিনি উক্ত সুত্রটি প্রয়োগ 
করিয়াছেন । 
তিনি বলিয়াছেন, “কেন্দ্রীয় সম্যক কোণের ০9510€কে (0958782 ০£ (196 
23520. 2:093215 ) কেন্দ্রীয় সম্যক কোণদ্বয়ের অস্তরফল দিয়া (101261105 
০£ (106 31)29.17) 21301072115 ) গুণ করিয়া গুণফলকে ছেদ দ্বারা ভাগ করিলে 
যে ভাগফল পাওয়া যায়» উহাকে সম্যক গতির (16213 2096102) সহিত 


১৫ 


: প্রা ও পাশ্চানয দরগনের ইতিহাস 
যোগ বা! বিয়োগ করিয়া! যাহা পাওয়া যাইবে, তাহাই প্রকৃত গতির মিনিটে 
(85 20061021210 23110065507 প্রকাশিত মানের সমান হইবে । 

84% 9র অন্তর্কলন € 70325752615] ) দ্বিতীয় ভাস্কর কর্তৃক “তাৎকালিক- 
ভোগ্য-খণ্ড; নামে অভিহিত হইয়াছে । এই অন্তর্কলন স্ত্রটি (108667615119] 
1021018]9.) যথা 2 5 620. 9). ০০5 969 তাহাদ্বার। প্রমাণিত হইয়াছে। 
তিনি “অয়ণবলন”? (৪22815 ০: 0958610:9 ) নিনূপণ কলে উক্ত স্থত্রটি কাজে 
লাগাইয়াছেন। তিনি নিয়লিখিত উপপাগ্যগুলিরও প্রয়োগ ঘটাইয়াছেন £ 

(১) যখন কোনও চলরাশি ( ৬ ৪1291015 ) সর্বোচ্চ মান প্রাপ্ত হয়ঃ তখন 
অন্তর্কলন (1046616101151 ) শূন্য হইবে । | 

৫) যখন কোনও গ্রহ অপভূ (49০98) বা অহ্থভূতে (071856) অবস্থান 
করে, তখন কেন্ত্র-সমীকরণ (7009619 ০£ 0115 0610016 ) শুন্য হয়। সুতরাং 
উক্ত গ্রহের কোনও মধ্যবর্তী অবস্থানের বেলাতে কেন্দ্র-সমীকরণের বৃদ্ধিও 
(175075205120 02 0005 601091105. ০৫ ০6766 ) শুন্য হইবে । 

বিপরীত (10555 ) ৪105 আপেক্ষকঃ ( £006101) ও দই আপেক্ষকের 
( 28100619105 ) €যাহাদের একটি করণ্যাত্মক চিহ ( [৪1০91 51£20 ) চিহ্নিত ) 
ভাগফল সংক্রান্ত অপর একটি উল্লেখযোগ্য স্তর নিম্নে বণিত হইল 2 


এ ঠে 5110 9 
শর টি -- ++: হলনা 
৯ ঃ (0 0095 0 + % )) 
৮৫7০ ০০৪৪)... )৯ 
২/০০ +2%% ০95 9425 








০(এঠহ ৯ ভু 5০5 9+ঞহ- 

উহ ছুট 555 94" 

উক্ত কুত্রট দ্বিতীয় আর্যভট (৯৫০ খ্রীঃ) ও দ্বিতীয় ভাস্করের (১১৫০ খ্রীঃ) 
গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে । 

€৭) শুম্যরাশি € অনভ্ভ (25:9০ 550 10090865 ) 

শুন্ঠরাশি :_ খ্রীঃ পৃঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্যায় প্রাচীন কালেই যে ভারতীয়রা 

শূন্্চক একটি প্রতীক ব্যবহার করিয়াছিল একথ ইতিপুর্বেই বল! হইয়াছে । 

কথিত আছে যে ব্যাবিলন ও মধ্য আমেরিকার ময় অঞ্চলের অধিবালীরাও নাকি 

্রীঃ পুঃ দ্বিতীয় শতাব্দীতেই সংখ্যা মানের অভাবস্চক একটি প্রতীক ব্যবহার 

করিত। কিন্তু শুন্য প্রতীক আবিফারের জন্ম গৌরব প্ররুতপক্ষে ভারতীয়েরাই 


১৬ 


প্রাচীন ভারতের .বৈজাদিক চিন্তাধারা ২ গণিত 


দাবী করিতে পারে; কারণ তাহারাই স্থানীয়মানন্ছচক পখ্যাবলিখমপ্ীতদে 
উক্ত প্রতীকটী ব্যবহার করিয়াছিল এবং সেই পদ্ধতিসশ্মত পাটীগশিত সৃষ্টি 
করিয়াছিল। শৃন্তকে সংখ্যা হিসাবেই গণ্য করিয়! তাহার। তাহার দ্বারা বিভিন্ন 
পাচীগাণিতিক প্রক্রিয়া ( 416010561091 90619610209 ) সম্পাদন করিয়াছিল। 
শৃগ্ভ শব্টি অত্যন্ত প্রাচীন । বৈদিক সাহিত্যেই উহার উল্লেখ রহিয়াছে । সংস্কৃত 
সাহিত্যে অভাব, তুচ্ছ, অসম্পূর্ণ, উপ প্রভৃতি অর্থে শৃন্ শব্দটী ব্যবহৃত হুইয়াছে। 
“সমমান বিশিষ্ট অথচ বিপরীতধর্মী ছুই সংখ্যার যোগফল শৃন্ত'*__-অধিকাংশ প্রাচীন 
ভারতীয় গণিতবিদই শৃন্ের এই সংজ্ঞ| নির্দেশ করিয়াছেন | উনবিংশ শতাব্দীতে 
ইউরোপেও 11916100102, চি. 891591705 780155 শৃন্তের অহন্ধপ সংজ্ঞা 
দান করেন। এই সংজ্ঞঃ অহুসারে শৃন্ঠের পূর্বে বা পরে কোন রাশি রাখিয়! 
পাটীগণিতীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়! সম্পাদন করা যায় এবং সমস্ত প্রক্রিয়াতেই রাশিটীর 
অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। ভাক্করের টীকাকার কৃষ্ণ (১৫৭৫ খ্বঃ) শুন্তের সাহায্যে 
গুণন প্রক্রিয়ার দৃষ্টান্ত আলোচনাকালে বলিয়াছেন--“বস্ততঃ গুণ পুমরাবৃত্তির 
নামাত্তর ; যদি পুনরাবর্তন যোগ্য কোন সংখ্যা না! থাকে তাহা হইলে গুণকরাশি 
যত বড়ই হউক ন1 কেন তাহা দ্বারা কোন কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটানই সম্ভব নহে ।১০ 

এই বাধা অপসারণকল্পে কৃষ্ণ ও গণেশ (১৫৪৫ খৃঃ) বলিয়াছেন_-কোন 
সংখ্যাকে চরমভাবে হাস করা, উক্ত সংখ্যাকে শুন্তে পরিণত করার সামিল। 
মহাবীরাচার্য ১ হইতে ৯ পর্যযস্ত এই নয়টী সংখ্যার মত শৃন্যকেও একটী সংখ্যা 
বলিয়] গণ্য করিয়াছিলেন । এ সম্পর্কে কষ আরে! বলেন যে "শুন্য ধনরাশিও নয়, 
খণরাশিও নয়। সেইজন্য ইহাকে কোন চিহ্ন দ্বারাই. €(+ -) চিহ্িত 
করা যায় না। 

প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন পাটীগণিত ও বীজগণিত গ্রঙ্থে সংখ্যার সহিত 
শুন্যের অথবা শৃন্যের সহিত সংখ্যার যোগফল তথা সংখ্য। হইতে শুন্ভের অথবা 
শৃন্ত হইতে সংখ্যার বিয়োগফল বণিত হইতে দেখা যায়। 

অত্যণু হিসাবে শুগ্ভরাশির ব্যবহার £€ 25:0০ 2৪ ৪. [05016551709] ) ভারতীয় 
গণিতবিদের1 যখন হইতে শৃষ্তের সাহায্যে গুণ ও ভাগ প্রক্রিয়া সম্পাদনের 
প্রয়াস পাইয়াছিলেন তখন হইতেই অত্যণু হিসাবে শুহ্রাশির ব্যবহারের 
ধারণ] জন্মে। ব্রহ্গগগু, (৬২৮ থুষ্টাব্দ ) শুন্যকে, অথবা শৃন্তের দ্বারা গণনের 
গুণফল এইরূপ নিভুলভাবে লিখিয়াছিলেন £-- 

0 ৮ (3:2)-৮03 (2:2)১৮০.-০ ০৯+০-9 


১৭ 


প্রাচা "ও. পাশ্চাত্য গর্শমের ইতিহাস, 


ভাস্কর রচিত লীলাবততী শ্রস্থের টীকায় টীকাকার গণেশ (১৪৪৬ খ্বঃ) 
ভারতীয় দৃহ্বিভঙ্গীর এইরূপ ব্যাখ্যা দান করিয়াছেন-_-“গণক হইতে যতবারই 
১ কমাইয়্া লওয়! হইবে, ততবারই গুণফল হইতে গণ্য সংখ্যাটি বিষুক্ত 
হইবে । এইনূপে শেষ পর্যস্ত যখন শুন্তের দ্বারা কোন সংখ্যাকে গণ করা 
হয়, তখন শুন্তের অব্যবহিত- পুর্ববর্তী গুণক অর্থাৎ একের দ্বার! উক্ত সংখ্যার 
গণনের গুণফল হইতৈ' গুণ্যই- বিষুদ্ত হইবে $ অর্থাৎ গুণফল শুন্যে পরিণত 
হইবে | এখানে স্পষ্টই প্রতীয়মান হইতেছে যে গণেশ ওণককে অথগুরাশি 
হিসাবে গণ্য করিয়াছিলেন, এবং সেইজন্তই তাহ হইতে পুনঃ পুনঃ ১ বাদ 
দেওয়ার ফলে শেষ পর্যস্ত গুণক শুন্তরাঁশিতে পরিণত হইয়াছে । 

কিন্ত কৃষক € ১৫৭৫ খৃঃ) অন্ুব্ধপ নিদ্ধাস্ত করেন নাই। তাহার সিদ্ধাস্ত 
এই যে--৭গুণ্য সংখ্যাটিকে যত হাস কর! হইবে, গুণফলও ক্রমান্বয়ে তত 
হাল পাইবে। গুণ্য যেখানে হষ্বতম অর্থাৎ শূন্য ওণফলও সেখানে তদঙ্থব্বপ | 
কোন সংখ্যার চরমতম হুত্ঘতার অর্থ উহার শুন্ে পরিণতি । সুতরাং গুণক 
যদি শূন্য হয় তাহা হইলে গুণফলও শৃন্যই হইবে । গুণকের হ্রাসের লঙগে সঙ্গে 
গুণফলও হ্বান পাইয়! থাকে । গুণক যেখানে শুন্ভ গুণফলও সেখানে তাহ! 
ছাড়া আর কিছুই নহে ।”১১ 

অসীম :_(10150105 ) অশুন্য সংখ্যাকে শুন্তের দ্বারা ভাগ করা হইতেই 
পাটীগণিতে অনস্তের ধারণার (1068 ০: (175 171577165) উত্তভব। ব্রহ্মগুপ্তই 
(৬২৮ খৃঃ) সর্বপ্রথম শুন্টের দ্বারা সংখ্যার ভাগের কথা বলেন। শ্রীধর 
(৭* থুঃ) এবং দ্বিতীয় আর্যভষ্ট (৯৫০ খ্রীঃ) শুন্তের দ্বারা ভাগের কথা 
উল্লেখ করেন নাই। কোন সংখ্যাকে শুন্তের দ্বারা ভাগ করিলেও সংখ্যাটি 
অপরিবতিতই থাকিবে-_মহাবীর (৮৫০ খৃঃ) এই অশুদ্ধ ফল নির্দেশ 
করিয়াছিলেন । 

ব্রহ্মগুপ্তের মতে--ধন বা খণরাশিকে শৃন্ঠের দ্বার! ভাগ করিলে ভাগফল 
হইবে_-ভাজ্যরাশি বিভক্ত শৃন্ত | ইহাকেই “তচ্ছেদ্র” বল! হইয়াছে । ্তরাং £-_ 


ঠ 


ভাম্করের €১১৫০ খ্বঃ) মতে-সসীম রাশিকে শুন্তের দ্বারা ভাগ করিলে 
ভাগফল «খহয়” হইবে? কিন্ত তিনি অনীম বা অনস্তরাশির১* দ্বারাই “খহর? 
এর মান নির্দেশ করিয়াছিলেন। কৃষ্ণের মতে ভাজক যত হাস পাইবে ভাগফল 
তত বধিত হইবে। ভাজক নিয়তম হইলে ভাগফল হইবে উচ্চতম। কিন্ত 


৯৮ 


ভাগফলের মান যদি কোন বিশেষ সংখ্যায় নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হয় তাহা 
হইলে উক্ত সংখ্যাই যে বৃহত্তম একথা বলা চলিবে লা; কারণ তদপেক্ষা 
বৃহত্তর সংখ্যাও সম্ভব । ভাগফঙ্প যেখানে অনির্ঘিষ্টভাবে বৃহৎ সেইখানেই 
তাহাকে অনস্ত বল! সঙ্গত । 

উল্লিখিত মতামতের সহিত গণিতবিদ রি 501750 এয (১৮২৮ খুঃ) 
অভিযমতের তুলনা করা যাইতে পারে | তাহার মতে যদি 2 ও & যথাক্রমে 


অশৃন্ঠ ও শৃন্যরাশি হয় তাহা হইলে ভাগফল হিসাবে --অর্থহীন।১* ভাশ্করের 
(১১৫০ খুঃ) অভিমত এই যে-অনস্তের সহিত অথব। তাহ! হইতে কোন 
সসীমরাশি যোগ বা! বিয়োগ করিলে তাহার কোন হ্বাস-বৃদ্ধি হয় না যেমন £--- 


টি 5 ৮-0 এখানে 2, & ছুইটি সসীম রাশি। তাহার বক্তব্য এই যে__ 


জগৎ ধ্বংস অথবা স্ষ্টির কালে অসংখ্য বস্ত নিঃশেধষিত অথবা উত্তৃত হইলেও 
যেমন অনস্ত ও অপরিবর্তনীয় শ্রষ্টার কোনও পরিবর্তন ঘটে না সেইক্নপ শৃন্ত 
ভাজক বিশিষ্ট এই অনস্ত রাশির (1120165) সহিত অথবা উহা! হইতে যত 
কিছু যুক্ত ব৷ বিযুক্ত হউক ন1 কেন, উহা অপরিবর্তিতই থাকিবে ।৯৪ 

কষ্ণের অভিমতও অন্র্ূপ | অলীম রাশি স্চক (101590166 88061 ) 
ভগ্নাংশের ( খহর ) সহিত অথব! উহা! হইতে কোন সসীমরাশি যুক্ত অথবা! বিষুক্ত 
হইলেও উহার কোন পরিবর্তন ঘটে না। কারণ, কতকগুলি ভগ্নাংশকে সাধারণ 
হরবিশিষ্ট ভগ্লাংশে পরিণত করার সময় যদি কোন সীম ভগ্নাংশের লব ও হর 
উভয়কেই শুন্তের ঘ্বার1 ওণ কর! হয় তাহ! হইলে উভয়ই শুন্য হইবে । এবং কোন 
সলীম সংখ্যার সহিত, অথবা উহা! হইতে, শৃন্ত যোগ বা বিয়োগ করিলে উক্ত সংখ্য' 
অপরিবতিত থাকিবে । যদি কোন অসীম ভগ্নাংশের লবের সহিত, অথবা উহ! 
হইতে, কোন সীম সংখ্যা যোগ অথবা বিয়োগ করা হয় তাহা হইলে উক্ত লব 
অবশ্যই পরিবদ্তিত হইবে ফলেই উহ! অপর একটি অসীম ভগ্রাংশের লব হিসাবে 
পরিবতিত হইবে । তবে শূন্য হর বিশিষ্ট ভগ্মাংশের লবটি, ছোট অথবা বড়, একটি 
সসীমরাশি হইলেও উক্ত ভগ্রাংশটি একটি অসীমরাশি (12.917166) হইবে যেমন +-- 


2.6 6 ৮০, তে 40 2 


ঢিল ০১৮০" '0. 


এখানে 2 একটি সসীম রাশি, আবার £-_ 


ঠে. 6 225 
০:৯০ অসীম 





১৪ 


; শ্রাচা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাল : . 

সংস্কত অনস্ত শব্দটিক্ন অর্থ সীমাহীন । এই শব্দাট বেদের আপ্রাচীন গ্রন্থেও 
ধ্যবন্ধত হইতে দেখা যায়| কিন্ত যে সময় হইতে গণিতবিদের1 শব্দটির প্রয়োগ 
গুরু করেন সম্ভবতঃ সেই সময় হইতেই ইহার প্রকৃত তাৎপর্যের বিকাশ ঘটে । 
ভারতীয় গণিতবিদ্েরা “অনন্ত" অর্থে এচ্ছেদ? বা 'খহর' (শৃন্ত হরবিশিষ্ট ) শব্দ 
দুইটি নিয়মিতভাবে ব্যবহার করিয়াছেন | সাহিত্যের ক্ষেত্রে অবশ্বু শব্দটি বিভিন্ন 
অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে । খ্ৃষ্রীয় নবম শতাব্দীর প্রারভে রচিত, প্বটখণ্ডাগম* 
নামক জৈন গ্রন্থের টীকা 'ধবলা”তে উক্ত বিভিন্ন অর্থের শ্রেণী বিভাগ ও বিস্তৃত 
বিবরণ পাওয়। যায়। টীকাকারের মতে অনস্ত শবটি নিম্নলিখিত একাদশ অর্থে 
ব্যবন্ধত হইয়াছে £-- 

(১) নামানভ্ত £$--নামেই অনস্ত (11161166870. 12902 )।| কতকগুলি 
বস্তর সমষ্িকে-_ প্রকৃতপক্ষে সেইগুলি অন্তহীন হউক বা নাই হউক-_অজ্ঞলোকের 
সাধারণ কথোপকথনে অথবা সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বুঝাইতে, অনস্ত বলিয়া 
অভিহিত কর] হয় । উক্ত প্রসঙ্গে অনস্ত শব্দটি নামেই অনস্ত অর্থাৎ নামানস্ত | 

(২) স্থাপনানস্ত :--আরোপিত ব! সংযুক্ত অনস্ত। এখানেও শব্দটির প্রক্কৃত 
তাৎপর্য নাই। কোন বস্ততে আরোপিত অথব! কোন বস্তর সহিত সংযুক্ত 
অনস্তকে বুধঝাইতে শব্দটির ব্যবহার | 

€৩) ভ্রব্যানত্ত £--অব্যবহৃত জ্ঞানের তুলনায় যাহ অনস্ত | অনম্ত সম্পর্কে 
যাহার] জ্ঞানী অথচ সামগ্লিকভাবে সেই জ্ঞানের প্রয়োগ করেন না--এইরপ 
ব্যক্তিদের সম্পর্কে এই শব্দটির ব্যবহার দেখা যায় । 

(৪) গণনানস্ত :--সংখ্য। সম্বন্ধীয় অন্ত ( টব 212211091 17010 )| গণিত 
শাস্ব সম্মত প্রক্কৃত অনস্ত অর্থেই এই শব্দটির প্রয়োগ । 

(৫) অপ্রাদেশিকানস্ত £__যাহা মাত্রাহীন (11006151911555) অর্থাৎ 
অপরিমেয়ভাবে ক্ষুদ্র তাহাই । 

(৬) একানত্ত £--একদেশীয় অনস্ত (0289 04:501978] [)917166 ) কোন 
অনস্তবিস্ভুত সরলরেখার একট-প্রাস্তে তাকাইলে যে অনস্ত আভাবিত হয় ইহ 
তাহাই । 

(৭) উভয়ানস্ত £--দ্বি-দেশীয় অনস্ত (1০ ৫1:0020281 [51115 ) উভয় 
দিকে অনস্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সরলরেখাই উহার উদাহরণ । 

(৮) বিস্তারানস্ত £--ঘ্ি-মাত্র! বিশিষ্ক তল বন্বন্ধীয় (১০-০:28575892121 
[5801 ০: 52676919] [08:01 ) অনস্ত $ ইহার অর্থ অন্ত সমতল ক্ষেত্র | 


১ 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিত্কাখার। 2 গণিত 


(৯) সর্বানজ্ত :₹__দেশানস্ত (99019110501) অর্থাৎ ত্রিমাত্রাবিশিষ্ট আনত 
( 2 0:55-0125973192191 [1060165 ) অথবা অনস্ত দেশ (175810165 9198০৩ )। 

€১০) ভাবানস্ত £--সচরাচর ব্যবহৃত জ্ঞানের তুলনায় যাহা অনস্ত। অনম্ভ 
সম্পর্বীয় ধাহার জ্ঞান আছে এবং যিনি উক্ত জ্ঞানের প্রয়োগ করেন তাহার 
সম্পর্কেই উক্ত শব্দটির প্রয়োগ । 

(১১) শ্াশ্বতানস্ত £_-নিত্য ও অবিনশ্বর অর্থে ইহার প্রয়োগ | 

উপরিউক্ত শ্রেণীবিভাগ হইতে বুঝা যায় যে প্রাচীন ভারতীয় চিস্তানায়কগণ 
অনস্ত (0111105) শব্দটির অর্থ নির্ণয় করিতে গভীরভাবে মনোনিবেশ 
করিয়াছিলেন। এমন কি আধুনিক বিচারেও তাহাদের অন্ত সম্বন্ধীয় এই ধারণ! 
প্রায় অভ্রান্ত বলিয়! বিবেচিত হুইয়াছে। 

৮1 জ্যোতির্বিজ্ঞান (4৪৮:০০০৪০৮) 

প্রাচীন পুঁথিপত্র হইতে জানিতে পার] যায় যে ক্যালডিয়, সিরিয়া, মিশর ও 
ময়ের অধিবাসীরা ও অন্তান্ত কোন কোন জাতি জ্যোতিিজ্ঞানের উপর বিশেষ 
গুরুত্ব আরোপ করিয়াছিল এবং উহার অন্থশীলনে আত্মনিয়োগ করিয়াছিল । 
পুরাকালে সাধারণতঃ গোষ্ঠীপতি অথবা পুরোহিতেরা ছিলেন জ্যোতিবিদ | 
ফসল উৎপাদনের ভন্ত উপযুক্ত কাল নির্ধারণ ছিল তাহাদের অন্যতম কর্তব্য, 
ইহার জন্য [00109] 97581 ও ক্ুর্যের বাধিক গতি সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রয়োজন 
হইত তখন সাধারণতঃ চান্দ্র মাসের (18128 598) প্রচলন ছিল এবং লৌর 
বৎসরের (9০151 5621) সহিত সামঞ্জন্ত রাখিয়! চান্দ্র বৎসর গণন! করার 
প্রণালী উদ্ভূত হইয়াছিল । 

প্রাচীন ভারতীয়ের1, 'বেদ” ও “বেদাংগ-জ্যোতিষে, তাহাদের জ্যোতিধিজ্ঞান 
সংক্রান্ত জ্ঞানের সাক্ষ্য রাখিয়! গিয়াছেন। উক্ত গ্রন্থগুলি থুষ্টপূর্ব তিন হাজার 
হইতে থৃষ্টপূর্ব ১৪০০ অন্দের মধ্যেই রচিত হইয়া! থাকিবে । খকৃবেদে (থুষ্টপুর্ব 
তিন হাজার ) সুর্যের বর্ষপথের দ্বাদশ বিভাগ** এবং উক্ত বৃত্ত পথের ৩৬ 
বিভাগেরও উল্লেখ পাওয়া! যায় । কথিত আছে যে ক্যালডিয়! ও ব্যাবিলনের 
অধিবাসীরাই নাকি যথাক্রমে সর্ষের বর্ষপথের এই দ্বাদশ ও ৩৬০ বিভাগের কথ! 
প্রথম জানিতে পারে । উক্ত তথ্যের প্রথম আবিষ্কারক কাহার1-- এ প্রশ্রের 
মীমাংসা সহজসাধ্য নহে তবে মনে হয় ক্যালডিয়া ও ব্যাবিলনের অধিবাসীরা 
সর্ষের বৃত্তপথের এই বিভাগের কথা ভারতীয় আর্ধদের নিকট হইতেই জানিতে 
পারিয়াছিল | 


ব৯ 


: “প্রাচ্য ও প্রাশ্াত্য মর্দনের ইতিহাল 


খথেদে হুর্ধের বর্ষপ্রথকে ত্বাদশ-অর-বিশিষ্ট চক্রক্পপে (12 50160 71121 ) 
বর্ণপ! করা হইয়াছে. চীকাকার .সায়নের মতে উক্ত অর-দ্বাদশ ঘ্বাদশ রাশি 
(2০15০ ) ভিন্ন আর কিছুই নহে । সেইক্প বেদোক্ ঘ্বাদশাদিত্য উক্ত স্বাদশ 
বিভাগেই অবস্থিত ত্বাধশ সূর্য । বৈদিক ভারতীয়েরাই ক্রান্তিপাত € 2:93- 
2906391 ) ও অয়নপাত (5০15016391 ) নির্ধারণ করিয়! উহাদের বিশ্দু চতুষ্টয়কে 
অগ্নি, ইন্ত্র এবং মিআ ও বরুণ এই নামে অভিহিত করে । অন্নরূপভাবে তাহারা 
চন্দ্রের গতিপথকেও সাতাশ ভাগে বিভক্ত করিয়াছিল 3 ইহারাই নক্ষত্র নামে 
পরিচিত। এক পুণিমা হইতে অপর পৃিমা অথবা এক অমাবস্যা হইতে অপর 
অমাবস্তা পর্য্যস্ত কালকেই তাহারা এক মাস বলিয়। গণ্য করিত। সৌর বৎসরের 
সহিত চান্দ্র মাস গণনার সামঞ্জস্ত বিধানের জন্তই যে ভারতীয়ের1 ৬২ চান্দ্রমাস 
বিশিষ্ট ৫ বৎসর কালকে একটি যুগ বলিয়! অভিহিত করিয়াছিল- ইহার প্রমাণ 
পাওয়া যাক্স। 

ধর্মগ্রন্থ বলিয়াই হয়তে। বেদগুলি কালের করাল গ্রাস উপেক্ষা করিয়া আজও 
বাচিয়া রহিয়াছে । জ্যোতিবিজ্ঞান অথব1 অন্তান্ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যা সংক্রাস্ত 
বিভিন্ন গ্রস্থও হয়তে। সে যুগে রচিত হইয়াছিল, কিন্ত সেগুলি আজ নুপ্ত। অগ্যাবধি 
তাই যে সংস্কৃত সাহিত্য টিকিয়। রহিয়াছে তাহার মধ্যে এক বিরাট ফাক 
লক্ষ্য করা যায়। একদিকে আমাদের বৈদিক সাহিত্য অন্তদ্দিকে খৃষ্টীয় যুগের 
প্রারভ্তে সম্পূর্ণ ভিন্ন রীতিতে রচিত অপরাপর গ্রন্থ; কিন্ত এতছুভয়ের মধ্যবর্তী 
প্রায় দুই হাজার বৎসরের মধ্যে রচিত কোন বিজ্ঞান গ্রন্থই পাওয়া যায় নাই। 

থৃঠীয় বষ্ঠ শতাব্দীর প্রারস্তে রচিত “আর্ধ ভটীয়” নামক গ্রস্থই হিন্দু 
জ্যোতিধিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থের প্রাচীনতম নিদর্শন | খুষ্টায় বষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগে 
রচিত “পঞ্চসিদ্বাস্তিক1” গ্রন্থে, গ্রন্থকার বরাহ্মিহিরের নিকট পরিচিত পাঁচখানি 
প্রসিদ্ধ জোতিবিজ্ঞান গ্রন্থের নাম ও সারাংশের উল্লেখ পাওয়। যায়। উক্ত 
গ্রস্থগুলি “আর্য ভটীয়” গ্রন্থের পূর্বেই রচিত হইয়াছিল এবং ইহাদের কয়েকখানি 
গজ যুগের পূর্বে রচিত হওয়াও বিচিত্র নয়। কিন্তু বর্তমানে সেগুলি নুগ্ু। 
ঘঃ পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগে স্থানীয় মান নির্দেশক অঙ্পাতন প্রণালী সার্বজনীন 
ভাবে গৃহীত হইয়াছিল । উক্ত গ্রস্থগুলিতে সেই প্রণালীর ব্যবহার ছিল ন! 
বলিয়াই সম্ভবতঃ সেগলি বাতিল করা হইয়াছিল । অথবা হয়তো উক্ত বিষয়ের 
উন্নততর গ্রন্থ তাহাদের স্কান অধিকার করিয়া থাকিবে । জ্যোতিধিজ্ঞান বিষয়ক 
যে প্রাচীন খ্রন্থগুলি পাওয়। গিয়াছে তাহা হইতেই প্রমাণিত হয় যে, ভারতী য়ের। 


২ 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক ভিন্তাধারা £ গণিত রা 


উক্ত বিদ্যায় উল্লেখযোগ্য উৎকর্ষ লাভ করিয়াছিল ; এমন কি এই বিষয়ে তাহার 
পৃথিবীর সকল জাতিকেই ছাড়াইয়' গিয়াছিল। ভারতীয়েব্র! গ্রাকদের নিকট 
হইতেই জ্যোতিথিগ্ভাসংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করিয়াছিল--এইব্ধপ একটি যতবাদ 
প্রচলিত আছেঃ কিস্ত ইহা নিছক কল্পনাপ্রস্তত বলিয়াই মনে হয়। তাহারা 
যে গ্রীকদের সংম্পর্শে আসিয়াছিল সে সম্বন্ধে সন্দেহ নাই, এবং ফলে উভয়জাতির 
মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান হওয়া অস্বাভাবিক নহে। কিন্ত জ্যোতিথিগ্া। 
বিষয়ে ভারতীয় ও গ্রীকদের রীতি, বিষয়বস্তু ও তত্বসমূহ এত স্বতন্ত্র যে এ 
ব্যাপারে ভারতীয় ও গ্রীকের। কে কাহার কাছে কতখানি খণী--বর্ডতমান জ্ঞানে 
তাহা! নির্ণ্স করা ছুঃসাধ্য। ভারতীয় জ্যোতিবিজ্ঞানে এমন কতকগুলি 
পারিভাবিক শন্দ রহিয়াছে-_যেগুলি মূলতঃ গ্রীক; পক্ষান্তরে সংস্কত মূলোত্ুত 
কতকগুলি শব্দ গ্রীক জ্যোতিবিজ্ঞানে পাওয়1 যায় । তাই এইক্প সাক্ষ্য প্রমাণের 
উপর নির্ভর করিয়! কোনরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঙ্গত নহে । অথচ কোন কোন 
পাশ্চাত্য পণ্ডিত তাহাই করিয়াছেন । | 

“বেদাংগজ্যোতিব” জ্যোতিথিগ্য। বিষয়ে প্রাচীনতম ভারতীয় গ্রন্থ। উক্ত 
গ্রন্থে কেবলমাত্র জ্যোতিবিদ্যাই আলোচিত হইয়াছে । থুষ্ট জন্মের দুই হাজার 
বৎসর পূর্ববর্তী ভারতীয় আদিম জ্যোতিবিগ্ভা উক্ত গ্রন্থে প্রকাশিত রহিয়াছে । 
ইহা হইতে বুঝা যায় ষে, ভারতীয়ের। সেই স্থপ্রাচীনকালে জ্যোতিবিদ্যাকে 
জ্ঞানের একটি বিশিষ্ট শাখা হিসাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং উহার 
উপযোগিতা সম্বন্ধেও তাহারা সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। উক্ত গ্রন্থের তিনটি 
বিভিন্ন পাঠ পাওয়া যায় । খকৃবেদীয় পাঠে চান্দ্রতিথি (1402082 0955) 
গণন', পৃণিমা, অমাবস্তাত অয়নসমূহ (75951230355 ) এবং সাতাশটি নক্ষত্রের 
তুলনায় চন্দ্র ও হ্র্যের অবস্থান নির্ণয় সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি নির্দিষ্ট হইয়াছে। 
মাস, বৎসর, মুহুর্ত, লগ্ম, পৃণিমা ও অমাবস্যা» তিথি, খতু এবং পঞ্চ সৌর বৎসর 
কালের মধ্যবর্তী বিষুবসমূহের আলোচন1 যুর্বেদীয় পাঠের অস্তভূক্তি। 
উহাতেই--কানল নির্ধারণের যন্ত্র হিসাবে- জল-ঘড়ির ( ৪5: ০1০০) উল্লেখ 
পাওয়া যায়। অথর্ববেদীক্ষ পাঠে মুহুর্ত, চান্দ্র-তিথিঃ করণ, যোগ প্রভৃতির 
আলোচন। এবং সাপ্ডাহিক দিনগুলির উল্লেখ রহিয়াছে । 

বরাহমিহিরের “পঞ্চসিদ্ধান্তিক। গ্রন্থে “হুর্য-সিদ্ধাত্ত+ঃ “পিতামহ-সিদ্ধাস্ত”ঃ 
“রোমক-সিদ্ধাস্ত*» “পুলিশ-সিদ্ধান্ত এবং “বশিষ্ঠ-সিদ্ধাস্ত প্রভৃতির উল্লেখ ও 
তাহাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রহিয়াছে। ন্বীকৃত মুল্যবিশিষ্ট, উক্ত সিদ্ধান্তগলি 


২৩ 


. ধ্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহান 

পুর্লাতন পদ্ধতিতে লিখিত ছিল। পরবর্তাকালে এগুলি বিভিন্ন মতন রীতিতে 
পুনলিখিত হইয়াছিল | ব্রহ্ষগুপ্ত ( ৬২৮ খৃঃ) “বশিষ্ঠ সিদ্ধান্তে, বিজয়নন্দিন ও 
বিষুচন্্র লিখিত ছুইটি ভিন্ন সংস্করণের উল্লেখ করিয়াছেন । গ্রীষেন সম্পাদিত 
“রোমক সিদ্ধান্তের নুতন সংস্করণ ও প্রথম আর্খ ভটের শিষ্য লাটদেব বিরচিত 
“সুর্য সিদ্ধান্তের একটি সংস্করণের কথাও তিমি বলিয়াছেন। কিন্ত এই সিদ্ধাত্তগুলির 
কোনখানিই দীর্থকাল টি'কিয়! থাকিতে পারে নাই। নৃতন গ্রন্থের আবির্ভাবের 
সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন গ্রন্থ বাতিল হইয়া! গিয়াছে । থু: পঞ্চম হইতে অষ্টম শতাব্দী 
পর্যস্ত এই সময়টিকে ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশিষ্ট সাধন! ও অগ্রগতির কাল 
হিসাবে গণ্য করা যাইতে পারে । কেনন! এ সময়েই গণিত ও জ্যোতিবিদ্ধা! 
ংক্রাস্ত বহু সংখ্যক গ্রন্থ রচিত হইয়াছিল । 

খুঃ ৪৯৯ অব্দে প্রথম আর্য ভট অশ্মক নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। 
পাটলিপুস্্র অর্থাৎ বর্তমান পাটনাতেই তাহার জ্ঞান সাধন] ও গবেষণার কাজ 
সম্পাদিত হইয়াছিল। তাহার ২৩ বৎসর মাত্র বয়সেই ১১৮টি শ্লোকবিশিষ্ট 
আর্ধতটীয় নামক ক্ষুত্র গ্রন্থখানি রচিত হয়। উক্ত গ্রন্থে গণিত ও জ্যোতিষের 
মূল তত্বগুলি লিপিবদ্ধ হইয়াছিল। আর্ধভটীয় নামক গ্রন্থে বিবৃত ভারতীয় 
জ্যোতিধিগ্ভার সহিত শ্রীক জ্যোতিবিদ্ার তুলনামুলক আলোচন! করিলে 
দেখ! যায় যে, উভয় দেশীয় জ্যোতিষ পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রহিয়াছে। 
জ্যোতিষ সংক্রান্ত ঘটনাবলীর গাণিতিক ব্যাখ্যাদানই ছিল উভয় দেশীয় পদ্ধতির 
উদ্দেশ্য কিন্ত তাহাদের অস্ুস্থত পন্থা ও তত্বগুলি ভিম্ন। ভারতীয়দের বিশ্বাস 
ছিল, (১) প্রত্যেক জ্যোতিষিয় ঘটনাই একটি নির্দিষ্ট কালের ব্যবধানে সংঘটিত 
হয়; (২) স্গ্রির, তথ! প্রতি যুগের, প্রারভ্েে সমস্ত গ্রহগুলি একই রেখ! অর্থাৎ 
০* দেশাস্তরে (25:0০ 1998105 ) অবস্থান করে ১ (৩) স্ষ্টির অথব1 যুগের 
প্রারস্ত কালই জ্যোতিষিয় ঘটনাবলীর গাণিতিক ব্যাখ্যাদানের উপযুক্ত কাল 
হিসাবে গণ্য) (৪) সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র একইব্ধপ রৈখিক গতিবিশিষ্ট (7410521 
£006205 )3 (৫) তাহাদের অসম দুরহ্থের জন্য কৌণিক গতির (4১818: 
09090) হার বিভিন্ন এবং (৬) শৃন্তন্থিত চলমান বিশ্দুলমূহের ( মন্দোচ্চ, 
শীঘোচ্চ এবং পাত ) প্রতি আকর্ষণের জন্তই গ্রহগুলির গতি অনিয়মিত । 

পৃথিবী বিশ্বত্রক্মাণ্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং তাহাকে ঘিরিয়াই সমগ্র গ্রহ-নক্ষন্জ 
ঘুরিতেছে-_লাধারণতঃ ইহাই ছিল পণ্ডিতদের ধারণা । কিন্ত প্রথম আর্ধভট 
অস্ঠান্ড ভারতীয় জ্যোতিবিজ্ঞানীদের সহিত এ বিষয়ে একমত হইতে পারেন 


৫, 


প্রার্চটীন ভারতের বৈজ্ঞামিক চিন্তাধারা এ গণিত 


নাই। তাহার মতে পৃথিবী আপন অক্ষের (435) উপরে এবং হুর্ষের 
চারিদিকে ঘুরিতেছে। তবে জ্যোতিষিক গণনার সুবিধার জন্য অন্যান্য ভারতীয় 
জ্যোতিবিজ্ঞানীদের মতই তিনি পৃথিবীকে গতিষীন বা স্থির ধরিয়! লইয়াই 
অগ্রসর হইয়াছিলেন। পৃথিবীর আকার গোল- ইহ] স্ববিদিত ছিল। চুম্বক 
পরিবৃত লৌহ-গোলকের মতই পৃথিবী যে অন্ান্ত গ্রহ-নক্ষত্র পরিবৃত হইয়1 শুন্তে 
অবস্থান করিতেছে ইহাও অবিদিত ছিল না। বিষুব-বৃজ্তস্থিত (75905092 ) 
কোন নির্দিষ্ট বিন্দুর সম্যক স্থিতি (11687. 70580105 ) নির্ণয়ের সাহায্যেই 
গ্রহের অবস্থান নিন্মপণ কর] হইত। গ্রহটির প্রকৃত ভূকেন্দ্রিক অবস্থান (1:86 
£50906106770. 095161010 ) নির্য় করার জন্য অবশ্য পরে বহুবিধ সংশোধন 
বা সংস্কারের সাহায্য লওয়! হইত। হ্ুর্য ও চন্দ্রের ক্ষেত্রে উক্ত উদ্দেশে 
জ্যোতিবিজ্ঞানীরা “দেশাস্তর সংস্কার” (15011816006 009:15063020 ) “মন্দকল 
সংস্কার” (75/0109.$0912. ০৫ (105 ০6106: ), “ভ্জাবিবর সংস্কার? (০০2:501922 
£০7 (106 12261010 0 (112) 0115 €০ 00610611016 ০08 6105 0১150% ) 
ও ণ“র-সংস্কারে'র (09116061092 10: 0115 19616005 016615110 ) প্রয়োগ 
করেন এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের বেলায় উক্ত সংস্কারগুলির সহিত '"শীঘ্র-ফল 
সংস্কারটির প্রয়োগও দেখ! যায়। তবে হৃর্ষ চন্দ্র ব্যতীত অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের 
ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োগের একই পদ্ধতি সকল জ্যোতিবিজ্ঞানী অহ্ুসরণ করেন 
নাই। পরবর্তী কালে শ্রীপতি 'উদয়াস্তর” (0০::696197 £০027 175 60961011 
9£ 615 05 €০ 001108165০৫ €11 €০11703০) নামক আরেকটি নূতন 
সংস্কার প্রবর্তন করিয়াছিলেন । এতদ্‌ব্যতীত আরও দুইটি "চান্দ্র-সং 
(1721981 ০0175061017 ) যথা 111৩ 7৮00102 ও বিকার-সংস্কার" 
(75 ড211963092.), পরবর্তীকালে আবিষ্কত হইয়াছিল। বস্তঃ 
প্রথম আর্ষভটই সর্বপ্রথম 7/০৫৮:9-এর কথ! প্রকাশ করেন কিন্ত বটেশ্বর 
প্রথম গণনা-কার্ধের জন্য ইহার সাহায্য লইয়াছিলেন। গণনা ও পর্যবেক্ষণ- 
কার্ষ--এতছভয়ের মধ্যে সামঞ্জন্ত বিধানের জন্য পরেও সময়ে সময়ে অন্ঠান্ 
সংস্কারের উদ্তব ঘটে । 

গ্রহের সম্যক অবস্থান (216917 [১095:0100 ) অবগত হইতে হইলে তাহাদের 
দৈনিক সম্যক গতি জানার প্রয়োজন । ৪৩২০০০০ বৎসরে কোন গ্রহের পরিক্রমা- 
সংখ্য। কত তাহা নির্ণয় করিয়া তাহার মাধ্যমেই জ্যোতিবিজ্ঞানীরা উক্ত গ্রহের 
গতিবেগ বিবৃত করিতেন ।. তাহারা মনে করিতেন যে উক্ত কালের অবসানে 


৪4 


. খরা ও পাশ্চাত্য ঈর্ণনের ইতিহাস 
বিশ্বব্র্মাও 'তাঁহার সমস্ত চলযান গ্রহ-নক্ষপ্র লইয়! পুনরায় তাহার প্রথম অবস্থানে 
ফিরিয়া আসিবে । সৈইজ্জন্ত গ্রহ-নক্ষত্রের পরিক্রমা-সংখ্যা (3২6৮০1৫6102 
11015019213 ) ( ভগণ") পৃর্ণসংখ্যার হারাই প্রকাশিত হইয়াছিল । বিভিন্ন 
জ্যোতিধিজ্ঞানীদের মতাহ্থযায়ী উক্ত পরিক্রমা-সংখ্য। নিয়ে প্রদত্ত হইল £-- 


৪৩২**** সৌর বৎসরে পরিক্রম1-সংখা। 


রা 8 আর্ধাভটায় চি ্রাজ্মন্ষ,উ সিদ্ধান্ত 
তূর্য ৪৩২০০০৩ ৪৩২০০০৪৩ ৪৩২৩ ০৩০৩ ৪৩২০০০০ 
চন্দ্র ৫৭৭৫৩৩৩৬ &৭৭৫৩৩৩৬ & ৭৭৫৩৩৩৬ ৫&৭৭৫৩৩০০ 
মল ২২৯৬৮২৪ ২২৯৬৮২৪ ২২৯৬৮৩২ ২২২৯৬৮২৮৫২২ 
বুধ ১৭৯৩৭০০৩ ১৭৯৩৭০২.৩ ১৭৯৩৭০৬০ ১৭৯৩৬৯৯৮৯৮৪ 
বৃহস্পতি ৩৬৪২২ ৩৬৪২২ ৪ ৩৬৪২২০ | ৩৬৪২২৬*৪৫৫ 
শুক্র ৭০২২৩৮৮ ৭০২২৩৮৮ ৭০২২৩৭৬ ৭০২২৩৮৯৪১৯২ 
শনি ূ ১৪৬৫৬৪ ১৪৬৫৬৪ ১৪৬৫৬৮ ১৪৬৫৬৭*২৯৮ 


উক্ত তালিকা হইতে বুঝা যায় যে পরিক্রমা-সংখ্যাগুলি সংস্কারসাপেক্ষ । 
ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের ফলেই বিভিন্ন সময়ে এই সংস্কারগুলির প্রচলন ঘটিয়াছিল । 
প্রত্যেক যুগ-প্রারস্ভেই যে গ্রহগুলি শূন্য দেশাস্তরে অবস্থিত ছিল-_এ কথা পূর্বেই 
বল! হইয়াছে । অন্য যে কোন সময়েই গ্রহের সম্যক দেশাস্তর নিম্নলিখিত স্যত্রের 
সাহায্যে নির্ণয় করণ হইত 2 

সম্যক দেশাত্তর ( 11520 15912051009 ) 
পরিক্রমণ-সংখ্যা * অহর্গণ ([২5ড৬০911161010 101120161 ) 

২৪ ঘণ্টা কাল পরিমাণ বিশিষ্ট দিনের সংখ্যা (15075 9£ ০1571 835) 

যুগের আরম্ভ নির্দিষ্ট থাকায়, ০1%£1 0255 এর সংখ্যা গণনার উপযোগী 
তথ্যগুলি পরবর্তী যে কোন বিশেষ দিনেই অদৃশ্য হইত । 

প্রকৃত ভূকেন্দ্রীয় দেশাস্তর (7205 (৯৫010156510 [49010816098 ) নির্ণয়ার্থ, 
সম্যক দেশাস্তরের € 1622. 1+00£1605 ) ক্ষেত্রে প্রযুক্ত সংস্কারগুলি তথাকথিত 
“নীচোচ্চবৃত্ত” (071০5116 ) সন্বন্ধীয় তত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথম আর্য 
ভটের “নীচোচ্চবৃত্ত' সম্বন্ধীয় তত্তের (71০50110 £12৩০:%) সহিত শ্রাকদের উক্ত 
তত্র ভুলন! করিলে উভয়ের মধ্যে বিস্ময়কর পার্থক্য চোখে পড়ে । বিভিন্ন 


ছি 


পদে (0৫৫ 8216 7৮৩1 138.0193165 ) প্রথম আর্য ভট ও অন্তান্, হিন্দু জ্যোতি- 
বিজ্ঞানীদের, “নীচোচ্চ ব্বস্ত'গুলির আয়তনগত পার্থক্য লক্ষ্য কর! যায় এবং 
স্বানাহযায়ী উহাদের আয়তনের পরিবর্তন ঘটে।” পক্ষান্তরে গ্রীকদের 'নীচোচ্চ 
বৃত্ত'গুলির আয়তন সর্বদা অপরিবর্তিত । 

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী তিথি, নক্ষত্র করণ, যোগ, এবং গ্রহণের. কাল নির্ণয়ের 
জন্য ছুর্য ও চন্দ্রের দেশাস্তরের হিসাব প্রয়োজন হইত । হিন্দুদের ধর্মাচরণের 
সহিত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় গ্রহণের কাল ও তাহার প্রলম্বন (৮:০1০61০: ) 
নির্ণয়ে হিন্দু জ্যোতিবিজ্ঞানীদের বিশেব আগ্রহ ছিল। প্রথম আর্যভটের 
লম্বন (79:£9119-. ) নিরূপণ প্রণালী “দেশজ্যা-বিধান* নামে পরিচিত | ইহ! মূলতঃ 
ভারতীয় পদ্ধতি । পুরাকালে অবশ্য লোকের ধারণ! ছিল যে রাহুর জন্যই 
গ্রহণ সংঘটিত হইয়া! থাকে । ব্রহ্ষগুপ্ত ও লল্ল কঠোরভাবে এই মিথ্য। জ্ঞান বা 
ধারণ! খণ্ডন করেন । জ্যোতিথীয় গ্রন্থ সমূহে, চন্দ্রের আরোহ-পাত (85062001715 
00905 ) অর্থে ই রাহু শব্দটির ব্যবহার পাওয়। যায়| 

বৈদিক আমল হইতে চন্দ্র ও নক্ষত্রদের তুলনায় চন্দ্রের গতি গবেষণার 
বিষয়বস্তু ছিল। আর্ধভটীয় এবং পরবর্তী জ্যোতিবশ-গ্রন্থ সমূহে, চন্দ্রের উদয়াস্ত 
চন্দ্রকলা (155 7119555 ) চন্দ্রের শ্জগুলির উচ্চতা (7815%96892. 01 1 
10125) ও নক্ষত্রদের দংযোজক তারকাবলী (৮006101 : 56975 ) 
সহিত চন্দ্রের সমহ্তত্রে অবস্থান প্রভৃতি বিষয়গুলি আলোচিত হইতে দেখ! 
যায়। এগ্রস্থগুলিতে আলোচিত অন্তান্ত বিষয়গুলির মধ্যে কুগুলাকারে বিভিন্ন 
গ্রহের আবির্ভাব (75861109] 155105 0£ 610 101911505) ৩ নক্ষত্রগুলির 
সংযোজক তারকাসমুহের সহিত গ্রহগুলির সমস্থত্রে অবস্থান প্রভৃতি প্রসঙ্গের 
উল্লেখ করা যাইতে পারে | 

জ্যোতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভারতীয় অবদান নিয়ে বিত 
হইল £__ 

১। সৌর রাশিচক্র (%,96 9০191 2০৭19. ) 

২। চন্দ্র পরিবারের অস্তভূক্তি নক্ষত্রাবলী (1176 1401791 113871510125 ) 

৩। 'অয়ন-চলন ও উহার হার নির্ণয় (0১156599108. ০৫ 617৩ 73051505059) 

৪। চন্দ্র ও সৌর বৎসর প্রতিপাদন (15851-90192 52: ) 

&। সাপ্তাহিক দ্িনগুলির নামকরণ 

৬| ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের ফলে গ্রহসমূহের গতির সম্যক ছার দির তেগণ) 


৭ 


* প্রাচ ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


৭। ফৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে জ্যোতিধীয় পঞ্জিক! প্রণয়ন 
৮। পৃথিবী, হর্থ, চন্্র, অন্তান্ত গ্রহের গোলাক্কতি নিরূপণ 
+.৯1 পৃথিবী ও অষ্ঠান্ত গ্রহের ব্যাসমান নির্ণয় 
১০। সম-রৈখিক গতি (50091 117559. 121096102 ) তত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন 
গ্রহের দুরত্ব নির্ণয় 
১১। আপন অক্ষেই পৃথিবীর আবর্তন 
১২। হুর্যের চারিদিকে পৃথিবীর আবর্তন ( প্রথম আর্ধভট ) 
১৩। গ্রহ সমূহের সাম্যাবস্থা নির্ধারণ কল্পে গ্রহগুলির পারম্পরিক আকর্ষণের 
হ্বীকতি (11651 19120512515 20058000120 
১৪1 জল-ঘড়ি (5৪051 ০1০০) 
১৫ | স্ূর্খ ঘড়ির কাটার সাহায্যে সর্ষের অবস্থান নিরূপণ ও পর্যবেক্ষণ স্থানের 
অক্ষাংশ ও কাল প্রভৃতি নির্ণয় । 
খুঃ ত্বাদশ শতাব্দী পর্যস্ত উক্ত বিষয়গুলি ভারতীয়েরা জানিত। প্রায় সেই 
সময়ে উত্তর ভারতে মুসলমান আক্রমণ ঘটে । দক্ষিণ ভারতে অবশ্য কয়েকটি হিন্দু 
রাজত্ব টিকিয়াছিল; ফলে ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র দক্ষিণ ভারতে 
স্বানাস্তরিত হয়। ্রীঃ ত্রয়োদশ হইতে সগুদশ শতাব্দীর মধ্যে ভারতীয় জোযতি- 
খিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধিত হইয়াছিল | বর্তমানে যে সকল তথ্য পাওয়া যায়, তাহ! 
হইতে জান! যায় যে দক্ষিণ ভারতীয় জ্যোতবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের ফলেই 
জ্যোতিবের পূর্বপ্রচলিত মুল নুত্রগুলি সংশোধিত হয়। তাহার] জ্যোতিষগণন। 
ও আশসন্ন মান নির্ণয়ের উন্নততর পদ্ধতি প্রবর্তন করেন জ্যোতিষ গণনার ক্ষেত্রে 
তাহারা অস্তকলণ ও সমকলণ (10166516100151 2100. 111658159] 091010105 ) 
সদৃশ প্রণালীর প্রয়োগ করিয়াছিলেন । অসীম শ্রেণীরূপে (170.50166 962155 ) 
ভ্রিকোণমিতিক আপেক্ষিক সমুহের (51215061905 ) বিস্তার ( 1/30091191010 ) 
তাহাদের দ্বারাই সম্ভব হইরাছিল এবং তাহারাই আসন্নমান নির্ণয়কল্পে উক্ত শ্রেণীর 
প্রপ্নোগ ঘটাইয়াছিলেন | 
ভারতীয়ের1 দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যবহার জানিতেন না। খালি চোখেই তাহাদের 
পর্যবেক্ষণের কার্য সম্পাদিত হইত এবং কোণের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য তাহারা 
সুবিধামত ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করিতেন । সুতরাং জ্যোতিবিজ্ঞান, 
চ্তর, পূর্ষে, ও গ্রহ নক্ষত্রের গতি বিষয়েই সীমাবদ্ধ ছিল । 
অতি 'অল্পসংখ্যক ভারতীয় জ্যোতিষ-গ্রন্থই ইংরাজীতে অনুদিত হইয়াছে। 


৮ 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্াানিক চিন্তাধার1.£ গশিত 


লেইজগ্ভই জ্যোতিবিষ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ এককালে যে কতখানি উন্নতিলাভ 
করিয়াছিল- পাশ্চাত্য পণ্ডিতের] তাহা! অন্যান করিতে পারেন নাই । জ্যোতি 
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ বহুপূর্বেই যে সকল তথ্য জানিতে পারিয়াছিল, 
পরবর্তীকালে পাশ্চাত্য পণ্ডিতের! তাহাই নৃতন করিয়! আবিফার করিলেন । 


ষ্ঠব্য 


১। বিস্তৃত বিবরণের জন্য--7086 & 917181১ 17156015 ০1 ন120 
119 019518105 প্রথম খণ্ড পৃঃ ৮৮ দেখুন । 


২। সঙ্খেদ হইতে প্রাপ্ত গুর্জর দানপত্রে উল্লিখিত ল্লোকে দশমিক স্থানীয় মান 
নির্দেশক অঙ্কপাতন প্রণালী ব্যবহারের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া! যায়। 
[%191£19701019, 1109108 ]]1 পৃঃ ১৯। 0৮৮ ০০96065 (13111161205 5০150০] ০£ 
911651069] 5000$29১ 7+017005 ৬] ১৯৩১১ পৃঃ ৩২৩৮) নৃপতি জ্ীবিজয়ের 
৩ খানি উৎকীর্ণ লিপির উল্লেখ করিয়াছেন । ইহাদের দুইখানি দ্ুমাত্রার পালেম্বাং 
ও একখানি বাঙ্ক! দ্বীপ হইতে পাওয়1 গিয়াছে । উক্ত লিপিগুলিতে যথাক্রমে ৬০৫, 
৬০৬ ও ৬৮ শকাব্দে (অর্থাৎ যথাক্রমে খ্রীঃ ৬৮৩১ ৬৮৪ ও ৬৮৬ অব্ের ) উল্লেখ 
রহিয়াছে। এই শকাব্স্থচক অক্কগুলি-_ হিন্দু স্ানীয়মান নির্দেশক অঙ্কপাতন 
প্রণালীতে লিখিত । কক্বোজের সম্বোর নামক স্থানে প্রাপ্ত আরেকখানি উৎকীর্ণ 
লিপিতেও ৬০ শকাব্দের উল্লেখ পাওয়া! যায় । 


৩। [. [০১ ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত 0070 610 0£ [351017551)16 
অধিবাসী সিরীয় পণ্ডিত ৪6%:715 561011 এর গ্রন্থে উদ্ধত নিয়লিখিত 
অংশটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । (০01081 45196800 11) ১৯১০, 
পৃঃ ২২৬-- ৭ 9) 25 


প্] স1]] 01016 21] 01500591011 ০06 (0105 5061206 ০01 [17 [7 121005, & 

26০1015 100% 016 52036 ৪5 010 5119129, 610581 9010015 01500561168. 421 

605 50161005 0: 4502010012055 01500551155 1119 215 1001. 13761780905 

179 60956 0: 005 01550552100 0105 3510519108205 3 10617 00220102615 

186 50010955595 0.6501119102- 7 1510. 01115 (০ 985 (1086 11039 

0010981002261010 15 00102 109 1068105 ০0৫6 11177 91605, 1 00085 আ10 

10611655 0502056 (1057 51১69. (52651 61086 01065 09৮6 162,016 010৩ 
1115165 ০1 30161205১ 513010 1077৮ (11655 (19111855 01150 স্ম৮০০৫]10 097 
99105510050 12 (15516 2: 9190 0113515 7100 1007 50220611517181” 


টি 


'এ্াচ্য ও পাশ্চাত্য দর্গনের ইতিহাস 


1 *পিঙগল-হন্দনছত্র-_প্ীবীতানাথ কর্তৃক সম্পাদিত, কলিকাতা ১৮৪৮, 
যা পৃঃ ২৮ 

& 1 বিস্তৃততর বিবরণের জন্ত 198 & 5910810ঞর [7.19001 ০0: চা 
17 61752196555 ১ম খণ্ড দেখুন । পু | 

৬1 পক্রাহ্ম-স্কুট-সিদ্ধান্ত”__2৬]]া পৃঃ ৩৩৪ 

৭1 ক্রহ্গগ্ুপ্ত (৬২৮ ঘৃঃ) ও দ্বিতীয় ভাস্কর (১১৫০ থুঃ) প্রভৃতি প্রদত্ত 
প্রণালী জন্য 1010 &  9110517এর 2 ০::131000 11911961796103 
২য় খণ্ড পৃঃ ৬১--৯ দেখুন । 

৮ | বিশদ বিবরণের জন্য 10116 & 9110£10)এর [850015 ০৫ 2 66106119- 
€2০5-এর ২য় খণ্ড দেখুন | ০2%4-৮/-০*_ এই সমীকরণের সমাধান আর্ধভটের 
(৪৯৯ খৃঃ) জান! ছিল | আবার 2.2 + ০22 

এবং টব % + 1 -৮22--এই সমীকরণগুলি ব্রহ্গগুপ্ত কর্তৃক আলোচিত হইয়াছিল 
এবং অখণ্ড রাশিত্বার! উক্ত সমীকরণঘ্বয়ের সমাধান বাহির করার জন্য তিনি 
নিয়লিখিত পূর্বকরণীয়গুলি (1+5200195 ) প্রতিপাদন করিয়াছিলেন-_ 

(১) যদি ৮-” 4১৮৮9) ৮54 ঘ-28 এই সমীকরণের সমাধান হয় 

এবং 2৮৭০ 75? 5 52 + [1৮৮5 এই সমীকরণের সমাধান হয় 

তাহা হইলে 4.৮ ৭19 2: 19১ 9০599 35 *”+, £থ + ৮72 এই 
সমীকরণের সমাধান হইবে । 

অর্থাৎ যর্দি বিএ + 1795 এবং বি + [1 ৮91 

তাহা হইলে 0912 448)2 + 78161770992 বি এ.০2)2 

(২) যদ্দি ৮.৮, 9৮9) 2 5 এই সমীকরণের সমাধান হয় 

তাহা হইলে %-৮ 25:65 97592 4787 ট্্হ + ও, 99 এই সমী- 
রুরণের সমাধান হইবে । 

€৩) দি £-4১ %-৮9 ৮০4 ৮2-৮28 এই সমীকরণের সমাধান হয় 


তাহ! হইলে ডি ১০৫) 142 + 1-52 এই সমীকরণের সমাধান 


হইবে । ইউরোপে এই পূর্বকরণীয়গুলি 5,019 কর্তৃক ১৭৬৪ খৃঃ ও [485:92185 
কর্তৃক ১৭৬৮ খৃঃ পুনরাবিষ্কৃত হয় । 

০11৮9 এই লমীকরণ লমাধানে ব্রন্দগপ্ত অবলশ্বিত পদ্ধতিই হইল 
শ। ছে এবং 9 কে নিক্ষপণ কর যাহাতে ৪ শ-7 ৮92 সম্জব হয়। ' এবং 


ও 


চা 


তাহার পর তাহার পূর্বকরণীয়গুলির লাহায্যে ট% +" 1" এই সমীকরণের 
সাধাকণ সমাধাল পাওয়! যায়। 
সম্ভবতঃ শ্রীপতিই ১০৩৯ খ্বঃ সর্ধবপ্রথম নিয়লিখিত সমাধান দান করেন ১-- 


26০০ এ 9 নব” যেখানে % একটি মূলদ রাশি 
পরবর্তী ভারতীয় গণিতবিদদের গ্রন্থে ইহার উল্লেখ দেখা যায়। ইউরোপে 
১৬৫৭ খ্বৃঃ 13170100161 এই সমাধান পুনরায় আবিফার করেন। ্‌ 
৭৫০ খবঃ) প্রদত্ত সমাধান হইল £-- 
20০02 722) .___ ব(6-9)2+ ০20279)5 
$-9)৪-02৫ + 2) অ$-৫)৯-০052+)হ+ 
উপরি উদ্ধৃত সমাধানটি ইহারই একটি বিশিষ্ট বূপ। 
অখণ্ড ধনরাশিতে সমাধান নির্ণয়কল্সে ব্রহ্গগুপ্ত [ব".2 _ 4-"99 এই সহায়ক 
(4.0111915 720501920 ) সমীকরণটির সাহায্য লইয়াছিলেন। এবং 
৮-% ০০9 082 + 8) (9241), 
-2098+2) 1 (95৯9) (854 1)- 1) এই সমাধান লাভ করেন £ 
£-758 এবং ?-95+2 ধরিয়া আমরা এইক্দপ লিখিতে পারি £-- 
786৫2 192 2758 262 9) 
এই সমাধানটি 7915 কর্তৃক পুনরাবিষ্কৃত হইয়াছিল । 
শ্ীপতি ম্পষ্টভাবেই দেখাইয়াছেন যে, যদি [7৫-3:1, 42 অথবা 24 
হয় তবে ব্রহ্গগুপ্তের প্রণালীতে প্রাপ্ত সমাধানগুলি অখগ্ডরাশি হইবে; কিন্ত 
[এর মান উপরিউক্ত যে কোনও একটি রাশি ধরিয়। 142 4 1-99 এই 
সমীকরণের সমাধান বাহির করার কোনও প্রণালী লভবতঃ তাহার জানা ছিল 
না। তবে দ্বিতীয় ভাস্কর (১১৫০ খৃঃ) অখণ্ড রাশিতে প্রকাশিত উপযুক্ত 
সমীকরণের ছুইটি সমাধান বাহির করার একটি সহজ প্রণালী আবিষ্ারে 
সমর্থ হন। উক্ত প্রণালীকে তিনি চক্রবাল প্রণালী (0০11০ 20661100 ) বলিয়া 
অভিহিত করেন। এইব্ূপ ভাবে দ্বিতীয় ভাস্কর__ ট%93- 0.2 -7 এই 
সমীকরণের সম্পূর্ণ সমাধান দান করিতে সমর্থ হন। 
দ্বিতীয় ভাক্কর পিম্নলিখিত সমীকরণগুলির ব্যাপক (০5106158] ) সমাধান 
দানেও কৃতকার্য হন 2-- 
(1) 2%2 762 ০7৮02 


2৮7 


৬৩৯ 


প্রাচ ও পাশ্চাত্য দর্শদের ইতিহাসি 
(2):2%53 +৮৮+০-০ 8১৪ 4-894+70 
(3) 22180525৫০০ 22 
(4) 249 1829 40959 -৮ 228 
দ্বিতীয় ভাম্করের গ্রন্থদমূহে আরও বিভিন্ন ধরণের সমীকরণের উল্লেখ পাওয়া 
যায়। এখানে সেগুলির উল্লেখ সম্ভব নহে। কিন্ত এই প্রসঙ্গ সমান্ডির পূর্বে 
আমি দ্বিতীয় ভাস্কর গ্রদত্ত নিম্লোদ্ধত সমীকরণ যুগলের সমাধানের দিকে অঙ্গুলি 
নির্দেশ করিতে চাই £-- 
29 +- 6072 +- ০ ৮৮ 2 
£১%9 47 130/2 1+10 » ঢ2 
তিনি নিম্নলিখিত দৃষ্টাত্তটি গ্রহণ করেন £__ 
2৪ 1272 1 ০৮62 
2৪ -1/2 -7 ]৮৮92 
এবং ইহার নিয্নক্ূপ সমাধান দান করেন £_ 


৬০ (4৫1 16) নি 20272 1782) 
(4155 184) - 25? (475 414) 12 
4777? 27072 2) 


৮" (22725) -£2? ০ (4145 74) 715 

যেখানে %১ % এবং ” এক একটি মুলদ রাশি । 

+-৮51£ ধরিয়া, (৯5:5০০০171 (১৮৫১ খৃঃ) উপরি উক্ত সমাধানের একটি 
বিশিষ্ট রূপ লাভ করেন । 7. 0175 (১৮৫০ খৃঃ) এ সমাধানের আর একটি 
বিশিষ্ট রূপ বাহির করিয়াছিলেন | 1010720:00 ( ১৯০২ গ্ৃঃ) কর্তৃক সহজ 
অহ্থমেয় একটি তৃতীয় সমাধান প্রদত্ত হয় । 

৯। ব্রাঙ্গস্ফুট-সিদ্ধাত্তঃ সুধাকর দ্বিবেদী সম্পাদিত, বারাণনী ১৯০২ 

১০1] (১০15:০918, “.1851019, ভ10 11002106610 200. 01510510115- 
(92. 2920 005 58050116 ০0£ 31210209201265 8179 13199,50929.+ 
1,0170019 1817 1. 137 0 2 

১১ (501619709091.6, 100, 01, 


১২। বীজগণিত, সুধাকর দ্বিবেদী সম্পাদিত বারাণসী ১৮৮৮ পৃঃ ৬--৭ 
১৩1 319100 010205 14510700018 061 1015010 4£১11915585 ০ 


73571151828 0০ 110, 1125 
10517 (5150 861 015615100191--100--110655751-7 ত৪০১০0008, 


[18850 1846 1072 18+ 29. 
৬২ 22 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞামিক চিন্াধায়া £ গণিত 
১৪1 00161970015) 100. 03. 
১৫ | সি, ভি, বৈছ্যর “15601 ০06 99105051765 147056৮151১ প্রথম খণ্ড, 
পুণা ১৯৩০- প্রথম অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, তৃতীয় অধ্যায় সপ্তম পরিচ্ছেদ দেখুন । 


পরিশি£ 


গণিতশান্ত্র সম্পফ্ষিত কয়েকটা উল্লেখযোগ্য ভারতীয় আবিষার সম্বন্ধে 
বিস্তৃততর আলোচন। 


রামঅবতার শুরু এম, এ, পি, এইচ, ডি, (লগুন:) 
পাটন| কলেজের সহকারী গণিত অধ্যাপক। 


ক্রমান্বয়ে হস্তলিখিত বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথির আবিষ্ষার ও পাঠোদ্ধার প্রাচীন 
ভারতীয় গণিতশাস্ত্রের উপর অধিকতর আলোকপাত করিয়াছে । পূর্ববর্তী প্রবন্ধে 
নীলকঠকৃত গণিত গ্রন্থের কথা সংক্ষেপে বলা হইয়াছে । পাশ্চাত্যদেশে যাহা 
গ্রেগরী শ্রেণী (0:58 এঠঢে 56:165) বলিয়। পরিচিত, নীলকখের “তন্ত্রসংগ্রহ 
(১৫০০ থৃঃ) নামক গ্রন্থে শুধুমাত্র সেই তু অসীম শ্রেণীর (711511766 95:165 ) 
উল্লেখই পাওয়া যায় না; গ্এর মুলদ আসন্মান (5:26192091 4১70010517056100) 
সম্পঞ্চিত উল্লেখযোগ্য আলোচনাও সেখানে রহিয়াছে । ভারতীয়দের এই প্রচেষ্টা 
হইতেই প্রমাণিত হইবে যে নিউটনের যুগের ১৬০ বৎসর পূর্বেই ভারতীয় গশিত- 
বিদেরা বুস্তকে বর্গক্ষেত্রে পরিণত করার প্রশ্ন সমাধানের চেষ্টা করিয়াছিলেন । 
এর আসন্নমান নির্ণয়ের সাধারণ ভারতীয় পরিকল্পনা হইতেই 7408 2 এর 
আসম্নমান নির্ণয়ের কথা আসিয়াছে । 

নীলকণ্ঠ তাহার উল্লিখিত অপ্রকাশিত গ্রন্থ “তন্ত্রসংগ্রহেঃ কোনও বিধিষসঙ্গত 
প্রমাণের উল্লেখ না! করিয়াই এসকল আসন্নমানগুলি বিবৃত করিয়াছেন । নিম্নলিখিত 
কৃত্রটী হইতে উক্ত ফলাফলগুলি পাওয়া! যায় ১ 


2 1.1. 11০, 
রুল হাতত 


তবে অবশ্য ব্রহ্গগুপ্ত (১৬৩৯ খৃঃ) রচিত তযুক্তিভাষা নামক গ্রঙ্থে এই 
আসন্নমানগুলির তথ৷ % এর অসীম শ্রেণীর বিধিসঙগত প্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায় । 
'যুক্তিভাবা”--“গণিতযুক্তি” নামক গ্রন্থের, মালয়ালম্‌ ভাবায় ক্কত অঙ্কৃবাদ বলিয়! 
মনে হুয়। এই গ্রস্থখানি মাদ্রাজ-গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে। এই খসড়া প্রমাণকে 


৬৩৩ 


স্বাদ ও পাস্চাত্তা দর্শনের ইতিহার্স 
তিনটা পর্বকরণীয়তে (1558559.) বিভক্ত করা যায়। প্রথম পূর্বকরণীয়টা নিগ্ন* 
লিখিত শরীর অহৃরূপ ৪ র 


৭ ০-৫ (€৪5 9) 


ূ 2 +0210259 

11155155 (912£512 এর অসীমশ্রেণীর প্রমাণ কল্পে, ১৬৭১ খৃষ্টাব্দে (2£০:5 উক্ত 
হ্বরটী প্রয়োগ করিয়াছিলেন । দ্বিতীয় পুর্বকরণীয়টী ইউরোপে 715 কর্তৃক 
১৭৩৯ খৃঃ এবং তৃতীয়টি ₹২০155£5৪1 ( ১৬৩৪ খুঃ) ও পরে স্বাধীনভাবে চী€:851 
কর্তৃক (১৬৩৬ খৃঃ) আবিষ্কৃত হয়। প্রথম পূর্বকরণীয় ছুইটী ভারতবর্ষে ১৬৩৯ খৃষ্টাব্দের 
পুর্ববেই উত্ভৃত হইয়াছিল, ইহা! হইতে বোঝাযায় যে ইউরোপীয়দের বহুপুর্বেই 
ভারতীয়ের1 এইগুলি জানিতে পারিয়াছিলেন ৷ পুর্বকরণীয়গুলি নিয়ে বণিত হইল। 

প্রথম পৃঃ কঃ-0 একক ব্যাসার্ধ (10 25085 ) বিশিষ্ট কোনও বৃত্তের 
একটী বৃক্তচাপ ; ০ বিশ্দুটি বৃত্তের কেন্দ্র। যদি 99 এবং 0০ সরলরেখাঘয়, বৃত্তে 





অবস্থিত যে কোন বিশ্দু 4তে অঙ্কিত স্পর্শককে (28856) যথাক্রমে 93 ও ০১ 
বিন্দুতে ছেদ করে, তাহ! হইলে 90 বৃস্তচাপে আসন্মমান এইভাবে বণিত হইবে 


7) ০1 


410 030 2910101095 572875 


প্রাচীন ভাগ্গতের বৈজ্ঞাপিফ চিন্তাথার! ২ গণিত 


“যুক্তিভাবা গ্রন্থে ইহার নিষ়রপ প্রমাণ প্রদত্ত হইয়াছে। প্রথমেই একটী সীম 
বৃস্তচাপ ৪০ লওয়! হইল ( ্বিতীয় চিত্র দ্রষ্টব্য ) 
এবং 0০র উপর 787) এবং 17)$ লম্ব অঙ্কিত কর] হইল। এখন 4081), 
95105 এবং 235 017)5 ও ১0০34 এই ছুই জোড়া সদৃশ অ্িভুজ হইতে 
770) 08. 1. 31705 040 
টি।1)) 07) 087 ১850) 700,762 পাওয়া যাইবে 


1310 £ 
তত পাওয়া যায়। আতরাং 90 যখন ক্ষত 





আবার উহা! হইতে 73]) - 
হইবে 


তখন 410 7830 801910% 131) ৪100:20স 3101. 73303 


07812 1+42015. 





দ্বিতীয় পুর্বকরণীয় £__ 
?- ] 
11100 21% 
(81071 2০৮৯ ০০ 1 + (৮2/%)2 
4.0 
7০ বৃত্তচাপ বেইনকারী ছইটী ব্যাসার্ধকে প্রসারিত করিলে উহার] বৃত্তের 
কোনও বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শককে যে অংশে ছেদ করিবে সেই অংশকে সম % সংখ্যক 
খণ্ডে ভাগ করিয়! উহার প্রত্যেক খণ্ডে প্রথম পুর্বকরণীয়টী প্রয়োগ করিলে উক্ত 
ফল পাওয়া যাইবে । 


0210-5£ শু রি 


-] 
11227 ] | 
বু টানা 
50 
£ এর মান 1, 2, 3, 4, অথবা যে কোনও অখণ্ড ধনরাশিই হোক না কেন 
সকল ক্ষেত্রেই উক্ত ফল প্রমাণিত বলিয়। ধর! যাইতে পারে। 
দ্বিতীয় পূর্ববকরণীয়ের ডানদিকের রাশিমাল! বিস্তৃত করিয়। তৃতীয় পূর্ব্বকরণীয়ের 
ও 
সাহায্যে 'যুক্তিভাষা? গ্রন্থে এই প্রতিজ্ঞাটী€৪2-৭৮--- 4 ০27 ত১ 
|£ | এ 1 প্রমাণ কর। হইয়াছে । “তত্ত্সংগ্রহে”র পূর্ববর্তী ভারতীয় গণিতগ্রন্থ 
“কর্ণ-পদ্ধতি”তেই সম্ভবতঃ ইহার প্রথম স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। ইহা! লক্ষ্য 


৩$ 


. শ্রাচা ও পাশ্চাত্য ধর্ণনের ইতিহাস 

করিবার বিষয় যে দ্বিতীয় পূর্বাকরণীয়ের সাহায্যে প্রাপ্ত উক্ত প্রতিজ্ঞার প্রমাণ, 
নত] ঃ 

9. 0802 6) [14+0929]-; ইহার প্রতিপদে সমাকলন প্রক্রিয়ার (76717) 


১5 0, [008199 ) প্রয়োগে প্রাপ্ত ফলের সমতুল্য | 


এখন হু এর মূলদ আসন্নমান নির্ণয় করিতে গেলে “নীলকণ্ঠ” বণিত নিম্নলিখিত 
তিনটা ফলের সাহায্য লওয়া যায়। “যুক্তিভাষা গ্রন্থে ইহাদের প্রমাণ উল্লিখিত 
রহিয়াছে। 
] ] 


তি 
(1) 2001০ ০০2 





রি ্ 17077171012. 
(2) ৫ 2010 ]1-81+8-77+ ১৮55, ₹% 740 571 
(3) £ 9৪০2০ 1-7-$+8777 টা 2 
(471) 
মি +] 


10441) 744 (৮71) 


এই প্রসঙ্গে ইহা! বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে অন্প্ূপ আসন্নমান প্রণালী অন্ত 
কোথাও দৃষ্ট হয় না। উপরিউক্ত সুত্র সমুহের প্রমাণগুলি, £%-1 দ্বার! প্রকাশিত 
ক্ষদ্রত্ব-ক্রমের (09:0515 ০£ 51081177555 ) স্বজ্ঞা-সম্মত গণনার উপর প্রতিঠিত। 
[ইহাদের বিস্তৃত আলোচনার জন্য নিয়লিখিত গবেষণা-পত্রগুলির উল্লেখ কর! 
যাইতে পারে; উহাদের উপর ভিস্ভি করিয়াই বর্তমান আলোচনাপক্রটী রচিত 
হইয়াছে । (১) 08. 81000 089015015০৫ 0৪ ০27019,৮ ০০:81 
0৫006 93012109 9318.001) ০৫ 00৪ ২0991 45190099০15. ৩. 
০] 20, 19447 (২) +0:5£0155 62155 1. 055 01501020086105] 
],165196015 0 151819” (85 21. আজ 8 51£0191) 20 605 
250161759.0109 56306106 ৬০1 2771. ০. ও. 5206. 1946 8 (৩) “4 
1355160656 0০1090061 ০৫ 71000 002.0061026105 (35 291659081 )+ 
5021909, 290062090105, ৬০] 20০ 22005 3-4 1949 7) (8) “4 ০০02 
801108650 1156 ০£:1717001 809.01051026108] ০:5৮ (95 
391955510855801581220 ) ৬০1 25৬. ০5 ৪-4 01 0005 01 211161229.0105 
90505755 1947 ]. 


ডি 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার! £ গর্ণিত এ 


ৃ হু | 

পরিমাণ, সংখ্যা» শৃন্ত ও অনস্ত (1256:5855 ) সম্পর্কীয় ভারতীয় ধারণ!) দর্শন ও 
গণিত উভয়দিক হইতেই বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। কণাদ প্রতিষ্ঠিত বস্তবার্দী ও 
বহুবাদী বৈশেধিক দর্শন পরিমাণ ও সংখ্যাকে বস্তুর অবিচ্ছেদ্য ইন্দরিয়গ্রাহ বাস্তবগুণ 
হিসাবেই স্বীকার করিয়াছিল । পরমমহৎড মধ্যম ও পরমাণু) সাধারণত এইবর্প 
বিভিন্ন মাত্রাহ্যায়ী পরিমাণের শ্রেণী নির্ণয় কর] হইয়াছে । 

খ্যা সম্পর্কে বৈশেষিক দর্শনের অভিমত এই যে শুধুমাত্র এককই পদার্থের 

অবিচ্ছেদ্য ইন্দ্রগ্রাহথ বাস্তবগুণ। (তুঃ 44919 0£ 1:11008156 গ্রন্থে 8০০1৪ 
মন্তব্য করিয়াছেন যে সর্ধ বস্ততে অন্ুস্যত ঈশ্বরই একক ) কিন্ত মন ছুই অথব! 
বৃহত্তর সংখ্যাগুলিকে বিভিন্ন এককের সমষ্টির দ্বারা স্ষ্টি করিয়াছে । ( অপেক্ষা 
বৃদ্ধি-জ্ঞান ) দৃষ্টান্ত স্বরূপ বল! যায় যেমন যখন ছুইদী এককের “এই একটি” 
এবং “এই একটী” বলিয়! পৃথকভাবে ধরিয়া লইয়া, একত্রিত করে তখনই 
ঘুইয়ের উৎপত্তি হয়। সমপ্টিকরণের এই মানসিক ক্ষিয়! ব্যতীত ছ্বই, তিন, 
অথবা কোনও বৃহত্তর সংখ্যার স্ষ্টি সম্ভব নহে । 

প্রসিদ্ধ গণিতবিদ [721১7 একের এই ধারণাকে একটি মৌলিক ধারণা 
হিসাবেই স্বীকার করিয়াছেন । তাহার মতে একক একটী “চিস্তা-মাত্র-সত্তা” এবং 
অন্যান্য সংখ্যাগুলি তাহা হইতেই উত্ভতৃত। পক্ষান্তরে সাক্ষাৎ অহ্ৃভূতির দিক হইতে 
বিচার করিয়া 8:০0.%০: বলিয়াছেন গণিত শাস্ত্র গঠনের পক্ষে একের ধারণাই 
সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, উহাই অখণ্ড রাশিমাল! গঠনের মূল নীতি স্বর্নপ । 

্রন্ম গুপ্ত (৬২৮ খবঃ) ভারতীয় গণিতবিদগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । তিনিই শৃন্ঠের 
সঠিক সংজ্ঞ! নির্দেশ করিয়াছিলেন | তাহার মতে £-_ 

(১) সমমান বিশিষ্ট অথচ বিপরীতধর্মী ছই সংখ্যার যোগের ফলেই শুন 
পাওয়া যায় এবং (২) ০৮ (32)-৮05 (32) ০.০) ০%০-*০ 

প্রথন সংজ্ঞা যোগ প্রক্রিয়ায়, অন্তান্ত সকল সংখ্যার সহিত শুন্তের সম্পর্ক নির্দেশ 
করে। আবার দ্বিতীয় সংজ্ঞায় গুণনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সংখ্যার সহিত শৃন্তের 
সন্থন্ধের নির্দেশ পাওয়া যায়। 

উল্লিখিত প্রথম সংজ্ঞাটী সম্পর্কে আপত্তি উঠিতে পারে যে উহার দ্বার! শুন্তের 
অস্তিত্ব স্থচিত হয় না। যোগ কথাটীর অর্থ যোগ প্রক্রিয়_-এই ধারণাই স্পষ্টতঃ 
উক্ত আপত্তির কারণ। কিন্ত উক্ত শব্দটী যদি যোগফল অর্থে গ্রহণ কর] হয়-- 
এবং এই অর্থেও শব্দটা সচরাচর ব্যবহৃত হয়--তাহা হইলে এই আপত্তি টিকিতে 


৩৭ 


খাচ্য ও পাশ্চাত্য ঘর্জনের ইতিছাস 


পারে না। তবে বিপরীতধর্মী সংখ্যাঞ্জলির সংজ্ঞা কিভাবে নির্দেশ কর! হইবে 
' ভাহ। তন্ত্র প্রশ্ন । 

ত্রন্মগুণ্ডের পরবর্তী গণিতবিদ গণেশ (১৪৪৫ খ্বঃ) এবং কৃষ্ণ (১৫৭৬ খুঃ )-- 
কেহই তাহা মত প্রতিভাবান ছিলেন না। তাহার] শুন্তের আধা-বৈজ্ঞানিক 
ও আধা-সহজজ্ঞান সম্র্ত সংজ্ঞ1 দান করিয়াছিলেন। ব্রক্গগুপ্তের সংজ্ঞ] বঁহাদের 
সংজ্ঞার অঙ্করূপ নহে । তাহার সংজ্ঞাকে *সম্পর্ক-ম্ছচক” সংজ্ঞা বল! যাইতে 
পারে ? এবং ইহাই তাহার সংজ্ঞার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাশ্চাত্যের আধুনিক 
বিষয়বাদী ও নৈয়াক্মিক প্রত্যক্ষবাদী দার্শনিকেরা এবং রাসেলের মত গণিতবিদ 
দার্শনিকও ব্রঙ্গগুপ্তের এই সংজ্ঞ! গ্রহণ করিয়াছেন । ইহা দার্শনিক মনোভঙ্গীর 
দ্বারা অনুপ্রাণিত ; এবং উক্ত মনোভাবের পক্ষেই, বস্ত্র চরম প্রক্কৃতি নিন্ধপণ 
সাপেক্ষ সংজ্ঞ। দানৈর প্রশ্থ না! তুলিয়া, বস্তুর বিশেষ লক্ষণ সম্হ ও অন্তান্ত বস্তর 
সহিত তাহার সম্বন্ধের জ্ঞানের ভিত্তিতেই উহার কার্যকরী সংজ্ঞাদানের চেষ্ট! 
সম্ভব | শুন্য সন্বন্ধে, এই সম্পর্কস্চক ও ব্যবহারিক সংজ্ঞাদানের জন্যই ব্রহ্মগুণুকে 
আধুনিক টিস্তানায়কদ্দের সগোত্র বলিয়া অভিহিত করা হাইতে পারে । 

শৃন্তের দ্বার! ভাগের অর্থ নিন্ূপণের চেষ্টা হইতেই ভারতীয় গণিতে “অনস্তঃ 
যম্পর্কিত ধারণার উত্তব ঘটে। পাশ্চাত্য দেশের আধুনিক গণিতশাস্ত্রে শুন্তের 
দ্বার! ভাগ প্রক্রিয়ার কোনও সংজ্ঞ। নিদিষ্ট হয় নাই। পক্ষান্তরে ব্রহ্মগুপ্ত, ভাম্কর 
ও কৃষ্ণের মত প্রসিদ্ধ ভারতীয় গণিতবিদের। ভাগ প্রক্রিয়ার ব্যাপক ব্যবহারের 
প্রয়াস পাইয়াছিলেন । তাহাদের মতে £-- 


(177577515 ) যখন ক্র একটী অখণ্ড ধন বা খণরাশি 


0 ০9 
০ ৮ ৮০০, 6 একগি অসীম রাশি এবং পরিশেষে 

এখানেও আমর। ০০র একটি সম্পর্কস্চক সংজ্ঞা পাইতেছি। 

পাটীগণিতীয় অনস্তের ধারণার সহিত কলন ( 0810105 ) সম্মত অনস্তের 
ধারণার ধৈপরীত্যমূলক তুলনা কর চলে । কলনে, অনস্তকে অসম্পূর্ণ প্রতীক 
বা একটী প্রধণতা বলিয়াই গণ্য করা হয়। কলনে উক্ত প্রতীকটী (০০) নিয়বূপ 
গাখিতিক বাক্যখণ্ডের অস্তভুক্ত হিসাবে লিখিত হয় £--১৯»-৯০০১ € ৮ অনস্তের 
অভিমুখী )। চলরাশি (৪:91 ) ৮ পুর্বনির্দিষ্ট যে কোন সংখ্যাকেই 


৩৮ 


দন 


প্রাতীর্দ ভারতের বৈজ্ঞামিক ভিন্তাধারা £ গণিত 

অতিক্রম করিতে পারে*-_উক্ত প্রতীকে প্রকাশিত বাক্যখগ্ডটীর (€ ১৯৫ -৯৪০ ) অর্থ 
ইহা! ছাড়! আর কিছুই নহে । এখানে ৩ এই প্রতীকটীর নিজস্ব কোন অর্থ নাই। 

অনস্ত হইতে অনস্ত বিয়োগ করিলে অনস্তই অবশিষ্ট থাকে--উপরে (৩)এতে 
ইহাই বণিত হইয়াছে । উহার মধ্য দিয়া যে বিন্মরকর ধারণাটা প্রকাশিত 
হইয়াছে, তাহা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য (০০ - ০০ »৮০০)। ইহাকে আপাত 
দৃষ্টিতে, অসম্ভব বলিয়াই মনে হয়। কিন্ত অনস্ত সম্পর্কে আধুনিক গণিতবিদূদের 
ধারণ! উক্ত অভিমতকেই সমর্থন করে । প্রকৃতপক্ষে অনভ্ত-সারি (55:01 86) 
বলিতে এমন এক লারি বোঝায়, যাহার অস্তভূক্ত প্রতিটা সংখ্যাই উক্ত সারির 
(56) কোনও বিশেষ খগ্ডাংশের (77006770910) অস্তভূক্তি প্রেতিটী সংখ্যার 
সহিত ১--১ সম্পর্কে সন্বন্ধযুক্ত (0০ - 0036 ০0916519092 062205 )। 

উদাহরণ স্বরূপ বল! যায় যে ১, ২ ৩১ ৪2 &) ৬১ ৭১**-০০০০* » এই অখণ্ড রাশি 
শ্রেণীই অনন্ত । উহা হুইতে বিচ্ছিন্ন জোড়-_সংখ্যাগুলিও যথ| ২ ৪ ৬***-*+**, 
প্রভৃতি প্রথমোক্ত অখণ্ড রাশি শ্রেণীরই খণ্ডাংশ বিশেষ। ইহারাও আর এক 
অনস্ত সারির অস্তভূক্ত এবং প্রথম সারির রাশিগলির সহিত ইহারা ১-১ সম্পর্কে 
সম্বন্বযুক্ত। প্রথম সারি হইতে দ্বিতীয় সারির সংখ্যাগুলি সরাইয়া! লইলে অবশিষ্ট 
বিজোড় ১১ ৩১ ৫১ ৭০৭৮০০০০০০০ রাশিগুলিও এক তৃতীয় অনস্ত শ্রেণীর অস্তভূ-ক্তি 
হইবে । | 

“ৃহদারণ্যক উপনিষদের*--( &১ ১) মত প্রাচীনতম দার্শনিক গ্রন্থেও অনস্তের 
এই ধারণার প্রকাশ রহিয়াছে । উহাতে বল! হইয়াছে--অব্যত্ত" ব্রহ্ম অনস্ত, ব্যক্ত 
ব্রক্মও অনস্ত ; অনস্ত হইতেই অনস্তের উদ্ভব । ( অব্যক্ত) অনস্ত হইতে (ব্যক্ত) 
অনস্তকে গ্রহণ করিলে, অনস্তই অবশিষ্ট থাকে-_পূর্ণন্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে) 
--( ৬19 701. এ, [98755 69051505020 100 0105 5156 28:00115] 
01052515505 ৬০] 71 2852 984 )। 

ভারতীয় গণিতশাস্ত্রের প্রধান ধারাগুলি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ সাধারণ মন্তব্য 
সহকারে আমরা প্রবন্ধের উপসংহার করিব । ৮115 01 5661178 ০£ 78586 & 
ড্/০৩৮* গ্রন্থে ঢা, 5. 0 2 ০:৮:০০ বিশদভাবে দেখাইতে চাহিয়াছেন যে 
ভারতবর্ষ সহ সমগ্র প্রাচ্য খণ্ড বস্তর আবেগাত্বক ও নন্দনতত্বসম্মত তথ শুধুমাত্র 
তাহার ইন্দ্রিয়লন্ধ অভিজ্ঞতাপ্রত্ত প্রত্যক্ষ রূপের দিকেই তাহার দৃষ্টি নিবন্ধ 
রাখিয়াছে (5. 875)। বস্তুর সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা প্রস্থুত অখণ্ড সামশ্রিক ন্ধপের প্রতি 
সে অভিনিবিষ্ট । কিন্তু পাশ্চাত্য, অভিজ্ঞতাপূর্ব কতকগুলি হ্বতঃসিদ্ধ প্লারণ! লইয়াই 


০৪) | 1 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 

খঁগ্রসর হইফ়্াছে, এপ্সং পরে পরোক্ষভাবে অভিজ্ঞতার সাহায্যে উক্ত ধারশার 
সত্যতা! প্রমাশের প্রয়াস পাইয়াছে (০. 294) | এইক্ধপ অহ্মানের বশবর্তী হইয়াই 
তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করিয়াছেন। 

শৃন্ত ও অনস্ত সম্পর্ষিত ধারণা ও সংজ্ঞা, পাটিগণিতের স্থানীয় মাননির্দেশক 

সংখ্যাপাতন প্রণালী, বীজগণিতে গৃহীত বর্ণমালার অক্ষর প্রেতীক, এবং শ্রীকদের 

তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে -পরিমাণকে নুম্পষ্ট দৈর্ঘ্যে প্রকাশ না করিয়া--বীজগশিত 
ও জ্যামিতিতে তাহাকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশের ধারণা--ভারতীয় গণিতের 
এই লাধারণ প্রবণতার দিকে লক্ষ্য করিলে গ্রন্থকারের উক্ত অন্ুমানকে সম্যক 
বিবেচনাপ্রন্ছত বলিয়! মনে হয় না। 

ভারতীয় দর্শনের “নিগুণ ব্রহ্ম” ও শুন্ের” অতীন্রিয় ধারণার সহিত উদ্ত 
বিষয়গুলি একত্র লইয়া বিবেচনা করিলে বোঝা যাইবে যে অতি প্রাচীনকাল 
হইতেই ভারতীয়েরা যেমন-_2ব০26:01 যথার্থই বলিয়াছেন পরিদৃশ্যমান 
জগতের মধ্যে পরমব্তরন্গের লীলা প্রত্যক্ষ ও অনুভব করিয়।! আনন্দ পাইয়াছেনঃ 
তেমনই শুদ্ধ অতীন্ত্রিয় ভাবও তাহাদের সমান আনন্দ দান করিয়াছে । 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার। 


খ। অন্যান্য বিজ্ঞান 


তিহাসিক £ বিজ্ঞানের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে প্রাচীন ভারতীয়দের, 
আধুনিক যুগে স্বীরূত হইতে পারে এইব্ূপ অবদানের একটি কালাহুক্রমিক ইতিহাস 
রচন1 কর] যে প্রায় অসস্ভব তার কারণ সুস্পষ্ট । প্রাচীন খধিদের ভূয়োদর্শন এবং 
অভিজ্ঞতালন্ধ জ্ঞানের অধিকাংশই লিপিবদ্ধ হয় নাই। এ সমস্ত জ্ঞান পরিবর্তিত 
ও পরিবার্ধিত হইয়! অর্থবো ধশৃস্য শব্দাবৃত্তি দ্বারা এক যুগ হইতে অন্ত যুগে, এক 
পুরুষ হইতে অন্য পুরুষে চলিয়া আদমিয়াছে। ফলে এই সব তত্ত্বকে বিজ্ঞানের 
কালাহুক্রমিক ইতিহাস রচনায় নিভু তথ্যন্মপে পরিগণিত কর] সম্ভব নয়। 

প্রাচীন ভরতে বিজ্ঞান গবেষণার কাল আহ্ুমানিক অথর্ব ঘেদের যুগ (আঃ খুঃ 
পূর্ব আট শতক ) হইতে আরম্ভ করিয়া চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাচীন 
খধিদের গবেষণার কিছু অংশ, বিশেষ করিয়া! গণিত, পদার্থবিদ্া, প্রা ণিবিস্ভা, 
ধাতৃবিজ্ঞান, ভেষজবিদ্ভা ও আরোগ্য বিজ্ঞানে গবেষণাগুলি ভাবাত্মক বিজ্ঞানের 
ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান বলিয়! স্বীকৃত হইবার যোগ্য । অতীতকালে প্রতীচ্যের 
দেশগুলি আরবীয়দের মধ্যস্থতায় এই সব জ্ঞানলাভ করিয়া বিশেষ লাভবান 
হইয়াছিল । 


পার, 


ভারতীয়গণ কর্তৃক ব্যাখ্যাত জগৎ-তত্ব প্রধানতঃ তিনটি দর্শনে দেখিতে পাওয়। 
যায় (১) দাংখ্য-পতঞ্জলি দর্শন_ ইহা জাগতিক বিবর্তনের মৃলক্ত্রগুলি 
আলোচন! করিয়াছে (২) স্তায়-বৈশেষিক দর্শন-_ইহাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুযায়ী 
বলবিদ্যা, পদদীর্থবিদ্া ও রসায়নশাস্ত্রের মূল ধারণাগুলির বিশদ আলোচন! করা 
হইয়াছে এবং (৩) বেদান্ত অন্যান্য ও দর্শন--জড়বিজ্ঞানে এই সকল দর্শনের কোন 
দানই নাই। 

শক্তির ধারণাকে কেন্দ্র করিয়! বিশ্তদ্ধ বৈজ্ঞানিক ধারায় এই জগতের বিবর্তন 
ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্ট৷ সর্বপ্রথম সাংখ্য-পতগুলি দর্শনেই দৃষ্ট হয়? কিন্তু এই 


৪৯ 


প্রাচ্য ৬ পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


প্রচেষ্টার ফলাফল তত্ববিদ্ার ভাষায় প্রকাশিত হইয়াছে এবং সেইজন্তই বিবর্তন 
বিষয়ে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিস্তাধারার সঙ্গে ইহাকে সহজে যুক্ত কর সম্ভব নয়। 
বিবিধ দৃশ্যাবলী সমন্বিত এই পািব জগৎ প্রন্কতি, মূল বা! আদি শক্তি হইতে উদ্ভূত 
হইয়াছে বলিয়] কল্পনা কর। হইয়াছে | .এই শক্তি সর্বব্যাপী, অনস্তঃ অনহুর ণীয়, 
অবিনশ্বর এবং নিরবয়ব | এইভারে অসীম প্রকৃতি হইতে যাহাদ্িগকে গুণ বল 
হয় এইরূপ তিনটি বিশেষ ধর্ষের-_অর্থাৎ্ৎ মূল উপাদ্ননগুলির সহযোগে সলীম 
জগতের উদ্ভব হইয়াছে । এই তিনটি গুণ হইল--€১) সত্ব বা সার, যাহ বস্তু 
সকলের বিভিন্ন প্রকাশের কারণ, (২) রজঃ বা শক্তি_যাঁহ প্রতিবন্ধক ও 
প্রতিরোধ অতিক্রম করিয়া বস্তু সমূহের সঞ্চরণ ক্ষমত1 ও কর্ম ক্ষমতার কারণ, 
(৩) তমঃ বা কুপ্রভাব- যাহ! রজঃ গুণের পরিপন্থী এবং জড়ত্বের কারণ । 

সকলরকম শক্তিই গতীয়, এমন কি স্থৈতিক শক্তিও, কারণ স্থিতি অবস্থাকেও 
গতিরই একটি অবস্থা বলিয়! কল্পন। কর যাইতে পারে, অর্থাৎ স্থিতি সেইরকম 
গতি যাহা অনুভব করা যায় না। একটি যস্ত্র যাহ! এত ধীরে চলিতেছে যে 
তাহার গতি বুঝিতেই পার যায় না, সেই বস্ত্রের উপর তৈলের ক্রিয়ার সহিত 
অঙ্ুঘটকের ক্রিয়াকে 08৮৪1 তুলন1 করিয়াছিলেন। স্থিতিকে অনন্থভবনীয় 
গতি বলিয়! কল্পন! করিলে 0950%৪1৭-এর এই তুলনার কথা মনে পড়ে । 

নিরবয়ব ও শিও”৭ প্রক্কতিতে পুনঃ পুনঃ ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়া জড় জগতের 
উৎপত্তি হইয়াছে । এই ভাঙ্গাগড়ার ফলে একটি বিশেষ অথচ অনিদ্িই পদার্থের 
সাময়িক আবির্ভাব ঘটে। তার পর, ছুইটি সমান শ্রেণীতে ভাঙ্গা-গড়ার ফলে 
বিষয়ী ও বিষয়, নিদিষ্ট মন ( জ্ঞানেক্ড্রিয়। কর্েন্দ্রির়। এবং মন) এবং নিদিষ্ট জড় 
পদার্থ (সাধারণ বস্ত ) অপু ও পরমাণুর আকারে উদ্ভুত হইল । শেষোক্ত পদার্থ 
হইতে শুধু অজৈব পদার্থ নয়, উত্তিদ ও জান্তব সজীব পদার্থেরও সৃষ্টি হইল। 

শক্তি ও ভরের নিতাঙ।-_অসংখ্য বিভিন্ন প্রকারের বস্ততে অবস্থিত গুণগুলিকে স্ষ্টি 
ব। বিনাশ করা সম্ভব নয় । সমস্ত তমঃ ব। ভরের এবং সমস্ত রজঃ বা শক্তির পরিমাণ 
অপরিবর্তনীয় ; সুতরাং ইহাদের মধ্যে একটির অন্টেতে পরিবর্তন সম্ভবপর । এই 
তত্বকে আধুনিক বিজ্ঞানের ভর হইতে শক্তিতে বা শক্তি হইতে ভরে রূপ 
পরিবর্তনের তত্বই বল! যায়। শক্তির নিত্যতা এবং শক্তির রূপ পরিবর্তনের 
তথ্যের অন্ুসিদ্ধান্ত ন্ূপে কা কারণবাদ পাওয়া যায়। যেহেতু সমস্ত শক্তির 
সমগ্র পরিমাণ অপরিবর্তনীয় এবং যেহেতু জগতে বিবর্তন ইন চলিয়াছে, 
সুতরাং সমস্ত বস্তই একটী চরম শক্তির বিভিন্ন প্রকাশ | 


৪২ চিন 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞাৰিক চিন্তাধার! 

কার্ধকারণবাদের শৃঙ্খল ূ ূ 

শক্তির দ্ধাপাস্তর সহ বিবর্তনের ক্রম একটি ধিশেষ স্যত্র মানিয় চলে । বস্ত- 
সমূহের গণ ব। ধর্ম বা শক্তির বিভিন্ন প্রকার অথব। আকার মাত্র; এই শক্তি 
কখনও গতীয়, কখনও শ্বিতিক। তর বা! শক্তি হিসাবে, অজৈৰ পদার্থ এবং ও 
জান্তব সজীব পদার্থ মূলতঃ এবং চরম বিচারে এক | শক্তির বিভিন্ন ব্ধপ ও বিভিন্ন 
বাহ প্রন্কতি হইতেই এই সব পদার্থ উদ্ভূত হয় এবং সামান্ত ও বিশেষ ধর্ম প্রাপ্ত হয়। 
ইহাদের আবির্ভাবের অস্ক্রম একটি অপরিবর্তনীয় স্থত্রান্সারে পরিচালিত হয়। 
জাগতিক বিবর্তন বা পরিণাম একটী দ্বিভাবাপন্ন প্রক্রিয়া__যাহাতে একই সঙ্গে স্ষ্টি 
ও বিনাশ, আত্ীকরণ ও অনাত্ভীকরণঃ অপচিতি ও উপচিতি উভয়ই বর্তমান । 
আদিতে ভর ও শক্তির অসম সমষ্টির ফলেই অজৈব ও জৈব পদার্থের স্ষ্টি হইয়াছে । 
ইহাই হইল জগতের স্থষ্টি রহস্য | 

সাংখ্য-পতঞ্জলি দর্শন পদার্থের চরম গঠন-প্রকৃতি ( তানম্মান্তিক-স্ষ্টি) গভীর 
কৌতুহলের বিষয় । পর্যায়ক্রমে নিয়লিখিত পদার্থগুলি স্বীকৃত বা কল্পিত হইত-_ 
যথা (১) প্রাথমিক অতি ক্ষুদ্র কণ! (ভূতাদ্ি) বা ভরের একক যেগুলি সমসত্ব 
এবং শক্তির অদলবদল যাহাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ও সাম্যের পরিবর্তন 
ঘটায়; (২) বিভিন্ন শক্তি আশ্রিত পরমাণু হইতে আকারে বৃহত্বর পদার্থকণ! 
(তন্মাত্র ):; €(৩) পাঁচটি বিভিন্ন প্রকারের পরমাণু, প্রত্যেক পদার্থকেই 
পঞ্চেন্দ্রিয় যথা শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ সাহায্যে এই পাঁচ প্রকার পরমাণুতে ভাগ 
করা যায | ইহাদের সমন্বয়েই পঞ্চভূতের উৎপত্তি_-যথা, আকাশ, বায়ু, তেজঃ, 
অপ. এবং পৃথিবী । পদার্থগুলি এইভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যাইতে পারে । কিন্তু 
এই শ্রেণী বিভাগ যতট। ভৌত ততট। রাসায়নিক নয় এবং আধুনিক রসায়নশাস্ত্রে 
মৌলিক পদার্থগুলি যে ভাবে সজ্জিত কর! হয় অথব! তাহাদের বিবর্তন যে ভাবে 
বণিত হুয়, এই শ্রেণীবিভাগ মোটেই সেব্প নয়, পদার্থগুলিকে মৌলিক ও 
যৌগিক পদার্থ রূপে ভাগ করার একটি অস্পষ্ট চেষ্টাও পরিলক্ষিত হয়। মৌল 
পদার্থের নিবিড় মিলনের ফলেই যৌগিক পদার্থ স্থষ্ট হয়; যৌগিক পদার্থে মৌল 
পদার্থগুলির ধর্ম সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়। 

পদার্থবিদ্।।_জড়বিদ্যার কোন প্রণালীবদ্ধ গ্রন্থ গ্রীক বা ভারতীয়গণ কর্তৃক 
আরন্ধ হইয়াছে বলিয়! বল! যাইতে পারে না । এই ছুই জাতিই মোটামুটি একই 
পদ্ধতি অবলম্বন করিয়াছেন এবং তাহাদের সিদ্ধাস্তও মোটামুটি একই রকম। বরং 
একথা বল! যাইতে পারে যে ভারতীয় পদার্থবিদগণ তাহাদের বিস্তৃততর 


ই ৪৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


দৃষ্টিভঙ্গীর সাহায্যে পদ্ার্থবিদ্যার সঙ্গে জ্ঞানের অন্তান্ত শাখার 'হুষ্ঠু সমন্বয় করিতে 
সমর্থ হইয়াছিলেন ৷ পদার্থের অথু ও পরমাণুতে বিভাজন-ক্ষমতা, পরমাণবিক শক্ত 
সাহায্যে পরমাণু হইতে অথুর গঠন এবং পদার্থের গঠন সম্বন্ধে কয়েকটি মাত্র প্রকল্প 
হইতে টৈশেষিক দর্শনের প্রণেতা কণাদ এবং জন, বৌদ্ধ 'এবং অন্যান্য সমসাময়িক 
মনীবীগণ পদার্থের কতকগুলি সাধারণ ধর্ম বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করিতে সমর্থ 
হইয়াছিলেন। এই ধর্মগুলি হইল-_স্থিতিস্বাপকতা, *মাসঞ্জন, অভেছযতা, সান্দ্রতা, 
তরলীভবন, সচ্ছিদ্রত। ইত্যাদি । বৃক্ষের মূল হইতে কাণ্ডে রস-সধ্ধারণ এবং 
সচ্ছিদ্র পাত্রে তরল পদার্থের অনুপ্রবেশ কৈশিক গতির উদাহরণ ব্ূপে ব্যাখ্যাত 
হইত এবং বায়ু কর্তৃক চাপ সঞ্চালন এই তত্বের ভিত্তিতে নলের ভিতরে জলের 
উধগতি ব্যাখ্য! কর1 হইত । 

গতিবাদ ঃ ভারতবর্ষের প্রায় প্রত্যেক বৈজ্ঞানিক সন্প্রদ্রায়ই শব্ধ; আলোক; ও 
তাপের যূল কারণ হিসাবে আপবিক ও পরমাণবিক উভয় প্রকার গতিই কল্পন। 
করিয়াছিল । আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ গতির লক্ষণ যেভাবে দিয়াছেন, প্রাচীন- 
কালেও গতির লক্ষণ অনেকটা! সেইভাবে দেওয়া হইত, যেমন, একটি কণার স্থান 
পরিবর্ভনই তাহার গতি নির্দেশ করে। প্রাচীনকালেও ছুই রকম গতি স্বতন্ত্র 
করিয়া দেখানো হইত-যেমন, ক্ষণিক বেগ এবং গতিপরম্পরার নির্দেশক 
আরোপিত বেগ। একই সময়ে একটি বিশেষ কণার শুধু একটিমাত্র গতি থাকিতে 
পারে । এই গতি খজুরেখ অর্থাৎ উর্ধ বা অধঃ একই দিকে হইতে পারে ; এবং 
ইহা বক্ররেখও হইতে পারে, ফেক্ষেত্রে গতির দিক ধারাবাহিকভাবে পরিবত্তিত 
হইবে যথ। ঘূর্ণগতি বা ভ্রমণ এবং কম্পগতি বা! স্পন্দন। এই ছুই রকমের গতিকে 
একমঙ্গে “গমন” বলা হয়। অনেক রকমের গতি স্বীকৃত হইয়াছে, যেমন (ক) 
প্রযত্ব ; (খ) মাধ্যাকর্ষণ জনিত গতি বা গুরুত্ব, যাহা! আকর্ষণশক্তি হইতে উদ্ভূত 
এবং যাহা! প্রষৃত্ব দ্বার] রোধও কর। যাইতে পারে ; (গ) তরল পদার্থের নিম্নগতি 
(ম্ন্দন ) ; ঘে) শ্রেণীবিভক্ত হয় নাই এমন গতি, যে সব গতির কারণ অন-্দৃষ্ট ঃ 
বায়বীয় পদার্থের বিকিরণ, চুন্বকের আকর্ষণ ইত্যাদি এই ধরণের গতি। প্রাচীন 
বিজ্ঞানীদের বল সম্বন্ধে ধারণ] খুব স্পষ্ট ছিল। একটি পদার্থকণা অনেকগুলি বল 
বা-গতির একযোগে ক্রিয়ার ফলে কোন্‌ দিকে কত বেগ সম্পন্ন হইবে 
তাহাও তাহারা বলিয় দিতে পারিতেন। চাপ বা সংঘাত মুল গতির 
দিকে অথব! উহ্হার বিপরীত দিকে, ইহার উপরই লব্গগতির দ্বিক নির্ভর 


করিবে । 


প্রা্ীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিস্তাধার! রর 


ভারতীয়গণ তাহাদের নিভূলি গণনাতে স্থান ও কালের অতি সুজ মাত্র! ব্যবহার 
করিতেন, যদিও তাহাদের ব্যবহৃত যন্ত্রগুলি স্থল ছিল। এক সেকেণ্ডের ৩৩৭৫০ 
ভাগের একভাগকে সময়ের সবচেয়ে ছোট অংশ (ক্রটি ) ধর1 হইত এবং তুর্য- 
রশ্মিতে দেখা বা উপলব্ধি করার মত সব চেয়ে ছোট ধুলিকণার আকার এক 
ইঞ্চির ৩৪৯২৫ ভাগের একভাগ মাত্র বলির। ধর! হইত। পরমাণুর আকার 
2(৩-৫)-১ ৮২-*ৎ ঘন ইঞ্চির সমান ধর। হইত) আশ্চর্যের বিষয়, উদজান 
পরমাণুর অধূন] নির্ধারিত আকারের সঙ্গে এই আকার তুলনীয় । গতির কোন 


একক নিধি ছিল না, কিন্ত বেগ বিজ্বাপন এই ত্র অন্নসারে গড়বেগ নির্ধারিত 


হইত । ইহাদের সাহায্যেই সংগীতের বিভিন্ন স্বরগুলির আপেক্ষিক তীক্ষতা অত্যন্ত 
নিভূলভাবে নিন্মপিত হইয়াছিল, যে কোনে! সময়ে কোন গ্রহের গতিও ইহাদের 
সাহায্যেই নিভুলিভাবে বলা যাইত, এবং ইহাই 1085667515119] 09100105 
(“অস্তরকলন”)-এর ভিত্তি । শৃন্তে একটি কণার স্থান পরিবর্তনকে তাহার গতির 
লক্ষণ বলিয়া ধরা! হইত বলিয়। অন্ত একটি কণার অবস্থানের হিসাবে উহার 
অবস্থানকে তিনটি অক্ষের সাহায্যে পরিমাপ করিয়! নির্ধারিত হইত (বাচস্পতি, 
আনুমানিক ৮৪২ খ্বঃ, অঃ ) এবং এই ভাবেই ঘন জ্যামিতি বা বৈশ্লেষিক জ্যামিতির 
স্বত্রপাত হইল | পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন বিভাগে নিম্নলিখিত ধারণাগুলি ভারতীয়দের 
লিখিত গ্রন্থসমূহ হইতে সংগ্রহ কর! যাইতে পারে, যদিও এই তত্বগুলি যে সমস্তই 
তাহাদের পরীক্ষালব তাহার কোন সম্তোবজনক প্রমাণ নাই। 





তাপ 
১। আলোক ও তাপ একই বস্ত্র বিভিন্ন প্রকাশ €(কণাদ )। 
?1২। আলোক ও তাপ মূলতঃ কণাদ্বারা গঠিত-*-******-********** এবং ইহারা 


সরলরেখায় গমন করে (বাচস্পতি )। 
৩। বাম্পীভবন তনুভবন উৎপন্ন করে এবং তরলের বাম্পের চাপ পরিবেষ্টক 
বায়ুর চাপের সমান হইলে তরল পদার্থ ফুটিতে শুরু করে (শংকর মিশ্র )। 


আলোক 
১। পদার্থকে আলোকে স্বচ্ছ, ঈষদচ্ছ ও অনচ্ছ এই তিন শ্রেণীতে ভাগ 
করা যায়। 


২। আলোকের প্রতিফলন ও প্রতিনরণের স্ত্রগুলি এবং ছায়! সম্পিত 
ঘটনাগুলি তাহার জানিতেন ও ব্যাখ্য। করিতে পারিতেন । 


৪৫ 


প্রাচা ও পাশ্চাতা" দর্শনের ইতিহাস 


৩/। আলোকের রাসায়নিক ক্রিয়ার উদাহরণগুলি তাহারা জানিতেন ও. 
অহ্থশীলন করিতেন (জয়ন্ত )। 


৪। কাচ প্রস্তুত ও পালিশ করা একটি বড় রকমের শিল্প ছিল এবং কয়েক 
রকম উৎকৃষ্ট ধরণের কাচ প্রস্তুত করার পন্থা ভারতীয়গণ জানিতেন। 


& | বিভিন্ন ধরণের লেন্স ও দর্পণ তাহারা ব্যবহার করিতেন ; এবং দাহা 
বস্তুতে স্ুর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করিয়। দহন করিতে পারিতেন। 


শষ 

শব্দকে বিশ্লেষণ করিয়া! তাহার তিন রকমের শব্দ স্বীকার করিতেন ; (১) নাদ, 
বায়ুর একটি গুণ যাহা! শব্দের বাস্তব ভিত্তি, (২) ধ্বনি বা শ্রবণসাধ্য শব্দ এবং (৩) 
স্ফোট বা! বুদ্ধিগম্য শব্ধ। বায়ুতে শব্ধ কিভাবে চলে সে বিষয়ে এই মত স্বীকৃত 
হইত যে নাদ, যাহ! শব্দের ভিত্তি তাহা এক রকম তরঙ্গ ( শবরী স্বামী)। বায়ুর 
কুত্র ত্র কণাতে সংযোগ ও বিয়োগ পরিবহনের ফলেই এই তরঙ্গ স্থষ্ট হয়। 
প্রথম সংঘাতে যে তরঙ্গ স্থষ্ট হয়, সেই তরঙ্গই কুস্র ক্ষুদ্র কণার পরবর্তা সংঘাত দ্বারা 
পরিচালিত হয় । অন্থুদৈর্ঘ্য কম্পন দ্বার শব্দঘতরঙ্গ পরিবাহিত হর বলিয়া মনে করা৷ 
হইত এবং এই পরিবহনের সময়ে ঘনীভবন ও তনুকরণ পর্যায়ক্রমে ঘটিত বলিয়া! 
জানা ছিল। জল ও অন্ঠান্ত বস্তু যাহা তরঙ্গ পরিবহনে কম বা বেশী বাধা স্হটটি 
করে, তাহাদের উপস্থিতি ব! অস্থপস্থিতির ফলেই শব্দ কম বা বেশী দূরে পরিচালিত 
হয় বলিয়| ব্যাখ্যা কর1 হইত। 

প্রতিধবনিকে শব্দের প্রতিফলন বলিয়। মনে কর] হইত। কখনও কখনও 
ইহাকে প্রতিবিঘ্বের সঙ্গে তুলন1! করা হইত এবং প্রতিবিদ্বের মতই অপ্রকৃত বলিয়' 
ধরা হইত । 

সঙ্গীত শাস্ত্রগুলিতে একটি শব্ষকে অন্য একটি শব্দ হইতে তীক্ষতা (তার- 
মন্দাদিভেদ ) তীব্রতা (তীব্রমন্দাদিভেদ ) এবং বৈশিষ্ট্যমূলক গুণ বা ধ্বনিবৈশিষ্ট্য 
দ্বার পৃথক করা হইত । মধ্যবর্তা, শ্রাব্য (শ্রতি-ভেদ ) ও নির্ণেয় তীক্ষতাগুলির 
( তীব্র মন্দাদি) মধ্যে পার্থক্য ও উহাদের বিভিন্ন তীব্রতার কারণ স্বরূপ কম্পনাক্কের 
বিভিন্নত৷ ধরা হইত। সংগীতের জন্ত ছুই রকম স্থুর ম্বীক্ৃত হইত-_শ্ররতি ও স্বর। 
শ্রুতি একট বিশেষ তীক্ষতার অবিমিশ্র মূল স্থর, এবং সাধারণ-সরযুক্ত স্বরে একটি 
শ্রুতি ও তাহার কয়েকটি বিশেষ অনুরণন থাকে । দ্বাবিংশ প্রকার শ্রুতির 
উল্লেখ আছে এবং ইহার! সঙ্গীতে ব্যবহৃত হইত |” 


৪৬ 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা 


ভারতীয়গণঠতারে কম্পনের নিয়মগুলিও জানিতেন। একটি সুরের তীক্ষত! 
(কম্পনাক্ষ) তারের র্থ্যের ব্যস্তাহ্থসারে পরিবর্তিত হয় বলিয়! তাহার! 
জানিতেন।২ শুদ্ধ মূল সবরের তীক্ষতা এ সুরের উচ্চগ্রামের স্ুরগুলির তীক্ষতার 
সঙ্গে ১: ২৩ এই হারে সম্বন্বযুক্ত বলিয়! ক্বীকুত হইত। 
 ছঙ্ছকতব্ব_ চুম্বকতত্বের সাধারণ ঘটনাগুলি যথা লোড্ষ্টোন্‌ কর্তৃক লৌহখণ্ড 
আকর্ষণ বা আযাথ্ার কর্তৃক ঘাস বা খড় আকর্ষণ অন্দৃষ্ট বা অজ্ঞাত কারণে 
সংঘটিত হইত বলিয়া তাহার! মনে করিতেন । মনে হয়, ভোজ (১০৫০ খৃষ্টাব্দ) 
বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে অর্ণবপোত নির্মাণে কাষ্ঠখগুগুলি যুক্ত করিতে লৌহ 
ব্যবহার কর] বিপজ্জনক, কারণ সমুদ্রের চুশ্ধকপাহাড়গুলি এ পোত আকর্ষণ 
করিয়। বিপদ ঘটাইতে পারে । 

ভারতীয় অর্ণবপোতগুলিতে, বিশেষ করিয়া খুষ্টীয় যুগের প্রথম ভাগে নিম্িত 
অর্ণৰপোতগুলিতে “মৎস্ত-যন্ত্রঁ নামে একটি যন্ত্র ব্যবহৃত হইত। এই যন্ত্রটি 
একটি তৈলপাত্রে ভাসমান থাকিয়! সর্বদাই উত্তর দিক নির্দেশে করিত । ভারতবর্ষ 
পরিত্যাগ করিয়। যাহার ভারত মহাসাগরের শ্বীপগুলিতে বপবাস করিতে 
গিয়্াছিলেন তাহারা এই যন্ত্র ব্যবহার করিয়াছিলেন । ভারতীয়গণ যে বিদ্যুৎ 
সম্বন্ধীয় ঘটনাবলী বুঝিতে পারিতেন ইহার কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নাই। 
তবে পরমাণুর সংযোগকে তাহার! যে ভাবে ব্যাখ্য! করিয়াছেন সেই ব্যাখ্যাতে 
ধনাত্মক ও খণাত্বক মেরু কল্পনার মূল নিহিত আছে বলিয়! ধর! যায়। এই 
রকম মেরুর কল্পন] 731%105 কেক শত বৎসর পর তাহার দ্বৈতবাঁদী বিদ্যুৎ- 
রাসায়নিক তত্বে প্রকাশ করিয়াছিলেন । 

রসারন__ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কোন দেশেই প্রথম যুগে রসায়ন একটি পৃথক 
বিজ্ঞান বলিয়! স্বীকৃত হয় নাই। সর্বপ্রথম ইহ! একরকম খাঁটি অপরসয়ন 
মাত্র ছিল, ইতর ধাতুকে স্বর্ণে পরিণত করাই ইহার লক্ষ্য ছিল। পরে ইহা 
চিকিৎসা-বিদ্যার সাহায্যকারী এবং তার পর ধাতুবিদ্াা ও শিল্প-সংক্রাস্ত বিদ্যার 
সঙ্গে এক হইয়|! গেল। এই সব বিষয়ে ভারতীয় গবেষকগণ আরবীয় ও 
চীনাবাসী উভয়েরই শিক্ষকরূপে স্বীকৃত হইয়াছেন । 

বৈদিক যুগে, যতদিন না শেষ পধ্যস্ত এই বিজ্ঞান তান্ত্রিক পদ্ধতির অঙ্কগত 
হইয়] পড়িয়াছে, ততদিন পর্যস্ত প্রধানতঃ চিকিৎসা শাস্ত্রের সাহায্যকারী হিসাবেই 
এই বিজ্ঞানে জ্ঞান সঞ্চিত হইয়াছে । অশ্বিনী আরোগ্য-বিদ্ভার অধিষ্ঠাত৷ দেবতা 
এবং ইহা দেখিতে পাওয়। যায় যে রোগ-আরোগ্যকর গুণসমস্বিত ওধধি ও বৃক্ষকে 


৪৭ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


দেবতার সম্মান দেওয়া হইয়াছে, যেমন, লোমবৃক্ষের রস অমরত্ব প্রদান করে 
বলগিয়া মনে কর] হইত । 

আযুর্ধেদের যুগে ভারতীয় চিকিৎস1-পদ্ধতি একটি বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সহ 
যুক্তিপূর্ণ ভিত্তিতে নিয়মাবদ্ধ ও সুবিহ্তস্ত কর হইল । এই যুগের ছুইটি বড় গ্রন্থ 
হইল, একটি, চিকিৎসা-বিদ্যা সংক্রান্ত গ্রন্থ চরক ( আহ্কমানিক খুঃ পূর্ব বষ্ঠ শতক 
হইতে চতুর্থ শতক ), এবং আরেকটি শল্য চিকিৎসা-সংক্রাত্ত গ্রন্থ স্মশ্রুত (ত্ুষ্টীয় 
আদি যুগ )। চরকে আফুর্বেদকে অথর্ববেদের উপাঙ্গ এবং ইহা! দেবতাগণ কর্তৃক 
সরাসরি উদবাটিত এই হিসাবে ধর! হয় ; কিন্ত স্বশ্রতের মতে ব্রহ্মা অথর্ববেদের 
উপাঙ্গ হিসাবে আয়ুর্বেদ স্ষ্টি করিয়াছেন । চরক অপেক্ষা সুশ্রত অনেক বেশী 
বিজ্ঞানসম্মত ; বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও নিরীক্ষা ব্যতিরেকেই চরক তত্ববিদ্যার 
বিশদ আলোচনায় সাহসের সঙ্গে প্রবৃত্ত হইয়াছে । রসায়ন শাস্ত্রের জ্ঞান- 
ভাগারে আমুর্বেদের সর্বাগ্রগণ্য প্রকৃত দান পদার্থগুলিকে শ্রেণীবিভক্ত কর! 
এবং রাসায়নিক সংযোগ ও বিভাজনের একটি তত্ব প্রচার কর । পঞ্চভূত 
(ক্ষিতি, অপ. তেজঃ, মরুৎ ও ব্যোম ) রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ গঠনের জন্য 
দায়ী এবং পদার্থের গঠনে পঞ্চভূতের সংখ্যার উপর নির্ভর করিয়াই উহ্াদিগকে 
এক-_, দ্বি-_, ত্রি-_, চতুঃ_-, এবং পঞ্চ-যোজ্যতা-বিশিষ্ট বলা হইত (ইহা 
অনেকটা! 108169:-এর দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ভুক্ত যৌগিক 
পদার্থের মত )। | 

ক্ষার প্রস্তত প্রণালী ও ক্ষারের ব্যবহার পুঙ্াহ্ৃপুঙ্খবরূপে বর্ণনা করা আছে। 
ক্ষার কর্তন করা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করা ও আল্তোভাবে চিরিয়। দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত 
হইত । ইহা রোগগ্রস্ত অংশ দূর করিত, চর্ম ও মাংস নষ্ট করিত, নির্গত বস্ত 
শুফ করিত এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করিত। ক্ষার ছুইপ্রকার ছিল বলিয়৷ জান! 
ছিল, এক, যাহ বাহিক প্রযুক্ত হইত (তীক্ষ ক্ষার ), ছুই, যাহা আভ্যন্তরীণ 
প্রয়োগে ব্যবহৃত হইত (মৃদু ক্ষার )। মৃদু ক্ষারকে চুণ সহযোগে তীক্ষ ক্ষারে 
পরিবর্তিত কর হইত । 

বিষ জান্তব, উদ্ভিজ্জ এবং খনিজ এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হইত । ওষধ 
দুই শ্রেণীর বলিয়া মনে করা হইত, এক, যাহা বল ও জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে, 
ছুই, যাহা! রোগ নিরাময় করে । যাহা কিছু আমু বল, স্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তি 
বৃদ্ধি করিত তাহাকেই রসায়ন বলা হইত। বযষ্ঠ শতকের মধ্যে ভারতীয় 
রসায়নবিদ্‌গণ ভম্মীকরণ, পাতন, বাম্পপাতন” ভর্ধপাতনঃ বন্ধন প্রভৃতি রাসায়নিক 


8৮ 


প্রাষ্টীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার। 


প্রক্রিয়াগুলিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। পতঞ্জলি, নাগা এবং তাহাদের শিষ্যবর্গ 
রাসায়নিক যোজন ও বিয়োজনে এই সব প্রক্রিয়া! ব্যবহার করিতেম। পতঙ্জলি 
তাহার ধাতুবিদ্যা-বিষয়ক গ্রন্থে (লৌহশাম্ম) 'অনেক ধাতুবিদ্যাবিষ়ক ও 
রাসায়নিক প্রক্রিয়ার বিস্তৃত নির্দেশ দিয়াছেন, বিশেষ করিয়া! ধাতব লবণ, 
সংকর ধাতু, পারদসংকর প্রস্তুত করার ও তাত্র, দস্তা প্রভৃতি ধাতুর গন্ধকমিশ্র 
হইতে এঁ সকল ধাতু নিফাশন ও শোধন করার পন্থার বিস্তারিত বিবরণ দিয়াছেন । 
ইহা! বল! হয় যে অশ্নরাজও তিনি আবিষ্কার করিয়াছেন । ছুূর্ভাগ্যক্রমে পতঞ্জলির 
আবিষ্কারের অধিকাংশই হারাইয়! গিয়াছে বলিয়া মনে হয়? কিন্ত “রসায়ন” 
গ্রন্থে পতঞ্জলির আবিষ্কারের উদ্ধৃতি বারংবার পাওয়া যায়। ইহা বল! হয় 
যে পতঞ্জলির পুর্বে নাগাজুনও ধাতুবিগ্ভা ধিবয়ে একটি গ্রন্থ লিখিয়াছিলেন। 
তান্ত্রিক যুগের মধ্যকালে (আহুমানিক ১২০০ খৃষ্টাব্দ ) রচিত গ্রন্থ “রসার্ণবে” 
রাসায়নিক প্রক্রিয়াতে যন্ত্রের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়! হইয়াছে । ধাতুকে 
“মারা” অর্থাৎ যৌগিক পদার্থে পরিণত করা, মুচি প্রস্তুত কর। ইত্যাদি কাজের 
জন্য বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রের বিশদ বিবরণ এই গ্রন্থে আছে। কোন্‌ ধাতু কোন্‌ 
রংএর শিখা দেয় তাহাও এই গ্রন্থে নিভু'লভাবে বর্ণন! করা হুইয়াছে-_-যেমন, 
তাত্রথণ্ড নীল শিখা, রাং কপোত-বর্ণী শিক্ষা, সীস1 বিবর্ণ শিখা, লৌহ তামাটে 
শিখা ইত্যাদ্দি। পারদের উপর ওৎস্থক্যের সাক্ষ্য এই যুগে খুব বেশী পাওয়] 
যায়। পারদ শোধন ও ইহ! হইতে ক্যালোমেল, পারক্লোরাইডভ, ও সালফাইড, 
(সিদূর) প্রস্তত করার পদ্ধতি এই গ্রন্থে সম্পূর্ণ ভাবে বণিত হইয়াছে। 
১৩০০ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৫০০ থুষ্টাব্দ এই সময়ের মধ্যে লিখিত “রস-রত্ব-সমুচ্চয়” 
একটি মুল্যবান চিকিৎসা-সংক্রান্ত রসায়ন গ্রন্থ । ইহাতে ওষধ প্রস্ততের বিদ্া- 
সংক্রান্ত বিবিধ বিষয় বণিত হইয়াছে ; এই সব প্ররস্ততিতে পারদই সর্বাপেক্ষা! 
বেশী আকর্ষণীয় ধাতুর্ধপে ব্যবহৃত হইয়াছে । বস্ততঃ “রস” এই শব্দটিকে বিভিন্ন 
গ্রন্থে, যেমন “ভাব-প্রকাশ” গ্রন্থে, ছুইটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হইতে দেখ! গিয়াছে, 
একটি রস বা অন্রস অর্থে, আর একটি পারদের সমার্থক শব্দ হিসাবে, এবং 
তখন ইহাকে ধাতুন্ষপেই গণ্য কর। হইয়াছে । 

এইভাবে “রসায়ন' শব্দটি চিকিৎসা-শাস্ত্রে পারদ ও অন্তান্ত ধাতুর ব্যবহান 
বুধাইতেই প্রায় সকল সময়ে ব্যবহৃত হইত, এবং ইহা! অপরদায়নকেও বুঝাইত। 
রসরত্ব-সমুচ্চয় অজৈব প্রাকৃতিক পদার্থগুলিকে (মৌল ও যৌগিক উভয় প্রকার 
পাধিব পদার্থগুলি ) নিয়লিখিতভারে ভাগ করিয়াছে_-€১) লঘুভার রস, যথা 


8৯ ৮ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


অভ্র, মাক্ষিক, শিলাজতু, তু, ক্যালামাইন্‌ ইত্যাদি; (২) লঘ্ুভার উপরস 
(পারদের লঙ্গে ব্যবহারের উপযোগী ) যথা; গন্ধক, ফটকিরি, হিরাকসঃ হরিতাল, 
ইত্যাদি) (৩) রত্বসমুহ যথাঃ পান্না, হীরক, নীলকাম্তমণি, বৈদূর্যমণি, ইত্যাদি; 
(8) ধাতৃসমূহ যথা, ত্বর্ণঠ রৌপ্য, লৌহ, তাত্র, সীসা, রাং; এবং (৫৫) সংকর 
ধাতু যথা, কাংন্য ও পিস্তল। ছয়টি লবণ, তিনটি ক্ষার, এবং খনিজ পদার্থও 
অজৈব প্রাকৃতিক পদার্থের পর্যায়ে ধরা! হইত। ভন্দীকরণ, অধঃ-পাতন, 
উর্ধ-পাতন, স্বেদন, এবং স্তন প্রক্রিয়াগুলি বণিত হইয়াছে । লবণ হইতে 
রস-কপুৃরি? গন্ধক ও পারদ হইতে হিঙ্কুল প্রস্তত করা এবং স্বর্ণ-সিম্দুর ও রস-সিন্দুর 
প্রস্তুত করার পদ্ধতি বণিত হইয়াছে । বিভিন্ন তীব্রতাযুক্ত তাপের ব্যবহার 
যথ। খর-পাক, মধ্যম-পাক ও মৃছ-পাকের উল্লেখ আছে। রসশালা নির্মাণের 
নির্দেশও দেওয়া আছে এবং রসশালাতে কোন্‌ কোন্‌ ধরণের যন্ত্র থাক! উচিত 
তাহাঁও বল! আছে, যেমন, খল, মুষল, নিক্র্ষক যঙ্ত্র চালনি, মুচি, উত্তাপন 
যন্ত্রপাতি, ভস্ত্রাঃ লৌহ চাটু ইত্যাদ্দিও বিস্তারিতভাবে বণিত আছে। যে সমস্ত 
দ্রব্য প্রস্তুত কর! হইবে তাহাদের সাফল্যের জন্য গবেষকগণের কি বকম 
জীবনযাপন কর] উচিত তাহাও উল্লিখিত আছে। “রস-রত্ব-সমুচ্চয়”কে বিজ্ঞান 
সম্বন্ধীয় সমস্ত জ্ঞাতব্য তথ্যপূর্ণ গ্রন্থবিশেব বলা যাইতে পারে । জৈব রসায়ন 
সহ রসায়ন শাস্ত্র, মণিকবিদ্া ও ধাতুবিগ্ভাতে ভারতীয়গণ যুগ যুগ ধরিয়া যে 
জ্ঞানরাশি সঞ্চয় করিয়াছিলেন তাহার প্রায় সমস্তই এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 
ধাতুবিদ্ভ। ও অস্থান্ শিল্প_-যদিও বৈদিক যুগে স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিজ্ঞাত ছিল এবং 
বিবিধ অলঙ্কার নির্মাণে ন্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহৃত হইত, এবং যদিও অন্ান্য ধাতু যথা 
লৌহ, সীস। ও রাংও উল্লিখিত হইয়াছে, তবু প্রাচীন ভারতীয়গণের ধাতুবিগ্ভাগত 
ধক্ষতার একটি স্থসংবদ্ধ বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। তথাকথিত 108759095 
91955 ব! দ্ামাস্কাসের ফল নির্মাণ করিবার গোপন তথ্যের জন্ত অর্থাৎ ইম্পাতে 
পান দেওয়ার দক্ষতার জন্য ভারতীয়গণ বিখ্যাত ছিলেন । এই দক্ষতা 
ভারতীয়গণের নিকট হইতে পারসীকগণ এবং পারসীকগণের নিকট হইতে 
আরবীয়গণ লাভ করিয়াছিলেন । এই বিষয়ে তাহাদের সিদ্ধির জলস্ত প্রমাণ হইল 
কুতুবের নিকট প্রায় সার্ধসহম্র বৎসন্পের পুরাতন মরিচাবিহীন পেট! লোহার 
সতভটি। ধাতুর নিফাশন, শোধন, দ্রবীকরণ+ ও ছ্াচ গঠনের পদ্ধতিগুলি তাহারা 
ভালভাবে বুঝিতেন ও.ব্যবহার করিতেন । ভারতের দেশজ অধিবাসীরা ঢালাই 
লোহাতে পরিমাণমত অঙ্গারক মিশ্রণ করিতে পারিতেন | এই উদ্দেশ্যে ভাহার] 


&০ 


প্রাচীন ভারতের বৈজাদিক চিন্তাধারা 


প্রথমে প্রয়োজনাতিরিক্ত অঙ্গারক মিশ্রণ এবং ধীরে পান দেওয়ার পন্থায় ক্রমে ক্রমে 
অতিরিক্ত অঙ্গারক বাহির করিয়! লইতেন। তাহার অঙ্গারক দূরীকরণের এই 
পন্থাটি মধ্যপথে যথা সময়ে বন্ধ করিতে. দক্ষ ছিলেন । সাম্রাজ্য-যুগের রোমকগণ 
ভারতীয়গণকে শিল্পদক্ষ জাতি বলিয়! গণ্য করিতেন। সেই সময়ে ভারতীয়দের 
আবিষ্কার ও তীহাদের ব্যবসায়ক্ষেত্রে অভিযান মিশর, পারস্য প্রভৃতি দেশে 
বিশেষভাবে পরিচিত ছিল । ভারতীয়গণ নিম্নলিখিত কার্যাবলীতে বিশেষজ্ঞ 
ছিলেন যথা-_বিরঞ্জন, রঞ্জন, ক্ুতীবস্ত্র ছাপানো, চাম্ড়া পাকা করা, সাবান, কাচ, 
ইস্পাত, বারুদ, বাজী, বজ্রলেপ প্রস্তুত কর প্রভৃতি । 

ভেবজ-বিজ্ঞান ও শল্য চিকিৎসা অন্যান্য বিষয়ের মত এই বিষয়ে ভারতীয়দের 
সাফল্যের এতিহামিক গুরুত্ব ব্যতীত কিছুটা নিশ্চিত মুল্যও আছে। চরক ও 
সুশ্রুত ভারতীয় ভেষজ-বিজ্ঞান ও শল্য চিকিৎসাতে ছইজন বিখ্যাত ব্যক্তি। 
চরক একজন ভিষকৃ এবং স্ব ত একজন শল্য চিকিৎসক | যদিও ইহার্দিগকে 
এই বিজ্ঞানের প্রবর্তক বলিয়] স্বীকার কর সম্ভবপর নাও হইতে পারে, তবু 
তাহাদের কার্য্যের প্রক্কত গুরুত্ব হইল যে তাহার! পূর্ববর্তী কালের অব্যবস্থার 
মধ্য হইতে একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করিয়াছিলেন এবং পূর্ববর্তী শতাবীগুলিতে 
সঞ্চিত অভিজ্ঞতার সাহায্যে ভেষজবিজ্ঞান ও শল্য চিকিৎসাকে বিজ্ঞানের 
মর্যাদা দিয়াছিলেন । আহ্ুমানিক দ্বিতীয় শতকের মধ্যে শল্যচিকিৎসা একটি 
পরিপুর্ণ ব্যবহারিক বিছ্াা হিসাবে স্বীকৃতি পাইয়াছে; কিন্তু ভৈবজ্য বিদ্যা 
নুতন নুতন উদ্ভিজ, জান্তব ও খনিজ ওষধ আবিষ্কারের মাধ্যমে যুগে ষুগে 
ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করিয়াছে; এই সমস্ত ওষধের রোগনিরাময়ী ক্ষমত! 
যথাযথ পরীক্ষা দ্বার! সপ্রমাণও হইয়াছে । খুঃ পুর্ব তৃতীয় শতাব্দীতেও ভারতীয়দের 
হাসপাতাল ও ওঁষধালয় ছিল; এবং মানুষ ও পশ্ড চিকিৎসার জন্য ওবধের 
ব্যবস্থাপত্র প্রচার ও জনপ্রিয় করিবার চেষ্টার প্রমাণ অশোকের অনেক শিলা- 
লিপিতে পাওয়1 যায় । হাপানির জন্য ধুতুরার ধূমপান কর এবং পক্ষাঘাত ও 
অজীর্ণের জন্য কুঁচিল1 ফল ব্যবহার কর] মুরোপীয়দের অনেক পূর্বে ভারতীয়গণই 
জানিতেন। ভারতীয়গণই সর্বপ্রথম পারদের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার সমর্থন করেন 
এবং চিকিৎসকগণ বলবর্ধক হিসাবে পারদঘটিত ওঁষধধ (মকরধবজ ) ব্যবহার 
করিতেন । ভারতীয়গণ শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা যায় এই্ধপ নিদ্রাউদ্রেককর চূর্ণ 
ভেষজ পদার্থ প্রস্তত করিতে জানিতেন ১ এই সব ওুঁষধ স্থানিক অবেদন সাধনেও 
কার্যকরী ছিল । 


৫১ 


শ্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শদের ইতিহাস 


বষ্ঠ শতাবী হইতে আরম্ভ করিয়া! ভারতীয়দিগের ভৈবজ্য বিস্তার প্রত্যেক 
গ্রস্থই আভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জগ্য ধাতুভপ্ম সুপারিশ করিয়াছে । স্বর্ণতভন্ম, রস- 
সিক্দুর এবং রজততম্খ খুব প্রচলিত ঁধধ ছিল। তারতীয় চিকিৎসক ও ভেজ- 
বিজ্ঞানীদিগের গ্রন্থের কথা প্রাচীন গ্রীক ও রোমকগণ জানিতেন। ভেষজ- 
বিজ্ঞানের জনক 17107001555 (খ্বঃ পৃঃ ৪৫০) নিয়লিখিত ওষধের কথা 
জানিতেন, যথা, গোলমরিচ, এলাচ, আদা, দারুচিনি, ক্যাসিয়! ইত্যাদি । 
ভারতীয় ভেবজ-গবেষণাগারে প্রস্তুত গঁবধাবলী গ্রীপ দেশে এবং 
শ্রীকং ও রোমক সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত হইত। বাগদাদে আরবীয়দের 
হাসপাতালে ভারতীয় চিকিৎসকগণ অধীক্ষকরূপে নিযুক্ত হইতেন বলিয়! জান! 
গিয়াছে । 

শল্য চিকিৎসা! ভারতবর্ষে চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলির মধ্যে 
একটি । প্রাচীন ভারতীয় শল্যচিকিৎসকগণ মনে করিতেন যে শল্যচিকিৎস! 
চিকিৎস! বিজ্ঞানে সর্বাগ্রগণ্য এবং সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য এবং ইহাতে অন্যান্য 
শাখা অপেক্ষা অনুমান ও সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত হেত্াভাঁস হইবার সম্ভাবনা কম। 
শলাকা অথবা শল্য এই শব্দটি হইতে, অর্থাৎ শরীর হইতে শায়ক বা এ শ্রেণীর 
বিজাতীয় পদার্থ দূর করার কৌশল হইতে এই বিজ্ঞানের নামকরণ হইয়াছে । 
ইহাতে মনে হয় যে যুদ্ধ বা শিকারকালীন আকল্মিক দুর্ঘটনা হইতে এই বিজ্ঞানের 
উত্তব হইয়াছে । যদিও প্রাচীন শল্যচিকিৎসাপদ্ধতি আধুনিক কালে অহুস্যত 
পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গতার সঙ্গে তুলনীয় নহে তবু ভারতীয় শল্য চিকিৎসকগণ মৃত ভ্রণ 
বাহির করিতে, শরীরের কল! হইতে বহিরাগত পদার্থ বাহির করিতে এবং শল্য 
চিকিৎসামূলক প্ররক্রিয়! দ্বারা বিভিন্ন ধরণের প্রদাহ, স্ফোটকঃ ক্ষত এবং অন্যান্ত 
ব্যাধি নিরাময় করিতে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন । অস্থি কর্তন কর ওষযুক্ত কর! এবং 
অন্তান্ত বিপজ্জনক অক্োপচারও তাহারা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করিতেন বলিয়। 
জান! গির্লাছে। সুশ্রত-পন্থীরা বলিতেন যে দেহের আভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে 
নিখুঁত জ্ঞান অর্জনের অপরিহার্য পন্থাগুলির মধ্যে শবব্যবচ্ছেদ একটি পন্থা । 
শবব্যবচ্ছেদ দ্বার! মাহবের শারীরস্থান সম্বন্ধে নিখৃত জ্ঞান অর্জন ব্যতীত জীবন- 
ধারণের পক্ষে অপরিহার্য দেহমধ্যস্থ যন্ত্র ও অংশগুলি যথেষ্ট সতর্কতার সহিত 
পরিহার করিয়! অস্ত্রোপচার করাও শিক্ষা! হইত । শল্যচিকিৎসাগারে অস্ততঃপক্ষে 
একশত সাতাশ প্রকার যস্তর থাকিত, যথা, করাত, শল্যচিকিৎসকের ছুরি, কচ 
সাধারণ ছুরি, কাচি, সাড়াশির মত যন্ত্র, ইত্যাদ্দি। অঙ্শীলনের জন্য মোমের ছা, 


৬২. 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার! 


অলাবু; শশা ব্যবহৃত হইত এবং ক্ষতস্থানাদি বন্ধনের হি্চদ অহ্শীলনের জঙ্য মনুষা 
শরীরের নমনীয় ছাচ ব্যবহৃত হইত । 

পাচনতন্ত্রের শারীরবুক্ত, ভ্রণবিদ্াঃ ইত্যাদি বিষয়ে টে তারতীরদের জ্ঞান 
মোটামুটি ব্যাপক ও নিভূর্ল ছিল। পাঁচটি মৌল বস্তুর সহযোগে উৎপন্ন খা্ডন্্ব্য 
প্রাণবায়ু নামক বিশেষ ধরণের (জৈবিকশক্তির সাহায্যে গ্রাসনালীর ভিতর চালিত 
হয়। পাকস্বলীতে এ খাদ্য একটি নরম ও আঠাল শ্রেক্সাজাতীয় পদার্থের (স্পষই্টতঃ 
পাচকরস) সঙ্গে মিশ্রিত হইয়া! আরও অন্রযুক্ত হয়। এইভাবে ভুক্ত খাগ্ভন্ব্য 
পাকস্থলীতে একটি মণ্ডে পরিণত হয়, সেই মণ্ড সমান-বামুর ক্রিয়াতে পিস্বাশয়ে 
( শ্রহণী ) যায় এবং তথা হইতে ক্ষুদ্র অস্ত্রে (আম-পক্কাশয় ) যায় । তার পর মণ্ডটি 
পিস্তের পাচক রস দ্বার! রসে পরিণত হয় । এই রসে কলা-উৎপাদনকারী “ক্ষিতি” 
যুক্ত যৌগিক পদার্থ, “অপ-্-যুক্ত যৌগিক পদার্থ, তাপ-উৎপাদনকারী “তেজ:*-যুক্ত 
যৌগিক পদার্থ, বল-উৎপাদনকারী প্বায়ু্*যুক্ত যৌগিক পদার্থ, এবং পরিশেষে হুক্্ 
অশরীরী উপাদানমূলক অংশ আছে; এবং এই রসই চেতনার পরিবাহক । রসের 
সক্ষম ভাগ ক্ষুত্রান্্র হইতে প্রাণবায়ুব্ূপ (জবিকশক্কি দ্বার! ধমনী বা মধ্যশরীরের (মুখ্য! 
রস কুল্য!) ভিতর দিয়! প্রথমে হৃৎপিণ্ড পরে হৃৎপিণ্ড হইতে যরুতে যায় ; সেখানে 
পিত্তের রঞ্জক দ্রব্য রসের সারবস্তুর উপর ক্রিয়! করিয়! ইহাকে রক্তে পরিণত করে ৷ 
ব্যান-বায়ু নামক জৈবিকশক্তি রসের অধিকাংশ সমস্ত শরীরে পরিচালিত করে। 
বামু ও কফ রক্ত মাংস-কলাতে পরিণত হয়। মাংস কলার সুক্ষ সারবস্ত বায়ু এবং 
বিপাকীয় উত্তাপের একত্রিত ক্রিয়ার ফলে স্রেহ-কল৷ প্রস্তুত করে ;) এই ক্রিয়াতে 
পঅপ*্-যুক্ত যৌগিক পদার্থের দান খুব বেশী বলিয়। মনে কর হইত। স্নেহ 
পদার্থের স্ক্ম সারবস্ত মজ্জাতে প্রবেশ করিয়! বায়ুর সহযোগে তথায় বিপাকীয় 
উত্তাপ স্ষ্টি করে এবং পরিশেষে শুক্রে পরিণত হইয়া] শুক্রাশয়ে পরিচালিত হঁয়। 
শুক্র ওজ: (শক্তি) প্রদান করে, ওজঃ হৃৎপিণ্ডে প্রত্যাগমন করে ও পুনরায় সমস্ত 
দেহে সঞ্চারিত হয় এবং একটি স্বয়ং প্রত্যাগমনী বিপাক চক্র শুরু হয়। শরীরের 
শির1, ধমনী এবং স্রোতের ভিতর রক্তসঞ্চালন হয় বলিয়া! মনে কর1 হইত $ শিরা, 
ধমনী, মাংসপেশীঃ লমিকাবহ আধার ইত্যাদি এই সমস্ত পথের অস্তভূক্ত। উপরস্ত, 
হৃংপিশড হইতে যক্কৃতে ধমনী দূষিত রক্ত বহন করিয়া আনে এবং শিরার মাধ্যমে 
শোধিত রক্ত পরিচালিত হয় বলিয়। জান! ছিল । চরক ও স্শ্ররতে শির। ও ধমনীর 
শারীরস্থান নির্দেশ কিছুটা অস্পষ্ট; কাজেই উহা হইতে শুধু মোটামুটি ধারণা করাই 
সম্ভবপর | সমস্ত শির এবং যে সমস্ত ধমনী শরীরে রস পরিবহন করে নাঃ সেই 


$৩ 


গ্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সমস্ত ধমনী করোটি-সংক্রান্ত আয়; ইহারা হৃৎপিণ্ড হইতে করোটিতে গিয়াছে । 
হুষুয্না বা মেরুদণ্ডের মধ্য তশ্রীতে (ব্রন্গ-দণ্ড ) ছুই শ্রেণী হ্বতস্ত্-ল্গাযু-তনত্র আছে, 
শরীরের বাম ও দক্ষিখ পার্থ ইহার] ইড়। ও পিঙ্গলা নামে ছুইটি শাখাতে বিভক্ত 
হইয়া! গিয়াছে । শরীরে সাত শত অ্রায়ু-তস্ী আছে? ইহাদের মধ্যে চৌদ্দটি 
অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ; ইহাদের সাহায্যেই নানাপ্রকার গতি হইয়! থাকে । চরক 
এবং সুশ্রতের মতে বায়ুগুলিই প্রধান চালক এবং বাধ্যকারী শক্তি; ইহাদের 
স্বারাই বিভিন্ন অঙ্গ এবং মনও চালিত হয় ; ভ্রণের ক্রমবৃদ্ধির জন্যও ইহার! দায়ী । 
বানু পাঁচ প্রকার যথা, প্রাণঃ যাহ! ম্বরযন্ত্র শ্বসনতন্ত্র চালনা করে, এবং দীর্ঘশ্বাস 
ফেলা, কাসি ইত্যাদি কার্ষে নিযুক্ত পেশীদিগকে নিয়ন্ত্রণ করে ; অপান বাছু রেচন 
তন্ত্র সহিত সংযুক্ত; ব্যান বায়ু পৈশিক ক্রিয়ার সহিত জড়িত ; সমান বায়ু 
ধিপাকের মাধ্যমে শরীরের তাপ-সংরক্ষণের কার্ধে নিযুক্ত, এবং উদ্বান বায়ু সাধারণ 
ভারসাম্য রক্ষা করে এবং দেহের বিভিন্ন যন্ত্র-সংস্থান অক্ষু্ন রাখে । 

ডিম্বাণু শুক্রাণু কর্তৃক গর্ভাহিত হইলে দৈহিক উত্তাপের প্রভাবে পর্ষ্যায়ক্রমে 
একটি অপরটি হইতে উদ্ভূত হইয়া থাকে । রাসায়নিক ক্রিয়া বা বিপাকের 
সাহায্যে অন্রস রক্তে পরিণত হয়; পরে রক্ত হইতে মেদ, ম্েহ, অস্থি, মজ্জ! 
ইত্যাদি হইয়া থাকে । তৃতীয় মাসে মস্তক ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রাথমিক অবস্থা দৃষ্ট 
হয়, চতুর্থ মাসে ইহা! পরিপূর্ণ হয়; অস্থি, অস্থিসমূহের মধ্যে সংযোগস্থাপক অংশুল 
শিরাগুচ্ছ, নখ, এবং কেশ যষ্ঠমাসে উৎপন্ন হয়। দ্বিতীয় মাসে ভ্রণের লিঙ্গ নির্ণীত 
হয় বলিয়। মনে কর! হইত । 

উত্ভিদ-বিভা ও কৃষি-বিজ্ঞান__উত্ভিদ বিদ্যাতে স্সম্বদ্ধ জ্ঞান বলিতে আধুনিক কালে 
যাহা বোঝায় সেইব্ষপ জ্ঞান প্রাচীন ভারতীয়দিগের ছিল কিন! এই প্রশ্নের উত্তর 
দেওয়া! খুব কঠিন। প্রথমে খাদ্য সরবরাহ সমন্তা সমাধান পরে অনুস্থত] ও ব্যাধি 
নিরাময় করিয়। দীর্ঘজীবন দিতে পারে এই রকম ওঁষধি সন্ধান উপলক্ষেই ভার তীয়- 
গণের উত্তিদৃ-বিছ্যা-সংক্রাস্ত জ্ঞান আহরণে কৌতুহল জাগ্তত হইয়াছিল। ইহ] বলা 
যাইতে পারে যে এই সমস্ত অনুসন্ধানের ফলেই উত্ভিদগুলিকে মোটামুটিভাবে 
শ্রেণী বিভক্ত কর] হইয়াছিল । চরক এবং হুশ্রুত উত্তিদকে নিয়লিখিত শ্রেণীতে 
ভাগ করিয়াছিলেন-- ৫১) বনস্পতি ব1 যে সমস্ত বৃক্ষ ফুল ব্যতীত ফল প্রসব করিয়! 
থাকে ; (২) বানস্পত্য; যে সমস্ত বৃক্ষ ফুল ও ফল উভয়ই দিয়া থাকে ; (৩) ওষধি, 
যে সমস্ত উত্তিদ ফল দেওয়ার পর শুকাইয়া! যায়; (৪) বীরুধ বা অন্ান্ত উত্ভিদ 
যাহাদের কাণ্ড সকলদিকে ছড়াইয়! যায়। শেষোক্ত শ্রেণীকে আবার দ্বুইভাগে 


৪ 


প্রা্গীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তা ধাক্াঁ 


বিভক্ত করা যায়--€১) লতা; €২) গুল্স বা! ০৪72.০5015 (ত্বকসমন্বিত ) কাশুযুক্ত 
উত্তিদ। উপরোক্ত বিভাগ ব্যতীত আরও ছুহইাটি বিভাগের কথা প্রশস্তপাদ 
বলিয়াছেন--৫১) তৃণ এবং (২) অবতান অর্থাৎ বুক্ষবৎ উদ্ভিদ এবং গুল্ম । 

অমর পরজীবীয় উদ্ভিদকে লতাজাতীয় বলিয়াছেন $ কিন্ত ইহার্দিগকে 
“অবরোহ* অর্থাৎ বৃক্ষের শাখা হইতে অবরোহী আস্থানিক মূল হইতে পৃথক 
করিয়া দেখিতে হইবে । ভারতীয় ভৈষজ্যবিগ্ভার গ্রন্থে আরও কয়েক শ্রেণী 
উত্তিদের উল্লেখ আছে-_যথা, আকাশবতী বা! আকাশলত1 ; প্রব বা বন্ধ জলাশয়ে 
ভাসমান আগাছ! $ এবং শৈবাল অর্থাৎ শেওল। ও শেওলার স্তায় পুষ্পল ছত্রক 
বিশেষ। 

উত্তিদ শারীরবৃত্ত--উদয়ন উদ্ভিদের মধ্যে জীবন, মৃত্যু, নিদ্রা, জাগরণ, রোগ 
ও মাদকদ্রব্যের ক্রিয়া লক্ষ্য করিয়াছিলেন। যাহা অনুকুল সেই দিকে উদ্ভিদের 
গতি এবং যাহা প্রতিকূল তাহা হইতে উদ্ভিদের সরিয়! আসার ঘটনাও উদয়ন 
লক্ষ্য করিয়াছিলেন, যেমন হৃর্ষেমুখীর সুর্যের দিকে মুখ রাখিয়! ঘোর! ইত্যাদি । 

গুণরত্ব বড়-দর্শন-সমুচ্চয় ( ১৩৫০ খুষ্টাব্ব ) গ্রন্থের টীকাতে উন্তিদ জীবনের 
নিয়লিখিত ঘটনার উল্লেখ করিয়াছেন__-(১) শৈশব, (২) নিয়মিত বুদ্ধি, (৩) নিজ, 
জাগরণ ব! উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়া সম্পর্িত বিভিন্ন গতি ও ক্রিয়], (8) উৎপন্ন ক্ষত 
শুক হওয়! (&) মুত্তিকার প্রক্কৃতি অন্সারে খাগ্ভ আত্তীকরণ (৬) রোগ এবং রোগ- 
মুক্তি । যেবৃক্ষের ফল হয় অথচ ফুল লক্ষিত হয় ন! অর্থাৎ বনম্পতিকেও পুম্পিত 
কর। সম্ভব হইত (বরাহ মিহির )। নিক্নলিখিত প্রশ্নোত্তর হইতে দেখা যায় যে 
সকল দিক হইতেই উত্তিদের ্ষ্টি, বৃদ্ধি ও জীবনের সঙ্গে মানুষের ্থষ্টিঃ বৃদ্ধি ও 
জীবনের নিকট সাদৃশ্য আছে £__ 

হারীত জিজ্ঞাসা করিলেন, “মুশিবর সঙ্গম ব্যতীত গর্ভাধান হয় না কেন্দ! 
অথব! বিপরীত লিঙ্গের মিলন ব্যতীত ফুল ও ফল উৎপন্ন হয় না কেন? উদ্ভিদের 
মত রমণীতেও একই প্রকার ফলোৎপাদন দৃষ্ট হয় না কেন?” 

আত্রেয় উত্তর দিলেন_-“সমস্ত উত্ভিদেই শিব ও শক্তি অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী 
জন্মদায়ক শক্তি সাহিত আছে। হে মহাত্মা» যে শক্তি স্ৈতিক গুণ সম্পন্ন উহ! 
শিব ব! পুক্রষ এবং যে শক্তি গতীয় গুণসম্পন্ন উহ! শক্তি বা স্ত্রী।” 

ভারতীয় শাস্ত্রকারগণ বলেন ষে উদ্ভিদে এক প্রকার লান সচেতনতা আছে 
এবং ইহারা আনন্দ ও বেদনা* ভোগ করিতে পারে এবং ইহাদের শ্রবণশক্তিও 
আছে ।* 


&% 


এাচ ও পাশ্চাত্য -ঘর্শমের ইতিহাস 


খগবেদের কাল হইতেই ভারতীয়দিগের উদ্ভিদ বিষয়ক জ্ঞানার্জনে উৎসাহ্‌ 
ছিল, এবং বিশেষ করিয়া এই কারণেই কৃবিবিজ্ঞানে উন্নতি সম্ভব হইয়াছিল । 
ভারতবর্ষে, বিশেষ করিয়া উত্তর ভারতে, অনেক নদী-নালা এবং প্রচুর জল 
সরবরাহের বন্দোবস্ত্র থাকার জন্য খধিগণ কৃষিকর্ম পবিত্র মহান্‌ জীবিকা বলিয়া 
মনে করিতেন । ক্কবিকর্মে অন্রাগ শ্বভাবতঃই গৃহপালিত পশুসমূহের উন্নতি 
ও মঙ্গল সাধনে সমপরিমাণ প্রগাঢ় অহ্রাগে র্ূপপরিগ্রহ করিত। শ্বৃষ্টপূর্ব চতুর্থ 
শতকেও কৃষিবিদ্ঞা সরকারের আন্তরিক মনোযোগ আকর্ষণ করিত এবং সেই 
সময়ে ইহা! যথেষ্ট উন্নত হইয়াছিল। ইহা সরকারের একটি প্রয়োজনীয় বিভাগ 
ছিল। এই বিভাগ একজন অধীক্ষকের অধীনে থাকিত। তাহার বীজসংগ্রহ 
হইতে আরম্ভ করিয়। শম্ত উৎপাদন, ফসল সংরক্ষণ এবং শ্রমিক পরিচালনার 
গুরুভার কর্তব্য ও দায়িত্ব থাকিত। কৃষি-পরাশর €(আহ্মমানিক প্রথম শতক ) 
নামক একটি অমূল্য গ্রন্থে প্রধানতঃ ধান্ত-চাষ সম্বন্ধে এবং অপ্রধানতঃ কৃষি-সংক্রাস্ত 
অন্তান্ত বিষয়ে যথা আবহ পর্ধবেক্ষণ বিষয়ে আলোচনা আছে । আদিযুগে 
ভারতবর্ষে কষিবি্াতে কতখানি জ্ঞান ছিল এবং উন্নতি হুইয়াছিল এই গ্রন্থ সেই 
বিষয়ে আলোকপাত করিয়াছে । হলকর্ষণ সম্বদ্ধে একটি শ্লোক আছে £ হেমস্তে 
হলকর্ষণ স্বর্ণপ্রস্থ, বসন্তে তাত্র ও রৌপ্য, শ্রীক্মে শুধু শন্ক এবং বর্ষায় হলকর্ষণ 
ভয়াবহ দারিদ্র্জনক।৮ 

বীজবপন, রোপণ, শস্তকর্তন ইত্যাদি বিষয়েও অন্ুব্ধপ নির্দেশ আছে। 


প্রাণিবিস্ভা ঃ ভারতীয়গণ প্রাণীর্দিগকে, বিশেষ করিয়। পথ্যবিজ্ঞান, অর্থ নৈতিক 
জীবন, ওষধ,..চারুকলা, এবং ধর্মের তুলনায়, একটি প্রধান স্থান দিয়াছেন । 
গৃহপালিত এবং বন্ত উভয় প্রকার প্রাণীরই প্রকৃতি, জন্মস্কান, এবং বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে 
তাহাদের গভীর জ্ঞান ছিল। প্রাণীদিগকে অনেকভাবে. শ্রেণী বিভক্ত করিবার 
পন্থা প্রচলিত ছিল । চরকের মতে চারিটি প্রধান বিভাগ স্বীকৃত হইত £ 

(১) জরাযুজ- জরায়ু হইতে জাত ( যথ! মাহুষ এবং চতুষ্পদ প্রাণী )। 

(২) অণ্জ-__ডিদ্বাণু হইতে জাত (যথ। মৎস্য, সরীস্থপ এবং পক্ষীকুল )। 

(৩) ম্বেদজ__ আর্দ্রতা হইতে.জাত ( যথণ, কীট, মক্ষিক1 এবং মশক )। 

(৪) উদ্ভিজ্জ-_উত্ভিদ্‌ অঙ্গ হইতে জাত। 

যৌন-সঙগম ব্যতিরেকে জাত প্রাণীদিগকে ক্ষুক্্র জন্তও বল! হইত । তাহাদের 

জ্ঞ। এইভাবে নির্ধারণ কর] হইত, যেমন, প্রাণী যাহাদের অস্থি নাই ( অনস্থিক ), 


৬ 


প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধার। 


প্রাণী যাহাদের নিজেদের রক্ত নাই (যেবাং স্বং শোনিতং নাস্তি) বহু সম্তান প্রস্থ 
প্রজাতি এবং সেই সমস্ত প্রাণী যাহার] দমিত হয় না। 

পথ্যের প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার মাংস লক্ষ্য করিয়া! চরক পশু ও পক্ষীকে 
বিভিন্ন শ্রেণী বিভক্ত করিয়াছেন । এই শ্রেণী বিভাগের একটি ব্যবহারিক গুরুত্ব 
আছে। সুশ্রত এবং নাগার্জুন বিশেষ করিয়া! বিষ-বিজ্ঞান সম্পর্কেই সর্পকুলকে 
লক্ষ্য করিয়াছিলেন । ইহার! এবং ইহাদের শিষ্যবর্গ ছয় প্রকার পিপীলিক।, ছয় 
প্রকার মক্ষিক!, পাঁচ প্রকার মশক, ত্রিশ প্রকার বৃশ্চিক, এবং ষোল প্রকার 
উর্ণনাভের নাম করিয়াছেন। ভারতীয় শল্যচিকিৎসকগণ খুব আদিকাল হইতেই 
জলোৌকা ব্যবহার করিতেন ; স্থঞ্ত ইহাদের বিভিন্ন শ্রেণী, স্বভাব এবং প্রয়োগ- 
বিধি বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করিয়াছেন । প্রাণীবিগ্ধাতে ভারতীয়দিগের পাপণ্ডিত্যঃ 
প্রাণীদ্িগের জীবনসম্পর্িত বিভিন্ন ঘটনা ও তথ্যে বিজ্ঞানীদ্থলত কৌতূহলের 
একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শশ। পশুরোগসংক্রাস্ত বিজ্ঞানের মূলতত্বও ভারতীয়গণ বহু 
প্রাচীনকাল হইতেই জানিতেন। বলির জন্য ব্যবহৃত পশু যেমন ছাগ, মেষ, অশ্ব, 
এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় যে সমস্ত পশু যেমন হস্তী, ইহাদেরও প্রয়োজনীয় শারীরস্থান 
বিষয়ে ভারতীয়গণ বিশেষ ব্যুৎ্পত্ভি লাভ করিয়াছিলেন ; এবং খ্ৃঃ পূর্বব তৃতীয় 
শতকেই পশু চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল স্থাপিত করিয়াছিলেন । পশুদের অস্থি 
ভগ্ন হইলে এবং স্থানচ্যুত হইলে তাহারা ভগ্র অস্থি যুক্ত করিতে পারিতেন এবং 
স্বানচ্যুত অস্থি যথাস্থানে স্থাপিত করিতে পারিতেন ? পশুদিগের বিভিন্ন ব্যাধির 
চিকিৎসাও জানিতেন । 

উপলংহার ঃ €বজ্ঞানিক জিজ্ঞাসার মূলনীতি, এবং বিশ্বজগতে সংঘটিত প্রাকৃতিক 
ঘটনাবলী কার্য ও কারণ হ্ত্রে গ্রথিত করিবার দৃঢ় প্রয়াস, প্রাচীনকালের অগ্রসর 
জাতিগুলির মধ্যে গ্রীক ও অন্তান্ত জাতির মত প্রাচীন ভারতীয়গণের মধ্যেও 
বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। পদার্থের চুড়াস্ত গঠন প্রন্কতি, মৌল পদার্থের 
বিবর্ভন ও পৃথিবীর বিভিন্ন বস্তু গঠনে উহাদের সংযোগ» যৌগিক পদার্থের 
শ্রেণী বিভাজন, ইত্যাদি বিষয়ে একটি স্থনির্িষ্ট মতবাদ, মনে হয়, ভারতীয়গণই 
সর্বপ্রথম, তাহাদের নিজস্ব দূরকজী ভাবাতে প্রকাশ করিয়াছিলেন। নুম্ম ও 
উন্নততর পরিমাপ যন্ত্রের অভাব প্রগতির পথে প্রধান অস্তরায় ছিল ইহাতে 
কোনও সন্দেহ নাই । ইহাও সত্য যে, আবিষ্কৃত তত্বগুলি যে সমস্তই পরীক্ষার 
সাহায্যে প্রমাণিত হইয়াছিল তাহারও কোনে! লিখিত প্রমাণ নাই, তবু এই কথা 
বলিলে ভুল হইবে না যে পর্যবেক্ষণের সাহায্যে তথ্য আহরণ কবিয়া সেইগুলি 


৫৭ | 


গ্রাচা ও পাশ্চান্তা দর্শনের ইতিহাস 


বিশ্লেষণ ও পরীক্ষার উপরেই তাহাদের অবলম্বিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পূর্ণ নির্ভর 
করিত। 

প্রত্যেক বিভাগে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক পরিভাষাতে বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক গ্রস্থ রচিত 
হইয়াছিল | পদার্থবিছ্া, অঙ্যশাস্ত্র, রসায়ন, উত্ভিদবিদ্া, কৃষিবিদ্যা, পণ্ডচিকিৎস! 
বিজ্ঞান, ভেবজবিদ্া, এবং শারীরস্থানসহ শল্য চিকিৎসা প্রত্যেকটিরই স্বতন্ত্র 
মর্ধাদ। ছিল, এবং প্রত্যেক বিভাগে বিভিন্ন মতাবলম্বী কর্মী ছিলেন। তাহার! 
অবাধে একে অন্য বিভাগের কার্যাবলীর সমালোচন1 করিতেন। বিশেষ করিয়! 
শারীরস্কানবিষয়ক বিছ্ভাতে ভারতীয়গণ অন্ত বিভাগ অপেক্ষা একধাপ অগ্রসর 
হইয়াছিলেন। তাহার! শব-ব্যবচ্ছেদ করিতেন । শব-ব্যবচ্ছেদ এবং ধাত্রীবিদ্া 
ংক্রাস্ত অন্ঠান্ত বৃহৎ অস্ত্রোপচারের ফলাফল তাহার] ভ্রণবিদ্যাবিষয়ক অনুশীলনে 
ব্যবহার করিতেন । রোগলক্ষণনির্ণয় বিদ্ভাও যথাযথ এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের 
উপর মির্ভর করিত। ভৈষজ্যবিদ্াতে সেঁকোবিষ, পারদ এবং রসাঞ্জনের মত 
বিষাক্ত ওষধের সাফল্যের সঙ্গে নির্ভয়ে ব্যবহার পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন পারস্ত 
মেসোপটোমিয়া এবং মিশরের দৃষ্টি ও প্রশংসা অর্জন করিয়াছিল। এই সমস্ত 
দেশে ভারতীয় ভিষকৃগণ ও শল্য চিকিৎসকগণ সাদর অভ্যর্থনা ও বিশেষ সম্মান 
লাভ করিতেন । ধাতুবিদ্াতে ভারতীয়গণ অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করিয়াছিলেন 
এবং তাহাদের পরীক্ষালন্ধ জ্ঞান শিল্পের পরম উন্নতি সাধনে এবং রঞ্জকদ্রব্য, 
রাগত্রব্য, সুগন্ধপ্রব্য, ওষধ ইত্যাদি বহুল পরিমাণে উৎপাদনে সহায়ক হইয়াছিল । 
উত্তিদ্‌বিদ্ভাতে উত্তিদের শ্রেণী বিভাজন অনেকট1 বিধিসম্মত নহে এবং অগভীর ; 
কিন্ত প্রধানতঃ ভৈষজদ্রব্য ও কৃষির স্বার্থের জন্তই যে সমস্ত পর্যবেক্ষণ কর! 
হইয়াছিল তাহা অত্যন্ত বিচিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ । প্রাণিবিদ্াতে প্রজাতির শ্রেণী 
বিভাজন শারীরস্বানবিষয়ক বৈশিষ্ট্য হিসাবে না করিয়! প্রাণীদিগের বহিঃপ্রক্কৃতি 
ও জীবনযাত্রার পদ্ধতি অহ্সারেই করা হুইয়াছিল বলিয়া! মনে হয়। কিন্ত, প্রতিটি 
বিভাগে বণিত বিশদ বিবরণ হইতে দেখা যাইবে যে ভৌত বিজ্ঞানে প্রাচীন 
ভারতীয়গণের দানের স্থায়ী মূল্য আছে এবং এই ক্ষেত্রে অন্তান্ত জাতির তুলনায় 
ভারতীয়দিগের নিশ্চিত অগ্রগতি হইয়াছিল । এইন্ধপে একটি বৃহৎ জ্ঞানভাগ্ডার 
ক্রমে ক্রমে পরিপূর্ণ হইয়! উঠিয়াছিল ; কিন্ত এই জ্ঞান গ্রন্থে সংকলিত হইয়াছিল 
আরও পরে। 

ক্ষেপে, যদিও ভারতীয়গণের বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে বর্তমান যুগের 
অগ্রগতির তুলনা! কর! হুন্দরও নহে, শোভনও নহে, তবু সম্পূর্ণ স্তায়সঙ্গতভাবে 


$৮ 


প্রাচীন ভারতের বৈজানিক চিন্তাধারা! 


ইহা বলা যাইতে পারে যে সেই প্রাচীনকালে বৈজ্ঞানিক অহুসন্ধিৎস1 ও যুক্তিবাদের 
যে মনোভাব তাহাদের ছিল, বর্ডমানকালে বিজ্ঞানীদের মনোভাব তাহা হইতে 
মূলতঃ পৃথক নহে। | 


েষ্টুব্য 

১। দ্বাবিংশতি-বিধেো মন্দ্রো ধবনি £ সঞ্জায়তে হৃদি-_ সংগীত--সংগীত-সময়- 
সার, ১ স্বব্ষপ-মাত্র-শ্রবণান-_নাদোহুরণনম্‌ বিনাঃ শ্রুতির ইত্যুচ্যতে ।_- 
দামোদর, সংগীত-দর্পণ, ১ম পরিচ্ছেদ, শ্লোক ৫১। 

২। তন্ত্রী-তন্ত-স্বন্ধপো জ্ঞেয়ঃ তদ-দৈর্থ্য-ব্যস্ত-মানতঃ--শেষ-লীলাবতী, দেবল 
প্রণীত [71700 11115105] 5০৪16 গ্রন্থে উদ্ধৃত । 

ও। মধ্য-স্থান-স্থঃ সড়জঃ দ্বিগুণ-সমঃ - এ 

৪7; হারীত-সংহিত1, শরীর-স্বান, প্রথম পরিচ্ছেদ, পৃঃ ৩৪৪ সম্পাদক 
কৈলাশচন্ত্র সেন, কলিকাতা” ১৮০৭ 

& | মন্রসংহিতা ১, ৪৯। 

৬। মহাভারত, শাস্তি পর্ব । 

৭ | এ 

৮। “হেমস্তে ক্ষ্যতে হেম, বসন্তে তাত্র-রৌপ্যকম্‌ 

ধান্ম নিদাঘ-কালে তু, দারিপ্র্যস্ত ঘনা"গমে |” 


গ্রন্ছবিবরণী 

সার্টন, জর্জ : ইন্ট্রোভাকৃশন টু দি হিষ্রি অব সায়েন্স, ১ম ও ২য় খণ্ড ( কার্ণেগী 
ইনষ্িটিউশন অব ওয়াশিংটন পাব্লিকেশনস্‌ ১৯২৭ ) 

ড্যাম্পিয়ার, সার উইলিয়ম্‌ সেসিল্ঃ দি হিষ্রি অব সায়েন্স (কেমব্রিজ 
ইউনিভাসি”টি প্রেস, ১৯৪২ ) 

সামার, ডব্রিউ, এল্‌ হ প্রোখ্রেস অব সায়েন্স (ব্ল্যাকওয়েল, অক্সফোর্ড, ১৯৪২ ) 

মেয়ার, ইঃ এ হিষ্ট্রি অব কেমিস্ট্রি ক্রম দি আলিয়েস্ট টাইমস টু দি প্রেজেন্ট ডে, 
(ম্যাকমিলান, লগ্ন ১৯০৬ ) 

ধর্প, সার এডওয়ার্ড £ এসেজ ইন্‌ হিস্টরিক্যাল কেমিস্ট্রি (ম্যাকমিলান 

লগ্ন ১৯২৩ ) 


$৯ 


চা ও পাশ্চাত্য মর্শদের ইতিহাস 


জীন্স্‌£ দি গ্রোথ অব ফিজিক্যাল সায়েব্স ( কেমব্রিজ ইউনিভা্সিটি প্রেস ১৯৪৮) 

মদ্ভুমদার, জি, পি £ বনম্পতি প্্যাণ্টস্‌ আ্যাণ্ড প্র্যান্ট, লাইফ আযাজ ইন্‌ ইগ্ডিয়ান্‌ 
টরীটিজেস্‌ আ্যাণ্ড ট্র্যাডিশন্স্‌ (হিফিথ, মেমোরিয়াল প্রাইজ এসে, 
ক্যালকাট1 ইউনিভাপিটি, ১৯২৭ ) 

মুখোপাধ্যায়, গিরীন্্রনাথ £ হিষ্্ি অব ইশ্ডিয়ান্‌ মেভিসিন্‌ ফ্রম দি আলিয়েস্ট 
এজেস্‌ টু দি প্রেজেন্ট টাইমস্‌ ১ম, ২য় ও ৩য় খণ্ড ( গ্রিফিথ, মেমোরিয়াল 
প্রাইজ এসে; ক্যালকাট। ইউনিভাপ্সিটি ১৯১১) 

রায়, সার পি, সি £ হিষ্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি ১ম ও ২য় খণ্ড (বেঙ্গল কেমিক্যাল 
আযাণ্ড ফার্মশাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস্‌ ১ম খণ্ড ১৯০২১ ২য় খণ্ড ১৯০৯) 

শীল, ডাঃ বি. এন £ পজিটিভ সায়েন্সেস অব দি এনশিয়েণ্ট হিন্দুজ (লঙ্গম্যান্স্‌ 
গ্রীণ আগ কোং ১৯১৫) 

সরকার, বিনয় কুমার £ হিন্দু আচীভমেন্টস্‌ ইন্‌ এগজ্যাক্ট সায়েন্স ( লঙগম্যান্স্‌ 
গ্রীণ আগ কোং ১৯১৮) 


৩ 


অপ্রদশ গরিচ্ছেদ 
ভারতীয় সৌন্দধতত্ব 
ভূজিক" 


ভারতীয় দৃষ্টিভঙগীতে ত্বদ্বরের উপলব্ধির আলোচনায় লৌন্দর্যতত্ব বলিতে 
একটি ছুর্বোধ্য বিজ্ঞানকে নিছক ছৃর্বোধ্য বলিয়1 বুঝায় না। বৌম্গারটেন যেমন 
মনে করিতেন যে ইহা অনুভূতির বিষয়মাত্র এবং উপযুক্ত শব্দের মাধ্যমে 
উপস্থাপনযোগ্য নহে, ইহা! তদ্রপ নহে। হেগেলের মতে সুকুমার কলাবিগ্ভার 
দর্শন বলিতে যাহ বুঝায়-_- ইহা! তদ্রপও নহে । সুন্দর বলিতে সর্বজনব্যবন্ৃত যে 
তাৎপর্য, তাহ! শিল্পকলাতেই হউক ব! প্রক্কৃতিতেই হউক, সেইন্ধপ সৌন্দর্যবাদও 
ইহা নহে। বর্তমান প্রসঙ্গে ইহা স্কুমার কলাবিদ্ভার বিজ্ঞান এবং দর্শন অর্থেই 
ব্যবহৃত হইতেছে (১) ইহাকে এই অর্থে সুকুমার শিল্পবিজ্ঞান বল! যায় যে শিল্পের 
সমন্যাসমূহ বলিতে প্রথমে শিল্পের অনুশীলন সংক্রাস্ত উপকরণসমূহের সমস্তাই 
ধর! হইয়াছে । যে সমস্ত গ্রন্থে শিল্পের দর্শন আলোচিত হইয়াছে সেইখানে তাহার 
অন্থশীলনসংক্রান্ত উপকরণ সমুহেরই আলোচনা কর! হইয়াছে । তবে ইহার 
সঙ্গে দর্শনের ঘনি্ সম্পর্ক রাখ! হইয়াছে । (২) হইহাকে সুকুমার 'শল্পবিদ্ভার 
দর্শন বল! হইয়! থাকে এই অর্থে যে একজন সৌন্দর্যতত্বনিষ্ঠ উপতোক্তার মনে 
একট শিল্পকার্ধ যে অনুভূতি জাগায়- ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের 
মতাহৃযায়ী তাহার কারণ প্রদশিত হইয়াছে এবং কাব্য, সঙ্গীতকল! ও স্থপতিবিদ্ধা 
এই তিনটি শিল্পকলার প্রামাণিক গ্রন্থাদিতে এই মত ব্যক্ত করা হয় যে তাহাদের 
মতে পরমতত্ব বলিতে যাহা! বুঝায়ঃ শিল্পকলার অহ্ভূতিও তাহাই জাগায়! 
দিয়া থাকে । এইভাবে শিল্পের দর্শশসন্বন্ধীয় তিনটি সম্প্রদায় বিদ্ধমান আছে-_ 
(ক) রসত্রক্ষবাদ, (খ) নাদব্রন্ষবাদ ও (গ) বাস্তব্রক্ষবাদ (৩) সুকুমার শিল্প এই 
অর্থে বল হইয়! থাকে যে স্বকুমার শিল্পের একটা নিজস্ব মূল্য স্বীকৃত হইয়া থাকে, 
কেন না এই শিল্পস্প্টি এমন একট! অন্ভূতি জাগায় যাহ! প্রাকৃতিক কোনও 
পদার্থ জাগাইতে পারে না-যদি তাহাকে শিল্পকার্ধ বলিয়া ধরা না হয়। 
আরও কারণ এই যে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও যাস্ত্রিকশিল্প সকল হুকুমার কলা হইতে 


৬১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


পৃথক বলিয়! বিবেচিত হয় এবং দার্শনিক আলোচনা এই শেষোক্ত শিল্পসম্বদ্ধেই 
করা হুইয়াছে। | ৃ 


জমন্যণ দমাধানের উপযোগ্গী বিভি্ন হ্টিভজী 

সৌন্দর্য্যতত্বের বিষয়টিকে শিল্পসংক্রাপ্ত তত্ববিদ্ভাসংক্রাস্তঃ মনস্তাত্বিক, 
ভ্ঞানসন্বন্বীয়, যৌক্তিক ও সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গীতে উপস্থাপিত কর! হইয়াছে । 

অর্থ-তত্ব ভারতীর সৌন্দর্যতত্তবের একটি অত্যাবশ্টক অঙ্গ । শিল্পের গঠন- 
সংক্রান্ত বিচারে শিলাখণ্ড, চিত্র, সঙ্গীতের ধবনি, ভাষাতত্বঘটিত শব্দাভিব্যক্তি এবং 
মানবদেহ প্রভৃতি বিভিন্ন মাধ্যমের মারফতে শিল্পকার্য স্প্টির উপায় ও পথ 
আলোচিত হইয়াছে। শিল্পকার্ষের উপস্থাপ্য বিষয় তাহার আধেয় বস্ত এবং 
ইহা যে চরম অনুভূতি জাগায় তাহার স্বরূপ তত্ববিদ্ভার দৃষ্টিতে আলোচিত 
হইয়াছে । মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সৌন্দর্যযতত্বনিষ্ঠ উপলব্ধির বিভিন্নম্তরে মনন্তত্বের 
ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যাত হইয়াছে । জ্ঞানসন্বন্বীয় দৃষ্টিতঙ্গীতে নিম়োক্ত 
বিষয়সমূহ পর্যালোচিত হইয়াছে_-(১) সৌন্দর্যততৃমূলক বিষয়ের সঙ্গে সৌন্দর্য- 
তত্বনিষ্ঠ উপজোক্তার সম্বন্ধের প্রকৃত স্বরূপ ; (২) সৌন্দর্যতত্বনিষ্ঠ বিষয়ের প্রতিন্নপ- 
প্রদর্শনের ব্যাখ্যার জন্ত এবং কোন শিল্পকার্ষে মূর্ত অহুভভূতির অন্থব্ূপ অহ্ভূতি 
সৌন্দর্যাহুতবকারীর মনে কেমন করিয়! জাগে তাহার ব্যাখ্যার জন্ত আবশ্যক 
মানসিক অবস্থাসমূহঃ (৩) দর্শকের মনে সৌন্দর্যতস্ববিষয়ক ধারণার ক্রমবিকাশের 
অবসরে যে সমস্ত মানসিক বৃত্তি কার্যকরী থাকে, (৪) এ প্রকার বৃত্তিসমূহের 
. সঙ্গে ব্যবহারিক স্তরে কার্ধকরী বৃত্তিসমূহের প্রভেদ ; (৫) সৌন্দ্ধতত্ববিষয়ক 
উপলব্ধির ব্যাপারে সৌন্দধের বিষয় ও বিষয়ের উপভোক্তার স্বকীয়ত্বের উপাদান 
সমূহ ও তাহাদের পাথিব ও অপরাপর বাধার পরিহার । যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গীতে 
সৌন্দর্যতত্ববিষয়ক বিচারকে (ক) অত্রাস্ত (খ) ভ্রান্ত (গ) সন্দিপ্ধ এবং (ঘ) মায়িক 
প্রভৃতি ব্যধহারিক বিচার হইতে পৃথকৃ করিয়া দেখা হয়। আর সমালোচনার 
দৃষ্টিভঙীতে-_ 

(১) শিল্পের উদ্দেশ্যের দিক দিয়! (২) শিল্পী এবং (৩) সৌন্দর্বতত্বনিষ্ঠ 
উপলন্ধিকারীর দিক দিয়াও ইহ! আলোচিত হইয়াছে । শিল্প সম্বন্ধে প্রাচীনতম 
মতবাদসকল--তাহা ভোগ-ম্থখ-বাদী মতই হউক অথবা শিক্ষকোচিত মতই 
হউক অথব। নীতিনিষ্ঠই হউক, শিল্পের উদ্দেস্টের দৃষ্টিতঙ্গীতে_কি উদ্দেশ্টে 
শিল্পের সহি হইয়াছে, তাহার সমন্তা আলোচনা করিয়াছে । শিল্পীর দিকৃ 


৯১০ 


ভারতীয় সৌন্বর্যতন্থ & 


দিয় (১) অহৃকরণবাদ, (২) মায়াবাদ এবং (৩) আদর্শাকরপণবাদ প্রভৃতি যতবাদ 
উপস্থাপিত হইয়াছে । এ সকল মতবাদ প্রদর্শন করে যে, যে বস্তু শিল্পীকে অহ্থপ্রেরণ| . 
দান করে, তাহা লইয়া! শিল্পী শিল্পসঙ্গত উপায়ে কিভাবে কাজ করিয়] যায়। 
সৌন্বর্য-উপভোক্তার দিক্‌ দিয়াও অহুন্বপভাবে শিল্পকলাকে (১) মোতপ্রাপ্ত জ্ঞান বা 
যে জ্ঞানের শ্রেণীবিভাগ করা যায় না এমন জ্ঞান (২) অহ্মান, (৩) আবেগের 
বহিঃপ্রকাশ (৪) রহস্তোপলন্ধি বলিয়। ব্যাখ্যা করিয়া বিভিন্ন মতবাদ রহিয়াছে । 
এর সকল মতবাদ শিল্পকার্ধ সৌন্দ্য-উপতোক্তার মনে যে অনুভূতি জাগায় তাহার 
স্বরূপ এবং যে উপায়সমূহদ্বারা তিনি সেই উপলব্ধি লাভ করিয়া! থাকেন, 
তাহা! প্রতিপাদ্দিত করে । 


ইতিহাদ এবং লাহিত্য 

নাট্যশান্ত্রেরে ছইখানা গ্রন্থের কথ! পাণিণি (৩া৩।১১০-১১১) উল্লেখ 
করিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে একটি শিলালিকৃত অপরটি ক্ৃশাশ্বকৃত। ইহা 
স্বার! প্রতিপাদিত হয় যে, গ্রীস দেশে নাট্যকলার উদ্তবের বছপুর্বেই ভারতবর্ষে 
নাট্যকলা বিদ্যমান ছিল । 

যেহেতু শ্রন্থদ্বয় নষ্ট হইয়া গিয়াছে এবং ইহাদের ুরুদ্ধারের আর কোন 
সম্ভাবনা নাই, সেই জন্ত ভরতের কাল হইতেই আমর! নাট্যশান্ত্রের ইতিহাসের 
আরভ্ভ গণনা করিব। তাহার গ্রন্থ বর্তমানে প্রাপ্ত নাট্যশান্ত্র সমূহের মধ্যে 
প্রাচীনতম । (১) শাঙ্গদেবকৃত সঙ্গীতশাস্ত্রসঘ্বন্ধীয় গ্রন্থ সঙ্গীতরত্বাকার (২) 
স্বপতিবিদ্যাসন্বন্ধীয় ভোজরাজকৃত গ্রন্থের সমরাঙ্গণ-স্ত্রধার নামক মু্তিশিল্প- 
বিষয়কখণ্ডে ভরতকে নাট্যশাস্ত্রস্বন্ধে প্রামাণিক গ্রন্থকার বলিয়! স্বীকার কর 
হইয়াছে । ভোজরাজ প্রায় ভরতের 'নাট্যশাস্ত্রের (নবম অধ্যায়) ভাষাতেই 
হস্তসক্ষেত প্রভৃতির বর্ণন| করিয়াছেন এবং চিত্রবিদ্যা প্রসঙ্গে রসঘৃষ্টি সম্বন্ধে তাহার 
অভিমত প্রায় ভরতের কথাতেই অভিব্যক্ত করিয়াছেন (অইয় অধ্যায় )। 


নাটক 


নাটকের প্রসঙ্গে সৌন্্যতত্বের ক্রমবিকাশের ব্যাপারে প্রথম সাড়ে তিনশত 
বৎসরে, অর্থাৎ ভরতের সময় (খুষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী ) হইতে ভট্ট লোল্লটের 
(খ্বঃ ৮৫০) কাল পর্যস্ত, সৌন্দর্যতত্বের বিষয় ছিল মুখ্যতঃ শিল্পসংক্রান্ত । বস্তরতঃ 
ভরতের নাট্যশাস্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য হইল নাটকল্্টি সম্বন্ধে নাট্যকার, হ্ত্রধার ও 
অভিনেতৃবর্গকে উপদেশদান করা এবং নাটকের আবশ্যক উপাদান কি কি ও 


৬৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চান্ত্য দর্শনের ইতিহাস 


রঙ্গম্চে উহ! প্রদর্শনের উপায় ও উপকরণ কি- সেই সম্বন্ধে নির্দেশ দান কর]। 
আধুনিক মনীষিগণের মনে যে সমস্ত সমস্ার উদ্ভব হইয়াছে_-তিনি সেই সব 
বিষয়ের সমাধানেরও চেষ্টা] করিয়াছেন । 

(১) তাহার অভিমত এই যে, সৌন্দর্যোপলব্ধির ব্যাপারে চক্ষু এবং কর্ণই 
উপযুক্ত ইন্দ্রিয়। এই বিষয়ে তিনি নাপিকা, জিহ্বা ও ত্বগিন্দ্রিয়ের উপযুক্ততা 
অস্বীকার করিয়াছেন। এই বিষয়ে সেন্ট টমাস, গ্যাডিসন এবং ক্যান্ট প্রভৃতি 
পাশ্চাত্য সৌন্দর্যতত্বৃজ্ঞ মনীষিগণ একমত । 

(২) তাহার মতে নাট্যকলার উদ্দেশ্য হইল দর্শকের নৈতিক অভ্যুন্নতি । অবশ্য 
তাহা মুখ্যভাবে অভিনেতৃবর্গের মুখে প্রদত্ত কোন উপদেশের মারফতে হয় না 
তাহা 'হইয়। থাকে গৌণভাবে, যখন দর্শক নাটকীয় ঘটনার কেন্দ্রীভূত বিষয়ের সঙ্গে 
নিজের মনের এক্য স্থাপন করিয়! সৎপথের উপকারিতা! উপলব্ধি করিয়া থাকেন । 

(৩) তিমি এই অভিমত পোষণ করেন যে, নাটকাভিনয় দর্শনদ্বার| জাত 
অনুভূতির মধ্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ আনন্দকে অস্বীকার কর] যার ন1। অবশ্য ইহা! প্রারভ্িক 
বিষয় মাত্র | হ্থুতরাং পৌন্দর্যতত্ববিষয়ে যাহাকে ভোগস্ুখবাদ বল। যায় এবং যাহ 
অবলম্বন করিয়! প্রেটে। তাহার রিপাবৃলিক নামক গ্রন্থে শিল্পকলার নিন্দা করিতে 
প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন এবং শিক্ষকতাবাদ_-যাহার দ্বারা আরিষ্টটল্‌ শিল্পকলার সমর্থন 
করিতে চেষ্টা! করিয়াছিলেন--ভর ত এই ছুই মতের সমন্বয় সাধন করিয়াছেন । 

(৪) রঙ্গমঞ্ধে স্ত্রীলোকের উপযোগিত! তিনি স্বীকার করিয়াছেন । 

(৫) নাটকোত্ভুত সৌন্দর্যাহ্বভূতির জন্য যে সকল মানসিক অবস্থার প্রয়োজন 
তাহা তিনি বিবৃত করিয়াছেন | তাহাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা! প্রয়োজনীয় হইল 
অভিনীত বিষয়ের যিনি কেন্ত্র-_তাহার সঙ্গে নিজের অবস্থার এঁক্য সাধন করার 
সামর্থ্য । 

(৬) তাহার মতে (ক) আঙ্গিক, (খ) বাচিক, গে) সাত্বিক ( আভ্যন্তরীণ ) ও 
(ঘ) আহার্য (বহিরঙ্গ বা কৃত্রিম )__এই চারিপ্রকার অভিনয়ের দ্বারা নাটক রস 
পরিবেশন করিয়! থাকে । 

(২) দৃশ্ঠপটের ব্যবস্থা নাটকাভিনয়ের পক্ষে অত্যাবশ্ঠক - এইটি তাহার মত। 


সৌম্দর্ম'সুডুতির বিষয়ন্মণপে রদ 


নাট্যকার কর্তৃক উপস্থাপিত বিষয়ই হইল রস। রস সোন্দর্ধাহভূতির 
আন্বান্চ বিষয় । প্রকৃতির স্ষ্ট বিষয়-সকলের মধ্যে ইহ] পাওয়1 যায় না। ইহা 


৬৪ 





নি পু নরাজগাগার্ী মগের একটি সারিকার; 
হ্ছপ এন্‌ বহুত মধো ্রফ্য লারক। ইহ) বিয়োক্ত ভাখ শহৃহেষ এয 
স্থাপনের দ্বার! একটা! পুরা দপ দিয়! থাকে । €১) মনের স্থা্লিক্তাবের খুল 
কারণ (1) কপ মহৃয্যের ক্রিয়া দ্বার! শুষ্ট আবেগজনক ব্নবস্থা। (বিভাব ) 
(২) . মলে উদ্ভূত স্বাক়িতাবের দ্বারা অস্প্রেরিত এবং আভ্যন্তরীণ অবস্থার 
নির্দেশক দনুকারী ক্রিয়! (অহুভাব ) এবং (৩) অস্থায়ীভাব ব্যতিচারিতাব। 

“এই পূর্ণাঙ্গরূপের অবস্থার মধ্যে মনের স্থায়িভাবই হইল কেন্ত্রীভৃত এবং 
সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অবশিষ্টগুলি হইল মাত্র সঙ্গীয়তাব-_-অনেকটা! যেমন 
রাজার সঙ্গে রাজার তহুচর ও সাজ-সজ্জা প্রভৃতি । ইহারা মনের স্থাকিস্াবের 
প্রাধান্থপ্রাস্তিতে সাহায্য করিয়া থাকে এবং ই স্বায়িতাবই দর্শকের পে 
আকর্ষণের কেন্ত্রত্বরূপ | 

যে নাটকীয় ঘটনাকে অবলম্বন: চির অভিনেত1 নায়কের ভূমিকায় খবতীদ | 
হর্ন লেই নাটকীয় ঘটনাকে রঙ্গমঞ্চে উপস্থাপিত এবং দর্শককর্তৃক অহ্ুস্থৃত ্বারি- 
তাবের কারণ বল! যায় না। দর্শকের মনে যে আন্দোলন , অনুভূত হয় এই 
ঘটনাকে তাহারও কারণ বলিয়! নির্দেশ করা যায় না। অভিনেতা যে এরতিহাসিক 
চরিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন--তাহার সঙ্গে এ্রতিহাসিক ঘটনার সম্পর্থ 
যতটা হয় ততটা অভিনেতার সঙ্গে নহে এবং দর্শকের সঙ্গেও নহে । উদাহরণ | 
স্বক্পূপ বল! যাইতে পারে যে ধতিহাসিক চরিত্র হিসাবে সীতাকে প্রেষপাত্রীরূপে 
অতিনেতাও যেমন মনে করিতে পারে না দর্শকও তেমন পারে ন1। কেন মা 
ধতিহালিক চরিত্রের সম্পর্কে ধর্মীয় ধারণ! ব্রন্ধপ ভাবের উদয়েব পরিপর্থী ; 
পক্ষাস্তরে,উহা! শূঙ্গার হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্‌ ভাব- শ্রদ্ধা! এবং ভক্তির উদ্রেকে সহায়তা 
করে। কারণের অন্তিত্বাভাবে কার্ষের অজ্তিত্ব থাকিতে পারে না। গতর 
অভিনেতা অভিনয়কালে মুখভাবের যে পরিবর্তন ও অন্তান্ত যে সকল পরিবর্ডন 
করিয়! থাকেন, গুলিকে শৃঙ্গার ভাবের ফল বলা যাইতে পারে না । অভিনেতা 
ব্যণিচারিভাবের স্কুল লক্ষণ ও ভাবভঙ্গীসকল প্রকাশ করিতে পারেন কিছ্ক নেই: 
ব্যভিচারিভাব সমূহকে ও স্থায়িভাবের. অপরিবর্তনীয় সহযোগী বলা ধাইতে পারে 
না। সমগ্র পরিবেশটা হইল একটী বাহন যাহার মারফতে অতিনেতা তাহা. 
মানসিক আবেগকে সর্বোচ্চগ্তরে পৌছাহ্য়া দেস। অভিনেতাকর্তক 'রঈমক্ষৈ: 
উপস্থাপিত ভাঁবাবেশের সঙ্গে পরিবেশ, আঙ্গিক পরিবর্তন ও অপযিবর্ী” 
 সহযোগিদের' সম্পর্কের - পার্থক্য দেখাইবার জন্তই, উহাদিগকে কারণ, ফা এবং 


৬ 


খাছ ও গশ্গিতা, বর্শরের ইতিহাল 
নিত্যল্হস্কোগী . বলা ই নাই। তৎপরিবর্তে উহ্াদিগকে বিভা, আতা ১9 
ব্যক্চিচারিক্ঞাব- এই সফল পারিভাষিক নাম দেওয়া হইয়াছে! - তি. 
- স্কার্শনিক হৃিভঞ্লপিতে আলোচনা 
দ্বার্শনিক ষ্টিভঙ্গীতে যে সকল চিন্তাশীল মনীবী শিল্পের সমস্তাবলী আলোচনা 
করিয়াছেন, তাহাদের অধিকাংশই কাশ্সীরের অধিবাসী । তাহার! (১) ভ্তায়, 
(২) সাংখ্য, (৩) বেদাস্ত এবং (৩) কাশ্মীরের অদ্বৈত শৈববাদ-এই চারিটি 
মতবাদের দৃষ্টিতঙ্গীতে এই সমন্তা সমাধানে চেষ্ট। করিয়াছেন । 


ভউলোল্লট (খু: ৮৫*) 

: রসন্মত্রের আলো[চন। প্রসঙ্গে অভিনব ভারতীতে ভট্ট লোল্লটের নাম উল্লিখিত 
হইয়াছে । আলোচ্য বিষয়ে তিনি সর্বপ্রাচীন টীকাকার | তাহার দৃষ্টিভঙ্গী 
একান্তরূপে ব্যবহারিক। দর্শকের মনে রসের উৎপত্তির কোন হেতু প্রদর্শন 
করিতে তিনি চেষ্টা করেন নাই। তাহার মনে ছুইটি প্রশ্ন ছিল, (১) রসের 
উপাদান সমূহের প্রক্য সংঘটিত হয় কোথায়? এবং (২) যে রস বহুত্বের মধ্যে 
একত্ব--সেই রসের অভ্যন্তরে তাহার বিভিন্ন উপাদান কিরূপে পরস্পর সম্বন্ধ 
থাকে?! তিনি জানিতেন যে বহত্বের মধ্যে একত্ব একটি মনোঘটিত রচন1। 
সুতরাং তাহ] শুধু মাহষের মনেই সম্ভবপর | তদহুসারে প্রথম প্রশ্নের উত্তর দ্রিতে 
যাইয়! তিনি বিবৃত করিয়াছেন যে মুখ্যতঃ রস এতিহাসিক মৌলিক চরিত্রের মধ্যেই 
রহিয়াছে এবং শুধু গৌণভাবেই তাহ! শ্রতিহাসিক ব্যক্তির ভূমিকায় রঙ্গমঞ্চে 
অবতীর্ণ অভিনেতার মনে বর্তমান থাকে । তাহার কারণ নিয়়োক্তব্ূপে বর্ণনা 
কর] যাইতে পারে । 

যদ্দিও সাধারণভাবে মনের স্থায়িভাবের তখনই সম্ভব হয় যখন তাহার প্রকৃত 
কারণ বিদ্ধমান থাকে-_-তথাপি অভিনেতা তাহার শিক্ষা এবং রঙ্গমঞ্চের নাটকীয় 
পরিবেশের সাহায্যে কবিকল্পিত চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে এমনভাবে একাত্ম করিয়! 
লইয়া থাকেন যে তিনি ঠিক কবিকল্লিত ব্যক্তির অহ্করূপ কার্য; গতিবিধি ও 
অন্থস্থৃতির হ্বারা কবিকল্পিত ব্যক্তির মধ্যে কবি যে ভাবাবেগের সংযোজন! 
করিয়াছেন--তাহার অন্ুক্ধপ ভাবাবেগ উপলব্ধি করিয়া থাকেন। রহস্যতত্বের 
প্রতীকের ষঙ্গে রহন্ততত্বাহ্ৃভূতির যে সম্বন্ধ? অভিনেতার মনের স্থায়িভাবের সঙ্গে 
লাটরীয় পরিবেশের (বিভাবের ) সম্বন্ধ তাহার অনুরূপ । এইরূপে ভষ্ট লোলপটের 
মতে লৌন্ধর্যত্ত্বের বিয়য় হইল-_ব্যভিচারিভাব প্রভৃতি বহুত্বের মধ্যে স্থায়িভাবের 


৬৬ 


ভারতীয় দৌনসরধব 


প্রক্য সাধন। এই বহদে উপাদান সমূহের ০০০ 
কত ও দৃীকত হয় অধ প্রধান পরাত হয় | ৃ 
শিল্পকলাতে মায়াবাদ সরি 
শিল্পের ইতিহাসের প্রাচীনতম সময়ে সর্বত্র অস্থকরণকে শিল্পমঙ্গত বর নীতি 
বলিয়! স্বীকার কর! হইয়াছে । অহ্ৃকরণ যখম সর্বাপেক্ষা বেশী সাফল্য লা করিয়া 
থাকে তখন তাহ! মায়ার স্থষ্টি করিয়া থাকে। পাশ্চাত্য দেশে কূটতাফিক গঞ্জিয়াস 
শিল্পে মায়াবাদ মানিতেন। প্লেটো উপরি উক্ত মত গ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া 
শিল্পের নিন্দা করিয়াছিলেন। শিল্পকার্য মায়ার স্ষ্টি করে ও ইহার দ্বারা গুণ 
ব্যক্তি শিল্পস্ৃষ্টিকে প্রকৃতির স্থষ্টি যনে করিয়া বিভ্রান্ত হন এবং ইহ প্রক্কতির সৃষ্টির 
অনুরূপ দৈহিক ও মানসিক সাড়! জাগায়- শিল্পে এই মতবাদ ভট্টলোল্ল্টের উপর 
আরোপিত হইয়া থাকে । ম্থতরাং এইরূপ বল! হইয়! থাকে যে ভট্টলোল্লট এইক্সপ 
অভিমত পোষণ করেন যে- শুক্তির শুত্রতাদর্শনে রজতপ্রাপ্তির সময়ে যেমন মুহূর্তের 
জন্য যথার্থ রজতের অহ্ভূতি জাগে-সেইন্প এতিহাসিক চরিত্রের নাট্যোচিত 
প্রদর্শনের বিষয়নিষ্ঠ উপলন্ধি দ্বার অল্প সময়ের জন্য যথার্থ এরতিহামিক চরিত্রের 
দর্শনে জাত অহ্থভূতির অহ্ুর্ূপ একটা চমৎকার অঙ্ুভূতি জাগিস! থাকে, .কারণ 
দর্শক মনে করেন যে নাটকীয় পরিবেশের কেন্দ্রীভূত নায়কের মধ্যে একটি স্থায়িভাঁব 
রহিয়াছে__যদিও বস্তুতঃ তাহ! তথায় নাই। 
এই মতবাদের সমালোচনায় বল! হয় যে, যদ্দি শিল্পকল1 মায়ার সৃষ্টি নিত 
তবে ইহা লোকের মনে দাধারণ ভাৰ ও সাড়া জাগাইত। এইন্ধপ স্বীকৃতির 
দ্বারা শিল্পকলার যে একটা! স্বতন্ত্র মূল্য আছে-_-তাহাকে অন্বীকার কর! হয়। ইহার 
স্বার! সমস্ত করুণাত্বক দৃশ্যের উপস্থাপনার নিন্দা কর! হয়। কারণ আমাদের 
স্বীকার করিতে হয় যে এইরূপ দৃশ্ঠট দর্শনে আমাদের মনে ছুঃখের অতি গীড়াদায়ক 
অনুভূতি-সমুদয়ের উদয় হইয়। থাকে এবং তাহ! কখনও আ্বাগ্ধ হইতে পারে না। 


ন্যায়ের দৃষ্টিতজী'তে সৌন্দর্যতত্ত 
শ্রীশ্কুক থবঃ ৮৬০) ভ্যায়ের দৃষ্টিভগীতে এই সমস্তা সমাধানের চেষ্ট। করিয়াছেল। 
তিনি অহ্করণাহ্থমানবাদের মারফতে সৌন্র্ধতত্বাহভূতির ব্যাখ্য! করিতে টেষ্টিত 
হইয়াছেন। তাহার অভিমত এই যে উপস্থাপিত বিষয়নিষ্ঠ-উপলন্কিই সৌন্দর্যতস্ব- 
নিষ্ঠ অঙ্তূতির হেতু এবং উপস্থাপিত স্থায়িভাবের মধ্যেই ইহার সত্তা । সৌন্দর্য- 
উপভোক্তার মধ্যে ইহ! কিরধূপে আবিভূর্তি হয় ইহাই ছিল তাহার সমস্ত । কারণ 


১১৬ 


। 
॥ 


| পাচা ও খাশ্াত্য বর্গের ইতিহাস | রর 
শিক্পলঙ্গত উপস্থাপনার অঙ্গান্ত উপাদান পকলকে বে ভাবে খ্বীকৃতি দেওয়া ধার, 


.উহার-কেন্ত্রীভৃত বন্ত যে স্থারিভাব তাহাকে সেইভাবে স্বীকার করা যায় না 


্ 


ৃ কারণ ইহা! একটি মানসিক অবস্থা মাত্র-হ্বতরাং কোন বস্তনিষ্ঠ উপলবির ৃ 


স্বীকৃতি পায় না। গ্ৃতরাং তাহাকে অস্থমানবাদ উপস্থাপিত করিতে হইয়াছে। : 
সাহার অতিমত এই যে, নাটকীয় পরিবেশ (বিতাব ) অন্থতাব, ব্যতিচারিক্াব 
ও ্থান্লিতার _ এই লবগুলিই সৌন্দর্ধাহ্থভূতির পহায়ক জ্ঞানের আধেয়বস্ত নহে, 


'পরদ্ধ কেবলমাত্র স্থায়িভাষ। তিনি বলেন যে নাটকীয় শিল্পের উপস্থাপনার 


'ছুইটি প্রধান উপায় রহিয়াছে-(১) ভাষা এবং (২) অভিনেতৃবর্গের শারীরিক 


এবং মানসিক শিক্ষা । এই দুইটি অন্ত সকল কলার সাহায্যে একটি এ্তিহামিক 
চরিত্রকে এমন ভাবে উপস্থাপিত করিতে পারে যাহাতে দর্শক মনে করেন যে এই 
শিল্পমঙ্গত উপস্থাপন] 'খাটি | তিনি মনে করেন যে এই গুলির সাহায্যেও স্থায়ি- 


ভাবকৈ ততটা বস্তনিষ্টক্বপে প্রদর্শন করা যায় না। স্বতরাং ইহার উপস্থাপনার 


উপায় হইল--অহ্করণ। কিন্ত তিনি তাহার উক্তির তাৎপর্য পরিস্ফুট করেন 

মাই। ূ 
অতএব তাহার (১) অভিমত এই যে, (১) কোন একটি স্বায়িভাঁবের 

(ক) কারণ--বিভাব (খ) কার্ধ-_অস্ভাব (গ) নিত্যসহযোগী-_ব্যভিচারিভাব-- 


" এরই তিন প্রকার নিমিত্ত রঙ্গমঞ্চে যথাযথভাবে উপস্থাপিত হইলে--ইহাদের 


হইতে অনুমিত যে স্থায়িতাব দর্শকের চেতনায় জাগে সৌন্দর্যানুভূতি হইল 
এইরপ একটি অহক্কত স্বায়িভাবের উপলন্ধি। (২) এই অনুক্কত স্থায়ভাব 
যাহ! অমিত, তাহা রস বলিয়! অভিহিত হয়| তাহার কারণ শুধু এই যে, 
উহ! রামের মত একজন “খাটি? নায়কের ধ্থাটি” স্থায়িতাবের অহ্ৃকরণ। আরও 
কারণ এই যে একটি অতি মনোরম পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হইয়| ইহার 


একটি বিশিষ্ট যাধূর্য বৃদ্ধি পায় এবং দর্শকের মনে ইহা! একটি আনন্দদায়ক অবস্থায় 
পরিণত হইয়া থাকে । 


চিত্রের প্রভাব 


+ নাটক্ষীয় উপস্থাপনায় সৌন্দর্যাহসুতির হ্বন্মপ ব্যাখ্যা করিতে যাইয়া! তিলি 
একজন দুনিপুণ চিত্রকরকর্তৃক অগ্বিত অশ্বের অনুপ্রেরণায় জাত অনুভূতির 


উপমা দিয়াছেন। এই উপমার তাৎপর্য এই যে (১) সৌনরাহভূতি শ্বকীয় 


পায় বিশিষ্ট এবং এই জন্তই ইহা ভ্তায় দর্শনে দ্বী্ৃত অন্ত যে কোনপ্রকার 


১৪ 


শ্রেমীধিতক্ক করা! ধার মা। ০). শিক্পনঙ্গত - বস্ত , সবার! সরু মুর্তির লঙ্গে 
গর্ব হইতে মনে কবস্থিত মূর্তির এক্য_লাধলের দ্বার! ইহার উত্তব। (৪) চিত্রিত বৰ! 
মুন্মর় একটি অঙ্বের হবার] যেমন মনে তাহার মৌলিকক্গপ জাগিয়! উঠে, তেমনই 
কোন, মৌলিকবস্তর যথাযথ উপস্থাপন! দ্বারা মনে তাহার জ্ঞান জন্মির়া। থাকে। 
এই মতবাদের অসঙ্গতি সুষ্পষ্ট | রঙজগমঞ্চে যথাযথ ভাবে উপস্থাপিত নিমিস্তসমৃহকে 
ষষ্গি যথার্থ বলিয়! দর্শক মনে করেন-_তবে সেই সকল হইতে অনুমিত মমের 
স্থায়িভাবকে কিরূপে অহ্ৃকরণ বল! যাইতে পারে 1 যদি দর্শক এ্রগুলিকে শিল্পের 
স্থত্টি বলিয়া! মনে করেন-_-তবে তাহা হইতে অমিত স্থায়িভাবের কোন প্রশ্নই 
উঠেনা। বিশেষতঃ রঙ্গমঞ্চে উপস্থাপিত নায়কের পরিচিতিমুলক ধারণাকে 
কিরূপে শ্রেণীবিভাগের অযোগ্য বল! যাইতে পারে ? কারণ যদি শেষপর্যন্ত ইহা 
বাধিত ন| হয়-_-ইহা ঠিক। কিন্তু যদি বাধিত হয়--তবে ইহ ভুল। চিত্রের উপমাও 
যুক্তিসহ নহে। কেননা! আমর! যখন কোন চিত্র দেখি--তখন তাহাকে মৌলিক 
বস্ত বলিয়! মনে করিনা-_পরস্ত মৌলিক বস্তর সদৃশ মাত্র বলিয়! মনে করি। 


দাংখ্যমতে লৌন্দর্যতত্তব 
খ্যকারিকাতে সৌন্দর্ধতত্ব সম্বন্ধে দুই জায়গায় উল্লেখ রহিয়াছে। 
একজায়গায় অভিনেতা যে নায়কের ভূমিকা গ্রহণ করেন--ত্াহার জ্ঙ্গে 
অভিনেতার সম্বন্ধের ম্বর্ধপ দেখান হইয়াছে । এই মতাহ্যায়ী অভিনেত1 নায়কের 
অহ্করণ করেন ন1, পরস্ত তিনি নিজেই নায়ক হইয়। যান। অভিনেতার সঙ্গে 
নায়কের সম্বদ্ধ স্থুলদেহের সঙ্গে হুক্মদেহের সন্বন্ধের অহ্ুবূপ। একটি হুত্মদেহ 
ঠিক যেমন ভাবে একটি মানব বা! জন্ত হই] যায়, সেইরূপ নায়কের ভূমিক1 গ্রহণ 
করিয়া! অভিনেতা নায়ক হইয়1 যান। 
অপরটি এই অভিমত প্রকাশ করে যে, সৌন্দর্যাহভূতির বেলায় অন্ুভবকরী 
রজঃ ও তমোগুণ হইতে মুক্ত থাকেন। এবং এই কারণেই তিনি স্বার্থ-নিষ্ঠ . 
ও উদ্দেশ্টমূলক ভাব হইতে মুক্ত থাকেন এবং গঠনমূলক জ্ঞান-ক্রিয়! হইতে 
মুক্ত (ক্যাপ্টের মত তুলনীয় ) থাকেন। প্রক্কৃতি হইতে পুরুষের প্রভোদ উপলব্ধির 
পরে প্রক্কৃতিকে পুক্লুষ যেইরূপ জানেন, তিনিও সৌন্দর্যাহ্ুভূতির বস্তকে ঠিক সেই 
ভাবেই জানেন'। ব্যবহারিক দৃষ্টিতে উপস্থাপিত বিষয় শোকাবহ হও 
সৌন্দর্যাহভূতি ছুঃখ হইতে মুক্তির কারণ ইহা হইতে বৃখা! যায়। ' 


' ৯ 


 শ্রাগ'ও পাশ্চাত্য বর্শনেক্স ইতিহার্স 
বেদাস্তদর্শন অমতে লৌম্বর্থতত্বব 


 ভট্টনায়ক (খ্বঃ ৮৮৩) বেদান্তের দৃষ্টিতঙ্গীতে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টিত 
হইয়াছেন। সৌন্দর্যাহ্ভূতিতে অহ্ুভবকারী ও অনুভবের. বিষয় উভয়ই 
সাধারণীকত হইয় যায়_সাংখ্যের এই মত তিনি স্বীকার করেন। কিন্তু তখন 
প্রশ্ন উঠে, অহুভবকারী এবং অহ্ভবের বিষয়-_ এই উভয়েই কিভাবে সৌন্দর্যতত্ব- 
মূলক স্তরে সাধারণীক্কত হইয়1 যায়? সাধারণতঃ কাব্যের ভাষার ব্যবহারিক 
অর্থের ধারণা জন্মাইবার জন্য অভিধ! নামক যে শক্তি আছে বলিয়! স্বীকৃত 
হয় তাহা ছাড়া তিনি আরও ছুইটি শক্তি ধরিয়া লইয়া! এই প্রশ্নের উত্তর. 
দিয়াছেন। সেই ছইটি হইল ভাবকত্ব এবং ভোজকত্ব। (১) ভাবকত্ব- 
লৌকিক জীবনে সৌন্দর্যাহ্ঘভূতির বিষয়ীভূত বস্তর অহ্থর্ূপ বস্তর যে সকল 
সম্বন্ধ বিভমান থাকে _ভাবকত্বশক্তি এই বস্তটিকে সেই সকল সম্বন্ধ হইতে মুক্ত 
করিয়! লয় এবং এইভাবে ইহাকে সাধারণীকৃত করিয়! থাকে । (২) ভোজকত্ব-_ 
ভোক্জকত্বশক্তি সৌন্দর্যাহ্নভূতির বিষয়ীভূত বস্তুর অহ্ভবকারী ব্যক্তির রজঃ এবং 
তমোগুণকে পশ্চাতে রাখিয়। সত্বগুণকে প্রাধান্ত দিয়া থাকে। যখন সাধার শীত 
অহ্ভবকারীর সঙ্গে সাধারণীককৃত সৌন্দর্যাহ্ৃভূতির বিষয়-বস্তর সম্বন্ধ কিন্ূপ এই 
প্রশ্ন তোলা হয় তখন তিনি একটি নুতন জ্ঞানক্রিয়ার অস্তিত্ব স্বীকার করিয়া 
উত্তর দিয়াছেন। এই ক্রিয়াকে পারিভাবিক কথায় “ভোগ” বল! হইয়! থাকে । 
তাহার বক্তব্য নিশ্নোক্তরূপে বিবৃত কর] যায়-_ 
যেহেতু উপস্থাপিত বিষয় সাধারণীক্ত হইয়া! যায় লেইজন্য সৌন্দর্যাহভুূতির 
স্তরে রজোগুণের ক্রিয়। থাকে না। এইজন্ত ইহা কোন বাসনার উদ্দ্রেকে 
সমর্থ হয় ন! বলিয়। দৈহিক এবং মানিক প্রতিক্রিয়। সষ্টিতেও অসমর্থ । রজে! 
গুণকে পশ্চাতে রাখিয়া! সত্বগুণকে প্রাধান্ত দেওয়া! হয় এবং এইজন্য তমোওণ 
নিদ্কিয় । অতএব উপস্থাপিত বিষয়ের একট] সাধারণ জ্ঞানের উদ্ভব হয়। জ্ঞানের 
অবস্থাক্ূপেই ইহা ব্রদ্ষের অন্ভূতির অহ্থন্বপ। কিন্ত ইহাতে ইচ্ছ! বিষয়ক, 
মনস্তাত্বিক ও শারীরিক ক্রিয়াসমূহ থাকে না। কেননা! ইহা একটি সীমাবদ্ধ 
অঙ্থস্ৃতি বলিয়। ব্রহ্দের সাক্ষাৎ অশ্ুভু'তি ইহতে পুথকৃ; যদিও অনুভূতির সময়ে 
এই সীমাবদ্ধতার জ্ঞান থাকে না । কেনন] সাধারণীকৃত পৌন্দর্যাহুসভূ(তির বিষয়বস্তু 
সাধারণীকৃত সৌন্দর্যাহভবকারীকে প্রভাবিত করিয়! রাখে | ভট্টনায়কের মতে-_ 
সৌন্দর্যাহুভূতি হইল- সত্বগুণের প্রাধান্তহেতু সাধারণীক্কৃত সৌন্দর্যাহ্ৃভবকারি- 
কর্তৃক সাধারণীকুত সৌন্দর্যাহ্থভূতির বিষয়ের পরিশুদ্ধ আনন্দাবস্থার অনুভূতি । 


৭৩ 


ভারতীয় সৌন্দর্ত্ধ 

সৌন্দর্যাহ্বভুতি যৌগিক বা রহস্যতত্বের অনুতৃত্তির অহুন্বপ এই মত পাঁশ্চাত্যদেশে' 
প্লোটিনাস পোষণ করেন ।. 

কাব্যের ভাষার ছইটি শক্তিকে এবং একটি বিশেষ জ্ঞানক্রিয্াকে বিন! 
বিচারে মানিয়! লয় বলিয়া এই মত যুক্তিসহ নয়। তাহ] ছাড়া ইহ! বিরোধী 
মত সমূহের সহায়তায় এই অনুভূতির ব্যাখ্যার টেষ্ট! করিয়া থাকে । কারণ 
সাংখ্য, ধৈশেবিক ও যোগদর্শনের মতে ভোগের মধ্যে লীমাবদ্ধ কর্তৃকর্ষসন্বন্ধ 
নিহিত থাকে, কিন্ত যতক্ষণ সীমাবদ্ধ কর্তৃকর্মসন্বদ্ধ বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ 
আনন্দোৎপত্ভি সম্ভব নহে। 


কাশ্মীরটৈববাছে লৌন্দর্থতত্ব 


অভিনবগুপ্ত কাশ্মীরের অদ্বৈতশৈবদর্শনের দৃষ্টিতঙগীতে এই সমস্তা সমাধানের 
চেষ্টা করিয়াছেন। তিনি দ্বীকার করিয়াছেন যে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে সোন্দর্যাহ্ুভূতি 
হইল--আনন্দাহ্গভূতি ) কিন্তু তিনি ইহাও বলেন যে আনন্দ শুধু সত্ববের প্রাধান্য 
নহে। সাধারণীকৃত কর্তা ও কর্ম যে স্তরে থাকে ইহা সেই স্তর নহে। অলৌকিক 
স্তর_-যাহা হইল আনন্দের স্তর ইহাকে তিনি সাধারণীভাবের শুর হইতে পুথকৃ 
করিয়! দেখিয়াছেন। তিনি দেখাইয়াছেন যে, সাধারণীকুত স্তরে সৌন্দর্যাহভূতির 
সাধারণীকৃত কর্তৃনিষ্ঠ ও কর্মনিষ্ঠ অবস্থানের জন্ত দায়ী হইল নাটকীয় শিল্প। 
আর কাব্যের ভাষার দুইটি শক্তি ও একটি বিশেষ জ্ঞান-ক্রিয়াকে ধরিয়! 
লওয়ার কোন আবশ্যকতা নাই। তাহার অভিমত এই যে সৌন্দর্যাহভূতি 
শুধু হৃদয়াবেগঘটিত অনুভূতি নহে অর্থাৎ শ্রীশস্ক সেইক্মপ নাটকীয় বিভাগ, 
অন্ুভাৰ ও ব্যাভিচারিভাব প্রভৃতি হইতে বিচ্ছিন্ন একটি স্থায়িভাবের 
অনুভূতিকে পৌন্দর্যাহ্থভূতি বলিয়াছেন -ইহা সেইন্ষপ নহে। কিন্ত পানক- 
রসের উপাদান সমূহ সেইব্ূপ পরস্পর একীভূত হইয়া যায়_-সেইব্ূপ রসের 
অনুভূতিতে পূর্বোক্ত ভাব সকল একীভূত হয়। তিনি মনম্তত্বের দিক দিয়] 
দেখাইয়াছেন যে সৌন্দধাহুভূতির বস্ত্র অন্ুকরণ নহে অথব] ইহ! মায়ার স্ষ্টি করে 
না, ইহা! প্রতিবিশ্ব নহে এবং ইহ1 রসের উপাদানসমূহের যে কোন একটির উপ- 
স্বাপনাও নহে । তিনি বলেন যে ইহা অলৌকিক । তিনি স্বীকার করিয়াছেন 
যে সৌন্বর্যাহ্গতবকারীর সত্তা লৌকিক সত্তা হইতে পৃথক) এবং ইহ 
অক্ষভব কর্তার €১) রসিকত্ব, (২) পনদয়ত্ব, €) প্রতিভা, (৪) কাব্যাহ্ুশীলন, €) 
ভাবন। ও (৬) তম্ময়ীভাবে যোগ্যতার দ্বার] সম্ভব হইয়া! থাকে । তিনি মনভ্ুত্বের 


৭৯ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 

দিক দিয় নিম্োজজ প্রকারে ন্যাখ্যা করিয়াছেন কিন্ধপে আমর! ব্যবহারিকতুর 
হইতে কে) ইন্দ্রিয়, (খ) কল্পনা, গে) আবেগ, (ঘ) সাধারণিভাব, (৩) অলৌকিক 
প্রভৃতির সৌন্দর্ধতত্বনিষ্ঠস্তরে উন্নীত হই। 


দোন্দর্ধাজুভূুতির মনোভাব 


কোন নাটকের অভিনয়জাত সৌন্দর্যাহভূতির উদয়ের সঙ্গে সম্বন্বযুক্ত যে 
মানসিক প্রক্রিয়া তাহার আরভ হয় প্রেক্ষাগৃহে নাটকাভিনয়দর্শনে যাওয়ার 
সংকল্প করার সঙ্গে সঙ্গে। লৌকিক জীবনের ব্যবহারিক ভাব হইতে এই ভাব 
পৃথকৃ। কেন না এই ভাবের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের যাহা সত্য তাহার সম্পূর্ণ 
অভাব রহিয়াছে । শব্দ ও দৃশ্যের স্বপ্পস্থায়ী আদর্শজগতে মনের কিছুক্ষণ বাস করার 
প্রত্যাশার মধ্যেই ইহা নিহিত। এই মনোভাব নান্দী ব! প্রারভিক প্রার্থনাদৃশ্ঠ 
আর হওয়ার সঙ্গে লঙ্গে চিত্তের একাগ্রতাকে স্থির করিয়! দেয় । 

নান্দী সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্ত্রধার আপিয়। যে নাটকের অভিনয় হইষে 
তাহার নাম ঘোষণ। করেন এবং দর্শকের মনে একটা আত্মবিশ্বৃতির ভাব জাগাইবার 
জন্ত নৃত্যগীতের ব্যবস্থা করেন। তাহার পরে নায়ক বা অন্ত কোন অভিনেতার 
আগমন ঘোষণা করিয়া রঙ্গমঞ্চ হইতে নিঙ্রাস্ত হন। সঙ্গীতকলার দ্বার যে 
আত্মবিস্বতি হয় অভিজ্ঞানশকুস্তলম্‌ নাটকে কালিদাস এই অভিমত ব্যক্ত 
করিয়াছেন । 

মনের উপর এইরূপ প্রারভ্ভিক দৃশ্যের কার্য সুস্পষ্ট । ইহা দর্শকের মনোভাব 
নির্ধারণ করিয়া দেয়। এই নির্ধারণের মধ্যে রহিয়াছে, (১) মনের স্থায়িভাবের 
উপস্থিতি-যে স্থায়িভাবের সাহায্যে তিনি সমগ্র নাটকীয় অভিনয় দর্শম করিবেন 
এবং (২) নাটকের কেন্দ্রীভূত নায়কের সঙ্গে নিজের একাত্মত1 সম্পাদনের ও তাহারই 
চক্ষুকর্ণের মাধ্যমে নাটকীয় বিষয়োপলব্ধির প্রবৃত্তি । 


তঙ্দা অত লম্পা্ছনের প্রত্র্িক্! 


নাটকীয় বিষয়ের উপস্থাপনা তখনই আরম হয় যখন সৌন্দর্যলিঙ্গ, দর্শক 
নিজকে ভুলিয়া যান। অতএব নায়ক যখন একটি অতি হদরগ্রাহী পরিবেশের 
মধ্যে তাহার শিল্পসঙ্গত আকৃতি লইয়া! উপস্থিত হন ও মুখভঙ্গী এবং অঙ্গভঙ্গী দ্বার! 
মানসিক অবস্থার অভিব্যক্তি করিয়! থাকেন, অভিনেতার স্বকীয়ত্বের কোন উপাদান 
দুষ্পষ্ক্ূপে বুঝা যায় না। বর্তমান চেহারায় দর্শক অভিনেতাকে চিনিতে 


৭২. ৬. 


ভারতীয় সৌনধতত্ব 


পারেন নাঁ। বস্তৃতঃ ইহ1। সর্বপ্রকারে এ্রতিহাসিক আকৃতি । কিন্ত তিনিই যে 
এঁতিহাসিক ব্যক্তি এই ভাব জম্যকৃন্ধপে জন্মিতে বাধা দেয় কাল এবং আরও 
কয়েকটি বিষয় । কুতরাং এই উপস্থাপনা! কতকগুলি বিরোধী উপাদানের 
ঘার। সংগঠিত । 

তখন যে অবস্থা হয় তাহা এইব্দপ £ মনের প্রকৃতি এইবূপভাবে গঠিত যে যদি 
ইহা! একবার একটি অবস্থার দিকে আক হয় এবং তাহাতে আনন্দ পায় তবে 
তাহার মধ্যে যাহ1 কিছু নীরস এবং বিরোধী তাহ! উপেক্ষা করিয়! যায় । সুতরাং 
কোন একটি সৌনর্যাস্কভুতির উদ্দীপক পরিবেশের উপস্থাপনাকালে দর্শকের 
সৌন্দর্যনিষ্ঠ মনোভাব বর্তমান থাকায়--তাহার মন এই উপস্থাপনার মধ্যে যাহা! 
বিরোধী তাহ। অগ্রাহ্া করে এবং আর সব কিছু গ্রহণ করিয়া থাকে । অতএব 
উপস্থাপ্য বিষয়ের মধ্যে স্থানঃ কাল ও পাত্র এই তিনটি বিরোধী উপাদ্দানকে 
চাপ! দিয়! রাখায় অবশিষ্ট উপাদানগুলি শ্রোতৃবর্গের মনকে প্রভাবিত করে । 

এইনূপে শ্রোতৃবর্গের দ্রিকে আত্মবিস্বৃত সত্তা এবং উপস্থাপিত দৃশ্যে বর্তমান 
শারীরিক-মানসিক অবস্থা সমূহ একীভূত হইয়া একটা অবস্থার উদ্ভব করে, 
পারিভাবিক কথায় যাহাকে বলা হয়-_তাদাত্ব্য । 

তদ্গাত্সত। হইতে কল্পন। 

সাধারণ রীতি অহ্থসারে রঙ্গমঞ্চে নায়কের আবির্ভাব কোন হ্থনির্দি্ট উদ্দেশ্য- 
বিহীন নহে। যেহেতু প্রত্যেক উদ্দেশ্টের সঙ্গে বিষয়ের সম্পর্ক থাকে-_ইহাও 
স্বভাবতঃ একটা শারীরিক মানসিক অবস্থার সঙ্গে সন্বন্ধযুক্ত । অতএব দর্শক যখন 
নায়কের সঙ্গে একাত্ম হইয়! নাটকীয় অবস্থার সম্মুখীন হন- তখন স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই 
প্রবল হইয়1 দাড়ায় এবং সৌন্দর্যতত্নিষ্ঠ উপতোক্তার নিম্নোক্ত উপাদানগুলির 
উদ্রেক করে। 

(১) রুচি-ইহাদ্বার উপস্থাপিত বিষয়ে শুধু মনোযোগ রক্ষিত হয় এমন নহে, 
পরস্ত এমন কোন ভাব যাহাঘদ্বার] দর্শকের মনে কোন ব্যক্তিত্বের চেতন। জাগিতে 
পারে-তাহাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেয় ন। 

(২) প্রতিভা-_ (ক) চেতনকে অচেতন হইতে পৃথকৃ করিয়! দেয় যে অস্পষ্ট 
বাধা প্রতিভ1] তাহাকে আংশিকভাবে দূর করে । 

(খ) প্রদত্ত বিষয়ের সঙ্গে বাধার পশ্চাৎ হইতে প্রকাশিত বিষয়ের যোগসাধন 
করিয়! থাকে, (গ) এবং এইক্সপভাবে গঠিত চিত্রকে বুদ্ধির পটভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত 
করে ও কল্পনাজগতের স্থঙ্টি করে । 


লও 


১৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


কল্পুন! হইতে ভাবাবেগ 
যখন সৌন্দর্যের উপভোক্তা তাহার প্রতিভাশক্তি ও বুদ্ধির পটভূমিকাদ্ারা 
স্থষ্ট কল্পনাজগতে থাকেন--তখন আর একটি মানসিক শক্কি__-সহৃদয়ত্বের উদ্দ্েক 
হয় এবং তাহাকে প্রয়োজনে লাগান হইয়! থাকে । মনোবিষ্ট অন্তান্ত উপাদানের 
মজে ইহার সামগ্জস্তপূর্ণ কার্য ও ব্যবস্থা একটি পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্য__ বিশিষ্ট চিত্র গঠনে 
সহায়তা করে । তদনস্তর উপযুক্ত সাড়া পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক আবেগের 
স্তরে পৌছানে। যায় । 


ভাবাবেগ হইতে লাধারণীভাব 


সাধারণীভাবের স্তর বিষয়ে সংক্ষিগাকারে প্রদত্ত মতের জন্য পাঠক-_ কাশ্মীর 
শৈবতত্ব বিষয়ক অধ্যায়ের “আভাসবাদের আলোকে সৌন্দর্যাম্ভূতি” নামক খণ্ড 
দেখিতে পারেন। 


সাধারণীভাব হইতে অলোৌকিকত্ব 


রসগঙ্গাধরে জগন্নাথ সৌন্দর্যস্থভূতি বিষয়ে অভিনব গুপ্তের এরুটি মতের কথা 
বলিয়াছেন এবং সেই মতের সঙ্গে তাহার নিজের মতের পার্থক্য দেখাইয়াছেন । 

অভিনব একটি স্বায়িভাবের যথা রতির অনুভূতিকে সৌন্দর্ধাহভূতি বলিয়াছেন 
এবং এই অনুভূতিতে অস্পষ্টতাবিধায়ক বাধাসমূহ হইতে যুক্ত সাধারণীকৃত আত্মা 
বা “চিৎকে এই স্থায়িভাবের ধর্ম বলিয়াছেন । এই মত হইতে তাহার (জগন্নাথের ) 
মতের পার্থক্য দেখাইতে গিয়! তিনি জোরের সহিত বলেন যে সৌন্দর্যান্ুভূতিতে 
“চিৎ, স্থায়িভাবের ধর্মন্ূপে বিরাজ করে ন।। পক্ষান্তরে ইহাই সন্তাবান্ক্ূপে বিরাজ 
করে এবং স্বায়িভাব ইহার একটি ধর্ম। কিস্ত অভিনবগুপ্ত এইরূপ মত পোষণ 
করিতেন বলিয়া! মনে হয় না। কারণ তিনি তুস্পষ্টর্ূপে এই অভিমত প্রকাশ 
করিয়াছেন যে “চিৎ” সম্বন্ধে ধমি-ধর্ম সন্বন্ধের কথা বলা যাইতে পারে না । কেনন] 
“চিৎঃ বস্তনিষ্ঠ নহে, বহিরাগতও নহে । এমন কিছুই নাই যাহাকে ইহার সঙ্গে 
সমস্তরে স্থাপন কর যাইতে পারে এবং ধম্সি-ধর্ম সত্ষন্ধ শুধু সেই সকল বস্তুর মধ্যেই 
থাকিতে পারে যেগুলিকে একসঙ্গে সমস্তরে স্থাপন করা যায়! অতএব “চিৎকে 
স্বায়িভাবের ধর্মরূপে বর্ণনা কর] ভুল। কেননা শেষোক্তটি (স্থায়িভাব) 
প্রথমোক্তটির ( “চিৎ ) সমপর্যায়ভুক্ত নহে। 

অভিনবগুপ্ত তাহার মত সম্বন্ধে হ্স্পষ্টর্ূপে বলিয়াছেন যে ইহ! তাঁহার নিজদ্ব 
মত।৪ ( অন্মন্মতে তু সমবেদনম্‌ এবানন্দঘনম্‌ আম্বাদ্ঘতে ) তিনি মনে করেন 


৭8 


ভারতায় সৌন্দর্যতত্ব 


সৌন্দর্যাহভূতি চরম স্তরে নির্ল আনন্দন্ধপে “চিৎএর অনুভূতি । এই স্তরে 
নিরতিশয় অন্তমূর্বীকরণতা হেতু কর্তা ও কর্মরূপ দ্বৈত অদৃশ্য হইয়। যায় এবং 
স্থায়িভাব অবচেতন মনে পড়িয়া থাকে । কারণ তখন ইহা সর্বপ্রকানে 
উপেক্ষিত। তিনি শ্বীকার করেন যে সাধারণীভাবের শুরে সাধারণীকৃত “ইহ!” 
সাধারণীকৃত “আমির স্থলে শোভা পায় কিন্ত ইহা ও বলেন যে তাহাদের 
পারস্পরিক সম্পর্ক হইল কাশ্নীরশৈববাদের চতুর্থতত্ব- ঈশ্বরের স্তরে তাহাদের যে 
সম্পক--সেই সম্পর্কের অহ্নরূপ | 
কাব্য 

নাট্যশাস্ত্রকারগণ কবিতাকে যদিও নাটকের পরিচারিকান্ধপে মনে করিতেন 
তথাপি আলঙ্কারিকগণ এই অভিমত প্রকাশ করেন যে ইহার একটি স্বতন্ত্র স্থান 
রহিয়াছে । অলঙ্কারশাস্ত্রের বহু সম্প্রদায় রহিয়াছে । কিন্তু তাহাদের মতের 
পার্থক্য হইল--কাব্যের আত্ম! ব! স্বব্ধূপ কি”_এই সমস্ত সম্পর্কে । কান্ট, এবং 
হেগেল শিল্প সম্বন্ধে ঠিক এই সমস্তারই সমাধানের চেষ্টা করিয়াছেন। অলঙ্কার 
শাস্ত্রের ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে আমরা দেখিতে পাই--কাব্যের ধারণা ধীরে 
ধীরে গঠিত হইয়াছে এবং শেষ পর্যস্ত ভরত যে রসকে নাটকের আত্মা বলিয়! 
প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন-__-তাহাই কাব্যের আত্মা! বলিয়! স্বীকৃত হইয়াছে । নাট্য- 
শাস্কারদিগের সঙ্গে আলঙ্কারিক-দিগের পার্থক্য শুধু কাব্যের সার সম্পর্কেই নহে, 
পরন্ত কাব্য যে অস্থভূতি জাগায় তাহার সম্পর্কেও। উদাহরণস্বরূপ বল! যাইতে 
পারে ভামহ কাব্যান্ভূতিকে “রসাস্বাদ' ন|। বলিয়! প্রীতি, বলিয়া! অভিহিত 
করিয়াছে । তাহার মতে বক্রোক্তি অর্থাৎ একটি হৃদয়গ্রাহী ভাবকে হৃদয়গ্রাহী 
করিয়! তদহ্ৃরূপ হৃদয়গ্রাহিশব্দসমষ্তির মারফতে অভিব্যক্তিই-কাব্যের সার | এই 
বক্রোক্তি একটি সাধারণ অলঙ্কাররপে স্বীকৃত। 

সাহিত্যসমালোচনায় দণ্ডী অধিকতর অগ্রগামী একটি সম্প্রদায়ের মনত 
উপস্থাপিত করেন । প্রাদেশিক কাব্যে তাহার অন্থশীলন ছিল গভীরতর | তিনি 
বিশ্লেষণাত্বক পর্যালোচনা দ্বারা (১) বৈদর্ভ ও (২) গোঁড়ীয়_এই ছুইটি মার্গের 
পার্থক্য প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন । তিনি ভরতের দ্বার প্রভাবিত হইয়াছিলেন এবং 
আলঙ্কারিক দশটি গুণই স্বীকার করিয়! তাহাদিগকে বৈদর্ভমার্গের প্রাণস্বরূপ 
বলিয়াছেন । মাধুর্য নামক আলঙ্কারিক গুণ সম্পর্কে তাহার যে ধারণা তাহাতে 
মনে হয় সমস্ত কাব্য বিষয়ক উপস্থাপনাতে রসকে তিনি একটি প্রধান উপাদান 
বলিয়] দেখিয়াছেন। 


৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


| কল্পন! হইতে ভাবাবেগ 
যখন সৌন্দর্যের উপভোক্তা তাহার প্রতিভাশক্তি ও বুদ্ধির পটভূমিকাদ্বারা 
স্্ই কল্পনাজগতে থাকেন--তখন আর একটি মানসিক শক্তি--সহদয়ত্বের উদ্রেক 
হয় এবং তাহাকে প্রয়োজনে লাগান হইয়া থাকে | মনোবিষ্ট অন্তান্ত উপাদানের 
সঙ্গে ইহার সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্ধ ও ব্যবস্থা একটি পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্য_ বিশিষ্ট চিত্র গঠনে 
সহায়তা করে । তদনস্তর উপযুক্ত সাড়া পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক আবেগের 
স্তরে পৌছানো যায় । 


ভাবাবেগ হইতে লাধারণীভাব 


সাধারণীভাবের স্তর বিষয়ে সংক্ষিগ্তাকারে প্রদত্ত মতের জন্য পাঠক-_ কাশ্মীর 
শৈবতত্ব বিষয়ক অধ্যায়ের “আতাসবাদের আলোকে সৌনর্যাহ্থভূতিঃ নামক খণ্ড 
দেখিতে পারেন। 


দাধারণীভাব হইতে অলোকিকত্ব 

রসগঙ্গাধরে জগন্নাথ সৌন্দর্যন্ছভূতি বিষয়ে অভিনব গুপ্তের একটি মতের কথা 
বলিয়াছেন এবং সেই মতের সঙ্গে তাহার নিজের মতের পার্থক্য দেখাইয়াছেন। 

অভিনব একটি স্বায়িভাবের যথা রতির অনুভূতিকে সৌন্দর্ধযাহভূতি বলিয়াছেন 
এবং এই অন্ুভূতিতে অস্পষ্টতাবিধায়ক বাধাসমূহ হইতে যুক্ত সাধারণীকৃত আত্ম 
বা “চিৎকে এই স্বায়িভাবের ধর্ম বলিয়াছেন । এই মত হইতে তাহার (জগন্নাথের ) 
মতের পার্থক্য দেখাইতে গিয়! তিনি জোরের সহিত বলেন যে সৌন্দর্যাহভূতিতে 
“চিৎ, স্থায়িভাবের ধর্মপ্ূপে বিরাজ করে ন1। পক্ষান্তরে ইহাই সত্ভাবান্দূপে বিরাজ 
করে এবং স্থবায়িভাব ইহার একটি ধর্ম। কিন্তু অভিনবগুপ্ত এইব্দপ মত পোষণ 
করিতেন বলিয়া! মনে হয় না। কারণ তিনি সুস্পষ্টন্ধপে এই অভিমত প্রকাশ 
করিয়াছেন যে “চিৎ, সম্বন্ধে ধমি-ধর্ম সম্বন্ধের কথ! বলা যাইতে পারে না। কেননা 
“চিৎ? বস্তূনিষ্ঠ নহে, বহিরাগতও নহে । এমন কিছুই নাই যাহাকে ইহার সঙ্গে 
সমস্তরে স্থাপন করা যাইতে পারে এবং ধণ্সি-ধর্ম সম্বন্ধ শুধু সেই সকল বস্তর মধ্যেই 
থাকিতে পারে যেগুলিকে একসঙ্গে সমস্তুরে স্থাপন কর! যায়। অতএব “চিৎ'কে 
স্বাপিভাবের ধর্মন্ূপে বর্ণনা করা ভুল। কেননা শেষোক্তটি (স্বায়িভাব ) 
প্রথমোক্তটির ( “চিৎ ) সমপর্যায়ভুক্ত নহে । 

অভিনবগ্তগু তাহার মত স্বন্ধে হুস্পষ্টরূপে বলিয়াছেন যে ইহ! তাহার নিজব্ব 
মত।£ (অন্মস্মতে তু সমবেদনম্‌ এবানন্দঘনম্‌ আস্বাদ্তে ) তিনি মনে করেন 


৭8 ” 


ভাতান্স' সৌনার্থ তথ্য 


সৌন্দর্যাহভূতি চরম স্তরে নির্মল আনন্দন্গপে “চিৎ*এর অহৃভৃতি। এই ত্যরে 
নিরতিশয় অন্তমু্খীকরণতা হেতু কর্তা ও কর্মরূপ দ্বৈত অদৃশ্য হইয়! যায় এবং 
স্বায়িভাব অবচেতন মনে পড়িয়া থাকে । কারণ তখন ইহা সর্বপ্রকারে 
উপেক্ষিত। তিনি শ্বীকার করেন যে সাধারণীভাবের স্তরে সাধারণীকৃত “ইহা” 
সাধারণীকৃত “আমি'র স্থলে শোভা পায় কিন্ত ইহা ও বলেন যে তাহাদের 
পারস্পরিক সম্পর্ক হইল কাশ্মীরশৈববাদের চতুর্থতত্ব- ঈশ্বরের স্তরে তাহাদের যে 
সম্পর্ক__-সেই সম্পর্কের অস্ুুরূপ | 
কাব্য 

নাট্যশাস্্কারগণ কবিতাকে যদিও নাটকের পরিচারিকারূপে মনে করিতেন 
তথাপি আলঙ্কারিকগণ এই অভিমত প্রকাশ করেন যে ইহার একটি স্বতন্ত্র স্থান 
রহিয়াছে । অলঙ্কারশাস্ত্রের বহু সম্প্রদায় রহিয়াছে । কিন্তু তাহাদের মতের 
পার্থক্য হইল-_কাব্যের আত্মা ব। স্বরূপ কি*_এই সমস্ক1 সম্পর্কে । কাণ্ট, এবং 
হেগেল শিল্প সম্বন্ধে ঠিক এই সমস্তারই সমাধানের চেষ্টা করিয়াছেন। অলঙ্কার 
শাস্ত্রের ইতিহাস পর্যালোচনা! করিলে আমর] দেখিতে পাই--কাব্যের ধারণ! ধীরে 
ধীরে গঠিত হইয়াছে এবং শেষ পর্যন্ত ভরত যে রসকে নাটকের আত্মা বলিয়! 
প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন-__-তাহাই কাব্যের আত্মা বলিয়! শ্বীকৃত হইয়াছে । নাট্য- 
শাস্্কারদিগের সঙ্গে আলঙ্কারিক-দিগের পার্থক্য শুধু কাব্যের সার সম্পর্কেই নহে, 
পরস্ত কাব্য যে অস্ুভূতি জাগায় তাহার সম্পর্কেও। উদাহরণন্বর্ূপ বল! যাইতে 
পারে ভামহ কাব্যাহৃভূতিকে “রসাম্বাদ” না! বলিয়! “প্রীতি বলিয়! অভিহিত 
করিয়াছে । তাহার মতে বক্রোক্তি অর্থাৎ একটি হুদয়গ্রাহী ভাবকে হাদয়গ্রাহী 
করিয়! তদগ্রূপ হৃদয়গ্রাহিশব্দসমষ্টির মারফতে অভিব্যক্তিই-কাব্যের সার । এই 
বক্ষোক্তি একটি সাধারণ অলঙ্কাররূপে স্বীকৃত । 

সাহিত্যসমালোচনায় দণ্ডী অধিকতর অগ্রগামী একটি সম্প্রদায়ের মন্ 
উপস্থাপিত করেন । প্রাদেশিক কাব্যে তাহার অন্শীলন ছিল গভীরতর | তিমি 
বিশ্লেষণাত্সক পর্যালোচন! দ্বারা (১) বৈদর্ভ ও (২) গোৌঁড়ীয়-_-এই ছ্ইটি আর্গের, 
পার্থক্য প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন । তিনি ভরতের দ্বার] প্রভাবিত হইয়াছিলেন এবং 
আলঙ্কারিক দশটি গুণই স্বীকার করিয়! তাহাদিগকে বৈদর্ভমার্গের প্রাণস্বরূপ 
বলিয়াছেন । মাধুর্য নামক আলঙ্কারিক গণ সম্পর্কে কাহার যে ধারণা তাহাতে 
মনে হয় সমস্ত কাব্য বিষয়ক উপস্থাপমাতে রসকে তিনি একটি প্রধান উপাদান 
বলিয়। দেখিয়াছেন। 


৭৬ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য র্পনের ইতিহাস 


ওজঃ ( শক্তিসম্পন্নত1 ) প্রসাদ ( শ্বচ্ছত1 ) কাস্তি ( ওঁজ্জল্য) প্রভৃতি দশটি 
আলঙ্কারিক গণ সমধঘিত ভাবা সম্বন্ধীয় উপস্থাপনাবিধি বা! রীতিতে বামনের 
আগ্রহ সর্বাধিক। ভ্ভাহার অভিমত হইল যে রীতিই কাব্যের আত্মা ৷ 

কাব্যের গঠন সম্পর্কে কাব্য ও নাটক সম্বন্ধীয় আদর্শের বিরোধে উত্তটের মত 
সর্বশেষ স্তরে আসিয়া! পৌছায় | তাহার বিশিষ্ট অবদান হইল বৃত্তিনম্পর্কীয় ধারণ]। 
তিনি আবিফার করেন যে কোন একটি ভাবপ্রকাশে ব্যবহৃত শব্দসমূহের অন্তর্গত 
বর্ণসমষ্টরির ধ্বনি-মুল্য অভীগ্সিত প্রতিক্রিয়া! জাগাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্বান অধিকার 
করে। তিনি ভাবসমূহকে-(১) দীপ্ত (২) মস্থণ ও (৩) মধ্যম এই তিন ভাগে 
বিভক্ত করিয়াছেন। তদন্ব্নপভাবে তিনি বর্ণসমষ্টির ধ্বনিকে বিভক্ত করিয়! এই 
অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন যে কোন একটি বিশিষ্ট ভাবপ্রকাশে বিশিষ্টপ্রকারের 
ধবনিসমূহের প্রাচুর্য গুরুত্বপূর্ণ । অলঙ্কারশাস্ত্রে আনন্দবর্ধনের মৌলিকদান হইল 
তাহার ধরনিবাদ। মনম্তত্বের দিক্‌ দিয়া অভিনবগুপ্ত_ প্রচলিত, লাক্ষশিক বা 
গৌণ এবং প্রাসঙ্গিক অর্থসমূহ হইতে ইহার পার্থক্য ব্যাখ্য। করিয়াছেন । মহিমভট্ট 
ধবনিবাদকে বিধ্বস্ত করিতে চেষ্ট1! করিয়াছিলেন কিন্তু রুয্যক তাহার সমালোচনার 
সন্তোবজনক উত্তর প্রদান করিয়াছেন। 


লশ্রাপিতকল। 


ভারতবর্ষে সঙ্গীতকল! সম্বন্ধে কিংবদস্তী সামবেদে গিয়া পৌছায় । ভরত 
তাহার নাট্যশাস্ত্রে যে সঙ্গীতপদ্ধতি ব্যাখ্যা করিয়াছেন তাহার প্রকাশ সামবেদে। 
ইহা উচ্চশ্রেণীর সঙ্গীতের প্রাচীনতম পদ্ধতি এবং ইহার লিখিত প্রমাণ বিছ্যমান 
আছে। ইহার প্রধান প্রধান নীতিগুলি প্রয়োজনীয় সংশোধনের পরে বর্তমানকাল 
পর্যস্তও অশ্থস্থত হইয়! থাকে । অন্তান্ত যে কোন সুকুমার কলা হইতে সঙীতের 
আবেদন প্রশস্ততর | ইহা! শাঙ্গদেব (থুষ্টীয় ১২১০) তাহার সঙ্গীতরত্বাকরে ও 
নারদ তাহার সঙ্গীতমকরন্দে স্বীকার করিয়াছেন | শিব, ব্রহ্মা, কৃষ্ণ, সরন্বতী ও নারদ 
সঙ্গীতপ্রিয় দেবতা বলিয়! বিশেষভাবে পরিচিত । দোলায় শয়ান শিশুর নিকটেও 
ইহার আবেদন রহিয়াছে । এমন কি হরিণ ও সর্পগণও ইহ1 দ্বারা মোহিত হয়। 


জ্বরসম্ুহের সপ তিই হুইল লঙ্গীতের চ্ভুলনীতি 


স্বর (সঙ্গীতের ধ্বনি ) বল! হয় এই জন্ত যে শ্রবণকারীর মনে ইহা! নিজেই মধুর | 
কিন্ত স্বরলমূহ্র সংযোগে উৎপন্ন হইলেও গীত সেইরূপ নহে। গীতের মধ্যে অনেক 


১, ০ 


ভারতীয় সৌন্দ্ধতনব 

সমর যে বাঁকুনি অস্থভৃত হয়--কোঁন একটি শ্রুতিকটু স্বরের বিদ্যমানতা অথবা 
স্বরসমষ্টির মধ্যে কোন একটি ম্বরের অবশিষ্টরের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যের অভাবই 
তাহার কারণন্ধপে স্বীকৃত হইয়। থাকে । এই জন্ত ক্বরসমূহের মধ্যে সামঞ্জন্তের 
নীতিকে সর্বাপেক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া স্বীরূতি দেওয়] হইয়| থাকে । সঙ্গীত ইন্ত্রিয়- 
গ্রাহ বস্তকে আদর্শে পরিণত করে । সবরের ভিতর দিয়া ইহা বস্তুনিষ্ঠ বিস্তৃতি 
প্রদর্শন করে না__পরস্ত বস্তুনিষ্ঠ দেহের আত্যস্্রীণ অঙ্গসমূহের কম্পন ও গতি 
প্রদর্শন করে । সঙ্গীত এবং কাব্য উভয়েতেই ধ্বনি একটি আধ্যাত্তিক বস্ত প্রদর্শন 
করে। কাব্যে ধ্বনি একটি ভাবের চিহ্ৃমাত্র_আধেয়বস্ত নহে। সঙ্গীতে কিন্ত 
ধ্বনি কোন ভাব, অনুভূতি বা আবেগের চিহ্মমাত্র নহে। ইহ1 একটি স্বতন্ত্র বাহন। 
অতএব শিল্পসঙ্গতভাবে পরিণতিপ্রাপ্ত স্বরের ধারাসমূহ সঙ্গীতের মুখ্য লক্ষ্য এবং 
উদ্দেশ্য । সঙ্গীতে আভ্যন্তরীণ প্রাণ যদিও সবরের আধেয়বস্তর্ূপে বিদ্যমান, তথাপি 
ইহা আধেয়বস্ত হইতে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন নহে। স্থুর চেতনাতে অন্থপ্রবিষ্ট হইয়া 
আধেয় একটি অনুভূতি বা আবেগের সঙ্গে মিলিত হইয়া হৃদয়াবেগঘটিত স্তরে 
অহ্ুভূতির বস্তুনিষ্ঠ আকার রচনা করে। 


নাদব্র্গবাদ 
সম্রুপতের দর্শন 


সঙ্গীত কলাবিগ্যা এবং তাহার সম্পর্ক নাদ বা ধ্বনির সঙ্গে । তাই সঙ্গীতের 
দর্শনে ব্যাকরণ দর্শনের শব্ব্রক্ম নাদত্রন্ম নামে গৃহীত হইয়াছে । ইহা ভর্তৃহরি- 
সম্প্রদায়ের অনুগামী । তিনি পরা এবং পশ্যস্তীর মধ্যে পার্থক্য শ্বীকার করেন 
নাই। ভর্তৃহরি পশ্যস্তী এবং মধ্যমার মধ্যে যেন্ধপ পার্থক্য স্বীকার করিয়াছিলেন 
সঙ্গীতদর্শনে নাদ ও নাদত্রদ্দের মধ্যে সেইন্বপ ভেদ স্বীকৃত হইরাছে। নাদ 
হৃদয়ে স্থিত এবং শ্রতিসকল তাহার বহিঃপ্রকাশ । এই দর্শনের মতে নাদ 
নাদব্রন্দের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নহে । এই দর্শনোক্ত নাদ ব্যাকরণ- 
দর্শনের স্ফোটের প্রায় সম্পূর্ণ অচুরূপ এবং স্ফোটের সঙ্গে শব্ব্রদ্ষের যে সম্পর্ক 
নাদের সঙ্গে নাদব্রদ্দের ঠিক সেইরূপ সম্পর্ক। অতএব নাদই শ্ফোট এবং মধ্যমস্তরে 
তাহার প্রকাশ । দিয়াসলাই-এর একটি কাঠির অস্তুনিহিত শক্তিসম্পন্্ন অগ্নি যেমন 
প্রত্যক্ষাছভূত শিখার হেতু-_সেইন্ধপ হৃদয়গহায় অবস্থিত কেবল বুদ্ধিগ্রাহ নাদ 
নাড়ীসমূৃহ ও অন্তান্ত বাগতক্বের সাহায্যহেতু বিভিন্ন শ্রুতিপমূহের, কারণ হইয়া 


ন্‌ 


প্রাচা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


থাকে । নাদ কার্ষে রূপাস্তরিভ হইলে শ্রুতিসমূহের উত্তব হয়। শ্রুতির সঙ্গে 
নাদের সম্বন্ধ প্রকৃতপক্ষে বন্তিবের সঙ্গে অস্তণিহিত শক্তিসম্পন্নের সম্বন্ধ । 

চরম তত্র প্রাপ্তির পক্ষে সঙ্গীত একটি মনোরম পঙ্থা বলিয়! এই দর্শনে স্বীকৃত 
হইয়াছে। শ্রুতিসমূহ নাদের অব্যবহিত প্রকাশ বলিয়। স্বাভাবিক ভাবে ইহার 
প্রাপ্তির পথে লইয়] যায় । রশ্মিসমূহের সঙ্গে মণি যেক্বপভাবে সম্বন্ধ নাদের সঙ্গেও 
চরমতত্ব সেইক্প ভাবে সন্বদ্ধ। এবং এই জন্তই রশ্মিসমূহের সন্নিকটে উপস্থিতি 
যেমন মণিরই প্রাপ্তি ঘটাইয়। দেয়, সেইব্প নাদপ্রান্তি, চরমতত্বের প্রাপ্তির পথে 
লইয়] যায়। 

এই সঙ্গীতদর্শন যোগদর্শনের দ্বার! প্রভাবিত। যোগদর্শনে ্বীকৃত হইয়াছে 
যে অনাহত নাদের ধ্যান পরমার্থপ্রাপ্তির উপায়। (অনাহতনাদ--হাদয়ে নিত্য 
বর্তমান শব্দ যদিও ইহা ব্যবহারিক জ্ঞানের বিষয়ীভূত হয় না। কিন্ত যোগী 
তাহার অত্তর্দশশনক্ষম ধ্যানের দ্বারা ইহা উপলব্ধি করিতে পারেন ; মানবদেহের 
কেন্দ্রন্থিত অগ্নিতে প্রাণবাযুর দ্বার! প্রদত্ত স্পন্দনে এই শব্দের উদ্ভব নহে )। ইহার 
অভিমত এই যে মুক্তির এই পথ ছুর্ূহ। ইহ! যোগের অভ্যাসসাপেক্ষ । অনাহত 
নাদ আরামপ্রদও নহে, ছুন্দরও নহে । কিন্ত আহতনাদ ( স্পন্দনজনিত শব্দ যাহা! 
ইচ্ছার ফলম্বরূপ) শ্রতিসমূহের প্রকাশের মাধ্যমে চমৎকারব্ধপে গৃহীত হইতে 
পারে। যোগদর্শনে যেইন্ধপ বল! হইয়াছে, এই দর্শনেও মানবদেহে দশটি চক্র 
্বীকৃত হইয়াছে ; এবং ইহ1 এই মত পোষণ করে যে সুধাধার ও বিশুদ্ধি চক্রের 
কোন কোন অংশে প্রাণবায়কে সমাহিত করিলে সঙ্গীতাহ্ুষ্ঠানে পূর্ণতা লাভ 
করিতে পারে । 

সঙ্গীতদর্শনের অভিমত এই যে সঙ্গীতের ধ্বনিরূপ ইন্দ্রিয়গ্রাহা বাহনের মাধ্যমে 
চরমতত্ব নাদব্রন্দে পৌছাইয়] দিয়া! থাকে । (এই প্রসঙ্গে হেগেলের মত তুলনীয় ) 
সঙ্গীত মনোরম, কেন না ইহার মধ্যে হৃদয়গ্রাহী ধ্বনির মাধ্যমে পরমতত্ব শোভা 
পায়। শ্রবণেক্ত্রিয় ও মন--এই উভয়ের কাছেই ইহার আবেদন রহিয়াছে । যে 
কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ বস্তই মনোরম নহে । সঙ্গীত সুন্দর কেন না মন উপলব্ধি করে যে 
সঙ্গীতের অভ্যন্তরে চরমতত্ব শোভা পায় । 

গীত বা সঙ্গীতের বেশে চরমতত্বোপলব্িজাত সৌন্দর্য্যান্থভূতির বৈশিষ্ট্য হইল 
এই যে ইহাতে উপভোক্ত1! ও উপভোগের সম্পূর্ণ এীক্য সম্পাদিত হয়। ইহার 
মধ্যে মন স্বাধীনভাবে আত্মধ্যানে নিযুক্ত এবং এইজন্তই ইহা! অসীম এবং 
চরমতত্তের স্তরে গিয়া পৌছায় । ইহা! অপরোক্ষান্ভূতি। 


৭৮ 


ভারতীয় সৌন্দর্ঘতথ্থ 
বাস্-শাজ্ র 

বাস্ত-শাস্ত্রের সম্পর্ক প্রধানতঃ নগর নগরী, গ্রাম, বৃহৎ প্রকোষ্ঠ, মন্দির এবং 
গৃহের নক্সা তৈয়ারী ও নির্মাণের কাজের সঙ্গে। অলঙ্করণের দৃষ্টিভলীতে মুত্তি 
ও চিত্রশিল্প লইয়া ও ইহার কাজ । এই শাস্ত্রে কাষ্ঠবিমান (আকাশ-গামী-দারুময়- 
বিমানযন্ত্র ) দ্বাররক্ষার যন্ত্র €দ্বারপাল যন্ত্র) প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের যষ্ব্বের 
কার্য্যসমূহ বর্ণনা কর] হইয়াছে, কিন্ত তাহাদের নির্যাণের প্রক্রিয়! দেওয়া হয় নাই । 
ইহার অর্থ এই নহে যে উহ জ্ঞাত ছিল না, পরস্ধ প্রগুলি গোপন রাখা হইত 1 
হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদড়োর পুরাতত্বঘটিত আবিষারসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ 
করিয়া দেয় যে ভারতবর্ষে বাস্তবিদ্ধার ধার ৃষ্টপূর্ব ৩০০০ বৎসরের প্রাচীন । 

স্বাপত্যশিল্প একটি বহিরঙ্গশিল্প কেনন! ইহার স্থষ্টিসমুহের সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবের 
সম্বন্ধ বাহিরের দ্রিক দিয়া; ভাব তাহাদের মধ্যে মূর্ত নহে। চিত্র এবং ভাকর্য্য 
আধ্যাত্বিকভাবকে অব্যবহিতরূপে প্রকাশ করে; পক্ষান্তরে স্থাপত্য শুধু তাহার 
পরিবেশ বা বিভাব স্ষ্টি করে । 

বাস্ত ব্রল্গাবাদধ 
স্বাপত্যশিল্পের দর্শন 

স্বাপত্যশিল্পের প্রসঙ্গে এই ধারণ! পোষণ কর! হয় যে তত্ববিদ্যার দিকৃ দিয়া 
বাস্তবঙ্গ হইল প্রকৃত সত্তাঁ। ইহা কেবল প্ররুতির বিবর্তিত বস্ত-নিচষয বলিয়] 
দ্বীকৃত সমস্তই স্থপ্টি করে এমন নহে পরন্ত ইন্দ্রিয়যুক্ত দেহসমষ্টিও ইহার স্ষ্টি। 
যখন ইন্দ্রিয়যুক্তদেহের স্ষ্টিকর্ত! তখন ইহাকে শরীরী বলিয়া মনে কর! হয় এবং 
এই বাক্কিত্বের বিভিন্ন দিকৃ হইতে বিভিন্ন ইন্দ্রিয়যুক্ত দেহ উৎপন্ন হইয়াছে বলিয়। 
কথিত হয়। স্থাপত্যশিল্পের প্রসঙ্গে এই সত্তাকে বাস্তপুরুষ বলিয়! ধারণ কর! 
হয়। স্কাপত্যশিল্লপের স্থপ্টি জাগতিক বিন্তাসই দেখাইয়! থাকে । স্থাপত্যশিল্পের 
মূলনীতি-_সজীবপদার্থের বিশেষ ধর্ম-সমন্বিত বিস্তাস, সঙ্গতি ও অহ্ুপাতের নীতি 
প্রদর্শন করিয়! থাকে । স্থাপত্য আদর্শ দান করে। ইহা মত্ড্যে ত্বর্গ উপস্থাপিত 
করে এবং বিস্ময় জাগায়। এইভাবে ইহা! যে সৌন্দর্য্যাহভূতি উদ্রেক করে 
তাহাকে পারিভাষিক কথায়--“অদ্ভূত” বলা হয়। 

স্তিকলা। 

মুতিকল! মর্মরপ্রস্তর, মৃত্তিকা, মণি স্বর্ণ অথবা অন্ত যে কোন ধাতুর মাধ্যমে 

একটি আধ্যাত্মিক প্রসঙ্গকে ইন্দ্রিয়গ্রাহৃবূপে প্রদর্শন করিয়া! থাকে । ভারতবর্ষে এই 


৭৪৯ ৃ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


শিল্প ধর্মীয় ভাবসমূহ প্রদর্শনের ব্যাপারে নিয়োজিত | কোন নাটকের নায়ক যেষন 
সহৃদয় রসবেত্তার মিকট রস পরিবেশন করে ঠিক সেইন্সপেই কঠিন পদার্থ হইতে 
ক্ষোদ্রিত একটি প্রুতিমৃত্তি ভক্তের নিকট ধর্মীয় ভাব অভিব্যক্ত করিয়া থাকে এবং 
ভক্ত ইহা অবলম্বন কক্ষিয়া ধ্যানে রত থাকেন। এই প্রতিমূর্তি ভক্তের' নিকটে 
ভক্তির পানজ্সরকে এমনভাবে উপস্থাপিত করে যেন ভক্ত তাহার সামনাসামনি বিদ্যমান 
আছেন। আধ্যাত্মিক ভাবোপলন্ধির ব্যাপারে ইহা একটি উপায় মাত্র । ইহা! 
চেতনাতে প্রকাশিত ভাবের উদয়ে সহায়তা করে, কিন্তু স্মৃতিকূপে নহে-_-একট! 
কিছু সনিধিকররূপে ।* 


চিত্র 

চিত্রের কার্য বিভাগের আয়তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দৃশ্যবস্তর মধ্যে বিভিন্ন 
বর্ণের পার্থক্য প্রদর্শন করিয়1 চিত্র দৃশ্যবস্তকে বিশিষ্ট করিয়' তোলে । মনে যে 
কোন অন্ৃভূতি বা উদ্দেশ্য উদ্দীপ্ত হইয়া! উঠুক ন! কেন-__-তাহ। চিত্রের বিষয়ীভূত 
হইতে পারে । দেহঘটিত পরিবর্তনের দ্বারা যেমন আস্তরসত্তার অভিব্যক্তি হইয় 
থাকে - চিত্র তেমন আস্তরসম্ভার একট মুহূর্তের অভিব্যক্তি করিয়! থাকে । কিন্ত 
নাটকে চারিপ্রকার অভিনয়ের সাহায্যে উপযুক্ত পরিবেশে ইহার সমস্ত প্রধান 
অবস্থার অভিব্যক্তি হইয়া থাকে । অতএব চিত্রসম্বন্ধীয় সমস্ত গ্রস্থ ভরতের 
মতাহ্ুসারী এবং ভরত আঙ্গিকাভিনয় অর্থাৎ হ্স্তসঙ্কেত ও মুখতভঙ্গী প্রভৃতির দ্বারা 
মনের আভ্যন্তরীণ অবস্থ প্রদর্শন সম্বন্ধে যাহ! বলিয়াছেন এই সকল গ্রন্থে প্রায় 
তাহাই বিবৃত হইয়াছে । এই সকল গ্রন্থে রসদৃষ্টির উপস্থাপন প্রসঙ্গেই রসের কথা 
বল! হইয়াছে । আঙিকাভিনয়ে ভরতের মতসমূহ যে অহ্স্থত হইত তাহার গুমাণ 
অজন্তাগুহায় চিত্রিত একটি নৃত্যুরত1 বালিক1। এই চিত্রের মস্তক ও গ্রীবা ভরতের 
মতের অন্ককাধ ভাবেরই ন্ধপায়ণ বলিয়। স্বীকৃত হইয়াছে। 


রষ্টব্য £ 
১। সাংখ্যকারিক, ৫৬৮৭ | 
খ। এ ৭ | 


৩। ঈন্বর প্রত্যভিন্ঞ!বৃত্তি বিমশিনী ১ম খণ্ড ১৪৭। 
৪1 অভিনব্ভারতী ১ম খণ্ড ২৯৩। 

«| সমরাজণ হুত্রধার ১ম থণ্ড ১৭৫ । 

| এ হয় খণ্ড ২৬৬। 


৮৩ 


৯১ 


ভারতীয় সৌনদার্যতঞ্থ 
গ্রন্ছপঞঙ্জী 


অভিনবভারতা 

ঈশ্বর প্রত্যভিজ্ঞাবৃত্তি বিমশিনী 

সাংখ্যকারিকা 

সমরাজণ ক্ত্রধার 

(তুলনামূলক আলোচনার জন্য ) 

বোসাক্ষে £ হিস্টরি অব এক্ছেটিকৃস্‌ 
আডিসন, জোনেফ £হ ওয়ার্কস্‌ ৩য় খণ্ড 
কান্ট £ ক্রিটিক অব জাজ মেণ্ট, (জে. এইচ. বার্ণার্ডের ইংরাজী অনুবাদ ) 
ইঙ্গে, ডব্লিউ, আর £ দি ফিলজফি অব প্লটিনাস্‌ ২য় খণ্ড । 


৮৪ 


অষ্টাদশ গরিচ্ছ্দে 
এন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


হর্ষের মৃত্যুতে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি যুগের অবসান চিহ্ছিত 
হইয়াছিল, এবং গুপ্ত-সাম্রাজ্য স্থষ্ট ভারতের পরিবর্তে রাজনৈতিক শ্বাতস্ত্যবাদচিহ্ছিত 
ভারতের উদ্ভব হইয়াছিল। উত্তরাঞ্চলে পরবর্তী তিনশত বৎসরের ইতিহাসে 
দেখা গেল উচ্চাভিলাষপরায়ণ রাজবংশগুলির কর্তৃত্বে পরস্পরের বিরুদ্ধে নিরস্তর 
সংখ্রামশীল স্বাধীন সামস্তরাজ্যগুলির প্রতিষ্ঠা । এই সমস্ত শাসকদের অধিকাংশই 
ছিলেন বিভিন্ন রাজপুত বংশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুলপতিগণ, ধাহার1 ভারতবর্ষের 
রাজনীতিক্ষেত্রে নৃতন আগন্তক উপাদান। তাহাদের প্রভাবাধীনে পুরাতন 
সমাজ-ব্যবস্থার লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটিয়! গেল, যাহার অনিবার্য পরিণতিতে প্রাচীন 
পুজাপদ্ধতি এবং ধর্মীয় ক্রিয়াকাণ্ড। আইন এবং ব্যবহারিক বিধি, ভাষা এবং 
শিল্পকল| সমস্তই ব্ূপাস্তরিত হইয়া গেল । 

দাক্ষিণাত্যে এবং দক্ষিণদেশে অবশ্য ইতিহাস এতখানি বিক্ষোভময় হইয়! 
উঠিতে পারে নাই। মাঝে মাঝে যুদ্ধবিগ্রহ যদিও সেখানে ঘটিয়া গিয়াছে, তবু 
উত্তরাঞ্চলে যেমন সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সংঘটিত 
হইয়াছিল, সেরূপ সেখানে হইতে পারে নাই। প্রায় পাঁচশত বৎসরের মধ্যে 
সেখানে কোন শক্তিমত্ত বিপ্লব দেখ! দেয় নাই বলিয়] সংস্কৃতির ধার] অক্ষুগ্নই ছিল । 

কিন্ত দশম শতাব্দীর পরে উত্তরাঞ্চলে, এবং আরও দুইশত বৎসর পরে দক্ষিণ- 
দেশে মুসলমান শাসনাধিকার বিস্তৃত হইবার ফলে রাজনৈতিক পট দ্রুত পরিবতিত 
হইয়া গেল। কিন্ত এই মময় হইতে আরম্ভ করিয়| অষ্টাদশ শতকের শেবতভাগ পর্যন্ত 
সামাজিক বিধিব্যবস্থাঃ ব্যক্তি মানবের জীবনভঙ্গী এবং সংস্কৃতির সাধারণ রূপটি 
মোটামুটি অপরিবতিতই ছিল । 

অষ্টম শতাব্দীতে ইসলামের আবির্ভাবে দেশে একটি নুতন অবস্থার সৃষ্টি 
হইয়াছিল। কারণ, মুসলমানদের আগমনের পূর্বে মধ্য-এশিয়ার বিভিন্ন জাতি 
ভারতবর্ষে আক্রমণ পরিচালন] করিলেও ভারতীয় সমাজ-দেহে তাহার! ভ্রুতগতিতে 
লীন হইয়া! গিয়াছিল। সেক্ষেত্রে নবাগতগণ শুধু প্রখর ব্যক্তিত্বচিহ্নিত ধর্মমত 
লইয়াই অনুপ্রবেশ করে নাই, পূর্ববর্তাগণ হইতে পৃথকৃ ভঙ্গী অবলম্বন করিয়া! 


৮২ ৮ 


ধস্লাষিক চিন্তাধারার বিকাশ 


তাহার! তাহাদের আদিভূমির সহিত ঘনিষ্ঠ সংযোগ রক্ষা করিয়]! চলিয়াছিল। 
ভারতীয় মুসলমানদের সহিত পশ্চিম এশিয়ায় তাহাদের শ্বধর্ীদের সম্বন্ধবন্ধন ঘনিষ্ঠই 
ছিল, এবং এ্লনামিক দেশগুলি ও ভারতবর্ষের মধ্যে ভাবপ্রবাহ এবং সংস্কৃতিধারা 
অবিচ্ছেদে বহিয়। চলিয়াছিল। এই সম্বপ্ধবন্ধনকে জিয়াইয়! রাখিবার পক্ষে ভাষা 
একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিল। কারণ উভয় প্রাস্তেই পণ্ডিত ব্যক্তির! ধর্ম 
ও বিদ্ভাচর্চার ভাব! হিসাবে ফার্সী এবং আরবী ভাষারই প্রয়োগ করিতেন। 

মধ্যযুগে সমগ্রভাবে ভারতবর্ষে, এবং বিশেষভাবে দক্ষিণাঞ্চলে, চিন্তার প্রাচীন 
ধার। প্রবল বেগে বহমান ছিল, এবং সংস্কৃতভাষা ও তাহার আধারে প্রকাশিত 
জ্ঞানরাজি আপন প্রাণশক্তিকে অক্ষুণ্ন ভাবেই রক্ষা! করিয়াছিল । 

এইভাবে সংস্কৃতির ছুইটি ধারা পাশাপাশি বহিয়। চলিয়াছিল; কিন্ত তাহাদের 
জলরাশির মিশ্রণে একটি অভিনব সংস্কৃতির উথান ঘটিল। শিল্পকলা এবং 
কারুকর্মের ক্ষেত্রে এই মিলন এমন পরিপুর্ণ হইয়! দেখ! দিয়াছিল যে স্বতন্ত্র সংস্কৃতির 
চিহ্ন সামান্তই অবশিষ্ট ছিল। ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন এবং ধর্মে বিতির 
অহ্থপাতে মিশ্রণ ঘটিয়াছিল। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক- 
সাধারণের একই কথ্য ভাষা ছিল, এবং আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলির বিবর্তনে সহ- 
যোগিত। করিয়। উভয় সম্প্রদায়ই সেই সব ভাষায় সাহিত্যের বিকাশ সাধনে নিজস্ব 
অবদান যুক্ত করিয়াছে । দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক চিস্তার ক্ষেত্রে হিন্দু এবং 
মুসলমান মনীষীদের মধ্যে নান! জ্ঞান-সম্প্রদায় প্রচলিত ছিল। তাহাদের মধ্যে 
কেহ কেহ ছিলেন রক্ষণশীল, তাহার] এ্রতিহ্র প্রতি নিষ্ঠ। রক্ষ! করিতে বত্ববান্‌ 
ছিলেন $ কেহ কেহ পরস্পরের খণ গ্রহণ করিয়াছিলেন ; কিন্তু অন্ত সকলে ছুটি 
ধারার মধ্যে সমব্যয়ের পথ সন্ধান করিয়াছিলেন । 

বৈচিত্র্যে ও ভাবোৎকর্ষে ভারতবর্ষের মধ্যযুগের চিন্তার ইতিহাস বিশিষ্টতা অর্জন 
করিয়াছে, এবং নান! তত্বপস্থার উদ্ভবের সহিত তাহার সম্বন্ধ আছে। হিন্দু চিস্তা- 
ধার] প্রধানতঃ প্রাচীন শ্রুতি-নিরুক্তিকে আশ্রয় করিয়] প্রকাশিত সত্যের প্রমাণেই 
আপন যৌক্তিকত৷ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল। ইহাতে তাহার মৌলিকতা৷ প্রতৃত 
পরিমাণে খর্ব হইয়াছিল সত্য, কিন্ত প্রামাণ্য গ্রস্থগুলির ব্যাখ্যাচ্ছত্রেই সম্প্রদায়- 
অষ্টাগণ দর্শনের বিভিন্ন তত্বশাখার উদ্ভাবন করিয়াছিলেন । 

প্রাচীন ভারতবর্ষে দার্শনিক তত্বগুলি প্রধানত: শিক্ষণীয় হুত্রসার হিসাবেই 
ন্ূপ পরিগ্রহ করিয়াছিল। উপনিষদৃঃ ভগবদগীতা এবং বড় দর্শন-_মধ্যযুপীর 
হিন্দুতত্বের এই আকরগরস্থগুলি পাধারণ অর্থে দর্শন এবং ধর্ম বিষয়কগ্রন্থ বলিতে 


৮৩ | 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


যাহা বুঝায় তাহা নহে । এগুলিতে অবশ্থ সিদ্ধান্তসমূহ আছে; কিন্ত যে যুক্তিপথে 
তাহাদের উদ্ভব, সে সম্পর্কে অস্ততঃ প্রাচীনতর গ্রন্থগুলিতে বিশেষ কিছু ব্যাখ্যাত 
হয় নাই। বিচারশীল যুক্তি অপেক্ষ। দিব্যজ্ঞান এবং অস্তৃষ্টিই যেন ছিল প্রজ্ঞার 
উপায় স্বরূপ । 

মধ্যযুগের তাত্বিকগণ এই আকরগ্রন্থগুলিকেই তাহাদের ভিন্নপস্থার বিচ্ছেদস্থান 
হিসাবে খ্রহণ করিয়াছিলেন । শঙ্কর, রামান্ুজ, নিম্বার্ক, মধব এবং বল্পভ প্রভৃতি 
মহান্‌ আচার্যগণ শ্বাস্ত্গ্রস্থগুলির উপরে* বিশেষতঃ বাদরায়ণের বেদাস্তস্ত্রের উপরে 
ভাষ্য রচনা! করিয়াছিলেন, এবং হ্ুত্রমর্ম ব্যাখ্যার প্রসঙ্গেই আপন আপন বিশেষ 
মতবাদ প্রচার করিয়াছিলেন। 

আচার্গণ এইভাবে যে ধর্মচিস্তার আলোড়ন স্থপ্টি করিয়াছিলেন, তাহার 
পরম পরিণতি দেখ! গেল সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়িয়া ভক্তিবাদের প্রতিষ্ঠায় এবং 
প্রচারে । ইহার উদ্ভব দক্ষিণাঞ্চলে, এবং ইহার মহান্‌ নেতৃগণের অধিকাংশই 
ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসী । এই বিশেষ সময়ে এই বিশেষ অঞ্চলে তাহাদের 
আবির্ভাব একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা । কিছু পরিমাণে তদানীত্তন রাষ্ত্রীয় ও সামাজিক 
ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, এবং কিছুট] চিস্তার স্বাভাবিক বিকাশধারা অনুসারে 
ইহার ব্যাখ্য! দেওয়! যায়। কিন্ত সেই সঙ্গে একথাও স্মরণ রাখ প্রয়োজন যে, 
এক্লামিক ইতিহাসের স্থচনাকাল অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দী হইতেই মুসলমানগণ 
ভারতীয়দের সহিত দক্ষিণ উপকূলে সংযোগ সাধন করিয়াছিল, এবং এই 
অঞ্চলের জীবনযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করিবার মত স্ুয়োগ অর্জন 
করিয়াছিল । 

আধ্যাত্মিক বিকাশের ক্ষেত্রে এই ঘটন1-সংযোগের কোনও প্রভাব ছিল কি না 
তাহ? একান্ত নিশ্চয়তার সঙ্গে প্রমাণ কর] যায় ন1 বটে, কিন্ত সেকালের ধর্ম- 
সংস্কারকদের চিস্তাভঙ্গীর মধ্যে এমন অনেক কিছু ছিল যাহ! এরঙ্লামিক প্রত্যয় ও 
সাধনক্রমেরই প্রতির্ূপ বলিয়া মনে হয়। 

যে সংযোগ ইস্লামের ইতিহাসের আদিকাল হইতেই স্থাপিত হইয়াছিল, 
তাহ! ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলমান শাসকদের অধিকারে ভারতবর্ষের অধিকাংশ 
অঞ্চলের অস্ততভুক্তির কাল পর্যস্ত ক্রমাগত বধিত হইয়া চলিয়াছিল। এই কয় 
শতাব্দী ধরিয়] মুসলমান সাধু, পণ্ডিত এবং স্ুফীগণ ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ভারতে 
প্রবেশ করিয়াছিলেন । তাহার] তাহাদের ভারতজাত শিষ্যগণের সহিত মিলিরা 
ইষ্লামপন্থী চিন্তার অগ্রনায়কগণের রচনাসমূহ অধ্যয়ন করিয়াছিলেন, নিবন্ধ 


৮৪ রি 


স্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


প্রকাশ করিয়াছিলেন, এবং অধ্যয়ন ও অনুশীলনের জন্য মান! প্রতিষ্ঠান গঠন 
করিয়াছিলেন। 

ভারতবর্ষে মুসলমান দর্শনের ইতিহাপ বিদেশে ইহার ক্রমবিকাশের সহিত 
অবিচ্ছিম্্ ধারায় যুক্ত, সুতরাং ভারতের অবদান বিচার করিতে হইলে ইহার 
ভারতীয় বিবর্তনের পূর্বেকার বিকাশ কাহিনী অস্থ্‌সরণ করা প্রয়োজন । হিন্দু- 
দর্শনের মত এরঙ্গামিক তত্বের মৃলটিও শ্াস্তগ্রস্থের মধ্যেই নিহিত, এবং কোরাণ 
তাহার উৎসমুখ। ইস্লামের পৃত গ্রন্থটি একটি দার্শনিক নিবন্ধ নয়, এবং যদিও 
ইহাতে মুস্লিম ধর্মমত, মৌলপ্রত্যয়, এবং সুনীতিতত্ব, আইন ও সমাজবিধির মুখ্য 
আদর্শগুলি সংকলিত আছে, তথাপি সেগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত করাহয় নাই, 
বরং এমন ভাষাভঙ্গিতে সে বিষয়গুলি উপস্থাপিত হইয়াছে, যাহাতে বিভিন্ন 
ব্যাখ্যার অবকাশ থাকিয়! যায়। 

রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যের স্বার্থ এবং নান! জাতি ও নান! 
সভ্যতা হইতে আগত ধর্মাস্তরিত ব্যক্তিগণের মনোধর্মের ফলম্বক্বপ প্রাচীনতম যুগ 
হইতেই কতকগুলি দল এবং সম্প্রদায়ের উদ্ভব হুইয়াছিল এবং তাহাদের মধ্যে 
কখনও কখনও নির্যাতন এবং রক্তপাতসহ প্রচণ্ড মত-সংঘাত দেখ! দিয়াছিল। 

অন্তপক্ষে প্রাচীন খলিফাশাসিত রাঁজ্যটি ছিল বিভিন্ন পুরাকালীন সভ্যতার 
মিলনভূমি। পশ্চিম এশিয়ায় ছিল ইহুদী, গ্রীক, হেলেনীয়-পন্থীঃ রোমান এবং 
খৃষ্টান সংস্কৃতির অনেকগুলি কেন্দ্র, আবার পূর্বাঞ্চল ছিল পারসিক, বৌদ্ধ এবং হিন্দু 
সংস্কৃতির আগার | প্লেটে ও এ্যারিষ্টটল্‌, প্রটিনাস ও ফিলো, জরথুস্্র ও মনি, এবং 
মহাযান ও বেদাস্তের দ্বার] মুসলিম তত্বসিদ্ধান্ত প্রভাবিত হওয়। অনিবার্য ছিল। 

কোরাণের সারতত্বটি সরল । ঈশ্বরত্ব্ূপের অদ্বয়বাদ, মাহুষের একাস্ত ঈশ্বর 
নির্ভরত্ব এবং প্রেরিত পুরুষের আবির্ভাবের প্রয়োজন বিচারই ইহার কেন্দ্রীয় তত । 
কিন্ত ইহার প্রত্যেকটিতেই বহুলপরিমাণে ছুর্বোধ্যত1 আছে। প্রেরিত পুরুষের 
সাঙ্গোপাঙ্গগণ (সাহাব) বাণীপ্রেরক ও তাহার বাণীর এত নিকটবর্তী ছিলেন 
যে, প্রকাশিত বাণীকে যুক্তিদ্বার স্থাপন করিতে তাহার মোটেই সম্মত ছিলেন 
না। কিন্ত অহ্ৃগামীদের ( তবিষুন ) মধ্যে সংশয় দেখা দিল, এবং লোকে ঈশ্বরের 
প্রকৃতি ও মানবের সহিত তাহার সম্পর্ক বিষয়ে প্রশ্ন তুলিতে লাগিল । কোরাণের 
বাণী কি চিরায়ত, শুধু তাহার লিপিক্রমই কি কাল-লাঞছিত 1 মাহ্ৃষের ইচ্ছাশক্তি 
অভিপ্রায়ে এবং কর্মে কি বন্ধহীন ? সৎকি, অসৎ কি, কি ভাবে এবং কেনই 
তাহাতে দণ্ড-পুরস্কারের ভাগ নির্দিষ্ট হয়? 


৮৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মুক্ত ইচ্ছাঁশক্তির সমস্ত হইতে দুইটি পরম্পর-বিরোধী তাত্বিক সম্প্রদায়ের স্ষ্টি 
হইল, ঈশ্বরের শাশ্বত নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী দল ( জবরীয়1 ), এবং মানব ইচ্ছার স্বাধীন 
কর্তৃত্বে বিশ্বাসী দল ( কদরীয়! )। যাহার! ইচ্ছ।শক্তির স্বাধীনত। মানিতেন, তাহারা 
নিজেদের “এশ্বরিক অভেদ এবং শ্রশ্বরিক হ্যায়পরতার অন্ুপহ্থী দল; (আহলাল 
তর্হীদ ওয়াল আদৃল্) নামে পরিচয় দিয়! একটি নূতন সম্প্রদায়ে পরিণত 
হইলেন, কিন্ত তাহার সু”তাজীল! ( দলত্যাগী ) নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। 
তাহাদের মতে ঈশ্বরের শ্তায়নীতি অনুক্রমে মানবগণ ইচ্ছাশক্তি ও কর্মের স্বাধীনতা 
উপভোগ করিবে । কিস্ত অল্শকাল পরেই ধর্মতত্বের গভীরতর সমন্তাগুলি দেখা 
দিল । ঈশ্বর যদি হ্ভায়পরায়ণ হন, তবে গ্তায়পরতা কি তাহার স্বব্মপসত্তা হইতে 
পুথকৃ কোন এ্রশ্র্য ? পরশ্বর্যাবলী যদি শাশ্বত এবং স্বতন্ত্র সত্তাবিশিষ্ট হয়, তবে 
ঈশ্বরসত্তার অদ্বয় পরিচয় বর্জন করিতে হয়, কিন্তু মু'তাজীলা-পন্থীর ছিলেন অদ্বয়- 
বাদের অনমনীয় প্রবক্তা, এবং সেই কারণেই তাহাদের ধারণ! ছিল যে, ঈশ্বর 
স্বর্ষপই একমাত্র শাশ্বত সত্তারূপে গণ্য হইতে পারেন, এ্রশ্বর্য কেবল তাহার স্বরূপ- 
শক্তির বিক্ষেপমাত্র । অধিকস্ত অদ্বয়তত্বের স্ুকঠোর প্রয়োগের ফলে এইক্সপ 
সিদ্ধান্তই গড়িয়া! উঠে যে, কোরাণকে শাশ্বত বলিয়া! গণ্য কর। অসঙ্গত। কারণ 
তাহা! যদি হয়, তবে অনাদি সম্ভার দ্বৈতত। প্রতিষ্ঠিত হইবে । 

মু'তাজ্বীল। আন্দোলনে ইহাই প্রমাণ করিবার প্রয়াস ছিল যে; কোরাণের শিক্ষা 
যুক্তির নির্দেশকে অতিক্রম করে নাই । ইহার স্তপাত হয় ওয়াসিল বিন অতা 
হইতে, যিনি ম্যানিকী-পস্থ। হইতে আগত দ্বৈততত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা 
করিয়াছিলেন । এমন কথাও বল হইয়াছে যে, ওয়ামিল এবং তাহার বন্ধুগণ 
সুমনীয় (বৌদ্ধ ) দিগের সহিত আলোচন] অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন । আব্বাস-পন্থী 
খলিফাদের মধ্যে কেহ কেহ এই আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন, এবং মামূন 
(৮১৩-৩৩ খুঃ অঃ) তাহাদের মতের বিরোধীদের নির্যাতিত করিয়াছিলেন । 
কিন্ত আব্বাস-পন্থীদের শাসনশক্তির হাসের সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলন গতিবেগ 
হারাইয়া! ফেলিল। 

মু'তাজীলা-পন্থীর! অবশ্ট চিন্তার প্রেরণা জোগাইয়াছিলেন, যাহার ফলে 
তাহাদের মধ্য হইতে তিনটি বিভিন্ন তত্বপস্থার উদ্ভব হইয়াছিল । মু”তাকল্লমী ন্গণ 
(বিচারবাদীগণ, শাস্তপ্রমাণবাদীগণ ), ধাহার1 ধর্মশাস্ত্রীয় মতকেই যুক্তিপ্রয়োগে 
সমর্থন করিতে প্রয়াপী ছিলেন, ফ*লাশীফ ব। হুকামাগণ (দার্শনিকবর্গ) দর্শনশাঙ্ত্ের 
নানা সমন্তাবিচারে ধাহাদের আগ্রহ ছিল এবং গ্রীক চিস্তাধার। দ্বার! খীহারা 


৮৬ 


ধরন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন, এবং স্থুফীগণ ( মরমিয়াগণ ), ধাহারা আত্বার 
ধর্মকে অনুসরণ করিতে ও ঈশ্বরোপলন্ধির লক্ষ্যপথে অগ্রসর হইতে মানবসাধারণকে 
আহ্বান জানাইয়াছিলেন। 

সমস্ত পন্থার মনীবীরাই উপায় অথবা লক্ষ্যত্ব্ূপে গ্রহণ করিয়া! দর্শনশান্ত্ের 
অনুশীলনে নিযুক্ত ছিলেন, এবং তাহার সকলেই দার্শনিকচিস্তার উন্নয়নে 
সাহায্য করিয়াছিলেন। প্রত্যেক শ্রেণী হইতেই প্রসিদ্ধ চিস্তানায়কগণের 
আবির্ভাব ঘটিয়াছিল। তাহাদের পারস্পরিক মতবিরোধই বিচার-বিশ্লেষণ ও 
নূতন চিস্তাপন্ধতির উন্মেষের অনুকূলে প্রেরণ! সৃষ্টি করিয়াছিল । 

মধ্যযুগের ইউরোপীয লেখকগণের মতই ঈল্মে-কালাম (শাস্ত্রবিচার ) বিষয়ে 
লেখকগণ শাস্্বচনের পক্ষে দার্শনিক সমর্থন সংগ্রহ করিতে যত্বপর ছিলেন। 
তাহাদের মধ্যে মু'তাজ্বীলা-পহ্থীরা ছিলেন পুর্বতন কালের এবং আঁশরী-পন্থীর! 
পরবর্তী কালের । পূর্বে বলা হইয়াছে; মু*তাজীল1-পন্থী মনীষীরা ছিলেন চুড়ান্ত 
একেশ্বরবাদী । কিন্ত ঈশ্বরস্বরূপ ও তাহার বিভূতি সম্পর্কে যে আধ্যাত্মিক সমস্যার 
ফলে তাহাদিগকে পরবর্তীকালের বহুদেবতাবাদের বহিঃসীম1” স্পর্শ করিতে 
হইয়াছিল, তাহা ব্যতীত, অন্তরের সংযম ও অন্থশাসনের প্রতি প্রবণতায় এক 
সর্বাতিশায়ী বিধানের বহিরঙ্গ কাঠিস্থকে প্রশমিত করিবার পথ তাহারাই রন! 
করিয়! গিয়াছিলেন। 

ঈশ্বরপ্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাপাস্থত্রে তাহার! যে জগদ্ব্যাপারের প্রকৃতি, 
ইহার জন্মকথা এবং স্থিতি সম্বন্ধে অতীন্দ্রি় দার্শনিক সমস্যার সম্মুখীন 
হইবেন, তাহা! নিশ্চিত ছিল। সহজেই বোঝা যায় যে তাহার এই মতেরই 
অন্থবর্তা হইবেন যে, ব্রহ্ষাণ্ড ঈশ্বরেরই সৃষ্টি, এবং ঈশ্বরের প্রসাদেই বস্ত্র 
অস্তিত্ব, সুতরাং জগৎ অথবা বস্তব্প কিছুই চিরস্তন নয়। প্রকতপক্ষে বস্তু 
(জাওজর্‌ ) কতকগুলি গুণের (আরজ) সমবায় মাত্র, এবং ব্রহ্মাণ্ড অমিত- 
সংখ্যক প্রাথমিক বস্ত-উপাদান বা! পরমাণুর (জাওহার্‌ উল্‌ ফারদ্‌) গ্রন্থনে রচিত । 

এই সমস্ত,আলোচন1 হইতেই পরবততাঁ পর্যায়ের কলামের উত্তব হইয়াছিল, 
যাহা মু'তাজীলা-পন্থীদের যুক্তিবাদের প্রতিক্কিয়াত্বন্ূপ। ইহার ব্যাখ্যাতাদের মধ্যে 
সবচেয়ে মুখ্য ছিলেন আশরী (জন্ম ৮৭৩ খুঃ অঃ) | যে যুক্তিবাদ ধর্মের উপর দর্শনের 
আধিপত্য স্থাপন করিয়া শেষ নিষ্পত্তি করে তিনি সেই যুক্তিবাদকেই একমাত্র 
আশ্রয় ন করিয়], বরং আধ্যাত্মিক উপলব্ধি, দিব্যজ্ঞান এবং ধর্মবিশ্বাসের সাহায্যে 
শাক্সবচনকে সমর্থন করিবার উপায় সন্ধান করিয়াছিলেন | এতিহাবাদী € উলামায়ে 


৮৭ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


নকল ) এবং যুক্তিবাদ্দীদের (উলামায়ে আকল) মাঝামাঝি একটি মধ্যপন্থ। তাহার! 
অনুসরণ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন । মু'তাজীলা-পন্থীর1! ঈশ্বরের এশবর্ষের 
নিত্যতার তত্বকে অস্বীকার করিয়াছিলেন, কারণ তাহাদের মতে এরশ্বর্য তাহার 
অখণ্ড স্বব্ূপেরই অঙ্গীভূত ; আশরী-পহ্থীর। কিন্ত সেই তত্বের প্রতিই সমর্থন 
জানাইয়াছিলেন। ম্বাধীন ইচ্ছার প্রশ্বটিতে তাহাদের অভিমত ছিল এই যে, যদিও 
অভিপ্রায় এবং কর্মের প্রথম হৃচন। ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারিত বিষয়, তথাপি মাহ কোন 
কর্মকে সম্পূর্ণ করিবার যোগ্যত1 অর্জন (কাস্বৃ) করিতে পারে। ঈশ্বরপ্রকৃতি 
সম্বন্ধে তাহাদের ধারণা ছিল যে, ঈশ্বর সকল পরিণামের অতীত গ্রুব অস্তিত্ব, 
তাহার সত্তা (মজুদ) এবং স্বভাব (মাহীয়াত, ) এক্ান্ষপপ্রাপ্ত,র এবং 
তিনি আপন সত্তার আধারেই তাহার এ্রশ্বর্ধাবলী ধারণ করেন। বিশ্বত্রন্মাণ্ড 
সর্তাধীন (মুমকিন্‌ ), যেমন সর্তাধীন বস্ত এবং গুণ উভয়েই । সকল 
গুণই চৈতন্তাশ্রিত সঙ্বপ্ধ মাত্র, এবং যেহেতু গুণ-সংশ্লেব ছাড়া কোন বস্তুর 
অস্তিত্বই সম্ভব নয়, অতএব বস্তর জগৎ মায়াপ্রপঞ্চময়, “চৈতগন্তের সুসন্বদ্ধ 
প্রকাশ মাত্র । নিয়তই ঈশ্বরের ইচ্ছায় যাহার স্থ্টি এবং লয় হইতেছে, এমন 
অদৃশ্য উপাদান বা পরমাণুর সমবায়ে গঠিত হইয়াছে বস্ত এবং তাহার অনিত্য 
গুণাবলী। প্রতিটি পরমাণুর প্রকতিই সরল, তাহার ব্যাপ্তি নাই, পরিমাণ নাই, 
তাহার অনিত্য গুণাবলী হইতে তাহার বিচ্ছেদও নাই । কিন্তু অনিত্য গুণাবলী 
হুইতেছে কতকগুলি সমাবনামাত্রঃ এবং সৃষ্টি তাহাদেরই কার্ধন্বপের আভাস। 
অতএব কেবল এশী ইচ্ছায় বিরাজিত পরমাণুসমূহ নিয়ত অস্থির । আকারমাত্রই 
পরমাণুর সমষ্টিবিশেষ। বেণাম এবং কালও পরমাণুজাত, কারণ ব্যোম হইতেছে 
শৃন্ত (খ্‌ল1)--পরিচ্ছিন্ন অসংখ্য অহপুঞ্জ, এবং কাল হইতেছে সময়-ছিদ্রের 
দ্বার! বিশ্লিষ্ট ক্ষুদ্বাতিক্ষুত্র মুহূর্তের মালা । বস্তজগৎ এবং মনোজগতের সকল 
ঘটনাই ব্যোম এবং কালকে আশ্রয় করিয়। ক্রিয়াশীল পরমাণুর কার্য। 

ব্রন্মাণ্ডের পারমাণবিক ব্যাখ্যাটি ঈশ্বর সম্পর্কে কোরাণ-তত্বেরই নিশ্চিত 
পরিণতি্বন্পপ | কারণ ঈশ্বর যদ্দি সর্বাত্মক হন, এবং তাহ! হইতে ভিন্ন সত্ব! 
ধঘদি কিছু না থাকে; তবে তাহার ইচ্ছাই হইবে ম্বরাট্ু, কোন নিয়ম বা বাধ্যতার 
অধীন নহে। তিনি সর্বক্ষম। শূন্য হইতে তিনি জগৎ সৃষ্টি করেন। সকল 
পরিবর্তন এবং জঙ্গমতার উৎস তিনি, এবং প্রাক্কত কারণবাদ বলিয়া কিছু নাই। 
কোন বিধান নাই, ঘটনামাত্রই এক পরমাম্চর্য অতিলৌকিক সংঘটন। প্রাকৃত 


জগৎ মায়াবন্ধে রচিত । 
৮৮ 


, খীস্লামিক চিদ্ছাপায়ার বিকাশ 


বাকিল্লাজি (মৃত্যু ১০১৩ খ্বঃ অঃ), ফখক্রদ্দীন রাঁজী (মৃত্যু ১২২২ খ্বঃ অঃ ), 
সইস্ছুদ্ীন আঁমদী ( মৃত্যু ১২৩৩ ঘ্বঃ অঃ) এবং অন্তান্ত ব্যক্তিদের দ্বার! আশরী-পদ্থী 
কলাম পরিবধিত হইয়াছিল । আশরী-র সমসাময়িক, হানাফ-পন্থী কলামের 
প্রতিষ্ঠাতা মাতুরীদী (মৃত্যু ৯৪৪ খুঃ অঃ) অনেক বিবদ্বে আশরী-র সহিত মত 
পার্থক্য পোষণ করিতেন । পরবর্তীকালে হব্ন্‌ তইমীয় (মৃত্যু ১৩২৮ খ্ুঃ অঃ) 
আশরীয় শাঙ্্াহ্ছগত্যকে আক্রমণ করিয়াছিলেন, এবং আপন বিচারবাদী পদ্ধতি 
ব্যাখ্য1 করিয়াছিলেন | ইবৃন্‌ তইম্ীয় ছিলেন নব উদ্ভাবনের (বীদ1 ) পরম দ্বেষী, 
তিনি ছিলেন কোরান এবং হদ্দীথের আক্ষরিক অর্থে বিশ্বাসী একজন যথার্থবাদী। 
নরকপ-ঈশ্বর-তত্ববাদী (মুতাশাববীহ1 ) হিসাবে তাহার বিশ্বাস ছিল যে, ঈশ্বরের 
বিভূতি মাহ্ুষেরই অন্ন্ধপ, এবং অন্ত সমস্ত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তিনি প্রচণ্ড 
সমালোচনাকারী বিতর্ক-প্রবণ লেখক ছিলেন । তাহার ভাবধার। উগ্র বিতগ্ার 
স্থষ্টি করিয়াছিল, কিন্ত ভারতবর্ষ সমেত দূর দূর দেশগুলিতে তাহার প্রভাব 
বিস্তৃত হইয়! পড়িয়াছিল। 

দ্বিতীয় পর্যায়ের মনীষিগণ, ধাহারা হুকমা বা ফলাসিফা নামে পরিচিত 
ছিলেন, তাহার! সর্বাশ্ে বিজ্ঞান এবং দর্শনেরই অস্করাগী ছিলেন, যদিও বারবার 
একথ। বলার প্রয়োজন নাই যে, আধুনিক চিস্তাশীলেরা দর্শন এবং ধর্মশাস্ত্রের যে 
পার্থক্য নির্দেশ করেন, এস্লামিক চিস্তার সহিত তাহার কিছুমাত্র সম্বন্ধ নাই। 
কলামের ক্ষেত্রে এমন দেখা গিয়াছে যে, বাস্তব প্রয়োজনবশেই আরবগণ বিজ্ঞান 
এবং দর্শনের চর্চা সুরু করিয়াছিলেন । আরবদের বিজয় অভিযানের ফলে পারম্ঠ, 
মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া এবং মিশর তাহাদের অধিকারে আসিল। কিন্ত 
এই সমস্ত অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ইস্ল্লাম ধর্মের শিবিরে 
আনিতে আরবদের যথেষ্ট আগ্রহ ছিল না। কিন্ত, সময়ক্রমে তাহাদের বৃহৎ 
সংখ্যক অংশ ব্যক্তি-শুন্ধ হইতে অব্যাহতি লাভের জন্য ইস্লাম ধর্ম গ্রহণ 
করিয়াছিল । তাহাদের ধর্ষাস্তরগ্রহণের ফলে বিভিম্স ধর্মবিশ্বাসের সমর্থকদের 
মধ্যে মতবিরোধ এবং বিতর্কের স্ষ্টি হইয়াছিল । প্রাচীনতর সভ্যতাসমূহ- হইতে 
আগন্ধক ধর্মাস্তরিতগণ তাহাদেন্ন ভিন্নতর পরিবেশ হইতে আনীত ভাবধার! 
অহুসারেই নৃতন ধর্মমতের মর্মব্যাখ্যা গ্রহণ করিয়াছিল । 

বিরুদ্ধবাদীদের যুক্তির সম্মুখীন হইবার জন্য এবং ধর্মাস্তরিতদের সংশয় নিরস্ত 
করিবার জন্য অপর পক্ষগুলির ব্যবহৃত দ্বন্দমূলক পদ্ধতিসম্হ এবং তাহাদের দার্শনিক 
ধারণাগুলি গ্রহণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়াছিল। গ্রীক, পাবলিক এবং ভারতীয় 


৮৯ 
১৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


চিন্তায় ওতপ্রোত এক পরিবেশ হইতেই যু'তাজীলা-পহ্থী তত্বসমূহের যাব হুরু 
হইয়াছিল এবং মুঅম্মর (আহ্মানিক ৮&ৎ খৃঃ অঃ) নজ্জম (আহ্‌মানিক ৮৪৫ খৃঃ অঃ), 
এবং আবু হাসিম (মৃত্যু ৯৩৩ খ্বঃ অঃ) প্রভৃতি তাহাদের নেতাগণ মিশ্রমতবাদসমূহ 
গড়িয়] ভুলিয়াছিলেন । 

ভারতীয়, গ্রীক এবং সিরীয় গ্রস্থগুলির আরবী অনুবাদ হওয়ায় তত্বদর্শনের 
নৃতনতর প্রেরণা স্প্টি হইয়াছিল । আব্াস-পন্থী খলিফাগণ জ্ঞান-সাধনার 
পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, এবং তাহার] স্বয়ং যে বুদ্ধিবাদ গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহার 
সমর্থন সংগ্রহের জন্ঠ ত্তাহার1 উন্মুখ ছিলেন। মামুন নিজের চারিপাশে অনেক 
পঙ্ডিতকে সমবেত করিয়াছিলেন, এবং আলোচন1, অনুবাদ ও সংকলন কার্ষের 
জন্য একটি জ্ঞানসভ] (বায়তুল্‌ হীকমাত.) স্থাপন করিয়াছিলেন । 

গ্রীক ভাষা! হইতে অন্বাদকারীদের মধ্যে ছিলেন এ্যারিষ্টটুল্‌ ও প্লেটোর রচনার 
আরবী অন্ছবাদক হনাইন (৮০৯-৭৩ খুঃ অঃ) এবং তাহার পুত্র ইশাক (৮৭০-৯১০ 
থুঃ অঃ)। অন্যান্য অনুদিত গ্রন্থগুলি ছিল ই আলেকজাগারের আফ্রোদিসিয়াষের 
ও পরফিরিয়াসের টীকাসমৃহঃ এবং প্রটিনাসের এন্িয়াডের কিছু অংশ । অল্ কিন্দী 
(মৃত্যু আহুমানিক ৮৭৩ খৃঃ অঃ), ফারাবি (মৃত্যু ৯৫০ খুঃ অঃ), ইখ-বান-অল্- 
সফ। (পবিত্র ভ্রাতৃগণ, আহ্বমানিক ৯৭০ খুঃ অঃ), ইবৃন্‌ মস্কওয়াইব্‌ (মৃত্যু 
১০৩৯ ঘৃঃ অঃ) এবং ইবৃন্‌ সীন। (যৃত্যু ১০৩৭ খুঃ অঃ), ইহার! ছিলেন প্রাচ্যদেশে 
মুস্লিম দর্শনের ইতিহাসে খ্যাতনাম! পুরুষ । 

আরব দার্শনিকেরণ শ্রীকদের দ্বার যথেষ্ট প্রভাবিত হইয়াছিলেন একথা সত্য 
হইলেও ভারতের নিকট তাহাদের খণের কথ! অস্বীকার করিলে ভুল হইবে, এবং 
তাহাদের নিজম্ব মৌলিকতার পরিচয় অগ্রাহ করিলেও ব্যর্থচেষ্টা হইবে। 
এ্যারিষ্টটলের রচনাবলী সম্বন্ধে যদিও তাহাদের জ্ঞান ছিল অসম্পূর্ণ” এবং কোন 
কোন ক্ষেত্রে ভ্রাস্ত, এবং এমন সব ভাব-ধারণাকে তাহার] তৎ্-প্রণীত বলিয়া! মনে 
করিতেন, যাহা! আসলে নব্য-প্রেটোনীয়দের বিষয়, তবু তাহার! নিজেদের 
এযারিই্টুলের শিষ্য বলিয়াই মনে করিতেন। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তাহারা 
প্রেটোর রিপাঁবলিকের সহিত পরিচিত ছিলেন, কিন্ত গ্যারিষ্টটুলের পোলিটিকৃসৃ- 
এর সন্ধান তাহার। রাখিতেন না। 

আরব দার্শনিকদের প্রত্যেকের বিষয়ে পুঙ্ানগপুঙ্খ আলোচন] করার পরিবর্তে 
তাহাদের মুখ্য ভাব-ধারণাগুলি উল্লেখ করা! যাইতে পারে । অল্-কিন্পী হইতে 
পরবতী সময়ে যে ছইটি প্রধান দর্শনশাখায় তাহাদের আগ্রহ ছিল, তাহা! হইতেছে 


৩ 


ধন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


পরাবিজ্ঞান ও মনন্তত্ব। উতয় শাখাতেই তাহাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, গ্রীক এবং 
অন্তান্ত দার্শনিকদের নিকট হইতে যে ভাববস্তগুলি তাহার! গ্রহণ কারয়াছিলেন, 
ইস্লামের উগ্র একেশ্বরবাদী আকৃতির সহিত তাহাদের সামগ্রন্ত সাধন করা। 
পরাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রধানতঃ অদ্য়ত্ব এবং বহুত্বের সমস্তাই মুস্লিম 
দার্শনিকদের মনোযোগ অধিকার করিয়াছিল। ঈশ্বর অদ্বয়, ইহাই কোরানের 
উপদেশ । তিনি মহান্‌ এবং শক্তিমান্‌, তিনি বিশ্বের অষ্টা, গ্াবাপৃথিবীর অধীশ্বর, 
প্রকৃতি-জগৎ তাহারই আজ্ঞার অধীন, তিনিই আদি, তিনিই অস্ত, তিনিই আবিঃ. 
এবং তিনিই গুঢ়। চিন্তা ও কল্পনার অতীত তিনিই অদ্বিতীয় সত্য । এই 
এম্বর্ধগুলির তাৎপর্য এবং গুরুত্ব কি? একদল বিশ্বাস করিতেন যে, এগুলি মানবিক 
গুণাবলীর অনুরূপ, তাহার। ছিলেন নরন্ধপ-ঈশ্বর-বাদী (মুতাশাব্বীহ1 )। অন্যদল 
মনে করিতেন, ঈশ্বরের ভাবাত্মক এবং অভাবাত্বক গুণাবলী আছে সত্য, কিন্ত 
তাহার গুপের প্রকৃতি মানব-গুণাবলী হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন; বঁহারা ছিলেন 
কঠোর শাস্ত্রবিশ্বাসী ধর্ষতাত্বিকদল ( সীফাতীয়। )। মুতাজিল-পন্থীগণ এ্রশ্বরিক 
অদ্বয়তত্বের বিশুদ্ধতা রক্ষা করিবার জন্ত তাহার বিভূতিসমূহ বর্জন করিয়াছিলেন । 
তাহার! ছিলেন উদ্বার মতবর্জনকারীদল (মু'আত্তীল1)। তৃতীয় শ্রেণীতে ছিলেন 
দ্রার্শনিকগণ । তাহাদের মতে ঈশ্বর হইতেছেন নিশ্চয়াত্বক আদি সত্তা, এবং অন্যান্য 
সকল সত্তার উৎপত্তি-কারণ তিনি । তিনি সৎ, অহেতুক তাহার সত্বা । তাহার সত্তা 
জড়মুক্ত এবং আকারবিহীন। তাহার সত্তাই তাহার স্বরূপ। তিনি অদ্বিতীয় এবং 
পূর্ণ__মহৃত্বে, সৌন্দর্যে এবং স্বরূপে তিনি পুর্ণ। তিনি অনির্ণেয় এবং অবিভাজ্য। 
ঈশ্বরের স্বব্ূপশক্তির বাহিরে তাহার কোন 'এশ্বর্য:নাই। তিনিই বুধ, তিনিই 
বুদ্ধি তিনিই বোধ্য। তাহার বুদ্ধি আপনাকে অতিক্রম করিয়া অন্য কোন 
বোধোপায়ের উপরে নির্ভর করে না। তিনিই জ্ঞান, তাহার জ্ঞান অন্ত কোন 
বহিরঙগ বিষয়ের অপেক্ষা! রাখে না । তিনিই জ্ঞাত], কারণ তিনি চিন্ময়, জ্ঞানই 
তাহার ত্ববক্ধপ। সত্য, জীবন এবং অমেয় আনন্দ তিনি । ঈশ্বরই প্রেম। 
কোরান নানা নামে ঈশ্বরকে বিশেষিত করিয়াছে । এক্প হুন্দর নামের 
নিরানব্বইটি সেখানে উল্লিখিত আছে। দার্শনিকদের মতে এই নাষগুলির অর্থ 
এই নয় যে, ঈশ্বর-প্রকৃতি একটি যৌগিক 'বিষয়, অথবা! তাহার প্রশ্বর্যাবদী তাহার 
স্বরূপ হইতে ভিন্ন। অদ্বয়ত্ব এবং অবিভাজ্যতাই ঈশ্বর-প্রককতির স্বরূপ-পরিচয় । 
কিন্ত সত্য যদি অধ্য় হয়, তবে বিশ্বের বৈচিজ্র্যের ব্যাখ্যা কি? এক কিভাবে 
বনু হইয়াছে? ঈশ্বর যদি কেবল আত্মচিস্তা-নিবিষ্ট চিচ্ছক্তি$ হন, অথবা যদি 


টি» 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


ত্বয়ং অচল হহইয়াও গতির প্রেরক হন, তবে তাহার একাস্ত নির্জনতা হইতে কে 
তাহাকে বাছিরে আকর্ষণ করে ? শ্ষ্টা কেনই বা স্প্টি করেন ? 

মুস্লিম দার্শশিকদের উত্তর এই যে, এই স্থষ্টি, অনেকাত্বক এই জগৎ ইহ! 
ঈশ্বরেরই প্রসাদ (ফায়জ.)। তাহার প্রশী প্রসাদেই তিনি স্ক্টিলোকে প্রবেশ 
করেন। তাহার অনাদি চিচ্ছক্তিই তাহা হইতে ভিন্ন অপর সকল সম্ভার 
স্থহ্ি-কারণ। তাহার ভাবনাই তাহার কৃতি । নিসর্গ-ম্ভাব সম্পর্কে তাহার 
জ্ঞানই নিসর্গ-শৃঙ্খলাঁর মূল। : 

এই স্মষ্টি-প্রক্রিয়ার মধ্যে ছুটি মৌলিক তত্বের প্রয়োগ আছে। প্রথমতঃ এক 
পুর্ণ অদ্বয় সত্তার মধ্য হইতে অনধিক একটি সম্ভাই আবিভূতি হইতে পারে । 
দ্বিতীয়তঃ সত্তার ছুইটি লক্ষণ আছে, হয় তাহ] নিশ্চয়াত্মক (মুাজীব.), নয় তাহা 
সভাব্য €( মুমকিন্‌); হয় তাহা স্বরূপ €(আ-ইন্‌), অথবা তাহা সম্ভ। (যুজুদ )। 
একমাত্র ঈশ্বরের ক্ষেত্রেই শ্বব্ধূপ এবং সত্তা একীভূত, অন্ত সকল সত্তার ক্ষেত্রে 
অস্তিত্ব হইতে স্বরূপ ভিন্ন, যাহার অর্থ এই যে, সকল যথার্থ সতাই স্বর্ূপতঃ 
সম্ভাব্য. এবং অ্্টার কার্ধেই তাহার] নিশ্চয়াত্বক হয়। অতএব সকল সত্তার 
মধ্যেই দ্বৈতত্ব বর্তমান । 

নিশ্য়াত্মক সত্ভ! হইতে প্রথম উৎপত্তি সংখ্যায় একটিমাত্র, তাহা হইতেছে 
প্রথম বুদ্দি। একদিক দিয়! ইহার অস্তিত্ব আত্ম-স্বভাবে সম্ভাব্য এবং প্রথম সত্তার 
সম্বস্ধযোগে তাহ! নিশ্চয়াত্মক ; অন্ত দিকে ইহা আপন স্বব্ধপকেও জানে, আবার 
প্রথম সত্তার স্বর্ূপকেও জানে । ইহার দ্বৈত অস্তিত্ব-_সভাব্য ও নিশ্চয়াত্বক, 
অতএব ইহ বহুত্বের উৎ্স-স্বরূপ। প্রথম বুদ্ধির ত্রিবিধ জ্ঞান আছে-_প্রথম সত্তার 
জ্ঞান, আপন নিশ্চয়াত্বক ্বরূপের জ্ঞান এবং ইহার সভাব্য সত্তার জ্ঞান, সুতরাং 
প্রথম বুদ্ধি হইতে তিনটি সত্তার আবির্ভাব হয়: দ্বিতীয় বৃদ্ধি, প্রথম আত্ম! এবং 
প্রথম নক্ষত্রলোৌক | দ্বিতীয় বুদ্ধি হইতে আবিভূতি হয় অপর এক বৃদ্ধি, দ্বিতীয় 
জ্যাতির্লোক এবং তাহার আত্বা। এইভাবে আবির্ভাব-ক্রম চলিতে চলিতে 
অবশেষে দশম বা সর্বশেষ বুদ্ধির সহিত আবিস্ভতি হয় চন্দ্রের নবম লোক ও তাহার 
আত্বা। সর্বশেষটিই মানব-আত্মার এবং যে চারিটি ভৌতিক পদার্থ হইতে সমগ্র 
জীবকুল স্থষ্ট, তাহার উত্তবের কারণ। 

দশটি বুদ্ধির আবির্ভাবে একটি স্তর-পরম্পরার উত্তব হইয়াছে । প্রথম বুদ্ধি 
প্রথম সম্ভার সর্বাপেক্ষা! নিকটবর্তী, ইহার স্বানই সর্বোচ্চে, এবং অন্ত সকলের 
অপেক্ষা! ইহা শ্রেষ্ঠ । এক-কেন্ত্িক ক্ষেত্রসমূহের বিন্তাসে সর্বশেষে যাহার স্বান। 


৯৭ 1৮৮ 


এন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


গেই জড়বস্ত হইতে ইহ! লর্বাপেক্ষ। দূরবর্তী । পৃথিবী এই বিস্তাসের কেন্দ্র, এবং 
তাহা গতিহ্ীন। আটটি গ্রহলোক পৃথিবীকে ঘিরিয়! আবর্তিত হইতেছে, এবং 
নবম ক্ষেত্রের বাহিরে আছে তুঙ্গতম স্বর্গ অথবা নিশ্চল তারকার মহালোক । 
ক্ষেত্রসমূহ নিয়ত চক্রপথে আবতিত হইতেছে । ক্ষেত্রের আত্মাই ক্ষেত্রকে চালিত 
করে, কিন্ত আত্ম! তাহার চালক-শক্তি সংগ্রহ করে নেই ক্ষেত্রের সহিত যুক্ত বুদ্ধি 
হইতে । প্রথম সম্ভাই সমস্ত ক্ষেত্রগুলির মূল চালক, কারণ দশটি বুদ্ধিই তাহার 
অভিমুখে আনত, তাহার নিকট হইতেই তাহার] আকার এবং পূর্ণতা লাভ করে । 
সুতরাং বুদ্ধিলমূহ প্রথম সত্তার প্রতি যে আকর্ষণ পোবণ করে, তাহাতেই বিশ্ব 
সচল হয়। ঈশ্বরের প্রেমই বিশ্ব-সঞ্ালক আদিম গতি। 1. 

সর্বনিয় লোকের দশম বুদ্ধিটি জ্যোতির্লোকগুলির আবর্তনে কোন সাহায্য 
করে ন1। এই বুদ্ধিটি আমাদের জগতে সক্র্রিয়। অন্তান্ত দ্বিব্য এবং লৌকিক 
বৃদ্ধিসমূহ হইতে প্রাপ্ত আকার যে গ্রহণ করে, সেই নিক্ষিয় এবং প্রথমতম জড়বস্তকে 
(হাসল ) ইহা! উৎপন্ন করে। যে চারিটি ভৌতিক পদার্থের ফৌগ-বিয়োগে 
সমগ্র বস্ত পদার্থের জন্ম এবং জরাপ্রাপ্তি ঘটে, প্রথমতম জড়বস্তটি ভাহার ভিত্তি- 
স্বরূপ । কিন্তু ক্ষেত্রসমূহের নিয়মবদ্ধ শৃঙ্খল! ও এঁশ বিধানের ক্রম অন্ুমরণ করিয়সই 
এই সকল রূপাস্তর লংঘটিত হয় । 

নিপসর্গ-নিয়মের বিধিবদ্ধতার অর্থ এই যে, সমস্ত বস্তর গতিপথই পূর্বনিয় স্ত্রিত। 
যাহ! অনিমস্ত্রিত বলিয়! মনে হয়, তাহার সাক্ষাৎ এবং পরোক্ষ কারণগুলি আমর! 
জানি না বলিয়াই এরূপ বোধ আমাদের মনে জাগে । 

দশম বুদ্ধি ব1 সক্রিয় বুদ্ধিই (আকৃল ফাআল্‌) আকারসমূহের শর্টা (ওয় হীবুল্‌ 
মাওাঁর ) ইহ1 যেমন প্রত্যেক জড়বস্কে তাহার আকৃতি দান করে, তেমনই প্রত্যেক 
আক্কৃতি যখন আত্ম। লাভের জন্ প্রস্তৃত হয়, তখন তাহার্দের আত্ম। দান করে। 
আত্মা এক সরল অবস্ত পদার্থ, এবং বুদ্ধিগ্রাহ আকারস্মূহকে ইহ অধিগত করিতে 
পারে। ইহা অদ্বিতীয়, অজর এবং অমর। মানবসত্তার সমগ্র তত্বই ইহাতে 
বিধৃত। বিভিন্ন তারতম্যের ছুঃখ-স্ুখ অভিজ্ঞতার অবলানের পর এবং দেহের 
মৃত্যুর পরও ইহা উদ্ব.স্ত থাকে । 

আত্মার নান! কর্ম, অবস্থা ও ওণ (কুয়া) আছে। সক্রিয় বৃদ্ধিই আত্মার 
আধ্যাত্মিক মুল, তাঁহার দিব্য লক্ষণম্বর্ূপ। মানব-বুদ্ধিকে ইহা! উজ্জ্বল এবং 
ক্রিয়াশীল করিয়! তোলে। ইহ! যেন প্রন্থপ্ত দর্শনক্ষমতা-সম্পন্ন দৃষ্টির কাছে 
সর্ষের আলো! | যখন ুর্যালোক ছড়াইয়! পড়ে, তখন যে দর্শনশক্তি প্রদ্থণ্ড ছিল, 


৯৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিছাঁল 


তাহা! সক্রিয় হয়। দেহের সঙ্গে আকারের যে সম্বন্ধ, মানব-বুদ্ধির সহিত সক্কিয় 
বুদ্ধির সম্বন্ধ সেইক্সপ । | 

মানব-বুদ্ধি তিনটি স্তর-্পরম্পরা সমম্বিত। সবধনিয় স্তরে আছে উদ্ভিদ্ধরমী 
আত্মা» আহরণ, পুষ্টি এবং প্রজনন যাহার কার্য; উচ্চতর স্তরে আছে পশুধর্মী আত্মা, 
যাহার ছুইটি লক্ষণ-_প্রত্যক্ষবোধ এবং চরিষ্ণাত] | প্রত্যক্ষবোধের ভাগে পাচটি 
বহিরঙ্গ এবং পাঁচটি অস্তরঙ্গ ইন্্রিয়শক্তি আছে (সংবেদন, প্রত্যক্ষাহুভূতি, ধারণা, 
কল্পনা এবং শ্বতি )$ সর্বোচ্চ স্তরে আছে বুদ্ধিধর্মী আত্মা, যাহার একটি ফলিত 
বিভাগ এবং একটি তত্বপ্রধান বিভাগ আছে। হর্ষ, শোক, হাম্ত প্রভৃতি আবেগ- 
প্রধান অবস্থাগুলি ফলিত বিভাগের অন্তভূক্ত । তত্বপ্রধান বিভাগটি চার পর্যায়ে 
বিভক্ত £ (১) প্রহ্থপ্ড বুদ্ধি ( আকলে হ্বায়ূলানী ), অর্থাৎ মাছষের বোধের সহায় 
যে বুদ্ধিশক্তি; (২) অভ্যাসগত বৃদ্ধি ( আকলে বীল মালাকা), যে বুদ্ধি জ্ঞানের 
তত্ববিষয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত ঃ (৩) কর্মঠ বুদ্ধি (আকলে বীল ফীইল), বুদ্ধিগ্রাহ 
বিষয়সমূহে যাহার প্রয়োগ ঃ এবং (৪) অর্জিত বুদ্ধি আকলে মুস্তাফাস্দ ), বা 
সক্রিয় বুদ্ধি আকার-নির্মাতার দানস্বরূপ যাহ। লব্ধ । 

মানব-বুদ্ধি 1 আত্মার চারিটি পর্যায় মিলিয়! জড়বস্ত এবং আকারসমূহের একটি 
ক্রমারোহী স্তর-পরম্পর] গড়িয়া তোলে। প্ররন্থপ্ত বুদ্ধি দৃশ্যমান জগৎ হইতে 
সংবেদনগ্রাহ তথ্যগুলি গ্রহণ করে, অভ্যাসগত বুদ্ধি এবং কর্মঠ বুদ্ধি সংবেদনের 
তথ্য হইতে যথার্থ বোধের বিষয়গুলি সংগ্রহ করে; তখন জড়মুক্ত আকারব্ধপে যাহ! 
বস্তর মধ্যে প্রস্প্ত অবস্থায় ছিল, তাহ! বুদ্ধির জগতে প্রকট হইয়া উঠে, এবং বুদ্ধি- 
দ্বারা আয়ত্ব বিষয়ন্ধপে চিস্তার অঙ্গীভূত হইয়া যায় । বিশুদ্ধ বৌদ্ধিক বিষয়গুলি 
অবশ্ঠ জড়বস্ততে প্রত্থপ্ত অবস্থায় ছিল ; অঞ্জিত বুদ্ধি বোধির সাহায্যে সেই রূপাতীত 
আকারসমূহ আয়ত্ত করে, সংবেদনগ্রাহ তথ্যের সহিত যাহার সম্পর্ক নাই। 
মানবদেহাশ্রিত মানব-বুদ্ধির বিবর্তন সাধিত হয় সক্রিয় বুদ্ধির দ্বারা, যাহা 
বিশুদ্ধ আত্মা । 

তৃতীয় তত্বপস্থাটির উত্তব হইয়াছিল মরমিয়! সম্প্রদায়ের মধ্যে । এই তত্বপন্থার 
উদ্ভব লন্ধান করা যাইতে পারে কোরানের মধ্যে, যেখানে মরমী তাঁৎপর্য-স্ছচক 
কতকগুলি শ্লোক সন্নিবিই আছে। কিন্ত মরমিয় তত্বের প্রতি প্রবণতাবিশিষ্ট মুসলমান- 
দ্বের প্রাচীনতম দলগুলি ছিল বৈরাগ্য-ধর্মী সম্প্রদায়, ধাহার| ধ্যানে ও আরাধনায় 
নিঃশেষে মগ্ন থাকিবার জন্ত মন্ত্য প্রলোভন হইতে মুক্ত থাকিতে ইচ্ছা করিতেন । 
তাঁহার] প্রবল আধ্যাক্সিক আবেগের দ্বারা চালিত হইয়াছিলেনঃ এবং ধর্মীয় 


| রি 


স্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


নির্দেশের অন্সরণ ও ধর্মীর ক্রিয়াসমূহের অনুষ্ঠান অপেক্ষা অন্মরের সংযষ এবং 
পবিত্রতার উপরেই তাহারা অধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছিলেন । বৃদ্ধির জগতে 
কিছু আবেদন আনিলেও যে দার্শনিক যুক্িজাল তাহাদের ধর্মীয় নির্ভরতার আকুল 
আকাজ্জাকে চরিতার্থ করিতে পারে না, শুধুমাত্র তাহা! লইয়াই তাহার! তৃপ্ত 
ছিলেন না । | 

ইহাদের মধ্যে ছিলেন ঈশ্বর প্রেরিত পুরুষের কয়েকজন সঙ্গী, ধাহার] সন্গ্যাসী 
(জ.হ.হা”্দ), ধর্মপ্রচারক (কাস্‌ সাস্‌), তাপস ( শকৃকাউন ), শুদ্ধসত্ত (নাস্মাকৃ ) 
প্রভৃতি নানা নামে পরিচিত ছিলেন। তাহার! আত্মপীড়নে এবং ধ্যানে 
নিযুক্ত থাকিয়] নির্জনে বাস করিতেন । পাপ সম্বন্ধে তাহাদের মনে একটি জাগত 
চেতন! ছিল এবং এঁশ প্রতিবিধান সঘন্ধে তাহাদের মনে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছিল, 
এই ছুই মনোভাবই যিনি মহান্‌ সচেতক, সেই ঈশ্বর প্রেরিত পুরুষের প্রেরণাময় 
উপদেশ হইতে সঞ্চারিত হইয়াছিল । অতঃপর অষ্টম শতাব্দীর প্রায় শেষভাগ 
হইতে সুফী নামটি ব্যবহৃত হইতে লাগিল। ইসলামের দ্বার যাহ! আদিষ্ট 
(আম্র্‌) এবং যাহ] নিষিদ্ধ (নাহী) ছিল, তাহা প্রথম যুগের স্থুফীগণ নিষ্ঠার 
সহিত মানিয়! চলিতেন, কিন্ত তাহাদের জীবনাদর্শ ছিল ত্যাগ, আত্মবঞ্চনা এবং 
দারিদ্র্য। উপবাস ও ঈশ্বরের সহিত আদান-প্রদানের €জ্বীকৃর্‌ ) মধ্য দিয়া 
ভাহারা অতিসাধনে নিযুক্ত থাকিতেন। মরমিয়] পদ্থা (তারিক ) অন্থসরণ 
করিয়া যে ঈশ্বরদর্শন ও ঈশ্বরমিলন সম্ভব হয়, একথা তাহার] বিশ্বাস করিতেন । 

যে পথ (তারিক।, সুলুকৃ) অহ্থসরণ করিয়া লক্ষ্যলাভ বা ঈশ্বরের সহিত 
মিলন হয়, ছুফীদের পক্ষে আধ্যাত্মিক জীবন হইয়1 উঠিয়াছিল সেই পথে যাত্রার 
(নাফ.র্) মত। যাত্রার নান। পর্যায় আছে, এবং প্রতিটি পর্যায়ে (মাকাস্) 
অঞ্জিত পুণ্যের প্রকৃতি অহৃসারে সমাহ্থপাতিক অবস্থাসমূহ (হা”ল) আছে। 
পথের পথিকের পক্ষে কতকগুলি নিয়ম-শৃঙ্খল থাকে যাহ] দক্ষ ব্যক্তির! জানেন। 
এই জ্ঞান (মাআবি ফাৎ্) অবশ্য সাধারণ জ্ঞান হইতে ভিন্ন, কারণ ইহ! যেমন 
অন্তরের জ্ঞান ( ঈল্মুল কলুব.) অপরটি তেমনই বুদ্ধির প্রয়োগ-সঞ্জাত বস্তু এবং 
ঈশ্বর-প্রসাদের (ফায়জ) বিশেষ চিহ্ন (ফাওায়েদ্‌ ) ছাড়া কেহই ইহ! লাভ 
করিতে পারে না । এই জ্ঞানের লক্ষ্য মহাজাগতিক চেতন। ও সিদ্বদৃষ্টি লাভ করা 
এবং পরম সত্যের সহিত আনন্দময় মিলনে তন্ময়তা উপভোগ কর]1। 

আফি যুগের স্ুফীগণ ক্রমশঃ তাহাদের উপদেশের মধ্য দিয়! এই ধারণাগুলি 
প্রচার করিয়াছিলেন ; যেমন, ধুল নুন মিআ্রী বা মা”রিফতের তত্ব) বয়াজিদ বিস্তামী 


৪৪ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাঁস 


প্রচারিত ফণার তত্ব) খর্রাজ প্রচারিত আইন উল্‌্-জমার তত্ব; ব্যক্তিতে 
দেবভাবারোপ বা মাহুষেরএশ-স্বভাব সম্পর্কিত মনম্থর অল্-হল্লাজ কর্তৃক 
প্রচারিত তত্ব। 

৯২২ খ্রষ্টাব্দে মনস্থরের প্রাণদণ্ডের পরেই পদ্ধতীকরণের যুগ আরস্ হইয়াছিল 
এবং অনেকগুলি গ্রস্থ রচিত হুইয়াছিল। আবু নসর্‌ উল্‌ সর্রাজ লিখিত “কিতাব 
উল্‌ লুমা” কলাবাধী রচিত “কিতাব উল্‌ তাআরুফ” মন্তী রচিত “কৃত উল্‌ কুলুব”, 
স্ুলমী রচিত “তবকাত, উল্‌-স্থফীয়', ইস্বহানি রচিত “তবকাত, অল্‌ আসফীয়?, 
কুশইরী, রচিত “রিসাল কুশইরীয়” হুজবীরী রচিত “কশফুল মজহুব* প্রভৃতি 
তাহার নিদর্শন | 

দ্বাদশ শতাব্ৰীর শেষভাগে তসব্বূফ এমনভাবে মুসলমানদের চিত্তকে অধিকার 
করিয়াছিল যে, সমস্ত সম্প্রদায়ের চিন্তাই ইহার দ্বার] অন্রঞ্জিত হইয়! গিয়াছিল, 
এবং প্রথম স্চনায় যাহার প্রতি বক্র দৃষ্টিপাত ঘটিয়াছিল, তাহাই শেষে প্রতিষ্ঠিত 
মতবাদের অঙ্গীভূত হইয়! গিয়াছিল। ইমাম ঘজালী ( ১০৫৮-১১১১ খুঃ অঃ) 
যিনি ইস্লামের শ্রেষ্ঠ তাত্তিকরূপে, ইসলামের প্রমাণ (হুজ.জাতুল ইস্লাম ) রূপে, 
গণ্য হইয়াছেন, ইহ1 বিশেষভাবে তাহারই কৃতিত্বের ফল। দর্শনশাস্ত্রের গভীর এবং 
ব্যাপক অঙহ্থশীলনের পর তিনি এই সিদ্ধান্তে আসিয়াছিলেন যে, ইহা অপূর্ণ এবং 
অতৃপ্তিকর, এবং যে সন্দেহরাশি হৃদয়কে পিষ্ট করে, তাহার অবসান করিয়া, 
জীবনের সঠিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্ব।স এবং আস্থা একমাত্র বাক্িগত 
উপলব্ধি, আত্মপ্রভা এবং বিমলালন্দই দান করিতে পারে । তিনি মরমিয়াবাদের 
সহিত এঁদ্লামিক উপদেশের সমন্বয় সাধন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, এবং 
শাস্্রমত ও ধর্মতত্বের ব্যাখ্য। প্রসঙ্গে যুক্তিবাদী পদ্ধতির প্রয্নোগ করিয়াছিলেন । 
চিত্ত যথার্থভাবে সংযত থাকিলে ইন্দ্রিয়াহ্ছভূতির মধ্যস্থতা ছাড়াই যে ধর্মজ্ঞান বা 
গুহাহিত তত্বকে লাভ করা যায়, এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহা তথ্যের উপরে যে এ্রহিক 
জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা এই ছই প্রকারের জ্ঞানের পার্থক্যের ভিত্তিতেই তাহার মতবাদ 
গড়িয়। উঠিয়াছিল। ধর্মজ্ঞান বা! নিগুঢ আধ্যাত্মিক তত্বান্বেষণের জন্য প্রয়োজন 
ধর্মবিধির নির্দেশ ( শারীয়াত.) পালন কর।, অহ্ুভাপ ( তাওব। ), ত্যাগ (ফাকর্‌), 
দেহ-গীড়ন € তাজকিয়ায়ে নফস্‌), নির্ভরতা ( তাওয়াকল ), এ্রক্যের (তওহীদ্‌ ) 
পথ অহুসরণ করা, এবং যে যোগ (জীকৃর্‌) ও ধ্যান (মোরাকাবা ) পরিশেষে 
তত্বপ্রভ1 ও বিমলানন্দ স্ষ্টি করে, তাহ! সাধন করা । এইভাবে পথযাত্্রীর 
সমগ্র পত্তাই ন্বপাস্তরিত হয়, বাসন| এবং আবেগ প্রশমিত হয়, জাগতিক বিষয়সমূহ 


৬ 


.. রস্লাসিক চিন্তাধারার বিকাশ 


হইতে মুক্ত হইয়! চেতম| ঈশ্বরে নিবিষ্ট হয়, এবং সর্বশেষে মরমী সাধক সিদ্ধদৃ্রিৎ 
লাভে ধন্য হন, যাহাতে তিনি অহং হইতে প্রয়াণ (ফ"ন1) করিয়া! এ্রশী সত্তায় 
সাযুজ্য (বাকা ) লাভ করেন। 

ঘঙ্গালীর প্রভাব ছিল ব্যাপক এবং স্থায়ী। দার্শনিকদের মধ্যে ইবৃন্‌ তূফাইল 
(মৃত্যু ১১৮৫ খ্ঃ অঃ) ছিলেন তাহার অহ্রাগী, কিন্ত স্থফীদের মধ্যে কয়েকজন 
মহান সম্প্রদাক়-প্রতিষ্ঠাতা তাহাকে তাহাদের নেতান্ধপে শ্বীকার করিয়াছিলেন । 
কাদিরীয় সম্প্রদায়ের প্রেরণাদাত৷ আব্দুল কাদির জীলানী (১১৬৬ খৃং অঃ), 
রিফাইয় সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ অল্‌ রিফাঈ (১১৮২ থৃঃ অঃ), এবং 
কুহরাবর্ীয় সম্প্রদাহের শিহাব অল্‌ দ্বীন সুহরাঁবদি (১২৩৪ খ্বঃ অঃ) ঘজালীর 
উপদেশই অনুসরণ করিয়াছিলেন। 

আবার মুসলিম মরমিয়া তত্বজ্ঞানীদের মধ্যে যিনি সর্ধপ্রধান, সেই মুহী 
অল্-দীন ইব্‌ন অল্-আরবী (১১৬৪ খ্বঃ অঃ) ঘজালীর দ্বার প্রভাবিত হইয়াছিলেন। 
ইবৃন্‌ অল্-আরবী পরম শ্রেষ্ঠ মরমিয়। দার্শনিক ছিলেন। তাহার আবির্ভাবে 
মরমিয়] দর্শনতত্ত চূড়াস্ত পর্যায়ে উপনীত হইয়াছিল। তাহার পরে আবিষ্ভূতি 
মরমিয়াবাদের লেখকগণ নূতন তত্বপন্থার উদ্ভাবক ছিলেন না, ছিলেন টীকাকার 
এবং ব্যাখ্যাতা। তাহার পূর্বে আবিভূ্তি মরমীদের ধারণাগুলি সংগ্রহ করিক়! 
তিনি সেগুলিকে সর্বেশ্বরবাদী তত্তপদ্ধতিরূপে গ্রথিত করিয়া! তুলিয়াছিলেন, যাহ! 
যুগপৎ মুসলিম কবিতা ও স্থফীপন্থী মতবাদের প্রেরণান্বরূপ হইয়। উঠিয়াছিল। 
ইবৃন্অল্‌ আরবীর দর্শনের মূলে ছিল সত্তার এঁক্যের (ওয়াহ.দাতুল মুজুদ্‌্) বোধ । 
তাহার মতে সকল সভাই এক, এবং পূর্ণ অন্য স্বর্ূপ। এই পরমসত্তাকে মানব- 
বুদ্ধির সবার জানা যায় না, ঈশ্বর ব্যতীত কেহ তাহার অতিবর্তা স্বভাবকে জানেন 
ন।, অথবা তাহার স্বব্ূপগত অধ্বয় পরিচয়কে পূর্ণব্ূপে উপলব্ধি করিতে পারেন ন]1। 
ইহার মধ্যে কর্তা-কর্মের দ্বৈতত্ব নাই বলিয়! ইহ! সকল বিধেয়ারোপ হইতে মুক্ত। 
ইহাকেই বলে একাত্স (আহাদীয়1) দশ! 

এই অথ্বস্পত্ব যতদূর পর্যস্ত বুদ্ধিগ্রাহ* তাহ! হইতে এমন একটি সত্যের ধারণা 
গড়িয়া! উঠে যাহাতে সর্বাতিশস্িতার সহিত সর্বাশ্রপ্িত1 সংযুক্তভাবে বিরাজমান । 
এই পরমসত্য সর্ভাধীন, স্থ্ট ও কারণ-সঞ্জাত (খল্ক্‌) সত্তার বিপরীতক্ধপে 
পরমসত্তা নিশ্চয়াত্মক সত্তা, স্বয়স্তু তঘবনিদান ইত্যাদি (হকৃ) নানা পরিচয়ে জ্ঞাত। 
কিন্ত হকৃ (সত্য; ম্বব্ষপ অদ্বয় ) এবং খল্ক্‌ (আভাস, আকৃতি, বনু) আসনে 
অদ্বয়েরই অস্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ ছুটি লক্ষণ। ইবৃন্‌ অল্*আরবী বলেন, "তুমি যদি 


৯৭ 


১৩ 


প্রাটা ও খাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহার্স 


তস্থারই মধ্য দিয়া জাহাকে মান, তবে তিনি নিজের মধ্য দিয়া নিজেকে মানিবেন, 
তাহাই এক্যদশ1 ) কিন্ত তুমি যদি তোমার মধ্য দিয়! তাহাকে মান, তবে এঁক্য 
অন্তঠিত হয়।” বিধেম্-আরোপ অর্থাৎ প্রকার-সিদ্ধির ফলেই অন্বয়ের বহত্ব 
সম্পার্দিত হয় । অন্বয় স্বয়ং সরল এবং অবিভাজ্য | 

কিন্ত যদিও অন্বয় এবং বহু মূলতঃ এবং স্বরূপতঃ এক, তবু বহুর বিধেয়ষমুহ 
হইতে অধ্ধয়ের বিধেয়গুলির পার্থক্য নিবূপিত হওয়1 প্রয়োজন । অদ্বয় সকল 
আকারের অতিবর্তী 9 বহুর দুইটি লক্ষণ আছে-_এঁক্যলক্ষণ (জিহাতুল জামা ) এবং 
বিভেদলক্ষণ (জিহাতুল ফার্ক,)। প্রথমটি নিশ্চয়াত্মকতা৷ (যুজ্জ.ব), অধ্যক্ষত৷ 
(রুবুবীয়া ), এবং চিরস্তনত1 (কীদাস্‌) দ্বার] চিহ্িত, এবং দ্বিতীয়টি সর্তাপেক্ষা 
( ইম্কান্‌ ), বশ্টতা ( উবুদীয়া ), এবং কাঁলাধীনতা ( হুছ্‌স্‌) দ্বার] চিন্তিত । 

হকৃ এবং খল্ক, ঈশ্বর এবং বিশ্ব, শ্ব্ূপতঃ: এক, ক্ছুতরাং উভয়ে একই চিরস্তনতার 

ংশী। একটি হইতেছে পরমসত্যের সর্বাতিশয়ী ব্বপ, এবং অন্ত সর্বাশ্রয়ী বূপ। 

অদ্ধয় বকে স্টি করে না, স্ষ্টি (তাকীন্) আসলে পুর্ব হইতেই বিদ্বমান 
এক সত্তার প্রকাশরূপায়ণ মাত্র। শাশ্বত সত! প্রন্থপ্ত অবস্থা (স্ুবৃত,) হইতে 
বহিরঙ্গ আভাসের ( অনহুর্‌ ) আবরণে কালাধীন অস্তিত্বে অতিক্রমণ করেন। 
বিশ্ব অস্তিত্ব অর্জন করে ন1, ইহা বহিরঙ্গ অস্তিত্বের ও সন্বন্ধের (নিসাব্‌) 
বিবৃতি (আহকাম্‌) লাভ করে মাত্র। 

যে বিশ্ব ঈশ্বরের চিরস্তনতার সমভাগী, তাহ! ঠিক এই আমাদের পরিচিত বিশ্ব 
নয় | চিরস্তন বিশ্ব হইতেছে স্বরূপ» আকৃতি নয়; শেষোক্তটি স্ষ্ট (হাদ্দিথ.), 
সর্ভাধীন এবং অ-সৎ। 

অতএব ইব্‌ন অল্-আরবীর মতে আমাদের জ্ঞানের সহিত সম্পিত পরম- 
সত্যের তিনটি আকার আছে £ 

€১) যে পরমসত্য বহির্জগতে দ্ধপায়িত, এবং চিদৃ-বিষয়ন্পে যাহা আমাদের 

প্রত্যক্ষীভূত এবং পরিজ্ঞাত ; 
(২) যাহার সম্বন্ধে আমরা কেবলমাত্র অস্তিত্ব ব্যতীত অন্ত কোন বিধেয় 
আরোপ করিতে পারি না, সেই সর্বাতিবর্তী পরমসত্তাবূপ সত্য ; 

€ত) যে.পরমসত্য অহ্থমান-সিদ্ধ অস্তিত্ব, বোধির দ্বারা অধিগত। প্রথমটি 
অবভাধিত বিশ্ব, দ্বিতীয়টি পরমসত্ত1ঃ তৃতীয়টি আমাদের নিজম্ব বিশ্বাস-স্থষ্ 
ঈশ্বর । প্রথমটি এবং তৃতীরটি পারস্পরিক সন্বন্ধযুক্ত, উভয়েই সগুণ ; প্রথম|টির ৭ 
সর্বাশ্ররিত। (পি ফাতুল তাস্বীহ,)। তৃতীয়টির গণ সর্বাতিবতিত! (সি ফাতুল 


নল 


উস্লামিক চিন্তাধারার বিফাশ 


তান্জীহ ) ঈশ্বরের খধ্যে অন্বয়ত্ব বৈচিত্র্যের সহিত যুক্ত হইয়া আছে, তাহ! 
বহত্বের মধ্যে এঁক্য, এবং তাছ। এুণী অভিধাসমূহের এঁক্য € ওয়াহদীয়াত.)। 

দ্বিতীয়টিতে বহুত্বের অবকাশ নাই, ইহার এ্রক্য (আহবদীয়াত২.) সফল 
সম্ভাবনার সমগ্রত1 লইয়| ১ ইহ জ্ঞানের বা আরাধনার বিষয় নহে, ইহা 'অত্তিতব- 
নাস্তিত্বের আবরক এক অন্ধত1 (আ 'মা)। ঈশ্বর আবার অন্ত দিকে আমাদের 
বিশ্বাস-নির্ভর বিষয়, আমাদের আত্মবিষয়ক জ্ঞানের সাহায্যে তিনি পরিজ্ঞাত, 
সুতরাং আমাদেরই দ্বার! স্ষ্ট । নীতিশাস্ত্র এবং ধর্মতত্বের ব্যক্তিরূপী ঈশ্বর আসে 
অস্তরালস্থিত পরম-তত্বেরই ছদ্সব্ষপ। 

অবভাসের জগৎ এবং ঈশ্বর, বহু এবং এক, এই ছইয়ের মাঝখানে পরম- 
সত্যের প্রথম নামক্পপায়ণ (আল্তাইয় মুন আল আওয়াল্‌) হয়ঃ ইহাই লিজের কাছে 
ঈশ্বরের প্রথম আত্ম-প্রকাশ ( তাজাল্লী )। ঈশ্বর আপনাকে দেখেন আকারসমমুহের 
অনস্ততার মধ্যেঃ আপন চিত্ত এবং স্বর্ূপের অভ্যন্তরে প্রস্্প্ত অবস্থাসমূহের মধ্যে, 
বুদ্ধিগ্রাহা ভাবসমূহের মধ্যে এবং ইহজাগতিক বিকারসমূহের ( আয়াহুল সাবিতা) 
মধ্যে । এই স্থির-নির্দিষ্ট প্রতিরূপগুলি অথবা প্রন্থপ্ত অবস্থাগুলি কেবল সম্ভাব্য 
সত্তা মাত্র, তাহাদের বাহা অস্তিত্ব নাই। 

কিন্ত অদ্বয় আপনাকে কেবল আয়াচছুল-সাবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন না, 
যাহা পরমসত্যের পরমসত্য (বাকী কাতুল হাক্কায়েক ), সেই বিশ্বচৈতগ্য ব1 প্রথয 
বুদ্ধিরপে, এবং অবভাসের জগৎরূপেঃ বিশ্ব-দেহরূপে (আল্জীস্ম আলকুল্লী) ও 
আদিম জড়বস্তব্ধপে (হায়ুল। ) তিনি আপনাকে প্রকাশ করেন। অবভাসের 
জগৎ নিয়তই পরিবর্তিত হইতেছে, ইহ! ব্য্টিূপ স্যষ্টির এক অনস্ত পালা, যাহাকে 
আশ্রয় করিয়! শাশ্বত ও চিরস্বায়ী দিব্যপ্রকাশ (তাজাল্লী ) স্ুরিত হয়। 

বিশ্বকে বল! যায় এক আত্মাবজিত দেহ, মলিনগাত্র দর্পণ-বিশেষ | জীশ্বর এই 
দর্পশের উজ্জ্বলতা সম্পাদনার বাসন! করিলেন, যাহাতে ত্তাহার নামের (প্রশ্র্ষের ) 
দ্ব্ধূপ (আযান) আভামিত হয়। তাহার পর এক ক্ষুদ্র প্রতিপ্নীপের 
(কাওন্জামী ) আবির্ভাব হইল, যাহার মধ্য দরিয়া আপন অস্তরতম চেতন! 
(সির্র্‌) ঈশ্বরের নিকট উদ্ভাসিত হয়। এই সম্ভাই মানব (ইন্সান ), ঈশ্বরের 
প্রতিনিধি ( খুশলিফ1 ), দেহে সে স্থষ্ট, আত্মায় সে শাশ্বত। 

বিশ্বচৈতন্, প্রথম বুদ্ধি, সত্যের সত্যকেই হইবৃন্‌ অল্-আরবী বলিয়াছেন 
মুহশ্মদের আত্ম (হাকী কাতুল মুহামাদীয়া ), যাহার চরমতম প্রকাশ ঘটে পুর্ণ 
মানবের (ইন্সানে কামীল) মধ্যে, এবং সমস্ত ধর্মপ্রবর্তক ও সাধৃব্যক্তিদের মধ্যে 


৯৯ ৃ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


যাহা! আপনাকে প্রকাশ করে। ইহা অন্তরশায়ী আত্ম) ধীাহার। ইহাকে 
লাভ করিয়াছেন তাহাদের নিকট ইহা! যাবতীয় দিব্যজ্ঞান প্রেরণ করেঃ 
ইহ] পুত আত্ম! (রুহ.), বিশ্বকে যাহ1 পালন ও নিয়ন্ত্রণ করে, ইহ|! সেই এ্রশ্বরিক 
স্থজন-কৃতি । 

' বিশ্বগৈতন্ত বা] বিশ্ববুদ্ধি আপনার নান! বিকারের মধ্যে, যথ! ব্যক্ত আত্মাসমুছের 
মধ্যেঃ আপনাকে প্রকাশ করে। বিশ্ব-আত্বা নিজের সমগ্র সম্ত1 সম্বন্ধে সচেতনঃ 
সুতরাং তাহা আপনার নানা বিকার সন্বষ্ধেও সচেতন ; কিস্ধ বিকারসমূহ অথব! 
ব্যক্ত আত্মাসকল স্বতন্রতাবে আপন আপন খণ্ডাংশ সম্বন্ধে সচেতন হইলেও পূর্ণ 
সম্বন্ধে সচেতন নয় । ব্যক্ত আত্ম! বা মাহষের তিনটি অংশ আছে--দেহ, আত্মা, 
বিজ্ঞান । মানব-শরীর বিশ্বদেহেরই (আল্‌ জিস্ম আল্‌ কুল্লী) এক বিশিষ্ট 
বিকারঃ মানব-আত্বা বিশ্ব আত্মারই (আশহ্ব নাফপাল্‌ কুল্লীয়! ) বিকারক্ধপ এক 
মর্মলত্য, এবং মানব-বিজ্ঞান বিশ্ব-বুদ্ধিরই ( আল্‌ আকলাল কুল্লী ) বিকারমান্ত্র। 

পরমপুরুষের পুর্ণ অদ্য়স্বর্ূশ হুইতে পরমসত্যের আত্ম প্রকাশনের দিকে নান! " 
পর্যায় অতিক্রম করিয়া অভিব্যক্তির ধার] বহিয়! চলিরাছে। মাহষের মধ্যে বিজ্ঞান 
এবং জড়বস্ত, প্রকট এবং সভাব্য, অন্তরঙ্গ এবং বছিরঙজগ পরম্পর যিলিয়। আছে। 
যে স্তরমাল। অনুসরণ করিয়] অধ্বয় আপনাকে বহর মধ্যে প্রকাশ করে, তাহার 
মধ্যে একটি যৌক্তিক প্রণালী আছে বল! যায়; সে সকল পর্যায় অতিক্রম করিয়া 
পরমতত্ব অবশেষে আমাদের জ্ঞানের জগতে অবতীর্ণ হন ; সেই প্রত্যেকটি পর্ধায়কে 
বিপরীতভাবে অতিক্রম করিয়! পরমসত্যের সহিত আপন এক্য উপলব্ধি করিবার 
জন্য মাহঘকে বিপরীত যাত্রার পথ ধরিতে হইবে । যে পথে মানুষ ঈশ্বরের সহিত 
আপন স্বরূপগত এঁক্য অহ্ৃভব করিতে পারে, সেই “গৃঢ়তত্বের অস্তরাবর্ভনের? পথে 
ইবৃন্‌ অল্-আরবী এরূপ মোট সাতটি পর্যায় গণ্য করিয়াছেন। মাহ্ৃষের উপলদ্ধি 
ক্রমে প্রব-জ্ঞান ( ঈল্মুল্‌ ইয়াকীন্‌ ) হইতে যাত্রা করিয়! গ্রুব-স্বব্ধপ € আইন্-উল্‌- 
ইয়াক্কীন্‌ ) অতিক্রম করিয়! ঞ্রব-তত্বে (হাককুল্‌ ইয়াক্কীন্‌ ) উপনীত হয়। অজ্ঞানত। 
হইতে ক্রমশঃ সাক এঁক্যের প্রমাদহীন চেতনায় উন্নয়ন (ফ'না1), আকারের 
অজ্তর্ধান এবং সারাংশের স্থিতি, অবভামিত রূপের বিলোপ এবং পরমনত্যের 
প্রকাশ (তাজাল্লী ) এই পরিক্রমার তাৎপর্য । এই পর্যায়সমূহের প্রত্যেকটিতেই 
এক একটি করিয়া! আবরণ--অবভামসিত জগতের এক একটি চর্িত্রচিহ্ু--খসিয়! 
পড়ে, এবং তত্বপদ্ধানী মহাপত্যের দিকে ততক্ষণ এক এক ধাপ অগ্রসর হইয়। 
চলেন যতক্ষণে অবশেবে সমস্ত আবরণ উন্মোচিত হইয়] যায়_যাহা কিছু অনীশ্বর 


১৪৩ 


. শীস্জামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


€(মা'আনীওয়। ) তাহা নিঃশেষে অপনীত হয়--, পরমতত্ব আপন অখণ্ড মহিমা 
লইয়! আবিভূ্তি হন, এবং আত্ম! নিধিকল্প মুক্তিতে অধিরোহণ করিয়! অনির্বচনীয় 
আনন্দ সম্ভোগ করে। ঘরের দিকে মাহৃষের যাআর এইথানেই শেষ, এবং 
এইখানেই তাহার গন্তব্যের প্রাপ্ডি। 

যে অতীন্দ্রিয়বাদ্দের পথ ধরিয়| হ্থফী আপন লক্ষ্যের অভিমুখে যাত্রা করেন, 
তাহা! তাহার নিজস্ব জ্ঞান-পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি যুক্তি-সিদ্ধ প্রক্রিয়]। 
ইহার মতে জ্ঞান ছুই শ্রেণীর £ (১) ইল্ম্‌ অথবা বুদ্ধি-আশ্রিত ড্তান, বা বিচার- 
সাধ্য জান, (২) মারিফত, অথব! বোধি-অজিত জ্ঞান, অপরোক্ষ জ্ঞান। প্রথম 
প্রকারের জ্ঞানের উপায় হইতেছে ইন্দ্রিয়গুলি ও বুদ্ধি; তাহাদের মধ্য দিয়া আমরা! 
বিশ্ব সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করি । দ্বিতীয় প্রকারের জ্ঞান হইতেছে পরমসত্যের যথার্থ 
জ্ঞান? ইহা সাধ্য জ্ঞান হইতে পৃথকৃ, কারণ মহাসত্যের বিষয়ে অন্তদ্ট্িই ইহার 
তাৎপর্য । বিশ্ববৃদ্ধি হইতে উদ্ভূত হইয়া এই জ্ঞান সাক্ষাৎভাবে মানববুদ্ধিতে পরিণত 
হয় ? ইহ! এশ জ্ঞান ( ইল্‌মে লাছুনী ), রহস্যপমূহের জ্ঞান, অৃশ্বের (ঈল্মুল এসরার, 
ঈল্মুল্‌ গ্রায়েব) জ্ঞান, ইহ1 ঈশ্বরের প্রপাদ (আল্‌ ফায়েজ, আল্‌ ইলাহী) হইতে 
জাত। সম্ভাব্য, অঙ্থমানাত্মক, সীমাবদ্ধ এবং পরোক্ষ বুদ্ধিগ্রাহ জ্ঞানের বিপরীতরূপে 
মারিফত, (গুঢ়তত্ব ) হইতেছে স্বনিশ্চিত, অনির্বাচ্য, পুর্ণ এবং অপরোক্ষ। আত্মা 
যখন পরম নৈক্ষর্স্য, শাস্তি এবং পবিত্রতার স্তরে বিরাজ করেঃ তখনই এই জ্ঞান 
সহসা আত্মায় আবিভূর্তি হয়। হাদয়ের পবিত্রতার বিধায়ক চিত্তসংযমঃ যাহ! 
আত্মাকে ঈশ্বর-সাযুজ্যের অভিমুখী করে, তাহা হইতেই এই অবস্থার উদ্ভব হয়। 

ইবৃন অল্-আরবী তাহার প্রবতিত পরাবিজ্ঞান-পদ্ধতির মধ্য দিয় ধর্ম সম্পর্কে 
কতকগুলি চিত্তাকর্ষক সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন। সর্ব ধর্মের সমম্বয়ে তিনি 
বিশ্বাপ করিতেন। তাহার মতে সকল পথই ঈশ্বরাভিমুী এক সহজ পথে, 
(আল্‌ তারিকুল আমাম্‌) মিলিত হইয়াছে । একেশ্বরবাদ ও বহু দেবতাবাদ, 
দর্শনতত্বসম্মত ধর্ম ও পৌত্বলিকতাবাদের সর্বাপেক্ষা অপরিচ্ছন্ন ব্ূপগুলি পর্যস্ত সমস্তই 
অদ্বয় ঈশ্বরে বিশ্বাসেরই ইঙ্গিত, সমস্তই এক বিশ্বজনীন ধর্মের আঙ্গিক-স্বর্ূপ | 
কারণ কোরান বলিতেছে, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য ধর্ম এবং চলার পথ রচন! 
করিয়াছি”। আবার যে দেবতার] পূজিত হন, তাহাদের লইয়। সমস্ত কিছুরই 
স্বরূপ হইতেছেন ইশ্বর, সুতরাং নানা মুর্তিতে তিনিই সব পুজা পাইতেছেন। 
প্রকৃতপক্ষে ভাহাকে ছাড়। অন্ত কাহারও পৃজ1 লম্ভবই নয়, কারণ তিনি বিধান 
দিয়াছেন, “তাহাকে ছাড়া আর কাহাকেও পুজা করিবে না”। মান্ধষের পুজ্য 


৯০৯ | 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শমের ইতিহাল 


বিষয় অচ্ুপারে মাছষের ধর্মের পার্থক্য দেখা দেয় । কেহ কেছ আপনাদের মানল 
কষ্পনার রচনা (ঈল1 বিল জাল) তারকা, বৃক্ষ, দেব-দেবী প্রভৃতি ঈশ্বরের 
আংশিক প্রকাশগ্ুলিকে পুজা করে, কিন্ত আপন আপন বিশ্বাসে প্রত্যেকেই 
অভ্রাস্ত। অবশ্য সমগ্র এশ নামের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিশ্বজনীন নাম আল্লাহ-ব্ধপে 
নর্ধাত্কক ঈশ্বরকে ধাহার! পুজ্জ! করেন, তাহারাই যথার্থ জ্ঞানী (আরিফ )। 
পুজ্য বিষয়ে অন্থরাগই সকল পুজার মুল ভিত্তি, কিন্তু অহরাগ একটি বিশ্বগ বৃত্তি, 
যাহা সকল সম্ভতাকে আচ্ছন্ন করিয়া তাহাদিগকে এক করিয়া! বাধে । কুতরাঃ 
প্রেমই সর্বাধিক উন্নত এবং যথার্থ পুজা, ঈশ্বরের মহত্তম প্রকাশর্পের পুজা । 

ইব্‌ন অল্-আঁরবীর দার্শনিক মতবাদ মুসলমান মনীষার নিিত সর্বাপেক্ষা 
ন্রমযোগ্য কীতিসমূহের অন্যতম । পরবর্তী সমস্ত চিন্তাধার1 ইহার প্রভাব বহন 
করিয়াছে, এবং ইহার প্রেরণ। সঙ্গীতে কাব্যে, সাধারণ মাছগষের আচরণে, এবং 
নুফী ও লাধুদের জীবনে ক্রিয়াশীল হইয়াছে । বিভিন্ন লেখক তাহার গ্রস্থাবলীর 
উপরে চীকা রচন! করিয়াছিলেন, এবং ব্যাখ্যাতৃগণ নান! বিদগ্ধ রচন| ও জনপ্রিয় 
নিবন্ধের মধ্য দিয়! সেগুলিকে ব্যাখ্য। ককিয়াছেন। নব্য মত পোষণ করিবার ফলে 
তাহাকে আক্রমণ কর1 হইয়াছিল, এবং কেহ কেহ বিধর্মী বলিয়। তাহাকে ধিক্কত 
করিয়াছিলেন, কিন্ত অন্ত সকলে তাহাকে শ্রেষ্ঠ পষিতদের (আল্-শাখ -উল্-আকৃবর) 
মধ্যে অগ্ততম বলিয়া! এবং একজন ঈশ্বর-মত্ত সাধু বলিয়া স্বীকার করিয়াছিলেন । 

ইব্‌ন অল্-আরবীর সমসাময়িক শ্িহার অল্‌ দীন্‌ সহরাবদ্দি মকতুল ( ১১৫৫- 
১১৯০ থুঃ অঃ) ছিলেন সর্বদেবতাবাদে বিশ্বাসী আর একজন মরমিয়! দার্শনিক । 
নিত্য-জ্যোতি ধাহার স্বব্বপ-প্রক্কতিক্ূপে গণ্য সেই আদিম পরম আলোককে 
(নূর-ই-কাহীব) তিনি চরম ভাব-সভ্তান্ূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়! তাহার 
মতবাদের নাম হইয়াছে হিকমৎ অল্‌ ইশবাঁকৃ। বিখ্যাত গ্রন্থ ইন্মাহ্ধল কামিল 
(পুর্ণ মানব )-এর রচয়িতা আবৃছল করীম জীলী (১৩৪৫-১৪১৭ থৃঃ অঃ) ইব্‌ন্‌ 
অল্-আরবীর মতাহুবর্তা ছিলেন, এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর সর্বপ্রধান স্থৃফী পণ্ডিত 
নুর অল্‌ দিন জামী ( ১৪১৪-৯২ খুঃ অঃ)-ও তাহার অশ্থগামী ছিলেন । ল-আইহ. 
(দীপ্তি) নামে তাহার যে ক্ষুদ্র গ্রস্থটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছিল, তাহা 
অতীন্ট্রিয়বাদী দর্শনের একটি সংক্ষিগুসার । 

শান্বপন্থ! (কলাম ), দর্শন (হিকৃমৎ) এবং মরমিয়াবাদ €(তমব্বুফ.)-_মুসলিম 
তত্বপন্থার এই সমগ্র তিনটি ধারাই এক উৎস অর্থাৎ কোরান হইতে উৎপতি লাভ 
করিয়াছে । কিন্ত সামাজিক এবং এঁতিহাসিক প্রভাব ছাড়াও ইহাদের পরিণতি 


১০২ 


ধস্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


নির্ধারিত হইয়াছে মুসলমানদের বৌদ্ধিক পরিবেশের হ্বারা। তাহার প্রধান 
উপাদানগুলি ছিল একদিকে নব্য-প্রেটে[নীয় খুষ্ীয় তত্ব, অন্য দিকে ইরানীয় এবং 
ভারতীয় চিস্তানভার। এই সকল অবদানের সঠিক অহ্ৃপাত নির্ধারণ কর। কঠিন, 
এবং ইহা! তাহার উপযুক্ত স্বানও নহে । কিন্তু ব্রাউন, ম্যাক্স হটেন, গোল্ড.জিহার 
এবং অন্তান্ত অনেকের লাক্ষ্যে মধিত প্রকৃত সত্য এই যে, মুস্লিম তত্বলাধনার 
মধ্যে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ আছে যাহা ভারত হইতেই গৃহীত হইয়াছিল। 

শান্ত্রপস্থ!, দর্শন এবং মরমিয়াবাদ__এই বিভিন্ন তত্বপন্থ' ভারতে আগন্তক এবং 
বসবালকারী মুসলমানদের সঙ্গ ধরিয়াই ভারতবর্ষে আসিয়াছিল। তাহার] ভারতে 
প্রচলিত চিস্ত। ও বিশ্বাসের বিভিন্ন রূপের সহিত পরিচিত হইয়াছিলেন। ছুর্ভাগ্যের 
বিষয় মুসলমান এবং হিন্দু পণ্ডিতগণের মধ্যে সংযোগ অতি সামান্তই ছিল, এবং 
দার্শনিক জ্ঞানের বিনিময় ছিল অকিঞ্চিৎকর। যথেই সংখ্যক মুসলমান পশ্ডিত 
সংস্কতপাঠে উৎসাহী ছিলেন না, সুতরাং সুফী ও দরবেশগণের উৎস্থ&ই জীবনের 
প্রতি আকৃষ্ট হইয়া যাহার! তাহাদের চারিপাশে সমবেত হইয়াছিলেন, তাহাদের 
মাধ্যমেই হিম্ু ভাবধার! তাহাদের নিকট পৌছিয়াছিল। এই আদান-প্রদানের 
ফলে বিশেষতঃ অতান্দ্রিযবাদী দর্শনের ক্ষেত্রে হিচ্দু ও মুসলমানগণ পরস্পরের অত্যস্ত 
নিকটবর্তী হইয়াছিলেন। মুসলমান স্ফীগণ এবং তাহাদের সম্প্রদায়গুলি কিছু 
সংখ্যক হিন্দু আচার গ্রহণ করিয়াছিলেন, এবং সুফী চিস্ত। হিন্দু বেদাস্তের সহিত 
ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হইয়াছিল । 

অন্তদিকে মুসলিম মরমিয়াতত্ব এবং আধ্যাত্মিক চিস্তার প্রভাবে হিন্দুদের মধ্যে 
কয়েকটি সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হুইয়াছিল, যাহা সমগ্র দেশে পরিব্যাঞ্ত 
হইয়াছিল এবং হিন্দুহ্ছলভ জীবনদৃষ্টি এবং চিস্তাভঙ্গীকে গভীরভাবে স্পর্শ 
করিয়াছিল 

প্রাকৃ-মোগল যুগে মুসলমান শাসনকর্তাদের রাজসতায় মধ্য এশিয়1 এবং পারন্ত 
হইতে আগত পশ্ডিতবর্গের সমাবেশ ঘটিয়াছিল। তাহাদের মধ্যে বহু কবি, 
এ্তিহামিক এবং ধর্মশান্ত্রবেত্তা ছিলেন। দর্শনশাস্ত্রের সমাদর তেন্দন ন1 থাকিলেও 
ধর্মবিধানের (ফীকহ,) চর্চা ছিল। অবশ্য মরমিয়। সম্প্রদায়গুলির প্রতিনিধিত্ব 
যথেষ্টই ছিল এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু সংখ্যক প্রখ্যাত স্থুফী বাস 
করিতেন এবং শিক্ষা দান করিতেন । তাহার। অনেক অহ্থগামীকে নিজেদের দ্রিকে 
আকর্ষণ করিয়াছিলেন, এবং ভারতবর্ষে ইস্লামের প্রলারের জন্য তাহারা 
ছিলেন দায়ী। 


প্রাচ! ও পাঁশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


তুঘলক-বংশীয়গণ মুসলিম ধর্মবিধানের পঠন-পাঠনে উত্সাহ দান করিয়াছিলেন, 
এবং সংস্কৃত গ্রন্থের, বিশেষতঃ জ্যোতিষ, সঙ্গীত এবং উপাখ্যানমূলক খ্রস্থগুলির 
অন্গবাদের ব্যবস্থ|! করিয়াছিলেন । অবশ্ট সমগ্রভাবে এই যুগ ছিল বিভ্ার ক্ষেত্রে 
অবক্ষয়ের যুগ। কিন্ত তৈমুরের আক্রমণ এবং তুঘলক-বংশীয়দের রাজত্বের অবসানের 
পর অনেক মুসলমান পণ্ডিত ভারতবর্ষে আলিয়াছিলেন, এবং ভারতবর্ষে মোগল- 
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হইতে এই আগমনের ধারা প্রভূত উৎসাহ লাভ 
করিয়াছিল । 

পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যস্ত ভারতে অবস্থিত মুসলমান পণ্ডিতের! প্রধানতঃ সেই 
সমস্ত বিজ্ঞানশাখায় ব্যাপৃত ছিলেন, যাহাতে শাহ্্প্রমাণেরই প্রাধান্য (উহ্নমে 
মানকুন1), কিন্ত এই সময় হইতে যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানশাখাগুলির প্রভাব বিস্তৃত 
হইতে থাকে । ইহার ফলে যুক্তিবিজ্ঞান এবং দর্শনশাম্ব বিদ্যালয়গুলির পাঠ্য- 
তালিকার অস্তভূক্তি হইল এবং তাহাদের ব্যাপক চর্চা হুর হইল। 

এইভাবে ষোড়শ শতাব্দী পরধস্ত শাস্ত্রমত (কালাম) এবং দর্শনশাস্ত 
(হিকমাত) ভারতের বাহিরের মনীধীদের নির্দেশিত পথে চলিতে লাগিল। 
এই ক্ষেত্রগুলিতে যথেষ্ট কর্মতৎ্পরতা ছিল বটে, কিন্তু মৌলিক চিন্তাশীলগণের 
আবির্ভাব হুইয়াছিল মাত্র মোগল যুগে । ইহাদের মধ্যে শাহজাহানের পৃষ্ঠপোবিত 
আবৃছল হালিম শিয়ালকোটি ছিলেন একজন, ওরঙলজীবের অধীনে যিনি সদর্‌ রূপে 
কর্মে নিযুক্ত ছিলেন, সেই মীর জাহিদ ছিলেন আর একজন । অন্তান্ত প্রখ্যাত 
লেখকগণ ছিলেন শেখ আবৃছল ওয়াহাব এবং শেখ আহমদ সিরহিন্দী (মুজাদ্দিদ-ই- 
আল্ফ.-ই-সানী নামে যিনি পরিচিত )। তাহার! বিদপ্ধ তত্বমতের প্রবর্তক এবং 
বিতাঁফিক ছিলেন। 

ঈশ্বরের জ্ঞানের প্রকৃতি বিষয়ে উদ্ভূত সমস্তাগুলিই প্রধানতঃ তাহাদের চিত্ত 
অধিকার করিয়াছিল। ঈশ্বর কি জ্ঞানের অধিকারী, অথবা জ্ঞানশুন্ত হইয়াই তিনি 
সৃষ্টি করেন? জ্ঞাত] এবং পরিজ্ঞাত এই ছুয়ের সম্পর্কই যদি জ্ঞান হয়, তবে 
কিভাবে আমর] ঈশ্বরের আত্মসন্বস্বী জ্ঞান তাহাতে আরোপ করিতে পারি 1 জ্ঞান 
কি ঈশ্বরের সম্ভ! এবং শ্বব্ধপের অঙ্গীভূত, অথবা তাহা ঈশ্বর হইতে ভিন্ন কোন 
বিভূতি 1 ঈশ্বরের জ্ঞান কি কেবল সামান্য লক্ষণ সমূহে কেন্দ্রীভূত, অথব| তাহা 
বিশেষ লক্ষণগুলিতেও প্রসারিত ? 

ভারতীয় শাস্ত্রপস্থাহুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক মনম্বী ব্যক্তি ছিলেন 
দিল্লীর শাহ. ওয়ালিউল্লাহ (মৃত্যু ১৭৩২ খৃঃ অঃ)। পাশ্ডত্যের দিক দিয়া 


১৩৪ 


প্রন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


ধঘজালী, রাজি এবং ইবৃন্‌ রুশদৃ-এর সহিত তাহার তুলনা কর! হইয়া থাফে। 
সেকালের কিঞ্চিৎ বিশৃঙ্খল এন্সামিক চিত্তার ক্ষেত্রে তাহার অবদান বহু গুরুত্বপূর্ণ! 
তাহার উপদেশের মূল কথাটি ছিল এই যে, ধর্ষ এবং দর্শনের মধ্যে যথার্থতঃ কোন 
অসঙ্গতি নাই। যে নীতিতে কোরানের ব্যাখ্যা এবং ভাষ্য করা হইবে, তাহ! 
তিনি স্থুনি্দিষ্ট করিয়! দিলেন, আগমগ্রন্থগুলির (হাদিথ ) গুরুত্বের ক্রম নির্ধারণ 
করিয়! দিলেন এবং অপ্রামাণ্য গ্রস্থগুলি হইতে প্রামাণ্য গ্রস্থগুলির পার্থক্য বিচার 
করিবার পদ্ধতি নিন্ধপণ করিলেন, ধর্মবিধি (ফীকহ.) সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের 
মধ্যে এক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করিলেন, এবং তাহাদের পার্থক্য যে বিভিন্ন 
সামাজিক পরিবেশে হ্ত্রবদ্ধ হওয়ার ফলে উত্ভৃত হুইয়াছে, এইভাবে ব্যাখ্য 
করিলেন। 

শাস্মত এবং এঁশ আদেশ--ধর্মের এই ছুইটি অঙ্গের উপর তিনি সমান গুরুত্ব 
আরোপ করিয়াছিলেন এবং কোরানের আদেশসমূহ এবং বিচারবুদ্ধির মুলনুত্র- 
গুলির মধ্যে কোনও বিরোধ নাই এইরূপ ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন । বিধান 
(শারীয়াত২.) এবং অতীন্দ্রিয়াহভূতির (ম'আরিফাত,২) মধ্যবর্তী সঙ্গতিটুকু তিনি 
পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। তিনিই প্রথম মুস্লিম লেখক, যিনি আরবী 
ভাবায় অনভিজ্ঞ জনসাধারণের এক বৃহদংশের নিকট কোরান এবং আগমগ্রন্থগুলি 
সহজলভ্য করিবার জন্ত পারসী ভাষায় সেগুলির অস্থবাদ করিবার প্রয়োজন 
অনুভব করিয়াছিলেন ; মুসলিমবিধিশাস্ত্রের প্রগতির পথ তিনি উন্মুক্ত করিলেন, 
এবং শাস্ত্রপ্রাধান্তের সীম! নির্দেশ করিয়া দিলেন । 

তাহার ক্ৃতিত্বপূর্ণ রচন! হুজ্জত, উল আল্লা আল্বালিঘা গ্রন্থটিতে প্রথমতঃ ধর্ম 
এবং মতনিষ্ঠা সম্পর্কে সাধারণ নীতি এবং সামান্ত ধারণাগুলির আলোচন! 
কর! হইয়াছে» এবং দ্বিতীয়তঃ এ সকল নীতির ভিত্তিতেই এঁস্লামিক নির্দেশ এবং 
বিধানগুলির সম্বদ্ধত1 বিচার কর] হইয়াছে । প্রথম অংশে শাহ ওয়ালী উল্লাহ, 
ধর্মের প্রয়োজন, তাহার উৎপত্তি, বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সবলগত এঁক্য এবং তাহাদের 
পরস্পরের মধ্যে পার্থক্যের কারণ, এবং পরলোকতত্ব এবং অবতারতত্বের 
সমন্যাগুলি পর্যালোচনা করিয়াছেন । এ সবের মাঝখানে ভাব-জগতের অস্তিত্ব 
সম্পর্কে অত্যন্ত মনোজ্ঞ একটি অধ্যায় আছে--যে ভাব-জগৎ বস্তমুক্ত, বস্তসম 
ইন্দ্রিয়গ্রাহ জগতে স্থষ্ট হইবার পূর্বে প্রথম যে জগতে আবিভুতি হয়।. 

যে সময়ে মুস্লিম রাজ্যগুলি দ্রুত ক্ষয়প্রাণ্ড হইতেছিল এবং পাশ্চাত্যের 
উদ্দীয়মান শক্তির কাছে এশিয়] ক্রমাগত পরাজয় বরণ করিতেছিল, সেই ঝঞ্চা-বিক্ষৃন্ 


১৩৫. 
১৪ 


প্রাচ্চ ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সময়ে ওয়ালিউলাহ, জীবন অতিবাহিত করিয়াছিলেন। এই প্রশ্নে ঘতাবতঃই 
তাহার মন নিবিষ্ট হইয়া! পড়িয়াছিল, এবং ব্যভি-আচরণ ও সামাজিক শীতিবোধের 
সমন্তার প্রতি তাহার চিত্ত আকুষ্ট হইয়াছিল। তাহার মতে ভালো-মন্দ স্ভায়- 
অন্তায়ের বোধ বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তি সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়, বরং একটি সমগ্র 
প্রজাতির অংশব্ধপ যে ব্যক্তি, তাহারই সম্পর্কে প্রযোজ্য | ক্ষুতরাং মানবের 
পূর্ণতার আদর্শ নির্ধারণ করিতে হুইলে মাহবের সামান্য বৈশিষ্ট্যগুলির সন্ধান 
করিতে হইবে এবং বুঝিতে হইবে কোথায় তাহার আপন পূর্ণতা বিরাজ করে । 

এই মত অস্থসারে নীতিশাস্্ব সাধারণ সমাজ-দর্শনেরই অঙ্গ হইয়] পড়েঃ এবং 
সাময়িক কল্যাণ ও শাশ্বত ত্রাণ এই দ্বুই লক্ষণে নৈতিকত1র পরিচয় গড়িয়া ওঠে । 
মানব অপরিহার্যভাবে একটি দলের অংশ, অন্ঠান্ত মানুষের সহিত অজম্র বন্ধনে সে 
আবদ্ধ, সে একটি পরিবারের, একটি খ্বামের, একটি সমাজের এবং সমগ্র মানবতার 
অঙ্গম্ব্ূপ | ন্মুতরাং যে গণ সমাজ-কল্যাঁণের ভিত্তিত্বর্ূপ, তাহার অন্বশীলন এবং 
ব্যবহারিক প্রয়োগেই মাহষের চরম উন্নতি। ওয়ালীউল্লাহ-র মতে গ্ায় হইতেছে 
সেই কল্যাণ। হ্তায়ের চারিটি ব্ধূপ আছেঃ প্রতিদিনের সাধারণ জীবনযাত্রায় 
আমাদের বাক্যে আচরণে আকৃতিতে বেশভূষায় যখন ইহার প্রয়োগ ঘটে তখন 
ইহার নাম হ্থনীতি, ভদ্রতা (আদব ); যখন আমাদের আয়-ব্যয় এবং আর্থিক 
অবস্থার উপরে হহার প্রসার তখন ইহার নাম মিতব্যয় (কিফায়ৎ)$ যখন 
আমাদের পারিবারিক ক্ষেত্রে গৃহস্থালীতে এবং রাষ্্রে ইহার প্রয়োগ তখন হহ! 
স্বাধীনত1 ও নিয়মাহুবর্ভিতার সমার্থক; ইহা যখন পারস্পরিক শ্রীতি ভ্রাতৃত্ব এবং 
আত্মীয়তার ভিত্তিভূমি হয় তখন ইহা! মানবমৈত্রীর (হুম্নে মা আশারাত ) 
পরমোৎকর্ষরূপে গণ্য। স্াায়ের ভিত্তিতে গঠিত সমাজদেহ এমন এক পরিবেশ 
রচন1 করে যাহাতে ব্যক্তি মানুষ ঈশ্বরের সহিত তাহার আপন সম্বন্ধের দিক হইতে, 
এবং ঈশ্বরের সমগ্র স্থ্টির সহিত তাহার নিজ সম্বন্ধের দিক হইতে তাহার সকল 
করণীয় সম্পর্কে সচেতন হইয়! উঠে। 

- আদর্শ সমাজ যেহেতু স্তায়ের উপরে প্রতিষ্ঠিত, সেই কারণে ইহা! স্পষ্ট যে, যে 
পরিমাণে সমাজ ন্তায়কে লঙ্ঘন করিয়া! চলে, সেই পরিমাণেই তাহ। অকল্যাণ-ছুই। 
উদ্দাহরণ স্বব্ূপ শাহ ওয়ালীউল্লাহ, বলেন, যখন পারস্তবাসীরা এবং রোমানগণ 
বিস্ত এবং বিলাসকে তাহাদের জীবনের পরমার্থরূপে গণ্য করিল, এবং মাছষ 
তাহার ধন-যম্পদের গর্ব করিতে লাগিল, মুষ্টিমেয় ধনীব্যক্তি বহুসংখ্যক দরিদ্রকে 
দুর্দশা! এবং নিঃম্বতার জীবন গ্রহণে বাধ্য করিল, কষক বণিক এবং কারিগরদের 


১৬৬ 


উন্লাখিক চিন্তাধায়ার বিকাশ 

নিকট হইতে জোর করিয়! ঘাড়-ভাও! কর আদার কর্পিতে লাগিল; অত্যাচার 
অবিচার অবাধে দেশ ভুড়িয়া চলিতে লাগিল; চাটুকারের দল শক্তিশালী ধনীদিগের 
নিকট অলস পরজীবী বৃত্তি গ্রহণ করিল, সতত! এবং পুণ্য অস্তহিত হুইল এবং 
নৈতিক ব্যাধি ছঃসাধ্য হইয়া দেখা দিল, তখনই ঈশ্বর একজন নিরক্ষর ধর্মপ্রবর্তককে 
প্রেরণ করিলেন, যিনি আবিভূতি হইয়া! সামাজিক অন্যায়কে রোধ করিয়। -ছুর্নাতি- 
প্রবণ বিলাঁপী জীবনপদ্ধতিকে নিষিদ্ধ করিয়া এবং মহান আদর্শের প্রতিষ্ঠা করিয়! 
গ্ভায়ের ভিত্তিতে নিষ্লুব সমাজের ভিত্তি স্বাপন করিলেন । অনুরূপভাবে তীহার 
সমসাময়িক ভারতের অবস্থ! বিশ্লেষণ করিয়। তিনি রা্ট্রশক্তির ক্ষয়ের এবং সামাজিক 
দুর্গতির দুইটি প্রধান কারণ উদঘাটন করিলেন। রাষ্ট্রের উপর অযোগ্য ব্যক্তি- 
গণের পরগাছাম্বলভ নির্ভরত1 এবং রাজকোবের অর্থের অপচয়ই প্রথম কারণ । 
অসংখ্য লোক কিছুমাত্র সেব! ন! দিয়াই সৈনিক এবং পণ্ডিতের ছগ্মতূমিকায় বৃত্তি 
ভোগ করিত। ইহা ছাড়া অনেকেই সাধু সুফী এবং কবির হম্মব্ধপ গ্রহণ করিয়া 
রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা! দাবী করিত। এই সমস্তই বিষম বোবাম্ব্ূপ হইয়াছিল । 
দ্বিতীয়তঃ এই সব নিষ্বর্স| কর্মচারীর পিছনে ব্যয়বৃদ্ধির ফলে কৃষক, ব্যবসায়ী এবং 
কারিগরদের উপর ছুর্বহ গুরুভার করের বোঝ! চাপাইতে রাষ্ট্র বাধ্য হইয়াছিল। 
তাহারই ফলে যাহার! রাষ্ট্রকে মান্য করিয়! চলিত, তাহার সর্বস্বাস্ত হইল এবং 
অন্ত সকলে বিদ্রোহী এবং কর-বর্চনাকারীতে পরিণত হুইল । 

এই ইতিহাস-পর্যালোচনার মধ্য দিয় তিনি এমন কতকগুলি চিত্তাকর্ষক 
সিদ্ধান্তে উপনীত হুইয়াছিলেন, যাহা! তাহার নীতিতত্ব্বের সিদ্ধাস্তগুলিকেই সমর্থন 
দান করিয়াছে । ইহাদের মধ্যে একটি তত্ব এই যে, নীতি এবং রাজনীতিকে 
বিচ্ছিন্ন কর? যায় না, কারণ নীতির অবক্ষয় এবং স্ায়বোধের হাসের ফলে সমাজ- 
ভুক্ত জীব হিসাবে ব্যক্তিমানবের ব্যবহারিক সব্বন্ধের ক্ষেত্রেও আচরণের অবনতি 
ঘটে। অপর তত্ব এই যে, অর্থনীতির মধ্যেই সামাজিক গ্ভায়বোধের যুল নিহিত 
আছে, কারণ মাহ্ৃষের অর্থনৈতিক অবস্থাই সমাজে তাহার ব্যক্তিগত ভূমিকাটি 
এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে তাহার যোগ্যত1 নির্ধারিত করে। 
অর্থ নৈতিক নিরাপত্তা! মনের শাস্তি এবং শ্বাচ্ছন্দ্যের জন্ত অপরিহার্য, এবং ইহার 
অভাবে বাস্তব অনটনের ীড়নে নৈতিক কত্যের কোন দাবী টিকিতে পারে না। 
তবুও ধনের অতিপ্রাচুর্য এবং বণ্টনের বৈষম্য নিদারুণ অকল্যাশরূপে গণ্য । ধনের 
আকাঙজ্ষার কোন লীম! নাই, এবং ধনসঞ্চয়ের ফলে বিলাসিতা এবং নৈতিক 
অনুভূতির স্থুলত1 দেখা দেয় । ইহারই ফলে দেখ! দেয় মাহবে মাহবে, গোঠীতে 


১$খ৭ 


 শ্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


গোষ্ঠীতে ঈর্ষ! ও শত্রুতা, এবং তাহার পরিণতিতে সমান্ধের অধঃপতন এবং বিপর্যয় । 
ধনের সাহ্যযূলক ও ব্যারলঙ্গত বণ্টন এবং হুসমঞ্জল সমাজগঠনই ইহার একমাত্র 
প্রতিকার, যাহার ফলে উৎপাদকগণ অর্থ নৈতিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্বাধীনতা 
ভোগ কন্পিতে পারিবে । ইহার ব্যতিক্রম ঘটিলে সমাজের ধবংল অবশ্যম্ভাবী । 

শাহ, ওয়ালিউল্লাহ, মুসলিম ধর্মতত্ব ও দর্শনের একটি নুতন অধ্যায় সংযোজিত 
করিলেন, এবং নৈতিক পুনর্গঠন ও সমাজ-সংস্কারের পক্ষে. একটি প্রবল আবেদন 
উপস্থিত করিলেন। তাহার জীবনকালেই এতিহবাদ্দিগণ এবং শান্ত্প্রমাণবাদিগণ 
তাহাকে দুল বুঝিয়াছিলেন ; এবং একদিন প্রার্থনার পর মসজিদু হইতে তাহার 
বাহিরে আসিবার সময়ে প্রকৃতপক্ষে ভাহাকে প্রহার করিয়াছিলেন । কিস্ততিনি 
তাহার মহান্‌ কর্তব্যে দৃঢ় থাকিয়া! বিরোধিতা সত্ত্বেও নির্ভীকভাবে শেষ পর্যস্ত 
আপনার বাণী প্রচার করিয়া গিয়াছেন। 

তাহার যে উপদেশগুলি উনবিংশ শতাব্দীর মুস্লিম চিন্তায় এবং জীবনে মহৎ 
প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, তাহ! তাহার পুত্রগণ ও শিষ্যবর্গের মধ্য দিয়া প্রচার 
লাভ করিয়াছিল। 

ভারতবর্ষে ব্যাপকভাবে দর্শনের ( হিকৃমৎ ) চর্চ। হইয়াছিল, কিন্তু চিস্তার ক্ষেত্রে 
যৌলিকতার শোচনীয় অভাব রহিয়! গিয়াছে । পণ্ডিতগণ প্রধানতঃ তর্কশাস্ত্রে 
অহ্থরাগী ছিলেন, কিন্ত যে সমস্ত পুস্তক তাহার। রচন। করিয়াছিলেন, তাহ। ছিল 
পূর্ববর্তী মুস্লিম মনীবীদেরই টীকা এবং ভা্যমাত্র। “কোন নুতন সমস্যার 
বিচারের দ্বার! অথব] পুরাতন সমস্তাগুলির সমাধানের জন্ত কোন বিশিষ্ট প্রয়াসের 
দ্বারা ইহা শ্বকীয়ত! অর্জন করে নাই” ছ্ভ বোয়রের এই অভিযোগ এড়ান কঠিন। 
তথাপি মুস্লিম চিত্তে তর্কবিভ্ভার আধিপত্য প্রবল ছিল, এবং বিচার্য সমস্তামাত্রকেই 
তাহার] যুক্তিবিদ্ভাসম্মত হুনির্দিষ্ট পস্থায় বিচার করিতেন। যুদ্িশান্ত্র বিদ্ভালয়গুলির 
পাঠ্যবিষয়ের অস্ত ভূক্ত ছিল। 

পদ্দার্থবিভ্ভা, পরাবিদ্য1 ও নীতিশাস্ত্র দীর্ঘকালের ব্যবধানে আবিভূ্তি হইয়াছিল। 
এক্ষেত্রেও পণ্ডিতদের প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল অতি প্রাচীন মতবাদগুলিকে 
ব্যাখ্যা! কর1। জ্যোতিষ এবং ভেষজবিদ্ভার ক্ষেত্রে অবশ্য হিচ্ু ও মুসলিম 
বিজ্ঞানের সমহ্বয়ের মধ্য দিয়! কিছু প্রশংসনীয় চেষ্টা হইয়াছিল । 

তর্কবিদ্তার ক্ষেত্রে সংজ্ঞা! নির্ধারণের ব্যাপারে অনেক নেপুণ্যের প্রয়োগ 
ঘটিয়াছিল, এবং যে বিতর্ক ও আলোচনার সাহায্যে সত্যের প্রমাণ নির্ধারিত 
হইতে পারে তাহার পদ্ধতিবিষয়ে পুঙান্ছ্পুঙ্খ বিচার হইয়াছিল। ছাত্রদের জন্য 


১৪৮. 


এন্লামিক চিন্তাধারায় বিকাশ 


কয়েকথানি পাঠ্যপুস্তক রচিত হইয়াছিল ; তাহার মধ্যে হি, আল্লাহ, বিহারী 
রচিত “হুল্পন্‌ অল্‌ উলুম” গ্রস্থটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল । ইহাতে জ্ঞান ও তাহার 
প্রকারভেদ সম্বন্ধে আলোচন। আছে--ধারণ। (তাসাওয়ার) এবং বিচার (তা স্দীইক) 
ছাড়াও আরোহ্‌-যুক্তি এবং আরোহণচ্যমানের প্রামাণ্যতা সম্বন্ধে আলোচন1 আছে। 
কয়েকটি পাঠ্যপ্রস্থ রচন1 ব্যতীত ভারতীয় পঙ্তদের প্রধান রচনাবস্ত ছিল বিদেশী 
ও ভারতীয় পাঠ্যগ্রন্থের টীকাসমৃহ | 

দর্শনের ক্ষেত্রে ছুইটি নাম উজ্জ্বল হইয়! আছে, জৌনপুরের মুল্লাহ, মাহমুদ 
(মৃত্যু ১৬৫১ খবঃ অঃ) এবং মুহিব্ব, আল্লাহ, বিহারীর (মৃত্যু ১৭০৭ খ্বঃ অঃ) নাম। 
প্রথম জন কয়েকখানি গ্রন্থের রচয্লিত1, যাহার মধ্যে 'অল্‌ শম্স্‌ অল বাজিঘ? গ্রস্থটি 
প্রস্ৃত খ্যাতি অর্জন করিয়াছিল । ইহা গ্রন্থকারেরই রচিত “অল্‌্-হিকৃমৎ 
অল্-বালিঘ' গ্রন্থের টীকা | তর্কশাস্ত্র পদার্থবিদ্যা এবং পরাবিচ্যা লইয়! দর্শনের 
সমস্ত শাখ! সম্পর্কে আলোচনার জন্ত গ্রন্থ ছুইটি একত্রে রচিত হুইয়াছিল। কিন্ত 
রচনার কাজ আরম্ভ হইয়াছিল গ্রন্থকারের অস্তিম পীড়ার সময়ে, তাহার ফলে 
তাহা অসমাপ্তই থাকিয়! গিয়াছে । ইহাতে বিজ্ঞানের পদ্ধতি, তাহার প্রাথমিক 
স্থক্াবলী এবং নিয়মসমূহ আলোচিত হইয়াছে; পদার্থবিদ্যার প্রাথমিক স্বত্রগুলি 
হইতেছে অ-সৎ জড়বস্ত, গতি ও আকার ; আদি কারণ কারণতত্ত্বের বিষয় । 
দেশ এবং কাল আবশ্যিক পরিবেশ গড়িয়। তোলে, শুন্ত দেশের অস্তভুক্ষি নছে, 
আবার কালও চরম অর্থে অ-শাশ্বত। তিনি বস্তদেহসমূহের নিত্য গুণাবলী, 
তাহাদের সীমা-অসীমের তত্ব, গতি ও বিশ্রাম, স্থপ্টি ও প্রকাশ সম্বন্ধে আলোচন। 
করিয়াছেন। 

তত্বগুলি প্রধানতঃ আভিসেন1! (ইবন্‌ দিন! )র পদার্থবিদ্ভার € অল্-শিফ] ) 
মাধ্যমে আরিষ্টটুল হইতে সংগৃহীত । 

মুল্লা মাহমুদ পরিণামবাদ এবং মুক্ত ইচ্ছাশক্তি (জাবর্‌ ও ইখততীয়ার্‌ ) বিষয়ে 
সমগ্তার উপরেও আলোচনা করিয়াছেন । আশরীপন্থীদের চরম পরিণামঘাদ এবং 
মুতাজিলপন্থীদের চুড়ান্ত ইচ্ছাত্বাতত্র্যবাদের মাঝখানে তিনি মধ্যপন্থা৷ অবলম্বন 
করিয়াছিলেন । তাহার মতে মাচুষের ইচ্ছাই মানুষের কার্ধাবলীর অব্যবহিত 
কারণ, কিন্ত ঈশ্বরের ইচ্ছার মধ্যে তাহ] চরম পরিণামাশ্রয়ী ; স্ৃতরাং মাহষের কর্ম 
স্বেচ্ছানিক্সন্ত্রিত, কিন্ত তাহার ইচ্ছ! শৃঙ্খলিত। 

মুহিবব আল্লাহ, বিহারী তর্কশাস্ত্র এবং দর্শনের একজন লেখক ছিলেন। 'অল্‌ 
জওহর অল্‌ ফর্দ্‌” নামক তাহার দার্শনিক গ্র্থে মুস্লিম ধর্মতত্বের একটি ভিত্তিস্থানীয় 


১৪৪ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা ঘর্শদের ইতিহাস 


আলোচনা আছে, অর্থাৎ অবিভাজ্য অণু প্রেসঙে। এ পর্যন্ত শাজজবাদীদের 
অধিকাংশই এই মত পোষণ করিতেছিলেন যে বস্তদেহ কতকগুলি নির্ধিষ্টনংখ্যক 
অবিভাজ্য অথুর সমবায়ে গঠিত | ইহার বিরুদ্ধে আদিযুগের মুতাজিলপন্থী একজন 
দার্শনিক, নজ্জক, এই মত পোবণ করিয়াছিলেন যে, বস্তদেহ অসীমসংখ্যক বিভাজ্য 
অণুর দ্বারা গঠিত । অবিভাজ্য অধুর তত্বটিকে (আল্‌ জুজল। যাতাজাজ্ছ! ) সমর্থন 
করিবার জন্য পুথি-পশ্ডিত তাত্বিকগণের উৎকঠ উপলব্ধির যোগ্য । তাহার! ঈশ্বরের 
অহ্বয়ত্ব এবং শৃন্ক হইতে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করিতে তাহার সক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করিতে 
চাহিয়়াছিলেন। কিন্ত মুল্প! মাহমুদ এবং যুহিবব. আল্লাহ. -র মত দার্শনিকের1 এই 
তদ্বের মধ্যে অলঙজ্ঘ্য বাধ! লক্ষ্য করিয়াছিলেন এবং বিরুদ্বপক্ষের আক্রমণ 
এড়াইবার জন্ত অবিভাজ্য অণুর ধারণাটিকে যুক্তিত্বার খণ্ডন করিতে চাহিয়াছিলেন। 

আকবরের মহান্‌ মন্ত্রী আবুল ফজলের উল্লেখ ছাড়া ভারতবর্ষে দার্শনিকদের 
যে-কোন তালিকাই অলম্পুর্ণ থাকিবে । তিনি বৃত্ভিগততভাবে দার্শনিক ছিলেন না 
কিন্ত তিনি ছিলেন সে যুগের জ্ঞানিশ্রে্টদের মধ্যে একজন । তিনি ছিলেন 
রাষ্ট্রনীতিবিদ্‌, এতিহাসিক, নথি-সংরক্ষক, পন্রলেখক এবং চিস্তাশীল ব্যক্কি। 
আকবরের রাজত্বকালের স্মরণীয় দেশ-বিবরণীতে (আঈন্-ঈ-আকবরী ) তাহার 
লিখিত ভূমিকাটি তাহার রাজনৈতিক তত্বজ্ঞানের নিদর্শনন্ব্ূপ | 

রাজতন্ত্রই তাহার মতে আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা । যথার্থ ন্পতি এবং স্থার্থাহেষী 
রাজার মধ্যে তিনি পার্থক্য করেন। যদিও উভয়েরই সাধাবণ লক্ষণ হিসাবে 
ধনকোব, সৈম্তদল, ভূৃত্যগণ এবং প্রজাবর্গ আছে, তথাপি প্রথম শ্রেণীর নৃপতি 
এগুলির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করেন না; কারণ লক্ষ্য হিসাবে তিনি নিজের 
সম্মুথে স্বাপন করেন কল্যাণকে, যাহা হইতে নিরাপত্তা, ন্যায়, সত্য এবং পুণ্যের 
উদ্সার ঘটে। দ্বিতীয় শ্রেণীর নৃপতি রাজকীয় ক্ষমতার বহিরঙ্গ আঙ্গিকের মধ্যে 
বন্দী হইয়া] থাকেন, স্বতরাং গর্ব, প্রমোদ, দাসত্ব, অনিশ্চয়তা, দ্বন্ এবং পাপ 
ইহার নিত্যসঙ্গী। 

আবুল ফজলের মতে পাদশাহ, (নৃপতি ) কথাটিতে আক্ষন্সিক অর্থে শৃঙ্খল। 
এবং সম্পত্তির উৎন বোঝায়। নৃপতিত্ব একটি খ্রশ্বরিক দান, ইহ1 ঈশ্বর হইতে 
বিচ্ুত্নিত আলোক, হ্ুতরাং ইহু1 “বিশ্বজগতের উজ্জ্বলতা -বিধায়ক ; হা পূর্ণতত্বব- 
শাস্ত্রের যুক্তি-ত্বূপ ; ইহা সকল পুণ্যের আধার |” ঈশ্বর সাক্ষাৎ্রূপে রাজার 
মধো এই আলোক প্রেরণ করেন, সুতরাং নৃপতি-পদের পরিচয় পিতৃক্ষুলত শ্রীতিতে 
খদার্ধে, ঈশ্বরবিশ্বাসে, ধর্বোধে এবং নিষ্ঠায়। রাজার ক্ষেত্রে বাসন! যুক্তির 


৯৯০ 


স্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


কাছে পরাভূত, ক্রোধ বিচক্ষপতার দ্বার পরাস্ত, স্কায় করুণার হার] লিঞ্চিতঃ 
প্রতাপধর্ষ বিসর্জিত এবং সত্য আরাধ্য বস্তু । 

সমাজ চারিটি উপাদানের যৌগিক ফল। জগৎ যেমন অগ্নি, বায়ুঃ আপ. 
এবং ক্ষিতির স্বার| নিমিত, তেমনি সমাজ গঠিত হয় কারুশিল্পী, বণিকৃ, পত্ডিত, 
ও কষক-শ্রমিক দ্বারা । রাত্রীয় সত্তা যেমন এই চার শ্রেণীর লোকের মধ্যে 
সামঞ্জন্ গ্রতিষ্ঠিত করিয়! স্থিতিসাম্য বজায় রাখে, রাজতঙ্তও তেমনি ভকিল- 
পুরঃসর সম্ভ্রান্ত শ্রেণী, ওয়াজির ব1 দেওয়ান-নেতৃক বিজয়-সহকারিবর্গ, ব। হাকিম- 
শীর্ষক সভাসদৃগণ এবং রাজার ব্যক্তিগত ভূত্যদদলের মধ্যে ভারলাম্য রক্ষা করে। 

ভারতবর্ষে মরমিয়াবাদের প্রাচুর্ধমন়্ বিকাশ ঘটিয়াছিল। ন্ুফীর্দের মধ্যে 
অনেকেই এদেশের প্রতি আক হইয়াছিলেন এবং অনেকেই ভারতবর্ষকে 
তাহাদের স্থায়ী বাসভূমিরূপে গ্রহণ করিয়। অবস্থান করিয়াছিলেন । গীর, মুর্শিদ 
বা শেখ (নেতা )-গণের অধ্যক্ষতায় শিষ্য (মুরীদ )-গণকে আত্বোপলদ্ধির পথে 
(তরীকা) পরিচালিত করিবার জন্য মঠ-সহিত অনেক প্রধান প্রধান নুফী 
সম্প্রদায় এখানে তাহাদের শাখা প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। মরমিয়াবাদের 
একটি সাধন-রূপ ও একটি তত্ব-রূপ ছিল। ইহাতে চিস্ত-সংযম, বৈরাগ্য-সাধন, 
ধর্মচর্যা, ধ্যান প্রভৃতির স্বান ছিল। ভারতবর্ষে সুফী পদ্ধতি ছিল অনেকট! হিচ্দু 
যোগমার্গের অহ্থবূপ | 

তত্বের দিক দিয়! ভারতের মুস্লিম মরমিয়! সাধকগণ ছুইটি সম্প্রদায়ের অছ্ছগামী 
ছিলেন__চরম সর্বেশ্বরবাদী এবং মধ্যম সর্বেশ্বরবাদী, এজুদিয়া এবং উহুদিয়]। 
প্রথমোক্ত দল বিশ্বাস করিতেন যে, সকলই ঈশ্বরময় (হামা! ওসত.), এবং 
শেষোক্ত দল বিশ্বাস করিতেন যে, সকলই ঈশ্বর হইতে উদ্ভূত (হাম! আজ ওসত)। 
হিন্দুধর্মে এই ছই মতবাদের সাদৃশ্ত পাওয়! যায় শঙ্করের অদ্বৈতবাদে এবং 
রামাজগজজের বিশিষ্টাপ্বৈতবাদে। ভারতবর্ষে আনীত হইবার পূর্বে 'মুস্লিম 
মরমিয়াবাদ ( তসব্ব.ফ.) ভারতীয় অতীন্র্িক্লবাদ হইতে কিছু কিছু গুরুত্বপুর্ণ 
উপাদান আত্মস্থ করিয়। লইয়াছিল, ভারতে আবির্ভীবের ফলে ইহার মধ্যে কিছু 
চিন্তাকর্ষক নবন্ূপায়ণ ঘটিয়াছিল। সাধনার ক্ষেত্রে সদৃশ পদ্ধতি গ্রহণ কর। ব্যতীত 
তত্বের দ্রিক দিয়াও হিন্দু ও মুস্লিম উভয় মতবাদের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধনের একটি 
সচেতন চেষ্ট! চলিয়াছিল । 

প্রাচীনতম সুফীদের মধ্যে ধাহার। ভারত ভ্রমণ করিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে 
মন্স্থর অল্‌ হল্লাজ-এর নাম জনশ্রতিতে প্রচারিত । অন্ত ধাহার। দাক্ষিণাত্যে 


১১৯১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিছাস 


আসিয়া সেখানেই স্থিতি লাভ করিয়াছিলেন, তীহাদের সম্বদ্বেও নান! কাহিলী 
প্রচলিত আছে। প্রথম উল্লেখযোগ্য সুফী পণ্ডিত যিনি ভারতবর্ষে বসবাস 
করিয়াছিলেন, তিনি হইতেছেন উস্মান বিন্‌ আলি অল্ হুত্রীরী। তিনি লাহোরের 
অধিবাসী ছিলেন, এবং মরমিয়াবাদের উপরে তাহান্স প্রথম শ্রস্থ “কাশ ফ.-অল্‌ 
মহ,জুব” পারসী ভাযার রচিত । 

“কাশ ফ.-অল্‌ মহ.জুব* গ্রন্থটিতে সুফী তত্ব এবং সাধনপ্রক্রিয়া, ইহার বিভিন্ন 
সম্প্রদায় এবং প্রধান প্রধান স্ুফীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্বলিত সুফীমতবাদের 
একটি পুর্ণাঙ্গ পদ্ধতির আলোচনা আছে । পথ এবং তাহার বিভিন্ন নিকেত সম্বন্ধে 
যথার্থ তাৎপর্য জিজ্ঞান্গু কোন সঙ্গী ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে এই ্রস্থটি রচিত 
হইয়াছিল। ইহার উদ্দেশ্য একথ। প্রমাণ করণ যে, *বিশ্বজগৎ এঁশী রহম্তের আলয় 
বস্তৃস্বন্ষপ, অনিত্যগুণসকল, ভৌতিক পদার্থগুলি, আকারসমূহ এবং বস্তদেহগুলি 
প্রশী রহন্তের আবরণমাত্র, এবং এ্রক্যের ( তৌহীদ ) দৃষ্টিকোণ হইতে গণ্য করিলে 
আবরণ সমূহের অস্তিত্ব ঘিশ্চয় করার অর্থ হইতেছে বহুদেবতাবাদ। অবভালিত 
সত্তার সহিত সংশ্রবের ফলে তাহার মধ্যে যে আত্মা নিরুদ্ধ হইয়! থাকেন, 
অবভাসিত সম্ভ। তাহারই আবরণস্বক্ধপ | অবভামিত সত্তার দ্পমোহ মান্ছবকে 
অজ্ঞান এবং অনীহার মধ্যে নিমজ্জিত রাখে, যাহাতে অন্বয়ের লৌন্দর্যরাগ সম্বন্ধে 
অন্ধদৃষ্টি হইয়! সে ঈশ্বর হইতে বিমুখ হইয়। পড়ে, জাগতিক মিথ্যার অভিসান্নী হুয়, 
এবং যুক্তির উপরে বাসন।-প্রবৃত্তিকে প্রাধান্যলাভের সুযোগ করিয়। দেয়। 

হুজবীরী এমন এক সময়ে লেখনী পরিচালন! করিয়াছিলেন-যখন সুফী মতবাদ 
একটি সুগঠিত তত্বপদ্ধতিতে (সিল্‌ সিলাহ.) পরিণতি লাভ করে নাই। দ্বাদশ 
শতাব্দীতে এই প্র্রক্রিয়! সম্পূর্ণ হয়, এবং মঠকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাহাদের 
বিশিষ্ট সাধনপন্থা, আচরণবিধি, নিয়মশৃঙ্খল। এবং উপদেশ লইয়! উদ্ভৃত হইয়াছিল । 
ভ্রাত্বস্থানীয় সম্প্রদায়গুলি হজরত মহম্মদ হইতেই ক্রমবিকাশহ্যত্রে তাহাদের উত্তব 
গণ্য করিতেন। এই জঅন্প্রদায়গুলির মধ্যে চারিটি ভারতবর্ষে প্রাধান্ অর্জন 
করিয়াছিল, এবং ইহাদের প্রত্যেকটিতেই অহ্গামীর সংখ্যা ছিল প্রচুর । ইছার! 
হইলেন চিশ.তিয়ঃ কাদ্‌রিয়, সুহক্রাবদর্খয় এবং নকৃশবন্দীয় সম্পদায়। প্রত্যেকটি 
সম্প্রদায় হইতেই এমন অনেক শিক্ষাদাতার উদ্ভব হইয়াছিল ধাহার তাহাদের 
সমসাময়িক কালে যথেষ্ট প্রভাব রাখিয়] গিয়াছেন, কিন্ত হুজ্বীরীর বক্তব্য অহ্সাৰে 
“সংযম (মুজহদাহ.) এবং ধ্যান (মুশহদাহ.) সমন্ধে তাহাদের প্রত্যেকেরই 
উৎক পদ্ধতি ছিল, কিন্তু ধর্মীয় ক্রিয়াহুষ্ঠালে এবং বৈরাগ্যচধায় তাহাদের 


৯১৭ 


ইস্লািক চিন্তাধারার বিকাশ 


পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য ছিল $ মূলতত্ব বিষয়ে এবং ধর্মবিধি ও অ্বয়স্থাপনেক্স 
বিষয়ে আহৃষঙ্গিকতত্বে তাহাদের মধ্যে সাদৃশ্য ছিল ।” 

সমস্ত সম্প্রদায়েরই একমাত্র লক্ষ্য ছিল লাধুজ্য লাভের পথে মাহষকে 
পরিচালিত কর1। তত্বটি এই যে, বিশ্বের সমগ্র-সম্ভার বিপরীতক্ধপে খগ্ড-সত্তাব্পপ 
মানুষ নিজের মধ্যেই অহ্ৃশাসনের বিশ্বক্ষপ (আলামে আঁম্র ) এবং স্যস্তির বিশ্বক্ধপ 
€(আলামে খবাল্ক্‌) ধারণ করে। প্রথমটি আত্মময় বিশ্ব, দ্বিতীয়টি বস্তষয় বিশ্ব। 
মাহযের মধ্যে পঞ্চ আধ্যাত্মিক উপাদান হইতেছে হৃদয় (কাল্ব ), আত্মা (রুহ. ), 
চেতন! (সির্‌), গুঢ় (খ।ফি) এবং অতিগুঢ় (আখংফ! )। পঞ্চ বস্ত-উপাদান 
হইতেছে অহংভাব (নাফ স), এবং ক্ষিতি, অপ» তেজ, ব্যোম এই চারিটি 
ভৌতিক উপাদান। 

বস্ত-উপাদানগুলির সংশ্রবে আধ্যাত্মিক উপাদানগুলির আদিম পবিভ্রতা 
কলঙ্কিত হয়, মাহুবের স্বরূপ-প্রকৃতির বিস্মৃতি ঘটে এবং তাহার ও ঈশ্বরের মাঝখানে 
একটি আবরণ পড়িয়! যায়। কিস্ত মানুষের গভীরতম কামনা! এই আবরণকে 
অপসারিত করিয়! সত্যকে লাভ কর]। আধ্যাত্মিক জীবনে উধবগামিত1 যেন 
একটি পথযাত্রার ( তরীক ) মত, এবং ঈশ্বর-সন্ধানী ব্যক্তি যেন পথিক (সালিক্‌ )। 
অনুতাঁপের দ্বারা আপনাকে প্রস্তত করিয়া তোল এবং ধর্মবিধির (শরিয়ত ) 
অস্গগত থাকা, ইহাই প্রথম শুর; দ্বিতীয় স্তরে বৈরাগ্যের দ্বার সংযমসাধন, 
পবিভ্রতা অর্জন এবং স্মরণ (ধ্বিকৃর ) যাহাতে অন্তর হইতে ঈশ্বর-আকাজ্কা 
ছাড়া আর সব আকাঙজ্কা দূরীভূত হয় ঃ তৃতীয় সুরে ধ্যান এবং আনন্দ-তম্ময়তার 
মধ্য দরিয়া অর্জিত আধ্যাত্মজ্ঞান, যাহাতে ব্যস্টি-চেতন৷ এবং শ্বাতন্ত্র্যের বোধ লুপ্ত 
হইয়1 বিশ্বাত্বার উপলব্ধি ঘটে। সত্য (হক্িকৎ) ও অদ্বৈতের (ওয়াস্ল্‌) 
চরম লক্ষ্যের অভিমুখে ইহ1 পরিচালন করে ; তখনই যাত্রার শেষ, এবং অক্ষয় 
আনন্দ ও দিব্যজ্যোতি অন্তরকে পুর্ণ করিয়া! তোলে। 

সম্প্রদায়গুলির বিভিন্ন নিজত্ব পন্থার দার্শনিক মুল বিচার করিলে তাহাদের 
পার্থক্যকে ছুইটি মাত্র ভাগে শ্রেণীবিভক্ত কর! যায়। একদল চরম অধ্বয়তত্বকে 
(যুজুদীয়1) সমর্থন করিয়াছেন, অন্ান্তেরা সংশোধিত আকারে অধৈততত্ব (গুহুদায়।) 
মানিয়াছেন। প্রথম দল ছিলেন ইব্‌ন এল্‌-আরবী এবং আবাল করীম জীলীর 
অহ্ুথগামী। তাহাদের মধ্যে আব্দার রহমান জামী ভারতবর্ষে তাহার জীবনের 
অধিকাংশ কাল কাটাইয়! পারসী ভাষায় একখানি গ্রন্থ রচন1! করিয়াছিলেন, 
যেটি ভারতবর্ষে সুফী দর্শনের একটি জনপ্রিয় সার-গরন্থ ব্ূপে প্রতিষ্টিত হইয়াছিল। 


১১৩ 


১৬ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য ঘর্ণনের ইতিছাস 


- তিনি নির্দেশ,রুরিয়াছেন যে, “লতা? কথাটি কখনও একটি সাধারণ ধারণ! বা 
অ-বস্ত ভাব বুঝাইতে ব্যবহৃত হয়, আবার অন্ত সময়ে ইহ! সেই পরম সম্ভার অর্থ 
প্রকাশ করে, যিনি স্বয়ংবৃত্ত, এবং ধীাহার উপরে অন্থ সকল সম্ভার অস্তিত্ব নির্ভর 
করে| তাহার বাহিরে অন্ত কোন সত্তারই যথার্থ অস্তিত্ব নাই। যাহা কিছু 
তাহার বহিভূতি তাহাই বাস্তব অস্তিত্রবিহীন মনের রঞ্রিত বিষয়মাত্র, এবং তাহার 
আকার একটি কাল্পনিক বস্তমাত্র | পরম সত্তাই একমাত্র সত্ত।-পদবীর অধিকারী 
রূপে নকল নামের ও সকল গুণের অতীত এবং সকল সর্ত ও সকল সম্বন্ধ হইতে 
মুক্ত । ভাহার গুণগুলি স্বতন্ত্র বলিয়! চিস্তায় প্রতিভাত হয়, কিন্ত বস্ততঃ এবং 
যথার্থতঃ তাহারা অভিন্ন। 

পরম সত্তা তাহার অংশ-বিভূতির মধ্যে আপনাকে প্রকাশ করেন, তাহার মধ্যে 
প্রথমটি নিরঞ্জন অদ্বয় ন্ধপ, যাহার মাধ্যমে তিনি আপন শ্বর্পপকে আপনার মধ্য 
হইতে আপনার নিকট প্রকাশ করিয়াছেন, এবং জ্ঞান, জ্যোতি, ভব ও বৃত্তির গুণ 
আয়তু করিয়াছেন। তাহার পরে পরবতী প্রকাশসমূহ ঘটিয়াছে, যাহার অস্ত 
প্রকটিত হুইয়াছে বহুত্বময় জগৎ। কিন্ত এই জগৎ কেবল অবভাসাত্বক, কারণ 
ইহার সত্য অস্তিত্ব নাই, আজ ইহা! বর্তমান আছে? কাল ইহা লুপ্ত হইবে । নিত্য 
পরিবর্তনশীল, নিয়ত নবায়মান, প্রতিমুহূর্তে বিলুপ্ত এবং প্রতিমুহূর্তে সমব্ধপ দ্বারা 
পুণিত কতকগুলি অনিত্য গণের সমষ্টি ছাড়া বিশ্বজগৎ আর কিছু নয়। প্রকৃত 
তত্ব এই যে, সমস্ত বস্ত্র অস্তরশায়ী সত্যরূপী পরমসত্ত! এক এবং অদ্বিতীয়, বহুত্বের 
সভভাবন1 তাহাতে নাই। তিনি অবভাসের দ্বার, বহুত্বের দ্বার, সীমার দ্বার! 
আপনাকে প্রকাশ করেন । তাহার পুর্বাপরত1 কেবল তাহার সাপেক্ষ সম্বন্ধ এবং 
ভঙ্গিমা মাত্র । এই ছুইয়ের মধ্যে আছে সেই সম্বন্ধ, যাহা আছে নির্বিশেষে এবং 
বিশেষের মধ্যে ; একটিকে ছাড়! অন্তটিকে ধারণ! কর1 যায় না, যদিও নিবিশেষ 
হইতেছে আবশ্থিক, আর বিশেষ হইতেছে সর্ভাধীন। 

এই চরম একেশ্বরবাদের ভিত্তিতে জামী তাহার মরমিয়া দর্শনতত্ব, ব্যক্তির 
প্রককৃতিঃ তাহার ভবিতব্য এবং তাহার চিত্তসংযম সম্পক্িত তত্ব গড়িয়া 
তুলিয়াছেন। 

বহু বৎসর ধরিয়া! ইব্‌ন অল্‌ আরবীর সম্প্রদায় কর্তৃক স্্ট প্রবাহপথ ধরিয়াই 
প্রধান স্কুফী মতবাদগুলি অগ্রসর হইয়া! চলিয়াছিল। ইহাতে তত্বৃজ্ঞানের (মা 
রিফাৎ) নিকট ধর্মবিধিকে ( শারীয়াত.) নিম্মস্থান দ্রিবার ফলে নৈতিক নিয়ম 
বিমুখতা এবং পর্ধর্মবাদের প্রবণতা সমর্থন লাভ করিয়াছিল+ যাহার উদাহরণ 


১১৪ 


এস্লামিক চিন্তাধায্ার বিকাশ 


উদ্বারপন্থী (কে শারা? ) সম্প্রদায়গুলি, আকবরের ধর্মীয় হার এবং লমযরমারথী 
ধর্মশাখাগুলি। 

সপ্তদশ শতান্ধীতে একটি প্রবল প্রতিক্রিয়া: দেখা দিয়াছিল। এই 
আন্দোলনের নেতা ছিলেন শেখ আহমদ সির্হিশ্দি (জন্ম ১৫৬৪ খুঃ আঃ» মৃত্যু 
১৩২৪ খৃঃ অঃ), যিনি মুজাদ্িদ-ই-আল্ফ-ই-থাঁনি (দ্বিতীয় স্বর্ণযুগের পুনরুজ্জীবন- 
কারী ) নামে পরিচিত ছিলেন। তাহার প্রধান লক্ষ্য ছিল ধর্মবিধির প্রাধান্ত 
পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা, এবং এই উদ্ধেশ্যে তিনি নকৃশাবন্দীয় সম্প্রদায়-মতের 
পুনরুজ্জীবন এবং প্রচার করিয়াছিলেন। লমগ্রভাবে সুন্নী ধর্মবিধির মূল ভিত্তি 
অবলম্বন করিয়া! এই সম্প্রদায়ের তত্বাদর্শ এবং সাধন-প্রক্রিয়ার উৎপত্তি হইয়াছিল 
এবং সকলপ্রকার উদ্ভাবন-চেষ্টাকে পরিহার করিয়াছিল। বস্ততপক্ষে তিনি 
ধর্মশাস্ত্রকে অতীক্দ্রি়বাদের উপরে স্থান দিয়াছিলেন এবং শফী ও তত্ব যাহার 
বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়! জয়যুক্ত হইয়াছিল, সেই সংকীর্ণত1 এবং কুসংস্কারকেই 
দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি উৎসাহিত বরিয়! তুলিয়াছিলেন। 

সংশোধিত অদ্বয়বাদ ( ওয়াহদাৎই-শুছদীয়!) তত্বের গঠনই দর্শনক্ষেত্রে 
সির্হিন্দির কীত্তি। তাহার মতে ধ্যানানন্দের মধ্য দিয়! নহে, ঈশ্বরকে জানা যায় 
কেবল তাহার প্রকাশরূপের মধ্য দিয়!, কারণ মরমিয়! উপলব্ধির মধ্য দরিয়া যে জ্ঞান 
আক়়ত কর। যায়, তাহ। একান্তই ব্যক্তিনির্ভর, স্কতরাং সংশয়ের যোগ্য | অতীন্দ্রিয় 
সমাধির মধ্যে যে ঈশ্বর আপনাকে মাহষের নিকট প্রকাশ করেন এ ধারণ! ভ্রান্ত, 
কারণ ঈশ্বর হইতেছেন পরাৎপর, এবং তিনি বুদ্ধি এবং বোধির সম্পূর্ণ অতীত। 
তাহার ম্বরূপ প্রশ্বর্যাবলীর বিষয়ে কোন অব্যবহিত জ্ঞান সম্ভবপর নয়। প্রেরিত 
পুরুষের নিকট ঈশ্বর আপনাকে প্রকাশ করেন এই স্থির প্রত্যয় হইতেই শুধু 
সত্যকে লাভ কর যায়। 

সির্হিন্দি পরম সত্যের স্বরূপ এশ্বর্ের অভিন্নতা সম্পর্কে নিবিশেষবাদী তত্বের 
বিরোধিতা করেন । তিনি মনে করেন, ঈশ্বরের বিভূতিসমূহ ঈশ্বরের ত্বব্বপেরই 
বধিত অংশ ; এবং বিশ্বজগৎ বিভূতি সমুহের প্রকাশ-ন্ধপ নহে, তাহার ছায়ামাত্র ; 
কারণ ঈশ্বরের বিভূতি ক্রটিহীনন্ধপে পুর্ণ অথচ বিশ্বজগৎ অপূর্ণ তায় আচ্ছন্ন 
আবার ঈশ্বরের গুণ এবং মানব গুণাবলীর মধ্যে কোন সাদৃশ্য নাই। বিশ্বজগৎও 
একটি সত্য, তাহ ঈশ্বর হইতে ভিম্ন এবং ঈশ্বর কর্তৃক স্থষ্ট ; কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্ব 
যেমন একদিকে আবশ্যিক এবং শাশ্বত, অন্যদিকে আবার বিশ্ব হইতেছে সম্ভাব্য 
এবং কালাধীন । ইহা হইতে প্রমাণ হয় যে, ঈশ্বর এবং বিশ্ব একাত্মক নহে, 


৯১% 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


কারণ একটি হইতেছে কারণরূপ, একটি তাহার কার্ধকল। ঈশ্বর সম্বন্ধে তাহার 
ধারণা এই যে, তিনি শৃন্ত হইতে রচনাকারী আঙ্টা, তিনি তাহার স্ষ্ট ভীবকুলের 
পুর্িদাতা পোষণকর্তা, পথপ্রদর্শকর্ূপে তিনি তাহার অবতারগণকে লোকশিক্ষার 
জন্ত অবতার করান, _-এক কথায়, সমগ্র গুণ, শক্তি ও পূর্ণতার তিনি আধার। 

অহ্ুন্ধপভাবে তিনি মনে করেন, ঈশ্বর এবং পরমাত্বা দেশকাল অতিক্রম করেন 
সত্য, কিন্ত তবুও ঈশ্বর এবং মানবকে স্বরূপতঃ এক মনে কর] যায় না। আত্ম! 
বস্ত-জগৎ হইতে পৃথক্‌, কিন্ত ঘ্বেহের সংশ্রব স্বীকার করিয়া তাহা ঈশ্বর হইতে 
বিচ্ছিন্ন হুইয়া পড়িয়াছে। কিন্ত ইহার ম্বরূপগত আধ্যাত্মিকতার দিকেই ইহার 
স্বাভাবিক প্রবণতা, এবং ধর্শের অন্ুশাসনের প্রতি বশ্তার মধ্য দিয়! ইহার 
সহজাত প্রবণতাকে উদ্বদ্ধ করিয়! অণ্ভ প্রভাবসমৃহকে রোধ করা যায়। 
্থতরাং দ্বিধাহীনভাবে পূর্ণ অবস্থা এবং নির্ভরতা লইয়! ঈশ্বরের বশ্যতা ম্বীকার 
করিলে মানুষ পূর্ণতা অর্জন করিতে পারে । 

এই ছুই মতশাখার মধ্যে বিতর্কধারাটিকে তাহাদের তহুগামীর! অগ্রসর করিয়] 
নিয়! চলিয়াছিলঃ কিন্ত বিশেষ কোন নুতন যুক্তি উপস্থাপিত হয় নাই, অথব! 
নুতন কোন তত্বপন্থারও উদ্ভব ঘটে নাই। 

হিন্দু ও মুসলমান মরমিয়! দার্শনিকগণকে পরস্পরের নিকটে আনিবার জন্য 
ধর্ষসম্থয়পন্থীদের মধ্যে চিত্তাকর্ষক প্রচেষ্টা চলিয়াছিল। ইহার মধ্যে অত্যন্ত 
উল্লেখযোগ্য ছিল একদিকে দার1 শিকোহ.-র চেষ্টা, অন্তদ্িকে ভক্তিধর্ম-আন্দোলনের 
নেতৃগণের প্রচে্া। 

পণ্ডিত হিসাবে দার1 শিকোহ-র কীতি ছিল বিস্ময়কর । নানা ধর্মের বিষয়ে 
এবং হিন্দু ও মুস্লিয দর্শনশাস্ত্রে তাহার জ্ঞান ছিল সুগভীর | তখনকার দিনে 
পরিচিত সমস্ত উপনিষদেরই (সংখ্যায় বাহাম্নটি) তিনি সংস্কৃত হইতে পারসী 
ভাষায় অনুবাদ করিয়াছিলেন, মুসলিম মরমিয়াবাদ সন্ধে কয়েকখানি গ্রন্থ রচন! 
করিয়াছিলেন, এবং হিন্দু ও মুস্লিম মরমিয়1 দর্শনতত্বের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন । 

তিনি যে সমস্ত প্রশ্ন লইয়া আলোচন! করিয়াছিলেন তাহা! জ্ঞানতত্ব, 
পরাবিজ্ঞান ও নীতিতত্বের বিষয় সম্প্িত। তিনি প্রমাণ করিয়াছেন যে, হিন্দু ও 
মুস্লিম উভয় সম্প্রদায়ের মরমিয়াতত্ব্ে জ্ঞানের প্রকৃতি ও প্রামাণ্যতা বিষয়ে এবং 
তাহা অর্জন করিবার পন্থা! সম্পর্কে সদৃশ ধারণ! প্রচলিত আছে । উভয় সম্প্রদায়ের 
মতে মানবিক ও এশ ভেদে ছই প্রকারের জ্ঞান আছে। প্রথমটি বুদ্ধি-আশ্রিত 
জ্ঞান, প্রদর্শন ও যুক্তির লহযোগে অজিত জগদ্বিষয়ক জ্ঞান, দ্বিতীয়টি অপরোক্ষাহথ- 


১১৬ 


_ এন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


ভূতির স্বারা অজিত জান, যে জ্ঞান বন্ধন হইতে মুক্তি দিয়া সত্যের অভিমুখে 
পন্রিচালিত করে। প্রথমটি ইন্দ্রিয-সংবেদনের উপর নির্ভরশীল, অপরটি উদ্ভৃত হয় 
তখন, যখন ইন্ত্রির-সংবেদন বিলুপ্ত । একটি প্রকাশ করে সর্ভাধীন সত্যকে, 
অন্টি গ্রবকে | ম্থফীগণ ইহাদের জ্ঞান (ইল্ম্‌) ও তত্বজ্ঞান (মারিফত. ) নাম 
দিয়াছেন, হিন্দুরা নাম দিয়াছেন ইহ-সম্বন্ধীয় জ্ঞান (অপরা ) এবং পরতত্ব সন্বন্ধী 
জ্ঞান (পরা )। 

তিনি প্রকাশ করিয়াছেন যে, সত্যের সমস্তা বিচারে হিন্দু এবং মুস্লিম 
উভয়পক্ষের মত একই । সত্য অথণ্ড, এবং তাহার তত্ব অন্বয়াত্বক (অদ্বৈত, 
তৌহিদৃু)। এই সত্য হইতেছে নিবিশেষ (পরম, মুতংলাঁক্‌), ইহা লত্যের 
সত্য ( সত্যন্ত সত্যম, হকীকত, উল্‌ হকাইকৃ)॥ আলোর আলে! (জ্যোতিষাম্‌ 
জ্যোতিঃ, নূর আল্নুরিন্)। যাহা ইহা হইতে ভিন্ন (অন্তদ্ূ, মালিব!), তাহা! 
শুধু চিত্তের বর্ণলেপ, কাল্পনিক সত্তা মিথ্যা, কল্পনা, মায়া, মালুমে মা'ছুম্‌ মাওজুদে 
মাওহম্‌), ইহা আবৃত (অব্যক্ত, বাতিন্‌), আবার ইহ! প্রকাশিতও (ব্যক্ত, জাহির ) 
বটে, সর্বাতিগ ( সর্বব্যাঁপিন্‌, মুহীত, ), এবং সর্বাুগ ( অস্তর-যামিন্, সারী )। ইহ! 
অনিবচনীয় এবং অজ্ঞেয়। বৃহদারণ্যকোপনিষদ্‌ বলেন, প্বীহার মধ্য দিয়া এই 
সমস্তের জ্ঞান লব্ধ হয়, ভাহাকে কেমন করিয়া জান! যাইবে, জ্ঞাতাকে কেমন 
করিয়া! কেহ জানিবে*, এবং হুসেন অল্-নূরী বলেন £ 

“কারণ যুক্তিসিদ্ধির দ্বার! ঈশ্বরকে জান! যায় না, জান যায় কেবল ঈশ্বরেরই 
মাধ্যমে |” | 

কেনোপনিষদ্‌ বলেন £ 

“তাহাদের দৃষ্টি সেখানে প্রবেশ করে না, বচন নয়, মনও নয়*ঃ এবং 

জামি বলেন £ 

“সত্যের পরম মহিমময় ন্বরূপ জ্ঞান ব| দৃষ্টির অধিগম্য নহে |» 

পরম সত্যের কোন অভিধা৷ (নামন্‌; ইস্ম্‌) ও আকার (ব্বপম্‌, সিফত, ) নাই, 
এবং তাহা পরিণামহীন ; তাহা যখন পরিণামকে আশ্রয় করে, তখন আপনাতে 
নাম ও আকার আরোপ করে এবং ভঙগী ও অবস্থার মধ্য দিয়] প্রকাশিত হয়। 
এতরেয় উপনিষদে বলা হইয়াছে, "আদিতে যথার্থই এই আত্মা একমাত্র ছিলেন, 
অন্য কাহারও পক্মপাতন তখন ছিল ন।। তিনি চিস্তা করিলেন, এখন জগৎসমূহ সি 
করিব” | হাদীমী কুদ্‌লী বলেন, “আমি ছিলাম এক গুগতধন, তারপর আপনাকে 
জানাইতে ইচ্ছা করিলাম, সেই কারণেই আমি স্যপ্ির অস্তিত্ব সম্পাদন করিয়াছি”। 


৯৯৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


প্রকাশ-পরিকল্পনাগুলির মধ্যে সাদৃশ্য আছে। কঠোপণিবদ্‌ অন্গসারে হিমু 
পরিকল্পনাটি এইক্ধপ £ 

(১) ব্রন্ধ যাহা আত্মা ও বস্তুর অবিচ্ছেদ্য এ্রক্যন্বরূপ ; অতঃপর (২) বিশ্বাত্ব! 
( মহৎ-আত্মন্‌) এবং বিশ্ববস্ত (অ-ব্যক্ত); ভারপর (৩) বিশ্বাস্বা হইতে এ্রণী 
শিকল ও আত্মাসমূহ, এবং প্রকাশিত প্রজ্ঞা (বুদ্ধি) ও ভৌতিক উপাদানগুলি ) 
পরে (8) আত্মা এবং বস্তর সঙজগমস্থলব্ধপে মাহুষ। ইব্‌ন অল্-অরবীর অহ্সরণে 
্থফী পরিকল্পনাটিও উল্লিখিত তত্বের অনুরূপ | 

মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অবতরণ এবং ঈশ্বরের দিকে মানুষের উদগতি এই উভয় 
দিক সম্পর্কে হিন্দু ও মুস্লিম মরমিয়াগণের আচারপদ্ধতি এবং বিশ্বাসের মধ্যে 
ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্বটি দার শিকোহ. নির্দেশ করিয়াছেন। উভয়েরই লক্ষ্য তত্বজ্ঞান 
ও আত্মোপলন্ধি। যখন শাশখতের উপলন্ধষি চিত্তের শাস্তিকে বিদ্বহীন করে, 
তখনই ইহ। অর্জিত হয় 9 নিদিধ্যাসন (ধ্যান, মরাকুবাহ.) এবং নিয়মন (সংযম, 
মুজা হিদ। ) হইতেছে উপায়স্বক্ূপঃ এবং সত্যদর্শন (সাক্ষাৎকার, মুশাহিদাহ.) 
ইহার লক্ষ্যত্বর্ূপ। মন:ক্রক্রিয়ার চারিটি স্তর (ভূমি, মঞ্জিল) আছে। প্রথম 
স্তরটি হইতেছে সাধারণ সজ্ঞানতা (জাগ্রৎ নানু ত,), দ্বিতীয়টি ভাবধ্যান (স্বপ্ন, 
মালাকুত.), তৃতীয়টি বহুত্বের মধ্যে এক্যের চেতনা (দ্বযুণ্তি, জব্রুত, ) এবং 
চতুর্থটি পুর্ণ অস্তরনিবিষ্টতা (তুরীয়, লাহৃত,), যাহার ফলে দেশ ও কালের 
চেতনা ও “আমি” এবং “তুমি”র পার্থক্যবোধ লুপ্ত হয়, এবং মরমী সাধক “আমি 
সেই” ( সোহহম্‌ অপ্মি, অনল্‌ হকৃ) এই জ্ঞান লাভ করেন। 

যে ভক্তিআন্দোলন সমগ্র ভারতবর্ষে পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল এবং যাহা কয়েক 
শতাব্দী ধরিয়! লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে নৈতিক তাৎপর্য এবং মূল্যবোধ আনয়ন 
করিয়াছিল, তাহার উদ্দেশ্য ছিল ছুইটি। প্রথমতঃ ইহ! ছিল বৈধীমার্গ এবং 
বহিরঙগ আছুষ্ঠানিকতার প্রতিবাদন্বর্ূপ। ইহ1 মাহযকে এই মত্যের উপলন্ধিতে 
জাগ্রত করিতে চাহিয়াছিল যে, ধর্ষ এমন এক বিষয় যেখানে সমগ্র মন এবং 
আত্মার সমর্পণ ঘটে, তাহ] শুধু ধর্মকত্য এবং অহ্ষ্ঠানসর্বন্ব ব্যাপার নহে, অথবা 
শাম্মমত এবং শাস্ত্রোপদেশের বিষয়ও নহে। দ্বিতীয়তঃ অনেক মহাপুরুষের 
পক্ষ হইতে এই আন্দোলন ছিল হিন্দু ও মুস্লিমদ্ধের মধ্যে সমন্বয়ের একটি 
আত্তরিক প্রচেষ্ট১ এবং উভয়ের নিকট ইহা প্রমাণ করিবার প্রয়াস যে মুলগত 
বিষয়ে তাহাদের সামান্ঠই পার্থক্য আছে। প্রেম এবং সেবা! ছিল তাহাদের 


মূলমন্তর। 


৯১৮৮ 


ধন্লামিক চিন্তাধারার বিকাশ 


ভারতবর্ষে প্রত্যেক ধর্মেই এই আন্দোলনের নেতৃবর্গের আবির্ভাব হইয়াছিল |. 
তাহারা তাহাদের বাণী প্রধানতঃ সাধারণ মাচুষদের জন্যই প্রচার করিয়াছিলেন, 
এবং পাশ্ডিত্যের ভাষা বর্জন করিয়! তাহাদের আঞ্চলিক ভাষাতেই বক্তব্য প্রকাশ 
করিয়াছিলেন । লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাত1 বাসব, সিদ্ধরগণ, দাক্ষিণাত্যের 
বৈষ্ণব এবং শৈব সাধুগণ, উত্তরাঞ্চলের কবীর, নানক, চৈতন্য, তুকারাষ এবং 
অন্যান্য আরও অনেকে ভক্তিধর্ম বা প্রেমধর্ম শিখাইয়াছেল এবং প্রচার করিয়াছেন। 
কাহারও কাহারও উপান্ত ছিল মিগণ ব্রহ্ম, অন্থান্তেরা রাম এবং কঞ্চন্পে সগুণ 
ঈশ্বরের ভজন! করিতেন, কিন্তু সকলেই ছিলেন একতত্ববাদী অথব! একেশ্বরধাদী, 
এবং তাহাদের ধর্মপরতা। এবং বিশ্বাস ছিল আবেগন্নাত। সমস্ত জাগতিক বাসনার 
নিবুত্তির মধ্য দিয়! হৃদয়ের পবিভ্রতাসাধনে এবং মানৰ ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার 
নিকট সমর্পণে তাহাঁর। বিশ্বাসবান ছিলেন । তাহাদের সকলেরই ধারণ! ছিল 
যে, শিষ্যকে আত্মোপলব্ধির দুর্গম পথে পরিচালনা! করিবার জন্য গুরুর প্রয়োজন 
আছে। ধর্মগ্রন্থ বা শাস্ত্রবিদ পুরোছিতের প্রয়োজন তাহার! গণ্য করেন নাই, 
এবং উপবাস, তীর্থভ্রমণ, মুর্তিপূজা ও আড়ম্বরপূর্ণ পূজোপকরণ প্রভৃতির তাহার 
নিম্পা করিয়াছেন। সামাজিক ক্ষেত্রে তাহার! সকল মাহষের মুলগত সাম্যের 
উপরে গুরুত্ব আরোপ করিয়াছিলেন, এবং জাতিপ্রথা বর্জন করিয়াছিলেন। 

তাহাদের সর্ববাদী ধর্মে তাহার1 স্থুফীতত্বের সহিত বেদাত্তের উপকরণগুলি 
মিলাইয়া লইয়াছিলেন, সকল প্রকার শাস্ত্রনির্ভরত পরিহার করিয়াছিলেন, এবং 
যে সমস্ত আচার-সর্বস্বত। তাহাদের নিকট নিরর্থক ও বিরোধের উদ্দীপকন্ধপে গণ্য 
হইয়াছিল, সেই সমস্তের ভাহার!1 নিন্ব! করিয়াছিলেন। ঈশ্বর ও মাহষের প্রতি 
প্রেমে প্রতিষ্ঠিত তাহাদের সারল্যময় বিশ্বাস এবং তাহাদের ধর্মসমপিত জীবন 
এমন এক জীবন-দর্শনের প্রতিষ্ঠী করিয়াছিল, এবং উন্নত চিস্তা ও নম্র জীবন- 
প্রণালীর এমন এক আদর্শ স্থাপন করিয়াছিল, যাহা ভারত-ইতিহাসের মধ্যযুগে 
এক সর্বভারতীয় সংস্কৃতির ভিতি রচন! করিয়াছিল। 


১১৪৯ 


উনবিংশ গরিচ্ছ্দে 


শিখ দর্শন 


১। ভূমিকা 

শিখধর্ম উহার গুরুগণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল £ এই 
গরুসম্প্রদায়ের প্রথম গুরু হইতেছেন নানক (১৪৬৯--১৫৩৮ থুঃ) এবং অস্ত্যগর 
গোবিন্দ নিং ( ১৬৬৬--১৭০৮ খুঃ)। গুরুনানকের ধর্মবিষয়ক কাব্যরচনাবলীর 
( গুর্বাণীর ) মধ্যে শিখ দর্শন নিহিত আছে--ইহ অন্তান্ত নয়জন গুরুর স্তোত্র পমুহে 
(শবদ্‌ সফৃহে ) ব্যাখ্যাত হইয়াছে এবং ভাই গুর্দাস নামক একজন বিদ্বান ও ভক্ত 
শিখের গাথাসমূহে ( ওয়ার্‌ সমূহে ) উহা! আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা কর] হইয়াছে। 
এই ভাই গুর্দাস পঞ্চমণ্ডরু অুঁনের (১৫৫৪--১৬০৬ খুঃ ) আত্মীয় ও সমসাময়িক 
ছিলেন। 

গুরুনানক এবং অন্ান্ত শিখ গুরুগণ যে তাহাদের মত প্রকাশ করিবার জন্য 
কাব্য বা সঙ্গীতের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং গ্রন্থসাহেবের প্রত্যেকটি 
পংক্তিকে যে গানের সুর দেওয়া] হইয়াছে ইহার একটি মহা! তাৎপর্য আছে। 
কবিত। এবং স্থুর মনের ভাবকে আবেগ, সৌন্দর্য, সংক্ষিপ্ততা1 এবং শক্তি প্রদান 
করেঃ এবং যে ব্যক্তি কবিতা আবৃত্তি করে অথবা গায় অথব৷ ভক্তির সহিত শ্রবণ 
করে তাহার অস্তঃকরণ আনন্দ ও শ্রদ্ধায় ভরিয়! উঠে। কবিতায় ব্যক্ত ভাবের 
সম্পূর্ণ অর্থ গ্রহণ কর! লম্ভবতঃ তাহার পক্ষে কঠিন হইতে পারে এবং হয়ত স্তোত্রের 
প্রত্যেকটি পংক্তিরই বিবিধ ব্যাখ্যা কর! যাইতে পারে--তথাপি তাহার মনের 
উপর উহার প্রভাব গভীর এবং প্রেরণাদায়ক-ছ্ইই হইয়া থাকে। সে ভক্তি ও 
পরমানন্দের মধ্যে নিজেকে ভুলিয়। যায়। 

গুর্বাণীতে, অর্থাৎ শিখ গুরুগণের স্তোত্রসমূহে, যে দার্শনিক ও ধর্মবিষয়ক ভাব 
ব্যক্ত হইয়াছে তাহ অনুপ্রেরণা অথবা! অলৌকিক প্রকাশের ফল; শুধু বৌদ্ধিক তর্ক 
অথবা যুক্তিবিচারের ফল নহে । স্বয়ং গুরুনানক এই সম্বন্ধে বলিয়াছেন £-_ 

“ভগবদ্বাণী (আমার প্রভুর বাণী) আমার নিকট যে ভাবে আসে আমি 
সেইভাবেই উহা! ব্যক্ত করি ।” স্তোত্রসমূহের জম্ম অস্তর্জ্যোতির প্রকাশে অনস্তের 
দুরের সহিত জীবাত্বার শ্বরের মিলনে । ইহার! খ্রশ্বরিক প্রেরণায় অহথপ্রাণিত 


১৯৬ 


শিখ দর্শন 


অস্তঃকরণের উচ্ছাস এবং একমাত্র ইহারাই খরশ্বরিক অথবা আধ্যাত্বিক নামের 
যোগ্য । গুরু নানকের দর্শন তাহার ধর্ম অথব। নীতি হইতে স্বতন্ত্র কিছু নহে- জ্ঞান, 
সত্য, কল্যাণ এবং ঈশ্বর এই সবগুলিই তাহার নিকট অভিন্ন ছিল। সৎ সৎনামের 
সহিত অর্থাৎ পবিভ্রতম সত্তার পবিভ্র নামের সহিত এবং সৎ আচারের সহিত 
জড়িত। এইভাবে তাহার দর্শনে জীবনের চরম মুল্যবান যে দুইটি পদার্থ সত্য 
এবং কল্যাণ উহাদিগকে একত্র কর! হইয়াছে । গুরু নানক নিখিয়াছেন £ 

“অন্ত সর্বপদার্থ হইতে সত্যের স্থান উচ্চে, কিন্ত পৎ আচারের স্থান আরও 
উচ্চে।” যেব্যক্তি সদাচার ও প্রকৃত সংস্কৃতির অধিকারী তিনিই সম্যক ও সাক্ষাৎ 
উপলন্ধিরও অধিকারী ; এবং সম্ভজনই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ববেত্তা ও পথপ্রদর্শক $ 
কারণ উধব্ণতইতে তাহার উপর জ্ঞানালোক খ্রশ্বরিক অন্ুগ্রহ্ূপে অবতীর্ণ হয় । 

গরু নানকের নিজ মনে অথবা অন্যান সম্প্রদায়ের সম্ভদের সহিত কথোপকথন 
কিংবা! বাদবিবাদে যখন যে সকল দার্শনিক সমন্তা উঠিয়াছিল তখন তিনি সেই 
সকল দার্শনিক সমস্যা আলোচন। করিয়াছিলেন । এই প্রবন্ধের শেষের দিকে 
গুরু নানকের নিজের ভাষায় তাহার মতের বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করা হইয়াছে । 
গরু নানক প্রত্যেক মানবীয় কর্মের মূল্য (তিনি এই অর্থে «কিস্মৎ” এই ফাসণ শব্দটি 
ব্যবহার করিয়াছেন) নির্ধারণ কর! প্রয়োজনীয় বলিয়! মনে করিতেন ; উহার 
সাময়িক অথব1 মানবীয় দৃষ্টিতে মূল্য কি এবং উহার নিত্য অথব। শ্রশ্বরিক দৃষ্টিতে 
মূল্য কি তাহ নির্ধারণ কর1 দরকার । তাহার মতাহ্থসারে মানবীয় মূল্য সকল 
মহুষ্যক্মপে-_মহুষ্যের উপর নির্ভর করে এবং নিত্য মূল্য সকল পারমাধথিক সততায় 
অথব! ঈশ্বরে স্থিতব্ধপে মাহুষের উপর নির্ভর করে । একমাত্র সম্তদের এই প্রকার 
মূল্যবান্‌ জীবনের মধ্যেই পরমতত্বের উপলব্ধি স্ভবপর--এই প্রকার পবিত্র জীবন 
নিজ মহিমায় মহিমান্বিত এবং উহা ঈশ্বরেরও একটি মহিমা । শিখ গুরুগণ এই 
প্রকার কঠোর জীবন যাপন করিয়াছিলেন, এবং দর্শনের সত্যসকল--উহার্দের মধ্যে 
সর্বাপেক্ষা কঠোর সত্যগুলিও--তাহাদের জীবনে মূর্ত আকার ধারণ করিয়াছে। 


২। জীষ্বর ৪ একমাত্র লভ! 
শিখদের শাস্তরগ্রন্থ গুর্বাণীতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন দেব ও দেবীর নামের 
উল্লেখ দেখা যায় বটে, তথাপি প্রক্কতপক্ষে শিখ গুরুগণ স্পষ্টতঃই বহুদেবতাবাদের 
অথব। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিরোধী ছিলেন। তাহার! 
স্পষ্টভাষায় একেশ্বরবাদেরই সমর্থন ও ব্যাখ্য। করিয়াছেন। 


৯২১ 
১৬ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


শিখ ধর্মগ্রচ্ছের প্রারভ্ে “১ এই সংখ্যাটি আছে। শব্দের নানা অর্থ থাকিতে 
পারে অথবা! নান! অর্থে উহার ব্যাখ্য/ কর] যাইতে পারে । কিন্ত সংখ্যার সম্বন্ধে 
একথ] সত্য নহে। কারণ সর্বদাই উহাদের একই নির্দিষ্ট অর্থ থাকে । তাই 
পারমাথিক সত্তার একত্ব ব্যক্ত করিবার জন্য “১+ এই সংখ্যাটি ব্যবহার করিয়াছেন। 
এই সংখ্যার পর ওম্‌ যুক্ত হইয়াছে, এবং উহ] “ইক ওক্কার” এইভাবে উচ্চারিত হয়। 
”“ওম্‌ এই শব্ধ দ্বার] যে স্বস্ত ব্যক্ত হয় তাহ! এক। তাহার যদিকিছু নাম দ্রিতে 
চাও তাহ! হইলে তাহাকে সত্য নামে অভিহিত কর। তিনি কর্ড, সর্বব্যাপী, 
নির্ভীক এবং অস্থয়াবিহীন। তাহার সন্ত কালঘ্বারা অবচ্ছিন্ন নয়। তিনি অজ 
এবং স্বয়স্ু। গুরু-ককপায় তাহাকে উপলব্ধি কর যায়।” এই কথা কয়টি শিখ 
ধর্মের মুলমন্ত্র বা কল্ম! | দীক্ষার সময় প্রত্যেক নবদীক্ষিতকে এই মস্ত্রটি পাঁচবার 
উচ্চারণ করিতে হয় । তাহাকে ঈশ্বর, আল্ল। অথব]। রাম যে নামই দেওয়। হউক 
না কেন তিনি একই নিত্যসত্তা এবং এই এক নিত্যসত্তায় বিশ্বাস শিখধর্মের একটি 
মূল মত। তাহার অস্তিত্ব উপলব্ধি কর1 এবং তাহার সহিত নিজের সামগ্জস্তস্বাপন 
কর! ইহাই প্রত্যেক শিখের নিকট জীবনের চরম উদ্দেশ্থা | 

গুরু নানক এবং তাহার পরবর্তা গুরুগণের মতে ঈশ্বর হইতেছেন এই বিশ্বের 
সর্ব দৃশ্য এবং আদৃশ্য পদার্থের একমাত্র শ্রষ্টা। সংসার স্যপ্টির জন্য তাহাকে অন্ত 
কিছুর উপর নির্ভর করিতে হয় না। “তুমি নিজেই ফলক, লেখনী এবং ফলকস্থ 
লিপি। হে নানক, একের কথাই বল, দ্বিতীয়ের নামনির্দেশে কেন? তুমিই 
সর্বত্র ব্যাপিয়! রহিয়াছ, তুমিই এই জগৎ নির্মাণ করিয়াছিলে তুমি ছাড়া অন্ধ 
কেহই নাই । তুমিই সকলের মধ্যে অহুন্থ্যত। তুমিই তোমার পরিমাণ এবং 
উদ্দেন্ট জান এবং তুমিই তোমার মূল্য নিব্ধপণ করিতে পার । তুমি অজয়, 
অপরিমেয় এবং ইন্দ্রিয়াতীত কিন্ত গুরুর বাণীর সাহায্যে তোমাকে উপলন্ধি 
করা যায়।” 

প্রকৃতি, মায়, মোহ, গুণসকল, দেব ও দানবগণ এই সকলই তাহার স্য্টি। 
উহাদের অস্তিত্ব ঈশ্বর-নিরপেক্ষ নহে | পচেতন (পুরুষ) ও অচেতন (প্রকৃতি ) 
পদার্থ সহি করিয়! শ্রষ্টী নিজেই তাহার হুকুম জারি করিয়াছেন।” *ন্বয়ভু সমগ্র 
ক্প্টিকপ নাটকটিকে রচন! করিয়াছেন। তিনি তিনগুণ স্থ্টি করিয়াছেন এবং 
মায়া ও যোহকে তীব্রত। প্রদ্দান করিয়াছেন।” তিনি বিষ্ণুর কোটি কোটি 
অবতার স্ত্টি করিয়াছেন এবং কোটি কোটি বিশ্বে ধর্মশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা 
করিয়াছেন । তিন কোটি কোটি শিবকে স্থষ্টি এবং সংহার করিয়াছেন এবং জগৎ 


১২২, 


শিখ দর্শন 


নির্মাণের জগ্ভ কোটি কোটি ব্রন্মাকে নিযুক্ত করিয়াছেন । আমার প্রভূ এত বড় 
প্রভু । আমি তাহার গুণের গণনা করিতে পারি না।” লোকের! যাহা শুনিয়াছে' 
তাহার পুনরুক্তি করে। শিবও প্রস্ুর “মনকে; জানে না। তাহার অন্বেষণে 
সর্ব দেবগণ পরিশ্রাস্ত। দেবীরাও তাহার রহস্ত উদ্বাটন করিতে অসমর্থ । সেই 
অজ্ঞেয় পরব্রন্ম ইহাদের সকলের উধ্বেপ। তিনি তাহার ইচ্ছামত ক্রীড়া করেন। 
তিনি নিজেই সংযোজক এবং নিজেই বিয়োজক | কেহ কেহ সন্দেহে বিল্ময়াকুল 
হয়; অন্ঠের| তক্তিভরে তাহাকে নমস্কার করে। তিনি জগৎ সকল স্থষ্টি করেন 
এবং তাহার পর নিজেকে প্রকট করেন। সম্ভদের প্ররুত সাক্ষ্য শ্রবণ কর। 
তাহার। স্বচক্ষে তাহা দেখিয়াছেন তাহাই বলেন। তিনি সর্ব পাপ ও পুণ্যের 
উধ্র্বে। নানকের প্রভু হইতেছেন স্বয়স্ু।” 

"সর্ব যুগে এবং সর্বলোকে একই জ্যোতি ব্যাপিয়া আছে। উহাতে বৃদ্ধিও 
নাই, হ্াসও নাই এবং উহা! কখনও বৃদ্ধি বা হাসের অধীন হইবে ন1।* প্যে 
সদ্বস্তর কখনও মরণ অথব! জন্মাস্তর হয় না, আমার প্রেম তাহাতেই নির্ঢ়। 
তিনি সর্বব্যাপী এবং তাহাকে কোনও কিছু হইতেই বিচ্ছিন্ন কর| যায় না। তিনি 
দীনজনের ছুঃখ কষ্ট দূর করেন। তাহার সেবকের নিকট তিনিই একমান্ত্র লদ্বস্ত। 
ওরুদেব আমাকে তাহার সহিত সংযুক্ত করিয়াছেন। ওগো জননী এবং হে 
ভ্রাতৃবৃন্দ, সেই অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী এবং নিরঞ্জন প্রভৃর সহিত বন্ধুত্ব 
স্থাপন কর | যে মায়া ও মোহ হইতে কাহারও সুখ হয় না তাহাদের প্রতি 
আসক্তিকে ধিকৃ। তিনি জ্ঞানী, উদার, উপকারী, পবিভ্র, অনস্ভ সৌন্দর্যের 
অধিকারী, সর্বোত্তম বন্ধু ও সহায়ক, উন্নত এবং অপরিমেয় । তাহার বাল্যও নাই, 
বার্ধক্যও নাই | তাহার দরবার চিরস্তন। তীহার দ্বারে আমর! যাহাই প্রার্থনা 
করি ন। তাহাই আমরা পাইয়া! থাকি । তিনি ছুর্বলের প্রধান অবলম্বন। তাহার 
দর্শন ঘটিলে সর্ব পাপ বিনষ্ট হয় এবং মন ও শরীর উভয়েই শান্ত হয়। মনের 
সর্ব সন্দেহ দূর করিয়া একচিত্তে সর্বগুণের সেই একমাত্র সাগরকে ধ্যান কর। 
তিনি চির তরুণ। তিনি যাহা কিছু দান করেন তাহাই নিখু'ত। দিবারাত্র 
তাহার ভজন কর ; তাহাকে কখনও ভুলিও ন11% 

কোন কোন দার্শনিকের মতে পরমাত্বা হইতেছেন শুধু একটি সাক্ষী এবং 
অবর্তা--স্্ট জগৎ মায়! অথব] প্রক্কতির খেলা । শিখগুরুগণ এই মত সমর্থন 
করেন না। “সেই অদ্বিতীয় এক ঈশ্বর সর্ব কারণ সমূহেরও কারণ, তাহা! ব্যতীত 
অস্ত কিছুই নাই! হে নানক, যিনি জল, মরু, পৃথিবী ও আকাশ ব্যাপিয়া আছেন 


১২৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


তাহার নিকট যেন আমি নিজেকে আহতি দিতে পারি ।” *তিনি প্রথমে নিজেকে 
স্প্টি কষ্পিলেন এবং তাহার পর নামকে স্থষ্টি করিলেন। তিনি প্রব্কতি সৃষ্টি 
করিয়া উহাতে প্রবেশ করিলেন এবং নিজের স্থ্টি সন্দর্শন করিয়! আনন্দিত 
হইলেন। 

এই সংসারে যে অযঙ্গল দেখিতে পাওয়া যায় তাহার ব্যাখ্যার জগ্য ভিন্ন ভিন্ন 
মত উপস্থাপিত হইয়াছে । কোনও কোনও ধর্মোপদেশক ছুই ঈশ্বরের কম্পন! 
করিয়াছেন $ মঙ্গলের ঈশ্বর এবং অমঙ্গলের ঈশ্বর । অন্তের। সয়তান অথবা 
অমঙ্গলের ঈশ্বরকে মঙ্গলের ঈশ্বরের নিয়ে স্থান দিয়াছেন। কেহ কেহ বলেনযে 
অমঙ্গল অথব! অবিদ্ধা অনাদি, কিন্তু জ্ঞানঘ্বার। তাহা বিনষ্ট হইতে পারে। 
আবার অন্যদের মতে, যাহার ধ্বংস হইতে পারে তাহা কখনও অস্তিত্ববান্‌ নহে; 
কারণ, যাহা যাহ অস্তিত্ববান তাহা তাহা অর্দাই থাকিতে বাধ্য; স্বতরাং 
অমঙ্গলের মূল কারণ যে মায়! অথবা ভ্রান্তি তাহা অ-সৎ। তাই গুরুদাস একটি 
যথাযোগ্য উপমার সাহায্যে অমঙ্গলের অস্তিত্বের ব্যাখ্য। দিয়াছেন । “দেব ও 
দানবগণ সমুদ্র মন্থন করিয়াছিলেন এবং তাহা হইতে জীবনদায়ক অমৃত এবং 
মৃত্যুদায়ক বিষ উভয়ই উত্থিত হইয়াছিল।” কেন যে এইরূপ হইয়াছিল তাহা 
কেহই জানে না, কিন্ত সকলেই জানে যে আমর] যদ্ধি বিষভক্ষণ করি তাহা! হইলে 
আমাদের মরণ হইবে, এবং যদি আমর! অমৃত পান করি তাহা! হইলে অনস্তজীবন 
লাভ করিব।” গুরু অজু এই জগৎকে মঙ্লযুদ্ধের একটি বৃহৎ অঙ্গনের সহিত 
তুলনা করিয়াছেন। আধ্যাত্মিক শাক্ত বৃদ্ধির জন্য আত্মাকে কাম, ক্রোধ, লোভ, 
মোহ” এবং অহঙ্কারের সঙ্গে লড়িতে হয়। আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধন এবং 
আধ্যাত্মিক শক্তিবর্ধনের জন্ত আমাদের সম্মুখে এই সকল প্রতিবন্ধক রাখ! হইয়াছে 
“আমি জগদ্বীশ্বরের একটি সামান্ত কুস্তিগীর ; কিন্তু গুরুর সহিত দেখ! হওয়ার পর 
আমি একটি উচু পাগড়ী পরিয়াছি। আমরা কুম্তীর জন্ত মিলিত হইয়াছি) স্বয়ং 
ঈশ্বর উহার দর্শক | দামামা, ডূগড়ুগি নাকাড়া প্রভৃতি ঢাকলকল বাজিতেছে। 
কুত্তিগীররা! অঙ্গনের চারিদিকে ঘুরিতেছে । গুরুদেব আমার পিঠ চাপড়াইলেন 
আর আমি পাঁচজন শক্রকে ধরাশায়ী করিলাম। তাহার আমাকে আক্রমণ 
করিবার জন্ত একই সঙ্গে সকলে ছুটিয় আসিয়াছিল কিস্ত তাহাদিগকে 
পরাজিত হইয়া মাথ! হেট করিয়! ফিরিয়া যাইতে হইল । যাহার] গুরুকে অহ্থসরণ 
করে তাহার মুলাবান পুরস্কার লাভ করে। যাহার নিজেদের খামখেয়ালকে 
অন্থসরণ করে তাহার] মুলধনও হারায় ।” 


১২৪ 


শিখ দর্শন 


সুতরাং শিখ গুরুগণ অনাস্ভনস্ত অকাল পুরুষকেই একমাত্র সত্যবস্ত বলয়! গণ্য 
করেন। আধুনিক বৈজ্ঞানি কগণও এই বিশ্বাসে উপনীত হইয়াছেন যে অস্তিম সম্ভ! 
মূলতঃ এক। পরমাণুগুলিকে আরও বিশ্লেষণ কর! হইয়াছে এবং আজকাল এক্প 
মনে কর] হয় যে বিভিন্ন প্রকার মৌলিক পদার্থ সকল বিভিন্ন প্রকার বৈদ্য্তিক 
আধান (9190600 9118185 ) সমুহত্বারা গঠিত। কিন্ত বৈজ্ঞানিকগণ এখনও এই 
মত পরিত্যাগ করেন নাই যে প্রাণও চেতনা অচেতন ও নিপ্রাণ জড় হইতে উৎপন্ন 
হইয়াছে । কিন্ত শিখ গুরুগণ যে অস্তিম সত্বস্তর গণ গাহিয়াছেন তাহ! হইতেছে 
একটি চেতন বস্ত। “তিনি বুঝেন, প্রত্যক্ষ করেন এবং এক পদার্থ হইতে অন্ত 
পদার্থকে পৃথক করেন। তিনি এক আবার তিনি বছু।” “তিনি স্থপ্টি করেন 
এবং তিনি নিজেই ধ্বংল করেন। তিনি সর্বজ্ঞ। তিনি বুঝেন এবং তিনি তিস্তা 
করেন । তাহার শক্তিদ্বার! তিনি একই ক্ষণে বছ আকার ধারণ করেন |” সর্বভূতে 
যে চৈতন্তের আলো দেখ! যায় তাহা তাহা হইতেই নিঃল্যত। জর্বভূতের মধ্যেই 
(চৈতন্তন্নপ ) প্রকাশ রহিয়াছে এবং এই প্রকাশ হইতেছে তিনি। “তাহার 
প্রকাশেই সর্ধবস্ত প্রকাশিত ।” প্উচ্চ নীচ সর্বত্র প্রকাশ ব্যাপিয়া রহিয়াছে, 
প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে প্রভু বিরাজ করেন। হে সঙ্জনগণ, তিনি প্রত্যেক পান্রকে 
পূর্ণ করেন। পূর্ণ ভগবান্‌ সর্ব আকারে পরিব্যাপ্ত। প্রভু জলে এবং মরুভূমিতে 
উভয়স্থলেই আছেন। নানক সেই গুণসাগরের স্ততি গায়। সদৃগুরু সর্ব সন্দেহ 
দূর করিয়াছেন । আমার হৃদয়-নিবানী নিরস্তর অনাসক্ত খাকিয়াও সর্ববস্রতেই 
প্রবি।” এইভাবে ঈশ্বর জগতের মধ্যে অন্ুস্যত আবার জগতের অতীত এই 
দুইটি ধারণার সামগুন্ত সাধিত হইয়াছে । 

ঈশ্বর কি জগৎ-ন্ধপ রহৃস্তকে ব্যাখ্যা করিবার জন্য একটি প্রকল্প মাত্র? অথব! 
তাহার বাস্তবিক সম্ভতাও আছে? এই প্রশ্নে বু লোক বিভ্রান্ত হইয়াছেন। কিন্ত 
এ ল্ঘন্ধে শিখ গুরুগণের কোনও রূপ সন্দেহ নাই । তাহার! বারবার বলিয়াছেন 
যে ঈশ্বর নিশ্চয়ই আছেন । আমর] যেমন কোন বিষয়কে আমাদের হইতে পৃথকৃ- 
তাবে জানি সেইভাবে আমরা ভাহাকে জানিতে পারি না| 9 কিন্ত আমর! নিজেদের 
অস্তিত্ব সম্বন্ধে যেরূপ নিঃসন্ধিদ্ধ তাহার অস্তিত্ব সম্বন্ধেও সেইরূপ নিঃসন্দি্ধ হইতে 
পারি। পরম সন্বস্বর অস্তিত্ব উপলব্ধি কর! যায়, কিন্তু তাহ। হন্্রিয় প্রত্যক্ষ অথবা! 
যৌক্তিক প্রমাণের বহিভূততি। প্অপরিমেয়কে কি করিয়! পরিমাপ করা সম্ভবপর 1 
তিনি যদি কোন ব্যক্তি হইতে পৃথক কোন বিষয় হইতেন তাহা হইলে সেইক্ষপ 
কর] সম্ভবপর হইত। কিন্ত কেহই তাহা! হইতে পৃথকৃ নহে । তাহার মুল্যনিরূপণ 


১২% 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


কি করিয়া সম্ভবপর হইতে পারে?” কিন্ত তিনি অবাঙ্‌মানসগোচর হইলেও 
নিশ্চিতই আছেন, “হে সম্ত এবং ঈশ্বর-সেবক ভাইগণ, সদ্‌গুরুর সাক্ষ্য শ্রবণ 
কর--শুধূ ভাগ্যবানেরাই ইহাকে অন্তরে স্থান দিবে। আমি গুরুর ঈশ্বর-বিষয়ক 
পবিআ ও উদ্াত-উপদেশামৃত ধীরে ধীরে পান করিলাম । তখন আলোক আবিভূতি 
হইল এবং হুর্য যেমন রাত্িকে অপসারিত করিয়া দেয় তেমনভাবে অন্ধকার 
তিরোহিত হইল । গুরুর কপায় আমি স্বচক্ষে সেই অদৃশ্য এবং অজ্ঞেয়। নিরঞ্জন 
এবং ছবরধিগম্য সত্তাকে দর্শন করিলাম |” “আমার শ্রিয়তমকে যে চক্ষু দ্বারা দেখা 
যায় তাহা চর্মচচ্ষু হইতে ভিন্ন ।” পঞ্চমগ্ুরু এই ভগবৎ-উপলন্ধির বিস্তারিত বিবরণ 
দিয়াছেন £ 

“আমাদের অন্তরে এবং বাহিরে একই অনস্ত ঈশ্বর বিরাজ করেন। সর্বপাজে 
প্রভু ব্যাপিয়া আছেন। তিনি ম্বর্গ, মর্ড, পাতাল এবং সর্বলোক পরিপূর্ণ করিয়! 
রহিয়াছেন এবং তাহাদের ধরিয়! রহিয়াছেন । অরণ্যের প্রত্যেকটি তৃণে পরমাত্মা 
বিদ্কমান। তাহারই আদেশে সকলে কর্ম করে । তিনি বায়ুতে, জলে এবং 
অগ্নিতে। তিনি চারিপার্থ্ে এবং দশদিকে বিরাজ করেন। এমন স্থান নাই 
যেখানে তিনি বিষ্মান নহেন। গুরুর কৃপায় এই সত্য উপলন্ধি করিয়] শাস্তি 
লাভ কর । বেদে, পুরাণে এবং স্বতিতে ভাহাকে দর্শন কর। তিনি চন্ত্র স্র্য 
এবং নক্ষত্রপুঞ্জসমূহে ভরিয়া! আছেন । সকলে প্রভুর ভাষাই বলে । তিনি কখনও 
কম্পিত অথবা বিচলিত হন না। তিনি পুর্ণ শক্তিসকল ধারণ করিয়! ক্রীড়ায় 
রত। কেহ তাহার পরিমাপ করিতে পারে না। তিনি অযুল্য গুণসকলের 
অধিকারী । সব জ্যোতির্ময় বস্তরতে তাহারই প্রকাশ ভরিয়া রহিয়াছে। প্রভু 
উহাদ্দিগকে ওতপ্রোতভাবে ধারণ করিয়! রহিয়াছেন। হে নানক, গুরুর কৃপায় 
যাহাদের সংশয় দুর হইয়াছে তাহাদের এইরূপ দৃঢ় বিশ্বাস ।” গুরু নানক ঈশ্বরের 
এইব্সপ বর্ণন! দ্বিয়াছেন £$ «তোমার হাজার হাজার চক্ষু আছে, কিন্ত কোন চগ্ষুই 
তোমার নয়। তোমার হাজার হাজার দ্ধূপ আছে, কিন্ত কোন ব্ধপই তোমার 
নয় । তোমার হাজার হাজার পা আছে কিন্ত কোন পাই তোমার নয় । তোমার 
একটিও নাসিক! নাই তথাপি তোমার হাজার হাজার নাসিক আছে । তোমার 
এই জ্ীড়ায় আমি বিমুগ্ধ হইয়াছি।” 

ঈশ্বর আছেন ; তিনি তাহার নিজ শক্তিতে মাহুষ ও বিশ্ব স্ত্ি করিয়াছেন । 
এবং মানবজীবনের চরম উদ্দেশ্ট হইতেছে পরমসত্যকে উপলব্ধি করা, ইহাই 
শিখধর্মের সারতত্ব। 


১২৬ 


শিখ দর্শন 


উ। ভ্ডার্টির উদ্দেশ্য ্‌ 
স্থট্টি কেন এবং কি করিক্সা হইল, শিখণগডরুগণ এই প্রশ্বের কোন পারিভাধিক 
আলোচনায় প্রবৃত্ত হন মাই । তাহার! স্্রিকে ঈশ্বরের ইচ্ছার ফল বলিয়! বর্ণন। 
করিয়াছিলেন। প্তাহার আদেশে পর্বদ্ূপের উৎপত্তি। ভাষায় এই আদেশের 
বর্ণন1! দেওয়] যায় ন1। তাহার আদেশে সর্বপ্রাণ স্থষ্ট হইয়াছে এবং সর্বপ্রগতি 
তাহার আদেশঘ্বার নিয়ন্ত্রিত ।” এমন এক কাল ছিল যখন বিশ্ব ছিল না। 
“অগণিত যুগ ধরিয়। শুধু অন্ধকার বিদ্বমান ছিল। পৃথিবীও ছিল না, আকাশও 
ছিল না, ছিল শুধু অনাছ্স্ত আদেশ। দিনও ছিল না, রাত্রিও ছিল না, না ছিল 
সুর্য, না চন্দ্র ।* প্তাহার যখন ইচ্ছা! হইল তখন তিনি বিশ্ব শ্ৃষ্টি করিলেন, কিন্তু 
কখন যে বিশ্ব উৎপন্ন হইয়াছিল একথা কেহই জানে না । কোন ঘটিকায় কোন 
সময়ে কোন চান্দ্র এবং সৌরদিবসে কোন খতুতে কোন মাসে এই বিশ্বের উৎপত্তি 
হইয়াছিল? পণ্ডিতের! এই ঘটিকার কথ| জানিতেন না, তাহা না হইলে পুরাণে 
ইহার নির্দেশ করিতেন । কাজীরা এ সময়ের কথ! জানিতেন না, তাহা না হইলে 
তাহারা কোরাণে উহা লিখিয়! রাখিতেন, যোগিগণ এ চান্দ্র অথবা লৌরদিবসের 
কথা জানেন না; অন্ত কেহ সেই মাস অথব1 খতুর কথা জানে না। যে শ্রষ্টা এই 
বিশ্ব নির্মাণ করিয়াছেন শুধু তিনিই এই সকল কথা জানেন।” সিদ্ধগণ যখন 
গুরু নানককে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই সকলের প্রারস্ত সম্বন্ধে আপনার মত কি 
তাহা আমাদিগকে বলুন । স্থষ্টি করার ডিস্তা মনে আসিবার পূর্বে ঈশ্বর কি অবস্থায় 
ছিলেন 1” গুরু নানক উত্তর দ্রিলেন, “এই সকল কিভাবে আরম্ভ হইল এই 
প্রশ্রের চিস্তা করিলে আমি বিস্ময়ে অভিভূত হুইয়! পড়ি। স্ষ্টির পূর্বেও তিনি 
সর্বব্যাপী ছিলেন।” 
শিখ গুরুগণ এই মত সমর্থন করেন না যে স্যষ্টির আদিও নাই, অনস্ত নাই। 
অবশ্য তাহার] এই কথাও বলেন যে স্থ্টিও প্রলয়ের ক্রিয়া যে কতবার সংঘটিত 
হইয়াছে তাহার কোন গণনা নাই । গুরু অজুন এই সমগ্র ক্রিয়ারিকে এন্রজালিকের 
খেলার সহিত উপম] দিয়াছেন ।” ্রন্মরজালিক যখন তাহার খেল। দেখায় তখন 
সে বিবিধ দ্ধূপ ও পোষাকে দেখা দেয়। যখন সে তাহার ছল্মবেশ খুলিয়া! ফেলে 
তখন সে শুধু নিজেই থাকে। যে সকল রুপ দৃষ্ট হইয়াছিল কে উহাদিগকে 
বিনষ্ট করিল? উহার! কোথা হইতে আসিয়াছিল এবং কোথায়ই বা! গেল? 
জলে অসংখ্য ঢেউ উঠে, সোনা হইতে বিবিধ অলঙ্কার নিমিত হয়। বিবিধ বীজ 
বপন করিয়া দেখা গেল যে ফল পাকিলে উহা হইতে একই বীজ বাহির হয়। 


১২৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সর্ব ঘটে একই আকাশ বিদ্ধমান, ঘট ভাঙ্গিয়া গেলে আকাশ পুনরায় তাহার একত্ব 
প্রাপ্ত হয়। সংশয়, লোভ এবং আসক্তি এইগুলি সকলেই মায়ার বিভিন্ন দ্বপ। 
সংশয় বিন হইলে শুধু তিনি থাকেন £ তিনি অবিনশ্বর ১ এবং তাহার কখনও 
মৃত্যু হয় না। আগমনও নাই গমনও নাই। পূর্ণগুরু আত্মার অবিশুদ্ধি দূর 
করিয়াছেন এবং নানক উচ্চতম অবস্থায় পৌছিয়াছেন।” 

কোন কোন দার্শনিক দৃশ্ঠাপদার্থমাত্রেরই সত্তা অস্বীকার করিয়াছেন, কিন্ত শিখ 
গুরুগণের মত এই যে পর্বদৃশ্ট পদার্থই সদ| পরিবর্তনশীল হইলেও উহার! সৎ । 
"তিনি নিজেও সৎ এবং তিনি যাহ] কিছু স্ট্টি করিয়াছেন তাহাও সৎ।* প্ভাহার 
ক্রিয়াসকল সৎ এবং তজ্জন্ত তাহার স্টিও সৎ। সৎ মূল হুইতে সৎ-ই-উৎপন্ন 
হয়।” “তোমার বিশ্ব সৎ এবং উহার অংশ সকলও সৎ। তোমার (ন্বরমর্ত্যাদি ) 
লোক সকল সত্য এবং তাহাদের আকারও সত্য। তুমি যাহা কিছু কর তাহাই 
সত্য। (বিশ্বে) প্রতিফলিত তোমার সর্ব্ূপই সত্য ।* পএই সংসার সত্য- 
স্ব্ূপের আবাস-স্বল। সত্য-ম্বরূপ ইহাতে বাস করেন।” সুতরাং আমার কোন 
অবাস্তব স্বপ্রলোকে আছি কি না এই প্রশ্বই উঠে না। জীবন সত্য। সমগ্র স্হির 
পশ্চাতে একটি উদ্দেশ্য রহিয়াছে । কিন্ত মাহৰ যখন তাহার অস্মিতাকে বিনাশ 
করে শুধু তখনই এই উদ্দেশ্য তাহার নিকট প্রকাশিত হয়। 

কোন কোন দর্শনে ঈশ্বরব্যতীত জড়প্রককৃতি এবং জীবাত্বা সকল এই ছুইটি 
স্বতন্ত্র পদার্থও স্বীকার কর] হইয়াছে । তাহাদের যুক্তি এই যে ঘট নির্মাণ করিবার 
জন্ত কুস্তকারকে মৃত্তিকাও চক্রের সাহায্য লইতে হয়, সুতরাং জগৎ স্য্টির জন্ত 
ঈশ্বরকেও কোন কোন উপাদান ও যন্ত্রের সাহায্য লইতে হয়। কিন্ত ইহ! 
শিখগুরুদের মত নহে । পর্ব আকার ও বর্ণ বাম) জল, অগ্নি প্রভৃতির বিবিধ 
সমুদ্বায় সকল সেই এক হইতে উৎপন্ন হয়। ইহাদিগকে প্রভুর বিভিন্ন ্ধপ বলিয়! 
জানিবে। শুধু একটিমান্্র বিদ্ময় আছে; সম্পূর্ণভাবে এক; কিন্তু এই অস্থভূতি 
শুধু অল্প কয়েকজনই গুরুর কৃপায় লাভ করে।” প্তুমিই সেই বৃক্ষ; তোমারই 
শাখা সকল মুকলিত হইয়াছে । তুমি ছিলে অদৃশ্য, হইলে দৃশ্ঠ । তুমিই সমুক্্র 
তুমিই ফেনা, তুমিই বুদ্ধ । তোমা ব্যতীত আমরা অন্ত কিছুই দেখিতে পাই ন1। 
তুমি মালার স্ত্র” তুমিই ওটিকাসকল, তুমিই গ্রস্থি এবং তুমিই শীর্ষস্থ প্রধান 
গুটিকা। একই প্রভু আদিতে, মধ্যে এবং অন্তে বিদ্মান। তিনি ব্যতীত অন্য 
কিছুই দৃষ্ট হয় না।” সুতরাং তিনি স্ষ্টির নিমিশুকারণ ( কর্তা ), উপাদানকারণ 
এবং উদ্দেশ্যকারণ। 


১২৮ 


এই স্ষ্ির উদ্দেশ্য কি? প্রভু সম্তের জন্ত এই বিশ্বফে ধারণ করেন।” 
অর্থাৎ, মানবাত্বার পূর্ণত। সম্পাদনের জন্ত ধারণ করেন। শিখ ধর্মগ্রস্থে “সম্ত? শব্দ 
সেই ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি স্বীয় জীবনের প্রতিযুহুর্তে অলীমের সহিত একতাপন্ন। 
পূর্ণ মাহুষের লক্ষণও একই রকম শবে দেওয়! হইয়াছে । আমরা সেই মহ! 
মহাঁজনপ্রদত্ত কিছু মূলধন সঙ্গে লইয়া এই জগতে আসিয়াছি। আমাদিগকে 
সেইভাবে জীবন যাপন করিতে হইবে যাহাতে এই ব্যবলায়ের এই মূলধন নষ্ট ন! 
হয়, বরং শতগুণে বধিত হয় ; তাহা! হইলেই আমর! যখন তাহার নিকটা রিয়া 
ঘাইব তখন আমর। সাদর অভ্যর্থন। পাইব। 


৪। মানবব্ব্যক্তি অথব। অহ. 


“ছে মানব, তুমি প্রকাশেরই প্রতিযৃত্তি, তোমার স্বব্ধপকে অবগত হও*__ 
ইহাই মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে শিখ ধর্মের মূল ধারণ | . সর্বজ্ীবের মধ্যে প্রাশ ও 
চৈতন্ত বিভিন্ন মাত্রায় দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের বর্তমান জ্ঞানে যতদুর 
পর্বস্ত জান] যায় তাহাতে মনে হয় যে মান্নষের মধ্যেই উহাদের সর্বাপেক্ষা অধিক 
বিকাশ হইয়াছে । “অন্ঠান্ত প্রাণীৰ! তোমার সেবার জন্য । তুমিই এই পৃথিবীর 
প্রভু” প্রাণ ও চৈতন্ত ধীরে ধীরে নিশ্রাণ জড়পদার্থ হইতে বিবতিত হইয়াছে 
এই জড়বাদী মত শিখগুরুগণ স্বীকার করেন না। “হে আমার দেহ ঈশ্বর 
তোমাতে চেতন! অর্পণ করিলেন এবং তাহার পর তুমি এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ 
করিলে । জীবাত্বাকে (অহংকে ) স্থষ্টির একটি সাধন (যন্ত্র) বলিয়1 বর্ণনা কর। 
হইয়াছে । পরমাত্বা অহংকে ( অন্সিতাকে ) বিশ্বস্থষ্টির জন্য স্ষ্টি করিয়াছিলেন । 
কোন যোগী গুরু নানককে যখন জিজ্ঞাসা করেন “কি করিয়] বিশ্ব সই হইল ?” 
তখন তিনি উত্তর দিয়াছিলেন “অহং জগদ্বৎপত্তির কারণ” গুরু নানক তাহার 
অসা-দি বারে (অসা-রাগে গেয় গাথাতে ) এই কথা আরও ব্যাখ্যা, করিয়া 
বলিয়াছেন । “অহম্-ই-ব্যক্তিত্বের ষূল উপাদান, সর্ব কর্ম এই অহ্ম্নএর উপর 
প্রতিষ্ঠিত। যে বন্ধনে আমর! বারবার সংসারচক্রে ভ্রমণ করিতে বাধ্য হুই 
তাহারও কারণ অহম্। এই অহুং কোথা হইতে আসে? ঈশ্বরের ইচ্ছায় এই 
অহং ম্বীক্স কর্মদ্বার1] আবদ্ধ হইয়! আসা যাওয়! করে। এই অহং একটি দৃঢ়মূল 
রোগ কিন্ত ইহারও প্রতিকারের উপায় আছে। ঈশ্বর কপ] করিলে এবং মাহষ 
গুরুর আদেশ অহ্যায়ী আচরণ করিলে নানক বলে হে ঈশ্বরের সেবকগণ, শোন, 
এইভাবে এই রোগ তিরোহিত হয়।” 


১৯২৪৯ 
১৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চান্চা দর্দমের ইতিহাস 


সংক্ষেপে শিখবর্ষে জীবাত্বার ধারণ! এই | ঈশ্বরের ইচ্ছায় চৈতন্ত-সাগরে বন্ধুর 
উতিত হয়। এইগুলি পরস্পর হইতে পৃথক জীবাত্মা। ইহার! তাহাদের বিভিন্ন 
পারিপান্থিক অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন ্ূপ প্রতিক্রিয়া! করায় তাহাদের মধ্যে বিভিন্ন 
স্বভাব বিকশিত হয়। ভিন্ন ভিন্ন জীবাত্মার স্থষ্টি কার্ধকে “বিয়োগ” অর্থাৎ 
বিভক্তীকরণ এই নামেও অভিহিত কর! হইয়াছে । এইদ্সপ পৃথক পৃথক সন্তার 
উপর গুরুত্ব অর্পণ করিলে বহু সমস্তার উত্তব হয়। তখন মাহৃষের মনে স্বামিত্ব 
অর্থাৎ ইহা আমার” এইরূপ ধারণার উৎপত্তি হয় এবং তাহার! অন্যের আক্রমণ 
হইতে নিজের সম্পত্তি রক্ষা করিবার চেষ্টা করে ও এইভাবে তথাকথিত “জীবন- 
সংগ্রাম? সুরু হয়; এবং যতকাল পর্বস্ত আমরা শুধু শরীরের দ্বার্থের দিকেই 
দৃষ্টিপাত করি ততদিন পর্যস্ত এই সংগ্রাম তীব্র হইতে তীব্রতর হইতে থাকে। 
“অহং-ভাবের উপর প্রতিষ্ঠিত কার্য আমাদের গলার বন্ধনর্ূপে পরিণত হয়। 
আমরণ অহুং-কে আকড়াইয়। থাকি এবং পায়ে শৃঙ্খল পরি ।* প্লোভ হইতেছে 
কারাগারের অন্ধ কুঠরী এবং আমার দু্র্মগুলি হইতেছে আমার বন্ধন।” “হে 
নানক, তোমার চরিজ্বের যত দোষ তোমার গলায় ততগুলি পাপ।” কর্ম-মাত্রই 
আমাদের মানসিক গঠনের উপর দাগ রাখিয়া যায় । একই কর্ম বারবার করিলে 
এই দাগগুলি গতভীরতর হয় এবং ইহার! অভ্যাসে পরিণত হয় ও কালক্রমে ইহাদের 
দ্বারা আমাদের মানসিক প্রবণতাসকল নিয়ন্ত্রিত হয়। কোন এক বিশিষ্ট প্রকার 
পার্িপাশ্বিক অবস্থায় আমাদের প্রবণতাগুলি আমাদিগকে বিশিষ্ট দিকে চালিত 
করে এবং আমরা আমাদের অভ্যাসের দাস হইয়া পড়ি। এইভাবে আমাদের 
অতীত কর্ম আমাদের বর্তমান কর্মকে প্রভাবিত করে । গুরু নানক তাহার ণরাগ- 
মরু'তে লিখিয়াছেন £-- 

"মন হইতেছে কাগজ এবং আমাদের কর্ম হইতেছে কালি। পাপ ও পুণ্য 
এই ছুইটি হইতেছে উহাতে লিপিবদ্ধ লেখনঘ্বয়। আমর] যে সকল কর্মপদ্থা 
অবলম্বন করিতে বাধ্য হই তাহার আমাদের অতীত কর্মদ্বার1 নিয়স্ত্রিত-_হে ঈশ্বর 
ভোযার গুণের অস্ত নাই। ওহে পাগল, ঈশ্বরকে ভুলিয়া গেলে যে তোমার সর্ব 
সদ্‌গুণ নষ্ট হইবে এই কথ! কেন বারবার চিত্তা কর না? দিবস ও রাত্বি এমন 
জালে পরিণত হইয়াছে যাহাতে তুমি দণ্ড (২৪ মিনিট পরিমিত কাল খণ্ড ) অথবা 
কালের হাতে ধর! পড়িয়াছ। প্রত্যহ আহার করিবার সময় তুমি তাহাদের 
হাতে ধর! পড়িতেছে। হে মুর্খ কি ভাবে মুক্ত হইতে পার তাহ! কি তুমি জান? 
শরীর একটি অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হইয়াছে, মন যেন তত্জত্য লৌহখণ্ড, এবং পীচটি 


১৩৩ 


শিখ দর্শন 


অধ্ি (কাম? লোভ, ক্রোধ, আসক্তি ও অহমিক1) উহাকে দগ্ধ করিতেছে.। 
তোমার পাপকুত্য সকল নূতন ঈদ্ধন যোগাইতেছে, এবং চিন্তাদোষে আক্রান্ত হইয়া? 
তোমার মন জ্বলিতেছে।” 

এই ছুঃখভোগ কি করিয়া শেষ করা যায়? গুরু কহেন, সর্ব জীবাত্বা যে একই 
সমুজ্দের বৃত্বদ এই কথা ভুলিয়া যাওয়ার ফলেই এই ছঃখভোগ হয়। শরীরসকল 
পরস্পর হইতে ভিন্ন বটে, কিন্ত উহার! সকলে একই জ্যোতি দ্বারা আলোকিত। 
“তাহার সকলে আলোকে পরিপুর্ণ, এবং তিনিই দেই আলোক । তাহার প্রকাশে 
সর্ব বস্তু প্রকাশিত*, এই জ্ঞান উৎপন্ন হইবামাত্র মাহৃষের জীবন পরিবর্তিত হয় । 
উপরে উদ্ধৃত স্তোত্রের শেষ ছুই চরণে গুরু নানক এই অগ্িকুণ্ড হইতে বাহির 
হইবার পথ নির্দেশ করিয়াছেন £ 

“যে গুরুর নিজ জীবনে সেই পরিবর্তন ঘটিয়াছে মানুষ যদি তাহার কাছে যায় 
তাহ! হইলে যে মন অপদার্থ হইয়! গিয়াছে তাহাই আবার সোনায় পরিণত হইতে 
পারে । সে নামের অমৃত মুখে রাখে এবং তাহাতে তাহার শরীরের আগুণগুলি 
নিভিয়। যায়।” গুরু জীবাত্মাগুলির পুথকত্বের উপর জোর ন1 দিয়! তাহাদের 
এঁক্যের উপর জোর দ্রেন। “আমর! সকলে একই পিতার সম্তান।” “আল্লা! 
প্রথমে আলোক স্ষ্টি করেন। সর্ব প্রাণী তাহা হইতে উৎপন্ন হইয়াছে । একই 
আলোক হহতে ভালে মন্দ সমগ্র বিশ্ব নি£স্হত হয়।” তাহার পর সংযোগের 
অর্থাৎ স্বীয় উদগমস্থলের সহিত আত্মার মিলনের প্রক্রিয়। আরভ হয়ঃ বিয়োগ 
( পৃথক পৃথক্‌ হওয়া) ও সংযোগ ( মিলন ) এই ছুই অস্তের মধ্যে সমগ্র জীবন । 


৫1 গুরু ৪ তাহার আবশাকতখ 


নৈরাশ্ট ও অসহায়তার পঙ্ক হইতে বহির্গযষনে মাহষকে সাহায্য করিবার জন্য 
গরু ( ধর্মশিক্ষক ) আবশ্যক । শিখগুরুগণ অবতারবাদে বিশ্বাস করেন না। 
ঈশ্বর স্বয়ং অবতীর্ণ হন না, কিন্তু মান্গবকে সৎপথে লইয়। যাইবার জন্ঠ সময়ে সময়ে 
তাহার সেবকশণকে প্রেরণ করেন । ঈশ্বর এবং গুরুর মধ্যে আকাশ-পাতালের 
পার্থক্য এবং শিখগুরুদের মতে গুরুকে ঈশ্বর বল! ধর্মবিরুদ্ধ আচরণ । গুরুকে 
ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত করার প্রথ! বন্ধ করিবার জন্য গুরু গোবিন্দ সিংহ তাহার 
অনুবতিগণকে স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাষায় বলিয়াছেন “যাহার! আমাকে ঈশ্বর বলে তাহার! 
নিশ্চয়ই নরকে যাইবে । আমি ঈশ্বরের একজন সেবক এবং এই জগৎলীল! 
দেখিবার জন্কধ এথানে আসিয়াছি। আমি তাহার লেবকদের মধ্যে একজন 


১৩৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ঘর্শনের ইতিহাস 


ইহাতে বিন্দুমান্্ও সন্দেহ নাই।” কিন্ত গুরু কে? "যিনি প্রকৃত পুরুষকে 
জানিয়েছেন তিনিই প্রক্কত ওরু । তাহার সহবাসে শিষ্য প্রভুর স্ততিগান করি] 
উদ্ধার পাইবে ।” “জয় সেই সদৃগুরুর জয়, যিনি পরম সত্যকে জানিয়াছেন এবং 
ধাহার দর্শনে কামতৃষা দূর হয় এবং শরীর ও যন শাস্ত হয়। সেই সদৃগুরুর জয় 
যিনি সকল্পকে সমদৃষ্টিতে দেখেন । জয়; সেই সদৃগুরুর জয় ধাহার কোন অন্ুয়! 
নাই এবং ধাহার নিকট প্রশংসা] ও নিন্দা এক | জয়, সেই সদৃগুরুর জয়, ধাহার 
মন নিরস্তর ব্রহ্ম ধ্যান করে । জয় সেই সদৃগুরুর জয় যিনি নিরাকার অসীমতত্বের 
সহিত এক্যলাভ করিয়াছেন । জয়, €সই সদৃগুরুর জয়, যিনি লোঁকদিগকে সত্যের 
অন্থশীলন করান । হে নানক, জয়, জয় সেই স্‌গুরুর জয় যিনি আমাদিগকে 
তাহার নাম প্রদান করেন” “সেই সদৃগুরুর, সেই বন্ধুর সহিত সাক্ষাৎ কর ধাহার 
মনে সর্ৃগুণের সাগর বিরাজ করে । সেই সদৃগুরু, সেই প্রিয়জনের সহিত সাক্ষাৎ 
কর যিনি স্বীয় অশ্মিতাকে বিনষ্ট করিয়াছেন। সেই পরম গুরু ধন্ যিনি তাহার 
উপদেশ দ্বার] সমগ্র জগতের সংস্কার পাধন করেন। যে জীবাত্ম পূর্ণতা লাভ 
করিয়াছেন এবং উপরে বণিত গুণাবলীর অধিকারী তিনিই গুরু । 

শিষ্যের পক্ষে গুরুর প্রতি দ্বিধাহীন শ্রদ্ধা! অত্যাবশ্যক | শিখ ধর্মাচ্গারে ধর্ম- 
জীবন এমন একটি সাক্ষাৎ্ৎ অনুভবের বিষয় যাহ] শুধু গরুর হস্তে নিজকে সম্পূর্ণভাবে 
সমর্পণ করিয়াই লাভ করিতে পারে । এইব্ধপ ধর্মজীবনকে একটি নৃতন জন্ম 
বলিয়। বর্ণনা! কর! হইয়াছে । “আমি যখন গুরুর সম্গিধানে নবজন্ম লাভ করিলাম 
তখন আমার জন্মমৃত্যুর ধার শেষ হইল।” কোন কোন অবস্থায় শিষ্ের পক্ষে 
নিজের ইচ্ছা্গুযায়ী কর্ম না করিয়া গুরুনির্দিষ্ট কর্ম করাই কর্তব্য । এইবপ শিষ্য 
তাহার অতীত কর্মের কবল হইতে মুক্ত হয়, আমাদের অতীত কর্ষ আমাদের 
ইচ্ছা ও বাসনার মধা দরিয়া আমাদের বর্তমান কর্মকে প্রভাবিত করে । আমর! 
যখন আমাদের নিজ ইচ্ছা ও অভ্যাস দ্বার আর প্রভাবিত হই না এবং গুরুর 
আদেশ অহুলারে কর্ম করি তখন এই সকল বালন। ধীরে ধীরে জীর্ণ হইতে থাকে 
এবং পরে আমাদের অতীত কর্ম বিনষ্ট হয়। অতীত কর্মের ভার উঠিয়! যায়, 
আমর1] ফলের ইচ্ছা ন1 করিয়! কর্ম করি। গুরুর ধর্ম অন্ুসরণ করিয়! আমর! 
ভবসাগরের পারে পৌছিয়াছি।” ণনানক বলে যে আত্ম! কর্ম-নিয়মের অধীন । 
সদৃগুরুর সহিত সাক্ষাৎ না হইলে আত্ম! মুক্কিলাভ করিতে পারে ন11” প্যে শিষ্য 
গুরু গৃহে থাকিতে চাহে, সে নিজেকে গুরুর ইচ্ছ! দ্বার] নিয়ন্ত্রিত করিবে । তাহার 
পক্ষে শ্বীয় অহং-কে পরিত্যাগ করিয়। মনে হরিকে ধ্যান করা কর্তব্য । যে নিজের. 


১৩২৯ - 


শিখ দর্শন 


মনকে গুরুর নিকট বিকাইয়! দেয় শুধু সেইাশষ্যেরই প্রযত্ব সফল হয়। যে 
ফলাকাঙ্ক্ষা বিনা সেব! করে, সে প্রস্থুকে পায়।” ূ 
শিখগুরুদের মতে ইহার জন্য সংসার অথবা পারিবারিক জীবন ত্যাগ কর! 
আবশ্বক নহে । বরং শিখধর্মাবলম্বীকে এইরূপ আদেশ দেওয়! হয় যে সে নিজের 
জীবিক1 অর্জন করিবে এবং স্বীয় সম্পত্তি অন্তের সহিত মিলিতভাবে ভোগ করিবে । 
“যে নিজের উপাজিত অন্নতক্ষণ করে এবং অন্যকে উহার কিছু অংশ দান করে, 
শুধু সেই (শিখ-) পম্থকে জানে ।” অহম্-এর উপর প্রতিষ্ঠিত কর্ম বন্ধনের কারণ, 
কিন্ত নিঃস্বার্থ কর্ম মাহুষকে সর্বশূঙ্খল হইতে যুক্ত করে । ত্বতরাং যে ব্যক্তি ফলের 
কামন। ব্যতীত সেবা-পরায়ণ জীবন যাপন করেন তিনিই শিখদের আদর্শ । “্যে 
ব্যক্তি সত্যকে জানে তাহার মন পরোপকারের জন্ত সদ] ব্যগ্র থাকে ।” গুরুর 
উপদেশ অহ্থসারে কাজ করিলে শিষ্য নৈতিক পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। “যে ব্যক্তির অন্য 
লোকের অর্থ ও স্ত্রীর প্রতি লোভ পোষণ করে না, ঈশ্বর তাহার থুব নিকটে বাস 
করেন ।” প্অগ্ের আুন্বরী স্ত্রীকে দেখিলে সে তাহাকে মাত ভগ্রা অথবা কন্তা 
বলিয়1 জ্ঞান করিবে । হিন্দু যেমন গোমাংস এবং মুসলমান যেমন শৃকরমাংস 
বর্জন করে তেমনই ০ অন্তলোকের সম্পত্তি বর্জন করিবে । নিজের স্ত্রী ও 
সম্তানাদির প্রতি আসক্তি দ্বার তাহার এতটা অভিভূত হওয়! উচিত নয়যে 
তাহাদের জন্ত সে অন্যকে প্রতারণ। এবং অন্তের প্রতি অত্যাচার করিবে । নিজ 
কর্ণে নিশ্ব! ব। প্রশংস। শুনিলেও তাহার কখনও গালি দেওয়। কর্তব্য নহে । ক্ষমতা 
প্রাপ্ত হইলে তাহার পক্ষে অহঙ্কার বশত: কখনও অন্যকে ছঃখ দেওয়] কর্তব্য নহে। 
এইবরপ শিষ্য গুরুর সাহায্যে শাস্তিফল প্রাপ্ত হয়। সেরাজযোগীর স্থুখ ও আনন্দ 
প্রাপ্ত হয়।” 
এই প্রসঙ্গে শিখগুরূুগণ অপর একমি মতও প্রতিপাদন করিয়াছেন। গুরুর 

শরীর গুরু নহে । তাহার বাণীই গুরু । “বাণী হইতেছে গুরু এবং ওরু হইতেছে 
বাণী, বাণীই সর্ব অযুতের আধার । যেশিষ্য গুরুর বাণী পালন করে, তাহাকে 
গুরু নিশ্চয়ই ভবসাগর পার করাইবেন।” অতএব গুরু দেহের সম্মুখে নতি 
অথব1! গুরুর দর্শনে শিষ্যের কোনও পুণ্য হয় না। “নবদীক্ষিতগণ ও শ্ষ্যিগণ 
সকলেই ওরুর নিকট আসে এবং হরির সর্ধোস্তম স্ততি গান করে। কিন্ত যাহারা, 
যথার্থভাবে গুরুর আদেশ পালন করে শুধু তাহাদের স্তরতিগানই হরি গ্রহণ করিবেন 
এবং তাহাদের কথাই শুনিবেন।” “গুরুর উপদেশ অনুসারে নিজের মনকে 
নুতনভাবে গঠন কর। যাহা আবশ্যক তাহা হইতেছে হৃদয়ের পরিবর্তন শুধু 


১৬৩. 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


কোনও মতের আহ্ষ্ঠামিক গ্রহণ অথব1 বৌদ্ধিক জ্ঞান নহে । নানক বলেন, ”যে 
প্রকৃত “আদেশ? জানে সে “আমি আছি' এন্সপ বলিবে ন11” সর্ব ধর্ম-সাধনার 
উদ্দেশ্য হইতেছে অহংকে বিলোপ কর]; তাহা না হইলে “মাহষ কোটি কোটি 
সৎক্কত্য করিতে পাঁরে বটে, কিন্ত অহম্-এর উপর প্রতিষ্ঠিত হইলে ইহার সব কিছুই 
নিক্ষল, তাহার শুধু পরিশ্রমই সার হইবে ।” 


৬। সংযোগ (ঈশ্বরের সহিত জবাজ্ার মিলন) 


এইন্বপ প্রতীয়মান হয় যে, আধুনিক সভ্যত] ও সংস্কৃতি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার 
প্রতি অসস্তোষের ভাব অথব1 চিরস্তন বৌদ্ধিক অস্থির তা অথবা] ধর্ম ও দর্শন সন্বন্ধীয় 
সমস্তাগুলির প্রতি একটি সাধারণ সন্দেহমূলক দৃষ্টি উৎপন্ন করে, কিন্তু শিখধর্ম এব্ূপ 
করার পরিবর্তে শ্রদ্ধা, একাগ্রতা, মানসিক শাস্তি ওবিশ্বপ্রেমকে তত্বোপলব্ধির ও 
আত্মার চরম মুক্তির জন্ত অত্যাবশ্যক মনে করে। শিখ মতাছুসারে আত্যস্তিক 
সন্দেহ ও অসস্তভোষের অবস্থায় কোনও মহৎ কাজই সম্পাদন কর] সম্ভব নহে। 


প্রেম আত্ম-পরের ব্যবধান দূর করে, অহুম্ণএর পরিসর বৃদ্ধি করে এবং আত্ম- 
ত্যাগ, অনালক্তি ও আত্মসমর্পণের ভাব জন্মায়-_ইহাতে সমাজে অত্যাচারের 
পরিমাণ হ্রাস হয় ও যে বিবাদ কলহ ছুঃখ কষ্টের মূল কারণ বলিয়৷ বিবেচিত হয় 
উহার অবকাশ প্রায় বিনষ্ট হইয়। যায়। 

শিখ ধর্মগ্রস্থের প্রত্যেক পংক্তিরই সুর দেওয়া হইয়াছে এবং প্রত্যেক স্তোত্র বা 
পদের আরভ্ভতে উহ1 কিভাবে গাহিতে হইবে তৎসম্বন্ধে নিরশশ দেওয়] থাকে । 
প্রত্যেক গুরুদ্বারে সংকীর্তন দৈনিক উপাসনার একটি অঙ্গ। যে শিষ্য গুরুর শরণ 
লইয়াছে তাহাকে প্রত্যহ শিখপন্থে অবিচলিত থাকার স্বীয় সম্বল্প দৃঢ় করিবার জঙন্ 
সৎসঙ্গের আশ্রয় লইতে হয়। কীর্তন শ্রবণ কর1 তাহার অবশ্য কর্তব্য । “কীর্তন 
একটি অমূল্য রত্ব* | সঙ্গীতে অস্তঃকরণ কোমল হইলে উহার গুরুর উপদেশামৃত 
পান করিবার জন্য অধিক উপযুক্ত হয়। অস্টের নেব! করিয়া সে নিজের অহমিকাকে 
বিনষ্ট করে এবং তখন গুরুর চরম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দান যে নাম তাহা! তাহার মনে 
স্বায়ীভাবে নিবাস করে । শিখ ধর্মগ্রন্থে 'নাম' শব্দটি ছুই অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে £ 
যে সর্বব্যাপী পরমাত্বা বিশ্বকে ধারণ করিয়া! আছেন তাহার অভিধ! ও প্রতীক। 
নামের নিরস্তর ধ্যানের দ্বার অহং সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয়। “নাম ও অহং পরস্পরের 
বিরোধী, উহার] একই স্থলে থাকিতে পারে না”, এবং শিষ্য যথন সপ্রেম ভক্তিতে 
নিজ মনে অনুক্ষণ নাম ধারণ করে, তখন সে আধ্যাত্মিক জীবনের শেষ স্তরে উপনীত 


৯১৩৪ 


শিখ দর্শন 


হয়। একটি কিরণ সুর্যের সহিত মিলিত হয় এবং সলিল সঙগিলে প্রবাহিত হুয়। 
আলোক আলোকের সহিত মিশিয়া যায়, পূর্ণত। সম্পাদিত হয় ।* শিষ্য সক্রিয় সে 
বার জীবন যাপন করে আর ইহ] শুধু সৎসঙ্গ দ্বারাই সম্ভব? সঙ্গে সঙ্গে সে কীর্তন 
ও নামকে আশ্রয় করে এবং ইহাতে যে পুর্ণ “সংযোগ” (মিলন) প্রার্থ হয়। ইহাই 
সর্বোচ্য অবস্থা । এই অবস্থার আনন্দ অবর্ণনীয় । নববিবাহিতা রমণী যেমন 
“প্রেমানন্দে ভরপুর হুইয়া” তাহার সখীগণের নিকট সেই আনন্দ অথব1 তাহার 
পতির প্বর্ণনা দেওয়ার মত শব্দ খুঁজিয়! পায় না,* তেমনই যে ব্যক্তি "সংযোগ: 
অনুভব করিয়াছে, তাহার পক্ষে ঈশ্বরের সহিত মিলনের আনন্দ শব্দে বর্ণন1! কর! 
অসস্ভব বলিয়া মনে হয় । যথন শিষ্য এই স্তরে উপনীত হয় ও নামধ্যানে নিমগ্ন 
থাকে এবং অন্যকেও সেইন্দপ করিতে প্রবৃত্ত করে, তখন সে জীবনের চরম উদ্দেশ্য 
চরিতার্থ করে । সে সুখ ও ছঃখের অতীতে গমন করে । “সে স্বথ ও ছুঃখকে 
একই দৃষ্টিতে দেখে । সে পাপ ও পুণ্যের অবস্থা অতিক্রম করে ।* তাহার সম্বন্ধে 
গুরু বলেন “যে নিজে পুনঃ পুনঃ নাম উচ্চ/রণ করে এবং অন্যকেও সেইরূপ করিতে 
প্রবৃত্ত করে, আমি গুরুর সেই শিষ্যের পদধূলি প্রার্থনা করি।” যে ধর্ম-সাধনার 
নিয়ম পালন করিয়] চলে সেই প্রকৃত শিষ্য । না! না প্ররুতপক্ষে সেই আমার গুরু 
এবং আমি তাহার শিষ্য |” 


১৯৩৫ 


বিংশ গরিচ্ছেদ, 


সমসাময়িক ভারতীয় চিন্তাধারা! (অ) 
১। রেনেরশ, মবজাগরণ ও মবীকরণ 


রেন্শে! বা নবজাগৃতির অব্যবহিত পরবর্তী কালে এবং তৎ-প্রভাবিত 
স্টিমূলক প্রয়াসের পূর্বে জাতির মনে নুতন যে উদ্ভাসন ঘটিয়! থাকে, ভারতের 
মনোজগতে এখন তাহাই ঘটিতেছে। ভারত কেবল যে পুনরুজ্জীবিত হইয়! 
উঠিতেছে, তাহা নয় ; তাহার অতীত নম্বন্ধে,_ ধর্ম, দর্শন, সামাজিক ও নৈতিক 
আচারাদি সম্বন্ধে চিন্তা! ও ব্যাখ্যানের কাজ চলিতেছে; সেগুলির কিছু বা পরিত্যক্ত 
হইতেছে, কিছু ব1 ব্যাখ্যাত হইতেছে এবং অবশিষ্ট যাহা, তাহা নুতন ছাদে গড়িয়। 
লওয়1 হইতেছে । পরিবর্তনের সহিত মানাইয়! চলিবার এই গণ ভারতীয় সংস্কৃতির 
অধ্যাত্ব-স্বভাবের নমনীয়তা-প্রস্থত এবং ইহাতে তাহার ম্ববিপুল প্রগতির সম্ভাবনাই 
স্থচিত হইতেছে । ইহাই সেই ম্যাকনিকল-কথিত “হিন্দুধর্মের সর্ধান্বয়ী সামর্থ্য” 
অধিকাংশ পাশ্চাত্য সমালোচকের পক্ষে যাহ! হইল ধারণা-বহিভূতি ব্যাপার | 
পরিবর্তনশীল বাহা পরিবেশের সহিত সামগ্তশ্ত বজায় রাখার তাগিদে ভারতের 
অবিচ্ছেগ্চ যে অধ্যাত্ব-শ্বব্ূপ বাহিরে বিচিত্র রূপে ব্যক্ত হইয়াছে, তাহার গভীর 
সত্য উপলদ্ধি করিতে ন| পারিয়! তাহার। বাহিরের গৌণ আচারাদির সহিত 
হিম্দু-ধর্মের অভিন্নতার কথা বলিয়াছেন। কতে! অভিঘাত, আক্রমণ, সংঘর্ষ ও 
আলোড়ন উত্তীর্ণ হইয়া এই ধর্মমত কী করিয়! যে চার-হাজার বৎসরেরও অধিক- 
কাল ব্যাপিয়। জীবিত আছে,_এঁতিহামিক ও দার্শনিকগণের মধ্যে অনেকেই সে 
রহমতের কথ! ভাবিয়] বিশ্মিত হন। সর্ব অবস্থায় পারিপাম্থিকের সহিত সাযঞ্জ্য 
বজায় রাখিয়া চলিবার যে অভিযোজনা-শক্তি আধ্যাত্মিক ভারতবর্ষের মজ্জাগত, 
সেই শক্তিই ইহার মূল কারণ! 

এদেশে ব্রিটিশ-সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীষ্রীয় ধর্মমতের শতিবুদ্ধি ঘটিয়াছিল এবং 
তাহারই ফলে শ্রীপ্তীয় মতের সহিত হিন্দুমতের তুলনা! অবলম্বন করিয়! হিন্দুর 
আত্মবিচার-প্রয়াস উৎসাহিত হয়। পশ্চিমের প্রাচ্যবিদু ও মনীধী-সম্প্রদায়,- 
কয়েকজন ধর্মপ্রচারকও তাহাদের মধ্যেই গণ্য, ভারতের ভাষা, ধর্ম, ইতিহাস ও 
দর্শন অনুশীলনে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন) ফলে, ভারতবাসীরাও নিজেদের 


5৩৬ 


সমসাময়িক ভারতীয় চিন্তাধারা (অ) 


২স্কৃতি পর্যালোচন1 করিয়া দেখিতে অন্ধুপ্রাণিত হন। জাতীয়তার উন্মেষ ও 
ক্রমপরিণতির ফলে দেশের অতীত ইতিহাসের যথার্থ শক্তি ও মহত্বের স্থত্রগুলি 
পুনরাবিফার করিবার প্রেরণ। জাগিয়াছিল। পান্চাত্ত্য মনীষীবৃন্দের অবিরত 
সমালোচনার ফলে ভারতবাসী তাহার শ্বদেশের ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে 
অন্ুপ্রবিষ্ ছুর্বলতার স্বরূপ এবং আবশ্টিক ও আপতিকের পার্থক্য উপলন্ধি করিতে 
সক্ষম হইয়াছে । জাতীয়তা ইহ-জাগতিক ব্যাপার । এই জগৎ-সীমার মধ্যেই 
জাতির কল্যাণসাধন ও উন্্তিবিধান, ব্যক্তির আরাম ও মুখের ব্যবস্থাপনা ; 
ইহাই হইল জাতীয়তার লক্ষ্য । ব্রিটিশ শাসনের পদাঙ্ক অস্ুসরণ করিয়! প্রতীচীর 
বিজ্ঞাননিষ্ঠ, মানবতাময় ভাবধার। এদেশে প্রবেশ করিবার ফলেও তারতের 
অধ্যাত্মভাবময় সংস্কৃতির নুতন ব্বপায়ণের প্রয়োজন অহুভূত হয়। এই সকল 
নিমিত্তের সমবায়ে ভারতের টিস্তাক্ষেত্রে শুধু পুনরুজ্জীবনই নহে, পুনর্ব্যাখ্যানও দেখ! 
দিয়াছে, কেবল পুনর্বযাখ্যানই নহে, সমগ্র চিত্তক্ষেত্রের জীর্শোদ্ধার ও সঞ্জীবনের 
স্চন1 সম্ভব হইয়াছে । এই সক্রিয়তার প্রকাশ ঘটিতেছে সমাজ, ধর্ম, রাষ্রী ও দর্শন 
বিষয়ক প্রধানত চারি ক্ষেত্রে, যদিও ভারত-প্রসঙ্গে এই ক্ষেত্র-চতুষ্টয়ের পারস্পরিক 
সীমারেখা সুচিহ্িত করিয়! দেওয়। সহজ নহে । ইহাদের প্রধান দিকগুলির ত্য স্ব 
বৈশিষ্ট্যেই ইহাদের প্রভেদের তত্ব নিহিত রহিয়াছে । 


২। সামাজিক ও ধর্ম-সম্পক্ষিত সংস্কারাম্ফোসন 


শ্রী্ঠানী সমালোচন। ও হিন্দ্ু-প্রতিক্রিয়া_ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত 
হইবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীষ্টধর্মের প্রচারকগণ এদেশে বিপুল কর্মক্ষেত্রের সম্ভাবনা লক্ষ্য 
করিয়াছিলেন । বাহাতঃ, হিন্দুধর্মের মধ্যে কেবল আত্মিক ও যোগসাধনাগত 
ধযমবিধিসমুহের সহিত আদিম উপাসনারীতি ও বলিদান-প্রথার যে অদ্ভুত 
সমাবেশ লক্ষিত হয়, নিকৃগ্তম জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা-দোষের সহিত সকলের 
মধ্যে একই এ্রশী সত্তার অস্তিত্বে যে বিশ্বাস স্ুচিত হয়, তাহার অস্তরশায়ী 
আধ্যাত্মিক ভিত্তির স্বরূপ তাহার! বুঝিতে পারেন মাই। শ্রীষ্টীয় প্রচারকগণ 
হিন্দুর এই সকল ক্রি উদঘাটন করিয় তাহাদের স্বধর্মে ধর্মাত্তরিত করিবার 
যুক্তি-তর্কের মধ্যে এই সকল ক্রটির সহিত হিন্দুধর্মের কল্পিত অভিন্নতার কথ 
প্রচার করিতেন । জনসাধারণের মধ্যে যুক্তিবাদ ও মানবতার আদর্শ ছড়াইয়। 
দিবার কাজে তাহাদের দ্বারা স্থাপিত বহুসংখ্যক বিদ্যায়তন ও চিকিৎসালয়গুলিও 
বিশেষ সাহায্য করিয়াছিল । 


১৩৭ 


১৮ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


হিন্দুত্বের নির্দিষ্ট কোনে! স্তর দেওয়া! সম্ভব নহে। ইসলাম ব1 খ্রীষ্টধর্মের 
গ্রায় বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিমাত্রের প্রয়াসে ইহ! উৎপন্ন হয় নাই। অধ্যাত্মভাবের 
বহিঃপ্রকাশের প্রবণতা হইতেই এ ধর্ষ স্বভাববশে বিকশিত হইয়াছে এবং 
অধুনালুপ্ত যে সকল অবস্থাবৈচিত্র্যের মধ্য দিয়! ইহার ক্রমোদঘাটন সম্ভব হইয়াছে, 
তাহার অধিকাংশই ইহাতে সংরক্ষিত রহিয়াছে । মাহষের অধ্যাত্ব-স্বভাবে 
অটুট আস্থাই ইহার প্রধান অবলম্বন, এবং আত্তর সত্তার যথার্থ উপলব্ধিতেই 
যে মহ্য্যজীবনের পরম চরিতার্থতা, ইহ! সেই বিশ্বাসেরই ধারক। এইমুল 
অধ্যাত্ম-সত্যটি স্বীকার করিয়। লইলে ধর্মমত ও সাধন-পদ্ধতির সর্বপ্রকার বিভিন্নত! 
সত্বেও হিন্দুর অস্থমোদন ও উৎসাহ-প্রদানে কার্পণ্য ঘটে নাই । মৃতি বা প্রতিমা 
যে ঈশ্বরের প্রতীক-্বরূপ, তাহা! পুনব্যাখ্যাত হইলেও পূর্বোক্ত সংরক্ষণী প্রেরণার 
ফলে মুর্তি-উপাসনার যাবতীয় ব্ূপই ইহাতে সংরক্ষিত রহিয়াছে । এইভাবে 
স্থুলতম ধর্মমতগুলির মধ্যেও অস্তম্পখিতার আদর্শ সঞ্চারিত হইয়াছিল। কিন্তু 
তৎসত্বেও বাহা রূপগুলির ছর্মরতার ফলে জনসাধারণের মনে ইহার ভিতরের 
সত্য প্রবেশ করিতে পারে নাই। 

পৃথক পৃথক শ্রীগ্রীয় গোষ্ঠীর প্রচার কার্ষের দ্বার প্রভাবিত শিক্ষিত-সমাজ 
ইহাই স্থির করিয়াছিলেন যে হিন্দুধর্ম বর্জন ন1 করিয়া! বরং তাহার সংস্কার-সাধনে 
মনোনিবেশ করাই সংগত হইবে। সেই সিদ্ধান্ত হইতেই সমাজ ও ধর্মের ক্ষেত্ে 
বিভিন্ন সংস্কারান্দোলনের স্থজজপাত ঘটিয়াছিল। এখানে আমরা সেই সকল 
প্রনঙ্গই সংক্ষেপে আলোচন! করিব । 

ব্রাক্মসমাজ- কেবলমাত্র হিন্দুধর্ষেরই সংস্কার-কামলায় নহে, হিন্টু-সমাজকেও 
নূতন করিয়| গড়িয়া তুলিবার সংকল্প লইয়! ১০২৮ খ্রীষ্টাব্দে রাজ! রামমোহন রায় 
ব্রাহ্মঘমাজ স্থাপন করেন । ইসলাম ও খ্রীষ্টান ধর্মের দ্বার! প্রভূত পরিমাণে 
প্রভাবিত হইয়া তিনি বহুদেববাদ, পুরাণাহৃগত্য, প্রতিমাপুজা ইত্যাদির 
প্রতিবন্ধকত! করিয়াছিলেন এবং ব্রা্গণ ব! ঈশ্বরের শুদ্ধ স্বর্ূপেই যে ভগবৎ উপাসন। 
শ্রেয় ও বরণীয়, তিনি তাহাও প্রচার করেন। সকলই ব্রহ্ম, অথচ ব্রহ্ম সকল 
সংজ্ঞা ও সীমার অতিশায়ী,-শঙ্করের সর্বেশ্বরবাদ নামে এই যে দার্শনিক মত 
লোকসাধারণের নিকট পরিচিত, দর্শনের ক্ষেত্রে রামমোহন তাহার বিরোধী 
ছিলেন ; তিনি ছিলেন ঈশ্বরবাদের সমর্থক । প্রাচীনপন্থী সংরক্ষণবাদীদিগের 
নিকট এই সকল মতবাদের মধ্যে অনভ্যন্ত বা আপতভিকর বলিবার কিছুই ছিল না। 
কিন্ত রামমোহন আরে! অগ্রসর হইয়া! জাতিতেদপ্রথ। রহিত করিয়া দেন এবং 


১৩৮ 


সমলাময়িক ভারতীয় চিন্তাধারা ভে) 


তাহার অহৃচর গোষ্ঠীর মধ্যে বিধবা বিবাহও প্রবর্তিত করেন । লর্ড উইলগিয়ষ 
বেন্টিংককে রাজী করাইয়া! ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দে তিনি হাদয়হীন সতীদাহ ব্যবস্থাও 
রদ্দ করিয়া! দিলেন। সংস্কার-শোধিত হিন্দু-ধর্মের নূতন অভিব্যদ্কি ঘটিল 
ব্রা্মসমাজের মধ্যে । প্রধানতঃ পাশ্চাত্ত্য ভাবে অনুপ্রাণিত, শিক্ষিত হিন্দুদিগের 
মধ্যেই ব্রাহ্মলমাজের কার্ষকলাপ লীমিত ছিল এবং ইহার অহ্সরণকারীদের মধ্যে 
ছিলেন মহুবি দেবেন্্রশাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, জগদীশচন্ত্র বন্ধ, প্রফুল্লচন্্র রায়, 
ব্রজেন্দ্রনাথ শীল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ায় প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। 

প্রার্থন! সমাজ-_-১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে বোস্বাই শহরে ডাক্তার আত্মারাম পাওুরউ 
কর্তৃক স্বাপিত প্রার্থনা-দমাজ ছিল সংস্কারব্রতী অনুব্ূপ আর এক প্রতিষ্ঠান । 
ব্রাহ্মমতের স্ঠায় ইঁহাদেরও দৃষ্টিভি ঈশ্বরবাদী এবং ভক্তিবাদী। প্রার্থনা-সমাজের 
গণ্যমান্তদের মধ্যে ছিলেন স্তর আর. জি. ভাগারকর, বিচারপতি রানাডে, 
স্তর এন্‌. জি. চন্ত্রাভরকার ও রমাবাঈ। 

আর্ষ সমাজ--১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী কর্তৃক আর্ধসমাজ স্থাপিত 
হয়। টেদিক আদর্শে ফিরিয়! যাইবার নীতি প্রচারের জন্য প্রায়ই মার্টিন লুখারের 
সহিত তাহার তুলন1 করা হইয়া থাকে । প্রতিমাপৃজার প্রথা, বহছদেববাদ 
ও জাতিভেদের অসারত] দেখাইয়া, তযাগ-ধর্ষের শ্রেয়ত্বের উপর জোর দিয়] 
তিনি বৈদিক ধর্মের পুনরভ্যুদয় ঘটাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। অন্ত ধর্মে 
ধর্মাস্তরিত হিন্দুর্দিগকে পুনরায় স্ব-ধর্মে ফিরাইয়। আনিবার জন্য এবং স্বধর্ম ত্যাগের 
দুর্যোগ হইতে তাহার আত্মরক্ষার উদ্দেশ্টে হিন্দুধর্মকে তিনি একদিকে সংগ্রামশীলঃ 
অন্তদ্দিকে বিধর্মীকে ধর্মপ্রদানে সক্ষম করিয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন এবং 
সে-সাধনায় অংশতঃ জয়ীও হইয়াছিলেন । 

থিওজোফিক্যাল সোসাইটি বা “ব্রক্মবিষ্ভা” সমিতি-_ভারতের নবজাগৃতির 
পক্ষে প্রভূত সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে থিওজোফিক্যাল সোসাইটি ছিল অন্যতম 
ভারতবর্ষে থিওজোফি বা 'ব্রক্ষবিদ্1” আমদানি করিয়াছিলেন শ্রীমতী ব্ল্যাভাট্স্‌্কি 
ও কর্নেল অকৃলট এবং ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে মাদ্রাজের আদেয়ার অঞ্চল এই সমিতির 
প্রধান কর্ষকেন্ত্র হইয়! উঠে। এই থিওজোফিক্যাল সোসাইটি বস্তুতঃ বিশ্ব-প্র তিষ্ঠান 
রূপেই স্বীকার্ধ কারণ, জগতের সকল ধর্মমতের উদ্দেশেই ইহার আমস্ত্রণ ছিল 
অবাধ; ইহা হিন্দু-মতের শাখা মাত্র নহে। তবে, হিন্দুদের নিকট প্রতীচ্য 
ভূখণ্ডের এই বিশেষ বাণী ইহাতে বাহিত হইয়! আসিয়াছিল যে হিন্দুর ধর্মমতে 
এমন সব শ্রেয় বস্ত রহিয়াছে যাহা অন্তেরাও গ্রহণ করিতে পারে। ওআমতী 


১৬৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


আযানি বেলাণ্ট»_দ্ষুদীর্থকাল ধরিয়! যিনি এই সমিতির নেতৃত্ব করিয়। গিয়াছেন, 
এমম কথাও বলিয়া! গিয়াছেন যে জগতের বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে শ্রেঠ হইল 
হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম। ইহার ফলে হিন্দুদের মধ্যে তাহাদের ধর্মমতের বিরোধী 
সমালোচন। প্রতিরোধ করিবার উদ্যম উৎসাহিত হইয়াছিল এবং নিজেদের ধর্মের 
ধাবতীয় বিকৃত অভিব্যক্তি পরিহার করিয়! হিন্দুত্বের অন্তিহিত শ্রেষ্ঠ সত্যবোধ 
সন্ধান করিবার উৎসাহ জাগিয়াছিল। থিওজোফিক্যাল সোসাইটির পক্ষ হইতে 
একে একে ধর্মমতের মূল গ্রস্থগুলি এবং সেগুলির অস্কবাদ প্রকাশিত হইতে লাগিল । 

লেড.বিটর প্রণীত “টেকৃস্ট বুক অবৃ থিওজোফি”র মধ্যে আলোচ্য সমিতির 
প্রধান শুত্রগুলি লিপিবদ্ধ রহিয়াছে । ইহাদের প্রধান বা কেন্দ্রীয় বিশ্বাস বলিতে 
বুঝায় সর্বভূতে ঈশ্বরের অস্তিত্বে আস্থা এবং মাহুষে মান্ষে এক্য বা সংহতির 
ধারণা । প্ইহাদের গৌণতর হ্ষত্রগুলির মধ্যে তাহাই স্বীকৃত হইয়াছে পৃথিবীর 
সজীব ও গতান্থ যাবতীয় ধর্মমতের যাহ! হইল সাধারণ শিক্ষাঃ একমেবাদ্বিতীয়ম্‌ 
ঈশ্বরে বিশ্বাস ; তাহার অভিব্যক্তির ভ্রি-ধার1) জড়ের মধ্যে আত্মার অবতরণ ব! 
আত্মপ্রকাশের তত্ব ও সেই প্রসঙ্গস্থত্রেই মূলে অভিন্ন হইলেও বুদ্ধি-বিবেচনার 
ক্ষেত্রে মাহ্ুষে-মানষে তারতম্যের বোধ ১ চেতনার ক্রমোন্মেষ ও দেহের বিবর্তনের 
মধ্য দিয় মনুষ্যত্বের ক্রমপরিণতির ধারণ], অর্থাৎ জল্মাস্তরবাদ,_ পরিণতির 
অনিবার্ষ বিধিবশ্যত1, _কার্-করণের আইন, অর্থাৎ কর্মন্১-এই পরিণতির 
পরিবেশ, অর্থাৎ ব্রি-জগৎ-শারীরিক, আবেগধর্মী ও মনন-সম্পকিত অথব! 
ভূলোক, স্বর্গলোক ও ছয়ের মধ্যবর্তী তৃতীয় লোকের অস্তিত্বে প্রতীতি )-_স্বগীয় 
ব! দৈব প্রেরিত শিক্ষাদাতা ব! মহামানবের অস্তিত্বে বিশ্বাস (“শ্বেত ভ্রা তৃসজ্ঘ? 
বা “মানবজাতির জ্ঞানপ্রৌঢ় ভ্রাতৃবৃন্দ” নামে ধাহারা পরিচিত )1৮ ইহ1 হইতে 
দেখা যায় হে হিন্দুধর্মের অনেক কথাই 'খিওজোফি'র অজীভূত হইয়া! গিয়াছিল। 
ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের অনেকেই যে সে মতবাদের আকর্ষণ অস্কভব 
করিয়াছিলেন, তাহ1 কিছু অপ্রত্যাশিত ব্যাপার নহে । 

রামকুষ্ণ মিশন--ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে সামাজিক সংস্কার আন্দোলন এবং 
ধর্মসংস্কারের প্রয়াস পুথক করিয়! দেখ! সহজ নহে । অধ্যাত্ববোধহীন সমাজ- 
সংস্কার নিরুৎসাহিত করিয়| প্রথমে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির দ্বার মুখ্য ও গৌণের 
ভেদ বুঝিয়! দেখিবার প্রথম নির্দেশ দিয়াছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ; ১৮৯৭ 
খ্রীষ্টাব্দে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন স্থাপন করেন। সকলের অপেক্ষা সর্বাধিক সত্য 
করিয়া তিনিই অহ্ভব করিয়াছিলেন যে শূদ্রজাতির বেদাধ্যয়নে, বিধবার 


৯6৩ 


সমসাময়িক ভারতীয় চি্বাধার! (অ) 


পুনবিবাহে, অন্পৃশ্ট জাতির এক ব্যক্তি উচ্চবর্ণের কাহাকেও স্পর্শ করিলে, অন্ত 
ধর্মাবলম্বী হিন্দুরর্মে দীক্ষিত হইলে অথব1 একজন হিন্দুর সহিত অহিন্দুর বিবাহ 
হইলেই হিন্দুর ধর্মনাশ ঘটিতে পারে না! সেইজন্য তিনি এই শিক্ষাই দিয়াছিলেন যে 
নুতন নূতন দল ন1 বাড়াইয়! হিন্দু-সমাজের মধ্যে থাকিয়াই সর্বপ্রকার সংস্কার-চর্চা 
চলিতে পারে, সম্প্রদায়-বৃদ্ধির ফলে কেবল ভেদেরই বহুলত। ঘটিয়া থাকে এবং 
তাহাতে হিন্দুর সংহতি বিপন্ন হয়। রামকঞ্জ মিশনের প্রশংসা শ্ুত্রে ইহা! বলিতেই 
হয় যে এই প্রতিষ্ঠানটি কেবল যে স্থুসঙগতভাবে সর্বপ্রকার জাতি-বর্ণগত ভেদবুদ্ধি 
অগ্রাহ করিয়! চলিবার সাধনায় নিযুক্ত রহিয়াছে তাহ নহে, উপরন্ত জাতি-বর্ণের 
বৈষম্য পুনঃপ্রবর্তিত না করিয়! হিন্দু এঁতিহের সহিত যতোট। নৈকট্য রক্ষা করা 
মভম্ভব, এমন কি নিজেদের যতোট। হিন্দু বলিয়। মানিয়! লওয়1 সাধ্য, এই প্রতিষ্ঠানের 
মধ্যে সে-প্রয়াসও বিদ্যমান £ এবং ইহার1 প্রশংসনীয় ভাবেই সে দায়িত্ব পালন 
করিয়াছেন। 

বিবেকানন্দ ছিলেন রামরুষ্জ শিষ্যদের অন্যতম ; রামকুঞ্চ প্রচার করিয়! 
গিয়াছেন যে সকল ধর্ম একই আত্মিক সত্যের শিক্ষা! দিয়া থাকে । রামকুষ্ণ 
দর্শনশাস্ত্রের পড়ুয়া পণ্ডিত ছিলেন না এবং যুক্তি-তর্কের পথ ধরিয়৷ তিনি তাহার 
সিদ্ধান্তে উপনীত হন নাই। তিনি পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা পান নাই? প্রাচীন দেশীয় 
শাস্াদির জ্ঞানও তাহার সামান্যই বলিতে হইবে । কলিকাতার উপকণবর্তা 
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে তিনি ছিলেন সামান্ত একজন পুজারী ব্রাহ্মণ । কিন্ত 
আধ্যাত্মিক প্রতিভাধর রামকৃষ্চ দেবীর প্রতি এঁকান্তিক ভক্তির গুণে অস্তরাত্মার 
সত্য উপলব্ধি করিয়াছিলেন । বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের মূলগত এক্য উপলন্ধির 
প্রেরণাবশে তিনি এক গির্জায় ও এক মশজিদে গিয়! প্রার্থনা করিয়াছিলেন । তাই 
তিনি সকল ধর্মের এক্যের কথ প্রচার করিয়া! গিয়াছেন। স্বামী বিবেকানন্দও 
সকল ধর্মমতের অস্তলশন আধ্যাত্মিক সত্য যে এক ও অভিন্ন, তাহাই প্রচার করিয়] 
গিয়াছেন। তিনি এ-সত্য লাঁভ করিয়াছিলেন শঙ্কর-কৃত উপনিষদ্‌ ও ব্রক্গছত্রের 
চীকা-ভাষ্কে প্রচারিত বেদাস্তের অধ্বৈত ভাববাদী ব্যাখান হইতে । অতএব দর্শন- 
শাস্ত্রের বিচারে রামকুষ্খপন্থীরা শঙ্করাচার্য-সম্প্রদায়েরই অহ্থগামী । তবে? হিন্দু- 
সমাজের সকল জাতি ব। সম্প্রদায় হইতে তে। বটেই, এমন কি অন্যান্থ ধর্ম গোষ্ঠীর 
মধ্য হইতেও ব্রহ্মাচারী ব1 সন্ন্যাসী গৃহীত হয় | 

বিবেকানন্দ এই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই এক বিশেব নূতনত্ব প্রবতিত 
করিয়াছিলেন যে, সন্গ্যাসী হইবার পূর্বে নবাগতমাত্রেরই কিছু কিছু সমাজসেবার 


১৪8১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


কাঁজ দেখাইতে হইবে এবং অনেককে সন্যাস গ্রহণের পরেও সে-লাধন! চালাইয়! 
যাইতে হুইবে। শ্রীষ্ধর্মের প্রচারসংস্থাগুলির নিকট হইতেই তিনি সে আদর্শের 
প্রেরণা লাভ করিয়াছিলেন । দীন-দরিদ্রের সেবার নাম দরিদ্রনারায়ণের পৃজ1,_ 
সকলের মধ্যেই ঈশ্বর বি্যমান, এই পুরাতন সত্যেরই ইহা। প্রয়োগ মাত্র । বিস্তালয় 
ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়া, হাসপাতাল এবং কারিগরী ব1 যন্ত্র-শিক্ষালয় 
চালাইয়1, সেবা ও সংকটত্রাণের ব্যবস্থা করিয়! রামকৃষ্ মিশন এদিক দিয়! স্থবিপুল 
কর্ম-সাধনায় পরিচয় রাখিয়া যাইতেছে । হিন্দুধর্মের এই আধুনিক অভিব্যক্তিতে 
এই সত্যই প্রদশিত করিবার প্রয়াস রহিয়াছে যে, নিংস্বার্থ সমাজসেবা! ও 
মানবসেবার সহিত ত্যাগ ও বৈরাগ্যের কোনো! বিরোধ নাই। বরং সেইরূপ 
সেবাব্রতের সাহায্যে নিঃস্বার্থত! অস্থশীলনেরই স্বযোগ ঘটিয়া থাকে । 


৩। ব্লাজনীতি ক্ষেত্রের ভানুকদল 


প্রাচীন দৃগভজির অন্ুবিধা_জাতীয়তাবোধের অভ্যুর্থান ঘটিবার সে সঙ্গে 
ভারতবর্ষকে যখন প্রবল ও আন্তরিকভাবে রাজনীতিক সক্রিয়তার প্রয়োজন 
অনুভূত হইল, তখন, ভারতের নেতৃবৃন্দ দেখিলেন এ দেশের স্থপ্রাচীন ধর্ম ও 
দর্শনের অনাসক্তিবাদ হইতে উদ্ভুত ইহজগৎ সম্বন্ধে একপ্রকার নিস্পৃহতায় অনেকের 
মন আচ্ছন্ন থাকায় সে-কাজ বাধাগ্রস্ত হইয়। রহিয়াছে । রাজনীতি-ক্ষেত্রে প্রেরণা 
সধণার করিবার জন্ত হিন্দুধর্মের নব-ব্যাখ্যান আবশ্টিক হইয় উঠিল। 

তিলক ও গীভার নৃতন ব্যাখ্য।- লোকমান্ত বাল গঙ্গাধর তিলক ভগবদৃগীতার 
নুতন ব্যাখ্যানের সাহায্যে ইহাই প্রতিপন্ন করিলেন যেঃ ঈশ্বর-প্রাপ্তির সকল পথের 
মধ্যে গীতাতে কর্মমার্গেরই শ্রেয়ত্ব স্বীকৃত হইয়াছে। শ্রীরুষ্ণ অর্জুনকে পুনঃ পুনঃ 
স্ব-কর্তৃত্বের মোহ ত্যাগ করিয়া! কাজ করিয়া যাইতে বলিয়াছেন, ফলের কথা ন! 
ভাবিয়া! কেবল কর্তব্য-পালনে ব্রতী থাকিতে বলিয়াছেন ; ৫নরাশ্য ও অবলাদে 
বিষণ্ণ অর্জনকে কমে প্রেরণ! দিবার উদ্দেশ্ট ব্যতীত গ্ীতা-র অন্ত কী-ই ব1 সার্থকত! 
থাকিতে পাবে? 

ব্যক্তিকে শৃন্টে বা শৃন্ভতায় লীন করিয়! দিবার যে নির্বাণমার্গের কথা বৌদ্ধমতে 
বল] হইয়াছিল,পরবর্তী বৌদ্ধগণ কথাটা! যেভাবে বুঝিয়াছিলেন,_ হিন্দুমতে 
ততোধিক এই তিন প্রধান পথের কথা বল হইল, জ্ঞানমার্গ_ অর্থাৎ জ্ঞানের 
পথ, ভক্তিমার্গ- অর্থাৎ ভক্তির পথ এবং কর্ষমার্গ- অর্থাৎ কর্মের পথ। প্রথমোক্ 
দুই মার্গে সাধারণতঃ সর্বস্ব ত্যাগের আদর্শ, এমন কি কর্ম-ত্যাগের কথাও গৃহীত 


১৪২ 


সমদাময়িক ভারতীয় চিন্তাধার1 (অ) 


হইয়াছিল-_সর্বপ্রকার পারি সম্পর্কের পরিহারই তাহাদের ঈন্সিত। তৃতীয় 
মার্গের সাধনায় সন্ভতার অহং-কে নিজরুত কর্মের কর্তার্ূপে না ভাবিয়া! কেবল 
ঈশ্বরের নিমিত্র মাত্র থাকিয়! কর্ম লম্পাদনের আদর্শ ঘোষিত হুইয়াছিল। যেহেতু 
শঙ্কর, রামাহজ প্রভৃতি অধিক সংখ্যক আচার্খ-ই কোনে।-না-কোনো কারণে 
কর্মমার্গের মূল্য ততোটা স্বীকার করেন নাই বা কম করিয়! দেখিয়াছেন, সেজন্চ 
ভগবৎ সাধক মাত্রেই সাধারণতঃ কর্মে ও যাবতীয় জাগতিক বিষয়ে উদাসীন 
ছিলেন এবং এই মনোভাবের ফলে সামাজিক রাস্ীয় ব্যাপারে নিস্পৃহত1 দেখ 
দিয়াছিল। ইহ] ভারতবর্ষের রাষ্্রনীতিক অধঃপতনের অন্যতম কারণ বলিয়৷ গণ্য 
হইয়া! থাকে । 

বিষ্লীব আন্দোলন ও বারতন্ত্রের পুনর্জাগরণ-__বাংলার বৈপ্লবিক নেতার! 
প্রাচীন ধর্মমতের মধ্যে তাহাদের উদ্দেশ্য সাধনের পক্ষে অহ্কুল আর একটি 
প্রয়োজনীয় দিকের সন্ধান পাইয়াছিলেন। বাংলাদেশে ভগবানের শক্তি-স্বূপের 
সাধনা-স্থত্রে বহুকাল হইতেই তাস্ত্রিকতার প্রচলন ছিল ; কখনেো। কখনো বিশ্বের 
ভয়াবহ ধ্বংসশক্তির সহিত সে-শক্কির একাত্মতা স্বীকৃত হয় এবং পশু-হত্যার অনুষ্ঠান 
সেই শক্তি-সাধনারই আহ্ষঙ্গিক উপচার হিসাবে গণ্য । মহারাষ্ট্রেও (বোম্বাই ) 
বিশেষ করিয়া সামরিক জাতিগুলির মধ্যে অন্থব্ধপ উপাসন1-পদ্ধতি প্রচলিত 
আছে,-__মহারাষ্ট্র-বীর শিবাজী কর্তৃক ভবানী-পুজার বৃত্তাত্ত হইতেই তাহার 
সমর্থন পাওয়া যায়। সাহস ও বীরত্ববোধ জাগাইয়! তুলিবার উদ্দেশ্টে বিপ্লবীর] 
অতীতের সেই শক্তি-পৃজার পুনরভ্যুদয় ঘটাইয়াছিলেন। ভয় ও আসক্তি পরিহার 
করিয়। কর্মে উগ্ভত হইবার যে নির্দেশে ভগবদৃগীতার মধ্যে প্রচারিত হইয়াছে, 
তাহাও তাহাদের অন্তরে প্রেরণ সঞ্চার করিয়াছিল। তাহাদের কল্পনা-নেত্ে 
মাতৃভূমি পরম! জননীরই প্রত্যক্ষ প্রতিমূতি হইয়। উঠিয়াছিল। তিনি উত্তাসিত 
হইয়া উঠিয়াছিলেন পুজনীরা ভারত-মাতা ন্ধপেঃ সেই দেশ-মাতৃকার সেবাই 
ভাহাদেন ধর্ম হইয়া! উঠিয়াছিল। গীত1-তে শ্রীকুঞ্চ কর্তব্যের খাতিরে অজ্জুনকে 
জ্ঞাতি-নিধনে সম্মত করাইয়াছিলেন, এই প্রামাণ্য বৃত্তাস্তের সমর্থন অন্ুনরণ করিয়। 
মাতৃভূমির শৃঙ্খল মোচনের জন্য শক্রনিপাতের বৈধত! বা! ওচিত্য হ্বীকৃত হইল। 

মহাত্মা গান্ধী_ ভারতবর্ষের রাজনীতিক ধ্যান-ধারণাকে মহাত্ব গান্ধী এক 
নুতন দিকে চালন! করেন । তীহার নিকট যে-কোনো অবস্থায় যে-কোনো! ক্ষেত্রে 
হিংশার পথ পাপেরই নামাস্তর । ভিতরের দুর্বলতা, ভয় এবং মাহষের অস্তলিহিত 
এশী সম্ভার অনাস্থ! হইতেই হিংসার উত্তব ঘটিয়! থাকে । রাজনীতিক স্বাধীনতার 


১৪৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


জন্তই রাজনীতিক স্বাধীনতা! নহে,_তাহা স্বয়ং সম্পূর্ণ নহে,_তাহা মাহুষের 
আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার উপায় মাত্র। কোনে সৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও যদ্দি 
মন্দ উপায় গৃহীত হয়, তাহ] হইলে তাহাতে কর্তারও পতন হয়, সাধিত লক্ষ্যেও 
গ্লানির স্পর্শ লাগে। তাই তিনি রাজনীতি-ক্ষেত্রেও হিংসা-প্রয়োগ নিরুৎসাহিত 
করেন। তিনি এই দিক দিয়া ধর্মশাস্ত্রসমুহের, বিশেষ করিয়া গীতার ব্যাখ্যা 
করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন । ূ 

হিন্দু অধ্যাত্মবাদ এবং দমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের নব ভাবনা-_ব্িটিশ 
ও মাফিন রাষ্ট্রাদর্শের মধ্যে গণতঙ্ত্রেরে যে ধারণ। ব্ূপায়িত দেখিতে পাওয়! 
যায় তাহা তে! বটেই, তাহা ছাড়! সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের ধারণাও 
ভারতীয় সমাজের উচু-নিচু সকল শ্তরেই ছড়াইয়া পড়িয়াছে। কিন্ত 
তাহার ফলে হিন্দুধর্মের সহিত োনোব্ধপ বিরোধ ঘটিবেও না, ঘট 
সম্ভবও নহে। শ্রীগ্রীয় ধর্ম-প্রতিষ্ঠটানগুলির সহিত হিন্দু-প্রতিষ্ঠানের ইহাই 
এক বড় পার্থক্য যে হিন্দুধ্মে ত্যাগের উপরেই বিশেষ জোর দেওয়। হয়। 
ষীণ্ড যদিও বলিয়! গিয়াছেন যে ধনীর পক্ষে স্বর্গে প্রবেশলাভ অপেক্ষা একটি ছুঁচের 
ছিদ্র দিয়! বরং উটের প্রবেশ ও নিক্রমণ সহজলাধ্য, তথাপি অল্প কয়েকটি ব্যতিক্রমের 
কথ! বাদ দিলে খ্রীগ্রীয় ধর্মপংস্থা ব! “চার্চের” ইতিহাস হইল তাহার বাণী উপেক্ষা 
করিয়! চলিবারই জলস্ত উদ্বাহরণ ! উপরস্ত ইহ-জাগতিক ব1 মত্ত্য ব্যাপারে লিপ্ত 
রাজনীতির ক্ষেত্রে শ্রীষ্টীয় “চার্চ” এতোবার এবং এমনই আক্রমণাত্বক ভাবে প্রবেশ 
করিয়াছে যে জ্রুশে যিনি আত্মদান করিয়াছিলেন, গ্যালিলি-র সেই শাস্ত মানুষটির 
জীবনাদর্শের সহিত শ্রীষ্টীয় চার্চের অল্লীতিকর বৈপরীত্যই প্রাধান্ত লাত করিয়াছে। 
মুরোপের জনচিত্ত কালক্রমে খ্রীষ্টধর্মের সহিত রাজশক্তি, ধনতন্র ও পাথিব শ্রশ্বর্য- 
সমারোছের অবিচ্ছেগ্ধ সংযোগের কথা মানিয়া লইয়াছে এবং পারজ্রিক নীতি- 
শিক্ষায় সে ধর্মের আস্তরিকত। সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করিয়াছে | কিন্ত ভারতবর্ষে 
ধনীর বিরুদ্ধে শ্রমিক আর যাহাই বলুক, সে একথ! কখনোই মনে করে না যে 
গেকুয়াধারী সন্াসীও ধনীর দালালমাত্রৎ অথব। তাহাকেও যে দালাল করিয়া 
তোলা! যায়, এ চিন্তা তাহার সন্দেহের অগোচর। তবে ভারতীয়ের! যেহেতু 
খুবই ধর্মভাবাপন্ন হ্থৃতরাং সে-দেশে সমাজতন্ত্র ও পাম্যবাদের প্রতিষ্ঠ। কখনোই 
সম্ভব নহে ভাবিয়। লওয়! নিরাপদ নহে । ভারতবর্ষে এনকল মতবাদ ব্যর্থ হইতে 
পারে, কিন্ত পূর্বোক্ত কারণেই নহে। ধধর্মভাবাপন্র কথাটাই অস্পষ্টতাদুষ্ট ঃ 
যদি ইহার অর্থ হয় আধ্যাত্বিক বোধ-সম্পন্ন, তাহা! হইলে স্ুনিশ্চিতভাবে 


১৪৪ রি 


সমলামযিক ভারতীয় চিন্তাধার! (অ) 


ভারতীয়ের তাহাই $ যদি এই অর্থ ধরাযায় যেবাহিরের কতকগুলি আনুষ্ঠানিক 
রূপকেই ভারতীয়ের] স্দঢ়ভাবে ধরিয়া! থাকিতে চাছিবে, তাহা হইলে কিন্ত 
প্রমাদ ঘটিবে। জাতিভেদ, অস্পৃশ্ঠত1 এবং ধনতন্ত্রবাদের যাবতীয় বহিরাচার 
রদ হইয়! যাইতে পারে, তাহার পরেও ভারতবাপীর পক্ষে আধ্যাত্বিকতার দাবি 
অক্ষুণ্ণ রাখিয়! চল! সম্ভব এবং পাশ্চাত্য সাম্যবাদের জড়বাদিত1 ভাবতীয়ের। 
অগ্রাহ্ করিতে পারে । পণ্ডিত জবাহরলাল নেহেরু তাহার “ভারত ও বিশ্ব 
সম্পিত আলোচনায় অর্থগর্ভ এক গুরু সত্যের সংকেত দিয়াছেন--ভারত তাহায় 
নূতন নূতন সমস্ত সমাধানের প্রয়াসে সোভিয়েট রুশের নব্য সভ্যতার দিকে 
ঝুঁকিতে পারে বটে, কিন্ত নিজস্ব পথে, ভারতবর্ষের জনচিত্তের উপযোগী রীতিতেই 
তাহাকে সে কাজ করিতে হুইবে। হিন্দুর অধ্যাত্ম-প্রকৃতির স্থিতিস্বাপকতার 
সত্যই ইহাতে পুনরায় অভিব্যক্ত হইতেছে । 


৪ দর্শঅচিভ্ভ।র বিভিষ্ন ধার 


ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে পুর্বোক্ত বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে ভারতবর্ষে 
শাস্ত্রাহগামী ও শাস্ত্র-নিরপেক্ষ সমকালীন সকল শ্রেণীর দার্শনিক-সমাজে বিশেষ 
উৎসাহজনক পরিবেশের ধারণ। জাগিয়াছে। তথাপি ইহা বল! সঙ্গত হইবে ন৷ 
যে ভারতীয় দার্শনিকদের মধ্যে সকলেই সমস্ত ধারার দ্বার1 প্রভাবিত হইয়াছেন । 
বাহার! এই সকল প্রবাহের শক্তি অনুভব করিতে পারিয়াছেন, তাহারাও সকল 
দিকে তাহাদের মনন সম্পূর্ণ করিয়া তুলিতে পারেন নাই। কিন্তু আশার কথা 
এই যে, ভারতবর্ষের দার্শনিকবৃন্দের নিকট নুতন যে সকল দায়িত্ব সমাধান কামন! 
করিতেছে, অনেকেই সে-বিষয়ে ক্রমে ক্রমে সচেতন হুইয়। উঠিতেছেন। 

রবীজ্জনাথের দ্রার্শনিক ধারণ।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন কবি, তিনি ঠিক 
পেশাদার দার্শনিক নহেন। কিন্ত তাহার কোনে! কোনে! গ্রন্থে তিনি অগৎ সম্বন্ধে 
এক সামগ্রিক সংগতির ধারণ! প্রকাশের চেষ্টা করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথ 
একতত্ববাদী, তবে তিনি জগতের সত্যতাও অস্বীকার করেন না। অধিকাংশ 
সমকালীন ভাবুকের ম্যায় তিনিও জগৎ সম্বন্ধে নেতিবাদী মনোভাবের বিরোধী 
এবং অদ্বৈতবাদের লোক প্রচলিত কোন-কোন ব্ূপভেদে জগৎ মায়ার স্যষ্টি বলিয়া 
যে ধারণ! লালিত হইতে দেখ যায়, তিনি তাহাতেও বিশ্বাসী নহেন | তিনি 
বিশ্বাস করেন যে স্ষ্টির মধ্যে অষ্টা পরমেশ্বর আত্মপ্রকাশ করিয়াছেন । অতএব 
জগতের আপাতপ্রতীয়মান লর্বপ্রকার সংঘাত ও ধ্বংসরূপের অন্তরালে ঈশবনের 


১৪৬ 
১৪ 


প্রাচা ও গপাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


সজনী ক্রিয়ার যে সৌন্দর্য ও সৌবম্য বিদ্যমান বথার্থ অস্তপৃষ্টির গুণেই তাহা 
উপলব্ধি করা! যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেন যে জগৎ মায় হইতেও পারে, কিন্ধ তাহ! 
ঈশ্বরেরই শ্হ্ি। তাহা ভগবানের শিল্পরচন1, ভগবানই তাহার শিল্পী । পটের 
উপর যে ছবিটি অঙ্কিত হইয়াছে, আমর1 সেই চিত্রমায়ারই অস্ভ্রাগী, শূন্ পটে 
আমাদের স্পৃহা! নাই । 

রবীন্দ্রনাথ যদিও স্বীকার করেন যে তর্কের সাহায্যে নৈর্যক্তিক পরম ব্রহ্গা 
অপ্রমাণিত হইতে পারে ন1, তথাপি এই প্রপঞ্চ জগতেরই অস্তভূর্ত ধর্ষের ক্ষেত্রে 
বাস্তবতত্ব ব1! “রিয়ালিটি”-কে পরম পুরুষ ব্ূপে কল্পন! করিয়। লইলেই তাহ! 
সর্বাধিক বোধগম্য হয় বলিয়া! তাহার ধারণা । রবীন্দ্রনাথের পরমবাদ সেই 
কারণেই ব্যক্তিবাদাত্বক | সসীম সম্ভার অধিকারী হইয়া নৈর্যক্তিক পরমকে 
আমর! বুঝিতে পারি না; কারণ, ললীমতা ও নির্দিষ্টতাই হইল আমাদের মননের 
ব্বভাব,_অনস্তের উপর মন আপনার শীম! আরোপ করিয়! থাকে, এবং “অসীমের 
মধ্যে শীমা রচনার নাম ব্ক্তিত্বঃ ভগবান যখন স্ষষ্টিকর্তী তখন তিনি 
ব্যক্তিত্বময় 1, 

পরম পুরুষ হইলেন সকল বিধানের বিধান । যাহাকে আমর! বিধি-নিয়মাদি 
বঙ্গিয়! থাকি, সেগুলি হইল বহুত্বের মধ্যে তাহারই একত্বের প্রতিচ্ছায়।। স্বুতরাং 
ব্যক্তি যদি সেই পরম পুরুষের নিকট তাহার ব্যক্তিবোধ সমর্পণ করিয়। তাহারই 
সহিত একাত্মতা লাভ করে, তাহা হইলে সে-অবস্থায় এই সকল আইন তাহার 
ব্যক্তিত্বের ক্রিয়াকর্ম সংকুচিত করিতেছে অথব। স্বাধীনত! খর্ব করিতেছে বলিয়। 
মনে হইবে না। এবং তাহার সহিত একাত্মতা লাভের অর্থ হইল প্রেমের প্রেরণায় 
তাহাতেই আত্মসমর্পণ,*_তাহার মধ্যেই আত্মহার!1 হইয়1 যাওয়!। প্রেমই সত্য । 
জ্ঞানের রাজ্যে জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তর মধ্যে ব্যবধান থাকিয়াই যায়ঃ কিন্ত প্রেমে 
সে ব্যবধান দুর হয়। ূ 

ডক্টর ভগবান দাস এবং কাহার নএঃঘক তা'-ম্বীকৃতিসূুচক অদ্বৈতবাদ-_ 
ডক্টর ভগবান দাসের দার্শনিক চিস্তাতেও জগৎকে অস্তিত্বহীন ও মূল্যহীন নাস্তি- 
মাত্ররপে দেখিবার অনিচ্ছা! প্রকাশিত হইয়াছে । তিনি মনে করেন শঙ্করের 
অদ্বৈতচিস্ত] ক্রটিহীন নে, কারণ শঙ্কর “অহং, এবং “এতৎ+, এই ছুই বস্তর মধ্যে 
প্রথমটি স্বীকার করিয়াছেন এবং দ্বিতীয়টি অস্বীকার করিয়াছেন। কিদ্ধ একটিকে 
ছাড়িয়। অন্থটি থাকিতে পারে না। চরণ সত্যের ত্বভাবই এই যে তাহা ইহাদের 
উদ্ভয়কেই ছইটি ক্ষণ কূপে ধারণ রি কিন্তু “অহং” “এতৎ, নহে । অতএব 


১৪৬ 


সমসামরেক ভারতীয় চিস্তাধার। (অ) 


বাস্তবের প্রক্কতি সর্বাধিক ব্যক্ত করিতে গেলে বলিতে হয় 'অহম্‌ এতশ্ন*_ অর্থাৎ 
“আমি-ইছা-না”। 

“অহং? ও “এতৎ” অর্থাৎ 'আমি' ও “ইহা”-র সম্পর্ক হইল শক্তি অর্থাৎ নেতি। 
এই সম্পর্ক আবশ্যিক সংযোগের কারণ ইহা একই অবিভাজ্য পূর্ণের উপাদান 
নিচয়ের অস্তর্বঙা | 'আমি-__ইহা-না? এই তিনের সমবায়ে একটি ্রক্য গড়িয়! 
উঠিয়াছে, এখানে পরস্পর স্বাধান ও পৃথক তিনটি শব্দের সমাবেশ মাত্র ঘটে নাই। 
“এই আবশ্টিকতাই সকল বিধির বিধি কারণ ইহা পরিবর্তনহীন, কালহীন, 
প্রসারহান (অর্থাৎ অপরিবর্ত ও স্কান-কালের অতিশায়ী ) পরমের প্রকতিজাত) 
সকল বিধি-বিধান ইহা! হইতেই নিঃস্যত হয় এবং ইহাতেই লীন থাকে ।” ভরক্টর 
ভগবান দাস এই শক্তিকে “মায়া” নামে অভিহিত করিয়াছেন এবং শঙ্কর যেমন 
অস্তিও নহে নাস্তিও নহে বূপে ইহার ব্যাখ্যা করিয়াছেন, সেভাবে না দেখিয়। 
ইহাকে তিনি অস্তি ও নাত্তির সমবায় দ্ধূপে দেখিয়াছেন। দার্শনিক তত্বের 
ব্যাখ্যাত। অপেক্ষা! সামাজিক সমস্যার আলোচক হিসাবেই তিনি অধিক পরিচিত। 
(তমি মনে করেন যে দর্শনশাস্ত্র ব্যবহারিক জীবনের পক্ষে উপযোগী হওয়! আবশ্যক 
এবং তাহ ব্যক্তির ও মানব-সমাজের সহায়ক হওয়া দরকার । “রিপাবৃলিক” 
গ্রন্থে প্লেটে। যেমন চিত্তবৃত্তি বিভাগের স্তর ঘোষণ1 করিয়াছেন, সেই ধারাতেই 
তিনি তাহার রচনাবলীর মধ্যে জাতিতত্বের আলোচন! করিয়াছেন । 

শ্রীযুক্ত জে, কৃঝ্মূতি-_ একদা থিওজোফিক্যাল সোসাইটির কেন্ত্রীয় 
ব্যক্তিদ্রিগের অন্ততম বলিয়! পরিচিত শ্রীযুক্ত কৃষ্ণমুতি কোন শাস্ত্রধারালন্ধ বা 
বিধিবদ্ধ দার্শনিক চিস্তার প্রতি আহ্গত্য দাবি করেন না। হিন্দুর সাধনার এই 
নীতিরই তিনি প্রচারক যে মানুষকে তাহার নিজের চরিতার্থতার জঙ্চ আত্ম- 
সাধনার উপরেই নির্ভর করিতে হয়, অন্য কাহারও মধ্যস্থত| মানিয়| জীবনের বন্ধন 
মোচন করা যায় না। গুরুর প্রতি নির্ভর, আচার-পালন অথব। প্রথাবিশেষের 
আম্ুগত্য, এই সকলের কোনোটিই মানুষকে সাহায্য করিবে না। আধ্যাত্মিক 
সত্য মানুষের সত্তার গভীরে নিহিত; তাহা! উপলব্ধি করিতে হইলে ব্যক্তিগত 
সাধন ও প্রয়াসের দ্বারাই অগ্রসর হইতে হইবে । 

বাস্তবতত্ত বা “রিয়ালিটি” হইল আপন প্রবাহে প্রবহমান বিশুদ্ধ ও অবিমিশ্র 
প্রাণ। অজ্ঞতার দ্বার। তাহারই মধ্যে আমাদের ব্যক্তিত্বের ধারণ] স্ষ্ট হয়। 
সেই অজ্ঞতা অপসারিত হইলে ব্যক্তি বিশুদ্ধ প্রাণের সাযুজ্য লাভ করে এবং 
তাহার সংগ্রামের অবসান হয়। প্রকৃতির নিম্ব-স্তরের প্রকারভেদের যধ্যে অজ্ঞান 


১৪৭ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাঁল 


পরমোতকর্ষের রাজ্য পার হইয়! প্রাণ ক্রমশ “অহং-এর সজ্ঞান পরমোৎকর্ধে 
অগ্রসর হইয়। থাকে । আমাদের অজ্ঞতাবশতঃই আমরা সত্য ব। ঈশ্বরকে 
আমাদের শ্ব-ক্ষেত্র হইতে দূরবর্তা বলিয়া! মনে করি । 

এই প্রাণ দ্বৈততা-বজিত এবং মানুষের পক্ষে ইহার সহিত একা লাভ করাই 
স্বাভাবিক । নদী যেমন সমুদ্রে গিয়! মিলিত হয়ঃ ব্যক্তিও সেইব্বপ সত্যের অভিমুখে 
নিজের করিয়া লইবে। কেবল তাহাই নহে, শেষ পর্যস্ত মানুষ যাহাতে নিজ নিজ 
ব্যক্তিত্বের খণ্ডতাবোধ অসীমে মিলাইতে পারে, প্রক্কৃতি নিজেই সে-বিষয়ে সজাগ 
রহিয়াছেন এবং সেই কারণেই ইহা অবধারিত বল যাইতে পারে যে মোক্ষ অর্থাৎ 
চরিতার্থতা-লাভ আমাদের পূর্বনির্ধারিত রিধিলিপি। 

ব্যক্তিত্বের এই প্রাতিভাসিক “অহং" ব। 'আমিত্ব? যাহা “নাআমিত্বের বিপরীত, 
কুষ্চমুততির মতে তাহ] সেই আত্মজ্ঞান লাভের দ্বার অপসারিত করা যাইতে পারে 
যাহাতে আত্বচৈতন্তের ক্রমিক প্রখরতা-বৃদ্ধির ফলে পরিশেষে অহং-জ্ঞানই বিলুপ্ত 
হইয়! যায়। “ঠতন্ত আমিত্বেরই আশ্রত এবং যখন আমর] সেই চৈতন্ত হইতে 
মুক্তিলাভ করি, তখন অহংজ্ঞান হীন বাস্তব অর্থাৎ সত্যই থাকিয়] যায়।” 

অরবিন্দ ঘোষ-_অরবিন্দ ঘোষ কার্ধতঃ একজন যোগী ও অতীন্ট্রিয় মরমী 
সাধক। তিনি পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের বিবর্তনবাদ এবং জড় জগৎ সম্বন্ধে পাশ্চাত্য 
মতের দ্বার! বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত হইয়াছিলেন। তিনি অবশ্য এই উভয় মতই 
অত্বৈতবাদের শৈব ও শাক্ত প্রস্থানের মধ্যে খুঁজিয়া পাইয়াছিলেন। এই উভয় 
সম্প্রদায়ের প্রভাব ্রীঅরবিন্দের লাধন1! ও তাহার দার্শনিক মতবাদের মধ্যে 
পরিলক্ষিত হয় । তন্ত্রের মতে মায় অলীক ভ্রাস্তি নহে, ইহ! একটি সৎ পদার্থ, 
ইহ1 শিবের শক্তি। এই শক্তির সাহায্যেই জগতের আবির্ভাব ঘটিয়৷ থাকে, 
অবশ্য ইহ1 শিবের শুদ্ধ সত্তা কিছুমাত্র ক্ষুপ্ন করে না। শ্ীঅরবিন্দ শ্রীমত্তগবদৃগীতার 
নিজন্ব ব্যাখ্য1 দিয়াছেন। তাহার মতে যোগের উদ্দেশ্য হইল সণ্চদানন্দ ব্র্গের 
শক্তিকে আহরণ করিয়। তাহাকে এই জগতে ভাবগত জীবনের প্রতিষ্ঠার জন্য 
প্রয়োগ করা। যেহেতু জীব ও শিব মূলতঃ অভিন্ন সেইজন্য ভাগবত জীবন 
এইভাবে প্রতিষ্ঠা কর! জীবের পক্ষে সম্ভব। এই জগৎ সত্য এবং ইহ] শক্তির 
পরিণাম। শক্তি হইতে যেমন জড়ের আবির্ভাব ঘটিয়! থাকে তেমনি জড়ও 
শক্তির মধ্যে অন্বস্থ্যত থাকে । এই পরিণাম চক্রাকারে ঘটে। এই বিষয়ে 
্রীমরবিন্দ বিবর্তনবাদের আধুনিক ভাষ্য গ্রহণ করিয়াছেন__যে মত অহ্সারে জড় 
হইতে প্রাণ ও মনের আবির্ভাব ঘটিয়! থাকে । আগ্ন যেমন তাহার দাহিক। শক্তি 


১6৮ 


সমসামরিক ভারতীয় চিন্তাধারা (অ) 


হইতে অভিন্নঃ তেমনি শক্তি শিব বা ব্রঙ্গ হইতে অভিন্ন এবং এই জন্তই শক্কিও 
শিবের সায় চেতন । মুল বিবর্তনের বিপরীত গতি হুইল পরবর্তা ঘটনার 
পৃর্ববর্তা ঘটনায় অবস্থিতি। বস্তত, এক দিক হইতে দেখিলে জড় শক্তির মধ্যে 
স্থপ্ত অবস্থায় আছে, অপর দিক হইতে বিচার করিলে প্রাণ ও মন জড় হইতেই 
উদ্ভৃত হুইয়াছে। জড় প্রাণের উচ্চতর অবস্থায় ব্বপাস্তরিত হয়, প্রাণ আবার মন 
ও চৈতন্তে ন্নাপাস্তরিত হয় । এখানে যে মনের কথা বলা! হইলক্ছতাহা জীব-মন । 
ইহার উপরে তিন প্রকার উচ্চস্তরের মন আছে, উচ্চ-মন (০5৪: 70158 ), মহা-মন 
(৪9199710100 ) এবং সর্বোচ্চ উপলন্ধ আদর্শ সচ্চিদানন্দ । এই উপলক্ষ যে 
মানুষের আয়ত্তাধীন তিনি ম্বয়ং শিবের একরূপত1 লাভ করেন এবং এই উপলব্ধিই 
শিবের শক্তি এবং সেই মাহ্ুষ তখন মহামানব । নিট্পের মহামানবের অসদৃশ 
এই মহামানব কিন্ত অহংবাদী স্বপ্রচারক ব! পূর্ব পাক্ষিক নহেন, তিনি শিবের 
নিকট নিজের অহংকার সমর্পণ করিয়1 সচ্চিনানন্দ ব্রদ্ষের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে 
নিমজ্জিত হইয়াছেন। তিনি নিজেই নিজের পরিচালক এবং জগতের সম্মুখে 
নিজের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে ঘোষণ৷ করিবার জন্তে সচেষ্ট নহেন। 

অধ্যাপক কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টা চার্য__অধ্যাপক কৃষ্ণচন্দ্র তট্টাচার্ষ পূর্ণ অদ্বৈত্যবাদকে 
সমর্থন করেন। তিনি শংকরের মতবাদের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করিবার চেষ্টা না 
করিয়। কাণ্টের দর্শনের আলোকে নুতনপথে ইহার সত্য প্রতিপাদনের চেষ্ট! 
করিয়াছেন। তিনি অবশ্য 17988 ০? 928০7 সম্পকিত কাণ্টের অজ্ঞাবাদ 
সম্পূর্ণনূপে মানিয়! লইতে পারেন নাই। কান্টের মতাহ্থসারে বোধের কোন 
শ্রেণীগত টবশিষ্ট্যই ইহাদের অন্তনিহিত বস্তস্বর্ূপ সম্পর্কে সত্য নহে এবং সেইজন্য 
ইহার। জ্ঞানের অতীত । এই অবস্থায় শ্রাভট্টাচার্য ও কাণ্টের মত অভিন্ন এবং 
ব্রাহ্মণকে অব্যক্ত ও অচিস্ত্য কিন্ত তবুও বোধগমারূপে ব্যাখ্যাতা উপনিষদের উপর 
আস্থাব্যঞ্ক । 

স্বল্লাপরিসরে ভাহাঁর জটিল যুক্তিসমূহকে ব্যাখ্যা কর শক্ত, তবে যেহেতু 
সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম পর্যন্ত প্রত্যেক পদার্থকে আমর কথায় প্রকাশ করিয়। থাকি 
অতএব সমস্ত কিছুই বাচ্য, ইহাই মৃূলকথ! বলিয়া মনে হয়। বাচ্য ছুইপ্রকারের 
প্রতীক-ব্ূপ-বাচ্য এবং আক্ষরিক-ক্ষপ-বাচ্য । যাহ! তথ্য প্রকাশ করে এবং যাহার 
সম্বন্ধে কেবল বলা হয় তাহারাই আক্ষরিক-বূপ-বাচ্যের অস্তভূক্ত যাহার উল্লেখমান্ত্ 
কর] হয় তাহা নহে। ইহাদের মধ্যে যাহার সম্বন্ধে কেবল বল! হয় তাহ 
প্রতীকাহ্থলারে অথব] অর্থ'হুারে বল] হইয়া থাকে । সত্য কেবলমাত্র প্রতীকের 


১৪৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সাহাঁধো বল] হয়, বাস্তব প্রতীকান্সারে আক্ষরিকর্ধপে বলা হয় এবং আত্মনির্ভর 
অস্তিত্ব (811-99)918690% ) অর্থান্থসারে আক্ষরিকরূপে বলা হইয়! থাকে । 
“ইহাদের মধ্যে কোনটিই তথ্য হিসাবে বলা হয় না, প্ররুত ঘটনাই তথ্য হিসাবে 
বল! হইয়া থাকে ।” এইভাবে আমর1 বক্তব্যের চারিটি বিষয় পাই, সত্য, বাস্তব, 
আত্বনির্ভর অন্তিতব ( 9911-8705196506 ) এবং প্রকৃত ঘটনা । সত্য ও বাস্তবের 
পার্থকা এই যে ক্ষিতীয়টি উপভোগ্য, প্রথমটি নহে। 

রাধাকৃষ্ণণ ও অথণ্ড ভূয়োদর্শনজাত অদ্বৈত__তিনি শংকরের মতবাদ 
মানিয়া চলিলেও শংকরের অধিকাংশ এ্রতহিক শিষ্যের মত জগত তাহার নিকট 
অলীক ভ্রাস্তিকূপে প্রতীয়মান হয় না। তিনি মায়াকে ব্যাখ্যালন্-কল্পন! হিসাবে 
মনে করেন। ইহার অর্থ এই যে জগতের স্ষ্টি ব্যাখ্যার অতীত কিস্তু জগত 
যূল্যহীন এবং প্রয়োজনশৃন্ত নহে । তিনি ইহার অপেক্ষা বরং অধিকাংশ পরবর্তাঁ- 
কালের যুক্তিবাদী অদ্বৈত ব্যাখ্যাতাদের মত সৎ এবং অ-সৎএর বিদ্যযানতা 
অন্বীকার না করিয়া! জগতকে সৎ এবং অ-সৎ, অর্থাৎ অস্তিত্ব ও অস্তিত্বশূন্ঠের 
সংযুক্তি বলিয়া মনে করেন। শংকর নিজে এক জায়গায় বাহাব্পকে সত্য ও 
অ-সত্যের মিশ্রণ বলিয়াছেন এবং এই দিক দিয়া রাধাকুষ্ণণ তাহাকে গ্রহণ 
করিয়াছেন একথ]1 বল যায় । 

ংকর উল্লিখিত ব্রা্গণ হইতেছেন সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম এবং রামাহৃজ বণিত 
ব্রা্ষণ হইতেছেন ঈশ্বর এই যুক্তির উপর ভিত্তি করিয়! রাধাকৃষ্জণ শংকর ও 
রামাহজের মতের সমন্বয় সাধন করিয়াছেন। ঈশ্বর বুদ্ধিত্বার1 প্রাপ্য বস্তু কিন্ত 
সচ্চিদানন্দ ব্রন্দকে জানিতে হয় সঙ্ঞ! দ্বারা । সঙ্ঞ! বুদ্ধি অপেক্ষা! উচ্চস্তরের বস্ত 
এবং ইহা! মন ও বস্ত এই দ্বেতবাদের উর্ধে অবস্থিত। আমাদের চিস্তাশক্তি 
সীমিত এবং ইহ! যখন হুম্যুক্তি সাপেক্ষ সচ্চিদানন্দ ব্রহ্কে উপলব্ধি করিতে চেষ্টা 
করে তখন ইহ! নিজন্ব সীমাবদ্ধত। ব্রন্মের উপর আরোপ করিয় ফেলে । এ 
অবস্থায় চিন্তার ভিত্তিতে বিচার করিয়! ঈশ্বরকে সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম হইতে অভিন্ন 
মনে করিলে আত্ম! ও অন্যান্য পদার্থের বিভেদকে সুপ্ত কর] সম্ভব হয় না। কিন্ত 
সেই সঙ্ঞ1 যাহ! চিন্তা ও উপলন্ধি অপেক্ষা অধিকতর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফল এবং 
যাহ। স্থলতর যুক্তি সাপেক্ষ তাহ দ্বার! এই বিভেদ অতিক্রান্ত হইয়াছে । 

রাধারুঞ্ণ যুগপৎ সর্বমুক্তিতে বিশ্বাস করেন কিন্তু তিনি প্রত্যেক-মুক্তিতে 
আস্থাবান নহেন। এই সব কিন্ত অদ্বৈতের নিকট নৃতন কিছু নহে এবং বাচম্পতির 
অন্ততম অবর সমধর্মী দার্শনিক গোষ্ঠী দ্বার সমথিত 'হইয়াছে। যেহেতু ঈশ্বর 


১৫৩ 


সমসামক্সিক ভারতীয় চিস্তাধার! (অ) 


জগতের শ্রষ্টাী অতএব ঈশ্বরকে জগতের অস্তিত্বকাল পর্যস্ত সচ্চিদানন্দ ব্রন্দের সহিত 
একত্বপ্রাপ্ত ন1 হইয়] ঈশ্বরন্ধপেই থাকিতে হইবে । যতক্ষণ পর্যস্ত ঈশ্বর সচ্চিদাণন্দ 
ব্রহ্মের মধ্যে প্রবেশ না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বর স্থষ্ট জীবকে ঈশ্বরের সহিত 
অবস্থান করিতেই হইবে । যতদ্দিন একটিমাত্র অ-যুক্ত আত্মাও বর্তমান থাকিবে 
ততদিন জগতে অস্তছিত হইতে পারে না। স্থতরাং একক মুক্তি কেবলমান্দ্ 
অসম্পূর্ণ মুক্তির নামাস্তর এবং সেই সমস্ত আত্মা ধাহার পরম সত্যকে উপলব্ধি 
করিতে সক্ষম হইয়াছেন তাহার] ঈশ্বরের সহিত জগতের শেষে পরিণতি পর্যস্ত 
অবস্থান করিবেন । রাধাকুফ্ণণ একজন 10791109719, প্রকৃতপক্ষে ৪০1006 10200 ০1 
201101870 শেষ পর্যস্ত অপরিহার্য কারণ ঈশ্বর কোন বিশেষ ক্ষমতা বা কোন 
অলৌকিক ঘটন! দ্বার! পৃথিবীর উন্নতি সাধন বরিবেন এবং মাহ্গষ কেবলমাত্র 
দর্শক হিসাবে উপস্থিত থাকিবে একপ কল্পন! করা অযৌক্তিক । ঈশ্বর মাহুষ, 
তাহার স্থ্ট ত্রাসপী এবং চিস্তা ও কর্মে ধাহার। মানবজগতের আদর্শ তাহাদের 
মধ্য দিয়াই নিজেরে কার্য করিয়! যান। হিন্দু অবতারবাদের মধ্যে এই সত্যই 
নিহিত কারণ প্রকৃত পক্ষে সেই সমস্ত মাহুবই ইশ্বরের অমৃতস্পর্শের অধিকারী । 


টাকা 
আগুারহীল £ কন্টেমপোরারী থট অব ইত্ডিয়?, পৃ ২০৬; পৃ ২০৯। 


গ্রন্থ-বিবরলী 


ফারুকৃহার £ মর্ডান রিলিজিয়স মুভমেণ্টস ইন ইপ্ডিয়]। 

আগ্ডারউড £ কন্টেমপোরারী ইগ্ডিয়ান থট্‌। 

শর্ম।ঃ ভি. এস £ হিন্দু রেমেশ1। 

রাধাকৃষ্ণণ ও মুরহেড £ কণ্টেমপোরারী ইগ্ডিয়ান ফিলসফি। 

দত্ত. ভি. এম £ “দি কন্টিবিউসন অফ মর্ডান ইগ্ডয়ান ফিলসফি টু ওয়ান্ড 
ফিললফি” দ্রি ফিলসফিকাল রিভিয়ুঃ নভেম্বর; ১৯৪৮ | 

রাজু. পি. টিং প্রিসার্চ ইন ইন্ডিয়ান ফিলসফি : এ রিভিয়ু” জার্নাল অফ দি 
গঙ্গালাথ ঝ1 ওরিয়াপ্টাল রিসার্চ ইন্সটিউট, ভলুম ১, পার্ট ২, ৩, ৪ | 

রাজু.? পি.টি £ “ইগডয়ান ফিলসফি £ এ সার্ভে” প্রোগরেস অফ ইণ্ডিক স্টাভিজ। 

রাজু. পি. টিঃ “দি আইডিয়ালিজম অফ মহাত্মা গান্ধী” দি ষতারতী 
কোর়্াটালি, জাহুয়ারী, ১৯৪১। 1, 


১৬১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


রাজু পি.টি; “দি আইডিয়ালিজম অফ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” দি বিশ্বভারতী 
কোয়াটালি, জাহুয়ারী, ১৯৪০। 

রাভু., পি.টিঃ দি আইভিয়ালিজম অফ ডঃ ভগবান দাস” দি হিন্দুস্ান 
রিভিয়ূ, ১৯৪০ | 

রাভু-, পি. টিঃ পণদি আইভিয়ালিজম অফ স্তার এস. রাধাককষণ* দি ক্যালকাটা 
রিতিয়ু, আগ ১৯৪০ । 

রাজু পি. টি£ প্দি আইডিয়ালিজম অফ জেং ক্ৃষ্ণমৃন্তি” জ্রিবেণী, নভেম্বর, 
ডিসেম্বর, ১৯৪০ | 

রাজু., পি. টি ঃ “দি আইডিয়ালিজম অফ শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ” দি অন্তর ইউনিভাপসিটি 
কলেজ ম্যাগাজিন, অক্টোবর ১৯৪০ । 

এগু,জ, সি. এফ £ মহাত্! গান্ধী আইডিয়াল । 

হেবর, লিলি : কৃষ্মূর্তি এণ্ড দি ওয়ান্ড+ক্রাইসিস। 

ঠাকুর £ সাধন|। 

ঠাকুর £ পার্পোনালিটি। 

ঠাকুর £ দিরিলিজন অফ ম্যান। 

দ্রাস, ডঃ ভগবান £ দি সায়েন্স অফ পীল। 

ঘোষ, অরবিন্দ £ লাইফ ডিভাইন। 

ভট্টাচার্য, কে. সি: দি সবজেই এজ ফ্রিডম । 

রাধাকফ্ণ £ দি আইভডিয়ালিস্ট ভিউ অফ লাইফ । 

রাধাকষ্ণণ £ ইগডিয়ান ফিলসফি। 

জোড, দি. ই. এম £ কাউন্টার আাটাক ক্রম দি ইষ্ট । 

লেডবিটার £ টেক্সট বুক অফ থিওসফি। 

হেলার £ দি গসপেল অফ সাধু সুন্দর সিং। 


১২ 


সমসাময়িক ভারতীয় চিন্তাধারা (আ) 
॥ এক ॥ 


সমসাময়িক ভারতবর্ষের কোন নিদি জন্মকাল নির্ধারণ কর1 ল্ভবপর ন! 
হইলেও আমরা আওরংজেবের মৃত্যুর অর্ধশতান্ধী পর হইতে ইহার জন্মলক্ষণ 
অন্ুধাবণ করিতে পারি। এই সময়ে ইউরোপীয় রাজনৈতিক প্রভাবের ক্রমশঃ 
বিস্তার লাভ এবং সমাস্তরাল ভাবে ভারতীয় ক্ষুদ্র নৃপতিবর্গের শক্তির ক্ষয়িফুন্ূপও 
ৃষ্ট হইয়াছিল। ভ[৪:৫০দ৪9-এর যুদ্ধের অনুরূপ পাণিপথের চুড়াস্ত যুদ্ধও একই 
বৎসরে সংঘটিত হইয়াছিল। ইহাদের মধ্যে ভারতীয় উপ-মহাদেশে রাজনৈতিক 
কার্যকলাপের ভবিষ্যৎ পথও নির্ধারিত হইয়1 গিয়াছিল । 

কীভাবে এই সমস্ত আলোড়নপুর্ণ দিনের পরম্পরবিরুদ্ধতা ও অসম মতবাদ 
মুসলমান সমাজের নবজন্ম আনয়নের জন্ত পুরাতন ও নৃতনের সমহ্বয় সাঁধনকারী 
শাহ ওয়াল্লিউল্লাহের অত্যু্থানের কারণ হুইয়াছিল, তাহা পূর্ববর্তী কোন অধ্যায়ে 
নির্দেশিত হইয়াছে । তাহার দ্বার] প্রোথিত বীজ তাহার জীবদ্বশাতেই পরিণতি- 
লাভ করিলেও তাহার প্রভাব তাহার মৃত্যুর পর আরও বিস্তৃতিলাভ করিয়াছিল। 
তাহার মৃত্যুর পর এক শতাবীর মধ্যে রায়-বেরিলীর মোলবী সৈয়দ আহমদ 
এবং দিল্লীর মোলবী মোহম্মদ ইসমাইলের নেতৃত্বে তাহার শিক্ষা এক সক্রিয় 
আন্দোলনের ন্ধপ গ্রহণ করিয়া ফলপ্রস্থ হইয়াছিল। সৈয়দ আহমদ শাহ 
ওয়াল্লিউল্লাহের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহ আবছুল কাদেরের শিধ্য ছিলেন। সত্যকার 
এপলামিক ভিত্তিতে এক আধুনিক রাধ গঠন করিয়া ইসলামের মূলনীতির পুনঃ 
প্রবর্তন করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। সৈয়দ আহমদ তাহার বদ্ধু ও 
তাহার প্রতি শ্রদ্ধাবান, অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ও ন্ববক্ত1 মোলবী মহম্মদ 
ইসমাইলের সহযোগিতায় এই আন্দোলন সংগঠনের জন্ত ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম 
অংশে মুসলমান-প্রধান স্থান নির্বাচন করেন। এই স্থানের ভৌগলিক ও 
রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রাথমিক সাফল্যকে অধিকতর সম্ভাবনাপুর্ণ করিয়! তুলিয়াছিল 
এবং সমগ্র উত্তর ভারতে এক শক্তিশালী মুসলমান দল তাহার পতাকাতলে 
একত্রিত হইয়াছিল। 

এই আন্দোলনকে সংকীর্ণমন] ব্রহ্ষবিদ্ভাগত গোঁড়ামির পুনঃপ্রবর্তনের চেষ্টা 
হিসাবে বিচার করা অন্তায়। এই আন্দোলনের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য শহীদ 


১৪৫৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিহাস 


(2এগাটহ) শাহ ইসমাইল ইহার প্রবর্তক শাহ ওয়াল্লিউল্লাহ-এর মত একজন 
যথার্থ দার্শনিক এবং উদ্বারচেত। ধামিক চিস্তানায়ক ছিলেন । তিনিও বিভিন্ন 
প্রকার ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে এঁক্য আছে ইহ1 বিশ্বাস করতেন এবং এই দৃঢ় বিশ্বাসের 
ভিত্তিতে উক্তি করিয়াছেন যে সমস্ত মহান ধর্ষের উৎস হইতেছে একই টৈব 
প্রেরণ । ব্ূপগত এবং অহৃষ্ঠানগত পার্থক্য তাহাদের আছে কিন্ত তাহ! হইতেছে 
তাহাদের বাহক আবরণ মাত্র, যাহাকে দেশকালের প্রয়োজনে সময়াস্তরে 
পরিবঠ্তিত হইতে হইয়াছে। 

শাহ, ইসমাইল তাহার দার্শনিকগ্রস্থ “আবাকতে? (৯৮৪৪৮) দৈবপুরুষ সিদ্দিক 
(7179 9199109 ) সম্পর্কে এইরূপ উক্তি করিয়াছেন ঃ তিনি যদি তোরাহে 
(1০29) ) বাইবেলের পূর্বভাগ বিশ্বাসস্থাপনকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে অবস্থান করেন 
এবং তিমি তাহাদের মধ্যে বিচারকের আসন গ্রহণ করিতে অন্ুরুদ্ধ হন তাহা! 
হইলে তিনি মোজেজ, কর্তৃক প্রণীত অন্রশাসন (7০৮৮ ০1 10593 ) অহ্সারে বিচার 
করিবেন এবং অন্ুব্দরপভাবে খুষ্টধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বাইবেলের অস্তভাগ (৪ 
[996900026 ) অনুসারে এবং কোরাণ-বিশ্বাপীদের মধ্যে কোরাণের সর্ত অনুপারে 
বিচার করিবেন। প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির এক বৃহৎ অংশ কতৃক অস্থস্থত 
প্রত্যেক মহান্‌ ধর্মেই এমন মানুষের সাক্ষাত পাওয়া যায় ধাহার। দৈবশক্কির 
(701%)06) সুরসাধন1 করিতেছেন । খৃষ্টান যাজক, ইহুদী শাস্ত্রব্যাখ্যাতা, গ্রীলীয় 
দার্শনিক, পারনিক জরাথুষ্ট প্রবতিত ধর্মাবলম্বী এবং হিন্দুযোগী প্রত্যেকের আনন্দ- 
স্বব্ধপ জীবন (7816 7315109) অভিসারী আধ্যাত্মিক পথের প্রকার ভেদ স্বস্বধর্মের 
মূলনীতির সীমানায় এক্য-নিধৃত হুইয়াছে। এই সমস্ত মহান্‌ ধর্মমত এ এক 
মূলনীতি হইতে উদ্ভৃত। উৎসে ইহাদের প্রত্যেকটিই ছিল বিশুদ্ধ কিন্ত কালাস্তরে 
ভ্রান্তমত এবং কুপ্রথ! ইহাদের উপরে বিদ্বেবপূর্ণ উপলেপ দিয়াছে । বিকৃত ব্যাখ্য। 
দ্বার! প্রত্যেকটি ধর্মই পরিবতিত ব্ধপ গ্রহণ করে এবং ধর্মাহথগামীদের নিকট সেই 
ধর্মমতের মুলীভূত নীতির উপলব্ধির পথ রুদ্ধ হইয়| যায়। পরবত্তাকালের উত্তর 
সাধকগণ মুলধর্মমতকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করে। এই সমস্ত বিকৃত 
বৃদ্ধিকে অপসারণ করিয়। ধর্মের মূল ন্ধপ এবং যথার্থ বাণীটিকে আবিষ্কার করিবার 
ক্ষমত] মহাজ্ঞানীদের থাকে । তিনি ধর্ধকে ইহার উত্তবকালীন পৰিপুর্ণ বিশুদ্ধতায় 
মূলনীতির আলোকে প্রত্যক্ষ করিতে পারেন কারণ তাহার আত্ম! সদাজাগ্রত |” 

এই আন্দোলনকে কলঙ্ক চিহ্নিত করিয়। ব্রিটিশ ইহাকে ওহাবি আন্দোলনের 
সমরূপ বলিয়া ঘোবণ। করিয়াছিল, কিন্ত ইহা ঠিক নহে । মৌলবী সৈয়দ আহমদ 


৯৪ 


সমসামরিক ভারতীর চিন্তাধার! (অ1) 


যদিও আরবদেশে গিয়াছিলেন এবং ওহাবি চিস্তাধারার সহিত সম্পূর্ণরূপে পরিচিত 
হইয়াছিলেন তথাপি তিনি নেজ দের (৭) মহম্মদ বিন্‌ আবছুল ওয়াহাব-এর 
অনুগামী শিষ্য ছিলেন না। ইহাতে পন্দেহ নাই যে ছুইজনের মূল লক্ষ্য প্রায় 
সমপর্যায়ভুক্ত | তাহার] উভয়েই ইসলাম-ধর্মীয় চিস্তা এবং নীতিকে বৈদেশিক 
প্রভাবম্পর্শ হইতে পবিজ্র রাখিতে চাহিয়াছিলেন এবং জগৎসমক্ষে সত্যকার 
রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ইসলামিক ধারণার পরিপূর্ণ রূপ উপস্থাপিত 
করিতে চেষ্ট! করিয়াছিলেন । দুইটি আন্দোলনের সাদৃশ্য এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের স্যরি 
করিয়াছিল যে ভারতীয় আন্দোলন ওহাবি প্রেরণার অঙ্গম্ব্ূপ। বাস্তবিকক্ধপে 
ইহ] একটি দেশজাত বস্তু এবং ইহার মূল ভিত্তি স্বাপিত হইয়াছিল দিল্লির শাহ্‌, 
ওয়ালিউল্লাহের মতবাদের উপরে, নেজদের মোহম্মদ বিন আবছুল ওয়াহাবের 
মতবাদের উপরে নহে । শাহ. ওযালিউল্লাহের মতবাদ এবং মৌলবী পৈয়দ 
আহমদের সহিত বাহার] তাহার নিকট হইতে প্রত্যক্ষভাবে প্রেরণালাভ করিয়া- 
ছিলেন তাহাদের সহিত তাহার সদ্বন্ধ সম্পর্কে সাধারণের অজ্ঞতা এই ভ্রাস্তির 
আংশিক কারণবিশেষ। 

এই ওষযালিইউল্লাহ আন্দোলন যাহা আজও চিস্তাবিদৃ, বিপ্লবী এবং বিশিষ্ট 
ব্রহ্ষ-বছ্যাবিদূদের জন্মদান করিতেছে তাহা কোনও সামগ্রিক উন্নয়ন ব! বিপ্লবের 
চেষ্টায় কৃতকার্য হয় নাই কিন্ত এমন এক স্থুপ্ত শক্তির স্থজন করিয়াছে যাহ! 
বর্তমানকালের ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে আংশিকভারে কার্যকী 
হইতেছে । পরলোকগত মৌলানা ওবাহিছুল্লাহ, সিন্ধ (১৮৮১-১৯৪৮) জন্মলাভ 
করিয়! এই দৃঢ় বিশ্বাণে কাজ করিয়|! গিয়াছেন যে এই মতবাদ যদি যথার্থন্ধপে 
উপলব্ধি কর যায় তাহ] হইলে ইহ। এক বেপ্রনবিক রাষ্ট্র সমাজের ্ষ্টি করিতে 
পারে । এইন্ধপ সমাজ সমস্ত প্রধান সংস্কৃতির উত্তরকালীন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়সাধন 
কণ্রতে পারে এবং প্রত্যেকটি মাঙ্গবকে তাহার নিজস্ব বিশেষ দক্ষত1 অনুসারে 
উন্নত হইবার স্বাধীনতা দান করিতে পারে । জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিভেদের 
মধ্যে এঁক্যই হইতেছে নিষম এবং ইহাই বিভিন্ন জাতি এবং ধর্মের আন্তর্জাতিকতা- 
বাদের ভিত্তি হওয়] বাঞ্ছনীয় । ঈশ্বর মানবজাতির বৈশিশ্ট্যহীন একরপত্ব চাহেন 
না। ভিন্ন সংস্কৃতি এবং পর-ধর্ম-অসহিষণণত1 অজ্ঞতার পরিচায়ক । সংকীর্ণমন] 
ধামিক মানুষ নিঃসন্দেহে অস্তিত্বহীন । 


১৪৬৫ 


॥ দুই ॥ 


মুসলিষ জীবনধার] ও মননের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্টে পরিচালিত নব পর্যায়ের 
কোন আন্দোলনকে অনুধাবন করিতে হইলে আমাদের সেই ১৮৫৭ থুষ্টাঝেই 
প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে যখন ভগ্রপ্রায় রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নিঃশেষে ভূমিসাৎ করিয়! 
সিপাহী-বিদ্রোহ মুসলমান আধিপত্য ও প্রভাবের উপর মৃত্যুশেল বর্ষণ করিল। 
সর্বপ্লাবী জয়শীল নবীন শক্তিটির আবির্ভাব হইয়াছিল সাত সমুদ্রের পার হইতে। 
রাজ রামমোহন রায় এবং স্যার সৈয়দ আহম্মদ খানের মত মহান্‌ মনীষী এবং 
সংস্কারকগণ অবিলম্বেই উপলব্ধি করিতে পারিলেন যে, ইহ একটি সাধারণ 
সামরিক বিজয়-ঘটনামাত্র নয়, জ্ঞানের উৎ্কর্ষেই প্রাচ্যের উপর পাশ্চাত্ত্য তাহার 
আধিপত্য বিস্তার করিয়। ফেলিয়াছে। বিদেশীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অনুষ্ঠান এবং 
বিদ্বেষ প্রচারের নিক্ষল প্রয়াসের পরিবর্তে বিজ্ঞতর পন্থ। হইবে আমাদের নিজেদের 
জীবনপদ্ধতির সংস্কারসাধন করিয়! পাশ্চাত্ত্য যে নৃতন মূল্যবোধ আমদানী 
করিয়াছে তাহাকে আপনার মধ্যে ধারণ কর এবং আমাদের আধ্যাত্মিক 
উত্তরাধিকারকে যথাসম্ভব সর্বপ্রকার অমঙ্গলকর ও বিদ্বজনক অনাবশ্যক বস্তভার 
হইতে মুক্ত করিয়] বস্তবাদী বিজ্ঞানমুখী প্রগতির সহিত তাহার সমম্বয় সাধন কর1। 
এই ছুইজন মহান্‌ চিস্তানায়ক ও সংস্কারকের মধ্যে অনেক বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ্য কর] 
যায়। দুইজনেই ছিলেন তুলনামূলক ধর্মতত্বের পর্যালোচনায় নিবিষ্ট এবং নিজ 
নিজ মহান্‌ ধর্মের পরমার্থটিকে উদ্ধার করিবার কাজে তৎপর মহান্‌ জ্ঞানী পুরুষ | 
আপন আপন ধর্মের অন্ধসংস্কারের ছুবিসহ পেষণ হইতে মুক্তি অর্জনের জন্যই 
তাহাদের উভয়ের সাধনা ছিল । ছুই জনেই ধর্মের সহিত বিজ্ঞানের সামগ্াস্ত 
প্রতিষ্ঠ। করিতে প্রয়াসী হইয়াছিলেন। দুইজনেই ছিলেন যুক্তিবাদী এবং তাহদের 
এই বিশ্বাস ছিল যে, বিস্তদ্ধতম এবং উন্নততম আন্তিকতাওণ এক ধরণের যুক্তিবাদ 
মতবাদ এবং তাহাই সহজধর্ম। ছ্ইজনেই বিশ্বাস করিতেন যে, সর্বথ। পরিবর্তন 
ও প্রগতিকে হেলায় প্রত্যাখ্যান করিয়া! কোন সমাজই সুস্থ জীবন লাভ করিতে 
পারে না। ধর্ম সম্বন্ধে তাহাদের ুইজনেরই এই বিশ্বাম ছিল যে নিরেট শিলীভভত 
গুরু-বচনের নিবেধে মানুষের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক ও রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া পদ্থী 
ভূমিক! গ্রহণ না করিয়। ধর্মের পক্ষে বরং মাহুষের সর্বাঙগীন উন্নতি ও প্রগতির 
অনুকুল এক সচল শক্তিতে পরিণত হওয়াই সঙ্গত । 

স্তার নৈয়দ আহম্মদ খান উনবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদ এবং স্বভাবধর্মের 
আলোকে ইসলামের ব্যাখ্যা আর করিলেন। জঘন্য অন্ধ সংস্কারের বন্ধন হইতে 


১৫৬ 


সমপামঘ্িক ভারতীয় চিস্াাধারা (আ) 


মুসলমান সমাজকে মুক্ত করিবার জন্ত তিনি সচেষ্ট হইলেন । ইহ! ছিল মোল্লা- 
বিরোধী আন্দোলন, ্গতরাং সম মোল্লা-সমাজ তাহার সংস্কারকার্ধকে পরাস্ত 
করিবার উদ্ধেশ্যে সংগঠিত হইল । ভারতে মুসলিম মননের ইতিহাস-ক্ষেত্রে 
সৈয়দ আহুম্মদের ইসলামের প্রতি বিশিষ্ট ব্যবহারের পরিচয়টি এই যে, একদিকে 
তিনি ইসলামের শাশ্বত সত্যে বিশ্বাসী ছিলেন, অন্তদিকে তাহার এই দৃঢ প্রত্যয় 
ছিল যে আধুনিক বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদের সহিত মৌল ইস্লাম-তত্বের পূর্ণ 
সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব। পাশ্চান্ত্য যেমন একদ1 অতীতে ইসলামের সংস্কৃতি- 
সম্পদকে আপনার করিয়া লইয়াছিল, ঠিক সেইভাবেই আধুনিক ইউরোপের 
বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতিকে প্রাচ্যের পক্ষেও আত্বীকরণ সম্ভব হইবে ইহাই ছিল তাহার 
অভিমত । পাশ্চাত্যের অন্ধ অন্ুকারক তিনি একেবারেই ছিলেন ন1, তাহা ছাড়া 
পরবর্তী দুই পুরুব ধরিয়! ভারতীয়ের] যে হীনমন্থতা-গ্লানির শোচনীয় আক্রমণে 
জর্জরিত হইয়াছে, তিনি সেই আধি হইতেও মুক্ত ছিলেন। যদিও তিনি আপন 
প্রগতিশীল মতবাদের আম্পাতিক সাফল্য লাভ করিতে পারেন নাই, তবুও 
নিজেকে ঘিরিয় এমন একদল সম-আদর্শে উদ্দীপ্ত কর্মীকে তিনি সংগঠিত 
করিয়াছিলেন, যাহার আন্দোলনের বিরুদ্ধে উদ্াত প্রতিক্রিয়াশীলদের পরাস্ত 
করিল। আলিগড় চিত্ত ও কর্মের নায়কদল স্ষ্টি করিয়াই চলিল, অবশ্য যদিও 
তাহাদের মধ্যে একজনও প্রতিষ্ঠাতার সামর্থ্যের স্তর পর্যস্ত পৌছাইতে পারেন 
নাই। আধুনিক সভ্যতার স্্ট মূল্যবোধের আত্মীকরণের মধ্য দিয়। শেষ পর্বস্ত 
তাহার স্বজাতি ব্রিটিশ অধীনতা হইতে মুক্তিলাভ করিবে ইহাই ছিল তাহার 
প্রত্যাশ। । মেকলে যেমন ১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে তাহার শিক্ষাবিষয়ক প্রস্তাবে 
ভবিধ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন যে, ইংরাজি শিক্ষার পরিণামে ভারতবর্ষে এমন এক 
শ্রেণীর কাল! ইংরাজ স্থষ্টি হইবে যাহার! ব্রিটিশ গণতাস্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠানের দ্বারা 
শাসিত হইবার পক্ষেই দাবী জানাইবে, ঠিক তেমনই তাহার সমসাময়িক সৈয়দ 
আহম্মদও স্থির প্রত্যয়বান্‌ ছিলেন যে, আত্মমর্ধাদাদম্পন্ন এক স্বাধীন জাতি গড়িয় 
তুলিবার জন্ ইসলামের স্থায়ী সূল্যের সহিত আধুনিক বিজ্ঞান এবং সভ্যতা- 
প্রগতির সমন্বয় সাধন কর! সঙ্গত এবং কর্তব্য । শাহওয়ালিউল্লার মত তিনি 
অতীন্দ্রয়বাদী এবং বিপ্রবপন্থী ছিলেন ন1, কিন্ত অষ্টাদশ শতকের প্রথমভাগের 
সেই মহান্‌ চিস্তানায়কের সহিত তাহার মিল এই দিক দিয়! যে বিকারমুক্ত 
বিশুদ্ধ ধর্মের যুক্তিবাদিত! এবং সার্বজনীনতায় তিনিও ছিলেন তাহারই মত 
বিশ্বাসী । 


॥ ভিন ॥ 


ইসলাঁমের এবং কোরাণের যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা-প্রসঙ্গে সৈয়দ আহম্মদ খান-কৃত 
ভাষের পরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ভাব্যটি, তাহ! মৌলন1 আবুল কালাম 
আজাদের রচনা । বহুযোগ্যতাসম্পন্ন সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক হিসাবেই 
তাহার প্রথম আবির্ভাব হয়, তাহার পর পথ-পরিবর্তন করিয়1! প্রত্যক্ষ রাজনীতির 
ক্ষেত্রে এবং বিদেশী শালন-শৃঙ্খল হইতে দেশকে যুক্ত করিবার সংগ্রামের মধ্যে 
অবতীর্ণ হইয়া! তিনি একাধারে একজন মহান্‌ রাজনৈতিক নেতারূপে এবং 
কোরাণ ও ইসলামের উদ্বারতম ব্যাখ্যাতারূপে তাহার কর্মজীবনকে পরিণতি দান 
করেন। যদিও তাহার প্রথম ভীবনের শিক্ষার প্রকৃত ছিল ইসলামপন্থী এবং 
প্রাচ্যমাগীঁ, তবু তাহার অসাধারণ মেধাশক্তির প্রসাদে আধুনিক বিজ্ঞান-এবণার 
যুলমন্ত্রটি তিনি অহ্ধাবন করিয়াছিলেন। তাহার নিজস্ব বিবৃতি অহ্সারেই জান! 
যায় যেঃ অশেষবিধ সংশয়ের কণ্টকে তাহার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হইয়াছিল। 
মাঝে মাঝেই সংশয়বাদ তাহাকে গ্রাস করিয়াছে, কিন্ত শেষ পর্যন্ত কোরাণ-তা শ্রিত 
ইসলামে আত্তরিক বিশ্বাস লইয়াই তিনি জাগিয়! উঠিয়াছেন। যদ্দিও আধুনিক 
বিজ্ঞান ও আন্দোলনধার] সম্পর্কে তাহার জ্ঞানের সীম! সৈয়দ আহম্মদ খানের 
পক্ষে অধিগম্য সে যুগের ধারণার চেয়ে বিস্তৃততর এবং সম্পন্নতর ছিল, তবুও সৈয়দ 
আহম্মদ খানের মতই তিনিও বিশ্বাস করিতেন যে প্রকৃত ধর্মের সহিত বিজ্ঞান- 
এষণার মূলতঃ কোন বিরোধ নাই। 

তাহার মানসভঙ্গি সৈয়দ আহম্মদ থাকে একদিক দিয়! স্পর্শ করিয়াছে বলিয়! 
মনে হওয়1 সম্ভব যে, তিনিও শাহ ওয়ালিউল্লার আন্দোলন-মালায় একটি সংযোজক 
অংশ। ধর্মের সার্বজনীনত1 ও নানা ধর্মবিশ্বীসের মুূলগত এক্য সম্পর্কে 
শাহ.ওয়ালিউল্লা এবং তাহার অশ্থগামীদের মতবাদ আমরা পূর্বেই পর্যালোচনা 
করিয়াছি। আমর! লক্ষ্য করিয়াছি, শাহ ওয়ালিউল্লা এবং শ।হইসমাইল বিশ্বাস 
করিতেন যে, বিভিন্ন ধর্মের আনুষ্ঠানিক রীতি এবং চলিত বিধানের পার্থক্যের 
আবরণতলে একই আধ্যাত্মিক উৎস এবং ঈশ্বরন্বরূপ বিরাজমান । বিভিন্ন ধর্ষের 
বিধিবিধান, চলিত প্রথ| এবং পৃজাপদ্ধ'ত তাহাদের মর্মবস্তরর বহিরজ আবরণমাত্র, 
এবং এই আঙ্গিকগুলি লইয়া! কোন বিরোধ সৃষ্টি হওয়] সঙ্গত নয়। আবুল কালাম 
লবিস্তারে তাহার এই তত্ব ব্যাখ্যা করিয়াছেন যে ইসলাম বঙ্গিতে ধর্মের নানা 
শ্রেণীর মধ্যে একটি স্বতন্ত্র মতবাদ সম্বলিত ধর্ম-বিশেষকে বোঝায় না, এই নামে 


১৫৮৫ 


লমসামক্সিক ভারতীয় চিন্তাধারা (আ1) 


বরং এখন একটি সার্বজনীন ধর্মমতের পরিচয় ফুটিয়া উঠে, যাহ সর্বাশ্রয়ী ও 
সর্বাতিশায়ী অদ্বয় ঈশ্বরে বিশ্বাসের ভিত্তিতে এবং নৈতিক শীল ও পারলোৌফিক 
জীবনে আস্থার উপকরণে গঠিত । তাহার মতে ভগবৎ্-স্বক্ধপের প্রধানতম খ্রশ্বর্ 
হইতেছে সত্য-শিব-সুন্দর সকল পদার্থের স্ট্টি কারণম্বরূপ তাহার ল'লাময় প্রেম 
ও মঙ্গলবিধাতৃত্ব, এবং অহ্থশাসন তাহার প্রেম হইতেই উৎসারিত । 

সার্বঙ্নীন ধর্ম হিসাবে ইসলামের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার ফলে 
যে সকল আচার এবং অনুষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ক্ষেত্রে বিভিন্ন, সেগুলিকে আবুল- 
কালাম সঙ্গতভাবেই তুচ্ছ করিয়া! পিছনে স্থান দিয়াছেন। শাহওয়ালিউল্লার 
ধর্মব্যাখ্য। সম্পর্কে তাহার বরেণ্য আধুনিক শিশ্য স্বর্গত মৌলানা ওবাইছুল্ল সিদ্ধি 
যে ধারণ! দিয়াছেন, তাহার সহিত এই মত সামঞ্জস্যপূর্ণ । ইসলামের অহ্ৃশাসন 
এবং অন্বষ্ঠানপদ্ধতিকে ইসলামেরই এক অবিচ্ছেছা অংশবরূপে মনে করেন, অথব! 
বহিরঙ্গ পরিচ্ছদমাত্র গণ্য না করিয়া! যাহার! তাহাকে ইনলামেরই দেহাত্রাস্বরূপ 
গণ) করেন, সেই সব গৌড়াপন্থীদের প্রবল বিরোধিতাকে এই ছুই মনীষী উত্তেজিত 
করিয়! তুলিয়াছিলেন। ইসলামের শাশ্বত এবং স্থায়ী মূল্য যে অবস্থাচক্রে-নিয়ত- 
পরিবর্তনশীল রাষ্ট্রীয় বিধান হইতে পৃথকৃ, এই বিশ্বাস আধুনিক মুসলিম জাতিগুলির 
মধ্যে একমাত্র তুকীীরাই প্রকাশ্যে ঘোষণা করিয়াছে, এবং ইহাকে তাহাদের 
রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে মূর্ত করিয়! তুলিয়াছে। যদি আবুল কালাম আজাদ তুকীতে 
থাকিতেন, তাহা হইলে ইসলামের তত্বপার হইতে রাস্ত্রীয বিধানরচনাক্রমটিকে 
পৃথক করিবার কামালপন্থী আন্দোলনকে তিনি অন্তরের সঙ্গে ও গুচুর বৈদগ্ধ্যের 
সঙ্গে সমর্থন করিতে পারিতেন এবং প্রগতিকে শ্বচ্ছন্দ ও অবাধ করিয়! 
তুলিতে পাবিতেন। 

ধর্ম হিসাবে ইসলামের স্বাতস্ত্র্ে লুপ্ত-বিশ্বাস আবুল কালাম ভারতবর্ষে এক 
অখণ্ড জাতি সৃষ্টি করিবার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে সাধন! করিয়াছিলেন । তিনি বিশ্বাস 
করিতেন যে, যে-বস্ত ভারতবর্ষের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ স্ষ্টি করিতেছে 
তাহা নিতান্তই অযথার্থ, এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদার নেতৃত্বের দ্বার! 
তারতবর্ষে বিচিত্র শ্রেণীর মাহষের মধ্যে মৌলিক প্রক্য প্রতিষ্ঠা কর] যাইতে পারে । 
কেহ কেহ মনে করেন যে জাতীয় আন্দোলনের নেতাব্ধপে তাহার ভূমিকাটটিরই 
প্রতিক্রিয়া! দেখ! দিয়াছিল তাহার আধ্যাত্মিক মতবাদে, এবং অন্য ধর্মমতের 
বিশেষত্বগুলিকে আয়ত্ব করিতে পারে এমন এক সার্বজনীন ধর্মরূপে ইসলামকে 
ব্যাখ্যা করিতে তিনি অন্থপ্রেরিত হুইয়াছিলেন। কিন্তু আসল সত্যটি ইহার 


১৪৯ 


প্রাচা ও পাশ্চাতা দর্শনের ইতিছান 


একেবারে বিপরীত হওয়াও কিছু বিচিত্র নয়। ধর্মের সার্বজনীনতায় এবং 
সর্বমানবের এঁক্যে তাহার বিশ্বাই থুব সম্ভব তাহাকে সর্বপ্রকার বিচ্ছেদকামী 
আন্দোলনের বিরোধী করিয়! তুলিয়াছিল। এই সত্য স্থাপিত হইয়া আছে যে, 
ইসলাম ও কোরাণ সম্পর্কে তাহার ব্যাখ্য। এবং সার্বজনীন ধর্ম সম্বন্ধে তাহার 
সিদ্ধান্ত সমুহের একটি প্রবল আবেদন সমস্ত উদারহৃদয় মাহষের কাছেই আছে, 
তাহা ছাড়া সাধারণভাবে আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে এবং বিশেষভাবে ইসলামের 
ক্ষেত্রে তাহার ভাব্যটি একটি মহৎ সংযোজন । 


॥ চার ॥ 


সমসাময়িক মুসলিম ভারতে মহান্‌ কবি-দার্শনিক স্তার মহম্মদ ইকবালই 
নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ মনীবী | একদিকে প্রাচ্য ও ইসলামপন্থী শিক্ষায়, অন্ঠদিকে 
পাশ্চাত্ত্য বিদ্যায় শিক্ষিত হইবার সৌভাগ্য ইকবাল লাভ করিয়াছিলেন । ১৮৭৩ 
খৃষ্টান্দে ২২শে ফেব্রুয়ারী তারিখে তাহার জন্ম হয় এবং মৃত্যু হয় ১৯৩৮ খুষ্টাব্দের 
২১শে এপ্রিল তারিখে । সাহিত্য ও দর্শনের অধ্যাপকরূপে তিশি তাহার কর্মজীবনের 
স্বত্রপাত করেন, কিন্ত ১৯০৮ খুষ্টাব্দে ইউরোপ হইতে ফিরিবার পর আইন- 
ব্যবসাযকেই তিনি জীবিক1 হিসাবে গ্রহণ করেন। থুব অল্প বয়সেই কবি হিসাবে 
তিনি খ্যাতি অর্জন করিয়াছিলেন । প্রথম হইতেই তাহার কবিত] ছিল মনন 
সম্পদে পূর্ণ; মে মনন ভাবাবেগের দ্বারা অস্থরঞজিত। সাধারণ বিষয়ের কবিতা 
রচন1 ছাড়াও সারা দেশে যেখানেই উদ্ছ'অথব। হিন্দুস্থানী সহজবোধ্য, সেই সব 
অঞ্চলে ব্যাপকভাবে উদগীত তাহার দেশাত্মমুলক কবিতাগুলি রচনার কাজে তিনি 
তাহার মহত্তম শিলঈটিকে প্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহার হ“হিন্দুস্থান হামার!” 
কবিতাটি একটি জাতীয় সঙ্গীতের পর্যায়ে গণ্য হইয়াছিল, এবং ভারতবর্ষের 
স্বাধীনতা অর্জনের রাত্রিতে ভারতীয় পরিষদে সে গানটি গাওয়া! হইয়াছিল । 
মহাত্মা গান্ধীর পৃত ভপ্ম যেদিন গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়। হইতেছিল, সেদিন ধারা- 
বিবরণীর মাঝখানেও তাহারই রচিত একটি কবিত। গানে পরিবেশন কর! 
হইয়াছিল । অন্তদিকে পাকিস্তান স্ষ্টির লগ্নেও তাহারই কবিতা গান করা 
হইয়াছিল; একজন মহান্‌ কবির সন্ত কিভাবে সমস্ত রাজনৈতিক বিভেদের 


উর্ধ্বে জাগিয়া থাকে তাহারই পরিচয় এখানে । 


১৬৩ 


সমসাময়িক ভারতীর চিন্তাধারা (আ) 

ইউরোপে অবস্থানকালে তিনি গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ভাবধাঁর। 
এবং সংস্কৃতির অনুশীলন করিয়াছিলেন । একদিকে পাশ্চাত্যের দানযোগ্য মঙ্গল- 
অর্থ্য, অন্যদিকে ইউরোপীয় জাতিগুলির অস্তর ছেদনকরী শিল্প-সাম্্রাজ্যবাদী সংঘাত, 
এই ছুয়ের সম্পর্কেই তিনি সচেতন ছিলেন । যে সময়টিতে তিনি পাশ্চাত্য দেশে 
ছিলেন, সেই সময়েই ইসলাম ও প্রাচ্যতত্বের স্থায়ী মূল্য বিষয়ে তিনি উপলন্ধি 
করেন, ইহা শ্ববিরোধের মতই মনে হয়। সম্ভবতঃ ইউরোপে থাকার সময়েই 
তিনি নূতন প্রাণশক্তিতে ত্বদেশকে উজ্জীবিত করিবাপ্প কাজে তাহার কাব্য- 
প্রতিভাকে উৎসর্গ করিতে সঙ্কলল করেন। ইউরোপ হইতে ফিরিবার পর তিনি 
সাধারণভাবে তাহার স্বদেশের এবং বিশেষভাবে মুসলমানদের সমস্যাগুলি 
গভীরভাবে অহুধ্যান করিতে আরভ করিলেন। মুসলমান সমাজের রাজনৈতিক, 
অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের বিপর্যয় ভাহার অন্তরকে গভীরভাবে স্পর্শ 
করিয়াছিল এবং তাহার স্বজাতির অবসন্ন আত্মাকে উদ্ব,দ্ধ করিবার জন্য তাহার 
কবিতাকে তিনি নিয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন । মুসলমানদের উদ্দেশ করিয়! 
রচিত তাহার কবিতাগুলির মধ্যে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ব্যের জীবন-সঞ্চারী 
ভাবগুলি ভরিয় দ্রিলেন। মুসলমানদের জন্য তিনি ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্য! 
করিলেন, এবং নিজব্ব চিস্তার মধ্যে তিনি এমন এক আবেগের রং সঞ্চার করিলেন 
যাহাতে সকলের হৃদয়তন্ত্রীতে সংঘাত উপস্থিত হইল । 

পারসের ক্লাসিক ভাষায় রচিত “আস্রারি খুদি” (আত্মার রহ্ম্ত ) তাহার 
প্রথম দার্শনিক কবিতা । ইহার পরেই রচিত হইল অঙ্থরূপ দীর্ঘ ও বৈতিক্রযপূর্ণ 
তাহার দ্বিতীয় দার্শনিক কবিত]। “রমুজি বেখুদি* ( অনাত্মতার রহন্য)1| তিনি 
দার্শনিক ভাববাদ, নীট্‌্শীয় শক্তিবাসন।, বেগরসর জীবনীশক্তিতত্ব (6180 5:6৪] ) 
এবং ইসলামপন্থী এতিহের সমবায়ে রচিত আত্মোপলন্ধি ও ন্ায়দাবীযুক্ত আত্ম- 
প্রতিষ্ঠার তত্ব প্রচার করেন। তাহার ম্বদেশকে সাধনা ও ত্যাগব্রতে উদ্ব,দ্ধ 
করিবার উপযোগী দার্শনিক কবিতা! এবং প্রখর ভাবাবেগপুর্ণ গীতি তিনি একে একে 
রচন। করিয়া! চলিলেন। নিজের সম্পর্কে তাহার অহ্ছযোগ ছিল যে, তিনি স্বয়ং 
কাজের মানুষ নন, কিন্তু যে-কবিত। জাতির অন্তরে ভরসা জোগায় তাহাই এক 
কর্মান্ুষ্ঠান; এ-কথার যদি অর্থ থাকে, তবে তাহার জীবনই ছিল কর্মের এক 
অবিচ্ছিন্ন ধার1। বৃত্তিতে তিনি আইনজীবী হওয়া সত্বেও স্বজাতির জন্য নুতন 
আইন রচনার জন্ত তিনি কোন যত্র করেন নাই । “দেশের জন্য আমাকে সঙ্গীত 
স্থষ্টি করিতে দাও, দেশের আইন যার খুসি সে রচন! রুরুক? সভবতঃ এই বক্তব্যে 


১৬১ 
১ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


তিনি বিশ্বাস করিতেন। মোদলেম ভারতের ইতিহাসে তিনি অস্বিতীয়ভাবে 
ভারতীয় মুসলমানদের নৈতিক এবং বুদ্ধিগত চেতনার অঙ্গরূপে পরিগণিত 
হুইয়াছেন। একটি কবিতায় তিনি নিজেকে গ্যেটের লঙ্গে তুলন। করিয়াছেন ; 
কিন্ত বহুপ্রতিভাধর হিসাবে গ্যেটের শ্রেষ্ঠত৷ সত্ত্বেও, এবং জার্মান সংস্কৃতির উপর 
গ্যেটের বিরাট এবং ব্যাপক প্রভাব থাকা সত্বেও কিছু অতিরঞ্জনের আশংকা ন! 
করিয়াই এ কথ! বলা যায় যে, ইকবাল যতটা পরিমাণে ভারতীয় মুসলিম চেতনার 
অঙ্গী হইয়া! গিয়াছেন, সেই পরিমাণে গ্যেটে জার্মান চিত্তের অংশ হইয়া উঠিতে 
পারেন নাই । 

তাহার প্রচারিত তত্ব অল্প কথায় সংক্ষেপে প্রকাশ কর! ছুঃসাধ্য । অন্চান্ত 
সকল মনীধীদের মতই তিনি নান! প্রাস্ত হইতে জ্ঞান আহরণ করিয়াছিলেন । 
তাহার কবিতা জীবনযাত্রার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকেই স্পর্শ করিয়া আছে, এবং 
তাহা সমুন্নত ও দ্থগভীর একট! কিছুর ইঙ্গিত আভাদমিত করিয়া তোলে । শাহ 
ওয়ালিউল্লা এবং তাহার আধ্যাত্মিক গুরু রুমির মতই বিপরীতের মধ্যে সমস্বয় 
প্রতিষ্ঠার মহান্‌ সাধক তিনি। তীহার অন্তরে মরমিয়াবাদের স্পর্শ ছিল? কিন্ত 
তাঁহার মরমিয়াবাদ জীবনের সদর্থক স্বীকৃতিতেই দ্ূপপরিগ্রহ করিয়াছিল । কামনা- 
নিরোধের শিক্ষা! তিনি দান করেন না, বরং কামনার প্রবলত1, গৌরব এবং দিব্য- 
স্বভাবই তিনি প্রচার করেন। মাহ্ষের মধ্যে ঈশ্বর-সন্ধানের আগ্রহ স্যহ্ি না 
করিয়া তিনি মানুষকে বরং আপন সত্যস্ব্ূপকেই সন্ধান করিতে নির্দেশ দেন, 
কারণ তাহারই কথায় “ঈশ্বর নিজেই মাহৃষকে সন্ধান করিয়। ফেরেন। 

ইকবালের চিস্তা এবং জীবনভঙ্গি যেন সমকালীন মোসলেম ভারতের প্রাণ- 
কেন্ত্রস্থ খরবেগ শক্তি-স্বর্ূপ। যেমুসলিম চেতনার নবন্ধপায়ণ এবং নব-প্রবর্তনা- 
দান তাহার লক্ষ্য ছিল, প্রথমতঃ তাহারই প্রতি তাহার সম্ভাষণ প্রত্যক্ষভাবে 
উপস্থাপিত হইয়াছিল সত্য, কিন্ত তাহার সর্বগ্রাহী দৃষ্টিপরিধির মধ্যে এমন এক 
সার্বজনীন স্থায়ী সম্পদ আছে, যাহ] বিশ্বসাহিত্যে তাহার স্থান রচন] করিয়! 
দিয়াছে । এই দিক দিয়া ফিকৃটে ( 5০৮৮৪) এবং মজ্জিনির (2685510) ) সহিত 
ভাহার যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। তাহাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল যথাক্রমে জার্মান 
ও ইতালীয় চিত্তকে উদ্বোধিত করা, তাহাদের মানবতা এবং দিব্যভাবকে 
জাগাইয়া তোল]। মনীষী ও দার্শনিক হিসাবে তাহাদিগকে অবশ্য বিচারশক্তি 
এবং নীতিবোধের দৃঢ় প্রশস্ত ভিত্তিস্থান রচন1 করিতে হইয়াছিল । গোষি-চেতনার 
আবেগকে উত্তেজিত করিয়! সন্ীর্ণ ও স্পধিত আত্ম-ঘোষণার প্রতিষ্ঠান গড়িয়া 


১৬৭ 8 


সমসাময়িক ভারতীয় চিন্তাধারা! (আ) 


তোলার আশু লক্ষ্য তাহাদের ছিল না। তাহাদের উদ্দেশ্য ছিল, তাহাদের 
ত্বদেশকে একটি সাধনপন্থার নির্দেশ দেওয়া, পুর্ণ আত্মোপলন্ধির অভিসার 
করিয়া তোলা। 

ইকবালের মানবিক ও দিব্যাহ্ভূতিসম্পন্ন গানগুলি পড়িবার এবং গাহ্বার 
সময় কখনো কখনো! মনে জাগে চিরস্তন সেই ভাগবদগাঁতার কথা, ইকবাল যাহাফে 
হিন্দু আধ্যাত্বিক এবং নৈতিক বিবর্তনের ধারায় মহত্তম ও গভীরতম স্যরি বলিয়া 
গণ্য করিতেন। সহ্ায়ের জন্য সংগ্রাম কর যে প্রাথমিক কর্তব্যের অঙ্গ, পাগুৰ 
যোদ্ধপ্রধানকে এই কথাটিই উপলব্ধি করাইবার জন্ঠ শ্রক্কঞকে আধ্যাত্সিক এবং 
দার্শনিক সমস্যার সমগ্র পরিধি পরিক্রমণ করিতে হইয়াছিল । যে-কোনও দেশের 
ইতিহাসে যাহ! নিতান্ত সাধারণ ঘটন1, সেইবূপ একটি প্রচণ্ড কুলবিরোধের প্রসঙ্গে 
বিষয়টির উত্তব, অথচ মাহষের কাছে চিরদিনের জন্ত শাশ্বত সত্যকে উদঘাটমের 
উদ্দেশ্টে এক মহান্‌ পুরুষ কর্তৃক ঘটনাটির সম্ব্যবহার হইয়াছিল। দেখা যায়, 
ইকবাল-সমসাময়িক ভারত-ইতিহাসের ক্ষেত্রেও সদৃশ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়াছে। 
ইকবালও লক্ষ্য করিয়াছিলেন যে, ক্ষয়িষু এতিহা এবং জীবন-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির 
বলিম্বরূপ তাহার ত্বজাতি নান! সংঘাতময়, শক্তির প্রভাবে বিভ্রান্ত । তিনি বিশ্বাস 
করিতেন, ইসলামের যে মুল মর্শের সহিত চিরস্তন সত্যের প্রকৃতি অভিন্ন, তাহার 
উপলন্ধিই একটি জাতির মধ্যে জীবনবর্ধক খখিদৃষ্টি উদ্মেষিক করিতে পারে । 
সত্যদৃষ্টি যখন আচ্ছন্্ হয়, এবং সত্যন্ধপ। প্রেরণা যখন নিক্রিয় বা! লুপ্ত হয়, তখনই 
সকল জাতির ধ্বংসের স্চন। দেখা দেয় । 

একটি ছোট লিপিচিত্রের মধ্যে এই মহান কবি-দার্শনিকের ক্ৃতিসমূহের 
সংক্ষিগুসার মাত্র নিবদ্ধ করা লম্ভব। তাহার মহত্বের আসল রহম্য কোথায়? 
আসল দত্য এই যে, তাহার চিত্তের ও তাহার বিচারশক্তির মহিমাই জীবনগতির 
আপাত-ম্ববিরোধগুলি উপলব্ধি করিয়। তাহাদিগকে একটি মহৎ সমন্বয়ের মধ্যে 
সংহতি দান করিতে সমর্থ হইয়াছিল। আপনার ভারকেন্ত্র হইতে বিচ্যুত 
হইবার একটু আশঙ্কা না রাখিয়া যখন তাহাকে সর্বমতবাদ প্রসঙ্গেই আপন 
হদয় উন্মুক্ত করিতে দেখি, তখন মাঝে মাঝে মনে হয় যে, কেবল সারগ্রহিতাই 
তাহার মতবাদের শ্বব্ধপ, যাহ! প্রত্যেক মতবাদের সারবস্তর চয়ন করিয়া নান! বর্ণে 
অভিরাম একটি পুষ্পস্তবকের উপহার নিবেদন করে | কিন্ত কোন মহান্‌ ব্যক্তিই 
শুদ্ধ সারসংগ্রাহক হইতে পারেন না) যে শক্তি ইকবালের মধ্যে প্রমাণিত 
হইয়াছে, তাহ! শুধু লারসংগ্রহ-জনিত হওয়1 অসভব ছিল। মরমীত্রেঠ কুমির স্তায় 


১৬৩ 


প্রাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


এবং ডারউইনীয় বিবর্তভনবাদদী নাস্তিক নীটুশের মতন সম্পূর্ণ বিপরীত কোটির 
মহাসত্বদেরও তিনি একত্রে বিবৃত করিয়াছেন। নীট্‌শের অতিমানব সম্পর্কে 
দিব্যবোধ কখনও অভিজান্তবের ধারণায় বিকারগ্রস্ত হইয়| পড়ে, এবং মানুষের 
আধ্যাত্িক সাধনার দীর্থ বিবর্তন পথে যে-সমস্ত পারমাথিক মৃল্যবোধ গড়িয়া 
উঠিয়াছে, তাহাকে বিরত চিস্তার রসাতলে বিসর্জন দিয়া বসে। নীটুশে সম্পর্ক 
ইকবাল বলেন যে, ধর্মবিশ্বাসীর হৃদয় তাহার, কিন্ত বিচারবুদ্ধিটি অবিশ্বাপীর মত । 
ইকবাল বিশ্বাস করিতেন যে, নৃতন মৃল্যমান নির্ণয়ের জন্ত তাহার প্রচেষ্টার কোন 
কোন দিক যথার্থ্যপূর্ণ, এবং তাহাকে হ্বস্থ আধ্যাত্মিক বিকাশের সঙ্গে মিলাইয়! 
রূপান্তরিত করিয়৷ নেওয়া! চলিতে পারে । কমি বলিয়াছিলেন যে, মানবজাতিকে 
প্রক্কৃতি-পরিবর্তন করাইয়! উধ্বগতি দান করিতে হইবে, ঠিক এই কথাই ধ্বনিত 
হইয়াছে জরথুস্কের বয়ানে নীটুশের লেখায়; কিন্ত পার্থক্য দেখা দিয়াছে লক্ষ্যে 
এবং পন্থায় । 

ইকবাল-চিত্রের সথবৃহৎ পটে কালে! ছায়াগুলিও চিত্রের মহিমাকে উজ্জবলতর 
করিয়া! তুলিতেছে। বেগগসর সুষ্টিমূলক বিবর্তনবাদের তত্তের দ্বারা তিনি 
অনেকখানি প্রভাবিত হইয়াছিলেন। ন্থায়মাঞ্রসম্বল বিচারশক্তির অসম্পূর্ণত! 
সম্বন্ধে তিনি বেগ ও অন্তান্ত অতীন্দ্রিয়বাদীগনের সহিত একমত ছিলেন। সহজ 
প্রজ্ঞাদৃষ্টিকে বাদ দিয়া শুধুমাত্র বিচারশক্তির সহায়ে পরমাত্মার মুল তত্বে 
পৌছানে। যায় না, এবং মাচষের আপন আত্মার সহিত অনন্ত স্থষ্টিপরায়ণ সেই 
জীবনীশক্তির (6182 ) সুরসা মঞ্জন্তও প্রতিষ্ঠা কর] যায় না, ধাহাকে আন্তিক্যবুদ্ধি- 
সভ্ভৃত ঈশ্বর বলিয়াই তিনি গণ্য করেন, এবং খাহাকে তিনি মরমীদের 
উপলব্ধিগোচর যুগপৎ স্থির ও চঞ্চল পরম সম্ভার সঙ্গে অভিন্ন করিয়৷ দেখিয়াঁছেন। 
মানুষের জীবনে গতিসঞ্ধার কর। ইকবালের উদ্দেশ্য ছিল বলিয়। সেই গতিমান্‌ 
পরমেশত ত্বটির উপরই তিনি অধিক গুরুত্ব আরোপ কৰিয়াছেনঃ ধাহার গতির অংশ 
আপনার মধ্যে লাভ করিয়! মাহুষ একই সঙ্গে তাহার মানবিক এবং দিব্য প্রক্কতিটি 
যথার্থ রূপে অর্জন করিতে পারিবে । 

বিবর্তনবাদ বলিতে সম্ভবতঃ ভাবপ্রবাহ বা ষুগমানসকেই বোঝায় । 
ইকবালের সমসাময়িক মহান্‌ খঅতীন্দ্রিয়বাদী মনীষী শ্রীঅরবিন্ধ লমগ্র হিন্দু 
আধ্যাত্মিক এরশখর্যকে এক গতিশীল পারমাধিক বিবর্তনবাদের তত্বে ূপাস্তরিত 
করিয়াছিলেন। অরবিন্দ তাহার তত্বের পরিধির মধ্যে উনবিংশ শতাব্দির বস্তবাদ 
এবং বিংশ শতকের সমাজবাদ ও সাম্যবাদ সমস্ত কিছুকেই অস্ততূক্ত করিয় মানুষের 


১৬৪ 


সমসামগিক ভারতীয় চিন্তাধারা (1) টা 


পূর্ণাঙ্গ উন্নতির এমন এক আদর্শ মানবজাতির সম্মুখে উপস্থিত করেন যাহা যাহযের 
কোন একটি দ্দিককেই অনধিকৃত এবং অপরিবধ্তিত রাখে না। অরবিন্দ একটি 
উন্নত আধ্যাত্মিক দ্িব্যদৃষ্টির ফলে প্রাচ্য এবং পাশ্চান্তের সমগ্র নুতন ও পুরাতন 
তত্বৈশ্বর্বকে একটি হুশ্ঙ্খল প্রক্যের মধ্যে গ্রথিত করিয়াছেন। ইকবালের সঙ্গে 
অরবিন্দের অবশ্য একদিক দিয়ে পার্থক্য আছে, ইকবাল আপনার জীবনে অতীন্্রিয 
অন্থভূতি লাভ করেন নাই, কিন্তু সহজ প্রজ্ঞার উপরে বেশী রকম গুরুত্ব দানের ফলে 
তিনি অতীন্দ্রিয়াহুভূতির প্রাস্তসীমাতেই বিচরণ করিয়াছেন । কবি ও দার্শনিকের 
চেতনাকে আশ্রয় করিয়াই তাহার জীবনে অতীন্ত্রির় সত্যের আভাস মিলিয়াছে। 
বেদাস্তের চেতনার মধ্যেই অরবিন্দের বাস, এবং ভিনি প্রাচীন ভারতের সত্যদর্শ 
ও সত্যসেবী খধিদের পথেই প্রয়াণ করিয়াছেন । ইকবালের দৃঢ়মূল আশ্রয় ছিল 
ইসলামের অধ্যাত্ব-চেতনার মধ্যে । ভিন্ন পথে যাত্রা! নুরু করিয়। তাহার! প্রায় 
একই লক্ষ্যের অভিমুখে আসিয় মিলিয়াছেন। ঈশ্বর এবং স্ট্টিলোক মিলাইয়! 
যেমন এক্য, সত্যেরও যদি তেমনই অস্বয় স্বব্মপ হুয়, তবে ভারতের ছুইজন মহান 
তত্ববিদের দৃষ্টিভ্জির এই সারৃশ্টে বিশ্মিত হইবার কিছু নাই। 

বহু শতাব্দি পূর্বে ভারতবর্ষে নানক ও কবীর এই ছুই মহাপুরুষের আবির্ভাব 
হইয়াছিল) ছইজনেই ছিলেন ঈশ্বরে বিশ্বাসী অতীন্দ্রবাদী মনীষী কবি এবং 
বিপ্লবপন্থী; একজন হিন্দু ও অন্তজন মুসলমান হইয়! জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, 
কিন্ত পরিণামে ছুইজনে একই আধ্যাত্মিক চেতনায় উপনীত হুন। নান! দৃষ্টিকোণ 
হইতে একই পরম সত্যে উপনীত হওয়! সম্ভব এই কথাই মানবজাতির নিকট 
ঘোষণ1 করিবার জন্য মহান্‌ পুরুষের! আগামী বহু শতাব্দী ধরিয়া এই দুইটি 
ধর্মমতের পশ্চাদৃভূমি হইতে আবিভূত হইতে থাকিবেন, নিঃসংশয়ে এই ভবিব্যদ্বান 
কর। যায়। প্রত্যেক মহান্‌ ধর্ম প্রবক্তাই হইবেন সমন্বয়কর্মী। সময় এবং 
পরিবেশ তাহাদের দৃষ্টিভজির যতই বৈচিত্র্য স্ষ্টি করুক, তাহাদের সকলের উপান্ত 
ভগবান হইবেন এক । বিবর্ভনবাদী মরমী হিসাবে যিনি ইকবালকে প্রভাবিত 
করিয়াছিলেন, সেই রুমির ভাষা! উদ্ব'ত করিয়! বল। যায়, “সম্কীর্ণচিত্ত মাহুষেরাই 
শুধু পরম্পরে বিভক্ত, আর মহাস্বার|! সকলেই যুথবদ্ধ, একই তাহাদের সম্প্রদায়? । 


১৬৫ 


চতুর এট 
চীন ৫ জাগানের চিন্তাধারা 


চীনদেশের চিন্তাধারার জাধারণ বৈশিষ্ট্য 
লেখক £ এইচ. ই, ডঃ লো চিয়া-দুয়েন 
ভারতে চীন! রাষ্ট্রদূত 
কনফিউজিয়ান-বাদ ও ভাও-বাদ 
লেখক £ ফুং উ-লান, বি-এ.১ পি. এচ-ডি,, এল এল ডি. 
দর্শনের অধ্যাপক, টিসিং হয়! ইউনিভ](িটি, পিকিং (চীন) 
চীনদেশের চিন্তধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 


লেখক £ প্রবোধচন্ত্র সেন, এম-এ ( কলিকাত!), ডার্‌. এস. লেটার্স ( প্যারিম ) 
অধিকর্ত।, রিসার্চ স্টাডিজ, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন 


চীনের দশটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় 


লেখকঃ সুকুমার দত্ত, এম-এ., পি. এচ-ডি, ( কলিকাত! ) 
প্রান অধ্যক্ষ, রামজাম কলেজ, দিল্লী 


জাপানের চিন্তাধার। 


লেখক £ প্রফেসর ডি, টি, বুদ্ধুকী 
কামাকুরা, জাগান 


একবিংশ পরিচ্ছেদ 
চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্্য 
৮ গ্পুর্বীভ্ঞাস্ 

কোনও জাতির মানসিক জীবনের ক্রমবিকাশে যে ভিন্ন ভিন্ন ধারা ও নানা উপাদান 
থাকে তাহার ষথার্থভাবে নিরূপণ অতি দুরূহ । 

যে জাতি একটি বিশাল ভূখণ্ডে বাস করে, যেখানে প্রাদেশিক 'বৈভিন্ন্য বিস্তর, সেই 
জাতির চিন্তা-ধারায় প্রাকৃতিক পরিবেশ কি কি প্রভাব বিস্তার করিয়াছে সর্বপ্রথম তাহা 
বিবেচ্য । কৃ-যষেন-বৃযু (£%:০০-%০-৬/এ ১৬৩২-১৬৮২) তাহার পাত্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ” 
গুলিতে, গীতনদ, (61107 [1%০7) মধ্যবতী সীমানা ধরিয়া, দেখাইয়াছেন যে, উত্তর” 
চীন ও “দক্ষিণ চীন এ ছুই ভূভাগস্থ চীনবাসীদের মানসিক ও প্রক্কৃতিগত ক্ষমতায় অনেক 
গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বর্তমান। সাধারণ বিশ্বা এই যে উত্তরখণডবাসীদের মনের গতি 
ব্যবহারিক ( 0:8০৮1081 ) ও বস্ততান্ত্রিক, দক্ষিণখওবাসীদের কক্সনাপ্রবণ %১০০০19- 
৮৮০ ) ও দার্শনিক । উইলিয়াম জেমসের ( ড/11119] 79175 ) ভাষায় উত্তরবাসীরা 
(শিষ্ট ও অশিষ্ট উভয় অর্থেই) শিক্ত-মনের লোক", এবং দক্ষিণবাসীরা “নরম-মনের? | 
অবশ্ট এভাবের শ্রেণী-বিতাগ সিদ্ধান্তের অনুকূল বলিয়া ধরা যাইতে পারে না,--এমন কি 
সহজেই ভুলের পথ ধরাইয়া দিতে পারে। তথাপি ইহাতে যে উভয়-খণ্ডে প্রারুতিক 
পরিবেশের তিন্ন ভিন্ন প্রভাব স্থচিত তাহা অগ্রাহ করিবার নয় 

কোনও জাতির সহিত অন্য জাতির কৃষ্টির সম্পর্ক উভয় জাতির মানসিক বিস্তারে 
বিশেষভাবে কার্যকরী হইয়া থাকে । তাহাতে জাতির কৃষ্টিগত উত্তরাধিকার বৃদ্ধি পাইতে 
পারে, জাতির সাধারণ বিবর্তনের ধারাও ফিরিয়া কিংবা বদলাইয়া৷ যাইতে পারে। 
ৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ হইতে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত চীনের দার্শনিক চিন্তাধারার যে একটি অতি-উজ্্ল 
যুগ আসিয়াছিল তাহা চীনবাপীদের আত্যন্তরীণ নান! কষ্টি-বৈশিষ্ট্যের সমীকরণের ফলে। 
এই সমীকরণের ধারা চলিয়াছিল ও প্রায় সম্পূর্ণ হইয়াছিল এক শত বৎসর পরে যখন 
চিউ. (01108 ) রাজবংশ চীনসাম্রাজ্যকে এক দেশে পরিণত করে। তৎপরে দীর্ঘকাল 
যাবৎ চীন সাআজ্যের বহু-বিস্ৃতির জন্য চীনদেশ পার্খববাঁ ও অপেক্ষাকৃত অশিক্ষিত 
জাতিদের সংস্পর্শ হইতে কোনও কষ্টির প্রেরণা পাইতে পারে নাই। ইহার অধিকাংশই 
যাযাবর জাতি ছিল ও গোষ্ঠীগত জীবনপন্থী ( [591 ) ছিন। ইহার পরে তৃতীয় হইতে 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


অষ্টম খুষ্টাব্বের মধ্যে চীনবাসীরা ভারতবর্ষের ঘনিষ্ঠতর সম্পর্কে আসে এবং সগুদশ হইতে 
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমাংশ পর্যন্ত কখনও কখনও ইউরোপের সম্পর্কে। তৎপর উনবিংশ 
শতাব্দীর মধ্যভাগ হুইতে এই সকল বহিঃ-সম্পর্ক চীনদেশের উত্তরকালের কৃষ্টি-গঠনে 
বিশেষভাবে কার্যকরী হয় । 

অধিকন্ত কোনও জাতির ইতিহাসের নানা যুগে, জাতীয় মনের ক্রিয়া কোনও বিশেষ 
দিকে মিলিত ধারায় প্রবাহিত হয়। জাতীয় মনের ভারকেন্দ্র সরিয়া সরিয়া যায় এবং 
সেই অপসরণ নান! আকারে স্বপ্রকাশ করে । সাধারণতঃ এই এ্রতিহাসিক সত্যের কারণ 
ধরা হয়,__জীবনযাত্রার অবস্থা পরিবর্তন বা নৃতন অবস্থার বা নূতন সমস্ার উত্তব, অথবা 
মানসিক পরিপকতা লাভ বা উন্মার্গগামিতা, বা কতগুলি ভাবের পরস্পর-সংঘাত বা 
সমন্বয়, কিম্বা কতিপয় প্রতিভাবান্‌ মনস্বীর অভ্যুদয় 'যাহাদের বর্ত-পথে সূর্যের চারদিকে 
গ্রহগুলির মত অন্থান্ত মনন্বীরা চলেন। ইহাকে বলা হয় “কালের দৈব” (9116 ০: 
[109০ )১ জার্মান ভাষায় আরও প্ররুষ্টরূপে বলা হয় কালের দৈব আবির্ভ'তি, 
(2516865150) | এই কথাটি মনে রাখিলে আমরা জাতির মানসিক প্রগতির অর্থগ্রহণে 
অনেক অসংলগ্ন ও স্থতরাং ভ্রান্ত ধারণা ও কাল-ক্রম-বৈষম্য (2128.0117:02150) ) হইতে 
মুক্ত হইতে পারি । চীনদেশের চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি বুঝিবার জন্য সংক্ষেপে 
চীনের বিভিন্ন যুগের মানসিক বিকাশ লক্ষ্য কর! প্রাসঙ্গিক হইবে । 


২। লীন্না দর্শন্েল্স অপ্বান শ্রপ্রান্ন মুগ 


প্রাক-কনৃফিউসিয়ান্-কালে চীনবাসীদের মানসিক বিকাশের নানা তাবার্থ-গ্রহণ ছাড়িয়া 
দিয়া, আমি কন্ফিউসিয়াসের কাল খৃষ্টপূর্ব প্রায় ষষ্ঠ শতাব্দী হইতে আমার প্রসঙ্গের 
অবতারণা করিব, প্র কাল হইতেই চীনদেশে প্রণালীবদ্ধ নানা দর্শনের উদয় হয়। 
চীনদেশীয় চিন্তাধারার ইতিহাসে এর যুগই প্রোজ্জল ও সর্বাপেক্ষা! পুষ্টি-দায়ক যুগ ছিল। 

এই যুগ ( খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতাব্দী ) ইতিহাসে অতুলনীয়,_এই যুগে প্রাচ্যে ও 
পাশ্চাত্যে বহু প্রধান প্রধান দার্শনিকের ও তাহাদের স্ুপ্রসিদ্ধ দর্শন-শান্ত্গুলির জন্ম হয়। 
কেন ইহা ঘটিয়াছিল তাহার কারণ-নির্ণয় তিহাসিকদের পক্ষে স্বকঠিন। কন্ফিউসিয়াস্‌, 
বুদ্ধ ও সক্রেটিস্‌ প্রায় সমসাময়িক ছিলেন। “চৌ? (0৮০ ) রাজবংশের কেক্রীত্ত 
ক্ষমতার পতনের পর চীনদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা-বিপর্যয়, পীত নদের 
(%611০৬/ ২1৮57 ) মধ্যখণ্ডের ও নিম্নখণ্ডের উভয় তীরস্থ যুদ্ধ-পরায়ণ সামস্ত-শাসকদের 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


(50৫51 10:45) কর্তৃক পণ্ডিত ব্যক্তিদরিগকে উৎসাহ-প্রদান (যাহারা অধিকাংশই 
নৈম্ায়িকশ্রেধীর ছিলেন ), এবং দীর্ঘকালের শান্তিপূর্ণ প্রগতির অবিশ্বস্তাবী ফলে যথেষ্ট কৃষ্ট- 
সম্ভার অর্জন, যাহার ভিত্তির উপর চীনাবাসীরা তাহাদের দর্শনের নানা সৌধ নির্মাণ 
করিতে পারিয়াছিল,_-এই সকল কারণ বহুল অংশে চীনদেশে এ যুগ-প্রবর্তনের কারণ 
হইয়াছিল । 

সাধারণতঃ এই যুগকে “একশত দার্শনিক সম্প্রদায়ের যুগ” বলা হয়। গ্রীসদেশের 
ইতিহাসের সমসাময়িক যুগ ও চীনের এই যুগে বহু সাদৃশ্য আছে। উভয় দেশেই একই 
অবস্থার প্রভাবে মানসিক সক্রিয়তা জাগিয়াছিল | নানাতাবের দার্শনিক সমস্যা তোলা 
হইয়াছিল, তাহার উপর বিতর্ক চলিয়াছিল, নানা জল্পনা-কল্পনা হইয়াছিল ও নান! সিদ্ধান্ত 
উপস্থিত করা হইয়াছিল | যখন “জু-চিয়া” (৬ 01:19 )২ দার্শনিক সম্প্রদায়, যাহা! 
পরবর্তীকালে “কনৃফিউপিয়ান্‌” সম্প্রদায় বলিয়া পরিচিত হয়, “সোনায় রচা মধ্য পন্থা”রূপ 
( 3091061) 7428: ) মতবাদের মর্সার্থ-প্রকাশ ও মানুষের পরস্পর সম্বন্ধ বিষয়ক প্রণালী- 
বদ্ধ দার্শনিক মতের রচনা করিতেছিল, তখন “ইয়ঙ, চু” (১9:08 000 )- প্রায় 
ৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর,৩ তাহার আত্ম-প্রীতি ও সথখান্বেষা (2801512) 280 1)200191- 
900), মোতি” নামান্তরে 'মোতত্র” (771 ০: 21০ 7৩) সৃষ্পূর্ব ৪৮০-৪৩৯৪, 
__তীাহার পরপ্রীতি (91051505 ). কৃচ্ছ-সাধন €(8০155100 ) এবং হিতবাদ (0017. 
7:971500 ) ও “চুয়া তত € 010208 120 )--ৃষ্টপূর্ব ৩৬৫-২৯৩১৫-_- তাও,” 
দর্শন এবং তৎসঙ্গে প্ররুতি-নিষ্পন্ন ধর্ম (09050191190) ) ও রহশ্যবাদ (10550151500 ) 
প্রচার করিতেছিলেন। 'নৈয়ায়িকের দলঙ বিশ্ব-প্রৃতি ( 001551819 ) এবং বিশেষ- 
প্রকৃতি (08101581915 ) সমস্তা তাহাদের তর্ক-বিতর্কে প্রায়শই কেন্দ্রীয় বিষয় করিতেন । 
এই নৈয়ারিকেরা “যি চিও (4 05108) বা পরিবর্তন বিষয়ক গ্রন্থের” (8০০1: ০৫ 
0598৩ )৭ কন্ফিউসিয়ান্‌ ব্যাখ্যা, যাহাতে বিশ্ব-জগতের গতিশীল ও স্জনী শক্তির উপর 
জোর দেওয়া হয়, তাহা অগ্রাহথ করিয়া বিশ্লেষণ দ্বারা গতির পরিমাপ লইয়া গ্রীক্দর্শন 
ক্ষেত্রে 'ঝেনো”-র (2221700 056 £15806 ) মতই গতির সম্ভাবনার বিরুদ্ধবারী একটি 
হেঁয়ালি তুলিয়াছিলেন। এই চীনা 'নৈয়ায়িকদের বিবৃতি এইরূপ “একখান! এক ফুট লম্বা 
লার্টি লও এবং রোজ তাহাকে ছুই টুক্রা করিয়া ফেল। দেখিতে পাইবে যে দশ-সহল্র 
জীবিত-কালের মধ্যেও এই টুকরা করার শেষ হইবে না”। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিন্তা- 
বিকাশে ইহা যেন এক অদ্ভুত ও আকন্মিক সাদৃশ্য । 

স্থানাভাবে চীনা দার্শনিকদিগের প্রত্যেক সপ্্রদায় সম্বন্ধে বিস্তত আলোচনা সম্ভব 
হইবে না। ইহাদের মধ্যে প্রধান চারটির উল্লেখই যথেষ্ট হইবে । এই চারটি”ভুং 


৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্য দর্শনের ইতিহাস. 

চিয়া” বা কনৃফিউসিয়ান্‌ সম্প্রদায়, “তাও-চিয়া”৮ বা তাও, অশ্প্রদায়, 'যো-চিয়া”৯ বা মো- 
ত্র মতাবঙ্গম্বী দল এবং “নয়ম-পন্ধতি ( 7,5891150) সম্প্রদায়১* যাহাদের মুখপাত্র 
হান্ফেই-তক্ (5720 5$ [5০ খৃষ্টপূর্ব 1২৩৩ )১৯। 

কনৃফিউলিয়ান্‌ ( খুষ্টপূর্ব ৫৫১-৪৭৯) প্রধানতঃ ব্যবহার-নীতির উপদেষ্টা ছিলেন । 
তাহার নিজের যুগের ও পরবর্তী যুগের মনুষা-সমাজের জীবন-যাত্রা-প্রণালীর উন্নতির জন্য 
তিনি নৃতন আদর্শ ( যাহাদ্বার! মনুষ্য-জীবনে কি কি বস্ত যথার্থ মূল্যবান তাহা যাচাই করা 
চলে ) ও নূতন নীতিশাস্্র প্রবর্তন করিয়াছিলেন । তিনি তাহার স্বীয় নৈতিক, কুষ্টিবিষয়ক 
ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্টে আস্থাবান্‌ ছিলেন। চীনের অতীতকালের অজিত ও তৎকালীন 
ক্ঠির তিনি সংক্ষিপ্ু-সার দিয়া গিয়াছেন ও তাহার সমবায় করিয়াছেন । স্বীয় দার্শনিক 
মতের পরিবেশে তাহার মুল্যের নূতন নিব্ূপন ও তাৎপর্ষের নৃতন ব্যাখ্যা দিয়া গিয়াছেন। 
“কনৃফিউসিয়াস কিছু স্থষ্টি করেন নাই, কেবল যাহা ছিল তাহাই চালাইয়াছিলেন”-_কেহু 
একথা বলিলে কন্ফিউসিয়াস্‌ নিজের সম্বন্ধে বিনয় করিয়া যাহা বলিয়াছিলেন তাহারই 
প্রতিধ্বদি করা হইবে । বস্ততঃ কিন্তু কনৃফিউসিয়াসের অভিনব-স্থষ্ুর ক্ষমতা তাহার 
প্রাচীন গ্রন্থগুদির অর্থোদ্ধার ও বিশেষতঃ তৎসন্বন্ধে তাহার নিজের ভাষ্যগুলির মধ্যে নিহিত 
ও ব্যাপ্ততাবে পাওয়া যায়। তাহার শিক্ষার প্রধান বিষয় মানুষের ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ 
বিকাশ এবং সমাজের চরমহিতার্থে মনুষ্য সমাজে যে পরস্পর-সন্বন্ধ বিমান তাহার যথা- 
সন্নিবেশ ও তাহার আদর্শ স্থাপন । কিন্তু কন্ফিউসিয়াস্‌ অলৌকিক বা আধিভৌতিক সম্বন্ধে 
শিক্ষাদান সতর্কভাবে বর্জন করিতেন। কনৃ্ফিউসিয়াসের পরবক্তীকালেই তীহার শিশ্যবর্গ, 
বিশেষতঃ “মেন্সিয়াস্‌ (0500105--ৃষ্টপূর্ব ৩৭১-২৮৯ )১২ ও শুউ তত (75381) 
9 হৃষ্টপূর্ব ২৯৮-২৩৮ ১১৩ কন্ফিউসিয়ান্‌ দর্শনের সহিত মনোবিজ্ঞান ও আধি- 
ভোৌতিকতামূলক নিবন্ধগুলি সংযুক্ত করিয়া! দিয়াছিলেন। যে সত্য-সত্যই মানুষ তাহার: 
ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হইবে--“জেন? (0০0 )১৪ বা সদয় মনোভাব ও “ষি” (সঃ )১৫ 
বা সাচার, কনৃফিউসিয়াস্-পন্থীর ইহাই ধারণা ও বিশ্বাস । এবং ব্যক্তিগত জীবনে 
পূর্ণতালাভের ও সমগ্রিগত জীবনে সমন্বয় লাভের স্থনিশ্চিত পন্থা “মধ্য-পন্থা” অবলম্বন । 

তাও? বাদী দার্শনিক সম্প্রদায়ের মতবাদ প্রধানতঃ “লাওত-স্”১৬ গ্রন্থের উপর 
প্রতিষ্টিত। ইহা কন্ফিউসিয়াসের বহু পরবর্তীকালে রচিত, কিন্তু যে বিজ্ঞ ও প্রবীণ লাও- 
তান (17৪০ 75৫12 )১৭ নায়ক পণ্ডিতের সহিত কনৃফিউসিয়াসের সাক্ষাৎকার হুইয়া- 
ছিল তাহার এই গ্রন্থের সহিত কোনও সম্পর্ক নাই। “তাও মতবাদের ভিত্তি হিসাবে 
চুয়াঙ,ত তুর রচনাগুলিও সমশ্রেণীর | বস্তুতঃ “তাও” নামের সঙ্গে এই দুইটি দার্শনিকের 
নাম সাধারণতঃ যুক্ত করা হয়| প্রকৃতির মৌলিক নিয়মগডুলির অনুধাবন করিয়া প্রকৃতি 


৪ 


চীনদেশীয় চিস্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


এবং প্রাক্কৃতিক নিয়মের সহিত সামঞ্জস্য রক্ষা! বা তাহার অনুসরণ এই মতবাদের প্রতি- 
পান্ভ। ইহা হইতে “বু-বেই” € ড/এ-৬/০$) বা। “নৈষণ্্ঃ বাদের উত্তব। “তাও' কি 
তাহা কোন সংজ্ঞা দ্বারা নির্দেশ কর! যায়.না,--ইহা! সেই “এক যাহাতে স্থিতি ও 
অস্থিতির একত্র সমাবেশ | “লাওত স্র'__যে গ্রন্থখানির নাম রচয়িতার নিজের নামে 
হইয়াছে, নানা প্রচলিত মতের বিরুদ্ধ উক্তিতে তরা। তাহার গ্যোতনা ও ইঙ্গিত এমন 
চমক্প্রদ যে মনে হয় আমরা কোনও যাছুকরী-স্ফটিকে (০155051 ) নিরীক্ষণ করিতেছি । 
আমার নিজের মনে হয় ইহাতে বহু আধিতৌতিক তত্বের আবরণে একটি অভিজ্ঞতাবাদী 
দর্শন (€ 27917108] 01911950115 ) নিহিত আছে যাহার যথার্থতা প্রকৃতির ঘটনাবলী 
এবং মানুষের অভিজ্ঞতামুলক | “তাও” মতবাদের বর্তমান বিষয়-বস্ত অবলম্বন করিয়া 
ইতিহাসের দার্শনিক তত্ব (01731990715 0£ [7150015 ) বিষয়ক একখানি চমৎকার 
গ্রন্থ রচিত হইতে পারে । “লাও তু” গ্রন্থের সাধারণ মত-বিরদ্ধ বাক্যগুলিও স্ব্প-কথায় 
বিজ্ঞতার আধার বলিয়া উপভোগ্য | দৃষ্টান্তত্বর্ধূপ “প্রকৃত নিপুণতা মুঢ়তার মত দেখায় 
এবং প্রকৃত বাগ্ষমিতা তোৎলামির মত শুনায়” “প্রেম আক্রমণে জয়ী হয়, আত্মরক্ষায়ও 
অপরাজেয় । দেবতারা যাহাদের মারিতে চাননা, তাহাদের প্রেমের অস্ত্রে ভৃষিত করেন” । 
লাও ত-স্বর চিন্তাপ্রণালী অনুসারে কর্ম হয় নিষন্্যৈদ্বারা, অগ্রসর হওয়। যায় পশ্চাদগমনের 
দ্বারা। লাও তত্র আশ্চর্যজনক যুক্তি এই যে “যখন ছুই সমান-বল যোদ্ধুপক্ষ পরস্পরের 
সম্মুখীন হয়, যে পক্ষ দুঃখে খ্রিয়মান সেই পক্ষই জিতিয়া থাকে” । “হান্ (চু) 
রাজবংশে “তান্‌ঃ (555 749-7581) ) নামক রাজা যে বলিয়াছিলেন যে “চৌ? (0180জ্ ) 
বংশের শেষ রাজাদের যুদ্ধ-কৌশল শিক্ষার প্রতিষ্ঠান১৯ “তাও” বাদীদর্শন হইতে উদ্ভূত 
হইয়াছিল তাহা! ঠিক বটে । 

এই নৈষবন্ম্বাদী দর্শনের সম্পুর্ণ বিপরীত দার্শনিক ও তবিষ্যবক্তা মোত-্রর (74০ 
শহ) কর্মের প্রতি কঠোর আহ্বান । “মোত ক্র” নামক গ্রন্থে এই দার্শনিক ইউক্লিডের 
জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকার্ষগুলির মত সংক্ষিপ্ত উক্তিতে ত্বাহার শিক্ষাবলী দিয়া 
গিয়াছেন। এই গ্রন্থে যে সারি সারি গ্তায়ের স্থত্র, জ্যামিতির সংজ্ঞা ও কতগুলি 
কৌতৃহল-জনক জ্ঞান-দর্শন ( চ10850517010985 ) সমস্যার আলোচনা আছে, তাহা। দেখিলে 
বিন্বয়-বিমুঢ় হইতে হয় । মোত-ক্ক বিশ্বপ্রেমবাদী ছিলেন। তাহার এই বিশ্বপ্রেম বোধ 
হইতে পরহিতের প্রেরণা জাগে । এই পরহিতব্রতে তিনি এতদূর অগ্রসর হইয়াছিলেন 
যে তাহার বিরুদ্ধবাদী মেন্সিয়াস্‌ তাহার সম্বন্ধে বলিয়াছেন যে তিনি এমন মানুষ ছিলেন 
যে কোনও লোকের কিছু উপকার করিবার জন্য তিনি নিজের মস্তক ও পদতল উভয়ই 
ক্ষয় করিয়া ন্ট করিতে প্রস্তত ছিলেন ।” দার্শনিক হিসাবে তাহাকে 'কক্ছর-বাদী” (50:1০ 


৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


বলা যায়, কারণ তিনি কোনও জাতীয় ও কোনও প্রকারের আরামের অত্যন্ত বিরোধী 
ছিলেন, এন কি সঙ্গীতকেও একটা বিলাসিতা মনে করিতেন। তাহাকে হিতশ্বাদী 
( ০01569159:5 )-ও বল] যায়, এই হিসাবে যে পৃথিবীর সকল দার্শনিকদের মধ্যে প্রথমে 
তিনিই হুখ-ছুঃখ-বাদ € 01605 0£ 01585002150. 0917 ) ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন 
এবং বহুদোকের বহুল হিতের জন্য ; তথা সমগ্র মানবজাতির হিতের জন্য, প্রয়াসী ছিলেন । 
তিনি বিশ্বপ্রেম এবং শাস্তি মান্ুষ-সমাজের ভিত্তিস্ব্ূপ এই মত প্রচার করিতেন। ইহা 
তিনি করিয়াছিলেন খুষ্টাব্ব আরম্ভ হইবার চারশত বৎসর পূর্বে । তিনি বথার্থ-ই প্রাজ্ঞ ও 
ধামিক ছিলেন বলিয়! কার্ষে পরিণত করিবার কোনও হুযোগই ছাড়িতেন না । যেহেতু 
তিনি আত্ম-বিশ্বাসান্থ্যায়ী যুদ্ধ-বিগ্রহের বিরুদ্ধবাদী ছিলেন, সেইজন্য তিনি তাহার তিনশত 
শিষ্য লইয়া একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন এবং তাহাদের অগ্রণী হইয়া তথ (125) 
রাজ্যের আক্রমণকারী সৈন্যদলের বিরুদ্ধে অপেক্ষারুত দুর্বল হুঙ. (99178 ) রাজ্যের 
রাজধানীরক্ষায় সাহাষ্য করেন । 

চীনে সামস্তরাজ্যগুলি ভাঙ্গিয়া যাইতে আরম্ভ করিলে বিশৃঙ্খল! ছড়াইয়া পড়ে। 
চীনের জনসাধারণ রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমাজের বন্ধন পুনঃস্থাপন এবং রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের 
জন্ত ব্যগ্র হইয়া ওঠে। এই অবস্থার ফলে একটি নৃতন দার্শনিক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব 
হয়, তাহার নাম “নিয়ম-পদ্ধতি” €(1[,289115) সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ে যে অচিরে জন- 
প্রশ্ন হইয়া উঠিয়াছিল তাহা অবস্থাদৃষ্টে স্বাভাবিকই মনে হয়। এই সম্প্রদায়ের প্রধান 
মুখপাত্র ছিলেন--হান্-ফেই-ত কু? (৪7) 91 হত) | তিনি হান্‌' রাজবংশীয় ছিলেন 
এবং বিখ্যাত কন্ফিউসিয়ান্‌ দার্শনিক শ্বন্তত্র'র (5৪) হও) শিষ্য ছিলেন। 
সুতরাং তিনি কনৃ্ফিউপিয়ান্‌ সম্প্রদায়ের মতবাদ হইতে “সংজ্ঞা-বিশুদ্ধি (1২০০0147০8- 
(0018 ০ [822০5 ) নামক মতবাদ গ্রহণ করেন। ইহার উদ্দেশ্যে রাষ্রসেবাকার্য ও 
সামাজিক ক্রিয়া-কাণ্ড সকল যথা- যথাস্থলে ও সুশৃঙ্খলিত ভাবে সংস্থাপন করা | তিনি 
তাহার নিজের নিজের শিক্ষাণ্ডরু হইতে এই বিশিষ্ট মত গ্রহণ করিয়াছিলেন যে মানুষের 
প্রকৃতি আদিতে মন্দ থাকে । এবং “তাও মতবাদ হুইতেও প্র মতবাদের অন্থুমিত 
রাষ্ট্রনীতি ও রাজনৈতিক কৌশল । তিনি প্রাচীন ধারার পুনঃস্থাপন অপেক্ষা সংক্কারই 
প্রশস্ত মনে করিতেন এবং মানুষের শাসনের পরিবর্তে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াসী 
ছিলেন। তিনি প্রচার করিতেন যে ব্যক্তিগত অনুগ্রহলাভের অপেক্ষা আইনের অধীন 
হওয়াই ভাল । কেবলমাত্র শিক্ষার্ার মানুষের কার্যাবলী নিয়স্ত্রিত কর! যায়,_-এ বিশ্বাস 
তিনি পোষণ করিতেন না| কনৃফিউসিয়াস্‌ বলিয়াছেন : “শাসনদ্বারা জনসাধারণকে 
নিয়ন্ত্রিত করিলে, শান্তির ভয় দেখাইয়া নিয়মানুবস্তী করিলে, ফলে তাহারা জেলখানার 


৬ 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 

বাহিরে থাকিবার চেষ্টা করিবে বটে, কিন্তু তাহাদের লজ্জা কিম্বা আত্মসম্মান থাকিবে লা । 
তাহাদের ধর্মঘবারা চালিত করিতে হুইবে এবং 'লী'র (সততা ব! উপযুক্ততা-বোধ ) দ্বারা 
সংযত ও নিয়ন্ত্রিত করিতে হইবে । তাহাতেই জনসাধারণের আত্মসন্মান জ্ঞান জাগ্রত 
থাকিবে ও তাহারা সদসৎ বিবেচনা করিবে ।” “হানফেই-ত-স্র' ব্যতীত শশ্বনত ক্র 
আরেকটি মেধাবী শিষ্ক ছিল । তিনি “চিঙ, প্রদেশের প্রধান মন্ত্রী লীত-্র ২০ (1 
শুহ্ও) যিনি খৃষ্টপূর্ব ২৪৬ সনে চীনদেশের প্রক্য-সম্পাদনের বিরাট চেষ্টায় প্র প্রদেশের 
রাজার সহায়ক ছিলেন। এই “নিয়ম-পদ্ধতি” সম্প্রদায় আরও উন্নতি করিতে পারিত,_ 
ইহার উন্নতি হওয় বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু হয় নাই। সম্ভবতঃ ইহার কারণ এই ষে 
কন্ফিউসিয়াস্্‌-বাদীরা ইহার বিরুদ্ধে প্রবল ও অবিরতভাবে লড়িয়াছিল। তথাপি ইছার 
প্রভাব স্থায়ী হয়। পরবতী যুগে চীনের নানা-পরিবর্তনশীল অবস্থার সহিত সতত সামঞ্জস্য 
করিবার জন্থ চীনদেশের কৃষ্টিবান্‌ সম্রাটেরা, সফলকাম প্রধান-মন্ত্রীরা ও উচ্চপদস্থ রাজ- 
কর্মচারীরা বাহৃতঃ কন্ফিউসিয়ান্‌ পরিচ্ছদ লইয়াও অনেক সময় স্প্টতঃ বা গুঢ়তাবে 
তাও' মতবাদের সহিত কিছু কিছু মিলাইয়া লইয়! এ “নিয়ম-পদ্ধতি” সম্প্রদায়ের নীতি ও 
কার্যক্রম গ্রহণ করিতেন। 

চচিউ, (015 ) রাজাদের দ্বারা চীননেশের রাষ্তরীয় প্রক্য সম্পাদনের পর এ 
প্রতিঘবন্দী দার্শনিক সম্প্রদায়গুলি ক্রমে ক্রমে লোপ পায় অথবা নিরর্৫থক হইয়া পড়ে। 
ইতঃপর নানামুধী মতবাদের বিশেষ সমর্থন ছিল না। খৃষ্টপূর্ব ২০৬ সনে যখন “চিও. 
রাজবংশের শেষ হয়, তখন “হান্‌, ( 7758 ) রাজবংশ রাষ্্রীয় শক্তি দূট়ীকরণ ও সামাজিক 
জীবনের স্থিরতা-সম্পাদন কার্ষেই বেশী উৎসাহী হন। দার্শনিক গবেষণায় তেমন উৎসাহ 
দেন নাই। এই বংশের সম্রাট “বু” (ড/ ), যিনি খৃষ্টপূর্ব ১৪* হইতে ৮৭ পর্যন্ত 
শাসন করিয়াছিলেন, তিনি 'তুঙ চিউ২শু? (70108 00010851057 খৃ্পূর্ব প্রায় ১৭৯৮ 
১০৪) নামে একজন কন্ফিউসিয়ান্‌ পণ্ডিতকে তাহার অধীনে উপদেষ্টান্রপে রাখিয়া 
ছিলেন। এই 'তুউ. চিউ২শু, সেই যুগের গতি ও হুযোগ বুঝিয়া' সম্রাটকে কন্ফিউসিয়াসের 
প্রাচীন প্রামাণ্য গ্ন্থগুলি রাষ্ট্রীয় শিক্ষার বিষয় হইবে ইহা ঘোষণা করিতে প্রবর্তন! দেন। 
এই সআটের অলৌকিক বিষয়ের প্রতি মনের ঝৌক ছিল। সেই জন্য “ভূঙ, চিউ-২শু”২১ 
কন্ফিউসিয়ান্‌ দর্শনের মধ্যে 'যিন্যঙউ.২২ (%72-5:878 ) নামে এক সম্প্রদায়, যাহা বু 
পূর্বে “চৌ' (০০৬ ) রাজবংশের শাসনকালের শেষতাগে উদ্ভুত হয় ও যাহাতে রহস্য- 
বাদ ও দৈবজ্ঞানের রং ছিল, তাহারও কিছু কিছু মতবাদ ঢুকাইয়া দিয়াছিলেন। সেই 
সময় হইতে দার্শনিক গবেষণা ও বাদান্ুবাদ সাময়িকভাবে শান্ত হইয়াছিল। তথাপি 
রাজসভায় ও শিক্ষিত সমাজে 'তাও” মতবাদ সম্মানিত হইত। এই সময় হইতে দীর্ঘকাল 


৭ 


র্‌ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাজ্য দর্শনের ইতিহাস 


ধরিয়া ফনফিউসিয়ান্‌ পণ্ডিতগণ প্রাচীন প্রমাণ্য কন্ফিউসিয়ান্‌ গ্রন্থগুলির উদ্ধার ও. 
সম্পাদনে ব্যাপৃত ছিলেন,--খুষ্টপূর্ব ২০৬ সনে “চিত রাজবংশের রাজধানী “শ্বিয়েন 
যঙ +২৩ (75151) 9:28 ) সহরে যে বিরাট অগ্নিকাণ্ড হয় তাহাতে এর গ্রন্থগুলি প্রায় 
সম্পূর্ণই নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। এই গ্রস্থগুলির পুনরোদ্ধার কার্ষে, ব্যাখ্যান ও দার্শনিকতত্তব 
গ্রহণ অপেক্ষা যথাযথ পাঠোদ্ধার এবং শবদার্থ-গ্রহণ, বেশী গুরুত্বপূর্ণ না হউক, প্রয়োজনীয় 
মনে হইয়্াছিল। 

খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমভাগে “হান্‌্, রাজবংশের পতনের পরে এক বিশৃঙ্খলার 
যুগ আরম্ভ হয়। চতুর্থ শতাব্দীর আরম্তে নানা বর্বর জাতিরা চীনদেশ আক্রমণ করে । 
ইহাদের আক্রমণের তীব্রতা বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে চীনের উত্তরখণ্ডে তাহাদের ছোট ছোট 
রাজত্বের প্রতিষ্ঠ হইতে থাকে । ফলে বহু চীনবাসী পলাইয়৷ অন্যত্র চলিয়া যায়| 
ইহার্দের মধ্যে বহু পণ্ডিতব্যক্তি ছিলেন। ইহারা ইয়ংতস € ৪80০) নদী পার 
হইয়া! দক্ষিণ-পূর্বে সাময়িক বসবাস স্থাপন করেন। ফলে কন্ফিউলিয়ান্‌ সম্প্রদায়ের 
অবনতি হয়। বর্বর যাযাবর জাতিদের নীতিশান্ত্রে কোনও রুচি ছিল না; পণ্ডিতেরা 
ক্লাতদেহ ও বিষণ মন লইয়া কন্ফিউসিয়াসের সেই প্রাচীনযুগের কঠিন সংযম-ধর্ম গ্রহণে 
অপারগ ছিলেন। তীহারা “তাওঃ ও “বৌদ্ধ' মতবাদের দিকে দৃষ্টি দিয়াছিলেন এবং সেই 
সময়ে যাহাতে তাহাদের নিতান্ত প্রয়োজন ছিল তাহা প্র ছুই মতবাদ হইতে পাইবার 
সম্ভাবন। ছিল। এই প্রয়োজন-_“তাও+ বাদের রহস্তে মনকে ছাড়িয়া দেওয়া অথবা বৌদ্ধ- 
বাদের বৈরাগ্যে আশ্রয় গ্রহণ | ন্যতরাং “লাও-তত্' ও ছুয়াঙ, ত্র মতগুলি দ্রুত 
প্রচলিত হইতে লাগিল এবং সগ্যঃ-অন্দিত বৌদ্ধ স্ত্রগুলি অবাধে ও সোৎসাহে গৃহীত 
হইতে লাগিল। সেই সময়কার বহু চীনা বৌদ্ধপ্ডিতের৷ হয় পূর্বে “তাও” মতাবলম্ী 
ছিলেন, নতুবা “তাও ও “বৌদ্ধ” উভয়-মতাবলম্বী ছিলেন। তাহাদের মধ্যে বিখ্যাত 
হই যন'২৪ (0০1 ৫৪7৮ খৃষ্টাব্দ ৩৩৩-৪১৬ ) বৌদ্ধ-দর্শন ব্যাখ্যা করিতে গিয়া 
অনবরতঃ “চুয়াউ, তত্'র (015091)8 755) বাক্য উদ্ধত করিতেন বলিয়া কথিত 
আছে। 

চতুর্থ শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্মের এই আকম্মিক শ্রেষ্ঠতা-লাত চীনদেশের চিস্তাধারায় এক 
নৃতল ঘুগের প্রবর্তন করিয়াছিল। তাহার প্রভাব প্রবল ও বহুযুগব্যাপী হইয়াছিল । 
কুমারজীব২৫ (খৃষ্টাব্দ ৩৪৪-৪১৩ ) সর্বপ্রথম ও সকলের আগে সংস্কৃত হইতে বৌদ্ধস্তত্র- 
গুলির বৃহৎ পরিমাণে অনুবাদ কার্য আরম্ত করেন। তাহার পর পরবর্তী যুগে বহু চীনা 
বৌদ্ধ পণ্ডিত এই অনুবাদ কার্য চালাইয়াছিলেন। তাছা সপ্তম শতাব্দীতে 'শ্বেনৃ 
চেলাডের২৬ ( ৮97) 01১85108 ) প্রচেষ্টায় পূর্ণসফলতা লাত করে। যে বহু বহু 


৮ 


চীনদেশীক়্ চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 

বৎসর এই কার্ষে ব্যয়িত হয় তাহার ফল এই অধ্যবসায় সার্থক করিয়াছিল, এই 
সার্থকতা অন্বাদগ্ডলির বিরাট পরিমাথ ও অলাধারণ সাহিত্যিক শ্রেষ্ঠতা । বৌদ্ধধর্ম 
চীনদেশে আসিয়া রোপিত হইল এবং জ্ঞাতসারে বা অভ্গতসারে চীনের বৌদ্ধর! তাহাদের 
নিজস্ব সম্প্রদায় বা গোঠী প্রতিষ্ঠিত করিল, তাহা “ত সুউ ০২৭ (58:08 ) নামে পরিচিত। 
যদিও প্রত্যেক সম্প্রদায়ই কোনও সংস্কৃত বা পালি স্ত্র তাহাদের মতরাদের মুলে বলিয়া 
দাবী করে, তথাপি বাস্তবিক তাহার! চীনদেশের নিজস্ব ধারায় কালক্রমে বৌদ্ধ মতবাদের 
নান! পরিবর্তন করিয়াছে । এই প্রকারের দশ বা ততোধিক সম্প্রদায় ছিল এবং তাহার 
অনেকগুলিই হীনযান অপেক্ষা মহাযানেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইহাদের মধ্যে কেবলমাত্র 
“চিন্‌ তুকুঙ ও (21010 080750)8-_পিবিত্র ভুমি সম্প্রদায়” )২৮ এবং “চেন-যেন-স্থঙও 
(০1261) 21058108 ) নামাস্তরে “মি সুঙডও (101 [50:58 )২৯, এই দুইটি 
সম্প্রদায়কে প্রধানতঃ ধর্মসম্প্রদায় বলা যাইতে পারে $ অন্য আটটি ধর্ম অপেক্ষা দার্শনিক 
মতবাদের সহিতই সংশ্লিষ্ট । এই শেষোক্ত সম্প্রদায়গুলি দার্শনিক মনের জ্ঞান-পিপাসা 
মিটাইত, প্রথমোক্ত সম্প্রদায়গুলি অকল্সশিক্ষিত ও স্থুল-মনা জনসাধারণকে দেবতাদের 
বিগ্রহ, নৈষ্ঠিক পূজার প্রথা-পদ্ধতি, স্বর্গ ও নরক সম্বলিত ব্রন্গাণ্ডের ধারণা শিক্ষা দিত। 
কন্ফিউসিয়ান্‌ নীতিবাদ সাধারণ লোকের মনে অলৌকিক বিশ্বাসের যে স্থান শুন্য রাখিয়া- 
ছিল, এই সম্প্রদায়গুলি সেই শুস্তস্থান কতকট! ভরিয়া দিতে সমর্থ ছিল । 

প্রায় ছয় শতাব্দী বৌদ্ধ-দর্শনের প্রবলতম প্রভাবে থাকিয়া! চীনের স্বকীয় প্রতিভা 
আবার তাহার নিজস্ব পথে ফিরিয়া আসিয়াছিল । কনৃফিউসিয়ান্‌ মতবাদ বৃদ্ধির দিকে 
চলিল। এই মতের প্রাচীন আকার হইতে পার্থক্য স্চনা! করিবার জন্য এই মতবাদকে 
বর্তমানে “নব-কন্ফিউসিয়ান্‌ মতবাদ, ( ?ব০০-007800518121500 ) বলা হয় । এই 'নব- 
কন্ফিউসিয়ান্* বাদের কয়েকজন প্রধান ব্যাখ্যাতা কেবলমাত্র কন্ফিউবিয়ান্‌ শাস্ত্রে 
পাণ্ডিত্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন না, তাহার! পূর্বে বৌদ্ধশান্ত্রেও গবেষণা করিয়া- 
ছিলেন। বৌদ্ধ শান্ত্রে ও বৌদ্ধ চিন্তা-পদ্ধতিতে (20509901085 ) জ্ঞান লাভ করিয়া 
তাহারা কন্ফিউসিয়ান্‌ বাদকে একটি নৃতন আধিতৌতিক বাদে (25569913551565 ) 
আকারিত করিয়াছিলেন। এই নৃতন কন্ফিউসিয়ান্‌ দর্শনকে পূর্বে গলি তত্রয়ে”৩০ 
(14 75825 ) নাম দেওয়া হইত। কিছু কাল চীনদেশের পণ্ডিতদের চিন্তাধারায় 
একটি অতিন্ন ও প্রবল গতিতে এই মতবাদ প্রস্থত ছিল। পরে ইহা ছুইটি ভিন্ন তিন 
স্প্রনায়ে বিভক্ত হুইয়া যায় । একটির নেতা ছিলেন-__“চেন্‌ বি, (500217 %+-খ্টাব্দ 
১০৩২-১০৮৫ )৩১ এবং “চু তি” (000. 7751 শুষ্টাব্দ ১১৩০-১২০০ )৩২। উভয় 
নেতার মতবাদ ছিল যে মান্থষের আত্ম-সম্থিতের বাহিরে কতগুলি চিরন্তন সত্য ( চ:৮521591 


] 
ও 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


1১170082155 ) আছে ( যাহাকে প্লেটোর “'আদিম-রূপ” বা] 1695-এর সহিত তুলনা 
করা যাইতে পারে )। অন্য সম্প্রদায়ের নেতা! ছিলেন প্রথমতঃ “লু চিযু ন্‌? ( [5 014 
১৪০0 খুষ্টাক্দ ১১৩৯-১১৯১)৩৩ ও পরে 'যিওশুজেন্‌' (৬876 91১০০-]০17-- 
খৃষ্টাব্দ ১৪৭২-১৫২৮ )৩৪ | ইহাদের মতবাদ ছিল যে মানুষের মন বিশ্ব-মনের” (008- 
51:58] 1+11150 ) প্রকাশ এবং এই বিশ্ব-মন' প্রাকৃতিক সকল নিয়মের নিয়ন্ত্রা। এই 
প্রসঙ্গে আমি “চু ত.সির' পুনরুল্লেখ করিতে চাই। কনৃফিউসিয়ান্-বাদের প্রাচীন গ্রন্থ- 
গুলির উপর তিনি যে সকল তাম্য করিয়াছিলেন তাহা অনেক শতাব্দী ধরিয়া চীনের শিক্ষা- 
প্রণালীর উপর প্রবল প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল,__তাহার ভাস্গুলিই চীনের রাজাদের 
সমথিত কনৃফিউসিয়ান্বাদের একমাত্র কর্তৃ পক্ষের অনুমোদিত তাব্য বলিয়া গৃহীত হইত । 
১৫৮২ খুষ্টাবে “মাত্েয়ো রিচি” (19৮৮০ 81০০1 ্ৃষ্টাব্দব ১৫৫২-১৬১০ )৩৫ 
চীনদেশে আসেন । একদল নির্বাচিত জেস্ুয়িট্‌, (55810) ধর্মপ্রচারকদের দলের 
সঙ্গে তাহার আবির্ভাব চীনের মানসিক রগি-ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ঘটনা | তিনি এবং 
তাহার সঙ্গীরা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ ছিলেন এবং তাহারা সঙ্গে আনিয়াছিলেন পাশ্চাত্য 
দর্শন এবং ধর্মতত্ব ও তাহার সহিত তৎকাল পর্যন্ত সমৃদ্ধ পাশ্চাত্যের গণিত-মুলক ও ভূত- 
তত্ব-মূলক বিজ্ঞান। তাহারা অবিলম্বে চীনদেশের ভাষা 'শিখিতে আরম্ভ করেন। 
রিচিসাহেবের চীনাভাষায় লেখা ইউক্লিড-জ্যামিতি সাহিত্য ও বিজ্ঞান উভয় হিসাবেই 
একটি শ্রেষ্ঠ রচন1 বলিয়! সমাদরে গৃহীত হয়। প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে 
রিচির পদান্থসরণ করিয়া অন্যান্থ পণ্ডিতব্যক্তি পাশ্চাত্যখণ্ড হইতে চীনে আসেন । চীন 
সরকার কয়েক বৎসরের জন্য “আডাম শ্বাল' ( 49910 5019]1 )৩৬কে সরকারী মান- 
মন্দিরের তত্বাবধানে নিযুক্ত করেন, বিদেশী বৈজ্ঞানিককে এই সম্মান দান অসাধারণ । 
“ফাদিনাণ্ড ভেরবিয়েষ্ট ( 657:91027.0 52559 )৩৭ এই সম্মানের পদে নিযুক্ত 
হইয়াছিলেন। তিনি চীনদেশে জ্যোতিবিগ্ভার উন্নতি-সম্পাদনে যথে্ট সহায়ত] করিয়া- 
ছিলেন ও চীনের পঞ্জিকা-সংক্ষারে সাহায্য করিয়াছিলেন | “টেরেঞ”৩৮ (20605 ) 
ও 'গেরবিলিয়ন,৩৯ ( 36711107 ) খ্যাত-নাম। ভূত-তত্ববিদ ও গণিত-বিদ্‌ ছিলেন। 
“'আলেনি”'৪০ ( £১15121 ) চীন ভাষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার বিভিন্র-বিভাগের গ্রস্থাবলী অনুবাদে 
বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। চীনে এই নুতন পাশ্চাত্য জ্ঞান-প্রবর্তনের যুগ ইউরোপে 
'গালিলেয়ো” ( 3811159 ) | “নিউটন” (০৬001) ) ও “লাইবৃনিঝের (155152125) 
যুগের সমসাময়িক | এতৎপ্রসঙ্গে আমার এই মনে হয় যে, যে আধুনিক বিজ্ঞান “জেস্য়িট”রা 
(]553165 ) চীনে দেশে এইভাবে আনিয়াছিল তাহা যদি আরও তাল করিয়া চীনবাসীদের 
মনের গতি মুখী করা যাইত বা বদ্ধমূল হইয়া পড়িবার, সংহত হইবার ও বহুল-বিস্তারের 


নী 


১৪ 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


আরও হুযোগ-স্থবিধ! পাইত, তবে ইউরোপ যেমন প্র যুগে আধুনিক কৃষ্টি লাভ করিয়াছিল, 
চীনদেশে তেমন হইতে পারিত ও চীনের, তথ! সারা প্রাচ্যখণ্ডের, সমগ্র কুটির ধারা 
ধদূলাইয়া যাইতে পারিত। দুর্ভাগ্যবশতঃ চীনে আগত এই পাশ্চাত্য পণ্ডিত-প্রচারকদের 
মধ্যে ছুইটি মতি-গতির' বৃদ্ধি হওয়ায় এই পাশ্চাত্য জ্ঞান-প্রবাহ মন্দগতি হুইয়া যায়। 
ফলে পাশ্চাত্যের সহিত এই নৃতন কষ্টির গ্রন্থি, তখনও দুর্বল ও শিথিল, ছিন্ন হয়। প্রথম 
দুর্ঘটনা হইল এই যে “জেন্য়িট” (16541 ), ফ্রান্সিক্কান, ( চা8175350215 ) এবং 
ভমিনিকান্* (79925328587) ) এই তিনটি সঙ্ঘের মধ্যে খুষটধর্মে দীক্ষিত চীনাদের পৃজা- 
পদ্ধতি কিরূপ হইবে তাহা নিয়া অবিরত ঝগড়া-বিরোধ চলিতে থাকে। দ্বিতীয়তঃ 
'জেন্ুয়িট"র রাজদরবারের নানা কুটিল নীতিতে অতিরিক্ত মনযোগ দিতে থাকে ও ফলে 
নিজেদের তাহাতে জড়াইয়া ফেলে। পাশ্চাত্যের সহিত এই কষ্টির গ্রস্থিচ্ছেদ আরও 
পরিতাপের বিষয় এই জন্য যে অল্প সীমার মধ্যে ও চীন ইতিহাসের স্বল্পকালের মধ্যে 
তাহাদের কষ্টিসম্বন্ধীয় কার্যকলাপ অনেকট1 সফল প্রসব করিয়াছিল । যাহা হউক, ষে 
বৈজ্ঞানিক মনোবুত্তি তাহার] চীনদেশে প্রবর্তন করিয়াছিলেন তাহা রহিয়া গেল, চীনে 
পরবর্তীকালে শব্দ-তত্ব-মূলক গবেষণার প্রসার, প্রাচীন গ্রন্থের লিপি-উদ্ধার ও ত্বিষয়ক 
সমালোচনা এবং জ্যোতিবিগ্ভা, ভূগোল ও গণিতের অধ্যয়ন তাহার প্রমাণ । উনিশ 
শতাব্দীর মধ্যভাগে এই ছিন্ন গ্রন্থির উদ্ধার ও সংযোজন হয়, চীন ও পাশ্চাত্যের মধ্যে 
কৃপ্টিগত যোগের পুনরারস্তে এবং তাহার ফলে চীনদেশবাসীদের মধ্যে আবার নূতন করিয়া 
পাশ্চাত্য দর্শন-বিজ্ঞান নূতন উৎসাহ ও আগ্রহের সহিত অধ্যয়নের অন্দোলন হয়। বিশেষতঃ 
উনিশ শতাব্দীর শেষ তিন দশকে চীনদেশীয়দের জীবনের প্রত্যেক দিক আধুনিক বৈজ্ঞানিক 
আদর্শে সমালোচনা, যাচাই ও স্থবিস্তস্ত করার চেষ্টা আরম্ভ হয় এবং এই আত্ম-সচেতন 
প্রচেষ্টার পশ্চাতে প্রধানতঃ ছিল চীনের “নয়া-কুষ্টি আন্দোলন” (টব তত্৮ 0০010016 
1$০৮৪০61)0) যাহা ভাঃ হু শ্বী,৪১ (102. ও 9191) ) ও তাহার সঙ্গীরা ১৯১৭ 
সনে প্রবর্তন করেন। এই কুপ্টি-সংযোগ ও তাহার ফলে নান! ক্ষেত্রে নানা প্রচেষ্টা 
এখনও দেখা যাইতেছে ও বর্তমানে বহুল হইতেছে । ভবিষ্যতে আরও হুইবে। 


৩। চীন্নেল্র ভি্ভাশ্বালা এখান অ্রন্দান্ম হলম্পিউ্য ওকি 


ইতিহাসের এই পশ্চাৎপটে লক্ষ্য রাখিয়া আমরা চীনদেশীয় চিন্তাধারার কতগুলি 
বিশেষত্ব সম্বন্ধে মন্তব্য করিতে পারি। এই সকল বৈশিষ্ট্য চীনের কৃষপ্টিগত উত্তরাধিকারের 


১১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


একটি বিশেষ অংশহ্বক্ধপ এবং চীনবাসীদের জীবনযাত্রাপ্রণালীতে ইহাদের বহুল প্রভাব 
বতিয়াছে। . রা | 

প্রথমতঃ চীনদেশীয় চিন্তাধারা মূলে মানবতা-ধমী (7707987195০ )1 কনৃফিউ- 
সিয্লাসের নীতি-দর্শনের (61০81 955050 ) . প্রধান কথা,-_মান্ুষের পরম্পর-সম্বন্ধ 
উন্নততর ও স্থুসঙ্গত করা । ইহার প্রথম কথা, প্রত্যেকজনের আত্মান্ুশীলন এবং শেষ 
উদ্দেশ্য “জেন; (151 ) বা মাঙ্ষের প্রতি সন্ধদয়তা বোধ (170000917-1)581:65018553 ) | 
ইহার তাৎপর্য অন্যলোকের প্রতি অকপট ভালবাসা! ও সঙ্গীভাব। মেন্সিয়াস (146. 
০1015 ) বলেন £ “আমার পরিবারে বৃদ্ধদের প্রতি উপযুক্তরূপ ব্যবহার আমার কর্তব্য ও 
এই ব্যবহার অন্তান্ত পরিবারের বৃদ্ধদের প্রতি প্রস্থত করিতে চাই। আমার পরিবারস্থ 
কম-বয়স্কদের প্রতি ও উপযুক্ত ব্যবহার ও অন্যান্য পরিবারের কম-বয়ক্ষদের প্রতি সম- 
ব্যবহার উচিত মনে করি । “যি' (%?) বা ন্যাধ্যতা বোধ “জেনে'র একটি প্রধান প্ররি- 
পৃরক গুণ (50021500210015 168০ ) |  কিনৃফিউপিয়াস্‌” (0০90:£0০15) বলেনঃ 
উচ্চ-মণ। ব্যক্তি বোঝে গ্যায্যতা, নীচ-মনা বোঝে লাভ | লি” (14) যাহাকে ভুল 
করিয়! “ক্রিয়াকাণ্ড' ( 7২1688] ) বলিয়া অনুবাদ করা হয়, তাহার প্রকৃত অর্থ ম্তায্যতা ব৷ 
্যাষ্যব্যবহার বা আত্ম-সংযম। কন্ফিউপিয়াসের মতে ইহা! সম্পূর্ণ হয় “য়ে” (961) ) 
বা সঙ্গীতে (1051০ ),_যে সঙ্গীতের প্রভাবে মানুষের প্রকৃতি শান্তি ও মিলনের দিকে 
ঘায়। পরবর্তীযুগগুলির শিক্ষা-প্রণালীতে সঙ্গীত-সাহকার্ষে মানুষের মন সরস রাখার 
অভাব বা ইহার প্রতি অবহেলার জন্যই কন্ফিউসিয়াসের নীতি-শান্ত্র অপেক্ষাকৃত কঠোর 
এবং সন্কীর্ণ বলিয়া মনে হয় । 

দ্বিতীয়তঃ চীনদেশীয়দের চিন্তায় ও জীবনে এই মানব-ধগিতার প্রবল প্রভাবহেতু চীনা 
মন অলৌকিক বিষয় হইতে অপস্য়মান | কনৃফিউসিয়াস্‌ বলিতেন £ ন্াধ্যতা-ধর্ম গ্রহণ 
করিবে জনসাধারণের হিতার্থে। স্বর্গীয় ও পাথিব দেবতাদের সম্মান করিবে, কিন্তু দুরে 
রাখিবে |” কনৃফিউসিয়াস্‌ কখনও দৈত্য-দানব, দৈহিক অসমসাহপসিকতা-প্রদর্শন,* অসংযত 
ক্রিয়াকলাপ বা শ্বর্স্থ দেবতার্দের কথা বলেন নাই। কখনও কখনও স্বর্গের উল্লেখ 
করিয়াছেন বটে, কিন্তু শ্বর্গের অর্থ তাহার কাছে ছিল পরমপুরুষ, € 5010:5795 [51206 ), 
“বিশ্ব-মন' (00101৮21591 21117 ) নীতির রাজ্য (7১10751 [58100 ) বা আদিম 
মূলতত্ব' ( চাট 6115০101655 ) 1 একথা সত্য বটে যে তিনি ও তাহার শিষ্যবর্গ 
কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা বা প্রারুতিক বিপর্যক্নকে নিয়ন্ত্রাদের স্থ বা কুশাসনের লক্ষণ 
বলিয়া মানিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিস্ত তাহাদের এই সদ্‌ৃতিপ্রায় ছিল, যে কোনও বিরাট 
বাস্তব ঘটন! মানুষকে উৎসাহ দিতেছে কিম্বা সতর্ক করিতেছে এইক্ধপ প্রতিপন্ন করিয়া 


১২. 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


রাজাকে ও তাহার কর্মচারীদের সংপথে চালন! কর! বা তাহাদের 'ন্বৈরভাব সংযত কর! । : 
ফসলের প্রাচুর্য বা অনটন সাধারণতঃ প্রজাদের প্রতি রাজার পিতৃভাবের জদ্য অথবা 
তাহার দৌরায্্যের জন্য হুইয়াছে বলিয়া তাহার] সাধারণতঃ ধরিয়া লইতেন। মানুষের 
গুণাবলীর মধ্যে পিতা-মাতার প্রতি ভক্তিকে কনৃফিউসিয়াস্‌ উচ্চন্থান দিতেন এবং পূর্ব 
পুরুষদের পূজার অনুমোদন করিতেন,__ধর্মের জগ্য নয়, কিন্ত এই হেতু যে তাহাতে স্বর্গত 
পিতা-পিতামহদের সশ্রদ্ধ স্মতি স্থায়ী হয় এবং পরিবারের ভাল ভাল সংস্কার ও দৃষ্ান্তগুলি 
সম্তান-সম্ততিদের জন্ত থাকিয়। যায়। পূর্বপুরুষদের পৃজার সঙ্গে বিগ্রহ-পুজাও থাকিত, 
এবং এই উভয় হইতেই সাধারণ লোকের! কিছু মানসিক শান্তি ও পরমাথিক সাত্বনা 
পাইতে পারে। কিন্তু বিগ্রহ-পুজা গ্রা্থ হইয়াছিল যেমন মতানৈক্য গ্রান্থ হইত, ইহাকে 
কখনও কোনও দার্শনিক সমর্থন দেওয়া হয় নাই। 

অলৌকিক বিষয় সম্বন্ধে চীনদেশীদের কৌতুহল শ্বক্প--প্রায় নাই বলিলেই হয়|. 
তাহার প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের মিলাইয়া দিয়া ও প্রকৃতিতে আনন্দ খুঁজিয়াই সন্তুষ্ট | 
তাহাদের মনের এই ঝোঁক অধিকাংশে “তাও' ধর্ষের প্রভাবের ফল, বিশেষতঃ “চুয়াঙ, 
তত্র (010955 হত) শিক্ষার | চীনা কবি ও পশ্িতেরা নিথিচারে ভালবাসে 
প্রকৃতির সৌন্দর্যে মত্ত হইয়া থাকিতে বা নদী-পর্বত-শালিনী মাতা ধরিত্রীর বুকে নিজেকে 
হারাইয়া ফেলিতে। সেই জন্ত চীনদেশীয় চিত্র-কলায় কোনও ভু-ভাগের দৃশ্ঠ 
(1:50055925 ) যে স্থান পায় তাহা অদ্বিতীয় ও অতুলনীয় । যাহারা প্রকৃতিকে 
ভালবাসে তাহারা প্রকৃতিকে জয় করিতে ত চাহেই না, বরং তাহাকে মনের মধ্যে 
মিলাইয়! দিতে চায় এবং তৎপরে তাহা! বর্ণে ও রেখায় ফুটাইয়া তুলিতে চায় অথবা 
কবির কল্পনা-মালার আকারে গাথিতে চায়। চীনের দার্শনিকদের মধ্যে একমাত্র শিং, 
তক” (17518 28) প্রকৃতিকে জয় করিবার মত ধারণ করিতেন, কিন্তু তাহার 
অন্ুসরণকারীরা কখনও সেই মতে দৃঢ়তার সহিত জোর দেন নাই । সেই জন্য প্ররুতি- 
বিজ্ঞানগুলি (76175570981 3০151)০55 ) চীনদেশে পাশ্চাত্যখণ্ডের সহিত সম্পর্ক-স্থাপনের 
কাল পর্যন্ত কখনও নিয়মিতভাবে বাড়িতে পারে নাই। 

তৃতীয়তঃ চীনা মন এ্রহিক ও সহিষ্ট। যখন এই মন কোনও ধর্ম গ্রহণ করে, সেই 
ধর্মে যদি কোন অসহিষুতার ভাব থাকে তাহা সাধারণঃ এবং প্রায়শঃই অলক্ষিতে লোপ 
পাইয়া যায় । একটি ঘরোয়া প্রবচন এই £ ধর্মমত অনেক হুইতে পারে, যুক্তি কিন্ত 
এক” | যুক্তির সঙ্গে অসহিষুতা চলে না,__-গৌঁড়ামিত নয়ই । ধর্মবিষয়ে সহিষুণতার 
অর্থ সকলকে ধর্মকার্ষে স্বাধীনতা দেওয়া ও সকল ধর্মমতের সমান স্থান স্বীকার করা । 
অনেক সময়েই দেখা যায় আধুনিক কোনও চীনা পরিবারে লান! ধর্মের অধিষ্ঠান ঃ পিতা 


৬৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


হয়ত বৌদ্বধর্মাবলম্বী, মাতা “তাও” ধর্মী, পুত্র খৃষ্টান এবং এ সব পার্থক্য লইয়! কেহ ব্যতি- 
ব্যস্ত হয়না । ধর্ম নিজের মনোনয়নের বিষয়, এমন কি কখনও বা নিজের রুচি-অন্থুযায়ী, 
এবং অন্তের হস্তক্ষেপ বা পরিবর্তনের চেষ্টা হইতে ইহা! সম্পূর্ণ মুক্ত থাক! উচিত। চীন- 
দেশে কখনও রাষ্ট্রধর্ম অর্থাৎ কোনও প্রণালীবন্ধ এবং পারজ্্িক ধর্ম ছিল না, কোনও 
রাষ্র-স্থাপিত ধর্ম-প্রতিষ্ঠান বা বিধান-___অন্ুবর্তীতা গ্রহণের আন্দোলন (00132927915 
2105670677৮) ছিল না৪২। সুতরাং ধর্ম লইয়া ছুইপক্ষে যুদ্ধ চীনদেশবাসীদের 
সম্পূর্ণ অভাবনীয় | চীনদেশীয়েরা সেই জন্য খুষ্টনদের ধর্মযুদ্ধ (05596 ) বা ধর্মমূলক 
কোনও যুদ্ধ (78০15 ৬/৪:) যে এককপ ব্যাপার তাহা সহজে বুঝিতে বা বুঝাইতে পারে 
না। চীনের চিত্তাধারায় বা ইতিহাসে ধর্মমত বিচারের প্রথা (11758510101) ) বা 
ধর্মসন্বন্বীয় গ্রস্থাবলী হইতে ভিন্বমত-পোষক গ্রন্থগুলি ছাটাই করিয়৷ দেওয়ার রীতি 
(1170০ ) নাই। 

ধর্মবিষয়ে সহিষ্ণুতা আছে বলিয়াই চীনবাসীদের সর্বপ্রকার যতবাদ বিচারে সহিষ্ণুতা 
আছে। যে কোনও নূতন মত,__তাহ। বৈজ্ঞানিক, কি দার্শনিক, কিংবা রাষ্ট্রনৈতিক হউক 
- চীনাদেশীয়েরা পাইবামান্র খোল! মনে গ্রহণ করিয়৷ আত্মস্থ করে। কোপারনিকাসের, 
(00921086005 ) “ডারউইনের* (1217571) মতবাদ তাহাদের আপন জন্মস্থান 
পাশ্চাত্যখণ্ডে অনেক বিসম্বাদ উত্তীর্ণ হুইয়! প্রচারিত হইতে পারিয়াছিল এবং অনেক 
নির্যাতনের পর গ্রাহ্থ হইয়াছিল। কিন্তু চীনার! অন্দেশীয় হইলেও এই নূতন তত্বগুলি 
যখন প্রামাণ্য গ্রন্থ ও অকাট্য প্রমাণ হইতে জানিতে পারিল তখন তাহার সহজেই গ্রহণ 
করিয়াছে । অতি-মাত্রায় সহিষুণতার ফলে মনের এমন একটা অবস্থা জন্মিতে পারে 
যাহাতে সকল তত্বের প্রতিই একট! প্রায় মানসিক ওদাসীন্যের তাৰ আসিয়! যায় । কিন্তু 
এই সহিষ্ণুতার জন্য চীনবাশীদের নৃতন নৃতন জ্ঞান আয়ত্ত করিবার স্ববিধ! হইয়াছে । 

চতুর্থতঃ চীনদেশের চিন্তাধারায় সাম্যবাদ (1677051905 ) প্রবল ও প্রত্যক্ষ । 
প্রধানতঃ “কন্ফিউসিয়ান্‌* বাদের মানব-ধিতা ( [75019171920 ) হইতে ইহার উৎপত্তি, 
কিন্ত এই সাম্যবাদে অন্তান্ত উপদেষ্টার শিক্ষাগুলিরও আপন আপন অংশ আছে, ষথ৷! 
চ্ড. ত্র (01009175125) “সকল বস্তর সাম্যকরণ' বাদ ও মোতক্ু'র( 20০ 
শত) বিশ্ব-প্রেষ' নীতি | গণ-তগ্ববাদের শ্রেষ্ঠ প্রচারক ছিলেন “মেনপিয়াস” (761১4 
০1005) তীহার রাষ্্র-দর্শনে (০91161591 15195009195 ) তিনি সর্ববিষয়ে জন- 
সাধারণ মান-নিবূপণ করিবে এই মত গ্রহণ করিয়াছিলেন। দেবতাদের ইচ্ছা তাহার 
মতে জনসাধারণের ইচ্ছার মধ্য দিয়া ব্যক্ত হয়। মেনসিয়াস্‌ বলিতেন £ “সর্ব-প্রধান 
জনসাধারণ এবং তাহার পরে রাষ্। শাসকের স্থান সর্বাপেক্ষা লঘু ।' আরও 


১৪ 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ €ৰশিষ্ট্য 


বলিতেন : “রাজ-তস্ত্র প্রতিষ্ঠানের সার্থকতা কেবল সৌকার্ষের জন্ত। রাজার কোন 
দেবত্ব নাই। প্রাচীনকালের খধি-রাজারা, 'যাও* (৬৪০ )৪৩ এবহ *শুন্৪৪ (81১2, ), 
আমাদেরই সম-জাতি |” গুরুতর ছুঃশাসন বা রাষ্রক্ষেত্রে অত্যাচার হইলে বিপ্লব সম্পূর্ণ 
সমর্থন-যোগ্য | প্রাচীন প্রামাণ্য গ্রন্থ পরিবর্তন-বিষয়ক নিবন্ধে” (০০1 ০৫ 
01:8:385” ) লিখিত আছে যে তউ৬ ৪৫ (0128 ) এবং “ফু”৪৫ (৮৬০ )--ছই জন 
প্রাচীনকালের ধধি-রাজা-_যে বিপ্রবগুলি চালাইয়াছিলেন সে সকল দেবতাদের আজ্ঞায় 
এবং মানুষের ইচ্ছা অনুসারে । এই মতবাদই মেনৃসিয়াস সোৎসাহে সমর্থন করিয়াছিলেন। 

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে “হবঙ, চুউ, তসি, ( [নুত্2196 €010081)6 [75/--১৬১০- 
১৬৯৫ খুষ্টাব্ব )৪৭ মেনৃসিয়াসের এই সকল গণতাস্ত্রিক মতবাদ পুনরুজ্জীবিত করিয়াছিলেন । 
তাহার “শাসক বিষয়ক (01 চ২.এ1০1 ) এবং প্রজা বিষয়ক” (0) 9৮3০০) নামক 
ছুইখানি প্রসিদ্ধ নিবন্ধ “রাজাদের ঈশ্বর-দত্ত অধিকার” (1701ড1126 চ1516 01 73755 ) 
মতবাদের প্রতি দীপ্ত ও প্রবল আক্রমণ | শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক যে চুক্তির উপর 
নির্ভর করে এই মতের যে তেজস্বী ব্যাখ্যান হুবঙের নিবন্ধ ছুইটিতে আছে তাহার সহিত 
বর্তমান কালের ইতিহাসে প্রায় আধুনিক যুগে রচিত রূসোর € £005569 ) 'সমাজ- 
সংগঠনের চুক্তি'র (0০2০00008০0 59০151--১৭৬২ ) তুলনা হইতে পারে। কিন্ত 
“হবঙে"র গ্রন্থ রূসোর নিবন্ধের প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে প্রকাশিত হইয়াছিল । তাহার 
জীবিতকালে “ত সিউও (7755 ) ও মান্ছু” (91501১0 ) বংশের সম্রাটদের শাসন- 
ক্ষমতা সর্বোচ্চে ছিল বলিয়া তখন তাহার প্রভাব অনুস্ভূত হয় নাই, কিন্তু উনবিংশ 
শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমে তাহার মতাবলম্বী সম্প্রদায়ের পুনরুখান 
হয়। তাহার উক্ত দুইটি নিবন্ধ সম্বলিত “মিও. যি তাই ফণ্ড লু*৪৮ (2176 2 581 
ঢ০25৭ [এ ) নামক গ্রন্থ পুরু দ্রিত হয় এবং তাহার লক্ষ লক্ষ খও্ড বিতরিত হয়। যে 
বিপ্লবী আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সনে চীনদেশে সাধারণ-তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাহার সমর্থন, 
ও পরিপোষণ উৎসাহ বর্ধন কল্পে এই গ্রন্থ-বিতরণ হইয়াছিল। 

কেহ এই প্রশ্ন সম্পূর্ণ সঙ্গতভাবেই উথাপন করিতে পারেন যে চীনদেশে গণ-তান্ত্িক 
মতের এত সম্পদ-প্রাচুর্য সত্বেও আধুনিককালে চীন কেন অন্যান্য দেশের পূর্বেই গণতান্ত্রিক 
শাসন-নীতির প্রতিষ্ঠা করিতে পারে নাই । ইহার কতগুলি সমাজগত ও রাষ্ঈগত কারণ 
অবশ্ঠ দেওয়া যায়| কিন্তু যাহার] দার্শনিক চিত্তাধারার ইতিহাস গবেষণা করিয়াছেন 
তাহারা এই কারণ পাইবেন যে কনৃফিউসিয়ান্‌ নীতি-বাদ ও “নিয়ম-পদ্ধতি” (15881150) 
সম্প্রদায়ের রাষ্্রীয় নিয়ম (1৪ ) সম্বন্ধে ধারণা এই ছুইস্ের মধ্যে ছিল বছ-ব্যবধান এবং 
সেই কারণেই কনৃফিউসিয়ান্‌ সম্প্রদায়ের মহৎ রাস্্রীয় নীতিগুলি কোনও প্রতিষ্ঠানরূপে 


৯৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


গড়িয়া! উঠিতে পারে নাই। “মোত্* সপ্প্রদায়ের পতনের ফলে রাস্্ীয় ও সামাজিক সংস্কার 
বিষয়ে চীনদেশীয়দের প্রচারের উৎসাহ কমিয়া যায়। তৎসত্বেও চিরকালই কিছু 
পরিদৃশ্যমান কিছু ব৷ লুক্কায়িতভাবে চীনদেশের সমাজে একটি গণতন্ত্রতার অন্তঃশ্রোত ছিল। 
সরকারি কার্ষে ক্ষমতাপন্ন কর্মচারী নিয়োগের জগ্ঠ চীনদেশে বহুযুগ হইতে যে সর্ব- 
সাধারণের লত্য পরীক্ষা-প্রতিষ্ঠান ছিল তাহাতে জাতি-বিচার বা শ্রেণী-বিচার নিফাশিত 
হুইত। বিশেষতঃ চীনের ভিতরে ও গ্রাম্য অঞ্চলগুলিতে পিতার অধিকার সম্বন্ধে ব্যাপক 
ধারণ! প্রত্যেক পরিবারের আয়তন-প্রাচুর্য ও স্থানীয় ছুংস্থদের সাহায্যের নান! প্রথা-_ 
এই সকল অতীতে মহৎ সামাজিক সাম্য-পোষক (50০19115136 ) শক্তিরূপে কার্য 
করিয়াছে এবং বর্তমানেও করিতেছে সন্দেহ নাই । 
কন্ফিউসিয়াসের যে “তা-তুউও ([5-7076 ) বা বৃহৎ গণ-রাজ্যে'র (02:58€ 
€002909018579810]) ) কথ! বলিয়াছেন, যাহা মানব জীবনের রা্ীগত, সমাজগত, অর্থ- 
নীতিগত ও কৃষ্টিগত সকল দিক্‌ ব্যাপ্ত করে-_তাহা সর্যযুগেই মানবজাতির আদর্শরাঞ্থ্ের 
নির্দেশকরূপে বর্তমান থাকা উচিত। কন্ফিউসিয়াসের বাক্য এই £ 
“যখন সেই মহান্‌ তাও? শক্তিমান ছিলেন, সমগ্র পৃথিবী ছিল এক রাজ্য । শাসকের 
তাহাদের বিজ্ঞতা ও ক্ষমতা অনুসারে নির্বাচিত হইতেন | পরস্পরের মধ্যে আস্থা ও 
শান্তি বিদ্ধমান ছিল। ক্ৃতরাং লোক সাধারণ কেবলমাত্র নিজেদের পিতামাতাকে বা 
সম্তানদিগকে পিতামাতা বা সন্তান বলিয়া বিবেচনা করিত না। বৃদ্ধের তাহাদের 
বার্ধক্যেও স্থথে থাকিতে পারিত ; যুবকেরা তাহাদের ক্ষমতার নিয়োগ করিতে 
পারিত ; অল্পবয়ক্কের বড়দের উপর নির্ভর করিতে পারিত, এবং স্হায়হীন বিধবার, 
পিতৃমাতৃহীনেরা, অসমর্থের। ও বিকলাঙ্গেরা যত্ব-শুশ্রীষা পাইত। পুরুষদের আপন 
আপন কার্য ছিল এবং স্ত্রীলোকদের ঘর-সংসার ছিল । যদি জিনিস-পত্র উদ্বৃত্ত হইয়া 
মাটিতে পড়িয়া! থাকিত, তাহা উঠাইয়া নিজেদের জন্য রাখিতে হইত না এবং যদি 
লোকের কার্য-ক্ষমতা থাকিত, তাহা কেবল নিজের লাভের জন্যই খাটাইবার প্রয়োজন 
হইত না। হ্ৃতরাং ধূর্তামি ও চক্রান্ত ছিল না এবং চোর-ডাকাত ছিল না এবং 
রাত্রিকালে বাহিরের ফটক বন্ধ করিয়া রাখিবার প্রয়োজন ছিল না । সে কাল “তা- 
তুঙও বা “বৃহৎ গণ-রাজ্যে'র কাল ছিল ।১৯ 


১৬ 


৪। শল্লিস্পেম্র 


চীনের চিন্তাধারার যে সকল উপাদান ও অভিব্যক্তির কথা পূর্বে বলা হুইয়াছে চীন- 
সত্যতা! তাহা দিয়াই গঠিত। এ সকলের দোষ-গুণ, সুবিধা-অস্থবিধ!, ভাল-মন্দ, ক্মরণীয় 
কীত্তি ও অপ্রীতিকর কুফল ছুইই আছে। তবুও এই দর্শন-শাস্ত্ের ক্রমব্যক্ত দৃশ্টপটের 
সামনে দীড়াইয়৷ আগ্রহ হয় ইহাকে সমীক্ষণ করিতে, সমালোচনা করিতে, ইহার তাৎপর্য্য 
নুতন করিয়া গ্রহণ করিতে । 

কিন্ত শ্রে্ঠতর বিষয় এই যে, আমরা কৃষ্টির সংযোগ, সংঘাত ও সমন্বয়ের এক নূতন 
যুগে আলিয়া পৌছিয়াছি। এখন প্রাচ্যখণ্ড প্রাচ্য ও পশ্চিমখণ্ড পশ্চিম নাই, কারণ 
ব্যবধান হাস হইতেছে ও মানুষের চিন্তাগুলি দূরে পাঠাইবার ও ধারণাগুলি প্রচার করিবার 
উপায় অবিরত বাড়িয়া চলিয়া_-প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ছুই দানবকে জোর করিয়া একক্র 
মিলাইতেছে। কোনও একটি অতিনব সভ্যতার জন্ম, হয়ত একটি বিশ্ব-মানবের সত্যতা 
অথবা সম্ভবতঃ নানা প্রকারের সত্যতা বিঘোষিত হইতেছে । পুরাতন বলিয়াই প্রাচীন 
কিছু তাহার আকার ও বস্ত রক্ষা করিতে পারে না এবং নৃতন কিছু সম্পূর্ণভাবে অতীতকে 
ঝাড়িয়। ফেলিয়া! জন্ম নিতে বা স্থিতিশীল হইতে পারে না, কারণ এই অতীত অন্তনিহিত,_- 
উত্তারাধিকারীদের প্রকৃতিতে জীবন্ত । ইহা! অভিব্যক্তির বিরাট নক্সার অংশ,__যাহার 
তাৎপর্য চিরপরির্তন, পশ্চাৎকে কাটাইয়া অগ্রগমন নয় । প্রগতির উদ্দেশ্য থাকা চাই,-_- 
আমাদের সম্মুখে ও অগ্রেস্থিত কোনও আদর্শ। নুতন এক কৃষপ্টিগঠনের স্থবিশাল কর্ম- 
প্রক্রিয়ার পূর্বে প্রয়োজন পৃথিবীর সকল চিন্তাশীল ব্যক্তিদের ভুয়োদর্শন ও উচ্চ আদর্শ, 
যাহাতে সহযোগ-বদ্ধ চিন্তা-ক্ষেত্রে যৌথ-চেষ্টাদ্বারা মানুষের পূর্ণতা-লাতের দিকে কির 
প্রগতি দ্রুত অগ্রসর করার মহৎ ব্রত সিদ্ধ হইবে । 


১৫ 


দ্ানিংশ পরিচ্ছেদ 
কমফিউসিয়ান্-বাদ ও তাও-বা 


৭ | 


প্রথমেই বলা দরকার যে “কনৃফিউসিয়ানিজ ম* (0০9765019154979) বা কন্ফিউতিয়ানূ 
বাদ একটি পাশ্চাত্য সংজ্ঞা । চীনদেশী “জু চিয়া' (0. ০319) নাম ইহার লমতুল্য, 
যাহার অর্থ “শিক্ষিতদের সম্প্রদায়” | এ পাশ্চাত্য সংজ্ঞাটিতে, চীনা নামটির মত, এই ইঙ্গিত 
পাওয়া যায় ন৷ যে এই সপ্প্রদায়াবলম্বীর! চিন্তাশীল, তথ৷ পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। ইহারা 
প্রাচীন সদ্গ্রন্থগুলির ( 61995155 ) শিক্ষক ছিলেন ও চীনের প্রাচীন কৃষ্টির উত্তরাধিকারী 
ছিলেন। এই কারণে চীন-সমাজে চিরকালই ইহারা প্রাক্তন এতিহের বাহক ছিলেন এবং 
ছুই সহ ৰংসরের অধিক এই সম্প্রদায়ের প্রচারিত মত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিতে এবং 
চীনদেশীয়দের 'দৈনিক জীবনে রাজার অননুমোদিত মতবাদ বলিয়! স্বীকৃত হইত । 

'তাও-ইজ মূ, (50-1900 ) বা 'তাও-বাদ'ও পাশ্চাত্য সংজ্ঞা | ইহা দ্ধর্থবোধক | 
ইহা দুইটি চীনা কথার সমতুল্য-__তাও চিয়।” ও “তাও চিয়াও' | যদিও এই ছুইটি 
বাক্যের মধ্যে তাও” কথাটি সাধারণ, কিন্তু তাৎপর্য্যে পার্থক্য আছে । “তাও চিয়া” একটি 
দর্শনের গ্োোতক ; “তাও চিয়াও একটি ধর্মের | দর্শনস্বরূপে 'তাও'-বাদের শিক্ষা ও ধর্ম 
স্বরূপে ইহার শিক্ষা কেবল পৃথক্‌ পৃথক নহে, পরস্পর-বিরোধীও বটে। “তাও”-দর্শনের 
মভবাদ প্ররুতিকে অন্থরণ করা $ “তাও'-ধর্মের মতবাদ প্রকৃতির বিরোধিতা করা । দৃষ্টান্ত 
্বক্ূপ--“তাও”-দর্শনের মতে প্ররুতির রীতি এই যে, জীবনের শেষে মৃত্যু আসিবে এবং 
মানুষের পক্ষে প্রকৃতির এই রীতি শান্তমনে মানিয়া যাওয়া উচিত। কিন্তু 'তাও'*্ধর্মের 
প্রধান শিক্ষা কিতাবে ও কি কৌশলে মৃত্যুকে এড়ানো যায়, যাহা স্প্টতঃই প্রকৃতির 
বিরোধাচরণ করা । বর্তমান পরিচ্ছেদে আমি “তাও”-বাদকে 'তাও'ন্দর্শন অর্থে গ্রহণ 
করিব, কারণ বাস্তবিক প্র অর্থে ই তাও” কনৃফিউসিয়ানৃ-বাদের প্রতিদন্দী। 

কন্ফিউসিয়ান-বাদ আদিতে সমাজ-সংগঠনের রীতি-নীতি বিষয়ক একটি দর্শন ছিল; 
কিন্ত আদিম “তাও"-বাদ সমাজ-বিরোধী ভাবাপন্ন দর্শন ছিল। কনৃফিউসিয়ানৃ-্বাদ 
মানুষের সামাজিক দায়িত্বগুলির উপর জোর দিত, কিন্তু তাও"-বাদের জোর ছিল মানুষের 
মধ্যে যাহা শ্বাতাবিক ও সহজাত তাহার উপর । চীনদেশীয়দের মম্যে একটি প্রচলিত কথা 
ছিল যে, কন্ফিউসিয়ান্-বাদ মূল্য দিত “মিঙ চিয়াও? (71778 01719০ ) অর্থাৎ সামাজিক 


১৮ 


স্হা. 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


সতন্ব-সচক নামগুলি শ্রিক্ষাকে, কিন্তু তাও*বাদ “তল জন্য (হও 0০0) স্বাভাবিক ও 
সহজকে | পাশ্চাত্য চিস্তাধারায় ঘে “ক্লাসিসিজম্* (019351515, ) রোমার্টিসিজ ত্র 
( £.০12150101570 ) বলিয়। দুইটি সংস্কারের ধারা আছে, চীনা দর্শনের এই দুইটি গতি 
তাহার মোটামুটি অনুরূপ । ইহারা যেন দুইটি শক্তির ছুই তৌল এবং তাহাদের পারস্পরিক 
প্রতিক্রিয়ায় চীন ইতিহাসে চীনা-চিন্তাপ্রণালীর পরিপুষ্টি লক্ষিত হয় । 


হু 1 ক্ম্বৃক্কি্উন্লিল্সান্ম লাক 


কন্ফিউসিয়ান্‌ মতাবলম্বী সম্প্রদায়ের তিনটি মহাপুরুষ-_“কন্ফিউসিয়াস্।, খুষ্টপূর্ব (৫৬১- 
৪৭৯ ), মেন্সিয়াস্‌*, ( খৃষ্টপূর্ব ৩৭১-২৮৯) এবং তিন তজ' (75887) [হ0- শৃষ্টপূর্ব 
প্রায় ২৯৯-২৩৪)। পূর্বেই বলিয়াছি যে অধিকাংশ কন্ফিউসিয়ান্বাদীরাই পণ্ডিত ও 
চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন। সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কনফিউসিয়াস্ও ইহার ব্যত্যয় ছিলেন 
না। অধিকন্ত তিনি একজন প্রধান শিক্ষাব্রতী ছিলেন | তাহার নিজের হর্দবোধ ছিল 
যে শিক্ষক স্বরূপে তাহার প্রথম কার্য তাহার শিষ্যবর্গের কাছে প্রাচীন কৃষ্টির তাৎপর্য 
বোধগম্য করা। সেইজন্যই তাহার নিজের উক্তি, যাহা তাহার শিষ্েরা লিপিবদ্ধ 
করিয়াছে, ছিল এই যে তিনি নিজে কিছু স্থ্টি করেন নাই, যাহা ছিল তাহাই বহন করিয়া 
আনিয়াছেন (০ 00216801977 /১৪০০০০ পম খণ্ড, ১ম অব্যায়)। কিন্তু ইহা 
কন্ফিউসিয়াসের প্রতিতার একদিকমাত্র, তাহার অন্যদিকও আছে । তাহা এই যে 
প্রাচীন গ্রস্থসমূহে লিপিবদ্ধ যে প্রতিহ্-গত অনুষ্ঠান ও ধারণাগুলি তিনি বহন করিয়া! 
আনিয়াছিলেন, তিনি স্বকীয় নীতিবাদের দ্বারা তাহার নৃতন অর্থ করিয়াছিলেন। 

ব্যক্তি ও সমাজ সম্পর্কে কনৃফিউসিয়াসের নিজের নীতিব্ষয়ক কতগুলি ধারণ! ছিল। 
তাহার মতে একটি সশৃঙ্খল সমাজ গড়িতে হইলে সর্বাপেক্ষ! গুরুতর করণীয় সংজ্ঞা-বিশুদ্ধি 
( 7.5০020961017. ০৫ 7327225 )। বস্তনিচয় প্রকৃতপক্ষে যে রূপে থাকে তাহায় নাম- 
গুলির সহিত তাহার সামঞ্জন্ত থাকা চাই। অন্যভাবে বলিতে গেলে, প্রত্যেক নামের মধ্যে 
কতকগুলি সাঙ্কেতিক ব্যঞ্জনা আছে যাহাদ্বারা এ জাতীয় বস্তর সারমর্ম আকারিত হয়। 
ইহার সহিত বস্তর সাম্য থাকা চাই । 

ইহা ঠিক প্লেটোর (2196০ ) মতবাদের মত শুনাইতে পারে ! কিন্ত প্লেটো 
ধরিয়াছিলেন এই মতের নৈয়ার়িক ও আধিভৌতিক দিক্‌; কন্ফিউসিয়াস্‌ লইয়াছিলেন 
ইহার নৈতিক তাৎপর্য | যে তত্বের উপর তিনি জোর দিয়াছিলেন তাহা এই যে 


৯৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সামাজিক সশ্বন্ধ-্ছচক প্রত্যেক সংজ্ঞা কতগুলি দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দেশ করে । পীচটি 
এইন্ধপ সামাজিক সম্বন্ধ £--পিতাপুত্র, শাসক-প্রজা, স্বামীব্ত্রী, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা-কনিষ্ঠ ভ্রাত।, 
বন্ধু-বান্ধব । এ সকল সামজিক সন্বন্ধ-সচক নাম এবং এইসব নাম যাহার! গ্রহণ করে 
তাহাদের নাম- নিদিষ্ট দায়িত্বগ্রহণ ও কর্তব্য সম্পাদন করিতে হইবে । যদি সমাজের 
প্রত্যেকেই এইরূপ করে, তবেই সমাজ মহাশাস্তিতে থাকিবে । 

ব্যক্তিগত সদৃগুণগুলির মধ্যে কনৃফিউসিয়াস্‌ শদয়-হৃদয়তা € 121-_জেন্‌ ) ও 
হ্যায়পরতা € %$_ যি) এই ছুই গুণের উপর জোর দিয়াছেন | ন্ঠায়পরতার অর্থ) যে 
কোনও অবস্থার “ওচিত্য” সমাধান, কারণ যাহা! উচিত তাহাই কর্তব্য । ইহা মানুষের 
একটি সুনিশ্চিত বাধ্যতামূলক ধর্ম (%095£011051 17075875615” ) সমাজে প্রত্যেকেরই 
কতগুলি কার্য আছে যাহা অবশ্ট-পালনীয় এবং যাহা ফল-নিরপেক্ষভাবে করিতে হয় । 
ইহা অবশ্থ নীতিধর্মের বাহিক আকার | কিন্তু সদয়-হৃদয়তা ইছার অপেক্ষা বেশী বস্তগত 
(০091০:265 ) ব্যাপার । সমাজে মানুষের কর্তব্যের সার-গুণ স্াষ্যতা বা! অবশ্য-কর্তব্যতা । 
কিন্ত ইহার বাস্তবিক মর্ম পরের প্রতি ভালবাসায়,_-€জেন্‌, অর্থাৎ সদয়-হৃদয়তায় । যে 
পিতা পুত্রকে ভালবাসে সে পুত্রের প্রতি যথা-কর্ত ব্য ব্যবহার করিবেই ; যে পুত্র পিতাকে 
ভালবাসে সেও পিতার প্রতি ষথা-কর্তব্য ব্যবহার করিবে । কনৃফিউসিয়াস্‌ বলিয়াছেন £ 
“সদয়-হদয়তা অন্যকে ভালবাসায়” (00115 00100001210 £১15812065, ১২, ২২) যে 
লোক অন্তকে ভালবাসে সেই নিঃসন্দেহ সমাজে তাহার কর্তব্যগুলি পালন করিতে 
পারিবে । 

কন্ফিউসিয়াস্‌ এই নীতিগত ধারণাগুলির পুষ্টিলাধন করিয়াছিলেন,_-মেন্সিয়াস্‌ তাহার 
মনোবিজ্ঞানগত ও দার্শনিক সমর্থন দিয়া গিয়াছেন। মেন্সিয়াসের একটি প্রসিদ্ধ মতবাদ 
ছিল এই যে মানুষের প্ররুতি মুলত সৎ । “সদয়-হৃদয়ত1? (752 ) মনুষ্য-প্রকৃতির অন্যথা নয়, 
ইহারই আন্তরিক | তাহার মতে সকল মান্থষেরই “এমন একটি মন আছে যাহা অন্তের 
দুঃখ সহ করিতে চায় না” (175 74 57,০103, ২ ক, ৬ )। ইহাকে তিনি নাম দিয়েছেন, 
“অপহনশীল মন” | “জেন্* বা সদয়-হপয়তার প্রকাশ কোনও ব্যক্তির পক্ষে তাহার 
“অসহুনশীল মনের” স্বাভাবিক ব্যঞ্জনা ॥ মেনৃসিয়াস্‌ এইভাবে কনৃফিউসিয়াস্-বধিত গুণকে 
মনোতাব-মূলক ব্যাখ্যা দিয়া সমর্থন করিয়াছেন। 

মেন্সিয়াস্‌ আরও বলিয়াছেন ঃ “যে নিজের মনকে সম্পূর্ণ বিকশিত করে, সে তাহার 
নিজ প্ররুতি বুঝিতে পারে । যে নিজ প্ররুতি জানে সে-্বর্গকেও জানে” ("০ 
2165701005৭ ক, ১)। এখন মেন্সিয়াস যে মনের কথা বলিয়াছেন তাহা সেই 
“অসহনশীল মন” যাহা! আমাদের প্রকৃতির অন্তর্বস্ত । মনের সম্পূর্ণ বিকাশ হইলেই আমরা 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


প্রকৃতিকে জানিতে পারি । মেন্সিয়াসের মতে £ "স্বর্গ হইতে আমরা যাহা পাইয়াছি” 
তাহাই আমাদের প্রকৃতি (96 74210155 ৬ ক, ১৫) 1 সেই জগ্গই বলা হয় আপন 
প্রকৃতিকে জান ও ঘ্বর্গকে জানা একই কথা । 

কিন্তু এই স্বর্গ কি? মেন্সিষ্াসের মতে বিশ্ব-ব্রন্দাণ্ড মূলতঃ নীতি-বিধৃত। যে সকল 
নৈতিক গুণ মানুষের প্রকৃতির অন্তর্ভূক্ত তাহাই আধিতৌতিক তাবে বিশ্ব-ব্রন্গাণ্ডে 
চলিতেছে ও মন্নেষের প্ররুতি বিশ্ব-প্ররুতিরই দৃষ্টান্ত । মেন্সিয়াস্‌ যখন স্বর্গের কথা 
বলিয়াছেন, তখন এই নীতি-বিধৃত বিশ্ব-ব্রন্মাণ্ডের কথাই তাহার মনে ছিল। ইহাকে 
জানাই মেন্সিয়াস্‌ স্বর্গকে জানা বলিয়াছেন। 

আত্ম-প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিকাশদ্বারা মানুষ কেবলমাত্র স্বর্গকে জানে না, তাহার সহিত 
একত্ব সম্পাদন করে। মেন্সিয়াস্‌ এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঃ “সকল বস্তুই সম্পূর্ণ- 
রূপে আমাদের মধ্যে আছে । আত্ম-শিক্ষাদ্বারা ইহা প্রত্যয় করা অপেক্ষা আর মহত্বর 
আনন্দ নাই (77156 74 ০15০195 ৭ ক, ১ )। তাহার মতে “জেন” বা সদয়-হদয়তার 
প্রয়োগ এই প্রত্যয়-লাতের পথ । এই গুণের প্রয়োগদ্বার৷ ক্রমে ক্রমে মানুষের অহ্মিকা 
ও স্বার্থপরতা কমিয়! যায়। তাহা যখন সম্পূর্ণ হা পায়, মানুষ তখন সেই বিশ্ব-বরন্মাণ্ডে 
প্রবিষ্ট হয়। তখন এই বোধ জাগে যে ব্যক্তি ও ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে কোনও ভেদ নাই ! 
তাহার অর্থ এই যে ব্যক্তি সমস্ত ব্রাহ্মণের সহিত এক হইয়া যায়। তখন "যাবতীয় 
বস্তই আমার মধ্যে সম্পূর্ণ আছে”__এই বোধ জাগে । এই তাবে মেন্সিয়াস কন্‌ফিউ- 
সিয়াস্-বণিত গুণের আধিতৌতিক সমর্থন দিয়াছেন এবং ইহা কন্ফিউপিয়াস্‌-দর্শনের 
গুঢ়তত্বও বটে । এগারো ও বারো শতাবীর কন্ফিউসিয়ান্‌ দর্শনে ইহা আরও অধিক 
বিস্তারিত হইয়াছে । 

খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে আর একজন অতি প্রসিদ্ধ ও প্রভাববান্‌ কনৃফিউসিয়ান্‌ 
মতাবলম্বী ছিলেন, যিনি মেন্সিয়াসের প্রতিদ্ন্্ী ছালন ও কন্ফিউসিয়ান্-বাদের অন্য 
একটি দিক বিস্তারিত করিয়া দেখাইয়াছিলেন। তিনি “শুন্তক্ক” (90 00-- 
ৃষটপূর্ব প্রায় ২৯৮-২৩৮ )। কনৃফিউসিয়ান্‌ বাদের এক দিক,_-তাহার অপাথিব ([1৪9- 
1150) দ্িক-__দেখাইয়াছিলেন মেন্পিয়ান্‌) অন্য দিক,-বাস্তবতার ( £:০৪11500 ) 
দিক,_শুন্ত সু। 

মানুষের প্রকৃতি মুলতঃ অসৎ--প্রধানতঃ এই মতবাদের জন্য শুন্ত স্থ প্রসিদ্ধ । 
বাহতঃ মনে হইতে পারে যে মানুষ সম্বন্ধে শুন্তত্থর অত্যন্ত মন্দ ধারণ! ছিল, কিন্তু বাস্তবিক 
তাহার বিপরীত। শুন্ত-স্থর দার্শনিক মতকে আত্মোন্নতি-প্রয়াসের দর্শন বলা যাইতে 
পারে, তাহার মুখ্য বক্তব্য এই যে যাহা কিছু তাল ও মুল্যবান, তাহা মানুষের প্রয়াসের 


২১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


ফল | উৎকর্যই সকল মূল্যের কারণ এবং উৎকর্ষ মানুষেয় সাধনা-লন্ব । এই সাধনাতেই 
ব্রন্মাণ্ডে মানুষের শেষঠত্ব | 

মানুষের প্রকৃতিও এই সাধনার লক্ষ্য, কারণ শুন্‌ তত্র মতে যে প্ররুতির কোনও 
কৃষ্টি লাভ হল্ন নাই, তাহা সৎ হুইতে পারে না। তাহার মতে প্ররুতি আদিম অসংশোধিত 
ধাতু ; রষ্রিত্বার! ইহা সম্পন্ন ও পরিশুদ্ধ হয়। কটি ব্যতিরিক্ত ইহাতে এমন কিছু নাই 
যাহাতে বাহির হইতে লব্ধ কোনও গুণের সংযোগ হইতে পারে । এই সংযোগ ভিন্ন 
প্রক্কতি আপনা-আপনিই স্থন্দর হইয়া উঠিতে পারে না ([$৪-হএ- গুন্‌ তথ, 
২৩ অধ্যায় )। 

এখন প্রশ্ন জাগে £ মানুষ তবে কি করিয়া স্থনীতিপরায়ণ হইতে পারে? যদি সকল 
লোকই অসৎ হইয়া! জন্মগ্রহণ করে, তবে সতের জন্ম কোথা হইতে হয়? এই প্রশ্নের 
উত্তরে শুন্‌ তত্ব ছুই প্রকার যুক্তি-মার্গের নির্দেশ করিয়াছেন। 

প্রথমতঃ শুন্‌ তত্থ এই মত পোষণ করিতেন যে কোনরূপ সমাজের অন্তর্গত না হইয়া 
মানুষ বাচিতে পারে না। শ্রেষ্ঠতরভাবে জীবন উপতোগের জন্ত সহযোগ ও পরস্পরের 
সহায়তার প্রয়োজন । অন্যান প্রাণীদের উপরে জয়লাভের জন্যও তাহাদের এঁক্যের 
প্রয়োজন । ক্তরাং তাহাদের সমাজের বন্ধনে থাকিতে হইবে এবং সমাজ-বন্ধনের জন্য 
ব্যবহারের রীতি-নীতি আবস্তকীয় | সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রীতি-নীতিগুলি এই নিয়মেরই 
ছোতক | 

দ্বিতীয়তঃ শুন্‌ তত্ব এই সত্যগুলির নির্দেশ করিয়াছিলেন যে “সাধারণ লোকেরা 
একই বিধ বস্ত-সমূহকে আকাঙ্ষা বা দ্বণ! করে”, এবং “তাহাদের আকাজ্ষ! বহুল কিন্তু 
বন্ত-সম্তার অল্প” (12981) '20- শুন ততঃ ১৭ অধ্যায় )। মানুষের জীবনে কষ্ট- 
ক্লেশের ইহা একটি অসন্দিপ্ধ মূল-কারণ | যদি সকলে একই জিনিসগুলি আকাঙ্ষা বা 
দশা না করিত, দৃষ্টান্তস্ব্ূপ যদি এক দল অন্যকে পরাভূত করিয়া সুখী হইত ও অন্যদল 
পরাস্ত হইতে ইচ্ছা করিত, তবে তাহাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধের কোনও কারণ 
থাকিত না ও তাহার! সহজেই মিলিয়া মিশিয়া বাস করিতে পারিত। অথবা যে সকল 
জিনিষ সকলে পাইতে ইচ্ছা করে তাহা! যদি মুক্ত বাতাসের মত যথেষ্ট-লত্য হইত তবে 
ও কোনও কষ্টের কারণ থাকিত না। অথবা যদি মানুষেরা পৃথক্‌ পৃথক্‌ থাকিতে 
পারিত, তবেও সমস্যা অনেকটা লঘু হইয়া যাইত | কিন্ত দুর্ভাগ্যবশতঃ পৃথিবীতে এই 
আদর্শ সংশ্থিতি নাই। মানুষকে একসঙ্গে থাকিতে হইবে এবং এই বিনা-বিবাদে 
একসঙ্গে থাকিবৰার প্রয়োজনেই প্রত্যেকের জন্য তাহার আকাঙা-তৃত্তির সীমা নির্দিঃ 
করিয়া দিতে হইবে । সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও নীতির কার্য এই সীমা-নির্দেশ। কেহ 


২২ 


চীনদেশীয় চিন্তাধারার সাধারণ বৈশিষ্ট্য 


নিজের আকাঙা-তৃপ্তির জন্য এই সীমা উল্লঙ্ঘন করিলে তাহা দুর্নীতির কার্ধ্য 
হইবে । 

এইতাবে শুন্‌ তত নীতির উৎপত্তি সম্বন্ধে একটি প্রয়োজন-বাদী ( 0011691185 ) 
ব্যাখ্যা দিয়াছেন | কন্ফিউগিয়াস্‌ দিয়াছেন নীতি ও সৎগুণের উপর জোর কিন্তু তাহার 
দার্শনিক সমর্থন জোগান নাই। মেন্সিয়াস্‌ ও শুন্‌ তস্ত উভয়ে তাহাদের আপন আপন 
মানব-প্রকৃতি সম্বন্ধীয় মতবাদদ্বারা এই দার্শনিক সমর্থন দিয়! গিয়াছেন। তাহাদের মত- 
বাদ তিন্ন ভিন্ন এবং সমর্থনের কারণও বিভিন্ন । 


এ |] ০ভ্ভাও৩১-ক্লাদ্ত ॥ 


তাও'-বাদেরও বিশিষ্ট মুখপাত্র তিনজন-__যঙ. চু, € 58:08 0100), লাও-তন্থ? 
(17৪০ হও) ও চুয়াউতকজ্ত (0089206 হও ) | 

দুইটি বাক্যে 'যঙ. চু'র শিক্ষার সংক্ষিপু-সার দেওয়া যায়-__“প্রত্যেকে নিজের নিজের 
জন্য” এবং “বস্ত অবহেল! কর ও জীবন মুল্যবান মনে কর” | কথিত আছে যে তিনি এই 
শিক্ষা! দিতেন যে “যদি তাহার দেহের একটি লোম উৎপাটন করিলে সমস্ত জগৎ উপকৃত 
হয়, তবু তিনি তাহা করিবেন না” (14061,০$9 ৭ক, ২৬) “হান্‌ ফেই তত” (1799- 
7০1-]2. ) নামক খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর একখানি গ্রন্থে লিখিত আছে যে “বঙ, চুর 
একজন অন্ুবর্তী বলিতেন যে “পৃথিবীর বুল উপকারের জন্যও তিনি তাহার পায়ের একটি 
লোম দিতেও প্রস্তত নন” | “যঙ.চু” সম্বন্ধে এই দুইটি প্রবাদ তাহার শিক্ষার ছুইটি দিক্‌ 
নির্দেশ করে | মেন্সিয়াস-বিবৃত “ঘঙ,চু”র উক্তি যে তিনি সমস্ত পৃথিবীর জন্যও একটি 
লোম দিতে প্রস্তুত নন,__এই উক্তি “জীবন মুল্যবান মনে কর”? তাহার এই শিক্ষার 
ঘোতক। “হান্‌ ফেই-ত-্র'-ধৃত “যঙ, চু*র উপদেশ যে সমস্ত পৃথিবীলাতের জন্যও পায়ের 
একটি লোম দেওয়া উচিত নয় ইহ! “বস্তুকে অবহথলো কর” তাঁহার এই শিক্ষার সমর্থক | 
“যু, চু'র শিক্ষা এই যে প্রত্যেক মানুষেরই উচিত জীবনকে মুল্য দেওয়া ও বস্তকে 
অবহেলা ফরা উচিত ও তাহার ফল এই যে প্রত্যেকে আত্মার্থে জীবনধারণ করিবে । 

ও ডু”র শিক্ষাবলী প্রাচীন “তাও”-মতের ক্রম-বৃদ্ধিতে প্রথম কলা-স্বর্ূপ । প্রত্যেকেরই 
কর্তব্য জীবনকে মুল্যবান মনে করিয়! জীবন-রক্ষার চেষ্টা করা ও জীবনের ফোনওয্ষপ হানি 
পরিহার করা । কিতাবে এই উদ্দেশ্য সাধন হইতে পারে 'তাও'-মতে তাহাই প্রথমতঃ 
প্রধান সমস্থা ছিল। “যঙ ডর মতে কিভাবে ইহার উপায়"--“এড়ানো” অর্থাৎ নিজেকে 


২৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধর্শনের ইতিহাস 


যুক্ত করা, যেভাবে সন্গ্যাসীরা সমাজ হইতে পলাইয়] পর্বতে কি অরণ্যে আত্মগোপন করে 
এইভাবে মনুষ্য-জগতের সকল ছুঃখ-ছূর্দশা তাঁহাদের মতে এড়ানো যায়। কিন্তু মনুষ্য-জগতে 
সর্ব-বিষয়ে এত জটিলতা যে, মানুষ যতই নিরালায় আত্মগোপন করুক, ছুঃখ-ছুর্দশা, যাহা 
হইতে পলায়নের উপায় নাই, তাহা আসিবেই | স্তরাং সময়ে সময়ে এই 'এড়ানো'র 
পন্থা কার্যকরী হয় না । . 

বিশ্বজগতের নানা পরিবর্তনের অন্তরালে যে সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে তাহা প্রকাশ 
করিবার চেষ্টাই “লাও ত্"র (7.৪০-7:এ ) মতবাদ । সকল বস্তরই পরিবর্তন হয়, কিন্তু 
তাহার পশ্চাতে যে নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকে তাহা৷ অপরিবর্তনীয় । যদি কেহ সে সকল নিয়ম 
বুঝিয়া তাহার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া! কাজ করে, তবে সব কিছু হইতেই সে স্থবিধা নিতে 
পারে । এই মতবাদ তাও+-মতের দ্বিতীয় কথা | 

প্রবাদ এই যে “লাও তত্র” কন্ফিউসিয়াসের বয়োজ্যেন্ঠ সমসাময়িক ব্যক্তি ছিলেন । 
তাহার নামানুসারে “লাও তব্” নামক গ্রন্থখানি এই হেত চীনের ইতিহাসে পর্ব-প্রথম 
দার্শনিক গ্রন্থ বলিয়! ধরা হয়! আধুনিক গবেষণার ফলে এই মত অধিকাংশ পণ্ডিতব্যক্তি 
পরিবর্তন করিতে বাধ্য হইয়াছেন এবং কন্ফিউসিয়াসের অনেক পরে ইহা! রচিত হয় বলিয়া 
তাঁহারা মনে করেন। ইহা খুবই সম্ভব যে 'লাওত ক্র" নামে “কনৃফিউসিয়াস্‌ হইতে বয়ো- 
বৃদ্ধ কেহ ছিলেন, কিন্তু প্র নামে প্রচলিত গ্রন্থথানি পরবর্তাকালের। স্থতরাং প্র গ্রন্থে যে 
সব মতবাদ প্রকাশিত হইয়াছে তাহা আমি “তাও”-মতবাদের ক্রমবিকাশের দ্বিতীয় কলা 
বলিয়া গ্রহণ করি, যদিও আমি তৎসঙ্গে এ কথা অস্বীকার করি না যে 'লাওত স্তর" স্বয়ং 
কন্ফিউসিয়াসের বয়োজ্যেষ্ঠ সমসাময়িক ব্যক্তি ছিলেন । 

'তাও'র ধারণা 'লাওত হ্” গ্রন্থে প্রধান স্থান অধিকার করে। 'তাও'র আক্ষরিক 
অর্থ পস্থা*। কিন্তু 'তাও”-বাদে ইহা সেই পরম পদার্থ যাহাকে 'তাও”-বাদীরা সংজ্ঞাতীত 
( 2090229101৩ ) বলে। তাহাদের দর্শনে “তাও” সেই পদার্থ যাহাদ্বার। সকল বস্ত 
উদ্ভূত হয় । যেহেতু ইহা! সকল বস্তর উত্ভবের কারণ, সেই হেতুই ইহার কোনও বাস্তবিক 
সভা নাই। বস্ত হয় নামধারী,_অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তরই কতগুলি বিশেষ গুণ আছে 
যাহাদ্বারা তাহার সংজ্ঞ৷ নিরূপিত হুইতে পারে । দৃষ্টান্ত,__বৃক্ষকে গুণানুসারে বৃক্ষ বলা 
হয়, টেবিলকে টেবিল বলা হয়। কিন্তু তাও” স্বতাবতই নির্বস্ত এবং সেই জন্যই 
নামহীন | প্রত্যেক বস্তরই সত্তা আছে, “তাও? নির্বস্ত বলিয়া! তাহার কোনও সত্তা 
নাই । “তাও+কে 'তাও+-বাদীর! অস্তিত্বহীন বলিয়া বর্ণনা করে । “লাওতক্। গ্রন্থে এই 
ধারণাগুপি,_-'তাও+ সত্ব] ও অসম্তাসন্বন্ধীয় (921755 270 ০:7-021186 ),--স্পষ্ভাবে 
উল্লিখিত আছে । 


২৪ 


ফনফিউপিয়ান্-বাদ ও তাও-বাদ 


গ্রন্থের মতে “তাও” হইতে সকল বস্ত আসে। বস্ত থাকিলেই, তাহার পরিবর্তনের 
নিয়ম-পদ্ধতি থাকিবে । এই নিয়ম-পদ্ধতির মধ্যে একটি মুলীভূত নিয়ম “ভাওর গতির 
বৈপরীত্য সম্পাদন”। ইহার তাৎপর্য এই যে যদি কোনও বস্ত কতগুলি আত্যন্তিক গুণ 
বিকাশ করে তবে অলঙ্ঘ্য নিয়মে সেই গুণগুলি তাহার বিপরীত গুণে পর্যবসিত হয় । 

ইহা! একটি প্রাকৃতিক নিয়ম । স্তরাং-_“ুর্ভাগ্যের উপর সৌভাগ্য নির্ভর করে 
এবং সৌতাগ্যের উপর দুর্ভাগ্য”? “কোনও বস্তকে কমাইতে থাকিলে তাহা বাড়িয়া! যাইবে, 
বাড়াইতে থাকিলে কমিবে+ । “লাও ত.স' গ্রন্থ এই রকমের সাধারণ মতের বিরুদ্ধবাদী 
বথায় পর্ণ। কিন্তু এই বিরোধের নিরসন হয় প্ররুতির মৃলীভূত নিয়মের জ্ঞান-ন্বারা | কিন্ত 
যাহাদের এই জ্ঞান জন্মে নাই, তাহাদের কাছে ইহা বিপরীতই মনে হইবে । সুতরাং 
“লাও ত'জ' গ্রন্থে ইহা! বলা হইয়াছে যে “ন্বল্প-শিক্ষিত ব্যক্তি সত্য-শ্রবণে অদ্রহাম্যই করিবে। 
সেই অট্রহাসি ভিন্ন কথাটি সত্যের মর্যাদালাভ করে না” | 

ষে প্রকৃতির নিয়ম বৃঝিয়াছে, সে তদনুসারে আচরণ নিয়ন্ত্রিত করিবে । তাহার 
আচরণের সাধারণ নিয়ম হইবে এই, __সে যদি কোনও সিদ্ধিকামী হুয়, তবে তাহার বিপরীত 
পথে আরম্ভ করিতে হুইবে, সে যদি কিছু রক্ষা করিতে প্রয়াসী হয়, তবে তাহার বিরোধী 
কিছু স্বীকার করিয়া! লইতে হইবে । দৃষ্টান্ত স্বরূপ-_যদ্ি কেহ বল পাইতে চায়, তবে সে 
যে ছুর্বল এই ভাব লইয়া আরম্ভ করিবে এবং যদ্দি কেহ মহাজনবৃত্তি ( মুলধনের মালিকত্ব ) 
রক্ষা করিতে চায়, তবে তাহার মধ্যে সমাজ-তাস্ত্রিকতার কিছু কিছু গ্রহণ করিতে হইবে । 

এই পন্থায় মান্ুষ সংসারে নিরাপদ হইতে পারে ও তাহার উদ্দেশ্য-সিদ্ধি করিতে 
পারে । “তাও” মতবাদীর উপস্থাপিত প্রথম সমশ্যা,-কি করিয়া জীবন-রক্ষা করা যায় ও 
সংসারে ক্ষতি ও বিপদ্‌ বাচাইয়া চলিতে পারা ক্নায়,_-তাহার উত্তর ও সমাধান এই 
প্রকারে দেওয়া হইয়াছে । 

প্রথম যুগের “তাও*-মতাবলম্বীদের মধ্যে চূঙ তত্ব? (01097)8 হও _-থুষ্টপূর্ব প্রায় 
৩৬১-২৮৬ ) সর্বশ্রেষ্ঠ । তাহার নামে “চুঙ, তক? গ্রন্থ “তাও”-সাহিত্যে একখানা বিশিষ্ট 
গ্রন্থ । কিন্তু এই গ্রন্থের কোন অংশ দার্শনিক স্বয়ং রচনা করিয়াছিলেন তাহা আমরা! 
নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারি না। এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের নাম সখের যাত্রা" 
(17925 7:%:5815192 ) | হ্থখের যে ভিন্ন ভিন্ন ক্রম আছে ইহাতে সেই ধারণা ব্যক্ত 
হইয়াছে । আমাদের প্রকৃতির অবাধ অভিব্যক্তিতে আমাদের আপেক্ষিকভাবের হখ দিতে 
পারে, কিস্ত চরম স্থখ লাভ হুয় বস্ত-নিচয়ের প্ররুতি সম্বন্ধে উচ্চতর জ্ঞানে । 

এখন, প্রথম ইন্সিত ক্ষখ যাহা আমাদের হ্বকীয় প্রকৃতির অবাধ অভিব্যক্তিতে লাভ হয়, 
তাহার জন্য আমাদের প্ররুতিদ্ত ক্ষমতার সম্পূর্ণ ও অবাধ পরিচালনের প্রয়োজন | এই 


৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্য দর্শনের ইতিহাস 


ক্ষমতাকে "তাওসবাদীরা “তে” বলেন, অর্থাৎ যাহা “তাও? হইতে প্রত্যক্ষভাবে আসে | 
“চু, তত গ্রন্থে বলা হইয়াছে £ “বস্ত-নিচয় যাহা হইতে উদ্ভূত হইয়াছে, তাহার 
পুলঃপ্রাণ্তিকে “তে” বল! হয় । অর্থাৎ “তাও” হইতে আমরা যাহা পাইয়া থাকি তাহাই 
“তে” (পু ) এবং “তের জন্যই আমরা যাহা তাহা হইতে পারিয়াছি। যখন এই “তে 
অথবা প্ররুতিদত্ত ক্ষমতার পুর্ণ ও অবাধ বিকাশ হয় তখনই আমরা “ক্ধী” হই। 

এইভাবে আমাদের যে ক্থখের লাভ হয়, তাহ! আপেক্ষিক । অন্য কিছুর উপর নির্ভর 
করে বলিয়া ইহাকে আপেক্ষিক স্থখ বলা হয় | এ কথা সত্য বটে যে নিজের প্রররুতিদত্ত 
ক্ষমতার পুর্ণ ও অবাধ সঞ্চালনে মানুষ সখী হয়, কিন্তু নানাভাবে ইহা! বাধা পাইতে পারে। 
যদি মানুষের সুখ এই ক্ষমতা-পরিচালনের উপর নির্ভর করে, তবে ইহাও ঠিক যে 
তাহার পরিচালন! অনুকূল পারিপার্থিক অবস্থাদ্বারা সম্ভব হয়। স্তরাঃ এই স্থখ এই 
অবস্থাদ্ধার সীমাবদ্ধ এবং সেইজন্যই "আপেক্ষিক" । 

পরন্ত “পরম” স্থখলাতের জন্য উচ্চতর জ্ঞান ও বোধের প্রয়োজন । এই বিষয়টি 
“চূঙ তত" (01058728 59) গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিবৃত আছে। এই অধ্যায়ের 
শিরোনাম] “বস্তর সাম্য সম্বন্ধীয় ।” প্রথম অধ্যায়ে এই মতের প্রকাশ আছে যে ত্বখের 
দুই স্তর ; দ্বিতীয় অধ্যায়ে জ্ঞানের ছুই স্তর। প্রত্যেক ব্যক্তি তাহার আপন ও নিদিষ্ট 
দৃষ্টিকোন হইতে দেখিয়া যে সকল মত গ্রহণ করে তাহা প্রথম বা নিস্তর। ইহা সীমাবদ্ধ 
বলিয়া, এই মতগুলিও একদেশদর্শী হয় । তথাপি অনেকে জানেনা যে তাহাদের মতগুলি 
সীমাবদ্ধ দৃষ্টিকোন হুইতে গৃহীত ও সেই জন্য সর্বদাই তাহাদের আপন মত সত্য এবং অন্য 
মত যিথ্যা বলিয়া মনে করে | এই অধ্যায়ের ব্যাখ্যা অস্থুসায়ে, সত্য ও যিথ্যায় প্রভেদ 
“এতদ্‌” ( এই ) এবং “তদ্‌* (সেই ) এই ছুইয়ের মধ্যে যে প্রভেদ তাহা হইতে অন্য- 
রকমের নয়। প্রত্যেকেই স্বভাবতঃ নিজেকে “এতদ্‌* মনে করে ; অন্যকে “দ্‌" মনে করে । 

যদি আমর! এই কথাটি বুঝিতে পারি যে সত্য ও মিথ্যায় প্রভেদ 'এতদ্‌” ও “তদের 
মধ্যে যে প্রভেদ তাহা হইতে বিশেষ অন্তবিধ নয়, তবেই আমরা সকলবস্ত উচ্চতর স্তর 
হইতে দেখিতে পাই । ইহাকেই গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে “ম্বর্গের আলোকে বস্তনিচয় 
নিরীক্ষণ করা” বল! হইয়াছে, যাহার অর্থ,-_এমন একটি দৃষ্টিকোন হইতে নিরীক্ষণ করা 
যাহা সকল সীমার উর্ধে, যাহা “তাও” | “চৃঙ, তত্র" গ্রন্থে সীমাবদ্ধ দৃষ্টিতে কুপমণ্ডুকের 
দৃষ্টির সহিত তুলনা কর! হুইয়াছে। কুপের মধ্য হুইতে মণ্ডুক এক ফালি আকাশমান্র 
দেখিতে পায় ও মনে করে যে আকাশটা অতখানিই বড় হইবে। 

তাও'"মতের অনুসারে মতের বিভিন্নতা আপেক্ষিক, -বস্ভনিচয়ের বৈভিন্ন্যও 
আপেক্ষিক । যদিও সকল বস্তই ভিন্ন ভিগ্নঃ তথাপি তাহাদের সামঞ্জস্য এই যে তাহারা 


২৬ 


কনফিউসিয়ান্-বাদ ও তাও-বাঁদ 

সকলে মিলিয়! কিছু একটা গঠন করে ও প্রত্যেকেই প্রয়োজনীল্ন । 'তাও' হইতে তাহাদের 
সমোৎপত্তি । “তাও” মতাহুসারে বস্তসকল ভিন্ন ভিন্ন হইলেও একত্রীভূত হইয়া! শ্রক্যে 
পরিণত হয় । | 

'আগমি' ও এঅন্তের মধ্যে যে প্রভেদ তাহাও আপেক্ষিক | “তাও মতে “আমি' ও 
“অন্য* সংযুক্ত এবং তাহাও একটি প্রক্য সম্পাপন করে । দ্বিতীয় অধ্যায়ে বল! হইয়াছে : 
“স্বর্গ, মর্ত এবং আমি একপঙ্গে সম্ভৃত হইয়াছি এবং আমার সঙ্গে সংযুক্ত সকল বস্ত 
এক” । 

দ্বিতীয় অধ্যায়ের এই উক্তির অব্যবহিত পরেই একটি প্রশ্ন আছে £ “সকল বস্তই যদি 
এক হইবে, তবে বাক্যের স্থান কোথায় ?” সকল বস্ত হইলে, এই প্রক্য ত মনোগম্য কিন্বা 
আলোচনায় ধৃত হইতে পারে না । কারণ ধারণা বা বাক্যে প্রকাশ হইবামাত্রই যে ধারণা 
করে বা বাক্যে প্রকাশ করে ইহা তাহার বহিঃস্থ হুইয়া পড়ে । এই শর্বব্যাপী এঁক্য নষ্ট 
হইয়া যাওয়ায় যায়, তখন মোটেই সেই “এক” থাকে না। স্থতরাং ইহা জ্ঞান-লভ্য নয়। 
ইহা! পাইতে হইলে ইহার সহিত একীভূত হইতে হয় । 

এই “একে”*র সহিত মিলাইয়া যাওয়াকে “তাও; মতাবলম্বীরা বলেন “অনস্তের রাজ্যে” 
বাচিয় থাকার অভিজ্ঞত1 | ধাহার এই অভিজ্ঞত1 আসিয়াছে তিনি বস্ত-নিচয়ের সমস্ত 
তেদ ভুলিয়া যান, এমন কি নিজের জীবনের মধ্যেও । ত্বাহার অভিজ্ঞতায় থাকে কেবল- 
মাত্র এক অখণ্ড সম্পূর্ণতা,_তিনি এই সম্পূর্ণতার মধ্যে বাস করেন। তিনিই বাস্তবিক 

ররহীন ব্যক্তি এবং তাহার আনন্দ নির্ভ ৭ । 

এখানে” “চৃুঙত-হ” কি তাবে “তাও-বাদীদের প্রাথমিক সমস্যার সমাধান করিয়া- 
ছিলেন তাহা আমরা দেখিতে পাই। যে খাষি নিজের সঙ্গে একের মিলন, সাধন 
করিতে পারিয়াছেন, তাহার কাছে এ সমস্তা সমস্যাই নয়। “চুঙ তক গ্রন্থে আছে ঃ 
“এই বিশ্ব্্মাণ্ড সমস্ত বস্তর এ্রক্য। যদি আমরা এই প্রক্যে পৌছাইতে পারি এবং 
এবং তাহার সহিত মিলিত হুইতে পারি, তখন আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কতগুলা 
ধূলা-ময়লা বলিয়া মনে হইবে ? জীবন-মৃত্যু, আদি-অন্ত, দিন-রাত্রির পরিবর্তনের মত 
আমাদের অন্তরের শান্তির ব্যাঘাত করিতে পারিবে না । আর সাংসারিক লাত-ক্ষতি, 
সৌভাগ্য-ছূর্তাগ্য ত নয়ই ।” এই তাবে চুঙতক্থ “তাও'-বাদীদের প্রাথমিক সমশ্যার 
সমাধান করিয়াছিলেন তাহা! একেবারে উড়াইয় দিয়া । সমশ্যা-সমাধানের ইহাই দার্শনিক 
রীতি । “তাও”-মতের "বিকাশের ইহা তৃতীয় বা শেষ কলা । 

ব্যক্তির সহিত সমগ্রের মিলের উপায় উচ্চতর স্তরের জ্ঞানদ্বারা নিয়স্তরের জ্ঞানের 
নিফাশন। সাধারণতঃ যাহাকে জ্ঞান বলা হয়,__অর্থাৎ যাহা নিয়স্তরের জ্ঞান।-- 


২৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


তাহার কার্য-বস্ভ সকলের মধ্যে ভেদ নিন্ূপণ করা । কিন্তু উচ্চতর স্তরের জ্ঞানদ্বার! 
'আম্রা হদয়ঙগম করি যে স্কল ভেদই আপেক্ষিক এবং সকল ভেদের সমাধানের শেষে এই 
জ্ঞানও নির্বুঢ় হইয়া যায়। 

আমি পূর্বে বলিয়াছি যে কনৃফিউসিয়ান্‌ বাদেরও চরম পরিণতি ব্যক্তিবিশেষের সহিত 
সমগ্রের মিলন । কিস্তু এই উদ্দেশ্ট সাধনের জঙ্য কনৃফিউসিয়ানদের উপায় ভিন্ন। 
“তাও”-মতবাদীদের রীতি জ্ঞান-বিসর্জনের রীতি বলিয়া প্রসিদ্ধ; কনৃফিউসিয়ান্-মত- 
বাদীদের রীতি নীতি-সম্মত ক্রিয়াফল-সঞ্চয় | নীতি-সম্মত কার্যাবলীর মধ্য দিয়া মানুষের 
স্বার্থবোধ ক্রমশঃ হাস পায় এবং শেষ পর্যস্ত আত্ম-পরের প্রভেদ লুগ্ত হয় এবং সমষ্টির 
সহিত ব্যক্তির মিলন হয় | কনৃফিউপিয়ান্বাদী যে এ্ক্য সম্পাদন করে তাহা তাবগত 
(657009010159] ), তাও+-বাদীর শ্রক্য চিন্তাগত (1:065116০059] ) সেই জন্য কন্ফিউ- 
সিয়ানবাদীরা “নিজের ভ্রাতার মত অন্য সকলকে এবং বন্ধুভাবে সকল বস্তকে” ভালবানিতে 
বলিয়াছে। কিন্তু “তাও'-বাদীরা বলিয়াছে সংসার ত্যাগ করিতে ও সংসার হইতে স্বত্ব 
হইয়া! বাচিতে । কনৃফিউসিয়ান্‌ খষিরা ছিলেন উৎসাহী-প্রাণের লোক,-_“তাও"-বাদী 
খষিরা অবিচলিত শান্তির | 


৪1 ন্নজ্য কুম্নক্কিক্ভন্লিআম্ম আাদ্ত 


পূর্বের আলোচনায় আমর! দেখিয়াছি ষে কম্ফিউসিয়ান্‌ বাদ প্রথমে মানুষের সামাজিক 
সথ্বন্ধের উপরই বেশী জোর দিত এবং “তাঁও”-মত মানুষের বিশ্ব-ব্রাঙ্গগুর সহিত সম্বন্ধের 
উপর। এই কারণে কনৃফিউসিয়ান্বাদ “তাও”মত অপেক্ষা কম আধিভৌতিকবাদী। 
পরবর্তী এগারো! ও বারো! শতাব্দীর কন্ফিউসিয়ানৃ-বাদীরা, যাহাদের নব্য কন্ফিউপসিয়ান্‌- 
বাদী বল] হয়, এক পক্ষে বৌদ্ধমত ও অন্য পক্ষে 'তাও-মতের দ্বার! প্রভাবান্িত হইয়া 
মৌলিক কন্ফিউসিয়ানবাদের পরিবর্ধ ন করিয়া মৌলিক “তাও”-মত হইতেও অধিক আধি- 
ভৌতিক দর্শন-পদ্ধতি তাহাতে যুক্ত করিয়] দিয়াছিল। 

নব্য কন্ফিউসিয়ানবাদীদের মধ্যে ছুইটি প্রধান সম্প্রদায় আছে । এই ছুইটি সম্প্রদায়ের 
প্রবর্তক ছুই ভ্রাতা । তাহারা “চে, শিক্ষক” নামে জ্ঞাত। কনিষ্ঠ ভ্রাতা “চেঙ. ধি' 
(0057381 2 শষ্টাব্ব ১০৩২-১১*৮ ) যে সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেন তাহার পূর্ণগঠন 
হয় “চু ত্স' (750. 7751-১১৩০-১২০০ ) দ্বারা | ইহা “চেঙ, চু সম্প্রদায় ((01১+5128 
0210 5০190] ) বা “লি ম্বেহ” (14 [75615 ) সম্প্রদায় ( অর্থাৎ নিয়ম-নীতি সম্প্রদায়--" 


১৮ 


কনফিউলিয়ান্-বাদ ও তাও-বাদ 

5০9০০1 ০ 1797৪ 2200 7275089155 ) নামে খ্যাত। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা 'চেঙ হাও। 
(01১208 চ75০ ) অগ্ঠ একটি স্পরদায়ের প্রবর্তন করেন যাহা “লু চিউ-যান” (152 
51315-50৪7)--১১৩৯--১১৯৩ ) চালাইয়াছিলেন ও এবং “ও. ক্ষ“জেন, ( ৮/88 
51১০0-]572 )» যিনি “বউ, যঙমিওঃ (৬8104 ড817£-7017)5-১৪৭৩-১৫২৯ ) নামে 
বেশী পরিচিত ছিলেন, সম্পূর্ণ করেন। ইহার নাম “লু-বঙ,, (7.0 12174 ) অথবা “তসিন্‌ 
শ্বেহ' (77510) 73551) অর্থাৎ 9০০০1 ০ 74120) সম্প্রদায় । পূর্বোক্ত ছুই “চেঙ, 
শিক্ষকের কালে এই ছুই সম্প্রদায়ের পার্থক্য পুরাপুরি পরিজ্ঞাত ছিল না । কিন্তু “ঢুত.ষি, 
ও “লু চিউ-য্যান” যে গুরুতর মত-বিরোধ আরস্ভ করেন তাহা আজ পর্যন্ত চলিয়াছে। এই 
ছুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রপ্ান বিতকিত বিষয়টি মূলে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বটে । পাশ্চাত্য দর্শনের 
ভাষায় বলিতে গেলে এই বিষয় ছিল যে প্রকৃতির নিয়মগ্ডুলির নিয়স্তত্ব মানুয়ের মনে কি 
বিশ্ব-মনে (1,2615195650 1705 005 12200. 01: 1015৭ )। ইহার প্রেটোর বাস্তব-বাদ 
(চ1900010 [.5911909 ) এবং কান্টের অতি-বস্ত-বাদ (7212627 195211572 ) এর 
মধ্যে বিরোধের বিষয় এবং বল যাইতে পারে যে ইহা! আধিভৌতিক "দর্শনের (110- 
[1)551০5 ) প্রধান সমস্যা | ইহার সমাধান হইলে, বিরোধের অধিক স্থান থাকে না । 

এই অধ্যায়ের প্রথমে আমি কনৃফিউসিয়ান্‌ বাদে 'সংজ্ঞা-বিশুদ্ধি'র কথা কিছু বলিয়াছি। 
ইহার ভাৎপর্য এই যে প্রত্যেক সংজ্ঞায় কতগুলি গুণের ধারণা থাকে যাহাতে সেই সংজ্ঞায় 
নিদ্দিঈ কোনও বস্তর শ্রেণীাগত বৈশিষ্ট্যের সারমর্ম পাওয়া যায়। যদি এই ধারণাটির 
আধিতৌতিক ইঙ্গিতগুলি বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয় ইহা প্লেটোর “অতি-বস্ত-বাদ' 
হইয়া! পড়ে । “চে, যি' ও “চু তসি' তাহাদের মতবাদের এইভাবের ব্যাখ্যাই 
দিয়াছিলেন । 

যাহাকে প্লেটো 'আইডিয়1” (€ [59 ) বা “অতি-বাস্তব সত্য' বলিয়াছেন বা আরিস্‌- 
টোটুল “আকুতি, ( ০0) বলিয়াছেন, তাহাকে “চে যি” ও “ছু ত.সি' বলিয়াছেন 
“মৌলিক তথ্য ( 651,0115 )। তাহাদের চিস্তাধারায়, যেরূপ প্লেটোর ও আরিস্‌- 
টোটুলের দর্শনে জগতের যাবতীয় বস্তর অস্তিত্ব (যদি তাহাদের প্ররুতই অস্তিত্ব থাকে ) 
কতগুলি পদার্থের মাধ্যমে কোনও “মৌলিক তথ্যের € চ:1551015 ) আত্ম-প্রকাশে | 
যদি কোনও বস্তর অস্তিত্ব থাকে, তবে তাহার অনুযায়ী কোনও একটি মৌলিক সম্ভাও 
থাকিবে । ইহাকে ভাহারা “লিঃ ([4) বলিয়াছেন যাহা! অনুবাদে “নিয়ম? (172 ) ও 
বলা চলে । 

“চেঙ, যি” ও “চু তসি'র মতে এই যৌলিক স্ভাগুলি (:2701215 ) চিরত্তন ও 
মানুষের অন্তর্টৈ তন্য-নিরপেক্ষ | কিন্তু “লু চিউযখান? ও “যঙ, তু-জেনে'র মতে মানুষের 


*৯৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


মনই এই “লি'। যানুষের মন বিশ্ব-মনেরই অভিব্যজি এবং এই বিশ্বমনই প্ররুতির সকল 
নিমের নিয়ন । | 

“বঙ, যঙও ২মিঙে”র মতে “ব্যক্তির মন" বিশ্বমনের ব্যত-প্রকাশ এবং এই “ব্যক্তির মনে" 
প্রকাশ হয় ব্যক্তির শ্বতঃ-আগত জ্ঞানে ( 17860161৮2 72790153865 )| '“বঙ, যঙ. 
মিঙে*র কথা এই যে এই দ্বতঃ-আগত জ্ঞান প্রত্যেকের অন্তঃস্থ ক্ষমতা । ইহা নিশ্চয় ও 
প্রত্যক্ষভাবে সং-অসৎ জানিতে পারে । ইছার কারণ এই যে সকল নিয়ম যাহার মধ্যে 
স্থনীতির নিয়মগ্ুলিও অন্তর্ভুক্ত, মনের নিয়ন্ত্রণ মাত্র | যদি কেহ এই ম্বতঃ-আগত জ্ঞানের 
নির্দেশে কার্য করে, সে স্বভাবতই তাহার আচরণে সকল লোক, এমন কি সকল বস্তকেই 
তালবাসিবে। ইছার হেতু এই যে সকল লোকের মনেই একটি মুলগত অন্তনিহিত প্রক্য 
আছে। স্বার্থপর হুইলে মানুষ সেই প্রক্য হারাইয়! ফেলে, নিঃস্বার্থ হইলে তাহার পুনঃ- 
প্রাপ্তি হয়। 

যদিও আধিভৌতিক মত-বাদে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য বহুল, এই উভয় সম্প্রদায়ই 
সামাজিক কর্তব্যগুলি অবশ্য পালনীয়, কনৃফিউসিয়াসের এই কথার উপর জোর দিয়! থাকে। 
মেন্সিয়াস্‌ অপেক্ষাও তাহার! জোরের সহিত এই মত প্রকাশ করে যে মানুষ মনস্তত্ব বা 
নীতি সম্যক অবধারণ না করিয়াও কেবল তাহার সামাজিক কর্তব্যগুলি পালন করিয়া যায় 
সে বাস্তবিকই শ্রেষ্ঠতর ও অধিকতর মুল্যবান কিছু অর্জন করে । নব্য-কন্ফিউসিয়ান্‌ 
বাদীদের মতে সেই আদর্শ মানব এবং খবিবাচ্য । সে কোনও অলৌকিক ঘটন! ঘটায় না 
এবং তাহা! ঘটাইবার জন্য তাহার কোনও চেষ্টারও প্রয়োজন নাই। যাহা সাধারণ 
লোকে করিয়! থাকে, তাহার বেশী কিছুর চেষ্টা তাহার নাই, কিন্তু বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্-ব্যাপারে 
তাহার উন্নততর বোধ থাকায়, তাহার কার্যগুলি তাহার কাছে এ বিশ্বমনের ও মূল-তথ্যের 
চোতক হয় এবং সেই জন্য তাহার তাৎপর্য ব্যক্তিক নয়, জাগতিক | তাহার মধ্যে ও 
সাধারণ লোকের মধ্যে যে পার্থক্য তাহা ক্রিয়াকলাপে নয়, কিন্তু এই অর্থে যে সে যাহা! 
যাহা কিছু করে করে তাহা জ্ঞানের আলোকে করিয়া থাকে, অন্ত সকলের মত অজ্ঞানান্ধ" 
'কারে নয়। তাহার কার্ষের মূল কেবলমাত্র নৈতিক সদ্থষ্টান্তে নয়, তাহা নীতিবাদের 
উর্ধে । আমরা ভাষান্তরে বলিতে পারি যে তাহার উন্নততর ব্রক্মাগু-জ্ঞানে তাহার 
কার্ধাবলীর তাৎপর্য সকল নীতিবাদ ছাড়াইয়া যায় । 

এই মতবাদে আমরা পাই চীন! দর্শনের সারমর্মের প্রকাশ । তাহার অনাবৃত রহস্য 
এই | চীন! দর্শন জীবনকে প্রকৃতির একটি সত্য বলিয়৷ গ্রহণ করে এবং তাহাকে পার- 
মাধিক তাৎপর্যে উন্নীত করিবার চেষ্টা করে__-এইভাবে যে প্রাত্যহিক জীবনের মূল্য ও 
তাৎপর্য এই ক্ষপ হইবে যে জীবন শ্রেষ্ঠ-অর্থে যাপন-যোগ্য হয় | নব্য কনৃফিউসিয়ান্বাদ 


০ 


কনফিউসিয়ান্-বাদ ও তাও-বাদ 


বহুলাংশে ইহা করিয়াছিল | নব্য-কন্ফিউসিয়ান্‌ বাদ বারো শতাব্দী হইতে চীন-সমাজে 
যে সর্বপ্রধান দার্শনিক সম্প্রদায় হুইস্্া উঠিয়াছিল তাহা! অকারণ নয় । এই প্রাধান্ড গত 
শতাব্দীর শেষদিকে যখন পাশ্চাত্য চিন্তাত্রোত চীনদেশে আসিতে থাকে সেই পর্যন্ত অব্যাহত: 
ছিল। তখন আবার নৃতন অবস্থার গতিকে নৃতনতর দার্শনিক চিন্তার প্রয়োজন হয় | 

চীনদেশে এখন একট] সশস্ত্র বিপ্লব চলিতেছে । কিন্তু যে কোন বিপ্লবই শেষ পর্যন্ত 
প্রাচীনের ক্রমানুসারীই হুইয়া থাকে । নব্যের মধ্যে প্রাচীনের শ্রেষ্ঠ যাহা কিছু তাহা 
সংরক্ষিত হয়। চীনদেশের দর্শনে ও সমাজে ইহাই ঘটিবে। 


৩১ 


ত্রপ্ভোবিংশ পত্রিচ্ছেদ 
চীনদেশের চিন্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 


তারতবর্ষের সহিত চীনদেশের প্রথম যোগাযোগের কথা বলিতে হইলে খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় 
শতাব্দী হইতে আরম্ভ করিতে হয়। সেই সময় সম্ভবতঃ পূর্বতুকীস্থানের যাযাবরদের 
মাধ্যমে কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক ও বিশ্বতত্বের ধারণ চীনদেশে প্রবেশ করিতেছিল। এই 
সময়েই তাও-সপ্প্রদায়ের ([:৪০-15:) বিশেষ প্রতিষ্ঠাবান প্রিন্স লিউ-য়ান (1:15-7765 ) 
(৪1 [০০-55০এ ) প্রথম এক বিশ্বতত্ববাদের প্রবর্তন করেন। এই মত অনুসারে 
এই বিশ্ব একটি পর্বতকে কেন্দ্র করিয়! নয়টি অংশ বিতক্ত হুইয় অবস্থিত | এই পর্যতের 
উপরেই দেবলোক | এই মতবাদ ভারতবর্ষে উদ্ভূত হুইয়াছিল এবং বৌদ্ধসাহিত্যে বিশেষ 
পরিণতি লাত করিয়াছিল । 

ৃষটপূর্ব "প্রথম শতাব্দীর শেষতাগে এই রকম একটি যাযাবর শ্রেণীর নিকট হইতে চীন 
বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে। প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যেই তৎকালীন চীনরাজ্য এই ধর্মটিকে 
রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করিল । খৃটীয় প্রথম শতাব্দীর শেষভাগের পর হইতে বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ 
চীনদেশে আসিতে আরম্ভ করিলেন এবং তাহাদের কর্মতৎপরতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতে 
লাগিল | হানরাজত্বকালে (খৃষ্টাব্দ ৬৫-২২০ ) একদল বিষ্তার্থী চীনে আসিয়াছিলেন, 
চীনা পণ্ডিতগণের সহিত একসঙ্গে থাকিয়া! কাজ করিয়াছিলেন এবং চীনতাষায় বহুসংখ্যক 
গ্রন্থের অন্ুবাদও করিয়াছিলেন; তথাপি বৌদ্ধধর্মকে দেশীয় ভাবধারার সহিত ঘোরতর 
সংগ্রামের সন্থুধীন হইতে হইয়াছিল । কনফ্্যুসিয়াসের মতবাদ এ সময় রাজবংশপরম্পরায় 
চীনের রাজসতায় প্রতিষ্ঠালাভ করিতেছিল এবং চীনের অভিজাত সাশ্প্রদায়ের উপরেও 
উহা! যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল। সেইজন্য কনৃফ্যুসিয়াস্‌ মতাবলম্বীগণ বৌদ্ধধর্মকে 
অসত্য-বর্বরের ধর্ম বলিয়াই মনে করিতেন । গ্রীকদের ন্যায় চীনদেশের অধিবাসীরাও যে 
কোন বিদেশীকে অসত্য-বর্বর ভাবিত। ভারতবর্ষের লোকদের প্রতিও তাহাদের সেইরূপ 
ধারণাই ছিল । হান-রাজত্বকালে (7791) 15110 ) কনৃফ্যুসিয়াসের মতবাদকে একটি ধর্ম 
হিসাবে প্রতিষ্ঠা দান করার প্রচেষ্টাও হইয়াছিল ? কিন্তু ধর্ম হিসাবে উহা! বৌদ্ধধর্মের গ্যায় 
সম্যক পরিণতি লাভ করিতে পারে নাই। ধর্ম হিসাবে তাও-মতবাদের (79০-1৪22 ) 
সমধিক প্রতিষ্ঠা থাকিলেও বৌদ্ধধর্মের তুলনায় উহার দার্শনিক ভিত্তি অতি সামান্তই ছিল । 


৩২ 


চীনদেশের চিন্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভা 


ইহার ফলে বৌদ্ধধর্ম তৎকালীন প্রতিকূল অবস্থার ভিতরেও আত্মবিস্তারের হুযোগ লা 
করিয়াছিল । 

বৌদ্ধধর্ম কনৃফ্যুসিয়াসের মত অপেক্ষা অনেকাংশে সমৃদ্ধ ছিল এবং ইহার দর্শনও ছিল 
তাও-বাদ অপেক্ষা গতীর ও তত্বসম্বদ্ধ । সেইজন্য অল্পদিনের মধ্যে উহা চীনাদের 
হৃদয় আকর্ষণ করিয়াছিল। চীনাপশ্ডিতেরা নিজেরাই বৌদ্ধধর্মের পক্ষে প্রচার কার্য 
আরম্ভ করিলেন। হানরাজত্বের শেষভাগে (খৃষ্টাব্ব ১৭০-২২৫ ) বিখ্যাত পণ্ডিত মাও-তজু 
বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে কনফ্যুসিয়স্‌ ও লাও-ৎজুর উপদেশের তুলনামূলক আলোচনা! করিয়া 
গ্রস্থরচনা করেন এবং উহাতে বৌদ্ধধর্মেরই শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদনের প্রয়াস পান। তিনি 
বলিলেন, “এই পঞ্চ-পুরাণ গ্রন্থ (০1955159 ) হইল পঞ্চ রস ( আস্বাদন ) আর বুদ্ধের মত 
( ধর্ম ) হইল পঞ্চশস্তয ( ভোজ্যসামগ্রী )। এই ধর্মমত গ্রহণ করা অবধি আমি ঘনমেঘের 
পাশে উজ্জ্বল সৌরতেজ লক্ষ্য করিয়াছি । আমার অন্ধকারময় যাত্রাপথে ইহা যেন উজ্জল 
আলোকবতিকা । সংসার নির্বাহকরা, জাগতিক বিষয়ে নিজেকে ঘনিষ্ঠ করিয়৷ লওয়া, 
অবস্থা-অন্সারে নিজের স্থখ স্থবিধ। আদায় করা এবং আপাতরম্য বিষয়ে আসক্ত হওয়াই 
সাধারণ শিক্ষিত মানুষের জীবনের লক্ষ্য, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানীমাত্রই এইগুলি বর্জন করিয়া 
থাকেন। সাধুসন্ন্যাসীর! পূর্ণ-নির্ব তির ( বৌদ্ধমতে ) পথে যাত্রা করেন। সে পথ 
আকাশের মতই রহস্যময়, সমুদ্রের মতই অতল |” 

মাও-তজু-প্রমুখ পণ্ডিতদের রচনা ক্রমেই শিক্ষিত চীনাদের মনে বৌদ্ধধূ্মের প্রতি 
অনুরাগ বৃদ্ধি করিতে সমর্থ হয়। ইহা ছাড়া, যে-সকল ভারতীয় বৌদ্ধপণ্ডিত চীনে 
গিয়াছিলেন তাহাদের নিজেদের এবং তাহাদের শিশ্দের পবিত্র জীবনযাত্রা এই নৃতন ধর্মের 
প্রতি চীনাদের আরও অধিকমান্রায় অনুরাগী করিয়া তোলে | সেই সময় চীনে যে সব 
বিদেশী রাজ! রাজত্ব করিতেছিলেন তাহাদের পৃষ্ঠপোষকতাও এই নূতন ধর্মের বিস্তারে 
অনেকখানি সাহায্য করে । চতুর্থ শতাব্দীতে ওয়েই € ৬৪?) রাজবংশ চীনের সিংহাসনে 
অধিষ্ঠিত ছিল এই রাজবংশ ছিল বিদেশীয় । এই বংশের রাজারা বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক 
ছিলেন। তাহাদের সময়েই চীনে বৌদ্ধশিল্পকলার যাবতীয় উৎকর্ষের স্ত্রপাত হয়। এই 
বংশের প্রথম সম্রাট বৌদ্ধধর্মকে রাজধর্ম বলিয়া! (96966 7২০188107 ) গ্রহণ করেন। 
তিনি ৩৩৫ খৃষ্টাব্ষে সর্বধর্মে সমদৃষ্টি সম্পন্ন যে অনুশাসন প্রচার করিয়াছিলেন তাহ। 
এইরূপ £-- 

“বুদ্ধ চীনাদের উপাস্য নন, তিনি বিদেশীদের দেবতা । চীনের সম্রাট বা তাহার 
প্রজাবর্গ বৃদ্ধের উপাসনা না করিলেও করিতে পারেন। আমি চীনের অধিপতি হুইবার 
সৌতাগ্যলাভ করিয়াছি কিন্তু আমি সীমান্তের অধিবাসী ; কাজেই আমার লোকেদের মধ্যে 


৩৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


প্রচলিত রীতিনীতি মানিয়া চলা আমার ধর্মানহ্ুসারী কর্তব্য । বুদ্ধ বিদেশীদের দেবতা 
বলিয়াই আমার পক্ষে তাহার পৃজা করা সমীচীন; কিন্তু অত্যন্ত ছুঃখের বিষয় এই যে, 
সেই প্রাচীন রাজবংশের রীতিনীতি, বর্তমানেও মানিয়া চলিতে হইতেছে । আমার 
প্রজাবর্গকে লোকে বর্বর বলিয়া থাকে । আমি তাহাদিগকে বুদ্ধের উপাসনা করিবার 
অধিকার দান করিতেছি এবং তাহারা যদি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণে অভিলাষী হন তাহা হইলে শর 
ধর্ম গ্রহণেরও হুযোগ এই সঙ্গেই দেওয়া হইতেছে । যদি কোন কিছু এমন থাকে যাহা 
নির্দোষ ও ত্ুন্দর বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি, তবে কেন সেই পুরাতন রীতিনীতিকেই 
আশ্রয় করিয়া আমাদের চলিতে হইবে ?” 

সেই সময় হুইতে প্রায় একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম চীনদেশে বিস্তার লাত 
করিয়াছিল। তারত হুইতে আগত ভারতীয় পণ্ডিতগণ পরম্পরাক্রমে এই ধারা বহন 
করিয়া চলিলেন। চতুর্থ শতাব্দীর পর হইতে চীনা-তিক্ষুরা নিজেরাই তারতবর্ষে 
আসিতে আরম্ভ করিলেন এবং ভারতীয় পণ্ডিতদের সহায়তায় গভীরভাবে বৌদ্ধশাস্ত্ 
অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন । চীনা পণ্ঙিতেরা ভারতীয় পণ্ডিতদের সহায়তায় ভারতের 
ক্থবিশাল বৌদ্ধ-সাহিত্যের মূল শান্তর চীনাভাষায় অনুবাদ করিয়াছিলেন । এই অনুবাদের 
মধ্য দিয়াই চীনার। বৌদ্ধধর্মের সহিত পরিচিত হইয়া উঠিলেন। এমন কি, প্র অনুদিত 
্রন্থগুলির কতকগুলির সাহিত্যিক মূল্য এতই অধিক যে সেইগুলি চীনা-সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ 
গ্রন্থ ( 01555155 ) বলিয়া খ্যাতি লাত করিয়াছে। 

চীনদেশের ভাবধারা ও জীবন-যাত্রার উপর বৌদ্ধধর্মের প্রভাব অপরিসীম | চীনের 
বিখ্যাত মনীষী ডঃ হং শি, (নু 9151 )১২যিনি চীনের চিস্তাজগতে এক নুতন 
অভ্যুদয়ের সুচনা করিয়াছিলেন__তিনি বলেন, “চীনকে যখন ভারতের মুখামুখী ধাড়াইতে 
হইল। তখন ভারতীয়দের ধর্মের প্রতি অনুরাগ ও প্রতিভার বিপুল স্থির দিকে দৃষ্টিপাত 
করিয়া চীন অতিস্াত, চমৎ্কৃত ও হতবাক্‌ হইয়া গেল। চীন নতিষ্বীকার করিল এবং 
সম্পূর্ণদ্পে তারতের অনুগত হুইল । 


চীনা চিন্তাধারার উপর তারতীয় চিন্তাধারার প্রভাবের প্রথম ঘুগে এই ছুই চিন্তা- 
ধারার এক সমন্বয় সাধনের চেষ্টা লক্ষিত হইয়াছিল । বিখ্যাত পত্ডিত কুমারজীবের 
শিষ্য সেঙ্গ চাও পঞ্চম শতাবীর প্রারস্ভে বর্তমান ছিলেন। তিনিই ছিলেন এই ধারার 


৩৪ 


চীনদেশের চিস্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব, 


পথিরুৎ। পণ্ডিত কুমারজীবের প্রতিভা ছিল অসাধারণ । তিনি পূর্ব-তুর্কান্থানে জন্ম-. 
গ্রহণ করেন, কাশ্মীরে শিক্ষালাভ করেন এবং ৪০১ খৃষ্টাব্দে চীনে আগমন করেন । 
তাহার ন্ৃত্যুকাল (৪১৩ খৃষ্টাব্ব ) পর্যস্ত তিনি চীনেই কর্মব্যাপৃত থাকেন এবং চীনা 
ভাষায় বহু গ্রন্থের অনুবাদ করেন। সেই গ্রন্থগুলির অধিকাংশ চীনা-সাহিত্যের শাশ্বত 
সম্পদরূপে সমাদৃত । পণ্ডিত কুমারজীবের যেমন ছিল গতীর অন্তর্দ ্ি, তেমনি ছিল 
বৌদ্ধদর্শনে প্রগাঢ় ব্যুৎপত্তি__বিশেষতঃ নাগার্ভুনের মাধ্যমিক দর্শনে | এই শান্তর তিনিই 
চীনদেশে সর্বপ্রথম প্রচার করেন। নাগার্জুনের মত ও লাও-তজুর দর্শনের ভিতর 
বছ বিষয়ের সাদৃশ্ঠ তাহার দৃষ্টি এড়াইতে পারে নাই। কাজেই তিনি নাগার্জুনের 
মতকে তাও-বাদের ভাষায় ব্যাখ্যা করার বিরোধী ছিলেন না অনেকের ধারণা এই 
যে তিনি তাও-তে-চিও-এর (৪০-৮০-1০75 ) টীকা রচন! করিয়াছিলেন ; কিন্তু সেই 
টাকা এখন আর পাওয়া যায়না । ইহা সম্ভবতঃ বৌদ্ধ দৃষ্টিতঙ্গি হইতে তাও-বাদের 
ব্যাখ্যা । তাহার শিশ্দের মধ্যে বু যশত্বী চীনা পণ্ডিত ছিলেন । সেঙ্গ চাও তাঁহাদেরই 
একজন | সম্ভবতঃ তাহার গুরুর আদেশে নাগার্জুনের (মাধ্যমিক ) দর্শনের ব্যাখ্যা 
অর্থাৎ তাও-বাদের সহিত প্র দর্শনের সমস্বয়-সাধনের চেষ্ট। সর্বপ্রথম তিনিই করেন। 
বৌদ্ধ-মতে ভূত-তথতা৷ ও উৎপাদ-নিরোধ, শ্বাশ্বত ক্ষণিক, নির্বাণ ও সংসারের মধ্যে 
বিরোধের প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছে বলিয়া মনে হয় । তাও-বাদে ও ভ্ত-অভ্ত, নিত্য- 
অনিত্য, স্‌-অলদের (%এ-৬/০1 £ ড/এ-৬/51) ভিতর ঠিক একই ধরণের বিরোধ 
লক্ষ্য করা যায়। নিত্য ও অনিত্যের প্রসঙ্গে সেঙ্গ-চাও বলেন, “অনিত্যের সম্বন্ধে 
অধিকাংশ মানুষের ধারণা এই ষে, যে-বস্ত গত হুইয়াছে বর্তমানে তাহা অ-সৎ। ফলে 
তাহারা বলেন, অনিত্যই আছে, নিত্য নাই । এই যে অতীত বস্ত বর্ত মানে অবিছ্বমান, 
আমার মতে ইহাই নিত্য । স্তরাং আমি বলি, নিত্য আছে অনিত্য নাই। আবার 
এই যে অনিত্য আছে এবং নিত্য নাই, তাহার কারণ অতীত বস্ত বর্তমানে অবিগ্ধমান। 
আবার এই যে নিত্য আছে, অনিত্য নাই, তাহার কারণ অতীত বস্ত সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয় 
না।” মিলিন্দ-পঞ হো?তে জলন্ত দীপশিখার উপমাটি এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে প্রদীপটি 
সমস্ত রাত্রি ধরিয়া! জলিতেছে, কিন্তু প্রথম প্রহরের প্রদীপটি মধ্যম প্রহর বা শেষ প্রহরের 
প্রদীপের সঙ্গে এক নয়। এক পক্ষে মনে হইবে যে ইহা! একই প্রদীপ, কিন্তু অন্যতাবে 
দেখিলে দেখা যাইবে যে, ইহা একই প্রদীপ নয় ; প্রতিমুহূর্তে প্রদীপ পরিবতিত হইতেছে । 
অস্তিত্বের প্রসঙ্গে সেঙ্গ-চাও বলেন, “প্রত্যেক বস্তুর ভিতরে এমন কিছু আছে, যাহার জন্য 
উহা এক বিশেষ রূপ ধারণ করে না, এবং এমন কিছু আছে যাহার জন্য উহা একেবারে 
অসৎ হইতে পারে না । প্রথম কারণ বশতঃ যদিও উহ! বিশেষ কিছু বলিয়! মনে হয়, তবু, 


৩৫ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


বাস্তবে তাহা অসৎ ( 00107553805736 )। দ্বিতীয় কারণ বশতঃ তাহা অসৎ বলিয়। 
প্রতীয়মান । সেল্স-চাও যে দুইটি (লাও-ৎজু ও নাগার্জু ন ) মতের সমস্বয় সাধন করিলেন 
তাহার মুল ভিত্তি হইল তাহার কার্যকারণ বাদ (প্রতীত্য সমুৎপাদ )। জগতের সমস্ত 
কিছুই কোন-না-কোন কারণ হইতে উৎপন্ন । কোন কার্য নূতন বলিয়া মনে হইলেও 
আসলে তাহা যে কোন-না-কোন বিশেষ কারণের পরিণাম নয়, এরূপ মনে করা 
চলেনা । 

সেঙ্গ-চাও আন্ত একটি বিষয়ের মীমাংসা! করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। সে বিষয়টি হইল 
প্রজ্ঞা-_পূর্ণজ্ঞান | জ্ঞানের অবশ্যই কোন বিষয় থাকে এবং সেই বিষয়ের বিশেষ ধর্মও 
থাকে। উহা নি্ণ নয়, স্থতরাং উহ! পারমাথিক (পরিনিক্পন্ন ) সত্য নহে। যদি 
তাহাই হয়, তবে প্রজ্ঞা দ্বারা কি তাবে পরম সত্য লাত হইবে? সেঙ্গ-চাও বলেন, 
সাধারণ অর্থে আমরা যাহাকে জ্ঞান বলি ইহা! তাহা নহে।, তিনি একটি দর্পণের সহিত 
ইহার তুলন! করিয়া বলেন, “দর্পণটি স্বচ্ছ বলিয়াই ইহাতে (বিশ্ব) প্রতিবিদ্বিত হয়? কিন্ত 
প্রতিবিঘ্বিত হয় বলিয়াই ইহা শ্বচ্ছ ( আবরণহীন-__-অর্থাৎ দর্পণের উপরে যে বিশ্ব পড়ে 
তদ্বারা দর্পণের কোন বিকার জন্মে না)।” স্থতরাৎ তাহার দৃষ্টিতে এবং বিবিধ জ্ঞানের 
ভিতর “পরমের পরিপূর্ণ সীম! মিলে ? কিন্তু ইহা! তখনও জ্ঞান পদবাচ্য নহে।” ইহার 
অর্থ এই নয় যে, পারমাধিক সত্য আপেক্ষিকতার সীমার বাহিরে । “যদিও ইহা বস্তু- 
জগতের বহি ত, তথাপি ইহা বন্ত-বিচ্ছিন্ন নহে । যদিও আত্মা ছুরতিক্রম্য তথাপি ইহা 
সর্বদা বিশ্বের মধ্যে বর্তমান ।”***  হতরাং জ্ঞানী-পুরুষের নির্তণের উপলব্ধি হইলেও 
তিনি বিষয়-ব্যবহারের শক্তি হারান না; পরন্ত কোন সময়েই নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি বস্ত- 
জগৎ হইতে সরিয়! থাকেন না। তাহার দৃষ্টিতে যদিও তিনি পরিবর্তনশীল তথাপি তিনি 
নির্ডণ। তিনি ব্যবহারিক ও পরিবর্তনশীল জগতে বাস করিয়াও সেই নির্ভণ লোকেরই 
(ড/-৬/০।--অস্দ লোক ) অধিবাসী | 

সাংঙ্কতিক ও পারমাথিক তত্বের এই ধরণের সমন্বয় আসলে নাগার্জুনের মাধ্যমিক 
দর্শন হইতে গৃহীত | কিন্তু তাও-বাদের ভাষাতেও একই ধরণের প্রয়োগ থাকার ফলে 
ইহা চীনাদের নিজস্ব মৌলিক স্থষ্টি বলিয়া! প্রচলিত। চীনের মনীষীগণকে ইহা আকৃষ্ট 
করিয়াছিল । তাহার! দেঙ্গ-চাওকে বৌদ্ধ-মনীষী অপেক্ষা চীনা-দার্শনিক হিসাবে অধিক 
শ্রদ্ধা করিতে লাগিলেন । সেঙ্গ-চাও চীনা-দর্শনের সহিত বৌদ্ধধর্মকে সংমিশ্রিত ( সমন্বয় 
সাধন ) করিতে উচ্ছোগী হইয়াছিলেন বলিয়! তাহার পরবর্তীকালে তিনি চীনের চিন্তা- 
জগতে প্রত প্রভাব বিস্তার করিতে সক্ষম হুইয়াছিলেন | স্থতরাং বৌদ্ধধর্মকে বর্জন করা 
আর ষন্তবপর হুইল না । ইহা রহিয়াই গেল। ইহা তখন চীনের নিজস্ব হইল। 


ত৬ 


চীনদেশের চিস্তাধারাঘ় ভারতবর্ষের প্রভাব 


তত্ব-বিজ্ঞানের হৃগভীর অনুধ্যানে চীনারা বড়ই বীতম্পৃহ হইয়া উঠিতেছিল। বৌদ্ধ- 
মতবাদ তথা বৌদ্ধদর্শন হুইতে সাধারণের উপযোগী সহজবোধ্য নূতন নৃতন গ্রস্থ-রচন! 
করার জঙ্য পরবর্তাঁ কয়েক শতাব্দী ধরিয়া বহুবিধ চেষ্টা চলিয়াছিল। তাহারা অধিকতর 
সহজ ও সংক্ষিপ্ত ধরণের কোন কিছু অনুসন্ধান করিতেছিল। একদিকে যেমন প্রাচীন 
বৌদ্ধ-সংক্কার অন্থুসারে শিক্ষাপ্রাপ্ত চীনা-ভিক্ষুরা বিনয় পিটকের অনুশাসন মত কঠোর- 
ভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতেছিলেন। তেমনি অনেকে আবার একটা সহজ-পন্থা 
আবিষ্কারে উদ্ভোগী হুইয়াছিলেন। 


নি 


সেঙ্গ-চাওর সমসাময়িক পণ্ডিত হুই-ইউয়ান ([ন01 0৪) ) অবশ্ট) কুমারজীবের শিষ্ব 
ছিলেন না, তবুও তিনি কুমারজীবের দ্বারা প্রভাবিত হুইয়! বৌদ্ধধর্মের কতকগুলি বিষয়ে 
বিশেষ আগ্রহাদ্িত হইয়াছিলেন। সেঙ্গ-চাওর মতো তিনিও কনৃফ্যুসিয়স ও তাও-এর 
দর্শনে স্থপপ্ডিত ছিলেন এবং তাও-দর্শনের ছাত্র-দ্ূপে তিনি বৌদ্ধতত্বের ধ্ান-ধারণার 
প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন । বৌদ্ধশান্ত্চর্চার নিমিত্ত লুশন (1,9-91,2)) নামক 
স্থানে তিনি একটি নুতন কেন্দ্র স্থাপন করিলেন এবং কতিপয় এক মতাবলম্বী অনুচর সংগ্রহ 
করিলেন। ধীরে ধীরে উহা এক নূতন সম্প্রদায় রূপান্তরিত হইল | প্র শাখার নাম লু 
শনের বৌদ্ধ-সম্প্রদায় । উহা! শুদ্ধলোক-সম্প্রদায় (6015 18509 9০1)০901 ) বলিয়া 
পরিচিত। এই সম্প্রদায় চীনদেশে অমিতাভের উপাসন! প্রবর্তন করিয়াছিলেন । ইহা 
এক নূতন ধরণের ঈশ্বরবাদ । ইহাতে অমিতাভই দেবতান্ধপে পৃজ্য | অমিতাত-মবর্গ- 
প্রাপ্তিই ইহার সাধনার মুল কথা-_সেখানে আছে অমিত জ্যোতি । অনন্ত আয়ু ও 
অফুরান আনন্দ । শ্রদ্ধা ও ধ্যান দ্বারাই সেই প্রাথথত লোকের সন্ধান মিলে । হুই-যুয়ান 
(701-509) ) স্বয়ং এই ধ্যানের উপর জোর দিয়া! বলেন, “বৌদ্ধ-জীবনের তিনটি 
স্তরের ( যেমন £ শীল, ধ্যান ও প্রজ্ঞা ) মধ্যে ধ্যান এবং প্রজ্ঞাই হইল মূলতঃ প্রয়োজনীয় । 
প্রজ্ঞা ব্যতীত ধ্যান পরম নিধিকল্প অবস্থায় উপনীত হইতে পারে না। ধ্যান ব্যতীত 
জ্ঞান গভীর প্ররজ্ঞায় পরিণত হয় না।''-আমি অত্যন্ত ছুঃখের সহিত বলিতে চাই ষে 
প্রাচ্দেশে এই স্থমহান ধর্মের প্রবর্তনের পরেও অতি অল্পই ধ্যানের অনুশীলন কর! 
হইতেছে । ফলে ইহা এখন সম্পূর্ণদ্দপে লুপ্ত হইতে চলিয়াছে।-_কারণ ইহাতে ধ্যান- 
মার্গের স্থদূঢ়তিত্তি নাই ।” 


৩৭ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


তাও-শেঙ্গ (:05০-91)618 ) ছিলেন হুই যুয়ান ও ঝুমারজীবের শিষ্য । তিনি 
ধ্যানমার্গের ভিত্তিতে 'এক দর্শন” প্রবর্তন করেন। ইহা হইতেই পরে বিখ্যাত ধ্যান- 
সশ্রদায়ের স্থপ্টি হইল | উহা! চীনের জীবনঘান্র! ও চিন্তাধারার উপর প্রন্ৃত প্রভাব বিস্তার 
করিয়াছিল । এই সম্প্রদায় চীনদেশে ছান ( ০1:+2॥ ) এবং জাপানে জেন ( 26: ) নাষে 
পরিচিত । এই শব্দটি ভারতীয় প্ধ্যান” শব্ষেরই (প্রারুত---ঝান ) প্রতিশব্দ । পরম 
সত্যের অনুভূতির জন্ত অন্তান্ঠ রহস্যবাদীদের সায় তাও-সেঙ্গও শাস্ত্রের উপর বিশেষ নির্ভর 
করিতেন না । ধর্মশান্ত্রের ভিতর দিয়! সত্যকে উপলদ্ধি করা যায় না। গ্রগুলি সিদ্ধির 
উপায়মাত্র। তিনি বলেন, “মনের ভাব প্রকাশ করিবার জন্যই প্রতীকের প্রয়োজন । 
যখন অন্তরে এই ভাবের উদ্তব হয় তখন প্রতীক নিশ্রয়োজন হুইয়া পড়ে । মনের ভাব 
প্রকাশের জন্যই ভাষা । ভাব যেখানে অন্তর্ুখী, ভাষা! সেখানে মৌন । প্রাচ্যদেশে 
বৌদ্ধশান্ত্র প্রচারের পর হইতেই অন্বাদকারী পণ্ডিতের! বহুবাধার সম্থুখীন হুইয়াছিলেন $ 
ফলে জনলাধারণ তাহাদের অনুদিত গ্রন্থগুলির ভাষাই অবিকল গলাধঃকরণ করিয়াছে । 
অতি মুষ্টিমেয় লোকই তাহার সম্যক অর্থ হৃদয়ঙগম করিতে পারিক্নাছে। মাছ একবার যে 
ধরিতে পারে, সেকি আর জাল খুঁজিয়া মরে £ সত্যকে সে-ই জানতে পায়!” 

তাও-শেঙ্গ যে দুইটি মত প্রচার করেন সেই ছুইটিই চীনা! পশ্ডিতদের মতে বৈপ্লবিক 
তাবধার! তথ! বিদেশীর ধর্মের বিরুদ্ধে চীনাদের একটা বিদ্রোহ । উহা! বিদ্রোহ হউক বা 
যাহাই হুউক, এ্র দুইটি মত চীনা তাবধারাকে এক নূতন বিবর্তনের পথে ঠেলিয়া দিয়াছিল। 
শ্রই মতগুলি এমন কিছু নুতন নয়, অনুসন্ধান করিলে বৌদ্ধশান্ত্রেও অনুরূপ নিদর্শন পাওয়া 
যাইতে পারে $ কিন্তু ইহাদের বিশেষত্ব এই যে, ইহারা মূলতঃ চীনদেশীয় । তাও-শেঙ্গের 
দুইটি সত্য হইল ১-_নিফাম সৎকর্ম, ২__সহ্‌সা-জাত সম্বোধি। “সৎকর্ষ স্বভাবতঃই 
নিষ্ষাম” তাও-শেঙ্গের এই উক্তি আপেক্ষিকতাবে না৷ বুঝিয়া পারমাধিকভাবেই বুঝিতে 
হইবে । তাহার এই উক্তি মুক্ত-পুরুষদের সন্বন্ধেই প্রযোজ্য । মুক্তপুরুষ এই জগতে 
থাকিয়াও এই জগতের উর্ধে | প্রতিদান ও প্রতিশোধ কেবল আপেক্ষিক দৃ্টিতেই সত্য । 
কিন্তু যিনি উৎপাদন-নিরোধ-্প্রাপ্ত অর্থাৎ কার্য-কারণ-নিয়মের মধ্য দিয়া চলেন ত্বাহার 
নিকট ইহাদের কোন অস্তিত্ব নাই। এই মতটি বৌদ্ধ জীবন-যাত্রা পদ্ধতির পরিপূরক মাত্র। 
সম্বোধির অর্থ এই নয় যে ইহা পর্যায়ক্রমে লাত কর! যায় ; ইহা সহসা প্রতিভাত হয়। 
বৌদ্ধধর্মের পক্ষে এই মত নৃতন নয়। ইহার গঠনমূলক স্তরে নৈতিক ( শীল ) আবরণ, 
শুদ্ধ আধ্যাত্মিক জীবন ইত্যাদি কিছুই বাদ পড়ে না । সম্বোধি যখন আসে তখন ইহা 
আকম্মিকভাবেই আসে । পরবর্তীকালে এই মত কোন কোন ক্ষেত্রে চীনের জীবন- 
দর্শনকে বিচলিত করিয়া তুলিয়াছিল। যতদুর জানা যায় তাহাতে মনে হয়না যে ভারতীয় 


৩৮ 


চীনদেশের চিন্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 


ভাবধারার বিরোধী কোন বিপ্লবে তাও-শেঙ্গ ইন্ধন যুগাইভেছিলেন | তাহার সঙ্গী বোঁধ- 
গণের মনে পাছে পরম ও আপেক্ষিক সত্য-সম্বন্ধে কোন ঘবন্ব দেখা দেয় এই আশঙ্কায় 
তাহাদিগকে সতর্ক করিবার জন্য তৎকালীন আধ্যাত্মিক জীবনের কোন কোন বিষয়ে তিনি 
বিশেষ আগ্রহাম্বিত হইয়াছিলেন । 

তাও-শেলের মতবাদে তৎকালীন বৌদ্ধপপ্তিতেরা উত্তেজিত হুইলেও তাও-শেঙ্গ-মতা- 
বলম্বীরা এ সময়ে নিজেদের কোন দল গঠন করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় না। বৌদ্ধ- 
ধ্যান-সম্প্রধায়ের ন্যায় এক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতারূপে ভারতের এক রহস্যবাদীর কথা 
শুনিতে পাওয়। যায়। তাহাকে কেন্দ্র করিয়া বহু পৌরাণিক গল্প রচিত হইয়াছিল। তবু 
তিনি আসলে ছিলেন এ্তিহাসিক ব্যক্তি । তাহার নাম বোধিধর্ম। তিনি ৬ষ্ শতাব্দীর 
প্রথমভাগে চীনে আসেন । খৃষ্টাব্দ ৪৮৬ হইতে ৫৩৬ পর্যস্ত তিনি চীনেই অবস্থান করেন । 
৫৩৪ স্ুষ্টাব্দে লিখিত তখনকার কোন এক বিবরণ হইতে জান! যায় যে ইয়ং-নিঙ্গ-শে'র 
(%০৪:১৪-ট0৪-3155 ) লো-ইয়াংস্থিত (1.০-58778 ) নব-নিম্মিত মন্দিরে তিনি 
উপস্থিত ছিলেন । 

বোধিধর্মের উপদেশে চীন তাহার পুরাতন রীতিনীতি বর্জন করিল। বোধিলাতের জন্ত 
ধর্মান্থশীলনের উপায় হিসাবে ধ্যান-চর্যার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করিলেন। যে তত্ব 
বোধিধর্ম প্রচার করিলেন তাহা নাগাজুনের মতবাদেরই এক নূতন ভাষ্য। ইহাকে 
কতকট। বিজ্ঞানবাদের ব্যাখ্যা বলিয়া মনে হয়। তাহার মতে প্রত্যেকের মধ্যেই বুদ্ধ- 
স্বভাব বিরাজিত, প্ররুত বোধি বুদ্ধ-স্বতাবেরই জাগৃতি । তিনি বুদ্ধবচন (ক্ছত্র ও 
আগমাদি শান্তর) অধ্যয়নের ও সংঘের ( বিনয়পিটক-লিখিত ) আচার অনুষ্ঠানের এবং 
ধর্মের বহিরাচরণের জন্য অত্যধিক মনোনিবেশের বরং নিন্দা করিয়াছেন । তাঁহার মতে 
দ্ধ-স্বভাব-অন্ুভূতির পক্ষে প্রগুলি নিরর্থক ! ধ্যান অন্তু খী দৃষ্টি, ইহা বহির্ু খীনতা নয় । 
একমাত্র প্র ধ্যান বোধিলাভের সহায় । তিনি বলেন, “প্রত্যেক মানুষের হৃদয় সকল 
মানুষের হৃদয়ের সহিত সর্বকালে সকল স্থানে যোগযুক্ত ছিল এবং এখনও আছে। এই 
হৃদয়ই হইল বুদ্ধ । ইহার বাহিরে অন্ত কোথাও বুদ্ধ নাই । সম্বোধি এবং নির্বাণ দুই-ই 
হৃদয়ের বস্ত। যেখানে হৃদয় নাই সেখানে সব কিছুই কাল্পনিক । হৃদয়ের বাহিরে কিছু 
অন্বেষণ করা কেবল মিথ্যা ব৷ শুগ্ততাকে ধরিবার প্রয়াস মাত্র । হদয়ই বুদ্ধ এবং বুদ্ধই 
ভ্রদয় । হৃদয়ের বাহিরে বুদ্ধের কল্জনার নাম উন্মস্ততা । হৃতরাৎ দৃষ্টিকে বহির্ুখী না 
করিয়া! অন্তর্ুধী করাই আবশ্যক | আত্মসমাহিত হওয়া এবং নিজের অন্তরে বুদ্বস্বতাবের 
অনুধ্যান কর! প্রয়োজন ।” 

বোবিধর্মের দর্শন একই ভাবধারায় আরও অনেকদুর অগ্রসর হইয়াছে । যখন 


৩৪) 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্য দর্শনের ইতিহাস 
প্রত্যেকেরই এই বুদ্ধ-্বতাব রহিয়াছে এবং হৃদয়ের বাহিরে কোন বুদ্ধই নাই তখন “কে. 
রক্ষা! করিবে এবং কাহাকে রক্ষা করিবে ? এই প্রশ্ন আর থাকে না । কাহাকেও পৃজা- 
বন্দনা! করা ও ধৃপদীপদান করারও কোন প্রয়োজন নাই। বুদ্ধই যদ্দি হৃদয় হন, তবে 
হৃদয় এমনই যে সে সব কিছু জানিতে পারে । সত্যকে জানিবার জন্য কাহারও নিকট 
উপদেশ প্রার্থনা করা অথব! শান্ত্রপাঠ করা নিশ্রয়োজন | ইহার জন্ তিক্ষুব্রত, পৃজা- 
বন্দনা ব৷ প্রার্থনাদিরও কোন প্রয়োজন নাই | যদি কেহ নিজের মধ্যে বুদ্ধকে দেখিতে 
পায়, ইহাতেই তাহার মুক্তি-_ইহাই নির্বাণ । এই দেখাতেই নির্বাণ পর্যবসিত । 
স্থতরাং তাহার কৃত কর্মে ভালো বা মন্দ, পুণ্য বা পাপ বলিয়! কিছু নাই। কোন কোন 
পণ্ডিত বোধিধর্মের দর্শনের মধ্যে ভারতীয় বেদান্তদর্শনের ইঙ্গিত লক্ষ্য করেন । বস্তুত ব্রহ্ম 
ও আত্মাকে বুদ্ধের প্রতিভু-স্বরূপ ধরিলে আমরা যাহা পাই তাহা একপ্রকারের বেদাত্ত 
বলিলেই চলে । নাগাঙ্জুনের দর্শনে বিজ্ঞানবাদের যে ব্যাখ্যা, তাহাও অনেকটা এইরূপ । 
কিন্তু বোধিধর্ম দক্ষিণতারত হইতে গিয়াছিলেন এবং তিনি আচার্য শঙ্করের বহু পুর্ববর্তী- 
কালের । নব্য বেদান্ত শঙ্করাচার্ষের এবং এ বেদান্তে মায়াবাদের স্থানই মুখ্য । শঙ্করা- 
চার্ষের পূর্বেই সৌত্রান্তিক ও মাধ্যমিকপন্থী বৌদ্ধরা অনেকটা ঠিক মায়াবাদের ন্যায় একমত 
প্রচার করিয়াছিলেন । 
বোধিধর্ষ ও সম্রাট উ (ডভ/ )র মধ্যে ষে কথোপকথন হইয়াছিল তাহার বিবরণ 
হইতে স্পষ্ট জানা যায় যে বোধিধর্ম বৌদ্ধদর্শনের ব্যাখা করিতেছিলেন | “সম্রাট তাঁহাকে 
জিজ্ঞাস। করলেন £ 
সিংহাসনে আরোহণ করিয়া! অবধি আমি অবিরত মন্দির নির্মাণ, ধর্মশানত্রাদির 
অনুবাদ ও নূতন নৃতন ভিক্ষুকদের সঙ্ঞে প্রবেশের জন্য উৎসাহ দিতেছি । ইহাতে 
আমার কি পরিমাণ পুণ্যসঞ্চয় হইল? 
বোধিধর্ম বলিলেন £ কিছুই না । 
সমাট £হ কেন? 
বোধিধর্ম 8 এই সমস্ত কোন হবয়ংপূর্ণ বা! সম্পুর্ণ করণের বিশেষ পরিণাম নহে । ইহা 
মূল সত্তার ছায়া মাত্র । ইহার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নাই। 
সম্রাট ঃ তাহা হইলে প্ররুত পুণ্য কি। 
বোধিধর্ম 8 উহা শুচিতা ও বোধি-জ্ঞানের ভিতরেই বর্তমান--যেখানে গভীরতা ও 
পূর্ণতা বিরাজিত, সেখানে চিত স্থির ও শুন্ততায় সমাবিষ্ট । এই জাতীয় পুণ্য জাগতিক 
উপায়ে সন্ধান করা ধায় না। 
সমআাট £ সমস্ত ধর্মতত্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় কোনৃটি ? 


চীনদেশের চিস্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রতাঁৰ 


বোধিধর্ম £ যেখানে সমস্তই শুন্তত1 সেখানে পুণ্য বলিয়া কিছু নাই। 

সম্রাট £ তাহা হইলে আমার সহিত কে কথোপকথন করিতেছেন ? 

বোধিধর্ম£ আমি তাহা জানি না। 

বোধিধর্মের উপদেশ ধ্যান-সপ্প্রদায়কে চীনদেশে দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত করিল । তাও-শেঙ্গকে 
কেন্দ্র করিয়! এই আন্দোলন বহু পূর্বে আরম্ত হইলেও বোধিধর্ম যখন চীনে গিয়া এই একই 
দর্শনের পক্ষ সমর্থন করিলেন তখনই ইহা! জনসাধারণের ব্যাপক অনুমোদন লাভ করিয়া- 
ছিল। এই কারণেই পরবর্তী ধ্যান-পন্থীরা বোধিধর্মকেই তাহাদের আদিগুরু বলিয়া 
মনে করেন। এই সম্প্রদায় চীনে এবং পরে জাপানে বিপুল সমর্থন লাত করে। 
পরবর্তী কয়েক শতাব্দীর মধ্যে এই সম্প্রদায়ের কয়েকটি শাখা বাহির হুইল | ধ্যান- 
মতবাদের মধ্যে আবার ছুইটি ধার! বর্তমান ছিল। একটি নাস্তি-প্রধান অন্যটি অস্তি- 
প্রধান। একটির মতে সর্ধধর্ম শূন্ততাই পরম ( তত্ব ), ইহা নির্ত ণ এবং অনির্বেন্য । চিত্ত 
এবং বুদ্ধত্বভাব ছুই-ই এই শৃন্তা । এই মত “অ-চিত্ত অ-বুদ্ধণ মতব্ূপে অভিহিত । 
অস্তি-প্রধান দৃষ্টিতে__চিত্তই শুষ্ঠতার বোধক। চিত্ত ব্যতীত জাগতিক কোন কিছুরই 
অস্তিত্ব নাই। এই চিত্তই বোধি বা নির্বাণ লাভ করে। স্বতরাং ্বয়ং চিত্তই হইল 
সৎ-স্বতাব অথবা বুদ্ধ-্বভাব । এই মত চিত্তোৎপাদ বা! বুদ্ধোৎপাদ মত নামে পরিচিত । 
এই ছুইটি ধারা সম্পূর্ণভাবে চীনের নয়। ইহারা শুন্তবাদ ও বিজ্ঞানবাদে বণিত মহাষান- 
মতেরই ছই প্রাচীন সংস্থিতি। কিন্তু এই ধার! ছুইটির মূল বিস্মৃত হুওয়াতে ইহারা 
বৌদ্ধ-দর্শনের প্রকৃত চীনাভাব্যন্মপে বিবেচিত হইত । ইহাদের মধ্যে চীনের নিজন্ব কিছুও 
ছিল; এই কারণেই বিদেশীয় ধর্মের প্রতি ধাহাদের শ্রদ্ধা ছিল না ত্বাহারাও ইহাদের 
গ্রহণ করিয়াছিলেন । 


ধ্যান-সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের মধ্যে প্রতিত্বন্দ্িতার ফলে চীনা। বৌদ্ধদের মনে 
ঘোরতর ছন্দের স্থষ্টি হইল। এই সময়ে চীনে বহু তিক্ষু ও ভিক্ষুণী ছিলেন। প্রধান 
প্রধান বৌদ্ধকেন্দ্রে বিরাট বিরাট বিহার নিগিত হইয়াছিল। ভারতীয় এবং চীনা- 
পত্ডিতদের কর্মতৎপরতায় বহু বৌদ্ধসাহিত্যের অনুবাদ প্রকাশিত হুইয়াছিল। প্রাচীন 
মত অনুসারে এইগুলি 'বুদ্ধের বাণী সংকলন” | এতদ্যতীত মহা মহা মনীষীদের গ্রন্থাবলীও 
প্র সময় অনুদিত হুইয়াছিল। ধ্যান-সশ্্দায়ের শিষ্তেরা এই 'সকল ধর্মশান্ত্রের উপর 


৪২ 


কোন গুরুত্ব আরোপ করিতেন না। পরস্ত প্রচলিত ধর্মান্মশাসন £ থা £ বিহারের .. 
নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিপালন, বুদ্ধ বা অন্থান্ত দেবদেবীর পৃজার্চন! বুদ্ধের নিকট প্রার্থনা, তিক্ষালৰধ 
অল্পে জীবন ধারণ ইত্যাদি যাহা যাহা! বৌদ্ধশান্ত্রের নির্দিষ্ট উহাদের ব্যাখ্যা করিয়! 
উহাদিগকে নিরর্থক প্রতিপন্ন করিবার এক ক্রম বর্ধমান প্রবৃত্তি তাহাদের মধ্যে দেখা 
দিয়াছিল। 

ষষ্ঠ শতাব্দীর বিখ্যাত চীনা-মনীষীদের অন্যতম চি-খাই এই পরম্পরবিরোধী মত- 
সমুহের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করিয়াছিলেন। ইহা ছুঃসাহসিক হইলেও ত্বাহার হচ্ছ! 
ছিল যে তিনি এক ত্বন্থমুক্ত মত আবিফার করিবেন। তিনি ৫৩১ খুষ্টান্দে জন্মগ্রহণ 
করেন। তিনি ধ্যান-সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন এবং তিনি ঠিক বোধিধর্মের শিষ্য না 
হইলেও বোধিধর্মের মতের সহিত তাঁহার পরিচয় ছিল। থিয়েন থাই (ঘ157-য51) 
শামক স্থানে তিনি একটি বিহার স্থাপন করিয়াছিলেন । তাহার সম্প্রদায় এ স্থানের 
নামেই পরিচিত । চি-খাই তাহার নিজস্ব একটি স্ুসম্প্‌ক্ত মত প্রচার করিলেন । এই 
মত তাহার শিল্ত তৃ-শুন (5-9147) ) কর্তৃক পরিগঠিত হইয়াছিল। তু-শুন ৬৮০ 
খৃষ্টান্বে লোকান্তরিত হন | ধ্যান-মতাবলম্বী হইলেও চি-খাই উক্ত সম্প্রদায়ের অন্যান্য 
আচার্ধদের সহিত একমত হুইতে পারেন নাই । সমস্ত সত্তাই বুদ্ধ-স্বতাবের অধিকারী, 
এ-কথা তিনি স্বীকার করিতেন । কিন্ত এই ধারণা তাহার দৃঢ় ছিল যে, বুদ্ধ-স্বভাবের 
উপলব্ধি মানুষের নিজের চেষ্টাসাপেক্ষ ! সুতরাং গুরুর উপদেশের প্রয়োজন আছে-- 
সেই সঙ্গে সঙ্গে চিত্তের ভ্রান্তি--দূর করিয়া সত্যের উপলব্ধির জন্য চেষ্টারও প্রয়োজন 
আছে। চি-খাই-এর নূতন মতের ইহাই মুল তিত্তি | বৌদ্ধ-সাহিত্যে গতীর অনুশীলনের 
ফলে তাহার এই প্রত্যয় জন্মিয়াছিল যে, বুদ্ধের উপদেশ আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর-বিরোধী 
মনে হইলেও বস্ততঃ তাহার মূলে কোন বিরোধ নাই। দার্শনিক বিচার তিন্ন ভিন্ন 
থাকিলেও ইহাদের মূল পরিণাম একই । ইহা অসত্যকে অতিক্রম করিয়া! সত্য ও পরম 
কল্যাণকে লাভ করিবার কথাই বলে । কে কি উপায়ে সেই পরিণামে উপনীত হুইল, 
তাহাতে কিছু আসে যায় না । এই ধারণাতেই চি-খাই শান্ত্রগুলিকে যথাযথ নিয়মানুসারে 
শ্রেমী-বিভাগের ও ভিন্ন ভিন্ন মতের সমন্বয় সাধনের প্রয়াসী ছিলেন । ত্বাহার উদ্ভাবিত 
মত এতই যুক্তিপূর্ণ হইয়াছিল যে তাহা চীন এবং দুদুরপ্রাচ্যের দেশগুলিও গ্রহণ করিয়া- 
ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই মত আমাদের দেশেও আসিয়া পেছিল। বৌদ্ধধর্মকে এইভাবে 
যুকতিপূর্ণ ও হুসমঞ্রস করিয়া তোলাই হইল চীন-প্রতিভার মহৎ কীতি। 

সাহিত্যে সংগৃহীত বুদ্ধের উপদেশবলীর প্রসঙ্গে চি-খাই প্রস্তাব কল্বেন যে তাহা 
'কালক্রম-অনুসারে শ্রেণী-বিতক্ত হইবে । তিনি বুদ্ধের কর্মজীবনকে পাঁচতাগে বিতক্ত 


৪২ 


চীনদেশের চিভাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 


করিলেন এবং তাহার উপদেশবলীকে অস্থন্নপভাবেই বিশেষ বিশেষ কালের .অন্ত্ভূ 
করিলেন। বুদ্ধের সব্রিয়-জীবনের প্রথমতাগের কথা অবতংসক ্ত্রে প্রকাশিত । 
বোধিলাভের অব্যবহিত পরে নির্বাণের দীপ্ত-জ্যোতিতে উত্তাসিত হুইয়| বুদ্ধ একুশদিন 
বৃক্ষমূলে অবস্থান করিলেন। বৃদ্ধকে অভিনন্দিত করিবার জন্য দেবতারা এ. সময়ে বুদ্ধ- 
সমীপে উপস্থিত হুন1 বুদ্ধ তাহাদিগকে উপদেশ দান করেন। এর উপদেশবলীতে 
অত্যন্ত গভীর ও সাধারণ মানুষের পক্ষে দুর্বোধ্য ( সুছ্্দর্শ ) সত্যের প্রকাশ করেন । এই 
অবতংসকস্ত্রের উপদেশবলীই মহাযান। সঙ্গে 'সঙ্গেই তাহার সক্রিয় জীবনের দ্বিতীক়্ 
পর্যায়ের স্থত্রপাত । এ সময়ে তিনি বোধিবৃক্ষতল ছাড়িয়া সাধারণ ধর্মোপদেশক জীবন- 
নির্বাহ করেন। তাহার এই সময়ের উপদেশবলী আগম ( হুত্রপিটক ) গ্রন্থে সংগৃদ্থীত | 
এইগুলি হীনযান মতবাদ । এই উপদেশবলী শ্রমণদের জন্ত নির্দেশিত । কোন গভীর তত্ব 
ইহাতে নাই। এই পর্যায় বার বৎসর ধরিয়া চলিয়াছিল। 

তৃতীয় পর্ধায়ে বুদ্ধ তাঁহার প্রচারিত মত হুইতে স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও দার্শনিক গ্রন্থাদির উপর 
অভিযোগ আনয়ন করিলেন । এই সময়ের উপদেশ বিতর্কের আকারে বৈপুল্যস্থত্রে 
গ্রথিত। ইহাতে হীনযান ও মহাযান মতবাদের লক্ষণ সংমিশ্রিত। এই পর্যায় আট 
বৎসর ধরিয়া চলিয়াছিল। চতুর্থ পর্যায়ে বুদ্ধের বিরোধী সম্প্রদায়ের আক্রমণ তাঁহার 
উপরে খুব তীব্র হইয়াছিল । স্থতরাং বুদ্ধ তাহার শিষ্যদের নিকট গভীরতর তত্ব-বিজ্ঞান- 
মূলক সত্য প্রকাশ করিতে বাধ্য হইয়্াছিলেন। তাহার এই পর্যায়ের উপদেশ “প্রজ্ঞা- 
পারমিতা” গ্রথিত হইযাছে। ইহা! সম্পূর্ণরূপে মহাযানীয় । এই পর্যায় বাইশ বৎসর 
ধরিয়া চলিয়াছিল । 

পঞ্চম পর্যায়ই শেষের অধ্যায় | প্রতিপক্ষদল তখন নীরব । বৌদ্ধধর্সও তখন তুদৃঢ়- 
ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত । এই সময়ের উপদেশ মুখ্যতঃ বোধিসত্বের মার্গ ও চর্যা নির্দেশ 
করিতেছে । হাহারা বোধিলাতে প্ররয়াসী তাহারাই বোধিসত্ব। এই সমগ্পের উপদেশ 
“স্ৃ-ধর্ম-পুগুরীক?, নির্বাণ-স্থন্র” প্রভৃতি মহাযান-গ্রন্থে সংগৃহীত । এই পর্যায় আট বৎসর 
ধরিয়া চলিয়াছিল ; এবং নির্বাণেই ইহার পরিসমাণ্ডি ঘটিয়াছিল। স্থতরাং চি-খাই-এর 
মতে বুদ্ধের উপদেশবলী বিশেষ এক ধারায় প্রবাহিত এবং এইগুলির একটিও গুরুত্বহীন 
নহে। প্রগতিমুলক পন্থায় এইগুলি সকল স্তরের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন পূর্ণ করিয়া থাকে। 
্থতরাং তাহার উপদেশবলী আপাত দৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী মনে হইলেও মূলতঃ এগুলির 
মধ্যে তেমন কিছু বিরোধ ঘটে নাই। ভারতীয় পশ্থিতগণ, বিশেষতঃ ধাহারা বিজ্ঞানবাদী, 
তাহারা বুদ্ধের উপদেশগুলিকে এই দৃষ্টিতেই দেখিতেন। এই কারণেই এ উপদেশগুলির 
স্বতঃবিরোধ তাঁহারা খণ্ডন করিতে পারিতেন। যে উপদেশগুলিকে তাহাদের ব্যাখ্যার 


৪6৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সহিত সামগ্্তষ্থীন বলিয়া মনে করিতেন সেগুলি সম্বন্ধে তাহারা বলিতেন যে, মহাযানের 
গতীর তত্ব-বোধে অসমর্থ সাধারণ বিদ্যার্থীদের জন্যই এ সকল উপদেশ রচিত। এই 
দৃষ্টিতজী সম্পূর্ণ নৃতন নয়) কিন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ মত-রূপে ইহাকে পরিণত করার মূলে 
রহিয়াছে চি-খাহি-এরই কৃতিত্ব । 

চি-থাই অবতংসক-মুত্রকে বুদ্ধের সর্বোস্তম ও হ্মহান্‌ স্যষ্টি বলিয়া শ্রদ্ধা করিতেন | 
তিনি ইহাকে ভিত্তি করিয়াই বৌদ্ধধর্মের ব্যাখ্যা করিলেন । ত্তাহার ব্যাখ্যান অবশ্ঠ 
ভারতীয় ব্যাখ্যানের অন্ধ অনুকরণ নয়__ইহা সম্পূর্ণ ই মৌলিক | ভিন্ন মতবাদকে নিজের 
মধ্যে গ্রহণ করিবার উপযোগী একটি বিশেষ প্রকৃতি ইহার রহিয়াছে, সে-কারণে বুদ্ধের 
কোন উপদেশের প্রতি কোনপ্রকার অশ্রদ্ধা কোথাও প্রকাশ পায় নাই। তাহার মতে 
বৌদ্ধতত্ব মনের তিনটি বৃত্তির সহিত সংশ্লিষ্ট-_যথাঃ জ্ঞান, ভাব ও ইচ্ছা । জ্ঞান মানুষকে 
জীবনের প্ররুত স্বভাব জানিতে সাহায্য করে; ভাব পূর্ণ সিদ্ধির প্রতি অখণ্ড বিশ্বাসকে 
অবিচলিত রাখে, এবং ইচ্ছা! লক্ষ্য স্থির রাখিয়া।কর্ম করিতে প্রেরণ! দিয়! থাকে | চি- 
খাই বুদ্ধকে অসাধারণ কিছু বলিয়া মনে করেন না। তিনি মনে করেন যে বুদ্ধ ছিলেন 
একজন সাধারণ মান্ধষ এবং তিনি নিজে তাহার হৃদয়ের সদ্বৃত্তিগুলির অনুশীলন দ্বারাই 
সম্বোধিলাভ করিয়াছেন। প্রত্যেকের মধ্যেই সেই বুদ্ধ স্বতাব রহিয়াছে । এই বুদ্ধ- 
স্বতাব এক সার্বজনীন সত্য । 'নৈসগ্গিক জগতে যাহা কিছু বর্তমান তাহার মধ্যেই এই 
সত্য অংশত বিরাজ করিতেছে । ইহা ব্রি-স্বতাব যথা £ সত্য, হুন্দর ও মঙ্গল । হৃতরাং 
প্রকৃতির সৌন্দর্যরাজ্যে পত্রে, পুষ্পে ও বিহগের কলতানে সেই একই লার্বজনীন সত্য তথা 
বুদ্ধন্বতাবের মূর্ত-প্রকাশ। আমাদের মধ্যেও এই অন্তনিহিত বুদ্ধ-স্বভাব জাগরণের অপেক্ষা 
করিতেছে । বুদ্ধের অন্তরে ইহা জাগিয়াছিল। ইহাই সন্বোধি। চি-খাই বহির্জ গৎ ও 
চিত্ত-জগতের ভিতর কোন ব্যবধান লক্ষ্য করেন না; বলেন যে এইগুলি একই সত্যের 
দ্বিবিধ প্রকাশমান্র । ইহাতে তিনি ধ্যান-সম্প্রদায়ের তথা নাগার্ভুনের (মাধ্যমিক) 
দর্শনকে অনুসরণ করিয়াছেন | স্থতরাৎ তিনি সম্বোধির আকস্মিক আবির্ভাব বিশ্বাস 
করেন না। 

চি-খাই বৌদ্ধ-দর্শনের প্রতীত্য-সমুৎপাদ ( শাশ্বত কার্ধ-কারণবাদ ) স্বীকার করেন। 
প্রতীত্য-সমুৎপাদ অনাদি এবং অনন্ত । প্রতিটি পরিণাম অপর পরিণামের কারণ-স্বরূপ | 
এই কার্য-কারণের শ্যত্রের কোথাও শেষ নাই। এই বিশ্বের মুল স্বরূপ শাশ্বত । নশ্বর 
(উৎপার্দ বয়োধর্মী ) জীবমাত্রেই কার্ষ-কারণ-সম্ভূত | ইহারা যেন বিরাট বিশ্বের হ্ুচির- 
স্থায়িত্বের সমুদ্রের মধ্যে ক্ষণিক ও খণ্ড তরঙ্গমাত্র। ইহারা অনিত্য । ০০০০৪ 
টিনার লিকার নানি রন | 


চীনদেশের চীস্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রতাৰ 


একক ব্যক্তি-সংস্থা ( পুদুগল ) ক্ষণিক, অনিত্য এবং অনাত্ম। এই জগতের অস্তিত্ব 
(ভব) হুইল কর্ষের কারণ ও পরিণামের সহিত সংযুক্ত সন্তান সমুহ । অতএব পুঢ্গল 
অনাত্স। পুদুগল ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ--এই উপাদান-চতুষ্টয়ে গঠিত। কর্মের বশে 
এই উপাদানগুলি জন্মকালে (জাতিপময়ে ) সংযুক্ত হয়; আকার মৃত্থ্যুসময়ে বিষুক্ঞ হইয়। 
যায়। এই প্রসঙ্গে চি-খাই তৌতিক কারণ (52251 ) এবং ফলোঁৎপাদক কারণ 
(517-552 ) এই দ্বি-বিধ কারণ নিদিষ্ট করিয়াছেন ; যথ। £ ভৌতিক কারণ হুইল বীজ 
আর ফলোৎপাদক কারণই হইল এ বীজের বপন। 

চরম সত্যের সম্বন্ধে চি-খাই মাধ্যমিক বিজ্ঞান-বাদের মতকেও অবলম্বম করেন । এই 
সত্য অস্থায়ী পরিদৃশ্যমান্‌ জগৎ নহে । ইহ] এই পরিদৃশ্মমান জগতে সমুদয় রূপের মধ্যে 
আবৃত । ইহ! বিশ্বের চিরন্তন সত্তা মৌলিক বস্তু তথা সমস্ত বস্তর মুল আধার । চিরন্তন 
সত্য জন্ম বা মৃত্যুর অতীত | ইহার হ্রাস বা বৃদ্ধি নাই । ইহা! অনাদি ও অনস্ত । কিন্তু 
পরিদৃশ্যমান জগৎ জন্তুর অতীত নয় | ইহার হাস ও বৃদ্ধি দুই-ই আছে। ইহা! সাদি 
ও শান্ত। প্রলয়ে ইহার পরিসমাপ্তি হয় না, বরং পরিদৃশ্যমান বস্তর এক নৃতন প্রবাহ 
স্চনা করে । এই জগতের উর্ধে যে সত্য বিরাজমান তাহা! পরম, একক, অসীম, স্বতন্ত্র 
এবং স্বলক্ষণ ( অসাধারণ )। পরিদৃশ্টমান জগৎ সে তুলনায় আপেক্ষিক, বিশেষক, সসীম, 
অস্বতন্ত্র এবং সাধারণ । 

আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি, চি-খাই বলেন যে, বিশ্বের মূল সম্ভা ও তাহার পরিদৃশ্বমান্‌ 
স্বরূপ যেন সমুদ্র ও তাহার তরঙ্গ । এই ছুইটির মতোই নির্বাণ ও সংসার অভিম্ন। 
«“( জীব ) সত্ভ1” তথা “বুদ্ধ-্বতাব” যখন নিত্য-অবস্থায় বিরাজ করেন তখন নির্বাণ ; এবং 
তাহা যখন অনিত্য-অবস্থাগ্ন তখনই সংসার | নির্যাণের নিত্যসমুদ্রে পুদ্দগল ক্ষণিক 
তরঙ্গমাত্র | 

বৌদ্ধ-দর্শনের তিনটি প্রধান বিষয় বিশেষ লক্ষ্যনীয় ঃ ১-_এই জগতের উর্ধে যে 
সত্য বিরাজমান তাহা! সামগ্রিকভাবে বিশ্বের স্থানে কালে ওতঃপ্রোতভাবে ব্যাপৃত হুইয়া 
আছে । ইহা অনাদি এবং অনন্ত । ইহা অসীম এবং শাশ্বত । ২-_-এই মৌলিক সত্য 
হইতেই পরিদৃশ্বমান্‌ জগৎ কার্য কারণ বশে সমুভ্ূত। ৩-__এই মৌলিক সত্যের উপর 
নির্ভর করিয়া আছে বলিয়া পরিদৃশ্যমান্্‌ জগৎ মিথ্যা নহে। কার্ধকারণ বশেই বহুর মধ্যে 
এক এবং একের মধ্যে বু বিরাজ করে। 

ইহাই চি-খাই-এর মতের সার-সংক্ষেপ। বস্ততঃ ইহা নাগা্জু নেরই সিদ্ধান্ত । কিন্তু 
এই বিশেষ দৃষ্টি দিয়া সমগ্র বৌদ্ধনাহিত্য ও দর্শনের উপর যে আলোকপাত তাহা চি-খাই- 
এর সম্পূর্ণ নিজন্ব। এই মত তহাত্ব জীবদ্দশায় এবং পরবর্তী শতাবদীগুলিতেও সমাদৃত 


৪৫ | 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


হইয়াছিল এরং বিপুল সফলতালাভ করিয়াছিল | সাধারণ সাপ্প্রদায়িকতা হইতে যে- 
সকল অসঙ্গতি বা বিরোধ উৎপন্ন হইতে পারে সে-রকম কিছুই এই মতের মধ্যে ছিল না ) 
হৃতরাং চীনারা একটি বলিষ্ঠ ও যুক্তিপূর্ণ মত আশ্রয় করিতে পারিয়াছিল। ইহা পর” 
বর্তীকালের চীনা দার্শনিকদের বৌদ্ধ তথা চীন! চিন্তাধারায় এক নূতন সমন্বয় সাধনের 
সহায়তা করিয়াছিল । খুহীয় একাদশ শতাব্দীতে এই নুতন সমস্বয়াত্মক মতের স্যরি । 
সে-বিষয়ে পরে বলিতেছি। 


৫ 


সেঙ্গ-চাও (5217£-0179০ ), হুই যুয়ান (7791-9817 ), চি-খাই এবং তাহাদের 
মতাবলম্বীরা যখন স্ব-স্ব প্রেরণায় বৌদ্ধ-চিন্তাধারা ব্যাখ্যানে সচেষ্ট তখন মুয়ান-চোয়াও 
( [7051)-50105 ) তাও-সিওয়ান (08০-910915 ) প্রমুখ একজন প্রাচীনপন্থী বৌদ্ধ 
পণ্ডিত ভারতীয় বৌদ্ধ-দর্শনের মধ্যযুগীয় পাণ্ডিত্যসম্ভার চীনাদের উপর চাপাইবার জন 
অবিরাম চেষ্টা করিতেছিলেন। তাহার! ভারতের কোন কোন বৌদ্ধ-দার্শনিক-মত-_চীনেও 
প্রচার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই মতগুলি চীনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল । 
উহাদের কোন কোনটি এখনও চীন এবং জাপানে প্রচলিত । 

যোগাচার-বিজ্ঞানবাদের প্রচারে যুয়ান-চোয়াঙ নিজে যথেষ্ট আগ্রহান্িত ছিলেন। তিনি 
স্বয়ং এই সম্প্রদায়ের অন্তর্গত | এই সম্প্রদায়ের দার্শনিক তত্বাদি বিশেষর্ূপে জানিবার 
জন্য তিনি ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন। নালন্দার শীলতত্র ছিলেন এই সম্প্রদায়ের অতন্ম 
শ্রেষ্ঠ আচার্য । ফুয়ান-চোয়াঙ তাহার নিকট থাকিয়া! যোগাচার-বিজ্ঞানবাদে শিক্ষা লাভ 
করিয়াছিলেন । তিনি এই সম্প্রদায়ের মুল গ্রন্থগুলির চীনতাষায় অনুবাদ করিলেন এবং 
ইহার নয়জন আচার্ষের কৃত টাকা হুইতে প্রচুর উদাহরণ সংগ্রহ করিয়া! চীনাভাষায় 
বিজ্ঞান-বাদের এক দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রকাশ করিলেন। বৌদ্ধ-বিজ্ঞানবাদে তাঁহার গভীর 
উপলব্ধি ছিল। তাঁহার নিজের রচনা ছাড়াও তাহার বিখ্যাত শিষ্য “কুই-চি”'র 
( 8৮-058 ) রচনার মধ্যে তাহার গভীর জ্ঞানের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। 

চীনদেশে এই সম্প্রদায়ের নাম ধর্মলক্ষণ (ফা-সিয়াঙ্গ ) এবং জাপানে ইহারই নাম 
হোসো (77055০)। এই সপ্প্রদায়ের নাম ধর্মলক্ষণ দেওয়া হুইয়াছিল, কারণ এই 
সম্প্রদায়ের দর্শনে ধর্মের সত্যকার শ্বরূপ বিশেষভাবে আলোচিত হইয়াছে । এই ধর্ম 
হইতেই পরিদৃশ্টমান্‌ জগতের স্থপ্রি। বৌদ্ধ বিজ্ঞানবাদী-দর্শনের সত্যকার ব্যাখ্যা এই 


৪৬ 


মতের ভিতর রহিয়াছে । এই মত অনুসারে বিজ্ঞানই পরম সত্য । এই পরিদৃশ্ামান্‌ 
জগৎ বিজ্ঞানের আভাসমাত্র | বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ প্রপঙ্গে এই সম্প্রদায়ের মনীষীরা আন্দয় 
বিজ্ঞানকে চূড়াস্ত বিজ্ঞান বলিয়া স্বীকার করেন। ইহা সকল হ্থষ্টির বীজ স্বরূপ এক 
অবচেতন অবস্থা । ধর্ম তথা পরিদৃশ্ঠঘান্‌ বস্ত সবই অলীক স্বপ্পবৎ। কেবল বিজ্ঞানই 
সত্য । যুয়ান-চোয়াঙের পর চুইচি এই মতের আচার্ষ-রূপে বিখ্যাত হুইয়াছিলেন। 
চীন ও জাপানে তিনিই আলয়-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার বলিয়! সন্মানিত । মধ্যযুগের 
পাণ্ডিত্য-প্রতাবিত এই একটিমাত্র সম্প্রদায় অদ্যাবধি চীনদেশে বর্তমান । 

চীনে অন্য আরেকটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠার মূলেও যুয়ান-চোয়াঙের নাম মনে 
আসে। ইহা কোশ সম্প্রদায় ((0-91০ ) নামে পরিচিত । এই নামটি বন্থবন্ধুর 
বিখ্যাত দার্শনিক গ্রন্থ “অভিধর্ম কোশ”, হইতে সংগৃহীত | ইহাতে সর্বাস্তিবাদী-সম্প্রদায়ের 
দর্শনের ব্যাখ্যা সংকলিত হইয়াছে । বিজ্ঞানবাদ প্রচলিত হইবার পূর্ব পর্যন্ত বন্ুবন্ধুও 
এই ( সর্বান্তিবাদ ) সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন । সর্বাস্তিবাদ-সম্প্রায়ের সাতটি আধ্যাত্মিক 
গ্রন্থকে ভিত্তি করিয়া অতিধর্ম কোশ রচিত। যুয়ান-চোয়াঙ এই সাতটি গ্রন্থই চীনাতাষায় 
অনুবাদ করেন। এই সম্প্রদায়ের মত বিজ্ঞানবাদের মর্মকথা উপলব্ধির সহায়ক বলিয়া 
তিনি উহ! চীনদেশে প্রচার করিবার জন্য আগ্রহাদ্বিত ছিলেন । বন্তৃতঃ বহ্ৃবন্ধু নিজেই 
এই অতিধর্ম কোশকে বিজ্ঞানবাদ-উপলব্ধির সোপান বলিয়া মনে করিতেন। কোশ- 
সম্প্রদায়ের দর্শন এক ধরণের জড়বাদ । বুদ্ধের মূল উপদেশেরই অনুসরণ করিয়া কোশ- 
সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, আত্মার কোন অস্তিত্ব নাই; ইহা পঞ্চ স্কদ্ধের এক ক্ষণস্থায়ী 
সন্মেলন। স্বদ্ধগুলির অবশ্) অস্তিত্ব আছে। ইহারা অতি ক্ষুদ্র অগণিত পরমাণু লইয়া 
গঠিত। এই পরমাণুগুলিই কেবল বাস্তব । ইহাদের সম্মেলন অবাস্তব ও মায়িক। 
মুয়ান-চোয়াঙের পরে তাহার কতিপয় শিষ্য এই সম্প্রদায়ের মত প্রচারে ব্রতী হইলেন। 
তাহার পর ইহা যখন জাপানে প্রচলিত হইল তখন ইহা “কুশ?, (89) নামে 
পরিচিত হইল । 

যুয়ান-চোয়াঙ্র অন্য একজন শিষ্য তাও-সিওয়ান (7:2০-5£591) ) আরও একটি 
সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা | এই সম্প্রদায় বিনয় (1.1) ) সম্প্রদায় নামে পরিচিত । জাপানে 
উহার নাম রিওৎস্থ (81915 )। উহার মতবাদ প্রচারের কাজে উহার প্রতিষ্ঠাতা তদীয় 
গুরু যুয়ান-চোয়াঙের দ্বারা কতখানি প্রভাবাদিত হইয়াছিলেন সেকথা! আমরা বলিতে 
পারি না । সমকালীন অন্ান্ত বৌদ্ধদের সহিত তাহার মতামতের অসঙ্গতি ছিল না। 
চি-খাই এ-কথা পূর্বেই ব্যক্ত করিয়াছিলেন যে, বৌদ্ধ-পিটকের কোন অংশই অপ্রয়োজনীয় 
নহে। তাও-সিউয়ানও সেই কথাই বলেন। বৌদ্ধবিহারের শীল ও চর্যা কোন অংশেই 


৪৭ [ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহার্স .. 


উপেক্ষনীয় নহে। জীবনের প্রথম অবস্থা হইতেই কঠোরতাঁবে ( বৌদ্ধ বিনয-পিটরোক্ত ) 
শীল আটরপ না করিলে কেহ নিজের চরিত্র গঠন করিতে পারে না এবং পরিণত বয়সে 
স্থগতীর ধ্যানলোকে প্রবেশ করিতে সক্ষম হয় না। জীবনের প্রথম: অবস্থায় শীল 
আচরণের জন্ত তাও-সিউয়ান বলেন যে ধর্মগুণ্তক সম্প্রদায়ের বিনয় পিটক্‌ই তিক্ষুজীবন 
আচরশের পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপযোগী গ্রন্থ | 

খৃষটীয় অষ্টম শতাব্ধীতে বজবোধি চীনদেশে আরও একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা 
করিয়াছিলেন । উত্তরকালে তাহার শিষ্য অমোঘবনজ্র সেই সম্প্রদায়কে বিস্তৃত করেন। 
ইহা তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম হইতে উদ্ভুত । ভারতবর্ষে, বিশেষতঃ নালন্দা ও দাক্ষিণাত্যে এই 
মতবাদ বর্তমান ছিল। বজবোধি ও অমোঘবজ্র ছইজনেই বহু গ্রন্থ চীনদেশে লইয়া! যান 
এবং চীনাভাষায় এগুলির অনুবাদ করেন। চীনে এই সম্প্রদায় “চেন-এন” ( সত্য- 
কথা) নামে এবং জাপাণে উহ্থাই “সিংগন”? নামে পরিচিত । এই সম্প্রদায়ের মতে 
মহাবৈরোচন-ই হইলেন আদি তত্ব । এই মহাবৈরোচন দর্শনশান্ত্রের তাষায় ভুত- 
তথতা ছাড়া আর কিছুই নহেন। কায়, মন, বাক্য, এই তিনটি গৃঢ়-তত্বই এই সম্প্রদায়ের 
আলোচয বিষয়। চেতন অচেতন সকল বস্ততেই এই তিনটি তত্ব বিরাজমান। “নৈসগিক 
জগতে সর্বত্র ইহাদেরই প্রকাশ । সাধারণ মানুষের গ্যায় বুদ্ধের মধ্যেও এই তিনটি তত্বই 
রহিয়াছে । হ্ুতরাং যে কোন জীবকেই বুদ্ধত্বের দিকে লইয়া! যাওয়া সম্ভব। পুণ্যার্জনের 
দ্বারা চিত্তকে নিয়ত বুদ্ধাভিমুখী করিবার জন্য বোধিলাভের পথে এই এক নূতন প্রয়াস 
দেখ! দিল। 

এই দর্শন সম্পূর্ণ নূতন কিছু নয়। ইহা! চীনা বৌদ্ধদিগকেও বিশেষ আৰু্ট করে নাই। 
কিন্ত জাপানে ইহা' প্রভৃত প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিল । (তান্ত্রিক ) বৌদ্ধধর্মের খদ্ধি- 
শক্তির দিকে চীনাদের ষথেই্ট আগ্রহ ছিল। কেন না, এই সময়ে তাও-বাদের মধ্যে এই 
খদ্ধিবিদ্যা প্রচুর পরিমানে বিমান ছিল। তহুপরি নুতন নৃতন মস্ত যাছ ও সম্মোহনী- 
বিগ্ার প্রচলন হইল । চীনের অধিকাংশ জনসাধারণ অত্যন্ত আগ্রহের সহিত সেগুলিকে 
গ্রহণ, করিল। বৌদ্ধধর্ম তখন মৃতপ্রায়। স্তরাং চীনকে তাহার আর নুতন কিছু 
দিবার ছিল না। 

ইহার পরে পরবর্তা কয়েক শতাব্দী ধরিয়া ভারতবর্ষ ও চীন _- উভয় দেশেরই অবক্ষয়ের 
যুগ চলিতেছিল। তখন যে ছুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ছিন্ন হইয়াছিল এমন:নহে। বনু 

ংখ্যক চীনা ভিক্ষু বৌদ্ধদের “পবিব্রভূমি” তারতবর্ষ দর্শনে আলিতেন। চীনেও তখন 

বহু ভারতীয় ভিক্ষু চীনাভাষায় বোদ্ধগ্রন্থগুলির অস্ুবাদ করিয়া কাল কাটাইতেন। সে-সব 
গ্রন্থ তেমন মূল্যবান ছিল না | 


৪৮" 


চীনদেশের চিন্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 


একাদশ শতাব্বীতেই কর্মতৎপরতার একটি নৃতন পর্ব আরম্ত হইল। সারা চীনদেশে 
এক নূতন দার্শনিক আন্দোলন দেখা দিল | উহা! মুলতঃ বৌদ্ধধর্ম-সংক্রান্ত না হইলেও 
বৌদ্ধধর্ণের দ্বারা বিশেষ প্রতাবান্ধিত এবং বৌদ্ধ দর্শনের অনেকগুলি মূল তথ্যকে আশ্রয় 
করিয়া পরিপুষ্ট হইয়াছিল । উহাকে চীনা-চিন্তা-ধারার বিকাশের পক্ষে বৌদ্ধধর্মের শেষ 
দান বল! চলিতে পারে । এই নূতন আন্দোলনই নব্য কনৃফ্যুসীয় দর্শন (?5০-0024- 
5191150 [21)110950191)5 ) নামে পরিচিত । 


৬ 


বৌদ্ধধর্মের প্রতি বিরুদ্ধ মনোভাব লইয়া প্রাচীন চীনা দর্শনকে পুনরুজ্জীবিত করিবার 
জন্যই এই নূতন আন্দোলনের হছত্রপাত। বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে পূর্বতন সমস্ত সংগ্রামই 
ব্যর্থ হ্ইয়াছিল। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম তখন ভারতবর্ষ ও চীন উভয় দেশেই পতনের মুখে । 
বৌদ্ধদর্শনগুলি সম্বন্ধে যতদূর জানা যায় তাহাতে মধ্যযুগীয় পাণ্ডিত্যবহুল দার্শনিক মতগুলি 
জনসাধাণের নিকট ছুর্বোধ্য ছিল | বৌদ্ধ তত্ব-বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলির মধ্যে যে-গুলি 
সর্বসাধারণের হৃদয়গ্রাহী হইয়াছিল সে-গুলিই সেজ-চাও, চি-খাই ও ধ্যান-সম্প্রদায়ের 
অন্যান্য আচার্ষের ব্যাখ্যার দ্বার! চীনদেশে প্রচলিত হইয়াছিল । গৌরবোজ্জবল বতিহের 
অধিকারী বলিয়া বৌদ্ধধর্ম তখনও লোকের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিত । এই কারণেই আরও 
বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে পুনরায় এই আন্দোলনের স্থচনা । 

এই নূতন আন্দোলন মুখ্যতঃ প্রাচীন দর্শনের পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্টে পরিচালিত হইয়া- 
ছিল্ল। যদিও বৌদ্ধধর্মকে বিনষ্ট করাই উহার মুল উদ্দে্ট ছিল। তথাপি যে নৃতন মত 
গড়িয়া উঠিল তাহার মধ্যে প্রাচীন দর্শনের উপাদানের তুলনায় বৌদ্ধধর্মের উপাদানই 
অধিক পরিমাণে বর্তমান রহিল। অঙ্কশান্ত্র, জ্যোতিবিচ্ভা, জীববিগ্ভা প্রভৃতি যে-সব বিজ্ঞান 
দর্শনের পক্ষে প্রয়োজনীয়, বৌদ্ধধর্মই চীনদেশে সে-গুলি প্রচার করিয়াছিল । সাংখ্য 
দর্শনের পুরুষ ও প্ররুতি-তত্ব, বৈশেষিকের পরমানুবাদ, সর্বাস্তিবাদি-দর্শনের জড়বাদ ও 
তাহাদের ক্রমবিবর্তনের তথ্যগুলি এ সকল শাস্ত্রের মৃলগ্রন্থের অনুবাদ এবং চীন] বৌদ্ধ- 
পণ্ডিতগণের ব্যাখ্যার মাধ্যমে চীনার! অবগত হইক্নাছিল | 

চাও-ৎজু (খৃঃ ১০১৭--১০৭৩ ), শাও-ৎজু (খুঃ ১০১১--১০৭৭ ), ছেজ-হাও 
( ১০৩২---১০৮৫ ), ছেঙ্গ“ই (খুং ১০৩৩---১১০৭ ) ও চু-সি (খ্বঃ ১১৩০--১২০০ 0) এই 
আন্দোলনের প্রধান নেতা! ছিলেন| চু-সি তাহাদের উদ্বাবিত মতকে পূর্ণ ব্ষপ দান 


8৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


করেন | তিনি প্রাচীন দার্শনিদের বিপরীত মত প্রচার করিলেন। তিনি বলিলেন যে 
ঈশ্বর নাই। সর্বশক্তিমান, বিধাতা বা জগৎপিতা বলিয়াও কেহ নাই। সমগ্র বিশ্ব 
অঙ্গাঙ্গিতাবে জড়িত ছুইটি শাশ্বত তত্ব হইতে উদ্ভৃুত। এই দুইটি তত্বের নাম “লি*” ও 
“ছি”- একটি বিশ্বের নিয়ামক শক্তি, অন্তটি ইহার দ্বার নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের জড় উপাদান । 
ধর্মে পৃথক হইলেও ইহারা পরস্পর অবিচ্ছেন্ভ । প্রথমটিকে চীনা-তাষায় 'থাইকি* বলে 
যেহেতু ইহাই নিয়ামক শক্তি । ইহাকে "উ-কি”-ও বলা হয় যেহেতু ইহা অতীন্দরিয় ও 
হুক পূর্ণতর বিবরণে ইহাকে অদ্বৈত, অনন্ত, শাশ্বত, অক্ষর, অব্যয়, একরস, অচেতন ও 
অবোধ বল! হইয়াছে । এই নিয়ামক শক্তির প্রেরণাতেই জড় উপাদানে কখনও “ফ়িয়াংঃ 
অর্থাৎ অগ্রগতি, কখনও শয়ন্” অর্থাৎ পশ্চাদ্-গতির উত্তব হয়। “থাইকি' রূপহীন। 
ক্থতরাং কেবল ইহা হইতে কিছু উৎপন্ন হইতে পারে না । দ্ধপহীন হইলেও ইহার বাস্তব- 
সম্ভা আছে। 'থাইকি' ও বৌদ্ধধর্মের পরমতত্বের মধ্যে চু-হি এই পার্থক্য দেখান যে 
“থাইকি-তে পঞ্চমূল উপাদান-যুক্ত “লি” এবং “য়িন্” ও “য়িয়াৎ বিরাজ করিতেছে । এই- 
গুলি মিথ্যা নহে। যদি ইহারা মিথ্যা হইত, তবে এইগুলি বৌদ্ধদর্শনের বস্ত-্থভাবেরই 
সমান হইত।” তিনি আরও বলেন, “বৌদ্ধপপ্ডিতগণের মিথ্যার কল্পনা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত নহে। 
কিন্তু এই মিথ্যার মূলেও “লি রহিয়াছে । ইহা বলাও সঙ্গত নয় যে আমরা অসত্য এবং 
“পির সত্য-স্বরূপ আমরা জানিনা 1” বৌদ্ধ জীবন-দর্শনের ইহা! এক ভুল ব্যাখ্যা । জগৎ 
মিথ্যা-_এই কথার অর্থ এমন হইতে পারে না যে ইহা সম্পূর্ণ নিরধিষ্ঠান। আপেক্ষিক 
দৃষ্টিতে ইহা অন্য সমস্ত জিনিসের মতোই সত্য । পরমার্থ বিশ্বাতীত হুইয়াও বিশ্বব্যাপ্ত। 
ইহা অনির্বচনীয়, কিন্তু তাই বলিয়া ইহা অলভ্য নহে। 

নিয়ামক শক্তি ও জড় উপাদানের সম্বন্ধ এবং ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্বন্ধে চু-হি বলন যে 
নিয়ামক নিয়ম্য হইতে স্বতন্ত্র থাকে না এবং থাকিতে পারে না । নিয়ামক স্বয়ং অপরি- 
বতিত থাকিয়াও বিশ্বপ্রক্কতিকে পরিবর্তিত করিয়া! যাবতীয় বস্তর বিকাশ ঘটায় | এই 
বিকাশ ক্রমিক বা পর পর ঘটে না) যুগপৎই ঘটে । বিকশিত বস্তনিচয় শক্তিরই সক্রিয় 
রূপ এবং হুম্ষ্নের স্থলে পরিণতিমাত্র | প্রতিটি পুদ্বগলে যে নিয়ামক শক্তি তাহা বিশ্বব্যাপী 
শক্তিরই অক্কুর | ইহা বিশ্বশক্তি হইতে পৃথক নহে। পুদ্বগল ও বিশ্বনিয়ামক শক্তির 
সম্বন্ধ তৃলনা করিয়! ইহা বলিতে পার! যায় যে শত সহত্র জলাধারে একই চন্দ্রের শতসহ্র 
প্রতিবিম্ব দেখা গেলেও চন্দ্র একই থাকিয়া! যায়। সে এক এবং অপরিবতিত। 

চু-সি পুরর্জন্মে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সকলই 
উপাদানে লীন হইয়া যায়। নিয়ামক শক্তি ও উপাদান এই ছুই মহান্‌ উৎস হইতে 
প্রত্যেক ব্যক্তির নব নব বিকাশ হয়। কিন্তু সভা! পুরুতাঙ্গক্রমে ধারার স্ঠায় চলিতে খাকে। 


৫০ 


তা ছা 


চীনদেশৈর চিস্তাধারায় ভারতবর্ষের প্রভাব 


পূর্বপুরুষের কিছু না কিছু উত্তর পুরুষে অনুষ্থত হয়। তরঙ্গের লঙগে সমুদ্রের যে সন্বন্ধ, 
সম্ভতির সঙ্গে বংশ প্রবাহের ও সেই সম্পর্ক। প্রত্যেক তরঙ্গ স্বয়ং সম্পূর্ণ। প্রথম তরঙ্গ 
দ্বিতীয় তরঙ্গ নয়, কিংবা, দ্বিতীয় তরজ তৃতীয় তরঙ্গ নয়। কিন্তু ইহারা যেমন একই 
জলের বিভিন্ন পরিণাম তেমনই এক একটি ব্যক্তিও হ্বর্গমর্তব্যাপী নিয়ামক এবং উপাদানেরই 
এক একটি বিশিষ্ট রূপ মাত্র। পূর্বপুরুষও অধস্তন পুরুষেরই ন্তায় নিয়ামক ও উপাদানেরই 
পরিণাম । অতএব দেখা যাইতেছে যে একই কারণ হইতে উদ্ভুত বলিয়া পূর্ব ও অধস্তন 
পুরুষের মধ্যে প্রক্য বর্তমান রহিয়াছে । 

এই মতের মূল ভিজ্তি “থিয়েন-থাই"র মত হইতে সম্পূর্ণ পৃথক নহে । আমরা দেখিয়াছি 
যে চি-খাই বৌদ্ধদর্শনের শাশ্বত কার্যকারণ-বাদকে গ্রহন করিয়াছেন। এই কার্যকারণ- 
বাদ দেশ-কাল-নিরেপক্ষ । এই ধারা অনন্ত। ষে পরিণাম পূর্ববর্তা কারণের কার্য তাহাই 
আবার তাহার পরবর্তী কার্ষের কারণ । এইভাবেই কার্যকারণ-প্রবাহ চলিতে থাকে। 
এই বিশ্বের যুলতত্ব শাশ্বত, কিন্তু যাবতীয় কার্যন্রব্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গের ন্যায়, ক্ষণস্থায়ী । 
সমুদ্রের তরঙ্গসমূহ সযুত্রের জলের কোন হ্বাসবৃদ্ধি ঘটায় না৷ » ক্ষণিক বস্তসমূহের সন্বন্বেও 
একই কথা বলা চলে। বিশ্বের কারণ বিবিধ £ উপাদানও নিমিত্ত । একই উপাদান- 
ব্যক্তি হইতে অসংখ্য নিমিত্ত কারণ অসংখ্য প্রতীয়মান্‌ ক্ষণিকদ্রব্যের স্থট্টি করে। 'থাইকি, 
নামক অনন্ত, অসীম ও অব্যয় নিয়ামকশক্তির প্রেরণাতেই বিশ্বের অগ্রগতি ও পশ্চাদৃ-গতি 
ঘটিয়া থাকে । চু-সির বিকাশবাদও এই দর্শনেরই ভাষাস্তরমাত্র । 

নিয়ামকশক্তি ও সংসারের মধ্যে অর্থাৎ পরমার্থ ও দৃশ্ঠমান্‌ জগৎ (€ বৌদ্ধ নির্বান ও 
সংসার ) সম্বন্ধে নব্য কনফুযুসীয় দার্শনিকেরা বৌদ্ধ-মতই স্বীকার করেন । স্তরাং ছেঙ্- 
হাও (01768 [৭০ ) বলেন, “আমি আধ্যাত্িক প্রশান্তি বলিতে এই বুঝি যে, কর্মের 
মধ্যে এই প্রশান্তি আছে, কর্মবিরতির মধ্যেও আছে । ইহার না আছে অতীত, না আছে 
ভবিষ্যৎ ; না আছে বাহ, না আছে অন্তর । যদি তুমি বাহিরের বস্তকে বাছিরের বলিয়াই 
মনে কর এবং তাহা অনুসরণ করিতে ব্যস্ত হও, তাহা! হুইলে তুমি তোমার নিজের 
স্বতাবকে ছুইভাবে দেখিতে পাইবে__একটি বাহ ও অপরটি অন্তর । উপরন্ত, তূমি যদি 
তোমার স্বভাবকে বাহিরের বস্তর প্রতি অন্ুসরণশীল করিয়া! লও, তবে তুমি যখন বাহিরের 
ব্যাপারেই ব্যস্ত রহিয়াছ, তখন তোমার ভিতরে কি আছে £ তুমি যখন বাহিরের মোহ 
ত্যাগ করিবার ইচ্ছা করিতেছ তখন তুমি একটি কথ ভুলিয়া যাও যে, মানুষের স্বভাবের 
মধ্যে বাহিরের দিক ও ভিতরের দিক বলিয়া কোন প্রতেদ নাই। বাহিরের দিকটি ঠিক 
নয় কিংবা ভিতরের দিকটি ঠিক, এই ধরণের চিন্তা করার তেমন বিশেষ মূল্য নাই। বরং 
বাহিরের দ্রিক ও ভিতরের দিক বলিয়৷ কিছু আছে ইহা ভুলিবার চেষ্ট] করা উচিত৷ তুমি 


১ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাজ্য দর্শনের ইতিহাস 


যদি এই ভেদ ভুলিয়া যাইতে পা'র তবে তুমি এমন এক নির্মল অবস্থা প্রাপ্ত হইবে-_যেখানে 
কোনপ্রকার ব্যাঘাত. উপস্থিত হইতে পারিবে না । ইহাই তোমার স্থিতপ্রজ্ঞ অবস্থা | তৃমি 
যখন দ্িতপ্রজ্, তুমি তখন শুদ্ধচিভ | তুমি যখন শুদ্ধচিত্ব তখন কি বস্তসমূহের আকর্ষণে 
তোমার শ্রাস্তচিত্ত ধর! দিবে ?” বৌদ্ধ-ধ্যান-স্‌শ্রদায়ের মতে সকল কিছুই বুদ্ধস্বভাব | 
এই দৃষ্টিতে দেখিলে বাহির বা ভিতর বলিয়া! কিছুই নাই। উভয়ে একই সত্যের মধ্যে 
বিরাজমান | নির্বান ও সংসারের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই । ইহারাও একই সত্যে স্থিত । 
ছেঙ্গ-হাও নিজেও জীবন সম্বন্ধে এই একই ধারণা তাষাস্তরে প্রকাশ করিয়াছেন। 

নব্য কনফ্যুসীয়র! প্রাচীন ও নৃতনের সমন্বয় সাধনের প্রয়াসে যে নূতন দর্শন সমষ্টি 
করিলেন এখনও চীনদেশের সাধারণ জনচিত্তের উপর তাহার প্রভাব অপরিসীম । পরবর্তী 
কালে যখন চীনে বৌদ্ধধর্মের পতন ঘটিল তখন এই নৃতন আন্দোলনে বৌদ্ধধর্মের স্থান কত- 
টুকু ছিল তাহা লোকে ভুলিয়া গেল। এই কথা অস্বীকার করা যায় না! যে বৌদ্ধ ধ্যান ও 
থিয়েন-থাই-সম্প্রদায় ইহার সহায়তা করিয়াছিলেন । বৌদ্ধদর্শনের মুল তত্বগুলি গ্রহণ 
করিয়া এই নৃতন দর্শন বিশ্বজনীনতা লাত করিয়াছিল | ুতরাং চীনের পণ্ডিত ও জ্ঞানীদের 
কাছে বৌদ্ধমতবাদ অনাবশ্যক তথ! প্রয়োজনাতিরিক্ত বলিয়া বিবেচিত হইল । 


চীনা সত্যতার বিকাশে তারতবর্ষের দান প্রভূত | ভারত হইতে কয়েক প্রকার ধর্ম- 
বিশ্বাস চীনদেশে প্রসার লাত করে ; তাহা ছাড়াও বৌদ্ধধর্ম চীনে পুনর্জ ন্মতত্ব, কার্যকারণ- 
বাদ, প্রতিদান ও প্রতিগ্রহ-বিশ্বাস ইত্যাদির প্রবর্তন করিয়াছিল । যদিও কনফুযুসীয় নীতি- 
দর্শন জীবনের ভাবধারার উপর কতকগুলি ব্যবহারিক নীতি আরোপ করিয়াছিল তথাপি 
উপরোক্ত তত্বগুলি চীনাদেশের মনের গভীর অস্তঃস্থলে এমনভাবে অনুপ্রবিষ্ট হইয়াছিল যে 
তাহা সহজে বিনষ্ট হয় নাই । বৌদ্ধদর্শন এবং বিশেষভাবে তদোক্ত পরমতত্বের বিশ্ব- 
ব্যাপকতা! ও জগতের ক্ষণিকত চীনের কবি ও শিক্পীদের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার 
করিয়াছিল । ইহা! চীনের বৌদ্ধধর্ম সৌন্দর্য স্থষ্টি ও লন্দনতত্বের এক নূতন অধ্যায় রচনা 
করিল। চীনের থাং-রাজত্বকালে ("৪:28 ) কবিগণ এই ধারাই অনুসরণ করিয়া” 
ছিলেন | প্রকৃতির সহিত তাহাদের অন্তরের স্ছনিবিড় যোগ ছিল। প্রকৃতির সহিত 
তাহারা অচ্ছেছতাবে যুক্ত রহিয়াছেন, তাহারা এইবূপ মনে করিতেন । জগতের সমস্ত 
কিছুই ভাসমান মেঘের মতো ক্ষণিক ইহা তাঁহার! বুঝিয়াছিলেন | সেই হেতু তাহাধের 


চি 


৫২ 


চীনদেশের চিন্তাধারায় তারতবর্ধের প্রভাব 
অন্তরে গভীর বেদনার ইত লক্ষ্য কর! যায়। শিল্পীরা গাছের সবৃজ পাতা, পাখীর মধুর 
গান প্রভৃতি প্রকৃতি-রাজ্যের বিভিগ্ন বস্ততে সেই পরম্তত্বের ইঙ্গিত খুঁজিয়! পাইতেন। 
বৌদ্ধধর্ম চীনাদের হুদয়ে প্রগাঢ় ধর্মবোধ ও গভীর বিশ্বাসের স্হষ্টি করিয়াছিল । প্র প্রেরণায় 
চীনের বিখ্যাত শিল্পন্তি অন্যাবধি যুন-কাজ ( 9:7-45178 ), লুঙ্গ মেন € [01/8- 


0০০72), তুঙ্গ-হয়াগ (70:26-77:5875 ) এবং অন্ান্ত স্থানের চিত্রাবলীর মধ্যে বৌদ্ধ- 
ধর্মের স্বাক্ষর বহন করিতেছে । 


গালি ল্লী 


বাগচী, ।প-সি ঃ ইওিয়া। আযাণ্ড চায়না । 

এলিয়ট, সার চার্লস £ হিন্দুইজম্‌ আযাণ্ড বুদ্ধিজম্‌ ৩য় খণ্ড । 

যুলান্‌, ডাঃ ফুঙ.ঃ দি ম্পিরিট অব চাইনীজ ফিলসফি, ই, আর চিউজেস্‌ অনুদিত | 

শি, ডাঃ যুঃ ডেভেলপমেণ্ট অব ঝেন্‌ বুদ্ধিজম্‌ ইন চায়না (চাইনীজ সোস্যাল 
আযাণ্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউ, ১৫শ খণ্ড ১৯৩১) 

পেলিয়ো, পিঃ মো-ৎহু গু লৌ ছুত, লেতে ( তুঙ, পাও, ১৯শ খও )। 

উইগের £ প্যের-এল্‌ £ ইস্‌তোয়ার দে ক্রোয়াইক্সস্‌ রেলিজিযুদ্‌ এ 
দেজ ওপিনিয় ফিলসফিক্‌ অ চায়ন!। 

ফুজিশিমা £ লা বুদ্ধিস্মূ জাপোনায় । 

লিবেনৃথাল, ডব্লিউ  সেক্রেড বুকঝ, আব চাও | 


৫৩ 


_ চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ 
চীনের দশাটি বৌদ্ধসম্প্রদায় 


চীনা বৌদ্ধধর্ম অর্থাৎ বৌদ্ধধর্ম চীন দেশে যে বিশিষ্ট আকার লইয়াছিল তাহার 
সুচনায় কতগুলি চীনা বৌদ্ধধর্মসপ্্রদায়ের উদ্ভব লক্ষিত হয়। এইরূপ চীনা বৌদ্ধধর্ম- 
সম্প্রদায়ের নাম ত.হঙ. (58708 )। ভারতবর্ষের বৌদ্ধসম্প্রদায়ের ( হীনযান কিন্বা 
মহাযান ) নামগুলি হইতে ইহাদের নাম পৃথক এবং চীনাসব্প্রদায়গুলি ভারতীয় বৌদ্ধ- 
সম্প্রদায়গুলির অনুকরণ কিদ্বা অনুসরণ নয়। ভারতের বিভিন্ন বৌদ্ধসম্প্রদায়ের মতবাদ 
চীনদেশবাসীরা যে রকম বুঝিয়াছিল ও ধারণ! করিয়াছিল তাহা! হইতেই ইহাদের উত্তব। 
এই সকল ষতবাদগুলি চীনে পৌছায় ঘটনাবশতঃ,_-ভারতবর্ষের বৌদ্ধ-সন্ন্যাসীরা ও চীনের 
তীর্থাম্বেষী পণ্ডিত সন্ত্যাসীরা ( 270715 ) চীনদেশে ইহা আনিয়াছিলেন। 

অধিকাংশ চীনা বৌদ্ধসম্প্রদায়গুলির প্রতিষ্ঠা হয় পঞ্চম হইতে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যকালে। 
ইহাদের ক্রমবিকাশ ও পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে কতকগুলির বৈশিষ্ট লুপ্ত হয়, তাহার! অন্থান্য 
স্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিয়া যায় ও পৃথক্‌ পৃথক্‌ অস্তিত্ব হারাইয়া ফেলে। চীনা বৌদ্ধ- 
স্্যাসীদের আশ্রমে (1001025061155 ) নানা সম্প্রদায়ের সন্যাপীরা একত্র থাকে, 
সম্মিলিততাবে ও একই সঙ্ঘে বাস করিতে তাহাদের কোনও অস্থবিধা-বোধ হয় না। 
ইহাতেই তাহাদের সাশ্দায়িক ত্ব-বোধের লঘুতা প্রতিপন্ন হয়। 

চীনা বৌদ্ধসপ্প্রদায় দশটি-_চিরাগত মত অন্থুসারে এই গণনা ধরা হয়। ইহাদের 
নামগুলির উদ্ভব হইয়াছে তাহাদের গৃহীত মুখ্য ধর্মশাস্ত্র হইতে, অথব1 মৌলিক মতবাদ হইতে 
অথবা! যে যে স্থানে তাহাদের প্রথম প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল কিন্বা পরবর্তাকালে প্রাধান্ঠ 
হইয়াছিল সেই সকল স্থানের নাম হইতে | যথা 

১। ছঙষ ((016778 91311, অর্থাৎ “সত্য সিদ্ধি? )। 

২। সান্‌ লুন্‌ (9217 [3 অর্থাৎ “তিন শান্তর )। 

৩। ছান্‌ (115916000 অর্থাৎ ধ্যান | সংস্কৃত ধ্যান" শব্দের চীনা বিরতি )। 

৪ | ত্যেনৃ-তাঁই ("[£52-751- চীনের চেকিয়াং প্রদেশের একটি বৌদ্ধমঠের নাম 
হুইতে | নামান্তরে ফা-হবা-_-ছ৪-চ7৪ সৎ-ধর্ম )। 

৫ | ল্যেন (1121) অর্থাৎ পদ্মফুল” | এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কোনও পদ্মফুল- 
ধয় জলাশয়ের ভীরস্থ একটি মঠে থাকিতেন বলিয়া )। 


48 রি 


চীনের দশটি বৌদ্ধসম্প্রদায় 


৬। ফাঁ-শিয়াঙ, ( চ৪-1791808- নামটি এই সম্প্রদায়ের 'ধর্ণলক্ষণ' নাষক প্রধান 
ধর্ষশান্ত্রের চীন! অনুবাদ )। 

৭। ছু-ষ (01:-9%৪-_-অভিধর্মকোশ-শান্ত্র ইহাদের প্রধান ধর্মশান্্। নামটি 
সংস্কৃত “কোশ' শব্দের চীনা অন্থলেখন )। | 

৮ | হয়ব (1708-567-হ্হাদের প্রধান ধর্মশান্ত্র অবতংশ-শান্ত্রে'র চীনা 
অনুবাদ )। 

৯| লৃ(].৩-__সংস্কৃত “বিনয় শব্দের চীনা অনুবাদ । নামাস্তরে [ব515-587) অর্থাৎ 
দক্ষিণের পর্বত” | চীনের 'ষষি' (01592551 ) প্রদেশের যেস্থানে এই সম্প্রদায়ের 
প্রধানত হয়। 

১০ | চনৃ-্ষন্‌ (01061-5212 অর্থাৎ “সত্য-বাণী | নামাস্তরে “মি-চ্যা-ও' 1- 
(010170 বা গুহা-শিক্ষা” )। 

এই সম্প্রদায়গুলি পরস্পর-বিরোধী নয় | দৃষ্টান্ত স্বরূপ, ৩নং, ৫নং ও ১০নং সম্প্রদায় 
অন্তান্য সম্প্রদায়ের উপর কালক্রমে এত প্রভাব বিস্তার করিয়াছে যে এই তিন সম্প্রদায়কে 
সম্প্রদায় না বলিয়া চীনা বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন মতবাদ-ছোতক ব| বিভিন্ন আরুতি-ব্যঞ্ক 
প্রতিষ্ঠান বলা সমীচীন হইবে | 

এই দশটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ৫নং সর্ব-প্রাচীন। ইহা ৩৩৫ হুইতে ৪১৬ শতাব্দীর 
মধ্যকালে প্রতিষ্ঠিত হয় ও কয়েক শতাব্দী ধরিয়া ইহার প্রভাব চলিয়াছিল। ইহার 
প্রতিষ্ঠাতার নাম__হি,যে'ন (চ751-99) চীনে “তাও, ধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের যে সমীকরণ 
চলিয়াছিল এই সম্প্রদায় সম্ভবতঃ তাহার প্রথম ফল-ম্বরূপ। ইহার প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং 
একজন উৎসাহী “তাও” পুরোহিত ছিলেন এবং তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করিবার পরও 
“তাও' ভাবাপন্্র ছিলেন । এই সম্প্রদায়ের তিনটি প্রধান ধর্মগ্রন্থ তাহার মধ্যে ছুইটি 
দীর্ঘ ও হুম্ব সংস্করণে মহাযানী সংস্কত “হ্থখাবতী-ব্যুহ গ্রন্থ বৌদ্ধ স্বর্গধামের বর্ণনা করে। 
এই চিরহৃখের ব্বর্গ, যেখানে ভক্তিমান্‌ সাধক একবার প্রবেশ করিলে অম্থৃতত্বের অধিকারী 
হয়, ইহা “তাও” ধর্মের প্রকৃতিগত সৌন্দর্য ভোগ-স্পৃহা ও অতীন্জরিয়ের লিগ্সার অনুকূল 
ছিল ও “তাও” ধর্মীদের মন তাহাতে উপৰিষ্ট হইয়াছিল । 

চীনদেশে তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে বৃ” €( ৬/৩) নামক যাজক-দল যে একটি পন্্র- 
জালিক তন্ত্রের সাধন করিতেন তাহার মূলে ছিল অমরতা-লাভের স্পৃহা! | প্রাচীন “তাও 
গ্রন্থের (3০০ ০:৪০) তাও,-বাদে ও তাও» দার্শনিক “চুঙ তের (0100788655 ) 
লেখায় যে অতীন্দরিয়ের অনুবতিতা (7155561502 ) দেখা যায় তাহাতে এই “বু: মতবাদের 
মিশ্রণ ও বিকৃতি রহিয়াছে । “বু যাজকগণ ্বর্গলাতের পন্থা ও অমরত্ব-প্রাপ্তির১ উপান্ধ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ব্য দর্শনের ইতিহাস 


্বরূপ একপ্রকার “হুবর্ণতন্ত্ের” (.91505225 ) সাধনা করিতেন। “পন্ধ-সপ্্ররায়ে'র 
(19655 5০১০০] ) “তাও+-ধর্ম প্রতিষ্ঠাতা এই সাধনার একটি অধ্যাত্সিক আকার দিয়া- 
ছিলেন ও ইন্দ্রজাল এবং স্থবর্ণতস্ত্রের পরিবর্তে আধ্যাত্মিক উপায় ধার্য করিয়াছিলেন । এই 
সম্প্রদায়ের একটি মতবাদ--পাই-তো” (৪1-০০) অর্থাৎ স্বর্গ প্রাণ্তির "শ্বেতবর্ণ পথ” 
(৬৮1১8৮5৬4০৮ ) যে পথে স্বয়ং বুদ্ধদেব ( মহাযানী “অমিতাত" নামে ) তাহার বিশ্বাসী 
ভক্তগণের আত্বাকে চালাইয়া লইয়া! যান । এই মতবাদ এইভাবে ধর্মের ক্রিয়াকাণ্ডের 
জটিলতা ও কাঠিণ্ বাদ দিয়! কেবলমাত্র অমিতাতের কাছে নিরন্তর আবেদনে সরল 
বিশ্বাস-স্থাপন প্রচার করে| এই মতবাদ হইতে চীনদেশীয় 'অমিতাভ-তক্তি'র পথ, 
(4১2103509-) প্রবাতিত হুইয়াছে ।২ অমিতাভ-পন্থীরা শাস্তরীয্স “হ্খাবতী ব্যুহকে' 
“পশ্চিমেস্থিত ম্বর্গ' বা “নিফলুশ দেশ' বা “পবিত্র রাজ্য? (02015 1,810) নাম দিয়! 
থাকে । 

সম্ভবতঃ চীনা-বৌদ্ধধর্মে ৩নৎ সম্প্রদায় ইহারই পরবর্তী ॥ “পদ্থ-সপ্প্রদায়ে'র প্রধান 
শিক্ষা বিশ্বাস $ ছান-সম্প্রদায়ের-স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানের শি (2০৬৮০1 0% 1176516155 
77,০/1278£2 )। এই পরিত্রাণকারী ত্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান বিশুদ্ধ ধ্যানের দারা সহসা কোনও 
মুহুর্তে লাভ হয়। এই বিশুদ্ধ ধ্যান শুন্সের ধ্যান । স্থতরাৎ এই সম্প্রদায়ের মতানুসারে 
সর্বপ্রধান ক্রিয়া! ধ্যানে মনঃস্থাপন | বৌদ্ধধর্মে ধ্যান-তত্ব প্রাচীন,_হীনযান হইতে 
মহীযান বৌদ্ধধর্ষে চলিয়া! আসিয়াছে । ইহার মূলে শ্বীকৃত কথ ( ৮০5512০ ) এই যে 
প্রত্যেক মানুষের ্বদয়ে বৃদ্ধদেবের “বোধি-চিত্ত” বা ধর্ম-কায়” ( যাহাকে *চীনাভাষায় 
“ফা ষন্‌, বলে ) গুহ্ভাবে বর্তমান আছে। বিশুদ্ধ ধ্যানের দ্বারা ভক্ত তাহার স্হিত 
একাক্স হইতে হুইবে,_এই সাধন প্রণালীকে শাস্ত্রীয় তাষায় বলা হয় “বোধিচিজ্ত- 
উদ্বোধন? । 

প্রবাদ এই যে বোধিধর্ম নামে একজন ভারতীয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই মতবাদের প্রথম 
প্রবর্তন করিয়াছিলেন । তিনি তারতবর্ষ হইতে ৫২০ হইতে ৫২৬ শতাব্দীর মধ্যকালে 
চীনের কেন্টন্‌ সহরে আসেন তাহার কার্যকলাপ ও জীবনী সম্বন্ধে চীনদেশবাসীরা অনেক 
অলৌকিক কাহিনী রচনা করিয়াছে ।৩ 

চীনের ইতিবৃত্তে তৎকালীন চীন সম্রাট “বুতি” ( ৬/৮-6) ও বোধিধর্মের সাক্ষাৎ 
কালের একটি বিবরণ মাছে । তাহা! হইতে প্রতীত হয় যে বোধিধর্ম নাগার্জু ন-প্রবতিত 
মহাযানী শুশ্যবাদের অনুবর্তা ছিলেন ।৪ 

বোধিধর্ম প্রচার করিতেন যে সৎকার্ষের দ্বারা গুণ লাত হয় না, শান্ত অধ্যয়ন দ্বারাও 
নয় | এবং চীনা সম্াটকেও তিনি বলিয়াছিলেন যে বিশ্বব্রদ্াণ্ডে সকলই যখন শুন্ত তখন 


৫৬ 


চীনের দশটি .বৌদ্ধসম্প্রদায় 


পবিত্র ( চ7০1% ) বলিয়া কিছুর অস্তিত্ব থাকিতে পারে না । এই মতবাদ প্রচারের কলে 
“তাও+-ধর্মীদের কাছে বোধিধর্ম “ত.সিন্‌ ("1 ) রাজবংশের প্রারস্ত কালের প্রসিগ্ধ 
'বংশকুঞ্জবাসী সপ্ত-খষির” (95521% 98555 ০৫ &2১০ 958070090 3:05 ) দলের এক- 
জন বলিয়া প্রতিভাত হইয়াছিলেন । এই “তাও, খধিদের প্রতি কটাক্ষ করিয়া জনৈক 
কন্ফিউসিয়ান্‌ ্রতিহাসিক এইরূপ বর্ণনা দিয়াছিলেন £ “ইহারা 'শূন্ট” ও “নৈকষ্ষ'কে 
(73০7-2০61015 ) শ্রদ্ধা করে ও উচ্চ প্রতিষ্ঠা দেয় ও নীতি এবং ক্রিয়াকর্ষকে অবজ্ঞা 
করে। মছ্ধপানে বিভোর থাকে ও সাংসারিক বিষয়-কর্ম অবহেলা! করে 1৮৫ 

তাও? গ্রন্থ 'তাও তে চিওও (9০05) 017108 ) ও তাও” লেখক চুঙত সর 
চটকৃদার রসিকতা ও গাত্তীর্য মিশ্রিত নিবন্ধগুলির সহিত বোধিধর্মের প্রচারিত মত যেমন 
করিয়াই হউক মিলিয়া গিয়াছিল | চীনা পণ্ডিত লিন্‌ যুতাঙ, (117 ০0৪4 ) বলেন £ 
“চুঙ ত সের রহস্যবাদের কোনও কোনও বৈশিষ্ট্য, যথা আত্ম-জ্ঞান-বর্জন, সমাহিত ধ্যান 
ও “নির্জটনের দর্শন-লাভ ( “9০92175 £)০ 9011687” ) হইতে উপলব্ধি হয় যে চীনের 
নিজস্ব কতগুলি কল্পন1 “ছান্‌* বৌদ্ধধর্মের ক্রমবিকাশের পশ্চাতে রহিয়াছে ।”৬ 

ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগে “ছান্‌” সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা হয় ও সেইকাল হইতে বহ শতাব্দী 
ধরিয়া চীনে ইহার প্রভাব ছিল | ইছা হইতে পীচটি উপ-সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় ও তন্মধ্যে 
“লিনৃ-চি” ([470-003 ), স্থানগত নাম, সম্প্রদায় এখনও বর্তমান আছে । কিন্ত 
চীন অপেক্ষা জাপানেই “ঝেন্‌” নামান্তরে এই সম্প্রদায় সর্বাপেক্ষা অধিক বিস্তারলাভ করে 
এবং এখন পর্যন্তও এই সম্প্রদায়ের জাপানী কেন্দ্র কিয়োটো-সহরে ইহার বহুল প্রতাব । 

এই চীনা “ছান্‌* সম্প্রদায়ের মতবাদ কন্ফিউসিয়ান্‌ মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত মনে 
হয়| কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে পঞ্চাশৎ-শতাব্দীর শেষভাগে চীনদেশের একজন 
ক্প্রসিদ্ধ লেখক এওয়াউ -ইয়াংমিউও (€ ড/578 55108 0010£ ) তাহার এক গ্রন্থে 
প্রমাণ করিতে চাহিয়াছেন যে “ছান্‌” সম্প্রদায়ের মূলগত মতবাদ কন্ফিউসিয়ান্‌ দার্শনিক 
মেন্সিয়াসের “লিয়াঙ, চি? ([9:08-001 ) অর্থাৎ স্বতঃসিদ্ধ বা সহজ জ্ঞান, ([72001- 
(1৬6 1530%/156 ), যাহ1 মান্গষের মন আপন মনের ধ্যান করিয়াই লাভ করে, 
তাহার পরিকল্পনাতেই নিহিত ছিল ।? 

৪নং সম্প্রদায়ের উত্তুব হইয়াছিল “ছান্‌, মতবাদ হুইতে এবং ইহার আত্যস্তিক মায়া- 
বাদের প্রতিবাদরূপে । বৌদ্ধধর্মে একটা আত্যন্তরীন সমন্ব়-সাধনের জদ্য চীনা-মনের 
একটা স্বকীয় প্রচেষ্টা ইহার মতবাদে দেখিতে পাই । এই মতের তিত্তি নামতঃ 
দ্ধর্মপুগুরীক' শান্তর এবং সম্প্রদায়ের অন্যতম নাম এই শাস্ত্রের নাম হইতে গৃহীত | কিন্ত 
প্র শান্ত্রে "মৌলিক বুদ্ধত্ব+ ( পন্‌-চ০:.) ও 'ব্ৃৎপঞ্তি-সিদ্ধ বুদ্ধত্' € চিন-০:19 ) 


৫৭ | 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


লইন়া যে পার্থক্য স্থচিত হইয়াছে, যাহা 'পদ্র' সম্প্রদায়ের শান্ত্েও স্বীকৃত, ভাহার 
উপর ভিত্তি করিয়া বুদ্ধদেবের সমগ্র শিক্ষাবলী € হীনযান ও মহাযান উতয় জাতীয় ) এক 
নূতন সমস্বয়ে আনিবার চেষ্টা আছে। এই সমন্বয়-চেষ্টায় বুদ্ধদেবের জীবন পাঁচটি কালে 
এবং তাহার শিক্ষাবলী এই কালানুক্রমে বিভক্ত করা হয়। বুদ্ধ-বচনগুলিতে বাহতঃ সে 
সকল অসামঞ্জন্য গোচর হয় তাহা মহাযানীদের স্বীকৃত এই মতবাদ__যে বুদ্ধদেব তাহার 
শ্রোভাদের বোধ-ক্ষমতা অনুসারে উপদেশ দিয়াছিলেন এবং তাহার বাক্য ছ্যর্থবোধক,_- 
এক অর্থ সাধারণ লোকের বোধের উপযোগী ও অন্ত অর্থ গুঢ়,_-তাহাদ্বারা নিরসন হয় । 

শাস্ত্রীয় বাক্যের অর্থ গ্রহণের জন্য এই সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ ব্যাখ্যা-পদ্ধতি ছিল। 
এড.কিন্স ( 8:0151755 ) বলেন £ “ত্যেন-তাই” সম্প্রদায়ের (160 ও) বিশিই 
উদ্দেশ্য ছিল 'এই যে বৌদ্ধশান্ত্রগুলি বিনা বিচারে আক্ষরিকতাবে সত্য বলিয়া! গ্রহণ করা 
ও তাহা সম্পূর্ণ অগ্রাহ কর! (যাহা মায়াবাদ-মতাবলম্বীরা করিতেন ),_এই ছুইয়ের মধ্যে 
একটি মধ্যপথ বাহির করা । বৌদ্ধ ধর্মের এই উভয় প্রকারতেদই ইহার ক্রম-বিকাশের 
অঙ্গ ইহ! মানিয়! লইয়া সেই সঙ্গে উভয়ের সামঞ্জস্য-সাধনের জন্য একটি তৃতীয় রীতি 
যাহাদ্বারা এই উভয় প্রকার স্বতন্ত্র করিয়া, ভুলন1 করিয়া ও সমঞ্জস করিয়া একটি মধ্যপথ 
গ্রহণ করা যায়,_ইহাই “ত্যেন-তাই' সম্প্রদায় সমীচীন মনে করিত |” 

১নং ও ২নং সম্প্রদায় অল্পকালই জীবিত ছিল ও সম্ভবতঃ অন্তান্য সম্প্রদায়ের সহিত 
মিশিয় গিয়াছিল। প্রথম সম্প্রদায়টির মূল শাস্ত্র একখানি গ্রন্থ যাহার সংস্কৃত ভাষায় নাম 
_-সত্যসিদ্ধি শান্ত্র' | এই নাম হইতেই সম্প্রদায়ের নাম “সত্যসিদ্ধি' হইয়াছিল । এই 
সম্প্রদায়কে ভারতবর্ষীয় মহাযানী মাধ্যমিক-পন্থীদের “সৌত্রার্তিক' শাখার চীনা সংস্করণ 
বল! যাইতে পারে । ২নং সম্প্রদায়ের মূল-শান্ত্র আচার্য নাগা্জুনের ছুইখানি ও 
নাগার্জুনের শিষ্য আর্ধদেবের লিখিত একখানি গ্রন্থ 

৬নং, এনং এবং ৮নং সম্প্রদায় ভারতবরায় কোনও কোনও মহাযানী অম্প্রদায়ের 
অধ্যাত্ব/-দর্শনের মতবাদ-পুষ্ট ইহাতে চীন! বৌদ্ধদার্শনিকদের নৈয়ায়িকতা প্রতিফলিত । 
ইহার প্রত্যেকটিকেই কোনও বিশিষ্ট ধর্মবিশ্বাসের প্রতিপাদক ন! বলিয়া, কোনও নৈয়ায়িক 
দর্শনের প্রস্তাবক বলা যায়। ৬নং সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন বিখ্যাত চীনা পণ্ডিত 
ও অস্কুবাদক মুয়ান চোয়াউ € ৪৪0 01087 )। তিনি ষোল বৎসর ভারতবর্ষে 
শিক্ষাপাভ ও তীর্ঘপর্যটনে কাটাইয়া! ৬৪৫ খৃষ্টাব্দে চীনে প্রত্যাবর্তন করেন ও বাকি জীবন 
ভারতবর্ধীয় বৌদ্ধগ্রস্থরাজি চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন। ভারতবর্ষের মগধপ্রদেশে 
নালন্দা-বিশ্ববিগ্যালয়ে প্র বিশ্ববিগ্ভালয়ের অধ্যক্ষ শীলতত্রের নিকট তিনি দর্শনশান্ত্র অধ্যয়ন 
রুরিয়াছিলেন ৷ সেইজন্য যুয়ান চোয়াঙ-স্থাপিত এই সং্রদায় শীলভদ্রকেই ইহার আদি” 


৫৮ 


চীনের দশটি বৌদ্ধসম্প্রদায় 

প্রতিষ্ঠাতা মনে করে। ৮নং সম্প্রদাক্ন একাত্ম-বাদী ( 1009159150) ছিল। তাহাদের 
প্রধান মতবাদ তাও; দর্শনের সহিত সমগ্রস ছিল, তাহা কোনও অদ্বিতীয় পরম অস্তিত্বে 
বিশ্বাস, যে অস্তিত্বের মধ্যে সকল পার্থক্য মিলাইয়া যায় এবং সকল বৈপরীত্যই পরম 
একের € 18009] 0:86 ) বিতিন্ন প্রকাশন্গপে প্রতিভাত হয় ।৯ 

কতগুলি প্রধান প্রধান চীন! বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উত্তব হইয়াছিল “তাও” মতবাদের পৃষ্ঠ- 
ভুমিতে, কারণ “তাও” ধর্মের সহিত ভারতীয় মহাযানী বৌদ্ধধর্মের প্ররুতগত ও মতবাদগত 
সু সুক্্ন ঘনিষ্ঠতা আছে । ইহা! আমরা পূর্বেই লক্ষ্য করিয়াছি। 

কিন্ত কনফিউসিয়ান্‌ মতের সহিত বৌদ্ধমতের অনেক বিষয়ে প্রতিবাদিতা ছিল। 
প্রথমতঃ উহার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গী ছিল তীক্ষতাবে ইহলোকে হিতের দিকে ও সম্পূর্ণভাবে 
মানুষের জীবন-যাত্রার দিকে_ বৌদ্ধধর্মের দ্রিকু পারলৌকিক | দ্বিতীয়তঃ সামাজিক ও 
রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে উহার মূলগত মতবাদ গার্স্থ্যজীবনের উপর প্রতিটিত,-_ইছা 
বৌদ্ধধর্মের যে সন্নযাস-গ্রহণের ব্যবস্থা আছে তাহার বিরুদ্ধ । চীনা বৌদ্ধধর্মের সুদীর্ঘ ও 
বিচিত্র ইতিহাসে কনৃফিউসিয়ান্‌ লেখকদের বৌদ্ধধর্মের প্রতি আক্রমণের অনেক দৃষ্টান্ত 
আছে । তাহার মধ্যে চীনের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা বিখ্যার্ত। ৮১৯ খৃষ্টাব্দে সআাট *শ্যেনৃ- 
ত্ঙ্গের (75157) [5508 ) প্রতি কন্ফিউসিয়ান্‌ 'লেখক “হানৃ-যুর (নাত ৪) 
একখানা পত্র-লিপি। ইহাতে লেখক সম্রাটের বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার নিন্দা করিয়া- 
ছেন।১০ চীনা পণ্ডিতরা এই লিপিখানিকে প্রাচীন চীনা-তাষার লেখন-ভঙ্গীর সর্বশ্রেষ্ঠ 
নমুনাম্বরূপ মনে করেন । 

তথাপি হীনযানী বৌদ্ধধর্ম ও কন্ফিউসিয়ান্‌ মতবাদের মধ্যে একটি মিলনের স্থল ছিল। 
তাহা আত্ম-সংযম ও ব্যক্তিগত ব্যবহারে সমীচীনতার গুরুত্ব-নির্দেশে । কন্ফিউসিয়ান 
মতবাদকে কেহ কেহ “লী'র ধর্ম বলিয়াছেন । চীনা “লী” (14) কথাটির অন্য ভাষায় 
অনুবাদ দুরূহ । ইহা কন্ফিউসিয়ান্‌ শিক্ষার মর্মকথা | “লী” কথাটির দুইটি ভাবার্থ,+_- 
প্রথম অর্থে, যাহা ব্যক্তিগত ব্যবহারিক জীবনে প্রযোজ্য, “লী” সকল কর্তব্য বিষয়ে 
উপযুক্ততা! বা সমীচীনতা প্রকাশ করে ; দ্বিতীয় অর্থে, যাহা! সমাজের জীবনযাত্রায় প্রযোজ্য, 
“লী” প্রকাশ করে স্থশৃঙ্খলতার পদ্ধতি অথবা! প্রত্যেক বিষয় যথাস্থানে স্থাপনের রীতি ।৯৯ 
প্রথম অর্থে 'লী'র সহিত হীনযানী বৌদ্ধধর্মের “বিনয়ের, সাদৃশ্ট আছে । সেই কারণে 
অন্ততঃ একটি চীনা বৌদ্ধসম্প্রদায় “বিনয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহা ৯নং সম্প্রদায়। 

এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার নাম__তাও-শ্বেন (1:৪০ [75491 ) | ইহার জীবিত- 
কাল ৫৯৫-৬৬৭ খুষ্টাব্দ । তাও-শেন তাহার নিয়ামাবলীতে সংযম ও কৃদ্ছু-সাধনের উপর 
জোর দিয়াছেন। হীনযানী বৌদ্বধর্মের ভাব ইহাতে অনেকটা! গৃহীত হইয়াছে এবং এই 


৫৯ 


প্রাচ্ট ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


সম্প্রদায়ের প্রধান শান্তগরগ্থ ভারতীয় “ধর্মগুপ্ত'-_বৌদ্ধসম্প্রদায়ের বিনয়পিটক | এই দূ 
সংপ্রদায় এখনও চীনদেশে বর্তমান আছে £ কিয়া ও ( %923895 ) প্রদেশের “পাও-হুয়া* 
শুন” (৪০-79-5181 ) মঠ এই সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থল |: এই “ন্‌, সম্প্রদায়ের কনৃফিউ- 
সিয়ান্‌ ভাবাদ্বিত, কিন্তু ইহার অন্তর্বস্ত ( 00766275 ) বৌদ্ধ । 

সর্বশেষ চীনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়--১০ নম্বর * অষ্ট শতাব্দীর শেষভাগে প্রতিষ্িত হয়। 
ইহা একটি গুহাজ্ঞানাবলম্বী সম্প্রদায়” _-সেই জন্ত ইহার নাম “সত্য বাণী, ব! "গুহ শিক্ষা” । 
ইহার প্রেরণা ছিল এ ঘুগের ভারতীয় বৌদ্ধধর্মে প্রবতিত তান্ত্রিকতায় । বজবোধি-নামক 
জনৈক ভারতীয় সন্ত্যাসপী (যিনি ৭৩০ খৃষ্টাব্দে চীনদেশে মারা যান ) চীনা জনসাধারণের 
মধ্যে ইহা প্রচলিত করেন। ইহার উচ্চাঙ্গে একমাত্র বুদ্ধ-আত্মা বৈরোচনের সাধনা, যিনি 
নানা নির্গমন-পথে ও নানা প্রতিবিষ্বে (21081790101)5 2150. 22853:89 ) আত্ম-প্রকাশ 
করেন । কিন্তু ইলিয়ট ( 5110: ) সাহেবের মত যে, “ইহার নিয়নশ্রেণীর ও সাধারণ-গ্রাহ 
অংশ নান! দেবতার পুজা, জড়পদার্থে-যাদ্ু-ক্ষমত1 আরোপ ( চ5053190 ) ও যাছুবিগ্ভার 
চর্চা মাত্র ।১২ 

চীনদেশীয় লোকের জন্ত এই সম্প্রদায়ের প্রধান আকর্ষণ ছিল ইহাদের যাদ্ু-প্রক্রিয়ার 
ও মন্ত্র-তন্ত্রের বহুল ব্যবহারে । স্মরশাতীত কাল হইতে চীনদেশবাসীর! ক্রিয়া-কাণ্ড দ্বার 
্রক্মাণ্ডের অদৃশ্য শক্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করা যায় এই বিশ্বাস পোষণ 
করিয়াছে । এখনও মৃতব্যক্তিদের পারলৌকিক মলের জন্য একশ্রেণীর প্রাচীন ক্রিয়া- 
পদ্ধতি প্রচলিত আছে। ইহা সমধমিত্ব-মুলক যাছুর (5550020761০ 7851০ ) উপর 
প্রতিষ্ঠিত। এমন কি চীনদেশের দার্শনিক মতবাদও এই প্রকার যাছু-ক্রিয়াকে অগ্রাহ 
করে নাই £ চীনের প্রাচীন গ্রন্থ “ক্রিয়া-পদ্ধতি' (7০001 ০৫ 7২159 ) তেরোখানা প্রাচীন 
ও প্রামাণ্য কনৃফিউসিয়ান্‌ গ্রস্থাবলীর অন্ঠতম। স্তরাং তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ যাহার 
পশ্চাতে আছে রৰস্তান্বেষী ( ১৫5501০ ) একটি বিশেষ চিন্তাধার1, তাহা চীনা মনোভাবের 
সহিত অসঙ্গত হয় নাই এবং এই তান্ত্রিক "সত্য বাণী* সম্প্রদায়ের এত প্রভাবশালী হইয়া 
ছিল যে ইহার প্রভাব অন্ান্ত সম্প্রদায়ে ও ব্যাপ্ত হয় এবং চীনদেশে সাধারণে প্রচলিত 
বৌদ্ধধর্মের পরবর্তাকালের দ্ধপে এমন একটি বিশেষ রং ফলাইয়াছিল যে তাহাতে তিব্বত 
হইতে প্রবতিত লামা-ধর্মের সহিত চীনা! বৌদ্ধধর্ম মিশিয়! যায়। 

ধর্মগ্রন্থ“সংগ্রহ__চীনদেশীয়দের সহজাত সাহিত্যিক পটুতা ও লিখিত বাক্যের প্রতি 
শ্রদ্ধা প্রবচন-গত । চীনে বৌদ্ধধর্মের ভারতবাক্স প্রথম প্রচারকেরা চীনদেশীয়দের 
প্রকৃতির এই বৈশিষ্ট্য বুঝিয়া তাহার অনুযায়ী কার্য করিয়াছিলেন, তাহারা চীনের 
লোকদিগকে এই নুতন ধর্মবিষয়ক লিখিত গ্রন্থ অপর্যাপ্ত পরিমানে জোগাইতে লাগিলেন। 


৬৩ 


চীনের প্রথম বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান,_-লোয়াও. ([:055:28 ) সহরের "শ্বেতাশ্ব বিহার*: 
(৬1016 130156 21010950215 ১) বহু শতাবী ধরিয়া গ্রন্থপ্রণয়ণের মধুচক্র (৪০৪ 
[1৮০ ) স্বরূপ ছিল | বোদ্ধগ্রস্থ তাহাদের হস্তগত হইলেই তাহা চীনাভাষায় অনুদিত 
হইত | ইহাতে চীনাভাষায় অনেক নৃতন নূতন শব্দ-সংগ্রহ হইতে লাগিল,_-তাহা! বৌদ্ধ- 
শাস্ত্রের পরিতাষার ও বৌদ্ধনামের আক্ষরিক চীনা অনুবাদের প্রয়োজনেই নয়, এতৎসঙ্গে 
একরকম নূতন ভাষা-বিশেষেরও স্থ্টি হইল। তাহাকে “বৌদ্ধ মাগারীণ, (80591,15 
11915051010 ) ভাষা! বলা হয়,_-তাহা চীনের প্রাচীন-গ্রন্থগত শুদ্ধ-ভাষা ও এতিহাসিক 
গ্রন্থগুলির ভাষা হইতে পৃথক । 

ইতিহাসের দিক্‌ হুইতে চীনা বোঁদ্ধগ্রন্থসংগ্রহের মূল্য দ্বিবিধ। প্রথমতঃ ভারতবর্ষে 
মহাযানী বৌদ্ধধর্মের ক্রম-বিকাশের ধারা সম্বন্ধে বর্ত মানে যে অজ্ঞতা আছে তাহাতে এই 
সকল গ্রন্থ হইতে রশ্মিপাত হয়, কারণ ভিন্ন ভিন্ন মহাযানী সপ্রদায়ের মূল গ্রন্থগুলির কিছু 
কিছু আমরা কালানুক্রমে স্থাপিত করিতে পারি। অধিকন্ত বহু মহাযানী গ্রন্থ, যাহার 
প্রথম লিপি এখন আর পাইবার সম্ভাবনা নাই, তাহা এই চীনা গ্রন্থ-সংগ্রহে চীনাভাষায় 
অনুদিত হইয়া আছে, যদিও সেই সকল অনুবাদের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা যায় না । দ্বিতীয়তঃ 
হীনযানী বৌদ্ধধর্ম ও মহাযানী বৌদ্ধধর্মের পারস্পরিক সম্বন্ধ, যাহা এখনও বৌদ্ধধর্মের 
ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্ত অগ্ভাবধি অনির্ণীত প্রশ্ন, তাহা এই গ্রন্থগুলি হইতে নুতন 
দৃষ্টিতে দেখা যাইতে পারে, যদিও চীনের বৌদ্ধদের হীনযান ও মহাযানের পার্থক্য সম্বন্ধে 
স্পষ্ট ধারনা ছিল না । কয়েকটি ভিন্ন এই সকল গ্রন্থ সংস্কত হইতে অনুবাদ, কিন্ত ইহার 
কোনও কোনও বাক্য ও প্রকাশ তঙ্গীতে মনে হয় যে লেখকেরা ইহার পূর্বের লিখিত 
পালিগ্রন্থগুলিও ব্যবহার করিয়াছেন । প্রত্যেক সংগ্রহের এক অংশ “হীনযানী” বলিয়া 
নির্দিষ্ট আছে | কিন্তু যে সকল গ্রন্থ ভারতবর্ষে মহাযানী গ্রস্থরূপে ধরা হয় তাহারও কিছু 
কিছু ইহার মধ্যে সম্মিবিষ্ট | ইহাতে এই দুরূহ প্রশ্ন ওঠে যে এই হীনযান ও মহাযান শ্রেণী 
বিভাগ চীনা তালিকা-কারের অজ্ঞতা প্রস্থত অথব! ভারতবর্ষেই হীনযান ও মহাযানের মধ্যে 
কোনও ছুর্রে য় অন্তঃসংযোগের ফল। 


টাক! 


১। চায়না £ এ শর্ট কাগচারাল হিষ্ঠী পৃ ২৬২-৯ উষ্টব্য 
২। "আমিদা বদ এ আদি গৌঙুমের পরিবর্তে আমিদ। বা জমিতাতৈর নাম ব্যবহার কর হয়+*-**4 
তিনি চীন! বর্ণিত শি তিয়েন (1151 7167 ), পশ্চিম ঘর্গ ব! অপূর্ব হুথাবতী হ্র্গে পল্প হইতে জাত'"""" নরক 


৬৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চান্য দর্শনের ইতিহাস 


টার করিয়! পশ্চিম ঘর্গে পুনর্জনা লাভার্থে আমিদার নাম গ্রহণই যথেষ্ট পূর্বোি 
গ্রন্থ পৃ ৮১ 

*। হিন্দুইস্ম্‌ দ্যা বদ্ধিস্ম তয়খওড পু ২৫৫-৬ 

৪ রী পৃ২৫৫ 

৫| চায়না £ এ শর্ট কালচারাল হিছ্রী পৃ ২৬২-৩ 

৬। উইস্ডম্‌ অব চারনা! পৃ ৬৭ 

৮। চাইনীস্‌ বুদ্ধিসূম ৩খও পৃ ১৯৬ 

৯। চায়না; এ শর্ট কাল্চারাল্‌ হিষ্রী পৃ ২৮৪ 

১*। গিল্স-এর “চাইনীদ্গ লিটারেচার এ পূ ২৯১ ও ২২-এ এই বিখ্যাত পত্রের সংক্িপ্ত অনুবাদ 
উদ্ধৃত আছে এবা 'হিন্দুইসূম্‌ আও বুদ্ধিসূমূ* এ পৃ ২৬৬-৭ তে গিল্স্‌-এর অনুবাদের আংশিক উদ্ধৃতি আছে, 

১১1 উইসূডম্‌ অব কন্ফুশিয়াস 

১২৭। হিন্দুইস্ম্‌ আয বুদ্ধিস্ম্‌ ৩য়খণ্ড পৃ ৩১৭ 


স্পুভ্তন্ক নিবল্লী 


এলিয়ট, সার চার্ল স: হিন্দুইস্ম্‌ আযাণ্ বুদ্ধিসূম্‌ ওয় খণ্ড (১৯২১) 
ম্যাকনেয়ার, এইচ এস্‌, সম্পাদিত £ চায়না, (১৯৪৬) 

বীল £ ক্যাটেন৷ অব বুদ্ধিষ্ট স্কিপডারস্‌ (১৮৭১) 

যুটাউ» লিন্‌ সম্পাদিত £ দি উইস্ডম অব চায়না (১৯৪৮) 

ল! তুরেৎ, কে, এস্‌ ঃ দি চাইনীজ দেয়ার হিষ্টী আাও কাল্চার (১৯৪৬ ) 
বাগডী, পি, সি £ ইগডয়া আযাও চায়না (১৯৪৪) 

ফিট্জেরান্ড, সি, পি. £ চায়না, এ শর্ট কাল্চারাল্‌ হিষ্ী (১৯৪২) 

যুটাঙও লিন্‌ : দি উইজডম্‌ অব কনৃফুশিয়াস ( ১৯৩৮ ) 

এডকিন্স, জোসেফ £ চাইনীজ, বুদ্ধিসম্‌ ( ট্ব্নারস্‌ ওরিয়েপ্টাল সিরীজ.) 
নানৃজিও, বি, £ এ ক্যাটালগ, অব বুদ্ধিস্ট ত্রিপিটক ( ১৮৩৩ ) 


৬২ 


পঞ্চবিংশ পত্রিচ্ছেদ 
জাপানের চিন্তাধারা 


“শিনৃতো” ধর্মকে “দেবমার্গ' (1০ ভ/85 ০£ €8০ 0945 )'বলা হয় । ইহাতে এত 
অধিক পৌরাণিক কুসংস্কার আছে ও উগ্র-জাতীয়তাবাদের প্রলাপ আছে যে জাপানের 
চিন্তা ও কৃষ্টির পু্টকর না হুইয়া ইহা বরং হানিকরই হইয়াছে । তথাপি ইহাতে একটি 
ধারণা আছে যাহার সম্বন্ধে বল ষায় যে ইহা জাপানী জাতির পারপার্থিক অবস্থা! 
অনুযায়ী প্রতিক্রিয়ার স্বকীয় ও বিশিষ্ট প্রকাশ । আমি “কান্নাগরা” বা “কাম্নাগরা নে! 
মিচি? (0290058978, বা 22210155878. 0 [01০1১3) এই বাক্যটির নির্দেশ করিতেছি । 

পঞ্ডিতেরা, দেশ-ভক্তেরা এবং এতিহাসিকেরা, ধাহাদের মন দৃষ্টির সন্বীর্ঘতায় ও 
তাব-প্রবণতায় আতিশয্যে বন্রতা-প্রাপ্ত হইয়াছে, তাহারা এই বাক্যের অপব্যবহার 
করিয়াছেন। কিন্তু প্রকুতার্থে এই কথাটি জাপানী চিন্তাধারার সংক্ষিগু-সার-্বরূপ। 

“কান্নাগরা” কথাটি যৌগিক £ “কান্‌ বা! কামি'র অর্থ “দেবতা” এবং “নাগরা' অর্থ 
অনুসারে" “সামঞ্জশ্তে বা 'যথা-তাবে” | হুতরাং “কান্নাগরা” কথাটির অর্থ ঃ “দেবতাদের 
অনুসারী হইয়া” বা “দেবতাদের মতন হইয়া” । বিপদার্থে “দেবতাদের ইচ্ছার সহিত 
সামঞ্জস্য রাখিয়া” অথবা “দেবতারা নিজেরা যেমন সেইভাবে তাহাদের অন্থুসরণ করিয়া” 
অথবা “দেবতাদের মতন হইয়া” বা! “নিজের মধ্যে দেবতাদের মুক্তি প্রতিফলিত করিয়া; । 

এই কথাটি প্রথম পাওয়া যায় “নিহউ. শোকি” (73117079101) নামক জাপানের 
পৌরাণিক ইতিবৃত্তে। ইহা! জাপান সম্্াটু কোতোকু (7০6০1: )-র রাজত্বকালে 
( খুষ্টাব্ব ৬৪৫-৬৫৪ ) রচিত হয়। তিনি প্রচার করিয়াছিলেন যে জাপান দেবকুল হইতে 
অবতীর্ণ রাজাদের দেশ। যে দেবগণ ছিলেন স্বর্গ-মর্তে প্রারস্তের সমকালীন জাপানের 
রাজার! তাহাদেরই বংশধর বলিয় তাহাদের শাসন দেবতাদেরই ইচ্ছান্ুযায়ী। 

প “কাম্নাগরা” বাক্যটির অর্থ প্রথমতঃ রাজনৈতিক ছিল। কালক্রমে উহার অর্থ 
বহ-ব্যাপক হয়। ইহা কেবল রাজনীতি সম্পর্কেই ব্যবহৃত হইত না । ইহার তাৎপর্ষে 
ধর্ম ও নীতিবাদের স্থর আগিয়৷ পড়িল এবং “দেবগণ ও বিশ্ব-প্রকতি একার্থগোতক 
হইল। দেবতাদের ইচ্ছা অন্নুসারে কার্য করা কি জীবন-যাপন করা আর প্ররুতিকে 
তাহার সত্য-স্বরূপ গ্রহণ করা, অর্থাৎ প্রকৃতির উপর মানুষীবুদ্ধি চালনা ন! করা, একই 
কথ! হইল। অষ্ট শতাব্দীর শেষ অংশে সম্ভবতঃ ওতোমো-নোস্যাকামোটি (0072০. 


৬ও 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


7১০10800011) সঙ্কলিত একখানি প্রাচীন জাপানী কবিতা-সংগ্রহ হইতে এই. অর্থ 
পাওয়া যায়] এই কবিতা-সংগ্রহের নাম 'মান্রয়ো-শু' (215005০5125) বা 'দশ 
সহ পত্রের সংগ্রহ | “মোতো-ওরি-নরিনাংগা” (2/০৮০-০1 239710)989- সুষ্টাব্ব 
১৭৩০-১৮০১ ) কান্নাগর!” কথাটির এ অর্থ-ই স্ফুট করিয়া দিগ্নাছিলেন। 

“দেবতাদের অনুযায়ী হইয়া” _এই কথাটির যতদিন রাজনৈতিক অর্থে প্রযুক্ত হইত, 
ততকাল ধারণাটি সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ বা দেবতার প্রতিনিধিতাবে রাজ্যশাসন- 
বাদের সহিত সম্বন্ধ হইবার সম্ভাবনা ছিল। এই সম্বন্ধ যে কি তুর্থটনাপ্রস্থ 
জাপানের ইতিহাসে সম্প্রতি যাহা ঘটিয়াছে তাহা দৃষ্টান্ত-স্বর্ূপ। ধর্মান্ধ জাতীয়তা- 
বাদীরা ও আমার মতে অত্যন্ত কুসংক্কারাপন্ন শিনতো। পণ্ডিতর! তাহাদের সন্বীর্ণ প্রাদেশিক 
পক্ষপাত সমর্থনের জন্ত জাপানের চিন্তাধারা বিপথে চালাইয়াছিল। নরিনাংগা স্বয়ং 
এই সকল পক্ষিপাতিত্ব হুইতে মুক্ত ছিলেন না বটে, কিন্তু তাহার মনের প্রসারের জন্য 
তাহার পরবর্তী শিষ্যবর্গ, ধাহারা “হিতারা আতব্কতানে'র ( 77186 £0506917০-- 
খৃষ্টাব্দ ১৭৭৬-১৮৪৩ ) নেতৃত্বাধীনে ছিল তাহাদের মত চরমপন্থী ছিলেন না । 

যাহাকে আমরা ঠিক “জাপানী চিন্তাধারা” বলিতে পারি তাহা অষ্টদশ শতাব্দী পর্যন্ত 
অস্পষ্ট ছিল । যখন “কামো-নো-মাবুচি” (7৪0১০-০-৮]৪০৪০1০২--১৬৯৭-১৭৬৯ ) ও 
“যোতো1-ওরি-নরিনাংগ!” কন্ফিউসিয়ান্‌ মতবাদের বিরুদ্ধে জাপানের প্রাচীন “দেবপন্থা'র 
চর্চা আরম্ভ করেন তখন ইহা স্পষ্ট হয়। তাহারা কন্ফিউসিয়ান্ মতের যুক্তিবাদ 
(15000791150) ও জাপানী কন্ফিউসিয়ান্-বাদীদের আক্রমণশীলতায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ 
হইয়াছিলেন। এই জাপানী কনফিউসিয়ান-বাদীরা “শিন-তো” সম্পূর্ণ অগ্রাহ করিত 
এবং তাহার ফলে জাপানের রাজনৈতিক ও কৃষ্টিসম্বন্বীয় ইতিহাসের যে বিশেষ তাৎপর্য 
আছে তাহা মানিত না । নরিনাংগা এই মত প্রকাশ করিয়াছিলেন ষে জাপানদেশের 
পৌরাণিক কাছিনী যাহা কোজিকি, ( 7০311 ) ও নিহঙ শোরি, (17072 91015 ) 
গ্রন্থে বণিত আছে জাপানী কনফিউসিয়ানবাদীরা তাহার যুক্তিগত ব্যাখ্যা করিতে গিয়া 
“মানুষী” (10002) ব্যাখ্যার দিকেই ঝোঁক দিয়াছে । তিনি এই কথার উপর জোর 
দিতেন যে দেবতারা মনুষ্যপদবীর নন এবং পুরাণ-বগিত তাহাদের অযৌক্তিক কার্যাবলী 
সেই বোধেই গ্রহণ করিতে হইবে । যদি আমরা আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধি প্রয়োগ করিয়া 
তাহার “মানুষী* অর্থ করি, তবে তাহা অসঙ্গত হইবে,_তাহাতে জাপানের ইতিহাসে 
কোনও অলৌকিক তাৎপর্য থাকিবে না এবং জাপানের শাসকদের ত্বর্গ হইতে অবতরণের 
দাবী আর গ্রাহ হইবে না । দেবতাদের কাহিনী হইতে যৌক্তিকতার প্রশ্ন বাদ দিতে 
হইবে । আমাদের পূর্বপুরুষদের নিকট হইতে আমরা পৌরাণিক কাহিনীগুলি যেমন 


৪ 


জাপানের চিন্তাধার! 


নি ডেসন কাবেই শাবরা! বিনাযুভিতে এপ করিব, আ আমাদের আধুনিক নীতিবাদী 
আদর্শে তাহার মাপ করিব না,_-ইহাই ছিল নরিনাংগা ও তাঁহার মতবাদীদের প্রবন্ধ | : 

কনৃফিউসিয়ানৃ-বাদী ও বিরুদ্ধবাদী অন্তান্যদের মতই "শিন্-তো” পত্ডিতেরাও এই সকল 
উক্ভিতে মানবিক যুক্তি ও নীতির আদর্শ ধরিয়াছেন-__একথা বর্তমানকালের দৃষ্টিতে অতি 
আশ্চর্য বলিয়াই মনে হয় । 'শিন্-তো+ পণ্ডিতেরা ভুলিয়াছিলেন যে, যে কোনও বিতর্ক 
যুক্তির উপর স্থাপন করা উচিত। | 

তাহারা মাহষেরই লিখিত ও মানুষের দ্বারাই বংশ-পরম্পরায় প্রচলিত দেবতাদের 
কার্ধাবলীর তাৎপর্য নির্ধারণ করিতে যে অযৌক্তিক যুক্তি-পদ্ধতি দেখাইয়াছেন তাহা 
ভ্রানতিমূলক সন্দেহ নাই। তথাপি তাহারা যে মানুষের অভিজ্ঞতায় কিছু কিছু অমান্ুষী 
ঘটনা থাকিয়া যায় যাহা যুক্তির বহির্ভত বলিয়! মানিয়! লইতে হইবে, যাহা কোনও 
পরম সত্য, প্রাকৃতিক হউক কিম্বা অলৌকিক, ইহ] বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন তাছা 
সম্পূর্ণ ভ্রান্তিমূলক নয়। কিন্তু তাহাদের ভ্রম যাহা এ-সম্পর্কে দারুশ ভ্রমই ছিল তাহা 
এই যে তাহারা দেবতাদের যুক্তির বহির্ভিত কার্যগুলি রাজনীতিক্ষেত্রে প্রয়োগ করিতে' 
চাহিয়াছিলেন এবং তদ্বারা জাপানী সম্রাটু-পরিবারের দৈব-আবির্ভাব প্রমাণ করিতে 
চেষ্টা করিয়াছিলেন । 

বৈদেশিক কৃষ্টির সহিত জাপানীদের সংস্পর্শ জাতীয় ইতিহাসের অতি প্রাক্কাণে 
হইয়াছিল । সেই হেতু এই সকল কৃষ্টির কি বিশেষত্ব তাহ। বুঝিবার ্থযোগ তখন 
তাহাদের ঘটে নাই। চীন! ও ভারতীয় কৃষ্টি ও চি্তার অত্যধিক চাপে অন্দেশী টি 
রন্ধ বা নির্বাপিত হইয়! গিয়াছিল । 

যে কালে জাপানীরা তাহাদের পরিবেশের প্রতি নিজস্ব প্রতিক্রিয়া বোধ করিবার 
উপযুক্ত হইয়াছিল এবং প্রাক্তন পুরাণ-কাহিনী-গত মনের অবস্থা হইতে বহির্গত হুইতে- 
ছিল, তথন তাহারা এসিয়া মহাদেশের মধ্য হইতে আগত চীনা ওপনিবেশিকদ্বারা প্রচলিত 
তাও'-বাদ ও কনফিউপিয়ান-বাদের সম্ুথীন হইল | ইহাদের কৃষ্টিগত প্রভাবে তাহারা 
অতিভুত হুইয়াছিল। এই সকল মতবাদীদের পদাঙ্ক নতভাবে, এমন কি সাগ্রহে ও লুব্ধমনে, 
অন্ুলরণ না করিয়! তাহাদের আর কোনও গতি ছিল না৷ । 

জাপানীর] তাহাদের চীন! প্রতিবেশীদের হইতে প্রথম গ্রহণ করে তাহাদের “চিপ্র-লেখা' 

(৫459£:52%) প্রণালী । এই প্রণালীতে বর্মাল! শুধু শব্দ-সাক্ষেতিক ছিল না, ধারণাগুলিও 
প্রকাশ করিত। ান্য়ো” গ্রন্থে যে চীনা বর্ণমালা আছে তাহার অধিকাংশই জাপানী 
শব্দের ধ্বন্যাত্রক এবং “কোজিকি গ্রন্থে জাপানী শব্ধ ও চীন! ধারশাগুলির একটা জটিল 
সংহিশ্রণ | “নিছোন শোকি'র সমস্যটাই চীনা লিখন ভঙ্গীতে চীনা “চিন্র-লেখা*য ' রচিত । 


৬৫ 


াচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


প্ই ভীমা ও জাপানী সংযোগ ইহাই নির্দেশ করে যে পানী চিনা্লতি রা 
প্রকাশি- পদ্ধতিতে আকারিত হইতেছিল। 

জাপার্দের জাতীয় ঘনোভাবে পূর্বপুরুষের পূজা নন এইরূপ ধরা হয় রা এইক্প 
বুঝানে। হইয়াছে । কিন্তু বাস্তব পক্ষে ইহা চীন হইতে লওয়া । 

জাপানের প্রাগৈতিহাসিক কাহিনী রচনার যে 'যিঙওঃ (8) এবং 'যাউ, 
(5808 ) দর্শন-বাদের ভিত্তি তাহাও আমাদের প্রতিবেশী চীনাদের হইতে ধার করা । 

শাসকদের দেবতার আসন দেওয়ার মতবাদও সম্ভবতঃ চীন হুইতে গৃহীত হইয়াছিল, 
কারণ চীনদেশে শাসকদের ক্ষমতা স্বর্গ হইতে আসিয়াছে এইরূপ মনে কর] হয়--ইহার 
অর্থ চীনদেশীয়দের কাছে যাহাই হউক না কেন জাপানীরা এই ধারণা আরও পুষ্ট ও 
স্থল করিয়াছিল । তাহার! স্বর্গের স্থলে দেবতা ধরিয়া! এবং শাসনকর্তা মিকাডোকে সাক্ষাৎ 
বংশধর বলিয়া মানিয়া লইয়াছিল। এই সম্পর্কে আমর! জাপানীদের চিন্তাপ্রণালীর 
একটু আভাস পাই । এই প্রণালীতে যাহা ভাবাত্মক ( 4৮90.৪০% ) তাহা বাস্তবিক 
(00150155 )-এ পরিণত হয় । 

এই ধারণাগুলি “নিহোন শোকি' গ্রন্থে ওতপ্রোত। ইহা সরকার-অন্ুমোদিত জাপানের 
ইতিহাস ও শিন্-তো!-বাদীদের পবিত্র গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্থতম | কিন্তু এগুলি কন্ফিউ- 
সিয়ান্‌ চিন্তা হইতে জাপানীদের চিন্তায় গাছের কলমের মত রোপিত হইয়াছে। 
জাপানীরা “ত1ও"-বাদীদের কাছেও বহু খণী। জাপানীদের বালকোচিত স্বতা ব-অনু- 
বস্তিতা (7৪০6০ ), প্রাচীনকালের উপযুক্ত সরলতা, আদিযুগের বিশুদ্ধতা (0:1817798] 
₹এ৫গে ) এবং অভিজ্ঞতা-মুলক বস্ততত্ত্রত1 ( 20019171581] 12811509 ) 'লাও-ত স"র 
শিক্ষাবলী হইতে আপিয়াছে । ইহা বিশেষভাবে দেখা যায় 'মোতোরি”র (2০0০) 
“দেবগণের প্রাচীন পন্থার ( 4০15706 ৬৮৪৮ ০£ 0০ 2995) ব্যাখ্যায় । তাঁহার 
কান্নাগরা” € (:8171756515, ) মতবাদ 'লাওত স"র মানুষের কপটতা ও কৃত্রিম উপায়ে 
মানুষের সামাজিক শৃঙ্খলা-গঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগের জাপানী “রকম-ফের*। 

জাপানী “শিন্-তো"র তথা-কথিত “পবিত্র গ্রন্থগুলি'র বিচার করিতে গিয়া জাপানে 
সম্রাট-শাসনের প্রবর্তন স্ত্বন্ধে প্র সকল গ্রস্থক্তাদের দ্ববিশাল বর্ণনাতঙ্গীর একটু উল্লেখ 
করিতে চাই । প্রথম সম্রাট 'জিন্মু, (71050 ) যিনি ২৬০৯ বৎসর পূর্বে জাপানের 
সিংহাসন আরোহণ করেন বলিয়া বলা হয় তিনি যে কাক্গীনিক ব্যক্তি তাহাতে সন্দেহ 
নাই এবং তাহার রাজত্ব “ন্‌ শু (79554) নামক ভূখণ্ডের ঝিকিৎ অংশ হইতে 
অধিক বিস্তৃত ছিল না । কিন্ত “নিহোন শোকি”র 'রচয়িতারা তাহার মুখ দিয়া বলাই- 
তেছেন £ “আমার এই অভিপ্রায় যে আমি ছয়টি দিক একত বাঁধিয়া. একটি, কেলীয় 


৬ 


জাপানের চিন্তাধারা ' ছা 

এর নিব জন্তিগসিিিন- কা ছাদ নির্মাণ করিয়া 
আচ্ছাদিত করিব” | এই “ছয়টি দিক্‌” ও 'আটটি সীমান্ত আলঙ্কারিক তাধায় ব্রহ্কাড কি 
পৃথিবীকে নির্দেশ করে, ইহা তাহাদের বিশিষ্ট চীনা-রীতিতে পৃথিবীর ধারণ! প্রকাশ 
করিবার উপায় । ্‌ 

কন্ফিউসিয়ানৃ-বাদ উত্তরখগ্বাসীদের কৃষ্টির গোতক ; “তাও'-বাদ দক্ষিণখগ্ডবাসী- 
দের। চীনদেশ প্রধানতঃ উত্তরখণ্ড এবং সেই হেতু কনৃফিউসিয়ান্-বাদের প্রভাব সর্বত্রই 
দেখা যায় । একথা সত্য বটে যে 'তাও+-বাদ, যেভাবে লাও ত., চুয়াঙ ত.স এবং অন্য 
শিক্ষক্ষেরা শিক্ষা দিয়াছিলেন তাহা শিক্ষিত শ্রেণীর লে!কেরাও গ্রহণ করিয়াছিল, কিন্তু চীনা 
চিন্তাধারার প্রধান শ্রোত কন্ফিউসিয়ান্-বাদেই উদ্ভূত হয় । কনৃফিউসিয়ানৃ-বাদ সামাজিক 
শৃঙ্খল! রক্ষাকারী এবং যুক্তি ও মানবধর্মের ( 30709158502 ) সমর্থক ) “তাও”-বাদ মতে 
সংসার এএড়ানোর'র রীতি ( চ:5০291579 ) ও অতীল্জিয় পদার্থের সন্ধান (:51250218- 
21062115]0 ) প্রশস্ত । ৃ 

জাপান যতদিন কন্ফিউপিয়ান মতবাদের প্রভাবে ছিল ততদিন জাপানের স্বীয় 
পরিবেশের প্রতি আপন-ম্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় যাহা! কিছু “তাও”-ভাব ছিল তাহা বিকাশ 
পাইতে পারে নাই" “ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে জাপান প্রধানতঃ দক্ষিণ হ্বীপণ্ুলি 
হইতে আগত জাতিদের দ্বারা অধ্যুষিত এবং তাহাদের মনের আকার-প্রকার শ্বতাবতই 
উত্তর অপেক্ষা দক্ষিণের বেশী | যদি তাহাদের স্বভাব-অনুযায়ী জীবন যাপনে হস্তক্ষেপ না 
হইত তবে তাহার! নিশ্চয়ই “তাও,মত অন্ুুসারেই বাস্তবের মর্ম গ্রহণ করিত। 

কিন্ত ইতিহাসে ইহার অন্যথা ঘটিয়াছে | চীন হইতে আগত লোকেরা আগেই তাহাদের 
উচ্চতর কন্ফিউসিয়ান্‌ কি লইয়া এইদেশে দৃঢ় হইয়া বসিয়াছিল এবং জাপানের 
ইতিহাসের প্রারস্তিক অধ্যায়গুলি তাহাদের প্রভাবে রচিত হয়। ইহা ছিল অবশ্টস্তাবী 
এবং এই ইতিহাসের প্রথম অবস্থায় ইতিহাস-রচনায় এইমুখী গতির জন্য কৃতজ্ঞ হইবারও 
কারণ আছে। কিন্তু আমাদের দেশের লোক সেই ঘুগ্নে তাও'-মতের যথোচিত গুণাব- 
ধারণের জন্য বাস্তবিক প্রস্তত ছিল না, কারগ ইহা বুঝিতে বিস্তর গবেষণার ও চিস্তাশক্তির 
প্রয়োজন এবং যে জাতি তখনও সভ্যতার প্রথম অবস্থা! পার হয় নাই, তাহার পক্ষে ইহা! 
আশার অতিরিক্ত | 

যখন জাপানের লোকেরা কন্ফিউসিয়ান্‌ আদর্শ অনুসারে তাহাদের গোঠী-গত জীবন 
নিয়মিত করিতেছিল, তখনও তাহারা1 ভোলে নাই,_-এবং তাহা ভোলাও অসম্ভব ছিল-- 
ষে তাহাদের দক্ষিণ-দেশীয় প্রাণে যে ভাবের গভীর সঞ্চালন্ন ছিল তাহা "তাও""মতের 
আকারেই প্রকাশের জন্য ব্যাকুল হইয়াছিল । 


৬৭ নি 


॥ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের 'ইতিছাস 

_. এই ব্যাক্লতা কেন? তাহাদের অর্ত গু আকাঙ্ার প্রকাশের জন্ত ফি খু'জিতেছিল 
তাহারা 1. তাহা এই “কান্নাগরা”র অস্থভব। ফিন্তু অনুভবের কোন মূল্য নাই যতক্ষণ 
তাহা চিন্তার পর্যবসিত না হয় এবং চিন্তা! কখনও প্রাণবন্ত হয় না যতক্ষণ অনুভবের দ্বারা 
তাহ স্স্থির না হয়। জাপানী চিন্তার ধারা জাপানী হৃদয়ের ভাব হুইতে উঠিয়াছে। 
সেই “কান্নাগ্ররা” একাধারে জাপানীর ভাব ও চিন্তা । 

কিন্তু 'কান্নাগরা” সম্বন্ধে মোতো1-ওরি'র (2০:০-0:£ ) ধারণ। জাপানী ভাবের 
সমতুল নয়। এই ভাব “শিন-তো” বাদের চিন্তা ছাড়াইয়! যায়। যতক্ষণ 'মোতো-ওরি, 
কনৃফিউসিয়ান্‌ যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে “শিন্-তো” মতের মুখপাত্র ছিলেন, ততক্ষণ তিনি 
কনৃফিউসিয়ান্‌ চিন্তার স্তর হইতে উর্ধে উঠিতে পারেন নাই। জাপানী চিন্তার ব্যাখ্যাতা- 
স্বরূপ তীহার যোগ্যতা! এই যে তিনি 'শিন্-তোবাদের তথা-কথিত “পবিত্র গ্রস্থগুলি হইতে 
'কাম্নাগর!” কথাটি বাহির করিয়াছিলেন । তাহার 'শিন্-তো” অর্ত দৃষ্টি 'কান্াগরা'র 
গভীরতর অংশে পৌছায় নাই, কিন্ত তিনি এই কথাটি পাইয়া আপন হৃদয়ে কিছু হৃদয়ঙগম 
করিয়াছিলেন,__তাহা! যতই বাহ এবং যুক্তিশুণ্য হউক না কেন। তিনি অষ্টাদশ 
শতার্ধীর শেষভাগের লোক ছিলেন এবং সেই সময়ে বৌদ্ধ চিন্তাধারা জাপানীদের ধর্মান্ু- 
ভুতিতে গভীরভাবে সঞ্চারিত হুইয়াছিল। কিন্তু তাহার “ঘুক্তিহীন' অন্তর্দৃষ্টি জাপানের 
আত্মা যাহা বাস্তবিক চাহিতেছিল 'কান্নাগরা” কথাটিতে তাহা! দেখিতে পায় নাই। ইহার 
কারণ ছিল এই যে তিনি 'শিন্-তো” বাদের অনুসরণকারী ছিলেন এবং শিন্তো' বাদীর 
স্বতার যে সে তাহার “পবিত্র” গরন্থলিতে স্থিতিশীলতা, বা সন্বীর্ণত। ব! প্রাদেশিকতা অথব৷ 
অন্ধ জাতীয়তা ভিন্ন বস্ততপক্ষে পরমাথিক কিছু দেখিতে অক্ষম | 

মহাযানী বৌদ্ধধর্মই জাপানীর আত্মাকে “কান্নাগর1” অনুভবের গভীরতলে প্রবেশ 
করিতে সাহায্য করিয়াছিল এবং “কাম্নাগর1”কে বদ্ধিতভাবে জাপানী চিন্তার প্রকাশ” 
স্বরূপ করিয়া তুলিয়াছিল। কথাটি দিয়াছিল 'শিন্‌-তো” কিন্তু বৌদ্ধধর্ম তাহার 
পরমাধিক ব্যঞজন! দিয়াছিল, যাহাতে জাপানীদের ধর্ম ও দর্শনের প্রতি ব্যাকুল আকাখা 
তুষ্ট হয়। 

যখন মহাধানী বৌদ্ধধর্ম জাপানে প্রবাতিত হয়, তখনই “প্রিন্স, শোতোকুঃ (79137,০6 
9190010 ) তাহা এই বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন যে মহাযানী শিক্ষার জন্য বাস্তবিক 
জাপানই উপযুক্ত ক্ষেত্র । তাহার অর্থ ছিল এই যে মহাযানের শিক্ষাই সেই শিক্ষা যাহা 
জাপানী মনের সংলগ্র হইবে, কারণ জাপানী মন যাহ! চাহিয়াছে মহাযান তাহাই দেয়। 
এই রাজবংশধর মহাযানের তিনটি বৃহৎ গ্রন্থের উপর ভাস্ত লিখিয়াছিলেন। এই কার্ষে 
তিনি জাপানীদের একজন শ্রেষ্ঠ . প্রতিনিধিস্বপ্নপ ছিলেন। জাপানীয় আত্গায়. বাহ। 


৬৮ 


জাপানের চিস্তাধার! 


গভীরভাবে সঞ্চারিত ছিল, তিনিই জাপানীদের মধ্যে প্রথম চিন্তাশীল ব্যক্তি ঘিনি তারা 
ধরিতে পারিয়াছিলেন । 

কিন্ত তিনি প্রত্যুত জাপানের -অভিজাত-সমাজের একজন ছিলেন । হয়া ভিনি 
জাপানীর অন্তঃকরণে যাহ! দেখিয়াছিলেন তাহা উর্ধ হইতে | নিজে জাপানী বলিয়! 
তাহার নিজ হৃদয়ের সহিত জনসাধারণের হৃদয়ের যে সমতন্ত্রিতা ছিল তিনি সে সম্বন্ধে 
সচেতন ছিলেন। তিনি তাহার নিজের কালের ও জনসাধারণের বহু অগ্রবর্তী ছিলেন । 
তাহার তাব ও চিন্তার স্তর পর্যন্ত পৌঁছিতে জনসাধারণের বহু শতাব্দী লাগিয়াছিল। 
পরে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে জনসাধারণের ধর্মসম্বন্ধে এবং ফলতঃ দর্শনসম্বন্ধে আত্ম-বোধ 
প্রশ্ফুট হইয়াছিল। 

শোতোকু তাইশি' ( খৃষ্টাব্দ ৫৯৩-৬২১ ) ও “কামাকুরা' ( 022 ) যুগের 
( ১০৮৩-১৩৩৮ ) মধ্যবর্তীকালে জাপানী বৌদ্ধধর্মে ুইজন মহান্‌ ব্যক্তির আবির্ভাব হয়,_- 
দেংগ্যে! দাইশি (10217£50 702191)3--ৃষ্টাব্ ৭৬৭-৮২২ ), যিনি “সাইচো, (998229) 
নামে খ্যাত, এবং “কোবো দাইশি, (7০৮০ 109351:1 : খুষ্টাব ৭৭৩-৮৩৫ ), যিনি 
কৃকাই' (151581 ) নামে খ্যাত । 

এই ছুই জন সমসাময়িক ছিলেন এবং তাহাদের আপন আপন ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাৰ 
বিস্তার করিয়াছিলেন ৷ প্রথম জন জাপানী “তেন্দাই” (57498 ) বৌদ্ধসম্প্রদায়ের 
প্রতিষ্ঠাতা এবং দ্বিতীয় জন “শিঙ্গন্” € 91:177807. অর্থাৎ 'সন্ত্রবাদী' ) সম্প্রদায়ের | 
“দেংগ্যো” অপেক্ষা “কোবো” জনসাধারণের সহিত ঘনিষ্টতর তাবে সংশ্লিঃ ছিলেন, কিন্ত 
ছইজনের কেহই জনসাধারণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না £ তাহারা নীচ হইতে উপরে ওঠেন 
নাই, উপর হইতে নীচে নামিয়া আসিয়াছেন | 

ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই জাপানের জনসাধারণ ধর্মবিষয়ে সচেতন হইয়াছিল এবং ধর্মের 
সহিত "পরম পদার্থ” বিষয়ক দার্শনিক চিন্তায়। এই কালেই “কিওটো+র অভিজাত 
সম্প্রদায় ও রাজ-পারিষদূদের রচিত অভিজাত কৃষি নূতন এক কৃপ্টির নমুনার কাছে 
পরাজিত হইয়াছিল । এই নূতন কৃষ্টির রচয়িতা ছিলেন যোদ্ধশ্রেণীর লোকের! যাহাদের 
জীবিকা-অর্জন হইত পল্লী-অঞ্চলে এবং জীবন-যাত্রা ছিল জমির সান্নিধ্যে । “কিওটো' 
কুটির জমির সহিত কোনও সাক্ষাৎ সম্বন্ধ ছিল না, ইহা প্রকৃতই “মেঘরাজ্যের' | ইহার 
গাঢ়ত্ব ছিল না, কারণ ইহা কতগুলি ভাবাত্মক ধারণ! দ্বারা ( 4150:50০010155 ) গঠিত 
হয়। “কামাকুরা” বুগ ইহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তাহা দ্বাভাবিকই বটে, কারণ 
নপক হইতেই ক্ষয়প্রাপ্ত হইতে বাধ্য ছিল। 

জাই অবস্থ! "হোনেও* (চ707821) ২ খুষ্টান্ব ১১৩৩-১২১২) এবং শিশবরাঙের € 907- 


৬৯ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 


“20 ও স্টক ১১৭৩-১২৬২ ) শিক্ষাবলীতে প্রতিফলিত। পণ্ডিতের বলেন যে জন: 
সাধারণের জন্য তাহার! বৌদ্ধধর্ম অপেক্ষান্কত সহজবোধ্য করিয়াছিলেন, কারণ পূর্ববর্তী 
বৌদ্ধধর্মে এত তাবাত্বক ধারণা ও উচ্চত্তরের গবেষণা ছিল যে তাহা বুঝিতে বিস্তর 
পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন হুইত। কিন্তু বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা জনসাধারণের জন্য ধর্ম শিক্ষা 
বলিয়াই, ইহা সকলেরই প্রাপ্য--অভিজাত-শ্রেণীর যোদ্-শ্রেণীর, রুষক সম্প্রদায়ের, 
'পণ্ডিতের, অশিক্ষিতের | বৌদ্ধধর্মে এমন কিছু লাই যাহাকে সহজ-বোধ্য বা কষ্ট বোধ্য 
'বিষয়ে পরিণত করা চলে। বৌদ্ধধর্ম ধর্ম হিসাকেই গ্রানহ্-পঙ্ডিতদের অর্থনির্ধারণের 
'চেষ্টা সম্পূর্ণ অবান্তর । 

সত্য এই যে “হোনেও১ ও “শিন্রাঙে”র শিক্ষাগ্ডলি যাহা সাধারণ জাপানীদের হদয়ে 
ও মনে যাহা তৎকালে সঞ্চরিত ছিল তাহারই যথাযথ প্রতিধ্বনি । ইহা প্র শিক্ষকম্বয়ের 
রচা কিছু নয়। ইহা! যথার্থতঃ এ কালের লোকদের মনে যে ধর্মাকাঙ্খা ছিল তাহারই 
তৃপ্তি-সম্পাদনকারী । বৌদ্ধধর্ম অতঃপর জাপানীদের "ধর্ম হইয়াছিল, তাহারা নিজেদের 
দরকার মত ইহার পুনর্গঠন করিয়াছিল । বৌদ্ধধর্মের 'পৃত-ভূমি, সম্প্রদার, ( চ9:5 
8170 5০1)001 ) জাপানীদের স্বকীয় ধর্ম বোধের সি | 

চীনদেশেও এই সম্প্রদায় আছে এবং জাপানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা “'হোনে 
কয়েকজন চীনা শিক্ষককে তাহার পূর্ববর্তী বলিয়া! উল্লেখ করিয়াছেন । ইহাই তখন তাঁহার 
হৃ্্‌-বোধ ছিল, কিন্তু উরতিহাসিক ক্রমে ধরিতে গেলে “হোনেও তাহার নিজের অবস্থান 
ঠিকভাবে ধরিতে পারেন নাই, _বোধ হয় ধরা তাহার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কারণ এ্ঁতি- 
হাসিক ব্যক্তিরূপে তাহার নিজেকে সমালোচনা করার তাহার নিজের কোনও উপায় 
ছিল না। সত্যই এই “হোনেঙ+ ও তাহার “শিন্রঙ+ জাপানের জনগণের হৃদয়ে যে ধর্ম- 
লিগ্সা ছিল তাহাই প্রকাশ করিয়! গিয়াছেন মাত্র । 

“শিন্-তো”-বাদীদের বৌদ্ধধর্মের দিকে অগ্রসর হওয়াতেও ইহা দৃষ্ট হয় যে এ কালে 
জাপানীরা পরমাথিক কিছু পাইবার সন্ধানে ছিল। সেই কাল পর্যন্ত বৌদ্ধেরাই “শিন্‌- 
তের দিকে চলিয়াছিল এবং যাস্ুষ ও প্রকৃতি সম্বন্ধে বৌদ্ধ মতবাদ “শিন্-তো'” ধর্মের 
বিশ্বাসগুলির সঙ্গে মিলাইতে চেষ্টিত ছিল । “শিন্-তো? ছিল এ বিষয়ে সম্পূর্ণ স্ফিতিনীল । 
কিন্ত এ কারণে নয় যে 'শিন্-তো”-বাদে এমন কিছু ছিল ন। যাহা দ্বারা বৌদ্ধ শিক্ষাবলী 
*শিন্-তো”র অঙ্গীভূত করিবার চেষ্টা করা করা যাইতে পারিত না অথবা বৌদ্ধধর্ম জাপানী 
তাব ও চিন্তার প্রতিবাদী বলিয়া ইহার ধবংস-সাধন সম্ভব হইত । "শিনৃ-ভো” তখনও 
আত্ম-বোধের স্তরে আসে নাই । ইহাতে “কান্নাগরা।'র ধারণাটি স্-আগত ছিল বটে, কিন্ত 
তাহা তখনও ইহাতে বহিঃস্থ, তখনও ইহা! সাবালকত্বের বয়স, পায় নাই।. “কাষাকুরা” 


জাপানের চিভ্তাধার! ৃ 
যুগের “শিন্-তে।”-বাদীরাই সর্বপ্রথম “ইসে শিন্তো+ (155 5133২0০) নাম গ্রহণ করিয়া, 
আত্ম-ঘোষণ! করে। “ইস? ([9০) জাপানীদের পূর্বপুরুষদের নামে নিবেদিত মন্দিরের 
স্থল | 'ইসে শিন্-তো সম্প্রদায় প্র যুগে প্রকাশ্যভাবে বৌদ্ধধর্মের নিন্দাবাদ করিত, কিন্তু 
বাস্তবপক্ষে ইহা ছিল "শিন্-তো।'-বাদের ম্বকীয় বিশ্ব-্থ দ্বারা বৌদ্ধধর্মকে নিজন্ব করিবার 
চেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই নয়। | 

'ইসে শিন্-তো+ (152 9242০) মহাযান দর্শনে ধৃত ও “লোও ত.সের প্রকল্পিত 
'গু-ব্তু-পার্থক্য-বাদে €(2০:3০55813555 ) প্রভাবিত হইয়া “কান্নাগয়া*র একটি নৃতন 
প্রকাশ-তঙী দিবার চেষ্টা করিয়াছে | তাহা এই £ “যে দেবতাদের মনোনীত মানুষ হয় 
সে পরমান্থপুঞ্জের €(013999) আরম্তক পর্যস্ত মনোযোগসহকারে নিরীক্ষণ করে” এবং “থে 
পবিত্র দর্পণ হুইতে ত্বর্গ-মর্তের আরম্ভ হ্ই়্াছে তাহা পবিব্রতাবে হৃদয়ে গ্রহণ করিতে 
হইবে, দ্বেবতাদের মন নিয়া তাহার সন্ধান করিতে হুইবে এবং সেই পরম-সত্তার € ৮৪ 
4£১05018€ ) মত রূপ-ও-ক্রম নিরপেক্ষ হইয়া তাহাতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিতে হইবে |”: 
“কান্নাগরা” এইরূপ অর্থে গ্রহণ:করিলে তাহাতে জাপানী চিস্তার সহজ প্রত্যক্ষ-দর্শন- 
রীতি থাকে না। 

'নিহোন শোকি' গ্রন্থে, যাহাতে এই 'কান্নাগরা” কথাটি সর্বপ্রথম পাওয়া যায়, তাহাতে 
এই কথাটি রাজনীতির সম্পর্কে ধরা হুইয়াছে,_তাহার অতিরিক্ত তাৎপর্য ইহাতে নাই। 
কিন্ত কথাটির নিয়ে একটি ভাষ্য জুড়িয়া দেওয়া হুইয়াছে তাহা এইন্বপ ঃ ““কান্রাগরা'র 
অর্থ “দেবতাদের রীতি অনুসারে" এবং প্রত্যেকেরই নিজের মধ্যে এই ব্ীতি বিভ্ভমান 
আছে ।” এই ভাষ্য পরবর্তীকালের, কিন্তু ইহাতে জাপানীদের চিন্তায় “কাম্নাগরা” সম্বন্ধে 
যে ধারণ তা অতি সুছুভাবে ব্যক্ত করে । 

এখন “কান্নাগর।”র ধারণ! বাস্তবিক কি কি স্চিত করে এবং ইহা বিশেষভাবে জাপানী 
চিন্তার গোতক কেন তাহার ব্যাখ্যা প্রয়োজন । 

যখন জাপানীদের আত্মবোধ (09155$0917575655 ) বিকাশের প্রথম স্তরে ছিল, তখন 
জাপানী মন স্বাভাবিক সরলতা ও স্বতাবানুবর্তী ইন্দ্রিয-লন্ধ জ্ঞান (08156. 51018358502) 
ছাড়াইয়। যায় নাই। ইহা ইন্ডরিয়লৰ অভিজ্ঞতা কি্ব। উত্তট কল্পন] যাহ! বুদ্ধির বিশ্লেষণে 
কিছুমাত্র টি'কিতে পারে না সেই সকলের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল । বলা হইতে যে দেবতার! 
“তকমগহুর" বা স্বর্গক্ষেত্র হইতে অবতরণ করিয়। পৃথিবীতে বিচরণ করেন! এই দেবতার! 
ছিলেন উৎকট, ছুর্নাতি পরায়ণ, জ্ঞানহীন ও অস্বাভাবিক । তাহাদের ব্যবহার মানুষী 
আদর্শের.যাপে নয় । সেই আদিমকালের জাপানীরা এই দেবতাদের সম্বন্ধে যাহা! বল! 
হুইভ তাহাই গ্রহণ করিত,_-এমনকি তাহাদের কার্যকলাপ যতই ঘুক্তিবিরুদ্ধ এবং. 


ণ* নি 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস 

অগ্বাভাবিক“হুউক না কেহ তাহাতে গর্ব অনুভব করিত। এবং এইভাবে দেবতাদের ও 
তাহাদের কার্যকলাপ গ্রহণ করাকে “তাহাদের অনুযায়ী হওয়া” “তাহাদের বংশধরদের ভক্ত 
প্রজা হওয়া” ও ধর্মে র সাত্বনা লাভ কর!” বলিয়া মনে করিত,__-ইহার অর্থ যাহাই হউক 
না কেন। জাপানীদের অগুঠিত মন তখনও “কান্নাগরা” কথাটির গতীরতর ইঙ্গিতগুলি 
সম্বন্ধে সচেতন ছিল না । তাহার! ইহার অর্থ বুঝিত শুধু স্বাভাবিক হওয়া সরল-অস্তঃ- 
করণ হওয়া,_সকল বস্ত যেমন আছে সেইতাবেই গ্রহণ করা, কিছু অপ্রমাণ্য বলিয়া 
উড়াইয়! না দেওয়া, সকল কিছু যে আকারে আসে তাহাই গ্রাহথ করা । এবং প্র সকলই 
ইন্জরিয়-লব্ধ জ্ঞানের স্তর হইতে | “কান্নাগর1” তখনও স্পষ্ট, হ্নিনূপিত ধারণ! হয় নাই, 
একট] ছায়াপাত করিয়াছে মাত্র । 

“হেই-য়াঙ ও যুগে (35195 051300- খুষ্টাব্ব নয় হইতে বারো! ) “কান্নাগর1” একটি 
কবিত্বপূর্ণ ধারণায় পরিণত হয়, ইহ আর রাগ্রনীতির কথা রহিল না । যতকাল পর্যন্ত 
শাসনকর্তা ও দেবতা এক বলিয়া মনে করা হইত এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এমন অবস্থা ছিল যে 
তাহা এই ধারণার পরিপোষক, ততকাল ইহার একটা আসল মুল্য ছিল। কিন্তু যখন 
জাপানের অধিবাসীরা তাহাদের দ্বীপপুঞ্জে শান্তিতে, তাহাদের অধিপতি দেবতাদের 
নিরাপদ শাসনাধীনে অধিষ্টিত হইল (যদিও তাহা নামে মাত্র ছিল), এবং সত্যতার 
অনেকট] উন্নত স্তরে উঠিয়াছিল ও চীন! সাহিত্য অধ্যয়ন করিয়া একরকম রপ্রি-লাত 
করিয়াছিল এবং তাহাদের স্বকীয় কিও কিছু বিকশিত করিয়াছিল,-_সেই যুগে জাপানীরা 
প্রক্কতির ( ইৈ৪5:০) দিকে মনোনিবেশপূর্বক প্রকৃতির গতীরতর আকার-প্রকারের 
গুণাবধারণ করিতে আর্ত করিল। তখন তাহার! যে অনুভূতিকে “মোনো-নো-আবারে' 
(7০:0০ ০ 4£১৬৪7০ ) বলা হয় তাহাতে আনন্দ-লাভের দীক্ষা পাইল । এই অনু- 
ভুতির সঙ্গে “কান্নাগরা”র কোনও সন্বন্ধ আপাততঃ মনে হয় না। হহা৷ প্রর্কতির প্রতি 
কবির, সৌন্দর্য-লিগ্সর, তাবুকের চিত্ববৃত্তি, কিন্তু “কান্নাগরা রাষ্্রনীতি ও ব্যবহার-নীতির 
রংয়ে গাঁড়ভাবে রঞ্জিত । কিন্তু আমার মন্তব্য এই যে উভয়ই একটিমাত্র জাপানী-মন- 
হুল্ত অনুভুতির ছুইটি পৃষ্ঠ,_-এবং 'অনুভূতি” ও “চিন্তা”র জাপানী মনে বিভিন্নতা নাই। 

“মোনো-নো-আবারে, যাহা “হেই-য়াঙও যুগের, (76827 ৮0০0 2 খুষ্টাক ৮৯৭- 
১১৮৫ ) কবিদের মনের উপর প্রবহমান ছিল তাহা! কতকট] ভাবপ্রবণতার মত মনে হয়। 
জাপানী জাতিও ভাবপ্রবণ জাতি । “মোনো” (0700 ) কথাটি অর্থ সাধারণ বস্ত-' 
নিচয়, “নো? (০) কথাটি “র €ষঠী বিভক্তি) বাচক এবং “আবারে' কথাটির অর্থ 
“ভাবের মিল” (8:05007081 0২59০০0158০ ) বিভৃতার্থে। হুতরাং সমস্ত বাফ্যটির অর্থ 
হয় ঃ “নিজের চক্ছম্পার্শে যে সকল বস্ত আছে তাহাদের অন্তরের ভাব উপলবি কর!”। 


শপ ণৎ 


জাপানের চিন্তাধারা 


এখানে “বন্ত' অথে জড়পদার্থ ও প্রাশবান্‌ জীব যাহাদের তাবাবেগ আছে ছইই খুকিত্তে: 
হইবে । ূ ৃ 
যখল শরৎকালের চন্দ্র কোনও একটি ক্ষুদ্র কুটারে উঁকি দেয়, বসন্তের পর্জাবদল সূর্ধে-. 
কিরণে উদ্ভাসিত হয়, শীতকালে ক্ষেতগুলি বরফে ঢাকিয়া গিয়া সাদ! হইয়া ঘাক্স। তখন 
“হেই-য়া+ যুগের কবির! উপলদ্ধি করেন যে প্রকৃতিতে খতৃপরিবর্তনের সঙ্গে সে নানা 
ভাবাবেগ চলিতেছে । বলা যায় যে প্রকৃতির এই সকল ভাবাবেগ আমাদের মধ্যেই 
আছে, আমাদের তিতর দিয়াই চলিয়। প্ররতির মধ্যে সঞ্চারিত হইতেছে, বদিও প্রক্কতিতে 
তাহার কোনও বোধ নাই । কিন্তু যে জাপানীরা “কান্নাগরা” কথাটি বানাইয়া ছিলেন. 
তাহারা অন্ুতব করিতেন যে মানুষ যেমন এই ভাবগুলির প্রতীক, প্রক্কৃতিও তেমনি ।, 
তাহাদের মতে, এই কারণে আমর! অর্থাৎ প্রাণী বা জড়-পদার্থ, যাহাই হউক না কেন, 
প্রত্যেকেই দেব-মন্ত এবং এই সত্যটি যখন ভাবগম্য কি অতিজ্ঞতা-গম্য হয়, যদিও তাহা 
বুদ্ধির বিশ্লেষণে না আসিতে পারে, তখন আমাদের ভিতর হইতে হ্বচ্ছন্দে ঘে কোনও 
বানীই আসক তাহা অবশ্যই “কাম্নাগরা*র ছন্দে বাজিবে। “হেই-য়াউ« যুগের কবিরা এই 
স্বগায় ছন্দ ধরিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং তাহাকে তাহার! “মোনো-নো-আবরে'. 
নাম দিয়াছেন । 

“মোনো” অর্থ সাধারণ বস্ত নিচয় । শুধু জড় প্রকৃতি “মোনো।” নয় ) আমর! অহ্ুভব- 
ক্ষম জীবেরাও 'মোনো” । যখন আমাদের চিত্ব সমস্ত আত্ম-কেন্দ্রিক উত্তেজনা হুইতে 
এবং যুক্তির সুক্মজাল হুইতে মুক্ত হুইয়! যায়, তখন তাহাতে দেবতাদের সন্তারই ধবনি-_ 
বাজে, তাহাই “কাম্নাগর1'--এবং তখনই আমরা মানুষের ভাবপ্রবণতার তাৎপর্য গতীর- 
ভাবে দেখিতে পাই । তখন সমাজের সকল কর্ম-ব্যাপারের সর্বাংশে আমাদের চিত্ত 
“মোনো-নো-আবরে' বোধ করে এবং তাহার নানা প্রকার-তেদে নান! ভাষের প্রতিক্রিয়া 
জানায় । প্রাকৃতিক ঘটনায় ও মানুষের কার্ধাবলীতে “মোনো-নো-আবরে' বোধ বরা 
জাপানী হৃদয়ে 'কানাগরা"র জাগরণের এক অন্-ব্ূপ ভিন্ন আর কিছু নয়। 

তেরে! শতাব্দীর পূর্বে কিন্তু। “কান্নাগরা'র এই আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বোধগম্য হয় 
নাই)_-সর্বপ্রথম সেইকালে 'হোনেঙ+ ও “শিন্রঙ' তাহাদের “হিয়েরি' পার্বত্য আশ্রমে . 
বসিয়া ইহার প্রতিধ্বনি করিয়াছিলেন | পবিত্র রাজ্য' € 655 1810) বাক্যটি 
স্বতই বৌধধধর্ম নির্দেশ করে, কিস্ত জাপানী ্রতিহাসিকেয়! এ সম্বন্ধে একটি বিষয় ধরিতে 
পারেন নাই । আমি তাহা একটু বিশদভাবে বিবেচনার জন্ লইতে চাই। 

পবিব্র-রাজ্য'বাদের প্রধান কথ! ইহাই নয় যে সেখানে আমাদৈর পুনর্জন্ম হইবে, 
এই জীবনৈহ সেই দিকের পথ বাধিতে হইবে ইহাই প্রধান কথা । এই পথ মূলতঃ: 


৭৩ 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের সঁতিহাস ূ 

জাপারী/যনেরই হুট . যে বৌদ্ধধর্ম ইহার আদি জন্মভূমি ভারতবর্ষ হঁতৈ চীনা যনের 
মধ্য দিয়া বাত্বব-অভিজ্ঞতা-লন্ধ জ্ঞানের (72185779610 80021103810 ) দিকে খু কিয়া 
জাপানে"আসিয়াছে, সেই বৌদ্ধধর্ম এই পথের দার্শনিক তিত্তি রচনা! করিয়াছে বটে, 
কিন্ত তেরে! শতাকীর- জাপানীর] যুক্তিবাদ বা. আধিভৌতিকতার মধ্য দিয়া সেদিকে 
অগ্রলর ছয় নাই। তাহারা সর্বাপেক্ষা সোজাস্থজি ও গম পথেই গিয়াছে । 

পষিজন্রাজ্য” সম্প্রদায়ের "শিন্‌্' শাখার প্রতিষ্ঠাত। “শিন্রঙ শিক্ষা দিয়াছেন যে 
“আমিদার (41012) প্রচারিত প্রথম অঙ্গীকার, (021810981 ৬০) সর্বান্তঃকরণে 
গ্রহ করিলেই যে কেহ তাহার পুনর্জন্ম সম্বন্ধে নিশ্চয়তা লাভ করিতে পারে ।- এই প্রতিজ্ঞা 
গ্রহণ, “শিন্রঙে'র কথায় বলিতে গেলে, “একপাশে. লাফাইয়া পড়া” । শিনরঙের নির্দেশ 
যে অবিচ্ছিন্ন নৈয়ায়িক পথ অনুসরণ না করিয়া, সমস্ত বুদ্ধির গণনা ত্যাগ করিয়া, সেই 
নিরুপাধিক (৪১9০1৩০ )-এর অন্ধকার অতলস্পর্শ প্রতীয়মান গর্ভে লাফাইয়া পড়িতে 
পারিলে, পপরিব্র-রাজ্যের” ম্বেতবর্ণ পথ আমাদের সামৃনে খুলিয়া! যায় । এই 'একপাশে 
লাফাইয়া পড়া “শিন্নতো”-বাদীদের মনোমত কথা, আর 'কাম্নাগরা”-রীতিতে চলা 
একার্থক |. ইহা! দেবতাদের রচিত পবিত্র দর্পণে নিজের আসল ছবি প্রতিবিধিত দেখিতে 
পাওয়া, পরমাণু-পুঞ্জের প্রারস্তে আত্ম-নিমজ্জন ও এই আত্ম-নিমজ্জনে কালাতীতের সার-মর্মে 
ফিরিয়া যাওয়া | 

“শিনৃ-তো” পরিভাষা সাধারণতঃ আমাদের কতকগুলি ভ্রান্ত ধারণ! দিয়া থাকে । ইহা 
ইহা! ইন্দ্িয়-ন্ধ বিষয়গুলির সহিত ঘনিষ্ঠ তাবে যুক্ত এবং শাসকদের উপর দেবত্ব-আরোপ 
করার মতবাদের সহিত অবিচ্ছেগ্গতাবে__এবং অভিপ্রায় লইয়াই-_-সংমিশ্রিত | কিন্তু 
ইহা তুলিলে চলিবে না যে এই 'শিন্-তে'-বাদেই আমর! পাই জাপানীদের মর্মকথা যাহা 
সবেমাত্র পর্যাপ্ত-প্রকাশের চেষ্টা করিতেছে । ইহা আমরা পাইতে পারি তখনই যখন 
ইহাকে আমরা বৌদ্ধচিস্তা 'ও অভিজ্ঞতার চালুনিতে ছাকিয়া লই । এই কথাটি এইভাবেও 
বলা যাইতে পারে.ধে জাপানী চিস্তা বৌদ্ধ অভিজ্ঞতার সহ্থায়ে ও তাহা হইতে 'গভীরত] 
লাত করিয়া তাহার সকল অন্তর্গত তাৎপর্য প্রস্ফুট করে ও জাপানের অনেক শতাব্দী-ব্যাপী 
ইতিহাসে জনপাধারণ কোন কোন ভাবগুলি মুল্যবান্‌ মনে করিয়াছে তাহার উপর রশ্মিপাত 
করে। ্- 
' ক্ষাপানী মন বিশ্লেষণপরায়ণ নয়, খতঃলিগ্ধ (176016156 ) জ্ঞানের প্রয়াসী। এই 
সন অন্ুমান-প্রয়োগে কতকগুলি হ্বীকার্ধ বিষয় একত্র করা (1121008৮615 ০০11০6/8 
098 ) এবং তাহার অন্তর্গত কোনও মুলনীভি € চ:%0০31৩ ) বাহির করার শিক্ষা 
পায় নাই. এই মন. কেবল অভিজ্ঞতার বস্ত ধরিতে চায় এবং তাহার সুরিষ্ঠ নিজকে. 


৭8. 


জাপানের চিন্তাধারা 


মিলাইয়া দিতে চায় । কিন্ত এই বন্তর অনত্দশে কিছু রহিয়াছে তাহা স্বীকার করিতে চাঁর 
না সামনে যাহা কিছু উপস্থিত তাহার অতীত অস্ত কিছুর দিকে যায় ন1 1: ইহাঁর অর্থ 
এই নয় যে নিল্শ্রেণীর "প্রাণীরা যেমন ইন্দরিক়-গ্রাথ ঘটনার মধ্যেই আটকাইয়! থাকে: 
জাপানীদেরও মন-জগৎ সেইরূপই -সন্বীর্ণ ৷ ইহার অর্থ এই যে জাপানীদের টিস্তাধারা এই 
ইন্টিয়-গ্রাহ বাস্তব জগতের সঙ্গে সন্বন্ধ চালায় খ্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানের স্তরে বা মৌলিক অভিজ্ঞতা 
লঙ্ধ জ্ঞানের € 1201581 27011151507 ) স্তরে । “কাননাগরা” এই দিকই নির্দেশ করে,” 
“শিন্-তো+-বাদীদের দেবতার! যেমন সেই তাবেই গ্রহণ করিবার ইচ্ছায় এবং. দেবতাদের 
মানুষী"ন্তায়-বুদ্ধি অনুসারে ন্ধপাত্তর করার অনিচ্ছায় । যেজাপানী বৌদ্ধেরা “শৃন্যেন, 
অভিজ্ঞতার (52967167706 06136880100 ) মধ্য দিয়া গিয়াছে তাহারা “শিম্-ভো1- 
বাদের এ বটিকা-গলাধকরণ করিতে ইচ্ছুক হইবে না । তাহার! দেবতাদের আরও উচ্চ 
আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে নিয়! বসাইবে । তাহার! “শিন্তো”-বাদের অঙ্গ, আদি- 
যুগের প্রকতি-পৃজা ( 72051581197) ), গতীর্তর আধ্যাত্িক-বোধে পর্যবসিত করিবে 
যেখানে সম্পূর্ণ নৈক্র্ম্য বিরাজমান | ইহা অর্থতঃ তাহাই যাহাকে বৌদ্ধেরা “তথতা” 
(553778 £ 60 0156 50010135595 ০4 0021)65- _বাস্তনিচয়ের যথার্থ ক্বপ-দর্শন) বলেন । 

আধ্যাত্মিকভাবে অর্থ ধরিলে “কান্নাগরা” আর'কিছু নয়--কেবল সকল বাস্বব-ব্যাপারে 
'আমিদা”র (4£৯০$98 ) আহ্বান, যাহাকে “পবিভ্র-রাজ্য' সম্প্রদায়ের শিক্ষকেরা 'আধিদার 
প্রথম অঙ্গীকার” (01161791 ৬০৯৮ ০0£ 40109. ) বলিয়া বর্ণনা করেন, তাহাকে 
শিরোধার্য করা । ইহাই 'তারিকি' (5:13 ) বা অন্ত বল (40036 ৮০৯০০ )। 
“হোনেও * ও 'শিন্রঙে”র পূর্বে মহাযান যাহা শিক্ষা! দিয়াছিল তাহা! ছিল এত বস্তহীন 
(2556:9০৮), এত আধিভৌতিক (202097913551০91 ) এবং এত “কারতবর্ষীয়” যে 
তাহা জাপানী ভাব ও চিস্তার ধার! স্পর্শ করিতে পারে নাই। বৌদ্ধধর্কে জাপানীর 
্বভাব-অনুযায়ী আধ্যাত্মিক শিক্ষারূপে পরিণত করার জন্য ইহা! হইতে সমস্ত অবাস্তব ধারণা 
(৪090:50০630729 ) স্বতঃ-স্বীকার্য তথ্য-সমূহ (০9565121%0759 ) এবং বুদ্ধি-গ্রানথ বিষয়” 
গুলি সকলই বাদ দেওয়া অবস্টু প্রয়োজনীয় ছিল। জাপানীর! দেবতাদের পথ অনুসরণ: 
করিতে চাহিয়াছিল, কিন্তু “শিন্-তো'র ত্বতাব-সরল প্রথা, যাহা ইন্দরিয়-গ্রাহ অভিজ্ঞতার 
উর্ধে উঠিতে পারে না, তাহার মধ্য দিয়া নয়। 

জাপানী কৃষ্টি সম্বপ্ধে কোনও বিষয়ের আলোচনা করিলেই একটি 'সমস্যা, আমরা 
ভুলিতে পারি না-তভাহা! “সাবি' (55:) সম্বন্ধে । জাপানী চিন্তাধারার প্রধান শ্রোত 
ইহাতে দেখিতে পাই। ইহা রুচি-বিজ্ঞানের অন্তর্গত, কিন্তু “কান্নার: হইতেই বহিয়া 
খাপিয়াছে। . 


পাচা ও পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস পু 
' অন্ধকথায় 'লাবি” (98৮ ).কি তাহা বর্ণনা করা কঠিন। তবু আধ্যাঞ্সিক বা 
'আন্সিক অর্থ জইয়া আমি ইহাকে “একাস্ত একাকিত্বের ভাব" € 56511728 06 81১8011066 
81955:3558) বলিয়া রর্না করিব । কিন্তু এই একাকিত্ব জনশুশ্যতা বা সঙ্গীহীনভার 
অর্থে নয়। বর্ধন কেহ ব্যক্তিত্বের (15415515211 )-র গভীরতম স্তর ম্পর্শ করে তখন 
তাহার এই “একান্ত একাকিত্বে'র অনুছতি হয়। এবং এই অহ্থভব কেবল ধারায় কিন্বা 
কোনও প্রস্তারিত অবস্থায় € 0075০220981] 01 ৮০50015:5029115 ) নয়,-ইহা 
একশ্রেনীর দার্শনিকদের কথায় বলিতে গেলে প্রাণ-কোষে ( 51568151915 ) | কোনও 
ফোনও জাপানী পণ্ডিত এই অহ্গতবকে সরলতা1-গুণ-লাভের ( ৬::086 ০: 511০5165) 
সহিত একার্থবচিক বলিয়া ধরিয়াছেন, কিন্তু তাহা অনেকটা কনৃফিউসিয়ান্‌ মতবাদ 
অহ্সারে | “শিশৃ-তো'-বাদী এই গুণকে বলিবে সততা, স্বাভাবিকতা, স্বপ্রবৃত্তির অনুসরণ, 
সাদালিধ! ভাব অথবা হৃদয়ের খঙ্জুতা (50511705555 ০৫ 136817 )। ইহা! সেই পথে 
'সন যাহা মাুষের বাকা যুক্তিতে ছষ্ হইবার পূর্বে দেবতাদের স্বাভাবিক গতি ছিল । 
'বাশো'র (8৪9০) শিশ্পদের প্রতি এই নির্দেশ ছিল যে “হাইকু” (7511--সতেরো 
শব্বাংশের কবিতা ) কবিতায় যে সরলতা আছে তাহা কোনও দেবদারু বৃক্ষের সামনে 
দাড়াইয়! সেই দেবদারুর ভাবাপন্ন কিন্বা একটি বংশখণ্ডের সামনে দীড়াইয়া তদ্তাবাপন্ন 
হওয়ায়। এবং তিনি চাহিতেন আত্ম-কেন্দ্রিক (5০155165165. ) মনের সকল সংস্পর্শ 
বাদ দিয়া শুধু এই উপল তাবটির প্রকাশ। “বাশো”র কথাগুলি ঠিক এই £ “দেবদারুর 
কথা ' হইলে দেবদাকুর অঙ্থবর্তী হও,__বাশের কথা বলিলে তাহারই অনুবত্তাঁ হও”। 
'অনুবত্তাঁ হওয়া, কথাটি জাপানী ভাষায় “নারাউ” (58188 )১-ইহার অনেক অর্থ 
আছে, বথা 'অন্বব্তা হওয়া” "অনুকরণ করা” "শিক্ষা করা? 'ব্যবহার করা, “সংযত করা? 
'সাষঞ্জন্ত করা” “নিজেকে অত্যন্ত করা; ইত্যাদি। একজন শিশ্ ইহার এইক্ধপ ভাস্ব 
করিয়াছেন £ « “নারাউ; (218 )-র তাৎপর্য এই, কোনও বস্তর মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া 
তাহার অন্তরে যাহা আছে তাহা বাহিরে আনিয়া সাহিত্যিক রূপ-দান। যখন সেই বস্ত 
হইতে শ্বতঃই যে অন্তব আসে তাহার সহিত ও তাহার বাহ প্রকাশের সহিত মিল থাকে 
শা, তখন বন্ত ও তাহার প্রকাশের মধ্যে বিচ্ছেদ থাকিয়া যায় | হৃতরাং সত্য কুপন হয়” । 
অন্ত কথায় বলিতে গেলে, যখন “কান্লাশরা” ইহার এক্য-অবস্থা হারাইয়া দ্বিধা হইয়া 
পে, তখন তাহা আর মাহষের দ্বারা ছু হইবার পূর্বকার দেব-পন্থা থাকে না । বস্তর 
“তথতা” (55০৮:5655 ) বিকৃত হইয়া যায়। ১4 
এখন আমর! দেখিতে পারি যে 'অবরে” (4৫), "তারিফ? (2181), 
'সাবি' (5851) এই সকল ধারণার পিছনে কি রহিয়াছে।--রহিয়াছে তাহা, মাহা 
৭ 





জাপানের চিন্তাধারা . 

'শিন্-তো' পরিভাষায় বলে 'কান্রাগরা! বা! 'কাঙ্গাগরা নো মিচি'_ দেবতাদের স্বাভাবিক 
পস্থা বা সেই পন্থা যাহা দেবতারা আপন আপন স্বরূপে, মানুষের যুক্তিবাদে দ্পান্তরিত 
না হইয়া, অন্থসরণ করে। 

সেই জন্যই আমরা বলিতে পারি যে 'কাণ্নাগরা” জাপানী চিগ্তার সংক্ষিগুসার। 
জাপানী মন তাহার গবেষণ! শক্তির উদ্বোধনকাল হইতেই তিন্-দেশীয় ক্ৃ্ির প্রভাবে 
পড়ে,_কনফিউসিয়ানবাদ, “তাঁও*-বাদ বৌদ্ধমত,--এবং আধুনিক-কালে পাশ্চাত্য চিন্তা- 
প্রণালী এই দেশে আসিয়া পড়িয়াছে ও পণ্ডিতের পাশ্চাত্য প্রণালী গ্রহণ করিয়া 
জাপাশীদের মর্মকথা ফুটাইয়া তুলিবার চেষ্টা।করিতেছেন। সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ জাপানী 
যুবকের! পাশ্চাত্য চিন্তায় আজকাল অতিশয় ব্যাপৃত | ধাহারা অত্যাধুনিক জাপানী 
সাহিত্য পাঠ'করেন তাহারা তাহাতে পাশ্চাত্যের সর্বপ্রকার ছায়াপাত দেখিতে পাইবেন। 
কিন্তু বিদেশ হইতে আহত এই সকল সত্ত্বেও যাহা নিম্নে গতীরতাবে প্রবাহিত তাহা! এই 
জাপানী “কান্নাগরা'র'ধারণা ও অনুভব । বাহিরের আবরণ যাহাই হউক এই ধারণা ও 
অনুভুতি কোনও না কোনও প্রকারে সর্বকালে আত্ম-ঘোষণা করিবেই। 


সুভ লিন্ল্রলী 


আনাসাকি, ম্যাসাহারু ঃ হিষ্্রি অন জাপানীজ রিলিজন, লণ্ডন ১৯৩০ । 

নক্স, জর্জ উইলিয়াম £ দি ডেভেলপমেন্ট অব রিলিজন ইন-জাপান, নিউইয়র্ক ১৯০৭ | 

নুকারিয়া, কাইতেন £ রিলিজন অব দি সামুরাই, লণ্ডন ১৯১৩। 

ক্জুকী, দাইসেবজ তেইতারে। £ ম্যানুয়্যাল অব ঝেন বুদ্ধিজমৃ, কিয়োতো ১৯৩৫ । 

স্টাইনিল্বার-ওবেরলিন, ই £ দি বুদ্ধিসট সেকৃটস অব জাপান, ফরাসী হুইতে 
অনুর্দিত, লণ্ডন ১৯৩৮ । | 

এলিয়ট, সার চার্লস £ জাপানীজ বুদ্ধিজমৃ, লণ্ডন ১৯৩৫ | 


গ৭